Saturday, September 22, 2018

মানহানির মামলা কীভাবে করবেন ?

ধরুন,
কোনো ব্যক্তি আপনাকে নিয়ে লোকজনের কাছে আজেবাজে মন্তব্য করছেবা কুৎসা রটাচ্ছে। এতে আপনি মানহানির শিকার হলেন। এখন ভাবছেন, আপনি আইনি ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু কীভাবে  আইনি প্রতিকার পাবেন, তা জানেন না। এ ক্ষেত্রে কিছু বিষয় লক্ষ্যণীয়।

মানহানির অভিযোগ এনে ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলা বা মোকদ্দমা করা যায়। ফৌজদারি আদালতে মানহানির মামলা করার ক্ষেত্রে অভিযোগ দায়ের করতে হয়। সে অভিযোগ শুনে আদালত অভিযোগ থাকা ব্যক্তির বিরুদ্ধে সমন জারি করতে পারেন। তবে মানহানির মামলায় সরাসরি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয় না। সমন দেওয়ার পর যদি কোনো ব্যক্তি আদালতে হাজির না হন, সে ক্ষেত্রে বিচারক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন।

দণ্ডবিধির ৪৯৯ ধারায় মানহানি কিসে হবে আর কিসে হবে না,তা বিস্তারিত বলা আছে। এ ধারা অনুসারে যে ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির খ্যাতি বা সুনাম নষ্ট করার উদ্দেশ্যে বা এমন হবে জেনেও উদ্দেশ্যমূলক শব্দাবলি বা চিহ্নাদি বা দৃশ্যমান প্রতীকের সাহায্যে কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে এমনভাবে কোনো নিন্দা প্রণয়ন বা প্রকাশ করে, তাহলে ওই ব্যক্তির মানহানি করেছে বলে ধরা হবে। এমনকি মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে বললেও তা মানহানি হবে। মৃত ব্যক্তির আত্মীয়স্বজন মানহানির অভিযোগ আনতে পারবেন। আইনে এমন কিছু ব্যতিক্রম অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে, যখন কোনো ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির নামে মানহানিকর কিছু বললে, লিখলে বা প্রচার করলেও মানহানি হবে না। যেমন:

১. জনগণের কল্যাণে কারও প্রতি সত্য দোষারোপ করলে মানহানি হবে না।

২. সরকারি কর্মচারীর সরকারি আচরণ সম্পর্কে সৎ বিশ্বাসে অভিমত প্রকাশ করলে তা মানহানির শামিল হবে না।

৩. সরকারি বিষয়-সংশ্লিষ্ট প্রশ্নে কোনো ব্যক্তির আচরণ নিয়ে মত প্রকাশ করলে মানহানি নয়।

৪. আদালতসমূহের কার্যবিবরণী প্রতিবেদন প্রকাশ করা মানহানির অন্তর্ভুক্ত হবে না।

৫. যেকোনো জনসমস্যা সম্পর্কে ও কোনো ব্যক্তির আচরণ সম্পর্কে সৎ বিশ্বাসে অভিমত প্রকাশ করা মানহানির শামিল নয়।

৬. আদালতে সিদ্ধান্তকৃত মামলার দোষ, গুণ বা সাক্ষীদের সম্পর্কে বা অন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আচরণ সম্পর্কে অভিমত মানহানির পর্যায়ে পড়বে না।

৭. গণ-অনুষ্ঠানের অনুষ্ঠানাদি সম্পর্কে কোনো মতামত দেওয়া মানহানি নয়।

৮. কর্তৃত্বসম্পন্ন ব্যক্তির কাছে সৎ বিশ্বাসে কারো সম্পর্কে অভিযোগ করা হলে সেটিও মানহানি হবে না। যেমন: পুলিশের কাছে কারো ব্যাপারে সৎ বিশ্বাসে অভিযোগ।

৯. কোনো ব্যক্তি কর্তৃক তার বা অন্য কারো স্বার্থ রক্ষার্থে দোষারোপ করা মানহানি নয়।

১০. জনকল্যাণার্থে সতর্কতা প্রদানের উদ্দেশ্যে কারো সম্পর্কে কিছু বলা হলে মানহানি হবে না।

দণ্ডবিধির ৫০০ ধারায় মানহানির শাস্তি বর্ণনায় বলা হয়েছে,এই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে দুই বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয়বিধ দণ্ড হতে পারে।

অন্যদিকে দণ্ডবিধির ৫০১ ও ৫০২ ধারা অনুসারে, মানহানিকর বলে পরিচিত বিষয় মুদ্রণ বা খোদাইকরণ সম্পর্কে এবং এর শাস্তি বর্ণিত হয়েছে।

লেখক : আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

Friday, September 14, 2018

ধর্মের উৎপত্তি।

লিখেছেনঃ উত্তর পুরুষ।
পৃথিবীতে ধর্মের কি ভাবে শুরু কিংবা উৎপত্তি হয়েছিল তার ব্যাখ্যা ও ইতিহাস বিস্তর। এনিয়ে শত শত পুস্তক লিখা যাবে। কিন্তু মূল সত্যকে জানতে হলে থাকতে হবে গভীর ও তীক্ষ্ণ অনুমান। থাকতে হবে কল্পনার প্রখর শক্তি। জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেছিলেন { ইমাজিনেশন ইজ মোওর ইমপোরটেন্ট দ্যান নলেইজ } কারণ আজ থেকে হাজার হাজার বৎসর আগে মানুষ যে ‘প্রাকৃতিক পরিবেশে’ বসবাস করতো, সেই পরিবেশটাকে বুঝতে হবে কল্পনা ও অনুমানের কঠিন সত্য দিয়ে। তখন না ছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, না ছিল নির্দিষ্ট কোনো ভাষা, না ছিল উত্তম বাসগৃহ, না ছিল চলাফেরা করার মত উত্তম রাস্তা-ঘাট। যা ছিল তা হলো গোষ্ঠীবদ্ধ ভাবে বসবাসের প্রয়োজনীয়তা, ছিল নিরাপত্তার চরম অভাব, আর ছিল খাদ্য অন্বেষণের জন্য শিকার ও চাষবাসের নানাবিধ প্রচেষ্টা। আধুনিক যুগের মানুষ পৃথিবীর ইতিহাস ও জাগতিক বহুমুখী শিক্ষা থেকে নিঃসন্দেহে বুঝতে পারে “মানুষ জাতির অগ্রগতি ও সভ্যতার ক্রমবিকাশ” ঘটেছে শতাব্দি ও সহস্রাব্দির ধাপে ধাপে। তৎসঙ্গে মানুষের ভাষা ও বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ ঘটেছে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর শতাব্দির চাকায়। এই সভ্যতার ক্রমবিকাশের জন্য কোনো ইশ্বর কিংবা মহাপ্রভু মাটির পৃথিবীতে নেমে এসে প্রকাশ্যে মানুষকে দিয়ে যাননি কোন অলৌকিক ক্ষমতা কিংবা কোনো সংবিধান। মানুষ আদিম যুগ থেকে নিরাপত্তার কারণে ও বাঁচার তাগিদে নানাবিদ প্রচেষ্টা করেছে নিজ বুদ্ধিবলে। এই বুদ্ধি হচ্ছে প্রাকৃতিক। মানুষের এই প্রচেষ্টা ও বুদ্ধির প্রয়োগ আজ পর্যন্ত টিকে আছে অব্যাহত গতিতে। প্রতিকুল পরিবেশে আত্মরক্ষা, শিকার ও স্বার্থ রক্ষার জন্য দুর্বলের উপর আক্রমণ, বুদ্ধির বলে নানাবিধ কৌশল দ্বারা অপরকে পরাজিত করা, ভাষার সুন্দর প্রয়োগ দ্বারা শান্তি , ঐক্য ও ভালবাসা স্থাপন করা, এসমস্ত মানুষ আয়ত্ত্ব করেছে নিজেদের বিবেক বুদ্ধির প্রয়োগ এবং তা থেকে সঞ্চিত অভিজ্ঞতার দ্বারা। আমরা যদি ধর্মের উৎপত্তি বিষয়ে নানা গবেষণা চালাই ও ইতিহাসের পাতা ওল্টাই তা হলে দেখতে পাবো ভয়, বুদ্ধি, স্বপ্ন, ভাষা, এবং কৌশল প্রয়োগের মধ্য দিয়ে ধর্মের উৎপত্তি হয়েছে। এর পেছনে ইশ্বরের কোনো হাত নেই।
মানুষ আদিম কাল থেকে নানাবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হতো। যেমন: ঝড় তুফান, খরা, বন্যা, ভূমিকম্প, ব্জ্রপাত, শিলাবৃষ্টি, ফসলের উপর পঙ্গপালের আক্রমণ এবং নানাবিধ ভয়ানক রোগ ব্যাধি। এসব ছিল মানুষের জন্য অত্যাধিক আতঙ্ক ও জীবন হুমকির ব্যাপার। মানুষ ঐ সমস্ত দুর্যোগ থেকে আত্মরক্ষার জন্য নানাবিধ প্রাকৃতিক শক্তির কাছে প্রকাশ্যে বিনয়ের সাথে আত্মসমর্পন করে কান্নাকাটি করতো এবং খুশি করার জন্য পূজো ও দিতো। প্রধান প্রধান শক্তিগুলো হলো: বিক্ষুব্ধ বাতাস, সাগর,তারপর পাহাড়, চন্দ্র, সূর্য, অন্ধকারের ভূত প্রেত, ভয়ঙ্কর বন্যজন্তু , আগুন ও পানি। একারণে সুদুর অতীক কাল থেকে কোনো কোনো সম্প্রদায় কিংবা কোনো কোনো এলাকায় কল্পিত পানির রাজাকে (বা দেবতাকে) খুশি করার জন্য পানিতে পূজো দেয়ার ব্যবস্থা করে। তাই সাগর, হৃদ, দীঘি ও নদীর জলের মধ্যে সুগন্ধিযুক্ত ফুল ছড়ানো, মিষ্টি ফল বিতরণ করা ছাড়াও উপঢৌকন হিসেবে নানাবিধ অলঙ্কার ও কাপড় চোপড় ইত্যাদি দেয়া হতো। যা আজো পৃথিবীর ভিবিন্ন আদি সমাজ ও বিজ্ঞান শিক্ষায় বঞ্চিত দেশগুলোর আনাচে কানাচে হচ্ছে। এসব ব্যবস্থাপনা শুরু হয় পরিবার ও গোষ্ঠীর ক’জন মিলে, নানাবিধ পরামর্শের পর। এভাবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় বাতাস যখন প্রবল বেগে বইতে শুরু করে তখন আদিম মানুষ বাতাসকে ক্রোধান্বিত না হওয়ার জন্য নানা রকমের ছড়া কাটতে কাটতে বাতাসের মধ্যে ছড়িয়ে দিতো সুগন্ধিফুল, শস্য দানা ইত্যাদি। সূর্য যখন উদয় হয় তখন সমস্ত আঁধার কেটে যায়। অন্তর থেকে দূর হয় বন্যপ্রাণীর আক্রমনের ভয়, ভূত প্রেতের ভয়। শিকার, কাজকর্ম ও চলাফেরা করতে হয় সুবিধে। সূর্যের আলো দ্বারা হয় শীত নিবারণ। অতএব সূর্য হচ্ছে এক বিশাল উপকারি দেবতা। সুতরাং সূর্যকে খুশী না করলে ওটা মাঝে মাঝে রাগ করে বসে। সব কিছু পুড়িয়ে দিতে চায় (খরা) আবার বৃষ্টির সময়ে গর্জন করে (বিদ্যুৎ ও বজ্রপাত দ্বারা) নানা বিপত্তি ঘটায়। অতএব সূর্য দেবতা ভীষণ শক্তিশালী, ওকে খুশ রাখা খুবই জরুরি। এরকম মানসিক ধারণা থেকে সূর্যকে মানুষ নানা ভাবে পূজো দিতে শুরু করে। অনেক আদিম সমপ্রদায় আগুনকে সূর্যের প্রতিনিধি মনে করে অগ্নিপূজা করতো। এভাবে ভয়ের কারণে আত্মরক্ষার তাগিদে শুরু হয়েছে প্রকৃতিপূজা বা ধর্মীয় আচরণ। তদ্রূপ নানা যুক্তি তর্কের মধ্যে শক্তিমান প্রাণী হিসেবে হাতি, সিংহ ও ঈগলকে, আবার উপকারি জন্তু হিসেব গরু ঘোড়া ও ভেড়াকে অনেক আদিম শ্রেণীর মানুষ পূজো দিতে আরম্ভ করে। কোন কোন সম্প্রদায় ধর্মীয় পুণ্যের জন্য এই নিরীহ প্রাণীগুলোর রক্ত মাংস দেব-দেবী কিংবা ইশ্বরের নামে উৎসর্গ করে। এভাবে বিভিন্ন রোগে মানুষ যখন আক্রান্ত হতো তখন সে ভাবতো যে ‘প্রকৃতি’ বা যে ‘প্রাণী’ বেশী শক্তিশালী তার কাছে গিয়ে অনুনয় বিনয় করতে হবে। তার গুণ-কীর্তন করতে হবে। কোন কোন গোষ্ঠীপতিরা ভাবতো নদী বা পানি শক্তিশালী, কেউ ভাবতো আগুন, কেউ ভাবতো সূর্য, কেউ ভাবতো বাতাস। এভাবে একেক শক্তিকে নিজ নিজ বুদ্ধিমত্তার বলে দেয়া হত পূজো। কেউ পূজো দিতে গিয়ে গান, নাচ এবং ছড়া কাটার ও প্রবর্তন করে। আবার কোন কোন গোষ্ঠীর ভক্তরা পূজো দিতে গিয়ে চুপি চুপি ছড়া কাটতো, যাকে আমরা মন্ত্রপাঠ হিসেবে প্রাথমিক ভাবে ধরে নিতে পারি। তারা মনে করতো এতে “শক্তির” অধিকারী অদৃশ্য দেবতা বা রাজা খুশি হয়ে তাদের মঙ্গল করবে বা বিপদ আপদ থেকে মুক্ত করবে। এসব করতে গিয়ে বিভিন্ন এলাকায় বিচ্ছিন্ন ভাবে বসবাসকারী মানবগোষ্ঠি গুলোর মধ্যে পূজোর (ওরশিপ রিচুয়েলের) আচার অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রকম ব্যবধান পরিলক্ষিত হয়। যদিও তাদের মৌলিক উদ্দেশ্য এক।
এভাবে সময়ের ধাপে ধাপে বিভিন্ন গোষ্ঠী বা কওমের মধ্যে তুলনামুলকভাবে কিছু কিছু বুদ্ধিমান লোকের আর্বিভাব হয়। তারা গোষ্ঠী বা কওমের মধ্যে নিজেকে নেতা বা অভিভাবক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। এসব নেতাদের মধ্যে কেউ কেউ ওরসিপ বা পূজো-প্রার্থণার দায়িত্ব একাই নিতো। তারা মুরব্বী বা অভিভাবক হিসেবে নিজেদের কওমের মধ্যে নানাবিধ দাবি খাটাতো। নিজ বুদ্ধি বলে ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চাদের অসুখ বিসুখ, জীন, ভূত ডাইনীদের নজর না লাগার জন্য নানাবিধ পথ্যাদি ও উপায় বাৎলে দিতো। জীবনের অভিজ্ঞতায় ঝড় বৃষ্টি খরা ইত্যাদির ইঙ্গিত ও কিছু কিছু ভবিষ্যদ্বাণী খয়রাত করে গোষ্ঠীর মধ্যে একজন জ্ঞানী ব্যক্তি হিসেবে সম্মান পেতো। এছাড়া বিপদ আপদ না আসার জন্য নানাবিদ তন্ত্র মন্ত্র, পূজো প্রার্থণা এসব ছিল তাদের মৌলিক দায়িত্ব। কোন গোষ্ঠীর সাথে কোন ঝগড়া বিবাদ হলে তার মীমাংশা কিংবা জোর পূর্বক কোন কিছু দখল করতে হলে (যেমন পানির উৎস, ফসলের ভূমিসত্ত্ব ইত্যাদি) তার আদেশ নির্দেশ সবাই মেনে নিত নির্দ্বিধায়। এভাবে যুগ ও সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে এরা হয়ে উঠলো এক শ্রেণীর অঘোষিত “সমাজ সর্দার”। কোনো দেবতার দ্বারা সাহায্য লাভ কিংবা কোনো অপশক্তির বিরুদ্ধে কখন কি ভাবে মোকাবেলা করতে হবে তার দায়ভাগ তাদের উপর গুরু দায়িত্ব হিসেব অর্পিত হলো। বিনিময়ে সেই ব্যক্তি সমাজের নানাবিধ সুযোগ সুবিধাও হাতিয়ে নিতে থাকলো। অতএব বিভিন্ন দৈবশক্তি কিংবা ঐশী শক্তির একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে লোকটি সমাজে এভাবেই একক প্রতিষ্ঠা পেয়ে যেতো। প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর একখানা উপাসনালয় বা দেবালয় প্রতিষ্ঠার জন্য আর কোন বাধা থাকবেনা। কোন কাজে পাপ, কোন কাজে পুণ্য, কোন কাজ না হলে শক্তিমান দেবতা বিপদ দেবেন এবং কি কি কাজে তিনি খুশি হয়ে পুরস্কার দেবেন তার সব অনুশীলন এই দেবালয় থেকে শুরু হলো। কেউ কেউ পাহাড়ের গুহাকে ধ্যানের উপাসনা হিসেবে বেছে নিতেন। এভাবে নিজ বুদ্ধি বলে শুরু হলো আরেকটি নীরব সাম্রাজ্যের জয় যাত্রা। কালক্রমে এই উপাসনালয় বা দেবালয়ের গুরুত্ব বাড়তে থাকে। অবতার নামের সমাজ সর্দারগণ এখন প্রকাশ্যে তাদের মতবাদ প্রকাশ করতে থাকে। কারণ এখন তাদের দলে বিশ্বাসী লোকের সংখ্যা যথেষ্ট। এসব দেবালয়ে কিংবা উপাসনালয়ে এখন সাহায্যকারি কর্মের মানুষ বাড়তে থাকে। বিশেষ করে কুমারী বালিকারা এর মধ্যে প্রধান। তারাও গুরুর আদেশে উপদেশে নানাবিধ সেবা শ্রম দেবে। যে নারী সন্তান পাচ্ছেনা সেও নির্দিষ্ট সময়ে এসে গুরুর পরামর্শ অনুযায়ী নানাবিধ সেবাশ্রম দেবে। তাদের কাজ কর্মের কোন কৈফিয়ত বা জবাবদিহিতা কাউকে দিতে হবেনা। দিতে পারবেনা কেউ কোন অভিযোগ। তারা কেবল উপাসনালয়ের কর্তৃত্ব যার হাতে, তার কাছে এবং অদৃশ্য ইশ্বর কিংবা দেবতাদের কাছে নিজেদের ভুল ত্রুটির কৈফিয়ত দেবে।
যে লোকটি (পুরোহিত, যাযক, মোংক, মোল্লা, ব্রাম্মণ ইত্যাদি) এখন এই দেবালয়ের সর্বেসর্বা, ভবিষ্যতে তার পুত্র প্রপৌত্ররা হবে এর দায়িত্ববান মালিক। যদি উপযুক্ত কেউ না থাকে তবে নিজ গোষ্ঠীর বা আত্মীয়ের মধ্য থেকে কেউ এসে ধরবে এর হাল। এখন কেউ যদি এসে লোকটিকে বলে “ওহে দয়ার ঠাকুর আমি তো ঠিক মতো আরতি যোগে ফুল দিলাম, প্রণাম দিলাম, যজ্ঞ দিলাম তবু কেনো আমার ক্ষেতে ফসল হলোনা ?” লোকটি তখন চোখ বন্ধ করে বলে ” শোনো গো মা, ফুলতো ঠিকই দিয়েছিলে কিন্তু ফুলটিতে কোন এক সময় ঋতুবতী মহিলার স্পর্শে হয়েছে অপবিত্র, এ কারণে ফসল ভাল হয়নি”। এভাবে নিজ বুদ্ধি বলে একটা ত্রুটি বের করে এরা মানুষদের বোকা বানিয়ে রাখতো। কেউ হয়তো এসে বললো আপনি আপনার শক্তিমান গো দেবতাকে বলুন “কেন দশ মাস থেকে আমার গাভীটা ভাল দুধ দিচ্ছেনা ?” একথা শুনে পুরোহিত ভদ্রতা ও সামাজিকতার খাতিরে তার সাথে নানাবিধ আলাপ করতে থাকলো। কথা প্রসঙ্গে পুরোহিত হয়তো বললো, আচ্ছা বাবা তার আগে বল দেখি তোমার পরিবারে কে কে আছে ? তোমার সংসার চলে কি ভাবে ? পরিবারের কে কি করে ? এরকম মামুলী কয়েকটি প্রশ্নের পর পুরোহিত লোকটি বললো “তৃতীয়া নক্ষত্রের রাত্রিতে (না হয় অমাবশ্যার রাত্রিতে) আমি এক নতুন প্রার্থণা বা জপতপ শেষে তোমার গাভী ও দুধের জবাব জেনে নেব।” লোকটি খুশি মনে চলে গেল। কয়দিন পর যখন লোকটি পুণরায় তার গাভীর দুধ সম্পর্কীত জবাবটি জানতে চাইলো তখন পুরোহিত হাসতে হাসতে জবাব দিলেন ‘দেখ বাবা জীবিশ্বরের (জীব জানোয়ারের ইশ্বর) কত দয়া।’ তুমি একে একে তিনটি মেয়ে যখন পেলে, তখন মন থেকে শুধু ছেলে সন্তানের জন্য হাহাকার করেছিলে। দিয়েছিলে পূজো, করেছিলে প্রার্থণা। সে কারণে ইশ্বর তোমার ভাগ্য থেকে দুধের পরিমাণ কমিয়ে দিয়ে বিনিময়ে ছেলে সন্তান করেছেন দান। কারণ তিনি জানেন দুধ অপেক্ষা তোমার ছেলে সন্তানের প্রয়োজন বেশী, সে কারণে তিনি তোমার প্রার্থণা কবুল করেছেন। পুরোহিতের কথা শুনে লোকটি খুশিতে বাগ বাগ হয়ে পরদিন নিয়ে এলো কিছু মূল্যবান উপঢৌকন। এভাবে বিবেক বুদ্ধি প্রয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন কওমের মধ্য থেকে বুদ্ধিমান লোকগুলো ধীরে ধীরে সমাজের মধ্যমণি হয়ে উঠলো। তারা এখন সাধারণ মানুষের আরও সমর্থন পাওয়ার জন্য নানাবিধ চেষ্টার কৌশল চালিয়ে যেতে লাগলো। বিনিময়ে তারা কিছুই চাহেনা। তারা চাহে মানুষের আন্তরিক আশীর্বাদ ও কর্মের আন্তরিক সমর্থন। আর এই সমর্থনটা হচ্ছে তাদের সবচেয়ে বড় মুলধন যা নিরাপত্তরর জন্য এক বিশাল হাতিয়ার। এ উদ্দেশ্যে তারা শোষিত মানুষদের মুক্তির জন্য করেছে নানাবিধ প্রচেষ্টা। অত্যাচারী রাজাদের তারা ভয় দেখিয়েছে পরকালের। অপর দিকে শোষিত মানুষদেরকে বিশ্বাসের ভিত্তিতে ঘটিয়েছে ঐক্য এবং ইশ্বরের দাবি হিসেবে নায্য পাওনার দাবি করেছে শাসকবর্গদের কাছে। এতে অনেক দাবি আদায় হয়েছে। আবার কোথাও তা নিয়ে বেঁধেছে যুদ্ধ। এসব যুদ্ধের ফলে অনেক শাসকদের জ্ঞানচক্ষু খুলেছে, তারা বুঝতে পেরেছে নির্যাতীতেরাও ধর্মের ডাকে ঐক্য স্থাপিত করে মানুষের অধিকার আদায় করতে জানে। যারা অতি মাত্রায় ধূর্ত তারা ‘ধর্মের প্রতিনিধি’ হিসেবে বিলাস বহুল জীবনকে ঘৃণা করেছে। প্রকাশ্যে নারীর সান্নিধ্য কে পাপের চোখে উপেক্ষা করেছে । যার ফলে তারা সাধারণ দাসদের ও শ্রমজীবি মানুষের স্তরে নেমে এসে একাত্মহয়েছে। প্রত্যেক মানুষ পৃথিবীতে তার বংশধর কিংবা কর্মের স্মৃতি অক্ষুন্ন রেখে চিরকাল বেঁচে থাকতে চায়। এটা মানুষের প্রাকৃতিক স্বভাব। এই স্বভাবের ভিত্তিতে ধর্মীয় নেতাগণের প্রবল আকাঙ্খা ও সবুজনক্সা ছিল এরকম যেমন: (ক) একটি ধর্ম প্রতিষ্ঠা করে গেলে চিরজীবন তার নাম অক্ষুন্ন থাকবে (খ) ইশ্বরের গুণকীর্তন করার সাথে তার নিজের যশ খ্যাতির গুণকীর্তন ও করা হবে নিঃসন্দেহে (গ) ধর্মের সমর্থকরা তাকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করবে আজীবন (ঘ) তার নিজের গোষ্ঠীর গৌরব উজ্জ্বল দিক ইতিহাসে অঙ্কিত হবে আর রক্ত পঙ্কিল দিক কালের গহব্বরে হারিয়ে যাবে।
এভাবে গোষ্ঠী কর্তৃক স্বীকৃত (কিংবা স্বঘোষিত) ইশ্বরের প্রতিনিধিরা কালের স্রোতে নিজেদেরকে সমাজসেবী হিসেবে করেছে প্রতিষ্ঠিত। প্রথমে তা করা হয়েছে নিজ এলাকায়, নিজের সমাজে। যেখানে সামাজিক অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলায় ছিল ভরপুর। এই সমাজ সেবা করতে গিয়ে পৃথিবীর মানুষের মাথায় নানাবিধ আইন কানুন বাধ্যতামুলক ভাবে বেধে দেয়া হয়। এটা অবশ্যই একটি গোপনীয় স্বেচ্চাচারিতা। ইশ্বরের নামে নিজের মগজ থেকে তৈরি করা আইন ‘সব সমাজের জন্য’ ‘সব যুগে’ কখন ও উপযোগি হতে পারেনা। এটা মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতার উপরে পরাধীনতার একটি শৃঙ্খল। পৃথিবীর সবকিছু যেমন চলমান, সমাজ ও তেমনি চলমান। সমাজ কখনও স্থবির নয়। হাজার হাজার বৎসরের পুরানো সামাজিক অবস্থার সাথে বর্তমান সামাজিক অবস্থার মিল কখনও এক হয়না। তাই যদি হতো তাহলে মানব সমাজে “সভ্যতার ক্রমবিকাশ” বলে যে শব্দটি আছে এবং ক্রমবিকাশের ধারায় আমরা বর্তমানে যে অবস্থানে পৌচেছি তা কখনও সম্ভব হতো না। সুতরাং ধর্ম সর্বরোগের মহৌষধ হিসেবে ধারণা দেয়া কিংবা ‘কমপ্লিট কোড অব লাইফ’ আখ্যা দিয়ে মানুষকে “নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল” এই প্রবচনটি প্রয়োগ করে মানুষদের বুঝ দেয়া একটি ভুল ধারণা। তাই যদি হয় তাহলে গোটা পৃথিবীর মানুষ কি এত বোকা যে তারা এত আধূনিক শিক্ষা, এত গবেষণা, এত বিশ্ববিদ্যালয়, এত সমাজ তত্ত্ব, এত সংগঠন, এত আইন শাস্ত্র, এত কোর্ট-কাছারী নিয়ে বেহুদা ঘাটাঘাটি করছে ?
ধর্মের ইতিহাস থেকে জানা যায় পৃথিবীতে মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বেশী ধর্মের উৎপত্তি হয়েছিল। এতদ্ব্যতীত ভারতে এবং ইউরোপের গ্রীস ও ইতালীতে ধর্মের প্রবল প্রতাপ ছিল। মধ্য প্রাচ্যের প্রায় প্রতিটি গোত্রেই কেউ না কেউ সময়ের স্রোতে ইশ্বরের প্রতিনিধি হিসেবে আত্ম প্রকাশ করেছে। এর কারণ এবং অনুসন্ধান হিসেবে যে সিদ্ধান্ত অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা যায় তা হলো,’ (১) কয়েক বৎসর পর পর পৃথিবীতে একজন ইশ্বর প্রতিনিধি আসবেন’ এরকম একটি ধারণা মানুষের মনের মধ্যে সর্বদাই বিদ্যমান থাকতো’। (২) ‘মানুষের নিদ্রাজাত স্বপ্ন’। এর দু’টি ব্যাখ্যা আছে। প্রথমটি হলো সেই আদি যুগে মানুষ যখন স্বপ্নের মধ্যে নানাবিধ বিষয়বস্তু দেখতো তখন সে বিশ্বাস করতো ঘটনাটির মধ্যে সে নিজেই জড়িত। সে নিজেই বিভিন্ন যায়গায় ছিল। অথচ সজাগ হয়ে বুঝতে পারে সে তার গুহার মধ্যে অথবা কুড়ে ঘরে ঠিকই শুয়ে আছে। তাহলে সে বাইরে গেল ক্যামনে ? এত কিছু দেখলো ক্যামন করে ? বিষয়টি তৎকালীন আদিম মানুষদের দারুন দুশ্চিন্তায় ফেলে দেয়। তারা তখন ভাবতে থাকে তাহলে মানুষের মধ্যে খুব সম্ভব দু’টি আত্মা আছে। একটি আত্মা রাত্রি বেলা ঘুমের মধ্যে যাওয়া আসা করে, ঘুরে বেড়ায়। আর অপর আত্মাটি সব সময়ে সঙ্গে থাকে। সব সময় যে আত্মাটি থাকে সেটি একবার বেরিয়ে গেলে আর ফেরত আসেনা। অর্থাৎ মানুষের মৃত্যুর সাথে সাথে অদৃশ্যে উদাও হয়ে যায়। মানুষের মৃত্যুকালীন সময়ে মুখ ও বুকের যে অবস্থা হয় এতে অতীতের মানুষ অনুমান করেছিল আত্মা জিনিসটি বুকের ভেতর থাকে। আর মৃত্যুর সময়ে সেটি মুখ দিয়ে অতি কষ্টের সাথে বের হয়। তৎকালে হার্ট বা হৃদযন্ত্রের কার্যক্রম সম্বন্ধে মানুষের উন্নত ধারণা ছিলনা। তৎকালীন আদিম সমাজের শুরু থেকে বুদ্ধিমান যাযক বা পুরোহিত সম্প্রদায় মানুষকে এই ধারণা দিয়ে আসছে যে আত্মার মৃত্যু হয়না। যে ধারণা আজো বহাল তবিয়তে ঠিকে আছে সারা পৃথিবীতে। অতএব যাযক বা পুরোহিত সমপ্রদায় নিজেদের (ঐশ্বরিক) প্রতিনিধিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য বলে বেড়ালো যে পৃথিবীতে তুমি যত কিছু গোপনে কিংবা অন্যায় ভাবে করে থাকো তা সকল দৈব শক্তির অধিকারী ইশ্বর বা ইশ্বরগণ জানেন। এজন্য মৃত্যুর পরে শাস্তি হিসেবে তা তোমার আত্মার উপর আরোপিত হবে। তারা উদাহরণ স্বরূপ স্বপ্নের মধ্যে নানাবিধ কষ্ট পাওয়ার কথা উল্লেখ করেন। কেউ কেউ সেই আত্মা থেকে আবার দেহ সৃষ্টি করে দেহের উপর শাস্তি আরোপ করা হবে বলে নিশ্চয়তা দেন। কেউ কেউ মৃত্যুর পর আত্মা থেকে পুনর্জন্ম লাভ করে নিকৃষ্ট শ্রেণীর পশুতে পরিণত হবার কথা উল্লেখ করেন। কেউ কেউ বলেন সেই আত্মা ভূত প্রেত বা পিশাচ হিসেব পৃথিবীর অন্ধকারে ঘুরে বেড়াবে।
ইসলাম ধর্মের হাদীসে বলা হয়েছে মৃত্যুর পর যখন মানুষকে কবরে রাখা হবে। তারপর আত্মীয় স্বজনগণ চল্লিশ কদম (পদক্ষেপ) দুরে সরে আসার পর, কবরস্থানে দু’জন অদৃশ্য ফেরেশতা এসে সেই মৃত মানুষের ভেতরে রূহ বা আত্মার সংযোজন ঘটাবেন। মৃত মানুষটি তখন জেগে উঠবে এবং ভয়ানক চিৎকার করবে। সেই চিৎকার কেবল মাত্র কিছু পশু পক্ষী ছাড়া কেউ শুনবেনা। তারপর সেই মানুষটিকে তিনটি প্রশ্ন করা হবে। সেই তিনটি প্রশ্নের জবাব যারা দিতে পারবে তারা শান্তির সাথে পুনরায় ঘুমিয়ে পড়বে শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত। আর যারা সঠিক জবাব দিতে পারবেনা তাদের আজাব (শাস্তি) শুরু হয়ে যাবে। সেই আজাব হতে পারে আত্মার উপর কিংবা দেহের উপর। তবে অধিকাংশের মতামত হলো দেহের উপর। এই আজাবের কোন ক্রন্দন বা চিৎকার কোন মানবজাতি শুনতে পাবেনা। এই গল্পের শেষে আমি একজন মৌলভী সাহেবকে হাস্যমুখে বলেছিলাম তাহলে ইসলাম ধর্ম আর্বিভাবের পূর্বে পৃথিবী থেকে যে কোটি কোটি মানুষ মারা গেলো তারা কেউতো এই তিনটি প্রশ্ন সম্পর্কে কোন প্রস্তুতি নিয়ে মারা যায়নি। অতএব তারা নিশ্চয়ই ফেল করবে এবং তাদের অবস্থা তখন কি হবে ? মৌলভী সাহেব তখন জবাব দিয়েছিলেন ‘যেহেতু ইসলাম ধর্ম তখন আসেনি সেজন্য সেই সময়কার ধর্ম অনুযায়ী তাদেরকে প্রশ্ন করা হবে’। এরকম তৈরি করা জবাব দানে তারা সর্বদাই ওস্তাদ। জানিনা পৃথিবীর ইশ্বরের প্রতিনিধিগণ তাদের লোকদের সেই পাঁচটি প্রশ্ন ও জবাবের প্রস্তুতির কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন কিনা ।
‘নিন্দ্রাজাত স্বপ্নের’ দ্বিতীয় ব্যাখ্যাটির প্রতি আমার বিশ্বাস হল এই, মধ্যপ্রাচ্যের লোকেরা প্রবল উষ্ণ আবহাওয়ার জন্য প্রচুর পরিমাণ খেজুর, আঙ্গুর, বেদানা ও এই জাতীয় ফলের রস পান ও ভক্ষণ করতেন। পান করতেন বকরী ও উটের দুধ। এতে নিদ্রা হতো বড়ই গভীর ও স্বপ্নময়। মধ্যপ্রাচ্যে সবুজ গাছ-গাছালি, সবুজ মাঠ প্রান্তর ও নদ নদীর বড় অভাব ছিল। অভাব ছিল পাখির কল-কাকলী ও মেঘ বৃষ্টির। যে কারণে রাত্রিকালিন স্বপ্নের আমেজ ভোরবেলা তাদের মন থেকে হারিয়ে যেতনা। কারণ ওখানে সবুজ দৃশ্যাবলী ও নদ নদীর বদলে বিদ্যমান ছিল গনগনে সূর্যের তপ্ত আকাশ আর নীচে ছিল উত্তপ্ত মরুভূমির বালুরাশি। সুতরাং দিনের বেলাতে ও তারা বিগত রাত্রির স্বপ্নটি নিয়ে ভাববার অবকাশ পেতেন। এই স্বপ্ন কেন দেখলো ? স্বপ্নের রহস্য কি ? তা হলে নিশ্চয়ই কোন অদৃশ্য শক্তি তাকে আভাসে ইঙ্গিতে কিছু বলতে চাইছে। এরকম শত শত প্রশ্ন তার মনকে ভাবিয়ে তুলতো। সে ভাবতো নিশ্চয়ই সেটা অদৃশ্য শক্তির সাথে তার অদৃশ্য আত্মার খেলা। অতএব সেই ব্যক্তিটি মানুষের ভাল মন্দ, বিপদ আপদ ইত্যাদি জাগতিক বিষয় আসয়ের সাথে স্বপ্নের কাল্পনিক অঙ্ক মিলাতে চেষ্টা করে। কিছু কিছু মিলে ও যায়। এতে তার সাহস এবং উৎসাহ উভয়ই বাড়তে থাকে। যার ফলে সে নিজে ‘অদৃশ্য শক্তির প্রতিনিধি হতে যাচ্ছে বলে মনের মধ্যে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করে’। এই বিশ্বাসের ভিত্তিতে এবং তৎকালীন প্রচলিত কিছু কিছু ঔষধ পত্রকে অনুকরণ করে রোগীদের সেবা ও পথ্য বাৎলে দিতে থাকে নিজ বুদ্ধির জোরে। এতে কিছু কিছু কৃতকার্যতা আসে। তার সাথে পানি পড়া, ঝাড় ফুক, এটা ওটা মন্ত্র আওড়িয়ে মানুষের আস্থা অর্জনের জন্য নানাবিধ ফন্দি ফিকিরের চেষ্টাও চলতে থাকে অব্যাহত গতিতে। মাতৃভাষায় কথা বলার মধ্যে বিনয় ও বাকপটুতা তাদেরকে করে তুলে অতি আত্মবিশ্বাসী। ধীরে ধীরে দুর দুরান্ত থেকে মানুষ আসতে থাকে আরোগ্য লাভের আশায়। কেউ আসে চুরির উট বকরী ফিরে পাবার আশায়। সন্তানহীনা নারী আসে সন্তান পাবার কামনায়। কেউ আসে ভাল ফল ও শস্যতে বরকত হবার আশায়। কেউ কেউ আসে ঝগড়া বিবাদের একটা ফয়সালা করার জন্য মধ্যস্ততা হিসেবে ভূমিকা নেয়ার। কেউ কেউ আসে বুদ্ধি পরামর্শ নেয়ার প্রয়োজনীয়তায়। এভাবে লোকটি যখন জনপ্রিয় হতে শুরু করে তখন একদিন সুযোগ বুঝে নিজেকে অদৃশ্য শক্তির প্রতিনিধি হিসেবে ঘোষণা দিয়ে দেয়। শুরু হয় তার কথায় ও কাজে কৌশল প্রয়োগের নানাবিধ সুযোগ ও সতর্কতা। তখন নিজ কওমের বা গোষ্ঠীর লোকেরা গর্বিত হয়। তাকে তখন সকল প্রকার সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। এভাবে ধর্মের প্রতিনিধি হিসেবে একজন মানুষের গোড়া পত্তন হয় পৃথিবীর বিভিন্ন সমাজে।
ইতিহাস আমাদের সাক্ষী দেয় হাজার হাজার কাল ও শতাব্দীর সিড়ি বেয়ে বিভিন্ন সমাজে বিভিন্ন ধর্মের উৎপত্তি হয়েছে মানুষের ভয়, কৌতুহল ও আপন অস্তিত্বকে জানার প্রয়োজনে। ইশ্বরের প্রয়োজনে নয়। “বিজ্ঞান ও ধর্ম, সংঘাত নাকি সমন্বয়” এর একটি সিদ্ধান্তে যাবার আগে আর ও কিছু কথা না বলে সিদ্ধান্তে যেতে পারছিনা । এ জন্য প্রিয় পাঠকদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটিয়ে সামান্য বিরক্ত করবো বলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। কথা হল পৃথিবীতে এত গবেষণাগার, এত বিশ্ববিদ্যালয়, এত আবিষ্কার, এত আমূল পরিবর্তন সাধিত হওয়া সত্ত্বেও অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস করে আদম ও ইভ নামক দু’জন মানুষের স্বর্গ বিচ্যুতি থেকে পৃথিবীতে মানুষ ও ধর্মের উৎপত্তি হয়েছে। কিন্তু এর পেছনে বিজ্ঞান ভিত্তিক প্রমাণ কই ? এতে এটাই প্রমাণিত হয় পৃথিবীর মানুষ এখনও বিজ্ঞান বুঝেনা। ইতিহাস ও বিজ্ঞানের আবিস্কারগুলোকে তারা মানুষের এক ধরণের কারসাজি হিসেবে বিশ্বাস করে। এই কারসাজি দ্বারা তারা বাণিজ্যিক পণ্য উৎপাদন করে মুনাফায় ধন-দৌলত আয়ত্ব করে। তারা আরও বিশ্বাস করে এসমস্ত তথ্য ও আবিষ্কারের সাথে ইশ্বরের কিংবা পরলৌকিকতার কোন সম্পর্ক নেই। যদি ওগুলোকে বিশ্বাস করা হয় তাহলে সে নাস্তিক হয়ে যাবে না হয় মুরতাদ হয়ে যাবে। বিজ্ঞান মানুষকে পৃথিবীতে শোষণ, অত্যাচার ও যু্দ্ধ বাধিয়ে অশান্তি সৃষ্টি করে। বিজ্ঞান ইহ জগতে ভোগ-বিলাসের মদতদানকারী এক বিশাল দানব। কিন্তু ধর্মের উৎপত্তি প্রচার ও বিশ্বাস নিয়ে শুরু থেকেই যে রক্তপাত ও সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করে মানুষে মানুষে হিংসা বিদ্বেষ ও প্রতিপ্রত্তি তথা জয়লাভের নেশায় (ধর্মীয় আইন বাস্তবায়ন করার জন্য) রক্তপাত চালিয়ে যাচ্ছে এই সত্যটুকু তারা মানতে নারাজ। এই সত্যকে তারা দেখেও দেখেনা, শুধুই অপর পক্ষকে দোষারোপ করে যাওয়াই তাদের অনড় সিদ্ধান্ত । বিজ্ঞানের এই বিশাল অবদান মানব সমাজের জন্য রোগ ক্ষুধা ও উন্নত জীবন যাপনের যে কত বড় আর্শীবাদ তা তারা এখনও বুঝতে চান না। একটা ছাতা কিংবা একটা তুচ্ছ সেলাই করার সুচ পর্যন্ত ধর্ম প্রচারকদের দ্বারা তৈরি হয়নি সে কথাটা তারা হৃদয়ঙ্গম করতে পারেনা। ধর্মীয় গল্পগুলো বা অলৌকিক কেচ্ছা কাহিনীগুলো সব সময়েই যে অতিরঞ্জিত অর্থাৎ তিলকে তাল করা কিংবা মানুষকে বিশ্বাসী বানানোর জন্য খোঁড়া যুক্তির সমাবেশ তা তাদেরকে বুঝানো যায়না। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য বা তাদের মনোবল ভেঙ্গে দেয়ার জন্য হয়তো এসব গল্পের সৃষ্টি হতে পারে, তা তাদের কিছুতেই বোধগম্য করানো যায়না। হাতের লাঠি সাপ হয়ে যাওয়া, বিশাল তিমি মাছের পেটে বেঁচে থাকা, মৃত মানুষকে জীবিত করে তুলা, সাত আসমান ভ্রমন ইত্যাদি গল্প গুলোর সাথে বিজ্ঞানের যে ছাত্র বায়োলজী, ক্যামেষ্ট্রি ও ফিজিক্স পুঙ্খানুপুঙ্খু ভাবে বুঝতে পারে, সেই ছাত্রটিও তার বিবেক থেকে কখনও এসব বিশ্বাস করতে পারেনা। এসবে বিশ্বাসী না হলে সমাজে এবং পরিবারে তার খাদ্য ও বাসস্থান মিলবেনা। একারণেই সে তা বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়। তা ছাড়া বাল্যকাল থেকে ধর্মীয় প্রভাবের কারণে সে মগজ ধুলাইয়ের শিকার। নিরপেক্ষ চিন্তা ভাবনা নিয়ে এসব ধর্মীয় গল্পের সমালোচনা লিখলে এটা “ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত” অপবাদ দিয়ে রক্ষণশীলরা মহা হুলস্তুল কাণ্ড ঘটাতে চান। ধর্মের ব্যাপারে সাধারণ মানুষের চিন্তা ভাবনা সর্বদাই দুর্বল এবং পরনির্ভরশীল। তাদের নিজস্ব স্বাধীন যুক্তি সর্বদাই পাপের ভয়ে হয় মৃত নয়তো ম্রিয়মান। সেই যে হাজার হাজার বৎসর আগে ধর্মীয় অবতারগণ যা বলেছিলেন সেটাই তারা আচ্ছা করে গাঁট বেধে মনের ভেতর পুঁতে রেখেছেন। সেই গাঁট তারা কখনও খুলে দেখতে চান না ঈমান নষ্ট হওয়ার ভয়ে। ধর্মীয় কেতাবগুলোতে উল্লেখ আছে পৃথিবীর প্রথম মানুষ আদমকে সৃষ্টি করার পূর্বে স্বয়ং বিধাতা তার ফেরেশতাগণের সাথে যুক্তি করেছিলেন পৃথিবীতে মানুষ পাঠানো হবে কি হবে না। তীক্ষ্ণ বুদ্ধিতে বিষয়টি আলোচনা করলে দেখা যাবে ওখানে স্বয়ং বিধাতা ফেরেশতাগণের মতামত নিয়ে ‘গণতন্ত্রের’ সুচনা করেছিলেন। অথচ পৃথিবীতে তারা গণতন্ত্র মানতে চান না। তারা ধর্মীয় কিতাবের একনায়কতন্ত্রী আইন কায়েম করতে চান। ধর্মীয় উক্তি বা হাদীসগুলোকে বিধাতার আইন হিসেবে মেনে নিয়ে মানুষের স্বাধীনতা ও মানুষের সময় এ দুটো কে নির্মূল করতে অতিশয় উৎসাহী। নিরপেক্ষ মনোভাব নিয়ে বলছি কোন দেশের গণতন্ত্রের অনুকরণ নয়, বরং যা একটি দেশের মানুষের জন্য কল্যাণকর তার উপর জনগণের অধিকাংশের মতামতে বিল পাশ করে যদি আইন তৈরি হয় তবে সেটি ধর্মীয় আইনের চেয়ে উত্তম হবেনা কেন ? এতে কি আল্লাহর মহা ক্ষতি হয়ে যাবে ? বিষয়টি আমি পাঠক সমাজকে বিবেচনা করতে অনুরোধ করি। উপরোক্ত নিবন্ধের আলোচনা শেষে আমি এটা বলতে চাই বিজ্ঞান পরীক্ষা নিরীক্ষার যুক্তি প্রমাণে ও বাস্তববাদিতায় প্রতিষ্ঠিত। কোন কিছু মিথ্যা প্রমাণিত হলে বিজ্ঞান ও সেটাকে মেনে নেয়। তার পূর্ব পরীক্ষিত সত্যকে বাতিল ঘোষণা দিতে রাজী থাকে। জোর পূর্বক মেনে নেয়ার জন্য বিজ্ঞান মানুষের মুণ্ড কিংবা রগ কাটার আদেশ জারি করেনা। আর ধর্ম জীবন যুক্তির কল্পনা ও অদৃশ্যের বিশ্বাস নিয়ে প্রতিষ্ঠিত। ধর্ম নগদ অপেক্ষা বাকিতে অধিক বিশ্বাসী । সুতরাং এ দুয়ের সমন্বয় সাধন একটি কঠিন ব্যাপার। তবে আদব কায়দা, শ্রদ্ধা, সম্মান, সৎ ব্যবহার, ক্ষমা, মানবতা ইত্যাদি নীতিশাস্ত্রের ক্ষেত্রে (এথিক্স) বিষয়গুলো যে কোন প্রচলিত সামাজিক আচরণের উত্তম দিক হিসেবে বিবেচিত ও গ্রহণ যোগ্য। এসব উত্তম আচরণগুলো পৃথিবীর সকল আদি-গোষ্ঠীতেই কম বেশি দেখা যায়, যা পরবর্তীতে ধর্ম প্রচারকগণ ধর্মের মধ্যে টেনে নিয়ে ধর্মকে মজবুত করেছেন।

এই যদি হয় ইসলামের আদর্শবান তবে!

মানব জাতির শ্রেষ্ট মানব মহানবী হযরত মোহাম্মদ এর চরিত্র ফুলের মত পবিত্র সেটাই আমরা জানি, প্রতিটি মুসলমান তাই জানে বা জন্মের পর থেকে জেনে এসেছে।প্রতিটি মুসলমান জন্মের পর জ্ঞান হওয়া থেকে শুরু করে শুনে এসেছে, মোহাম্মদ অতীব সৎ, অতীব দয়ালু, অতীব মহৎ, অতীব ন্যায় পরায়ন ইত্যাদি। এর বাইরে কখনই তারা শোনেনি যে মোহাম্মদ একজন লুটেরা/ডাকাত বা নারী লোলুপ বা কামার্ত বা খুনী বা ক্ষমতা লোভী হতে পারে।এসব হতে পারা তো দুরের কথা- এসব হওয়ার কল্পনাও কোন মুসলমান করতে পারে না, কারন যদি করে তাহলে তার জন্য জাহান্নামের কঠিন আগুন অপেক্ষা করবে। সুতরাং কার এমন বুকের পাটা যে সে আল্লাহর নবী মোহাম্মদের সম্পর্কে এমন ধারনা পোষণ করবে ? কারন কোরানের আল্লাহ আর মোহাম্মদ সে তো একই ব্যাক্তি। সুতরাং সঙ্গত কারনে এটা মনে হয় যে মোহাম্মদ সর্বপ্রথম যে বিষয়টির আশ্রয় নিয়েছেন তা হলো প্রতারনা ও মিথ্যার। অথচ ইসলামি বিশ্বে তিনি হলেন আল আমীন বা মহা সৎ লোক।তিনি সর্বপ্রথমেই যে অসত্যের আশ্রয় নিয়েছেন তা হলো নিজের বানীকে আল্লাহর বানী হিসাবে চালিয়ে দিয়ে আরবদেরকে প্রতারনা করেছেন ও তাদেরকে বোকা বানিয়েছেন।বিষয়টিকে এবার একে একে বিবৃত করা যাক।
মোহাম্মদ ও আল্লাহ যে একই ব্যাক্তি তা পরিস্কার হয় নিচের আয়াত সমূহে:
যে কেউ আল্লাহ ও তার রসুলের আদেশ মত চলে তিনি তাকে জান্নাত সমূহে প্রবেশ করাবেন যেগুলোর তলা দিয়ে স্রোতস্বিনী প্রবাহিত হবে। ০৪:১৩
যে কেউ আল্লাহ ও তার রসুলের অবাধ্যতা করে এবং তার সীমা অতিক্রম করে, তিনি তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন যেখানে সে চিরকাল থাকবে। তার জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি। ০৪: ১৪
উপরোক্ত আয়াত থেকে পরিষ্কার ভাবে বোঝা যাচ্ছে আল্লাহ ও তার রসুলের আদেশ সমার্থক। তার অর্থ আল্লাহ ও তার রসুল একই ব্যাক্তি।
কোরান যদিও বলছে আল্লাহ এর সাথে কাউকে শরিক করা যাবে না, কিন্তু স্বয়ং আল্লাহ তো মোহাম্মদের রূপ নিয়ে দুনিয়াতে আসতে পারে,আর আল্লাহর জন্য তা খুবই সম্ভব,সেক্ষেত্রে আল্লাহর সাথে কারো শরিক করাও হয় না। কেন জানি মুসলমানরা সেটাকেও তেমন একটা আমল দেয় না, বোধ হয় তা হলে তা হিন্দুদের অবতার তত্ত্বের সাথে মিলে যাবে এই ভয়ে।কিন্তু যে কেউ একটু মন দিয়ে খোলা দৃষ্টি দিয়ে পড়লেই বুঝতে পারবে যে , কোরানের কথাগুলো স্রেফ মোহাম্মদের নিজের কথা। কোরানের কথা যে খোদ মোহাম্মদের নিজের কথা তা বুঝতে কোরানের নিচের আয়াতগুলো দেখা যেতে পারে:
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুনাময় অতি দয়ালূ । ০১:০১
কথাগুলো আল্লার হলে, আল্লাহ নিজেই নিজের নামে শুরু করতেন না ।
আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি ও তোমার সাহায্য কামনা করি। ০১:০৫
কথাগুলো আল্লাহর হলে আল্লাহ নিজেই নিজের ইবাদত করবেন না।
এখানে প্রশ্ন আসে , কে শুরু করছে? কারা ইবাদত করে ? যদি ধরা হয় এগুলো মানুষকে লক্ষ্য করে বলা হচ্ছে তাহলে সঠিক বাক্যগুলো এরকম হলেই তা বরং আল্লাহর কথা হতো-
শুরু কর আমার( আল্লাহর) নামে, আমি পরম করুনাময়, অতি দয়ালূ।
তোমরা একমাত্র আমারই ইবাদত কর ও আমার সাহায্য কামনা কর।
এ প্রসঙ্গে হিন্দুদের কাছে পবিত্র গীতার কথা উল্লেখ করা যায়। হিন্দুদের বিশ্বাস গীতার বানী হলো স্বয়ং তাদের ভগবান তথা কৃষ্ণের নিজের বানী। শ্রী কৃষ্ণকে তারা স্বয়ং ভগবান বলে বিশ্বাস করে যিনি মানুষ রূপে এ পৃথিবীতে অবতরন করেছিলেন পাপীদেরকে শাস্তি দিতে ও সাধুদেরকে রক্ষা করতে। গীতার দু একটি শ্লোক নিচে দেখা যাক:
হে ধনঞ্জয়, আমা অপেক্ষা শ্রেষ্ট পরম তত্ত্ব আর কিছু নেই।সূত্রে যেমন মনি সমূহ গাথা থাকে, ঠিক তেমনি ভাবে জগতের সবকিছু আমার মধ্যে বিরাজ করছে। ০৭:০৭
হে অর্জুন, আমি ভুত, ভবিষ্যৎ ও বর্তমানকে জানি। কিন্তু আমাকে কেহই জানে না। আমি সর্বজ্ঞ, আমি কোন মায়ার অধীন নহি, কারন আমি মায়াধীশ। কিন্তু জীব মায়ার অধীন তাই তারা অজ্ঞ। কেবল আমার অনুগৃহীত ভক্তগনই আমার মায়াকে অতিক্রম করিয়া আমাকে জানিতে পারে। ০৭:২৬
লক্ষ্যনীয় এখানে বক্তা যেহেতু স্বয়ং ভগবান শ্রী কৃষ্ণ তাই তিনি সর্বদা নিজেকে প্রথম পুরুষ অর্থাৎ আমি , আমাকে এ সর্বনাম পদ দিয়ে প্রকাশ করছেন। শ্রী কৃষ্ণ তার শিষ্য অর্জুনকে উপদেশ দিচ্ছেন আর সেই উপদেশ বানী সমূহের সমাহার হলো গীতা।অথচ কোরানের বানী খোদ আল্লাহর বানী হওয়া সত্ত্বেও তার সব বাক্য এরকম প্রথম পুরুষ তথা আমি, আমাকে এ সর্বনাম পদ দিয়ে প্রকাশ করেন নি।কোথাও কোথাও যদিও সেভাবে প্রকাশ করেছেন, যেমন-
সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরন রাখ, আমিও তোমাদেরকে স্মরন রাখব এবং আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর, অকৃতজ্ঞ হইও না। ০২: ১৫২
অবশ্যই আমি তোমাদেরকে কিছুটা পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, জান ও মালের ক্ষতি এবং ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। ০২: ১৫৫
যা থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়, নিরক্ষর মোহাম্মদ আসলে নিজের বাক্যকে আল্লাহর বানী বলে চালাতে গিয়ে এ ভুলটি করে ফেলেছেন।বাক্য গঠন সম্পর্কে তার কোন সম্যক ধারনা ছিল না, যেমন খুশী তার নিজের বানানো কিচ্ছা বলে গেছেন, আর সাহাবীরা যাএকটু শিক্ষিত ছিল তারা শুনে তা তাদের মত লিখে রেখেছে বাক্যগুলোকে কিছুটা পরিমার্জন করে। কিন্তু মোহাম্মদের বর্ননা করা বাক্যগুলোর সংখ্যা ও ব্যকরনগত অসাম্যঞ্জস্যতা এত বেশী ছিল যে সাহাবীরা সব গুলোকে তাদের মত লিখতে পারে নি।।অনেকগুলোই তারা মোহাম্মদ হুবহু যেমন বলেছিল সেরকম ভাবেই লিখে রেখে গেছে আর পরবর্তীতে সেরকম ভাবেই আমাদের কাছে এসেছে।কিন্তু তখন এসব নিয়ে তেমন কেউ তখন চ্যলেঞ্জ করেনি, করার হিম্মতও কেউ দেখায়নি।দেখালে গর্দান যাওয়ার ভয় ছিল। নিচের আয়াতটি লক্ষ্য করা যাক-
যে কেউ আল্লাহ ও তার রসুলের অবাধ্যতা করে এবং তার সীমা অতিক্রম করে, তিনি তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন যেখানে সে চিরকাল থাকবে। তার জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি। ০৪: ১৪
অথচ ঠিক এর পরের আয়াতটি হলো –
আর তোমরা তোমাদের নারীদের মধ্যে যারা ব্যাভিচারিনী তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের মধ্য থেকে চারজনকে সাক্ষী হিসাবে হাজির কর, অত:পর তারা যদি সাক্ষী প্রদান করে তাহলে সংশ্লিষ্টদেরকে গৃহে আবদ্ধ রাখ যে পর্যন্ত তাদের মৃত্যু না হয় অথবা আল্লাহ তাদের জন্য ভিন্ন কোন পথ না প্রদর্শন করেন। ০৪:১৫
০৪:১৪ যদি ঠিক ০৪:১৫ আয়াতের ব্যকরনগত বাক্য রীতি অনুসরন করত তাহলে তা হতো নিম্নরূপ:
যে কেউ আমার(আল্লাহ) ও আমার রসুলের অবাধ্যতা করে এবং তার সীমা অতিক্রম করে, আমি তাকে আগুনে প্রবেশ করাব যেখানে সে চিরকাল থাকবে। তার জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি।
কিন্তু তার পরেও ০৪: ১৫ আয়াতে কিছুটা গোলমাল করে ফেলেছে। বলছে- অথবা আল্লাহ তাদের জন্য ভিন্ন কোন পথ না প্রদর্শন করেন। এখানে আল্লাহ স্বয়ং বক্তা হওয়া সত্ত্বেও হঠাৎ করে নিজেকে তৃতীয় পুরুষ হিসাবে উল্লেখ করছেন যা ব্যকরনগত ভুল।আল্লাহর বক্তব্য হলে এটা হতো এরকম – অথবা আমি তাদের জন্য ভিন্ন কোন পথ না প্রদর্শন করি। অর্থাৎ আল্লাহ নিজেকে তৃতীয় পুরুষ রূপে উল্লেখ না করে প্রথম পুরুষ রূপে উল্লেখ করতেন।
আমি তাদের পেছনে মরিয়ম তনয় ইসাকে প্রেরন করিয়াছি। তিনি পূর্ববর্তী গ্রন্থ তাওরাতের সত্যায়নকারী ছিলেন। ০৫: ৪৬
আল্লাহ পরিস্কার ভাবে বলছেন- আমি, অর্থাৎ প্রথম পুরুষে নিজেকে বর্ননা করছেন। অথচ ঠিক এর পরের আয়াতটি হলো –
ইঞ্জিলের অধিকারীদের উচিৎ আল্লাহ তাতে যা অবতীর্ন করেছেন সে অনুযায়ী ফয়সালা করা। যারা আল্লাহ যা অবতীর্ন করেছেন সে অনুযায়ী ফয়সালা করে না, তারা পাপাচারী। ০৫: ৪৭
আল্লাহর বানী হলে আয়াতটি হতো এরকম-
ইঞ্জিলের অধিকারীদের উচিৎ আমি তাতে যা অবতীর্ন করেছি সে অনুযায়ী ফয়সালা করা। যারা আমি যা অবতীর্ন করেছি সে অনুযায়ী ফয়সালা করে না , তারা পাপাচারী।
আর একটি আয়াত-
হে মুমিন গন, তোমরা ইহুদি ও খৃষ্টানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহন করো না। তারা একে অপরের বন্ধু।তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেমদের পথ প্রদর্শন করেন না।০৫:৫১
আয়াতের প্রথম অংশটি আল্লাহর বানী বলে মনে হলেও আল্লাহ জালেমদের পথ প্রদর্শন করেন না– এ অংশটুকুকে তা মনে হয় না।এটা যদি এরকম হতো- আমি জালেমদের পথ প্রদর্শন করি না-তাহলে তা আল্লাহর সরাসরি বানী মনে হতো।গোটা কোরানে এরকম উদ্ভট ব্যকরনগত ভুলের ছড়াছড়ি। যে কেউ একটু দিল মন খোলা রেখে পড়লে তা পরিস্কার বুঝতে পারবে। তবে যাদের হৃদয়ে সীল মারা তারা বুঝতে পারবে না। এ বিষয়ে দু একজনের সাথে আলাপ করে দেখেছি তাদের যুক্তি হলো- আরবী ব্যকরনে নাকি এ ধরনের বাক্যরীতি সিদ্ধ। অর্থাৎ বক্তা নিজেকে প্রথম পুরুষ বা দ্বিতীয় পুরুষ বা তৃতীয় পুরুষ যে কোন ভাবেই প্রকাশ করতে পারে।আরও গভীর ভাবে আলাপ করতে গিয়ে শুনেছি আরও অদ্ভুত কথা। তা হলো- আরবী ব্যকরন তারা অনুসরন করে কোরানের ভিত্তিতে অর্থাৎ কোরানে যে রকমভাবে আরবী ব্যকরনকে ব্যবহার করা হয়েছে, সেটাই শুদ্ধ আরবী ব্যকরন রীতি। কোরানকে আল্লাহর বানী প্রমান করতে গিয়ে এক শ্রেনীর অন্ধ মানুষ নিরক্ষর মোহাম্মদের উদ্ভট কথা বার্তাকেই আদর্শ ব্যকরন রীতি ধরে একটা ভাষার আদি ও অকৃত্রিম ব্যকরনের রীতি নীতিকেই বিসর্জন দিয়ে ফেলেছে।
মুসলমানদের কাছে পৌত্তলিক হিসাবে আখ্যায়িত হিন্দুদের কিতাব গীতায়ও কিন্তু এ ধরনের অসামঞ্জস্যতা নেই অর্থাৎ বাক্য গঠনে ব্যকরনগত ভ্রান্তি নেই। এর কারনও সহজ বোধ্য। তা হলো- গীতার রচয়িতারা ছিল সেই প্রাচীনকালের ভারতের উচ্চ শ্রেনীর শিক্ষিত সম্প্রদায়।তারা ব্যকরণে ছিল বিশেষ পারদর্শী।যে কারনে তাদের রচনায় আর যাই হোক ব্যকরণগত ভুল ছিল না।পক্ষান্তরে,মোহাম্মদ নিজে ছিল অশিক্ষিত, নিরক্ষর , ব্যকরণ কি জিনিস তাই তার জানা ছিল না। ব্যকরণ না জানলেও কিচ্ছা কাহিনী বলতে তো কোন অসুবিধা ছিল না।তবে তা বলতে গেলে ব্যকরণ সঠিক না হওয়ার সম্ভাবনাই অধিক আর তারই প্রমান ভুরি ভুরি তথাকথিত আল্লাহর কিতাব কোরানে। যেটুকু সঠিক বাক্য বিন্যাস আমরা কোরানে দেখি তার কৃতিত্ব মোহাম্মদের নয়, বরং কিছুটা শিক্ষিত কতিপয় সাহাবীদের। তারাই যতটুকু পারা যায় শুদ্ধ ভাবে মোহাম্মদের বলা কাহিনী কিচ্ছা গুলোকে মুখস্থ করে রেখেছিল বা কাঠ চামড়াতে লিখে রেখেছিল।আর সবাই জানে যে কোরান সংকলিত হয়েছিল মোহাম্মদের কালে নয়, তৃতীয় খলিফা ওসমানের কালে। এটাও সবাই জানে যে , ওসমানের সময় কালে ইসলামী সাম্রাজ্য আরবের পুরো জায়গাতে ছড়িয়ে পড়েছিল কিন্তু সমস্যা হয়েছিল, বিভিন্ন যায়গাতে মানুষ বিভিন্নভাবে কোরান পাঠ করত।এক অঞ্চলের কোরানের সাথে অন্য অঞ্চলের কোরানের মিল ছিল না। যে কারনে কোরানে আল্লাহ নিজের কোরান নিজেই হেফাজত করবেন বলে হুংকার ছাড়ার ( আমি নিজে কোরান অবতারন করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।১৫:০৯) পরেও অবশেষে সে কাজটা ওসমানকেই করতে হয়।কারন ততদিনে যার যার মত কোরান পাঠ শুরু হয়ে গেছিল।তা করতে গিয়ে যে কাজটি তিনি করেন তা হলো- কতিপয় ব্যাক্তি নিয়ে গঠিত কমিটি তাদের পছন্দমত কোরানের আয়াতগুলো সংকলন করেন ও কোরানের বাকী কপি সমূহ পুড়িয়ে ধ্বংস করে ফেলেন।আর সে সংকলনের সময় তারা হুবহু মোহাম্মদের কাছ থেকে পাওয়া কোরানের বানী সংরক্ষন করেছিল তা মনে করার কোন সংগত কারন নেই। তা করলে কোরানে আরও অসংখ্য গাজাখুরী তথ্য ও ব্যকরণগত ভ্রান্তি খুজে পাওয়া যেত।যারা কোরান সংকলন কমিটিতে ছিল তারা মোটামুটিভাবে সেখানকার সেকালের শিক্ষিত মানুষ ছিল। যার ফলে তারা অনেকটাই পরিমার্জিত আকারে কোরান সংকলন করেছে তা বোঝাই যায়।বিষয়টি যে এরকম তা বোঝা যায় নিচের হাদিসটিতে:
আবু আনাস বিন মালিক বর্নিত- যখন সিরিয়া ও ইরাকের লোকেরা আজারবাইজান ও আরমেনিয়া বিজয়ের জন্য যুদ্ধ করছিল তখন হুদায়ফিয়া বিন আল ইয়ামান উসমানের নিকট আসল। হুদায়ফিয়া একারনে ভীত ছিল যে সিরিয়া ও ইরাকের লোকেরা ভিন্ন ভাব ও উচ্চারনে কোরান পাঠ করত।তাই সে উসমানের নিকট বলল- হে বিশ্বাসীদের প্রধান,কিতাবকে বিভক্ত করার আগেই মুসলমান জাতিকে রক্ষা করুন, যেমনটা ইহুদি ও খৃষ্টানরা তাদের কিতাবকে পূর্বে বিভক্ত করেছিল।সুতরাং উসমান হাফসার নিকট কোরানের আসল কপি চেয়ে পাঠালেন যাতে করে তা থেকে বেশ কিছু কপি তৈরী করা যায়।হাফসা সেটা উসমানের কাছে পাঠালে উসমান যায়েদ বিন তাবিতকে প্রধান করে আব্দুল্লাহ বিন আয-যুবায়ের, সাইদ বিন আল আস এবং আব্দুর রহমান বিন হারিথ বিন হিসাম এ কয়জনের এক কমিটি করে দিয়ে কোরান সংকলন করতে আদেশ করলেন। তিনি আরও বললেন- যদি যায়েদ বিন তাবিত এর সাথে কোন বিষয়ে ঐকমত্য না হয়,তাহলে সেটা যেন কুরাইশ কথ্য রীতি অনুযায়ী লেখা হয় কারন কোরান কুরাইশ এ রীতিতেই প্রকাশ হয়েছিল।তারা সেভাবেই কোরান সংকলন করেছিল ও আসল কপি হাফসার নিকট পুনরায় ফেরত পাঠানো হয়েছিল। অত:পর এ সংকলিত কপির এক খন্ড করে প্রতিটি প্রদেশে পাঠান হয়েছিল এবং বাকী যেসব পান্ডুলিপি যা আংশিক বা সম্পুর্ন বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন জিনিসে লিখিত ছিল তা সব পুড়িয়ে ফেলার আদেশ দেন উসমান।যায়েদ বিন তাবিত আরও বলেন- যখন তিনি কোরানের কপি তৈরী করছিলেন তখন সূরা আহযাবের একটা আয়াত হারিয়ে ফেলেছিলেন যা তিনি নবীকে বলতে শুনেছেন। তখন সেটার খোজ শুরু হয় এবং সেটা খুজাইমা বিন তাবিত বিন আল আনসারীর কাছে পাওয়া যায় ( আয়াতটি: মুমিনদের মধ্যে কতক তাদের ওয়াদা পূর্ন করেছে।তাদের কতক মারা গেছে,কতক এখনও অপেক্ষা করছে।তা বোঝা যায় নিচের হাদিসটিতে:
আবু আনাস বিন মালিক বর্নিত- যখন সিরিয়া ও ইরাকের লোকেরা আজারবাইজান ও আরমেনিয়া বিজয়ের জন্য যুদ্ধ করছিল তখন হুদায়ফিয়া বিন আল ইয়ামান উসমানের নিকট আসল। হুদায়ফিয়া একারনে ভীত ছিল যে সিরিয়া ও ইরাকের লোকেরা ভিন্ন ভাব ও উচ্চারনে কোরান পাঠ করত।তাই সে উসমানের নিকট বলল- হে বিশ্বাসীদের প্রধান,কিতাবকে বিভক্ত করার আগেই মুসলমান জাতিকে রক্ষা করুন, যেমনটা ইহুদি ও খৃষ্টানরা তাদের কিতাবকে পূর্বে বিভক্ত করেছিল।সুতরাং উসমান হাফসার নিকট কোরানের আসল কপি চেয়ে পাঠালেন যাতে করে তা থেকে বেশ কিছু কপি তৈরী করা যায়।হাফসা সেটা উসমানের কাছে পাঠালে উসমান যায়েদ বিন তাবিতকে প্রধান করে আব্দুল্লাহ বিন আয-যুবায়ের, সাইদ বিন আল আস এবং আব্দুর রহমান বিন হারিথ বিন হিসাম এ কয়জনের এক কমিটি করে দিয়ে কোরান সংকলন করতে আদেশ করলেন। তিনি আরও বললেন- যদি যায়েদ বিন তাবিত এর সাথে কোন বিষয়ে ঐকমত্য না হয়,তাহলে সেটা যেন কুরাইশ কথ্য রীতি অনুযায়ী লেখা হয় কারন কোরান কুরাইশ এ রীতিতেই প্রকাশ হয়েছিল।তারা সেভাবেই কোরান সংকলন করেছিল ও আসল কপি হাফসার নিকট পুনরায় ফেরত পাঠানো হয়েছিল। অত:পর এ সংকলিত কপির এক খন্ড করে প্রতিটি প্রদেশে পাঠান হয়েছিল এবং বাকী যেসব পান্ডুলিপি যা আংশিক বা সম্পুর্ন বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন জিনিসে লিখিত ছিল তা সব পুড়িয়ে ফেলার আদেশ দেন উসমান।যায়েদ বিন তাবিত আরও বলেন- যখন তিনি কোরানের কপি তৈরী করছিলেন তখন সূরা আহযাবের একটা আয়াত হারিয়ে ফেলেছিলেন যা তিনি নবীকে বলতে শুনেছেন। তখন সেটার খোজ শুরু হয় এবং সেটা খুজাইমা বিন তাবিত বিন আল আনসারীর কাছে পাওয়া যায় ( আয়াতটি: মুমিনদের মধ্যে কতক তাদের ওয়াদা পূর্ন করেছে।তাদের কতক মারা গেছে,কতক এখনও অপেক্ষা করছে।তারা তাদের সংকল্প মোটেই পরিবর্তন করেনি।৩৩:২৩)।সহি বুখারী, বই-৬১, হাদিস-৫১০
উপরোক্ত হাদিস থেকে কতকগুলি বিষয় পরিস্কার। তা হলো-
১। আল্লাহ নিজে কোরানের রক্ষাকর্তা বলে ঘোষণা দিলেও তিনি তা পালনে ব্যর্থ।আল্লাহ নিজেই রক্ষা করবেন বলেই মোহাম্মদ নিজ জীবনে কোরান সংরক্ষন করেননি। কিন্তু আল্লাহ তো মোহাম্মদের নিজেরই কল্পিত চরিত্র যাকে তিনি অনুভব করতেন তার হিস্টিরিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার সময়, সুতরাং বলাই বাহুল্য যে সে আল্লাহ কোরান সংরক্ষন করবেন না বা করতে পারার কথাও না। সেকারনেই কোরান খুব তাড়াতাড়ি সিরিয়া বা ইরাকে বিভিন্নভাবে পড়া হতে থাকে । বলা বাহুল্য, বিভিন্ন উচ্চারনে পড়ার অর্থ হলো কোরানের বিভিন্ন অর্থ হওয়া, অর্থাৎ কোরান বিকৃত হয়ে যায় খুব দ্রুতই।
২। কোরান যে উক্ত কমিটি বা মোদ্দা কথায় কমিটির নেতা যায়েদ বিন তাবিত কর্তৃকই অনেকাংশেই নিজের বা নিজেদের মত করে লেখা তা উসমানের নিজের কথায় প্রতিফলিত কারন তিনি বলছেন, কোন বিষয়ে যায়েদ বিন তাবিতের সাথে ঐকমত্য না হলে যেন কুরাইশ কথ্য রীতি অনুযায়ী কোরান লেখা হয়। আর পরে সেভাবেই কোরান লেখা হয়। উল্লেখ্য, যায়েদ বিন তাবিত হল মূল লেখক। সে যদি কমিটির অন্যের কোন বলা আয়াতের সাথে এক মত না হয় শুধু তখন মাত্র কুরাইশ কথ্য রীতি অনুসরন করতে হবে। কিন্তু তার নিজের বলা আয়াত সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করা যাবে না। সে কোরান সংকলনের সর্বে সর্বা ক্ষমতার অধিকারী আর সে ক্ষমতা তাকে প্রদান করা করেছেন উসমান।
৩।পূর্ন একটি কোরানের কপি যদি মোহাম্মদের অন্যতম স্ত্রী হাফসার কাছে থেকেই থাকে তাহলে তো সোজা সেটা কপি করে নিলেই হতো। সেখানে উসমানের উপরোক্ত আদেশ দেয়ার কোন অর্থই হয় না। তার মানে হাফসার কাছে রক্ষিত কোরান পূর্নাংগ ছিল না বা থাকলেও উসমান ও তার কমিটি নিজেদের কিছু কথা নতুন কপি করা কোরানে জুড়ে দিয়েছেন। তবে পূর্নাঙ্গ যে ছিল না তা বোঝা যায় সূরা আহযাবের একটি আয়াত হারিয়ে যাওয়ার ব্যপারে। হারিয়ে যাওয়া সে আয়াত খোজার জন্য তখন খুজাইমার নিকট যাওয়ার দরকার পড়ত না।আর একটা আয়াত হারিয়ে যাওয়ার কথা যখন স্বীকার করা হয়েছে তখন আরও কত আয়াত যে হারিয়ে গেছে বা উক্ত কমিটি নিজেদের মত বানিয়ে কতকগুলো আয়াত কোরানে জুড়ে দিয়েছে তার হদিস কে দেবে?
৪।চামড়া, খেজুর পাতা বা হাড়ের ওপর যেসব সূরা লেখা ছিল, তার মধ্যে সংকলিত কোরানের সূরার সাথে যে গুলোর মিল ছিল সেসব পান্ডুলিপি কেন পুড়িয়ে ফেলতে উসমান আদেশ দিলেন? সেগুলো তো পুড়িয়ে ফেলার কোন সঙ্গত কারন দেখা যায় না।আর যদি আয়াত ভিন্ন ভাবে লেখা থাকে সেগুলোই বা কে লিখল? কেন লিখল?
৫। উপরোক্ত বিষয় গুলো থেকে বোঝা যাচ্ছে- মোহাম্মদের কোরানের সাথে উসমানের কোরানের অনেক পার্থক্য বিদ্যমান।সে পার্থক্যের অন্যতম একটি হলো- মোহাম্মদের কোরানে অনেক বেশী ভূল ভ্রান্তি বা ব্যকরণগত ভূল ছিল কারন তিনি ছিলেন নিরক্ষর। উসমানের করা কমিটির লোকজন ছিল শিক্ষিত, তাই তারা যে কোরান সংকলন করেছে তা অনেকটাই নিজেদের সম্পাদিত, অনেকটাই শুদ্ধ করে লেখা।কিন্তু তারাও বেশী শুদ্ধ করতে পারেনি তার কারন তখনও কোরানের বহু আয়াত সাহাবীদের মুখে মুখে প্রচলিত ছিল যাকে খুব বেশী সংস্কার করে পাল্টে ফেলা যায় নি। তা করলে সংকলিত কোরানের গ্রহন যোগ্যতা নিয়ে ব্যপক প্রশ্ন উঠত। আর ঠিক সেকারনেই আমরা কোরানের যে ভার্সন আজকে পাই তাও ব্যপকভাবে ব্যকরণগত ভুলে ভরা।যখন একটা সংকলন তৈরী হয়েই গেল তখন থেকে তার অনুলিপিই শুধুমাত্র প্রকাশ হতে থাকে। এভাবেই গত ১৪০০ বছর ধরে কোরান অবিকৃত থেকেছে। অথচ কি অদ্ভুত ব্যাপার – এ বিষয়টিকেই কিছু তথাকথিত ইসলামী পন্ডিত বর্গ আল্লাহর অশেষ কুদরত হিসাবে বিবেচনা করে। তারা স্বাড়ম্বরে প্রচার করে- চৌদ্দ শ বছর ধরে একটি কিতাব অবিকৃত থেকেছে, এটা আল্লাহর কুদরত ছাড়া কিভাবে সম্ভব? উদ্ভট যুক্তিতে এসব তথাকথিত ইসলামী পন্ডিতদের জুড়ি মেলা ভার।
বিষয়টি নিয়ে আমি ভেবেছি, মোহাম্মদের মত অত বুদ্ধিমান ও সুচতুর ব্যাক্তি এমন ব্যকরণগত ভুল কিভাবে করলেন? ভাবতে ভাবতে এর একটা সমাধান সূত্রও আমি বের করেছি যার অভিজ্ঞতা খোদ আমার নিজ জীবনেই প্রত্যক্ষ করেছি। যেমন একবার যে কোন কারনে আমার এক বন্ধুকে আমি মিথ্যা বলেছিলাম। রংপুরে অবস্থান করেও আমি বন্ধুকে বলেছিলাম আমি ঢাকা আছি। বন্ধুটি আমার ছিল চট্টগ্রামে।তো হঠাৎ করে বন্ধুটি বলল সে একটা ব্যবসায়িক কারনে রংপুর যাবে। আমি তাকে বললাম- এখন এখানে আসাটা বুদ্ধিমানের মত কাজ হবে না। কারন এখানে এখন বন্যা , চারদিকে শুধু পানি আর পানি। একটু খেয়াল করলেই কিন্তু আমার বক্তব্য থেকে বের হয়ে আসে যে আমি আসলে বন্ধুকে আমার অবস্থান সম্পর্কে মিথ্যা বলেছি।অর্থাৎ আমি যে ঢাকা অবস্থান না করে রংপুর অবস্থান করছি তা বোঝা যাবে সহজেই।আমি মনের অগোচরে বলে ফেলেছি- এখানে এ শব্দটা। এখানে এ শব্দটা একজন বক্তা সে যায়গা সম্পর্কেই বলে যে যায়গাতে বক্তা বক্তব্য প্রদানের সময় অবস্থান করে। কিন্তু কেন আমি এ ভুলটি করলাম? এর কারন হলো অবচেতন মন। আমি অনেক কথাই তার সাথে সুচতুর ভাবে বলেছি যা থেকে আমার বন্ধু বুঝতে পারবে না আসলে আমি কোথায় অবস্থান করছি। কিন্তু তার পরেও যেহেতু আমি অনেক কথাই বলেছি আর সে কারনে অবচেতন মনে বলে ফেলেছি আসল সত্যটা। মানুষের মন ঠিক এরকমভাবেই কাজ করে। কোরানের বিষয়টিও হুবহু তাই। মোহাম্মদ অবচেতন মনেই ভুলগুলো করে ফেলেছেন।আর সেকারনে গোটা কোরান পাঠ করে সহজেই বোঝা যায় যে তার নিজের বানীকে আল্লাহর বানী বলে চালাতে গিয়ে বার বার ঠিক সেই ভুলটি করেছেন। যে কারনে বার বার আল্লাহ নিজে তৃতীয় পুরুষ রূপে উল্লেখিত হয়েছে কোরানে যদিও কোরান হলো আল্লাহর নিজের মুখের বানী। এর সোজা অর্থ ইসলাম একটা মিথ্যা দিয়ে শুরু হয়েছিল যদিও মোহাম্মদকে সবাই আল আমীন বলে জানে ও বিশ্বাস করে।
তার ওহী পাওয়ার ঘটনা যে একটা কাল্পনিক কিচ্ছা বা হিস্টিরিয়া গ্রস্থ মানুষের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সময়কার ঘটনা ছাড়া আর কিছুই নয়, তা বোঝা যায় কতিপয় ঘটনায়।
আয়শা থেকে বর্নিত- আল্লাহর নবীর কাছে ওহী আসত স্বপ্নের মাধ্যমে অনেকটা দিনের আলোর মত।—-আল্লাহর নবী আল্লাহর ওহী নিয়ে ফিরে আসলেন তখন তার হৃৎপিন্ড প্রচন্ড রকম কাঁপছিল, -অত:পর তিনি বিবি খাদিজার কাছে ফিরে গেলেন ও বললেন, আমাকে আবৃত কর, আবৃত কর। তিনি তাকে কম্বল দিয়ে আবৃত করলেন যে পর্যন্ত না তার ভয় দুরীভুত হলো। তার পর আল্লাহর নবী হেরা পর্বতের গুহায় কি ঘটেছে সবিস্তারে খাদিজার নিকট বর্ননা করলেন ও বললেন- আমার ভয় হচ্ছে আমার ওপর কিছু একটা ভর করেছে।—— এর পরদিন খাদিজা তাকে নিয়ে তার চাচাত ভাই ওয়ারক্কা ইবনে নওফেলের কাছ নিয়ে গেলেন যিনি ইহুদী থেকে খৃষ্টান হয়েছিলেন ও হিব্রু ভাষায় গসপেল লিখতেন।তিনি বৃদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন ও তার দৃষ্টি শক্তি ক্ষীন হয়ে পড়েছিল।খাদিজা ওয়ারাক্কাকে বললেন- হে চাচাত ভাই, আপনার বোন জামাইয়ের কাছে শুনুন তার কি ঘটেছে। তখন ওয়ারাক্কা মোহাম্মদকে জিজ্ঞেস করলেন- তোমার কি ঘটেছে? আল্লাহর নবী সবিস্তারে তখন সব বর্ননা করলেন।সব কিছু শুনে ওয়ারক্কা বললেন- এই ব্যক্তি সেই ব্যাক্তি যিনি মূসা নবীর নিকট আল্লাহর বানী নিয়ে আসত ।—–এর কিছুদিন পর ওয়ারাক্কা ইবনে নওফেল মারা গেলেন এবং ওহী আসা কিছুদিনের জন্য বন্দ থাকল। জাবির বিন আব্দুল্লাহ আল আনসারি বর্নিত- একদা ওহী আসা বন্দ হওয়া নিয়ে কথা বলার সময় আল্লাহর নবী বললেন- যখন আমি হাটছিলাম হঠাৎ আকাশ থেকে একটা শব্দ শুনলাম। আমি আকাশের দিকে তাকালাম আর সেই ফেরেস্তাকে দেখলাম যাকে আমি হেরা গুহায় দেখেছিলাম। সে বসেছিল আকাশ আর পৃথিবীর মাঝখানে একটা চেয়ারে।আমি আবার ভীত হয়ে পড়লাম ও তাড়াতাড়ি ঘরে ফিরে গেলাম ও খাদিজাকে বললাম- আমাকে কম্বল দিয়ে আবৃত কর, আবৃত কর। আর তখন আল্লাহ সেই ওহী নাজিল করলেন- হে চাদরাবৃত, উঠুন সতর্ক করুন, আপন পালনকর্তার মাহাত্ম ঘোষণা করুন, আপন পোশাক পবিত্র করুন ( কোরান, ৭৪:১-৪) সহী বুখারী, বই-০১, হাদিস নং-০৩
উপরের হাদিস থেকে বোঝা যাচ্ছে, মোহাম্মদ নিজেই আসলে নিশ্চিত নন কিভাবে তার কাছে ওহী আসত।। একবার বলছেন স্বপ্নের মাধ্যমে, একবার বলছেন জিব্রাইল ফিরিস্তা সরাসরি তার কাছে বানী নিয়ে আসত।স্বপ্নে ওহী পাওয়া তো আমাদের দেশে প্রচলিত স্বপ্নে নানা রকম ওষুধ পাওয়ার ব্যবসার মত।এর সাথে মোহাম্মদের ওহী পাওয়ার কোন তফাৎ তো দেখা যাচ্ছে না। এছাড়াও ওহী আসার অন্য নানা পদ্ধতি আছে, যেমন, ঘন্টা বাজার ধ্বনির মত। তো এসব তো একজন মানুষ হিস্টিরিয়াতে আক্রান্ত হলেই এসব ঘন্টা ধ্বনি শুনতে পায় আরও কত কিছু শোনে ও দেখে দ্বীন দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ট ও শেষ নবী জিব্রাইল ফিরিস্তাকে দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে গেছেন তিনি বুঝতেই পারলেন না যে তিনি আল্লাহ প্রেরিত নবী। শুধু তাই নয় তিনি এমনকি জিব্রাইল ফিরিস্তাকে চিনতেও পারলেন না।কি আজব কথা! তার পরে এমন ভয় পেয়ে গেছেন যে তার গায় জ্বর এসে গেছে আর তার মনে হচ্ছে কোন অশুভ আত্মা তার ওপর ভর করেছে যে কারনে তিনি বলছেন – আমার ভয় হচ্ছে আমার ওপর একটা কিছু ভর করেছে। শুভ আত্মা ভর করলে তো ভয়ের কোন কারন নেই।এসব তো একজন হিস্টিরিয়া রোগীর লক্ষন যা আমরা হর হামেশা দেখি।কেউ হিস্টিরিয়াতে আক্রান্ত হলে ঠিক এরকম লক্ষনই প্রকাশ পায়। সে মনে করে কি যেন অশরিরী তার ওপর ভর করেছে, তার সাথে কে যেন দেখা করেছে, তার ওপর আবোল তাবোল অনেক আধি ভৌতিক কথাবার্তা বলে যার কোন মাথা মুন্ডু নেই।অনেক সময় তার গায়ে প্রচন্ড জ্বর আসে ও পাগলের মত প্রলাপ বকতে থাকে। এভাবে কিছুক্ষন চলার পর সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে আসে। জিব্রাইল নিজে মোহাম্মদের কাছে পরিচয় দিল না সে কে।কেনই বা সে তার কাছে এসেছে তাও বলল না।আল্লাহর কি মহিমা! আল্লাহর মহিমা বোঝা বড় দায়! কে বুঝতে পারল মোহাম্মদ আল্লাহর নবী? অশিতি পর এক বৃদ্ধ ওয়ারাক্কা, তাও বোঝার কয়েক দিনের মধ্যেই পটল তুলল ও সে নিজেও আর কাউকে এ কিচ্ছা প্রচার করার সুযোগ পেল না যা যথেষ্ট রহস্যজনকও বটে। যে জিব্রাইল হেরা পর্বতের ছোট্ট একটা গুহার মধ্যে দিব্যি ঢুকে গেল, সেই জিব্রাইলকে মোহাম্মদ আবার দেখল আকাশ ও পৃথিবীর মাঝখানে রাখা চেয়ারে বসে থাকা অবস্থায়।তার মানে সে চেয়ার মোটেও ছোট খাট চেয়ার নয়, অতি বিশাল চেয়ার, তা না হলে আকাশ আর পৃথিবীর মাঝখানে রাখা চেয়ার– এভাবে চেয়ারের বর্ননা দেয়া হতো না। আর বিশাল চেয়ারে বসে থাকা জিব্রাইলের আকারও নিশ্চয়ই অতি বিশাল। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছা বলে কথা, তাই অতি বিশাল জিব্রাইল অতি ছোট আকার ধারন করে ঢুকে পড়েছিল হেরা পর্বতের ছোট্ট গুহার মধ্যে। মজার কথার সেটাই শেষ নয়। ইতোপূর্বে তো মোহাম্মদ জেনে গেছেন তিনি আল্লাহর নবী, জিব্রাইল হলো ফেরেস্তা যে আল্লাহর বানী তার কাছে নিয়ে আসে। প্রথমবার তিনি তাকে চিনতে পারেননি বলে ভয় পেয়েছিলেন। কিন্তু পরের বার তো তার আর ভয় পাওয়ার কথা নয়। অথচ এবারও তিনি আকাশে তাকে দেখে ভয় পেয়ে গেলেন।তার গায়ে জ্বর চলে আসল। এটা কি প্রমান করে যে তিনি সত্যি সত্যি জিব্রাঈলকে দেখেছেন? নাকি হিস্টিরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে আধি ভৌতিক জিনিস দেখেছেন? ভাবতেও অবাক লাগে এসব আধি ভৌতিক উদ্ভট কিচ্ছা কাহিনীর মাধ্যমে তিনি একদল মানুষকে স্রেফ বোকা বানিয়েছিলেন আর আজকেও কোটি কোটি মানুষ সেই বোকামীর শিকার জেনে , না জেনে।শুধু শিকার নয়, কিছু কিছু লোক তো সেই বোকামীর শিকার হয়ে রীতিমতো ফ্যানাটিক, জীবন দিতেও তাদের কোন দ্বিধা নেই।যা আমরা নানা সময়ে নানা রকম আত্মঘাতী সন্ত্রাসী হামলার মাধ্যমে প্রত্যক্ষ করছি।
এই জিব্রাইল একবার মোহাম্মদের সাথে কি অদ্ভুত ও গাজাখুরি কান্ডটি করেছে তা এবার দেখা যাক:
আবু দার বর্নিত- আল্লাহর নবী বলেছিলেন- আমি যখন মক্কার বাড়ীতে ছিলাম একদিন বাড়ীর ছাদ খুলে গেল ও সেখানে জিব্রাইল অবতরন করল এবং আমার বক্ষ বিদীর্ন করল।,জম জমের পানি দিয়ে আমার বক্ষ ধুয়ে সাফ করে দিল।তারপর সে একটা জ্ঞান ও বিশ্বাস ভর্তি সোনার পাত্র নিয়ে তা দিয়ে আমার বক্ষে প্রবিষ্ট করে অত:পর বক্ষ বন্দ করল ।তারপর সে আমার একটা হাত ধরে নিকটবর্তী বেহেস্তে নিয়ে গেল। আমরা বেহেস্তের দ্বারে গেলাম ও জিব্রাইল দ্বার রক্ষককে দ্বার খুলে দিতে বলল—-( এর পরের ঘটনা হলো মোহাম্মদ অত:পর সমস্ত বেহেস্ত ঘুরে ঘুরে দেখলেন ও অনেক পূর্ববর্তী নবীদের সাথে খোশ গল্প করলেন)– সহী বুখারী, বই-০৮, হাদিস নং-৩৪৫

Monday, September 10, 2018

ইসলামে দত্তক নেওয়া নিষেধ, কিন্তু কেনো ?

এই বিষয়টি বুঝতে হলে পড়ুন নিচের এই প্রবন্ধটি-
পুত্রবধূ জয়নাবকে মুহম্মদের বিবাহ এবং জায়েদের নির্মম পরিণতির ইতিহাস :
জন্মসূত্রে জায়েদ এর পুরো নাম জায়েদ বিন হারিথ। এর মানে হলো সে হারিথ নামে কোনো এক ব্যক্তির পুত্র। এই জায়েদ ছিলো জন্মসূত্রে সিরিয়ার অধিবাসী এবং বাল্যকালে তাকে কেউ চুরি ক’রে ক্রীতদাস হিসেবে মুহম্মদের ৪০ বছর বয়স্কা খালাম্মা টাইপের স্ত্রী খাদিজার কোনো এক আত্মীয়ের কাছে বিক্রি করে দেয়, পরে সে ঐ নিকটাত্মীয়ের কাছ থেকে খাদিজার কাছে হ্যান্ডওভার হয় এবং খাদিজার কাছেই বড় হতে থাকে।
এরপর ২৫ বছর বয়সী মুহম্মদের সাথে খাদিজার বিয়ে হলে জায়েদ ও মুহম্মদের খুব ভাব হয় এবং খাদিজা, জায়েদকে, মুহম্মদের অধীনে দিয়ে দেয়, ফলে জায়েদ ক্রীতদাস অবস্থা থেকে মুক্ত হয়। পরে, জায়েদের বাবা, তার ছেলেকে খুঁজতে খুঁজতে মক্কায় আসে এবং জায়েদের সন্ধান মুহম্মদের কাছে পেলে, জায়েদকে যেকোনো মূল্যে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু মুহম্মদ, যেহেতু তার কোনো পুত্র সন্তান জীবিত ছিলো না, সেহেতু সে, জায়েদকে দত্তক পুত্র হিসেবে নেয় এবং মক্কায় সর্বসমক্ষে ঘোষণা করে,
“হে লোক সকল, আমি জায়েদকে আমার পুত্র হিসেবে সর্ব সমক্ষে স্বীকার করে নিচ্ছি, আর তোমরা তার সাক্ষী থাকো, আজ থেকে আমি তার উত্তরাধিকারী, আর সে আমার উত্তরাধিকারী।”- (মিশকাত হাদিস, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৩৪০)
এই ঘোষণার পূর্বাপর ঘটনার কারণে জায়েদ তার জন্মদাতা পিতার সাথে যেতে অস্বীকৃতি জানায় এবং তার পিতা, পেয়েও সন্তান হারানোর শোক ও গভীর মনোবেদনা নিয়ে চোখের জলে মক্কা ত্যাগ করে। নিজের পিতাকে অস্বীকার করে তার সাথে না যাওয়ার ফল জায়েদেক কিভাবে ভোগ করতে হয়েছিলো, তা এই পোস্ট পড়া শেষে উপলব্ধি করতে পারবেন।
যা হোক, এরপর জায়েদ বিবাহযোগ্য হলে, মুহম্মদ তারই ফুফাতো বোন জয়নাবের সাথে তার বিয়ে দেয়। মুহম্মদ যখন জয়নাবের জন্য বিয়ের প্রস্তাব জয়নাবের বাড়ি পাঠায়, তখন জয়নাব ভেবেছিলো মুহম্মদই তাকে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু যখন সে শুনে তার বিয়ে হচ্ছে জায়েদের সাথে তখন সে একটু মনক্ষুণ্নই হয়; কারণ, জয়নাবের স্বপ্ন ছিলো মুহম্মদের সাথেই তার বিয়ে হোক। কেননা, মুহম্মদ তখন মদীনার একচ্ছত্র রাজা, আর রাজা যতই বৃদ্ধ হোক, রাজাকে বিয়ে করে রাজরানী হওয়ার সুখ ও প্রভাব প্রতিপত্তি কে না চায় ? কিন্তু রাজাকে না পেলেও রাজার ইচ্ছাকে পাশ কাটানোর ক্ষমতা শুধু জয়নাবেরই নয়, মদীনার কারোরই ছিলো না; তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও জয়নাবকে জায়েদের ঘরে যেতে হয়। জয়নাব ও জায়েদের এই বিয়ে হয় ৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে, মুহম্মদের মক্কা থেকে মদীনায় পলায়নের ৭ বছর পর।
বিয়ের কিছু দিন পরেই, মুহম্মদ কোনো একটা কাজে জায়েদের বাড়ি যায় এবং হঠাৎ করে ঘরে ঢুকে পড়ায় জয়নাবকে অর্ধনগ্ন অবস্থায় দেখতে পায়। সঙ্গে সঙ্গে মুহম্মদের মুখ থেকে বেরিয়ে আসে,
“সকল প্রশংসা আল্লাহ্র, হৃদয় যেভাবে চায় তিনি সেভাবে বদলে দিতে পারেন।”
আপনারা বাস্তব অবস্থা একটু বিশ্লেষণ করলেই বুঝবেন, জীবনে দুই একবার ঘরের লোকদের সামনে এরকম ঘটনা ঘটা অসম্ভব কিছু নয়; কোনো সভ্য পুরুষ যেমন এই ধরণের ঘটনাকে দেখেও না দেখার ভান করে বা করবে, তেমনি কোনো সভ্য মহিলাও এসব ঘটনা ঘটার পর তা ভুলে যেতে চেষ্টা করে বা করবে, সেটা অন্যকে বলা তো দূরের কথা। কিন্তু জয়নাব, জায়েদ যখন বাড়িতে আসে তখন তাকে সব বলে দেয়- যেন পাড়ার কোনো লোক তাকে টিজ করেছে বা কুপ্রস্তাব দিয়েছে!
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এসব শুনে জায়েদ তার স্ত্রীকে বলতো- যা হয়েছে ভুলে যাও, ঘরের লোকেদের সামনে ওসব হয়েই থাকে, এরপর থেকে কেয়ার থাকবে যাতে এমন আর না ঘটে।
কিন্তু সব শুনেই জায়েদ তার পিতার কাছে ছুটে যায় এবং বলে, “আপনার মনে হয় জয়নাবকে পছন্দ হয়েছে, আমি ওকে তালাক দিচ্ছি, আপনি ওকে বিয়ে করুন।”
জয়নাবের কাছ থেকে সব ঘটনা শুনে জায়েদের কি এমন হয়েছিলো যে- সে নিজের পিতাকে, তারই স্ত্রীকে বিয়ে করার জন্য প্রস্তাব দিচ্ছে ? মানুষ তার নিজের স্ত্রীকে রক্ষা করার জন্য লড়াই করে, জীবন দেয়; কারণ, রক্তের সম্পর্কের কেউ না হলেও স্ত্রী ই যে কোনো মানুষের কাছে একসময় হয়ে উঠে সবচেয়ে আপন, তাই স্ত্রীর তুলনায় পিতা-মাতা-ভাই-বোন-আত­্মীয়-স্বজন সবাই তুচ্ছ হয়ে যায়। সেই স্ত্রীকে জায়েদ কেনো স্বেচ্ছায় তার পিতার বিছানায় তুলে চাচ্ছে, এর পেছনের ঘটনাটা আসলে কী ? এই স্বেচ্ছাদানের পেছনে জায়েদের মনে আসলে কী কাজ করছিলো ?
প্রকৃতপক্ষে জায়েদ খুব ভালো করেই জানতো তার পিতা মুহম্মদের মনস্তত্ত্ব। জায়েদ যখনই জয়নাবের কাছে শুনেছে যে, তাকে ঐ স্বল্প বসনে দেখেই মুহম্মদ বলে উঠেছে-
“সকল প্রশংসা আল্লাহর, হৃদয় যেভাবে চায় তিনি সেভাবে বদলে দিতে পারেন।”
তখনই জায়েদ বুঝে গিয়েছিলো যে, তার পিতা, তার স্ত্রীকে পছন্দ করে ফেলেছে, আর কোনো উপায় নেই, আর বেশি সময়ও নেই, এখন একমাত্র কাজই হলো অপেক্ষা না করে নিজেই গিয়ে পিতার কাছে এই প্রস্তাব দেওয়া। জায়েদের এতটা আতঙ্কিত হওয়ার কারণ হলো, জায়েদ নিজের চোখে দেখেছে, নিজের উদ্দেশ্য সাধনে তার পালক বাপ কী পরিমান নিষ্ঠুর ও নৃশংস হতে পারে। কারণ, মুহম্মদ ৬২৭ খ্রিষ্টাব্দে একদিনে ৮০০ কুরাইজা ইহুদিকে হত্যা করে গনিমতে মাল হিসেবে তাদের সকল নারী শিশু এবং তাদের সম্পদ দখল করেছিলো এবং সেই গণহত্যার রাতেই কুরাইজা গোত্রের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে রিহানাকে শয্যা সঙ্গিনী বানিয়েছিলো। এরপর ৬২৮ খ্রিষ্টাব্দে খয়বরের যুদ্ধের সময় গোত্রপতি কিনানার স্ত্রী সাফিয়াকে দখল করার জন্য, কিভাবে কিনানার বুকের উপর জ্বলন্ত কাঠ রেখে তিলে তিলে কষ্ট দিয়ে কিনানাকে হত্যা করে তার স্ত্রী সাফিয়াকে দখল করে সেই রাতেই তাকে ভোগ করেছিলো, এসব ঘটনা মুহম্মদ ঘটিয়েছে জায়েদের চোখের সামনেই। তাই জায়েদ ছিলো আতঙ্কিত, সে ভেবেছিলো, আর কোনো রক্ষা নেই, এখনই স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পন না করলে যে কোনো প্রকারেই হোক তাকে খুন করে হলেও তার পিতা, তার স্ত্রীকে হস্তগত করবেই, যেহেতু তার পিতার মনে তার স্ত্রীকে লেগে গিয়েছে এবং এর জন্য যদি প্রয়োজন হয় আরবের প্রচলিত রীতি নীতি উল্টাতে এবং তাকে বৈধতা দেওয়ার জন্য কোরানের নামে বাণী নাজিল করতেও মুহম্মদ দেরি করবে না; বাস্তবে হয়েছিলোও তাই। কিন্তু নিজের স্ত্রীকে, মুহম্মদের বিছানায় তুলে দিয়েও কি জায়েদ তার শেষ রক্ষা করতে পেরেছিলো ? এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন পোস্টটি-
আতঙ্কিত হয়ে জায়েদ যখন তার বাপের কাছে গিয়ে বলে, আমি জয়নাবকে তালাক দিচ্ছি, আপনি ওকে বিয়ে করুন। তখন মুহম্মদ ভদ্রতা দেখিয়ে বলে,
“তোমার স্ত্রীকে পরিত্যাগ করো না এবং আল্লাহকে ভয় করো” (কোরান, ৩৩/৩৭)।
মুহম্মদ যদি কোনো সভ্য মানুষ হতো তাহলে এই কথা না বলে বলতো, “তুমি এমন প্রস্তাব আমাকে দেওয়ার সাহস কী করে পাও ? তুমি আমার পুত্র, আর জয়নাব আমার মেয়ের মতো।”
সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, মুহম্মদ যদি নৃশংস সন্ত্রাসী না হয়ে কোনো সভ্য মানুষ হতো, তাহলে সে জয়নাবের সামনে- কখন কার মন পরিবর্তন করিয়ে দেয় – ঐ কথা না বলে বৌমাকে ঐ অবস্থায় দেখেও তার পোষাক ঠিক করার জন্য তাকে সময় দিয়ে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে থাকতো, আর জায়েদকে তার পিতার কাছে এসে এই ধরনের প্রস্তাব দেওয়ার প্রয়োজনই পড়তো না।
কিন্তু মুখে মুহম্মদ লোকলজ্জার ভয়ে জায়েদকে ঐ কথা বললেও তার মনের কথা ওটা ছিলো না, মুহম্মদ সব সময় ভাবছিলো কিভাবে জয়নাবকে কব্জা করা যায়। ভাবনাতেই তো মানুষের মনে বাণীর উদয় হয়, তাই কয়েক দিন ভাবনার পর মুহম্মদের ইচ্ছাকে বাস্তবায়িত করার জন্য তার দালাল আল্লাও মুহম্মদের ইচ্ছা পূরণের বাণী নিয়ে এসে হাজির! সেই দিন মুহম্মদ ছিলো আয়েশার ঘরে, আয়েশার বয়স তখন মাত্র ১৪/১৫, খাদিজা মারা যাওয়ার পরেও মুহম্মদের ঘরে তখন্ ৫ টা বউ। মুহম্মদের উপর নাজিল হলো কোরানের ৩৩/৩৭ আয়াত-
“হে নবী, সেই সময়ের কথা স্মরণ করো, যখন তুমি সেই ব্যক্তিকে যার প্রতি আল্লাহ এবং তুমি অনুগ্রহ করেছিলে, বলেছিলে যে, তোমার স্ত্রীকে পরিত্যাগ করো না এবং আ্ল্লাহকে ভয় কর। তখন তুমি নিজের মনে সেই কথা লুকিয়েছিলে, যা আল্লা প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন। তুমি লোকদেরকে ভয় করেছিলে, অথচ আ্ল্লাহর অধিকার সবচেয়ে বেশি যে, তুমি তাকেই ভয় করবে। পরে জায়েদ যখন তার নিকট হতে নিজের অধিকার পূর্ণ করে নিলো, তখন আমি তাকে তোমার সহিত বিবাহ দিলাম, যেন নিজেদের পোষ্যপুত্রদের স্ত্রীদের ব্যাপারে মুমিন লোকদের কোনো অসুবিধা না থাকে… যখন তারা তাদের নিকট হতে নিজেদের প্রয়োজন পূর্ণ করে নিয়েছে। আল্লার নির্দেশই তো পালিত হওয়া উচিত ছিলো।”
এই আয়াত নাজিল হওয়ার পর মুহম্মদ হাসি মুখে বলে, “কে জয়নবের কাছে যাবে ও তাকে সুসংবাদ দিবে? তাকে বিবাহ করার জন্য আল্লাহ্ আমাকে আদেশ করেছেন।”
উপরে আমি আল্লাকে মুহম্মদের দালাল বলেছি, এতে আল্লাকে কম সম্মান দেওয়া হচ্ছে বা তাকে কম উপাধি দেওয়া হচ্ছে, আসলে বলা উচিত………….দালাল।
এই আয়াত এবং এই কথা বলার পরপরই আয়েশা মুহম্মদকে বলেছিলো, “আমার মনে হয় আল্লা আপনার ইচ্ছ পূরণ করতে খুবই উদগ্রীব এবং একটুও সময় নেয় না।” (মুসলিম- ৮/৩৪৫৩)
প্রথমে জায়েদ আতঙ্কিত হয়ে মুহম্মদের সাথে তার স্ত্রীকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেও পরে অনেক কিছু চিন্তা করে জায়েদ যদি তার মত পাল্টায়, সেজন্য মুহম্মদ ঐ আয়াতের মাধ্যমে এই কথাও স্মরণ করিয়ে দিলো যে, জায়েদ যেন ভুলে না যায় যে, সে মুহম্মদের অনুগ্রহ প্রাপ্ত, কেননা মুহম্মদই তাকে ক্রীতদাস থেকে মুক্তি দিয়ে দত্তক পুত্র হিসেবে নিয়েছিলো, তাই আয়াতে বলা হলো-
“সেই ব্যক্তিকে যার প্রতি আল্লাহ এবং তুমি অনুগ্রহ করেছিলে”
মুসলামানদের ইতিহাসে লেখা আছে, মুহম্মদকে নাকি মক্কার লোকজন সম্মান দিয়ে আল আমিন উপাধি দিয়েছিলো, এই ‘আল আমিন’ এর মানে হলো বিশ্বস্ত এবং সে বিশ্বস্ত এই কারণে যে, সে নাকি কোনো দিন মিথ্যা কথা বলে নি। কিন্তু মুহম্মদ যে মিথ্যুক তার প্রমান কোরানেই আছে। যদিও মুহম্মদ একবার দাসী মারিয়ার সাথে সেক্স করার জন্য উমরের মেয়ে হাফসার ঘর ব্যবহার করবে ব’লে, উমর তাকে ডেকেছে এই মিথ্যা বলে হাফসাকে তার বাপের বাড়ি পাঠিয়েছিলো- সেই প্রসঙ্গ আজ নয়, অন্য একদিন, আজ এই প্রসঙ্গেই থাকি।
যা হোক, ‘তোমার স্ত্রীকে রাখো এবং আল্লাকে ভয় কর’, মুহম্মদ, জায়েদকে এই কথা বললেও মুহম্মদ যে সেটা সত্য বলে নি এবং নিজের মনের মধ্যে আসল সত্য লুকিয়েছে সেই কথা বলা হচ্ছে আয়াতের এই অংশে-
“(যখন তুমি জায়েদকে) বলেছিলে যে, তোমার স্ত্রীকে পরিত্যাগ করো না এবং আ্ল্লাহকে ভয় কর। তখন তুমি নিজের মনে সেই কথা লুকিয়েছিলে, যা আল্লা প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন।”
মুহম্মদ যে লোকলজ্জার ভয়ে তার মনের কথা গোপন করে এই মিথ্যা বলেছিলো, তার প্রমান আছে আয়াতের এই অংশে-
“তুমি লোকদেরকে ভয় করেছিলে, অথচ আ্ল্লাহর অধিকার সবচেয়ে বেশি যে, তুমি তাকেই ভয় করবে।”
এরপর, আয়াতে বলা হচ্ছে-
“পরে জায়েদ যখন তার নিকট হতে নিজের অধিকার পূর্ণ করে নিলো, তখন আমি তাকে তোমার সহিত বিবাহ দিলাম।”
মৃত্যু পর্যন্ত কোনো স্ত্রীর কাছে তার স্বামীর অধিকার পূর্ণ হয় না। কিন্তু এখানে ‘অধিকার পূর্ণ করা’ বলতে বোঝাচ্ছে জয়নাবকে জায়েদেক তালাক দেওয়ার অধিকার। এখানে আর একটা ছোট্ট তথ্য দিয়ে রাখি, ইসলামে তালাক দেওয়ার অধিকার শুধু স্বামীর, কোনো মুসলিম নারী, সে যতই নির্যাতিতা হোক আর যা ই হোক, কখনো তার স্বামীকে তালাক দিতে পারে না। যেসব দেশের মুসলিম মহিলারা স্বামীকে তালাক দিতে পারে, সেটা সেদেশের রাষ্ট্রীয় আইনের বলে, ইসলামি আইনের জোরে নয়।
আয়াতের এই অংশ, “তখন আমি তাকে তোমার সহিত বিবাহ দিলাম।” দেখে আমার মনে এই প্রশ্ন দেখা দিলো যে, আল্লার যদি মুহম্মদ ও জয়নাবের বিয়ের কাজী হওয়ার এতই শখ ছিলো, তাহলে জায়েদের সাথে জয়নাবের বিয়ের আগেই তার সেই শখ পূরণ করলো না কেনো ? কেনো জায়েদের সাথে জয়নাবের বিয়ে দিয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার জন্ম দিলো ? নাকি, এর আগে জয়নাবকে বিয়ে করতে মুহম্মদের ইচ্ছা জাগে নি বলে আল্লারও সে কথা মনে আসে নি ?
যা হোক, কেনো আল্লা মুহম্মদের সাথে তার পুত্রবধূর বিয়ে দিলো, সে সম্পর্কে আল্লা নিজেই একটি ব্যাখ্যা কোরানের এই আয়াতেই দিয়ে রেখেছে, আর তা হলো-
“তখন আমি তাকে তোমার সহিত বিবাহ দিলাম, যেন নিজেদের পোষ্যপুত্রদের স্ত্রীদের ব্যাপারে মুমিন লোকদের কোনো অসুবিধা না থাকে…”
যেন এটা ছিলো আল্লার কাছে একটা মহা সমস্যা! মনে হয়, তখন পৃথিবীর প্রতিটা ঘরে ঘরে ছিলো দত্তক বা পোষ্য পুত্র এবং সেই পোষ্যপুত্রের স্ত্রীরা রাত দিন চব্বিশ নয় ছাব্বিশ ঘন্টা আল্লার কাছে এই ফরিয়াদ করে চলেছিলো যে, হে আল্লা, আমরা যেন আমাদের স্বামীদের তালাক পেয়ে আমাদের বুড়া শশুরকে বিয়ে করতে পারি, হে আল্লা, তুমি সেই ব্যবস্থা আমাদের জন্য করে দাও! হে আল্লা, আমাদের এই এতটুকু প্রার্থনা তুমি মঞ্জুর করো। করো। করো। সেই প্রার্থনা শুনেই মনে হয় আল্লা এই বিধান দিয়েছে। কিন্তু বাস্তব অবস্থা হচ্ছে পৃথিবীর ০.০০১% পরিবারেও দত্তক পুত্র কোনো দিন ছিলো না আর এখনও নেই; আর মুসলমান ছাড়া পৃথিবীর সকল জাতির মানুষ কোনো কারণে কোনো শিশুকে দত্তক হিসেবে নিলে, তাকে নিজের ছেলে মেয়ের মতোই দেখে; মুসলমানদের মতো এই চিন্তা করে দত্তক নেয় না যে, বড় হলে এই ছেলের বউকে আমি বিয়ে করবো বা দত্তক নেওয়া কন্যাকেই বউ বানাবো। দত্তক কন্যাকে মুসলমানদের বিয়ে করা সম্পর্কে কারো যদি কোনো সন্দেহ থাকে, তাহলে শুনে রাখুন, ইরানে দত্তক কন্যাকে বিয়ে করা বৈধ এবং এর স্বীকৃতি আছে কোরানেই, দেখে নিন নিচে-
“তোমরা যদি ইয়াতিমদের (অনাথ) প্রতি অবিচার করাকে ভয় কর তবে যেসব স্ত্রীলোক তোমাদের পছন্দ হয়, তাদের মধ্য হতে দুই দুই, তিন তিন, চার চার জনকে বিয়ে করে নাও। কিন্ত তোমাদের মনে যদি আশংকা জাগে যে, তোমরা তাদের সাথে ইনসাফ (সুবিচার) করতে পারবে না তাহলে একজন স্ত্রী ই গ্রহণ করো কিংবা সেই সব মেয়েলোকদেরকে স্ত্রীত্বে বরণ করে নাও যারা তোমাদের মালিকানাভূক্ত হয়েছে। অবিচার হতে বাঁচার জন্য এটাই অধিকতর সহজ কাজ।”- (কোরান, ৪/৩)
এই আয়াতের প্রথম অংশে বলা হচ্ছে-
“তোমরা যদি ইয়াতিমদের (অনাথ) প্রতি অবিচার করাকে ভয় কর তবে যেসব স্ত্রীলোক তোমাদের পছন্দ হয়, তাদের মধ্য হতে দুই দুই, তিন তিন, চার চার জনকে বিয়ে করে নাও।”
এখানে যেহেতু বিয়ে করার কথা বলা হচ্ছে, সেহেতু এটা স্পষ্ট যে দত্তক নেওয়া কন্যাদের কথাই বলা হচ্ছে। এখানে আরও বলা হচ্ছে, অবিচার করাকে ভয় করলে তাদেরকে বিয়ে করো। আল্লা যে কী রকমের বলদ, সেটা এই বাক্য থেকে বোঝা যায়; যে লোক কন্যার প্রতি সুবিচার করতে পারে না, সে নাকি ঐ কন্যা তার স্ত্রী হলে তার প্রতি সুবিচার করবে ! সেজন্য সুবিচার করতে না পারলে তাদেরকে বিয়ে করতে নির্দেশ দিচ্ছে। সেটাও আবার একজনকে নয়- ২, ৩ বা ৪ জনকে।
একটা লোক কখনোই দুইজনকে সমান চোখে দেখতে পারে না, তাদের মধ্যে কিছু না কিছু বৈষম্য তাকে করতেই হবে; আর এখানে আল্লার বিধান বলছে ২, ৩ বা ৪ জনকে একসাথে বিয়ে করে তাদের প্রতি সুবিচার করতে, আল্লাকে বলদ উপাধি দেওয়া ঠিক হচ্ছে না, কারণ বলদেরও কিছু বুদ্ধি থাকে, আল্লা আসলে নির্বোধ।
আবার এই আয়াতেই বলা হচ্ছে, “তোমাদের মনে যদি আশংকা জাগে যে, তোমরা তাদের সাথে ইনসাফ (সুবিচার) করতে পারবে না তাহলে একজন স্ত্রী ই গ্রহণ করো”
আয়াতের এই অংশের জন্যই জাকির নায়েক মার্কা মুসলমানরা জোর গলায় বলে যে, একমাত্র কোরানেই বলা হয়েছে একজনকে বিয়ে করো, আর অন্য কোনো ধর্মের গ্রন্থে বলা নেই যে কতজন স্ত্রী রাখা যাবে। এই বলে জাকির এটা বোঝাতে চায় যে, মুসলমানরাই কোরান অনুযায়ী একগামী, আর অন্য ধর্মের পুরুষরা বহুগামী। কিন্তু এই আয়াতে উপরের অংশে কী বলা হয়েছে, সেটা তারা উল্লেখ করে না। আমরা যখন কোনো আয়াতের কথা উল্লেখ করবো তখন মুসলমানরা বলে, এই আয়াতের পূর্বাপর উল্লেখ করা হয় নি- এই আয়াতের ব্যাখ্যা এমন নয়। কিন্তু তারা যখন আয়াতের উল্লেখ করবে, তখন তাদের হিসেবে কোনো পূর্বাপরের প্রয়োজন নেই, এমনই সুবিধাবাদী হলো এই মুসলমানরা।
একগামী বহুগামী বিষয়ে মুসলমানদেরকে বলছি, অন্যান্য ধর্মের গ্রন্থগুলো, কোরানের মতো রাস্তার পাশে বিক্রি হওয়া সস্তা কোনো চটি বই নয় যে, তাতে- একজন পুরুষের কয়টি স্ত্রী থাকা উচিত- এমন সস্তা বিষয় লিখা থাকবে। প্রকৃতি একজন পুরুষের জন্য একজন নারীই সৃষ্টি করেছে এবং একজন পুরুষের সমস্ত রকম চাহিদা পূরণের জন্য একজন নারীই যথেষ্ট, এইটুকু বোঝার মতো জ্ঞান বুদ্ধি সাধারণ মানুষেরও আছে, পৃথিবীর সকল মানুষ মুসলমানদের মতো নির্বোধ নয় যে, ধর্মগ্রন্থ প’ড়ে তাদেরকে সেই জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
যা হোক, উপরের আয়াতের এই অংশ- “তোমাদের মনে যদি আশংকা জাগে যে, তোমরা তাদের সাথে ইনসাফ (সুবিচার) করতে পারবে না”- এর সরল মানে হলো, আপনাকে কোনো কিছু খেতে না দিয়েই বলা হচ্ছে তার টেস্ট সম্পর্কে আগাম মন্তব্য করতে। পরিস্থিতিটা কতটা অবাস্তব একবার চিন্তা করুন, এমনই অবাস্তব হলো ইসলাম।
আবার আয়াতের শেষ অংশের দিকে বলা হচ্ছে,
“সেই সব মেয়েলোকদেরকে স্ত্রীত্বে বরণ করে নাও যারা তোমাদের মালিকানাভূক্ত হয়েছে।”
এর মানে হলো, যেসব মেয়েদেরকে তোমরা গনিমতে মাল হিসেবে যুদ্ধ করতে গিয়ে ধরে এনেছো বা যাদেরকে টাকা দিয়ে কিনে এনেছো, যদিও তাদের সাথে সেক্স করতে চাইলে অসুবিধা নেই, তবে ইচ্ছে করলে তাদেরকে বিয়ে করতে পারো। আল্লার মনে হয় এই ধারণা ছিলো যে, পৃথিবীতে চিরদিন এরকম যুদ্ধ করে নারী ধরে আনার রীতি বজায় থাকবে আর ক্রীতদাস প্রথাও থাকবে, তাই মুসলমানদের জন্য চিরকালের বিধান কোরানের আয়াতে আল্লা এসব লিখে দিয়েছে। এই আয়াতের শেষ বাক্য হলো,
“অবিচার হতে বাঁচার জন্য এটাই অধিকতর সহজ কাজ”
অবিচারটি কী ? অবিচারটি হলো, কন্যা হিসেবে যাকে দত্তক নিয়েছো, তাকে দেখে যদি তোমার কামভাব জাগে, তাকে যদি কন্যার নজরে দেখতে না পারো, তাহলে সেটা অবিচার; এই অবিচার থেকে বাঁচার জন্য আল্লা বলছে, এত ভাবনা চিন্তার দরকার নেই, বিয়ে করে তাকে সোজা বিছানায় নিয়ে গিয়ে তার উপর কাম ঢেলে দাও। যদি একটাতে তোমার শখ না মিটে, তাহলে ২টা, ৩টা বা ৪টার উপর একের পর এক ঢালো। আর কন্যাসমদের বিছানায় নেওয়া যদি কোনো কারণে কঠিন হয়ে যায়, আর তোমাদের ঈমানদণ্ড যদি তাদের কারণে উত্থিত থাকে, তাহলে সেটাও অবিচার, এই অবিচার হতে বাঁচার জন্য সহজ উপায় হলো যুদ্ধবন্দিনী বা ক্রীতদাসীদের উপর লালসাকে ঢেলে দেওয়া; কারণ, এটা কন্যাসমদের বিছানায় নিয়ে যাওয়ার চেয়ে সহজ।
যা হোক, মূল প্রসঙ্গে ফিরে যাই, জায়েদ তো ভয়-ত্রাসে আগে থেকেই মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলো জয়নাবকে তালাক দেওয়ার। আয়েশার ঘরে ঐ আয়াত ডাউনলোড হওয়ার সাথে সাথে যখন জয়নাবের কাছে ঐ খবর এলো যে আল্লা নিজে মুহম্মদ ঔ জয়নাবের বিয়ে দিয়ে দিয়েছে, তখন তা শুনেই জায়েদ জয়নাবকে তালাক দিয়ে দেয় আর এতে জয়নাবও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না; কারণ, তার তো শুরু থেকেই মুহম্মদকে বিয়ে করার ইচ্ছা ছিলো, এখন সেটা বাস্তবায়িত হচ্ছে দেখে জয়নাব বেশি খুশিই হলো। মুহম্মদের বয়স তখন ৫৮ আর জয়নাব সদ্য যুবতী।
আরবের মেয়েদের রুচি কোনো লেভেলে ছিলো সেটা একটু চিন্তা করুন; যুবক জায়েদকে ফেলে অনায়াসে জয়নাব বাপের বয়সী এবং বাপতুল্য শশুর মুহম্মদকে বিয়ে করে তার বিছানায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো! আরব সহ মধ্যপ্রাচ্যের মেয়েদের রুচি এখনও সেই লেভেলেই আছে। পৃথিবীর সকল দেশে এমনকি অন্যান্য মুসলিম দেশের মেয়েরাও এখন স্বামীর ভাগ কাউকে দিতে চায় না, কিন্ত আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশের মেয়েরা অনায়াসে চার সতীনের সাথে সংসার করে এবং যখন তখন তালাক খেয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভিক্ষাও করে। যে ইসলাম, নারীদেরকে একটা নিশ্চিন্ত সংসারের অধিকার দেয় নি, একান্ত আপন করে তাকে একজন পুরুষের অধিকার দেয় নি, সেই ইসলামের অনুসারী মুসলমানরা আবার জোর গলায় বলে- একমাত্র ইসলামই নারীকে দিয়েছে সর্বোচ্চ মর্যাদা। এরা আসলে এই কথাগুলো মুখ দিয়ে বলে না পাছা দিয়ে বলে, সেটা নিয়ে একটা গবেষণা হওয়া দরকার।
তালাকের প্রসেস সম্পন্ন হলে, মুহম্মদ, সাবেক পুত্রবধূ জয়নাবকে নিয়ে গিয়ে ঘরে তুলে, আল্লা যেহেতু নিজে তাদের বিয়ে দিয়েছিলো, সেহেতু মনে হয় কবুল টবুল বলার অনুষ্ঠানের আর দরকার হয় নি। যা হোক, আগের বিয়েগুলোতে না করলেও, এই বিয়ে উপলক্ষে মুহম্মদ তিন দিন ব্যাপী ভোজসভার আয়োজন করে। কারণ, মুহম্মদ এটা জানতোই যে এই বিয়ে নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠবে, তাই খাইয়ে দাইয়ে যদি লোকজনকে কিছুটা ঠাণ্ডা রাখা যায়; কিন্তু তবুও মুহম্মদকে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছিলো।
যা হোক, বিয়ে উপলক্ষে লোকজন খাওয়া দাওয়া শেষ করেও উঠে না গিয়ে গল্পে মশগুল ছিলো, এদিকে বিছানায় জয়নাবের কাছে যাওয়ার জন্য মুহম্মদের আর তর সইছিলো না, শেষ পর্যন্ত পর্যন্ত মুহম্মদ নিচের এই আয়াত ডাউনলোড করে তাদেরকে বলে,
“ভোজনশেষে তোমরা চলিয়া যাইও; তোমরা কথাবার্তায় মশগুল হইয়া পড়িও না। কারণ তোমাদের এই আচরণ নবীকে পীড়া দেয়, সে তোমাদিগকে উঠাইয়া দিতে সংকোচ বোধ করে।”- (কোরান, ৩৩/৫৩)
যা হোক, সেক্স না করলে ইসলামের বিবাহ আবার পূর্ণতা পায় না, তারপর মুহম্মদ, জয়নাবের সাথে রাত কাটিয়ে তার ও জয়নাবের বিবাহকে পূর্ণতা দেয়।
এবার দেখা যাক, এই ঘটনার পর জায়েদের কী পরিণতি হলো-
মুহম্মদের এই পুত্রবধূকে বিয়ে করার পর মদীনার লোকজনের মধ্যে এ নিয়ে খুব সমালোচনা হতে লাগলো, প্রধান প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ালো, কেউ তার ছেলের বউকে বিয়ে করতে পারে কি না ? এটা কোনো রীতির পর্যায়ে পড়ে কি না ? এর জবাবে মুহম্মদের …… দালাল আল্লা, তার দোস্তের কাছে ওহী পাঠিয়ে বলে দিলো-
“আল্লা কোনো ব্যক্তির দেহে দুটি অন্তর রাখেন নি। তোমাদের পোষ্যপুত্রদেরকেও তিনি তোমাদের প্রকৃত পুত্র বানিয়ে দেন নি।”- (কোরান, ৩৩/৪)
এই আয়াতের মাধ্যমে জায়েদকে মুহম্মদ যে পিতৃত্বের অধিকার দিয়েছিলো তা মুহম্মদ কেড়ে নিলো বা অস্বীকার করলো। প্রকৃত পিতাকে অস্বীকার ক’রে তার সাথে ফিরে না যাওয়ার শাস্তি জায়েদের শুরু হলো।
মুহম্মদের খাদিজার গর্ভের দুটি ছেলে মারা গিয়েছিলো, পরে মিশরের রাজার উপহার দেওয়া দাসী মারিয়ার গর্ভেও মুহম্মদের একটি ছেলে জন্ম নেয়, সেও ১৮ মাস বয়সে মারা যায়। এই পুত্রহীনতার সুযোগ নিয়ে মুহম্মদ আয়াত নামিয়ে বলে দিলো,
“মুহম্মদ তোমাদের পুরুষদের মধ্যে কারো পিতা নয়, বরং আল্লার রসূল ও সর্বশেষ নবী”-(কোরান, ৩৩/৪০)
এই কথাগুলো, আল্লার, মুহম্মদকে নবুয়ত্ব (৬১০খ্রি.) দেওয়ার ১৯ বছর পর ৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে মনে পড়লো কেনো ? আল্লা যদি মুহম্মদকে কোনো পুরুষের পিতা না ই বানাবে তাহলে দাসী মারিয়ার গর্ভে তার পুত্র ইব্রাহিমের জন্ম দিয়েছিলো কেনো ? না, জন্ম দেওয়ার পর তার মনে হয়েছিলো, এ হে ভুল হয়ে গেছে, তাই কি তাকে আবার ইব্রাহিমকে মেরে ফেলতে হয়েছিলো ? ভুল তাহলে আল্লারও হয়? তাহলে আল্লা কোন মুখে এই দাবী করে যে সে সর্বজ্ঞানী ? সর্বজ্ঞানী হলে তো তার অতীত, ভবিষ্যৎ সবই জানার কথা, তার আবার ভুল হবে কেনো ?
যা হোক, জন্মসূত্রে আরবের রীতি অনুযায়ী জায়েদের নাম ছিলো জায়েদ বিন হারিথ/হারিস; দত্তক নেওয়ার পর তার নাম হয় ‘জায়েদ বিন মুহম্মদ’। কিন্তু মুহম্মদ যেহেতু জায়েদের পিতৃত্ব কেড়েই নিলো, তাহলে সে তাকে আর তার নাম ব্যবহার করতে দেবে কেনো ? তাই মুহম্মদ আরেকটি আয়াত নামিয়ে এনে বললো,
“পোষ্যপুত্রদেরকে তাদের পিতার সহিত সম্পর্কসূত্রে ডাকো, এ আল্লাহর নিকট অধিক ইনসাফের কথা”- (কোরান, ৪/৫)
এর মানে হলো, মুহম্মদ, জায়েদের পিতৃত্ব অস্বীকার করলেও অভ্যাস বশতঃ লোকজন তাকে ‘জায়েদ বিন মুহম্মদ’ বলে সম্বোধন করছিলো। এটাও মুহম্মদের সহ্য হলো না, সে এই আয়াত নামিয়ে জায়েদের নাম থেকে একেবারে তার নাম বাদ দিয়ে ‘জায়েদ বিন হারিথ’ বানিয়ে দিলো।
এভাবে একে একে মুহম্মদ- জায়েদের বউ, পিতৃত্বের অধিকার, নাম- সব কেড়ে নিয়ে তাকে উদ্ভ্রান্ত বানিয়ে পথে ছেড়ে দিলো। এই অবস্থায় একজন পুরুষের কী মানসিক অবস্থা হবে সেটা একবার কল্পনা করুন। জায়েদের এই সব হারানোর পরও মুহম্মদ তাকে নিষ্কৃতি দেয় নি; কারণ, তখন মদীনাতে জায়েদের উপস্থিতই ছিলো মুহম্মদের জন্য বিড়ম্বনা ও অস্বস্তির; মুহম্মদ জায়েদের এই উপস্থিতিকেও আর সহ্য করতে চাইলো না। সব কেড়ে নেওয়ার পর তখন শুধু জায়েদের জীবনটা নেওয়ারই বাকি ছিলো মুহম্মদের, মুহম্মদ সেই প্ল্যানও করে ফেললো।
জয়নাবকে বিয়ে করার পরপরই, নানা ঘটনার প্রেক্ষিতে মুহম্মদ, মুতা নামক এক স্থানে অভিযান পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেয়, মুহম্মদের অভিযান মানেই ‘প্রথমে তাদেরকে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত, আর তা স্বীকার না করলেই তলোয়ার’। মুহম্মদ, এই অভিযানের নেতা নির্বাচিত করে জায়েদকে এবং তাকেই পতাকা বহনের দায়িত্ব দেয়। যুদ্ধের সময় যে পতাকা বহন করতো তাকে থাকতে হতো সবার সামনে এবং ৯৮% ক্ষেত্রে এই পতাকাবাহী প্রথমেই মারা পড়তো এজন্য যে, শত্রুপক্ষ প্রথমে তাকেই টার্গেট করে বর্শা বা তীর ছুঁড়তো। শুধু এখানেই শেষ নয়, এই যুদ্ধে জায়েদের মৃত্যু নিশ্চিত করতে মুহম্মদ যতটা সম্ভব ছোট বাহিনী পাঠায় যাতে মুসলমানরা পরাজিত হয় এবং জায়েদের নিশ্চিত মৃত্যু হয়। ঘটনা ঘটেও তাই, সচরাচর মুসলমান বাহিনী কোথাও পরাজিত না হলেও মুতাতে পরাজিত হয় এবং জায়েদ সহ বহু মুসলমান মারা যায় এবং মুহম্মদের প্ল্যান সাকসেস হয়।
এইভাবে জায়েদ তার আপন পিতাকে অস্বীকার করে এক নিষ্ঠুর, বর্বর, লম্পট ও নৃশংস ব্যক্তিকে পিতা হিসেবে স্বীকার করার শাস্তি- প্রথমে তার স্ত্রী, তারপর পিতৃত্ব, তারপর নাম এবং সবশেষে জীবন হারিয়ে – ভোগ করে যায়|

Friday, September 7, 2018

পেনিস সহজে বড়, মজবুত ও মোটা করার উপায় কি?

কোনো ব্যায়াম বা যাদুকরি মালিশ পেনিসের আকার পরিবর্তন করতে পারেনা। সার্জারির মাধ্যমে পেনিস বড় করা যায়, কিন্তু সেটা অনেক ব্যয়বহুল ব্যাপার। আসলে তিন ইঞ্চি পরিমাণ লম্বা লিঙ্গই সুস্হ্য সেক্স লাইফের জন্য যথেষ্ঠ, যদি অন্য কোনও শারীরিক সমস্যা না থাকে। সব সময় হাসি-খুশি থাকুন, নিজের উপর আস্হা রাখুন।
পেনিস

পেনিস

আপনার পেনিস বড় না ছোট তা ধরে নেবার আগে মাপ নেয়াটা খুবি গুরুত্বপূর্ণ। পেনিস এর গোঁড়া অর্থাৎ পেটের কাছথেকে পেনিস এর অগ্রভাগ পর্যন্ত উত্থিত অবস্থায় পেনিস এর যে মাপ, সেটাই আপনার পেনিস এর মাপ। এখন কত হলে এই পেনিস এর মাপ কে আপনি স্বাভাবিক বলবেন? আমাদের দেশের পুরুষ দের শারীরিক গঠন পশ্চিমাদের মত নয়। তাই ইন্টারনেট এ তাদের তথ্য পড়লে মন খারাপ হওয়াটাই স্বাভাবিক। আমাদের উপমহাদেরশের মানুষের শারীরিক কাঠামো অনুযায়ী উত্থিত অবস্থায় পাঁচ ইঞ্ছি থেকে ছয় ইঞ্ছি হয়ে থাকে।

দেখে নিন লিঙ্গের সঠিক মাপ কিভাবে নিতে হয়?

পেনিসের মাপ নেওয়ার পদ্ধতি

পেনিসের মাপ নেওয়ার পদ্ধতি


পেনিস এনলারজমেন্ট মেথড গুলো (Penis enlargement method) আসলেই কি কাজ করে?
যখন আমরা খুঁজতে গেলাম যে পেনিস এনলারজমেন্ট মেথড গুলর পেছনে বৈজ্ঞানিক কোন প্রমান বা ব্যাখ্যা আছে কিনা, আমরা এমন কোন উৎস খুঁজে পাইনি যা কোন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি দারা পরিক্ষিত নিরাপদ পদ্ধতি। বেশিরভাগ ওয়েব সাইট এই রয়েছে তাদের পণ্য সম্পর্কে অতি মুল্লায়িত কথাবার্তা, অসমর্থিত তথ্য উপাত্ত, মিথ্যা প্রশংসা পত্র, এমনকি মিথ্যা ডাক্তারি প্রশংসা ও। যদি আসলেই এমন কোন পদ্ধতি থাকত, তাহলে আমরা তা জেনে যেতাম যেমনটা আমরা জানি ভায়াগ্রা (Viagra) সম্পর্কে যা লিঙ্গ উত্থানে সাহায্য করে।
ছোট পেনিসের চিত্র

ছোট পেনিসের চিত্র

পুরুষাঙ্গ বিষয়ক তথ্যাদি :-

উত্তেজিত অবস্থায় পুরুষ লিঙ্গের গড় দৈর্ঘ্য হয়ে থাকে 4.7 থেকে 6.3 ইঞ্চি। অনেকের মতে পেনিসের গড় দৈর্ঘ্য ৫.১-৫.৯ ইঞ্চি।
তবে আপনার পেনিস যদি লম্বার সর্বনিম্ন 4 (চার) ইঞ্চিও হয়ে থাকে তাহলেও আপনার স্ত্রীকে তৃপ্তি দিতে আপনার কোনো সমস্যা হবে না। অনেকে আবার এও বলে থাকেন স্ত্রীকে অরগাজম দিতে মাত্র ৩ ইঞ্চি লম্বা পেনিস হলেই যথেষ্ট।
বড় পেনিস মানেই বেশি মজা, কথাটা ঠিক নয় । আপনার ডিউরেশন কত সেটাই আসল । স্বাভাবিক টাইম ৭-১০ মিনিট।
পেনিস কখনই একেবারে সোজা হয়না । একটু বাকা থাকেই ।
পেনিসের গোঁড়া চিকন আগা মোটা এটা কোন সমস্যা নয় । অপপ্রচারের ফলে সবারই এটা একটা ভুল ধারনা হয়ে গেছে ।
কোন যাদুকরী তেল বা মালিশ পেনিস তেমন বড় করতে সক্ষম নয় । এগুলা ভুয়া । তবে সতেজ রাখার বা করার জন্য মালিশ বা ম্যাসেজ ব্যবহার করতে পারেন আমরা যেমন শরীরের ত্বক সতেজ রাখার জন্য সরিষার তেল বা অনান্য প্রসাধনী ব্যবহার করে থাকি।
বেশি বড় পেনিস হলে মেয়েরা মজা পাওয়ার বদলে ব্যাথা পায় । এমনকি সেটা যৌন আতঙ্কেও রুপ নিতে পারে।
ক্ষুদ্র পেনিস বলতে ২.৭৬ ইঞ্চির চেয়ে ছোট পেনিস বুঝায় । সেক্ষেত্রে ডাক্তার দেখাতে হবে।
গোঁড়া চিকন আগা মোটা বা বাঁকা পেনিস যৌনমিলনে কোন সমস্যার সৃষ্টি করেনা ।
পেনিসটাকে নিয়ন্ত্রণ করুন। একমাত্র স্ত্রী ছাড়া আর কোথাও ব্যবহার করবেন না।
স্ত্রী ছাড়াই পেনিস দাঁড়াইয়া যায় এমন কোনো কাজ যেমন: বেগানা নারীর দিকে তাকানো, অশ্লীল সাহিত্য পড়া, কম্পিউটার বা মোবাইলে খারাপ কিছু দেখা থেকে বিরত থাকুন।
৪০ দিনের মধ্য পুরুষাঙ্গের গোড়ার চুল কাটুন।
আপনার যৌন স্বাস্থ্য এর দিকে নজর দিন। এটাও আপনার শরীরেরই অংশ।
যৌন সমস্যার ব্যাপারে ভুল করেও কখনো অবহেলা করবেন না। যে কোনো যৌন সমস্যায় কোনো প্রকার সংকোচ না করে তাত্ক্ষণিক ভাবে যৌন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

আপনার ডক্টরের পরামর্শ:

প্রায় একশত বছরের বেশি সময় ধরে এর জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা অথবা চেষ্টা করেও লিঙ্গের আকার পরিবর্তনে তেমন একটা ভাল ফলাফল/আবিষ্কার এখন পর্যন্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে এটা সত্য যে – বিভিন্ন খাবার বড়ি, ক্রিম, ব্যায়াম, লকিং মেশিন এবং অস্ত্রপ্রচারের মাধ্যমে এখন মানুষ তার পেনিসের আকার পরিবর্তনের চেষ্টা করে থাকে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে তাদের কোনটিই কার্যকর হয়না। বরং এ রকম চেষ্টার ফলে অনেক পুরুষই লিঙ্গত্থান সমস্যাসহ নানবিধ যৌন জটিলতায় পতিত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
লিঙ্গ শক্ত না হওয়ায় কারণ কি?
প্রায় অর্ধেক প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ মনে করেন তাদের পুরষাঙ্গ অনেক ছোট। বিশ্বজুড়ে সাধারনত উত্তেজিত অবস্থায় পুরুষ লিঙ্গের গড় দৈর্ঘ্য হয়ে থাকে 4.7 থেকে 6.3 ইঞ্চি। অনেকের মতে পেনিসের গড় দৈর্ঘ্য ৫.১-৫.৯ ইঞ্চি। তবে লিঙ্গের আকার ব্যাক্তি এবং অঞ্চলভেদে অনেক পার্থক্য দেখা যায়। বিরল ক্ষেত্রে পারিবারিক (জেনেটিক) এবং হরমোন জনিত সমস্যার কারনে ৩ ইঞ্চির চেয়েও অনেক ছোট লিঙ্গ দেখা যায়। চিকিত্সা শাস্ত্রে এটি মাইক্রোপেনিস নামে পরিচিত। তবে পেনিস ৪(চার) ইঞ্চি হলেই স্ত্রীকে অর্গাজন দিতে কোনো প্রকার অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। অনেকের ক্ষেত্রে প্রোষ্টেইট ক্যান্সার অপারেশান সহ নানা রোগের কারনে লিঙ্গের আকার ছোট হয়ে যেতে পারে।
বাঁকা লিঙ্গ কেন হয় ? বাঁকা লিঙ্গ সোজা করার উপায়
লিঙ্গের আকার বা এর গঠন বংশগত হয়ে থাকে। প্রায় অর্ধেক প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ মনে করেন তাদের পুরষাঙ্গ অনেক ছোট। বিশ্বজুড়ে সাধারনত উত্তেজিত লিঙ্গের গড় আকার ৫ থেকে ৬ ইঞ্চি। তবে লিঙ্গের আকার ব্যাক্তি এবং অঞ্চলভেদে অনেক পাথ্যর্ক দেখা যায়।
আমাদের দেশ তথা দক্ষিন এশিয়ার পুরুষের জন্য সর্বচ্চো ৬ ইঞ্চি একটি ভাল আকার। বিরল ক্ষেত্রে পারিবারিক (জেনেটিক) এবং হরমোন জনিত সমস্যার কারনে ৩ ইঞ্চির চেয়েও অনেক ছোট লিঙ্গ দেখা যায়। ঔষধ শাস্ত্রে এটি মাইক্রোপেনিস নামে পরিচিত। তবে অনেকের ক্ষেত্রে প্রোষ্টেইট ক্যান্সার অপারেশান সহ নানা রোগের কারনে লিঙ্গের আকার ছোট হয়ে যেতে পারে।

ডক্টর মাইকেল ও’লেয়ারী (প্রফেস্যার, হাবর্ড মেডিক্যাল স্কুল। ইউরোলজিষ্ট, ব্রিগহাম এন্ড ওমেন্স হসপিটাল ইন বোষ্টন) বলেন, “বিশ্বাস করুন, আমি যদি জানতাম কি করে নিরাপদে এবং সত্যিকারেই লিঙ্গের আকার বড় করা যায় – তাহলে আমি তা প্রেসক্রাইব করে কোটিপতি হয়ে যেতাম। কিন্তু আমি এটা জানিনা – এমনকি এখনো এ রকম কোন পদ্ধতি আবিষ্কার-ই হয়নি!”।
তবে হে এর জন্য একটি ভালো ব্যায়াম আছে যা নিয়মিত করলে আপনার লিঙ্গের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করবে এবং আপনার লিঙ্গকে মোটা এবং লম্ববা করবে। এই পদ্ধতিটি (এই লিঙ্ক থেকে দেখে নিতে পারেন) এখানে এই বিষয়ে বিশাদ ভাবে বলা আছে আসা করি আপনার এই সমস্যার কিছুটা সমাধান হবে। ধন্যবাদ

যয়নাব-মুহাম্মাদ সম্পর্ক বিশ্লেষণ


লিখেছেন: তামান্না ঝুমু
যয়নাব ছিল মুহাম্মদের আপন ফুফাত বোন। যায়েদ ছিল পালিতপুত্র। তাই যয়নাবকে যায়েদ ডাকতো ফুফু।
মুহাম্মদ নিজে ঘটকালি করে ফুফু-ভাতিজার বিবাহ দিয়ে দিলেন। বিয়ের পর ফুফু-ভাতিজা হয়ে গেল স্বামী-স্ত্রী।
ভাতিজা, ফুফুকে ডাকতে লাগলো বিবি। ফুফু, ভাতিজাকে ডাকতে লাগল স্বামী।
অপরদিকে মামাত ভাই মুহাম্মদ হয়ে গেল যয়নাবের শ্বশুর-আব্বা।
ভাইজানকে, যয়নাব ডাকতে লাগলো আব্বা।
আবার কাজিন হতে বধূ যয়নাবকে মুহাম্মদ বিবাহ করে ফেললেন। মুহাম্মদের বাকি বিবিরা আগে ছিল যয়নাবের ভাবী; তারপরে হল আম্মা, অবশেষে হল সতীন!
এবার যায়েদের বৌ হয়ে গেল তারই নিজের আম্মা।
আবার ভাজিতা থেকে স্বামী যায়েদ হয়ে গেল যয়নাবের পুত্র!
আবার মুজাম্মদের ফুফাত বোন হতে বধূ, বধূ হতে বিবি!
মুহাম্মদ হল যয়নাবের একাধারে ভাই-আব্বা-স্বামী।
ভাগ্যের কী নিদারুণ ঠাট্টা!

ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা


ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা সম্পর্কিত আলোচনা হচ্ছে এই আর্টিকেলের মূল বিষয়বস্তু।
ধর্মের স্বভাব অদ্ভূত। প্রতিটি ধর্ম অন্য ধর্মের থেকে আলাদা হয়। যে সকল মডারেট বলেন, প্রতিটি ধর্মই কল্যানকর, প্রতিটি ধর্মই মানুষের মঙ্গলের জন্য সৃষ্ট হয়েছে, তারা এই কথা কোন বিবেচনা থেকে বলেন, আমার বুঝে আসে না। সকল ধর্ম অন্যান্য ধর্মকে ঘৃণা করে, অন্যান্য ধর্মের বিধানাবলীকে তুচ্ছ মনে করে। ধর্মের এই মানসিকতাকে গ্রহণ করে মানুষ কীভাবে কল্যাণ লাভ করতে পারে, কে জানে!
প্রতিটি ধর্মের ভেতরে থাকে অসংখ্য শাখা। সাধারনত এই শাখাগুলো হয় একটি আরেকটি থেকে অনেকখানি আলাদা। এদের মাঝে যতোটুকু মিল থাকে, অনেকক্ষেত্রে অমিল থাকে তার চেয়ে বেশী। আবার প্রতিটি শাখার মাঝে রয়েছে অনেক প্রশাখা। এসব প্রশাখার মধ্যেও আছে অনেক অমিল। প্রতিটি প্রশাখা নিজ ধর্মের অন্য সকল প্রশাখা, সকল শাখা ও অন্য সকল ধর্মকে প্রচণ্ড ঘৃণা করে।
আসুন, এবার আমরা ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখার নাম ও তাদের চিন্তাধারা সম্পর্কে একটু আলোচনা করি।

সুন্নি ইসলাম

ইসলামের বৃহত্তম শাখা সুন্নি। এর অসংখ্য উপশাখা রয়েছে। এদের মধ্যে প্রধান উপশাখাসমূহ হলো-
এক, হানাফি উপশাখাঃ 
এদেরকে সবচেয়ে বেশী দেখা যায় আমাদের দক্ষিণ এশিয়ায়। এদের ধর্ম পালনের রীতি-নীতি সম্পর্কে আমাদের সবার কমবেশী ধারনা রয়েছে। তাই সেগুলো আলাদা করে উল্লেখ করছি না। এখন এরা মোটামুটি বেরেলভি, দেওবন্দি, ইলিয়াসি জামাত, মওদুদি জামাত প্রভৃতি আকিদায় বিভক্ত হয়ে গেছে।
বেরেলভি বা বালাকোটি সুন্নিগণ শুরুতে ওহাবি মতবাদের অনুসারি হলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন ইসলামি ব্যক্তিত্বকে, যেমন মাওলানা সৈয়দ আহমদ বেরেলভি, মাওলানা কেরামত আলী জৌনপুরী প্রভৃতি মৌলবিকে আল্লাহর মতো আলিমুল গায়েব বা অদৃশ্য সম্পর্কে জ্ঞানী বলে বিবেচনা করে এবং এদেরই আদেশ-নির্দেশের অন্ধ অনুকরণ করতে থাকে। এরা বিখ্যাত ‘দারুল হারব’ তত্ত্বের স্রষ্টা। দেওবন্দিগণ ও আহলে হাদিসগণ এদেরকে কাফের হিশেবে আখ্যায়িত করেছে। এমনকি এদের সাথে মেলামেশা করা কিংবা সৌহার্দ্র প্রকাশের বিরুদ্ধেও ফতোয়া জারি করেছে।
মাওলানা কাসেম নানতুবি আরো কয়েকজনের সহযোগিতায় ভারতের উত্তর প্রদেশে দেওবন্দ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এই মাদ্রাসা থেকে যে ইসলামের জন্ম হয়, তা ‘দেওবন্দি ইসলাম’ নামে পরিচিত। আমাদের দেশের অধিকাংশ ক্বওমি মাদ্রাসা এদের নেতৃত্ব মেনে চলে। এদেশে জঙ্গিবাদ মূলত এদের হাত ধরেই সৃষ্টি হয়েছে।
ইলিয়াসি তাবলিগ জামাত চিল্লার দ্বারা প্রচারকেই ইসলামের মূল লক্ষ্য বলে মনে করে। এরা ছয় উশুলে আস্থা রাখে এবং বলে যে, ভালো করে দোয়া-দরুদ পাঠ, নামাজ-রোজা পালন ও বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌছে দেয়াই মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় কাজ।
মওদুদি জামাত রাষ্ট্রের শাসনক্ষমতা দখলকে ভাবে তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় দায়িত্ব। আমাদের দেশের জামাতে ইসলামির কর্মকাণ্ড হচ্ছে মওদুদি জামাতের চিন্তাধারার স্পষ্ট প্রতিফলন। এরা নামাজ-রোজা-হজ্জ্ব-যাকাতকে সাধারন ট্রেনিং কোর্স মনে করে, যা মূলত ঈমানকে মজবুত করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে সহায়ক হয়। অন্যান্য অনেক সুন্নি এদের পেছনে নামাজ আদায় করাকে মাকরুহে তাহরিমি বলে ঘোষণা দিয়েছে।
বেরেলভি-দেওবন্দি-ইলিয়াসি জামাত ও মওদুদি জামাত প্রমুখ ইসলামের একই শাখার একই উপশাখার অন্তভূর্ক্ত। কিন্তু এরা কেউ কাউকে সঠিক মনে করে না, সহ্য করতে পারে না। আমি মওদুদি জামাত সংশ্লিষ্ট ইসলামি ছাত্রশিবিরের সাথে যুক্ত ছিলাম। আমি দেখেছি, ইলিয়াসি তাবলিগ জামাতকে এরা ঠিক কতোটা ঘৃণা করে।
দুই, শাফেয়ি উপশাখাঃ 
মূলত ফিলিস্তিন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, জর্দান, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, সোমালিয়া, কুর্দিস্তানের অধিকাংশ এবং সৌদি আরব, ইয়েমেন ও মিসরের কিছু অংশের মুসলমানগণ ইমাম শাফেয়ি’র অনুসারি। এরা হানাফিদের থেকে ভিন্ন ভাবে নামাজ-রোজা পালন করে থাকে। শাফেয়ি ও হানাফি মাযহাবের রক্তাক্ত দ্বন্দ্বে ইসলামের ইতিহাস পরিপূর্ণ।এদের মতে, বিয়ের সময় অভিভাবককে অবশ্যই উপস্থিত থাকতে হবে, নিজের মেয়েকেও হাত দিয়ে স্পর্শ করলে ওজু ভেঙ্গে যাবে, দাড়ি কেটে ফেলা জায়েজ ইত্যাদি।
তিন, মালেকি উপশাখাঃ 
উত্তর ও পশ্চিম আফ্রিকা, আরব আমিরাত, কুয়েত এবং সৌদি আরব ও মিসরের একাংশের মুসলমানগণ মালেকি মাযহাব মেনে চলে। এরাও অন্য সবার থেকে আলাদা হয়ে নিজেদের মতো করে ধর্ম-কর্ম পালন করে। এদের মতে, একজনের হজ্জ অন্যজন প্রক্সি দিতে পারবে না, দীর্ঘশ্বাস ফেললে নামাজ ভেঙ্গে যাবে, কাকের মাংস খাওয়া জায়েজ, মিসওয়াক করা জায়েজ নয়, শুক্রবারে রোজা রাখতে হবে ইত্যাদি।
চার, হাম্বলি উপশাখাঃ 
সৌদি আরবের অধিকাংশ মানুষ এই মাযহাবের অনুসারি। সৌদি আরব ছাড়াও কাতারের অধিকাংশ এবং সিরিয়া ও ইরাকের কিছু মুসলমান এই মাযহাব অনুসরন করে থাকে। অন্যদের মতো এদেরও নিজস্ব নিয়ম রয়েছে। এদের মতে, ওজু নিয়ে সামান্যতম সন্দেহ হলে বা মাংস খেলে ওজু ভেঙ্গে যাবে, সামান্যতম রক্ত বের হলেও রোজা ভেঙ্গে যাবে, নগদ টাকায় যাকাত দেয়া যাবে না, এজিদ ছিল ন্যায়ের পক্ষে ও ইমাম হোসাইন ছিল অন্যায়ের পক্ষে ইত্যাদি।
হানাফি-শাফেয়ি-মালেকি ও হাম্বলি হচ্ছে ইসলামের বিখ্যাত চার মাযহাব। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এরা নবী মুহাম্মদকে পাশ কাটিয়ে তার সাহাবাদের উক্তি ও কাজ-কর্মকে শরয়ি দলিল হিশেবে গ্রহণ করে। এতদসত্ত্বেও এদের মধ্যে প্রচুর দ্বন্দ্ব বিরাজমান। এদের কেউ একটি বিষয়কে ফরজ বা আবশ্যক বলে মনে করলে অন্যজন মনে করে মুস্তাহাব এবং অন্য আরেকজন মনে করে হারাম! এধরনের মিউচুয়ালি এক্সক্লুসিভ দ্বন্দ্বের ফলে অতীতে প্রত্যেকের জন্য একই স্থানে আলাদা আলাদা মসজিদ নির্মান করতে হয়েছিল। এমনকি, এক মাযহাব অন্য মাযহাবে বিয়ে করা হারাম বলে ফতোয়া জারি করেছিল। এখন প্রত্যেককে সমানভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে বলে দ্বন্দ্ব কিছুটা কমে গেছে।
পাঁচ, ওহাবি বা সালাফি উপশাখাঃ 
সৌদি রাজপরিবারের সদস্যগণ এসব মতবাদ পালন করে থাকে। এরা কোরান-হাদিস ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে ইসলামের প্রথম দিকের আলেমগণ তথা সাহাবি, তাবেঈ ও তাবে তাবেঈগণের অনুসরন করে। এরা সুফিবাদের সম্পূর্ণ বিরোধী। এরা আল্লাহকে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সহকারে সশরীরে অস্তিত্বশীল বলে মনে করে, যিনি আকাশের অনেক উপরে অবস্থান করছেন। মুহাম্মদের জন্মদিন পালন করা, তার বিষয়ে কোন স্মরণসভার আয়োজন করা কিংবা তার কবর জেয়ারত করাকে এরা শিরক ও হারাম মনে করে। মক্কা ও মদিনার সকল সাহাবার কবর ভেঙ্গেচুরে এরা সমতল করে দিয়েছে। অতিরিক্ত প্রতিটি ধর্মীয় কাজকেই এরা ভাবে বিদ’আত। তারা নবীগণকেও নিষ্পাপ বলে মনে করে না।
ছয়, আহলে হাদিস উপশাখাঃ 
এই মতবাদের জন্ম ভারতীয় উপমহাদেশে। এরা সুনির্দিষ্ট ভাবে কোন মাযহাব অনুসরন করে না। মাযহাব অনুসরন করাকে এরা শিরক বা অমার্জনীয় অপরাধ হিশেবে চিহ্নিত করে থাকে। অর্থাৎ, এদের চোখে হানাফি-মালেকি-শাফেয়ি-হাম্বলিগণ মুশরিক। এরা মনে করে, যারা নামাজ পড়ে না, তারা কাফির এবং তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে হবে। দেওবন্দি ও বেরেলভি আলেমগণ এদেরকে কাফের ঘোষণা করেছে।
সাত, জাহিরি উপশাখাঃ 
সুদান, মরক্কো ও পাকিস্তানের বেশকিছু মানুষ এই মাযহাব অনুযায়ী ধর্ম-কর্ম করে। আগে অনেক মানুষ এর অনুসারী ছিল। এখন দিনে দিনে এটি দূর্বল হয়ে পড়ছে। এদের সাথে আহলে হাদিস মতাদর্শের অনেক মিল পরিলক্ষিত হয়।

শিয়া ইসলাম

ইসলামের দ্বিতীয় বৃহত্তম শাখা শিয়া। শিয়া-সুন্নির মারাত্নক সংঘাতই মধ্যপ্রাচ্যকে এখন বানিয়ে ফেলেছে নোংড়া বেহেশত। এতে করে কতো মানুষের প্রাণ যে ঝরে গেছে, কে জানে? শিয়াদের মধ্যেও রয়েছে অনেকগুলো উপশাখা। চিন্তাভাবনা ও কর্মপদ্ধতির দিক থেকে এই উপশাখাগুলোও পরস্পর থেকে আলাদা।
এক, ইশনা আশারিয়া বা বার ইমামিয়া বা জাফরিয়া উপশাখাঃ 
ইরাক, ইরান, আজারবাইজান, লেবানন ও বাহরাইনের অধিকাংশ মানুষ এর অনুসারি। এছাড়া পাকিস্তান, আফগানিস্তান, কুয়েত ও আলবেনিয়ার অনেক মানুষ ইশনা আশারিয়া শিয়া। এদের ধারনা, মুহম্মদের মৃত্যুর পর হযরত আলী হচ্ছেন মুসলমানদের বৈধ নেতা বা ইমাম। সাহাবাগণ হযরত আলীকে ইমাম না বানিয়ে আবু বকর-ওমর-উসমানকে খলিফা বানিয়েছে, যা আল্লাহর আদেশের সরাসরি লঙ্ঘন। তারা অধিকাংশ সাহাবিকে মুনাফিক মনে করে এবং খুতবায় নিয়মিত গালিগালাজ করে। তারা বিশ্বাস করে বারো ইমামতে, যা মুহম্মদ থেকে শুরু করে আলীর বংশধর ইমাম মাহদির মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। এই ইমামগণের মর্যাদা নবী-রাসুলদের চেয়ে বেশী।
ইশনা আশারিয়াদের কিছু কর্মকাণ্ড অদ্ভূত। এরা মুতা বিবাহ বা পতিতাবৃত্তিকে জায়েজ মনে করে, তিনবারে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, হজ্জ্বের চেয়ে হযরত আলীর মাজার দর্শনকে অধিক পূণ্যের বলে বিবেচনা করে। এদের নিজস্ব হাদিস আছে। বোখারি, মুসলিম প্রমুখ হাদিসগ্রন্থে এরা আস্থা রাখে না।
দুই, জাইদিয়া বা সপ্ত ইমামিয়া উপশাখাঃ 
ইয়েমেনের অর্ধেক মানুষ এই মতাদর্শের শিয়া। বহুল আলোচিত হুথিগণ এদের মধ্যে অন্যতম। শিয়াদের মধ্যে এরা সবচেয়ে প্রাচীন। আগে এদের রমরমা অবস্থা থাকলেও ১৯৬২ সালে ইমামত লোপের পরে তারা বেকায়দায় পড়েছে। অনেক শতাব্দী আগে ইমাম নির্বাচনের প্রশ্নে মতানৈক্য হওয়ায় অন্য একদল শিয়া আলাদা হয়ে ইশনা আশারিয়া সম্প্রদায়ের সৃষ্টি করে। এরা বিশ্বাস করে মুহাম্মদ আল বাকিরের ইমামতে, আর জাইদিয়া শিয়াগণ জাইদ ইবনে আলীর ইমামতে বিশ্বাস করতে শুরু করে। এরা ইমাম হোসাইন পর্যন্ত আধ্যাত্নিকতায় বিশ্বাস করে, তারপরের ইমামগণের স্বর্গীয় আধ্যাত্নিকতায় বিশ্বাস করে না।
তিন, ইসমাঈলিয়া উপশাখাঃ 
এরা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ভারত, চীন, মধ্য এশিয়া ও ইউরোপে এদের দেখা মেলে। এরা বলে, ইসলামের সপ্তম ইমাম হচ্ছেন ইসমাঈল ইবনে জাফর। অন্যদিকে জাফরিয়া শিয়াগণ বলে, সপ্তম ইমাম মুসা ইবনে কাজিম। এত্থেকে দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে শিয়াদের এই নতুন উপশাখা যাত্রা শুরু করে।
এদের বিশ্বাস হলো, আধ্যাত্নিকতা নবী মুহাম্মদ হতে হয়রত আলী এবং তার থেকে বংশানুক্রমে প্রবাহিত হতে হতে বর্তমান পর্যন্ত চলে এসেছে। এই স্বর্গীয় আধ্যাত্নিকতা এখন অবস্থান করছে তাদের বর্তমান ইমাম প্রিন্স করিম আগা খানের শরীরে। আগা খান তাদের ৪৯তম ইমাম। কোন পাপ বা ভুল তাকে স্পর্শ করতে পারে না। প্রতিটি ইসমাঈলিয়াকে তাদের আয়ের বারো ভাগের এক ভাগ ইমাম আগা খানের ভাণ্ডারে প্রদান করতে হয়। অধঃস্তনদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থে ফুলে-ফেপে ওঠা এই সম্পদশালী ব্যক্তিকে প্রায়ই খবরে দেখা যায়। বর্তমানে ঈসমাইলিয়া শিয়াগণ নিজারি, হাফিজি, তাইয়াবি প্রভৃতি বিভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে।
চার, আলাভি বা নুসাইরি বা আনসারি উপশাখাঃ 
ক্ষমতাসীন সরকারসহ সিরিয়া এবং তুরস্কের বেশকিছু মুসলমান আলাভি শিয়া। এরা মূলত ইশনা আশারিয়া থেকে এসেছে। এরা মনে করে, আল্লাহ অনেকবার মানুষের রূপ ধরে পৃথিবীতে আগমন করেছেন। এমনকি মুহাম্মদ, হযরত আলী ও সালমান ফার্সি’র বেশ ধরেও তিনি পৃথিবীতে এসেছেন। অর্থাৎ মুহম্মদ, সালমান ফার্সি ও হযরত আলী ছিলেন মূলত আল্লাহ। তারা পূনর্জন্মে বিশ্বাস করে।

আহমদিয়া ইসলাম

ইসলামের তৃতীয় বৃহত্তম শাখা আহমদিয়া। অনেকের কাছে এরা কাদিয়ানি নামে পরিচিত। প্রথমদিকে তারা হানাফিদের একটি উপশাখা ছিল। পরবর্তীতে হানাফিদের চিন্তাধারা পরিত্যাগ করে এরা নতুন মতবাদ সৃষ্টি করে। আমাদের উপমহাদেশে অসংখ্য আহমদিয়া মুসলমান বসবাস করে। এরাও মোটামুটি দু’ভাগে বিভক্ত।
এক, আহমদিয়া আঞ্জুমান ইশাত ই ইসলাম উপশাখাঃ 
এদের মতে, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা মির্জা গোলাম আহমেদ কাদিয়ানি হচ্ছেন প্রতিশ্রুত মসিহ, ইমাম মাহদি ও যীশু খ্রিস্ট। তবে তিনি নবী নন। তারা মনে করে, যীশু খ্রিস্ট ক্রুশবিদ্ধ অবস্থা থেকে পালিয়ে এসে কাশ্মীরে বসবাস করতে শুরু করেন। তিনি এখানেই মারা যান। তার কবর কাশ্মীরের উয আসাফে। এখন তিনি বেহেশতে আছেন। নতুন যীশু যিনি এসেছেন, তিনি শেষ নবী মুহাম্মদের উম্মত। আর তিনি হচ্ছেন মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানি।
দুই, জামাতে আহমদিয়াঃ 
এরা মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানিকে একজন নবী বলে দাবী করে। মুহাম্মদকেও এরা নবী বলে মানে, তবে শেষ নবী হিশেবে স্বীকার করে না। এরা বলে, মুহাম্মদ হচ্ছে পূর্নাঙ্গ নবী। তারপরে অনেক নবী এসেছেন, যারা পূর্ণাঙ্গ নবী নন। গোলাম আহমদ কাদিয়ানি হচ্ছেন এমনি একজন নবী।
চতুর্থ বৃহত্তম শাখা ইবাদি। ওমান ও আফ্রিকার জাঞ্জিবার দ্বীপে এদের দেখা মেলে। এছাড়া আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, লিবিয়া ও পূর্ব আফ্রিকায় এদের বসবাস রয়েছে। ধারনা করা হয়, এরা বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া খারেজিদের একটি উপশাখা। ইবাদিগণ খলিফা আবু বকর ও খলিফা উমরকে সঠিক বলে মানে। তবে অনেকক্ষেত্রে খলিফা আলী ও খলিফা উসমানের বিরোধিতা করে। শিয়াদের মতো এদের নিজস্ব ধর্মীয় নেতা বা ইমাম রয়েছে। এই ইমাম গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত হন। এদের মতে, আল্লাহ কখনো দেখা দেবেন না, বিচার দিবসেও না। কোরানকে এরা সৃষ্টগ্রন্থ মনে করে, আল্লাহর কথা বলে মনে করে না।

সুফিবাদ

ইসলামের অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা সুফিজম। এদের সম্পর্কে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা কঠিন। দেখা যায়, একেক এলাকায় একেকজন সুফি আসন গেড়ে বসেছেন। সেখানে তিনি নিজের আস্তানা তৈরী করেছেন, মানুষজনকে মুরিদ বানিয়েছেন। মুরিদগনের ধর্মকর্মের সবকিছু তাকে ঘিরেই আবর্তিত হয়। তিনি মুরিদকে যা যা করতে বলেন, যেভাবে নামাজ পড়তে বলেন, রোজা রাখতে বলেন, মুরিদগণ তাই করে। এক্ষেত্রে অনেক সুফি নিজস্ব স্বতন্ত্র নিয়ম-কানুন অনুসরন করেন। আমাদের দেশের শাহজালাল, চরমোনাই, দেওয়ানবাগী, কুতুববাগী প্রমুখ হচ্ছেন সুফিবাদের উদাহরণ।
এদের সংখ্যা অসংখ্য। তবে এদেরকে কয়েকটি শ্রেণীতে বিভক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে আলেভি, বেকতাশি, বোরহানিয়া, মেভলেভি, বা’লাভিয়া, চিশতিয়া, রিফাঈ, খালবাতি, নকশাবন্দি, নি’মাতুল্লাহি, কাদেরিয়া, বোস্তামিয়া, সাধিলিল্লা, মাইজভান্ডারি, মোজাদ্দেদিয়া, কালান্ধারিয়া, সোহরাওয়ার্দিয়া ইত্যাদি।
এগুলো ছাড়াও আরো অসংখ্য শাখা আছে ইসলামে। এদের মধ্যে দ্রুজ, আলেভি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। আবার অসংখ্য শাখা-উপশাখা সময়ের সাথে সাথে বিলুপ্ত হয়ে গেছে কিংবা নতুন কোন শাখায় পরিবর্তিত হয়েছে। যারা বিলুপ্ত হয়েছে তাদের মধ্যে খারেজি, মুরজিয়া, মুতাজিলা, মুশাব্বিয়া, জাহমিয়া, জারারিয়াহ, নাজ্জারিয়া, কালবিয়াহ ইত্যাদি অন্যতম।
প্রিয় পাঠক, উপরের সমস্ত শাখা-উপশাখার কেউ কাউকে সহ্য করতে পারে না, কেউ কাউকে ভালবাসে না। সুন্নিদের একটি উপশাখা ফতোয়া দিয়েছে, ‘শিয়াগণ কাফের। যারা তাদের কাফের হিশেবে স্বীকার করে না, তারাও কাফের। যারা তাদের কাফের হওয়া নিয়ে সন্দেহ করে, তারাও কাফের’। তাহলেই বুঝুন অবস্থা!
প্রতিটি ধর্মই এরকম অজস্র শাখা-উপশাখায় বিভক্ত। ক্রিশ্চিয়ানদের মধ্যে ক্যাথলিক-প্রোটেস্টান্টদের মধ্যকার সংঘাত সম্পর্কে সবার ধারনা আছে। তাহলে, আমি কোন ধর্মের কোন শাখাটির মধ্যে কোন উপশাখাটিকে অনুসরন করবো, যেখানে সমস্ত উপশাখা নিজেদের ব্যতিরেকে অন্যদের পথভ্রষ্ট বলে ভাবে এবং ঘৃনা করে!

হযরতের অনুকরণীয় সুমহান চরিত্র

প্রশ্নঃ আপনারা নাস্তিকরা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর বহুবিবাহ নিয়ে নানান কটূক্তি করেন। কিন্তু আপনারা জানেন না, নবী মুহাম্মদ (সাঃ কখনই নিজ ভোগ বিলাস আর যৌনতার জন্য বিবাহগুলো করেন নি। বেশিরভাগ সময়ই বিয়েগুলো করেছেন রাজনৈতিক কারণে। অভাবী দরিদ্র নারীদের তিনি বিয়ে করে সম্মান দিতেন। ঐ সময়ের প্রেক্ষাপট এবং পরিপ্রেক্ষিত বুঝতে হবে। শুধু কোরান হাদিস পড়লেই তো হবে না। সেগুলোর ব্যাখ্যাও জানা থাকতে হবে।
উত্তরঃ তা তো অবশ্যই। তবে এই বিষয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমেই যেই বিষয়টি আমাদের জানা প্রয়োজন, তা হচ্ছে ব্যাখ্যা (Explanation), অজুহাত (Excuse) এবং ন্যায্যতা প্রদান (Justification) করার মাধ্যে পার্থক্য। এগুলোর সংজ্ঞা।
১। যেমন ধরুন, জানা গেল, করিমন বিবি নামক এক গার্মেন্টস শ্রমিক নারী তার গার্মেন্টসের ম্যানেজার ইদ্রিস আলীকে খুন করেছে। এরকম অবস্থায় গ্রেফতার হওয়া করিমন বিবি জানালেন, ইদ্রিস আলী তাকে ধর্ষণ করতে এসেছিল। আত্মরক্ষার জন্য তিনি খুন করে ফেলেছেন। উনার খুনের কোন পূর্ব পরিকল্পনা ছিল না৷ উনি প্রমাণ দেখালেন। দেখা গেল, ইদ্রিস আলী আগেও বেশ কয়েকবার করিমন বিবিকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছে। সে আরো বেশ কিছু মেয়ের গায়ে নিয়মিত হাত দিতো। অনেক মেয়েই এই নিয়ে অভিযোগ করেছে। শেষমেশ করিমন বিবির হাতে সে মারা গেল।
> এই ঘটনাটি একই সাথে ব্যাখ্যা এবং খুনের ন্যায্যতা প্রদান করা৷ আমরা সাহজেই বুঝে নিই, করিমন বিবি ঐ অবস্থায় সঠিক কাজটিই করেছেন।

২। আবার ধরুন, এরশাদ আলী প্রথম স্ত্রীকে রেখেই দ্বিতীয় বিয়ে করেছে। এই বিষয়ে এরশাদ আলী জানালেন, তার প্রথম স্ত্রী অসুস্থ, যৌনতায় অক্ষম। এবং তাকে তালাক দিয়ে নতুন বিয়ে করাটাও অমানবিক। তাই প্রথম স্ত্রীকে রেখে, চিকিৎসা এবং সেবা করেই তিনি শারীরিক ও মানসিক সুখের জন্য আরেকজন স্ত্রী এনেছেন৷
এই ঘটনার ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য এবং কাজটিও ন্যায্য। এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। একজন মানুষের যৌন চাহিদা থাকবেই। অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসা করিয়ে তিনি যদি আরেকজন স্ত্রী আনেন, তাতে বড় কোন সমস্যা নেই।

৩। কিন্তু ধরুন, হাসান আলী নামক লোক একই সাথে চারটি বিবি রাখেন। কাজের লোকের সাথেও সেক্স করেন। আবার পতিতালয়েও যান। ব্যাখ্যা হিসেবে তিনি জানালেন, অভাবী কাজের লোকের দুঃখ দুর্দশা দেখে তার মন কাঁদে। তাই কাজের মেয়েদের সাথে সেক্স করে তিনি তাদের সুখ দিয়ে দুঃখ ভোলাতে চান। আবার, কোন অসহায় নারীকে দেখলে তার মনে কষ্ট লাগে। তাই তিনি তাদের বিয়ে করে ঘরে নিয়ে আসেন। আবার পতিতালয়ের মেয়েদের দেখে তার খুব খারাপ লাগে৷ তাই ঐসব মেয়েদের তিনি টাকাপয়সা দিতে পতিতালয়ে চলে যান। পতিতারা তো সেক্স না করলে টাকা নেবে না। তাই নিতান্তই বাধ্য হয়ে উনি পতিতালয়ের মেয়েদের সাথে অনিচ্ছুকভাবে সেক্স করে টাকাগুলো দিয়ে আসেন। আসলে অভাবী অসহায় মেয়েদের সাহায্য করাই উনার উদ্দেশ্য। উনি যৌনতার জন্য বা উনার কামুক স্বভাবের জন্য এগুলো করেন না। মানবিক কারণেই করেন। উনি নারীদের সর্বোচ্চ সম্মান এবং সুমহান মর্যাদা দিতে চান।

৪। আবার ধরুন, সায়দাবাদী পীর সাহেব তার অনেক ভক্ত নারীর সাথে যৌনকর্ম করেন। ব্যাখ্যা হিসেবে উনি বললেন, আল্লাহ পাক স্বপ্নে এসে উনাকে এসব কাজ করার নির্দেশ দেন। তিনি তার ভক্ত নারীদের দোজখের ভয়ভীতি দেখান, এবং আল্লাহর হুকুমের কথা বলে আতঙ্কিত করেন। শিক্ষাদীক্ষাহীন অসংখ্য নারী দোজখে যাওয়ার ভয়ে রাজী হয়ে যান। তখন সায়দাবাদী পীর সাহেব, আল্লাহর হুকুমে নিতান্তই নিরুপায় হয়ে উনি উনার নারী ভক্তদের কাপড় খোলেন। উনার আসলে কোন ইচ্ছাই থাকে না। কিন্তু আল্লাহর নির্দেশ বলে কথা! বরখেলাপ করা তো যায় না।

৩ এবং ৪ ঘটনাগুলো লক্ষ্য করুন। এরকম ব্যাখ্যাকে আমরা বলবো, অজুহাত তৈরি। এরকম ঘটনা কোনভাবেই জাস্টিফাই হয় না৷ তা যত জোর গলাতেই এইসব তথাকথিত ব্যাখ্যা দেয়া হোক না কেন। কাবজাব বলে গোঁজামিল দিয়ে ব্যাখ্যা দেয়া হলেই তো হলো না। ব্যাখ্যাটি ভ্যালিড হতে হবে। তাহলেই সেটি ন্যায্য হতে পারে। নতুবা সেটি হবে অজুহাত।
এবারে মহানবীর জীবনের ঘটনাগুলোর ব্যাখ্যা, প্রেক্ষাপট এবং পরিপ্রেক্ষিত আমরা বুঝবো। আসুন আলাপের আগে একটি সহিহ হাদিস পড়ে নিই চলেন।
পরিচ্ছদঃ ২. কোন মহিলাকে দেখে কোন পুরুষের মনে যৌন কামনা জাগ্রত হলে সে যেন তার স্ত্রীর সাথে অথবা ক্রীতদাসীর সাথে গিয়ে মিলিত হয়
৩২৯৮-(৯/১৪০৩) আমর ইবনু আলী (রহঃ) ….. জাবির (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মহিলাকে দেখলেন। তখন তিনি তার স্ত্রী যায়নাব এর নিকট আসলেন। তিনি তখন তার একটি চামড়া পাকা করায় ব্যস্ত ছিলেন এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের প্রয়োজন পূরণ করলেন। অতঃপর বের হয়ে সাহাবীগণের নিকট এসে তিনি বললেনঃ স্ত্রীলোক সামনে আসে শয়ত্বানের বেশে এবং ফিরে যায় শায়ত্বানের বেশে। অতএব তোমাদের কেউ কোন স্ত্রীলোক দেখতে পেলে সে যেন তার স্ত্রীর নিকট আসে। কারণ তা তার মনের ভেতর যা রয়েছে তা দূর করে দেয়।
* (ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ৩২৭৩, ইসলামীক সেন্টার ৩২৭১)
এই হাদিসটি থেকে আমরা জানতে পারি, হযরত মুহাম্মদ মাঝে মাঝে রাস্তাঘাটে কোন কোন মহিলাকে দেখে এতটাই উত্তেজিত হয়ে যেতেন যে, দৌঁড়ে তার স্ত্রীর কাছে গিয়ে তার ঠাণ্ডা হওয়ার দরকার হতো। মানে তিনি আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন না। তার যৌন কামনা এতটাই চাগার দিয়ে উঠতো যে, তিনি পরিমরি করে ছুটতেন বিবির কাছে। বিবি যেই অবস্থায় থাকতেন, উপরের হাদিসে দেখুন তার বিবি চামড়া পাকা করায় ব্যস্ত ছিলেন, তাকে ধরে নিয়ে “প্রয়োজন” পূরণ করতেন। আমি সহিহ হাদিসের রেফারেন্স দিয়েছি। আবার বলবেন না এই হাদিস ইহুদীরা লিখেছে।
এখানে বলে রাখা প্রয়োজন, রাস্তাঘাটে অফিস আদালতে কাউকে দেখে যৌন কামনা জাগ্রত হওয়া খুব অস্বাভাবিক বিষয় নয়। তবে একজন সভ্য ভদ্র মানুষ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। যারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না, বেসামাল হয়ে যান, পরিমরি করে বিবির কাছে ছুটে যাওয়া লাগে, তাদের আমরা খুব একটা সভ্য মানুষ বলে বিবেচনা করি না। এই যে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখাটা, এ থেকেই একজন মানুষকে আপনি চিনতে পারবেন। তিনি কেমন, তিনি কতটা সভ্য এবং কতটা মানবিক মানুষ। মেয়ে দেখে উত্তেজিত হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক, তবে সেই উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ না করতে পারা ভয়াবহ বিষয়। নবী মুহাম্মদ অনেক সময় মেয়ে দেখে এত বেশি উত্তেজিত হতেন যে, তা নিজে নিজে কমাতে না পেরে বিবির কাছে দৌঁড়ে যেতেন।
এবারে আসুন আরেকটি হাদিস পড়ি।
পরিচ্ছদঃ ৫/১২. একাধিকবার বা একাধিক স্ত্রীর সাথে সঙ্গত হবার পর একবার গোসল করা।
২৬৮. আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীগণের নিকট দিনের বা রাতের কোন এক সময়ে পর্যায়ক্রমে মিলিত হতেন। তাঁরা ছিলেন এগারজন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি আনাস (রাযি.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি কি এত শক্তি রাখতেন? তিনি বললেন, আমরা পরস্পর বলাবলি করতাম যে, তাঁকে ত্রিশজনের শক্তি দেয়া হয়েছে। সা‘ঈদ (রহ.) ক্বাতাদাহ (রহ.) হতে বর্ণনা করেন, আনাস (রাযি.) তাঁদের নিকট হাদীস বর্ণনা প্রসঙ্গে (এগারজনের স্থলে) নয়জন স্ত্রীর কথা বলেছেন। (২৮৪, ৫০৬৮, ৫২১৫ দ্রষ্টব্য) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬৬)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারী রাবীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
উপরের হাদিসটি থেকে আমরা জানতে পারি, মহানবীর ত্রিশজন সক্ষম পুরুষের সমপরিমান যৌনশক্তি থাকার কারণে একই দিনে/রাতে নয়জন অথবা এগারোজন স্ত্রীর সাথে পর্যায়ক্রমে মিলিত হতেন। এই নিয়ে সাহাবীদের মধ্যে আবার কানাঘুষাও চলতো। এত সেক্স পাওয়ার তিনি কই পেতেন, তা ভেবে সাহাবীগণ অবাক হয়ে যেতেন। অবাক হওয়াই স্বাভাবিক। ৯ জন বা ১১ জনার সাথে একইদিনে বা রাতে পর্যায়ক্রমে সেক্স করা আজকের যুগে সবচাইতে বড় পর্নস্টার জনি সিন্সের পক্ষেও অসম্ভব ব্যাপার।

ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ কিংবা এরকম কোন পরিস্থিতিতে ঘটেছিল, সে বিষয়ে অবশ্যই আমরা জানবো। কিন্তু সেসব জানা আসলে এই হাদিসটিকে ভুল প্রমাণ করে না। যেমন ধরুন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি টিভি টক শোতে মন্তব্য করেছিলেন, তার নিজের কন্যা দেখতে খুব সেক্সি এবং হট, তার মেয়ে তার মায়ের স্তনের মত বড় স্তন পেয়েছে ( ট্রাম্প হাত দিয়ে ইশারা করে দেখিয়েছেন) এবং এটাও বলেছেন, তিনি তার মেয়ের পিতা না হলে অবশ্যই মেয়ের সাথে ডেইট করতেন।
এখন এই মন্তব্যের নানাধরণের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ আপনি পাবেন ট্রাম্পের সমর্থকদের কাছ থেকে। তারা নানাভাবে ইনিয়ে বিনিয়ে এই বক্তব্যের পক্ষে সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু যত সাফাই গাওয়া হোক না কেন, বক্তব্য থেকে কিন্তু একদমই স্পষ্ট সবকিছু। ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ পরিপ্রেক্ষিত প্রেক্ষাপট বিবেচনা ইত্যাদি আর খুব বেশি এই বক্তব্যকে গ্রহণযোগ্য করে তোলে না।
তারপরেও, এই হাদিসগুলো পড়ার পরেও ধরে নিচ্ছি, মহানবী যৌন কাতর ছিলেন না। নিতান্তই মানবিক কারণে, অথবা রাজনৈতিক কারণে, অথবা আল্লাহর চাপাচাপিতে বাধ্য হয়ে একের পর এক বিয়ে করতেন। মহাবিশ্বের স্রষ্টা আল্লাহ তালাহ মহাবিশ্বের এত এত সমস্যা রেখে মহানবীর বিয়ে নিয়ে সারাক্ষণ এত পেরেশান কেন থাকতেন, খালি বিয়ে কেন করতে বলতেন, সেগুলো বোঝা খুবই কঠিন ব্যাপার। ধরুন, আজকে প্যালেস্টাইনে মুসলমানরা মারা যাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার চলছে। এখন আল্লাহর সাথে আপনার মাঝে মাঝেই ফোনে কথাবার্তা হয়। আল্লাহ ঐসব সমস্যা রেখে আপনাকে খালি বিয়ে করতে বলে। কেন ভাই দুনিয়ায় সমস্যার কোন অভাব আছে? দুনিয়ার একমাত্র সমস্যা কী মুহাম্মদের বিবাহ? অদ্ভুত ব্যাপার স্যাপার।
ধরে নিচ্ছি, মুহাম্মদ মোটেও কামুক স্বভাবের ছিলেন না। তাহলে তো ৯ বা মতান্তরে ১১ জন বা মতান্তরে ১৩ জন বিবি নিয়েই হিমশিম খাওয়ার কথা। মারিয়া কিবতিয়া নামক যৌনদাসীর গর্ভে ইব্রাহিম নামক সন্তানের জন্ম কীভাবে হলো? একজন মানুষের যখন ৯ বা ১১ জন স্ত্রী থাকে, তাদের সকলের সাথেই তার যৌন সম্পর্ক হয় নিয়মিত, তারপরেও সে যৌনদাসীর সাথে যৌনসম্পর্ক রাখে, সে কামুক নন, এরকম বলার জন্য কতটা স্টুপিডিটি দরকার হয়, তা নির্ণয় করাই মুশকিলের বিষয়।
প্রশ্নঃ কিন্তু নবী করিম (সাঃ) যদি এতই কামুক হতেন, তাহলে তিনি বিবি খাদিজার মত বয়ষ্ক নারীকে কেন বিয়ে করলেন? তিনি থাকা অবস্থায় আর একটা বিয়েও কী তিনি করেছেন?
উত্তরঃ না, করেন নি। ধরুন আপনি সহায় সম্বল চালচুলাহীন এক রাখাল বালক। হিসেব নিকেশ ভাল করতে পারেন। এক সম্ভ্রান্ত মহিলা আপনাকে চাকরি দিলো। খেতে পরতে দিলো। এরপরে সেই নিঃসঙ্গ মহিলা আপনাকে বিয়ে করে নিলো। আপনাকে ভাল ঘর, খানাপিনা, ভাল কাপড়ের ব্যবস্থা করে দিলো। মানে সে আপনার বউ হলেও সেই আসলে মালিক। সব ধন সম্পত্তির মালিক সে। আপনি হচ্ছেন চান্স মুহাম্মদ। চান্স পেয়েছেন এরকম একজন ধনী বউকে বিয়ে করার। বিয়ে করে আপনার আর টাকাপয়সা নিয়ে টেনশন রইলো না। কাজ করে খাওয়ার দরকার হলো না। এখন আপনি হেরা গুহায় গিয়ে ঠ্যাঙের ওপর ঠ্যাঙ তুলে আরাম আয়েস করতে পারবেন। গাজাটাজার অভ্যাস থাকলে সেটাও করতে পারেন গুহায় গিয়ে।
এখন আপনি যদি এই অবস্থায় আরেকটা বিয়ে করেন, আপনার ধনী বউ আপনার পশ্চাতদেশে লাথি মেরে আপনাকে ঘর থেকে বের করে দেবে, তাই না? কী মনে হয়? আপনি যদি একদিন দাসীর সাথে সেক্স করতে গিয়ে তার কাছে ধরা খান, সে কী করবে? নির্ঘাত নুনু কেটে দিবে। তাই লুইচ্চামি বদমাইশি সেই সময়ে না করাই আপনার জন্য বুদ্ধিমানের কাজ। আপনার অল্পস্বল্প বুদ্ধি থাকলেও আপনার জানার কথা, লুইচ্চামি করতে গেলেই বিপদ।
খাদিজা মারা যাওয়ার পর ব্যবসাবাণিজ্য থেকে শুরু করে পরিবার সামাল দেয়া নিয়ে মুহাম্মদ বিশাল ক্যারাফার মধ্যে ছিলেন৷ এই ক্যারফা খানিকটা সামাল দেয়ার পরে তিনি বুঝতে পারেন, তার মালিক পত্নী আর নেই। এখন ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার সময় হয়েছে। এরপরে তিনি বিবাহ করা শুরু করেন। দাসীবাদী কাউকেই বাদ রাখেন নি। ৬ বছরের বালিকা থেকে শুরু করে যাকে পেলেন তাকেই ধরলেন। আল্লাহর কাছ থেকে আয়াতও নামিয়ে নিলেন নিজের কামনা চরিতার্থ করার জন্য। মানে যাকে বলে লাইসেন্স টু ফাক। আল্লাহ পাক বলেন,
হে নবী! আপনার জন্য আপনার স্ত্রীগণকে হালাল করেছি, যাদেরকে আপনি মোহরানা প্রদান করেন। আর দাসীদেরকে হালাল করেছি, যাদেরকে আল্লাহ আপনার করায়ত্ব করে দেন এবং বিবাহের জন্য বৈধ করেছি আপনার চাচাতো ভগ্নি, ফুফাতো ভগ্নি, মামাতো ভগ্নি, খালাতো ভগ্নিকে যারা আপনার সাথে হিজরত করেছে। কোন মুমিন নারী যদি নিজেকে নবীর কাছে সমর্পন করে, নবী তাকে বিবাহ করতে চাইলে সেও হালাল। এটা বিশেষ করে আপনারই জন্য-অন্য মুমিনদের জন্য নয়। আপনার অসুবিধা দূরীকরণের উদ্দেশে। মুমিনগণের স্ত্রী ও দাসীদের ব্যাপারে যা নির্ধারিত করেছি আমার জানা আছে।
আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু। [ আল কোরান, ৩৩: ৫০]
এখন আমাকে বলুন তো, মুসলমান পুরুষের জন্য একইসাথে কয়টি বিবি রাখার অনুমতি আছে? আর কয়টি যৌন দাসী বা উপপত্নি রাখার অনুমতি আছে?
মুমিনঃ সামর্থ্য থাকলে এবং সবার প্রতি সমান আচরণ করতে পারলে, সবাইকে সমান ভালবাসা দিতে পারলে চারজন বিবি রাখা যাবে৷ আর দাসীর বিষয়ে কোন নিয়ম নাই।
আমিঃ কিন্তু মুহাম্মদ নাকি খুবই দরিদ্র ছিলেন, আপনারাই বলেন। ক্ষুধার জ্বালায় নাকি উনি কষ্ট পেতেন। তার কোন পেশাও ছিল না। কোন কাজও করতেন না৷ জিহাদ করে খুমুস বা গনিমতের মালের অংশ যা পেতেন তা দিয়েই চলতো। মানে উনার পেশাই ছিল যুদ্ধ করা। তাহলে সামর্থ্য না থাকার পরেও এত বিয়ে করার মানে কী? আর তিনি আয়শাকে সবচেয়ে ভালবাসতেন তা সকলেই জানেন। তিনি তো আপনার নিয়মেরই বিরখেলাপ করেছেন।
মুমিনঃ কিন্তু আয়শা(রাঃ)কে তো উনি যৌন কামনার জন্য বিয়ে করেন নি। আল্লাহ পাকের হুকুমেই বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছেন। এই বিয়েতে উনার কোন ইচ্ছাই ছিল না।
আমিঃ তাই নাকি? উনার কোন ইচ্ছাই ছিল না? উনি শিশু মেয়ের প্রতি যৌন কামনা বোধ করেন নি? কিন্তু, ইসলামী বিশ্বে বিশেষ করে সৌদি আরব এবং ইরানে Mufaakhathah বলে একটি শব্দ বহুল প্রচলিত। এই শব্দটির মানে হচ্ছে, স্ত্রীর থাইতে লিঙ্গ হালকাভাবে ঘষাঘষি করা। এই বিষয়ে একটি বিখ্যাত ফতোয়া রয়েছে, ফতোয়াটি তুলে দিচ্ছি।
ফতোয়া নম্বর 41409 7/5/1421 তারিখঃ ৮ আগস্ট, ২০০০
সৌদি আরবের বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা বিষয়ক স্থায়ী কমিটি প্রদত্ত ফতোয়া।
আব্দেল আজিজ বেন আব্দুল্লাহ বিন মোহাম্মদ আ’ল শেইখ, চেয়ারম্যান
বাকের বেন আব্দুল্লাহ আবু জেইদ, সদস্য
সালেহ বেন ফোজান আল ফোজান, সদস্য
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য এবং নবীগণের প্রতি দু’আ।
প্রশ্নঃ সাম্প্রতিক সময়ে, খুব বেশি মাত্রায় ছড়িয়ে পরেছে যে, বিশেষ করে বিবাহে, পুরুষ মানুষের অল্প বয়সী ছেলেদের গায়ে লিঙ্গ ঘর্ষণ করে যৌন সুখ লাভ করা। এই বিষয়ে কুরআনের নিয়ম কী? বিশেষতঃ আল্লাহর রসূল (সাঃ) আয়েশা (রাঃ)’র শরীরে লিঙ্গ ঘষতেন বলে জানা যায়।
উত্তরঃ ইসলামের শত্রু কাফেরদের দ্বারা প্রেরিত অনৈতিক ভিডিওগুলির মাধ্যমে আমাদের দেশে আমদানি হওয়া বহু অনৈতিক বিষয়াদি বহু শতাব্দী ধরে চলে আসছে, যা মুসলমানদের জন্য করা সঠিক নয়।
ইসলামের সঠিক শিক্ষাটি হচ্ছে, আল্লাহর রাসুল বিবি আয়শাকে বিয়ে করার জন্য মনোনীত করবার সময় আয়শার বয়স ছিল মাত্র ছয় বছর। এই সময়ে আয়শা যৌন কর্মের জন্য পরিপক্ক ছিলেন না। সেই কারণে আল্লাহর রাসুল আয়শাকে কোলে নিয়ে তার দুই থাইয়ের মাঝে আল্লাহর রাসুলের লিঙ্গ মুবারক স্থাপন করে হালকাভাবে নাড়াচাড়া করতেন। আরো উল্লেখ্য, আল্লাহর রাসুলের লিঙ্গ মুবারকের ওপর আল্লাহর রাসুলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল, যা বিশ্বাসীদের নেই। তাই বিশ্বাসীদের মধ্যে এই কাজ প্রাকটিস করার কোন অনুমতি নেই।
এই ফতোয়াতে ছেলে শিশুদের গায়ে লিঙ্গ ঘষাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যা একটি চমৎকার কাজ। তবে তা নিষিদ্ধ করতে গিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়া হয়েছে যে, হযরত মুহাম্মদ বিবি আয়শার থাইয়ের মাঝে লিঙ্গ ঘষাঘষি করে যৌনসুখ লাভ করতেন। একটি অপ্রাপ্তবয়ষ্ক মেয়ে শিশুকে দেখে, তার গায়ে লিঙ্গ ঘষে যৌন সুখ লাভ করার মত রূচি আধুনিক সময়ের বড় বড় পর্নস্টারদেরও হবে কিনা আমি জানি না। কিন্তু নবী মুহাম্মদ তা করতেন বলেই এই ফতোয়া থেকে বোঝা যায়। তাই নবী মুহাম্মদ যৌন কামনার বশবর্তী হয়ে আয়শাকে বিয়ে করেন নি, শুধুমাত্র আল্লাহর নির্দেশ রক্ষার জন্য বাধ্য হয়ে বিয়ে করেছেন, এরকম দাবী করা খুবই হাস্যকর হয়ে যায়।
এবারে আসুন, শেষে আরেকটি হাদিস পড়ে নেয়া যাক।  আয়শা থেকে বর্ণিত একটি হাদিস
৪৭৮৮. ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যেসব মহিলা নিজেকে রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে হেবাস্বরূপ ন্যস্ত করে দেন, তাদের আমি ঘৃণা করতাম। আমি(মনে মনে) বলতাম, মহিলারা কি নিজেকে ন্যস্ত করতে পারে? এরপর যখন আল্লাহ্ তা‘আলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ ‘‘আপনি তাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা আপনার নিকট হতে দূরে রাখতে পারেন এবং যাকে ইচ্ছা আপনার নিকট স্থান দিতে পারেন। আর আপনি যাকে দূরে রেখেছেন, তাকে কামনা করলে আপনার কোন অপরাধ নেই।’’
তখন আমি বললাম, আমি দেখছি যে, আপনি যা ইচ্ছা করেন আপনার রব, তা-ই শীঘ্র পূর্ণ করে দেন।
[৫১১৩; মুসলিম ১৭/১৪, হাঃ ১৪৬৪] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৪২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৪২৫)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
হাদিসটি মন দিয়ে পড়ুন। এবং বুঝুন। এরকম অসংখ্য হাদিস বর্ণনা করা যেতে পারে। হাদিস এবং সিরাত থেকে বিবরণ দিতে থাকলে শেষ হবে না। তাই অল্প কথাতেই বললাম। এরপরেও যদি মনে করেন, আপনার নবী সমস্ত মুসলমানের জন্য আদর্শ, অনুসরনীয় এবং অনুকরণীয় মহান চরিত্র, তাহলে আর কিছু বলার নেই। তবে, অনুরোধ থাকবে, কোন সভ্য সমাজে এই ধরণের জীবন যাপন অনুসরণ করতে যাবেন না। তাহলে আপনাকে সভ্য মানুষ লুইচ্চা লম্পটই বলবে। এমনকি, নবী মুহাম্মদের অনুসারী মুসলমানরা পর্যন্ত বলবে, আপনি একজন আদর্শ লম্পট।

রেফারেন্স সমূহঃ
১।


২।


৩।