Sunday, September 11, 2016

একটি ইসলাম বিদ্দেষী টপিক ও তার জবাবঃ আল কোরানে কি মহাবিশ্ব সৃষ্টির ক্ষেত্রে কোন বৈজ্ঞানিক ভুল আছে ?

এই টপিকটা যথেষ্ট পুরানো আর এর জবাব বিভিন্ন সময়ে দেয়া হয়েছে।
তবে প্রায়ই দেখা যায় অনেক মুসলিমরা নাস্তিকদের সামনে এটার জবাবে তালগোল পাকিয়ে ফেলে।
তাই আমি পুরোনো জবাবগুলোই সামান্য সংযোজন করে একটু গুছিয়ে লিখছি। আজ হঠাত হুইটস্টোন ব্রীজ নামক জনৈক হিন্দুর টাইমলাইনে দেখলাম পুরনো এই লেখা নিয়ে বেশ লাফালাফি করছে।
এক নজরে অভিযুক্ত আয়াতগুলো দেখি,
*তিনিই উহার উপরে পর্বতসমূহ স্থাপন করেছেন এবং তিনি উহাতে আধিক্য প্রদান করেছেন ও তিনি চারি দিবসে উহাতে উৎপন্ন সমূহের নির্ধারন করে দিয়েছেন। সকল প্রার্থীর জন্য সমতুল্য করে দিয়েছেন ৪১ঃ১০
And He placed on the earth firmly set mountains over its surface, and He blessed it and determined therein its [creatures'] sustenance in four days without distinction - for [the information] of those who ask. (Quran 41:10)

*অতঃপর/এছাড়াও তিনি আকাশের দিকে মনযোগ দিলেন যা ছিল ধুম্র কুঞ্জ, অতঃপর তিনি তাকে ও পৃথিবীকে বললেন, তোমরা উভয়ে আস ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়। তারা বলল আমরা স্বেচ্ছায় আসলাম ৪১ঃ১১
Then He directed Himself to the heaven while it was smoke and said to it and to the earth, "Come [into being], willingly or by compulsion." They said, "We have come willingly." (Quran 41:11)

*এবং তিনি সপ্তাকাশ নির্মান করলেন দুই দিনে এবং প্রত্যেক আকশকে তার নিজ কর্মে নিযুক্ত করলেন। এবং আমি সর্ব নিম্ন আকাশকে প্রদীপমালায় সুসজ্জিত করলাম। (41:12)

Moreover He completed them as seven heavens within two days and inspired in each heaven its command. And We adorned the nearest heaven with lamps and as protection. (Quran 41:12)
এই আয়াতগুলো নিয়ে যে অভিযোগগুলো আসে তা হচ্ছে।
প্রথম অভিযোগঃ সংখ্যাগত ভুল।
দ্বিতীয় অভিযোগঃ পৃথিবি আগে ও আসমান পরে সৃষ্টি যা বৈজ্ঞানিক ভুল।
তৃতীয় অভিযোগ(এটা শুধু কম বুঝ হিন্দু দের করতে দেখা যায় ইদানিং)ঃ আসমান জমীণ আল্লাহকে বলেছে আমরা নিজেরাই আসলাম, অতএব তা নাকি বৈজ্ঞানিক ভুল।
অভিযোগের জবাবঃ

অভিযোগঃ সংখ্যাগত ভুল। ৬ দিনে না ৮ দিনে ?
জবাবঃ প্রথমে বলি এই আয়াতে ৬ দিন নয় বরং ৬ টি লম্বা সময়কে বুঝিয়েছে। এই আয়াতে ‘ইয়ম’ ব্যবহার না করে ‘আইয়াম‘ শব্দটি উল্লেখ করা হয়েছে। Arabic Dictionary- তে ‘আইয়াম’ শব্দের অর্থ লম্বা সময় এটি ১ দিন ,১০০ বছর অথবা অনির্দ্দিষ্ট সময়কাল হতে পারে। আর ‘ইয়ম’ মানে একদিন, এই আয়াতে আইয়াম শব্দটি ব্যবহার হয়েছে অর্থাৎ লম্বা সময়,  যেমন আমরা বলি দুদিনের দুনিয়া, এখন এখানে দুদিন কি আসলেই দুদিন, ২৪+২৪=৪৮ ঘন্টা ? এবার কোরানে যে ৬ দিন বা ৬ টি লম্বা সময় বুঝিয়েছে তা কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে চমতপ্রদভাবে মিলে যাচ্ছে। আধুনিক বিজ্ঞানও এই মহাবিশ্বটি সৃষ্টির প্রারম্ভিক হতে আকৃতি, রঙ ও প্রকৃতিতে পৌছাঁতে সর্বমোট ৬টি অনির্দ্দিষ্টট সময়কাল অতিবাহিত হওয়ার কথা বলছে,
যেমন
1| Time Zero
2| Inflation
3| Annihilation
4| Proton and Neutron
5| Atomic Nuclei
6| Stable atom
এবার সংখ্যার ভুলের প্রসংগে যাই, ধরুন কেউ যদি বলেন : বাড়িটা তৈরী করতে ৫০ দিন লেগেছে এবং রং করতে লেগেছে ৫ দিন। প্রশ্ন হচ্ছে, বাড়িটা তৈরী করতে মোট ৫৫ দিন নাকি ৫০ দিন লেগেছে? প্রাইমারীর পোলাপান হয়তো ৫৫ দিন বলতে পারে তবে কলেজের ছাত্র কিন্তু ৫০ দিনই বলবে। তেমনি কোরআনের কোথাও ৮ দিনে মহাবিশ্ব সৃষ্টির কথা লিখা নাই। এটি আসলে তাদের অজ্ঞতা অথবা নিজস্ব মনগড়া ব্যাখ্যা। কোরআনের বেশ কিছু আয়াতে ৬ দিন উল্লেখ আছে এবং আয়াত ৪১:৯-১২ তে যা আছে তা মূলত Consequential order নয়, বরং Overlapping action. তাই উক্ত কাজের হিসাবটিও সেই ৬ দিনের মদ্ধ্যেই। ঠিক যেমন ৫০ দিনের তৈরি বাড়িতে রঙ করার ৫ দিনের হিসাব উক্ত ৫০ দিনেরই অংশ, সেরকম।
অভিযোগঃ পৃথিবী আগে না আসমান আগে?
জবাবঃ
আমি যদি বলি, আমি এখন দরজা ডেকরেট করছি, এরপর জানালার দিকে নজর দেব, এরমানে কি এই যে জানালা এখন বানাবো ? না, বরং এরমানে এই যে জানালা আগে থেকেই তৈরি ছিল, তবে হয়ত পুরোপুরি কমপ্লিট হয়নি।
আর এই আয়াতগুলো কোন ধারাবাহিক কার্যের বর্ননা নয় তা আগেই বলেছি, এখানে ১১ নং আয়াতে আরবী "Thumma" শব্দটিকে অনেকে ভুলভাবে "Then" বা "এরপর" অনুবাদ করেছে। কিন্তু প্রকৃত অনুবাদ হবে moreover বা অধিকন্তু বা এছাড়াও , যেমন কোরানের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ অনুবাদক ইউসুফ আলী থেকে শুরু করে ড, ঘালির মত অনুবাদকদের অনুবাদে এরকমই আছে। ইউসুফ আলী লিখেছেন, Moreover He comprehended in His design the sky , অর্থাৎ এটি কোন ধারাবাহিক কাজের বর্ননা নয় তা স্পষ্ট। আর হ্যা ইউসুফ আলীর অনুবাদটা কিন্তু প্রায় একশ বছর আগের। তাই কেউ যদি প্রশ্ন করে যে বৈজ্ঞানিক ভুল দেখে অনুবাদ চেইঞ্জ করা হয়েহয়েছে তার সুযোগ নাই। কারন এই অনুবাদ যখন হয়েছে তখন স্টিফেন হকিং এর জন্মও হয় নি।:)
এছাড়াও যদি অন্যান্য অনুবাদকদের Then শব্দটা এপ্লাই করি তাতেও কিন্তু কিছু যায় আসে না। কারন Then শব্দটিও Overlapping action বা বিচ্ছিন্ন ঘটনার ক্ষেত্রে ব্যাবহৃত হয়। নীচে Then শব্দের ডিকশনারী হতে আরো কিছু সমগোত্রীয় অর্থ দেখানো হল,


এখানে ধারাবাহিক ঘটনা নয় বরং বিচ্ছিন্ন ঘটনা এরপক্ষে আরো কিছু প্রমান দেখি, যেমন
৪১ঃ১১ আয়াতে বলা হয়েছে, "অতঃপর/এছাড়াও তিনি আকাশের দিকে মনযোগ দিলেন যা ছিল ধুম্র কুঞ্জ, অতঃপর তিনি তাকে ও পৃথিবীকে বললেন, তোমরা উভয়ে আস ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়। তারা বলল আমরা স্বেচ্ছায় আসলাম"
লক্ষ করুন এটা যদি হত ধারাবাহিক ঘটনার বর্ননা তবে পৃথিবি তৈরির বর্ননা তো পুর্বের আয়াতেই শেষ হয়ে গিয়েছিল, কিন্ত্ এই আয়াতে আকাশের সাথে আবার পৃথিবির কথা কেন বলা হল ? ধারাবাহিক ঘটনা হলে তো পৃথিবির কথা আবার বলা হত না।
আর হ্যা কোরান অনুসারে অবশ্যই পৃথিবি সৃষ্টি হয়েছে আকাশ বা শুন্য সৃষ্টীর পরে, প্রমান হিসেবে দেখুন, সুরা নাযিয়াত
"তোমাদেরকে সৃষ্টি অধিক কঠিন না আকাশের, যা তিনি নির্মাণ করেছেন? তিনি একে উচ্চ করেছেন ও সুবিন্যস্ত করেছেন। এরপরে পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন, এর মধ্য থেকে এর পানি ও ঘাস নির্গত করেছেন,পর্বতকে তিনি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।" (কোরান ৭৯ঃ ২৭-৩২)
এখানে আমরা স্পষ্টই দেখতে পাই যে আল্লাহ তালা আকাশ তথা স্পেস তৈরি ও তা বিন্যস্তের পরেই পৃথিবি সৃষ্টি করেছেন।
অভিযোগঃ আসমান জমীণ আল্লাহকে বলেছে আমরা নিজেরাই আসলাম, অতএব তা বৈজ্ঞানিক ভুল।
জবাবঃ এটা হচ্ছে অভিযোগগুলোর মধ্যে সব থেকে হাস্যকর অভিযোগ। :) সাহিত্যের কতগুলো গুন থাকে তা এইসব ছোট মাথার বিদ্দেষিরা জানে না। সাহিত্যের একটা গুরুত্তপুর্ন figure of speech হচ্ছে "Personafication" অর্থাৎ জড় বস্তুকে মানুষের গুনাবলি দেয়া । আর কোরান হচ্ছে সবচেয়ে উচু মানের শিল্পকর্ম। মুর্খ বিদ্দেষিরা সাহিত্যের এসব টার্ম জীবনে শুনেছে বলে মনে হয়। এখান থেকে একটু পড়ে নিতে পারে, https://simple.wikipedia.org/wiki/P
আর হ্যা উক্ত হিন্দুদের যদি বেদ থেকেও এরকমটা দেখাই তবে কি বলবে ? যেমন রিগবেদ ১/৫০/৬-৭ এ বলা হয়েছে সুর্যের নাকি রয়েছে চোখ এবং সুর্য নাকি সেই চোখ দিয়ে সকল প্রাজাতিকে দেখে। নীচে তুলসীরামের অনুবাদ,

Friday, September 9, 2016

আল্লাহ কি একই সাথে সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান হতে পারেন?




ধার্মিক ভাইয়েরা তাদের ধর্মের ব্যাপারে যুক্তি বলে কোন কিছুর অস্তিত্তেই বিশ্বাস করেন নাতাদের ধর্মগ্রন্থের সাথে সাংঘর্ষিক হলে বৈজ্ঞানিক সত্য হয়ে যায় কোন নাস্তিকের মতামতএতএব আমি শুধুমাত্র লজিক বা যুক্তিবিদ্যা ও কমনসেন্স বা সহজাত ধারণার উপর নির্ভর করে আলোচনা করার চেষ্টা করছিপৃথিবীতে প্রায় ৬০০০ ধর্মের কথা জানা যায়, প্রতিটি ধর্মের আছে আলাদা আলাদা ঈশ্বরকোন ধর্ম একেশ্বরবাদী, কোন ধর্ম বহুঈশ্বরবাদীইসলাম হল একেশ্বরবাদী ধর্ম, আল্লা হলেন ইসলামের এক ও অদ্বিতীয় ঈশ্বরমুনিন ভাইয়েরা বলেন আল্লা সর্বশক্তিমান চলেন দেখে নেওয়া যাক আল্লা নিজে কি বলেন
“....যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন, তাহলে তাদের শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি ছিনিয়ে নিতে পারেনআল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। [সুরা বাকারা: ২০]
আহলে কিতাবদের অনেকেই প্রতিহিংসাবশতঃ চায় যে, মুসলমান হওয়ার পর তোমাদেরকে কোন রকমে কাফের বানিয়ে দেয়তাদের কাছে সত্য প্রকাশিত হওয়ার পর (তারা এটা চায়যাক তোমরা আল্লাহর নির্দেশ আসা পর্যন্ত তাদের ক্ষমা কর এবং উপেক্ষা করনিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।[সুরা বাকারা: ১০৯]
আমি কোন আয়াত রহিত করলে অথবা বিস্মৃত করিয়ে দিলে তদপেক্ষা উত্তম অথবা তার সমপর্যায়ের আয়াত আনয়ন করিতুমি কি জান না যে, আল্লাহ সব কিছুর উপর শক্তিমান? [সুরা বাকারা: ১০৬]
আল্লা শুধু সর্বশক্তিমান হয়েই খুশী নন, তিনি সর্বজ্ঞও বটে-
পূর্ব ও পশ্চিম আল্লারইঅতএব, তোমরা যেদিকেই মুখ ফেরাও, সেদিকেই আল্লাহ বিরাজমাননিশ্চয় আল্লাহ সর্বব্যাপী, সর্বজ্ঞ।[সুরা বাকারা: ১১৫]
এখন প্রশ্ন হল আল্লা কিভাবে একি সাথে সর্বজ্ঞ (omniscient) ও সর্বশক্তিমান (omnipotent) হনসর্বজ্ঞ হওয়ার অর্থ তিনি ভবিষ্যতে কি ঘটবে জানেন সর্বশক্তিমান হলে তিনি ভবিষ্য পরিবর্তনও করতে পারবেনযে মূহূর্তে তিনি ভবিষ্য পরিবর্তন করবেন সেই মূহূর্তে তার জানাটা ভূল হয়ে গেলঅতএব তিনি সর্বজ্ঞ ননঅন্যদিকে উনি যেহেতু সব জানেন তাই আগে থেকেই জানেন উনি ভবিষ্যতে কি করবেনফলে অন্যরকম কিছু করা তার পক্ষে অসম্ভবকোন কিছু অসম্ভব মানেই তিনি আর সর্বশক্তিমান নন
বোঝা গেল ওমনিপটেন্স ও ওমনিসিয়েন্স এই গুণদুটি পরস্পরবিরোধীএখন দেখা যাক আল্লার পক্ষে এই দুটি গুণের একটিও অর্জন করা সম্ভব কিনাপ্রকৃতপক্ষে কোন সত্তা সর্বশক্তিমান এরূপ বক্তব্যের কোন অর্থ হয়নামুনিন ভাইয়েরা নিশ্চই ধৈর্য হারিয়ে ফেলছেনআসেন সবাই মিলে নিচের প্রশ্নটার উত্তর খুঁজি-
আল্লা কি এমন ভারী বস্তু তৈরী করতে পারবেন যা তিনি নিজেই তুলতে পারবেন না?
বিশ্লষন ও সমাধান উভয়ই আমি মুনিন ভাইদের উপরই ছেড়ে দিলাম(কোরান, হাদিস ঘেঁটে দেখেন)আল্লা কি সর্বজ্ঞ হতে পারেনএই প্রশ্নের উত্তরে আগে জানতে হবে আল্লা কি চেতন সত্তা অর্থ্যা আল্লার কি চিন্তাশক্তি আছে? যদি আল্লা চিন্তা করেন তাহলে সর্বজ্ঞ হতে গেলে তাকে তার চিন্তা সম্পর্কেও সম্পূর্ণ অবহিত হতে হবেঅর্থ্যা তিনি কখন কি চিন্তা করবেন তাও তাকে জানতে হবেএই জানার জন্য তাকে আবার চিন্তা করতে হবে; এইভাবে অন্তহীন চলতেই থাকবেকখনই তার চিন্তার সম্পূর্ণ পরিসর তিনি জানতে পারবেন না। ( প্রকৃতপক্ষে আমাদের সাথে এটাই ঘটে, নিজেদের চেতনার অত্যন্ত সামান্য অংশ আমরা অনুভব করতে পারি)
আজ্ঞে না, আপনাদের ঈশ্বর নিয়ে ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ করার উদ্দেশে আমি লিখছি না Logical Fallacy কি জিনিস তা বোঝানোর চেষ্টা করছিআব্রাহামিক ধর্মের ঈশ্বর, ওল্ড টেষ্টামেন্টের ইয়াভে-বাইবেলের গড ও কোরানের আল্লা হলেন লজিকাল ফালাসির প্রকৃষ্টতম উদাহরণবরং তুলনায় বহুঈশ্বরবাদী তত্ব লজিকালি অনেক পাকাপোক্ত অবস্থানে আছেকারণ বহুঈশ্বরবাদী তত্বকে শুধু যুক্তি দ্বারা খন্ডন করা অনেক কঠিন
কোরানে আল্লাকে যে গুণ দ্বারা সবচেয়ে বেশীবার ভূষিত করা হয়েছে তা হল পরম করুণাময়গ্রিক দার্শনিক এপিকিউরাস আর্গুমেন্ট অফ ইভিল নামে যে যুক্তিটি দিয়েছিলেন তা আমি অবিকল তুলে দিলাম
১.ঈশ্বর কি অন্যায়, অত্যাচার, অরাজকতা রোধে ইচ্ছুক কিন্তু অক্ষম
তাহলে তিনি সর্বশক্তিমান নন
২.তিনি কি সক্ষম কিন্তু অনিচ্ছুক?
তাহলে তিনি পরম করুনাময় নন
৩.তিনি কি সক্ষম ও ইচ্ছুক দুটোই?
তাহলে অন্যায়, অবিচার, অরাজকতা পৃথিবীতে বিরাজ করে কিভাবে?
৪.তিনি কি সক্ষম ও নন ইচ্ছুকও নন?
তাহলে তাকে কেন পরম করুনাময় হিসাবে ডাকা?
যৌক্তিকভাবে দেখানো যায় পরম করুনাময়, সর্বনিয়ন্ত্রক সত্তার অস্তিত্তও অসম্ভবএক্ষেত্রে যুক্তিটা অতি বিস্তৃত হয়ে যাওয়ার ভয়ে আর সে পথে আর অগ্রসর হলাম না

Thursday, September 8, 2016

'সময় এবং গতি' (১,২,৩,৪,৫,৬,৭ ও শেষ পর্ব) - দর্শন ভাবনা।



'সময় এবং গতি' (১ম পর্ব) - দর্শন ভাবনা

সময় সৃষ্টির পর থেকেই তার প্রধান বৈশিষ্ট হল সে চলমানআমরা বিভিন্ন কাঠামোর তুলনায় তাকে পরিমাপ করতে পারি, আর সেই কারণেই সময় আপেক্ষিক অর্থা বিভিন্ন কাঠামোর সাপেক্ষে এর বিস্তার বিভিন্ন রকমেরআমরা সাধারনতঃ আমাদের পৃথিবীর সাপেক্ষে সময়ের পরিমাপ করে থাকি
কোন বস্তু বা প্রাণীর বয়স হল তার জন্মের পর থেকে জিজ্ঞাসিত সময় পর্যন্ত অতিক্রান্ত সময়এটি একটি পরিমাপের বিষয়আর যে কোন পরিমাপের জন্যে আমাদের প্রয়োজন একটি মাপন যন্ত্র আর তুলনা কাঠামো
এ প্রসঙ্গে একটা বিষয় প্রণিধান যোগ্য যে, সময়ের নিশ্চয়ই একটা প্রকৃত গতি রয়েছে? সেটি কি ও কত?
যদি বলা হয় যে, মহাবিশ্বের উপত্তি কাল থেকে যেহেতু সময় শুরু সেহেতু মহাবিশ্বের গতি প্রকৃতি থেকে সময়ের গতি বিচার্য; তাহলে বিষয়টি অযৌক্তিক হবেনা
আমরা বিজ্ঞানের আপেক্ষিতা সূত্র থেকে জানি, সময় পরিমাপের স্থানে পদার্থভর যত বেশী হবে সময়ের গতিও সেই অনুপাতে কমে যায়এর অর্থ এই নয় যে, সময়ের প্রকৃত গতি কমে যায়

 (২য় পর্ব) - দর্শন ভাবনা
বিশাল এই প্রকৃতির বুকে নানা প্রজাতীর প্রাণী জীবন ধারন করছেসকল প্রাণীরই জন্মাবার পর থেকে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি ঘটে এবং এক সময় অন্তর্ধানের মধ্য দিয়ে জীবনের যবনিকা ঘটেজীবন প্রবাহে এই যে পরিবর্তন তা কমবেশী সকলের চোখেই ধরা পড়েসম্ভবতঃ শুধুমাত্র অনুভূতি প্রবণ প্রাণীরাই বিষয়টা উপলব্দি করতে পারে
প্রাণীজগতে বিশেষ করে মানুষের মাঝে এই অনুভূতিটা জন্ম নিয়েছে পুরাকাল থেকেই
মানুষ এই বিশ্ব সংসারে অবস্থার পরিবর্তন লক্ষ্য করে আসছে তার অভূদ্বয়ের পর থেকেইতবে এই পরিবর্তনটাকে সুনির্দিষ্ট নাম করণের মত মেধা হয়তো প্রথম দিকে মানুষের ছিলনাচিন্তাশক্তির উত্তোরণে মানুষ যখন এই পরিবর্তনকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে হয়তো তখনই এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে জীবন প্রবাহের এই অগ্রগতিকে নামকরণ করেছে সময়বলে
কালের বিবর্তনে এই সময় মানুষের মনে রেখাপাত করেছে নানাভাবেসময় ও সময়ের পরিবর্তণ নিয়ে বিভিন্ন মণিষিরা ভেবেছেন অনেক; আবার সেই ভাবনা থেকে উত্থিত ধারণাকে প্রকাশ করেছেন নানাভাবে কেউ কেউ ভেবেছেন সময় বাস্তবতা, কেউ বলেছেন সময় কল্পনা, আবার কেউ ভেবেছেন সময় কুহেলিকা; এভাবেই সময় নিয়ে মানুষের চিন্তাধার এগিয়ে চলেছে যুগ যুগ ধরে

 (৩য় পর্ব) - দর্শন ভাবনা

সত্যসন্ধানী এবং বিজ্ঞানপিতা নিউটন বলেছেন সময় ও গতি অনিয়ন্ত্রিত বা অনাপেক্ষিক; অর্থা সমগ্র মহাবিশ্ব একই জড়তায় সৃষ্ট, সর্বত্র সময় অপরিবর্তনীয় ও অনমনীয় ভাবে একই গতিতে কোন কিছুর সাথে সম্পর্কহীন ভাবে চলছে এবং তা নিত্য
গুণিজনদের অনেকেই এই অনাপেক্ষিক শব্দটির বিরোধীতা করেছেন, তাদের মধ্যে- ল্যাবনিজ, বারকেলী ও ম্যাক উল্যেখযোগ্যম্যাক ১৮৮৩ সালে তার বই The Science of Mechanics এ লিখেছেন- 'সময়ের সাথে কোন কিছুর পরিবর্তনকে পরিমাপ করা দুরূহ ব্যপারআমরা অবস্থার পরিবর্তনের মাধ্যামে সময়কে অনুভব করি'তিনি আরও বলেন- 'সময়ের ধারনার চেয়ে তার পরিবর্তন বেশী মৌলিকআমাদের জানামতে এমন কোন স্রোতধারা নেই যে সময়কে বয়ে নিতে পারে সময়ের অনুভূতিতে আমরা শুধু বাস্তবতার পরিবর্তন পরিমাপ করি'
ম্যাকের এই ধারনায় সত্যসন্ধানী ও মহাবিজ্ঞানী আইস্টাইন অনুপ্রাণিত হয়ে সময় নিয়ে গবেষণা শুরু করেন এবং ১৯০৫ সালে তার বিখ্যাত আপেক্ষিকতা তত্ত্ব প্রকাশ করেনএই তত্ত্ব মহাশূণ্য, সময় ও গতি এই ত্রয়ীর মধ্যে সম্পর্কের ধারণা পাল্টাতে শুরু করে
বিশেষ আপেক্ষিকতার নীতি আমাদের সামনে দুটি বিষয় পরিস্কার করে তুলে ধরে, তাহল, মহাজাগতিক বস্তুর গতির আপেক্ষিকতা ও আলোর গতির অভিন্নতা
আইনষ্টাইনের এই ধারনা মতে, মহাজগতিক বস্তুনিলয়ের গতি ভিন্ন ভিন্ন হয়ে দাঁড়ায়, যা নিউটনীয় তত্ত্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়; কারণ নিউটনের ধারণায় মহাজাগতিক বস্তুর গতি অভিন্ন অর্থা একই জড়তায় সম গতিতে চলমান
দ্বিতীয়ত, আলোর গতির অভিন্নতা বলতে আইনষ্টাইন বুঝাতে চেয়েছেন যে, যে কোন জড়তায় যে কোন পর্যোবেক্ষক শূণ্যস্থানে আলোর গতি পরিমাপ করলে তা প্রায় অভিন্ন ফলাফল পদর্শণ করবে
বিষয়টি ভেবে দেখার অবকাশ রয়েছে, বিখ্যাত বিজ্ঞানী আইনষ্টাইন বলছেন, মহাবিশ্বের যে কোন স্থানে আলোর গতি সমান বা স্থির; অর্থা সাপেক্ষ কাঠামো যাই হোক না কেন একজন পর্যোবেক্ষকের কাছে আলোর গতি সবসয়ই সমান, আরও পরিস্কার করে বললে বুঝায়, যে কোন পর্যোবেক্ষক যে কেন অবস্থান থেকে আলোর গতি পর্যোবেক্ষন করুন না কেন সকলের কাছেই আলোর গতি হবে সমান
যদি তাই হয়, তাহলে ক্ষোদ আইনষ্টাইনের রিলেটিভিটি যাচ্চে ভেঙেতিনি বলছেন, মহাকাশীয় বস্তুগুলো সমগতি সম্পন্ন নয়প্রত্যেকে প্রত্যেকের সাপেক্ষে গতিশীলফলে বিভিন্ন সাপেক্ষ কাঠামো থেকে পর্যোবেক্ষন লব্দ আলোর গতির ফলাফল; একটি কম গতি সম্পন্ন বস্তু থেকে আলোর গতি যতটা দ্রুত মনে হবে, একটা বেশী গতি সম্পন্ন বস্তু থেকে তার চেয়ে কম দ্রুত মনে হবেআর এটাই আপেক্ষিকতার মৌলিক প্রস্তবনা
আইনষ্টাইনের এই তথ্য যদি পরিক্ষিত হয়ে থাকে তবে তা মহাবিশ্বের সৃষ্টি কাঠামোতে জটীলতার সৃষ্টি করেবিজ্ঞানের কাছ থেকে আমরা জানি, বিগব্যাঙ থেকে শুরু হয়ে মহাবিশ্ব ত্বরাণ্বিত গতিতে সম্প্রসারিত হচ্ছে; এর ফলে আমাদের পৃথিবী থেকে দৃষ্টিলভ্য বস্তুগুলো ক্রমান্বয়ে দূরে চলে যাচ্ছেবিজ্ঞান বলছে একসময় হয়তোবা আলোর গতিকেও ছাড়িয়ে যাবে
এই হিসেবে আমরা যদি ধরে নেই, সৌর মণ্ডল সমেত আমাদের ছায়াপথ সম্প্রসারনের ধারায় আলোর এক সহস্রাংশ গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, আবার এড্রোমিডা ছায়াপথটি হয়তো ত্বরাণ্বিত হয়ে ৫০ সহস্রাংশ গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেএখন এই উভয় ক্ষেত্রের পর্যোবেক্ষকের কাছে দূরবর্তী তৃতীয় কোন ছায়াপথের আপতিত আলো বা আলোর গতি সমান হতে পারেনাযদিও বিজ্ঞান বলছে আলোর গতি সকল ক্ষেত্রেই অভিন্ন, তবুও তাকে আগেক্ষিকতার গণ্ডিতে আটকালে বিভিন্ন কাঠামোর সাপেক্ষে তা আর স্থির থাকেনা
সাপেক্ষ কাঠামোর তূলনায় পর্যোবেক্ষক যদি স্থির থাকে তবে যে গতি নির্ণয় করবে, আর পর্যোবেক্ষক যদি গতিশীল হয় তবে নির্ণীত গতির সাথে যে হেরফের হবে, তা আলোর গতির তুলনায় অতি সামান্য বলে তাকে ধর্তব্যের না আনলেও চলেকিন্তু দুটি ভিন্ন ভিন্ন সাপেক্ষ কাঠামো থেকে পরিমাপকৃত ফলাফল এক হতে পারেনা
মহাশূন্যের বিভিন্ন স্থানে ভাসমান বিভিন্ন বস্তুর অবস্থান বিভিন্ন দূরত্বে অবস্থিত; গতিশীল বস্তুর জন্যে এই অবস্থান নির্ণয় শুধুমাত্র তৃতলীয় জ্যামিতি দিয়েই সম্ভব নয় তার সাথে সময়ের মাত্রাও নির্নয় করতে হয়; ফলে মহাশূণ্যে অবস্থিত বস্তুগুলোর অবস্থান জানতে হলে তলীয় গতির সাথে সময়ের সমন্বয় করতেই হবে
যেহেতু সময় কোন দৃশ্য বস্তু নয় তাই বিজ্ঞান তাকে চতুর্থ মাত্রায় কোন এক অবস্থা বলে সঙ্গায়িত করে
 ষের মনে বিজ্ঞান ঘণীভূত হয়েছে, ফলে সময় নিয়েও নতুন নতুন ধারণা জন্ম নিয়েছে

(৩য় পর্ব) - দর্শন ভাবনা




সত্যসন্ধানী এবং বিজ্ঞানপিতা নিউটন বলেছেন সময় ও গতি অনিয়ন্ত্রিত বা অনাপেক্ষিক; অর্থা সমগ্র মহাবিশ্ব একই জড়তায় সৃষ্ট, সর্বত্র সময় অপরিবর্তনীয় ও অনমনীয় ভাবে একই গতিতে কোন কিছুর সাথে সম্পর্কহীন ভাবে চলছে এবং তা নিত্য
গুণিজনদের অনেকেই এই অনাপেক্ষিক শব্দটির বিরোধীতা করেছেন, তাদের মধ্যে- ল্যাবনিজ, বারকেলী ও ম্যাক উল্যেখযোগ্যম্যাক ১৮৮৩ সালে তার বই The Science of Mechanics এ লিখেছেন- 'সময়ের সাথে কোন কিছুর পরিবর্তনকে পরিমাপ করা দুরূহ ব্যপারআমরা অবস্থার পরিবর্তনের মাধ্যামে সময়কে অনুভব করি'তিনি আরও বলেন- 'সময়ের ধারনার চেয়ে তার পরিবর্তন বেশী মৌলিকআমাদের জানামতে এমন কোন স্রোতধারা নেই যে সময়কে বয়ে নিতে পারে সময়ের অনুভূতিতে আমরা শুধু বাস্তবতার পরিবর্তন পরিমাপ করি'
ম্যাকের এই ধারনায় সত্যসন্ধানী ও মহাবিজ্ঞানী আইস্টাইন অনুপ্রাণিত হয়ে সময় নিয়ে গবেষণা শুরু করেন এবং ১৯০৫ সালে তার বিখ্যাত আপেক্ষিকতা তত্ত্ব প্রকাশ করেনএই তত্ত্ব মহাশূণ্য, সময় ও গতি এই ত্রয়ীর মধ্যে সম্পর্কের ধারণা পাল্টাতে শুরু করে
বিশেষ আপেক্ষিকতার নীতি আমাদের সামনে দুটি বিষয় পরিস্কার করে তুলে ধরে, তাহল, মহাজাগতিক বস্তুর গতির আপেক্ষিকতা ও আলোর গতির অভিন্নতা
আইনষ্টাইনের এই ধারনা মতে, মহাজগতিক বস্তুনিলয়ের গতি ভিন্ন ভিন্ন হয়ে দাঁড়ায়, যা নিউটনীয় তত্ত্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়; কারণ নিউটনের ধারণায় মহাজাগতিক বস্তুর গতি অভিন্ন অর্থা একই জড়তায় সম গতিতে চলমান
দ্বিতীয়ত, আলোর গতির অভিন্নতা বলতে আইনষ্টাইন বুঝাতে চেয়েছেন যে, যে কোন জড়তায় যে কোন পর্যোবেক্ষক শূণ্যস্থানে আলোর গতি পরিমাপ করলে তা প্রায় অভিন্ন ফলাফল পদর্শণ করবে
বিষয়টি ভেবে দেখার অবকাশ রয়েছে, বিখ্যাত বিজ্ঞানী আইনষ্টাইন বলছেন, মহাবিশ্বের যে কোন স্থানে আলোর গতি সমান বা স্থির; অর্থা সাপেক্ষ কাঠামো যাই হোক না কেন একজন পর্যোবেক্ষকের কাছে আলোর গতি সবসয়ই সমান, আরও পরিস্কার করে বললে বুঝায়, যে কোন পর্যোবেক্ষক যে কেন অবস্থান থেকে আলোর গতি পর্যোবেক্ষন করুন না কেন সকলের কাছেই আলোর গতি হবে সমান
যদি তাই হয়, তাহলে ক্ষোদ আইনষ্টাইনের রিলেটিভিটি যাচ্চে ভেঙেতিনি বলছেন, মহাকাশীয় বস্তুগুলো সমগতি সম্পন্ন নয়প্রত্যেকে প্রত্যেকের সাপেক্ষে গতিশীলফলে বিভিন্ন সাপেক্ষ কাঠামো থেকে পর্যোবেক্ষন লব্দ আলোর গতির ফলাফল; একটি কম গতি সম্পন্ন বস্তু থেকে আলোর গতি যতটা দ্রুত মনে হবে, একটা বেশী গতি সম্পন্ন বস্তু থেকে তার চেয়ে কম দ্রুত মনে হবেআর এটাই আপেক্ষিকতার মৌলিক প্রস্তবনা
আইনষ্টাইনের এই তথ্য যদি পরিক্ষিত হয়ে থাকে তবে তা মহাবিশ্বের সৃষ্টি কাঠামোতে জটীলতার সৃষ্টি করেবিজ্ঞানের কাছ থেকে আমরা জানি, বিগব্যাঙ থেকে শুরু হয়ে মহাবিশ্ব ত্বরাণ্বিত গতিতে সম্প্রসারিত হচ্ছে; এর ফলে আমাদের পৃথিবী থেকে দৃষ্টিলভ্য বস্তুগুলো ক্রমান্বয়ে দূরে চলে যাচ্ছেবিজ্ঞান বলছে একসময় হয়তোবা আলোর গতিকেও ছাড়িয়ে যাবে
এই হিসেবে আমরা যদি ধরে নেই, সৌর মণ্ডল সমেত আমাদের ছায়াপথ সম্প্রসারনের ধারায় আলোর এক সহস্রাংশ গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, আবার এড্রোমিডা ছায়াপথটি হয়তো ত্বরাণ্বিত হয়ে ৫০ সহস্রাংশ গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেএখন এই উভয় ক্ষেত্রের পর্যোবেক্ষকের কাছে দূরবর্তী তৃতীয় কোন ছায়াপথের আপতিত আলো বা আলোর গতি সমান হতে পারেনাযদিও বিজ্ঞান বলছে আলোর গতি সকল ক্ষেত্রেই অভিন্ন, তবুও তাকে আগেক্ষিকতার গণ্ডিতে আটকালে বিভিন্ন কাঠামোর সাপেক্ষে তা আর স্থির থাকেনা
সাপেক্ষ কাঠামোর তূলনায় পর্যোবেক্ষক যদি স্থির থাকে তবে যে গতি নির্ণয় করবে, আর পর্যোবেক্ষক যদি গতিশীল হয় তবে নির্ণীত গতির সাথে যে হেরফের হবে, তা আলোর গতির তুলনায় অতি সামান্য বলে তাকে ধর্তব্যের না আনলেও চলেকিন্তু দুটি ভিন্ন ভিন্ন সাপেক্ষ কাঠামো থেকে পরিমাপকৃত ফলাফল এক হতে পারেনা
মহাশূন্যের বিভিন্ন স্থানে ভাসমান বিভিন্ন বস্তুর অবস্থান বিভিন্ন দূরত্বে অবস্থিত; গতিশীল বস্তুর জন্যে এই অবস্থান নির্ণয় শুধুমাত্র তৃতলীয় জ্যামিতি দিয়েই সম্ভব নয় তার সাথে সময়ের মাত্রাও নির্নয় করতে হয়; ফলে মহাশূণ্যে অবস্থিত বস্তুগুলোর অবস্থান জানতে হলে তলীয় গতির সাথে সময়ের সমন্বয় করতেই হবে
যেহেতু সময় কোন দৃশ্য বস্তু নয় তাই বিজ্ঞান তাকে চতুর্থ মাত্রায় কোন এক অবস্থা বলে সঙ্গায়িত করে

 (৪র্থ পর্ব) - দর্শন ভাবনা

আমাদের একটা বিষয় মনে রাখতে হবে যে, যে কোন বস্তুর পরিচয় দিতে অন্তত তার দুটি অবস্থার বর্ণনা দিতে হয়, একটি তার স্বকীয় পরিচয় আর একটি তার জড়তা
হয়তো বলবেন সময় কোন বস্ত নয় যে তার স্বকীয পরিচয় রয়েছেযদি তা না হয় তবে তার জড়তা নির্ণয় অত্যান্ত কঠিণ বিষয়আর এই কাজটি করতে হলে আমাদেরকে প্রথমেই স্থির করতে হবে সময় কি বা সময়ের স্বকীয় পরিচয় কি?
বিজ্ঞান সময়ের পরিচয় দিতে গিয়ে সময়কে গতিশীল ধরে নিয়েছে; যা সময়ের জড়তার পরিচয়
হতে পারে সময় গতিশীল! কোন কিছুর স্বকীয় পরিচয় না পেয়েও তার জড়তার পরিচয় পেলে যে তা মিথ্যে হবে, তাতো হতে পারেনা! ফলে বিজ্ঞানের কথামত আমরা ধরে নিতে পারি সময় গতিশীলএখন এই সময়ের অবস্থান সম্পর্কে আমাদের ভাল ধারনা দরকার
এ বিষয়ে জানতে হলে সর্বপ্রথমে জানা দরকার সময়ের উপত্তি ও বিস্তার সম্পর্কেমোটামুটি সকলেই একমত যে, সময় শুরু হয়েছে বিগব্যাঙ থেকে; অর্থা মহাবিশ্বে উপত্তিক্ষণ থেকে সময়ের যাত্রা শুরুআর এর বিস্তার সমগ্র মহাবিশ্ব জুড়ে
যদি তাই হয়ে থাকে তবে সময়কে গতিশীল বলা কোন অযৌক্তিক বিষয় নয়এখন প্রশ্ন হল এই গতি কি ভাবে নিরূপিত হতে পারে? ক্ষেত্রে বিজ্ঞান মনে করে মহাজাগতিক বস্তুর মধ্যে আলো সবচেয়ে গতিশীল, সময়ও অনেকটা আলোর মতই গতিশীলতবে এই গতি আপেক্ষিক; অর্থা মহাশূণ্যে বিভিন্ন কাঠামোর সাপেক্ষে সময়ের গতি বিভিন্ন হয়ে থাকেআর এই গতির পরিমান মাপা হয় ঘরির মাধ্যামে
বিজ্ঞানের এই ধারণার প্রেক্ষিতে আমাদের ভেবে দেখার অবকাশ রয়েছেউপরের আলোচনায় একটা বিষয় পরিস্কার যে, সময় মহাবিশ্বে নিরবিচ্ছিন্ন জালবিস্তারকারী একটা মাধ্যামযদি তার কোন গতি থেকে থাকে তবে তার একটা সাধারণ গতি থাকা প্রয়োজনহতে পারে ক্ষেত্র ভেদে বিশেষ কারণে এই গতি পরিবর্তীত হয়ে থাকেযদি বলা হয় যে, কোন স্থানে এই গতি পরিবর্তীত হয়েছে তবে তার উপযুক্ত ও যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যার প্রয়োজন রয়েছে কারণ আমরা সময়ের স্বরূপ সঙ্গায়িত করতে পারিনি
সময়ের আপেক্ষিকতা ব্যাখ্যায় বিজ্ঞান বলছে, পৃথিবীর এক ঘন্টার পরিসর চাঁদের এক ঘন্টার সমান নয়তেমনি ভাবে মহাকাশে বিভিন্ন মহাজাগতিক বস্তুতে সময়ের গতি বিভিন্নআমরা বিজ্ঞানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যদি আপেক্ষিকতাকে মেনে নেই তবে আপনা থেকেই একটা প্রশ্ন উত্থিত হয়ে আসে, তাহল মহাকাশের শূণ্য স্থানে সময়ের গতি কি হবে?
হয়তো বলবেন আমাদের ঘরিটি সেখানে যে সময় প্রকাশ করে, সেটিই হল সেই স্থানের সময় ও সেই ভাবে গতিশীলতাহলে এবার আমাদের ভেবে দেখতে হবে ঘরির মাধ্যামে সময়ের গতি মাপার পদ্ধতিটি আসলে কি?
মূলত এই ব্যবস্থাটি হলো সময়ের পরিমাপ ব্যবস্থারাত-দিনের পরিসরকে পর্যায়ক্রমিক দেখে মানুষ তাকে সময় পরিমাপের একক হিসেবে গ্রহন করেছেসূর্যো উদিত হওয়া থেকে শুরু করে পুণরায় উদিত হওয়া পর্যোন্ত যে সুনির্দিষ্ট সময়ের পর্যায় -তাকে একক ধরে তার ভগ্নাংশকে ক্ষুদ্র এককে পরিনত করে তা দিয়ে ক্ষুদ্র থেকে বড় বড় অংশ করে সময় পরিমাপ করেএটি পৃথিবীতে নিতান্তই আলোকীয় ব্যবস্থার মাধ্যামে সময় গণনার একটি প্রক্রিয়াএই পদ্ধতিতে মানুষ তাদের সুবিধার্থে মাপন যন্ত্র বা ঘরি তৈরী করে নিয়েছে
একই উপায়ে চাঁদের জন্যেও তৈরী করা যেতে পারে; অথবা আমাদের ঘরি দিয়ে চাঁদেরও দিবা রাতের পরিসর মাপা যেতে পারেতাতে পৃথিবীর তুলনায় চাঁদের দিবা রাত্র কিছুটা বড় বা ছোট বলা যেতে পারে; আবার পৃথিবীর মত করে চাঁদের দিবা রাত্রকেও ২৪ ভাগে ভাগ করে নেওয়া যেতে পারে তাতে চঁদের এক ঘন্টার প্রকৃত পরিসর পৃথিবীর সমান নাও হতে পারে
তাহলে দেখা গেল যে, এই পরিমাপ দিয়ে কখনোই সময়ের গতি পরিমাপ করা যায়না, শুধুমাত্র চাঁদ ও পৃথিবীর দিবা রাতের পরিসর মাপা যায়
বিজ্ঞানী আইষ্টাইন বলেছেন, বৃহত্তর মহাজাগতিক বস্তুতে সময়ের গতি ক্ষুদ্রতরকারনস্বরূপ বলেছেন, সময়ের উপর মহাকর্ষের প্রভাব রয়েছে, অর্থা অধিক মহাকর্ষ অঞ্চলে সময় ধীর হয়, উদাহরণ স্বরূপ দেখিয়েছেন যে, আমাদের ঘরি চাঁদে পৃথিবীর তুলনায় দ্রুত সময় জ্ঞাপন করেআবার এই যন্ত্রটিকে যখন অধিক মহাকর্ষ অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হবে তখন সে ধীর সময় জ্ঞাপন করবেমূলত এমনিতর ধারনার উপর তিনি বলছেন সময় আপেক্ষিক

 (৫ম পর্ব) - দর্শন ভাবনা

আমরা পূর্বের আলোচনায় দেখেছি যে, ঘরি দিয়ে আমরা সময়ের গতি পর্যোবেক্ষন করিনা, মূলত পরিমাপ করি সময়ের পরিধি
ক্লাসিক্যাল মেকানিক্স বলছে, সময় আপেক্ষিক নয়, শুধুমাত্র এর বিস্তার ঘটছে
আমরা মহাশূণ্যকে তিন মাত্রার ইউক্লিডীয় জ্যামিতিতে প্রকাশ করি, তাতে মহাশূণ্যের প্রকৃত বিস্তার জানা যায়না, যতক্ষণ না আমরা সময়কে আরেকটি মাত্রা ধরে বিবেচনা করিকারণ বিগব্যাঙ থেকে উপত্তি লাভ করে মহাশূণ্য অদ্যাবধি বিস্তার লাভ করছে
ফলে সময়ের পরিসর থেকে আমরা মহাবিশ্বের বিভিন্ন বিস্তার হিসেব করতে পারিএই সময়কে একটি মাত্রা ধরে নিলে আমাদের মহাশূণ্য চার মাত্রায় ব্যাখ্যায়িত হয়সে কারণেই মহাশূণ্যের বিস্তার জানতে সময় অপরিহার্যো
মহাশূণ্যের সময়কে মহাশূণ্য-সময় বা space–time বলে আখ্যায়িত করা হয়বিজ্ঞানী আইনষ্টাইন যদিও মহাশূণ্য সময়কে আপেক্ষিক বলেছে তথাপি বিষয়টা ভেবে দেখার প্রয়োজনীয়ত রয়েছে
সাধারণতঃ আপেক্ষিক বলতে আমরা বুঝি একটা অনুপাতদুটি বস্তুর কোন একটি সাধারণ বৈশিষ্টের তুলনা যেমন তা হতে পারে মহাকাশে একাধিক বস্তুর গতির তুলনা, হতে পারে আয়তনের তুলনা, হতে পারে বস্তু ভরের তুলনাএই অনুপাতগুলো যেমন পারষ্পারিক হতে পারে তেমনি হতে পারে অনেকের মধ্যে প্রতেকে প্রত্যেকের সাথে
এই তুলনা বা অনুপাতটি দুটি উপায়ে হতে পারে -যেমন, অনেক গুলো বস্তুর মধ্যে যে কোন একটিকে আদর্শ ধরে নিয়ে তার সাথে অন্য সকলের তুলনাএই পদ্ধতিকে বলা যায় একটি সুনির্দিষ্ট আদর্শের সাথে তুলনাআবার যখন তা প্রতেকে প্রত্যেকের সাথে হয় তখন তাকে আদর্শ বলা যায়না
বিজ্ঞানী আইনষ্টাইন দ্বিতীয় পদ্ধতিতে মহাকাশীয় বস্তুগুলোকে আপেক্ষিক বলে দাবী করেছেনপরীক্ষা নীরিক্ষায়ও তাই দেখা গেছেমহাজাগতীক বস্তুগুলো একে অপরের সাথে এতটাই দূরত্বে অবস্থিত যে কোন একটিকে আদর্শ ধরে অন্যদের সাতে তুলনা প্রায় অসম্ভব ফলে মহাজাগতীক বস্তু নিলয়ের যে কোন বৈশিষ্টকেই তুলনা করিনা কেন তাকে পারস্পারিকই করে থাকিঅনুরূপ ভাবে বিজ্ঞানী আইনষ্টাইন মহাকাশে সময়কেও আপেক্ষিক বলে দাবী করেছেন
কিন্তু আমরা কিছু সাধারন মানুষ এই দাবীর সাথে একমত হতে পারছিনা এ জন্যে যে, সময় মহাজাগতিক বস্তুনিলয়ের কোন বৈশিষ্ঠ্য নয়আবার মহাবিশ্বে বিভিন্ন প্রকারের সময় কাঠামো নেই যে তাদের মধ্যে তুলনা করবো
গাণিতিকভাবে আমরা জানি যে, সমজাতীয় রাশি ছাড়া তুলনা হয়নাফলে মহাজাগতিক বস্তুর সাথে সময়ের কোন বৈশিষ্ঠ্যের তুলনা হতে পারেনা
সময় আপেক্ষিক বলতে আইনষ্টাইন বুঝাতে চেয়েছেন যে, মহাজাগতিক বস্তু সমুহে সময়ের গতি বিভিন্নতিনি উদাহরণ স্বরূপ বলেছেন যে, একই সময় মাপন যন্ত্র বিভিন্ন বস্তুতে বিভিন্ন গতিতে চলেঅর্থা ক্ষুদ্র আকৃতির বস্তুতে যেখানে মহাকর্ষ শক্তি তুলনামূলক দূর্বল সেখানে ঘরির কাটা দ্রুত চলে আর বৃহ বস্তুতে ঠিক তার বিপরীতঘরির এই অবস্থা থেকে তিনি মন্তব্য করেন যে, সময়ের উপর মহাকর্ষের প্রভাব রয়েছে
আমরা জানি, ঘরি শুধু মাত্রই একটা যান্ত্রিক ব্যাবস্থা, তা ইলেট্রনিক ঘরিই হোক আর দোলক ঘরিই হোক; তার উপর রয়েছে মহাকর্ষের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া, সময়ের সাথে নেই কোন সম্পর্কএটি আমাদের পৃথিবীতে মানব মস্তিস্কের চিন্তাভাবনা থেকে উদ্ভূত একটি যন্ত্র মাত্রএটি যান্ত্রিক উপায়ে আমাদের দিবা রাত্রির পরিসরকে ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র ভাগ করে সূর্যের অবস্থান তথা আলো আঁধারের অবস্থ নির্ণয় করার একটা পদ্ধতি মাত্র
এই যন্ত্রটি নিয়ে আমরা এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির কোন এক গ্রহে গিয়ে সময় নিরূপন করতে শুরু করলে যন্ত্রটি সেই গ্রহে দিবা-রাত্রির প্রকৃত পরিসর তুলে ধরবেনাঅর্থা আপনার ঘরি দিয়ে ওখানকার দিবারাত্রের প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবেনাআবার অন্ধকার রাজত্বে সে শুধু ঘুরেই চলবে আলো আঁধারের কোন পরিচয় দিতে পারবেনাআপনার এই ঘরিটি দিয়ে পৃথিবীর তুলনায় সেখানকার রাত-দিন কত বড় বা ছোট তা পরিমাপ করতে পারবেন
আবার নিউটনের দোলক সূত্র বলছে ভিন্ন কথাদোলক সূত্র বলছে, অধিকতর কহাকর্ষ অঞ্চলে দোলন কাল কমে যায়; ফলে আপনার ঘরি দ্রুত চলতে থাকবে; যা আইনষ্টাইনের আপেক্ষিকতার সূত্র বিরোধী



(৬ষ্ঠ পর্ব) - দর্শন ভাবনা



সময় নিয়ে মানুষের চিন্তা ভাবনা এগিয়ে চলেছে, শুধু তাই নয় মানুষের মনে সময় নিয়ে আরও নতুন ধারণার উন্মেষ ঘটেছে উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে; ১৮৯৫ সালে এইচ জি ওয়েলস্ (H. G. Wells) সময় অভিযাত্রার কাল্পনিক ধারণা সমৃদ্ধ উপন্যাস The Time Machine, প্রকাশ করেন, যা মানুষের মনে সময় অভিযাত্রার ধারনাটি সঞ্চার করে
তারপর তা বিজ্ঞান জগতেও কৌতুহল সৃষ্টি হয়, বিশেষ করে যুবক বিজ্ঞানী আইনষ্টাইন এ নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেন বিজ্ঞানীদের মধ্যে এ নিয়ে আলোড়ণ সৃষ্টি হয়, সময় অভিযাত্রা (Time travel) নিয়ে বিভিন্ন জন বিভিন্ন মতামত তুলে ধরেন
তাদের মতামত থেকে বলা যেতে পারে সময় অভিযাত্রা হল মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ গতির সাথে পাল্লা দিয়ে কোন ভ্রমনার্থী যদি কোন উপায়ে ভ্রমন করতে পারে তবে তাকে বলা হয় সময় অভিযাত্রাডেবিড লুইস এর মতে সময় অভিযাত্রা বলতে বুঝায়,কোন বস্তুর অবস্থান ও পারিপার্শিক জগতের সাপেক্ষে আরোহণ ও অবতরণের সময় এক না হয় তবে তাকে সময় অভিযাত্রা বলা হয়
উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, যদি কোন অভিযাত্রী তার ব্যক্তিগত সময়ে এক ঘন্টা ভ্রমনের পর অবতরণ স্থানে দুই ঘণ্টা ভবিষ্যতে বা দুইঘন্টা অতীতে গিয়ে পৌঁছাল তবে উভয় ক্ষেত্রেই সময় অভিযাত্রা হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়কারণ উভয় ক্ষেত্রেই পারিপার্শিকতার সাথে সময়ের ভিন্নতা ঘটেছে; অর্থা অগ্রগামী সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে কোন অভিযাত্রি যদি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে তবেই তাকে সময় অভিযাত্রা বলা হবে
আরও একটু পরিস্কার করে বললে বলতে হয় যে, আমাদের পৃথিবীতে সংঘটিত কোন ঘটনা দেখে আপনি মহাশূণ্যে যাত্রা করলেন, ভিন্ন কোন ছায়াপথের অধিবাসীরা সেই ঘটনাটি দেখার আগেই আপনি সেখানে গিয়ে পৌছে গেলেন, তাহলে সেই একই ঘটনা তাদের সাথে আপনিও দ্বিতীয়বার দেখতে পেলেনএকইভাবে আপনি বার বার একই ঘটনাকে সংঘটিত হতে দেখতে পারেনএই ভাবে পারিপার্শিকতার তুলনায় নিজের গতিকে বাড়িয়ে সমেয়ের অগ্রে চলে যাওয়াকেই সময় অভিযাত্রা বলা হয়
বিজ্ঞানীরা তাত্ত্বিক ভাবে স্থির করেছেন যে, স্থিতি জড়তায় থাকা কোন একজন পর্যোবেক্ষক অল্প সময়ের ব্যবধানে পরপর ঘটে যাওয়া দুটি ঘটনা অবলোকন করলেনএখন প্রশ্ন হল, এই ঘটনা দুটিকে গতিজড়তায় থাকা কোন পর্যোবেক্ষ কি ভাবে দেখবেন?
তবে উপরুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, গতিজড়তায় থাকা পর্যোবেক্ষক প্রথম ঘটনাটা ঘটার সময় তার উপত্তি স্থল অত্রিক্রমকালে দেখতে পেলেন এবং আলোর গতির চেয়ে বেশী গতিতে এগিয়ে গেলেন; তার পর দ্বিতীয় আরেকটি ঘটনাটা ঘটল, একটা নির্দিষ্ট বিরতিতে দুটি ঘটনার দৃশ্যই আলোর গতিতে এগিয়ে চললএবার আলোর গতিতে গতিশীল দর্শক তার চলার পথের কোন এক স্থানে বিশ্রামকালে দুটি ঘটনাই পুনরায় দেখতে পেলএইটুকু পর্যোন্ত স্থির দর্শকের যে সময়টুকু কাটল গতিশীল দর্শকের বিশ্রামকালীন সময়টুকু তার নিজের সময়ে কম লাগলএ ক্ষেত্রে বলা যায় গতিশীল বস্তুর কিছুটা সময় সাশ্রয় হল
ঠিক এভাবেই একজন গতিশীল ভ্রমনকারী মহাশূণ্যে ভ্রমন করে এসে দেখবে নাস্তার টেবিলে সকলেই তার জন্যে অপেক্ষা করছেভ্রমনকারী ভাববে তার বাড়ীর মনুষের এই সামান্য সময়ে সে কতদূর ভ্রমন করে এসেছে আর কত সময়ইনা পার করেছেবিজ্ঞানীরা একে বলছেন ভ্রমনকারীর সময় প্রলম্বন ঘটেছেঅর্থা স্থির দর্শকের তুলনায় তার ব্যক্তিগত অল্প সময়ে স্থির দর্শকের হিসেবে অনেক সময় পার করে এসেছে; অবশ্য ভ্রমনকারীরও এমনি অনুভূতি জন্মাবেেএই ভাবে ব্যক্তিগত অল্প সময়ের মাঝে অনেক সময় কাটানোর অনুভূতিটাই সময় প্রলম্বন এখানে এই যে বলা হল সময়ের প্রলম্বন হয়েছে তাতে কিছু ভাবনার আছে
এবার লক্ষ্য করুন, দুজন পর্যোবেক্ষর জন্যেই মৌলিক সময় কিন্তু একই লেগেছে, দ্বিতীয় জনের গতির কারণে সে ঘটনা দুটির দৃশ্যের অগ্রে গমন করেছে এবং তা সে পরে দেখেছে, ঘরিতে অতিক্রান্ত সময় কিন্তু উভয় ক্ষেত্রেই বলাচলে সমানসামান্য সময়ের যে পরিবর্তন ঘটবে তা মহাকর্ষীয় ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ায় ঘটবে; আর এ টুকু সংশোধন করে নিলে সময়ের হিসেব এমনই হবেমানে, মহাশূণ্য সময়ের কোন পরিবর্তন ঘটবেনা
আর বিস্তর সময় অতিক্রম করে আসার যে অনুভূতিটা জন্মাবে অর্থা সময়ের প্রলম্বন হয়েছে বলে যা মনে হবে তা শুধুই কল্পনা বা বিভ্রমএখানে আপেক্ষিকতা যে টুকু রয়েছে তা হল গতি জড়তার আপেক্ষিকতা, তা যেমন রয়েছে জড়তায় তেমনি রয়েছে সময়ের পরিমাপে

(৭ম পর্ব) - দর্শন ভাবনা

আগের আলোচনায় আমরা দেখেছি- সময় মহাশূণ্যের চতুর্থ মাত্রা; এটি মহাশূণ্যের সম্প্রসারণের সাথে সম্পৃক্তবিভিন্ন মহাজাগতিক বস্তুর জন্যে সময় বলে কিছু নেই
তাই আমাদের এই মহাবিশ্বে সময় বলে যদি কিছু হিসেব করতে হয় তখন তার শুরুটাকে আমলে নিতে হয়বিজ্ঞান বলছে বিগব্যাঙ থেকে মহাবিশ্বের সময়ের যাত্রা এবং সময়ের অগ্রযাত্রার সাথে সাথে মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হতে শুরু করেছে এবং বিভিন্ন পরিসরে মহাজাগতিক বস্তুনিলয় সৃষ্টি হয়েছে
এই মহাজাগতিক বস্তুর অবস্থান নির্ণয় করতে হলে তিন মাত্রার অবস্থান ও চতুর্থ মাত্রার সময়ের হিসেব করলে মন হয় সুনির্দিষ্ট ভাবে কোন বস্তুর বা মহশূণ্যে কোন বিন্দুর অবস্থান জানা সম্ভব
কথা হচ্ছে, মহাবিশ্বের এই সময়ের সাথে আমাদের সময়ের কোন সম্পর্ক নেইএটি বিগব্যাঙ থেকে স্বত্বস্ফুর্ত নিয়মে উদ্ভূত সময়
মনে হয়, প্রকৃতিতে মহাজাগতিক বস্তুর নিজস্ব সময় বলে কোন ব্যবস্থা প্রাকৃতিক ভাবে বিধিত নেইমানুষ তার নিজের প্রয়োজনে সূর্যের সাপেক্ষে পৃথিবীর উভয়বিদ ঘূর্ণন ব্যাবস্থায় সুনির্দিষ্ট পর্যায় কালকে ব্যবহার করে একটা কাল্পনিক ব্যবস্থার উদ্ভব করেছে মাত্রএটি মহাবিশ্বের বিধিত ব্যবস্থায় কোন সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি নয়
এবার ভাবুন সূর্যের বুকে সময় মাপার কি ব্যবস্থা নেবেনহয়তো বলবেন পৃথিবীর এক বসরে সূর্যের ২৫ টি অক্ষ ঘূর্ণি সম্পন্ন হয়তাহলে বলবো এতেতো সূর্যের নিজস্ব সময় মাপন হয়নাহয়তো অন্য কোন গ্রহে বা উপগ্রহে তার মাতৃ নক্ষত্রের ছত্র ছায়ায় আমাদের মত করে সময় মাপার ব্যবস্থ করা যেতে পারে, কিন্তু তা কখনোই আন্ত মহাবিশ্বের হয়ে উঠেনা
মহাবিশ্বের সময় নিয়ে যখন এই দুদোল্যমানতা তখন স্বাভাবিক কারনেই প্রশ্ন জাগে, সময় তাহলে কি?
বলা চলে সময় হল মহাবিশ্বের বাস্তবতাযতদিন এই মহাবিশ্ব আছে ততদিন সময়ও আছেআমাদের মহাবিশ্ব যে অনুশাসনে চলছে সময়ও ঠিক সেই অনুশাষনে চলছে
তাহলে সময়ের একটা নিজস্ব গতি আছেবিজ্ঞান সময়ের এই গতিকে আলোর গতির সাথে তুলনা করেছেআর পরিমাপের বিষয়টি স্থান ভেদে ভিন্ন

(শেষ পর্ব) - দর্শন ভাবনা

নানা মুনির নানা মত; কেউ বলছেন, সময় স্থির, কেউ বলছেন সময় চলমান, আবার কেউ বলছেন সময় আপেক্ষিকপ্রত্যেকের কথার মধ্যেই রয়েছে সুস্পষ্ট যুক্তি, আবার কোথাওবা বক্তব্যের পিছনে রয়েছে ব্যাখ্যাহীনতাসবকিছু মিলিয়ে সময় কুহেলিকা
যুক্তি অনুযায়ী, যে কোন অবস্থাতেই মহাবিশ্বের যে কোন স্থানে একঘণ্টা সময় এক ঘন্টাই
সময় নিয়ে যেমন ভেবেছেন প্রাচীণ দার্শনিকরা তেমনি ভেবেছেন মধ্যযুগের বিজ্ঞানীরাতার পর সর্বশেষে আধুনিক বিজ্ঞানীরা
বিজ্ঞান পিতা নিউটন সময় সম্পর্কে বলেছেন, আমাদের মহাবিশ্বে সময় স্থির; তিনি সময়কে নদীর স্রোতের সাথে তুলনা করেছেন, বলেছেন, যেখানেই মাপা হোক না কেন গতি একই
উদাহরণ স্বরূপ ভাবলে এ কথায় কোন বিতর্ক চলেনা; তিনি আরেকটি উদাহরনে বলেছেন, একজন মহাশূণ্যচারী এক ঘণ্টা মহাশূণ্যে ভ্রমন করে এসে দেখবেন পৃথিবীতে তার বন্ধুটির ঘরিতেও ঠিক এক ঘন্টা অতিবাহিত হয়েছে
কিন্তি বিজ্ঞানী নিউটন বোধ হয় তার নিজের প্রদত্ত দোলক সূত্রের কথা ভুলে গিয়েছিলনতার সেই সূত্র মতে কোন দোলকের পর্যায়কাল সেই স্থানের মধ্যাকর্ষণ জনিত ত্বরণের উপর নির্ভরশীলমহাবিশ্বের সকল স্থানে যদি এই ত্বরণের মান সমান না হয়ে থাকে তবে অবশ্যই তাঁর তত্ত্বমতে মহাবিশ্বের সকল স্থানে আপনার ঘরি একই সময় দিতে পারেনা
তবে এই অধমের মতে তাঁর তত্ত্বের সেই অংশটুকু মহাশূণ্যের সকল স্থানে সময় একইকথাটার যথার্ততা রয়েছেতবে তাঁর ব্যখ্যা ভিন্নবিজ্ঞানী নিউটন বলেছেন, এক ঘন্টার পরিমাপ সকল স্থানেই সমান
কিন্তু প্রকৃত পক্ষে তা হতে পারেনাবলা যেতে পারে সময়ের বিস্তৃতি মহাবিশ্বের সকল স্থানে একই'যখনই আমরা তাকে ঘন্টা-মিনিটে প্রকাশ করবো তখন তা পরিমাপ বুঝায়, আমরা জানি সময়ের পরিমাপ মহাবিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্নপৃথিবীর দিবস আর চন্দ্রের দিবস কিংবা অন্য কোন ছায়াপথে কোন অধিবাসীর দিবস এক সমান নয়, ফলে তাদের ভগ্নাংশ গুলোও এক নয়কিন্তু সময়ের বিস্তৃতি সকল স্থানে এক
এ ক্ষেত্রে আমাদেরকে একটু পিছনে ভাবতে হবে, আজকে বিজ্ঞান বলছে, বিগব্যাঙ থেকে মহাবিশ্বের সময় শুরুতাহলে এ সময়ের গতিকে আমরা কিভাবে পরিমাপ করবো? মহাবিশ্বের বিভিন্ন স্থানের অধিবাসীরা যার যার মত সময়ের পরিমাপে তা হিসেব করবেযাই হোক না কেন সময়েরতো একটা নিজস্ব বিস্তৃতি রয়েছে
তাহল জন্ম থেকে এ পর্যোন্ত সময় যতটা পথ চলেছে সেই দূরত্বকে যার যার পরিমাপে তুলনা করলেই সময়ের গতি যার যার মত পেয়ে যাবে; তাতে কিন্তু সময়ের নিজস্ব গতির পরিমাপ হলনাএবার আমরা যদি ধরে নেই যে বিগব্যাঙ থেকে প্রথম সৃষ্ট তারকাটি প্রায় আলোর গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে তবে বলা চলে যে সময়ও ঠিক তার সাথে একই গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেতাহলে বলা চলে সময়ের গতি আলোর গতিরই সমানতাতেও কিন্তু পরিপূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়না, কারণ প্রথম তারকাটি যে সর্বকালীন ঠিক আলোর গতিতে এগিয়ে যাবে তাও বলা যায়না; ফলে আমাদেরকে ধরে নিতে হয় যে, মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ গতিই হল সময়ের গতি, তাকে যার যার পরিমাপে ফেলে হিসেব করতে হবে
আমাদের পরিমাপকৃত ঘন্টা মিনিট সেকেন্ড কখনোই সমযের গতি হিসেব করেনাএ শুধু নির্ণয় করে আমাদের হিসেবে সময়ের ভগ্নাংশকেফলে মহাশূণ্য সময়ের আলোচনায় ঘন্টা মিনিটের তথা আমাদের ঘরির কোন স্থান নেই
এবার আমরা যদি মহাবিশ্বের সময় হিসেব করত চাই তবে ধরে নিতে হবে মহাবিশ্বের জন্ম থেকে যে কোন অবস্থা পর্যোন্ত এক দিন বা এক বসর, যে কোন এককে বা অন্য নামে অবিহিত করে তাকে ভগ্নাংশে ভাগ করে মহাবিশ্বের সময় গণনা করতে পারিতাকে আমাদের সময়ের সাথে তুলনাও করতে পারি, কিন্তু আমাদের সময় দিয়ে তার দিন বা সময় নির্ণয় করতে পারিনা