Thursday, January 28, 2016

১৮+ পোষ্ট ( সবার জন্য নয়)

আমি সত্যিই ভয়ে ভয়ে এই লেখা পোস্ট করছি ... এই স্ট্যাটাস কারো পড়ার দরকার নেই। কারন এটা ১৮+ স্ট্যাটাস।
তবে হ্যা, যদি আপনার ভেতরে পর্ণগ্রাফি'র কোন 'প্রভাব' থেকে থাকে তাহলে পড়তে পারেন....
.
.
.
একজন টিনেজার যখন পর্ণ মুভি দেখে, তখন সে ওই পর্ণমুভির নায়ক নায়িকার যৌনক্ষমতা , যৌনশক্তি আর যৌনকুরুচি দেখে তাদের সুপার হিরো মনে করে। কম বয়স আর সদ্য কৈশরের তালমাতাল সময়ে পর্ণ দেখে ভাবতে থাকে ইশ! পর্ণ ক্লিপের নায়কের পেনিস কত বড়! ... ওহ! নায়িকার শরীর কত পারফেক্ট! ... আহ! কত পারফেক্ট সেক্স করছে তারা!
এসব দেখে বাস্তবেও কেউ কেউ সেক্সুয়াল হ্যারে্সমেন্ট করতে চায়, আইনত / সামাজিক / ধর্মীয় সীমা অতিক্রম করে রীতিমতো অপরাধ করার সুযোগ খুজে। আথবা অনেকেই পর্ণমুভির নায়ক নায়িকার শক্তি সামর্থ্য'র সাথে নিজের সামর্থের তুলনা করে আত্নবিশ্বাসহীনতায় ভুগতে থাকে।
একদিকে বিকৃত রুচির বিস্তার বাড়ে, অন্যদিকে যৌনতা নিয়ে ভূল সংস্কৃতির অপবোঝা মগজ ধোলাই করতে থাকে।
কিন্তু এই পর্ণমুভিতে দেখা দৃশ্যগুলো কতটুকু সত্য বা ভেতরের বাস্তবতা কি সেটা নিয়ে কোন সচেতনতা তৈরি হয়না।
সমাজে পর্ণ ছবি দেখে তৈরী হওয়া কিছু ভুল ফ্যান্টাসি নিয়ে পয়েন্ট বাই পয়েন্ট কিছু বিশ্লেষণ.......:
ভুল ধারনা
১) - পর্ণ মুভিতে দেখানো পুরুষের বড় যৌনাঙ্গ অনেক আকর্ষনীয় ব্যাপারঃ
আসলে পর্ণ দেখতে দেখতে অনেকেই ভাবেন যে "আহ! ছেলেটার যৌনাঙ্গ / পেনিস কত বড়! এই বড় সাইজের পেনিস দিয়ে সে মেয়েটাকে কত সুখ দিচ্ছে, কত পারফেক্ট সেক্স করছে!"
হ্যা, যে পুরুষেরা পর্ণ ছবিতে অভিনয় / যৌনতা করে তাদের যৌনাঙ্গ সাইজে বড় হয়। সেটা প্রাকৃতিক / সার্জারি করে বা ঔষুধ সেবনের মাধ্যমে, যেভাবেই হোক।
কিন্তু এই বড় সাইজের পেনিস পর্ণ ছবিতে যৌনরত মেয়েদের বেশিরভাগের জন্যই উপভোগ্য কিছু না। এতে না তারা কোন সুখ পায়, না এটাকে পারফেক্ট সেক্স বলা যায়।
হ্যা, অল্প কিছু নারী পর্নস্টার এটা সহ্য করতে পারে। আর অন্য পর্ন নায়িকাদের জন্য এই অস্বাভাবিক বড় পেনিস এর সাথে যৌনতা করা একটি নির্যাতন / ব্যাথার 'কাজ' ছাড়া কিছুই না।
তাই যখন একটি পর্ননায়িকার যোনীতে অস্বাভাবিক বড় আকারের পেনিস প্রবেশ করে, তখন সে আক্ষরিক অর্থেই ব্যাথায় চিৎকার করে, কান্না করে। এখানে যৌন আনন্দের কোন প্রশ্নই আসেনা। অনেক সময় এই নায়িকাদের চোখে মুখে কস্টের তীব্রতার সত্যিকারের ছাপ ফুটে উঠে। আর তারা তাদের পুরুষের উরুতে হাত চেপে ধরে রাখে, যেন ভেতরে কোন ক্ষত-বিক্ষত হবার সম্ভাবনা তৈরী হলে পুরুষটিকে বাধা দিতে পারে।
আর মেয়েদের এই ব্যাথা সহ্য করার দৃশ্য আনন্দের কিছু না। তাই পরিস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলে পর্নশ্যুট কিছুক্ষন থামিয়ে দেয়া হয় যেন মেয়েটি কিছুটা ধাতস্থ হতে পারে,আহত হয়ে যেন হাসপাতালে নিতে না হয়।
আর শ্যুটিং শেষে অমানবিক অংশগুলো মূল ভিডিও থেকে কেটে বাদ দেয়া হয়, কারন সিনগুলো দেখলে দর্শকরা বুঝে ফেলতে পারে যে আসলে ছেলে আর মেয়েটা 'সেক্স' করছেনা, বরং মজুরি পাওয়ার জন্য 'কাজ' করছে, কস্টকর কাজ।
----------------
ভুল ধারনা
 ২) পর্ণ মুভিতে নায়ক-নায়িকারা অনেক লম্বা সময় ধরে সেক্স করতে পারে / তারা ম্যারাথন সেক্স করেঃ
পর্ণ মুভিতে আপনারা যেটা দেখেন সেটা হচ্ছে নায়ক নায়িকারা টানা ২০-৬০ মিনিট পর্যন্ত সেক্স করতে পারে।
কিন্তু আপনারা যেটা দেখেন না সেটা হচ্ছে এইসব লম্বা সেক্সের ভিডিও কিভাবে তৈরী করা হয়।
পর্ণ ভিডিও তো আর লাইভ ক্রিকেট নয় যে আপনারা 'সরাসরি' দেখছেন। বরং আসলে যে সেক্স দৃশ্য ক্যামেরা বন্দী করা হয়,সেটা কাটাকুটি করে তৈরি করা হয় ফিনিশিং প্রোডাক্ট, যেটা পরে আপনারা দেখেন কম্পিউটার এর সামনে বসে।
তাই আপনাদের দেখা হয়না যে, সেক্স দৃশ্যের শ্যুটিং একশ্যুট এ করা হয়না। বরং শ্যুটিংএর ফাকে ফাকে বার বার ব্রেক নেয়া হয়। খাওয়া দাওয়ার ব্রেক। ড্রিংক্স ব্রেক। নায়ক - নায়িকার বাথরুম ধরায় ব্রেক। নায়কের দম ফুরিয়ে গেলে বিশ্রাম নেয়ার ব্রেক। নায়কের পেনিস এক সময় আর না দাড়ালে আবার ট্যাবলেট খাওয়ানোর জন্য ব্রেক। নায়কের উত্তেজনা ফুরিয়ে গেলে তার পেনিসের গোড়ায় আবার ইঞ্জেকশন নেয়ার জন্য ব্রেক।নায়কের বীর্য বের হয়ে গেলে পুনরায় তার পেনিস দাড় করানোর জন্য ব্রেক। নায়ক নায়িকার শরীরে আবার লুব্রিক্যান্ট মাখানোর জন্য ব্রেক ইত্যাদি ইত্যাদি।
ঢালিউড / বলিউড / হলিউড এর সিনেমার যেমন মাসের পর মাস শ্যুটিং চলে, পরে সব শ্যুটিং এর ভিডিও কাটাকুটি করে দর্শকদের জন্য দুই আড়াই ঘন্টার ফিনিশিং প্রোডাক্ট তৈরী করা হয়, ঠিক তেমনি ভাবে বহুক্ষন ধরে নানা রকম বিচ্ছিন্ন শ্যুটিং শেষ করে সব দৃশ্য একসাথে কেটেকুটে বা জোড়া লাগিয়ে দর্শকদের জন্য ২০ থেকে ৬০ মিনিটের একটি পর্ণ ক্লিপ ফিনিশিং দেয়া হয়। তাই রেডিমেট পর্ণ দেখে পর্ণস্টারদের 'ম্যারাথন সেক্স' নিয়ে ভুল ফ্যান্টাসি লালন করে লাভ নেই।
কেউ ই সপ্তাহে ৭ দিন ধরে মাসের পর মাস সেক্স করে সুস্থ থাকতে পারেনা। যদি এর উল্টোটা আপনার মনে হয় তাহলে নিজে ট্রাই করে দেখতে পারেন ক্ষতি হলে দায় আপনার।
যে যে পর্নস্টার পুরুষেরা বছরকাল ধরে বিরামহীন সেক্স ওয়ার্ক করে তাদের পেনিস একসময় অনুভূতিহীন হয়ে যায়। তখন এমন এক সময় আসে যে সেক্স এর সময় তাদের আর উত্তেজনা আসেনা, স্বাভাবিক উপায়ে বীর্য্যপাত হয়না। তাদের তখন বিকল্প কোন উপায় বের করতে হয়।
আর তারা যখন বিকল্প হিসেবে মেডিসিন খেয়ে খেয়ে সেক্স ওয়ার্ক চালাতে চায় তখন একটা সময় আসে যখন ওই ওষুধও আর কাজ করেনা। তখন আর পেনিস দাঁড়ায় না, নিজের ব্যাক্তিগত যৌনজীবনেও দাঁড়ায় না, পর্ণ সিনেমায় 'কাজ' করার সময়ও দাঁড়ায় না।
--------------------------------------------------
ভুল ধারনা
৩) এনাল সেক্সঃ
পর্ণ মুভিগুলোতে যেকোন সেক্স দৃশ্য এমনভাবে দেখানো হয় যেন এটি খুব স্বতঃস্ফুর্ত আনন্দের বা সুখের দৃশ্য । কিন্তু দেখানো হলেই যে এটি সত্যি এমনটি ভাবার কিছু নেই।
বাস্তবে এনাল সেক্স করার আগে একজন পর্ণ নায়িকাকে বেশ কিছু প্রটোকল আর শর্ত মানতে হয়। প্রথমে হিসেব করা হয় মেয়েটি তার মলদ্বারে বড় সাইজের পেনিস নিতে পারবে কিনা / আহত হবে কিনা। তারপর মেয়েটির পায়ুপথে বারবার মেডিসিন / লুব্রিক্যান্ট প্রবেশ করানো হয়, প্রথমত পায়ুপথ পরিস্কার করতে অতঃপর ভেতরটা পিচ্ছিল করতে যেন পেনিস ঢুকলে পায়ুপথ ছিড়ে না যায়।
এখানেই শেষ নয়, মেয়েটিকে সেক্স দৃশ্যে অভিনয় করার ৪ থেকে ১২ ঘন্টা আগে থেকে অভুক্ত থাকতে হয় যেন শ্যুটিং এর সময় মেয়েটির পেট খালি থাকে। কারন পেট খালি না থাকলে / পায়ুপথ পরিস্কার না থাকলে এনাল সেক্স এর এক পর্যায়ে পর্ণনায়িকাদের বাথরুম (shit) বের হয়ে যাবে। কিন্তু এ ধরনের জঘন্য জিনিসগুলো মুল ভিডিওতে দেখানো হয়না, তাইনা? আর তাই আপনারা কিনা সবকিছুই ন্যাচারেল মনে করেন আর বাস্তবেও এসব করতে চান!

তাই যখন ভবিষ্যতে যদি কোন পর্ণ ক্লিপে এনাল সেক্স দেখেন তাহলে তাহলে একটু খেয়াল করে নিবেন। পর্ণ নায়িকাটি হয়তো বারো ঘন্টা ধরে অভুক্ত। অভুক্ত অবস্থায় যৌনরত মেয়েটি ক্ষিধেয় কাতরাচ্ছে হয়তো। আর অভুক্ত মেয়েটির সেক্স শ্যুটিং শুরু হবার আগে ক্লিনিক্যাল যন্ত্রপাতি দিয়ে তার এনালের ভেতর এতবার মেডিসিন আর লুব্রিক্যান্ট ঢুকানো হয়েছে যা হয়তো কোন রোগীর চাইতে অনেক অনেকগুন বেশি অস্বস্তিকর ও যন্ত্রনাদায়ক।
আর এ ধরনের এনাল সেক্স শ্যুটিং এর পর কিছু মেয়ের বাসায় যাওয়া হয়না, তাদের সরাসরি ভর্তি হতে হয় নার্সিং হোমে। আপনি যে মেয়েটির এনাল সেক্স ভিডিও দেখছেন সেও হয়তো শ্যুটিং শেষে ক্ষুধার্থ ও আহত অবস্থায় কোন নার্সিং হোমে যেয়ে পড়ে থেকেছে।
------------------------------
ভুল ধারনা
৪) পর্ণ নায়িকাদের যৌনসুখঃ
হ্যা, পর্ণ মুভিতে নায়িকারা 'যৌনকাজই' করে। তবে এখানে অনেক বড় আর বেশকিছু ''কিন্তু '' আছে যা অগ্রাহ্য করার মতো নয়।
আসলে যে মেয়েরা পর্ণমুভিতে কাজ করে তার মূল কারন যৌনসুখ নয়, বরং টাকা / অর্থ।আর তাই টাকা কামাতে যেয়ে কিছু পর্ণ নায়িকা কোন প্রকার সেক্স ই উপভোগ করেনা।
পর্ণ ইন্ডাস্ট্রিতে যে মেয়েটা স্বাভাবিক যৌনরুচির, শুধু মাত্র টাকার জন্য তাকে লেসবিয়ান পর্ণতে অন্য মেয়ের সাথে হোমোসেক্স করতে হয় যা সে হয়তো ব্যাক্তিজীবনে একদম আত্মা থেকে ঘৃনা করে। আবার হয়তোবা অন্য পর্ণমুভিতে এমন কোন নায়কের সাথে তাকে সেক্স করতে হয় যার সাথে করতে তার রুচি হচ্ছেনা/ নিজেকে নিরাপদ মনে করছে না/ আত্নসম্মানে লাগছে / যার সাথে সেক্স করতে সে আকর্ষন পাচ্ছেনা।
কিন্তু তারপরেও যাই হোক, তারা পর্ণমুভিতে পারফর্ম করে। মনের বিরুদ্ধে গিয়েও কিভাবে যৌনতা করা যায়, কিভাবে চেহারায় 'সুখী ' ভাব ফোটানো যায়, তা তারা জানে, পারে, কৃত্রিমভাবে হলেও।
আর পর্ণমুভির পরিচালক, ক্যামেরাম্যানরাও এত কিছু নিয়ে মাথা ঘামায় না। একদিকে পর্নস্টার রা এমন ভাবে সেক্স করার ভান করে যে তারা এটা খুব উপভোগ করছে, অন্যদিকে পরিচালক কৌশলী ভাবে ক্যামেরা ধরে ও পরবর্তীতে পেশাদারী এডিটিং করে এমন ভাবে পর্ণমুভি বানিয়ে ফেলে যে দেখলে মনে হবে বিকৃত যৌনাচার অনেক মজার কিছু!
আর এভাবেই আপনারা পর্ণ দেখে সেই 'মজা' পান যেটা ওই মুভির নায়ক নায়িকাই হয়তো পায়নি!

ভুল ধারনা
৫) নারীর কামরসঃ
নারীর কামরস বের হওয়া / রাগমোচন এর নির্ণয় নিয়ে মেডিক্যাল সাইন্সেই এখনো অনেক বিতর্ক আছে। তাই বাস্তবে মেয়েদের কামরস ছিটকে বের হয় কিনা, সেটা নিয়ে কিছু না বলি। বরং পর্ণ সিনেমায় নায়িকাদের কামরস ছিটকে বের হওয়ার দৃশ্য কিভাবে বানানো হয় সেটা বলি।
আসলে বেশিরভাগ পর্ণ মুভিতে নায়িকারা সময়মতো হিসু করে দেয় যেটাকে ক্যামেরাতে দেখানো হয় নায়িকার বীর্য্যপাত / কামরস বের হওয়া হিসেবে।
অথবা সেক্স দৃশ্যের মাঝে ব্রেক নেয়া হয়, নায়িকার যোনীর ভেতর পানি ভরে টার্কি ব্লাস্ট ( পাম্প সিরিঞ্জ) ঢুকানো হয়। পরে সেই পাম্প থেকে ছিটকে পানি বের হয়। আর ক্যামেরাতে এটাকে দেখানো হয় নায়িকার যৌনসুখে বের হয়ে যাওয়া কয়েক ফুট লম্বা কামরস নিক্ষেপ / রাগমোচন হিসেবে। আর দর্শকরা ভূয়া জিনিস দেখে কল্পনার ফানুশ উড়াতে থাকে এবং পর্ণতে আরো আসক্ত হতে থাকে!

অন্যান্যঃ
৬) কনডম ছাড়াই সিংহভাগ পর্ণগ্রাফি মুভিগুলো তৈরী হয়। তাই এই ইন্ডাস্ট্রিতে এইডস ও অন্যান্য যৌনরোগ প্রকোপ উল্লেখযোগ্য।
৭) পর্ণ ইন্ডাস্ট্রির নায়ক নায়িকাদের মাঝে ডিপ্রেশন ও আত্মহত্যার হার আশংকাজনক।
৮) - যুক্তরাস্ট্রে মানুষের গড় আয়ুঃ ৭৮ বছর
পর্ণতারকাদের গড় আয়ুঃ মাত্র ৩৭ বছর
- মূল কারনঃ মেডিসিন, যৌনরোগ, ডিপ্রেশন, নেশা, আত্নহত্যা।
(তথ্যসূত্রঃ MenzHealth ম্যাগাজিন। এছাড়া ২০ বছর ধরে পর্ণ ইন্ডাস্ট্রির 'সফল' পরিচালক Seymore Butts এর স্বীকারোক্তিমূলক প্রবন্ধ এবং সংশ্লিষ্ট গুগোল সার্চ।)
---------------------------------------------
-------
...... মনে রাখবেন, যৌন আবেশে করা "শীৎকার" আর অমানুষিক কস্টে করা "চিৎকার" এক জিনিস না। অন্তত সুস্থ মস্তিস্কের কারো জন্য তো অবশ্যই না।
সবাইকে শুভকামনা......

Saturday, January 16, 2016

হুমায়ুন আজাদের প্রবচন

১)এক-বইয়ের-পাঠক সম্পর্কে সাবধান।
২)এখানে অসৎরা জনপ্রিয়, সৎ মানুষেরা আক্রান্ত।
৩)রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কার পাওয়ার দরকার ছিলো না, কিন্তু দরকার ছিলো বাঙলা সাহিত্যের। পুরস্কার না পেলে হিন্দুরা বুঝতো না যে রবীন্দ্রনাথ বড়ো কবি; আর মুসলমানেরা রহিম, করিমকে দাবি করতো বাঙলার শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে।
৪)আমি এতো শক্তিমান আগে জানা ছিলো না। আজকাল মিত্র নয়, শত্রুদের সংখ্যা দেখে আত্মবিশ্বাস ফিরে পাই।
৫)জন্মাতরবাদ ভারতীয় উপমহাদেশের অবধারিত দর্শন। এ- অঞ্চলে এক জন্মে পরীক্ষা দিতে হয়, আরেক জন্মে ফল বেরোয়, দু-জন্ম বেকার থাকতে হয়, এবং ভাগ্য প্রসন্ন হ’লে কোন এক জন্মে চাকুরি মিলতেও পারে।
৬)বুদ্ধিজীবীরা এখন বিভক্ত তিন গোত্রে। ভণ্ড, ভণ্ডতর, ভণ্ডতম।
৭)বাঙালি যখন সত্য কথা বলে তখন বুঝতে হবে পেছনে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য আছে।
৮)আধুনিক প্রচার মাধ্যমগুলো অসংখ্য শুয়োরবৎসকে মহামানবরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
৯)অধিকাংশ রূপসীর হাসির শোভা মাংসপেশির কৃতিত্ব, হৃদয়ের কৃতিত্ব নয়।
১০)পাকিস্তানিদের আমি অবিশ্বাস করি, যখন তারা গোলাপ নিয়ে আসে, তখনও।
১১)আবর্জনাকে রবীন্দ্রনাথ প্রশংসা করলেও আবর্জনাই থাকে।
১২)নিজের নিকৃষ্ট কালে চিরশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের সঙ্গ পাওয়ার জন্যে রয়েছে বই; আর সমকালের নিকৃষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গ পাওয়ার জন্যে রয়েছে টেলিভিশন ও সংবাদপত্র।
১৩)হিন্দুরা মূর্তিপূজারী; মুসলমানেরা ভাবমূর্তিপূজারী। মূর্তিপূজা নির্বুদ্ধিতা; আর ভাবমূর্তিপূজা ভয়াবহ।
১৪)শামসুর রাহমানকে একটি অভিনেত্রীর সাথে টিভিতে দেখা গেছে। শামসুর রাহমান বোঝেন না কার সঙ্গে পর্দায়, আর কার সঙ্গে শয্যায় যেতে হয়।
১৫)আগে কারো সাথে পরিচয় হ’লে জানতে ইচ্ছে হতো সে কী পাশ? এখন কারো সাথে দেখা হ’লে জানতে ইচ্ছে হয় সে কী ফেল।
১৬)পা, বাঙলাদেশে, মাথার থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। পদোন্নতির জন্যে এখানে সবাই ব্যগ্র, কিন্তু মাথার যে অবনতি ঘটছে, তাতে কারো কোনো উদ্বেগ নেই।
১৭)হায় ! থাকতো যদি একটি লম্বা পাঞ্জাবি, আমিও খ্যাতি পেতাম মহাপণ্ডিতের।
১৮)এখানকার একাডেমিগুলো সব ক্লান্ত গর্দভ; মুলো খাওয়া ছাড়া ওগুলোর পক্ষে আর কিছু অসম্ভব।
১৯)পুঁজিবাদের আল্লার নাম টাকা, মসজিদের নাম ব্যাংক।
২০)সুন্দর মনের থেকে সুন্দর শরীর অনেক আকর্ষণীয়। কিন্তু ভণ্ডরা বলেন উল্টো কথা।
২১)ব্যর্থরাই প্রকৃত মানুষ, সফলেরা শয়তান।
২২)আমাদের অঞ্চলে সৌন্দর্য অশ্লীল, অসৌন্দর্য শ্লীল। রুপসীর একটু নগ্নবাহু দেখে ওরা হৈ চৈ করে, কিন্তু পথে পথে ভিখিরিনির উলঙ্গ দেহ দেখে ওরা একটুও বিচলিত হয় না।
২৩)মানুষ সিংহের প্রশংসা করে, কিন্তু আসলে গাধাকেই পছন্দ করে।
২৪)শিক্ষকের জীবনের থেকে চোর, চোরাচালানি, দারোগার জীবন অনেক আকর্ষণীয়। এ সমাজ শিক্ষক চায় না, চোর- চোরাচালানি-দারোগা চায়।
২৫)শয়তানের প্রার্থনায় বৃষ্টি নামে না, ঝড় আসে; তাতে অসংখ্য সৎ মানুষের মৃত্যু ঘটে।
২৬)যে বুদ্ধিজীবী নিজের সময় ও সমাজ নিয়ে সন্তুষ্ট, সে গৃহপালিত পশু।
২৭)টেলিভিশন, নিকৃষ্ট জিনিশের একনম্বর পৃষ্ঠপোষক, হিরোইন প্যাথেড্রিনের থেকেও মারাত্মক। মাদক গোপনে নষ্ট করে কিছু মানুষকে, টেলিভিশন প্রকাশ্যে নষ্ট করে কোটি কোটি মানুষকে।
২৮)আর পঞ্চাশ বছর পর আমাকেও ওরা দেবতা বানাবে; আর আমার বিরুদ্ধে কোনো নতুন প্রতিভা কথা বললে ওরা তাকে ফাঁসিতে ঝুলোবে।
২৯)বাঙলাদেশে কয়েকটি নতুন শাস্ত্রের উদ্ভব ঘটেছে; এগুলো হচ্ছে স্তুতিবিজ্ঞান, স্তবসাহিত্য, সুবিধাদর্শন ও নমস্কারতত্ত্ব।
৩০)পরমাত্মীয়ের মৃত্যুর শোকের মধ্যেও মানুষ কিছুটা সুখ বোধ করে যে সে নিজে বেঁচে আছে।
৩১)একটি স্থাপত্যকর্ম সম্পর্কেই আমার কোনো আপত্তি নেই, তার কোনো সংস্কারও আমি অনুমোদন করি না। স্থাপত্যকর্মটি হচ্ছে নারীদেহ।
৩২)প্রতিটি দগ্ধ গ্রন্থ সভ্যতাকে নতুন আলো দেয়।
৩৩)বাঙলার প্রধান ও গৌণ লেখকদের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে প্রধানেরা পশ্চিম থেকে প্রচুর ঋণ করেন, আর গৌণরা আবর্তিত হন নিজেদের মৌলিক মূর্খতার মধ্যে।
৩৪)মহামতি সলোমনের নাকি তিন শো পত্নী, আর সাত হাজার উপপত্নী ছিলো। আমার মাত্র একটি পত্নী। তবু সলোমনের চরিত্র সম্পর্কে কারো কোনো আপত্তি নেই, কিন্তু আমার চরিত্র নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন।
৩৫)বাঙালি মুসলমানের এক গোত্র মনে করে নজরুলই পৃথিবীর একমাত্র ও শেষ কবি। আদের আর কোনো কবির দরকার নেই।
৩৬)অভিনেত্রীরাই এখন প্রাতঃস্মরণীয় ও সর্বজনশ্রদ্ধেয়।
৩৭)কবিরা বাঙলায় বস্তিতে থাকে, সিনেমার সুদর্শন গর্দভেরা থাকে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত প্রাসাদে।
৩৮)মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো পাপ, তবে বাঙালির ওপর বিশ্বাস রাখা বিপজ্জনক।
৩৯)শ্রদ্ধা হচ্ছে শক্তিমান কারো সাহায্যে স্বার্থোদ্ধারের বিনিময়ে পরিশোধিত পারিশ্রমিক।
৪০)আজকাল আমার সাথে কেউ একমত হ'লে নিজের সম্বন্ধে গভীর সন্দেহ জাগে। মনে হয় আমি সম্ভবত সত্যভ্রষ্ট হয়েছি, বা নিম্নমাঝারি হয়ে গেছি।
৪১)‘মিনিষ্টার’ শব্দের মূল অর্থ ভৃত্য। বাঙলাদেশের মন্ত্রীদের দেখে শব্দটির মূল অর্থই মনে পড়ে।
৪২)আগে কাননবালারা আসতো পতিতালয় থেকে, এখন আসে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
৪৩)জনপ্রিয়তা হচ্ছে নেমে যাওয়ার সিঁড়ি। অনেকেই আজকাল জনপ্রিয়তার পথে নেমে যাচ্ছে।
৪৪)উন্নতি হচ্ছে ওপরের দিকে পতন। অনেকেরেই আজকাল ওপরের দিকে পতন ঘটছে।
৪৫)প্রতিটি বিজ্ঞাপনে পণ্যটির থেকে পণ্যাটি অনেক লোভনীয়; তাই ব্যর্থ হচ্ছে বিজ্ঞাপনগুলো। দর্শকেরা পণ্যের থেকে পণ্যাটিকেই কিনতে ও ব্যবহার
করতে অধিক আগ্রহ বোধ করে।
৪৬)কোন দেশের লাঙলের রূপ দেখেই বোঝা যায় ওই দেশের মেয়েরা কেমন নাচে, কবিরা কেমন কবিতা লেখেন, বিজ্ঞানীরা কী আবিষ্কার করেন, আর রাজনীতিকেরা কতোটা চুরি করে।
৪৭)যারা ধর্মের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেয়, তারা ধার্মিকও নয়, বিজ্ঞানীও নয়। শুরুতেই স্বর্গ থেকে যাকে বিতারিত করা হয়েছিলো, তারা তার বংশধর।
৪৮)যতোদিন মানুষ অসৎ থাকে, ততোদিন তার কোনো শত্রু থাকে না; কিন্তু যেই সে সৎ হয়ে উঠে, তার শত্রুর অভাব থাকে না।
৪৯)নারী সম্পর্কে আমি একটি বই লিখছি; কয়েকজন মহিলা আমাকে বললেন, অধ্যাপক হয়ে আমার এ-বিষয়ে বই লেখা ঠিক হচ্ছে না। আমি জানতে চাইলাম, কেনো ? তাঁরা বললেন, বিষয়টি অশ্লীল !
৫০)এদেশে সবাই শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক : দারোগার শোকসংবাদেও লেখা হয়, ‘তিনি শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক ছিলেন!'
৫১)শিল্পকলা হচ্ছে নিরর্থক জীবনকে অর্থপূর্ণ করার ব্যর্থ প্রয়াস।
৫২)কিছু বিশেষণ ও বিশেষ্য পরস্পরসম্পর্কিত; বিশেষ্যটি এলে বিশেষণটি আসে, বিশেষণটি এলে বিশেষ্যটি আসে। তারপর একসময় একটি ব্যবহার করলেই অন্যটি বোঝায়, দুটি একসাথে ব্যবহার করতে হয় না। যেমন : ভণ্ড বললেই পীর আসে, আবার পীর বলতেই ভন্ড আসে। এখন আর ‘ভণ্ড পীর’ বলতে হয় না; ‘পীর’ বললেই ‘ভণ্ড পীর’ বোঝায়।
৫৩)ভক্ত শব্দের অর্থ খাদ্য। প্রতিটি ভক্ত তার গুরুর খাদ্য। তাই ভক্তরা দিনদিন জীর্ণ থেকে জীর্ণতর হয়ে আবর্জনায় পরিণত হয়।
৫৪)মূর্তি ভাঙতে লাগে মেরুদণ্ড, মূর্তিপূজা করতে লাগে মেরুদণ্ডহীনতা।
৫৫)আমাদের সমাজ যাকে কোনো মূল্য দেয় না, প্রকাশ্যে তার অকুণ্ঠ প্রশংসা করে, আর যাকে মূল্য দেয় প্রকাশ্যে তার নিন্দা করে। শিক্ষকের কোনো মূল্য নেই, তাই তার প্রশংসায় সমাজ পঞ্চমুখ; চোর, দারোগা, কালোবাজারি সমাজে অত্যন্ত মুল্যবান, তাই প্রকাশ্যে সবাই তাদের নিন্দা
করে।
৫৬)সৌন্দর্য রাজনীতির থেকে সব সময়ই উৎকৃষ্ট।
৫৭)ক্ষুধা ও সৌন্দর্যবোধের মধ্যে গভীরসম্পর্ক রয়েছে। যে-সব দেশে অধিকাংশ মানুষঅনাহারী, সেখানে মাংসল হওয়া রূপসীর লক্ষণ; যে-সব দেশে প্রচুর খাদ্য আছে,সেখানে মেদহীন হওয়া রূপসীর লক্ষণ। এজন্যেই হিন্দি আর বাঙলা ফিল্মের নায়িকাদের দেহ থেকে মাংস চর্বি উপচে পড়ে। ক্ষুধার্ত দর্শকেরা সিনামা দেখে না, মাংস ও চর্বি খেয়ে ক্ষুধা নিবৃত্ত করে।
৫৮)বাঞ্ছিতদের সাথে সময় কাটাতে চাইলে বই খুলুন, অবাঞ্ছিতদের সাথে সময় কাটাতে চাইলে টেলিভিশন খুলুন।
৫৯)স্তবস্তুতি মানুষকে নষ্ট করে। একটি শিশুকে বেশি স্তুতি করুন, সে কয়েকদিনে পাক্কা শয়তান হয়ে উঠবে। একটি নেতাকে স্তুতি করুন, কয়েকদিনের মধ্যে দেশকে সে একটি একনায়ক উপহার দেবে।
৬০)ধনীরা যে মানুষ হয় না, তার কারণ ওরা কখনো নিজের অন্তরে যায় না। দুঃখ পেলে ওরা ব্যাংকক যায়, আনন্দেওরা আমেরিকা যায়। কখনো ওরা নিজের অন্তরে যেতে পারে না, কেননা অন্তরে কোনো বিমান যায় না।
৬১)শৃঙ্খলপ্রিয় সিংহের থেকে স্বাধীন গাধা উত্তম।
৬২)বাঙলায় তরুণ বাবরালিরা খেলারাম, বুড়ো বাবরালিরাভণ্ডরাম।
৬৩)প্রাক্তন বিদ্রোহীদের কবরে যখন স্মৃতিসৌধ মাথা তোলে, নতুন বিদ্রোহীরা তখন কারাগারে ঢোকে, ফাসিঁকাঠে ঝোলে।
৬৪)একনায়কেরা এখন গণতন্ত্রের স্তব করে, পুজিঁপতিরা ব্যস্ত থাকে সমাজতন্ত্রের প্রশংসায়।
৬৫)বেতন বাঙলাদেশে এক রাষ্ট্রীয় প্রতারণা। এক মাস খাটিয়ে এখানে পাঁচ দিনের পারিশ্রমিক দেয়া হয়।
৬৬)পুরস্কার অনেকটা প্রেমের মতো; দু-একবার পাওয়া খুবই দরকার, এর বেশি পাওয়া লাম্পট্য।
৬৭)বিধাতা মৌলবাদী নয়। কে প্রার্থনা করলো, কে করলো না; কে কোন তরুণীর গ্রীবার দিকে তাকালো, কোন রূপসী তার রূপের কতো অংশ দেখালো, এসব তাকে বিন্দুমাত্র উদ্বিগ্ন করে না। কিন্তু বিধাতার পক্ষে এতে ভীষণ উদ্বিগ্ন বোধ করে ভণ্ডরা।
৬৮)খুব ভেবে চিনতে মানুষ আত্মসমর্পণ করে, আর অনুপ্রাণিত মুহূর্তে ঘোষণা করে স্বাধীনতা।
৬৯)মানুষ যখন তার শ্রেষ্ঠ স্বপ্নটি দেখে তখনি সে বাস করে তার শ্রেষ্ঠ সময়ে।
৭০)এ-বদ্বীপে দালালি ছাড়া ফুলও ফোটে না, মেঘও নামে না।
৭১)অভিনেতারা সব সময়ই অভিনেতা; তারা যখন বিপ্লব করে তখন তারা বিপ্লবের অভিনয় করে। এটা সবাই বোঝে, শুধু তারা বোঝে না।
৭২)বাঙলাদেশের প্রধান মূর্খদের চেনার সহজ উপায় টেলিভিশনে কোনো আলোচনা-অনুষ্ঠান দেখা। ওই মূর্খমন্ডলিতে উপস্থাপকটি হচ্ছেন মূর্খশিরোমণি।
৭৩)বাঙলা, এবং যে-কোনো, ভাষার শুদ্ধ বানান লেখার সহজতম উপায় শুদ্ধ বানানটি শিখে নেয়া।
৭৪)পৃথিবী জুড়ে প্রতিটি নরনারী এখন মনে ক’রে তাদের জীবন ব্যর্থ; কেননা তারা অভিনেতা বা অভিনেত্রী হ'তে পারে নি।
৭৫)মৌলিকতা হচ্ছে মঞ্চ থেকে দূরে অবস্থান।
৭৬)এরশাদের প্রধান অপরাধ পরিবেশদূষণ : অন্যান্য সরকারগুলো পুরুষদের দূষিত করেছে, এরশাদ দূষিত করেছে নারীদেরও।
৭৭)বাঙালি একশো ভাগ সৎ হবে, এমন আশা করা অন্যায়। পঞ্চাশ ভাগ সৎ হ’লেই বাঙালিকে পুরস্কার দেয়া উচিত।
৭৮)বিশ্বের নারী নেতারা নারীদের প্রতিনিধি নয় ; তারা সবাই রুগ্ন পিতৃতন্ত্রের প্রিয় সেবাদাসী।
৭৯)কোন বাঙালি আজ পর্যন্ত আত্মজীবনী লেখে নি, কেননা আত্মজীবনী লেখার জন্যে দরকার সততা। বাঙালির আত্মজীবনী হচ্ছে শয়তানের লেখা ফেরেশতার আত্মজীবনী।
৮০)আজকালকার আধিকাংশ পি এইচ ডি অভিসন্দর্ভই মনে আশার আলো জ্বালায়; মনে হয় এখানেই নিহিত আমাদের শিক্ষাসমস্যা সমাধানের বীজ। প্রথম বর্ষ অনার্স শ্রেণীতেই এখন পি এইচ ডি কোর্স চালু করা সম্ভব, এতে ছাত্ররা আড়াই বছরে একটি ডক্টরেট ডিগ্রি পেতে পারে।এখানকার অধিকাংশ ডক্টরেটই স্নাতকপূর্ব ডক্টরেট; অদূর ভবিষ্যতে উচ্চ-মাধ্যমিক ডক্টরেটও পাওয়া যাবে।
৮১)সত্য একবার বলতে হয়; সত্য বারবার বললে মিথ্যার মতো শোনায়। মিথ্যা বারবার বলতে হয়; মিথ্যা বারবার বললে সত্য ব’লে মনে হয়।
৮২)ফুলের জীবন বড়োই করুণ। অধিকাংশ ফুল অগোচরেই ঝ’রে যায়, আর বাকিগুলো ঝোলে শয়তানের গলায়।
৮৩)ঢাকা শহরে, ক্রমবর্ধমান এ-পাগলাগারদে, সাতাশ বছর আছি। ঢাকা এখন বিশ্বের বৃহত্তম পাগলাগারদ; রাজধানি নয়, এটা পাগলাধানি; কিন্তু বদ্ধপাগলেরা তা বুঝতে পারে না।
৮৪)বদমাশ হওয়ার থেকে পাগল হওয়া অনেক মানবিক।
৮৫)পৌরানিক পুরুষেরা সামান্য অভিজ্ঞতা ভিত্তি ক‘রে অসামান্য সব সিদ্ধান্ত নিতেন। যযাতি পুত্রের কাছে থেকে যৌবন ধার ক’রে মাত্র এক সহস্র বছর সম্ভোগের পর সিদ্ধান্তে পৌছেন যে সম্ভোগে কখনো তৃপ্তি আসে না! এতো বড়ো একটি সিদ্ধান্তের জন্যে সহস্র বছর খুবই কম সময় : আজকাল কেউ এতো কম অভিজ্ঞতায় এতো বড়ো একটি সিদ্ধান্ত নেয়ার সাহস করবে না।
৮৬)একজন চাষী বা নদীর মাঝি সাংস্কৃতিকভাবে যতোটা মূল্যবান, সারা সচিবালয় ও মন্ত্রীপরিষদও ততোটা মূল্যবান নয়।
৮৭)মানুষ ও কবিতা অবিচ্ছেদ্য। মানুষ থাকলে বুঝতে হবে কবিতা আছে : কবিতা থাকলে বুঝতে হবে মানুষ আছে।
৮৮)বাঙালি আন্দোলন করে, সাধারণত ব্যর্থ হয়, কখনোকখনো সফল হয়; এবং সফল হওয়ার পর মনে থাকে না কেনো তারা আন্দোলন করেছিলো।
৮৯)এদেশের মুসলমান এক সময় মুসলমান বাঙালি, তারপর বাঙালি মুসলামান, তারপর বাঙালি হয়েছিলো; এখন আবার তারা বাঙালি থেকে বাঙালি মুসলমান, বাঙালি মুসলমান থেকে মুসলমান বাঙালি, এবং মুসলমান বাঙালি থেকে মুসলমান হচ্ছে। পৌত্রের ঔরষে জন্ম নিচ্ছে পিতামহ।
৯০)নিন্দুকেরা পুরোপুরি অসৎ হ’তে পারেন না, কিছুটা সততা তাঁদের পেশার জন্যে অপরিহার্য; কিন্তু প্রশংসাকারীদের পেশার জন্যে মিথ্যাচারই যথেষ্ট।
৯১)বাস্তব কাজ অনেক সহজ অবাস্তব কাজের থেকে ; আট ঘন্টা একটানা শ্রম গাধাও করতে পারে, কিন্তু একটানা এক ঘন্টা স্বপ্ন দেখা রবীন্দ্রনাথের পক্ষেও অসম্ভব।
৯২)একটি নির্বোধ তরুণীর সাথেও আধ ঘণ্টা কাটালে যে-জ্ঞান হয়, আরিস্ততলের সাথে দু-হাজার বছর কাটালেও তা হয় না।
৯৩)প্রতিটি সার্থক প্রেমের কবিতা বোঝায় যে কবি প্রেমিকাকে পায় নি, প্রতিটি ব্যর্থ প্রেমের কবিতা বোঝায় যে কবি প্রেমিকাকে বিয়ে করেছে।
৯৪)বিলেতের কবিগুরু বলেছিলেন যারা সঙ্গীত ভালোবাসে না, তারা খুন করতে পারে; কিন্তু আজকাল হাইফাই শোনার সাথেসাথে এক ছুরিকায় কয়েকটি-গীতিকার, সুরকার, গায়ক/গায়িকাকে খুন করতে ইচ্ছে হয়।
৯৫)এখন পিতামাতারা গৌরব বোধ করেন যে তাঁদের পুত্রটি গুণ্ডা। বাসায় একটি নিজস্ব গুণ্ডা থাকায় প্রতিবেশীরা তাঁদের সালাম দেয়, মুদিদোকানদার খুশি হয়ে বাকি দেয়, বাসার মেয়েরা নির্ভয়ে একলা পথে
বেরোতে পারে, এবং বাসায় একটি মন্ত্রী পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৯৬)তৃতীয় বিশ্বের নেতা হওয়ার জন্যে দুটি জিনিশ দরকার : বন্দুক ও কবর।
৯৭)টেলিভিশনে জাহাজমার্কা আলকাতরার বিজ্ঞাপনটি আকর্ষণীয়, তাৎপর্যপূর্ণ; তবে অসম্পুর্ণ । বিজ্ঞাপনটিতে জালে,জাহাজে, টিনের চালে আলকাতরা লাগানোর উপকারিতার কথা বলা হয়; কিন্তু বলা উচিত ছিলো যে জাহাজমার্কা আলকাতরা লাগানোর উৎকৃষ্টতম স্থান হচ্ছে টেলিভিশনের
পর্দা, বিশেষ ক’রে যখন বাঙলাদেশ টেলিভিশনের অনুষ্ঠান দেখা যায়।
৯৮)রবীন্দ্রনাথ এখন বাঙলাদেশের মাটিথেকে নির্বাসিত, তবে আকাশটা তাঁর। বাঙলার আকাশের নাম রবীন্দ্রনাথ।
৯৯)গণশৌচাগার দেখলেই কেনোযেনো আমার বাঙালির আত্মাটির কথা বারবার মনে পড়ে।
১০০)আমাদের অধিকাংশের চরিত্রএতো নির্মল যে তার নিরপেক্ষ বর্ণনা দিলেও মনে হয় অশ্লীলগালাগাল করা হচ্ছে।
১০১)এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি,তুমি কথা বলো।
১০২)বিনয়ীরা সুবিধাবাদী, আর সুবিধাবাদীরা বিনয়ী।
১০৩)মোল্লারা পবিত্র ধর্মকেই নষ্ট ক’রে ফেলেছে; ওরা হাতে রাষ্ট্র পেলে তাকে জাহান্নাম ক’রে তুলবে ।
১০৪)জীবন খুবই মূল্যবান : জীবনবাদীরাযতোটা মূল্যবান মনে করে, তার চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান। আর শিল্পকলা জীবনের থেকেও মূল্যবান।
১০৫)দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম প্রেম ব'লে কিছু নেই। মানুষ যখন প্রেমে পড়ে, তখন প্রতিটি প্রেমই প্রথম প্রেম।
১০৬)মার্ক্সবাদের কথা শুনলে এখন মোল্লারাও ক্ষেপে না, সমাজতন্ত্রের কথা তারা সন্তোষের সাথেই শোনে; কিন্তুশরীরের কথা শুনলে লম্পটরাও ধর্মযুদ্ধে নামে।
১০৭)কোন কালে এক কদর্য কাছিম দৌড়ে হারিয়েছিলো এক খরগোশকে, সে-গল্পে কয়েক হাজার ধ’রে মানুষ মুখর। তারপর খরগোশ কতো সহস্রবার হারিয়েছে কাছিমকে, সে-কথা কেউ বলে না।
১০৮)মানুষের তুলনায় আর সবই ক্ষুদ্র : আকাশ তার পায়ের নিচে,চাঁদ তার এক পদক্ষেপের দূরত্বে, মহাজগত তার নিজের বাড়ি।
১০৯)কারো প্রতি শ্রদ্ধা অটুট রাখার উপায় হচ্ছে তার সাথে কখনো সাক্ষাৎ না করা।
১১০)চারাগাছেও মাঝেমাঝে ফোটে ভয়ংকর ফুল।
১১১)পুরুষ তার পুরুষ বিধাতার হাতে লিখিয়ে নিয়েছে নিজেররচনা; বিধাতা হয়ে উঠেছে পুরুষের প্রস্তুত বিধানের শ্রুতিলিপিকর।
১১২)হিন্দুবিধানে পুরুষ দ্বারা দূষিত না হওয়া পর্যন্ত নারী পরিশুদ্ধ হয় না!
১১৩)উচ্চপদে না বসলে এদেশে কেউ মূল্য পায় না। সক্রেটিস এদেশে জন্ম নিলে তাঁকে কোনো একাডেমির মহাপরিচালক পদের জন্যে তদ্বির চালাতে
হতো।
১১৪)সব ধরনের অভিনয়ের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হচ্ছে রাজনীতি; রাজনীতিকেরা অভিনয় করে সবচেয়ে বড় মঞ্চে ও পর্দায়।
১১৫)মৌলবাদ হচ্ছে আল্লার নামে শয়তানবাদ।
১১৬)একটি ধর্মান্ধের মুখের দিকে তাকালেই বোঝা যায় আল্লা অমন লোককে পছন্দ করতে পারে না।
১১৭)ঐতিহ্য বলতে এখানে লাশকেই বোঝায়। তবে লাশ জীবনকে কিছুই দিতে পারে না।
১১৮)গাধা একশো বছর বাঁচলেও সিংহ হয় না।
১১৯)একটি আমলা আর একটা মন্ত্রীর সাথে পাঁচ মিনিট কাটানোর পর জীবনের প্রতি ঘেন্না ধ’রে গেলো; তারপর একটি চড়ুইয়ের সাথে দু-মুহূর্ত কাটিয়ে জীবনকে আবার ভালবাসলাম।
১২০)আমি ঈর্ষা করি শুধু তাদের যারা আজো জন্মে নি।
১২১)ভাবাদর্শগত জীবন হচ্ছে বন্দী জীবন। মানুষ জীবন যাপনের জন্যে জন্মেছে, ভাবাদর্শ যাপনের জন্যে জন্মে নি।
১২২)মুসলমানের মুক্তি ঘটে নি, কারণ তারা অতীত ও তাদের মহাপুরুষদের সম্পর্কে কোনো সত্যনিষ্ঠ আলোচনা করতে দেয় না।
১২২)গান্ধি দাবি করেন যে তিনি একই সাথে হিন্দু, খ্রিষ্টান, মুসলমান, বৌদ্ধ, ইহুদি, কনফুসীয় ইত্যাদি। একে তিনি ও তাঁর অনুসারীরা মহৎ ব্যাপার ব’লে মনে করেছেন। কিন্তু এটা প্রতারণা, ও অত্যন্ত ভয়ঙ্কর ব্যাপার,- তিনি নিজেকে ক’রে তুলেছেন সব ধরনের খারাপের সমষ্টি। এমন প্রতারণা থেকেই উৎপত্তি হয়েছে বাবরি মসজিদ উপাখ্যানের। তিনি যদি বলতেন আমি হিন্দু নই, খ্রিস্টান নই, মুসলমান নই, বৌদ্ধ নই, ইহুদি নই, কনফুসীয় নই; আমি মানুষ, তাহলে বাবরি মসজিদ উপখ্যানের সম্ভাবনা অনেক কমতো।
১২৩)ভারতীয় সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের আধুনিক উৎস মোহনচাঁদ করমচাঁদ গান্ধি।
১২৪)সতীচ্ছদ আরব পুরুষদের জাতীয় পতাকা।
১২৫)পাপ কোনো অন্যায় নয়, অপরাধ অন্যায়। পাপ ব্যক্তিগত, তাতে সমাজের বা অন্যের, এমনকি পাপীর নিজেরও কোনো ক্ষতি হয় না; কিন্তু অপরাধ সামাজিক, তাতে উপকার হয় অপরাধীর, আর ক্ষতি হয় অন্যের বা সমাজের।
১২৬)সবচেয়ে হাস্যকর কথা হচ্ছে একদিন আমরা কেউ থাকবো না।
১২৭)পৃথিবীতে যতোদিন অন্তত একজনও প্রথাবিরোধী মানুষ থাকবে, ততো দিন পৃথিবী মানুষের।
১২৮)সক্রেটিস বলেছেন তিনি দশ সহস্র গর্দভ দ্বারা পরিবৃত। এখন থাকলে তিনি ওই সংখ্যার ডানে কটি শূন্য যোগ করতেন?
১২৯)বাঙালি মুসলমান জীবিত প্রতিভাকে লাশে পরিনত করে, আর মৃত প্রতিভার কবরে আগরবাতি জ্বালে।
১৩০)নজরুলসাহিত্যের আলোচকেরা সমালোচক নন, তাঁরা নজরুলের মাজারের খাদেম।
১৩১)ভ্রষ্ট বাঙালিকে ভালোবাসার শ্রেষ্ঠ উপায় তার গালে শক্ত ক’রে একটি চড় কষিয়ে দেয়া।
১৩২)ভিখিরির জীবন মহৎ উপন্যাসের বিষয় হ'তে পারে, কিন্তু রাষ্ট্রপ্রধানদের জীবন সুখপাঠ্য গুজবনামারও অযোগ্য।
১৩৩)বাঙালির জাতিগত আলস্য ধরা পড়ে ভাষায়। বাঙালি ‘দেরি করে’, ‘চুরি করে’, 'আশা করে', এমনকি ‘বিশ্রাম করে’; বিশ্রামও বাঙালির কাছে কাজ।
১৩৪)বাঙালি অভদ্র, তার পরিচয় রয়েছে বাঙালির ভাষায়। কেউ এলে বাঙালি জিজ্ঞেস করে, ‘কী চাই?’ বাঙালির কাছে আগন্তুকমাত্রই ভিক্ষুক। অপেক্ষা করার অনুরোধ জানিয়ে বাঙালি বলে, ‘দাঁড়ান’; বসতে বলার সৌজন্যটুকুও বাঙালির নেই।
১৩৫)এখানে সাংবাদিকতা হচ্ছে নিউজপ্রিন্ট-বলপয়েন্ট-মিথ্যার পাচঁন।
১৩৬)মানুষ মরণশীল, বাঙালি অপমরণশীল।
১৩৭)এ-সরকার মাঝে মাঝে গোপন চক্রান্ত ফাঁস ক'রে ফেলে। সরকার মাটি আর মানুষের সমন্বয় ঘটানোরসংকল্প ঘোষণা করেছে। আমি ভয় পাচ্ছি, কেননা মাটি ও মানুষের সমন্বয় ঘটে শুধু কবরে।
১৩৮)বাঙলাদেশের রাজনীতিকেরা স্থূল মানুষ, তারা সৌন্দর্য বোঝে না ব'লে গণতন্ত্রও বোঝে না; শুধু লাইসেন্স-পারমিট-মন্ত্রীগিরি বোঝে।
১৩৯)এমন এক সময় আসে সকলেরই জীবনে যখন ব্যর্থতাগুলোকেই মনে হয় সফলতা, আর সফলতাগুলোকে মনে হয় ব্যর্থতা।
১৪০)রাজনীতি ও সংস্কৃতি সম্পুর্ণ বিপরীত বস্তু ; একটি ব্যাধি অপরটি স্বাস্থ্য।
১৪১)মহিলাদের ঘ্রাণশক্তি খুবই প্রবল। আমার এক বন্ধুপত্নী স্বামীর সাথে টেলিফোনে আলাপের সময়ও তার স্বামীর মুখে হুইস্কির ঘ্রাণ পান।
১৪২)আগে প্রতিভাবানেরা বিদেশ যেতো; এখন প্রতিভাহীনেরা নিয়মিত বিদেশ যায়।
১৪৩)অধিকাংশ সুদর্শন পুরুষই আসলে সুদর্শন গর্দভ; তাদের সাথে সহবাসে একটি দুষ্প্রাপ্য প্রাণীর সাথে সহবাসের অভিজ্ঞতা হয়।
১৪৪)পৃথিবী জুড়ে সমাজতন্ত্রের সাম্প্রতিক দুরবস্থার সম্ভবত গভীর ফ্রয়েডীয় কারণ রয়েছে। সমাজতন্ত্রের মার্ক্সীয়, লেলিনীয়, স্তালিনীয় আবেদন ছিলো,কিন্তু যৌনাবেদন ছিলো না।
১৪৫)স্বার্থ সিংহকে খচ্চরে আর বিপ্লবীকে ক্লীবে পরিণত করে।
১৪৬)অপন্যাস হচ্ছে সে-ধরনের সাহিত্য, যা বছরেলাখ টন উৎপাদিত হ’লেও সাহিত্যের কোনো উপকার হয় না; আর আধ কেজি উৎপাদিত না হ’লেও
কোনো ক্ষতি হয় না।
১৪৭)আঠারো তলা টাওয়ারের থেকে শিশিরবিন্দু অনেক উঁচু। চিরকাল শিশিরবিন্দুর পাদদেশে দাঁড়িয়ে আছি, কিন্তু অনেক টাওয়ারের চুড়োয় উঠেছি।
১৪৮)সৎ মানুষ মাত্রই নিঃসঙ্গ, আর সকলের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু।
১৪৯)বিপ্লবীদের বেশি দিন বাঁচা ঠিক নয়। বেশি বাঁচলেই তারা প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে।
১৫০)পুঁজিবাদী পর্বের সবচেয়ে বড়ো ও জনপ্রিয় কুসংস্কারের নাম প্রেম।
১৫১)পৃথিবীতে রাজনীতি থাকবেই। নইলে ওই অপদার্থ অসৎ লোভী দুষ্ট লোকগুলো কী করবে?
১৫২)ক্ষমতায় যাওয়ার একটিই উপায়; সমস্যা সৃষ্টি করা। সমস্যা সমাধান ক’রে কেউ ক্ষমতায় যায় না, যায় সৃষ্টি ক'রে।
১৫৩)পশু আর পাখিরাই মানবিক।
১৫৪)অন্যদের কাহিনীর ক্ষীণ সূত্র নিয়ে হ্যামলেট বা ওথেলো বা ম্যাকবেথ লেখা, আর বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালী কেটে কেটে, নষ্ট ক'রে, সত্যজিতের পথের পাঁচালী তৈরি করা সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা। অন্যের কাহিনীসূত্র নিয়ে হ্যামলেট লেখা মানবপ্রজাতির একজনের বিস্ময়কর প্রতিভার লক্ষণ, আর বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালী ছিঁড়ে সত্যজিতের পথের পাঁচালী তৈরি চিত্রগ্রহণদক্ষতার পরিচায়ক। আরেকটি উৎকৃষ্টতর হ্যামলেট বা ওথেলো বা ম্যাকবেথ, বা মেঘনাদবধ মানুষের ইতিহাসে আর লেখা হবে না; কিন্তু সত্যজিতের পথের পাঁচালীর থেকে উৎকৃষ্ট পথের পাঁচালী হয়তো তৈরি হবে আগামী দশকেই।
১৫৫)সত্যজিত যদি ভারতরত্ন হন, তবে বিভূতিভূষণ বিশ্বরত্ন, সভ্যতারত্ন; কিন্তু অসভ্য প্রচারের যুগে মহৎ বিভূতিভূষণকে পৃথিবী কেনো ভারতও চেনে না, চেনে গৌণ সত্যজিৎকে।
১৫৬)শিল্পীর কতোটা স্বাধীনতা দরকার ? নির্বোধেরা মনে করে এবং দাবি করে যে শিল্পীর দরকার অবাধ স্বাধীনতা। যেনো শিল্পীকে সমাজরাষ্ট্র অবাধ স্বাধীনতা দিয়ে দেবে, আর সে মনের আনন্দে শিল্পকলা সৃষ্টি ক'রে চলবে। এটা শিল্পকলা ও স্বাধীনতা সম্পর্কে এক মর্মস্পর্শী ভ্রান্তি। সত্য এর বিপরীত। সাধারণ মানুষের থেকে একবিন্দুও বেশি স্বাধীনতা শিল্পীর দরকার নয়; সাধারণ মানুষেরই দরকার অবাধ স্বাধীনতা, কেননা তার স্বাধীনতা সৃষ্টি করতে পারে না। শিল্পীর কোনো দরকার পড়ে না দিয়ে দেয়া স্বাধীনতার, কেননা শিল্পীর কাজই স্বাধীনতা সৃষ্টি করা, আর স্বাধীনতা সৃষ্টি করার প্রথাগত নাম হচ্ছে শিল্পকলা।
১৫৭)মানুষ মরলে লাশ হয়, সংস্কৃতি মরলে প্রথা হয়।
১৫৮)ক্ষমতায় থাকার সময় যারা সত্য প্রকাশ করতে দেয় না, ক্ষমতা হারানোর পর তারা অজস্র মিথ্যার প্রকাশ রোধ করতে পারে না।
১৫৯)আমি বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়ে।
১৬০)পৃথিবীর প্রধান বিশ্বাসগুলো অপবিশ্বাস মাত্র। বিশ্বাসীরা অপবিশ্বাসী।
১৬১)শয়তানই আজকাল আল্লা আর ঈশ্বরের নাম নিচ্ছে প্রাণ ভ’রে। আদিম শয়তান আর যাই হোক রাজনীতিবিদ ছিলো না, কিন্তু শয়তান এখন রাজনীতি শিখেছে; আল্লা আর ঈশ্বর আর জেসাসের নামে দিনরাত শ্লোগান দিচ্ছে।
১৬২)আমার লেখার যে-অংশ পাঠককে তৃপ্তি দেয়, সেটুকু বর্তমানের জন্যে; আর যে-অংশ তাদের ক্ষুব্ধ করে সেটুকু ভবিষ্যতের জন্য।
১৬৩)পৃথিবীতে একটি মাত্র দক্ষিনপন্থী সাম্যবাদী দল রয়েছে। সেটি আছে বাঙলাদেশে।
১৬৪)আমাদের প্রায়-প্রতিটি মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিকের ভেতরে একটি ক’রে মৌলবাদী বাস করে। তারা পান করাকে পাপ মনে করে, প্রেমকে গুনাহ্ মনে করে, কিন্তু চারখান বিবাহকে আপত্তিকর মনে করে না।
১৬৫)শ্রেষ্ঠ মানুষের অনুসারীরাও কতোটা নিকৃষ্ট হ'তে পারে চারদিকে তাকালেই তা বোঝা যায়।
১৬৭)ঋষি রবীন্দ্রনাথের ছবি দেখলে বাল্যকাল থেকেই তাঁর জন্মাব্দ ১৮৬১র আগে দুটি বর্ণ যোগ করতে আমার ইচ্ছে হয়। বর্ণ দুটি হচ্ছে খ্রিপূ।
১৬৮)বাঙলার প্রতিটি ক্ষমতাধিকারী দল সংখ্যাগরিষ্ঠ দুর্বৃত্তদের সংঘ।
১৬৯)কবিতা এখন দু-রকম: দালালি, ও গালাগালি।
১৭০)বাঙলাদেশের সাহিত্যে আধুনিকতাপর্বের পর কি আসবে আধুনিকতা-উত্তর-পর্ব ? না। আসতে দেখছি গ্রাম্যতার পর্ব।
১৭১)পাকিস্থানের ইতিহাস ঘাতক আর শহীদদের ইতিহাস। বাঙলাদেশের ইতিহাস শহীদ আর ঘাতকদের ইতিহাস।
১৭২)বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালীর পাশে সত্যজিতের চলচিত্রটি খুবই শোচনীয় বস্তু, ওটি তৈরি না হ’লেও ক্ষতি ছিলো না; কিন্তু বিভূতিভূষণ যদি পথের পাঁচালী না লিখতেন, তাহলে ক্ষতি হতো সভ্যতার।
১৭৩)সৌন্দর্য যেভাবেই থাকে সেভাবেই সুন্দর।
১৭৪)শরীরই শ্রেষ্ঠতম সুখের আকর। গোলাপের পাপড়ির ওপর লক্ষ বছর শুয়ে থেকে, মধুরতম দ্রাক্ষার সুরা কোটি বছর পান ক’রে, শ্রেষ্ঠতম সঙ্গীত সহস্র বছর উপভোগ ক’রে যতোখানি সুখ পাওয়া যায়, তার চেয়ে অর্বুদগুণ বেশি সুখ মেলে কয়েক মুহূর্ত শরীর মন্থন ক’রে।
১৭৫)মানুষের উৎপত্তি সম্পর্কে দুটি তত্ত্ব রয়েছে : অবৈজ্ঞানিকটি অধঃপতনতত্ত্ব,
বৈজ্ঞানিকটি বিবর্তনতত্ত্ব। অধঃপতনতত্ত্বের সারকথা মানুষ স্বর্গ থেকে অধঃপতিত। বিবর্তনতত্ত্বের সারকথা মানুষ বিবর্তনের উৎকর্ষের ফল। অধঃপতনবাদীরা অধঃপতনতত্ত্বে বিশ্বাস করে; আমি যেহেতু মানুষের উৎকর্ষে বিশ্বাস করি, তাই বিশ্বাস করি বিবর্তনতত্ত্বে। অধঃপতন থেকে উৎকর্ষ সব সময়ই উৎকৃষ্ট।
১৭৬)শোনা যায় পুরোনো কালে ঘটতো নানা অলৌকিক ঘটনা, তবে পুরোনো কালের অলৌকিক ঘটনাগুলো বানানো বা ভোজবাজি। প্রকৃত অলৌকিক ঘটনার কাল হচ্ছে বিশশতক। পুরোনো কালের কোনো মোজেজ লাঠিকে সাপ বানাতে, বা সমুদ্রের উপর সড়ক তৈরি করতে পারতেন- ক্ষণিকের জন্যে। ওগুলো নিম্নমানের যাদু। সত্য স্থায়ী অলৌকিকতা সৃষ্টি করতে পেরেছে শুধু বিশশতকের বিজ্ঞান। বিদুৎ, বিমান, টেলিভিশন, কম্পিউটার,নভোযান, এমনকি সামান্য শেলাইকলটিও অতীতের যে-কোনো অলৌকিক ঘটনার চেয়ে অনেক বেশি অলৌকিক। বিজ্ঞান অলৌকিকতাকে সত্যে পরিণত করেছে ব’লে গাধাও তাতে বিষ্মিত হয় না, কিন্তু পুরোনো তুচ্ছ অলৌকিকতার কথায় সবাই বিহ্বল হয়ে ওঠে।
১৭৭)পুরোনো কালের মানুষ যদি দৈবাৎ একটি টেলিভিশনের সামনে এসে পড়তো, তাহলে তাকে দেবতা মনে ক’রে পুজো করতো। আজো সেই পুজো চলতো।
১৭৮)ধর্মের কাজ মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা; তাই এক ধার্মিকের রক্তে সব সময়ই গোপনে শানানো হ’তে থাকে অন্য ধার্মিককে জবাই করার ছুরিকা।
১৭৯)ধার্মিক কখনোই সম্পুর্ন মানুষ নয়, অনেক সময় মানুষই নয়।
১৮০)মৃত সিংহের থেকে জীবিত গাধাও কতো জোতির্ময় উজ্জ্বল !
১৮১)আমার অনুরাগীরা চরম অনুরাগ প্রকাশের সময় খুব আবেগভরে বলেন যে আমার মতো পণ্ডিত ও প্রতিভাবান লোক আর নেই; তাই আমার অনেক কিছুই হওয়া উচিত। যেমন অবিলম্বে আমার হওয়া উচিত কোনো একাডেমির মহাপরিচালক, বা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইত্যাদি।শুনে আমি তাঁদের ও নিজের জন্যে খুব করুণা বোধ করি। আমি হ'তে চাই মহৎ, আর অনুরাগীরা আমাকে ক'রে তুলতে চান ভৃত্য।
১৮২)আপনি যখন হেঁটে যাচ্ছেন তখন গাড়ি থেকে যদি কেউ খুব আন্তরিকভাবে মিষ্টি হেসে আপনার দিকে হাত নাড়ে, তখন তাকে বন্ধু মনে করবেন না। মনে করবেন সে তার গাড়িটার দিকে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ ক'রে আপনাকে কিছুটা পীড়ন ক'রে সুখী হ'তে চায়।
১৮৩)শিশু, সবুজ, তরুণীরা আছে ব’লে বেঁচে থাকা আজো আমার কাছে আপত্তিকর হয়ে ওঠে নি।
১৮৪)টাকাই অধিকাংশ মানুষের একমাত্র ইন্দ্রিয়।
১৮৫)বাঙলার বিবেক খুবই সন্দেহজনক। বাঙলার চুয়াত্তরের বিবেক সাতাত্তরে পরিণত হয় সামরিক একনায়কের সেবাদাসে।
১৮৬)বাঙলাদেশ অমরদের দেশ। এ-দেশের প্রতি বর্গমিটার মাটির নিচে পাঁচ জন ক’রে অমর ঘুমিয়ে আছেন।
১৮৭)একবার রাজাকার মানে চিরকাল রাজাকার; কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা মানে চিরকাল মুক্তিযোদ্ধা নয়।
১৮৮)গত দু-শো বছরে গবাদিপশুর অবস্থার যতোটা উন্নতি ঘটেছে নারীর অবস্থার ততোটা উন্নতি ঘটে নি।
১৮৯)মসজিদ ভাঙে ধার্মিকেরা, মন্দিরও ভাঙে ধার্মিকেরা, তারপরও তারা দাবি করে তারা ধার্মিক, আর যারা ভাঙাভাঙিতে নেই তারা অধার্মিক বা নাস্তিক।
১৯০)মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায় আসে না; যায় আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
১৯১)মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি। কিন্তু ওরা তাকে চালায় ধর্মের নামে।
১৯২)মসজিদ ও মন্দির ভাঙার সময় একটি সত্য দীপ্ত হয়ে ওঠে যে আল্লা ও ভগবান কতো নিষ্ক্রিয়, কতো অনুপস্থিত।
১৯৩)জীবনের সারকথা কবর।
১৯৪)শাড়ি প’রে শুধু শুয়ে থাকা যায়; এজন্যে বাঙালি নারীদেরহাঁটা হচ্ছে চলমান শোয়া।
১৯৫)শাশ্বত প্রেম হচ্ছে একজনের শরীরে ঢুকে আরেকজনকে স্বপ্ন দেখা।
১৯৬)প্রেম হচ্ছে নিরন্তর অনিশ্চয়তা; বিয়ে ও সংসার হচ্ছে চূড়ান্ত নিশ্চিন্তির মধ্যে আহার, নিদ্রা, সঙ্গম, সন্তান, ও শয়তানি।
১৯৭)মধ্যবিত্ত পতিতাদের নিয়ে সমস্যা হচ্ছে তারা পতিতার সুখ ও সতীর পূণ্য দুটিই দাবি করে।
১৯৮)ইতিহাস হচ্ছে বিজয়ীর হাতে লেখা বিজিতের নামে একরাশ কুৎসা।
১৯৯)এখানে কোনো কিছু সম্পর্কে কিছু লেখাকে মনে করা হয় গভীর শ্রদ্ধার প্রকাশ। গাধা সম্পর্কে আমি একটি বই লিখেছি, অনেকে মনে করেন আমি গাধার প্রতি যারপরনাই শ্রদ্ধাশীল। গরু সম্পর্কে আমি একটি বই লিখেছি, অনেকে মনে করেন গরুর প্রতি আমি প্রকাশ করেছি আমার অশেষ শ্রদ্ধা। নারী সম্পর্কে আমি একটি বই লিখেছি। একটি পার্টটাইম পতিতা, যার তিনবার হাতছানিতেও আমি সাড়া দিই নি, অভিযোগ করেছেন, নারী সম্পর্কে বই লেখার কোনো অধিকার আমার নেই, যেহেতু আমি পতিতাদের শ্রদ্ধা করি না, অর্থাৎ তাদের হাতছানিতে সাড়া দিই না।
২০০)পুরুষতান্ত্রিক সভ্যতার শ্রেষ্ঠ শহীদের নাম মা।(সংগ্রহীত)

Tuesday, January 5, 2016

নক্ষত্রের বর্জই প্রানের পওন!

হাজার বছর ধরে মানুষ রাতের ঝলমলে আকাশ দেখে বিস্মিত হয়েছে আর মুগ্ধ নয়নে ভেবেছে বহুদুরের ঝুলন্ত আলোক বিন্দু নিয়ে। আকাশের বুকে জ্বলজ্বলে এই ঝুলন্ত বিন্দুই হলো তারা বা নক্ষত্র। তখনকার দিনে নক্ষত্র মানুষের মনে ঐশ্বরিক চিন্তার যোগান দিত, এমনকি নক্ষত্রদের মাধ্যমে নাবিকরা সমুদ্রে দিক ঠিক করতো। যদিও নক্ষত্র কি, কিভাবে এদের উৎপত্তি – এসব সম্পর্কে তাদের কোন ধারনা ছিলনা। বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে আজ নক্ষত্রদের সম্পর্কে জানার তেমন কিছু বাকি নাই। মজার বিষয় হলো, নক্ষত্ররা নিষ্প্রাণ হলেও অনেকটা জীবিত; এদের জন্ম হয় এবং জীবন শেষে মৃত্যুবরন করে।

মহাবিশ্বে প্রাচুর্যতার দিক দিয়ে নক্ষত্ররাই সবথেকে এগিয়ে। নক্ষত্র হলো সৌরজগতের শক্তি এবং আলোর মুল উৎস। নক্ষত্রগুলো অনেকটা আজকের দিনের পারমানবিক চুল্লির মত, এদের কেন্দ্রেই উৎপন্ন হয় জীবন গঠনের যত প্রয়োজনীয় মৌল। মহাবিশ্ব যদি নক্ষত্রশুন্য হতো তাহলে কোন প্রানের উৎপত্তি হতোনা। উদাহরণস্বরূপ, আমাদের সৌরজগতের কেন্দ্রে অবস্থিত সুর্য কিন্তু আদতে একটা নক্ষত্র।

নক্ষত্রের জন্মকথা

মহাবিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে বহুপ্রকার গ্যাস এবং ধূলিকণা। স্থান বিশেষ এই গ্যাস এবং ধূলিকণার অনুপাত বা পরিমান কমবেশি হয়ে থাকে। বিশেষ কিছু জায়গায় ধূলিকণার পরিমাণ অত্যন্ত বেশি থাকে, এরকম জায়গাকে নেবুলা বলে। যখন কোন ভারী বস্তু নেবুলার পাশ দিয়ে যায় অথবা কাছাকাছি কোন সুপারনোভা বিষ্ফোড়ন ঘটে তখন তার মহাকর্ষ বলের প্রভাবে নেবুলা সঙ্কুচিত হতে থাকে। এই সঙ্কোচনের ফলে নেবুলার অভ্যন্তরে অবস্থিত গ্যাস এবং ধূলিকণা কেন্দ্রে জড়ো হতে থাকে এবং শিশু নক্ষত্র গঠন করে, যাকিনা অনেকটা নক্ষত্রের মত কিন্তু অতবেশি ঘনত্বের নয়। মহাকর্ষের প্রভাবে শিশু নক্ষত্রটি আরো সঙ্কুচিত হয় এবং অধিক পরিমাণ ধূলিকণা এর সাথে যোগ হতে থাকে ফলে এর ভর ও ঘনত্ব দুটোই বেড়ে যায়। ভর ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ায় কেন্দ্রে তাপ উৎপন্ন হতে থাকে। এভাবে যখন ভর এবং তাপমাত্রা একটা নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করে তখন নক্ষত্রটির কেন্দ্রে নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়া শুরু হয় এবং নক্ষত্রটি পরিনত হয়। এটা নক্ষত্রের প্রথম পর্যায় এবং একে মেইন সিকুয়েন্স ফেজ বা মেইন সিকুয়েন্স নক্ষত্র বলে। নক্ষত্রদের জীবনের বেশিরভাগ সময়ই কাটে এই ধাপে। উল্লেখ্য যে আমাদের সুর্য এখনো এ পর্যায়ে আছে।

নক্ষত্রের বিবর্তনঃ-

কালো বামন বলে।

এ পর্যন্ত সবকিছু ঠিক ছিল কিন্তু উক্ত তারার ভর যদি অস্বাভাবিক রকম বেশি হয় তাহলে তারাটি খুব দ্রুত গতিতে চুপশে যাবে ফলে ভয়ংকর রকমের বিষ্ফোড়ন ঘটবে। একে সুপারনোভা বিষ্ফোড়ন বলে। তারাটির ভর যদি আমাদের সুর্যের ভরের ১.৪ গুন বেশি হয়, তাহলে এটি বিষ্ফোড়নের পরেও সঙ্কুচিত হতে থাকবে এবং নিউট্রন তারায় রুপান্তরিত হবে। কিন্তু যদি তারাটির ভর আমাদের সুর্যের ৩ গুন বা তার বেশি হয়, তাহলে এর সঙ্কোচনের হার এতোবেশি হবে যে তারাটির মধ্যকার সমস্ত পদার্থ একটি বিন্দুতে জড়ো হবে এবং বলতে গেলে এটা মহাশূন্যে মিলিয়ে যাবে। সবশেষে থাকবে অসীম মহাকর্ষ বলের একটা গর্ত যেখান থেকে কোন কিছুই বের হতে পারেনা, এমনকি আলোও নয়। এটাকে তখন ব্লাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর বলে।

যাহোক, সাধারণত নক্ষত্রগুলো প্লানেটারি নেবুলা হিসাবে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে প্রসারিত হতে থাকে এবং নিকটবর্তী কোন ভারী বস্তুর মহাকর্ষের প্রভাবে পুনরায় সঙ্কুচিত হতে শুরু করে। এভাবে অসীম সংখ্যকবার চলতে থাকে নক্ষত্র সৃষ্টির মহাজাগতিক পুনর্জন্ম এবং বিবর্তন। আমাদের সৌর জগত মুলত সৃষ্টি হয়েছে এধরনের দ্বিতীয় বা তৃতীয় জেনারেশনের নেবুলা থেকে। একারনে আমাদের পৃথিবী তথা সৌরজগতে বিভিন্ন হালকা ও ভারী মৌলের এতো প্রাচুর্যতা যেটা প্রানের উৎপত্তি সম্ভব করেছে। আমাদের শরীর গঠনের যাবতীয় পরামানু এসেছে নক্ষত্রের কেন্দ্রে ঘটা নিউক্লিয়ার ফিশন থেকে অথবা সুপারনোভা বিষ্ফোড়ন থেকে। এমনকি এমনো হতে পারে যে, আমার দুটি হাতের মৌল হয়তো এসেছে দুটি ভিন্ন নেবুলা থেকে। সত্যি বলতে আমরা সবাই নক্ষত্রের সন্তান। নক্ষত্রের বর্জ্যেই আমাদের পত্তন।