Friday, November 27, 2015

তাকদীরের একটি ভিন্ন ধরণের ব্যাখ্যা


তাকদীরের ধারণা পাওয়ার জন্য সময়ের আপেক্ষিতার ধারণাটা বোঝা দরকার। সময় একটি আপেক্ষিক বিষয়। যেমন ধরুন আমরা এক সেকেন্ড বলতে যে সময়টুকু বুঝি সে সময়টা আপেক্ষিক। কীভাবে?

মনে করুন আমি আপনার থেকে আলোর বেগের কাছাকাছি বেগে দূরে সরে যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে আপেক্ষিতা তত্ত্ব অনুসারে আমি যে টাইম ফ্রেমে থাকব সেটির সময় প্রসারিত হয়ে যাবে। অর্থাৎ আমার এক সেকেন্ডের পরিমাণ আপনার এক সেকেন্ডের পরিমান থেকে বেশী হবে। সুতরাং সময় বিষয়টা অবজারভার এর কন্ডিশনের উপর নির্ভর করে।

এখন মনে করুন আপনি একটি ভিডিও দেখছেন। ভিডিওটি যদি আপনি স্বাভাবিক গতিতে দেখতে থাকেন, সেক্ষেত্রে আপনার কাছে মনে হবে ভিডিওর ভিতরের গতি আপনার পারিপার্শ্বের জীবনের গতির মতই স্বাভাবিক। কিন্তু আপনি যদি ফাস্ট ফরোয়ার্ড করেন তাহলে দেখবেন ভিডিওটির ভিতরের জীবনের গতি দ্রুত হয়ে গেছে। খেয়াল করুন ভিডিওতে কী হয়? ভিডিওতে আসলে অনেকগুলো স্থির চিত্রকে আপনার সামনে দ্রুত সঞ্চালিত করা হয়। ফলে আপনার মনে হয় যেন ভিডিওটা জীবন্ত।

এবার আরেকটু গভীর ভাবে চিন্তা করুন। আমাদের এই বাস্তব জীবনটাকে যদি একটি রিয়েলটাইম থ্রি ডাইমেনশনাল ভিডিও ধরা হয়, তাহলে যেটা মনে হবে যে আমাদের জীবন কতগুলো থ্রিডি স্থির চিত্রের সমষ্টি। যেখানে আল্লাহ তাআলা একটির পর একটি ইমেজকে এমন একটি ইন্টারভেলে আমাদের আত্মার সামনে উপস্থাপন করছেন যেন আমাদের কাছে তা চলন্ত মনে হয়।

যদি এভাবে ধরা হয় তাহলে দেখবেন যে, আল্লাহ তাআলা কীভাবে সবকিছু আগে থেকেই জানেন বা লিখে রেখেছেন তা বুঝা কিছুটা সহজ হয়। কেননা তিনি তাঁর অগ্রীম জ্ঞানের ভিত্তিতে আমাদের জীবনের জন্য প্রযোজ্য সবগুলো ইমেজ সৃষ্টি করলেন এবং একটার পর একটা আমাদের সামনে উপস্থাপন করছেন। এ কারণে আমরা সময়ের গণ্ডিতে আবধ্য। (আল্লাহই ভাল জানেন)

এখানে লক্ষ্যণীয় যেহেতু তিনি তার অগ্রীম জ্ঞানের ভিত্তিতে জানেন যে আমরা কীভাবে জীবন যাপন করব, তার মানে এই না যে তিনি আমাকে যে স্বাধীনতা দিয়েছেন (পরীক্ষা করার জন্য) সেটা ভঙ্গ হল। কেননা তিনি আমাকে স্বাধীনতা দিলে পরে আমি যে পথ অবলম্বন করব সেটা তাঁর জানা। এবং যেহেতু আমাকে অস্তিত্বশীল করতে হবে সেহেতু সেই আলোকে সবগুলো ইমেজ তৈরী করে আমাদের সামনে উপস্থিত করছেন। (আল্লাহই ভাল জানেন)

এ বিষয়টি থেকে এটাও বুঝা সহজ হয় যে কীভাবে আল্লাহ সময়ের অধীন নন। আমি উপরে যখন বললাম যে তিনি অগ্রীম জ্ঞানের ভিত্তিতে তৈরী করছেন তখন বুঝতে হবে যে সেটি আমার আপনার সাপেক্ষে অগ্রীম। আল্লাহর সাপেক্ষে অতীত বা ভবিষ্যত বলে কিছু নেই। তিনি সময়ের স্রষ্টা, সময়ের অধীন নন। বর্তমান মহাবিশ্বের অথবা সম্ভাব্য সকল নিয়মের সকল প্রকার মহাবিশ্বের সকল ঘটনাবলী তার সাপেক্ষে ঘটে গেছে। সুতরাং তিনি যখন কোন কিছু সৃষ্টি করতে ইচ্ছে করেন তখন ঐ সৃষ্টিগুলো নিজস্ব সীমাবদ্ধতা ও গণ্ডি সহ তৈরী হয়ে যায় তথা আত্মপ্রকাশ করে। যেমন আমাদের অন্যতম একটি গণ্ডি হচ্ছে সময়।

যেহেতু মহাবিশ্বের সৃষ্টির শুরুর সাথে সাথে সময়ের শুরু হয়েছে সেহেতু বিষয়টি আপনি অনেকটা এভাবে চিন্তা করতে পারেন যে, সময়ের ডাইমেনশন সহ মহাবিশ্ব সৃষ্টির প্রাথমিক পর্যায়ে একটি বিন্দু ছিল। এখানে কল্পনা করুন একটি ত্রিভুজ যার চূড়া C উপরের দিকে। ভূমি AB নিচে। ভূমির সমান্তরালে ঠিক মাঝ বরাবর একটি রেখা xy. মনে করি মহাবিশ্বের শুরুর বিন্দুটি হল ত্রিভুজটির চূড়ার বিন্দু। এই বিন্দুতেই তাহলে বর্তমানে মহাবিশ্বের সকল ঘটনাবলি পুঞ্জিভূত আছে। সুতরাং এখানে সময় হবে স্থির। ত্রিভুজের যতই নিচের দিকে যাবেন দেখবেন সকল ঘটনাবলির ‘পরিমাণটা’ ফিক্সড থাকলো, কিন্তু সময়ের তৈরী  হল।( কেননা এখন প্রতিটি ইমেজের মধ্যবর্তী একটা স্থান পার্থক্য তৈরী হল, যেগুলো মূল C বিন্দুতে পুঞ্জিভূত ছিল।)  হতে পারে যে আমরা সময়ের এই এক্সপ্যানডিং ইউনিভার্স এর ঠিক মধ্য রেখায় আছি। অন্য কথায় এই xy লাইনটি বরাবর যখন সময় আসলো তখন আল্লাহ সেই লাইন বরাবর আমাদের জন্য সৃষ্ট থ্রিডি ইমেজ গুলো আমাদের আত্মার সামনে দিচ্ছেন। অন্য কথায় রিয়েলটাইম ঘটনাচক্রের এই ক্ষেত্রের সাথে আমাদের আত্মাকে সংযুক্ত করে দিয়েছেন। অথবা হয়ত AB লাইন বরাবর আমরা আছি। দেখুন এখান থেকে কিন্ত এ বিষয়টা পরিষ্কার যে আল্লাহ তাআলা এই টাইম ফ্রেমের বাইরে। একই সাথে তিনি এই ফ্রেমের সকল ঘটনাবলীর স্রষ্টা।

আবার এটাও পরিষ্কার যে কেন তিনি যখন ‘হও’ বলেন, তা হয়ে যায়। কেননা সকল ঘটনা তার সামনে ঘটে গেছে। তিনি টাইম ফ্রেমের বাইরে। তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী যে কোন একটি টাইম ও ঘটনা ফ্রেমে অস্তিত্বশীল হতে পারে। (আল্লাহর এই ‘হও’ বলাটা নি:সন্দেহে মানুষের হও বলার মত নয়) আবার আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা যেহেতু কোন কিছু দিয়েই সীমাবদ্ধ নন, সুতরাং তিনি যা সৃষ্টি করেন তা স্বভাবতই তাঁর মুখাপেক্ষী হয়েই জন্মায়। সবকিছুই স্বভাবজাত ভাবেই তার প্রভুর পবিত্রতা ঘোষণা দিতে থাকে। (অর্থাৎ সৃষ্টির সীমাবদ্ধতাই প্রকাশ করতে থাকে যে স্রষ্টা অসীম)

সুবহানআল্লাহ। আল্লাহ যতটুকু জ্ঞান আমাদের দিয়েছেন তার বাইরে আমাদের কিছুই জানা নাই। আল্লাহই সবকিছু ভাল জানেন।

“আল্লাহ এমন এক চিরঞ্জীব ও চিরন্তন সত্তা যিনি সমগ্র বিশ্ব-জাহানের দায়িত্বভার বহন করছেন, তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই ৷ তিনি ঘুমান না এবং তন্দ্রাও তাঁকে স্পর্শ করে না ৷ পৃথিবী ও আকাশে যা কিছু মানুষের সামনে আছে তা তিনি জানেন এবং যা কিছু তাদের অগোচরে আছে সে সম্পর্কে তিনি অবগত ৷ তিনি নিজে যে জিনিসের জ্ঞান মানুষকে দিতে চান সেটুকু ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ব করতে পারে না ৷ তাঁর কর্তৃত্ব আকাশ ও পৃথিবী ব্যাপী ৷ এগুলোর রক্ষণাবেক্ষন তাঁকে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত করে না ৷ মূলত তিনিই এক মহান ও শ্রেষ্ঠ সত্তা ৷” (সুরা বাকারা: আয়াত ২৫৫)



Reference reading:

1. Matter: Other name for Illusion by Harun Yahya

2. Timelessness and reality of fate by Harun Yahya

3. Tafhim Ebook

চিন্তার খোরাক (দুই)


কখনও কি চিন্তা করেছেন আপনাকে যদি মরুভূমিতে খাবার এবং পানি ছাড়া ছেড়ে দেয়া হয় আপনার কি অবস্থা হবে? পানি ও খাবার ছাড়া আপনি ৩৬ ঘন্টার মুখে মৃত্যুমুখে পতিত হবেন। অথচ একটি উট একই পরিস্থিতিতে বাঁচতে পারে ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত। আবার ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বাঁচতে পারে ৮ দিন।  কিন্তু কিভাবে?

হ্যা, এই উটেই আছে আমাদের জন্য চিন্তার খোরাক। উটের পিছনে যে কুজটি দেখতে পাচ্ছেন করুণাময় আল্লাহ সেটিকে দিয়েছেন উটের প্রয়োজন বিবেচনায় রেখেই। কুজের মধ্যে সঞ্চিত থাকে চর্বি। যা উটের খাদ্যের ভাণ্ডার হিসেবে কাজ করে। কিন্তু প্রশ্ন হল এই চর্বি যদি সাড়া শরীরে ছড়িয়ে থাকত তাহলে অসুবিধে কি ছিল? উত্তর, চর্বির তাপপ্রতিরোধক বৈশিষ্ট্যের কারণে, চর্বি যদি উটের পুরো শরীর জুড়ে থাকত, মরুভূমির প্রচণ্ড গরম আবহাওয়ায় উটের অভ্যন্তরে উৎপন্ন তাপ উটের ভিতরে আটকা পড়ত এবং উটটি মারা পড়ত। অন্যদিকে এই কারণেই কিন্তু তিমির শরীর আবার চর্বি দিয়েই ঘেরা। যাতে সমুদ্রের শীতল তাপ তিমির ভিতরের মেটাবলিক প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিতে না পারে।

আপনি কি জানেন একজন মানুষ ঘন্টায় সর্বচ্চো কত লিটার পানি পান করতে পারে? খুব বেশী ঘাম হলেও ঘন্টায় এক থেকে দেড় লিটারের বেশী পানি খাওয়ার সুযোগ নেই। কারণ হঠাৎ বেশী পানি খেলে রক্তে লবনের ঘনত্ব কমে যায়। ফলে রক্ত থেকে বিভিন্ন কোষে পানি ঢুকে কোষ গুলো ফুলে যেতে থাকে। এভাবে হঠাৎ পানি খেলে লোহিত রক্ত কণিকায় পানি ঢুকে রক্তকণিকাগুলো ভেঙ্গে যাবে আবার মস্তিষ্কে অতিরিক্ত পানি (cerebral oedema) জমলে একজন মানুষ মারাও যেতে পারে।

শুনলে অবাক হবেন, একটি ৬০০ কেজি উট মাত্র ৩ মিনিটে ২০০ লিটার পানি গিলে ফেলতে পারে। এ্যাঁ, তাহলেতো উটটির রক্তে অতিরিক্ত পানি ঢুকে লোহিত রক্ত কণিকাগুলো ভাঙ্গন সৃষ্টি করার কথা? না তা কিন্তু হয় না। কারণ মহান আল্লাহ উটকে দিয়েছেন পানিশূণ্যতা সহ্য করার প্রচণ্ড ক্ষমতা। মানুষ যেখানে পানি কমে মাত্র ১০ শতাংশ ওজন হ্রাস সহ্য করতে পারে, সেখানে উট পারে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত। ফলে এত দ্রুত পানি খেলেও পর্যাপ্ত রিহাইড্রেশন হয়ে যায়। তদুপরি  উটের লোহিত কণাগুলো আমাদের শরীরের ন্যায় গোলাকার নয়, ডিম্বাকৃতির (Oval); ফলে হঠাৎ পানি বেড়ে গেলেও লোহিত কোষগুলোর সেল মেমব্রেন ভেঙ্গে যায় না। আবার এই ওভ্যাল আকৃতির কারনে পানিশূণ্য অবস্থায় কোষগুলো অপেক্ষাকৃত চিকন জালিকা দিয়ে সহজে চলাচল করে অক্সিজেন সরবরাহ অব্যাহত রাখতে পারে।

মরুভূমির খরতাপে পানি পাওয়া বড়ই দুস্কর। তাই উটকে দেয়া হয়েছে পানি ধরে রাখার অপূর্ব ক্ষমতা। উটের শ্বাসনালি দিয়ে যে পানি জলীয় বাস্প হয়ে বের হয়ে যায়, এর নাসারন্ধ্রের অপেক্ষাকৃতি পুরু মিউকাস মেমব্রেন তার প্রায় ৬৬ শতাংশ ধরে রাখতে পারে। এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য। এছাড়াও পানিশূন্য অবস্থায় উট প্রায় ৭৬ শতাংশ প্রস্রাব কমিয়ে দিতে পারে। এমনকি পায়খানার সাথে নি:সৃত পানি কমিয়ে দিতে পারে প্রায় ৫০ শতাংশ।

উটের মধ্যে যদি এই বৈশিষ্ট্যগুলো একসাথে না থাকত তাহলে কি উটের পক্ষে এই প্রখর রোদে বেঁচে থাকা সম্ভব হত? কখনই না। তাহলে এই উট কি একা একা ধাপে ধাপে তৈরী হয়েছে? উট কি মরুভূমির তাপমাত্রা, অধিক তাপমাত্রায় পানির প্রয়োজনীয়তা, পানির ধরে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় শারীরিক পরিবর্তনের ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি ও মলিক্যুলার বায়োলজি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নিয়েছিল?  

কতই না নিঁখুত করুনাময় স্রষ্টার সৃষ্টি পরিকল্পনা। নিশ্চয়ই, সকল প্রশংসা তাঁর।

এজন্যই কি আল্লাহ আমাদের কাছে প্রশ্ন রেখেছেন-

“তাহলে কি এরা উটগুলো দেখছে না, কিভাবে তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে ?”
(সূরা গাশিয়া, সুরা:৮৮; আয়াত:১৭)



সহায়ক পাঠ:

১) Harun Yahya, For man of understanding, page: 41-45

২) http://en.wikipedia.org/wiki/Camel#Evolution

৩) http://discovermagazine.com/2009/jan/05-20-things-you-didnt-know-about-fat#.UWRJBZNTAXs

৪) http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/12053855

৫) http://books.google.com/books?id=g3CbqZtaF4oC&lpg=PP1&pg=PA96#v=onepage&q&f=false

বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া ও স্রষ্টার পরিচয়


যে কোন বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করে চলে। পর্যবেক্ষন, প্রশ্নকরণ, হাইপোথিসিস, পরীক্ষানিরীক্ষা, অবশেষে উপসংহার (যে হাইপোথিসিসটি কি ভুল না কি ঠিক?); ঠিক হলে তা ‘রুল’ এর মর্যাদা পাবে।

এখন, অবজারভেশন হল পৃথিবীতে অসংখ্য জীবিত স্বত্ত্বা বিরাজমান। প্রশ্ন হল এগুলো কোথা হতে কিভাবে এল? হাইপোথিসিস পর্যায়ে এসেই অবজারভারদের দুটো ভাগ। এক ভাগের মতে প্রথম কোষ বা ‘ইউনিভার্সাল কমন এনসেস্টর’ এসেছে অজৈবজনন (Abiogenesis) প্রক্রিয়ায় এবং অন্যান্য প্রানী এসেছে ডারউইনবাদী প্রক্রিয়ায়। আরেকভাগের মতে প্রত্যেকটি প্রানীই পৃথক ভাবে সৃজিত হয়েছে একজন সর্বজ্ঞ স্রষ্টা দ্বারা।

এবার হাইপোথিসিস গুলো পরীক্ষা করে প্রমাণ করার পালা। এই পর্যায়ে এসেই বিপত্তি। বিবর্তনবাদীরা দেখাতে সক্ষম নন কিভাবে বিবর্তনের মধ্য দিয়ে এক প্রজাতি থেকে আরেক প্রজাতি এসেছে। তারা সর্বচ্চো যেটা দেখাতে পারেন একটি প্রজাতি কিভাবে আর্টিফিসিয়াল সিলেকশনের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটাতে পারে। কিন্তু এতে একটি প্রজাতি আরেকটিতে পরিবর্তন হয় না। মাইক্রোইভোলিউশনের যে উদাহরণ দেন সেখানেও কোন প্রজাতি পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার বা করে ফেলার উদাহরণ নেই। এ পর্যায়ে এসে তারা তাই বিভিন্ন কল্পনার আশ্রয় নেয়া শুরু করেন। একটি হাইপোথিসিসকে ডিফেন্ড করেন আরেকটি হাইপোথিসিস দিয়ে। এভাবে কল্পনা সমাহার নিয়ে খুলে ফেলেন আলাদা ডিসিপ্লিন।

অন্য দিকে যারা বলছেন স্রষ্টা সৃষ্টি করেছেন তাদের পক্ষেও এটা এক্সপেরিমেন্টালী দেখানো সম্ভব নয়। তবে সম্ভব হল ‘ইনডাইরেক্ট ইনফারেন্স’ টানা। ঠিক যেমনি একটি ডিজাইন দেখলে একজন ডিজাইনারের হাত আমরা সাথে সাথেই বুঝে নেই, তেমনি স্রষ্টাকে চিনতে সৃষ্টি জগতের ডিজাইনগুলো  দেখে নেয়া এবং দেখিয়ে দেয়াই এদের জন্য যথেষ্ঠ।

এখন এ পর্যায়ে বিবর্তনবাদীদের তাদের তত্ত্ব প্রমাণ করতে হলে অবশ্যই দেখাতে হবে যে কোন ডিজাইন দূর্ঘটনা ক্রমে তৈরী হয় এবং ডারউইনবাদী প্রক্রিয়ায় একটি ডিজাইন থেকে আরেকটি ডিজাইন একা একা দূর্ঘটনার মধ্য দিয়ে আনগাইডেড প্রক্রিয়ায় (Randomly) আবির্ভূত হয়।  যেহেতু জীবের ফিজিওলজি থেকে শুরু করে মলিকিউলার বায়োলজি পর্যন্ত অনেক কিছুই এখন জানার সুযোগ হয়েছে, সেহেতু কিভাবে একা একাই পরিবর্তন হতে পারে সেগুলো প্রয়োজনীয় ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, গণিত দিয়ে ব্যাখ্যা করার দায়িত্ব তাদের।

অর্থাৎ এ পর্যায়ে এসে দেখা যায়, যে হাইপোথিসিস গুলো দাড় করানো হল, ওগুলো নিয়ে ডারউইনবাদী ও ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনবাদীদের আলোচনা ও তর্কবিতর্ক চলে তত্ত্বগত পর্যায়ে। আর যে প্রশ্নগুলো দাড় করানো হয়েছে সেগুলো হল ‘দর্শনগত’ পর্যায়ের।

যেখানে ১৫০ অ্যামাইনো এসিডের একটি মাঝারি সাইজের প্রোটিন আসার বিষয়টি ডারউইনবাদীদের পক্ষে ব্যাখ্যা করা অসম্ভব, সেখানে হাজার হাজার প্রোটিন, লিপিড, কার্বহাইড্রেট, নিউক্লিউটাইড এবং সর্বপোরি নার্ভাস সিস্টেমে ইনস্টলকৃত প্রোগ্রামকে ব্যাখ্যা করার কথা বললে যে তাদের ‘ডেলিরিয়াম’ শুরু হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক তা তাদের লেখা ও মন্তব্যেই বুঝা যায়।

যাই হোক, এ আলোচনায় দ্বিতীয়স্বাভাবিক তা তাদের লেখা ও মন্তব্যেই বুঝা যায়।

যাই হোক, এ আলোচনায় দ্বিতীয় দল যদিও ‘একজন বুদ্ধিমান স্বত্ত্বার’ প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে পারে, একজন ‘অদৃশ্য’ সর্বজ্ঞ স্বত্ত্বায় বিশ্বাস স্থাপন করতে সাহায্য করতে  পারে, কিন্তু উক্ত স্বত্ত্বার পরিচয় পুরোপুরি তুলে ধরতে পারে না।  তাই, এই পরিচয়টা তুলে ধরা জন্যই এগিয়ে এসেছে মহাগ্রন্থ ‘আল কোরআন’; এজন্যই কি আল্লাহ তাআলা বলেন:

“আলিফ লাম মীম ৷ এটি আল্লাহর কিতাব, এর মধ্যে কোন সন্দেহ নেই ৷ এটি হিদায়াত সেই ‘মুত্তাকী’দের জন্য, যারা ‘অদৃশ্যে বিশ্বাস’ করে…” (সূরা বাকারা: ১-৩)

প্রশ্ন হল উপসংহার কি? জ্বি, এই চূড়ান্ত প্রশ্নগুলোর উপসংহার টানা হবে আখিরাতে। দুনিয়ায় যদি এর প্রমাণ দিয়ে দেয়া হত তাহলেতো ‘অদৃশ্যে বিশ্বাসের’ প্রয়োজনীয়তাই থাকত না এবং বলা হত না:

“তিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন যেন তিনি পরীক্ষা করে নিতে পারেন কাজের দিক দিয়ে তোমাদের মধ্যে কে উত্তম।” (সূরা মূলক: ২)

Sunday, November 15, 2015

The_point_of_conflict_and_the_truth


 আমরা জানি মহাবিশ্বের সৃষ্টিতে বস্তুবাদী মতবাদে
বিশ্বাসী নাস্তিক পাওয়া এখন বেশ কঠিন কারন
হাজার যুক্তি বস্তুবাদ মতবাদকে উড়িয়ে দেয়; যেমন
অনাদিকাল থেকে বিশ্ব যদি থাকতো তবে
তেজস্ক্রিয় পদার্থ থাকতো না, হাইড্রোজেন এর
কোন নক্ষত্র থাকা সম্ভব হত না, থাকতো না
হিলিয়াম জ্বালানী এর কোন নক্ষত্র ... যা হোক...
যুক্তি মানে এমন নাস্তিকদের যেহেতু বিগ-ব্যাঙ
থিওরি মেনে নেয়া ছাড়া উপায় থাকে না তাই
তারা বলে যে বিগ ব্যাঙের পরে কোন
পরিকল্পনাকারীর হাত ছাড়াই আপনাআপনি
মহাবিশ্ব বিন্যস্ত ও গঠিত হয়েছে। এবার আসুন- আমারা আমাদের দৃঢ় যুক্তি না দিয়ে আজ
বরং কিছু বিখ্যাত বিজ্ঞানী ও দার্শনিক (যাদের
মদ্ধে নাস্তিকও আছেন) তাদের পর্যবেক্ষণের
ফালফালের পরে তাদের মতামত জেনে নেই।
খ্যাতনামা নাস্তিক দার্শনিক Anthony Flew
এভাবে বলেনঃ কাল্পনিক ভাবে স্বীকার করা মনের
জন্য ভাল, আমি অতঃপর স্বীকার করতে শুরু করবো যে, স্থিতাবস্থায় বিশ্বাসী নাস্তিকেরা সমসাময়িক সৃষ্টিতত্ত্ব বিষয়ক ধ্যান ধারণায় বিব্রত বোধ করে. এতে মনেহয় সৃষ্টিতত্ত্ববৗদরা বৈজ্ঞানিক সত্য গ্রহনে সম্মত হয়েছে যে বিশ্বের একটি শুরু
ছিল.
তার বক্তব্য সরাসরিঃ Notoriously
confession isgood for the soul. I will therefore
begin by confessing that the stratonician
atheist has to beembarrassed by the
contemporary cosmologicalconsensus for it
seems that the cosmologists are providing a
scientific proof that universe had a beginning.
(Henre mergenue, Ray Abraham Varghese,
cosmos, Bios, Theos 1992. P.241)
বিজ্ঞানী Hugh Ross বলেনঃ বিশ্ব সৃষ্টির সাথে
সাথে যদি সময়ের শুরু হয় তাহলে মহাকাশতত্ত্ববিদ
দের মতে বিশ্ব সৃষ্টির কারন এমন এক সত্ত্বা
যিনি সময়ে অবস্থান করে সব কিছু পরিচালিত
করেন, উল্লেখ করতে হয় যে; তিনি বিশ্বের সময়ের
পরিধি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত এক সতন্ত্র সত্ত্বা...
তার বক্তব্য সরাসরি হলঃ If times beginning is
concurrent with the beginning with the
beginning of the universe, as the space
theorem says then the cause of the universe
must be some entity operation in a time
dimension completely independent of and
preexistent to time dimension of the cosmos .
this conclusion tell us that god is not the
universe itself, not is god contained in the
universe ( Creator and the cosmos.1993.
p.112)
Stephen Hawking তার ব্রিফ হিস্টরি অফ টাইম
গ্রন্থে বলেনঃ বিশ্বকে হিসাবনিকাশ ও
ভারসাম্যের উপর সৃষ্টি করা হয়েছে এবং
বিশ্ব এমনভাবে সমন্বিত যা কেউ তা কল্পনা করতে
পারেনা। বিশ্বের প্রসারণের অনুপাত প্রসঙ্গে
তিনি বলেন, বিগ ব্যাঙের এক সেকেন্ড পর
প্রসারণের অনুপাত যদি মিলিয়ন মিলিয়ন অংশের
একাংশও কম হত তাহলে বিশ্ব বর্তমান অবস্থায়
আসার পূর্বেই আবার ধ্বংস হয়ে যেত.
তিনি বইয়ে যেভাবে লেখা আছে তা হলঃ If the rate of
expansion one second after the big bang had
been smaller by even one part in a hundred
thousand million , the universe would have re-
collapsed before it ever reached its present
size. (Stephen Hawking , A Brief History Of
Time. 1988. P.181)
Paul Davies তার God and the new Physics বইয়ে
লিখেছেনঃ It is hard to resist the impression
that the present structure of the universe,
apparently so sensitive to minor alternation in
the numbers, has been rather carefully thought
out . The seemingly miraculous concurrence of
numerical values that nature has assigned to
her fundamental constants must remain the
most compelling evidence for an element of
cosmic design. (God and the new Physics.1983.
p.189)
এর দ্বারা বুঝা যায় অবশ্যই এক অতি
বুদ্ধিমান সত্ত্বা রায়েছেন মহাবিশ্বের সৃষ্টি ও
তার সুনিপুণ বিস্তারের পেছনে

Friday, November 13, 2015

হিন্দী সিরিয়াল।

স্টার জলসা, জি বাংলা, সনি, এমন সব চ্যানেল গুলোতে যেসব টিভি সিরিয়াল গুলো দেখানো হয় তাতে করে বিনোদনের চাইতে সমাজ, সংসার, আর পরিবারের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টির উপাদানই বেশি । আর এক শ্রেণীর দর্শক রয়েছে যারা এসব সিরিয়াল এতই সিরিয়াসলি দেখেন যে তাদের আচার আচরন, কথা বার্তা, চিন্তা চেতনা, সাজ পোশাক সবই সিরিয়ালের দেখানো মানুষ গুলোর মতোই হয়ে যায় । কোনো ভাবেই সহজ কিছুকে সহজ করে নিতে পারে না এরা । এক সময় গিয়ে সবার দোষ ধরে বেড়ানো, চোগল খুরি, আর গীবত করা শুরু করে দেয় নিজেদের অজান্তেই । স্বামী স্ত্রী, বাবা মা, ভাই বোন, বউ শাশুড়ি, প্রেমিক প্রেমিকা সব কিছুর মধ্যেই গলদ, সন্দেহ, আর কুটনামির চরম স্তর দেখে দেখে নিজেদের পরিবার আর সম্পর্কের ভেতর ফাটল ধরানোদের সংখ্যা কম নয়। আবার রান্না ঘরে খাবার পুড়িয়ে ফেলানোর সংখ্যাও কম নয় । তবুও কে কাকে শুধরাবে । নামাজ পড়ে তসবিহ গুনতে গুনতে স্টার জলসায় হারিয়ে যাওয়াদের সংখ্যাও ফেলে দেয়ার মতো নয় বলে শেষ করা যাবে না; এমন অসংখ্য বিশেষনই এদের পরিচয় করিয়ে দেয়া যায় । সিরিয়াল কে ঘিরেই এদের শত ব্যস্ততা। তাই হয়তো এখন স্ত্রী অথবা মা দের ঊল কিনে স্বামীর জন্য বা সন্তানের জন্য সোয়েটার বানানোর দৃশ্য চোখে পড়ে না, কিংবা ভালোবাসার উপহার হয়ে সুই সুতোয় বোনা "মনে রেখো আমায়" রুমাল টাও আজ চোখে পড়ে না । এভাবে সিরিয়ালি অনেক কিছুই চোখে পড়বে না আস্তে আস্তে । সিরিয়াসলি একদিন এই সব সিরিয়ালের পর্দা ঢেকে দেবে চোখ আমাদের । মুখস্থ হয়ে যাবে জীবন মানেই জি-বাংলা। পূর্ণিমা চাঁদ ঝলসানো রুটি হয়ে গেলেও স্টার জলসায় ঝলসে যেতে আমাদের লজ্জা হবে না কোনো দিনও । - - -
- কাম হইব না ভায়া। কারন যাদেরকেকে উদ্দেশ্য করে বলছি এই চ্যানেলগগুলো বন্ধ করতে তাদের বউ বাচ্চারাই এই চ্যানেল দেখে। আর তারা যদি এই চ্যানেল দেখেতে না পায় আপনার কি মনে হয় তাদের সংসার টিকবে?

★একটি হিন্দী সিরিয়ালের স্ক্রিপ্ট!
কাহিনী সংক্ষেপ : নায়িকা তার বয়ফ্রেন্ডের মেইল চেক করবে।
পর্ব ১
কামিনী ঘুম থেকে উঠেই ওয়াশরুমে ঢুকবে। ক্যামেরা ওয়াশরুমের দরজায় আপ ডাউন করবে চারবার।ব্যাকগ্রাউন্ডে ধুম ধুম সাউন্ড হবে। এরপর ক্যামেরা পুরো ঘর দেখাবে। কম্পিউটার দেখানোর সময় তীব্র মিউজিক বেজে উঠবে!
কামিনী ওয়াশরুম থেকে বেরুবে,ক্যামেরা পুরো ঘর ঘুরিয়ে নায়িকাকে চারবার দেখাবে। এরপর সে ড্রেসিং টেবিলে বসে সাজুগুজু করবে। ক্যামেরা একবার কম্পিউটার, একবার ড্রেসিং টেবিল তীব্র মিউজিকের সাথে ফোকাস করবে চারবার।
(পরের পর্বের ট্রেলার যাবে)
পর্ব ২
(আগের পর্বের হাইলাইটস দেখানো হবে)
কামিনীর ঠোঁটের লাল লিপিষ্টিক থেকে এ পর্ব শুরু হবে। এরপর ঝমকালো শাড়ী দেখান হবে।গলায় গহনা চিকচিক করবে এনার্জী বাল্বের আলোয়।ড্রেসিং টেবিল থেকে উঠে কামিনীর চোখ যাবে কম্পিউটারের দিকে। ক্যামেরা একবার কম্পিউটার একবার কামিনীর চোখ দেখাবে,এভাবে ৩ বার।ব্যাকগ্রাউন্ডে শব্দ হবে।ধিবধিবধিব (যেন জীবন মৃত্যূর সন্ধীক্ষনে কেউ)
হঠাৎ কামিনীর মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠবে। মোবাইল ফোকাস করা হবে দু মিনিট। স্লো মোশনে দৌড়ে গিয়ে সে ফোনটা ধরবে। কি কথা বলছে দর্শক শুনবে না। কথা বলার সময় এমন মিউজিক দিতে হবে যেন দর্শক ভাবে স্বয়ং ওসামা বিন লাদেন ফোন দিয়েছে ওপার থেকে। (ওপার মানে ওপার বাংলা না আবার)
(আগামি পর্বের ট্রেলার যাবে)
পর্ব ৩
(আগের পর্বের হাইলাইটস দেখান হবে)
কামিনী ধীরে ধীরে এগিয়ে যাবে কম্পিউটারের দিকে। ধীরে ধীরে!কামিনী চেয়ারে বসে ঘরের চারিদিকে দেখবে। ক্যামেরায় পুরো ঘর দেখানো হবে।পিসির ষ্টার্ট বাটনটি কামিনী চাপ দিবে। ধুম করে শব্দ হবে। না পিসি ব্লার্ষ্ট করেনি এটা ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক। ধীরে ধীরে ওপেন হতে যাচ্ছে কম্পিউটার।ব্যাকগ্রাউন্ডে কোন মিউজিক থাকবে না। পিনপতন নীরবতা। তীব্র সাউন্ডে উইন্ডোজের ষ্টার্টিং টোন বেজে উঠবে। ক্যামেরা ভীত কামিনী চারবার দেখাবে।
মডেম কানেক্ট দিয়ে কামিনী। ধুম করে শব্দ হয়ে ডিসকানেক্ট হয়ে যাবে। কামিনী চেষ্টা করে যাবে। ততক্ষন রুমে ঘুরতে থাকা ফ্যান দেখান হবে ক্যামেরায়। কামিনী চেষ্টা করতেই থাকবে,করতেই থাকবে। আবার ধুপ করে বিকট শব্দ হবে। নাহ ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক না,ট্রান্সফরর্মার ব্লাষ্ট করেছে!
(পরের পর্বের ট্রেলার দেখানো হবে)
পর্ব ৪
(আগের পর্বের হাইলাইটস দেখান হবে)
আবার ধুম করে সাউন্ড,বিদ্যূৎ আসছে। গোৎগোৎ করে ফ্যান চলছে। ক্যামেরা রোলিং করে সে ফ্যান দেখানো হচ্ছে। সাথে সাইসাই শব্দ। এবার ক্যামেরায় কামিনীর থুতুনীতে চিকচিক করা ঘাম দেখা যাবে।জুম করে ঘাম বড় হচ্ছে বড় হচ্ছে এত্ত এত্ত বড় করে হুট করে জুম আউট করে ঘাম উদাও। ক্যামেরা আবার মনিটরের দিকে।অন্ধকার মনিটর,ব্যাকগ্রাউডেন্ড ধিবধিব শব্দ,হঠাৎ হ্যাঁ হঠাৎ মনিটরে আলো জ্বলে উঠবে। কামিনীর চোখে তীব্র কনফিউজড,সে মডেম কানেকশন দিয়ে জিমেইল লগইন করবে। কিন্তু নেট স্লো.....আবার ঢিবঢিব ঢিব। ইয়েস কামিনী ইনবক্সে ঢুকবে। ঢুকেই একটা হাসি দিবে। তার বয়ফ্রেন্ড মেইল করেছে "হ্যালো বেইবী গুড মর্নিং"
শেষ- The end.


★বর্তমান বিশ্বে গড় আয়ু সবচে বেশী হলো হিন্দী সিরিয়ালের নায়ক নায়িকাদের। কখনো কখনো তারা মৃতূঞ্জয়ী। তারা এমনিতে মরে না,যদি মরে তবে মরে গিয়ে ফিরে আসে। ছেলেরা মরে গিয়ে ফিরে আসে খোঁচা খোঁচা দাড়ি নিয়ে,মেয়েরা ফিরে আসে ঠোঁটে লাল রং লাগিয়ে। ছেলেরা ফিরে এসে অন্যের বউকে ভাগিয়ে নিয়ে যায়। মেয়েরা ফিরে এসে অন্যের সংসার ভেঙ্গে দেয়।


★ নেপাল পারে আমরা পারি না কেন? ‘
তোমরা ভারতীয় টিভির সিরিয়ালমুক্ত একটা মা দাও/আমি তোমাদের ঝগড়ামুক্ত একটা পরিবার দেব’ এটা জনৈক ব্যক্তির ফেসবুক স্ট্যাটাস। ভারতীয় টিভির সিরিয়াল মানেই পারিবারিক বিরোধ, ঝগড়া-ঝাটি, পরকীয়া, লিভ টুগেদার, চালাকি, অপটতা, মিথ্যাবাদিতা, অশ্লীলতা, হিন্দুত্ববাদী, শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি, মন্দিরের ঘণ্টা, ঢোলবাদ্য আর অনৈতিকতা। এসব চ্যানেল সিরিয়াল মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। ‘দেখার দেখা/শেখার শেখা’ প্রবাদের মতো আমাদের দেশে পারিবারিক বিরোধ বাড়ছে। নৈতিক অবক্ষয়, পারিবারিক ও সামাজিক অবক্ষয় শুরু হয়ে গেছে। তিনটি ভারতীয় চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধের দাবিতে হাইকোর্টে রিট হওয়ায় ‘কেন স্টার জলসা, স্টার প্লাস, জি বাংলা সম্প্রচার বন্ধ করা হবে না’ কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছে আদালত বহুদিন আগে। তারপরও বাংলাদেশের নীতি-নির্ধারকরা পারেনি বিজাতীয় সংস্কৃতির ধারক-বাহক ভারতীয় টিভি সম্প্রচার বন্ধ করতে। কিন্তু নেপাল দেখিয়ে দিয়েছে ভারতকে কীভাবে শিক্ষা দিতে হয়। ভারত সীমান্তে পণ্যবাহী ট্রাক আটকে রাখার কারণেই নেপাল সব ভারতীয় চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে। সেখানে সেøাগান উঠেছে ‘নো মোড় ভারতীয় চ্যানেল’।ছোট্ট দেশ নেপাল পারে; আমরা পারিনা কেন? ভারতীয় সবকটি টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচার নিজেদের দেশে বন্ধ করে দিয়েছে নেপালের ক্যাবল টেলিভিশন অপারেটররা। ভারত সীমান্তে জ্বালানিসহ অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বোঝাই ট্রাক আটকে রাখার প্রতিবাদে মঙ্গলবার তারা এই সিদ্ধান্ত নেয়। হিমালয়ের পাদদেশে ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত নেপাল প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে ভারতের ওপর নির্ভরশীল। তারপরও তারা ‘ভারতীয় টিভি আর নয়’ এমন কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশ হিসেবে ভারত ধর্ম নিরপেক্ষ দাবি করলেও মূলত হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র। ক্ষমতাসীন আর এসএসের ভাবশীর্ষ বিজেপি এখন ক্ষমতায়। হিন্দুত্ববাদ প্রচারই তাদের নীতি। দিল্লির সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্যে সেটা পরিষ্কার। কিন্তু নেপাল হিন্দুত্ববাদীতে আটকে থাকতে চায়নি। সম্প্রতি হিন্দু রাষ্ট্রের পরিবর্তে নেপাল নিজেদের ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র ঘোষণা দিয়ে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করেছে। বিবিসির খবরে প্রকাশ ‘এরপরই নেপালের এই সংবিধানের সমালোচনায় সোচ্চার হয়ে উঠে ভারত’। নেপাল সরকার ভারতের এ সমালোচনার কড়া জবাব দিয়েছে গত সপ্তাহে। এর প্রতিক্রিয়ায়ই দুই দেশের সীমান্তে বিএসএফ নেপালগামী জ্বালানিসহ পণ্যবাহী ট্রাক আটকে দিচ্ছে। সীমান্তে পণ্যবাহী ট্রাক আটকানোর ঘটনায় বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে নেপালের মানুষকে। প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার নেপালের ক্যাবল অপারেটররা ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার নেপালে বন্ধ করে দেয়। ভারতীয় সিনেমার প্রদর্শনীও বন্ধ করে দিয়েছে নেপালের কয়েকটি সিনেমা হল কর্তৃপক্ষ। বিবিসির খবরে প্রকাশ নেপাল ক্যাবল টিভি অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান সুধীর পরাজুলি জানিয়েছেন, ‘তারা মনে করেন নেপালের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ করছে ভারত’। এ জন্য তারা ৪২টি ভারতীয় স্যাটেলাইট চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে। অবশ্য ভারত এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি নিরাপত্তার কারণে সীমান্তে ট্রাক আটকানো হয়েছে।সম্প্রতি ভারতের সেনাবাহিনী সেভেন সিস্টার্স এ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের সময় মায়ানমার সীমান্ত অতিক্রম করে। এ খবর প্রচার হওয়ায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে মায়ানমার সরকার। অথচ হরহামেশাই সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা (বিএসএফ) বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে এবং আমাদের লোকজনকে হত্যা করছে। সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি হত্যা কার্যত নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়ে গেছে। তারপরও আমরা কোনো শব্দ করছি না। শুধু তাই নয় নেপালের সংবিধান ইস্যুতে ভারতের প্রতিক্রিয়া সে দেশের সরকার ও সাধারণ মানুষ ‘অভ্যন্তরীণ রাজনীতির হস্তক্ষেপের সামিল’ মনে করে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং ভারতীয় ৪২টি চ্যানেল সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে। আর আমরা? বাংলাদেশের রাজনীতি যেন নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে দিল্লির সাউথ ব্লক থেকেই। ক্ষমতা ধরে রাখতে এবং ক্ষমতায় যেতে আমাদের নেতানেত্রীরা যেন দিল্লিকে তোয়াজের প্রতিযোগিতা করেন। দিল্লির শাসকদের অনুকম্পা পেতে আমরা কতই না কসরত করছি! বড় দলগুলোর নেতা-নেত্রীদের আচরণ এবং কথাবার্তা এমন যে ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর দিল্লির আশীর্বাদ অপরিহার্য। দেশের জনগণের ভোট নয়, বরং ক্ষমতায় কোন দল যাবে বা থাকবে তা নির্ধারণ করে দেয় দিল্লির সাউথ ব্লক।’ অবশ্য ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তেমনটিই ঘটেছে বলে মনে করেন দেশের বুদ্ধিজীবী ও ভোটের অধিকার হারানো সাধারণ মানুষ। বিতর্কিত ওই নির্বাচনের আগে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং ঢাকা সফরে এসে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদকে পরামর্শ দেন ‘আওয়ামী লীগ যেভাবে চায় সেভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্বাচন করার’। তিনি বিভিন্ন দলের নেতার সঙ্গে বৈঠক করে দিল্লির বার্তা পৌঁছে দেন। পরবর্তীতে সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদ এই তথ্য ফাঁস করে দেয়ায় মিডিয়ায় তোলপাড় হয়। বাংলাদেশে রাজনীতির নামে যে অপরাজনীতি চলছে; নীতি নৈতিকতার বদলে যে অনৈতিকতার চর্চাই বেশি হচ্ছে সেটা ওপেন সিক্রেট। ভারতের ক্ষমতাসীন দলের সভাপতি অমিতশাকে ফোন করার ‘সত্যমিথ্যা’ নিয়ে আওয়ামী লীগ আর বিএনপির নেতাদের মধ্যে যে বাহাস হয়েছে তাতে জনগণের কাছে দুই দলের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে যায়। নেতা-নেত্রীদের পরমুখাপেক্ষীতার কারণে ভারতের ওপর নির্ভরশীল হয়েও নেপাল যা পারছে, আমরা তা পারছি না কেন? আমাদের কি দেশপ্রেম, নীতি নৈতিকতা, সাহসের বড়ই অভাব? নাকি আমরা অপরের গলগ্রহ হয়ে তাঁবেদারের মতো বেঁচে থাকতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি? দেশের সকলেই একবাক্যে স্বীকার করছেন ভারতীয় চ্যানেলের বিরূপ প্রভাব পড়ছে আমাদের সমাজে। ওই সব চ্যানেল সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে দিচ্ছে অনৈতিকতা। বিজ্ঞাপন, সংগীত শিক্ষালয়, নাট্যবিদ্যালয়, নাট্যশালা, আর্টস স্কুল, ফ্যাশন-শো, সংগীত-অভিনয়-সুন্দরী প্রতিযোগিতা, পাঠ্যপুস্তক, সাহিত্য, সেমিনার, এনজিও, হাসপাতাল, রূপচর্চা কেন্দ্র, শিক্ষাবৃত্তি, ক্লাব-সমিতি, সাংস্কৃতিক সফর, চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে। পাশাপাশি তাদের টিভি চ্যানেলগুলোতে নিত্যদিন প্রচারিত গল্পবিহীন সিরিয়ালে কপটতা, অনৈতিকতা, পারিবারিক কলহ, কুটিলতা, শিশুদের মিথ্যা বলা, ছলাকলা, চাতুরি শেখানোর কৌশলে ভরপুর। অশ্লীলতা ছাড়াও পারিবারিক কলহ, ভাইয়ে ভাইয়ে বিরোধ, মা-ছেলে বিরোধ, বউ-শাশুড়ির ঝগড়া, বউ-ঝি’র হিংসা-বিদ্বেষ শেখানো-দেখানো নিত্যদিন। অভিনেত্রীদের মেকাপ-গেটআপে অর্ধনগ্ন-অশ্লীলতায় ভরপুর এসব সিরিয়ালের মাধ্যমে হিন্দুদের ধর্মীয় সাংস্কৃতি আমাদের সমাজে ছড়িয়ে দিচ্ছে। ভারতীয় চ্যানেলে নিত্য প্রচারিত শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি, মন্দিরের ঘণ্টা, ঢোলবাদ্য ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ হিসেবে পরিচিত নেপালের মানুষ পছন্দ করছে না। যার কারণে তারা ভারতীয় ৪২টিভি চ্যানেলের সম্প্রদার বন্ধ করে দিয়েছে। অথচ আমরা সে সাহস দেখাতে পারছি না? জাতি হিসেবে নেপাল কি আমাদের চেয়ে বেশি উন্নত? সুচকের প্রতিটি ক্ষেত্রে নেপাল আমাদের (বাংলাদেশ) নিচে। তারপরও ছোট্ট দেশ নেপাল যা পারে আমরা তা কেন পারছি না কেন?

Thursday, November 12, 2015

কাদিয়ানীদের আদি-অন্ত


কাদিয়ানী ধর্মমত : সমস্যা উপলব্ধি ও সমাধানের সহজ পথ

মাওলানা আহমদ মায়মূন

[ইসলামবিরোধী অমুসলিম কাদিয়ানী সম্প্রদায় তাদের পরিচয় দেয় ‘আহমদিয়া মুসলিম জামাত’ বলে। এ মুখোশের আড়ালে তারা তাদের বর্ণচোরা ও প্রতারক চরিত্রতটিকে সক্রিয় রাখে। বাংলাদেশে কাদিয়ানী তৎপরতার ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সম্প্রতি বিভিন্ন পত্রিকায় পাতাজুড়ে বিজ্ঞাপন ছাপিয়ে নিজেদের
কর্মকান্ড ও ‘কৃতিত্বের’ বর্ণনা তুলে ধরেছে। এতে নতুন করে সরলপ্রাণ বহু মুসলিমের প্রতারিত হওয়ার আশংকা তৈরি হচ্ছে। আমরা তাই কাদিয়ানীদের ধর্মবিশ্বাস, মিথ্যাচার ও প্রতারণার প্রকৃত চিত্রটি তুলে ধরতে মাসিক আলকাউসার-এর ২০০৫ সালের মে সংখ্যায় প্রকাশিত এ নিবন্ধটি পুনঃমুদ্রণ করছি।-সম্পাদক]

কাদিয়ানী মতবাদের সাথে ইসলামের বিরোধ কোথায় এবং কেন সচেতন মুসলিম সমাজ কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণার দাবি করে-এ প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে কয়েকটি বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা নেওয়া প্রয়োজন।

ইসলামের মৌলিক আকীদা

আল্লাহ তাআলা মানব জাতির যোগ্যতা ও উপযোগিতা হিসাবে কালক্রমে তাদের বিভিন্ন শরীয়ত দিয়েছেন। আর এর পূর্ণতা ও পরিসমাপ্তি বিধান করেছেন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে। দ্বীনের পূর্ণাঙ্গতা লাভের পর যেহেতু এতে কোনোরূপ সংযোজন ও বিয়োজনের প্রয়োজন বা অবকাশ নেই তাই মানবজাতির জন্য নতুন শরীয়তেরও প্রয়োজন নেই। সুতরাং আল্লাহ তাআলা নবী-রাসূল প্রেরণের ধারা চিরতরের জন্য বন্ধ করে দিয়েছেন। এটা ইসলামের অন্যতম মৌলিক বিশ্বাস। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, (অর্থ) ‘‘আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণতা দান করেছি, আর আমি তোমাদের জন্য আমার নেয়ামতকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছি এবং দ্বীন হিসেবে ইসলামকে তোমাদের জন্য মনোনীত করেছি।’’ (সূরা মায়েদা : ৩) পবিত্র কুরআনে অন্যত্র বলা হয়েছে, (অর্থ) ‘‘মুহাম্মদ তোমাদের মধ্যকার কোনো বয়স্ক পুরুষের পিতা নন, তবে তিনি আল্লাহর রাসূল এবং সর্বশেষ নবী।’’-সূরা আহযাব : ৪০

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অন্যান্য নবীর মুকাবিলায় আমাকে ছয়টি বিষয় দ্বারা বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করা হয়েছে, ১. আমাকে অল্প কথায় বেশি ভাবপ্রকাশের যোগ্যতা দেওয়া হয়েছে, ২. আমাকে গাম্ভীর্যজনিত প্রতাপ-প্রতিপত্তি দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে, ৩. আমার জন্য গণীমতের মাল হালাল করে দেওয়া হয়েছে, ৪. সমগ্র ভূপৃষ্ঠকে আমার জন্য নামায পড়ার উপযোগী জায়গা ও পবিত্রতা অর্জনের উপকরণ হিসেবে স্থির করা হয়েছে, ৫. আমাকে সমগ্র সৃষ্টি জগতের রাসূলরূপে প্রেরণ করা হয়েছে, ৬. আমার দ্বারা নবীদের সিলসিলার পরিসমাপ্তি ঘটানো হয়েছে।’’ (সহীহ মুসলিম, মাসাজিদ, হাদীস : ৫২৩)

অপর এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমার ও নবীদের উদাহরণ এমন একটি প্রাসাদ, যা খুব সুন্দর করে নির্মাণ করা হয়েছে, তবে তাতে একটি ইটের জায়গা খালি রেখে দেওয়া হয়েছে। দর্শকবৃন্দ সে ঘর ঘুরে ফিরে দেখে, আর ঘরটির সুন্দর নির্মাণ সত্ত্বেও সেই একটি ইটের খালি জায়গা দেখে আশ্চর্য বোধ করে (যে, এতে একটি ইটের জায়গা কেন খালি রইল!) আমি সেই একটি ইটের খালি জায়গা পূর্ণ করেছি। আমার দ্বারা সেই প্রসাদের নির্মাণ পরিসমাপ্ত হয়েছে, আর আমার দ্বারা রাসূলদের সিলসিলা পরিসমাপ্ত করা হয়েছে।’’ অপর এক রেওয়ায়াতে বলা হয়েছে, ‘‘আমি হলাম সেই খালি জায়গার পরিপূরক ইটখানি। আর আমি হলাম সর্বশেষ নবী।’’ (সহীহ বুখারী ১/৫০১; সহীহ মুসলিম, ২/২৪৮) অন্য এক হাদীসে বলা হয়েছে, ‘‘বনী ইসরাঈলের নবীগণ তাঁদের কর্মকান্ডে নেতৃত্ব ও দিক-নির্দেশনা দান করতেন। যখন তাদের এক নবী দুনিয়া থেকে বিদায় নিতেন, তাঁর জায়গায় আর একজন নবী অধিষ্ঠিত হতেন। কিন্তু আমার পরে কোনো নবী আসবেন না। তবে আমার পরে খলীফা হবে এবং তারা সংখ্যায় অনেক হবে।’’-সহীহ মুসলিম, ইমারা, হাদীস : ১৮৪২; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৫৮৭

এরূপ অগণিত কুরআনের আয়াত ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত ইসলামের অন্যতম মৌলিক আকীদা এই যে, হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানব জাতির হেদায়াতের জন্য প্রেরিত সর্বশেষ নবী। তাঁর পর আর কোনো নবী প্রেরিত হবেন না।

গোলাম আহমদ কেন নবী নয়?

এ প্রশ্নের সমাধান খুঁজে পাওয়ার জন্য প্রথমত উল্লেখ্য যে, ইসলামের উপরিউক্ত মৌলিক ও অকাট্য আকীদার উপস্থিতিতে কেউ যদি নবী হওয়ার দাবি করে তবে সেটা মুসলিম সমাজের নিকট মিথ্যা বলে সাব্যস্ত হবে এবং তা

আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। শুধু তাই নয়, এরূপ দাবি পোষণকারী ব্যক্তি ইসলামের সর্ববাদী বিশ্বাস মুতাবিক মুসলিমই নয়; বরং সন্দেহাতীতভাবে কাফের। সুতরাং গোলাম আহমদ কাদিয়ানী এরূপ দাবি করার কারণে সম্পূর্ণ মিথ্যাবাদী ও কাফের-এটা স্বতঃসিদ্ধ কথা। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমার উম্মতের মধ্যে ত্রিশজন মিথ্যাবাদীর জন্ম হবে। তাদের প্রত্যেকে নিজেকে নবী বলে দাবি করবে। অথচ আমি হলাম সর্বশেষ নবী, আমার পরে কোনো নবীর আগমন হবে না।’’-আবু দাউদ, ফিতান, পৃ. ৫৮৪; তিরিমিযী, খন্ড ২, পৃ.৪৫

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে এ বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হল যে, হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বশেষ নবী হিসেবে বিশ্বাস করা মুসলমানের ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। যার এ বিশ্বাসে ত্রুটি রয়েছে, তার ঈমান বহাল থাকার কোনো অবকাশ নেই।

দ্বিতীয়ত ধরে নেওয়া যাক যে, যদি আল্লাহ তাআলা মানব জাতির প্রতি নবী প্রেরণের সিলসিলা বন্ধ না করে অব্যহত রাখতেন তবু কুরআন, হাদীস ও পূর্ববর্তী নবীগণের জীবনেতিহাস পর্যালোচনা করলে যে শিক্ষা পাওয়া যায় তাতে গোলাম আহমদ কাদিয়ানী বা তার মত স্বভাব-চরিত্রের কোনো লোক নবী হওয়ার জন্য অযোগ্য প্রমাণিত হয়। এ বিষয়টি সহজে বোধগম্য করার জন্য এখানে চারটি মৌলিক নীতিমালা পেশ করা হচ্ছে। এ নীতিগুলো ‘‘দুয়ে দুয়ে চার’’-এর মত সতত সিদ্ধ ও স্বীকৃত সত্য।

প্রথম মৌলিক নীতিটি এই যে, প্রত্যেক সত্যবাদী নবী তাঁর পূর্ববর্তী সকল নবীর প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রাখেন এবং অন্যদেরও সকল নবীর সম্মান ও মর্যাদার প্রতি যত্নশীল থাকতে শিক্ষা দেন। কেননা, প্রত্যেক নবী হলেন আল্লাহ তাআলার প্রতিনিধি। তাই কোনো মুসলমান কোনো নবী-রাসূলের প্রতি এরূপ কোনো আচরণ করতে পারে না, যা নবীর জন্য অসম্মানজনক ও অমর্যাদাকর। কিন্তু আমরা দেখতে পাই যে, গোলাম আহমদ কাদিয়ানী আল্লাহ তাআলার একজন সত্যবাদী মহান নবী হযরই ঈসা আ. সম্পর্কে অত্যন্ত অশোভনীয় কটূক্তি করেছে। এখানে তার একটি উদাহরণ পেশ করা হচ্ছে। সে তার ‘দাফেউল বালা’ নামক বইতে বলেছে, ‘‘মাসীহের সততা তার সময়কার অন্যান্য সৎ লোকের চেয়ে বেশি বলে প্রমাণিত হয় না; বরং তার চেয়ে ইয়াহইয়া নবীর মর্যাদা এক গুণ বেশি। কেননা, সে মদপান করত না এবং কোনো ব্যভিচারিণী নারী নিজের ব্যভিচার থেকে উপার্জিত অর্থ দ্বারা সুগন্ধি ক্রয় করে তার মাথায় মালিশ করেছে এমন কোনো কথা তার ব্যাপারে শোনা যায় নি। অথবা এমনও জানা যায়নি যে, এরূপ কোনো নারী নিজের হাত বা মাথার চুল দ্বারা তার শরীর স্পর্শ করেছিল অথবা কোনো আনাত্মীয় যুবতী নারী তার সেবা করত।

এ কারণে আল্লাহ তাআলা কুরআনে ইয়াহইয়াকে হাসূর (নারী বিরাগী) বলেছেন। কিন্তু মাসীহের এ নামকরণ করা হয়নি। কেননা, উক্তরূপ ঘটনাবলী এরূপ নামকরণের অন্তরায় ছিল।’’

উপরোক্ত উদ্ধৃতিটুকুতে গোলাম আহমদ কায়িদানী হযরত মাসীহ ইবনে মরিয়ম আ.-এর প্রতি কয়েকটি অপবাদ দিয়েছে। তারমধ্যে একটি হল, তিনি মদ পান করতেন। দ্বিতীয় হল, তিনি ব্যভিচারিণী নারীদের অবৈধ পন্থায় উপার্জিত অর্থ দ্বারা ক্রয়কৃত সুগন্ধি তাদের দ্বারা মাথায় লাগাতেন এবং তাদের হাত ও চুল দ্বারা তার নিজের শরীর স্পর্শ করাতেন। তৃতীয় হল, অনাত্মীয় যুবতী নারীদের সেবা নিতেন।

হযরত ঈসা আ.-এর মত একজন মহান নবীর প্রতি এসব অশ্লীল ও কদর্য অপবাদ আরোপ করার পর সে এ রায়ও দিয়েছে যে, এসব ঘটনার কারণেই আল্লাহ তাআলা তাকে পবিত্র কুরআনে ‘হাসূর’ (নারী বিরাগী) বিশেষণ দ্বারা বিশষায়িত করেননি।

যে কোনো নবীর মর্যাদা তো অনেক উর্দ্ধে, একজন সম্ভ্রান্ত ও ভদ্র মানুষের প্রতি এরূপ অপবাদ আরোপ করা নিশ্চয় তাঁর জন্য অতি অপমানকর। যার মধ্যে অণুপরিমাণও ঈমান আছে, এমন কোনো ব্যক্তি কোনো নবী সম্পর্কে এরূপ অশ্লীল অপবাদ দিতে পারেন না।

কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের লোকেরা বলে থাকে যে, মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী এসব কথা নাকি খৃস্টান পাদ্রীদের জবাবে তাদের উপর চাপ প্রয়োগার্থে লিখেছে। এটা তাদের নিছক মিথ্যা প্রলাপ ও প্রতারণা। কেননা, ‘দাফেউল বালা’ নামক বইটি মুসলমান আলেমদের উদ্দেশ্যে রচিত। যার ইচ্ছা বইটি যাচাই করে দেখতে পারে। এছাড়াও সে ‘যমীমায়ে আঞ্জামে আথম’ নামক বইতে লিখেছে, ‘‘তার (ঈসা আ.এর) খান্দানও ছিল অতি পূত পবিত্র (?)। তার তিনজন দাদী-নানী ছিল ব্যভিচারিণী ও পেশাদার পতিতা। তাদের রক্ত থেকে সে জন্ম লাভ করেছে। হয়ত এটাও খোদা হওয়ার একটি পূর্বশর্ত হবে! পতিতাদের প্রতি তাঁর আকর্ষণ ও দহরম-মহরম সম্ভবত তাঁর উত্তরাধিকারের রক্তের টানেই হয়ে থাকবে। অন্যথা কোনো সৎ পুরুষ একজন যুবতী পতিতাকে এ সুযোগ দিতে পারে না যে, সে নিজের নাপাক হাত তার মাথায় লাগাবে এবং পতিতাবৃত্তি থেকে উপার্জিত অর্থ দ্বারা ক্রয়কৃত অপবিত্র সুগন্ধি তার মাথায় মালিশ করবে, আর নিজের মাথার চুল তার পায়ে ঘষবে। সুধীজন বুঝে নিন, এরূপ লোক কোন চরিত্রের!’’ (যমীমায়ে আঞ্জামে আথম, পৃ. ৭)

উপরে উদ্ধৃত অংশটুকুতেও মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী সেই বক্তব্যই পেশ করেছে, যা সে তার ‘দাফেউল বালা’ নামক বইতে বলেছে। ‘যামীমায়ে আঞ্জামে আথম’ বইটি যদিও খ্রিস্টান পাদ্রীদের জবাবে লেখা বটে, তবে তার পূর্বোক্ত বক্তব্যের সাথে এটাকে সংযুক্ত করলে এটা সুস্পষ্ট হয়ে উঠে যে, এসব বক্তব্য কেবলই কারও মুখ বন্ধ করার জন্য বলা হয়নি; বরং এটা তার মনের কথা। কেননা, সে ‘দাফেউল বালা’র এক জায়গায় বলেছে, ইবনে মরিয়মের আলোচনা ছাড়, গোলাম আহমদ তার চেয়ে উৎকৃষ্ট।’’ (পৃ. ২)

দ্বিতীয় মৌলিক নীতি এই যে, আল্লাহ তাআলার প্রেরিত কোনো নবী নিজের দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মিথ্যার আশ্রয় নিতে পারেন না। তাঁরা সব সময় সত্যের উপর অটল-অবিচল থাকেন। কিন্তু মির্জা গোলম আহমদ কাদিয়ানী এক্ষেত্রে অবলীলাক্রমে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে থাকে। এর অগণিত উদাহরণ রয়েছে। এখানে প্রবন্ধের কলেবরের প্রতি লক্ষ্য করে একটি মাত্র উদাহরণ পেশ করা হচ্ছে। মির্জা গোলাম আহমদ তার ‘আরবাঈন-৩’ নামক বইতে লিখেছে, ‘‘মৌলবী গোলাম দস্তগীর কাসূরী ও মৌলবী ইসমাঈল আলীগড়ী নিজ নিজ বইতে আমার (গোলাম আহমদের) ব্যাপারে চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেছে যে, আমি যদি মিথ্যাবাদী হই, তবে তাদের আগে মারা যাব। তাদের দাবি মতে আমি যেহেতু মিথ্যাবাদী তাই আমি অবশ্যই আগে মারা যাব। তাদের এ বইগুলো প্রকাশিত হওয়ার পর অতি দ্রুত তারা মারা গেছে।’’ (আরবাঈন-৩, পৃ. ১১) উপরে উদ্ধৃত অংশে মরহুম মৌলবী গোলাম দস্তগীর কাসূরী ও মৌলবী ইসামঈল আলীগড়ী সম্পর্কে মির্জা গোলাম আহম কাদিয়ানী যে বক্তব্য পেশ করেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এতে সত্যের বিন্দু-বিসর্গও নেই। তারা এ ধরনের কোনো কথা তাদের বইতে বলেননি। মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর জীবদ্দশায় স্বয়ং তাকে এবং তার প্রয়াণের পর তার অনুসারীদেরকে বহুবার এ চ্যালেঞ্জ পেশ করা হয়েছে যে, যদি উক্ত আলিমদ্বয় এরূপ কোনো কথা তাদের কোনো বইতে লিখেছেন বলে কোনো প্রমাণ তোমাদের কাছে থেকে থাকে তবে পেশ কর। কিন্ত তারা আজ পর্যন্ত কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি এবং কিয়ামত পর্যন্তও দেখাতে পারবে না। (কাযিবাতে মির্জা পৃ. ৭৩)

মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর এরূপ মিথ্যাচার প্রচুর। পাঠক জেনে হয়ত আশ্চর্যবোধ করবেন যে, তার বিভিন্ন রচনাবলী থেকে তার মিথ্যাচারগুলো সংকলিত করা হলে বেশ বড়সড় একটি বই হতে পারে। এটা শুধু মুখের কথা নয়; বাস্তবেও যথাযথ উদ্ধৃতিসহ মির্জার মিথ্যাচারের একাধিক সংকলন প্রকাশিত হয়েছে। তারমধ্যে উর্দূ ভাষায় সংকলিত ‘কাযিবাতে মির্জা’ বইটি বেশ প্রসিদ্ধ। বইটির পৃষ্ঠা সংখ্যা ৩৭৯; সংকলক মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াহিদ মাখদূম।

তৃতীয় মৌলিক নীতি এই যে, মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভবিষ্যদ্বাণী করেছে এবং সে দাবি করেছে যে, সে সত্যবাদী নবী। এটা প্রমাণ করার জন্য তার ভবিষ্যদ্বাণীগুলো অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়িত হবে। আর তার ভবিষ্যদ্বাণীগুলো যদি সত্যে পরিণত না হয় তবে সে মিথ্যবাদী বলে সাব্যস্ত হবে। আল্লাহ তাআলার বিশেষ ফজল ও করম যে, তিনি তার ভবিষ্যদ্বাণীগুলোকে মিথ্যা প্রমাণিত করে তাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করে দিয়েছেন।

উল্লেখ্য যে, যেখানে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বশেষ নবী হিসাবে ঘোষণা দিয়েছেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও অসংখ্য হাদীসে এ ঘোষণার পুনরাবৃত্তি করেছেন আর এ থেকে প্রমাণিত আকীদার উপর মুসলিম সমাজের ঈমান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে যে-ই নবী হওয়ার দাবি করুক এবং তার হাতে যত অলৌকিক ঘটনাই প্রকাশ পাক, তাকে কোনো মুসলিম সত্যবাদী নবীরূপে বিশ্বাস করতে পারে না, বরং সে এরূপ যে কোনো অলৌকিক কর্মকান্ডকে দাজ্জালের অলৌকিক কর্মকান্ডের মতই মনে করবে। এ ছাড়া জাদুকরদের কাছেও এ অলৌকিক কর্মকান্ড পরিলক্ষিত হয়, তাতে কেউ তাদের নবী বলে স্বীকার করে না। তেমনি মির্জা গোলাম আহমদের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো যদি সত্যও হত তবু সে নবী বলে প্রমাণিত হত না। তবু আল্লাহ তাআলার বিশেষ অনুগ্রহ যে, তিনি তার সত্য-অসত্যের মাপকাঠিরূপে উপস্থাপিত ভবিষ্যদ্বাণীগুলোকে অসত্য প্রমাণিত করে তাঁর দুর্বল ঈমানের অধিকারী বান্দাদেরকে এ পরীক্ষা থেকে রক্ষা করেছেন। এখানে আমি কেবল তার দুটি ভবিষ্যদ্বাণী উল্লেখ করব, যেগুলোর মাধ্যমে সে অকাট্যরূপে মিথ্যাবাদী সাবস্ত্য হয়েছে। একটি হল, ডেপুটি আবদুল্লাহ আথম নামক জনৈক খ্রিস্টানের মৃত্যু সংক্রান্ত। মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী বলেছে যে, ‘‘আথম ৫ জুন ১৮৯৩ঈ. থেকে ৫ সেপ্টেম্বর ১৮৯৪ঈ. পর্যন্ত অর্থাৎ পনেরো মাস সময়ের মধ্যে মারা যাবে।’’ তারপর পুনরায় ১৮৯৩ ঈ. সালের সেপ্টেম্বরে এ ঘোষণা দিয়েছে যে, ‘‘তার বেঁধে দেওয়া সময় সীমা অর্থাৎ ৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অবশ্যই মারা যাবে।’’

উল্লেখ্য যে, তখন আথমের বয়স ছিল সত্তরের কাছাকাছি। এসময় তার মারা যাওয়া বিচিত্র কিছু ছিল না। সে ভরসা করেই হয়ত মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী এরূপ উক্তি করার সাহস পেয়েছিল কিন্তু আল্লাহ তাআলার মর্জি ছিল ভিন্ন রকম, মির্জা গোলাম আহমদকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করা, তাই সে বয়ঃবৃদ্ধ আবদুল্লাহ আথম গোলাম আহমদের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে মারা যায়নি; বরং তার পরও প্রায় দু’বছর বেঁচে থেকে ২৭ জুলাই ১৮৯৬ঈ. মারা যায়। মির্জা গোলাম আহমদ যেহেতু উক্ত ভবিষ্যদ্বাণীটিকে তার সত্য ও অসত্য হওয়ার মাপকাঠিরূপে পেশ করেছে, তাই তার বেঁধে দেওয়া সময়সীমার পরে আথম যতদিন জীবিত ছিল, তার প্রতিটি মুহূর্ত গোলাম আহমদকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করার সাক্ষ্য বহন করেছিল।

আর তার একটি ভবিষ্যদ্বাণী হল মুহাম্মাদী বেগমের বিবাহ সংক্রান্ত। এটি তার সবচেয় প্রসিদ্ধ ও চ্যালেঞ্জপূর্ণ ভবিষ্যদ্বাণী। এটাকে সে তার বইপত্রে নিজের সত্যতার মাপকাঠি হিসেবে পেশ করেছে। মির্জা গোলাম আহমদের এক আত্মীয় ছিল মির্জা আহমদ বেগ। ভারতের হুশিয়ারপুরের অধিবাসী। অনিন্দ্য সুন্দরী মোহাম্মাদী বেগম তারই কন্যা। মির্জা গোলাম আহমদের মনে তাকে বিয়ে করার আগ্রহ জাগে। একদিন সে কন্যার পিতার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। কিন্তু আহমদ বেগ সম্মত হননি। মির্জা গোলাম আহমদ মির্জা আহমদ বেগকে প্রভাবিত করার জন্য জোরে শোরে দুটি কথা ঘোষণা করতে থাকে। একটি হল, মুহাম্মাদী বেগম তার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে, এটা সে আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী ও ইলহাম দ্বারা জানতে পেরেছে। দ্বিতীয়টি হল, কন্যার পরিবার যদি এতে অমত পোষণ করে তবে তারা নানা রকম বিপদ-আপদে আক্রান্ত হবে। মুহাম্মাদী বেগমের উপরও বিপদ আসবে। মির্জা গোলাম আহমদ এসব কথা তার চিঠিপত্রে, বইপুস্তকে ও প্রচারপত্রে এত জোরে শোরে লিখতে শুরু করল যে, আহমদ বেগ যদি কোনো কাঁচা মানুষ হতেন তবে ভয়ে কন্যা দান করেই বসতেন। কিন্তু তিনি এসবে প্রভাবিত হননি; বরং তিনি নিজের অমতের উপর অবিচল থাকলেন। এভাবে বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হয়ে যায়, আর মির্জা গোলাম আহমদ মুহাম্মাদী বেগমকে বিয়ে করার জন্য নানা রকম কৌশল অবলম্বন করতে থাকে। এক পর্যায়ে লাহোরের অধিবাসী সুলতান মুহাম্মাদ নামক এক লোকের সাথে মুহাম্মাদী বেগমের বিবাহ ঠিক হয়ে গেলে এতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার জন্য মির্জা গোলাম আহমদ অনেক আশ্চর্য রকমের চেষ্টা-তদবির শুরু করে। যখন তার সকল চেষ্টা-তদবির ব্যর্থ হয়ে যায়, তখন সে তার পূর্বের অভ্যাস অনুযায়ী আল্লাহর ইলহামের বরাত দিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করতে শুরু করে। তাতে সে বলে যে, যদি সুলতান মুহাম্মাদের সাথে মুহাম্মাদী বেগমের বিয়ে হয় তবে বিয়ের পর আড়াই বছরের মধ্যে মুহাম্মাদী বেগমের পিতা মির্জা আহমদ বেগ মারা যাবে। আর মুহাম্মাদী বেগম বিধবা হয়ে তার বিবাহ বন্ধনে আসবে। আল্লাহর লীলা, সুলতান মুহাম্মাদের সাথে মুহাম্মাদী বেগমের বিবাহ হয়ে যাওয়ার পরও মির্জা গোলাম আহমদের পূর্ব ভবিষ্যদ্বাণী আরো জোরে চলতে থাকে। সে বলতে থাকে যে, এটা অদৃষ্টের অলঙ্ঘনীয় লেখা, কেউ এটাকে পরিবর্তন করতে পারবে না। সুলতান মুহাম্মাদ মারা যাওয়ার পর অবশ্যই মুহাম্মাদী বেগম তার স্ত্রী হবে। যদি এটা না হয় তবে সে মিথ্যাবাদী ও নিকৃষ্টতম জীব বলে সাব্যস্ত হবে। (আঞ্জামে আথম ও তার যমীমা) কিন্তু আল্লাহ তাআলা তার এসব ধোঁকাবাজিকে ব্যর্থ করে দিয়েছেন এবং তার দম্ভ, অহঙ্কার ও দাবিকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছেন। ফলে ১৯০৮ ঈ. সালে যখন মির্জা গোলাম আহমদ মারা যায় তখনও সুলতান মুহাম্মদ ও তার স্ত্রী মুহাম্মাদী বেগম জীবিত থেকে অতি সুখে জীবন যাপন করছিলেন। এমনকি তার প্রয়াণের পর সুলতান মুহাম্মাদ প্রায় ৪০ বছর জীবিত ছিলেন। যার পরবর্তী জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ও প্রতিটি দিন মির্জা গোলাম আহমদকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করার সাক্ষ্য বহন করেছিল। সুলতান মুহাম্মাদ ১৯৪৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

চতুর্থ মৌলিক নীতিটি হল এই যে, আল্লাহর কোনো নবী তার সমকালীন এমন কোনো ধর্মদ্রোহী শাসকবর্গ বা ক্ষমতাধর লোকের চাটুকারিতা, পদলেহন বা তল্পীবহন করতে পারেন না, যাদের প্রত্যক্ষ্য সহযোগিতায় ও পৃষ্ঠপোষকতায় কুফর ও ধর্মহীনতা বিস্তার লাভ করে।

উল্লেখ্য যে, ইংরেজ শাসক গোষ্ঠী মানুষের মধ্যে ধর্মহীনতা, ধর্মদ্রোহিতা, বেহায়াপনা, অশ্লীলতা ও নৈতিক অবক্ষয় বিস্তারে যে ভূমিকা রেখেছে, পৃথিবীর মানবেতিহাসে তার নজির খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এমনি একটি দুষ্কর্মের পৃষ্ঠপোষক ইংরেজ সরকারের চাটুকারিতা করতে গিয়ে গোলাম আহমদ কোনোরূপ ত্রুটি করেনি। স্বয়ং গোলাম আহমদ তার ‘শাহাদাতুল কুরআন’ নামক বইয়ের পরিশিষ্টে ‘গভর্নমেণ্টের দৃষ্টি আকর্ষণ’ শিরোনামের অধীনে এক জায়গায় বলেছেন, ‘‘এই (ইংরেজ) সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ আমার শরীরের প্রতিটি স্নায়ুতন্ত্রীকে আবিষ্ট করে রেখেছে।’’ তারপর সে লেখে, ‘‘আমি মাননীয় (ইংরেজ) সরকারকে এ নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে, আমি এমনই আজ্ঞাবহ ও হিতাকাঙ্খী রয়েছি, যেমন আমার পূর্বসূরীরা ছিল।... আমি কামনা করি, আল্লাহ তাআলা এ সরকারকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করুন।’’ (পৃ. ৩)

উপরিউক্ত চারটি মূলনীতি নিয়ে একটু চিন্তা-ভাবনা করলেই এ বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে যাবে যে, আল্লাহ তাআলা যদি নবী প্রেরণের সিলসিলা বন্ধ না-ও করতেন তবু গোলাম আহমদের মত চরিত্রের ব্যক্তি নবী হওয়ার জন্য যোগ্য ও উপযুক্ত বলে বিবেচিত হত না। (কায়িদানিয়াত পর গাওর করনেকা সীধা রাস্তা, মাওলানা মুহাম্মাদ মনযূর নোমানী রাহ.)

কাদিয়ানীরা অমুসলিম কেন?

কোনো কোনো সাধারণ মানুষ মনে করে যে, কাদিয়ানীদের সাথে মুসলিম সমাজের বিরোধটা হানাফী-শাফেয়ী বা হানাফী-আহলে হাদীস অথবা কেয়ামী-বেকেয়ামীদের মতবিরোধের মত। আসলে বিষয়টি তা নয়, বরং কাদিয়ানীদের সাথে মুসলিম সমাজের বিরোধ এমন একটি মৌলিক আকীদা নিয়ে, যার বিশ্বাস করা-না করার উপর মানুষের ঈমান থাকা-না থাকা নির্ভর করে। এ প্রবন্ধের শুরুতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কুরআন পাকের অনেক আয়াত ও অগণিত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত মুসলিম সমাজের অন্যতম মৌলিক আকীদা হল, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশেষ নবী এবং তাঁর পরে কোনো নবীর আগমন হবে না। মুসলমানদের এমন একটি অকাট্য আকীদার বিপরীতে অবস্থান নিয়ে মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নিজেকে নবী বলে দাবি করল। সুতরাং সে মুসলমানদের সর্বসম্মত আকীদা মুতাবিক কাফের তথা অমুসলিম। আর যে বা যারা তাকে নবী বলে বিশ্বাস করে সে বা তারা ইসলামের সর্বজন স্বীকৃত আকীদা মুতাবিক মুসলমান থাকতে পারে না। তারা কাফের অর্থাৎ অমুসলিম। একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি সহজে বোধগম্য হতে পারে। দেখুন, বাংলাদেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দলের একটির নাম আওয়ামী লীগ, আর অপরটির নাম বিএনপি বা বাংলাদেশ জাতায়তাবাদী দল। প্রতিটি দলের ভিন্ন ভিন্ন ম্যানিফেস্টো বা সংবিধান আছে। যে যেই দল করে তাকে সে দলের ম্যানিফেস্টো মেনে চলতে হয়। যদি কেউ দলের সংবিধান লঙ্ঘন করে বা তার কোনো গুরুত্বপূর্ণ ধারাকে অস্বীকার করে সে তার দলের সদস্যপদ রক্ষার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে। তখন তাকে হয় নিজের অপরাধ স্বীকার করে সংবিধানের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রকাশ করে দলে থাকতে হয়, নতুবা বহিস্কারের শাস্তি মাথা পেতে নিয়ে দল থেকে বের হয়ে যেতে হয়। ধরুন, কেউ আওয়ামীলীগ করে, কিন্তু সে শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা স্বীকার করে না, এরূপ ব্যক্তি আর যা-ই হোক, আওয়ামী লীগের সদস্য হতে পারে না। কোনো আওয়ামীলীগার তাকে আওয়ামী লীগের সদস্য মেনে নেবে না। এরূপই কেউ যদি বিএনপি করে, কিন্তু জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক স্বীকার করে না, এমন কাউকে বিএনপি’র লোকজন নিজেদের লোক বলে গ্রহণ করবে না। এ সহজ-সরল মোটা কথাটি যদি বোধগম্য হয়, যে ব্যক্তি ইসলামের অন্যতম মৌলিক আকীদায় বিশ্বাসী নয়; বরং তার বিপরীত অবস্থানে দাঁড়িয়ে নিজেকে ‘নবী’ বলে দাবি করে, আর যারা তার এ দাবিকে বিশ্বাস করে তারাও মুসলমান নামের পরিচয় বহন করতে পারে না। তাদেরকেও হয় নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে এবং তওবা করে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বশেষ নবী মেনে নিয়ে এবং ইসলামের অন্য সকল মৌলিক আকীদাকে মেনে নিয়ে মুসলমান হতে হবে, অথবা মুসলমানের পরিচয় বাদ দিয়ে নিজেদের ভিন্ন ধর্মের নামে পরিচিত হতে হবে। এ কথাটি আমাদের দেশের সাধারণ লোকজন থেকে শুরু করে শাসকগোষ্ঠী পর্যন্ত সর্বস্তরের মানুষ যত তাড়াতাড়ি বুঝে নিতে সক্ষম হবে ততই তাদের দুনিয়ার জীবনে হেদায়াত ও পরকালের শান্তি ও মুক্তির পথ বেছে নিতে সহায়ক হবে।

যৌক্তিক বিচারে কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণার দাবি

এদেশীয় মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকেরা যেমন বাংলাদেশের নাগরিক, তেমনি কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের লোকেরাও এ দেশের নাগরিক। দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে সকল ধর্মের অনুসারী লোকেরা যতটুকু নাগরিক অধিকার ও সুবিধা ভোগ করে, কাদিয়ানীরাও ততটুকু পাক, এতে কারও দ্বিমত থাকার কথা নয়, তবে সেটা তাদের নিতে হবে নিজের স্বতন্ত্র ধর্মীয় পরিচয়ে-মুসলমান পরিচয়ে নয়। তারা নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে ভিন্ন নামে সমাজে বেঁচে থাকুক, আর্থ-সামাজিক কার্যক্রমে তারা তাদের স^তন্ত্র পরিচয় নিয়ে অংশগ্রহণ করুক, তাতেও কোনো মুসলমানের মাথাব্যাথা নেই। তবে মুসলমানের মৌলিক আকীদায় বিশ্বাসী না হয়ে (উল্টো কুঠারাঘাত করে) তারা মুসলমান পরিচয় ধারণ করবে, এ অধিকার তাদের নেই। সুতরাং কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণার দাবি মুসলিম সম্প্রদায়ের আকীদা রক্ষার আন্দোলন তো অবশ্যই, ধর্মীয় অধিকারের বিষয়ও বটে।

এখন দেখা যাক, কাদিয়ানীরা অমুসলিম রূপে ঘোষিত ও চিহ্নিত না হলে তাতে মুসলমানদের ধর্মীয় ও সামাজিক ক্ষেত্রে কি কি সমস্যার সৃষ্টি হয়। এ বিষয়টি বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য যে, এমন একটি সম্প্রদায় যারা ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণরূপে অমুসলিম, তারা যদি সরকারীভাবে অমুসলিম ঘোষিত হয়ে পৃথক একটি ধর্মাবলম্বী দল হিসাবে চিহ্নিত না হয় তাতে মুসলমানদের ধর্মীয় ও সামাজিক ক্ষেত্রে বহুবিধ সমস্যা সৃষ্টি হয় এবং হতে থাকবে। যেমন :

১. তাদের রচিত ও প্রকাশিত বইপত্রকে মুসলমানদের লেখা বই-পুস্তকের মত মনে করে পাঠ করে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয় এবং ঈমান হারিয়ে বসে।

২. তাদের উপাসনালয়কে মসজিদ মনে করে সেখানে গিয়ে নামায পড়ে। এতে মুসলমানদের কাছে ঈমানের পরে সর্বোচ্চ যে ইবাদত নামায, তা নষ্ট হয়।

৩. কাদিয়ানী ধর্মমতের অনুসারী কোনো ব্যক্তি মুসলমানের ইমাম সেজে তাদের ঈমান-আমল নষ্ট করতে পারে।

৪. তারা মুসলমান পরিচয়ে নিজেদের মতবাদ-মতাদর্শ প্রচার করলে তাতে সাধারণ মুসলমান তাদেরকে মুসলমানেরই একটি দল মনে করে তাদের মতবাদ গ্রহণ করে নিজেদের সবচেয়ে বড় সম্পদ ঈমান হারিয়ে ফেলে।

৫. তারা মুসলমান নামে পরিচিত হওয়ার কারণে তাদের সাথে মুসলনামানের মত আচার-আচরণ ও চলাফেরা করে। অথচ তাদের সাথে মুসলমানের সম্পর্ক হওয়া উচিত এমনই, যেমন কোনো অমুসলিমের সাথে হয়ে থাকে।

৬. অনেক সাধারণ মুসলমান তাদেরকে মুসলমান মনে করে নিজেদের বিবাহের উপযুক্তা মেয়েদের তাদের সঙ্গে বিবাহ দিয়ে অমুসলিমদের হাতে নিজেদের কন্যা তুলে দেয় এবং মুসলিম পাত্রের জন্য কাদিয়ানী ধর্মাবলম্বী লোকের মেয়েকে মুসলমান না করে বধু হিসেবে বরণ করে। ফলে এরূপ দম্পতি আজীবন ব্যভিচারের গুনাহে লিপ্ত থাকে।

৭. কোনো সম্পদশালী মুসলমান কোনো কাদিয়ানী ধর্মাবলম্বী গরীবকে যাকাত দিলে তার ফরয যাকাত আদায় হবে না।

৮. যে কোনো কাফের তথা অমুসলিমের জন্য হারাম শরীফে ঢোকা নিষেধ। অথচ কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের লোকেরা মুসলিম পরিচয় দিয়ে হজ্ব ও চাকরি-বাকরির নামে সৌদি আরবে গিয়ে হারাম শরীফে প্রবেশ করে তার পবিত্রতা নষ্ট করার সুযোগ পায়।

সুতরাং কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে মুসলমান থেকে পৃথক একটি ধর্মের অনুসারী দল ঘোষণা করে ভিন্ন নামে চিহ্নিত না করা হলে এরূপ বহু সমস্যা সৃষ্টি হয়, হতে পারে এবং ভবিষ্যতে হতে থাকবে। এতে মুসলমান সমাজের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগার কারণে তারা যদি উত্তেজিত হয়ে উঠে তবে এতে দেশের আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে এবং মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে, যা কারও কাম্য নয়। কাজেই তাদেরকে অবিলম্বে পৃথক একটি ধর্মাবলম্বী দল ঘোষণা করে পৃথক নামে তাদেরকে একটি সংখ্যালঘু দল হিসাবে মর্যাদা দিলে এবং তাদের জন্য ইসলামী পরিভাষাসমূহ যেমন : নামায, রোযা, মসজিদ, হজ্ব ইত্যাদির ব্যবহার নিষিদ্ধ করলে তা দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পক্ষে সহায়ক হবে বলে আমরা মনে করি। এটাই সচেতন মুসলিম সমাজের প্রাণের দাবি।

কাদিয়ানী সম্প্রদায় সম্পর্কে সর্বোচ্চ আদালতের  রায়

কাদিয়ানী সম্প্রদায় যেহেতু ইসলামের মৌলিক আকীদার পরিপন্থী আকীদা পোষণ করে, হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বশেষ নবী স্বীকার করে না; বরং তারা মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে নবী মনে করে এবং তার মতবাদ অনুসরণ করে তাই কোনো আদালত বা পার্লামেন্ট তাদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করুক, আর নাই করুক, তারা সুস্পষ্ট কাফের অর্থাৎ অমুসলমান। এটা ইসলামের ফয়সালা। তবু ইসলামের দুশমন ও ইসলামের জন্য ক্ষতিকর এমন একটি সম্প্রদায়কে মুসলমানের মুখোশ পরে চলার প্রশ্রয় দেওয়া সচেতন মুসলিম সমাজের পক্ষে সম্ভব নয়, তাই তাদেরকে সরকারীভাবে ‘অমুসলিম’ ঘোষণা করে পৃথক একটি ধর্মাবলম্বী দল হিসাবে চিহ্নিত করা এবং ইসলামের পরিভাষাসমূহকে তাদের ধর্মীয় কর্মকান্ডের জন্য ব্যবহার করাকে আইনগতভাবে নিষিদ্ধ করা আবশ্যক। এটাই সচেতন মুসলিম সমাজের ঈমানী চেতনার দাবি। বহু ত্যাগ ও কুরবানীর বিনিময়ে বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করে বহু তর্ক-বহসের পর ১৯৭৪ঈ. সালে ভুট্টো সরকারের আমলে পাকিস্তান ন্যাশনাল এসেম্বলী কাদিয়ানীদের ‘অমুসলিম সংখ্যালঘু’ ঘোষণা করে এবং তাদের জন্য ইসলামী পরিভাষাসমূহ ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। তারপর লাহোর হাইকোর্ট ১৯৮১, ১৯৮২, ১৯৮৭, ১৯৯১, ১৯৯২ ইং সালে, সম্মিলিত শরয়ী আদলত ১৯৮৪, ১৯৯১ঈ. সালে, কোয়েটা হাইকোর্ট ১৯৮৭ঈ. সালে,

সুপ্রিম কোর্ট শরয়ী এপিলেট বেঞ্চ পাকিস্তান ১৯৮৮ঈ. সালে এবং

পাকিস্তান সুপ্রিমকোর্ট ১৯৯৩ঈ. সালে কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে অমুসলিম ঘোষণা করে। এছাড়া সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, আফগানিস্তান, মুসলিম লীগ, আর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কনফারেন্স (ওআইসি) কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ওআইসির অন্যতম সদস্য দেশ।

বাংলাদেশ কোর্টের রায়

কাদিয়ানীরা ‘ইসলামেই নবুওয়াত’ নামক একটি বই রচনা করে তাতে কুরআন ও হাদীসের বিকৃত ও মনগড়া অর্থ করে হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর নতুন নবীর আগমনের পথ তৈরি করার চেষ্টা করে। বইটি মুসলিম সমাজের আকীদা-বিশ্বাসের মূলে আঘাত হানার কারণে বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৫ঈ. সালের আগস্ট মাসে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। কাদিয়ানীরা সরকারের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে। হাইকোর্ট ডিভিশনের বিচারপতি জনাব সুলতান আহমদ খান ও বিচারপতি জনাব এম. মাহমুদুর রহমান সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে যথোপযুক্ত শুনানির পর কাদিয়ানীদের আবেদন নামঞ্জুর করেন। মাননীয় বিচারপতিগণ তাদের রায়ে হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লামের পরে নবী আবির্ভূত হওয়ার আকীদাকে কুফরী বিশ্বাস বলে ঘোষণা করেন। বিশ্বের বিভিন্ন আদালতের রায়ে কাদিয়ানীরা যে অমুসলিম ঘোষিত হয়েছে, এ শুনানির মাধ্যমে বাংলাদেশ হাইকোর্ট সে কথাই পুনঃব্যক্ত করেছেন। সংবাদটি বাংলাদেশের একটি জাতীয় দৈনিকে ২০ সেপ্টেম্বর ১৯৮৬ঈ. তারিখে প্রকাশিত হয়।

১৯৯৩ সালের এপ্রিল মাসে অন্য একটি মামলায় হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মাদ আব্দুল জলিল ও বিচারপতি মোহাম্মাদ ফজলুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে আইনের দৃষ্টিতে কাদিয়ানীদের অমুসলিম বলে রায় প্রদান করেন। এর দ্বারা বাংলাদেশে হাইকোর্টের মতেও কাদিয়ানীরা অমুসলিম ঘোষিত হয়েছে। সরকার কর্তৃক গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটিও কাদিয়ানীদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করার সুপারিশ করেছেন। (তথ্য সূত্র : মো : আব্দুল কাসেম ভূঞা, কাদিয়ানী ধর্মমত বনাম ইসলামী দুনিয়ার অবস্থান)

সুতরাং মুসলিম বিশ্বের সর্বোচ্চ আদালতসমূহের রায় এবং আন্তর্জাতিক সর্বোচ্চ ইসলামী সংস্থা ওআইসি’র সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ওআইসি’র সদস্যদেশ হিসাবে বাংলাদেশ সরকারেরও উচিত কাদিয়ানীদেরকে সরকারীভাবে ‘অমুসলিম সংখ্যালঘু’ ঘোষণা করা এবং তাদের জন্য ইসলামী পরিভাষাসমূহের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা।

সুত্রঃ মাসিক আল কাউসার  

কারা শিয়া ও সুন্নী

১৭ই এপ্রিল ১৯৪৬ সালে ফ্রান্স থেকে স্বাধীনতা লাভ করা সিরিয়া ১৯৭১ সাল থেকে শাসন করে আসছে আসাদ ফ্যামিলি। বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পিতা হাফিজ আল আসাদ ছিলেন বিমানবাহিনীর প্রধান। ১৯৬৬ সালে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে বাথ পার্টি তাকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব দেয়। কিন্তু ১৯৭০ সালে হাফিজ আল আসাদ আরেকটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে বাথ পার্টির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের কারাগারে ঢুকান এবং নিজেকে ঘোষণা দেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসাবে।
    হাফিজ আল আসাদ

আসাদের গোত্র অ্যালাওয়াইটরা বিশ্বাসের দিক থেকে শিয়া মতালম্বি। সিরিয়ার মোট জনসংখ্যার(২২ মিলিয়ন) মধ্যে এই গোত্রের সদস্যরা ১২% হলেও আসাদ ফ্যামিলি ক্ষমতা দখল করার পর দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে আছে তারা। মেধা কিংবা যোগ্যতা নয়, সিরিয়ায় ভালো চাকরী পাওয়ার নিশ্চয়তা পাওয়া যায় এই গোত্রের সদস্য হলে কিংবা তাদের গোলামি করলে। রাষ্ট্রের এই বঞ্চনা ক্ষোভের জন্ম দেয় সিরিয়ার অন্যান্য সাধারণ মানুষদের মনে।
    সিরিয়ায় alawite গোত্রের অবস্থান

আজ যে আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, তার শুরুটা কিন্তু এখন নয়। বঞ্চনার বিরুদ্ধে সবসময়ই প্রতিবাদ করার চেষ্টা করে আসছিলেন সাধারণ নাগরিকরা। কিন্তু প্রতিবাদ করার কোন অধিকার যেন ছিল না তাদের। যদি কোন দল বা গোষ্ঠী বিক্ষোভ করার চেষ্টা করত, তা অন্ত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে দমন করতেন হাফিজ আল আসাদ। যার মধ্যে Hama massacre  খ্যাত ১৯৮২ সালের ঘটনাটি আজও মানুষ কষ্টের সাথে স্মরণ করে। যেই ঘটনায় হাফিজ আল আসাদের নির্দেশে হত্যা করা ৪০ হাজার বিক্ষোভকারীকে।
       হামার গণহত্যার একটি দৃশ্য

হাফিজ আল আসাদের মৃত্যুর পর ২০০০ সালে সিরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ ক্ষমতায় আসেন। কিন্তু শোষণ-নিপীড়ন, নির্যাতনে বাবার চেয়েও কোন অংশে কম নয় বাশার। বাক অথবা ব্যক্তিস্বাধীনতার স্থান নেই সিরিয়ায়। বাশারকে সম্বোধন করতে হয় 'মি. প্রেসিডেন্ট' বলে, অন্যথায় জেল-জুলুল, শাস্তি নিশ্চিত।
    বাশার আল আসাদ

এক মহিলা ডাক্তারকে গ্রেফতারের ঘটনায় বুঝা যায় কতটা নিয়ন্ত্রিত সে দেশের নিউজ মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়া। সেই ডাক্তারের অপরাধ তিনি গাদ্দাফির স্বৈরশাসন থেকে মুক্তি পাওয়ায় লিবিয়াবাসিকে অভিনন্দন জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। আর এতেই তাকে গ্রেফতার করে সিরিয় সরকার এবং মাথার চুল চেঁছে দিয়ে তাকে বন্দি করা হয় জেলে।

 সালটা ২০১১, আরব বসন্তে একের পর এক পতন ঘটছে স্বৈরচার শাসকদের। যাতে উজ্জিবিত হয়ে স্বৈরশাসক আসাদবিরোধী সিরিয়ার নাগরিকরা (alawite গোত্র ব্যতিত দেশের প্রায় সকল নাগরিক) বিক্ষোভ শুরু করে আসাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু বাবার মতই আসাদের নির্দেশে সরকারী বাহিনী গুলি চালায় বিক্ষোভকারীদের উপর। প্রায় এক মাস চলছিল এমনি, যখনি চেষ্টা করা হয়েছে বিক্ষোভের, আসাদ বাহিনী গুলি চালিয়েছে নির্বিচারে। আর তাতেই এই বিক্ষোভ এক সময় রূপ নেয় সশস্ত্র বিদ্রোহে।0
    আসাদবিরোধী বিক্ষোভের একটি দৃশ্য

এভাবে একের পর এক যখন বিক্ষোভকারীদের উপর গণহত্যা চালাচ্ছিল আসাদ বাহিনী। তখনই এক দল সৈন্য আসাদের পক্ষ ত্যাগ করে বিক্ষোভকারীদের পক্ষে চলে আসে এবং ঘোষণা দেয় বিক্ষোভকারীদের রক্ষার। সাধারণ বিক্ষোভকারী যারা পূর্বে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল এবং অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবক যোগ দেয় পক্ষ ত্যাগকারী এই আর্মিদের সাথে। যাদের সবার লক্ষ্য আসাদ ফ্যামিলিকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা।
আসাদবিরোধী লড়াইয়ে অংশরত সবাই মিলে গঠন করে ফ্রি সিরিয়ান আর্মি বা FSA
    FSA এর প্রশিক্ষণের একটি দৃশ্য

আগস্ট, ২০১১ সালের দিকে সিরিয়ার সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী সিরিয়ান ন্যাশনাল কাউন্সিল নামে সরকার গঠন করে। ধারনা করা হচ্ছিল সিরিয়ায় বোধহয় লিবিয়ার অনুরূপ ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। প্রথমে কিছু সেনাদের বিদ্রোহ, তারপর বিদ্রোহীদের সরকার ঘটন, তারপর পশ্চিমাদের সহায়তায় ক্ষমতায় আসা। সিরিয়ান ন্যাশনাল কাউন্সিলের আগমনের পর এমনটাই হওয়া ছিল স্বাভাবিক।
    তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সিরিয়ান ন্যাশনাল কাউন্সিলের মিটিং

সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুধু সিরিয়ার মাঝে সীমাবদ্ধ নয়। যদিও এটি কোন বিশ্বযুদ্ধের রূপ ধারন করেনি অথবা ধারন করার কোন সম্ভাবনা নেই তবু বিশ্বের প্রায় সকল শক্তিধর রাষ্ট্র প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ছে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে। আসাদ গোত্র শিয়া হওয়ার সুবাদে তাদের পক্ষ নিয়েছে ইরান ও লেবাননের হিযবুল্লাহ গ্রুপ এবং ইরান ও আসাদের সাথে সুসম্পর্কের কারণে চিন ও রাশিয়াও আসাদকে অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করছে। সিরিয়ার ৭২% লোক সুন্নি মুসলিম, আরবের সুন্নি রাজারা যদিও নিজেরা ধার্মিক নয়, তবু শিয়াদের বিরুদ্ধে সুন্নিদের এই সশস্ত্র বিদ্রোহকে নানাভাবে সহায়তা করছে। আর ইসরাইলের সাথে সিরিয়ার এবং হিজবুল্লার কয়েকটি যুদ্ধের ইতিহাস থাকায় পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো পক্ষ নিয়েছে আসাদবিরোধীদের।

ইরান ও হিজবুল্লাহ অস্ত্র ও সৈন্য দিয়ে সরাসরি লড়াই করছে আসাদের পক্ষে। বিপুল পরিমাণ অস্ত্র সহায়তা পাচ্ছে তারা চিন ও রাশিয়ার কাছ থেকে। ন্যাশনাল কাউন্সিল তাই কয়েক বার অস্ত্র সহযোগিতা চায় পশ্চিমাদের কাছ থেকে। কিন্তু পশ্চিমারা একটি ভয়ের কথা ব্যক্ত করে যে সিরিয়ার বিদ্রোহীদের একটি অংশ কট্টর ইসলামপন্থী, তাই তারা ভীত যে অস্ত্র দিলে সেটা মুজাহিদিনদের হাতে চলে যাবে। সিরিয়ার জিহাদিরাও আমেরিকা থেকে অস্ত্র চায় না এবং প্রত্যাখ্যান করে বিদ্রোহী সরকারকে।
    নামাজরত সিরিয়ার মুজাহিদিনরা

USA এবং ইসরাইলসহ পশ্চিমা বিশ্বের ভয়ের কারণ, মুজাহিদিনদের এই লড়াই শুধু আসাদকে হটানোতেই সীমাবদ্ধ নয়, তাদের টার্গেট সিরিয়ায় ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠা এবং শরিয়াহ আইন চালু করা। সিরিয়ার বিদ্রোহীদের প্রায় ৬০% ভাগ এই মুজাহিদিনদের পক্ষে, তাছাড়া সুন্নি মুসলিমদের উপর আসাদের নির্যাতনের ঘটনা এবং ইসলামী খেলাফতের স্বপ্ন সারা বিশ্বের মুসলিম তরুণদের নিয়ে আসছে সিরিয়ায়। যার মধ্যে ইরাক, আফগান, সোমালিয়া, বসনিয়া  প্রভৃতি দেশসমুহের মুজাহিদীনরা যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে আরব এবং পশ্চিমা দেশসমূহের অনেক মুসলিম তরুণ, সিরিয়াতেই যাদের প্রথম যুদ্ধের অভিজ্ঞতা।
    চেচেন মুজাহিদের নেতৃত্বে অংশরত বিভিন্ন দেশের মুজাহিদরা

সিরিয়ায় এই তিন দলের বাহিরেও আরেকটি দল লড়াই করছে যাদের কথা তেমন আলোচনায় আসে না। উপরের তিনটি দলের লড়াইয়ের মৌলিক লক্ষ্যের মধ্যে সিরিয়া বিভক্ত করার বিষয়টি নেই। কিন্তু কুর্দি জাতিগোষ্ঠীর লক্ষ্য সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি বিরাট অংশ দখলে নিয়ে স্বাধীন কুর্দিস্থান গঠন করা যে দেশের স্বাধিনতায় আর কোন আঘাত আসবে না। শুধু সিরিয়াতেই নয়, ইরাক, তুরস্কসহ আরও কয়েকটি দেশেও স্বাধীন ভূমির জন্য লড়াই করছে কুর্দি বিদ্রোহীরা।
    স্বপ্নের স্বাধীন কুর্দিস্তান

দুই বছর সাত মাস পূর্বে সিরিয়ায় শুরু হওয়ায় যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে সোয়া লাখের উপর মানুষ। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী বিভিন্ন দেশে প্রায় দুই লাখের বেশী শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে। তাছাড়া গৃহহীন মানুষের সংখ্যা সাত লাখ বলা হয়েছে। যদিও এগুলো পরিসংখ্যান, কিন্তু বাস্তবতা এর চেয়ে ভয়াবহ।
    জর্ডানের শরণার্থী শিবিরে যাওয়ার পথে বিশ্রাম নিচ্ছে কয়েকটি সিরিয় পরিবার

সিরিয়ার যুদ্ধের ফলাফল নিয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। ইতিমধ্যেই বাশার বাহিনী সিরিয়ার অধিকাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। কিছুদিন পূর্বে ইরান বলেছিল, আমেরিকার সাথে তারা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কাজ করতে আগ্রহী। অর্থাৎ, আমেরিকার সহায়তায় ইরান সিরিয়ার মুজাহিদিনদের হারিয়ে আসাদকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। যদি আমেরিকা তাতে সম্মত হয়, তবে ইরান, হিযবুল্লাহ, রাশিয়া, চিন, আমেরিকা, ইসরাইলসহ পশ্চিমা বিশ্বের সব দেশকে এক কাতারে দেখতে পাওয়া যাবে। যদিও আসাদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের যুদ্ধের ইতিহাস রয়েছে, তবু তারা এখন আসাদের পক্ষ নেওয়া অস্বাভাবিক নয় কারণ, আসাদকে পুনরায় ক্ষমতায় বসিয়ে দিলে সে পশ্চিমা বিশ্বের গোলাম হয়ে থাকবে এবং মুজাহিদিনরা যদি সিরিয়া দখল করে নেয় তবে সেই সিরিয়া হবে পশ্চিমাদের জন্য এক দুঃস্বপ্নের নাম। কিন্তু মেরুদণ্ডহীন আরব রাজাদের জন্য ইরান-আমেরিকার সুসম্পর্ক মেনে নেওয়াটা হবে কষ্টের।

অপরদিকে আরেকটি সম্ভাবনা রয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো সিরিয়ায় হামলা করে আসাদকে হটিয়ে তাদের অনুগত ফ্রি সিরিয়ান আর্মিকে ক্ষমতায় বসাবে এবং মুজাহিদীনদের সন্ত্রাস আখ্যায়িত করে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ হিসাবে সিরিয়ায় নিজেদের সৈন্য রাখতে চাইতে পারে।তখন অবশ্য শান্তি ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই। কারণ, একদিকে বাশার বাহিনী ও তাদের মিত্র হিজবুল্লাহ এই ফ্রি সিরিয়ান আর্মির সরকারের উপর হামলা করবে, অপরদিকে মুজাহিদীনদের হামলা তো রয়েছেই। এই অবস্থায় আরব রাজারা থাকবে সবচেয়ে নির্ভাবনায় এবং নবগঠিত সরকারকে বিপুল অর্থ দিয়ে সহায়তা করবে এটা নিশ্চিতকরেই বলা যায়।

মুজাহিদীনরা এখন পর্যন্ত যেভাবে লড়ছে তাতে সমগ্র সিরিয়ায় তাদের বিজয় লাভ করা অসম্ভব নয়। কুর্দি বিদ্রোহীদের সাথে যদি শান্তিচুক্তি করে যে কুর্দিদের কোন নিপীড়ন করা হবে না, তাহলে হয়ত কুর্দিদেরও পাশে পাওয়া যাবে। কিছুদিন পূর্বে কুর্দিদের ছোট দুইটি বিদ্রোহী গ্রুপ শরিয়াহ আইন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মুজাহিদীন দের সাথে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু সমস্যা হল, মুজাহিদিনদের পাশে আন্তর্জাতিক কোন সমর্থন নেই যা একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত রাষ্ট্র গঠন ও সরকারের স্বীকৃতি পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করবে। কিন্তু যদি আমেরিকা অথবা ইসরাইল সেই মুজাহিদিনদের হামলা করে, তবে সেটা আরেক আফগানস্থানের মত হতে পারে এবং যুদ্ধ পুরা মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে যেতে পারে।

এই যুদ্ধের ফলাফল কি হবে? কে জয় লাভ করবে? কুর্দিরা কি পারবে তাদের স্বপ্নের স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠা করতে? সিরিয়ার শরণার্থীরা কবে তাদের নিজ গৃহে ফিরতে পারবে?
এমন শত প্রশ্নের জবাব পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও দীর্ঘ সময়ের।

শিয়া আর সুন্নি কারা? এদের মধ্যে পার্থক্য কী? কুর্দি কাদেরকে বলে? বিস্তারিত।

উত্তর-->
ইসলামের প্রধান ২ টি সেক্ট এই সুন্নি আর শিয়া। সুন্নিদের বলা হয় orthodox মুসলিম, অর্থাৎ মেইনস্ট্রিম মুসলিম বা প্রথাগত মুসলিম।
অনেকগুলো বই আর নেট ব্রাউজ করে এ পোস্টের তথ্যগুলো যোগাড় করা হয়েছে।
আর, পোস্টটি একটু বড়, তাই ধৈর্য নিয়ে পড়তে হবে।
শিয়া অরিজিনঃ
একদম প্রথম থেকে বলি। হিজরত এর ঘটনায় কুরাইশদের মধ্যে কেউ কেউ হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন, “আপদ গেল” বলে। কিন্তু কারা সবচেয়ে অখুশি হয় জানেন? মদিনার ইহুদীরা। তাদের নেতা ছিল আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালুল। মদিনার নেতা হওয়ার স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যায় মুহাম্মাদ (সা) এর আগমনে। তখন থেকেই ইসলামের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র শুরু করা হয়। তাই, মুহাম্মাদ (সা) ষড়যন্ত্রকারী ইহুদিদের ইয়াস্রিব (মদিনার আগের নাম) থেকে বহিষ্কার করেন।
এবার, ঘটনা ফাস্ট ফরওয়ার্ড করে উমার (রা) এর আমলে আসি। তাঁর সময় পারস্য জয় করে মুসলিমরা। তখনি সেই বিখ্যাত ঘটনা ঘটে, হরমুজান এর । এটা সবারই জানার কথা, আমরা সবাই ছোটো ক্লাস এ ধর্ম বই এ উমার (রা) এর মহানুভবতার কাহিনী পড়তে গিয়ে হরমুযান এর কাহিনী পড়েছি। পারস্য বাহিনীর কমান্ডার হরমুযান, যে কিনা মৃত্যুদণ্ড এড়াতে ছলনার আশ্রয় নেয়। পানি চেয়ে বলে এটাই তাঁর শেষ ইচ্ছা যে, এ পানি পান না করা পর্যন্ত তাঁকে হত্যা করা হবে না, আর পরে সে এ পানি ফেলে দেয়। কিন্তু উমার (রা) তাঁকে হত্যা করেন নি। আমাদেরকে শেখান হয়েছিল, তাঁর মহানুভবতা দেখে হরমুজান ইসলাম “গ্রহণ” করে। আসলে, কিন্তু অতি দুঃখের ব্যাপার, সেটা লোকদেখানো ছিল।
মুক্তি পেয়ে হরমুজান বাস করতে থাকে মদিনায়। এবং, উমার (রা) কে হত্যা করার পরিকল্পনা সাজাতে থাকে। তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হয় জাফিনা আলখালিল (খ্রিস্টান) আর সাবা ইবনে শামুন (ইহুদী)।
কেন তারা একসাথে হল? কারনঃ
১/ হরমুজানের পারস্য বাহিনীকে হারিয়েছে মুসলিমরা। প্রতিশোধ চাই।
২/ জাফিনার রোমান বাহিনীকে হারিয়েছে মুসলিমরা। প্রতিশোধ চাই।
৩/ সাবার ইহুদী গোষ্ঠীকে বহিষ্কার করেছে মুসলিমরা। প্রতিশোধ চাই।
আর নতুন ধর্ম ইসলামের প্রতি সম্মিলিত বিতৃষ্ণা তো আছেই। আর, গুপ্তহত্যা করার ব্যাপারে ইহুদিদের সর্বদাই খ্যাতি ছিল। তো, ৭ নভেম্বর ৬৪৪ সালে ফিরোজ নামের এক আততায়ীকে দিয়ে উমার (রা) কে হত্যা করা হয়। ফিরোজ ৬ বার মতান্তরে ৩ বার ছুরিকাঘাত করে। সাহিহ বুখারি মতে, ফিরোজ ধরা পড়ার পর আত্মহত্যা করে। কিন্তু, শিয়ারা তা মানে না।
উমার (রা) এর ছেলে উবাইদুল্লাহ হরমুযান আর জাফিনাকে হত্যা করেন। অবশ্যই, ইহুদী সাবা বেঁচে যায়। (আড়ালে কাজ করেছিল সাবা) পরে, উবাইদুল্লাহকে হত্যা মামলায় অভিযুক্ত করা হয়। তাঁকে উপস্থিত করা হয় নতুন খলিফা উসমান (রা) এর সামনে। উযির আলি (রা) বললেন, উবাইদুল্লাহ বিনা প্রমাণে তৎক্ষণাৎ হত্যা করেছে, যেটা ইসলাম মানে না। এটা তাঁর করা উচিত হয়নি। আলি(রা) এর পক্ষে সমর্থন দেন অনেকে। আবার উবাইদুল্লার প্রতিও অনেকে সমর্থন দেন। তখন তারা ২ ভাগ হয়ে যান। পরে, উসমান (রা) উবাইদুল্লাহ এর পক্ষ হতে জরিমানা প্রদান করেন।
কিন্তু, ততদিনে বিভেদ যা হবার হয়ে গেছে। ইহুদী পরিকল্পনা সফল হতে শুরু করেছে। ইহুদী সাবা তখন যেটা করলেন, তাঁর ছেলে আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা কে বললেন, মুসলিমদের দেখিয়ে ইসলাম গ্রহণ করতে, যেন এরপর থেকে সহজেই ইহুদীরা মুসলিমদের গোপন খবর পেতে পারে। ভিতর থেকে বিভেদ সৃষ্টি করতে একজনকে দরকার ছিল।
পরিকল্পনামত, আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা তাই করলেন। তিনি নিজেকে অতীব ধর্মপ্রাণ মুসলিম হিসেবে প্রকাশ করলেন। আর বললেন, মুহাম্মাদ (সা) এর আপন আত্মীয় হিসেবে খেলাফত সবচেয়ে বেশি প্রাপ্য আলি (রা) এর। তিনি আলি (রা) এর পক্ষে প্রচারনা করা শুরু করলেন। আর, উসমান (রা) এর বিরুদ্ধে অপপ্রচার। শুধু উসমানই নন, আবু বকর(রা), উমার(রা) এবং উসমান(রা) ৩ জনের নামের বিরুদ্ধেই তিনি কুৎসা ছড়াতে লাগলেন। জনতা ক্ষিপ্ত হতে লাগল উসমান (রা) এর উপর। ইবনে সাবা হয়ে উঠলেন জনপ্রিয়। ফল কী দাঁড়ালো? ১৭ জুলাই ৬৫৬ সালে উসমান (রা) কে হত্যা করা হল।
আর আলি(রা) এর অনুসারীরা দাবি করতে লাগল, আলি (রা) যেন খলিফা হন। তারা নিজেদের ‘শিয়া’ নামে পরিচয় দিতে লাগল। শিয়া মানে পরিবার বা অনুসারী। “শিয়াতু আলি” থেকে “শিয়া”, মানে, আলির পরিবার বা আলির অনুসারী।
যাই হোক, প্রথমে আলি (রা) রাজি হননি খলিফা হতে। পরে লোকজন গিয়ে সাদ (রা), তালহা (রা), জুবায়ের (রা) প্রমুখের কাছে গিয়ে খলিফা হবার প্রস্তাব দেন। কিন্তু তারাও রাজি হলেন না। শেষ পর্যন্ত আলি (রা) এই বলে রাজি হলেন, সবাই তাঁকে মানলেই তিনি খলিফা হবেন। পরে সবাই তালহা (রা) আর জুবায়ের (রা) কে সভায় হাজির করল। তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হল, আপনারা আলি(রা) কে মানবেন? তারা নীরব রইলেন। পরে উপস্থিত একজন তরবারি বের করে হুমকি দিলে তারা শর্তসাপেক্ষে রাজি হলেন। বিস্তারিত কাহিনী এখানে উল্লেখ করলাম না। অন্যদিকে মুয়াবিয়া (রা) মানলেন না তাঁর খেলাফত। মুয়াবিয়ার দূত মদিনায় এলে সেই ইহুদী ইবনে সাবার লোক তাঁকে হত্যা করতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু, মনে হল, আলি (রা) চেষ্টা করেছেন। ফলে আলি আর মুয়াবিয়ার মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হল। তা দেখে এক পর্যায়ে, তালহা (রা) আর জুবায়ের (রা) মদিনা ত্যাগ করলেন।
অন্যদিকে আয়িশা (রা) হজ পালন শেষে মদিনা ফেরার পথে খবর পেলেন উসমান (রা) কেও গুপ্তহত্যা করা হয়েছে। তৎক্ষণাৎ তিনি তাঁর উটের উপর থেকে একটি উদ্দীপক ভাষণ দেন যে, উসমান (রা) হত্যার প্রতিশোধ নিতেই হবে। উপস্থিত মানুষজন তাঁর কথায় উদ্দীপ্ত হয়ে আন্দোলন সৃষ্টি করে। তালহা (রা) আর জুবায়ের(রা) মক্কা পৌঁছে আন্দোলনে যোগ দেন।
পরের ঘটনা, আলি (রা) আর আয়িশা (রা) এর বাহিনী মুখোমুখি হয়। কিন্তু আলি (রা) সংলাপে বসতে চাইলেন। ইবনে সাবা তখন প্রমাদ গুনলেন। কারণ, সন্ধি হলে বিভেদ হবে না, তাঁর উদ্দেশ্য সফল হবে না। চক্রান্ত শুরু করলেন তিনি। তো, সংলাপ সফল হল না। যুদ্ধ হবেই।
২ পক্ষই চাইল যুদ্ধ যেন না হয়। কিন্তু রাতের আঁধারে ইবনে সাবার দল আলির (রা) শিবিরে আক্রমন করে। কিন্ত মনে হল, প্রতিপক্ষ আয়িশা (রা) এর বাহিনী আক্রমন করেছে। তাই তারাও পাল্টা আক্রমণ চালাল। যুদ্ধ হলই। যুদ্ধের এক পর্যায়ে আলি(রা) জুবায়ের (রা) এর কাছে গিয়ে বললেন, “মনে আছে? একদিন রাসুল বলেছিলেন তুমি ভবিষ্যতে অন্যায়ভাবে আলির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে?” জুবায়ের বললেন, “ও! হ্যাঁ! তাই তো!” সাথে সাথে জুবায়ের (রা) যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে চলে গেলেন। ইবনে সাবার এক লোক জুবায়েরের পিছু নেয়। পরে জুবায়ের (রা) জোহোর এর নামায শুরু করতেই তাঁকে খুন করল। আনন্দের সাথে আলি (রা) এর কাছে এল খুনি, এরপর জুবায়েরের (রা) তরবারি, বর্ম পেশ করল। আলি(রা) তাঁকে জাহান্নামের সুসংবাদ দিলেন। সাথে সাথে, সেই লোক পেটে তরবারি ঢুকিয়ে আত্মহত্যা করল। অন্যদিকে তালহা (রা) যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করার সময় একটি তীরের আঘাতে মারা যান। আলি (রা) এ ২জনের মৃত্যুর কথা শুনে মনবেদনায় কাতর হয়ে পড়লেন।
আলি (রা) বুঝতে পারলেন, যুদ্ধ সহজে শেষ হবে না। যতক্ষণ আয়িশা (রা) উটের উপর থেকে উৎসাহ দিবেন, ততক্ষণ চলবে যুদ্ধ। ১০০০০ মুসলিম মারা যাবার পর আলির(রা) বাহিনীর একজন উট পর্যন্ত পৌঁছে পা কেটে ফেলেন। ফলে উট বসে পড়ল। আর আয়িশার (রা) বাহিনীর মন ভেঙ্গে গেল। পরে, আলি(রা) আয়িশার(রা) হাওদাটি অদুরে নিয়ে গিয়ে পর্দা দিয়ে ঘিরে দেয়ার ব্যবস্থা করলেন। এরপর সেখানে ঢুকে কুশল জিজ্ঞেস করলেন। তারা পরস্পরের কাছে ক্ষমা চাইলেন। যুদ্ধ বন্ধ হল। এ যুদ্ধ জামাল (উট) যুদ্ধ নামে পরিচিত। কারণ, আয়িশা (রা) উটের উপর থেকে উৎসাহ দিচ্ছিলেন।
মুসলিমদের যতই ক্ষতি হোক, লাভ হল ইসলামের শত্রুদের। আলি (রা) ইবনে সাবা আর তাঁর অনুসারীদের নির্বাসিত করলেন। তারা নির্বাসনে গিয়েও একটি secret societyর অনুরুপ কাজ করতে লাগল, যার সমতুল্য বর্তমান FreeMasons, Illuminati ইত্যাদি। সাবায়িরা (ইবনে সাবার অনুসারী) আলি (রা) কে পরে হত্যা করে।
আর এরপরের কাহিনী মোটামুটি সবারই জানা। সেই যে মুয়াবিয়া (রা) অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন, পরে খিলাফত চাইলেন, এরপর, হাসান (রা), হুসাইন (রা), ইয়াজিদ(রা) এর কাহিনী... আর এরপর কারবালা। এ পর্যন্ত এবং এর পরেও যারা আলি (রা) আর তাঁর বংশকে অনুসরণ করেছে, তারাই হলো... আজকের শিয়া সম্প্রদায়।
সুন্নি আর শিয়া বিশ্বাসের কী পার্থক্য?
শিয়াদের অনেক ভাগ-উপবিভাগ আছে। এখানে তাদের মৌলিক বিশ্বাস এর সাথে সুন্নিদের বিশ্বাস তুলনা করা হলঃ
# সুন্নিঃ চার খলিফাতে বিশ্বাসী। আবু বকর (রা), উমার (রা), উসমান (রা), আলি(রা)
শিয়াঃ আবু বকর, উমার, উসমান খলিফা হয়েছিলেন অবৈধভাবে (নাউযুবিল্লাহ); কেউ কেউ তাঁদের কাফির বলে। উমার (রা) এর হত্যাকারী ফিরোজ এর কবর সযত্নে সংরক্ষণ করেছে তারা।
# সুন্নিঃ ইমাম প্রথার উপর তেমন গুরুত্ব দেয়া হয় নি।
শিয়াঃ তাঁদের মূল বিশ্বাস এ ইমাম প্রথা। ১২ ইমামে বিশ্বাসী। প্রথম ইমাম আলি(রা)। এবং মনে করে ইমামরা মাসুম । তারা গায়েবের খবর জানেন । যেটা শিরক ( নাউযুবিল্লাহ ) ।
# সুন্নিঃ সুন্নীরা বিশ্বাস করে বিশ্বাসের সাথে সাক্ষ্য দিতে হবে।
শিয়াঃ আর শিয়ারা প্রয়োজনে বিশ্বাস গোপন রাখাকে জায়েজ মনে করে।যা তাকিয়া নামে পরিচিত।
# সুন্নিঃ মাহদি আসবেন মুসলিম জাতিকে নেতৃত্ব দিতে।
শিয়াঃ মাহদি হবেন ১২শ ইমাম। ইমাম মাহদি। (সুন্নিরা উপমহাদেশীয় শিয়াদের সংস্পর্শে এসে মাহদির আগে ইমাম বলে) তারা অতি সম্মানার্থে মাহদির পরে আলাইহিস সালামও বলে।
# সুন্নিঃ সাহিহ হাদিস বলতে সিহাহ সিত্তাহ কে বুঝান হয়।
শিয়াঃ তাঁদের হাদিস আলাদা। তারা বিশেষ বিশেষ ব্যক্তির হাদিস বর্জন করে। যেমন, আয়িশা (রা), আবু হুরাইরা (রা) প্রমুখ।
# সুন্নিঃ রাসুল (সা) মৃত্যুশয্যায় ইহুদীর বিষ যন্ত্রণা ভোগ করেন।
শিয়াঃ (সবার বিশ্বাস না) সেই বিষ খায়বারের ইহুদী নারীর না। এ বিষ নবী (সা) কে প্রয়োগ করেন আয়িশা (রা) আর হাফসা (রা) যারা যথাক্রমে, আবু বকর (রা) আর উমার (রা) এর মেয়ে। (নাউজুবিল্লাহ)
# সুন্নিঃ দুনিয়ার সর্বত্র নামাযের সিজদা করা যাবে।
শিয়াঃ সাধারনত কারবালার মাটিতে তৈরি বস্তু সামনে রেখে সেটার উপর সিজদার সময় কপাল রাখা হয়।
# সুন্নিঃ পাঁচ ওয়াক্তে নামাজ পড়া হয়।
শিয়াঃ তিন বারে পাঁচ ওয়াক্ত আদায় করা যায়। ফযর, এরপর জোহর+আসর, এরপর মাগরিব+এশা ।
# সুন্নিঃ নামাযে হাত বেধে রাখা হয়। তবে, মালিকি মাযহাবের অনুসারীরা হাত ছেড়ে পড়ে। উভয়টিই গ্রহণযোগ্য।
শিয়াঃ হাত ছেড়ে নামাযে দাঁড়ায়।
# সুন্নিঃ হিজাবের ক্ষেত্রে ২টি মতবাদ আছে। মুখ খোলা রাখা, আর মুখ ঢাকা।
শিয়াঃ মুখ খোলা রাখা।
# সুন্নিঃ মুতাহ বিয়ে নিষিদ্ধ ।
শিয়াঃ মুতাহ বিয়েকে তারা জায়েজ বলে । ( কিছুদিনের চুক্তির বিয়ে )
এসব ছাড়াও আরও কিছু পার্থক্য এর কথা বলা হয়, যেগুলো প্রমানিত না। তাই ওগুলো বাদ দিলাম। আর এমনিতে আরও কিছু ছোটোখাটো পার্থক্য আছে।
এবার আপনার আরেক প্রশ্নে আসি।
কুর্দি কারা?
উত্তরঃ
পশ্চিম এশিয়ার একটি জাতি কুর্দি। ( کورد, Kurd)
ইরান ইরাক সিরিয়া আর তুরস্কের কিছু অঞ্চল মিলিয়ে কুরদিস্তান গঠিত, এ অঞ্চলের অধিবাসীকে কুর্দি বলে।
সারা বিশ্বে ৩ কোটি কুর্দি আছে। বেশির ভাগ থাকেন কুর্দিস্তানে। এছাড়াও তারা থাকেন পশ্চিম তুরস্ক, আরমেনিয়া, জর্জিয়া, ইসরাইল, আজেরবাইজান, রাশিয়া, লেবানন, কিছু ইউরোপীয় দেশ আর যুক্তরাষ্ট্রে।
তাদের ভাষা কুরদিশ।
বেশিরভাগ মুসলিম কুর্দিরা শাফিয়ি মাজহাবের সুন্নি মুসলিম। তবে কিছু শিয়াও আছে।
আর অন্যান্য ধর্মের অনুসারীও আছে, "আহলে হক" ধর্ম, ইয়াজিদি ধর্ম- এসব নবউদ্ভাবিত ধর্ম যেমন আছে তেমন আছে প্রাচীন ধর্মের অনুসারীও যেমন, ইহুদি আর খ্রিস্টান।
আশা করি আপনার উত্তর পেয়েছেন
আল্লাহ ভাল জানেন।


★ প্রথমবার্তা, ডেস্ক : আমার প্রশ্ন হলো সুন্নি-শিয়াদের মধ্যে কেন এত বিরোধ লেগে থাকে?

আর আমি অনেকের কাছেই শুনেছি- শিয়ারা রাসূল (সা.)কে নবী হিসেবে স্বীকার করেন না, তাহলে ব্যাপারটা কেমন হয়ে গেল না? আল্লাহর পরেই তো রাসূলকে সম্মান করতে হবে? শিয়ারা কি আসলেই প্রকৃত মুসলিম? আসলে পবিত্র কুরআন ও হাদিসের বর্ণনাগুলোর ব্যখ্যা নিয়ে মতভেদের কারণেই মুসলমানদের মধ্যে নানা মাজহাব বা মতবাদ সৃষ্টি হয়েছে। এটি সব ধর্মের মধ্যেই দেখা যায়। এ জাতীয় মতভেদ কেবল তর্ক বা মত-বিনিময়ের পর্যায়ে সীমিত থাকলেই তা স্বাভাবিক বলে বিবেচিত হয়। কিন্তু এ নিয়ে সহিংসতা ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা সব পক্ষের জন্যই ক্ষতিকর বলে এ ব্যাপারে মুসলমানদের সতর্ক থাকা উচিত। কারণ, পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর রশি বা রজ্জুকে আঁকড়ে ধর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।

আসলে শিয়া ও সুন্নি মুসলমানদের মধ্যে কিছু কিছু বিষয়ে মতভেদ থাকলেও অনেক মৌলিক বিষয়েই রয়েছে মতের মিল। যেমন, উভয় মাজহাবই এক আল্লাহ, অভিন্ন ধর্মগ্রন্থ তথা পবিত্র কুরআন এবং বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-কে সর্বশেষ নবী হিসেবে মানেন। উভয় মাজহাবই পরকালের প্রতি তথা পুনরুত্থান ও বিচার দিবসের প্রতি বিশ্বাস, নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত ও নারীদের পর্দা করা ফরজ হওয়ার বিষয়সহ আরো অনেক বিষয়েই একমত। এইসব বিষয়ের খুঁটিনাটি দিকে কিছু মতভেদ রয়েছে যা সুন্নি ভাইদের চার মাজহাবের মধ্যেও রয়েছে ।
তবে শিয়া ও সুন্নি মাজহাবের মধ্যে মতবিরোধের একটা দিক হলো- বিশ্বনবী (সা.)’র পর তাঁর স্থলাভিষিক্ত তথা খলিফা বা প্রতিনিধি নিয়োগ নিয়ে। সুন্নি ভাইয়েরা মনে করেন এ বিষয়টি আল্লাহর সর্বশেষ রাসূল মুসলমানদের ওপরই ছেড়ে দিয়েছেন এবং সাহাবাগণ নির্বাচন পদ্ধতিতে খলিফা নির্বাচন করেছেন। অন্যদিকে শিয়া মুসলমানরা মনে করেন, বিশ্বনবী (সা.)’র স্থলাভিষিক্ত তথা খলিফা বা প্রতিনিধি নিয়োগের বিষয়টি মহান আল্লাহই নির্ধারণ করেন ও তা রাসূল (সা.)-কে জানিয়ে দেন। আর এরই ভিত্তিতে হযরত আলী (আ.) এবং এরপর তাঁর বংশধরগণ ছিলেন মুসলমানদের প্রকৃত খলিফা। তবে শিয়াদের সম্পর্কে একটি মিথ্যা অভিযোগ তথা অপবাদ হলো তারা বিশ্বনবী মুহাম্মাদ (সা.)-কে  নবী বা শেষ নবী হিসেবে স্বীকার করেন না। বরং শিয়া মুসলমানরাও সুন্নি ভাইদের মতই মনে করেন যে, বিশ্বনবী (সা.)’র পর আর কোনো নবী আসবেন না এবং যারাই এ বিশ্বাস পোষণ করবে না তারা মুসলমান হিসেবে স্বীকৃত হবে না।
আমিরুল মু’মিনিন আলী (আ.)’র ভাষণ ও বক্তৃতামালার সংস্করণ ‘নাহজুল বালাগ্বা’ শিয়াদের জন্য শীর্ষস্থানীয় প্রামাণ্য বই। আল্লাহ ও বিশ্বনবী (সা.)’র বাণীর পরই এ বইকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন তারা। আবার সুন্নি মুসলমানের কাছেও এটি একটি নির্ভরযোগ্য প্রামাণ্য বই। এ বইয়ে স্বয়ং আলী (আ.) থেকে বার বার বলা হয়েছে যে রাসূল (সা.) ছিলেন সর্বশেষ নবী। দৃষ্টান্ত হিসেবে এ বইয়ে উল্লেখিত আলী (আ.)’র ৭১ ও ২৩৩ নম্বর খোতবা দেখুন। তাই শিয়ারা রাসূল (সা.)-কে নবী ও রাসূল বলে মানেন না- এমন দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং ইসলামের শত্রুদের পক্ষ থেকে প্রচারিত একটি অপবাদ। শিয়া মুসলমানরা যে কোনো সমাবেশে কিংবা একা থাকলেও বিশ্বনবী (সা.)’র পবিত্র নাম শোনার সঙ্গে সঙ্গে দরুদ পাঠ করে সম্মান প্রদর্শন করেন তাঁকে ও এমনকি তাঁর আহলে বাইতকেও। এছাড়াও শিয়া মুসলমানরা বিশ্বনবী (সা.)’র নবুওত প্রাপ্তির দিবসকে উৎসব হিসেবে পালন করে থাকেন।
শিয়া ও সুন্নি মুসলমানদের মধ্যে কোনো কোনো বিষয়ে মতভেদ থাকলেও তারা যুগ যুগ ধরে পরস্পরের সঙ্গে শান্তিতে বসবাস করে এসেছে। তাদের মধ্যে বড়জোর জ্ঞানগত তর্ক-বিতর্ক বা যুক্তি বিনিময় হতো। আসলে ইসলামের শত্রুরাই মুসলমানদের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টির জন্য শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে সহিংস দাঙ্গা বাধানোর জন্য সুন্নি নামধারী একদল ওয়াহাবিকে উস্কে দিয়েছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে। এই ওয়াহাবিদের দৃষ্টিতে সুন্নিদের চার মাজহাবের তিন মাজহাবের ইমামগণ এবং তাদের অনুসারীরাও কাফির ও হত্যার যোগ্য! আপনারা হয়তো জানেন যে ভারত বর্ষে মোঘল শাসকদের অনেকেই ছিলেন শিয়া মুসলমান। নবাব সিরাজউদদৌলাও ছিলেন শিয়া মুসলমান। দানবীর ও ভারত বর্ষে মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারের জন্য সবচেয়ে বেশি সম্পদ ওয়াকফকারী মহান ব্যক্তিত্ব হাজি মুহাম্মাদ মুহসিন ছিলেন একজন শিয়া মুসলমান। ভারতবর্ষ ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের নানা অঞ্চলে শিয়া ও সুন্নি মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধভাবে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটেনসহ উপনিবেশবাদী কাফির শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করেছে।
বর্তমান যুগে ইহুদিবাদী ইসরাইলের অপরাধযজ্ঞ থেকে মুসলমানদের দৃষ্টি আড়াল করতে এবং মুসলমানদের মধ্যে অনৈক্য ও বিভেদ উস্কে দিয়ে তাদেরকে সহজেই শোষণ করার জন্য দেশে দেশে শিয়া-সুন্নি বিভেদ উস্কে দেয়ার চেষ্টা করছে সাম্রাজ্যবাদীরা। সাম্প্রতিক সময়ে ইরাক ও সিরিয়ায় এ ধরনের তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে আলকায়দা বা আইএসআইএল-এর ওয়াহাবি সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে। কিন্তু এই দুই দেশের শিয়া ও সুন্নি আলেমগণ ঐক্যবদ্ধভাবে ওয়াহাবি ও বিজাতীয় শক্তিকে মোকাবেলার আহ্বান জানানোর পর সন্ত্রাসীরা শিয়া ও সুন্নি মুসলমানদের সম্মিলিত শক্তির কাছে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের মহান রূপকার ইমাম খোমেনী (র.)ও বলেছেন, যারা মুসলমানদের মধ্যে শিয়া-সুন্নির নামে অনৈক্য সৃষ্টি করে তারা শিয়াও নয়, সুন্নিও নয়, বরং সাম্রাজ্যবাদীদের দালাল।

Wednesday, November 11, 2015

স্বপ্ন কি ?


মানুষ জীবনের ৩৩% সময় ঘুমিয়ে কাটায়। স্বপ্ন মানুষের ঘুমন্ত জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। নিদ্রিত অবস্থায় ইন্দ্রিয়গণ স্তিমিত হয় কিন্তু সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় হয় না। তাই নিদ্রাকালে নানারূপ কল্পনাশ্রয়ী চিন্তা ও দৃশ্য উদিত হয়। এই সব দৃশ্য দেখাকে একরকমের “স্বপ্ন দেখা বলা হয়। নিদ্রিত অবস্থায় জাগ্রত অবস্থার ধারাবাহিকতাকেও স্বপ্ন বলা যেতে পারে। স্বপ্নে নিজের কাছে নিজের নানারকম আবেগ, তথ্য ও তত্ত্বের প্রকাশ ঘটে। স্বপ্নে দেখা দৃশ্য জাগ্রত প্রতক্ষ্যের মতোই স্পষ্ট। আমরা স্বপ্ন দেখি অর্থাৎ স্বপ্ন মূলত দর্শন-ইন্দ্রিয়ের কাজ। স্বপ্ন দেখা অনেকটা সিনেমা দেখার মতো। তবে স্বপ্নে অন্যান্য ইন্দ্রিয়েরও গৌণ ভূমিকা থাকে। জাগ্রত অবস্থায় প্রতক্ষ্যের মাধ্যমে যেমন শরীরে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তেমনি স্বপ্ন দেখাতেও কিছু না কিছু শারিরীক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

মানুষ স্বপ্ন দেখে কেন ?
ঘুমের মধ্যেও ইন্দ্রিয়গণ বাইরের জগত থেকে সংবেদন গ্রহণ করতে পারে। এ সব সংবেদন ইচ্ছামতো প্রতিরূপে রূপান্তরিত হয়ে স্বপ্নদৃশ্যের সৃষ্টি করতে পারে। তবে স্বপ্নের মূল উপাদান তৈরি হয় স্বপ্নদ্রষ্টার দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতা, চিন্তা ও কর্ম থেকে। এবং স্মৃতি থেকে।
মানুষ কতটা স্বপ্ন দেখে ?
জন্মমুহূর্ত থেকেই শিশু দর্শন প্রতিরূপ ব্যতিত অন্যান্য প্রতিরূপের সাহায্যে স্বপ্ন দেখে। জন্মের তিন চার মাস পর থেকেই শিশুরা স্বপ্ন “দেখা” শুরু করে। দুই বছর বয়স পর্যন্ত শিশুরা ঘুম সময়ের প্রায় ৪০ শতাংশ এবং কৈশোরে ঘুম সময়ের ২০ থেকে ২২ শতাংশ স্বপ্ন দেখে। চল্লিশের পর থেকে ঘুম সময়ের ১২ থেকে ১৫ শতাংশ স্বপ্ন দেখা হয়। মানুষের বয়স যত বাড়তে থাকে স্বপ্ন দেখা তত কমতে থাকে। সুতরাং, প্রাকৃতিক প্রবণতা হচ্ছে মানুষ সর্বস্বপ্নহীন ভাবে পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে।

মানুষ কখন স্বপ্ন দেখে ?
ক্লান্ত মানুষ প্রথম দুই ঘন্টা ঘুমানোর সময় স্বপ্ন দেখে না। তখন শরীর পূর্ণ বিশ্রাম নেয়। স্বপ্ন দর্শন কালকে rapid eye movement period বলা হয়। নিদ্রাকালে যে সময় মানুষ স্বপ্ন দেখে না সে সময়টাকে  non rapid eye movement period বলা হয়। ঘুমের মধ্যে প্রায় প্রত্যেক ৯০ মিনিটে,  প্রায় ১০ মিনিট সময় ধরে REM  নিদ্রা দেখা যায়। ঘুমের মধ্যে ৪/৫ বার REM নিদ্রা হয়। অর্থাৎ প্রতিদিন মানুষ অন্তত ৪/৫ টি স্বপ্ন দেখে।

স্বপ্নের প্রকারভেদঃ
চরক-সংহিতা সাত প্রকার স্বপ্নের কথা বলেছে। বৌদ্ধ দর্শনে বর্ণিত হয়েছে ছয় প্রকারের স্বপ্ন।
জীবন চলার পথে মানুষ ভয়,
দুঃস্বপ্ন,
অতীত স্মৃতি,
ইচ্ছাপূরণ,
ভবিষ্যতের বার্তা,
আধ্যাত্মিক নির্দেশনা,
মুর্শিদের উপদেশ,
জ্ঞান লাভ ইত্যাদি নানারকম স্বপ্ন দেখে।
আধ্যাত্মিক স্বপ্নঃ
স্বপ্নের সাথে আধ্যাত্মিকতার সম্পর্ক নিবিড়। স্বপ্ন হচ্ছে মুর্শিদের কাছে পৌঁছবার, মুর্শিদ থেকে নির্দেশনা লাভের মহাসড়ক। স্বপ্নে মুর্শিদের সাথে সংযোগ বহুজনের একটা পরীক্ষিত পদ্ধতি। মুর্শিদের সাথে প্রেম থাকলে শিষ্য তাকে স্বপ্নে দেখবে এবং তার কাছ থেকে প্রতিটা বিষয়ে নির্দেশনা প্রাপ্ত হবে,  এতে সন্দেহের অবকাশ নেই। স্বপ্নে যে শুধু আধ্যাত্মিক জ্ঞান প্রাপ্তি ঘটে তা নয়, স্বপ্ন সমীক্ষণের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক জ্ঞান প্রাপ্তি ঘটে তা নয়, স্বপ্ন সমীক্ষণের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক তত্ত্বও বিকশিত হয়।

স্বপ্নে ভবিষ্যতের বার্তাঃ
স্বপ্ন ভবিষ্যতের বার্তা বহন করতে পারে। পতঙ্গের গুরুমস্তিষ্ক থাকে না কিন্তু পতঙ্গেরা নার্ভক্রিয়ার সাহায্যে ভূমিকম্প, সূর্যগ্রহণ, আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুযোর্গের পূর্বাভাস পেয়ে থাকে। যন্ত্রের যন্ত্রনায় মানুষের মধ্যে ভবিষ্যতের পূর্বভাস পাবার শক্তিগুলো নিস্ক্রিয় হয়ে যায়। ঘুমের সময় গুরু মস্তিষ্কের কর্মকান্ড স্তিমিত হয়ে গেলে স্বতন্ত্র নার্ভক্রিয়া সক্রিয় হয়ে ভবিষ্যৎ বাণী পাঠায়। “বিভূতিযোগ” চর্চা করে যোগীরা স্বতন্ত্র নার্ভক্রিয়াকে সক্রিয় করতে পারেন।
স্বপ্নে ইচ্ছাপূরণঃ
স্বপ্নের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য – ইচ্ছাপূরণ । মানুষ অনেক কিছুই চায় কিন্তু পায় না। এমনও হয়, মানুষ আসলে কি চায় তাই সে জানে না। স্বপ্নে একদিকে চেয়ে না পাওয়া বস্তুগুলো পেয়ে তার ইচ্ছাপূরণ হয় অন্যদিকে স্বপ্ন দ্রষ্টা জানতে পারে আসলে সে কি চায়।
স্বপ্ন দেখার প্রয়োজনীয়তাঃ
স্বপ্ন দেখার জন্যই মানুষকে ৬ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমাতে হয়। তা না হলে মানুষের শারিরীক বিশ্রামের জন্য ২/৩ ঘন্টা ঘুমই যথেষ্ট। সাধারণ মানুষের জন্য স্বপ্ন দেখা ঘুমের মতোই প্রয়োজন। কিন্তু আধ্যাত্মিক সাধনার একটা স্তরে উপনীত হলে স্বপ্ন দেখার কোন প্রয়োজন থাকে না বলে কোন কোন সাধক মন্তব্য করেছেন।
ঘটনা এবং স্বপ্ন একই সময়ে সংগঠিত হওয়াঃ
অনেক সময় এমন স্বপ্নও মানুষ দেখে থাকে যখন স্বপ্ন দেখার সময়ই ঘটনাটা ঘটছে। এমন ঘটনাও ঘটেছে – ছেলে বিদেশে থাকে, যে সময়ে সে স্বপ্নে তার বাবার মৃত্যু দেখেছে ঠিক সে সময়েই বাস্তবে তার বাবা ইন্তেকাল করেছেন। টেলিপ্যাথি ছাড়া অন্য কোনভাবে এমন ঘটনার ব্যাখ্যা করা যায় না।
স্বপ্ন স্মরণঃ
ঘুম থেকে জেগে উঠার পর অধিকাংশ স্বপ্নই ঠিকঠাক মনে থাকে না। অনেক সময় ঘুম ভাঙ্গার পর পর স্বপ্ন মনে থাকে কিন্তু যতই সময় যেতে থাকে স্বপ্ন ততই বিষ্মৃতিতে চলে যায়। কিন্তু কিছু স্বপ্ন আছে যা বাস্তব ঘটনার চেয়েও বেশি স্পষ্ট এবং উজ্জ্বল। এসব স্বপ্ন জীবনে কখনোই ভুলা যায় না।
স্বপ্ন বর্ণনায় মিথ্যাচারঃ
ঘুম ভাঙ্গার পর দেখা স্বপ্ন মানুষ যখন অন্যের কাছে বর্ণনা করে তখন সাধারণত মানুষ মিথ্যাচারের আশ্রয় নেয়। কারণ, স্বপ্ন বর্ণনার সময় জাগ্রত অবস্থার মনোভাব দেখা স্বপ্নের উপর প্রভাব ফেলে।  স্বপ্ন এতটা সাজানো গোছানো থাকে না যতটা সাজিয়ে গোছিয়ে মানুষ তা বর্ণনা করে।
স্বপ্নব্যাখ্যাঃ
আদিকাল থেকেই স্বপ্নব্যাখ্যার প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। আরটেমিডোরাস তার বিখ্যাত অনিরো ক্রিটিকন বইয়ে স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে প্রথম স্বপ্ন ব্যাখ্যার রীতি লিপিবদ্ধ করেন। স্বপ্নের উৎস, প্রক্রিয়া, তাৎপর্য ও ব্যাখ্যার পদ্ধতি সম্বন্ধে ফ্রয়েডের আবিষ্কার মনঃসমীক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশেও খাবনামা জাতীয় বইয়ের কাটতি কম নয়। স্বপ্নের ব্যাখ্যা কোন বইয়ে থাকতে পারে না। স্বপ্নের সঠিক ব্যাখ্যা কেবল জানতে পারে স্বপ্নদ্রষ্টা নিজে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে অধিকাংশ স্বপ্ন দ্রষ্টা এটাই জানে না যে সে সঠিক ব্যাখ্যাটা জানে। নিজেদের স্বপ্নকে নিজেরা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করলে অনেক তথ্য ও তত্ত্ব আবিষকৃত হয়। কিন্তু এজন্য প্রথমে স্বপ্ন স্মরণ রাখার অনুশীলন করতে হয়।
স্বপ্ন স্মরণ রাখার অনুশীলনঃ
রাতে ঘুমাবার আগে ২১ বার বলতে হবে  – আজ রাতে আমি যে সব স্বপ্ন দেখবো তার প্রত্যেকটি স্বপ্ন মনে রাখবো এবং ঘুম ভাঙ্গার সাথে সাথে তা লিখে রাখবো। এভাবে ২১ দিন চেষ্টা করলে সব স্বপ্ন মনে রাখা যায়। নিজেকে জানার জন্য স্বপ্নকে স্মরণ রাখার এবং স্বপ্ন বিশ্লেষণের গুরুত্ব অপরিসীম। যে জ্ঞান স্বপ্নদ্রষ্টার আছে কিন্তু যার অস্তিত্ব সম্পর্কে স্বপ্নদ্রষ্টা সচেতন নয় স্বপ্নে সেসব জ্ঞান প্রকাশিত হয়। কিন্তু স্বপ্নদ্রষ্টার সচেতন প্রচেষ্টা ব্যতিত তা সম্ভব নয়।
ইচ্ছা স্বপ্ন দেখাঃ
মানুষ ইচ্ছা স্বপ্নের সৃষ্টি করতে পারে। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে যাকে বা যে বিষয়ে স্বপ্ন দেখতে চায় সে বিষয়ে মনোনিবেশ করলে ইচ্ছা স্বপ্ন দেখা যায়।
স্বপ্নের তাৎপর্যঃ
যে যেমন মানুষ সে তেমন স্বপ্ন দেখে। স্বপ্নের তাৎপর্য নির্ভর করে স্বপ্নদ্রষ্টার চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গির উপর। যে সব মানুষের জাগ্রত অবস্থায়ই কর্মকান্ডের কোন তাৎপর্য নেই তার স্বপ্নেরও কোন তাৎপর্য নেই। স্বপ্ন তাৎপর্যপূর্ণ হয় যখন জাগ্রত অবস্থায় মানুষ তাৎপর্যপূর্ণ কাজ করে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর রাজষির্ নাটকের কাহিনী স্বপ্নে পেয়েছেন, ইংরেজ কবি কোলরিজ তাঁর বিখ্যাত কোবলা খান কবিতাটি স্বপ্ন দেখে লিখেছেন, বিজ্ঞানী নিলস বোর পরমাণুর গঠন স্বপ্নে দেখেছেন, বিজ্ঞানী কেকুলে বেনজিনের গঠন-তত্ত্বটি স্বপ্নে দেখেন অর্থাৎ এক চিন্তা তাৎপর্যপূর্ণ স্বপ্ন সৃষ্টি করে।
স্বপ্ন প্রতীকঃ

আদি কাল থেকেই মানুষ স্বপ্ন প্রতীকের কথা ভেবে আসছে। লাঠি, সাপ, পিস্তল, গর্ত, ঘর, কাগজ, গহনা, ঘোড়ায় চড়া, চাবি, নদী, সমূদ্র ইত্যাদি নানা রকমের স্বপ্ন প্রতীকের ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। ওড়ার স্বপ্ন, পড়ে যাবার স্বপ্ন, নিজেকে উলঙ্গ দেখার স্বপ্ন, পরীক্ষার স্বপ্ন, চোর ডাকাতের স্বপ্ন, পানিতে পড়ে যাবার স্বপ্ন, প্রিয়জনের মৃত্যুর স্বপ্ন ইত্যাদি স্বপ্নও প্রতিকী। স্বপ্ন প্রতীকের অভিধান আছে। প্রথম অভিধানটি প্রকাশিত হয় মিশরে। মুসলিম রাজাদের দরবারে স্বপ্নব্যাখ্যাদাতাগণ একসময় খুব সমাদৃত ছিলেন। বাইবেলের সুবিখ্যাত স্বপ্নগুলোর ব্যাখ্যাদাতা জোসেফের কথা আমাদের সবারই জানা। বাইবেলে অধিকাংশ শব্দই কুমন্ত্রণাদাতার সৃষ্টি এ রকম একটা আয়াত আছে।
স্বপ্ন ও লক্ষ্যঃ
স্বপ্ন ও লক্ষ্য এক নয়।  লক্ষ্য, স্বপ্নের মতো কল্পনা আশ্রিত নয়। লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট এবং স্পষ্ট। স্বপ্ন স্পষ্ট হতে পারে কিন্তু সুনির্দিষ্ট নয়। লক্ষ্য সংক্ষিপ্ত। স্বপ্ন বিস্তারিত।
চিন্তা ও স্বপ্নঃ
চিন্তা স্বপ্নকে প্রভাবিত করে কিন্তু চিন্তার তুলনায় স্বপ্নের বিচরণ ক্ষেত্র অনেক বেশি প্রশস্ত। স্বপ্ন যুক্তির গন্ডিতে আবদ্ধ থাকে না কিন্তু চিন্তা যুক্তির গন্ডিতে আবদ্ধ থাকে। পরিবেশ, রীতি-নীতি, ভাল-মন্দ, বিবেক ইত্যাদি চিন্তার স্বাধীন গতিকে বাধাগ্রস্থ করে। স্বপ্নের জগতে এসব বাধা নেই। তাই জাগ্রত অবস্থায় কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার চাইতে স্বপ্নে সিদ্ধান্ত নিতে পারলে সিদ্ধান্তটি নির্ভুল হবে।
দিবাস্বপ্নঃ

ভবিষ্যৎ নিয়ে মানুষের কল্পনা ও আকাঙ্খাকে দিবাস্বপ্ন বলা হয়। দিবাস্বপ্ন বস্তুগত প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। বস্তুজীবনে সঠিক ব্যবহারে দিবাস্বপ্ন অতীতের পরিসমাপ্তি ঘটায়, বর্তমানকে সুগঠিত করে এবং ভবিষ্যৎ জীবনের নতুন পথের সন্ধান দেয়। দিবাস্বপ্ন ভবিষ্যতের ছবি দেখিয়ে ব্যক্তিকে শক্তি ও সাহস যোগাতে পারে। সঠিক ব্যবহার জানলে দিবাস্বপ্ন শিল্প, সাহিত্য, সঙ্গীত ও নব নব আবিষ্কারের দ্বার উন্মোচন করে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই দিবাস্বপ্নকে সৃষ্টিশীলতায় ব্যবহার করে না অথচ প্রায় সারাক্ষণই তাৎপর্যহীন দিবাস্বপ্ন দেখে। দিবাস্বপ্নকে দিবাস্বপ্ন বলা হয় কারণ, সাধারণ মানুষের কাছে দিবাস্বপ্নের বিষয়বস্তুও বাস্তবের মতো বাস্তব নয়। আধ্যাত্মিক সাধনায় দিবাস্বপ্ন সহায়ক। মুর্শিদ স্মরণ, নিজেকে জানা এবং আমি’র মধ্যে থাকতে দিবাস্বপ্ন বাধা দেয় না। দিবাস্বপ্ন সাধারণ মানুষকে বর্তমানে থাকতে দেয় না। এজন্যই সাধকেরা সিদ্ধি লাভকে জীবনের স্বপ্ন থেকে জাগরণ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
মানুষ সজাগ থাকলে স্বপ্ন দেখে না। একজন সিদ্ধ পুঁরুষ ঘুমন্ত অবস্থায়ও সজাগ থাকেন অথবা যিনি সব সময় সজাগ থাকেন তাঁকেই সিদ্ধ পুঁরুষ বলা হয়। তাই সিদ্ধ পুঁরুষদের স্বপ্ন দেখার কথা নয়।
ইসলামে স্বপ্নের ব্যাখ্যাঃ
সত্য স্বপ্ন নবুয়্যতের অংশ। রসূলুল্লাহ্‌ (সঃ) বলেছেনঃ “সত্য স্বপ্ন নবুয়্যতের ৪৬ ভাগের এক ভাগ।” (আল-বুখারীঃ ৬৪৭২; মুসলিম ৪২০১)
ওহী নাযিলের পূর্বে রসূলুল্লাহ্‌ (সঃ) স্বপ্ন দেখতেন যা দিবালোকের মত স্পষ্ট ছিল। (আল-বুখারী, ৩; মুসলিম, ২৩১)
স্বপ্ন দর্শনকারীর সততা ও আন্তরিকতার সাথে স্বপ্নের সত্যাসত্য সম্পর্কিত। যারা বেশী সত্যবাদী তাদের স্বপ্নও বেশী সত্য হয়। (মুসলিম, ৪২০০)
কিয়ামতের কাছাকাছি সময়ে খুব কম স্বপ্নই অসত্য হবে। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ “এটা এজন্যই হবে যে সে সময়টা নবুয়্যতের সময় ও প্রভাব থেকে অনেক দূরবর্তী হবে। ফলে বিশ্বাসীদেরকে সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে কিছুটা পুষিয়ে দেয়া হবে, যা তাদের কাছে সুসংবাদ বয়ে আনবে অথবা তাদেরকে তাদের ঈমানের ব্যাপারে ধৈর্য ধরতে ও দৃঢ় থাকতে সাহায্য করবে।” (আল-বুখারী, ৬৪৯৯; মুসলিম ৪২০০)
একই কথা বলা যেতে পারে সে সমস্ত অলৌকিক ঘটনাবলী সম্পর্কে যা সাহাবীদের সময়ের পরে ঘটেছিল। এগুলো তাদের সময়ে সংঘটিত হয়নি কারন তাদের দৃঢ় ঈমানের কারনে তা তাদের প্রয়োজন ছিলনা। কিন্তু তাদের পরে আসা লোকদের সে অলৌকিক ঘটনাবলীর দরকার ছিল তাদের দূর্বল ঈমানের কারনে।
স্বপ্ন তিন প্রকারেরঃ রহমানী (যেগুলো আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে হয়), নফসানী (মনস্তাত্বিক, এগুলো ব্যক্তির নিজের পক্ষ থেকে হয়) এবং শয়তানী (যেগুলো শয়তানের পক্ষ থেকে হয়)। রসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেছেনঃ “স্বপ্ন তিন প্রকারেরঃ এক প্রকারের হয় আল্লাহর পক্ষ থেকে, আরেক প্রকার যা মানুষকে ভারাক্রান্ত করে, আর তা হয় শয়তানের পক্ষ থেকে, আরেক প্রকারের স্বপ্ন সংঘটিত সে সমস্ত ব্যাপার থেকে যা ব্যক্তি জাগ্রত অবস্থায় চিন্তা করেছে যা ঘুমের ঘোরে সে দেখতে পায়।” (আল-বুখারী, ৬৪৯৯; মুসলিম, ৪২০০)
নবীদের স্বপ্ন হল ওয়াহী কারন কারন তাঁরা শয়তান থেকে সুরক্ষিত। এ ব্যাপারে উম্মতের ইজমা রয়েছে। এজন্যই ইব্রাহীম (আঃ) স্বপ্নে দেখেই তাঁর পুত্র ইসমাইলকে (আঃ) কুরবানী করতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
নবীদের ছাড়া অন্য লোকদের স্বপ্নকে সুস্পষ্ট ওয়াহীর (কুর’আন ও সুন্নাহ্‌) আলোকে যাচাই করে দেখতে হবে। যদি সেগুলো কুর’আন ও সুন্নাহ্‌ সমর্থিত হয় তাহলেতো ভাল; নাহলে সে স্বপ্নের ভিত্তিতে কোন কাজ করা যাবেনা। এটা একটা অতীব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, কারন অনেক বিদ’আতপন্থী ও সূফীরা তাদের স্বপ্নের উপর নির্ভ্র করেই গোমরাহ হয়ে গিয়েছে।
কেউ যদি সত্য স্বপ্ন দেখার আশা করে তবে তার উচিৎ সত্য কথা বলার জন্য সদা সচেষ্ট থাকা, হালাল খাওয়া, শরীয়তের হুকুম আহকামগুলো মেনে চলা, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ) যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকা, সম্পূর্ণ পবিত্র অবস্থায় কিবলা মূখী হয়ে শয়ন করা এবং চক্ষু বুজে আসা পর্যন্ত আল্লাহর জিকরে লিপ্ত থাকা। যদি কেউ এমন করে তাহলে কদাচ তার স্বপ্ন অসত্য হতে পারে।

সবচেয়ে সত্য স্বপ্ন হচ্ছে যা সেহরীর সময়ে দেখা যায়, কারন এ সময়ে আল্লাহ্‌ তা‘আলা নেমে আসেন এবং তাঁর রহমত ও ক্ষমা আমাদের নিকটবর্তী থাকে। আরো ব্যাপার হচ্ছে এ সময়ে শয়তানরাও চুপ থাকে; অন্যদিকে সূর্যাস্তের পরে অন্ধকার নেমে আসলে শয়তানরা ও শয়তানী লোকেরা চারিদিকে ছড়িয়ে পরে।
[দ্রষ্টব্যঃ  ইবন আল-কায়্যিম, “মাদারিজ আস-সালিকীন” ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫০-৫২]
ইমাম ইবন হাজার আল-আসক্বালানী বলেছেনঃ স্বপ্ন সাধারণত দু’ধরণের হয়ে থাকে।
প্রথম প্রকার হচ্ছে সত্য স্বপ্ন। এগুলো হচ্ছে নবীদের ও তাঁদের অনুসারী নেককার লোকদের স্বপ্ন। অন্যলোকদের ক্ষেত্রেও এগুলো ঘটতে পারে, তবে এটা বিরল, যেমন মিশরের কাফির বাদশার স্বপ্ন যা তার জন্য ইঊসুফ (আঃ) ব্যাখ্যা করেছিলেন। সত্য স্বপ্নগুলো বাস্তব জীবনেও সত্য হয়ে দেখা দেয় যেমন স্বপ্নে দেখা হয়েছে।
দ্বীতিয় প্রকার হল মিশ্র ধরণের মিথ্যা স্বপ্ন, যা কোন ব্যাপারে সতর্ক করে। এ গুলো আবার দু’ধরণের।
এক প্রকার হচ্ছে শয়তানের খেলা যা দিয়ে সে ব্যক্তিকে ভারাক্রান্ত করে তোলে। যেমন সে দেখল যে তার মাথা কেটে ফেলা হয়েছে এবং সে সেই কাটা মাথার অনুসরণ করছে; অথবা সে এমন কোন সঙ্কটে পড়েছে যা থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য কোন সাহায্যকারী সে পাচ্ছেনা।
অন্য প্রকার হল যখন সে দেখে যে ফেরেশতারা তাকে কোন হারাম কাজ করতে বলছে; অথবা এমন সব বিষয় যা সাধারণত অর্থহীন।
যখন কেউ দেখে এমন কিছু যা বাস্তব জীবনে ঘটছে, অথবা তা ঘটার আশা করে এবং সে তা বাস্তবতার মতই স্বপ্নে দেখে। এমনও হয় যে সে দেখে যা সাধারণত তার জীবনে ঘটে অথবা যা তার চিন্তায় থাকে। এ স্বপ্নগুলো সাধারণত বর্তমান ও ভবিষ্যতের কথা বলে, কদাচ অতীত সম্পর্কে।
[ফাতহ আল-বারী, দ্বাদশ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৫২-৩৫৪]
আবূসাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) বলেছেনঃ নবী (সঃ) বলেছেন, “তোমাদের কেউ যদি এমন কোন স্বপ্ন দেখে যা সে পসন্দ করে, তাহলে তা আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে। সুতরাং তার উচিৎ আল্লাহ্‌র প্রসংশা আদায় করা ও অন্যদেরকে স্বপ্ন সম্পর্কে বলা। কিন্তু সে যদি এমন স্বপ্ন দেখে যা সে অপসন্দ করে তাহলে তা শয়তানের পক্ষ থেকে। সুতরাং তার উচিৎ এর ক্ষতি থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাওয়া এবং কাউকে এ স্বপ্ন সম্পর্কে না বলা। এরূপ করলে তার কোন ক্ষতি হবেনা।” [আল-বুখারী, ৬৫৮৪; মুসলিম ৫৮৬২]
আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) বলেছেনঃ রসূলুল্লাহ্‌ (সঃ) বলেছেন, “ভাল স্বপ্ন হয়ে থাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে এবং খারাপ স্বপ্ন হয় শয়তানের পক্ষ থেকে। কেউ যদি এমন কিছু দেখে যা সে অপসন্দ করে তাহলে সে যেন তার বাম দিকে তিনবার থুতু ফেলে এবং শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চায়। তাহলে এটা তার কোন ক্ষতি করতে পারবেনা। [আল-বুখারী ৬৫৯৪; মুসলিম ৫৮৬২] থুথু ফেলা বলতে এখানে এমন থুতু ফেলা বুঝানো হয়েছে যাতে মুখ থেকে শুষ্ক বাস্পাকারে বের হওয়া থুতু বুঝানো হয়েছে যাতে মুখের লালা মিশ্রিত থাকেনা।
জাবের (রাঃ) বর্ণনা করেছেনঃ রসূলুল্লাহ্‌ (সঃ) বলেছেন, “কেউ যদি এমন কিছু দেখে যা সে অপসন্দ করে তাহলে সে যেন তার বাম দিকে তিনবার থুতু ফেলে এবং শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে তিনবার আশ্রয় চায়; যেন পাশ ফিরে শোয়। [মুসলিম ৫৮৬৪]
ইবন হাজার (রঃ) বলেছেনঃ ভাল স্বপ্ন সম্পর্কে সংক্ষেপে যা বলা হয়েছে সে ব্যাপারে আমরা তিনটি বিষয় নির্দেশ করতে পারিঃ
1.    ভাল স্বপ্নের জন্য ব্যক্তির আল্লাহর প্রসংশা আদায় করা উচিৎ।
2.    স্বপ্ন দ্রষ্টার এ জন্য খুশী হওয়া উচিৎ।
3.    সে যাদেরকে ভালবাসে তাদের কাছে তার স্বপ্ন বর্ণনা করা উচিৎ; তাদের কাছে নয় যাদেরকে সে অপসন্দ করে।
ইবন হাজার (রঃ) আরো বলেছেনঃ খারাপ স্বপ্ন সম্পর্কে সংক্ষেপে যা বলা হয়েছে সে ব্যাপারে আমরা চারটি বিষয় নির্দেশ করতে পারিঃ
1.    স্বপ্নদ্রষ্টার উচিৎ এর খারাবী থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাওয়া,
2.    শয়তানের ক্ষতি থেকে আল্লার আশ্রয় চাওয়া
3.    ঘুম থেকে জাগরিত হওয়ার পর নিজের বাম দিকে তিনবার থুতু ফেলা; এবং
4.    কারো কাছেই তার এটা বর্ণনা না করা।

আল-বুখারীর বাব আল-ক্বায়দ ফী আল-মানামে পঞ্চম একটা বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে আবূ হুরায়রা  (রাঃ) থেকে; আর তাহল নামাজ পড়া। বর্ণনাটা নিম্নরূপঃ যদি কেউ কোন অপসন্দনীয় কিছু স্বপনে দেখে সে যেন তা কাউকে না বলে; বরং তার উচিৎ শোয়া থেকে উঠে নামাজ পড়া। ইমাম মুসলিমও তাঁর সহীহ্‌তে এটাকে মাউসূল হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
মুসলিম ষষ্ঠ বিষয়টি উল্লেখ করেছেন; তা হল পার্শ্ব পরিবর্তন করে শোয়া।
উপসংহারে বলা যায় স্বপ্ন দেখলে উপরোক্ত ছয়টি বিষয়ে আমল করা উচিৎ।
[দেখুনঃ ফাতহ আল-বারী, দ্বাদশ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৭০]
তিরমিজী্তে আবূ রাজ়ীন থেকে বর্ণনা করা এক হাদীস মতে, স্বপ্ন দ্রষ্টার স্বপ্নের কথা কাউকেই বলা উচিত নয় শুধুমাত্র এমন অন্তরঙ্গ বন্ধুকে ছাড়া যে তাকে অত্যন্ত ভালবাসে এবং যে প্রজ্ঞাবানও। অন্য বর্ণনা মতে স্বপ্নের কথা কাউকেই বলা উচিৎ নয় শুধুমাত্র জ্ঞানী ও প্রিয়জন ছাড়া। অন্য আরেকটি বর্ণনা মতে স্বপ্নের কথা শুধু কোন আলেমকে বা এমন ব্যক্তি যে আন্তরিক সদুপদেশ দিতে পারে তাকে ছাড়া আর কাউকে বলা যাবেনা। কাজী আবূ বকর ইবন আল-আরাবী (রঃ) বলেছেনঃ আলেমের ব্যাপারটা হচ্ছে তিনি তাঁর জ্ঞানের আলোকে সাধ্যমত ভাল ব্যাখ্যা দিতে পারবেন; আর আন্তরিক উপদেশদানকারী হয়তো তাকে এমন কিছু শিখিয়ে দেবেন যা তার জন্য উপকারী প্রমাণিত হবে অথবা কাজটা করতে তাকে সাহায্য করবেন। যিনি প্রজ্ঞাবন তিনি জানবেন কীভাবে স্বপ্নের ব্যাখ্যা করতে হয় এবং স্বপ্নদ্রষ্টাকে শুধু তাই বলবেন যা তার জন্য সাহায্যকারী হবে; নতুবা তিনি চুপ থাকবেন। তার প্রিয় ব্যক্তির অবস্থা হচ্ছে তিনি যদি ভাল কিছু জানেন তাহলে বলবেন; আর যদি না জানেন বা সন্দেহে থাকেন তাহলে তিনি চুপ থাকবেন। [দ্রষ্টব্যঃ ফাতহুল বারী, দ্বাদশ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৬৯]
ইমাম বাগাওয়ী (বাগাভী) তাঁর শারহ্‌ আস—সুন্নাহতে (১২/২২২) উল্লেখ করেছেনঃ জেনে রেখ যে স্বপ্নের তাবীর বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। স্বপ্ন ব্যাখ্যা করা যায় কুর’আন অথবা সুন্নাহ্‌র আলোকে, অথবা জনগণের মধ্যে প্রচলিত বাগবিধির আলোকে অথবা বিভিন্ন নাম ও রূপকের মাধ্যমে অথবা বিপরীত কোন বিষয়ের আলোকে।
তিনি নিম্নরূপ উদাহরণ দিয়েছেনঃ
কুর’আনের আলোকে ব্যাখ্যাঃ রশিকে কৃত ওয়াদা বা চুক্তি হিসেবে গ্রহন করা যায়, কারণ আল্লাহ্‌ বলেছেন, “তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর রজ্জুকে শক্ত করে ধারণ কর।” [আলে ইমরান, ৩/১০৩]
সুন্নাহর আলোকে ব্যাখ্যাঃ দাড় কাক কোন পাপাচারী ব্যক্তির প্রতিনিধিত্ব করা, কারন রসূলুল্লাহ্‌ (সঃ) তাই বলেছেন।
বাগধারা/বাগবিধির আলোকে ব্যাখ্যাঃ কোন গর্ত খনন করা মানে কোন চক্রান্ত, কারন লোকেরা বলে থাকে, “যে কোন গর্ত খনন করে সে তাতে পতিত হয়।”
নামের আলোকে ব্যাখ্যাঃ কেউ যদি রাশেদ নামে কাউকে দেখে তার মানে হবে বুদ্ধিমত্তা।.
বিপরীত বিষয়ের আলোকে ব্যাখ্যাঃ ভয় দেখা মানে নিরাপত্তা, কারণ আল্লাহ্‌ বলেছেন (তর্জমা), “তিনি নিশ্চয়ই তাদের ভীতির পরে এর পরিবর্তে দান করবেন নিরাপত্তা।” [আন-নূর, ২৪/৫৫]
অন্যদিকে ইবন সীরীন (সঃ) এর স্বপ্নের তাবীর নামে যে বইটি বাজারে প্রচলিত অনেক গবেষকের মতে এটা আসলে এই মহান আলেম লিখেছেন বলে কোনভাবেই প্রমান করা যায় না।