Monday, May 31, 2021

মঙ্গলের আকাশে ভাসমান মেঘকে ঘিরে ঘনিয়েছে রহস্যও।

মঙ্গল (Mars) আকাশে উজ্জ্বল মেঘের দেখা পেলেন বিজ্ঞানীরা। নাসার (NASA) কিউরিওসিটি রোভারের লেন্সে ধরা পড়ল অনিন্দ্যসুন্দর অপার্থিব মেঘেদের আনাগোনার মুহূর্ত। 
সাধারণত লাল গ্রহের আকাশে যতটা উঁচুতে মেঘ থাকে, এই মেঘগুলির অবস্থান তার চেয়েও উপরে। বিজ্ঞানীদের আশা, এই ছবিগুলি থেকে তাঁরা মঙ্গলের আরও কোনও অজানা দিক জানতে পারবেন।

নাসার টুইটার হ্যান্ডলে শেয়ার করা হয়েছে মঙ্গলের আকাশে ভাসমান মেঘেদের আনাগোনর নানা মুহূর্ত। ছবিগুলি পোস্ট করে লেখা হয়েছে, ‘‘কখনও কখনও কেবল দাঁড়িয়ে পড়ে তাকিয়ে থাকতে হয় মেঘেদের ভেসে যাওয়ার দিকে… মঙ্গলে। মেঘলা দিন অবশ্য এখানে খুবই বিরল। কেননা বায়ুমণ্ডল অত্যন্ত পাতলা ও শুকনো। কিন্তু আমাদের ক্যামেরা তাক করে রাখা আছে। আপনাদের সঙ্গে সম্প্রতি তোলা কিছু ছবি শেয়ার করছি।’’

কেন এই মেঘগুলির অবস্থান অতটা উঁচুতে। আসলে সাধারণত মঙ্গলে যখনই মেঘ দেখা যায়, সেগুলির অবস্থান থাকে মাটি থেকে সর্বোচ্চ ৬০ কিমি উচ্চতার মধ্যে। কিন্তু এই মেঘগুলির অবস্থান তার থেকে অনেকটাই উঁচুতে। মনে করা হচ্ছে সাধারণত যে মেঘ দেখা যায় মঙ্গলে তা তৈরি হল জলের বরফ থেকেই। কিন্তু এবারে যে মেঘেদের ছবি ধরা পড়ল সেগুলি অনেক উঁচুতে অবস্থান করার কারণেই অত্যন্ত শীতল। যা থেকে পরিষ্কার এগুলি জল নয়, ড্রাই আইস বা শুষ্ক কার্বন ডাই অক্সাইড দিয়ে নির্মিত।

এই নতুন ধরনের মেঘের দেখা পেয়ে উত্তেজিত বিজ্ঞানীরা। তাঁরা মনে করছেন সব ধরনের মেঘের ছবি থেকে প্রাপ্ত তথ্য তাঁদের মঙ্গলের আকাশে মেঘেদের বৈচিত্রকে বুঝতে সাহায্য করবে। এর মধ্যে দিয়েই লাল গ্রহের চরিত্রই আরও ভাল করে বোঝা সম্ভব হবে। মেঘগুলির এমন ঢেউ খেলানো চেহারা জন্য কিউরিওসিটির সাদা-কালে নেভিগেশন ক্যামেরাতেও দিব্যি বোঝা যাচ্ছে তাদের অস্তিত্ব। কিন্তু রোভারের মাস্টক্যামে তোলা রঙিন ছবিগুলি থেকে দেখা যাচ্ছে মেঘগুলি অত্যন্ত উজ্জ্বল।

উল্লেখ্য, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি লাল গ্রহের মাটি স্পর্শ করেছে রোভার। তারপর থেকেই চমকে দিয়েছে রোভার। খুঁজে চলেছে লাল গ্রহের হাল হকিকত।

Saturday, May 29, 2021

চোখের পলকে মহাবিশ্ব!

মানুষের চোখের পলক ফেলতে সময় ব্যয় হয় গড়ে ০.২৫ সেকেন্ড। কিন্তু এই একপলকে ঘটে যেতে পারে বহু বিষ্ময়কর ঘটনা। চোখের পলকেই মহাবিশ্ব জুড়ে জন্ম হয় নতুন ১৫,০০০ নক্ষত্র! এবং বিস্ফোরিত হয় ৩০০ নক্ষত্র!

আর জন্ম হয় ১,৫০,০০,০০০ ভবঘুরে গ্রহের! 
আর এই ০.২৫ সেকেন্ডে আমাদের সূর্য ১৭,৫০,০০,০০০ টন হাইড্রোজেন পুড়িয়ে ফেলে! এবং উৎপাদিত হয় ৯৬,১০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০ জুল শক্তি! 
মহাশূন্যে জন্মগ্রহণ করে ৩০টি কৃষ্ণগহ্বর! 
আমাদের মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হয় ৫,২৭,২৫০ কিলোমিটার! 

আমাদের চোখের পলকের মধ্যেই আকাশগঙ্গা ছায়াপথ ২৫০ কিলোমিটার পথ ভ্রমণ করে এবং ১২৫ মিটার সম্প্রসারিত হয়। এন্ড্রোমিডা ছায়াপথ আমাদের আকাশগঙ্গা ছায়াপথের ২৭ কিলোমিটার নিকটবর্তী হয়। 
আলো ৭৪,৯২৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে। 

আমাদের দেহের ২,৯০,০০০ কোষের মৃত্যু ঘটে এবং জন্ম হয় প্রায় সমসংখ্যক কোষের! 
এইমাত্র আপনি চোখের যেই পলকটি ফেলেছেন ততক্ষণে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করেছে ২,৮০,০০০ কিলোগ্রাম কার্বনডাইঅক্সাইড! 
পৃথিবীর বিভিন্ন জঙ্গল থেকে কেটে ফেলা হয়েছে প্রায় ৭টি বৃক্ষ! 
সাগর থেকে বাষ্পীভূত হয়েছে ৪০০,০০,০০,০০০ লিটার পানি! 

ইন্টারনেটে প্রবাহিত হয়েছে ১,৮৬,৪০,০০০ মেগাবাইট তথ্য ! তৈরি হয়েছে ১১টি নতুন স্মার্টফোন। 
মানুষ সারাজীবনে গড়ে প্রায় ৬৫,০০,০০,০০০ বার পলক ফেলে। 

সুতরাং পরেরবার পলক ফেলার আগে চোখ বন্ধ করে ঘটনাগুলো একবার ভাবুন। 

-হট্টিটির ভিডিও থেকে নেয়া।

Friday, May 28, 2021

টাইম ট্রাভেল আসলে কি সম্ভব কি না !

আমরা কি আসলেই ভবিষ্যতে বা অতীতে ফিরে যেতে পারবো,,,??? 
স্টিফেন হকিংয়ের বক্তব্য নিচে দেওয়া হলো -

বিজ্ঞানে একসময় সময় ভ্রমণ নিয়ে চিন্তার চর্চা ছিল না।  আমিও এ নিয়ে কথাবার্তা বলতাম না খুব একটা। পাছে না আবার পাগলের খেতাব পাই। কিন্তু এখন আর সেই ভয় নেই। এখন একটা টাইম মেশিন পেলে আমি দেখে আসবো সেই মুহুর্তটি, যখন গ্যালিলিও আকাশের দিকে তাক করেছিল টেলিস্কোপখানা৷ কিংবা চলে যাবো মহা বিশ্বের শেষ প্রান্তে। দেখে আসব, কিভাবে ইতি ঘটবে এ মহাবিশ্বের। 

সময় ভ্রমণ কী সম্ভব সেটা বুঝতে হলে পদার্থবিদের মতো চিন্তা করতে হবে। হ্যাঁ, বলছি চতুর্থ মাত্রার কথা। বিষয়টাকে একটু কঠিন মনে হলেও আসলে তা নয়। একটি ছোট্ট বাচ্চাও জানে, প্রতিটি বস্তুই ত্রিমাত্রিক স্থানে অবস্থান করে। এই যে আমিও। সবকিছুরই আছে দৈর্ঘ্য প্রস্থ,উচ্চতা। দৈর্ঘ্য আছে অনেক ধরনের। একজন মানুষ হয়তো ৮০ বছর বাঁচতে পারেন। আবার স্টোনহেঞ্জের পাথর গুলো দাড়িয়ে আছে হাজার হাজার বছর ধরে। আমাদের সৌরজগত থাকবে আরও কয়েক শ কোটি বছর। ফলে সবকিছুর দৈর্ঘস্থানের দিকে যেমন আছে,তেমনি আছে সময়ের দিকেও। তাই সময় ভ্রমণের মানে হলো এই চতুর্থ মাত্রা দিয়ে চলাচল। 

ধরুন, আপনি একটি রাস্তা ধরে সোজাসুজি চলছেন এটা হলো একমাত্রিক চলাচল। ডানে বা বাঁয়ে ঘুরলে সঙ্গে আরেকটি মাত্রা যোগ হবে। পথটা পাহাড়ি হলে একটু ওপরে উঠলে বা নিচে নামলেই  যোগ হবে আরও একটি মাত্রা। কিন্তু সময়-মাত্রাটি ব্যবহার করে কীভাবে সামনে পেছনে আসা যায় ?  চলচ্চিত্রে অনেক সময় টাইম মেশিন দেখানো হয়, যেটাই চেপে বসলেই সময় সুড়ঙ্গ পার হয়ে চলে যায় অতীত বা ভবিষ্যতে। বুদ্ধিটা একেবারে খারাপ না।  সময় সুড়ঙ্গের কথা ভাবছেন বিঞ্জানিরাও। নাম ওয়ার্মহোল। কিন্তু অনেক অনেক ক্ষুদ্র। এত ক্ষুদ্র যে খালি চোখে দেখা প্রশ্নই ওঠে না ! 

জগতের কোন কিছুই মসৃণ নয়। সবচেয়ে মসৃণ বস্তুটাও কিছু ভাঁজ আছেই। একই কথা খাটে সময়ের জন্যেও অণু ও পরমানুর চেয়েও ক্ষুদ্রমাপকাটিতে কোয়ান্টাম ফোম নামে একটি জায়গা আছে। ওয়ার্মহোলের অস্তিত্ব এখানেই। এই কোয়ান্টাম জগতে স্থান কালের মধ্যে দিয়ে অবিরত তৈরি ও ধ্বংস হয় সুড়ঙ্গ। এরা যুক্ত করে দুটি আলাদা স্থান ও সময়কে। কিন্তু সমস্যা হলো, এই সুড়ঙ্গ ১ সেন্টিমিটারের ১ লক্ষ কোটি কোটি কোটি ভাগের এক ভাগ পরিমান চওড়া। তাহলে পার হওয়ার উপাই ?  কিছু কিছু বিজ্ঞানি বিশ্বাস করেন, কোন ভাবে একটি ওয়ার্মহোলকে পাকড়াও করে হয়তো মানুষের পারাপারের মতো বড় করে তোলা যাবে। হয়ত তার একমুখ থাকবে পৃথিবীতে, আরেক মুখ বহু বহু দুরের কোন গ্রহ বা দুরের কোন অতীত বা ভবিষ্যতে। 

কিন্তু সময় ভ্রমণ একটি সমস্যা হলো প্যারাডাক্স বা স্ববিরোধিতা। এদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত নাম গ্রান্ডফাদার প্যারাডাক্স। এটাকে একটু সরল করে অন্যভাবে বলি। নাম দিলাম ম্যাড সায়েন্টিস্ট প্যারাডাক্স। মনে করুণ আমি একটি সময় সুড়ঙ্গ বানালাম, যা মাত্র এক মিনিট লম্বা। এটায় চোখ রেখে পাগল বিঞ্জানি নিজের এক মিনিট আগের চেহারা দেখছেন। কিন্তু তিনি যদি সুড়ঙ্গের ওপারের চেহারায় গুলি করেন তাহলে কী হবে ?  তিনি তা হলে এক মিনিট আগে মারা গেলেন। তাহলে গুলিটা কে মারল !! 

এধরনের টাইম মেশিন মহাবিশ্বের মৌলিক একটি নীতির বিরুদ্ধে যায়।  ফলাফল আগে ঘটে। কখনোই উল্টোটা নয়। তা না হলে মহাবিশ্ব হতো বিশৃঙ্খল। ফলে আমার বিশ্বাস কোনো না কোনভাবে বিজ্ঞানি নিজেকে গুলি করতে ব্যর্থ হবেনই৷ তা ছাড়া ওয়ার্মহলো বেশিক্ষণ  টিকেও থাকতে পারবে বলপ মনে হয় না। ধরুন, একটি স্পিকার দিয়ে গান বাজছে। তার দিয়ে মাইক যুক্ত করে শব্দ বাড়ানো হলো। মাইকের সামনে যদি স্পিকার রাখা হয় তাহলে কী হবে ?  প্রতিবার ঘুরে এসে শব্দ ক্রমশ বাড়তে থাকবে। কেউ না থামিয়ে দিলে একসময় পুরো সাউন্ড সিস্টেম ভেঙ্গে পড়বে। একই ঘটনা ঘটবে ওয়ার্মহলের ক্ষেত্রেও তবে এখানে শব্দের বদলে কাজ করবে বিকিরণ। ওয়ার্মহোলের মুখ খুলতে না খুলতেই এতে বিকিরণ প্রবেশ করবে এবং লুপ আকারে ঘুরবে। একসময় এর শক্তি এত বাড়বে যে এটি ধ্বংস হয়ে যাবে। অর্থাৎ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সময় সুড়ঙ্গগুলো দিয়ে বাস্তবে কাজ হবে না। 

তবে সময় ভ্রমণ করে ভবিষ্যতে যাওয়ার আরেকটি উপায় আছে। সময় প্রবাহিত হয় নদীর মতো। অবিরত।  তবে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে প্রবাহের গতি আলাদা। ১০০ বছর আগে কথাটা প্রথম বলেছিলেন আইনস্টাইন। কথাটার প্রমাণ আছে আমাদের হাতের নাগালেই। আমরা বর্তমানে হরদম জিপিএস ব্যবহার করি । এটি কাজ করে উপগ্রহের মাধ্যমে। উপগ্রহে আছে খুব নিখুঁত ঘড়ি। কিন্তু শত ভাগ নয়। পৃথিবীর তুলনায় উপগ্রহের ঘড়ি প্রতিদিন এক সেকেন্ডের এক শ কোটি ভাগের এক ভাগ দ্রুত চলে। এটাকে হিসাবে না ধরলে জিপিএসের নির্দেশনা হবে ভুল। ওই ঘড়িগুলো দ্রুত চলে কারণ পৃথিবীর তুলনায় মহাশূন্যে সময় দ্রুত চলে। এরবকারণ পৃথিবীর ভর। একটি বস্তু যত ভারী হয়, সেটি তত বেশি ধীর করে দেয় সময়কে। এর ফলেই উন্মুক্ত হয়েছে সময় ভ্রমনের আরেকটি সম্ভবনা। 

আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রে রয়েছে গ্যালাক্সির সবচেয়ে ভারি বস্তুগুলো। রয়েছে একটি সুপারম্যাসিভ বা অতিভারী কৃষ্ণগহ্বর (ব্লাকহোল)। ভর চল্লিশ লক্ষ সূর্যের সমান, যে ভর কেন্দ্রিভুত আছে একটি মাত্র বিন্দুতে। এর খুব কাছ থেকে আলোও বের হতে পারে না। সময়কে সবচেয়ে বেশি বিকৃত করে কৃষ্ণগহব্বর। তৈরি করে প্রকৃত টাইম মেশিন। 

মনে করুন, কেউ মহাকাশ যানে চেপে কৃষ্ণগহ্বর ভ্রমণে গেলেন।  পৃথিবী থেকে দেখা যাচ্ছে প্রতি ১৬ মিনিটে একবার তিনি প্রদক্ষিণ করছেন। কিন্তু নভোচারী প্রতি ১৬ মিনিটের  বদলে অনুভব করছেন মাত্র ৮ মিনিট। ফলে কৃষ্ণগহ্বর থেকে দূরে অবস্থান করা কারও চেয়ে তিনি অনুভব করবেন অর্ধেকটা সময়। যানের নভোচারী সময় ভেদ করে চলতে থাকবেন। ধরুন, তিনি পাঁচ বছর এভাবে ঘুরলেন। ফিরে এসে দেখবেন, পৃথিবীতে পার হয়ে গেছে ১০ বছর।  মানে পাঁচ বছর বেশি। 

তার মানে অতিভারী কৃষ্ণগহ্বররা এক একটি টাইম মেশিন।  এটি ওয়ার্মহোলের মতো প্যারাডক্সেরও জন্ম দেয় না। তবে ভাবনাটি পুরোপুরি বাস্তবসম্মত নয়।  এবং খুব ভয়ংকর। তার ওপর এভাবে খুব বেশি দূর ভবিষ্যতে যাওয়াও যাবে না।  তবে খুশির খবর হলো, উপায় আছে আরেকটিও। এর জব্য চলতে হবে  অনেক অনেক বেশি বেগে। আমরা জানি,মহাবিশ্বে গতির একটি সর্বোচ্চ সূমা নির্ধারিত আছে। এটি হলো সেকেন্ডে ১৮৬০০০  মাইল,যার অপর নাম আলোর বেগ। কোন কিছুর বেগ এর চেয়ে বেশি হতে পারে না। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, এই বেগের কাছাকাছি বেগে চলতে পারলেও আপনি চলে যাবেন ভবিষ্যতে। 

মনে করুন, পৃথিবীকে বেষ্টন করে গোল করে একটি রেলপথ তৈরি করা আছে। এর ওপর দিয়ে একটি দ্রুতট্রেন চলতে শুরু করল। বেগ আলোর বেগের খুব কাছাকাছি। ট্রেনটি একের পর এক চক্কর খেতে থাকবে পৃথিবীকে ঘীরে প্রায় সাতবার প্রতি সেকেন্ডে এবার ট্রেনের ভেতরে অদ্ভুত কান্ড ঘটতে শুরু করবে। বাইরের জগতের তুলনায় সময় প্রবাহিত হবপ ধীরে। যেমনটা ঘটেছিল কৃষ্ণগহ্বরের কাছে। তবে ট্রেনের বপগ বাড়িয়ে আলোর বেগের ওপর নেওয়া কোনভাবেই সম্ভব নয়। কেউ একজন ট্রেনের ভেতরে দৌড়ানো শুরু করলে মিলিত বেগ কি কোন ভাবেই আলোর বেগের চেয়ে বেশি হওয়া সম্ভব নয় ?  না। কারণ প্রকৃতির সূত্রমতে সময় এমন ভবে ধীর হয়ে যাবে যে বেগ আলোর বেগের নিচেই থাকবে। 

ধরুন, ২০৫০ সালের ১ জানুয়ারি তারিখে ট্রেনটি ছেড়ে গেল। ১০০ বছর পরে, ২১৫০ সালের একই তারিখে শেষ হলো যাত্রা। কিন্তু ভেতরের যাত্রীদের সময় অতিবাহিত হবে মাত্র ১ সপ্তাহ। তাদের সময় এতটাই ধীরে চলছিলো যে ১ সপ্তাহেই বাইরের জগতে ১০০ বছর অতিবাহিত হয়ে গিয়েছিলো। তার মানপ, তারা চলে এসেছেন ভবিষ্যতের পৃথিবীতে। হ্যাঁ, এমন ট্রেন বানানো প্রায় অসম্ভব। তবে ইউরোপীয় গবেষণা সংস্থা সার্নে (CERN) কিন্তু এ ধরনের জিনিস আছে। 

এখানে আছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কণা ত্বটকযন্ত্র।  অবস্থান সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরের মাটির গভীরে। রয়েছে ১৬ মাইল লম্বা একটি বৃত্তাকার সুড়ঙ্গ। ট্রিলিয়ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা ছুটে চলে এই সুড়ঙ্গ ধরে। সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময়ের মধ্যে এদের বেগ শূণ্য থেকে ৬০ হাজার মাইলে উঠে যায়। আরও শক্তি দিলে এ বেগ এত বাড়ে যে কণিকাগুলো প্রতি সেকেন্ডে সুড়ঙ্গকে ১১ হাজার বার চক্কর খায়। যা আলোর বেগের খুব কাছাকাছি। এভাবে এরা আলোর ৯৯.৯৯ ভাগ পর্যন্ত বেগ অর্জন করতে পারে। এ সময় এরা শুধু স্থান ভেদ করেই চলে না। চলে সময় ভেদ করেও। আমরা সেটা জানলাম কী ভাবে ? পাই-মেসন নামে একধরনের কণা আছে। এমনিতে এরা এক সেকেন্ডের আড়াই হাজার কোটি সেকেন্ডের এক ভাগ সময়ের মধ্যে ভেঙে যায়।  কিন্তু বেগ আলোর কাছাকাছি হলে এরা ভাঙতে সময় নেয় ৩০ গুণ বেশি সময়। 

এ তো গেল কণিকা সময় ভ্রমণ। আমরা মানুষেরা তা কীভাবে করব ?  আমার মনে হয়, মহাকাশে যাওয়া ছাড়া উপাই নেই। সবচেয়ে দ্রুতগামী মনুষ্যবাহী যানের নাম অ্যাপোলা ১০। বেগ ছিল ঘন্টায় ২৫ হাজার মাইল।  কিন্তু সময় ভ্রমণের জন্য আরও ২ হাজার গুণেরও বেশি জোরে ছুটতে হবে। আলোর বেগের কাছাকাছি যেতে এর সময় লাগবে ৬ বছর। এক সপ্তাহের ভেতর এটি সৌরজগতের বহিস্থ গ্রহগুলো পার হয়ে যাবে। দুই বছরের মাথায় সৌরজগৎ পার। আরও দুই বছর পরে বেগ হবে আলোর ৯০ ভাগ। পৃথিবী থেকে ৩০ লক্ষ কোটি দূরে। সময় ভ্রমণও শুরু হয়ে যাবে এই সময়। পৃথিবীর দুই ঘন্টায় যানে এক ঘন্টা। যেমনটা হয়েছিল কৃষ্ণগহ্বরগামী যানের ক্ষেত্রে।  আলোর ৯৯ ভাগ বেগ অর্জন করতে আর ২ বছর দরকার। এ অবস্থায় যানের একদিনে পৃথিবীতে এক বছর হয়ে যাবে। এবার সত্যিই ভবিষ্যতে চলে যাওয়া গেল। 

সময়ের ধীরগতির আরেকটি ভালো দিক আছে। আমরা অনেক বড় বড় পথ পেরোতে পারব জীবদ্দশাতেই। যেমন আমাদের ছায়াপথের অপর প্রান্তে যেতে ৮০ বছর লাগবে। কতই না বিস্ময়কর এই জগৎ। যেখানে সময় ভিন্ন স্থানে ভিন্ন বেগে চলে। আমাদের চারপাশে লুকিয়ে থাকে ওয়ার্মহোল নামক সময়-সুড়ঙ্গ। পদার্থবিদ্যার জ্ঞান একদিন হয়তো সত্যিই আমাদের চতুর্থ মাত্রায় ভ্রমণ করাতে সক্ষম হবে।
সংগ্রহ: মহাকাশের যত কথা

ডিজিটাল মিটারের আওতায় এসেছে সেহেতু জেনে রাখুন বৈদ্যুতিক প্রিপেইড ডিজিটাল মিটার ব্যবহারের কিছু তথ্যঃ

-------------------------
প্রথম বার ১০০০ টাকা রিচার্জে আপনি পাবেন ৭৯২ টাকা।

কারণঃ

১। মিটার পরীক্ষার সময় আপনাকে প্রথমেই ১০০ টাকা মিটারের সাথে দেওয়া হয়েছিল। তাই প্রথম ১ বার ১০০ টাকা কাটবে।

২। ডিমান্ড চার্জ আগে প্রতি কিলো ওয়াট লোডের জন্য  ছিল ২৫ টাকা এখন ডিজিটাল মিটারের ক্ষেত্রে ১৫ টাকা। (প্রতি মাসে এক বার করে কাটবে)

৩। মিটার ভাড়া ৪০ টাকা। (প্রতি মাসে এক বার)

৪। সরকারি ভ্যাট আগেও ছিল ৫% এখনো ৫%।

৫। সার্ভিস চার্জ ১০ টাকা। (প্রতি মাসে একবার)

বিঃ দ্রঃ এই সব কারণে ডিজিটাল মিটার প্রথম ১০০০ টাকার কার্ড রিচার্জে ১০০০ টাকার স্থানে ৭৯২ টাকা দেখাবে, কিন্তু আপনি ঐ মাসেই যদি আবার ১০০০ টাকা রিচার্জ করেন তাহলে শুধু সরকারি ভ্যাট ৫% টাকা কাটার পর বাকি টাকা মিটারে রিচার্জ হবে। তাই ডিজিটাল মিটারের গ্রাহকদের আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নাই।

স্থিতি জানতে আরও কিছু বিশেষ তথ্যঃ

১। আপনি কত ইউনিট ব্যবহার করেছেন তা জানার জন্য  ৮০০ চাপুন।

২। আপনার মিটারে কত টাকা জমা আছে তা জানতে ৮০১ চাপুন।

৩। ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স জানতে ৮১০ চাপুন।

৪। মিটার টি চালু অথবা বন্ধ করতে ৮৬৮ চাপুন।

৫। আপনার মিটারটি কত কিলোওয়ার্টের  তা জানতে ৮৬৯ চাপুন।

পোস্টটি প্রয়োজনীয় হলে শেয়ার করে টাইমলাইনে রাখতে পারেন।

Tuesday, May 25, 2021

"কখনোই সম্ভব নয় বৃহস্পতি গ্রহে অবতরন করা‍।"কেন?

কারন পৃথিবীর মতো বৃহস্পতি গ্রহে কোন কঠিন ভূপৃষ্ঠই নেই‍। রয়েছে কেবল বিভিন্ন গ্যাসে ভর্তি একটি বৃহৎ বায়ুমন্ডল যেখানে দানবাকার রঙীন মেঘ, বজ্রপাত ও সমগ্র পৃথিবীকে শুষে নেবার ক্ষমতাসম্পন্ন বৃহদাকার ঘূর্ণিঝড় সর্বদা চলমান‍! কি হবে যদি কোনো নভোচারী অত্যাধুনিক মহাকাশযানে করে এর অভ্যন্তরে যাবার চেষ্টা করে? আসুন সম্মুখীন হই এই রোমাঞ্চকর অভিযানের‍......

* প্রথমত, এই গ্রহে আপনি প্রবেশই করতে পারবেন না যদি প্রচলিত স্যান্ডার্ড স্পেসশুট পরে সেখানে যান‍। কারন গ্রহের  300,000 কি.মি র আশেপাশে এলেই এর রেডিয়েশন আপনার জৈবিক দেহকে একেবারে চূর্ণবিচূর্ণ করে ফেলবে‍। এবার এই সমস্যা থেকে বাঁচতে নভোচারীকে এক কাল্পনিক রেডিয়শনরোধী শ্যুট পড়ানো হলো‍। এরপর?

* সারফেস থেকে ২৫০ কি.মি নিচে:
গ্রহের কাছাকাছি যাবার পর অভিকর্ষে প্রতি ঘন্টায় ১৮০,০০০ কি.মি বেগে আমরা এর ভেতরে চলে যাবো এবং ২৫০ কি.মি যাবার পর আমরা প্রবেশ করবো -১৫০ ডিগ্রি তাপমাত্রার অ্যামোনিয়ার মেঘের রাজ্যে। এখানে এলে ৪৮২ কি.মি/ঘন্টা(!) বেগের মৃদুমন্দ হাওয়া আমাদের দোলা দিয়ে যাবে আর চোখের সামনে দৃশ্যমান হবে লাল নীল বিভিন্ন রঙের ঘূর্ণিঝড়ের সমাহার‍।

* আরো ১২০ কি.মি নিচে:
অভিনন্দন! আমরা চলে এসেছি মানবজাতির ভ্রমনকৃত সর্বোচ্চ গভীরতায়‍। ১৯৯৫ সালে নাসার গ্যালেলিও প্রোব সর্বোচ্চ এই গভীরতায় এসে বায়ুমন্ডলের চাপে ধ্বংস হয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়‍। এখানে বায়ুর চাপ পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের বায়ুর চাপের ১০০গুন বেশি এবং সূর্যের আলো এই গভীরতায় না আসায় অন্ধকারে এবার আমাদের টর্চ জ্বালাতে হবে‍।

* ৪৩০ মাইল নিচে:
এবার এখানে বায়ুর চাপ ১১৫০ গুন বেশি! এখানে টিকে থাকতে গেলে প্রয়োজন হবে পৃথিবীর সর্বোচ্চ  গভীরতার যেতে সক্ষম Trieste সাবমেরিন‍। এর আরো একটু গভীরে যখন যাবো পৃথিবীর সাথে সব যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে কারন এখানের বায়ুমন্ডল রেডিওওয়েভ তরঙ্গ শুষে নিতে সক্ষম‍।

* ২৫০০ মাইল নিচে:
এখানে তাপমাত্রা ৬১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট! অর্থ্যাৎ এই গভীরতায় ইউনিভার্সের সর্বোচ্চ গলনাঙ্কের মৌল টাংস্টেনও গলে যাবে! লক্ষ্যনীয়, ১২ ঘন্টা ধরে পতিত হহলেও আমরা এখনো অর্ধেকও পৌছতে পারিনি‍।

* ১৩,০০০ মাইল নিচে:
এটা inner most layer. এখানে চাপ পৃথিবীর চেয়ে ২ মিলিয়ন গুন বেশি‍। এবং তাপমাত্র সূর্যের পৃষ্ঠের থেকেও বেশি‍। এই পরিস্থিতি এতোটাই ভয়ঙ্কর যে এখানে হাইড্রোজেনের রসায়নও বদলে যায়! এতো শক্তির প্রভাবে হাইড্রোজেনের ইলেকট্রন ঘনিভূত হয়ে এক অস্বাভাবিক পদার্থ "Metalic hydrogen" গঠন করে! এটি অত্যন্ত প্রতিফলন ক্ষমতা সম্পন্ন তাই এখন আর লাইট ব্যাবহার করে লাভ হবে না! এই মেটালিক হাইড্রোজেন যথেষ্ট ঘন‍। এর ভেতরে প্রবেশ যদি করি তবে এর প্লবতা আমাদের ওপরের দিকে ঠেলবে‍। অন্যদিকে গ্রাভিটি টানবে নিচের দিকে‍। আর দুটো ফোর্স সমান হলে আমরা ঐ স্থানে আটকে থাকবো অনন্তকালের জন্য‍।

আমাদের যাত্রা এই পর্যন্তই‍। এর বেশি হয়তো আমরা কোনোদিনই জানতে পারবো না‍। দেখতে পারবো না কি রহস্য রয়েছে এই ভয়ংকর রঙীন মেঘের এর গভীরে‍। তবুও দূরে বসে নক্ষত্র হতে গিয়েও ভরের অভাবে না হতে পারা "Failed Star" খ্যাত, দানব বৃহস্পতি গ্রহকে নিয়ে গবেষনার বহু সম্ভাবনার দুয়ার এখনো খোলা আমাদের সামনে!

Informations from Internet.

Wednesday, May 19, 2021

ভয়েজার-১ নামক স্পেসক্রাফটটি পৃথিবী ত্যাগ করে ১৯৭৭ সালের সেপ্টেম্বরে।

৪০ বছর কেটে গেছে। ৮২৫ কিলোগ্রাম ওজনের ভয়েজার-১ আর পৃথিবীর মধ্যকার দুরত্ব এখন প্রায় ১৪ বিলিওন মাইল! 
'লং ডিসটেন্স রিলেশনশিপ'এর সবচেয়ে বড় উদাহারণ হয়ে ভয়েজার-১ এখনো পৃথিবীর মানুষের সাথে যোগাযোগ রেখে চলেছে!

ভয়েজার বৃহষ্পতি গ্রহকে অতিক্রম করেছে ১৯৭৯ সালে। যাত্রাপথে সে আমাদেরকে পাঠিয়েছে বৃহষ্পতির ছবি। আমরা দেখেছি দানবগ্রহ বৃহষ্পতির বুকে ১৮৮ বছর ধরে বয়ে চলেছে এক দানবঝড় - দ্যা গ্রেট রেড স্পট। এই ঝড়ের আয়তন তিনটা পৃথিবীর সমান!

ভয়েজার-১ শনি গ্রহ অতিক্রম করে ১৯৮০ সালে। ভয়েজার আমাদেরকে জানিয়েছে শনিকে প্রদক্ষিণ করছে আরো অনেকগুলো বরফের তৈরী চাঁদ!

ভয়েজার তাঁর সর্বশেষ ছবিটি তুলেছিলো ১৯৯০ সালের ভালোবাসার দিবসে। অর্থাৎ ১৪ ফেব্রুয়ারিতে। সর্বশেষ এই ছবিটি ভয়েজার তুলেছিলো কার্ল স্যাগান নামক একজন খেয়ালী বিজ্ঞানীর অনুরোধে।

'কার্ল স্যাগান' নামটি ভয়েজার-১এর সাথে মিশে আছে একটু ভিন্নভাবে। সংক্ষেপে বলা যাক।

ভয়েজার ১ তৈরির কাজ তখন প্রায় শেষ। নাসা দ্রুত ভয়েজারকে অনন্ত মহাশূণ্যের উদ্দেশ্যে বিদায় জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
৪০ বছর বয়েসী কার্ল স্যাগান তখন ভাবলেন একটা ভিন্ন ব্যাপার। তিনি ভাবলেন, এই স্পেসক্রাফটটি তো চলতেই থাকবে। এর গতি কমবে না, বরং বাড়বে। এক সময় এটা আমাদের সৌর জগতকে ছেড়ে চলে যাবে। হয়তো ছেড়ে যাবে আমাদের মিল্কিওয়ে ছায়াপথকেও। এমনও সময় আসবে যখন ভয়েজার থেকে আমাদের দূরত্ব হবে কয়েক হাজার আলোকবর্ষ। এই দূরতম বন্ধুর সাথে আমাদের আর কোনো যোগাযোগই তখন থাকবেনা। কে বলতে পারে এই ভয়েজার কোনোদিন কোনো বুদ্ধিমান প্রাণীর দেখা পাবে না!
কী হবে যদি কয়েক কোটি আলোকবর্ষ দূরের কোনো স্বজনের সাথে দেখা হয় ভয়েজারের!
কার্ল স্যাগান দূরতম সেই স্বজনদের জন্য বার্তা এবং উপহার পাঠাতে চাইলেন।

নাসায় কমিটি তৈরী করা হলো। স্যাগান হলেন কমিটির প্রধান। এক বছর ধরে চললো ভীনগ্রহের স্বজনদের জন্য বার্তা সংগ্রহের কাজ।
৫৫ টি ভাষায় 'হাই' জানানো হলো দূরতম স্বজনদের। 
প্রথম জানালেন, তৎকালিন জাতিসংঘের মহাসচিব কার্ট ওয়াল্ডহেইম। তিনি বললেন, "I send greetings on behalf of the people of our planet. We step out of our solar system into the universe seeking only peace and friendship, to teach if we are called upon, to be taught if we are fortunate."

আছে বাংলা ভাষাও। কন্ঠ দিয়েছেন সুব্রত মূখার্জি। তিনি বলেছেন 'নমস্কার, বিশ্বের শান্তি হোক।'

পাঠানো হলো বৃষ্টির শব্দ, বাতাসের শব্দ, হাসির শব্দ। হেসেছিলেন কার্ল স্যাগান নিজেই। 
পাঠানো হলো পাখির ডাক, ঝিঝি পোকার ডাক।

ভয়েজারের সাথে পাঠানো হলো ৯০ মিনিট দীর্ঘ গান এবং সুর। এর মধ্যে ছিলো সাড়ে তিন মিনিটের একটি ভারতীয় সুরও।

অচেনা স্বজনদের জন্য ছবি পাঠানো হলো ১১৬টি। এর মধ্যে আছে আমাদের ডিএনএর ছবি, হাঁড়ের ছবি,পাখির ছবি, সূর্যদয়ের ছবি, সূর্যাস্তের ছবি, নারী পুরুষের জননাঙ্গের ছবি, মিলনের ছবি! খাওয়ার ছবি, পান করার ছবি, শিশুকে স্তন পান করানোর ছবি!
যুদ্ধ আর অস্ত্রের ছবি পাঠানোর কথা থাকলেও পরে আর পাঠানো হয়নি।

কার্ল স্যাগান তখন ভয়েজার-১ এর জন্য 'গোল্ডেন রেকর্ড' তৈরীর কাজে দিনরাত ব্যাস্ত এবং ভীষণ উত্তেজিত। 
একদিন ভোরবেলা তিনি তার সুন্দরী সহকর্মী অ্যান ড্রুয়ানকে ফোন করলেন। কিছুক্ষণ কথা বলার পর ফোন রেখে দিলেন। 
ফোন রাখার পর স্যাগান আবিষ্কার করলেন তিনি ড্রুয়ানের প্রেমে পড়েছেন! স্যাগান মনের কথা জানালেন ড্রুয়ানকে। ড্রুয়ান জানালেন, তিনিও...।

এরপর কার্ল স্যাগান করলেন আরেক ছেলেমানুষী কাজ। তিনি তাঁর প্রেমিকাকে এক ঘন্টা চুপচাপ শুয়ে থেকে পৃথিবীর কথা, মানব সভ্যতার কথা এবং স্যাগানের প্রতি তাঁর ভালোবাসার কথা ভাবতে বললেন। 
বেচারী ড্রুয়ান এক ঘন্টা চোখ বন্ধ করে এসব ভাবলেন। এই সময় তাঁর ব্রেইনওয়েভ রেকর্ড করা হলো। 
এই ব্রেইনওয়েভও জুড়ে দেয়া হলো ভয়েজার ওয়ানের সাথে!

ভয়েজার ওয়ান ৪০ বছর থেকে ছুটছে।

যাত্রার ১৩ বছর পর ভয়েজার-১ তখন পৃথিবী থেকে ৬ বিলিওন কিলোমিটার দূরে। আমাদের সৌরজগতকে শুভ বিদায় জানাচ্ছে এই স্পেসক্রাফট। 
কার্ল স্যাগান তখন তাঁর শেষ পাগলামীটা করলেন। নাসার বিজ্ঞানীদের তিনি অনুরোধ করলেন এত দূরত্ব থেকে ভয়েজার-১ পৃথিবী নামক গ্রহের একটা ছবি তুলে পাঠাক। 
অনেক বিজ্ঞানীদের আপত্তি ছিলো। তারা বলেছিলেন ভয়েজারের ক্যামেরা পৃথিবীর দিকে ঘুরালে সূর্যের আলোতে সেটার ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু স্যাগানের অনুরোধে শেষবারের মতো পৃথিবীর ছবি তুলেছিলো ভয়েজার-১। একটা বিন্দুর চেয়েও ছোট দেখাচ্ছিলো আমাদের প্রিয় পৃথিবীকে! 

কার্ল স্যাগান মারা গেছেন ১৯৯৬ সালে।
ভয়েজার -১ আমাদের সৌরজগতকে চির বিদায় বলেছে ১৯৯০ সালেই। হেলিওশিথকে বিদায় বলেছে ২০১২ সালে। ভয়েজার -১ এখন আছে ইন্টারস্টেলার স্পেসে। নিঃসীম শীতল অন্ধকারে ঘন্টায় ৬২ হাজার কিলোমিটার বেগে ছুটে চলেছে ভয়েজার-১। 
আর কয়েকটা বছর মাত্র। তারপর আমরা যোগাযোগ হারিয়ে ফেলবো আমাদের দূরতম এই বন্ধুটির সাথে। ... এবং তারপর কোথায় যাবে ভয়েজার-১, কোথায় থাকবে আমাদের প্রিয় গ্রহের কয়েক কিলোবাইট স্মৃতি আমরা জানতে পারবো না কোনোদিনও!

রাত নামলেই সে’নাবাহি’নীর স’দস্যরা এসে দর’জায় টোকা দেয়।

রাত নামলেই সে’নাবাহি’নীর স’দস্যরা এসে দর’জায় টোকা দেয়। ঘরের ভে’তরে ঢু’কেই তারা খোঁজে সুন্দ’রী মে’য়েদের। পছন্দ’মতো কাউকে পেয়ে গেলে তাকে টে’নে হিঁ’চড়ে নিয়ে যায় জঙ্গলে। এর’পর গ’ণ’ধ**ণ করে। কারো কপাল ভা’লো হলে গ্রামের রাস্তার পা’শে অ’র্ধমৃ”ত অবস্থায় তা’কে ফেলে যায় তারা। অন্য’দের মে”রে ফেলা হয়। তাদের গ’লা কে’টে হ**ত্যা করা হয়। মি’য়ানমা’রের রাখা’ইনে সে’নাবাহি’নীর নৃশংসতা এভাবেই বর্ণনা করেন কক্স’বাজারের কুতুপালংয়ে আশ্র’য় নেয়া রো’হিঙ্গা নারী হামিদা খাতুন। ২৫শে আগস্ট রা’খাইনে সহিংসতা ছড়ি’য়ে পড়ার পর সেখানে রো’হিঙ্গা মু’সলিম’দের ওপর চলছে অকথ্য নির্যা’তন। এ জন্য তারা পা’লিয়ে বাংলা’দেশে আ’সতে বাধ্য হ’চ্ছেন।এখানে আ’শ্রয় নেয়া এমন আরো রো’হিঙ্গা নারী-পুরুষ রাখাইনে সংঘ’টিত নৃ’শংসতার কথা তুলে ধরে’ছেন। তাদের নিয়ে এক’টি প্র’তিবেদন প্রকাশ করেছে অ’নলাইন টাই’মস অব ইন্ডিয়া। এতে বলা হয়ে’ছে, বনের ভেতর দিয়ে টানা তি’নদিন খা’লি পায়ে হেঁটে’ছেন বেগম বাহার। এ সময় কাপড় দিয়ে পিঠের স’ঙ্গে বাঁধা ছিল তার আট মাস বয়সী শি’শু।বনের বিভিন্ন জি’নিস খেয়ে জীবন র’ক্ষা করেছেন। তৃ’ষ্ণার্ত হলে পান করে’ছেন লো’না পানির ধারা থে’কে পানি। এটাই তার স’ঙ্গীদের স’ফরের শক্তি যুগি’য়েছে। শেষ পর্যন্ত বেগম বাহার যখন নাফ নদে পৌঁ’ছেন তখন তিনি নৌ’কা দেখতে পান। এসব নৌকায় করে শ’রণার্থীদের পার করে দে’য়া হচ্ছে। তিনি স্ব’স্তির নিঃ’শ্বাস নেন।মনে করেন, এটা’ই তাকে ও তার স’ন্তান’কে নিরা’পদে পৌঁছে দেবে বাংলা’দেশে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি মা’টিতে বসে পড়েন। কা’ন্নায় ভেঙে পড়েন। নৌ’কায় উঠে’ই যেন তার চেতনা ফে’রে। খালি পায়ে কেটে, ছিঁড়ে যাও’য়া স্থান দিয়ে র’ক্ত ঝরছে। তিনি ব্যথা অ’নুভব করতে শু’রু করেন। চ’ন্দ্রাকৃতির নৌ’কায় করে ন’দী পার হন তিনি।এভাবেই হা’জার হাজার রো’হিঙ্গা মৃ”ত্যু”র হাত থেকে পালিয়ে বাংলা’দেশে আশ্রয় নি’য়েছেন। নৌ’কা ছুটে চলতে থা’কে। বেগম বাহার পেছনের দিকে তা’কিয়ে থা’কেন। আস্তে আস্তে রাখা’ইনের স্থ’লসীমানা তার দৃষ্টি’সীমা থেকে দূরে সরে যে’তে থাকে। ওই দেশ, ওই মাটি’ই তার জ’ন্মভূমি- এ কথা ভেবে হাউ’মাউ করে কেঁ”দে ফে’লেন বেগম বা’হার।ওই সেই দেশ যে’খানে তিনি জ’ন্মেছেন, কিন্তু তাকে রাষ্ট্র’হীন করে রাখা হয়েছে, গৃ’হহীন করা হয়েছে। বেগম বাহা’রের মতো প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা এরই মধ্যে বাংলা’দেশে আশ্রয় নিয়েছেন। বেগম বাহার বলেন, আমরা জানি মানুষ যে’খানে জন্ম’গ্রহণ করে সব সময় সেটাই তার মাতৃ’ভূমি। চরম অবস্থায় ঠেলে না দিলে কেউ কোনো’দিন তার ’মা’কে ছে’ড়ে যায় না।তাই আমাদের সামনে কোনো বি’কল্প পথ ছিল না, দেশ ছেড়ে আ’সা ছাড়া। সে’নাবাহি’নী আমাদের গ্রাম’গুলোতে ঢুকে কোনো দেখ’ভালের তো’য়াক্কা না করে অবাধে হত্যা’কাণ্ড শুরু করে। উ’ল্লেখ্য, মি’য়ানমা’রের রাখাইনে রোহিঙ্গারা যুগের পর যুগ রা’ষ্ট্রহীন। সে’খানে রো’হিঙ্গা’র সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ।

Monday, May 17, 2021

কেউ যদি মনে করেন যে মানুষ আসলে চাঁদে যায়নি তবে দয়া করে নিচের কথাগুলো একটু সময় নিয়ে পড়ে দেখুন। 🙂

“মানুষ আসলে চাঁদে যায়নি। পুরোটাই ছিল আমেরিকার সাজানো নাটক। এরিয়া ফিফটি ওয়ান নামের এক গোপন মরু এলাকায় চাঁদে অবতরণের শুটিং করে সেটাকেই অ্যাপোলো অভিযান নামে চালিয়ে দিয়েছিল মার্কিনিরা। পুরোটাই ভুয়া।” চন্দ্রবিজয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ ও ব্লগ মাধ্যমে খুবই পরিচিত একটি দাবী। অনেকেরই বিশ্বাস এটি একটি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব, এর সম্পূর্ণটাই নাটক।

এর এক কথায় উত্তর হলো- অবশ্যই, ১৯৬৯ সালে প্রথমবারের মতো আসলেই মানুষ চাঁদে অবতরণ করেছিল। সেটি মোটেও এরিয়া ফিফটি ওয়ানে স্ট্যানলি কুব্রিকের শুটিং ছিল না। শুধু অ্যাপোলো-১১ এর দুজন নন, মোট ১২ জন মানুষ হেঁটেছেন চাঁদে। চাঁদে যাবার বিপক্ষে যে যে অভিযোগগুলো তোলা হয় এখানে সেগুলোর ব্যবচ্ছেদ করা হবে। বলে রাখা ভালো, চাঁদে মানুষ যায়নি- এ ষড়যন্ত্র তত্ত্বের জনক William Charles Kaysing যিনি ২০০৫ সালে মারা যান।

অভিযোগ ১: চাঁদের মাটিতে পতাকা উড়ছিল, অথচ চাঁদে তো বাতাস নেই।(চিত্রঃ১)

চাঁদের বুকে পতাকার ভিডিওতে দেখা যায়, পতাকা লাগাবার সময় আসলেই সেটি উড়ছে বলে মনে হচ্ছে। চাঁদে যেহেতু বাতাস নেই তাহলে পতাকাকে উড়াচ্ছে কে? পদার্থবিজ্ঞানের সরলতম সূত্র জানা মানুষের পক্ষেও এর কারণ বুঝতে পারা সম্ভব। বায়ুহীন পরিবেশে নড়ার রসদ দিচ্ছে গতি জড়তা। পতাকা লাগাবার সময় যে নড়াচড়া হচ্ছিল তার গতি জড়তার কারণে বায়ু না থাকা সত্ত্বেও পতাকা নড়ছিল একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। ঐ নড়াচড়ার সাথে বায়ুপ্রবাহের কোনো সম্পর্ক ছিল না। পতাকা বানিয়েছিল Annig Flagmakers, রেয়নের তৈরি সে পতাকার দাম ছিল তখন ৫ ডলার, এখন ৩২ মার্কিন ডলার।

ল্যাবরেটরিতেও বায়ুশূন্য স্থানে পরীক্ষাটি করে দেখা হয়। সেখানেও চাঁদের মতোই ফলাফল। চাঁদের অভিকর্ষের কারণে পতাকা সামান্য সময় পরেই নীচে নেমে যাবে বলে L আকৃতির একটি দণ্ডের সাহায্যে আটকে দেয়া হয়েছিল। বাতাসের বাধা না থাকায় জড়তা একটু বেশি সময় পর্যন্ত বোঝা গিয়েছিল। আর পদার্থবিজ্ঞানের দিক থেকে বিবেচনা না করে মানুষেরা সেটিকে ধরে নিয়েছিল বাতাসের প্রবাহ হিসেবে! ভিডিওতে দেখানো পরীক্ষাগারের ঐ পরীক্ষাটি দেখতে পারেন আপনিও।

অভিযোগ ২: চাঁদে তোলা ছবিতে কোনো তারাই দেখা যায় না।(চিত্রঃ২)

চাঁদেও কিন্তু সকাল হয়! সেখানে আকাশ নীলাভ নয় বাতাস নেই বিধায়, কিন্তু সূর্য তো আছে! যে সময়ে ছবিগুলো তোলা হয়েছিল তখন ছিল চাঁদের দিনের বেলা। সূর্যের আলোতে আকাশের তারকা তখন কীভাবেই বা ধরা পড়বে ছবিতে?
তাছাড়া, এখানে এক্সপোজারের ব্যাপার আছে। যদি আকাশের তারকার ক্ষীণ আলো ধরবার মতো করে এক্সপোজার রাখা হত, তবে দেখা যেত চাঁদের পৃষ্ঠ ও পৃথিবী অনেক সাদা হয়ে গিয়েছে! ক্যামেরার এক্সপোজার নিয়ে যারা ধারণা রাখেন, তারা বিষয়টি ভালো বুঝতে পারবেন।

অভিযোগ ৩: পায়ের ছাপ তো মেলে না!(চিত্রঃ৩,৪)
অনেকে বলে থাকেন চাঁদ থেকে তোলা ছবিতে দেখানো জুতার ছাপ এবং পরবর্তীতে দেখানো জুতার ছাপ মিলে না।আসলে ছবিতে যেটা দেখা যাচ্ছে সেটা ভেতরের জুতো। অথচ ছাপ তো পরবে বাইরের জুতোর, যেটি আউটার বুট নামে পরিচিত! 

অভিযোগ ৪: পাথরের ছায়া আর অবতরণ করা মুনল্যান্ডারের ছায়া তো একই দিকে না, অথচ সূর্য তো একটিই!(চিত্রঃ৫)

 ছবিতে দেখা যাচ্ছে, পাথরের ছায়া কোণাকোণি পড়েছে, যেখানে ঈগল মুনল্যান্ডারের ছায়া পড়েছে সোজাসুজি। আসলে একটি বস্তুর ছায়া আপনি কীরকম দেখতে পাবেন সেটা নির্ভর করে বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর, শুধু আলোক উৎসের উপর নয়। এক্ষেত্রে যেটা হয়েছে তা হলো চন্দ্রপৃষ্ঠের বন্ধুরতা। পাথরের ছায়া যেখানে পড়েছে সেখানে জায়গাটা বন্ধুর দেখে ছায়াটাকে সোজা লাগছে না।

অভিযোগ ৫: ছায়াতে এত স্পষ্ট ছবি দেখা যাচ্ছে কেন?(চিত্রঃ৬)

এ ব্যাপারটা চাঁদে তোলা অনেক ছবিতেই দেখা যায়। সূর্য সেখানে প্রধান আলোর উৎস হলেও একমাত্র উৎস নয়, চন্দ্রপৃষ্ঠ নিজেও আলো প্রতিফলন করে ও উৎস হিসেবে কাজ করে, এবং বায়ুমণ্ডল না থাকায় ছবি বেশ স্পষ্ট ও উজ্জ্বল আসে।

অভিযোগ ৬: বাজ অলড্রিনের এই ছবি তুলল কে?(চিত্রঃ৭)

ছবিটা তুলেছিলেন নীল আর্মস্ট্রং। জুম করলে দেখা যাবে, বাজ অলড্রিনের হেলমেটে যে বিম্ব দেখা যাচ্ছে সেখানে নীল আর্মস্ট্রং আছেন, তিনিই ছবি তুলছেন। কিন্তু আর্মস্ট্রংয়ের হাত ওপরে ক্যামেরা ধরার মতো করে নেই। কারণ স্যুটে বুকের কাছে ক্যামেরা ফিক্স করে দেয়া ছিল। তিনি হাত বুকের কাছে এনেছেন ছবি তুলবার জন্য।

অভিযোগ ৭: ভ্যান অ্যালেন রেডিয়েশন বেল্ট নভোচারীরা কীভাবে পার হলেন?(চিত্রঃ৮)

ভূ-চৌম্বকক্ষেত্রের ভ্যান অ্যালেন রেডিয়েশন বেল্ট পার হয়েই মহাশূন্যে আসতে হয় নভোচারীদের। কোনো শিল্ড ছাড়া কেউ যদি বছরখানেক সেখানে ভ্রমণ করেন তবে ২,৫০০ REM পরিমাণ তেজস্ক্রিয়তা ভোগ করতে হবে তাকে। কিন্তু অ্যাপোলো মিশনে তারা এত তাড়াতাড়ি সে অঞ্চল পেরিয়ে গিয়েছিলেন যে আসা-যাওয়া মিলিয়ে তারা মোটে মাত্র ০.৫ REM এর মতো তেজস্ক্রিয়তার মুখোমুখি হয়েছিলেন। এমনকি সেটা যদি ২ REM হতো তবেও সেটা নিরাপদ বলা যেত।

অভিযোগ ৮: যেখানে মডিউল অবতরণ করে, সেখানে কোনো বিস্ফোরণজনিত গর্ত নেই কেন?

অবতরণের সময় লুনার ল্যান্ডার রকেট নিক্ষেপ করে গতি কমাবার জন্য। তাহলে চাঁদের মাটিতে আমরা কেন কোনো বিস্ফোরণ থেকে উৎপন্ন গর্ত দেখতে পাইনি? এর কারণ, ল্যান্ডারের যে রকেট ছিল সেটি ১০,০০০ পাউন্ডের ধাক্কার (থ্রাস্ট) ক্ষমতা রাখত। কিন্তু নামবার জন্য দরকার ছিল মাত্র ৩,০০০ পাউন্ড থ্রাস্ট। নির্গত গ্যাসকে মাটির ঠিক এক জায়গায় গিয়ে আঘাত করবার মতো বায়ুচাপ চাঁদে অনুপস্থিত। হিসেব করে দেখা যায়, সেক্ষেত্রে চাপটা প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে ছিল মাত্র দেড় পাউন্ড। গর্ত তৈরি হবার জন্য সেটা মোটেও যথেষ্ট ছিল না। তাছাড়া অবতরণ হয়েছিল নিরেট পাথরে, গর্ত হবার তো প্রশ্নই আসে না।

অভিযোগ ৯: চাঁদে উড্ডয়ন-অবতরণ কোনো ক্ষেত্রেই রকেট থেকে কোনো অগ্নিশিখা দেখা যায়নি কেন?(চিত্রঃ৯)

হাইড্রোজেন এবং ডাইনাইট্রোজেন টেট্রাঅক্সাইডের মিশ্রণে যে জ্বালানি ব্যবহার করা হয়েছিল সেটার প্রজ্জ্বলনে যে শিখা উৎপন্ন হতো সেটি স্বচ্ছ, এজন্য কোনো অগ্নিশিখা ‘দেখা’ যায়নি।

অভিযোগ ১০: ধুলোর উপর পায়ের ছাপ এত যত্ন করে সুরক্ষিত মনে হয় কেন?(চিত্রঃ১০)

এটার উত্তরও বায়ুর অনুপস্থিতি। যে ছাপ সেখানে আছে কোনো বাতাসের অভাবে ধুলোবালি না ওড়াতে সেটি অক্ষতই রয়ে গেছে, এবং সেরকমই থেকে যাবে।

অভিযোগ ১১: চাঁদ থেকে নিয়ে আসা পাথরগুলোর সাথে এন্টার্কটিকা মহাদেশ থেকে আনা কিছু পাথরের এত মিল কেন?(চিত্রঃ১১)

পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় ৩০টির মতো পাথর পাওয়া গিয়েছে যা কিনা আসলে চাঁদের অংশ, চাঁদ থেকে ছুটে আসা। উল্কাপিণ্ড মানেই আসলে বহির্জগৎ থেকে ছুটে আসা পাথর। পৃথিবীতে পাওয়া চন্দ্রপাথরগুলো অগ্নিদগ্ধ এবং অক্সিডাইজড। ভূতত্ত্ববিদেরা নিশ্চিত করেছেন যে, নীল আর্মস্ট্রংদের আনা পাথরগুলো আসলেই চাঁদ থেকে আনা।

অভিযোগ ১২: এই C অক্ষরওয়ালা পাথর এলো কীভাবে?(চিত্রঃ১২,১৩)

এটা কিন্তু অ্যাপোলো-১১ নিয়ে কিছু না, বরং অ্যাপোলো-১৬ নিয়ে। এই পাথরের ছবি দেখিয়ে বলা হয়, পাথরের গায়ে C কেন? তার মানে নিশ্চয়ই এটা বানোয়াট। আমরা বরং আসল ছবিটা দেখি যেখানে চার্লস ডিউক লুনার রোভারের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন।ভালো করে ছবিটি দেখুন এবং এরপর জুম করে দেখুন। আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন, সেই C আসলে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচারকারীদের বানোয়াট একটা ব্যাপার।

অভিযোগ ১৩: নীল আর্মস্ট্রং যদি প্রথম চাঁদে অবতরণকারী হন তবে তার ভিডিও করল কে?(চিত্রঃ১৪,১৫)

এটার উত্তর এতই সোজা যে এটা নিয়ে প্রশ্ন কেন ওঠে সেটাই রহস্য। নীল আর্মস্ট্রং সিঁড়ি বেয়ে নামবার সময় একবার থেমে একটি ক্যাবল বের করেছিলেন। তখন লুনার মডিউলের পাশ থেকে টিভি ক্যামেরা বেরিয়ে আসে। সরাসরি সম্প্রচারের জন্য এটা করা হয়। অডিও রেকর্ডিং এ এখনো শোনা যায় নীল জিজ্ঞেস করছেন যে সবাই পরিষ্কার ছবি পাচ্ছেন কিনা।

অভিযোগ ১৪: চাঁদে যদি আসলেই গিয়ে থাকে মানুষ তবে এখন আর যায় না কেন? নিক্সন প্রশাসনের সময়ই কেন যাওয়া হয়েছিল কেবল?

এটা খুবই জনপ্রিয় একটি প্রশ্ন। সোভিয়েত রাশিয়ার সাথে স্নায়ুযুদ্ধের সময় আমেরিকার একটা বিজয় দরকার ছিল, চন্দ্রবিজয়ের দ্বারা সেই ‘স্পেস রেস’-এ জিতে যায় আমেরিকা। বাড়াবাড়ি রকমের অর্থ খরচ হয়ে গিয়েছিল এই প্রতিযোগিতায় জিততে। উভয় পক্ষই বুঝতে পারে যে, পৃথিবীর কক্ষপথে মিশন রাখাই বরং বেশি অর্থসাশ্রয়ী এবং কাজের, চন্দ্রবিজয়ের বাস্তবিক আর কোনো কারণ তেমন ছিল না। তবে চাঁদে এখন আর না যাবার পরিকল্পনা না থাকলেও, মঙ্গল বিজয়ের রূপরেখা কিন্তু বানানো চলছে!

এই গেল মূল অভিযোগগুলোর উত্তর। এবার আমরা নজর দেব নাসার হাত নেই এমন উৎস থেকে আমরা কী করে নিশ্চিত হতে পারি চন্দ্রবিজয়ের ব্যাপারে।

২০০৮ সালে জাপানের Japan Aerospace Exploration Agency (JAXA) থেকে পাঠানো লুনার প্রোব SELENE কিছু ছবি তোলে যা চন্দ্রবিজয়ের প্রমাণ দেয়।(চিত্রঃ১৬)
চাঁদে মানুষ অবতরণের সবচেয়ে অকাট্য প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা হয় LRRR (Laser Ranging Retro-Reflectors) এক্সপেরিমেন্ট। অ্যাপোলো-১১ এর মহাকাশচারীরা চাঁদের মাটিতে ঠিক এভাবে লেজার রিফ্লেকটর রেখে এসেছিলেন।(চিত্রঃ১৭)

পৃথিবী থেকে চাঁদে লেজার নিক্ষেপ করা হলে, ঠিক রিফ্লেকটরে পড়লে নির্দিষ্ট সময়ে আলো ফিরে আসে পৃথিবীতে। Observatoire de la Côte d’Azur, McDonald, Apache Point এবং Haleakalā অবজারভেটরি নিয়মিত এই অ্যাপোলো রিফ্লেক্টর ব্যবহার করে। Lick Observatory ১৯৬৯ সালের ১ আগস্ট নভোচারীদের রেখে আসা রিফ্লেক্টরের অস্তিত্ব এ পরীক্ষার মাধ্যমে খুঁজে পায়। ১৯৭১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি অ্যাপোলো-১৪ এর নভোচারীরা রিফ্লেক্টর রেখে আসেন, যা ম্যাকডোনাল্ড অবজার্ভেটরি সেদিনই খুঁজে পায়, অর্থাৎ কোনো মানুষই সেটা সেখানে রেখেছে। অ্যাপোলো-১৫ এর রিফ্লেক্টর রাখা হয়েছিল ১৯৭১ সালের ৩১ জুলাই এবং কিছুদিনের মাঝেই ম্যাকডোনাল্ড অবজার্ভেটরি সেটা খুঁজে পেতে সক্ষম হয়। এছাড়া নানা ছবির মাধ্যমেও প্রমাণ পাওয়া যায়।

তার চেয়েও বড় কথা, আমেরিকা ছয় ছয় বার চাঁদে মানুষ পাঠাবে, অথচ সোভিয়েত ইউনিয়ন একে ‘নাটক’ জেনেও আমেরিকার ‘গোমর’ ফাঁস করে অপমান করবার চেষ্টা করবে না, এ হতে পারে না। কারণ তারা যে সাপে নেউলের মতো লেগে থাকত তখন একে অন্যের পিছে!

সূত্রঃরোর মিডিয়া।

আলোটা চলতে থাকবে কি না...?

কিছুদিন আগে একটা প্রশ্ন করা হয়েছিল এরকম একটা ছবিটা দিয়ে যে, " একটা শক্তিশালী লেজার ওপরের দিকে ১ সেকেন্ডের জন্য জ্বালিয়ে বন্ধ করে দিলে আলোটা চলতে থাকবে কি না..."? 

আমি প্রশ্ন টার উত্তর এভাবে পোস্ট আকারে দিচ্ছি সেজন্য আমি ক্ষমা প্রার্থী।

উত্তরটা নিচে দেওয়ার চেষ্টা করলাম, ভুল-ত্রুটি মাফ করবেন ও সংশোধন করানোর অনুরোধ করছি।

আলো হলো তরঙ্গ রশ্মি। আমরা যদি আকাশের দিকে টর্চের আলো নিক্ষেপ করে আবার বন্ধ করে দেই তবুও সেই আলোক তরঙ্গ বাধা না পাওয়া পর্যন্ত অনন্ত কাল ধরে চলতে থাকবে।

উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, আপনি যদি পৃথিবী থেকে মহাকাশের দিকে টর্চের আলো জ্বালানোর সাথে সাথে আবার বন্ধ করে দেন আর আমি বা অন্য কেউ যদি পৃথিবী থেকে এক আলোক মিনিট দূরে অবস্থান করি তাহলে উক্ত আলোক রশ্মি টা যদি বাধা প্রাপ্ত না হয় তবে তা আমাদের চোখে এক মিনিট পর দৃশ্যমান হবে, তদ্রূপ আমরা এক আলোক ঘন্টা দূরে বা এক আলোক দিন বা এক আলোক বর্ষ দূরে থাকলে উক্ত রশ্মি টা যথাক্রমে এক আলোক ঘন্টা, এক আলোক দিন, বা এক আলোক বর্ষ পর আমাদের চোখে দৃশ্যমান হবে।

তবে যেহেতু আলো ও এক ধরনের তরঙ্গ তাই উক্ত রশ্মি টা সময়ের সাথে সাথে ধীরে ধীরে ক্ষীণ হতে থাকবে।

এরও একটা উদাহরণ দেওয়া যায় যে, একটা ৬০ ওয়াটের বাল্ব কে আপনি যদি ৫০০ মিটার দূর থেকে জ্বলতে দেখেন তাহলে সেটার যে পরিমাণ আলো আপনার চোখে দৃশ্যমান হবে তার থেকে আরো বেশি পরিমাণ আলো দৃশ্যমান হবে যখন আপনি বাল্বটির নিকট উপস্থিত থাকবেন। বা ৫০০ মিটার দূর থেকে যদি আপনি বাল্বটির নিকট আসতে থাকেন তাহলে ধীরে ধীরে বাল্বটির উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি হতে দেখবেন।

আর সেটা বাধা প্রাপ্ত হলে পৃথিবীতে  ফিরে আসবে বা আসে কি না তা বলতে গেলে প্রথমে বুঝতে হবে যে, যে  স্থানে বাধা পাচ্ছে সেখানে কি কোনো প্রতিফলক আছে কি না...... কারন প্রতিফলক ছাড়া প্রতিফলন সৃষ্টি হয় না।

আর প্রতিফলক থাকলেও সেখান থেকে আলো পৃথিবীতে ফিরে আসলেও তা অতি ক্ষীণ অবস্থা প্রাপ্ত হয়ে ফিরে আসবে। যেহেতু আলোও এক প্রকার তরঙ্গ। 
বিঃদ্রঃ এখানে বলে রাখা শ্রেয় যে, প্রতিফলক টা ঠিক কতদূরে অবস্থান করছে তার ওপর নির্ভর করবে আলোর দৃশ্যমানতা।

এবার যদি বলেন যে, "চাঁদে তো কোনো প্রতিফলক নেই তাহলে চাঁদ থেকে কি করে আলো ছড়ায়...." ? 

তার উত্তর হলো, সূর্যের আলো চাঁদে পতিত হয় আর সেই আলো চাঁদের ঠিক যতটুকু স্থান আলোকিত করে আমরা চাঁদকে ঠিক ততটুকুই দেখতে পাই। আর চাঁদ হলো সূর্য ও পৃথিবী থেকে ছোট তবে অনেক বড় একটা অবজেক্ট তাই সূর্যের যথেষ্ট পরিমাণ আলো আছে তাকে আলোকিত করার জন্য কিন্তু আমার বা আপনার টর্চ লাইটে নাই।

আরো একটা উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, আপনি আপনার টর্চ দিয়ে ২০০ মিটার  দূরের কোনো বস্তু কে সহজেই দেখতে পারবেন তবে আপনি একটা দিয়াশলাই কাঠি জ্বালিয়ে তা দেখতে পাবেন না।

ছায়াপথ ধরে মহাকাশে ১তম - ৫ম পর্ব।

**************************
সন্ধ্যার তারকাখচিত আকাশে এক ঝলক চোখ পড়তেই প্রশ্নটা আবার একবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো ।আচ্ছা এই তারা গুলো লক্ষ কোটি বছর ধরে প্রজ্জ্বলিত , কোনটা আবার প্রচন্ডরকম ছুটছে, কোনটা স্থির ।তারার এই বিপুল পরিমান শক্তির উৎস কি  আর তার ভবিতব্যই বা কি ? এ প্রশ্ন যে শুধু আমার তা নয় ,আমার অসংখ্য ছাত্র ও বন্ধুদেরও ।আমি দেখেছি মহাকাশ নিয়ে তাদের ধারণা বাস্তব থেকে বেশ কিছুটা উপরে কল্পনার অদৃশ্য জগতে ।আমি চেষ্টা করবো বিশাল মহাকাশের যে অসীম রহস্য ,তার যতটুকু উৎঘাটন বিজ্ঞানীরা করেছেন তা সহজ ভাবে পাঠকদের সামনে তুলে ধরতে ।

তারা কিভাবে জ্বালানির ব্যবস্থা করে সে সমস্যাটি সমাধান করা হয়েছিল বিশ শতকের গোড়ায় । ১৯২৫ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানী সিসিলিয়া পেইন-গাপোসকিন একটি চিত্তাকর্ষক থিসিস প্রকাশ করেন যেখানে তিনি স্পেকট্রোস্কোপিক পদ্ধতি ব্যবহার করে দাবি করেন  যে সূর্যের বেশিরভাগ অংশ আসলে হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম দিয়ে তৈরি।যদিও তার এই দাবি নস্যাৎ করা হয় ,কারণ সেসময় মনে করা হয়েছিল পৃথিবী ও সূর্যের উপাদান এক নয় ।কিন্তু পরবর্তীতে বেশ কিছু স্বাধীন পরীক্ষা ও নিরীক্ষা  সিসিলিয়ার যুক্তিকে বলবৎ করে এবং তার দাবিকে সাদরে গ্রহণ করা হয় ।ব্রিটিশ-আমেরিকান এই মহিলা জ্যোতির্বিজ্ঞানী যখন  থিসিস প্রকাশ করেন তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ২৫ বছর ।

এরপর ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী রবার্ট ডি এসকর্ট অ্যাটকিনসন এবং ডাচ-অস্ট্রিয়ান-জার্মান পদার্থবিদ ফ্রিটজ হিউটারম্যানস প্রথম পরামর্শ দিয়েছিলেন যে হাইড্রোজেন নিউক্লিয়াসকে একে অপরের মিশিয়ে (নিউক্লিয়ার  ফিউশন ) বিপুল পরিমাণ শক্তি নির্গত করা যেতে পারে।সালটা ছিল ১৯২৯ ।এর প্রায় ১০ বছর পর হ্যান্স বেথে এবং ভারতীয় বিজ্ঞানী সুব্রাহ্মণ্য চন্দ্রশেখর  দেখিয়েছিলেন যে তারাগুলির জ্বালানি আসলেই পারমাণবিক ফিউশন দ্বারা প্রাপ্ত শক্তি। 

নক্ষত্রের অস্তিত্বের আগে  মহাবিশ্বে কেবলমাত্র চারটি উপাদান ছিল। হাইড্রোজেন , হিলিয়াম এবং কিছু পরিমাণে লিথিয়াম এবং বেরিলিয়ামের সন্ধান পাওয়া যায় । প্রথম প্রজন্মের তারকাদের মধ্যে ভারী উপাদানগুলি প্রথম তৈরি হয়েছিল।,প্রথম প্রজন্মের তারকাগুলি গঠিত হয়েছিল বিগ ব্যাংয়ের প্রায় ২০০ মিলিয়ন বছর পরে ।এরপর ধীরে ধীরে গঠিত হয় ছায়াপথ । ১৯৫৪ সালে ফ্রেড হোয়েল দেখিয়েছিলেন যে অধিক ভরযুক্ত তারকাগুলির ক্ষেত্রে অন্তর্লীন সমস্ত উপাদান আয়রন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট হতে পারে। তারপরে তারা একটি সুপারনোভাতে বিস্ফোরিত হয়, যা আরও ভারী উপাদান তৈরি করতে পারে ।

অতিভারী প্রথম প্রজন্মের তারাগুলি সুপারনোভাতে বিস্ফোরিত হওয়ার পরে এবং মহাবিশ্ব জুড়ে ভারী উপাদানগুলি ছড়িয়ে দেওয়ার পরে গ্রহগুলির গঠন শুরু হয় । এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে লেগে যায়  কয়েক মিলিয়ন বছর। সূর্য কমপক্ষে দ্বিতীয় প্রজন্মের তারা, প্রায় ৪.৬  বিলিয়ন বছর আগে এটি তৈরি হয়েছিল। 

এখানে দুইটি শব্দ ভীষণভাবে প্রশ্ন তুলতে থাকে -বিগ ব্যং ও সুপারনোভা ।কিন্তু আলোচনার এই  মুহূর্তে আমাদের পথ ভ্রান্ত হলে চলবে না ।এই শব্দদুইটির অন্তরে যে অজানার গহ্বর রয়েছে আগে তা  আমাদের সঠিক ধারণা দ্বারা পূর্ণ করে নিতে হবে ।  

(ক্রমশ ....)
ছায়াপথ  ধরে  মহাকাশে
**********************
মহাকাশের সুদূরে এক অভাবনীয় অভিযানের পূর্বে আমরা নিজেদের সৌর মন্ডলের গঠন ইতিহাস দ্রুত ঘুরে আসবো।এর থেকে আমাদের কাছে পরিষ্কার ধারণা থাকবে ,কিভাবে একটি তারকার জন্ম হয় ।

১৮ শতকের প্রথমার্ধে সৌরজগতের গঠনগত পরিকাঠামোর প্রথম ব্যাখ্যাগুলি আসতে শুরু করেছিল ।১৭৩৪ সালে  সুইডিশ দার্শনিক ইমানুয়েল সুইডেনবার্গ পরামর্শ দিয়েছিলেন যে সূর্য এবং গ্রহগুলি একবারে একই ভর থেকে উৎপন্ন  হতে পারে। ১৭৫৫  সালে আরেক জার্মান দার্শনিক পরামর্শ দিলেন যে সৌরজগত একসময় গ্যাসের একটি বিশাল মেঘ ছিল অর্থাৎ একটি নীহারিকা(নেবুলা , না না এভেঞ্জার এর নেবুলা নয় ।এটি একধরণের স্টেলার অবজেক্ট ) ছিল।অদ্ভুদ ভাবে এই জার্মান দার্শনিকেরও নাম ছিল ইমানুয়েল ,ইমানুয়েল কান্ট্ ।ফরাসী গণিতবিদ পিয়েরে-সাইমন ল্যাপলাস এই তত্ত্বটি ১৭৯৬ সালে প্রবল জনপ্রিয় করে তোলেন ।তিনি বলেন যে, সূর্যের মূলত সৌরজগৎ জুড়েই বর্ধিত গরম পরিবেশ ছিল এবং এই "প্রোটোস্টারের মেঘ" শীতল এবং সঙ্কুচিত হয়েছিল। মেঘ আরও দ্রুত কাটতে থাকায় এটি এমন উপাদান বর্জন করে  যা অবশেষে ঘনীভূত হয়ে গ্রহ গঠন করে ।

এখানে একটি অব্যবহিত প্রশ্ন আসবেই ।প্রোটোস্টার কি ? যতটা সম্ভব সহজ ভাবে বলার চেষ্টা করছি ।

নিউক্লিওসিনথেসিস অর্থাৎ হাইড্রোজেন বা প্রোটন গুলি একে অপরের সাথে জুড়ে যাওয়ার ঘটনা শুরু হওয়ার আগে গ্যাসের ভর ও আয়তন প্রবলভাবে সংকুচিত হয় ।এটি তারকা গঠনের প্রাথমিক পর্যায় ।এই পর্যায়ে মহাজাগতিক বস্তুটিকে প্রোটোস্টার বলা হয়ে থাকে ।নিউক্লিওসিন্থেসিস অর্থাৎ হালকা নিক্লিয়াসগুলি দুটি বিশেষ পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে পস্পরের সাথে জোটবদ্ধ হয় ।এই পদ্ধতির খুব বেশি ভিতরে আমরা আলোচনা করবো না ।অস্ট্রোফিজিক্স ছাত্রদের কাছে এই পদ্ধতি দুটিই হলো তাদের বর্ণপরিচয় ।এদের একটিকে বলা হয় -"প্রোটন-প্রোটন শিকল"(p -p chain ) এবং অপরটি হলো  CNO  চক্র  ।

ঘটনাক্রমে রাশিয়ান জ্যোতির্বিদ ভিক্টর সাফরনভ  ল্যাপ্লাসিয়ান মডেলটিকে গ্রহণ ও অভিযোজনের পর  সোলার নেবুলার ডিস্ক মডেল (এসএনডিএম) এ  রূপান্তর করেন ।যদিও কিছু কিছু সমস্যা এই মডেলটিতেও রয়ে গেছে তবুও বর্তমানে এটিই সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মডেল। ১৯৭২ সালে ইংরেজিতে অনুবাদ হওয়ার পরে সাফ্রোনভের কাজ জনসমক্ষে 
 আসে এবং প্রচারের আলোয় আসার সুযোগ পায় ।

SNDM অনুযায়ী তারার জন্ম হয় যে অঞ্চলে তা পরিচিত "তারার নার্সারি " নামে । এগুলি গ্যাসের ঘন মেঘ যার  বেশিরভাগ অণু হাইড্রোজেন - H2 দিয়ে তৈরি। স্থিতিস্থাপক মাধ্যমে তৈরী হওয়া শকওয়েভ , মেঘগুলিকে অস্থির করে তোলে  এবং মেঘরাজি  ঘনত্ব বাড়িয়ে কুঁচকে যায় । এর মধ্যে ঘন অঞ্চলটি প্রোটোস্টার গঠন করে এবং শেষ পর্যন্ত একটি তারকাতে পরিণত হয়। 

শক তরঙ্গগুলি সর্পিল ছায়াপথগুলির বাহু দ্বারা বা সুপারনোভা বিস্ফোরণ দ্বারা উৎপাদিত হয়। বিগ ব্যাংয়ের পরে পদার্থের বিতরণে সামান্য অসম্পূর্ণতার কারণে প্রথম প্রজন্মের তারকারা গঠিত হতে পারে বলে মনে করা হয় ।ভাবতে অবাক লাগে আসলে আমাদের উৎপত্তি একটি অসামান্য ভুল থেকে ।

একটি প্রোটোস্টার তার অক্ষের উপর ঘুরতে থাকে এবং আবর্তন শক্তির ফলে বাকী মেঘটি একটি ডিস্কের মতো  চ্যাপ্টা হয়ে যায়, যা প্রোটোপ্ল্যানেটারি ডিস্ক নামে পরিচিত। এই প্রোটোপ্ল্যানেটারি ডিস্কের বৃহত্তম সংকুচিত অংশগুলি গ্রহে পরিণত হয় এবং অপেক্ষাকৃত ছোট সংকোচন সমন্বিত অঞ্চলগুলি গ্রহাণু বা ধূমকেতুতে পরিণত হয়।

প্রোটোপ্ল্যানেটারি ডিস্কে হাইড্রোজেনের সাথে অক্সিজেন সহ অন্যান্য উপাদানগুলির উপস্থিতি করা যায় । এদের মধ্যে জল গঠন করার সম্ভাবনা থাকে । প্রোটোস্টারের কাছে থাকা বস্তুগুলিতে, সমস্ত জল ফুটে যায় এবং তাই তাদের প্রকৃতি হয় পাথুরে। আরও দূরে বস্তুগুলিতে, সমস্ত জল জমে যায় এবং তাই তারা বরফ হয়। যদিও গ্যাসীয় গ্রহগুলি কীভাবে গঠিত হয় তা আমাদের পক্ষে এখনও জানা সম্ভব হয়নি ।

(ক্রমশ ...)
পর্ব  ০২
https://m.facebook.com/groups/know.the.universe/permalink/1822003494625805/

পর্ব ০৩ -তারাদের কথা 
---------------------------
তারার জন্ম তো হলো, কিন্তু বেঁচে থাকার রসদ কি ?অবশ্যই পারমাণবিক সংশ্লেষণ ।কিন্তু সে শক্তির ভারসাম্য যদি সঠিক না হয় তবে তারার স্থায়িত্ব সম্বন্ধে আমাদের হতাশ হতে হবে ।ক্রমপর্যায়ের এই অংশে আমরা তারার স্থায়িত্ব নিয়ে  আলোচনা করবো ।বলে রাখা ভালো তারার স্থায়িত্বের উপরেই গ্রহগুলির অস্তিত্ব টিঁকে আছে ।আমরা মাঝে মধ্যেই শুনি আজ বা কাল বা কোনো একটি নির্দিষ্ট দিনে আমাদের পৃথিবী ধ্বংস হবে ।এটা যে কত বড় বৈজ্ঞানিক মিথ্যা হতে পারে আশা করি সে সম্বন্ধে এই আলোচনা থেকে সম্যক ধারণা পাওয়া যাবে ।
আগের পর্বটি যেখানে শেষ হয়েছিল ,আজকের শুরু ঠিক সেখান থেকেই -
একটি প্রোটোস্টার-এর ঘনত্ব বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে মহাকর্ষীয় স্থিতিশক্তি গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এর ফলে হাইড্রোজেন নিউক্লিয়াস এর বেগ বৃদ্ধি পায় এবং প্রোটোস্টারটি যথেষ্ট ভরসম্পন্ন হলে পারমাণবিক সংশ্লেষণের(নিউক্লিও  সিন্থেসিস ) জন্য পর্যাপ্ত শক্তি নিয়ে একে অপরের সাথে মিশে যায়। পরবর্তীতে সেটি  ফোটনের আকারে শক্তি উৎপাদনে সক্ষম হয়- যাকে আমরা আলোর কণিকা হিসাবে চিনি ।
পারমাণবিক সংযোজনের ফলে উৎপন্ন বিরাট শক্তি চায় তারাটিকে ছিন্নভিন্ন করে মহাকাশের অতলান্তে সরিয়ে দিতে ।কিন্তু তারার বিপুল ভরের জন্য যে মহাকর্ষ বল উপলব্ধ হয় ,সেটি  তারাটিকে একত্রিত করে রাখতে সচেষ্ট হয়।এই দুই বিপরীত বলের প্রভাব সমান হলে  ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা হয় । এর খুব সহজ অর্থ হলো তারকাটিতে হাইড্রোস্ট্যাটিক প্রতিসাম্য  স্থাপিত হয়েছে । এই ধরণের তারকাগুলিকে আমরা প্রধান সিকোয়েন্স তারকা বলে থাকি । 
তারকাগুলি এরপর হাইড্রোজেন পরমাণুর  সমন্বয় ঘটিয়ে হিলিয়াম পরমাণুর জন্ম দেয়।পর্যায় সারণি খেয়াল করলেই বোঝা যাবে চারটি হাইড্রোজেন পরমাণু জুড়ে তৈরী হয় একটি হিলিয়াম পরমাণু ।প্রধান সিকোয়েন্স তারকা আমরা তাদেরকেই বলে থাকি যেসব তারার মধ্যে এখনো হাইড্রোজেন দহন হচ্ছে  ।অর্থাৎ যারা পারমাণবিক সমন্বয়ের দ্বারা হাইড্রোজেন থেকে হিলিয়াম রূপান্তরিত হচ্ছে ।আমাদের সূর্য হলো একটি প্রধান সিকোয়েন্স তারকা ।
আমরা প্রোটন-প্রোটন শিকল ও CNO চক্রের সাথে পূর্বেই পরিচিত হয়েছি ।যদি প্রধান সিকোয়েন্স তারকার ভর যথেষ্ট কম হয় তাহলে তারা p -p  শিকল দ্বারা যুক্ত হয় ।এবং ভরের পরিমান বেশি হলে তা CNO চক্র দ্বারা যুক্ত হয় ।যদিও প্রথম প্রজন্মের তারকারা শুধুমাত্র p -p  শিকল দ্বারাই যুক্ত হতে পারতো ।কারণ সে সময় কার্বন ,নাইট্রোজেন বা অক্সিজেন প্রকৃতিতে ছিল না ।
 ডেনিশ জ্যোতির্বিদ ইজনার হার্টজস্প্রুং এবং আমেরিকান জ্যোতির্বিদ হেনরি নরিস রাসেল স্বাধীনভাবে ১৯১১ এবং ১৯১৩ সালে স্বাধীনভাবে একটি ডায়াগ্রাম তৈরি করেছিলেন।বিজ্ঞানীদ্বয়ের নামের আদ্যাক্ষরের সাথে মিলিয়ে এই ডায়গ্রামটিকে বলা হয় এইচ -আর  ডায়াগ্রাম।  এটি  তারার ভর ও উষ্ণতার উপর ভিত্তি করে তৈরী করা হয়েছিল ।
এখানে প্রধান অনুক্রমের তারাগুলিকে সাতটি বিভাগে বিভক্ত করা হয় ।যেমন - ও, বি, এ, এফ, জি, কে, এবং এম-প্রকারের  তারকা ।1920 সালে আমেরিকান জ্যোতির্বিদ অ্যানি জাম্প ক্যানন এই শ্রেণিবদ্ধকরণে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন । তাঁর এই কাজটি হার্ভার্ড শ্রেণিবদ্ধকরণ প্রকল্প হিসাবে পরিচিত।
ও-টাইপ তারকারা উষ্ণতম, নীলাভ, এবং সর্বাধিক ভরসম্পন্ন ।এবং এদের বেশির ভাগেরই  জীবন কাল সংক্ষিপ্ত, যদিও এই সংক্ষিপ্ততার হিসাব প্রায় কয়েক মিলিয়ন বছর । এম-টাইপের তারা  শীতল, রক্তিম ও সর্বাপেক্ষা হালকা হয় । শত শত বিলিয়ন বছর ধরে তারা মূল সিকোয়েন্স তারকা হিসাবেই থেকে যায়। সূর্য হলো একটি জি-টাইপ তারকা অর্থাৎ উপরিউক্ত দুই শ্রেণীর মাঝে অবস্থান করছে ।এবং সামনের কয়েক মিলিয়ন বছর অবলীলায় তার জীবন চালিয়ে নিতে সক্ষম ।
তারকার হাইড্রোজেন দহন সম্পন্ন হলে অর্থাৎ তার জ্বালানি শেষ হয়ে গেলে সমগ্র তারকাটি তার মজ্জায় নিমজ্জিত হয় । সূর্য ও সূর্যের থেকে প্রায় দশ গুন পর্যন্ত ভারী তারকা গুলি প্রথমে "লাল দৈত্য" এবং তারপরে "সাদা বামন" হয়ে উঠবে । এর চেয়ে আরও বড় আকারের তারাগুলি পরিণত হবে "অতিদানবে" এবং অতঃপর একটি সুপারনোভায় ।অবশেষে তার পরিসমাপ্তি লেখা হবে একটি নিউট্রন তারকাতে অথবা একটি ব্ল্যাকহোলের অন্ধকূপে । 
যে প্রশ্ন ও ভ্রান্ত ধারণা আমাদের মধ্যে লুকিয়ে ছিল ,অর্থাৎ " সূর্য কি শেষ পর্যন্ত একটি ব্ল্যাক হলে পরিণত হবে ?"এর সরল উত্তর হলো -"না ,সে সম্ভাবনা নেই "।এবং অপর প্রশ্ন -"পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার কোনো সম্ভাবনা কি আছে ?" উত্তর হলো -" আছে ।তবে মানব বা বলা ভালো জীবকুলের ক্ষেত্রে তা উপলব্ধি করে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই ।

ক্রমশ...


পর্ব ০৪ - লাল দানব 
------------------------
 মহাকাশে সূর্যের মতো তারকাগুলির ভবিতব্যের না জানা গল্প আবার শুরু করা যাক ।আমরা জানি সূর্য প্রথমে একটি লাল দৈত্যে ও পরবর্তীতে সাদা বামনে পরিণত হবে তার বার্ধক্যে ।কিন্তু প্রশ্ন হলো কিভাবে? এর উত্তর পাওয়া সহজ নয় । বিলিয়ন বছরের প্রক্রিয়া ১০ মিনিটে  আয়ত্ত করার জন্য একটু ধৈর্য ও স্থিতধী এর প্রয়োজন হবে।

 আমাদের সূর্যের মতো মাঝারি ভরের তারকাগুলি তাদের মজ্জার মধ্যে হাইড্রোজেন সংযোজনের মাধ্যমে হিলিয়ামে পরিণত হয়ে বাঁচে। আমাদের সূর্য এখন ঠিক এই কাজটাই করছে। হাইড্রোজেন জ্বলতে থাকলে মজ্জার বাইরের অংশে হিলিয়াম অনু সঞ্চিত হতে থাকে ।এভাবে হাইড্রোজেন যত কমতে থাকে হিলিয়াম মজ্জার ভর ততো বাড়তে থাকে ।হাইড্রোজেন দহনের শেষ পর্যায়ে সূর্য জ্বালানির অভাব বোধ করে ।ফলে  নিউক্লিও বল  ও মহাকর্ষ বলের প্রতিসাম্য বিঘ্নিত  হয় ।যথেষ্ট পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন না করতে পারার জন্য তারকাটি মহাকর্ষ বলের প্রভাবে সামান্য সংকুচিত হয় । ফলে এটির তাপমাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং হাইড্রোজেন মজ্জার বাইরের খোলকে অর্থাৎ হিলিয়াম মজ্জার শুরুতে পুনরায় হাইড্রোজেন দহন শুরু হয়ে যায় ।আগামী ৫ বিলিয়ন বছর ধরে সূর্যের মজ্জা  সমস্ত হাইড্রোজেন ব্যবহার করবে।

তারার এই পরিস্থিতি অনেকটা প্রেসার কুকারের মতো। বায়ুনিরুদ্ধ পাত্রে কিছু গরম করার ফলে পাত্রের ভিতরে চাপ বাড়তে থাকে। সূর্যের ক্ষেত্রেও একই জিনিস ঘটে। যদিও সূর্য নিখুঁত বায়ুনিরুদ্ধ পাত্রের মতো কাজ করে না।মহাকর্ষের কারণে মজ্জা টি  তারকাটির বাকি অংশ গুলোকে অভ্যন্তরে টানতে থাকে। যখন মজ্জার উত্তপ্ত গ্যাস দ্বারা তৈরি চাপটি বাইরে বেরিয়ে আসে তখন চাপ এবং মাধ্যাকর্ষণ এর মধ্যে সূক্ষ্ম ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হয় ।মজ্জা থেকে সমস্ত হাইড্রোজেন নিঃশোষিত হওয়ার ফলে সাম্য অভিকর্ষের পক্ষে হেলে পড়ে।অচিরেই তারার পতন শুরু হয় ।

হাইড্রোজেনের বাইরের স্তরগুলির জ্বলনকালে এটি রক্তিমাভ হয়ে ওঠে ।এই অবস্থায় তারকাকে বলা হয় " লাল দৈত্য"( RED GIANT ) । সমস্ত প্রধান অনুক্রমের তারা, যাদের ভর সূর্যের ভরের  প্রায়  ১/৫  থেকে ১০  গুণ হয় তারা প্রত্যেকেই হয়ে উঠবে একেকটি  রক্তাভ দৈত্য ।আমাদের সূর্যের এইরকম দৈত্য অবস্থাটি এত বড় হবে যে এটি বুধকে পুরোপুরি গ্রাস করে নেবে ।

যে সমস্ত নক্ষত্রের ভর সূর্যের ভরের প্রায় ২.৫ গুণ কম হয়,তাদের ক্ষেত্রে হাইড্রোজেন দহনের অন্তিম লগ্নে তারাটি অত্যন্ত  গরম হয়ে যায় ।এবং এটির অবক্ষয় রুদ্ধ হয়ে পড়ে ।তখন তারাটি অল্প সময়ে প্রচন্ড প্রসারিত ও শীতল হতে থাকে ।  এই প্রক্রিয়াটি 'হিলিয়াম ফ্ল্যাশ' হিসাবে পরিচিত। হিলিয়াম ফ্ল্যাশের কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘন্টার মধ্যে হিলিয়াম সংবদ্ধকরণ শুরু হয়ে যায় । এই তারাগুলি কখনও কখনও অনুভূমিক শাখা তারা বলে উল্লেখ করা হয় ।

যখন কোনও তারকা আকারে বড় হয়,এর সামগ্রিক তাপমাত্রা কমে যায়। তবে শেষ পর্যন্ত হাইড্রোজেন ফিউশন থেকে তৈরি হিলিয়াম সংযোগ করার মতো পর্যাপ্ত গরম না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লাল দৈত্যাকার সূর্যের মূল তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকবে । অবশেষে হিলিয়াম সংযুক্তকরণের মাধ্যমে এটি কার্বন ও অন্যান্য ভারী উপাদানগুলিতে রূপান্তরিত হবে । সূর্য কেবলমাত্র লাল রঙের দৈত্য হিসাবে এক বিলিয়ন বছর আকাশগঙ্গা ছায়াপথে বিরাজ করবে ।

সমস্ত হিলিয়াম অন্যান্য উপাদানগুলিতে মিশ্রিত হয়ে গেলে, বিকিরণের চাপ হ্রাস পায়। এবং তারা আবার মহাকর্ষের বলের খপ্পরে পড়ে ।তবে অক্সিজেন ফিউশন শুরু হওয়ার জন্য অনেক বেশি তাপমাত্রার প্রয়োজন হয় ।সূর্যের ক্ষেত্রে কার্বন ফিউশন শুরু করার মতো পর্যাপ্ত তাপশক্তি থাকবে না ।ফলে এটির মজ্জা মহাকর্ষের প্রভাবে বাইরে বেরোতে পারেনা ।কিন্তু বাইরের খোলকের আয়তন অস্বাভাবিক রকম বৃদ্ধি পেতে থাকে।আমাদের সূর্যের ব্যাসার্ধ তখন পৃথিবীর কক্ষপথের চেয়েও বড় হয়ে উঠবে ।সূর্য এই সময়ে খুব স্থিতিশীল হবে না এবং ভর হারাবে। তারকা অবশেষে তার বাইরের স্তরগুলি বন্ধ করে না দেওয়া পর্যন্ত এটি অব্যাহত থাকে। তারাটির মজ্জাটি  অবশ্য অক্ষত থাকে এবং একটি সাদা বামনে পরিণত হয়।

(ক্রমশ ...)
পর্ব ০৫- গুপ্তধনের সন্ধানে 
---------------------------- 
"সাদা বামন" কে বলা হয় নক্ষত্রের বধ্যভূমি । মনে করা হয় আমাদের আকাশগঙ্গা ছায়াপথের প্রায় ৯৭ শতাংশ নক্ষত্রই একসময় শ্বেত শুভ্র কাফন পরিবেষ্টিত পৃথিবীর আকারের বামনে পরিণত হবে । তো এই গোরস্থানে যদি হঠাৎ করে অতুল ঐশ্বর্যের সন্ধান পান কেমন লাগবে ?যে সে ঐশ্বর্য নয় ।একেবারে খাঁটি হিরে ।পরিমানে ধরুন পেয়ে গেলেন একটা আস্ত পৃথিবীর সমান খনি ।দাঁড়ান দাঁড়ান । এই গুপ্তধনের নকশা পেতে একটু তত্বের চড়াই উৎরাই অতিক্রম করতে হবে ।
আমরা ইতিমধ্যেই জানি যে সূর্যের মতো মাঝারি ভরের তারকাগুলি লাল দৈত্য হয়ে ওঠে।আমাদের লাল দৈত্য এরপর হিলিয়াম ভক্ষণ করবে এবং তৈরী করবে কার্বন । কিন্তু যখন এটি তার হিলিয়াম শেষ করবে তখন  কার্বন দহনের পক্ষে উপযুক্ত যথেষ্ট শক্তি এর মধ্যে অবশিষ্ট থাকবেনা । তাহলে এর পর কি ?
যেহেতু আমাদের সূর্য কার্বন মজ্জার মূল অংশটি প্রজ্বলিত করতে যথেষ্ট গরম হবে না, এটি আবার বলের প্রতিসাম্য যুদ্ধে মহাকর্ষের কাছে পরাজয় স্বীকার করবে।সমস্ত তারকাটি চাইবে নিজেকে যতটা সম্ভব দুমড়ে মুচড়ে ফেলা যায় ।অর্থাৎ তার আয়তন দ্রুত কমতে থাকলেও ভরের কোনো পরিবর্তন হবে না ।তখন এটির মধ্যে পারমাণবিক সংযোজন প্রক্রিয়াও রোধ হবে ।তবে সূর্যের মধ্যে যে তাপীয় শক্তি তখনও নিহিত ছিল তা আলোক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে এটিকে উজ্জ্বলতা প্রদান করবে।  
সাদা বামনগুলির মধ্যে যে পরিমান ভর থাকে ,তা  সূর্যের ভরের সাথে তুলনীয়। তবে আকারের দিক থেকে তাদের পৃথিবীর আকারের সাথে পার্থক্য খুবই কম।অর্থাৎ সাদা বামন পৃথিবীর মতো বড়ো কিন্তু সূর্যের মতো ভারী।অত্যন্ত ঘন এই সাদা বামন গুলির ভরের কিন্তু একটি নির্দিষ্ট সীমা আছে আর এখানে এসে সমগ্র সভ্যতাকে এক ভারতীয় বিজ্ঞানীর   নাম একবার উচ্চারণ করতেই হবে । সূর্যের ভরের ১.৪ গুন ভরকে সাদা বামনের ভরের উচ্চতম সীমা হিসাবে বিবেচনা করা হয় ।সুব্রাহ্মণ্য চন্দ্রশেখর ১৯৩১ সালে প্রথম এই সীমা সম্বন্ধে ধারণা দিয়েছিলেন । তাঁর এই বিশেষ কাজের স্বীকৃতি হিসাবে এই সীমার নামকরণ করা হয়েছে "চন্দ্রশেখর লিমিট "। আজ অবধি পর্যবেক্ষণ করা গেছে এমন সবচেয়ে ভারী সাদা বামনের ভর প্রায় ১.২ গুন সৌর ভরের সমান । এবং  সবচেয়ে হালকা ভরের পরিমাণ প্রায় ০.১৫ গুন  সৌর ভর ।
এদের বায়ুমণ্ডলে একটি খুব পাতলা হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম গ্যাসের স্তর থাকে।এদের ভূমি স্তর (যেটাকে ক্রাস্ট বলা হয়ে থাকে ) প্রায় ৫০ কিলোমিটার পুরু।মনে করা হয় যে এই ভূমি স্তরের নিচে এরা কার্বন এবং অক্সিজেন স্ফটিকের জাল বিস্তার করে রাখে । সমস্ত সাদা বামন কিন্তু বিচ্ছিন্নভাবে বিদ্যমান নয় ।সমস্ত নক্ষত্রের প্রায় অর্ধেক একটি দ্বিক( বাইনারি) সিস্টেমে তার সঙ্গী বামন তারার সাথে অবস্থান করে ।এবং সাথী বামনের থেকে ভর সংগ্রহ করতে পারে ।এইভাবে ক্রমাগত ভর সংগ্রহ করতে থাকলে দাতা বামনটির ক্রাস্ট একসময় ফেটে যাবে এবং মজ্জার অংশটি প্রকাশিত হয়ে পড়বে।এখন বলুন সাদা বামনের মজ্জায় কি থাকে ? কার্বন।কালো চারকোল নয় ,স্ফটিকাকার রূপভেদ ।হীরক ।
২০১১ সালে  পিএসআর জে ১৭১৯ -১৪৩৮ বি তারকার খোঁজ পাওয়া যায় যা নিজের দেহে শুধুমাত্র হীরক সঞ্চয় করে মিলিসেকেন্ড এর ও কম সময়ে তার সাথী বামন তারকাকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে ।রসিক বিজ্ঞানীদের অন্দরে অনেকেই মনে করেন এটা পুরুষ বামন ।

ক্রমশ...

Fermi Paradox.

কলমে - সুপ্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায়। 

ইন্টারনেট, স্মার্টফোন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিশিষ্ট আজকের ব্যস্ত পৃথিবী তে আপনি হয়তো অনেক ব্যস্ত। কিন্তু, আমি আপনাকে শৈশবের গ্রীষ্মের সেই সন্ধ্যেগুলোর কথা মনে করিয়ে দিতে চাই যখন সন্ধ্যে হলেই আপনি বাড়ির ছাদে গিয়ে সময় কাটাতেন এবং আপনার চোখ যেতো আকাশের ওপর। অপার বিস্ময়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আপনি কল্পনা করার চেষ্টা করতেন আকাশে দৃশ্যমান তারাগুলোর ওইপারের দুনিয়া টা ঠিক কীরকম। এই মহাবিশ্ব কতই না বড়ো। এবং, এই বিশাল মহাবিশ্বে আমরা মানুষ ই কী একমাত্র বুদ্ধিমান প্রাণী ? যদি আর কেউ থেকেই থাকে তবে সেই বুদ্ধিমান প্রাণী রা কোথায় ? 

১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে পদার্থবিজ্ঞানী এনরিকো ফার্মি ও ঠিক এই প্রশ্ন করেছিলেন - "Where is everyone ? " অর্থাৎ সবাই কোথায় ? লস আলামস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে এক দুপুরে ফার্মি তার সহকর্মী এমিল কনপিনস্কি, এডওয়ার্ড টেলার এবং হার্বার্ট ইয়র্কের সাথে আলাপ করছিলেন। বিষয় ছিল সাম্প্রতিক সময়ের একটি তথাকথিত ইউএফও সংক্রান্ত ঘটনার বিতর্কিত খবর। এরপর আলোচনা করতে করতে হঠাৎ ফার্মি মন্তব্য করেন, "সবাই কোথায় ?" কারণ তার মতে এর মধ্যেই পৃথিবীতে বহুবার ভিনগ্রহের প্রাণীদের দেখা যাওয়ার কথা ছিল। এক দশক পর, ডঃ ড্রেক একটি পদ্ধতিগত উপায়ে ভিনগ্রহী প্রাণের সাথে সংশ্লিষ্ট সম্ভাবনা গুলো খতিয়ে দেখে তৈরী করেন Drake equation বা ড্রেক সমীকরণ। যা অনুসারে আমরা এই মহাবিশ্বে একা নই। অন্তত আমাদের আকাশগঙ্গা ছায়াপথে ( Milky Way Galaxy ) নূন্যতম ১০ টি এবং সর্বোচ্চ কয়েক হাজার এরও বেশী উন্নত বুদ্ধিমান সভ্যতা উপস্থিত রয়েছে। 

এই সমীকরণ তৈরী করতে গিয়ে তার বিবেচ্য বিষয়গুলো ছিল  

১। Galaxy বা ছায়াপথে নক্ষত্র  সৃষ্টির হার। 
২। গ্রহ আছে এরকম  নক্ষত্রের সংখ্যা। 
৩। গ্রহ আছে এরকম নক্ষত্রের মধ্যে, যেসব গ্রহ বাসযোগ্য তার হিসাব। 
৪। সেসব গ্রহের কতগুলোতে প্রাণের উদ্ভব হয়েছে। 
৫। সেসব প্রাণী যোগাযোগ করার মতো বুদ্ধিমান কিনা তার সংখ্যা। 
৬। সর্বশেষে সেসব সভ্যতার স্থায়ীত্ব। 

১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে নিকোলাই কার্দশেভ এক পরিমাপ পদ্ধতি তৈরী করেন যাকে কার্দশেভ স্কেল বলা হয়। যা অনুসারে, আমাদের মহাবিশ্বে ৩ প্রকারের সভ্যতার উপস্থিতি থাকা উচিৎ । 

১। টাইপ ওয়ান সভ্যতা  - যে সভ্যতা তার গ্রহের সমস্ত শক্তি ব্যবহার করতে পারে৷ আমরা পৃথিবীবাসীরা এখনও টাইপ ওয়ান সভ্যতায় পরিনত হতে পারিনি। কার্দশেভ স্কেল অনুযায়ী আমরা বর্তমানে ০.৭২ সভ্যতার অন্তর্ভুক্ত। টাইপ ওয়ান সভ্যতায় পরিনত হতে আমাদের আরো কয়েকশো বছর প্রয়োজন। 

২। টাইপ টু সভ্যতা  - যে সভ্যতা ডাইসন স্ফিয়ার এর সাহায্যে তার নক্ষত্রের সমস্ত শক্তি ব্যবহার করতে পারে। 

৩ । টাইপ থ্রি সভ্যতা  - যে সভ্যতা তার ছায়াপথের (Galaxy) সমস্ত শক্তি ব্যবহার করতে পারে। 

তবুও আজ অবধি কোনো বুদ্ধিমান প্রাণীর দেখা আমরা পাইনি কেনো ? 

একেই বলা হয় - Fermi paradox. 

বিজ্ঞানীরা এই  ফার্মি প্যারাডক্স এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে যে সমস্ত সম্ভাব্য কারণ গুলো তুলে ধরেন, সেগুলি হলো  - 

১। হয়তো আমাদের মহাবিশ্বে এখনও অবধি টাইপ টু এবং টাইপ থ্রি সভ্যতা তৈরীই হয়নি। এবং, টাইপ ওয়ান সভ্যতার প্রাণীদের প্রযুক্তি এতটা উন্নত নয় যে তারা আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। তাই আমরা এখনও ভিনগ্রহীদের দেখা পাইনি। 

২। হয়তো ভিনগ্রহীরা আমাদের signal পাঠিয়েছে কিন্তু, আমাদের প্রযুক্তি এখনও এতোটা উন্নত নয় যে আমরা তাদের signal decode করতে পারি।  

৩। আমাদের এই মহাবিশ্ব ১৩.৭ বিলিয়ন বছরের পুরোনো। হয়তো, বেশ কিছু উন্নত সভ্যতা ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে৷ হয়তো তারা পৃথিবীতেও এসেছিলো, কিন্তু তখন আমরা বা আমাদের পূর্বসূরিরা পৃথিবীতে ছিলোনা। 

৪। Zoo Hypothesis - আমরা যেমন চিড়িয়াখানায় আমাদের তুলনায় কম উন্নত প্রানীদের বাইরে থেকে পর্যবেক্ষণ করি সেরকম টাইপ টু এবং টাইপ থ্রি সভ্যতার প্রাণীরাও তাদের তুলনায় যথেষ্ট কম উন্নত প্রানী অর্থাৎ মানুষদের পর্যবেক্ষণ করছে। 

১৩.৭ বিলিয়ন বছরের পুরোনো মহাবিশ্বে আমরা পৃথিবীবাসীরা মাত্র কয়েক লক্ষ বছর এর পুরোনো। যেখানে জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাস মাত্র কয়েক শো বছরের। তবে আজ বিজ্ঞানের exponential growth এর যুগে আমরা স্বপ্ন দেখতেই পারি ভীনগ্রহী প্রাণী যদি থেকেই থাকে তাহলে আগামী দিনে নিশ্চয়ই আমরা তাদের দেখা পাবো৷ 

সুপ্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায়। 
দোহার৷

ডার্ক ম্যাটার:

ডার্ক ম্যাটার নিয়ে যতটুকু জানি তা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।

ধরুন আপনি গোসল করে এলেন। আপনি মাথা ঝুঁকিয়ে নিলেন, কিছু পানি ঝরে পড়ছে। যদি না পড়ে তাহলে বুঝবেন আপনার মাথায় ডার্ক ম্যাটার আছে। কারণ আমাদের গ্যালাক্সিতে যে পরিমাণ দৃশ্যমান ম্যাটার  আছে  আমাদের গ্যালাক্সি এসব ধরে রাখতে পারবে না। কারণ গ্যালাক্সিতে কোটি কোটি তারা আছে। তাই এদের ধরে রাখার কথা না। আরও জিনিস যেমন গ্রহ,উল্কা,ধূলিকণা আরও চেনা জিনিস আছে,এদের ধরে রাখার কারণ কি? এরা ছিটকে পড়ছে না কেন?এত গ্র্যাভিটি পাচ্ছে কোথা থেকে? উত্তর ডার্ক ম্যাটার। এর নাম ডার্ক ম্যাটার কেন? এরা আলো প্রতিফলিত করে না। এরা অদৃশ্য ।যদি আলো এর পাশ দিয়ে যায় তাহলে বাঁকা পথে যায়। 
আমরা জানি ডার্ক ম্যাটার কোনো মেঘ,ধূলিকণা না ।ডার্ক ম্যাটার অ্যান্টি  ম্যাটার না । অ্যান্টি  ম্যাটার,সাধারণ ম্যাটারের সাথে লাগলে গামা রে নির্গত করে। ডার্ক ম্যাটার ব্ল্যাক হোল না। ব্ল্যাক হোল টেনে নেয় আলো এবং শব্দ। কিন্তু ডার্ক ম্যাটার আলোকে বেকে দেয়  এবং এক্সট্রা গ্র্যাভিটি দেয়।

আমরা ডার্ক ম্যাটারের ৩টি বিষয়ে নিশ্চিত:
১. ডার্ক ম্যাটারে অনেক অজানা জিনিস  আছে।
২.গ্র্যাভিটি এর সাথে ইন্টারেকশন আছে।
৩.মহাকাশে অনেক গুলো ডার্ক ম্যাটার আছে।

ডার্ক ম্যাটারটা কি তাহলে? ডার্ক ম্যাটার এক্সোটিক পার্টিকেলস দিয়ে তৈরি। এ থেকে আমরা তেমন কিছু জানি না। কিন্তু ডার্ক ম্যাটারের সাথে তারা ধরে রাখার সম্পর্ক কি?

তারাদের ধরে রাখার কারণ:

আমাদের যে চাঁদ আছে তা ঘুরে। কারণ কিছু কোটি বছর আগে পৃথিবীর সাথে একটি গোলকের ধাক্কা লেগেছিল। সেখানে সেটা পৃথিবীর অভিকর্ষে আটকা পড়ে। সেটা আজকের চাঁদ। যদি পৃথিবীর ভর বেশি হত তাহলে চাঁদকে বেশি জোরে ঘুরতে হত। আর যদি পৃথিবীর ভর কম হত তাহলে চাঁদ মহাকাশে চলে যেত। তাই উনিশ ষাটে বিজ্ঞানীরা গ্যালাক্সি দেখতে গিয়ে তারাদের ভর মাপলেন। তারাদের উজ্জ্বলতা ও আরও হিসাব নিকাশ করে ভর নির্ণয় করা যায়। তারা দেখলেন তারা যে গতিতে ঘুরে তার চেয়েও বেশি জোরে ঘুরে। তার মানে কি?যেহেতু কোনো গ্যালাক্সি তারাদের ধরে রেখেছে নিশ্চয়ই সে গ্যালাক্সির ভর বেশি। তাই তারা ছুটে যায় না। যেমন আপনার পানির ঘটনার মত। ওই গ্যালাক্সিতে ভারী কিছু আছে যা দেখা যায় না। আমরা জানি গ্যালাক্সিতে ডার্ক ম্যাটার আছে। একটি সুপার মেসিভ ব্ল্যাক হোল কয়েকটি তারা ধরে রাখতে পারে। কিন্তু সে কোটি কোটি তারাকে ধরে রেখেছে। নিশ্চয়ই সে বড় হতে পারে। তার ধ্বংস বড় হতে পারে।কিন্তু যখন একটি গ্যালাক্সি অপর গ্যালাক্সির সাথে মহাকর্ষের কারণে সংঘর্ষ হয়, তখন তার মধ্যে বড় বিষ্ফোরণের ছবি দেখা যায়নি। (ছবি:১)। 
তার মানে দুটো গ্যালাক্সির ডার্ক ম্যাটারের ভাণ্ডার একে অপরের ভিতর দিয়ে চলে গেছে। তাদের অদৃশ্য  ডার্ক ম্যাটার ধরা পড়েনি। আমাদের যে চেনা বস্তু আছে তা ৫%। ডার্ক ম্যাটার ২৭%। ডার্ক এন্যার্জি ৬৮%। কেউ যদি এ দুটি আবিষ্কার করে তাহলে আমরা মহাকাশের ১০০% চেনা বস্তু হবে। 
কিন্তু এখানো আমরা কিছু জানি না।

ভয়েজার-১ নামক স্পেসক্রাফটটি পৃথিবী ত্যাগ করে ১৯৭৭ সালের সেপ্টেম্বরে।

৪০ বছর কেটে গেছে। ৮২৫ কিলোগ্রাম ওজনের ভয়েজার-১ আর পৃথিবীর মধ্যকার দুরত্ব এখন প্রায় ১৪ বিলিওন মাইল! 
'লং ডিসটেন্স রিলেশনশিপ'এর সবচেয়ে বড় উদাহারণ হয়ে ভয়েজার-১ এখনো পৃথিবীর মানুষের সাথে যোগাযোগ রেখে চলেছে!

ভয়েজার বৃহষ্পতি গ্রহকে অতিক্রম করেছে ১৯৭৯ সালে। যাত্রাপথে সে আমাদেরকে পাঠিয়েছে বৃহষ্পতির ছবি। আমরা দেখেছি দানবগ্রহ বৃহষ্পতির বুকে ১৮৮ বছর ধরে বয়ে চলেছে এক দানবঝড় - দ্যা গ্রেট রেড স্পট। এই ঝড়ের আয়তন তিনটা পৃথিবীর সমান!

ভয়েজার-১ শনি গ্রহ অতিক্রম করে ১৯৮০ সালে। ভয়েজার আমাদেরকে জানিয়েছে শনিকে প্রদক্ষিণ করছে আরো অনেকগুলো বরফের তৈরী চাঁদ!

ভয়েজার তাঁর সর্বশেষ ছবিটি তুলেছিলো ১৯৯০ সালের ভালোবাসার দিবসে। অর্থাৎ ১৪ ফেব্রুয়ারিতে। সর্বশেষ এই ছবিটি ভয়েজার তুলেছিলো কার্ল স্যাগান নামক একজন খেয়ালী বিজ্ঞানীর অনুরোধে।

'কার্ল স্যাগান' নামটি ভয়েজার-১এর সাথে মিশে আছে একটু ভিন্নভাবে। সংক্ষেপে বলা যাক।

ভয়েজার ১ তৈরির কাজ তখন প্রায় শেষ। নাসা দ্রুত ভয়েজারকে অনন্ত মহাশূণ্যের উদ্দেশ্যে বিদায় জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
৪০ বছর বয়েসী কার্ল স্যাগান তখন ভাবলেন একটা ভিন্ন ব্যাপার। তিনি ভাবলেন, এই স্পেসক্রাফটটি তো চলতেই থাকবে। এর গতি কমবে না, বরং বাড়বে। এক সময় এটা আমাদের সৌর জগতকে ছেড়ে চলে যাবে। হয়তো ছেড়ে যাবে আমাদের মিল্কিওয়ে ছায়াপথকেও। এমনও সময় আসবে যখন ভয়েজার থেকে আমাদের দূরত্ব হবে কয়েক হাজার আলোকবর্ষ। এই দূরতম বন্ধুর সাথে আমাদের আর কোনো যোগাযোগই তখন থাকবেনা। কে বলতে পারে এই ভয়েজার কোনোদিন কোনো বুদ্ধিমান প্রাণীর দেখা পাবে না!
কী হবে যদি কয়েক কোটি আলোকবর্ষ দূরের কোনো স্বজনের সাথে দেখা হয় ভয়েজারের!
কার্ল স্যাগান দূরতম সেই স্বজনদের জন্য বার্তা এবং উপহার পাঠাতে চাইলেন।

নাসায় কমিটি তৈরী করা হলো। স্যাগান হলেন কমিটির প্রধান। এক বছর ধরে চললো ভীনগ্রহের স্বজনদের জন্য বার্তা সংগ্রহের কাজ।
৫৫ টি ভাষায় 'হাই' জানানো হলো দূরতম স্বজনদের। 
প্রথম জানালেন, তৎকালিন জাতিসংঘের মহাসচিব কার্ট ওয়াল্ডহেইম। তিনি বললেন, "I send greetings on behalf of the people of our planet. We step out of our solar system into the universe seeking only peace and friendship, to teach if we are called upon, to be taught if we are fortunate."

আছে বাংলা ভাষাও। কন্ঠ দিয়েছেন সুব্রত মূখার্জি। তিনি বলেছেন 'নমস্কার, বিশ্বের শান্তি হোক।'

পাঠানো হলো বৃষ্টির শব্দ, বাতাসের শব্দ, হাসির শব্দ। হেসেছিলেন কার্ল স্যাগান নিজেই। 
পাঠানো হলো পাখির ডাক, ঝিঝি পোকার ডাক।

ভয়েজারের সাথে পাঠানো হলো ৯০ মিনিট দীর্ঘ গান এবং সুর। এর মধ্যে ছিলো সাড়ে তিন মিনিটের একটি ভারতীয় সুরও।

অচেনা স্বজনদের জন্য ছবি পাঠানো হলো ১১৬টি। এর মধ্যে আছে আমাদের ডিএনএর ছবি, হাঁড়ের ছবি,পাখির ছবি, সূর্যদয়ের ছবি, সূর্যাস্তের ছবি, নারী পুরুষের জননাঙ্গের ছবি, মিলনের ছবি! খাওয়ার ছবি, পান করার ছবি, শিশুকে স্তন পান করানোর ছবি!
যুদ্ধ আর অস্ত্রের ছবি পাঠানোর কথা থাকলেও পরে আর পাঠানো হয়নি।

কার্ল স্যাগান তখন ভয়েজার-১ এর জন্য 'গোল্ডেন রেকর্ড' তৈরীর কাজে দিনরাত ব্যাস্ত এবং ভীষণ উত্তেজিত। 
একদিন ভোরবেলা তিনি তার সুন্দরী সহকর্মী অ্যান ড্রুয়ানকে ফোন করলেন। কিছুক্ষণ কথা বলার পর ফোন রেখে দিলেন। 
ফোন রাখার পর স্যাগান আবিষ্কার করলেন তিনি ড্রুয়ানের প্রেমে পড়েছেন! স্যাগান মনের কথা জানালেন ড্রুয়ানকে। ড্রুয়ান জানালেন, তিনিও...।

এরপর কার্ল স্যাগান করলেন আরেক ছেলেমানুষী কাজ। তিনি তাঁর প্রেমিকাকে এক ঘন্টা চুপচাপ শুয়ে থেকে পৃথিবীর কথা, মানব সভ্যতার কথা এবং স্যাগানের প্রতি তাঁর ভালোবাসার কথা ভাবতে বললেন। 
বেচারী ড্রুয়ান এক ঘন্টা চোখ বন্ধ করে এসব ভাবলেন। এই সময় তাঁর ব্রেইনওয়েভ রেকর্ড করা হলো। 
এই ব্রেইনওয়েভও জুড়ে দেয়া হলো ভয়েজার ওয়ানের সাথে!

ভয়েজার ওয়ান ৪০ বছর থেকে ছুটছে।

যাত্রার ১৩ বছর পর ভয়েজার-১ তখন পৃথিবী থেকে ৬ বিলিওন কিলোমিটার দূরে। আমাদের সৌরজগতকে শুভ বিদায় জানাচ্ছে এই স্পেসক্রাফট। 
কার্ল স্যাগান তখন তাঁর শেষ পাগলামীটা করলেন। নাসার বিজ্ঞানীদের তিনি অনুরোধ করলেন এত দূরত্ব থেকে ভয়েজার-১ পৃথিবী নামক গ্রহের একটা ছবি তুলে পাঠাক। 
অনেক বিজ্ঞানীদের আপত্তি ছিলো। তারা বলেছিলেন ভয়েজারের ক্যামেরা পৃথিবীর দিকে ঘুরালে সূর্যের আলোতে সেটার ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু স্যাগানের অনুরোধে শেষবারের মতো পৃথিবীর ছবি তুলেছিলো ভয়েজার-১। একটা বিন্দুর চেয়েও ছোট দেখাচ্ছিলো আমাদের প্রিয় পৃথিবীকে! 

কার্ল স্যাগান মারা গেছেন ১৯৯৬ সালে।
ভয়েজার -১ আমাদের সৌরজগতকে চির বিদায় বলেছে ১৯৯০ সালেই। হেলিওশিথকে বিদায় বলেছে ২০১২ সালে। ভয়েজার -১ এখন আছে ইন্টারস্টেলার স্পেসে। নিঃসীম শীতল অন্ধকারে ঘন্টায় ৬২ হাজার কিলোমিটার বেগে ছুটে চলেছে ভয়েজার-১। 
আর কয়েকটা বছর মাত্র। তারপর আমরা যোগাযোগ হারিয়ে ফেলবো আমাদের দূরতম এই বন্ধুটির সাথে। ... এবং তারপর কোথায় যাবে ভয়েজার-১, কোথায় থাকবে আমাদের প্রিয় গ্রহের কয়েক কিলোবাইট স্মৃতি আমরা জানতে পারবো না কোনোদিনও!

Saturday, May 8, 2021

স্টিফেন হকিং কেন বলেছেন- দর্শন এখন মৃত?

স্টিফেন হকিং তার দ্য গ্রান্ড ডিজাইন বইতে লিখেছেন, ‘দর্শন এখন মৃত’। কেন এমনটা বলেছেন? বইটি পড়লে বোঝা যাবে যে প্রকৃতপ্রস্তাবে তিনি আক্ষরিক অর্থেই বলেছেন। দর্শনকে বলা হতো- জ্ঞানের প্রতি ভালবাসা। দর্শনে অস্তিত্ব, জ্ঞান, মূল্যবোধ, কারণ, মন ও ভাষা সম্পর্কে সাধারণ ও মৌলিক প্রশ্নগুলোর অধ্যয়ন করে। জগৎ, জীবন, মানুষের সমাজ, তার চেতনা ও জ্ঞানের প্রক্রিয়া নিয়ে এখানে আলোচনা করা হয়। বিপরীতে বিজ্ঞানে দরকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা-পর্যবেক্ষণযোগ্য সৃশৃঙ্খল ও নিয়মতান্ত্রিক গবেষণা। সেই গবেষণালব্ধ জ্ঞানভাণ্ডার হল বিজ্ঞান। দর্শনের ভাবনাটা প্রমাণ করতে হয় না। কিন্তু বিজ্ঞানতো প্রমাণের কথা বলে। বৈজ্ঞানিক প্রমাণেই বেরিয়ে আসে সত্যটা। তাই দর্শন এখন বাস্তবিকই অকার্যকর হয়ে পড়েছে। বিপরীতে এখন কোয়ান্টাম বলবিদ্যার পরীক্ষার ফলও তাত্ত্বিক ভবিষ্যদ্বাণির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হচ্ছে। এটি কখনো কোন পরীক্ষার দ্বারা নিষ্ফল প্রমাণিত হয়নি। পদার্থবিদ ফাইনম্যানের একটি বক্তব্য খুব প্রচলিত। তিনি বলেছিলেন, ‘আমার মনে হয় আমি এটা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে, কেউই কোয়ান্টাম বলবিদ্যাকে বুঝতে পারে না’। কিন্তু তাঁর এই বক্তব্যের পরে বহু সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। সার্নে পরীক্ষা করে ঈশ্বর কণা নামে পরিচিত রহস্যময় হিগস বোসন কণার অস্তিত্ব প্রমাণ করা সম্ভব হয়েছে। অথচ এই কণা সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা অনুমাণই কেবল করেছিলেন। আমাদের পৃথিবী কিভাবে নির্মিত তা বর্ণনা করা সহজ হয় এই আবিস্কারে। তাত্ত্বিক ভবিষ্যদ্বাণি এভাবেই প্রমাণিত হয় এবং কোয়ান্টাম বলবিদ্যা আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে।

পৃথিবী ও মহাবিশ্ব কিভাবে চলে? এক কথায় বললে বলতে হয়- প্রকৃতি নিয়ম দিয়ে শাসিত হয়। অর্থাৎ মহাবিশ্ব চলে পদার্থবিদ্যার সূত্র মেনে। সূত্রগুলোর উৎপত্তি কোথা থেকে এলো? সূত্রগুলো ধর্মগ্রন্থগুলোতেই থাকা মানানসই ছিল। কিন্তু সেখানে তেমন কিছুই নেই। তাহলে কারা আবিষ্কার করলো সূত্রগুলো? যে মানুষগুলো পরীক্ষা, নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করতে পেরেছেন তারাই নিয়ে এসেছেন সূত্রগুলো। একটি পানির চৌবাচ্চায় নেমে আর্কিমিডিস যখন দেখলেন তিনি হালকা বোধ করছেন। কিছু ওজন হারিয়েছেন মানে উর্ধ্বমুখী চাপ উপলব্ধি করছেন। তিনি প্লবতার সূত্র বোঝতে পেরে ‘ইউরেকা!, ইউরোকা!’ বলে ছুট লাগালেন। আর নিউটনের পাশে যখন একটি আপেল পড়ল তখন তাঁর গভীর পর্যবেক্ষণই বের করে আনল, মধ্যাকর্যণ শক্তির কথা। তিনি গভীর পরীক্ষা, নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করেই বলবিদ্যার বিখ্যাত সূত্র তিনটি আবিস্কার করেন। এসকল সূত্র নিয়ে নিউটনের মধ্যে ধারণা ছিল, ‘ঈশ্বর শুরুতে সৃষ্টি করেছেন এবং আজ পর্যন্ত তাকে একই নিয়মে, একই অবস্থায় রক্ষা করে চলেছেন’। নিউটন মারা গেছেন প্রায় তিনশত বছর আগে। যখন আস্তিক্যবাদী দার্শনিকদের ব্যাপক প্রভাব ছিল এবং সময়টা ছিল রেনেসাঁর কাল। তখনো বস্তুবাদী দর্শন আসেনি। বস্তুবাদী দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা ফয়েরবাখের জন্মই নিউটনের মৃত্যুর ৭৭ বছর পরে।

আমরা আইনস্টাইনের একটি উদ্বৃতি খুব দেই। তিনি বলেছিলেন, ‘ঈশ্বর যেন প্রতিটি জাগতিক ভৌত ঘটনার ভাগ্য নির্ধারণের আগে পাশা খেলছেন’। এ থেকে আমরা ধরে নেই তিনি ঈশ্বরের অস্তিত্বের কথা বলেছিলেন। বাস্তবিক তিনি চূড়ান্ত কথাটি বলেছেন তাঁর খ্যাতি পাওয়া বিখ্যাত ঈশ্বর চিঠিতে। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘ঈশ্বর শব্দটি আমার কাছে আর কিছুই না, এটি হল মানুষের দুর্বলতার একটি বহিঃপ্রকাশ।’ একসময় দর্শনে ছিল আস্তিক্যবাদ ও নাস্তিক্যবাদ নিয়ে বিতর্কের স্থান। এরপর আসলো ভাববাদী ও বস্তুবাদী দর্শন নিয়ে বিতর্ক। বস্তুত বস্তুবাদী দর্শন ভাববাদী দর্শনকে প্রতিস্থাপন করেছে। কার্ল মার্ক্স নিয়ে এল দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী দর্শন। এতোকাল যা ছিল আলোচনায় সীমাবদ্ধ তার প্রয়োগ হল। কিন্তু তারপর .. ..

এখন সবাই সবকিছতেই প্রমাণ চায়। সেই প্রমাণতো প্রাচীন গ্রন্থগুলোতে নেই, আছে শুধু বিশ্বাস! দর্শনও প্রমাণ করার দায় নিবে না। তাহলে? বিজ্ঞানেরই দায় রয়েছে সবকিছু প্রমাণ করার। তাই মনে হয় দর্শনকে বিজ্ঞানই অকার্যকর করে দিয়েছে। হকিং বলেছেন, ‘দার্শনিকগণ বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কার ও তত্ত্বের সাথে আর পাল্লা দিতে পারছেন না’। অথচ দীর্ঘকাল ধরে বলা হচ্ছিল, ‘দর্শন হল সকল বিষয়ের প্রসূতি। সর্বক্ষেত্রে দর্শনের ভূমিকা রয়েছে এবং দর্শন থেকেই বিজ্ঞানের সৃষ্টি।’ পদার্থবিদ ড. সুশান্ত কুমার দাস স্যার সাম্প্রতিক ‘দ্য গ্রান্ড ডিজাইন’ বইটির বাংলা রুপান্তরের পাঠ উন্মোচন অনুষ্ঠানে বললেন, ‘হকিং আক্ষরিক অর্থে বলেন নি’। কিন্তু ‘দ্য গ্রান্ড ডিজাইন’ বইটিতে এমন কোন প্রমাণ মিলে না যে, তিনি আক্ষরিক অর্থে বলেন নি ‘দর্শন এখন মৃত’। আজ উল্টে গেছে সব- সেই প্রসূতি মাকে ছাড়িয়ে বিজ্ঞান অনেক দূরে চলে গেছে আর দর্শন রয়ে গেছে আঁতুড় ঘরেই। এখন বলা হচ্ছে, দর্শন জ্ঞানের ভিত্তি হতে পারে, হতে পারে আরো অনেক কিছু কিন্তু দর্শন বিজ্ঞান নয়। বিজ্ঞানের সীমানায় দর্শনের প্রবেশ নেই। মনোবিজ্ঞান থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান সবকিছুকেই এখন বিজ্ঞানের কষ্টিপাথরে যাচাই করে নিতে হয়। আইনস্টাইন যখন বলে দেন, ‘ঈশ্বর হল মানুষের দুর্বলতার একটি বহিঃপ্রকাশ’ তখনতো সত্যের অলৌকিক সীমানাতেও তার প্রবেশ ঘটে যা এক সময় ছিল একান্তই দর্শনের বিষয়। বিজ্ঞান আত্মাকে অস্বীকার করার পরেই ধর্ম-দর্শনের উপর আঘাত চলে আসে। সেই আঘাত সহ্য করে টিকে থাকা ধর্ম-দর্শনের পক্ষে অসম্ভব হবে। বিষয় হিসেবে দর্শন, ভূগোল, ইতিহাস, সাহিত্য ইতোমধ্যেই গুরুত্ব হারিয়েছে। ভূগোলের সাথে অনেকে পরিবেশ যুক্ত করে একে বিজ্ঞানের বিষয় হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করে নিয়েছেন। সাহিত্যের সাথে সংযুক্ত করে নিয়েছেন ভাষাকে।     

দর্শন মৃত- এর কি কোন প্রমাণ হকিং এর কাছে ছিল? যদি না থাকে তবে একেও অনেকে বলবে দার্শনিক মত। আইনস্টাইনের কাছে কি এমন কোন প্রমাণ আছে যে, ‘ঈশ্বর হল মানুষের দুর্বলতার একটি বহিঃপ্রকাশ’। যদি না থাকে তবে সেটাও হবে দর্শন? তাদের কাছে যা আছে তা হল, যুক্তি ও পর্যবেক্ষণ আর সেটাও দর্শন বলে দাবি করবেন অনেকে। সেটা দার্শনিক মত হলেও আমাদের যৌক্তিক কারণেই মেনে নিতে হচ্ছে। হকিং ও আইনস্টাইন ভুল বলেছেন, এমনটা গ্রহণ করার কোন অবকাশ আমাদের নেই, কোন যৌক্তিক জায়গাও নেই। আবার আমাদের স্বীকার করতেই হবে, পৃথিবীর এই অগ্রগতিতে, মানুষের ভাবনার জগৎকে উন্নত করতে দর্শনই রেখেছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। কিন্তু আজকের পৃথিবী বিজ্ঞানের, সেখানে দর্শনের গুরুত্ব ক্ষীণতর হয়ে পড়েছে- এটাও সত্য।

নিল আর্মস্ট্রং থেকে হ্যারিসন স্মিথ।

১ /১২

এখনও পর্যন্ত মোট ১২ জন মহাকাশচারী চাঁদে গিয়েছেন। তাঁদেরই দু’জন নিল আর্মস্ট্রং এবং বাজ অলড্রিন। বাকি যে ১০ মহাকাশচারী চাঁদে পা রেখেছেন তাঁরা ১৯৬৯-৭২ এর মধ্যে নাসার আরও পাঁচটি (অ্যাপোলো ১২, অ্যাপোলো ১৪, অ্যাপোলো ১৫, অ্যাপোলো ১৬ এবং অ্যাপোলো ১৭) চন্দ্রাভিযানের শরিক হয়েছিলেন। আর্মস্ট্রং এবং অলড্রিন অ্যাপোলো ১১-এ চেপে চাঁদে গিয়েছিলেন।

২ /১২

৫০ বছর আগে, ১৯৬৯ সালের ১৬ জুলাই ‘স্যাটার্ন ৫’ রকেটে চেপে চাঁদে পাড়ি দিয়েছিল ‘অ্যাপোলো ১১’। ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণ হয়েছিল অ্যাপোলো ১১-র। তিন জন মার্কিন মহাকাশচারী সে দিন চাঁদের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। নিল আর্মস্ট্রং, এডুইন (বাজ) অলড্রিন এবং পাইলট মাইকেল কলিন‌্স। চাঁদের মাটিতে প্রথম মানুষ হিসেবে পা রাখেন নিল আর্মস্ট্রং। তার পরে নামেন এডুইন অলড্রিন। কলিন‌্স মহাকাশযানেই ছিলেন। চাঁদে নামেননি।

চাঁদের মাটিতে পা রেখে তাঁরাই বদলে দিয়েছিলেন সভ্যতার ইতিহাস। তার পর থেকে একাধিক বার চাঁদে পাড়ি দিয়েছে মানুষ। আর প্রতি বারই নতুন নতুন তথ্য এসেছে চাঁদ থেকে। সে দিন চাঁদে মানুষের সেই প্রথম পদার্পণের ঘটনা বিশ্বজুড়ে টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছিল।

৩/১২

পেট কনরাড: তৃতীয় মহাকাশচারী যিনি চাঁদের মাটিতে পা রাখেন। ১৯৬৯ সালে ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে অ্যাপোলো ১২-র উৎক্ষেপণ হয়েছিল। ৭ দিন পর ১৯ নভেম্বর তাঁরা চাঁদে অবতরণ করেন। তাঁরাই প্রথম রঙিন টেলিভিশন ক্যামেরা নিয়ে যান চাঁদে।

৪ /১২

অ্যালান বিন: পেট কনরাডের সঙ্গে ছিলেন অ্যালান। তিনিও চাঁদের পিঠে নেমেছিলেন। দু’জনে চাঁদের পিঠে বেশ কিছু ক্ষণ হাঁটাহাটিও করেন। নমুনা নিয়ে সুরক্ষিত ভাবে পৃথিবীতে ফিরেও আসেন। 

৫/১২
অ্যালান শেফার্ড: ১৯৭১ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি অ্যাপোলো ১৪ মিশনে চাঁদে পাড়ি দেন অ্যালান। এখনও পর্যন্ত যে ১২ জন মহাকাশচারী চাঁদে গিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে শেফার্ডই একমাত্র চাঁদে গলফ খেলেছেন! অ্যালান আসলে চাঁদে গিয়ে অভিনব একটা কিছু করতে চেয়েছিলেন। সে জন্য ওই গলফ ব্যাট আর দু’টো বল নিয়ে গিয়েছিলেন চাঁদে।

৬ /১২
এডগার মিশেল: অ্যালান শেফার্ডের সঙ্গে লুনার মডিউল অ্যাপোলো ১৪-র পাইলট হয়ে চাঁদে গিয়েছিলেন এডগার মিশেল। চাঁদে পা দেওয়া ষষ্ঠ মহাকাশচারী তিনি।

৭ /১২
ডেভিস স্কট: অ্যাপোলো ১৫ অভিযানে ১৯৭১ সালে চাঁদে গিয়েছিলেন মহাকাশচারী ডেভিস। বায়ুর উপস্থিতি এবং অনুপস্থিতিতে হাতুড়ি আর পালক দিয়ে গ্যালিলিওর বিখ্যাত পদার্থের ভর এবং গতিবেগের পরীক্ষা চাঁদে নেমে করেছিলেন তিনি। চাঁদে বায়ুমণ্ডল নেই। তাই ভারী হাতুড়ি আর হালকা পালক এক সঙ্গেই পড়ে সেখানে।

৮ /১২
জেমস আরউইন: ১৯৭১ সালে অ্যাপোলো ১৫ অভিযানে তিনিও ডেভিস স্কটের সঙ্গে ছিলেন। জেমস অষ্টম মহাকাশচারী হিসেবে চাঁদে নামেন। ডেভিস স্কট এবং জেমস আরউইনকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল চন্দ্রাভিযানের জন্য। তাঁরাই প্রথম চাঁদ থেকে বিভিন্ন ধরনের পাথর সংগ্রহ করে এনেছিলেন। তার মধ্যে অন্যতম ‘জেনেসিস’। বহু দিন ধরে নাসার গবেষণাগারে সেই পাথরে প্রাণের অস্তিত্বের প্রমাণ খুঁজেছিলেন বিজ্ঞানীরা। প্রমাণ মেলেনি।

৯ /১২
জন ইয়ং: ১৯৭২ সালে অ্যাপোলো ১৬ চন্দ্রাভিযানে গিয়েছিলেন জন ইয়ং। তিনি চাঁদে নামা নবম মহাকাশচারী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন পাইলট চার্লস ডিউক। চাঁদের পিঠে তাঁর আমেরিকার পতাকার সামনে দাঁড়িয়ে স্যালুট করার ছবি সকলেরই মনে রয়েছে। জন ইয়ংকে ছবিতে দেখা যাচ্ছে।

১০/১২
 ছবিটা তুলেছিলেন চার্লস ডিউক। চার্লস ডিউক চাঁদে অবতরণ করা দশম মহাকাশচারী।

১১ /১২
জিন সারমন: নাসার অ্যাপোলো প্রোগামের শেষ অভিযান ছিল অ্যাপোলো ১৭। তার পর থেকে আর কোনও মানুষ চাঁদে পা রাখেননি। আর মহাকাশচারী জিন সারমন ছিলেন ১১ নম্বর বিজ্ঞানী, যিনি চাঁদে নেমেছিলেন।

১২/১২
হ্যারিসন স্মিথ: জিনের সঙ্গে ওই অভিযানে ছিলেন হ্যারিসনও। চাঁদে যাওয়া মহাকাশচারীদের তালিকায় হ্যারিসনই শেষ মহাকাশচারী। পরীক্ষার জন্য সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন ৫টি ইঁদুর। ইঁদুর-সহ দুই মহাকাশচারী অভিযান শেষে পৃথিবীতে ফিরে এসেছিলেন।  

https://youtu.be/TmHABUfjYPI

https://youtu.be/snCNhgY6r5o

বাড়তে চলেছে দিনের জন্য বরাদ্দ সময়।

 24-এর বদলে 25 ঘণ্টা দৈর্ঘ্যের হবে একটি পূর্ণ দিন। কারণ পৃথিবীর আহ্নিক গতির বেগ কমছে। জানিয়েছেন ডারহ্যাম ইউনিভার্সিটি গবেষক মহল এবং ইউ কে-এর নটিক্যাল অ্যালমানাক অফিস।
    তবে এখনই উল্লসিত হওয়ার কিছুই হয়নি। কারণ এই বর্ধিত সময় আসতে লাগবে আরও অন্তত 200 মিলিয়ন বছর। প্রতি 100 বছরে দিনের সময় বাড়ছে 2 মিলিসেকেন্ড করে। ফলে  পুরো একঘণ্টা অতিরিক্ত আসতে লাগবে প্রায় 200 মিলিয়ন বছর।
    পৃথিবীর আবর্তনের বেগ কেন কমছে? কমছে কারণ স্বয়ং চাঁদ তার আকর্ষণের জোরে পৃথিবীর আবর্তনে বাধা দিচ্ছে। ব্যাপারটা ঘটছে জোয়ারের মধ্যস্থতায়। চাঁদের আকর্ষণে ফুলে ওঠে সমুদ্রের জল, কিন্তু পৃথিবীর বেগের কারণে সেই জোয়ারের চূড়া ছোটে চাঁদের থেকে এক কদম আগে। ফলে চাঁদ যেমন পিছন থেকে পৃথিবীর আঁচলে দেয় টান, পৃথিবী কিছুটা শক্তি হারায়, তেমনই উল্টো দিকে জোয়ারের জল চাঁদকে যেন টেনে নিয়ে চলে গুণ টানার মতো, তাতে শক্তি সঞ্চারিত করে। পৃথিবী যা হারায়, চাঁদ তা পায়। ফলে ভরবেগের হিসেব অপরিবর্তিত রাখার জন্য গ্রহগতিবিদ্যার নিয়ম মেনে চাঁদ দূরে সরে যাচ্ছে বছরে প্রায় 3.78 সেন্টিমিটার করে। 
    বিজ্ঞানী ও গবেষকদের মতে, 100 কোটি বছর আগে পৃথিবীর মাটিতে একটি গোটা দিনের মাপ ছিল বড়জোড় 18 ঘণ্টা।
ধীরে ধীরে তা বেড়ে হয় 24 ঘণ্টা। ক্রমশ পৃথিবী ও চাঁদের দূরত্ব বাড়ছে। ফলে প্রভাবিত হচ্ছে পৃথিবীর আহ্নিক গতি। নিজের চারপাশে আবর্তিত হচ্ছে বেশি সময় নিচ্ছে পৃথিবী।
    সব হিসেব মিলিয়ে হিসেবের শেষে দিনের দৈর্ঘ্য বাড়ছে। এবং বিজ্ঞানীরা সহমত, সুদূর ভবিষ্যতে 24-এর বদলে 25 ঘণ্টাই হতে চলেছে একটি দিনের পূর্ণমান, তারপরও আরো বাড়তে থাকবে ।

জোয়ার-ভাটা শব্দ দুটির সাথে আমরা সকলেই পরিচিত।

 যাদের বাড়ী নদী কিংবা সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে তারা প্রায় জোয়ার-ভাটার সম্মুখীন হন। হঠাৎ করে নদী কিংবা সমুদ্রের জল ফুলে-ফেঁপে উঠাকে বলা হয় জোয়ার আর সেই জল অন্য জায়গায় নেমে যাওয়াকে বলা হয় ভাটা।  জোয়ার- ভাঁটা সৃষ্টির পিছনেও কিছু বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে।

প্রথমেই জেনে নেয়া যাক জোয়ার-ভাটা বলতে কি বুঝায়?

চন্দ্র-সূর্যের আকর্ষণ শক্তি, পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ শক্তি এবং আহ্নিক গতির কারণে সমুদ্রের জল নির্দিষ্ট সময় অন্তর এক জায়গায় ফুলে ওঠে, আবার অন্য জায়গায় নেমে যায়। সমুদ্র জল এভাবে ফুলে ওঠাকে জোয়ার এবং নেমে যাওয়াকে ভাটা বলে। সমুদ্রের কোনো এক জায়গায় প্রতিদিন দুইবার করে জোয়ার-ভাঁটা সংঘটিত হতে পারে। উপকূলে কোনো একটি স্থানে পর পর দুটি জোয়ার বা পর পর দুটি ভাটার মধ্যে ব্যবধান হলো ১২ ঘণ্টা ২৬ মিনিট।
 জোয়ার-ভাটা সৃষ্টির কারণ:

জোয়ার-ভাটা সংঘটিত হওয়ার মূখ্য কারণ হচ্ছে চন্দ্র-সূর্যের আকর্ষণ শক্তি। তবে জোয়ার-ভাটা সৃষ্টিতে চাঁদের আকর্ষণ বলই বেশী কাজ করে। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় দেখা গেছে, জোয়ার উৎপাদনের ক্ষেত্রে সূর্যের ক্ষমতা চাঁদের ক্ষমতার নয় ভাগের চার ভাগ। এছাড়াও জোয়ার-ভাটা সৃষ্টিতে আহ্নিক গতির প্রভাবও উল্লেখযোগ্য। আমরা সকলেই জানি, পৃথিবীতে দিনরাত্রি হওয়ার প্রধান কারণও এই আহ্নিক গতি। এই গতির ফলে সমুদ্র-স্রোতের দিক পরিবর্তন হয়। ফলে স্রোত যেদিকে প্রবাহিত হয় সেদিকে জোয়ার এবং যেদিক হতে প্রবাহিত হয় সেদিক ভাঁটার সৃষ্টি হয়। এছাড়াও পৃথিবীর আবর্তনের ফলে সৃষ্ট কেন্দ্রাতিগ শক্তি বা কেন্দ্রবিমুখী শক্তির ফলেও জোয়ার-ভাটা সৃষ্টি হতে পারে।

এখন জানা যাক জোয়ার-ভাঁটা সৃষ্টিতে সূর্যের আকর্ষণ অপেক্ষা চাঁদের আকর্ষণ বেশী কার্যকর কেনো?

আমরা জানি, সূর্য চন্দ্র অপেক্ষা বহুগুণ বড়। কিন্তু দূরত্বের বেলায় চন্দ্র সূর্য হতে পৃথিবীর অনেক নিকটবর্তী। যেখানে সূর্যের গড় দূরত্ব পৃথিবী হতে ১৫ কোটি  কি.মি. সেখানে চন্দ্রের গড় দূরত্ব মাত্র ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার  কি.মি.। সুতরাং স্বাভাবিক ভাবেই সূর্য হতে চন্দ্রের আকর্ষণ শক্তি অনেক বেশী হবে। যার ফলে জোয়ার-ভাঁটা সৃষ্টিতে সূর্য অপেক্ষা চাঁদের প্রভাব বেশী।
জোয়ার প্রধানত দুই প্রকার।

(১)মুখ্য জোয়ার:

চাঁদ যখন পৃথিবীর চারদিকে আবর্তন করে তখন পৃথিবীর যে অংশ চাঁদের নিকটবর্তী হয়, সেই অংশে চাঁদের আকর্ষণের প্রভাবে জল ফুলে উঠে তথা জোয়ারের সৃষ্টি হয়। এরূপ জোয়ারকে মুখ্য জোয়ার বলে। কোনো স্থানে একবার মুখ্য জোয়ার হওয়ার পর প্রায় ২৪ ঘণ্টা ৫২ মিনিট সময় অতিক্রম করলে পুনরায় সেখানে মুখ্য জোয়ার সৃষ্টি হয়।

(২)গৌণ জোয়ার:

চাঁদ পৃথিবীর যে পাশে আকর্ষণ করে তার ঠিক অপর পাশে জলরাশির ওপর মহাকর্ষ বল অনেকাংশে কমে যায় এর ফলে সে স্থানে কেন্দ্রাতিগ শক্তির সৃষ্টি হয়। ফলস্বরুপ চারদিকের পানি ঐ স্থানে এসে জোয়ারের সৃষ্টি করে। এরূপ সৃষ্ট জোয়ারকে গৌণ জোয়ার বলে।
একই দিনে দুবার জোয়ার ভাটার কারন কি ?
  জোয়ার-ভাটা হয় মূলত সমুদ্রের জলের উপর চন্দ্রের আকর্ষণের কারণে। অবশ্য সূর্যের আকর্ষণও অল্প প্রভাব বিস্তার করে। চাঁদ পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে। এই ঘূর্ণনজাত কেন্দ্রাতিক বলের ফলে পৃথিবী চাঁদ থেকে দূরে সরে যেতে চাচ্ছে আর তার বিপরীতে কাজ করছে চাঁদের আকর্ষণ। পৃথিবীর যে পৃষ্ঠ চাঁদের দিকে সেদিকে চাঁদের আকর্ষণ কেন্দ্রাতিক বলের চেয়ে বেশি বলে সেখানকার পানি ফুলে উঠে জোয়ারের সৃষ্টি করে। একই সময় পৃথিবীর অপরদিকে চাঁদের আকর্ষণ কেন্দ্রাতিগ বলের চেয়ে কম বলে সেখানকার পানিও ফুলে উঠে। এ দুটি পৃষ্ঠের লম্বভাবে অবস্থিত স্থানে চলে ভাটা। এ কারণেই কোনস্থানে দিনে দুবার জোয়ার-ভাটা হয়।
    পৃথিবীর কোন অংশে প্রতিদিন একই সময়ে জোয়ার ভাটা হয় না এর কারণ হলো। পৃথিবী যেমন নিজের মেরু রেখার চারিদিকে 360 ডিগ্রি 24 ঘন্টায় একবার আবর্তন করে, চাঁদও তেমনি 27 দিনে পৃথিবীর চারিদিকে একবার ঘোরে। সুতরাং 24 ঘন্টায় চাঁদ পৃথিবীর কক্ষপথে 360÷27=13 ডিগ্রী পথ অতিক্রম করে বা 24 ঘন্টায় চাঁদ পৃথিবীর কক্ষপথ পৃথিবীর একবার আবর্তন চাঁদ প্রায় 13° পথ এগিয়ে যায়। এই 13° পথ অতিক্রম করতে পৃথিবীর সময় লাগে প্রায় 52 মিনিট। অর্থাৎ যে দ্রাঘিমারেখা টি চাঁদের সামনে আছে 24 ঘন্টা পরে 360° অতিক্রম করে এসেই দ্রাঘিমার পূর্ব অবস্থানে ফিরে আসার মধ্যে 13° পথ এগিয়ে যায়। ওই দ্রাঘিমারেখা টি পুনরায় তাদের সামনে আসার জন্য তাই আরো 13 ডিগ্রী বেশি আবর্তন করতে হয়। এর জন্য ওই দ্রাঘিমারেখা চাঁদের সামনে আসতে সময় লাগে আরও 52 মিনিট বেশি। তাই পৃথিবীর কোন নির্দিষ্ট স্থানে প্রত্যেক মুখ্য ও গৌণ জোয়ার এর পরবর্তী মুখ্য ও গৌণ জোয়ার আরও 52 মিনিট পর অনুষ্ঠিত হয়। কোন স্থানে এই মুহূর্তে মুখ্য জোয়ার হলে, পরবর্তী মুখ্য জোয়ার হবে 24 ঘন্টা 52 মিনিট পরে।
পরবর্তী গৌণ জোয়ার হবে 12 ঘন্টা 26 মিনিট পরে
   পরবর্তী ভাটা হবে 6 ঘন্টা 13 মিনিট পর।
      মাঝে মাঝে চন্দ্র ও সূর্যের মিলিত আকর্ষণের জন্য জোয়ারের জল অনেক বেশী ফুলে ওঠে। ফলে প্রবল জোয়ারের সৃষ্টি হয়, একে তেজ কটাল বলে। সাধারণত পৃথিবী, চন্দ্র ও সূর্য একই সরলরেখায় অবস্থান করলে তেজ কটালের সৃষ্টি হয়। অপরদিকে চন্দ্র ও সূর্য যখন পৃথিবীর সাথে এক সমকোণে থেকে পৃথিবীকে আকর্ষণ করে। তখন চাঁদের আকর্ষণ শক্তির প্রভাবে সেখানে জোয়ার হয় এবং সূর্যের আকর্ষণ শক্তির ফলে সেখানে ভাঁটা হয়। তবে চন্দ্রের আকর্ষণে যে জোয়ার হয়, সূর্যের আকর্ষণে তা বেশী স্ফীত হতে পারে না। এধরণের জোয়ার-ভাটাকে মরা কটাল বলে। সাধারণত অষ্টমীর তিথিতে মরা কটাল হয়। প্রতি এক মাসে দুইবার তেজ কটাল এবং দুইবার মরা কটাল হয়ে থাকে।
নদী-উপকূলীয় মানুষদের জীবনে জোয়ার-ভাটার প্রভাব ব্যাপক। জোয়ার-ভাটা নদীর মোহনা হতে স্রোতের সঙ্গে পরিবাহিত তলানি অপসারিত করে, নদীমুখকে জাহাজ চলাচলের জন্য উন্মুক্ত রাখে। এছাড়াও এর ফলে নৌ চলাচলে সুবিধা হয়। তবে অনেক সময় প্রবল জোয়ারের সম্মুখীন হয়ে উপকূলীয় অঞ্চলে নদী ধস হয় যা সমাজজীবনের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিস্বরুপ।