Tuesday, June 27, 2017

স্বামী কি চাইলেই স্ত্রীর গায়ে আঘাত করতে পারবে ? শরীয়াহ কি বলে ?


লিখেছেন: ফারাবী।
নাস্তিকরা প্রায়ই আল কোরআনের সূরা নিসার ৩৪ নং আয়াতের মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে অনেক মুসলমান কে বিভ্রান্ত করে। নাস্তিকরা বলতে চায় যে আল কোরআনে নাকি পুরুষদের কে বলছে তারা যেন ইচ্ছামত তাদের স্ত্রীদের গাঁয়ে হাত তুলে। আচ্ছা আসুন তো আমরা একটু দেখি সূরা নিসার ৩৪ নং আয়াতে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা আসলে কি বলেছেন ? ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত তাফসীরে মা আরেফুল কোরআনের যে বঙ্গানুবাদটা মাসিক মদীনা পত্রিকার সম্পাদক মাওলানা মহিউদ্দীন খান করেছেন সেখানে সূরা নিসার ৩৪ নং আয়াতের বঙ্গানুবাদ টা হল- “ পুরুষেরা নারীদের উপর কর্তৃত্ত্বশীল এইজন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে। আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবার উপর শ্রেষ্ঠ।” এই আয়াতের তাফসিরে বলা হয়েছে যে স্বামীরা যেহেতু সংসারের অর্থ যোগান দিবে তাই স্বাভাবিকভাবেই একটি সংসারের মাঝে স্বামীরাই কর্তৃত্ত্বশীল থাকবে। ব্যস সহজ একটা ব্যাপার এখানে কোন জটিলতা নাই। পৃথিবীর সব দেশেই একটা সংসার চালাতে স্ত্রী স্বামীর মতামত কে প্রাধান্য দেয়। তারপর এই আয়াতে বলা হয়েছে যে স্ত্রী যদি তোমার কথামত না চলে তাইলে প্রথমে তুমি তাকে সদুপদেশ দিবে এতেও যদি কোন কাজ না হয় তাইলে তুমি তোমার স্ত্রীর সাথে আলাদা শুবে অর্থাৎ স্ত্রীর শয্যা পৃথক করে দিবে আর এতেও যদি কাজ না হয় তাইলে তুমি তোমার স্ত্রীকে মৃদুভাবে মারধোর করতে পারবে তবে এতটা আঘাত তোমার স্ত্রীকে করতে পারবে না যাতে তোমার স্ত্রীর গাঁয়ে কোন জখম হয় বা কোন দাগ পরে। আর এই আয়াতটিতে আঘাত করার ব্যাপারে যে শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে তা দ্বারা মোটা লাঠির আঘাত বা সজোরে কিলঘুষির কথা বলা হয় নি বরং তাফসীর ও আরবী ব্যাকরণ অনুযায়ী এই আঘাত বলতে মেসওয়াক দ্বারা আঘাতের মত আঘাতকেই বুঝানো হয়েছে, বলা চলে বর্তমানের টুথব্রাসের আঘাতের মতই। আল কোরআনের এই আয়াতে কোন স্বামীকে স্ত্রীর গাঁয়ে আঘাত করতে বলা হয় নাই শুধু স্বামীর জন্য এটা জায়েজ করা হয়েছে যে স্ত্রী যদি একান্তই তোমার কোন কথা না শুনে তাইলে তুমি তাকে প্রথমে সদুপদেশ দিবে তাতে কাজ না হলে স্ত্রীর বিছানা আলাদা করে দিবে আর এতেও কাজ না হলে তুমি তোমার স্ত্রীকে এতটুকু মারধোর করতে পারবে যেন তার গাঁয়ে কোন জখম না হয়। আদেশ করা এক জিনিস আর শুধু অনুমতি দিয়ে রাখা আরেক জিনিস। ইসলামে তালাক দেবার অনুমতি আছে কিন্তু তার মানে এই নয় যে ইসলাম বলছে যে তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের কে তালাক দিয়ে দাও। বরং স্বামী স্ত্রী কেউ যেন কাউকে তালাক দিতে বাধ্য না হয় ইসলাম ঠিক সেইভাবেই স্বামী স্ত্রীকে সংসার জীবন পরিচালনা করতে বলেছে। অর্থাৎ সূরা নিসার ৩৪ নং আয়াতে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা স্ত্রীকে কোন মাইরধর করার নির্দেশ দেন নি স্ত্রী যদি কখনো স্বামীর চরম অবাধ্য হয়ে যায় তাইলে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা স্বামীকে শুধু স্ত্রীকে মৃদু আঘাত করার অনুমতি দিয়েছেন তাও এতটুকু যেন স্ত্রীর গাঁয়ে যেন কোন আঘাতের জখম না পরে। আর স্ত্রীর গাঁয়ে এই আঘাত টা করার আগে প্রথমে স্বামী তার স্ত্রীকে বুঝাবে তাতে কাজ না হলে শয্যা আলাদা করে দিবে আর এতেও কাজ না হলে সর্বশেষ তখন স্ত্রীকে মৃদু মারধোর করবে।
ঠিক কি কারনে ও কতটুকু পরিমান স্ত্রীকে আঘাত করা যাবে এই কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিদায় হজ্জের ভাষণেই বলে গিয়েছেন। “ নারীদের ব্যাপারে তোমরা আল্লাহ্‌কে ভয় কর। তোমরা তাদেরকে আল্লাহ্‌র আমানত হিসাবে গ্রহণ করেছ এবং তাদের সতীত্ব- সম্ভ্রমকে আল্লাহর কালেমার বিনিময়ে তোমাদের জন্য হালাল করেছ। আর তোমাদের ব্যাপারে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হল ( অর্থ্যাৎ নারীদের), কোন লোককে যেন তোমাদের শয্যাপাশে না আসতে দেয় যাকে তোমার অপছন্দ কর। তারা যদি তাও তা করে তবে তোমরা তাদেরকে প্রহার করতে পারবে, তবে এমনভাবে যেন তার চিহ্ন বাইরে ফুটে না উঠে। আর তাদের ব্যাপারে তোমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হল, তোমরা ন্যায়সঙ্গত ভাবে তাদের খোরপোশের ব্যবস্থা করবে। ”
অর্থ্যাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই হাদীস থেকে আমরা বুঝতে পারি যে আপনার স্ত্রী যদি পরকীয়ায় লিপ্ত হয় তাইলেই শুধু আপনি আপনার স্ত্রীর গায়ে হাত তুলতে পারবেন। পরকীয়া ছাড়া অন্য কোন কারনে আপনার স্ত্রীর গায়ে হাত দেয়া জায়েজ নয়। নিছক সাংসারিক মতপার্থক্য বা তরকারীতে লবন কম হয়েছে এইসব কারনে যারা নিজ স্ত্রীর গায়ে হাত তুলে তারা অবশ্যই শরীয়তের দৃষ্টিতে অপরাধী। শুধু তাই নয় স্বামী যদি বিনা কারনে স্ত্রীর গায়ে হাত তুলে তাইলে ইসলাম এক্ষেত্রে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছে। মাযহাব ভেদে বিনা কারনে স্ত্রীর গায়ে হাত তুললে কাজী স্বামীকে ২০ টি বেতের বারি দেবার নির্দেশ রাখেন। আর ইসলামী শরীয়তে বিয়ে কোন স্থায়ী জিনিস না। স্বামী স্ত্রীর মাঝে বনিবনা না হলে ইসলাম তো মেয়েদেরকে তালাক দেবার ক্ষমতা দিয়েছে। তাই কোন স্বামী যদি স্ত্রীর সাথে খারাপ ব্যবহার করে তাইলে স্ত্রী চাইলেই পারবে সেই স্বামীকে তালাক দিয়ে দিতে। ইসলামে অনেক কিছুই জায়েজ আছে কিন্তু তার মানে এই নয় যে ইসলাম তা করতে বলেছে। যেমন তালাক দেওয়াও ইসলামে জায়েজ কিন্তু ইসলামের কোথাও বলা নাই যে তুমি তোমার স্ত্রীদের কে তালাক দাও। বরং বলা হয়েছে যে তালাক দেওয়া হচ্ছে ইসলামে খুবই ঘৃনিত একটা কাজ। ইসলাম স্বামী স্ত্রী কে যথাসম্ভব মিলমিশ করে থাকতে বলেছে যেন স্বামী স্ত্রীর কেউই কাউকে তালাক দেবার মত পরিস্থিতি না হয়। কোন জিনিস জায়েজ করা এক জিনিস আর নির্দেশ দেয়া আরেক জিনিস।
আর সূরা নিসার এই আয়াতের তাফসীরে তাফসীরে মা আরেফুল কোরআনে এই কথা লেখা আছে যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্ত্রীর গাঁয়ে স্বামীর হাত দেয়াটা পছন্দ করতেন না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই কথাও বলেছেন যে ভাল লোক কখনোই এমন করে না। মুয়ায ইবনে কুশায়রা থেকে বর্নিত আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে জিজ্ঞাস করলাম আমাদের স্ত্রীদের ব্যাপারে আপনি কি বলেন ? তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন- “ তুমি যা খাবে তাকে তাই খেতে দিবে তুমি যা পরবে তাকে তাই পরতে দিবে, কখনই তোমার স্ত্রীকে প্রহার করবে না এবং কখনই তোমার স্ত্রীকে গালিগালাজ করবে না। [সুনানে আবু দাউদ, বিবাহ অধ্যায়, হাদীস নং ২১৩৮ ]
একটা লোক কিভাবে তার স্ত্রীকে আস্তাবলের উটের ন্যায় মারধোর করে তারপর আবার রাতে তার সাথে বিছানায় শুয় ? [ বুখারী শরীফের বিবাহ অধ্যায় ]
ঠিক এই আয়াতের পরের আয়াত সূরা নিসার ৩৫ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে স্বামী স্ত্রীর মাঝে যদি আর বনীবনা না হয় তাহলে অভিভাবকরা যেন তাদের মাঝে তালাক হবার ব্যবস্থা করে। - " আর যদি তোমরা তাদের দুজনের মধ্যে বিচ্ছেদের আশঙ্কা কর, তাহলে পুরুষের পক্ষ/পরিবার থেকে একজন মধ্যস্থতাকারী এবং স্ত্রীর পক্ষ/পরিবার থেকে একজন মধ্যস্থতাকারী নিযুক্ত কর। যদি তারা উভয়ে (মধ্যস্থতাকারী) মিটমাট করতে চায়, তাহলে আল্লাহ তাদের দুজনের মধ্যে মিটমাটের ব্যবস্থা করে দিবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞানী, সবকিছু সম্পর্কে অবগত। "
তো স্ত্রীকে মাইরধর করেই যদি সব সমস্যা মিটে যেত তাইলে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা কেন ঠিক এর পরের আয়াতে তালাকের কথা বলবেন ? সূরা নিসার ৩৫ নম্বর আয়াত পড়ে তো ঠিকই বুঝা যাচ্ছে বৈবাহিক জীবনে স্বামী স্ত্রী উভয়ের মতামতেরই গুরুত্ব আছে। এই জন্য আল্লাহ সুবহানাতায়ালা স্বামী স্ত্রী উভয় পরিবারের মাঝখান থেকেই সালিশ নিযুক্ত করতে বলেছে। ইসলামী শরীয়তে বিয়ে হচ্ছে just একটা সামাজিক চুক্তি। বিয়ে কোন স্থায়ী বিষয় না। স্ত্রী চাইলেও স্বামীকে যে কোন সময় তালাক দিতে পারবে।
মেয়েদের সাথেভাল ব্যবহার করার কথা খোদ আল কোরআনেই বলা হয়েছে। “ তোমরা নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর। অতঃপর, যদি তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে হয়ত তোমরা এমন এক জিনিসকে অপছন্দ করছ, যাতে আল্লাহ তোমাদের জন্য অনেক কল্যাণ রেখেছেন। ” [সুরা আন-নিসাঃ ১৯] আল কোরআনে স্বামী স্ত্রী একজন আরেকজনকে পোশাকের ন্যায় তুলনা করা হয়েছে। “তারা তোমাদের পরিচ্ছদ আর তোমরা তাদের পরিচ্ছদ। ” [ সূরা বাকারা- ১৮৭ ] তোমরা প্রফুল্ল চিত্তে স্ত্রীদের মোহরানা দিয়ে দাও।’ [নিসা : ৪]
আচ্ছা আপনারা কি কখনই কোন হাদিসে পেয়েছেন যে যেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবীদের কে বলেছে যে তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের কে মাইরধর কর ? বা এমন কি কোন বর্ননা পেয়েছন যেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখন উম্মুল মুমেনীনদের গাঁয়ে হাত তুলেছেন ? বা এমন কি কোন বর্ননা পাওয়া যায় যে কোন মহিলা সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে অভিযোগ করেছে যে আমার স্বামী আমার গাঁয়ে হাত তুলেছে ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ৪ কন্যা ছিল। হযরত যয়নব, হযরত রুকাইয়া, হযরত উমমে কুলসুম ও ফাতেমা রযিয়াল্লাহু আনহা। কই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই ৪ কন্যা তো কখনই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এমন কোন অভিযোগ করে নি যে উনাদের স্বামীরা কখনো উনাদের গায়ে হাত তুলেছে। হাদিস শরীফেও স্ত্রীর সাথে সৎ ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে। তোমাদের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।” তিরমিযীঃ ১১৬২; হাদীস সহীহ, সিলসিলাহ ছহীহাহঃ ২৮৪। ] “শুধুমাত্র সম্মানিত লোকেরাই নারীদের প্রতি সম্মানজনক আচরণ করে। আর যারা অসম্মানিত, নারীদের প্রতি তাদের আচরণও হয় অসম্মানজনক।” সুনানে আত-তিরমিযী। ফিকাহ শাস্ত্রের কোথাও কি লেখা আছে যে ইসলামে বলেছে স্বামী যেন স্ত্রীর গাঁয়ে আঘাত করে ? তাইলে নাস্তিকদের এই স্ত্রীকে মাইরধর করার বিষয় টা নিয়ে এত আগ্রহ কেন ? আর আপনারা কখনই কি কোন নাস্তিককে দেখেছেন সূরা নিসার ১১,১২, ১৭৬ নং আয়াত নিয়ে আলোচনা করতে ? নাস্তিকরা কিন্তু কখনই সূরা নিসার ১১,১২, ১৭৬ নং আয়াতগুলি নিয়ে কোন আলোচনা করবে না কারন কোরআনের এইসব আয়াতে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা মেয়েরা তার বাপ মা স্বামী পুত্রের কতটুকু সম্পত্তি পাবে তা নিয়ে আলোচনা করেছেন।

শুধু তাই নয় জোর করে কোন মেয়েকে বিয়ে করাও ইসলামে হারাম। আল কোরআনের সূরা নিসার ১৯ নাম্বার আয়াতেই বলা হয়েছে যে -“ হে ঈমানদারগণ ! বলপূর্বক নারীদের কে উত্তরাধিকারীরুপে গ্রহণ করা তোমাদের জন্য হালাল নয় এবং তাদের কে আটকিয়ে রেখো না। আবার এই আয়াতেই বলা হয়েছে যে- “ নারীদের সাথে তোমরা সদ্ভাবে জীবন যাপন কর।’’ অর্থ্যাৎ স্ত্রীদের সাথে যে সদ্ভাবে জীবন যাপন করতে হবে এই কথা কোরআনেই বলা আছে

Friday, June 16, 2017

হাদিস শাস্ত্র কতটুকু নির্ভরযোগ্য?

লিখেছেন: সত্যর সাথে সর্বদা

হাদিস নিয়ে ব্লগে অনেকই পোস্ট দেন আর অনেকেই কমেন্টে “আলহামদুলিল্লাহ”,
“সুবাহানাল্লাহ”,“জাযাকাল্লাহ” বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন। এই রকম চর্চা ফেসবুকে বেশি দেখা যায়। শুধু হাদিস হলে কথা ছিল, যে কোন একটা ছবি দেখিয়ে উহা অমুক নবীর কবর, অমুকের পায়ের ছাপ, মাছের পিঠে ছাগলের পিঠে বিভিন্ন নাম লেখা দেখিয়ে বলে বলুন “আলহামদুলিল্লাহ”/ “সুবাহানাল্লাহ”/“জাযাকাল্লাহ”। এই ধরনের কোন ফেসবুকার যদি ব্লগে থেকে থাকেন তবে আমার এই লেখা থেকে দূরে থাকবেন, কারন আমার এই লেখাটি কোনভাবেই তাদের জন্য নয়।

ছোট একটা ভুমিকা দেই। প্রথমে ভেবেছিলাম ইসলামের ইতিহাস নিয়ে লেখব, পড়ে দেখলাম উহা হাদিস কালেকশনের সাথেও জড়িত, পড়ে ভাবলাম হাদিস সংগ্রহ নিয়ে লেখি, কিন্তু উহা অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যপার। পড়ে ভাবলাম বুখারি নিয়ে কিছু লিখি, কতটুকু লিখেছিলামও, পরে আর হয়ে উঠেনি। পরে ভাবলাম সব না হোক একটা ছোট বিষয় নিয়ে লিখি। তাই আজকের লেখা।
একটা অঙ্ক মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। আশা করি ব্লগার ভাইয়েরা এই অঙ্কের সমাধান দিতে পারবেন। অঙ্কটা জটিল কোন ক্যালকুলাস না, সাধারন পাটিগণিত জানলেই করা যাবে। আশা করি গালা গালি না করে সবাই অঙ্কের দিকে মনোযোগ দিবেন।

ব্যাকগ্রাউন্ডঃ

বুখারির সময়কাল ১৯৪-২৫৬/২৬০ হিজরি। তাহলে উনি বেচে ছিলেন ৬২ অথবা ৬৬ বছর। ধরে নিলাম উনার জীবন কাল ৬৫ বছর। সেই সময়ে কোন মোবাইল, ইন্টারনেট, মোটর গাড়ি, বিমান কিছু ছিলনা। মানুষের চলাচলের মাধ্যম ছিল পায়ে হেটে, কোন বাহনে চড়ে (যেম্ন ঘোড়া, গাধা, উট ইত্যাদি) অথবা পালতোলা জাহাজে করে। আমার কাছে যে বুখারী বইটা আছে তাতে লেখা আছে যে উনি দীর্ঘ ১৬ বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে হাদিস সংগ্রহ করেছেন এবং এই বইয়ের ৩০ নম্বর পাতায় লেখা আছে যে ইমাম বুখারী মোট ৬০০,০০০ (ছয় লাখ) হাদিস সংগ্রহ করেছেন। এই সংগ্রহের মধ্যে রয়েছে বর্ণনাকারীর সাথে যোগাযোগ করা, বর্ণনাকারীর কাছে থেকে হাদিস সংগ্রহ করা, ঐ হাদিসের ইসনাদ অর্থাৎ চেইন অব নেরেটরস যাচাই বাচাই করা, প্রয়োজনে এই ইসনাদের বিশুদ্ধতা যাচাই বাচাই করার জন্য আবার অন্য কারো কাছে যাওয়া, এর পর ঐ হাদিসের গুনাগুন বিচার করা অর্থাৎ (ঐ হাদিস আরও কেউ বলেছে কিনা তা যাচাই বাচাই করা) তার পর উনার হিসাবে হাদিস শুদ্ধ মনে হলে গ্রহণ করা না হলে বর্জন করা। অনেক কষ্টসাধ্য এবং সময়সাপেক্ষ ব্যপার। এইবার আপনাদের জন্য অঙ্কঃ

ইনপুটঃ

১। বুখারির জীবন কাল ৬৫ বছর
২। উনি ১৬ বছরে এই হাদিস শেষ করেছেন
৩। ১ বছর= ৩৬৫ দিন
৩। ১দিন= ২৪ ঘণ্টা
৪। ১ ঘণ্টা = ৬০মিনিট

প্রশ্ন
১। যদি উনি ১৬ বছরে ৬ লক্ষ হাদিস সংগ্রহ করে থাকেন, তবে একটি হাদিস সংগ্রহ করে যাচাই বাচাই করে তা সঠিক না ভুল এটা বের করতে তার কত সময় লেগেছিল? ধরে নিন ১৬ বছরে উনি কোন বিশ্রাম, খাওয়া দাওয়া বা ঘুম কিছুই করেন নাই। টানা ১৬ বছর ২৪ ঘণ্টা দিন ধরে কাজ করেছেন।
২। উনি যদি জন্মের পরে থেকি টানা এই হাদিস সংগ্রহের কাজ করে থাকেন, তবে একটি হাদিস গ্রহণ বা বর্জন করতে কত সময় লেগেছিল?
৩। দৈনিক ১৫ ঘণ্টা হাদিসের পিছনে ব্যয় করা হয়েছে এটা ধরে নিলে, ৬৫ বছরে ৬০০,০০০ হাদিস কালেকশন করলে, প্রতি হাদিসের পিছনে কতটুকু সময় লেগেছে?
৪। দৈনিক ১৫ ঘণ্টা হাদিসের পিছনে ব্যয় করা হয়েছে এটা ধরে নিলে, ১৬ বছরে ৬০০,০০০ হাদিস কালেকশন করলে, প্রতি হাদিসের পিছনে কতটুকু সময় লেগেছে?
৫। উনি ৬০০,০০০ হাদিস থেকে ৭২৭৫ টি হাদিস গ্রহণ করেছিলেন (রিপিটিশন ছাড়া ২৭৬২)। তাহলে উনি কত % হাদিস বর্জন করেছিলেন?
৬। কেউ যদি বুখারির সংগ্রহীত হাদিসের সব বর্জন ঘোষণা করে (অর্থাৎ ঐ ৬০০,০০০ হাদিস) তবে তার মতের সাথে বুখারীর মতের পার্থক্য কত পারসেন্ট।
দয়া করে পাটি গণিতের মাধ্যমে সমাধান দিয়ে উপকৃত করবেন। আর ইচ্ছা করলে উপরে আমি যে ব্যকগ্রাউন্ড দিয়েছি তার সাথে আপনার উত্তর কতটা সমর্থন যোগ্য তা নিজেই যাচাই করেন।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ২:৫৮
৫৫১ বার পঠিত ১ ৩

পর্ব-১ - হাদীস সংকলনের ইতিহাসঃ শরীয়া আইন এর অনুপযোগিতা
১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৩৮
ইসলাম একটি শাশ্বত ধর্ম। তবু এই ধর্মের এত সমালোচনা করা সম্ভব হয় কিভাবে? এর কারণ হচ্ছে বর্তমানে যারা ইসলাম পালন করে তারা ইসলামের মূল ধারা থেকে বহু দূরে বেঁকে গিয়ে ধর্ম পালন করে। যেকোন ইসলামিক আলেমকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় ইসলামের ভিত্তি কি, তাহলে তার উত্তর হবে  

নিম্নরুপঃ
শরীয়তের মূল ভিত্তি হচ্ছে পবিত্র কোরআন গ্রন্থ, যা কিনা আল্লাহ মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর উপর অবতীর্ণ করেছেন। তবে কোরআন এর অনেক আয়াতই বুঝা কষ্টসাধ্য বিধায় কোরআনের পরেই শরীয়তের ভিত্তি হচ্ছে সহিহ হাদীস যা কোরআনকে ব্যাখ্যা করে। হাদীসের বহু গ্রন্থের মাঝে ছয়টি গ্রন্থ সবচেয়ে বেশী নির্ভরযোগ্য, এই ছয়টি গ্রন্থকে একত্রে সিহাহ সিত্তা বলা হয়। সিহাহ সিত্তার মাঝে প্রথম দুটি গ্রন্থ সহিহ বুখারী এবং সহিহ মুসলিম শরীফের হাদীসে কোনই সন্দেহ নাই, তবে বাকি চারটি গ্রন্থের হাদীসে বর্ণনাকারীর ধারাতে (ইসনাদ) ত্রুটি থাকলে বা কোরআনের সাথে সাংঘর্ষিক হলে অভিযুক্ত হাদীসটি বাতিল বলে গণ্য হবে। মোট কথা ইসলামের মূল ভিত্তি হচ্ছে ১. পবিত্র কোরআন, ২. বুখারী শরীফ, ৩. মুসলিম শরীফ। এই তিন গ্রন্থে কোন সন্দেহ নাই।
আলেমরা উপরোক্ত ধারণাটি এত ব্যাপক প্রচার করেন যে একজন সাধারণ মুসলিমও এই ধারণায় শতভাগ বিশ্বাসী হয়ে যান। কিন্তু আসলে কি আলেমদের কথা প্রকৃত সত্যের সাথে মিলে? এর উত্তর জানার জন্য আমাদের কিছু বিষয় জানা প্রয়োজন, সেটাই আমি ধারাবাহিক পর্বে সাধারণ পাঠকদের জানানোর চেষ্টা করব।
শরীয়া আইন নিয়ে আলোচনা করলে মূলত হাদীস শাস্ত্র নিয়েই আলোচনা করতে হয় কারণ শরীয়া আইনে কোরআনের চাইতে হাদীসের প্রাধাণ্য অনেক অনেক বেশী। কোরআন এর সাথে শরীয়া আইনের সম্পর্ক খুবই কম। বরং কোরআন আইনের প্রধান উতস হিসেবে কিভাবে ব্যবহৃত হবে সেটাই হাদীস শাস্ত্র নির্ধারণ করে দেয়। বর্তমানের বেশীরভাগ মুসলিম শরীয়া আইন সম্পর্কে প্রায় তেমন কিছুই জানেনা, শুধুমাত্র বাপ দাদার আমলের বিশ্বাস হিসেবে অন্ধ ভক্তি করে। কিন্তু হাদীসগুলো বিস্তারিতভাবে না পড়লে শরীয়া আইন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব না। আধুনিক মুসলিম সমাজ বেশ কিছু ক্ষেত্রে অনেক উদার মনোভাব প্রকাশ করে। এমন মনোভাবের সাথে মিলে যাওয়া বাছাইকৃত হাদীস নিয়ে বই লিখা হয় যা পড়ে শরীয়া আইনের উপর আধুনিক মুসলিমের অন্ধ বিশ্বাস আরও প্রগাড় হয়। সমস্যা হয় তখনই যখন দাসপ্রথা, পাথর ছুড়ে হত্যার বিধান, অসাম্প্রদায়িকতা, নারীর অধিকার, বিজ্ঞান ইত্যাদি অনেক বিষয়ের হাদীস যেগুলো আধুনিকতার সাথে মিলে না সেগুলো চোখের সামনে পড়ে। তখন সবাই নানাভাবে এগুলো অতীতের বিষয় বলে এড়িয়ে চলে সেই পূর্বের অন্ধ বিশ্বাসকেই সংরক্ষণ করে। অথচ বাঙ্গালী মুসলমানের জীবনে শরীয়া আইনের কোন প্রভাব বা গুরুত্ব কোনটাই নেই। এটা শুধু ধর্ম ব্যবসায়ীদের হাতিয়ার হিসেবেই এদেশে ব্যবহার হয়ে আসছে। সামান্য একটু পড়াশুনা করলেই হাদীস শাস্ত্রের দূর্বলতা সকলেরই চোখে পড়বে। স্ববিরোধী হাদীস, কোরআন বিরোধী হাদীস, অবৈজ্ঞানিক হাদীস, অশ্লীল ও লজ্জাজনক হাদীস, বর্বর হাদীস, আজগুবি হাদীস, মিথ্যা হাদীস, সমসাময়িক বাস্তবতায় অনুপযোগী হাদীস ইত্যাদি বিভিন্ন ত্রুটিপূর্ণ হাদীসের কোন অভাব নেই হাদীসের বইগুলোতে।
শরীয়া আইন ও হাদীস সংকলনের ইতিহাসঃ
মুসলিম শরীফের একটি হাদীসে আছে যে মুহাম্মদ (সা) নিজেই হাদীস সংকলণ করতে নিষেধ করে গিয়েছিলেন। এই কথার সমর্থনে আরও কিছু হাদীস আছে। তবে এর বিপরীত কথাও হাদীসের গ্রন্থে পাওয়া যায় যেখানে হাদীস লিখার অনুমতি নবী দিয়েছিলেন। অনুমতি দেয়ার হাদীসগুলো দেখিয়ে অনেকে প্রমাণ ছাড়াই দাবী করেন যে কোরআন এর সাথে সংমিশ্রণের ভয়ে প্রথমে হাদীস লিখতে নিষেধ করলেও পরে নবী হাদীস লিখার অনুমতি দিয়ে যান। কিন্তু এই দাবীর বিপক্ষেও জোড়ালো যুক্তি দেখানো যায়। যেমন কেউ এমন দাবীও করতে পারেন যে নবী প্রথমে হাদীস লিখার অনুমতি দিলেও পরে হাদীস লিখতে নিষেধ করে গিয়েছেন। হাদীস সংকলনের কোন তারিখ না থাকায় এই দাবীটি কেউ মিথ্যা প্রমাণ করতে পারবেনা। বরং এই দাবীর স্বপক্ষেই প্রমাণ আছে। উদাহরণ স্বরুপঃ নবীর পরবর্তী প্রধান চার খলিফাও হাদীস সংকলনের বিপক্ষে ছিলেন, তাদের আমলে কোন হাদীস গ্রন্থ সংকলিত হয়নি, বরং সারা দেশের সমগ্র হাদীস যোগাড় করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল। এমনি করেই প্রায় দেড়শ বছর নিষেধাজ্ঞার কারণে হাদীসের কোন গ্রন্থ লিখিত হয়নি। তবে হযরত আলীর মৃত্যুর পর এই নিষেধাজ্ঞার কথা একসময় মানুষ ভুলে যায়।

হাদীসের সবচেয়ে পুরানো যে গ্রন্থের কথা জানা যায় সেটাও লিখিত হয়েছিল মুহাম্মদ (সা) এর মৃত্যুর প্রায় দেড়শ বছর পর। সেই গ্রন্থের কোন অস্তিত্বও এখন খুজে পাওয়া যায়না। তবে বহুল পরিচিত বুখারী ও মুসলিম শরীফ সহ সুন্নি মুসলিমদের কাছে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য সিহাহ সিত্তার ছয়টি হাদীস গ্রন্থই লিখিত হয়েছিল নবীর মৃত্যুর আড়াইশ/তিনশ বছর পর। এই গ্রন্থগুলোয় আসলেই সত্যি কথা লিখা আছে কিনা তা নিশ্চিত করে বলা তাই সম্ভব নয়। যুগে যুগে নতুন নতুন হাদীস নিয়ে নতুন গ্রন্থ লিখিত হয়েছিল। বর্তমান শরীয়া আইনের সাথে তাই আগের শরীয়া আইনেরও ছিল প্রচুর গড়মিল। ঈমাম আবু হানিফা তার হানাফি মাযহাব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সিহাহ সিত্তা ও অন্যান্ন অনেক হাদীস গ্রন্থ লিখিত হবার বহু আগে, তাই এই মাযহাবে হাদীসের প্রভাব তুলনামূলকভাবে কম ছিল, ইজমা কিয়াসের সুযোগ ছিল। ঈমাম আহমদ ইবনে হাম্বল তার হাম্বলী মাযহাব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সিহাহ সিত্তা গ্রন্থ সংকলণের পর, তাই এই মাযহাবে ইজমা কিয়াসের সুযোগ নেই, সবকিছুই হাদীস দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

একটা কথা জানা দরকার যে বুখারী/মুসলিম হাদীস গ্রন্থ লিখিত হবার পূর্বেই লক্ষ লক্ষ হাদীসের অস্তিত্ব ছিল যার বেশীরভাগই ছিল জাল বা নকল হাদীস। ইহুদিরা জাল হাদীস তৈরি করেছে এমন ধারণা প্রচলিত ছিল বলেই ঈমামগণ হাদীস সংকলণের ব্যাপারে উদ্যোগী হন। লক্ষ লক্ষ জাল হাদীস তৈরী হবার কিছু কারণ উল্লেখ করা দরকার। ইসলামের শত্রুরা কোরআনের কোন ক্ষতি করতে সমর্থ ছিলনা বলে লক্ষ লক্ষ জাল হাদীস রচনা করে ইসলামের ক্ষতি করতে চেয়েছিল। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মৃত্যুদন্ড প্রপ্ত আব্দুল করিম স্বীকার করে গিয়েছিলেন যে তিনি একাই চার হাজার জাল হাদীস প্রচার করে গিয়েছিলেন যেখানে তিনি হারাম কে হালাল আর হালালা কে হারাম বানিয়ে দিয়েছিলেন। রাজনৈতিক ভেদাভেদের কারণে লক্ষ লক্ষ হাদীস জাল করা হয়েছিল। খলিফা উসমানের মৃত্যুর পর হযরত আলী ও হযরত মুয়াবিয়া কে নিয়ে মুসলিম সমাজ শিয়া, খারেজি ইত্যাদি বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। তখন হযরত আলীর সম্মান বাড়ানোর জন্য শিয়া গোত্র অনেক জাল হাদীস রচনা করেছিল, আবার বিরুদ্ধ পক্ষ হযরত আলীর জন্য অসম্মানজনক কথা প্রচার করেও অনেক জাল হাদীস রচনা করেছিল। এমনি করে হযরত আবু বকর ও অন্যান্ন নেতার পক্ষে বিপক্ষে অনেক জাল হাদীস রচিত হয়েছিল। আবার কিছু কিছু সুযোগ সন্ধানী লোক তাদের নেতাদের সুনাম করে হাদীস জাল করত নিজেদের সুবিধা আদায়ের লক্ষে। অনেকে আবার কাল্পনিক সব গল্প বলে হাদীসের নামে চালিয়ে নিজের সম্মান বৃদ্ধি করত। হাদীস জাল করার এমন আরও বহু কারণের মাঝে অনিচ্ছাকৃত মানুষ্য ভুলও জাল হাদীস রচিত হবার পেছনের বড় একটি নিয়ামক ছিল।
নবীর মৃত্যুর তিনশত বছর পর এত লক্ষ লক্ষ জাল হাদীসের ভীড়ে সত্য হাদীস বের করাটা প্রায় দুঃসাধ্য ব্যাপার ছিল। তবে ঈমাম বুখারী সত্য হাদীস নির্ণয় করার একটা উপায় বের করলেন। তিনি শুধু সত্যবাদী লোকদের কাছ থেকেই হাদীস সংগ্রহ করা শুরু করলেন যারা কিনা আবার পূর্ব বা বর্তমান প্রজন্মের অন্য কোন সত্যবাদী লোকের কাছ থেকেই হাদীসটি শুনেছিলেন। এমনি করে ঈমাম বুখারী প্রায় ছয় লক্ষ হাদীস সংগ্রহ করেছিলেন যেগুলো যাচাই বাছাই করে এক লক্ষ সহিহ হাদীসে নামিয়ে এনেছিলেন আর মুখস্থ করেছিলেন। এই এক লক্ষ সত্য হাদীসের মাঝে মাত্র ছয় হাজার হাদীস তিনি তার বুখারী হাদীস গ্রন্থে লিখেছিলেন। বাকিগুলো তিনি সময় স্বল্পতা বা অন্য কোন কারণে লিখে যেতে পারেননি। এই সেই বুখারী হাদীস গ্রন্থ যা প্রায় শতভাগ সহিহ বলে বর্তমান আলেম সমাজ প্রচারণা করে। বর্তমানের আলেমদের এই দাবী কতটা সঠিক তা পরের পর্বে আলোচনা করা হবে।
পর্ব-২- বুখারী হাদীস গ্রন্থ ত্রুটিমুক্ত নয়ঃ শরীয়া আইন এর অনুপযোগিতা
লক্ষ লক্ষ জাল হাদীসের জঞ্জাল থেকে ইমাম বুখারী যে সত্য হাদীস যাচাই করে সংকলণ করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন তা অবশ্যই প্রসংসার দাবীদার। ইমাম বুখারীর হাদীস যাচাই বাছাই এর পদ্ধতি নাকি এতটাই কঠোর ছিল যে একটি মাত্র জাল হাদীসও সেখানে ঢুকে পরার কোন সুযোগ ছিলনা। মোহাবিষ্ট মুসলিম এই হাদীস যাচাই এর পদ্ধতি জানলে আসলেই আর বুখারী শরীফের হাদীস নিয়ে সন্দেহ পোষণ করবেনা। তাই এই হাদীস যাচাই এর পদ্ধতি নিয়ে আলোচনার পূর্বে আমরা সেই পদ্ধতির ফলাফল নিয়ে আলোচনা করলে মোহাবিষ্ট মুসলিমের মোহ কাটতে কিছুটা সুবিধা হতে পারে। একজন সাধারণ মুসলিমকে যখন একটি হাদীস শুনানো হয় সে স্বাভাবিক ভাবেই সেটি ভক্তি সহকারে বিশ্বাস করে নেয়। তবে অনেকে আছেন যারা হাদীসটি শুনার পর জানতে চাইবে যে এটা বুখারী/মুসলিম শরীফের হাদীস কিনা। বুখারী/মুসলিম এর হাদীস হলে তারা সেটা বিশ্বাস করে নেয়, আর অন্য গ্রন্থের হাদীস হলে তারা কিছুটা হলেও সন্দেহ পোষণ করে বলে যে এটা শতভাগ সহিহ নাও হতে পারে। তারা মূলত আলেমদের প্রোপাগান্ডার কারণেই এমন কথা বলেন। কারণ আল্লাহ বা নবী কোথাও বলে দেননি যে শুধু বুখারী/মুসলিম হাদীস হলেই শতভাগ বিশ্বাস করা যাবে। বুখারী/মুসলিম হাদীসগ্রন্থগুলো নিয়ে এই আলেমদের প্রচারণাগুলো নিম্নরুপঃ

১) ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম কখনো কোন দূর্বল বর্ণনাকারীর কাছ থেকে হাদীস সংগ্রহ করেন নাই।
২) কোন হাদীসের স্কলার কোনদিন বুখারী/মুসলিম শরীফের একটি হাদীসের প্রতিও কোন অভিযোগ করেন নাই।
৩) কোন হাদীসের স্কলার কোনদিন ইমাম বুখারী বা ইমাম মুসলিম এর ভুল হয়েছে এমন সমালোচনা করেন নাই।
মূলত উপরের একটি দাবীও সত্য নয়। ইমাম শাখাবি তার ফাথ-উল-মুঘিস গ্রন্থের ''ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম'' অধ্যায়ে লিখেছেন যে বুখারী গ্রন্থের ৪৩৫ হাদীস বর্ণনাকারীর মাঝে ৮০ জনই দূর্বল বর্ণনাকারী ছিলেন। আর মুসলিম শরীফের ৬২০ বর্ণনাকারীর মাঝে ১৬০ জনই দূর্বল বর্ণনাকারী ছিলেন। এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা করার পূর্বে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য বিরাট বড় এক হাদীস স্কলার ও আলেমের সাথে পরিচিত হওয়া যাক। ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী। বুখারী শরীফের সবচেয়ে বড় ও গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফাথ-উল-বারী এর রচয়িতা। আমরা বর্তমানে যে আধুনিক ১০ খন্ডের বুখারী শরীফ দেখি সেটি মূলত এই ফাথ-উল-বারী গ্রন্থ থেকেই ইমাম আসকালানীর ব্যাখ্যাগুলো বাদ দিয়ে সংকলণ করা হয়েছে। অর্থাত আধুনিক বুখারী শরীফের উতস হচ্ছে ইমাম আসকালানী। ফাথ-উল-বারী গ্রন্থটি এতই বিশালাকার যে এখনো এর ইংরেজী অনুবাদ করা হয়ে উঠেনি। তবে মুল আরবী গ্রন্থটি অনলাইনে পাওয়া যায়। মজার ব্যাপার হচ্ছে ইমাম আসকালানী নিজেই সেই ফাথ-উল-বারী গ্রন্থে ইমাম বুখারীর অনেক হাদীসের সমালোচনা করেছেন। ইমাম আসকালানী ছাড়াও অন্য অনেক প্রক্ষাত আলেম যেমন ইমাম গাজ্জালীও বুখারী শরীফের হাদীসের সমালোচনা করেছেন। তাই বুখারী/মুসলিম গ্রন্থ নিয়ে আলেমদের বর্তমান অসত্য দাবীগুলো যে আমাদের সাধারণ মুসলিমদের বিভ্রান্ত করে যাচ্ছে সে ব্যাপারে সচেতন হবার সময় এসেছে।
অনেকগুলো হাদীসের মধ্য থেকে উদাহরণ হিসেবে কিছু হাদীস তুলে ধরা প্রয়োজন যেখানে স্কলারগণ ইমাম বুখারী ও তার সংকলিত হাদীসের সমালোচনা করেছেন। উল্লেখ্য ইমাম আসকালানীর মূল গ্রন্থ পড়লে এমন আরও অনেক জাল হাদীস পাওয়া যাবে বুখারী গ্রন্থে। এর বাইরে তো বৈজ্ঞানিক ও কমন সেন্সের ভিত্তিতে ভুল হাদীসের অভাব নেই বুখারী শরীফে। তবে এই পোস্টের উদ্দেশ্য ইমাম বুখারীকে হেয় প্রতিপন্ন করা নয়, বরং এটাই বুঝানো যে ভুল সবারই হতে পারে, বুখারীর হাদীস বলেই চোখ বুজে তা বিশ্বাস করার কারণ নেই।

১) বুখারী শরীফের তৌহিদ অধ্যায়ে ইমাম বুখারী সংকলণ করেছেনঃ শারিক হযরত আনাস হতে রাসূলের মিরাজ সংক্রান্ত একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন। কোরআনের সর্বপ্রথম আয়াত নাযিল হবার পূর্বে রাসূল (সা) কাবা গৃহে নিদ্রারত ছিলেন, তিনি স্বপ্নে দেখলেন তিনিজন ফেরেশতা তার নিকট এসে তার সম্মানের ব্যাপারে কথা বলে চলে গেলেন। দ্বিতীয় রাত্রিতেও একই ঘটনা ঘটল কিন্তু তৃতীয় রাত্রিতে স্বয়ং রাসূলকেই (সা) মিরাজে নিয়ে যাওয়া হল।

ইমাম আসকালানী এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেনঃ এই হাদীসের বক্তব্য মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। সকলেই জানে যে রাসূল (সা) মিরাজে গিয়েছিলেন নবুয়ত প্রাপ্তির পর এবং মদিনায় হিযরত এর পূর্বে।
২) বুখারী শরীফের মুগাযী অধ্যায়ে ইমাম বুখারী সংকলণ করেছেনঃ হযরত উসমানের মৃত্যুর পর বদর যুদ্ধে অংশ নেয়া আর কোন সাহাবা জীবিত ছিলেন না। এবং হাররার যুদ্ধের পর হুদায়বিয়া যুদ্ধে অংশ নেয়া আর কোন সাহাবা জীবিত ছিলেন না।

ইমামা আসকালানী এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন হাদীসটি মিথ্যা। হযরত আলী সহ অনেক বদর যোদ্ধাই উসমানের মৃত্যুর পর জীবিত ছিলেন। হাদীসটির ২য় অংশটাও ভুল।
৩) বুখারী শরীফের তাফসির অধ্যায়ে ইমাম বুখারী সংকলণ করেছেনঃ শেষ বিচারের দিন যখন হযরত ইবরাহিম তার পিতাকে দেখবেন তিনি আল্লাহর কাছে আরজ করবেন, '' তুমি আমার কাছে ওয়াদা করেছিলে যে শেষ বিচারের দিন তুমি আমাকে দুঃখিত করবেনা।'' আল্লাহ উত্তরে বলবেন, '' অবিশ্বাসীদের জন্য আমি জান্নাত নিষিদ্ধ করেছি।''
ইমাম আসকালানী এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেনঃ এই হাদীসটি ভুল। কেননা এটি কোরআনের সাথে সাংঘর্ষিক। কোরআনে আল্লাহ বলেছেন যে যখন হযরত ইবরাহিম জেনেছিলেন যে তার পিতা আল্লাহর শত্রু তখন থেকেই তিনি পিতার জন্য দোয়া করা ছেড়ে দিয়েছিলেন। এছাড়া এই হাদীস পড়লে মনে হয় যে আল্লাহ ওয়াদা করে সেই ওয়াদা রক্ষা করেন নাই।

৪) বুখারী শরীফের তৌহিদ অধ্যায়ে ইমাম বুখারী সংকলণ করেছেনঃ আবু হুরায়রা বর্ণনা করেন যে নবী (সা) বলেছেন, বিচার দিবসে যখন আল্লাহ দোজখীদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন তখন জাহান্নাম বলবে আরও দাও। তখন আল্লাহ এক নতুন জাতি সৃষ্টি করে তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। জাহান্নাম আবারো বলবে আমি আরও চাই। তখন আল্লাহ আরও একটি জাতি সৃষ্টি করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করলে তাতেও জাহান্নাম পূর্ণ হবেনা। তখন আল্লাহ নিজের পা জাহান্নামের উপর রাখলে জাহান্নাম পূর্ণ হবে।
ইমাম আসকালানী ফাথ-উল-বারী গ্রন্থে এবং হাফিজ ইবনে কাইয়াম, আবুল হাসান কুছবি এবং অন্যান্য হাদীস পন্ডিতগণ বলেছেনঃ এই হাদীসটি জাল, কারণ উক্ত হাদীসে বলা হয়েছে যে আল্লাহ নতুন এক জাতি সৃষ্টি করে তাদেরকে দোজখে নিক্ষেপ করবেন। এই হাদীসের বর্ণনা অনুযায়ী নতুন সৃষ্ট জাতি পাপ করার সুযোগই পাবেননা, তো আল্লাহ কিভাবে তাদেরকে দোজখে নিক্ষেপ করবেন যেখানে আল্লাহ নিজেই কোরানে আরও ঘোষনা দেন যে তিনি কারও উপর অবিচার/জুলুম করবেননা? (সূরা কাহফ-৪৯)। এছাড়া আল্লাহ তায়ালা কোরানে নিজেই বলেছেন তিনি দোজখ পূর্ণ করবেন শয়তানের অনুসারী দ্বারা (সূরা ছোয়াদ-৮৫)।

৫) বুখারী শরীফের আম্বিয়া অধ্যায়ে ইমাম বুখারী সংকলণ করেছেনঃ হযরত আদম ষাট ফুট লম্বা ছিলেন।
ইমাম আসকালানী এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেনঃ এই হাদীসটি বিশ্বাসযোগ্য না, হাদীসটি সত্য হলে পূর্বের জাতিগুলোর বাড়িঘর আমাদের চাইতে বড় হত কিন্তু বাস্তবে তেমনটি দেখা যায়না।

৬) বুখারী শরীফের খয়বার অধ্যায়ে ইমাম বুখারী সংকলণ করেছেনঃ আবু মুসা বলেছেন যে আমাদের রাসূল খয়বরের দিকে যাচ্ছিলেন। তার পিছনের লোকেরা জোড়ে আল্লাহু আকবর বলে চিতকার করছিলেন। রাসূল তখন তাদেরকে চিতকার করতে নিষেধ করে স্বাভাবিক আওয়াজে আল্লাহু আকবর বলতে বলেছিলেন।
ইমাম আসকালানী এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেনঃ এটি সত্য হতে পারেনা। বুখারীরই অন্য হাদীসে আছে যে আবু মুসা নবীর সাক্ষাত পেয়েছিলেন খয়বর যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবার পর।

৭) বুখারী শরীফের খয়বার অধ্যায়ে ইমাম বুখারী সংকলণ করেছেনঃ আবু হুরায়রা কর্তৃক বর্ণিত, খয়বরের যুদ্ধে মুসলিমরা জয়ী হয়েছিল এবং সেই যুদ্ধে এক ব্যক্তি খুব সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করেছিল, আমাদের রাসূল (সা) বলেছিলেন সে জাহান্নামে যাবে।
ইমাম আসকালানী এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেনঃ এই হাদীসটি পড়লে মনে হয় আবু হুরায়রা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু আবু হুরায়রা নবীর সাক্ষাত পেয়েছিলেন খয়বরের যুদ্ধের পর। ইমাম বুখারী এই হাদীসটি লিখার সময় নিশ্চই পূর্ণ মনোযোগী ছিলেননা।

৮) বুখারী শরীফের মাযুকিরা ফিল আসওয়াক অধ্যায়ে ইমাম বুখারী সংকলণ করেছেনঃ আবু হুরায়রা বলেছেন-''আমি আল্লাহর নবীর সাথে বনু কাইনুকার বাজারে গিয়েছিলাম এবং তিনি সেথায় ফাতিমার বাগানে বসেছিলেন।
ইমাম আসকালানী এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেনঃ এই হাদীসে বেশ কিছু শব্দ মিসিং হয়েছে। কারণ বনু কাইনুকায় ফাতিমার কোন বাড়ি/বাগান ছিলনা। মুসলিমের হাদীস থেকে সেই শব্দগুলো অবশ্য পাওয়া যায়। মুসলিমের হাদীসে আছে প্রথমে বনু কাইনুকায় গিয়ে পরবর্তীতে নবী ফাতিমার বাগানে গিয়েছিলেন। ফাতিমার বাড়িটি ছিল নবীর স্ত্রীদের বাড়িগুলোর মাঝামাঝি।

৯) বুখারী শরীফের যাকাত অধ্যায়ে ইমাম বুখারী সংকলণ করেছেন যেঃ নবীর মৃত্যুর পর তার স্ত্রীদের মাঝে উম্মুল মুমীনিন সাওদা-ই সর্বপ্রথম ইন্তেকাল করেছিলেন।
ইমাম আসকালানী এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন যে ইমাম বুখারী ভুল বলেছেন, কেননা সাওদা নয় উম্মুল মুমীনিন জয়নাব সর্বপ্রথম ইন্তেকাল করেছিলেন। ইমাম ইবনে জাযি বলেছেন এটা খুব অবাক করা ব্যাপার যে ইমাম বুখারী এটা লিখেছেন, কারণ এই তথ্যটি ভুল। এছাড়া ইমাম নববী এই হাদীসটি ভুল বলেছেন।

১০) বুখারী শরীফের জানাইজ অধ্যায়ে ইমাম বুখারী সংকলণ করেছেনঃ নবীর স্ত্রী উম্মে হাবিবা শুনেছিলেন যে তার বাবা সিরিয়াতে মৃত্যুবরণ করেছেন।
ইমাম আসকালানী এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, সকল স্কলারগণই একমত যে উম্মে হাবিবার পিতা মদিনায় মৃত্যুবরণ করেছেন। ইমাম বুখারী ভুল করেছেন।

১১) বুখারী শরীফের মুগাযী অধ্যায়ে ইমাম বুখারী সংকলণ করেছেনঃ খাবাইব বিন আদ্দি বদর যুদ্ধে হারিসকে হত্যা করেছিলেন।
ইমাম আসকালানী এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন যে বেশীরভাগ স্কলার একমত যে খাবাইব বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণই করেন নাই।

১২) বুখারী শরীফের ফাযায়েল উল উসমান অধ্যায়ে ইমাম বুখারী সংকলণ করেছেনঃ হযরত উসমান এক ব্যক্তিকে আশি বার চাবুক মেরেছিলেন।
ইমাম আসকালানী এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেনঃ এই তথ্যটি সঠিক নয়
এভাবে উদাহরণ দেয়া চালিয়ে গেলে পোস্টে জায়গা সংকুলান হবেনা। এতো গেলো ঐতিহাসিক সত্যতার ভিত্তিতে ইমাম বুখারীর ভুল ধরা, কিন্তু আফসোসের বিষয় যে ইমাম আসকালানী অন্যান্য বিষয়ে তার ভুলগুলোর পক্ষেই সাফাই গেয়েছেন। অথচ বৈজ্ঞানি, কমনসেন্স, নবীর প্রতি সম্মান ইত্যাদি অনেক ক্ষেত্রেই ইমাম বুখারীর ভুলের কোন শেষ ছিলনা। বুখারীর এমন অনেক হাদীস আছে যা পড়লে বিষ্ময়ে হতবাক হয়ে যেতে হয়। যাই হোক, এতক্ষনের আলোচনা থেকে আমরা অন্তত এইটুকু জানলাম যে বুখারী শরীফ শতভাগ সত্য ও গ্রহণযোগ্য বলে আলেমরা যে কথা প্রচার করেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা একটি প্রচারণা। সাধারণ মুসলমানের মনের সরলতার সুযোগ নিয়েই আলেমগণ এমন প্রচারণা করে থাকেন। ইমাম বুখারীর হাদীস সংকলন ও যাচাই বাছাই পদ্ধতি নিয়ে প্রচারণার কারণে মোহাবিষ্ট মুসলিম বুঝতেই পারেনা যে এই পদ্ধতি কতটা ত্রুটিপূর্ণ ও ফাকি দেয়া, বরং মোহের কারণে এই পদ্ধতি দেখেই তারা ভেবে নেয় যে কত নিখুত এই বুখারী শরীফ। পরের পর্বে ইমাম বুখারীর হাদীস সংকলনের পদ্ধতির মোহ ও ত্রুটি নিয়ে আলোচনা করা হবে।
চলবে।

পর্ব-৩- ইমাম বুখারীর হাদীস সত্যায়ণ করার পদ্ধতির ভুল ভ্রান্তিসমূহঃ শরীয়া আইন এর অনুপযোগিতা
ইমাম বুখারীর হাদীস সত্যাসত্য করার পদ্ধতি নিয়ে আলেমসমাজের কোন সন্দেহই নাই। বাংলাদেশের প্রখ্যাত শায়খুল হাদীস মরহুম আজিজুল হক বলেছেন- বিশ্ববাসীকে এরূপ চ্যালেঞ্জ প্রদান করা যাইতে পারে যে, হাদিছের প্রামাণিকতার মধ্যে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নাই। কোরান যেমন নির্ভূল হাদিছও তদ্রুপ নির্ভূল; ইহাতে কোনই সন্দেহ নাই। [দ্র: বোখারী, ১ম খন্ড, ১২ সংস্করণ, শায়খ আজিজুল হক; মুখবন্ধ অধ্যায়, পৃ. ১২]। এমন অবস্থায় ইমাম বুখারীর নিজস্ব কথা দিয়েই তার হাদীস সংকলণ পদ্ধতির সমালোচনা শুরু করা যাক। তবে একটি কথা আবারো পরিষ্কার করে বলে নেই যে আমার পোস্টের উদ্দেশ্য হাদীস শাস্ত্রকে সম্পূর্ণ পরিত্যাগ করা নয়, বরং হাদীস যেন কোরানের কষ্টি পাথরে যাচাই করা হয় সেই আবেদন জানানো। আর মূল বক্তব্য এক হবার কারণে এই পোস্টটি অন্য একটি পোস্ট থেকে কপি ও কিছু এডিট এখানে পোস্ট করা হয়েছে।
ইমাম বুখারী বলেন, আমি এই কিতাবের মধ্যে প্রতিটি হাদীস এতদূর সতর্কতার সাথে গ্রহণ করেছি যে, আল্লাহ প্রদত্ত্ব স্বীয় ক্ষমতা, জ্ঞান, ইলম ও অভিজ্ঞতা দ্বারা প্রতিটি হাদীসকে সূক্ষ্মভাবে বেছে ও পরখ করে নেয়ার পরেও প্রতিটি হাদীস লিখবার আগে গোসল করে ২ রাকাত নামাজ পড়ে আল্লাহর নিকট এস্তেখারা করার পর যখন আমার মনে দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছে যে, এই হাদীসটি সন্দেহ লেশহীন ও সহিহ; তখনই আমি সেটাকে আমার এই কিতাবের অন্তর্ভূক্ত করেছি, এর পূর্বে নয়। এই কিতাবের পরিচ্ছেদসমূহ পবিত্র মদিনায় রাসূলের (সা) রওজাপাকের নিকটবর্তী বসে সাজিয়েছি এবং প্রতিটি পরিচ্ছেদ লিখতেও ২ রাকাত নামাজ পড়েছি। এইভাবে আমি স্বীয় কন্ঠস্থ ৬ লক্ষ হাদীস (তাজ্যব ব্যাপার বটে!) থেকে বেছে ১৬ বৎসরে অক্লান্ত পরিশ্রমে এই কিতাবখানা সংকলন করেছি এই আশায় অনুপ্রাণীত হয়ে যে, আমি যেন এই কিতাবখানাকে নিয়ে আল্লাহর দরবারে হাজির হতে পারি। [দ্র: বোখারী, আ. হক, ১ম খ. ১২ সংস্করণ, ‘মুখবন্ধ অধ্যায়]
সমালোচনাঃ
মহানবির জীবিতাবস্থায় কাবাঘরের সামনেই যখন চুরি, ডাকাতি, মিথ্যা, চোগলখোরী, মোনাফেকী ঝগড়া-ফ্যাসাদ সংঘটিত হয়েছে; কাবাঘর, রওজা মোবারক জিয়ারতে এখনও মুয়াল্লেমদের যখন ঘুষ প্রদান করতে হয়; টাউট, বাটপার খুনী ঘুষখোর তথা রাজনীতিবিদ, ধর্ম ব্যবসায়ীগণও যখন হাজী হওয়ার সুযোগ পায়, ১৪শ বৎসর যাবৎ রাষ্ট্রিয় ক্ষমতা ও কোষাগার রাজা-বাদশাগণ এখনও অবৈধভাবে দখল করে আছেন, তখন পবিত্র রওজা মোবারকের দোহাই দিয়ে কিছু প্রচার-প্রতিষ্ঠা করলেই কি তা শতভাগ সত্য বলে প্রমাণিত হয়ে যাবে? তাহলে এই পোস্টের আগের পর্বে (২য় পর্ব) যে সর্বজনবিদিত বুখারীর ভুল হাদীসগুলো উল্লেখ করেছি সেখানে এই নামাজ, নবীর রওজা মুবারকের কেরামতি ব্যর্থ হল কিভাবে? প্রতিটি হাদীস লিখার আগে গোসল করে ২ রাকাত নামাজ পড়ে ইমাম বুখারী হাদীসটির সত্যতার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে নিয়েছিলেন বলে যে দাবী করেছিলেন সেই দাবীটির অযৌক্তিকতা সাধারণ মুসলিম কেন একবারও চিন্তা করে দেখেনা?
হযরত আবুবকর মাত্র ৫ শত হাদীস লিখে হাজার চিন্তা ভাবনা করেও সন্দেহ মুক্ত হতে না পেরে জাহান্নামের ভয়ে সবগুলো হাদীস জ্বালিয়ে দেন। হযরত উমর এ ব্যাপারে সভা সমিতি করে অতঃপর এক মাস যাবৎ চিন্তা করে একই কারণে এবং মুসলিম বিশ্বের বৃহত্তর স্বার্থে সংকলনের পরিকল্পনা কসম খেয়ে পরিত্যাগ করেন এবং সংগৃহিত সকল হাদীস জ্বালিয়ে দেন। পক্ষান্তরে, প্রায় তিনশত বৎসর পরে ইমামগণ হাজার হাজার হাদীস সংগ্রহ করে সত্য, মহাসত্য বলে দাবী করেছেন বলেই কি তা মহা সত্য হয়ে গেল? মহাসত্য যে হয়নি তার প্রমাণ আগের পর্বে দেয়া আছে।
আরও সমালোচনা করার আগে ইমাম বুখারীর হাদীস সত্যায়ণ পদ্ধতির নিয়মগুলো একটু দেখে নেয়া দরকার। নিম্নে ইমাম বুখারীর হাদীস পরীক্ষার ধারাগুলি লক্ষনীয়: (সূত্র-বোখারী, ১ম খন্ড, ১২ সংস্করণ, শায়খ আজিজুল হক; মুখবন্ধ অধ্যায়, পৃ. ১২)
১. শত শত বা হাজার বছর পরেই হোক না কেন, নবী (সা) থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত সুত্র পরম্পরায় পর্যায়ক্রমে যতজন সাক্ষির মাধ্যমে হাদীসটি পৌছেছে, এক এক করে সমস্ত সাক্ষির পরিচিতি, নামের তালিকা সুস্পষ্টরূপে উল্লেখ করতে হবে। কোন একজনের নামও যেন বাদ না পড়ে, নতুবা হাদীস গ্রহণীয় হবে না। এই ধারাটির সাথে আবার দুটি উপধারাও আছে:
ক. উক্ত সাক্ষ্য দাতাদের মধ্যে প্রতিটি সাক্ষি বা রাবী তার পূর্বের সাক্ষ্য দাতার নাম উল্লেখ করার সাথে সাথে স্পষ্ট উল্লেখ করবেন যে, ‘আমি অমুকের মুখে শুনেছি’ ‘তিনি বর্ণনা করেছেন’ বা ‘অমুক আমার নিকট বর্ণনা করেছেন।’ কোন একজন সাক্ষিও যদি এরকম স্পষ্ট শব্দ না বলে কোন অস্পষ্ট বা দ্ব্যর্থবোধক শব্দ ব্যবহার করেন, যেমন এরূপ বলেন যে, ‘ছলিম কলিম হইতে বর্ণনা করেছেন’ তাহলে উক্ত সনদ গ্রহণীয় হওয়ার জন্য আরও অনেক রকম পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে। ইমাম বুখারী এমন সনদ গ্রহণ করার ব্যাপারে সর্বাধিক কড়াকড়ি আরোপ করেছিলেন।
খ. প্রত্যেক সাক্ষি ও পূর্ববর্তী সাক্ষি উভয়ের জীবনকাল ও বাসস্থান এমন হতে হবে যেন উভয়ের মধ্যে দেখা সাক্ষাত ও কথাবার্তা অসম্ভব না হয়।
২. সাক্ষ্যদাতার প্রত্যেক ব্যক্তি নাম ঠিকানা, গুণাবলী, স্বভাব চরিত্র এবং কোন কোন ওস্তাদের কাছে হাদীস শিক্ষা নিয়েছেন ইত্যাদি বিষয়ে হাদীস বিশারদগণের নিকট পরিচিত হতে হবে। সাক্ষ্য দাতাদের একজনও অপরিচিত হলে ঐ হাদীস গ্রহণীয় নয়।
৩. আগা গোড়া প্রতিটি সাক্ষিই জ্ঞানী, খাঁটি সত্যবাদী, সৎ চরিত্র, মোত্তাকীম পরহেজগার শালিনতা ও ভদ্রতা সম্পন্ন স্বভাবের হতে হবে। কোন ব্যক্তি জীবনে মাত্র একবার হাদীস সংক্রান্ত ব্যাপারে মিথ্যা উক্তির জন্য ধরা পড়লে এ ব্যক্তির শুধু মিথ্যা হাদীসই নয়, বরং তার সারা জীবনের সমস্ত হাদীসই অগ্রাহ্য হবে। তওবা করলেও তার বর্ণিত হাদীস আর গ্রহণযোগ্য হবে না। এছাড়া অন্য কোন বিষয়েও মিথ্যাবাদী বলে পরিচিত হলে বা শরিয়ত বিরোধী আকিদা বা কার্যকলাপে লিপ্ত প্রমাণিত হলে বা অসৎ প্রকৃতির লম্পট ও নীচ স্বভাবের লোক হলে তার বর্ণিত হাদীস গ্রহণীয় হবে না।
৪. প্রত্যেক সাক্ষি তার স্মরণ শক্তি সম্বন্ধে অতিশয় পাকাপোক্ত সুদক্ষ ও সুদৃঢ় সংরক্ষক বলে পরিচিত হতে হবে। এবং এটাও প্রমাণিত হওয়া আবশ্যক যে, প্রতিটি সাক্ষি তার পূর্ববর্তী সাক্ষ্যদাতার কাছে হাদীসটি পূর্ণ মনোযোগের সাথে শুনে তা আবার সবিশেষ মনোযোগের সাথে মূখস্ত করে বা লিখে রেখেছেন। এই বিশেষ প্রমাণ এমন হবে যে, উক্ত সাক্ষি হাদীসটি আজীবন শত শতবার গড়মিল ছাড়াই বর্ণনা করে আসছেন। যে সময় তার বর্ণনার মধ্যে এমন গরমিল দেখা যাবে, তখন থেকে আর ঐ সাক্ষির বর্ণনার কোন হাদীস সঠিক প্রমাণিত বলে গণ্য হবে না।
সমালোচনা:
উল্লিখিত ধারাগুলির উপর নজর যেকোন সাধারণ শিক্ষিত লোক মুখ ফিরিয়ে নেয়ার কথা। এইসব পদ্ধতি যে কোনদিনই ফুলপ্রুফ হতে পারেনা তা বুখারী শরীফে অন্তর্ভুক্ত ভুল হাদীসগুলোই প্রমাণ করে দেয়। হাদিছবেত্তাগণ অজানা অচেনা লক্ষ লক্ষ মৌখিক সাক্ষির উপর হাদীসের সত্যাসত্য প্রমাণে সচেষ্ট হয়েছেন। কিন্তু কষ্মিনকালেও কোরানের আলোকে একটি হাদীসেরও সত্য মিথ্যা প্রমাণ করার চেষ্টা করেননি বরং অজ্ঞাত কারণে তা প্রত্যাখ্যান করনে। হালের শায়খুল হাদিছগণও কোরানের আলোকে হাদিছের সত্যাসত্য প্রমাণে এখনও রাজী হচ্ছেন না। অথচ কোরান সাক্ষি দেয় যে, রাছুল কোরানের বাহিরে তিল পরিমাণ কথা ও কাজ করেন নি; করলে তার জীবন ধমনী কেটে দেয়া হতো। কোরান মিজান অর্থাৎ সত্য/মিথ্যা, ন্যায়/অন্যায় মাপার সুত্র; কোরান ফোরকান অর্থাৎ সত্য/মিথ্যা পার্থক্য করার মন্ত্র।
হাদীস প্রতি ৭ থেকে ১০০ জন পর্যন্ত বর্ণনাকারী বা রাবী আছেন। এদের গড়পরতা হিসাবে হাদীস প্রতি ৫০ জন রাবী হয়। সংগৃহীত ৩০ লক্ষ হাদিছের রাবী বা বর্ণনাকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫ কোটি। ইমাম বুখারীর ৬ লক্ষ হাদিছের রাবীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৩ কোটি। এদের নাম, ঠিকানা, বংশ পরিচয়, দৈনন্দিন জীবনের কথা ও কাজের সত্য-মিথ্যা, জ্ঞান বুদ্ধি, স্মরণশক্তি, জীবনে একটি মাত্র মিথ্যা বলেন নি বা বলেছেন ইত্যাদি খুটিনাটি বিবরণসহ ৩ বা ১৫ কোটি রাবীর জীবনেতিহাসসহ ৬ বা ৩০ লক্ষ হাদীস শোনামাত্র মৌখিকভাবে সংগ্রহ করে ইমাম বুখারী একটার পর একটা মন্থন করে নিজ জ্ঞান বুদ্ধি ও বিচার মোতাবেক প্রায় ৬ হাজার হাদীস সত্য বলে গ্রহণ করেছেন। এই সত্য বলে গৃহীত হাদীসগুলোর গড়পরতা রাবীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৩ লক্ষ ৬৩ হাজার ৭ শত ৫০ জন। পক্ষান্তরে, ইমাম বুখারী অন্য একটি কিতাবে মাত্র ১৮শ জন রাবীর চরিত্রের সত্যতার দলিল রচনা করেছেন। বাকি লক্ষ লক্ষ রাবীর চরিত্রের সত্যাসত্যের কোন দলিল নেই।
একজন মাত্র মানুষের সারা জীবনে একটি মাত্র মিথ্যা বা ভূল বলেননি বা বলেছেন; এমন ঘোষণা স্বামী-স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি, মাতা-পিতা কারো পক্ষেই কেউ দিতে পারেন না। এমনকি নিজের ব্যাপারেও তা সম্ভব নয়; এমন একটি নিষ্পাপ মাসুম মানুষের পরিচয় আদম থেকে আজ পর্যন্ত কারো জানা নেই; এমনকি হাদীসের আলোকে নবিগণও ভূলের উর্দ্ধে ছিলেন না বলে শরিয়ত স্বয়ং নিজেই সাক্ষি দিচ্ছে।
রাবীদের মধ্যে ২/৪ জন রাবীর নাম ঠিকানা বিস্মৃত হলে বা অধিক যুক্ত করলে তা সনাক্ত করার সুত্র কারও জানার কথা নয়। যিনি মাত্র শ্রুতি সুত্রে হাদিছ ও রাবীর নাম ঠিকানা ও জীবন ইতিহাস সংগ্রহ করেছেন, তিনি দু'চারটি বাদ দিলে বা সংযুক্ত করলে কার কি করার আছে!
স্বয়ং ইমাম বুখারীগণ নিজেরা মিথ্যা বলেননি, ভুল করেন নি, এমন কোন দলিল প্রমাণ নেই! ‘মিথ্যা বলিনি’ বাক্যটি হাজার বার লিখে কসম করে বললেও বর্বর মূর্খ ছাড়া অন্য কেউ বিশ্বাস করতে পারে না! মহানবির রওজা মোবারকের পাশে বসে লিখলেই যে তা সত্য হবে এমন বিশ্বাস ‘ক’ অক্ষর জ্ঞানশুণ্য লোকেরাই করতে পারে। হাদীস সত্য কি মিথ্যা তা প্রমাণের জন্য স্বয়ং হাদীসগুলিই যথেষ্ট। ইমাম বুখারীগণ সাহাবাদের তুলনায় অধিক ধার্মিক বা জ্ঞানী অবশ্যই ছিলেন না। তদুপরি শরিয়তের বিশ্বাসে মহানবি নিজেই যখন ভুল করেছেন তখন ইমাম বুখারীগণ যে ভুল করেছেন সে বিষয়ে কোন সন্দেহই থাকতে পারে না।
এতকিছু বুঝেনা বলেই সাধারণ মুসলমান বুখারী শরীফের নাম শুনেই অন্য চিন্তা করতে ভুলে যায়, বরং পরম ভক্তি সহকারে অত্যন্য হাস্যকর কথাও বিশ্বাস করে নেয়। এই মোহাবিষ্ট মুসলিম মনে করে যে ইমাম বুখারী ইমাম মুসলিম হচ্ছেন ফেরেশতার কাছাকাছি, তাদের সমালোচনা করা গুনাহের কাজ, তাদের জীবণ সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত, তাদের বই তাদের আমলের মানুষ সাদরে গ্রহণ করেছিল। কিন্তু বাস্তব সত্য হচ্ছে ইমাম বুখারি ইমাম মুসলিমের সমালোচনা অনেক আলেমই করেছেন, ইমাম বুখারীকে তার এলাকাবাসী পরিত্যাগ করেছিলেন, ইমাম বুখারীর হাদীস ইমাম মুসলিম গ্রহণ করতেন না, ইমাম বুখারীর হাদীস সংকলণ পদ্ধতিকে ইমাম মুসলিম ত্রুটিপূর্ণ বলে মত প্রকাশ করতেন, তাদের মাঝে খুব একটা সুসম্পর্ক ছিলনা। পরবর্তী পর্বে এসব বিষয় নিয়ে সংক্ষেপে কিছু আলোচনা করা হবে।
চলবে
পর্ব-৪- ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিমের মাঝে ঝগড়া ও বিরোধের ইতিহাসঃ শরীয়া আইন এর অনুপযোগিতা
বিস্তারিত আলোচনা করার আগে একটি কথা বলে নেয়া দরকার যে এই পোস্টে কোন শিয়া আলেম বা গ্রন্থের রেফারেন্স দেয়া হচ্ছেনা। আমার পোস্ট পড়ার পর অনেকে ইমাম ইবনে হাজার আসকালানীর মত টপ ক্লাস সুন্নি ইমাম যার বদৌলতে আপনাদের ঘরের লাইব্রেরীতে দশ খন্ডের বুখারী শরীফটি শোভা পায় সেই ইমামকেই শিয়া ইমাম বলে মনে করছেন। তাই কিছু ভেবে নেয়ার আগে সাবধানে ভাবার অনুরোধ রইল।
মোহাবিষ্ট মুসলিমের ধারণা ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম ছিলেন ফেরেশতা তুল্য মহান আলেম। এই ইমামদ্বয় মিলেমিশে বহু কষ্ট করে হাদীস সংকলণ করেছেন, তারা ছিলেন একে অপরের সম্পূরক, পরিপূরক। কিন্তু বাস্তব সত্য এইসব ধারণার পুরোপুরি বিপরীত। এই ইমামদ্বয় ও তাদের হাদীস শিক্ষক ইমাম যুহলীর মাঝে ছিল ব্যাপক বিরোধ। ইমাম বুখারীর সার্টিফিকেট প্রাপ্ত কিছু হাদীস বর্ণনাকারীকে ইমাম মুসলিম অগ্রহণযোগ্য বলে পরিত্যাগ করেছিলেন আবার ইমাম মুসলিমের সার্টিফিকেট প্রাপ্ত কিছু হাদীস বর্ণনাকারীকে ইমাম বুখারী অগ্রহণযোগ্য বলে পরিত্যাগ করেছিলেন। সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইমাম ত্রয়ের মাঝে চূড়ান্ত পর্যায়ের বিবাদ লেগে যায় যাতে ইমাম বুখারীর ক্যারিয়ার পর্যন্ত ধ্বংস হয়ে যায়। ইমাম ইবনে হাজার আসকালানীর ''ফাথ আল বারী'' গ্রন্থের ''ইমাম বুখারীর জীবনচড়িত'' অধ্যায় থেকে জানা যায়ঃ
২৫০ হিজরীতে ইমাম বুখারী নিশাপুর বসবাস করতে গিয়েছিলেন। সেখানে তাকে অভ্যররথনা জানাতে ইমাম বুখারীর উস্তাদ ইমাম যুহলী উপস্থিত ছিলেন। নিশাপুরে ইমাম বুখারীর তিনিদিন ব্যাপী একটি ভাষণ দেয়ার কথা ছিল। ইমাম যুহলী বিশ্বাস করতেন যে পবিত্র কোরআন কোন সৃষ্টি নয়, কিন্তু তিনি জানতেন যে ইমাম বুখারীর বিশ্বাস ভিন্ন ছিল। তাই নিশাপুরের জনসাধারণকে ইমাম যুহলী পূর্বেই বলে রেখেছিলেন যে ''কোরআন একটি সৃষ্টি কিনা'' এই বিষয়ে কেউ যেন ইমাম বুখারীকে কোন প্রশ্ন না করে। ইমাম যুহলী এই চিন্তায় ভীত ছিলেন যে ইমাম বুখারীর উত্তর শুনে লোকে ইমামদেরকে হাস্যাস্পদ মনে করবে আর বলবে যে ইমামদের মাঝেই সমঝতা নেই। ইমাম বুখারীর প্রথম দুই দিনের ভাষণ ভালয় ভালয় শেষ হয়েছিল, কিন্তু তৃতীয়দিনে এক ব্যাক্তি ঠিকই প্রশ্ন করে বসেন যে পবিত্র কোরআন একটি সৃষ্টি কিনা। যথারীতি ইমাম বুখারীর উত্তর হয় ইতিবাচক। এতে সেখানে গোলযোগ লেগে যায়। ভাষণের স্থানের মালিক সবাইকে তার বাড়ি ত্যাগ করতে বলেন। পরে ইমাম যুহলী ঘোষনা দেন - ''কোরআন কোন সৃষ্টি নয়। যে কোরআনকে সৃষ্টি বলে সে আসলে ধর্মে নতুনত্ব আনতে চায়, তাই সকলেই যেন সেই লোককে এড়িয়ে চলে। এরপর যে কেউ ইমাম বুখারীর সভায় যোগদান করবে তাকেও ধর্মে নতুনত্ব সৃষ্টিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হবে।'' এরপর থেকে সকলেই ইমাম বুখারীকে পরিত্যাগ করেছিলেন। ইমাম মুসলিম আর ইমাম বুখারীর হাদীস তার গ্রন্থে স্থান দিতেন না। ইমাম বুখারীও ইমাম যুহলীর বর্ণনা করা হাদীস অন্য ব্যক্তির নাম দিয়ে লিপিবদ্ধ করতেন। এর কিছুদিন বাদে ইমাম যুহলী আবার বলেন যে ইমাম বুখারীর সাথে একই শহরে বসবাস করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। অগত্যা ইমাম বুখারীকে নিজ শহর বুখারায় যাত্রার উদ্দেশ্যে নিশাপুর ত্যাগ করতে হয়। কিন্তু নিজ শহর বুখারায় এসে ইমাম বুখারী আবিষ্কার করেন যে এখানকার জনসাধারণ তার প্রতি আরও বেশী শত্রুভাবাপন্ন। নিজ শহরে বাস করাই তার জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ালো। এজন্য তিনি সমরখন্দের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। পথিমধ্যে জানতে পারেন যে সেখানেও একই অবস্থা। এর কিছুদিন পরেই ইমাম বুখারী মৃত্যুবরণ করেন।
ইমাম মুসলিম তো ইমাম বুখারীর হাদীস সংকলণের পদ্ধতিকেই মিথ্যা ও নতুনত্ব বলে অভিহিত করেছিলেন। তিনি বুখারীকে ইঙ্গিত করে নিম্নোক্ত কথাগুলো তার সহিহ মুসলিম গ্রন্থের মুয়ান'আন অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ করেনঃ
আমাদের সময়ে কিছু লোক মনে করেন যে তারা হাদীসের স্কলার। তারা হাদীস সত্যাসত্য করার জন্য মিথ্যা শর্ত বানিয়েছেন। তাদের মাঝে একজন (ইমাম বুখারী) বলেন, '' যখন আপনি কোন হাদীস বর্ণনাকারীর কাছ থেকে হাদীস শুনবেন তখন আপনাকে অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে যে বর্ণনাকারী এবং তার আগের বর্ণকারীর মাঝে সম্মুখ সাক্ষাত ঘটেছিল। এটা যথেষ্ট নয় যে তাদের জীবণকাল একই সময়ে ছিল।'' এই শর্তটি একটি মিথ্যা শর্ত কেননা আগের কোন মহান স্কলার এমন কোন শর্তের কথা উল্লেখ করেন নাই। এই শর্তটি মহা ভুল, আমি এই শর্তের বিরোধীতা করি যাতে স্বল্প জ্ঞানীরা এটা বিশ্বাস না করে।
এছাড়া ইমাম মুসলিম কিছু কিছু হাদীস বর্ণনাকারীকে অনির্ভরযোগ্য মনে করতেন, তাদের সমালোচনা করতেন এবং তাদের বলা হাদীস গ্রহণ করতেন না অথচ তাদের বলা হাদীস বুখারীর বইতে ঠিকই স্থান পেয়েছে। ইমাম আসকালানীর ''তাহজিব আল তাহিজিব'' গ্রন্থের ভলিউম ১০ পৃষ্ঠা ৪৬১ এ এমন কিছু উদাহরণ দেয়া আছে। যেমন, বুখারী শরীফে একজন বর্ণনাকারী আছেন যার নাম نعیم بن حماد مروزی নাঈম বিন হাম্মাদ যাকে ইমাম মুসলিম গ্রহণযোগ্য মনে করতেন না। পরবর্তী বহু স্কলারও উনাকে নির্ভরযোগ্য মনে করতেন না।
অন্যদিকে ইমাম মুসলিম নিজেও যে খুব পন্ডিত ছিলেন তা কিন্তু নয়। ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী তো ইমাম মুসলিমকে একজন নকলবাজ অসৌজন্যময় হাদীস সংকলক বলে অভিহিত করেছিলেন। ইমাম আসকালানী ''ফাথ আল বারী'' গ্রন্থের ''ইমাম বুখারীর জীবনচড়িত'' অধ্যায়ে লিখেছেনঃ
ইমাম বুখারী মূল হাদীসগুলো সংগ্রহ করেছিলেন এবং মানুষকে শিক্ষা দিয়েছিলেন। ইমাম বুখারীর পর যে হাদীসই লিখিত হয়েছে তা বুখারী শরীফের রেফারেন্সেই হয়েছে। ইমাম মুসলিমের গ্রন্থটি বুখারী শরীফের হাদীস দ্বারা পরিপূর্ণ। ইমাম মুসলিম বুখারী শরীফ থেকে নকল করে একটি হাদীস গ্রন্থ লিখেছেন অথচ ইমাম বুখারীর নাম উল্লেখ করার মত সৌজন্যতাটিও দেখাননি। ইমাম দার কুতনি বলেছিলেন যে যদি ইমাম বুখারী বলে কেউ না থাকত তাহলে ইমাম মুসলিম এর নামই কেউ শুনত না। ইমাম মুসলিম বিষেষ কিছুই করেন নাই, তিনি যা করেছেন তা হচ্ছে বুখাড়ি শরীফ থেকে বেশিরভাগ হাদীস নকল করে নিজে কিছু হাদীস সংগ্রহ করে তার হাদীস গ্রন্থটি সম্পন্ন করা।
এসব ঘটনা থেকে এই প্রশ্নই মনে আসে যে হাদীস সংকলনের মত মহান একটি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এই সব ইমামদের মাঝে সামান্য কারণে এত ভেদাভেদ সৃষ্টি হয় কিভাবে? আসলে ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে কারণটি সামান্য মনে হলেও রাজনৈতিক ও ক্ষমতার দিক থেকে এটি সামান্য কারণ ছিলনা। এই ইমামরা ছিলেন সমাজের সবচেয়ে বরেণ্য ব্যক্তি। এই ক্ষমতা ও সম্মান তারা উপভোগ করতেন। ইমাম যুহলী সেই ভয়েই চাইতেন না যে তাদের মাঝে মতপার্থক্যের কারনে সমাজে তাদের ক্ষমতা ও সম্মান ক্ষুণ্ণ হোক। কিন্তু ইমাম বুখারীর সেই ভাষণে এক বেয়াড়া প্রশ্নকারীই মূল ঝামেলাটা বাধিয়ে ফেলে। তখন নিজ ক্ষমতা ও সম্মান বজায় রাখার জন্য এক মুহুর্তে ইমাম যুহলী ইমাম বুখারীর সমস্ত হাদীস অগ্রহণযোগ্য বলে ঘোষণা দিতে একবিন্দু দ্বিধা করলেন না অথচ এই হাদীস গুলোই এতদিন সত্য বলে স্বীকার করে আসছিলেন। এই ইমামরাই বলেন যে যারা সত্য হাদীস গোপন করেন তারা জাহান্নামী, তবে ইমাম যুহলী নিজেই কি জাহান্নামী হয়ে গেলেননা? নবীর রওজা মোবারকের পাশে বসে যখন বর্তমান যুগেও লোকে মিথ্যা বলে, নামাজ পড়ার আগে পরে যখন একালেও লোকে মিথ্যা বলে আর ইমাম বুখারী রওজা মোবারকের পাশে বসে হাদীস সাজানো, প্রতিটি হাদীস লিখার আগে আলাদা করে গোসল করে ২ রাকাত নামাজ পড়ার উদাহরণ দিয়ে হাদীসকে সত্য মহাসত্য বলে ঘোষণা দেন তখন সেখানে সম্মান ও ক্ষমতার উদ্দেশ্য কি খুব একটা চাপা থাকে? এই পোস্টের ২য় পর্বে আলোচিত সকল সুন্নি আলেম কর্তৃক স্বীকৃত বুখারী শরীফের ভুলগুলোই তো প্রমাণ করে যে ইমাম বুখারীর এই পদ্ধতি ব্যর্থ হয়েছিল। যা সত্য তা এমনিতেই সত্য, এর জন্য রওজা মোবারকের দোহাই দেয়া লাগেনা। কারণ রওজা মোবারকের পাশে বসলেই যে সকল মিথ্যা সত্য ইথেকে চট করে আলাদা হয়ে যাবে এমন আজগুবি প্রমাণ কেউ পায়নি। এছাড়া ইমাম বুখারী দাবী করতেন যে তার গ্রন্থে মিথ্যা হাদীস যেন না ঢুকে সে জন্য তিনি সবসময় নবীর একটি চুল মোবারক সঙ্গে রাখতেন। স্বভাবতই এখানেও প্রশ্ন আসে, নবীর মৃত্যুর ২৫০ বছর পর নবীর চুল মোবারক ইমাম বুখারী কিভাবে পেলেন? এতদিন কি চুল তাজা থাকতে পারে? চুলের সাথে সত্য মিথ্যার সম্পর্ক কি? নবীর চুল দিয়ে তো বরং নবীর উপর যাদু টোনা করা হয়েছিল। অথচ দুঃখের বিষয় হচ্ছে হাদীসের সত্যতা পরীক্ষার এইসব হাস্যকর নমুনা শুনে মোহাবিষ্ট মুসলিম এগুলোর ফাঁকিগুলো ধরা দূরে থাক এগুলোকেই অলৌকিক মনে করে ভেবে নেয় যে বুখারী, মুসলিম শরীফে ভুল হাদীস থাকতেই পারেননা !
এতকিছুর পরও আরও কথা আছে। বর্তমান যে বুখারী শরীফ আমাদের হাতে আছে, অনেকেই সেটিকে একটি অবিকৃত নির্ভেজাল গ্রন্থ বলে মনে করেন যা সরাসরী ইমাম বুখারীর তরফ থেকে আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। কিন্তু আসল সত্য হচ্ছে বর্তমান বুখারী হাদীস গ্রন্থটি অনেক বিকৃতি, এডিটিং এর পর বহু ভেরিয়েশনে ভাগ হয়ে, এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থেকে, কিছু অংশ চীরতরে হারিয়ে গিয়ে, কিছু অংশ কিছুটা পরিবর্তীত হয়ে অবশেষে একটি গ্রন্থ হয়ে আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। অর্থাত বর্তমান বুখারী শরীফ আর ইমাম বুখারীর লিখা বুখারী শরীফ ঠিক একই রকম নয়। পরবর্তী পর্বে এ ব্যাপারে আলোচনা করা হবে।
চলবে।
পর্ব-৫- বুখারী শরীফ একটি বিকৃত গ্রন্থঃ শরীয়া আইন এর অনুপযোগিতা
বর্তমানে যে বুখারী শরীফ এর কথা আমরা জানি, অনেকেই সেটিকে একটি অবিকৃত নির্ভেজাল গ্রন্থ বলে মনে করি যা সরাসরী ইমাম বুখারীর তরফ থেকে আমাদের হাতে এসে পৌছেছে। অথচ বর্তমান বুখারী হাদীস গ্রন্থটি যে অনেক বিকৃতি, এডিটিং এর পর বহু সংকরণে বিভক্ত হয়ে, এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থেকে, কিছু অংশ চীরতরে হারিয়ে গিয়ে, কিছু অংশ কিছুটা পরিবর্তীত হয়ে অবশেষে একটি গ্রন্থ হয়ে আমাদের হাতে এসে পৌছেছে, সেকথা অনেকেরই অজানা। অর্থাত বর্তমান বুখারী শরীফ আর ইমাম বুখারীর লিখা আসল বুখারী শরীফ ঠিক একই রকম নয়।
সেযুগে কোন প্রিন্টিং প্রেস, ফটোকপি মেশিন ছিলনা। তাই চাইলেই বাজার থেকে কোন বই কিনতে পাওয়া যেতনা। শিক্ষকরাও চাইলেও শিষ্যদের মাঝে বই বিলি করতে পারতেননা। একমাত্র উপায় ছিল শিক্ষক ক্লাসে বসে কোনবই থেকে ডিকটেশন দিতেন আর হাজার হাজার ছাত্র তা নিজের খাতায় লিখে নিতেন। লিখার পর কোন ভুল ত্রুটি হল কিনা সেটা এক এক করে হাজার হাজার ছাত্রের জন্য চেক করে দেখা কোন শিক্ষকের পক্ষে সম্ভব ছিলনা। ইমাম বুখারীর গ্রন্থটি ছিল অতিকায় বৃহত। আধুনিক ছাপাখানার ক্ষুদ্র অক্ষরে লিখার পরেও এটি দশটি মোটা ভলিউম এর বিশাল গ্রন্থে পরিণত হয়েছে। মান্ধাতা আমলের প্যাপাইরাসের উপর হাতে লিখা বুখারী শরীফ ছিল কাগজের বিশাল স্তুপ। দীর্ঘ আট বছর ধরে ইমাম বুখারী এই গ্রন্থটি তার শত শত শিষ্যদের নিকট শিক্ষা দিয়েছিলেন। মাত্র একবার শুনার পর শিষ্যরা সেটা নিজেদের খাতায় লিখে নিয়েছিলেন, শুধু আল ফিরাব্রী নামক একজন শিষ্য সেটা দুবার শুনার সূযোগ পেয়েছিলেন। ইমাম বুখারীর নিজ হাতে লিখা কাগজের বিশাল স্তুপের সেই গ্রন্থটি চীরতরে হারিয়ে গিয়েছে যা কোথাও সংরক্ষিত নেই। তার শত শত ছাত্রের মাঝে অধিকাংশই ইমাম বুখারীর শিক্ষা পরবর্তী প্রজন্মে পৌছাতে ব্যর্থ হয়েছেন। শুধুমাত্র পাঁচ জন ছাত্র এই কাজে সফল হয়েছিলেন। খ্যাতির ক্রমানুসারে তাদের নাম নিচে উল্লেখ করা হল।
১, আল ফিরাব্রী
২, ইব্রাহীম বিন মাকাল
৩, হাম্মাদ বিন শাকির
৪, আবু তালহা মনসুর
৫, হুসেইন বিন ইসমাইল
উপরোক্ত পাঁচ জন শিষ্যের নিজেদের হাতে লিখা বুখারী গ্রন্থের মাঝে ছিল বিস্তর ফারাক। এত বিশালাকার একটি গ্রন্থ মাত্র একবার শুনে লিখলে মানুষ্য ত্রুটির কারণে ফারাক থাকাটা মোটেই অস্বাভাবিক কিছুনা। বিষয়বস্তুর ফারাক ছাড়াও একেক জনের কপির মাঝে শত শত হাদীস কম বেশী ছিল। তবে আসল কথা হচ্ছে, এই পাঁচ জনের নিজ হাতে লিখা পাঁচটি গ্রন্থও চীরতরে হারিয়ে গিয়েছে যা কোথাও সংরক্ষিত নেই। এই পাঁচ জনের মধ্যে প্রথমজন, আল ফিরাব্রীর ছিল আবার শত শত ছাত্র যারা আল ফিরাব্রীর মুখে শুনে নিজ নিজ খাতায় বুখারী গ্রন্থ লিখেছিলেন। ফিরাব্রীর সবচেয়ে বিখ্যাত ছাত্রটির নাম ছিল আল খুশায়মানি। এই আল খুশায়মানি সহ ফিরাব্রীর অন্যান্ন কিছু ছাত্রের নিজ হাতে লিখা বুখারী গ্রন্থের ম্যানুস্ক্রীপ্ট বর্তমানে সংরক্ষিত আছে। ফিরাব্রী ছাড়া ইমাম বুখারীর বাকি চার ছাত্রের পরবর্তী শিষ্যদের কিছু ম্যানুস্ক্রীপ্টও বর্তমানে সংরক্ষিত আছে তবে ফিরাব্রীর ছাত্রদের গ্রন্থগুলোর তুলনায় এগুলোর কদর কম।
তবে ফিরাব্রীর ছাত্রদের গ্রথগুলোও নির্দিষ্ট কোন সুস্পষ্ট গ্রন্থ ছিলনা, বিশাল ছিল বিধায় পার্ট বাই পার্ট এদিক সেদিক ছড়ানো ছিটানো ছিল। একসাথে সংকলন ও হাদীসগুলো বুঝার জন্য তাই আরও ৫০০ বছর পর খুশায়মানী, ইউনানী সহ ফিরাব্রীর প্রায় এক ডজন ছাত্রের লিখা বুখারী কপির উপর ভিত্তি করে ৭০ টির বেশী বুখারী হাদীসের ব্যাখ্যাগ্রন্থ (শারহ বা তাফসীর বা Commentary) লিখিত হয়েছিল। এই ব্যাখ্যাগ্রন্থগুলোই আধুনিক বুখারী শরীফের ভিত্তিমূল। এগুলোর মধ্যে ইমাম ইবনে হাজার আসকালানীর লিখা ''ফাথ আল বারী'' ব্যাখ্যাগ্রন্থটি আলেমদের মাঝে সর্বাধিক স্বীকৃত ও শুদ্ধ বলে পরিচিতি পেয়েছে। ইমাম আসকালানী বলেছেন যে আল ফিরাব্রী ২ বার বুখারী গ্রন্থটি শুনেছিলেন বিধায় তিনি তার ''ফাথ আল বারী'' গ্রন্থে ফিরাব্রীর ছাত্র আল খুশায়মানির বইটি মূল স্ট্যান্ডার্ড ট্যাক্ট হিসেবে নিয়েছিলেন এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে অন্যান্য ছাত্রের বই স্ট্যান্ডার্ড ট্যাক্সট হিসেবে নিয়েছিলেন, এবং ইমাম আসকালানী দাবী করেছেন যে নিজ মর্জি অনুযায়ী বুখারীর স্ট্যান্ডার্ড ট্যাক্সট বাছাই করার ইসলামী অধীকার নাকি তার ছিল। ইমাম আসকালানী তার ''ফাথ আল বারী'' গ্রন্থে ফিরাব্রীর ছাত্রদের লিখা বুখারী গ্রন্থগুলোর মাঝে বিদ্যমান পার্থক্যগুলোও লিপিবদ্ধ করেছেন। এখানে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হচ্ছে ইমাম আসকালানী আল খুশায়মানির গ্রন্থটি স্ট্যান্ডার্ড ট্যাক্সট হিসেবে নিয়েছিলেন, অথচ তাদের জীবনকালের মাঝে ফারাক ছিল প্রায় ৫ শত বছর। এই পাঁচশ বছরে খুশায়মানির গ্রন্থটি নানা হাতে অদল বদল হয়েছে, এবং কেউ যে এতে কিছু ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত সংযোজন-বিয়োজন করেনি তা নিশ্চিত করে বলার উপায় নেই। ফিরাব্রীর ছাত্র মুসতামলীর নিজস্ব স্বীকারোক্তিতেই কিছু এডিটিং এর প্রমাণ পাওয়া যায়। সে যাই হোক, আধুনিক বুখারী শরীফের ৯০% ই ইমাম আসকালানীর লিখা এই ''ফাথ আল বারী'' গ্রন্থটির স্ট্যান্ডার্ড ট্যাক্সট থেকে নেয়া হয়েছে।
এতক্ষণে পাঠক বুঝে ফেলেছেন যে আধুনিক বুখারী শরীফের কতগুলি হাদীস ইমাম বুখারীর নিজ হাতে সংকলণ করা হয়েছিল সে ব্যাপারে নিশ্চিত হবার উপায় বর্তমানে নেই। ইমাম বুখারীর নিজ হাতে লিখা মূল গ্রন্থটিই চীরতরে হারিয়ে গিয়েছে। বুখারীর মুখ থেকে শুনে লিখা তার ছাত্রদের মূল গ্রন্থগুলোও চীরতরে হারিয়ে গিয়েছে। বুখারী থেকে ফিরাব্রী এবং ফিরাব্রী থেকে খুশায়মানি পর্যন্ত ট্রান্সফার হবার সময় বুখারীর গ্রন্থে কি পরিমাণ পরিবর্তন হয়েছে মূল গ্রন্থগুলো চীরতরে হারিয়ে যাবার ফলে সেটা যাচাই করার আর কোন উপায় নেই। বুখারীর ছাত্রদের পরের প্রজন্মের ছাত্রদের লিখা গ্রন্থগুলোর মূল কপি থাকলেও তাদের মাঝে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য, আর সেগুলোর বেসিসে আধুনিক বুখারী সংকলণ হয়েছে সেগুলো লিখিত হবারও ৫০০ বছর পর। এর মাঝে কি মূল বুখারী গ্রন্থে কোন বিকৃতি ঘটেনি? অবশ্যই ঘটেছে। তার জ্বলজ্যান্ত প্রমাণও আমাদের হাতে আছে। ১৮০০ হাদীস বর্ণনাকারীর চরিত্রের বর্ণনা নিয়ে ইমাম বুখারী আলাদা একটি গ্রন্থ আছে। সেখানে প্রায় এক ডজন বর্ণনাকারীকে ইমাম বুখারী অনির্ভরযোগ্য, আনঅথেন্টিক বলে রায় দিয়েছেন। অথচ আধুনিক বুখারী শরীফে সেই প্রতিটি অনির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীর বলা হাদীস সংকলিত হয়েছে! এটি কি মূল বুখারী গ্রন্থের বিকৃতির একটি বড় প্রমাণ নয়?
অতএব, আলোচনার খাতিরে যদি ধরেও নেই যে ইমাম বুখারী ১০০% শুদ্ধতার সাথেই তার সহিহ গ্রন্থটি সংকলণ করেছিলেন, তবুও বর্তমানে সেই শুদ্ধতা আর বজায় নেই। তবু কিভাবে এই বিকৃত গ্রন্থটি শরীয়া আইনের মূল ভিত্তি হিসেবে টিকে থাকার যোগ্যতা রাখে? সাধারণ মানুষ যখন কোনভাবে একটি হাদীসের ত্রুটি বা কোরানের সাথে হাদীসটির বিরোধ আবিষ্কার করে তখন মোল্লাশ্রেণীর লোকেরা নানা ছল চাতূরীর আশ্রয় নিয়ে ত্রুটিপূর্ণ সেই হাদীসটিকেই তাকে সত্য বলে গিলিয়ে ছাড়ে। সাধারণ মানুষ ভেবে বসে আমার তো এত জ্ঞান নেই তাই মোল্লা সাহেবই হয়তো ঠিক বলছেন। এভাবেই প্রশ্নকারীকে দমিয়ে রেখে যুগ যুগান্তর ধরে এই হাদীস শাস্ত্র টিকে আছে। পরবর্তী পর্বে হাদীস বিশ্বাস করানোর জন্য মোল্লা সাহেবদের এই ছল চাতূরীর প্রকৃত স্বরুপ ও তার উপযুক্ত জবাব নিয়ে আলোচনা করা হবে।
চলবে।

তথ্যসূত্রঃ
১) ফাথ আল বারী- ইবনে হাজার আসকালানী
২) Introduction to the translation of Ibn Hajar al-Asqalani's commentary on selected hadith - Abdal Hakim Murad
৩) Canonization of Bukhari and Muslim- Dr. Jonathan Brown
পর্ব-৬ - যে কারণে মানুষ উদ্ভট হাদীসগুলো বিশ্বাস করেঃ শরীয়া আইন এর অনুপযোগিতা
বেশ কিছু হাদীস পড়ার পর অনেকের মনেই মাঝে মাঝে হাদীসগুলোর বিষয়বস্তু নিয়ে অনেক প্রশ্ন জেগে উঠে, তারপর নিজেকে এই বলে প্রবোধ দেয় যে আমার তো এত জ্ঞান নেই তাই আমি নিশ্চয়ই এর সঠিক ব্যাখ্যা বুঝতে পারছিনা। এই প্রবোধ দেয়ার ব্যাপারটা আসলে যুগে যুগে আলেমদের শিখিয়ে দেয়া কৌশল মাত্র। যখন সবাই না বুঝে বা কম বুঝে দৈনন্দিন জীবনে হাদীসের প্রায়গিক ব্যাবহার করে যাচ্ছে তখন কেউ এসে কিচ্ছু বলেনা। কিন্তু কোন হাদীসের ব্যবহার নিয়ে কারো মনে প্রশ্ন উঁকি দিলেই চারপাশ থেকে লোক জড়ো হয়ে নানা রকম উপদেশ দেয়া শুরু করবে। আলেমরা বলবে- হাদীস শাস্ত্র, কোরআন, ইসলামের ইতিহাস, ফেকাহ, তর্ক শাস্ত্র, দর্শন, আরবী ভাষা ও শব্দ তত্ত্ব ইত্যাদি সহ আরো নানান বিষয়ের উপর দখল না থাকলে হাদীস নিয়ে সমালোচনা করা যায়না। হাদীসের বক্তব্য ভালভাবে বুঝতে হলে সমগ্র হাদীস শাস্ত্র সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে, কারণ একই বিষয়ের উপর একাধিক হাদীস থাকতে পারে যাথেকে মাত্র একটি হাদীস পড়লে সেই বিষয়ের উপর সম্পুর্ণ ধারণা না পেয়ে শুধু আংশিক বা বিকৃত ধারণা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কোন হাদীস বুঝতে হলে হাদীসের ব্যাখ্যাগ্রন্থ থেকে সেই হাদীসটির ব্যাখ্যা পড়ে হাদীসটি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পেতে হয়। ব্যাখ্যাগ্রন্থগুলোর আকার আবার এতটাই বিশাল যে শুমাত্র বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফাথ-আল-বারী রাখলে একটি আলমীরাতে অন্য বই এর স্থান সংকুলান হবেনা।
কিন্তু আসল সত্য হচ্ছে আলেমরা শুধুমাত্র মানুষের মনে আসা প্রশ্নকে দমিয়ে রাখতেই এই কাজ করেন। সারা দুনিয়ার ৬ বিলিয়ন মানুষের মাঝে ১ % মানুষেরও কি সাধ্য আছে যে এত এত কঠিন বিষয় আয়ত্ব করে তারা ধর্ম পালন করবে? তথাপী সমগ্র হাদীস শাস্ত্র সম্পর্কে জ্ঞান থাকলেও বা হাদীস এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ পড়লেও হাদীস এর বক্তব্যের ধোঁয়াশা থেকে বের হওয়া যায়না। বরং এত এত কন্ট্রাডিকশন, প্রশ্ন এসে ভীড় করে যে গোঁজামিল না দিয়ে পার পাওয়া অসম্ভব। এর প্রমাণ একটু পরেই পাবেন। তার আগে একজন নামকরা ও বিখ্যাত ইসলামিক স্কলার এর সাথে পরিচিত হয়ে নেয়া যাক।
শায়খ আব্দআল হাকিম মুরাদ
ড. আব্দআল হাকিম মুরাদ একজন ব্রিটিশ ইসলামিক স্কলার এবং শিক্ষক। তিনি বহুল পরিচিত ''সুন্নাহ প্রোজেক্ট'' এর ডিরেক্টর যে প্রোজেক্ট থেকে প্রধান এবং সর্বপ্রথম সুন্নি হাদীস সংগ্রহগুলোর এরাবিক এডিশন পাবলিশ করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ এ লেকচার দেন। তিনি মুসলিম একাডেমি ট্রাস্ট (লন্ডন) সহ আরও বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রেসিডেন্ট, ডিরেক্টর, সেক্রেটারী ইত্যাদি পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি উলফসন কলেজ এর থিওলজি বিভাগের ডিরেক্টর অফ স্টাডিজ পদে ছিলেন। ইসলামিক বিষয়ের উপর তার অনেক আর্টিকেল, পাবলিকেশন, অনুবাদ ও বই আছে।
তার শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ
১) ক্যাম্ব্রীজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবী বিষয়ে ডাবল ফার্স্ট সহ গ্র্যাজুয়েশন।
২) মিশরের বিখ্যাত আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ''ট্র্যাডিশনাল ইসলামিক সায়েন্স'' বিষয়ে ৩ বছর অধ্যয়ণ।
৩) জেদ্দায় ৩ বছর ইসলাম বিষয়ক বিভিন্ন কাজকর্ম
৪) লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ বছর তুর্কি ও পারস্য ভাষা অধ্যয়ণ।
৫) অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক বিষয়ে পি.এইচ.ডি ডিগ্রী অর্জন।
শায়খ আব্দআল হাকিম মুরাদের লিখা একটি বই এর ভূমিকা থেকে হাদীসের ব্যাপারে স্কলারদের প্রকৃত অবস্থান সম্পর্কে বেশ পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়।
বইটির নামঃ Introduction to the translation of Ibn Hajar al-Asqalani's commentary on selected hadith
বইটি কেউ কিনতে না চাইলে Click This Link এই লিঙ্ক থেকে বইটির ভূমিকা অংশটি পিডিএফ আকারে পড়া যাবে। ইংরেজী পুরোটা রেখে সেই সাথে আমি এটির বাংলায় অনুবাদ করে দিচ্ছি। আর বোল্ড হরফে নিজের মন্তব্য দিচ্ছি।
The booklet intends to introduce non-Arabic speakers to one of the most seminal genres of Muslim religious literature, namely, the hadith commentary. It is surprising that no serious translations at present exist from this voluminous and influential body of writing, given that there are few hadith which can be understood adequately without reference to the often complex debates which have taken place concerning them between the scholars.
এই পুস্তিকাটির উদ্দেশ্য আরবী ভাষাজ্ঞানহীন পাঠকদের ''হাদীস ব্যাখ্যাগ্রন্থ'' নামক মুসলিম ধর্মীয় সাহিত্যের একটি প্রাথমিক প্রকরণের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া। এটি আশ্চর্য্যজনক যে এমন সব বৃহদায়তন এবং প্রভাব বিস্তারকারী গ্রন্থ সমূহের কোন ঐকান্তিক অনুবাদ নেই অথচ খুব কম হাদীসই আছে যেগুলো স্কলারদের মাঝে প্রায়শঃই সংঘটিত জটিল সব বিতর্কের সাথে সম্পর্কস্থাপন ছাড়া যথার্থ ভাবে বুঝা যায়।
এর মানে হাদীস এর অর্থ নিয়ে স্কলারদের মাঝেই জটিল বিতর্ক বা ভিন্নমত আছে।
These discussions have included investigations of the precise linguistic and lexicological meaning of the Prophetic speech, studies of the isnad, debates over the circumstances surrounding the genesis of each hadith (asbab al-wurud), and issues of abrogation by stronger or later hadiths or by Qur’anic texts. Sufyan ibn ‘Uyayna, the great early hadith scholar, used to remark: al-hadith madilla illa li’l-‘ulama’: ‘the hadith are a pitfall, except for the scholars.’ For this reason no Muslim scholar of repute uses a hadith before checking the commentaries to ascertain its precise meaning, context, and application.
এইসব আলোচনার মাঝে আছে নবীর বানীর ভাষাগত ও শব্দগত সঠিক অর্থের অনুসন্ধান, সনদের পরীক্ষা, প্রতিটি হাদীসের সূচনালগ্নের পরিস্থিতি নিয়ে বিতর্ক, এবং বেশী শক্তিশালী বা পরবর্তী হাদীস অথবা কোরানের বানী দ্বারা হাদীস রদের ঘটনা। মহান হাদীস স্কলার সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা বলতেন, ''স্কলার ছাড়া বাকিদের জন্য আহাদীস হচ্ছে একটি ফাঁদ''। একারণে কোন খ্যাতনামা মুসলিম স্কলারই হাদীসের ব্যাখ্যা যাচাই না করে সেটির সঠিক অর্থ, অনুষঙ্গ এবং প্রায়োগিক ব্যবহার নিরূপণ করেন না।
হাদীস পড়া বা ফাঁদে পা দেয়ার আগে একবার ভেবে দেখবেন কি?
The importance of this literature may be gauged by the fact that at least seventy full commentaries have been written on Imam al-Bukhari’s great Sahih. The best-known of these include al-Kawakib al-Darari by Imam Shams al-Din al-Kirmani (d. AH 786), ‘Umdat al-Qari by Imam Badr al-Din al-‘Ayni (d.855), and the Irshad al-Sari by Imam Ahmad ibn Muhammad al-Qastallani (d.923).
এই সাহিত্যের গুরুত্ব যে ব্যাপারটি দ্বারা মাপা যায় তা হচ্ছে ইমাম বুখারীর মহান সহিহ হাদীস গ্রন্থটির উপর অন্তত ৭০ টি ব্যাখ্যাগ্রন্থ লিখিত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে সুপরিচিত গ্রন্থগুলো হচ্ছে ইমাম শামস আল-দ্বীন আল-কিরমানি (মৃত্য ৭৮৬ হিজরী) এর আল-কাওয়াকিব আল-দারারি, ইমাম বদর আল-দ্বীন আল-আইনি (মৃত্য ৮৫৫) এর উমদাত আল-ক্বারী, এবং ইমাম আহমাদ ইবনে মুহাম্মদ আল-ক্বাস্তাল্লানি (মৃত্যু ৯২৩) এর ইরশাদ আল-সারি।
স্কলাররা হাদীসের অর্থের ব্যাপারে ধোঁয়াশা কাটিয়ে উঠতে পারেননি, তাদের মাঝে মতপার্থক্য এবং বিতর্ক চলছিল, তাই শুধু ইমাম বুখারীর সংকলিত হাদীসগুলোর উপরেই ৭০ টি ভিন্ন ব্যাখ্যাগ্রন্থ লিখিত হয়েছে। একই হাদীসের ব্যাখ্যা একেকজন একেক রকম ভাবে দিয়েছেন, তারা সকলেই আবার হাদীসের স্কলার, হাদীসের ব্যাখ্যা নিয়ে আবার তাদের মাঝে মতপার্থক্যও আছে।
However the most celebrated is without question the magnificent Fath al-Bari (‘Victory of the Creator’) by Imam Ibn Hajar al-‘Asqalani, a work which was the crown both of its genre and of the Imam’s academic career. It is appreciated by the ulema for the doctrinal soundness of its author, for its complete coverage of Bukhari’s material, its mastery of the relevant Arabic sciences, the wisdom it shows in drawing lessons (fawa’id) from the hadiths it expounds, and its skill in resolving complex disputes over variant readings.
যাই হোক, এগুলোর মাঝে প্রশ্নাতীতভাবে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ হচ্ছে ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী লিখিত চমৎকার গ্রন্থ ''ফাথ আল বারী'', যা কিনা এই ধরণের অন্যান্য গ্রন্থ এবং ইমামদের পান্ডিত্য যাত্রার মুকুট ছিল। আলেম সমাজ কর্তৃক গ্রন্থটি সমাদৃত হয়েছে গ্রন্থটির লেখকের যোগ্যতা, বুখারীর সম্পূর্ণ সংকলণের উপর গ্রন্থটির ব্যাপ্তি , প্রাসঙ্গিক এরাবিক সায়েন্স এর উপর গ্রন্থটির আধিপত্য, গ্রন্থে ব্যাখ্যাকৃত হাদীসগুলো থেকে গ্রন্থটির শিক্ষা বের করে আনার মত বিজ্ঞতা, এবং ভিন্ন ব্যাখ্যাগ্রন্থগুলোর মাঝে বিদ্যমান জটিল বিতর্ক নিরসনে গ্রন্থটির দক্ষতার কারণে।
তার মানে ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী সেই ব্যক্তি যিনি বুখারী শরীফ নিয়ে স্কলারদের মাঝে বিদ্যমান জটিল সব বিতর্কের সমাধান করেছেন। কিন্তু ইমাম ইবনে হাজারের জন্ম হয়েছে ইমাম বুখারীর মৃত্যুর ৫৭৮ বছর পর। এই দীর্ঘ ৫৭৮ বছর সকলেই তাহলে বুখারী শরীফের হাদীসের অর্থ নিয়ে অন্ধকারে ছিলেন? আর ইমাম আসকালানী নিজেও তো বিভ্রান্তির বাইরে ছিলেন না। মুতা বিবাহ নিয়েই উনার বিভ্রান্তির একটি উদাহরণ দেয়া যাক। মুসলিম শরীফের হাদীস আছে হযরত আলী (রাঃ) বলেছেন যে নবী (সঃ) নিজেই খায়বার যুদ্ধে মুতা বিবাহের নিয়ম রদ করে গিয়েছেন। মুসলিম শরীফের অন্য হাদীসে আছে (খায়বার যুদ্ধে নয় বরং) মক্কা বিজয়ের সময় নবী মুতা বিবাহের নিয়ম বাতিল করেন। এছাড়া আরও দশ বারোটা হাদীস গ্রন্থে দশ বারো রকমের হাদীস পাওয়া যায়, একজায়গায় বলে যে কোরানে বিবাহ বিচ্ছেদের আয়াতের পর মুতা বাতিল হয়, আরেক জায়গায় বলে ইদ্দতের আয়াতের পর মুতা বাতিল হয়, আরেক জায়গায় বলে সম্পত্তি বন্টনের আয়াতের পর মুতা বাতিল হয়। তো ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী এই সবের ধার ধারেননি, তিনি একটি হাসান হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন মুতা বাতিল হয় উমরাতুল কাদহার সময়, এই হাদীসের সপক্ষে আরেকটি হাদীস দেখিয়ে তিনি হাসান হাদীসকে সহিহ মর্যাদা দিয়েছেন। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে তালখিস আল হাবির গ্রন্থে এই আসকালানী সাহেবই আরও দুটো হাসান হাদীসের বরাতে বলেছেন যে মুতা বাতিল হয়েছিল হুনাইন এর যুদ্ধে। কি পরিমান বিভ্রান্ত হলে তিনি মুসলিম শরীফের হাদীস বাদ দিয়ে দূর্বল হাদীস এর বরাতে একেক বার একেক কথা বলেন? আবু দাউদ এবং ইবনে মাজাহ, সিহাহ সিত্তার এই দুই হাদীস গ্রন্থে আবার বলা আছে বিদায় হজ্বের সময়ও মুতা বিবাহ চালু ছিল, কিন্তু সেদিনই নবী এটা নিষেধ করেন। অথচ কত কত সহিহ হাদীসে কত আগেই মুতা বিবাহকে চীরতরে নিষিদ্ধ করে দেয়া আছে। আবার মুসলিম শরীফের হাদীস আছে যে ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর মত সাহাবী বলেছেন যে মুতা বিবাহ বাতিল হয়নাই। এইনিয়ে সাহাবাদের মাঝে বিরাট ঝগড়াও হয়েছে। এইসব কন্ট্রাডিকশনের কোন অভাব নাই হাদীস গ্রন্থগুলোতে।
For Bukhari’s text has not come down to us in a single uniform version, but exists in several ‘narrations’ (riwayat), of which the version handed down by al-Kushmayhani (d.389) on the authority of Bukhari’s pupil al-Firabri is the one most frequently accepted by the ulema. This is, for example, why the new and definitive edition of the Sahih, through the authorized narration of the best-known hadith scholar of recent times, Shaykh al-Hadith ‘Abdallah ibn al-Siddiq al-Ghimari, uses the Firabri version (for this text see http://www.thesaurus-islamicus.li). Ibn Hajar frequently uses the Kushmayhani variant as his standard text, but gives his reasons, often in complex detail, for preferring other readings where these seem to have particular merit. In doing this he makes it clear that he is authorized, through the ijaza-system, for all the riwayat he cites.
বুখারীর হাদীস গ্রন্থটি আমাদের কাছে একটি একক অভিন্ন সংস্করণ হিসেবে আসেনি, বরং এর বিভিন্ন বর্ণনা আছে, এদের মাঝে বুখারীর ছাত্র আল-ফিরাব্রি হয়ে আল-খুশমায়হানি হতে প্রাপ্ত বর্ণনাটিই আলেমদের নিকট সবচেয়ে বেশি গৃহীত। যেমন, বর্তমান সময়ের সবচেয়ে সুপরিচিত হাদীস স্কলার আব্দুল্লাহ ইবনে আল সিদ্দীক আল ঘিমারী বুখারী শরীফের নতুন এবং নির্দিষ্ট সংস্করণ বের করার জন্য আল-ফিরাব্রির সংস্করণটি ব্যবহার করেছেন। ইবনে হাজার বারংবার খুশমায়হানির সংস্করণটি তার স্ট্যান্ডার্ড ট্যাক্সট হিসেবে ব্যবহার করেছেন, কিন্তু অন্যান্য সংস্করণও কিছু নির্দিষ্ট গুণের কারণে মাঝে মাঝে ব্যবহার করেছেন আর তার কারণ অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে জানিয়েছেন। এই কাজ করার জন্য তিনি এই ব্যাপারটি পরিষ্কার করেছেন যে এভাবে হাদীস বর্ণনার জন্য তিনি ইজাজা পদ্ধতির মাধ্যমে অনুমোদন প্রাপ্ত।
এই আশ্চর্য্যজনক ব্যাপারটি নিয়ে এখন আর নতুন করে খুব বেশী কিছু বলার নেই। আগের পর্বে এ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল। প্রশ্ন শুধু এটুকুই যে একটা মাত্র বুখারী শরীফের এতগুলো ভার্সন থাকার পরও বুখারী শরীফকে অবিকৃত ভাবা হয় কিভাবে? ইমাম বুখারীর নিজের মূল কপি তো দূরের কথা তার শত শত বছর পরের ছাত্রেদের মূল কপি গুলোরই কোন অস্তিত্ব নেই, তার পরেও বুখারীর হাদীসের এত গুরুত্ব?
যাই হোক এতক্ষণের আলোচনায় এ কথা স্পষ্ট বুঝা যায় যে হাদীস শাস্ত্রে পান্ডিত্য অর্জন করে বা হাদীসের ব্যাখ্যাগ্রন্থ পড়ে হাদীস নিয়ে মনে উত্থিত প্রশ্নের উত্তর তো পাওয়া যাবেইনা বরং সন্দেহ আরও ঘনীভূত হবে। আর মুখে বললেই তো কেউ দুই দিনের মধ্যে হাদীস শাস্ত্রে পান্ডিত্য অর্জন করে ফেলতে পারবেনা, এর জন্য বহু বছরের পড়াশুনা প্রয়োজন, তাই আলেমরা নিশ্চিন্তে হাদীসের পান্ডিত্যের দোহাই দিয়ে যুগ যুগ ধরে হাদীস নিয়ে মানুষের মনে উদয় হওয়া প্রশ্ন ধামাচাপা দিয়ে রাখতে সক্ষম হচ্ছেন। তবে আলেমদের এই শঠতার সুদিন বুঝি ফুরিয়ে এল। কারণ তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে কিছু খুঁজতে হলে কাউকে বিশাল বড় পন্ডিত হতে হয়না। কম্পিউটার আর ইন্টারনেট এর বদান্যতায় একজন সাধারণ মানুষই অল্প সময়ে সার্চ করে প্রাসঙ্গিক সমস্ত হাদীস আর কোরানের আয়াত বের করে ফেলতে পারে। আর কারো হাতের কাছেই যখন একটি বিষয় নিয়ে সমস্ত তথ্য থাকে তখন সবগুলো তথ্য মিলিয়ে সেই বিষয়টি বুঝতে কারোরই কোন অসুবিধা হবার কথা না। অতএব ''আমি হাদীস শাস্ত্রে পন্ডিত নই তাই হাদীস বুঝা আমার কাজ নয়'' ইসলামে এমন অবান্তর ধারণা করার কোনই যৌক্তিকতা নেই। পবিত্র কোরানেই বলা আছে এই কোরান সহজ, সরল ও প্রাঞ্জল। মানুষের বুঝার জন্য কোরানকে সহজ করে নাজিল করা হয়েছে। শুধুমাত্র আলেমরাই দাবী করেন যে কোরান অনেক কঠিন, হাদীস হচ্ছে কোরানের ব্যাখ্যা আর হাদীস ছাড়া কোরান বুঝা সম্ভব না। আবার হাদীস নিয়ে প্রশ্ন উঠলে আলেমদের কথায় হাদীসও অনেক কঠিন হয়ে যায়, আর হাদীসের ব্যাখ্যা ছাড়া হাদীস বুঝা অসম্ভব হয়ে যায়। তবে যাই হোক মানুষ যদি এসব ব্যাপারে সচেতন হয় তখন তাদের এমন সচেতনতার পর কি আলেমরা থেমে যাবে? না, নিজেদের ক্যারিয়ারের স্বার্থেই তারা থামবেনা। এখনই যারা আলেমদের এসব ধোঁকায় না পড়ে হাদীস অস্বীকার করতে চায় তাদের তখন হাদীস বিজ্ঞান আর ইসনাদ এর মাহাত্ত্ব বুঝানো হয়। ইসনাদের ব্যাবহারে হাদীস বিজ্ঞান নাকি এতটাই নিখুঁত যে কোন জাল হাদীসের পক্ষে এখন আর নিজেকে লুকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। পরবর্তী পর্বে এই হাদীস বিজ্ঞান ও ইসনাদ এবং তাদের ত্রুটি নিয়ে আলোচনা করা হবে।
( লেখাটির লেখক আমি নিজে নয়, একটি ব্লগ থেকে নেয়া)

Thursday, June 15, 2017

Résumé of Md. Shahenoor Alam



                                                                    
 Cell # 01827-826052
 E-mail: depu32@gmail.com









Career Summary
¨        Detail- Oriented with Six year’s experience of ‘Territory Sales Manager’ and Ten months sales & marketing with 6 months successfully completes the Diploma in Computer Science. Expertise in preparing Marketing planning, monitoring daily sales force, developing products market, and reporting market activities. To serve in a responsible administrative position at a well-structured organization and successfully apply acquired managerial and interpersonal skills to enhance organizational efficiencies.

Career Object
¨        Because  of  being  young, energetic  and active I want to be  a perfect working  hand of your  organization according to my qualification and ability. I am ready to deliver my knowledge and creativity to build up your organization very exclusive.

Employment History & Experience

Program
i.        Company History & Experience
ii.        Company History & Experience
iii.        Company History & Experience
Company Name
PRAN-RFL GROUP.
Akij Food & Beverage Ltd. (A Unit of Akij Group).
Abul Khair Ceramic Ltd.
Company Location
Pran-RFL Center, 105 Middle Badda, Dhaka-1212
Akij Chamber, 73 Dilkusha C/A, Dhaka - 1000.
D.T.RD Pahartali, Chittagong, Bangladesh.
Department
Sales & Marketing
Sales & marketing.
Sales & marketing.
Position Held
Territory Sales Manager (T.S.M).
Territory Sales Manager (T.S.M).
Sales & marketing.
Company Business
Agriculture Marketing Co. Ltd.
Food (Packaged)/Beverage.
Tiles / Ceramic.
Date of Employment
3rd January, 2017.
10th November, 2010.
5th January, 2009.
Period
From 3rd January, 2017 to Till.
From 10th November, 2010 to 30th November, 2014.
From 5th January, 2009 to 20th November, 2009.

Skills And Capabilities Description
¨        Able to work in a fast-paced environment & under stressed condition.
¨        Systematic in work & self-motivated.
¨        Have passion of working & dealing with people.
¨        Follow-up skills.
¨        Effort works to under pressure.
¨        Monitor daily sales activities by supervising a large sales team.
¨        Build up excellent trade relations with different business partners.
¨        Implement corporate planning & policies in the field level.
¨        Always remain in close contact with the customers and visit the market enormously.
¨        Collect data and analyze the report to help make effective decisions.
¨        Meet sales target and prepare sales forecast.
¨        Work with honesty.

ACADEMIC QUALIFICATION
Sl. No
Program
Major Subject/ Group
Year of passing
Institution
Board/ University
Result/ Division
1
Master of Science
(M.Sc.)
Fisheries
2010
Govt. Bangla College, Mirpur, Dhaka.
National University of Bangladesh
2nd Class

2
Bachelor of Science
(B.Sc. Hon’s)
(4th year Hon’s degree)
Zoology
2005
Govt. Edward College, Pabna.
 National University of Bangladesh
2nd Class
3
Higher Secondary Certificate
Science
2001
Govt. Rangpur College, Rangpur.
Rajshahi.
2nd Division
4
Secondary School Certificate
Science
1997
Moniria High School, Parbatipur, Dinajpur.
Rajshahi.
1st Division

MAJOR COURSES
¨        Bangle & English Language; Introduction to Computer; Mathematics; Chemistry; Physics; Biology; Computer Language; Botany; Zoology; Fisheries.

TRAINING & CERTIFICATIONS
Training Title
Institute
Training Description
Location
Training Duration
Duration
Type of Training
Diploma in Computer Science.
(BCE), Nurul Islam Jubo Unnyan Society.
Basic knowledge about the computer operating like MS-word, MS Excel, MS Access, Power point, V-Basic, Basic-Internet, AOS, Windows-98/XP, Mailing, Adobe Photoshop, Adobe Illustrator.
Rangpur, Bangladesh.
From January , 2010 to June , 2010
6 Month.
Professional.

TRAINING ATTENDED
¨        Seven (7) days training on sales taken by Akij group. (1st October 2010 to 7th October 2010).
¨        Workshop on: Opportunities and challenges for the marketing Graduates in the job market.

CAPABILITIES LANGUAGE PROFICIENCY
¨        Bengali                                                                 : Fluency in speaking, reading, writing and understanding.
¨        English                                                                  : Speaking, reading, writing and fluently in understanding.
¨        Hindi                                                                     : Can Speak & Understand.

COMPUTER & INTERNET SKIL
¨        Basic                                                                : MS Office (MS-Word, MS Excel, MS Outlook, MS Power Point).
¨        Graphics & Windows                                      : Photoshop, Adobe Illustrator CS, Windows-98/XP, Windows 7.
¨        Internet                                                            : E-mail, Internet Browsing, Theory & Download.
¨        Also know about                                            : Computer Hardware & Software and general Maintenances.

ON-LINE PRESENT
E-mail:
depu32@gmail.com
Face book:
Shopno jatra

CAREER AND APPLICATION INFORMATION
¨        Looking For                                                         : Top Level Job               
¨        Available For                                                       : Full Time
¨        Present Salary                                              : TK. 20,000
¨        Expected Salary                                            : TK. 25,000
¨        Preferred Job Category                                                : Marketing/Sales, Agro (Plant/Animal/Fisheries)
¨        Preferred District                                                : Anywhere in Bangladesh.
¨        Preferred Country                                               : India, Malaysia.
¨        Preferred Organization Types                         : Computer Hardware/Network Companies, Audit Firms /Tax   Consultant, Food (Packaged)/Beverage, Agro based firms (incl. Agro Processing/Seed/GM), Fisheries.

PERSONAL DETAILS
¨        Nick Name                                          : Dipu.
¨        Mother's name                                   : Mrs. Shahanaj Begum.         Occupation: House Wife.     
¨        Father's name                                    : Md. Nasar Ali.                      Occupation: Govt. Service.
¨        Gender                                               : Male.
¨        Date of birth                                      : 22nd January 1981.
¨        Nationality                                         : Bangladeshi by birth.
¨        Religion                                             : Islam (Sunni).
¨        Marital states                                     : Unmarried.
¨        National Id                                         : 2727709430100.
¨        Driving License No.                            : GP0005149CL0007.
¨        Address for communication              : Village: - Holdibari rall colony, P.S:- Parbatipur,                                                                                 Upazilla: - Parbatipur, Dist: - Dinajpur, P.O:-5250.
¨        Permanent Address                           : Village: - Kachnapara, P.S:- Koreyabazar, Upazilla: -      Panchbibi, Dist: - Joypurhat and P.O:- 5910.

INFORMATION OF HEALTH
¨        Health Condition                                : Healthy.
¨        Height                                                : 5 ft 5 inch.
¨        Weight                                               : 62 kg.
¨        Blood Group                                      : O+

INTERESTED AND ACTIVCITIES
¨        Learning, Something new, Reading Newspapers, Listening songs, Traveling, Playing cricket, Football.

References
1.  Md. Farukul Islam
Manager-Sales,
Suguna Food and Feed Bangladesh pvt. Ltd. Rajshahi.
Cell # 01729-271 242
E-mail: rony9858@gmail.com

2.   Md. Iqram Hossain
Area Sales Manager,
Abdulmonam limited, Beverage limited.
Al-kallar chor, Commila.
Cell. # 01924-714343
E-mail: ikrambd33@gmail.com



SELF APPRAISAL
I am hardworking, quick learner, adaptive to any environment, smart, honest, trustworthy, self-motivated, highly energetic, believe in teamwork.
       Signature,


 ……………………………………………
Md. Shahenoor Alam

Rev. 2017-06-01