Monday, August 27, 2018

জিপিএ ফাইভ পাওয়া মুসলিম বিজ্ঞানীদের সাক্ষাৎকার।

দাড়িরাঙা টিভির একজন সাংঘাতিক কথা বলছিল জিপিএ ফাইভ পাওয়া দেশের মুসলিম বিজ্ঞানীদের সাথে। সেখান থেকে বাছাইকৃত কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর–
১.পৃথিবীর গঠন কেমন?
–বিছানা বা কার্পেট এর মত।
২.রাতের বেলা সূর্য কোথায় যায়?
–আরশের তলায়।
৩.আকাশ কী পদার্থের তৈরী?
–কোনো কঠিন পদার্থের।
৪.পাহাড়-পর্বতের কাজ কী?
–পৃথিবীকে স্থির রাখা।
৫.পৃথিবী, চন্দ্র এবং সূর্যের মধ্যে কোনটা ঘূর্ণায়মান?
–চন্দ্র এবং সূর্য।
৬.উল্কাপিণ্ডের কাজ কী?
–শয়তান তাড়ানো।
৭.শুক্রানুর উৎপত্তি কোথায়?
–মেরুদণ্ড ও পাজরের হাড়ের মধ্যস্থল।
৮.বজ্রপাত কেন হয়?
–মানুষকে ভয় দেখাতে।
৯.মানবভ্রুণে আগে হাড়, নাকি মাংস তৈরী হয়?
–হাড়।
১০.আদমের উচ্চতা কত ছিল; সে কত বছর বেঁচেছিল?
–৯০ ফুট; ৯৬০ বছর।
১১.চাঁদের নিজস্ব আলো আছে?
– হ্যাঁ, আছে।
১২.চন্দ্র-সূর্যগ্রহণ কেন ঘটে?
–মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য।
১৩.পুত্রসন্তান কিভাবে হয়?
–ছহবতের সময় ‘ইনশাল্যাহ’ বললে।
১৪.জন্মের সময় বাচ্চা কাঁদে কেন?
–শয়তানের আঘাতে।
১৫.শয়তান কোথায় ঘুমায়?
–মানুষের নাকের ছিদ্রে।
১৬.মানুষের অন্ত্র কয়টা?
–অমুসলিমদের ৭টা, মুসলমানদের ১টা।
১৭.ছহিহ বিবর্তন কাকে বলে?
–ইহুদি থেকে ইঁদুর আর শুকর হয়ে যাওয়া।
১৮.সন্তানের চেহারা কিভাবে নির্ধারিত হয়।
–আগে বাবার বীর্যপাত হলে সন্তানের চেহারা হবে বাবার মত; আগে মায়ের বীর্যপাত হলে সন্তানের চেহারা হবে মায়ের মত।
১৯.চোখ নষ্ট হয় কিভাবে?
–প্রার্থনার সময়ে উপরের দিকে তাকালে।
২০.জ্বরের সময় গা গরম হয় কেন?
–দোজখ থেকে তাপ আসার ফলে।
২১.কী খেলে সব রোগ সেরে যায়।
–কালোজিরা।
২২.মোরগ কেন ডাকে?
–ফেরেস্তাকে দেখলে।
২৩.গাধা কেন ডাকে?
–শয়তানকে দেখলে।
২৪.রোগের সংক্রমন হতে পারে?
–না, ছোঁয়াচে রোগ বলে কিছু নেই।
২৫.সাঁপে কাঁটলে কী করা উচিত?
–ঝাড়-ফুঁক করা।
২৬.সীরাত অনুসারে পৃথিবীর বয়স কত?
–৬ হাজার বছরের মত।
২৭.কিসে প্রমাণ হয় মুহাম্মদ একজন নবী ছিল?
–তার পিঠে নবুয়তির সিল-স্বরূপ একটা তিল ছিল।
২৮.‘কাহফবাসীরা’ গর্ত আর গুহার মধ্যে কতদিন ঘুমিয়ে ছিল?
–৩০০ বছর।
২৯.ফেরেস্তারা কাকে ভয় পায়?
–কুত্তাকে।
৩০.দাবা খেললে কী হয়?
–হাতে শুকরের মাংস ও রক্ত লেগে থাকে।
৩১.কিছু কাজ না করেও নবীজি কেন ভাবতেন তিনি তা করে ফেলেছেন?
–তাকে যাদু করা হত।
৩২.মদিনার পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে কী করতে হবে?
–উটের মূত্র পান করতে হবে।
৩৩.নবীজি কিভাবে খেঁজুর গাছের কান্না থামাতেন?
–গাছের গায়ে হাত বুলিয়ে।
৩৪.পানি সংকটের সময় প্রায় ৩০০ জন লোকের ওজুর পানি কোথা থেকে পাওয়া গেছিল?
–নবীজির হাতের তালু ও আঙুলের ফাঁক থেকে।
৩৫.খাওয়ার সময় খাদ্যদ্রব্য কী করে?
–আল্যার প্রশংসা করে।
৩৬.নবীজির তিনটি পছন্দের জিনিস কী কী?
–সুগন্ধী, নারী ও খাদ্য।
৩৭.নামাজ না পড়ে ঘুমালে কী হয়?
–শয়তান কানের মধ্যে প্রস্রাব করে।
৩৮.পেঁয়াজ-রসুন খেলে কী করতে হবে?
–মসজিদ থেকে দূরে থাকতে হবে।
৩৯.নবীজি দোজখে কী দেখেছিলেন?
–দোজখবাসীর বেশিরভাগই নারী।
৪০.সূর্যগ্রহণ দেখে নবী কী ভেবেছিলেন?
–কেয়ামতের দিন এসে গেছে।
৪১.কবরের উপর খেঁজুর পাতা দিলে কী হয়?
–আজাব লাঘব হয়।
৪২.ইসলামে মেয়েদের সর্বনিম্ন বিয়ের বয়স কত?
–বয়স কোনো ব্যাপার না।
৪৩.আফ্রিকানদের চুল দেখে নবী কী বলেছিলেন?
–তাদের চুল কিশমিশের মত।
৪৪.সিনা-চাক কী জিনিস?
–জিব্রাইল নবীর বুক কেটে জমজমের পানি দিয়ে ধুয়ে বুকের মধ্যে জ্ঞান ও ঈমান ভর্তি সোনার কলস ৪৫.স্থাপন করে দিয়েছিল।
==========================
এরকম জ্ঞানভর্তি একটা সোনার সাক্ষাৎকার লাইক কমেণ্ট শেয়ার করে সবার বুকের মধ্যে স্থাপন করে দিন।

Saturday, August 25, 2018

নবী মুহাম্মদ ও তার পুত্রবধু বা পরস্ত্রী জয়নাবের শ্রেষ্ঠ অমর প্রেম কাহিনী।


হে মুমিন, আপনারা কি জানেন , নবী মুহাম্মদ ছিল দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ প্রেমিকও ? 
নবী যখন খাদিজাকে বিয়ে করে ,বিধবা খাদিজার আগেই কয়টা মেয়ে ছিল , কিন্তু কোন ছেলে ছিল না। কিছু বনিক ৫ বছরের একটা শিশুকে খাদিজার কাছে বিক্রি করতে নিয়ে আসে। ছেলে বিহীন খাদিজা সেই শিশুকে ক্রয় করে , দাসের মর্যাদা না দিয়ে তাকে নিজ পুত্রের মত গ্রহন করে। তার স্বামী মুহাম্মদও তাকে পুত্রের মর্যাদা দিয়ে বড় করতে থাকে , এক পর্যায়ে , প্রকাশ্যে ঘোষণা দেয় , সেই দাস শিশু জায়দ তার ছেলে। তখন সবাই জায়দকে ডাকত - জায়দ ইবনে মুহাম্মদ বা মুহাম্মদের পূত্র জায়দ।

জায়দ যখন যুবক হয় , তখন মুহাম্মদ নিজেই ঘটকালি করে জায়দের সাথে মুহাম্মদেরই আত্মীয় সম্পর্কিত জয়নাবের বিয়ে দিয়ে দেয়। তারা সুখেই সংসার করছিল কিন্তু হঠাৎ ঘটল এক দুর্ঘটনা। একদা মুহাম্মদ জায়দের বাড়ীতে যায় , তখন জায়দ বাড়ীতে ছিল না , মুহাম্মদ দরজার ফাক দিয়ে ভিতরে উকি মারে , আর তার চোখে ঘরের মধ্যে থাকা অর্ধ নগ্ন জয়নাবকে চোখে পড়ে। মুহাম্মদ তখন বিড় বিড় করে এই বলতে বলতে চলে আসে - আল্লাহ কার মনে যে কি পরিবর্তন করে দেয় ! বুদ্ধিমতী জয়নাব যা বোঝার বুঝে ফেলে। টের পায় মুহাম্মদের হৃদয় তার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। পরে জায়দ বাড়ীতে আসা মাত্রই মুহাম্মদের আসার খবর সহ সে যা বলতে বলতে চলে যাচ্ছিল সেই খবরও জয়নাব জায়দকে জানায়। জায়দও বুঝে ফেলে , তার পালক পিতা মুহাম্মদ , তারই স্ত্রী বা পুত্রবধুর প্রেমে পড়েছে। সেটা বোঝার সাথে সাথেই জায়দ কাল বিলম্ব না করে মুহাম্মদের কাছে ছুটে যায় , মুহাম্মদকে বলে - সে এখনই জয়নাবকে তালাক দিয়ে দেবে যাতে করে মুহাম্মদ জয়নাবকে বিয়ে করতে পারে।
এর পরের ঘটনা ইতিহাস। তখন যা ঘটে তা কোরান থেকেই জানা যাক --
সুরা আহযাব- ৩৩:৪:আল্লাহ কোন মানুষের মধ্যে দুটি হৃদয় স্থাপন করেননি। তোমাদের স্ত্রীগণ যাদের সাথে তোমরা যিহার কর, তাদেরকে তোমাদের জননী করেননি এবং তোমাদের পোষ্যপুত্রদেরকে তোমাদের পুত্র করেননি। এগুলো তোমাদের মুখের কথা মাত্র। আল্লাহ ন্যায় কথা বলেন এবং পথ প্রদর্শন করেন।
যখনই আল্লাহ জানতে পারল , মুহাম্মদ তার পুত্রবধুর প্রেমে পড়েছে , তখনই সে আয়াত পাঠিয়ে জানিয়ে দিল - পালক পুত্র কোন পুত্র নয়। এরপরের আয়াত পড়া যাক --
সুরা আহযাব-৩৩: ৫: তোমরা তাদেরকে তাদের পিতৃপরিচয়ে ডাক। এটাই আল্লাহর কাছে ন্যায়সঙ্গত। যদি তোমরা তাদের পিতৃ-পরিচয় না জান, তবে তারা তোমাদের ধর্মীয় ভাই ও বন্ধুরূপে গণ্য হবে। এ ব্যাপারে তোমাদের কোন বিচ্যুতি হলে তাতে তোমাদের কোন গোনাহ নেই, তবে ইচ্ছাকৃত হলে ভিন্ন কথা। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
জায়দ যখন মুহাম্মদের ঔরসজাত পুত্র নয় , তখন আল্লাহ বলছে , জায়দ হলো আসলে মুহাম্মদের ধর্ম ভাই বা বন্ধু। আর এর অর্থও খুব পরিস্কার। তা হলো - জায়দ যখন মুহাম্মদের কাছে পূর্বে গিয়ে প্রস্তাব দিয়েছিল , সে জয়নাবকে তালাক দিবে , তখন মুহাম্মদ রাজী হয় নি, কারন মুহাম্মদ ও সমাজ সবাই জানত জায়দ মুহাম্মদের পুত্র ও জয়নাব তার পুত্রবধু। এবার কোরানের আয়াত নাজিল করে মুহাম্মদ বলল - জায়দ তার পুত্র নয় ,বরং ধর্মের ভাই বা বন্ধু। যার অর্থ হলো - এখন জায়দ তার স্ত্রীকে তালাক দিলে তাকে বিয়ে করতে মুহাম্মদের আর কোন অসুবিধা নেই। অত:পর জায়দ জয়নাবকে তালাক দিল , আর মুহাম্মদের সাথে ধুম ধামের সাথে তার বিয়ে হয়ে গেল।
যারা ইসলাম প্রচার কারী, তাদের যুক্তি হলো - পালক পুত্র যে আসল পুত্র না , সেটা প্রমান করার জন্যেই এই বিয়ের দরকার ছিল। এ ছাড়া তারা আরও বলে পালক পুত্র বলে কিছু থাকলে , সম্পদ বন্টনের জন্যে সমস্যা এড়ানোর জন্যেই পালক পুত্রের এই প্রথা যাকে তারা বর্তমানে অত্যন্ত একটা খারাপ , বাজে ও অমানবিক প্রথা হিসাবে গন্য করে , সেটা রদ করার জন্যেই মুহাম্মদ এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছিল।
আমাদের যুক্তি হলো - ইসলাম প্রচার কারীদের দাবী যদি সঠিক হয় , তাহলে মুহাম্মদ জয়নাবের প্রেমে পড়ার আগেই কেন এই বিধান জারি করে নাই ?প্রেক্ষাপট , শানে নুযুল ইত্যাদি পরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে , মুহাম্মদ আগে জয়নাবের প্রেমে পড়েছিল , তারপরই সে উক্ত আয়াত সমূহ নাজিল করে। মুহাম্মদে যে আগেই প্রেমে পড়েছিল , সেটা বোঝা যায় নিচের আয়াতে -
সুরা আহযাব- ৩৩: ৩৭: আল্লাহ যাকে অনুগ্রহ করেছেন; আপনিও যাকে অনুগ্রহ করেছেন; তাকে যখন আপনি বলেছিলেন, তোমার স্ত্রীকে তোমার কাছেই থাকতে দাও এবং আল্লাহকে ভয় কর। আপনি অন্তরে এমন বিষয় গোপন করছিলেন, যা আল্লাহ পাক প্রকাশ করে দেবেন আপনি লোকনিন্দার ভয় করেছিলেন অথচ আল্লাহকেই অধিক ভয় করা উচিত। অতঃপর যায়েদ যখন যয়নবের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করল, তখন আমি তাকে আপনার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করলাম যাতে মুমিনদের পোষ্যপুত্ররা তাদের স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলে সেসব স্ত্রীকে বিবাহ করার ব্যাপারে মুমিনদের কোন অসুবিধা না থাকে। আল্লাহর নির্দেশ কার্যে পরিণত হয়েই থাকে।
উক্ত আয়াতে বলছে ---" আপনি অন্তরে এমন বিষয় গোপন করছিলেন, যা আল্লাহ পাক প্রকাশ করে দেবেন আপনি লোকনিন্দার ভয় করেছিলেন "- কি সেই গোপন বিষয় ? সেই গোপন বিষয়টা যে কি সেটা বিখ্যাত তাফসিরকার জালাজালাইন বলেছেন যেমন - "‘Retain your wife for yourself and fear God’ before divorcing her. But you had hidden in your heart what God was to disclose what He was to manifest of your love for her "
(সূত্র: https://altafsir.com/Tafasir.asp…)
জালালাইন পরিস্কার ভাবেই বলছেন He was to manifest of your love for her । আর কোন প্রমান লাগবে ?
প্রশ্ন হলো - এই ধরনের একটা অনৈতিক প্রেমে পড়ার আগে কি আল্লাহর মাথায় এই সম্পদ বন্টনের বিষয়টা আসে নাই ?
আরও একটা যুক্তি হলো - ধরা যাক , জায়দ মুহাম্মদের পালক পুত্র না। সে ক্ষেত্রে জয়নাব হবে সম্পূর্নই মুহাম্মদের কাছে এক বিবাহিতা বেগানা নারী। মুহাম্মদ তাহলে কিভাবে পরস্ত্রীর প্রেমে পড়তে পারে ? মুহাম্মদ তো দাবী করেছিল , সে হলো পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট আদর্শ মানুষ , যাকে কেয়ামত পর্যন্ত সকল মুসলমানরাই অনুসরন করবে। তাহলে এখন কি মুসলমানরা মুহাম্মদের দেখানো পথে সবাই পরস্ত্রীর সাথে প্রেম শুরু করে দেবে ? যদি সেটা শুরু করে , তাহলে মুসলিম সমাজের অবস্থাটা কি দাড়াবে ?
পুত্র বধু বা পরস্ত্রীর সাথে মুহাম্মদের এই প্রেম ছিল বড়ই জটিল ও কঠিন প্রেম। সেই কারনেই খোদ আল্লাহকে সরাসরি হস্তক্ষেপ করে , এই প্রেমের মিলন ঘটাতে হয়। সেই জন্যে জয়নাব প্রায়ই গর্ব করে বলত - দুনিয়াতে একমাত্র তার বিবাহের ঘটক ছিল আল্লাহ। সুতরাং এই প্রেক্ষিতে বলা যায় , মুহাম্মদ ও জয়নাবের প্রেম হলো দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ট প্রেম কাহিনী।

মুমিনিও যুক্তি খন্ডন (পর্ব-১,২,৩,৪,৫,৬)

মুমিনিও যুক্তি খন্ডন (পর্ব-১)
(::)আল্লাহ যদি আমাদের ভাগ্য আগে থেকেই পূর্বনির্ধারণ করে থাকবেন,, তাহলে কেনো আমরা জান্নাত বা জাহান্নামে যাবো?
এই প্রশ্নের উত্তর মুমিন সমাজ কুটিলতার সহিত অনেকটা এরকম ভাবে দেয়,,
আল্লাহ জানেন বান্দা পৃথিবীতে কি করবে,, এবং সেভাবে তিনি সেই বান্দার তকদির লেখেন। কিন্তু তারমানে এই না যে আল্লাহ তাকে দিয়ে খারাপ কোন কাজ করায়,, আল্লাহ সর্বদ্রষ্টা হওয়ার দরুন সে সব কিছু আগের থেকে জানেন এবং তাকদিরে লিখে দেন,, কিন্তু কোন ভাবেই আমরা যা করি তা আল্লাহ আমাদের দিয়ে করায় না,, বরং এগুলা আমরাই করি,,,।
এই হোচ্ছে মুমিনিও যুক্তি।
কিন্তু কোরান বলছে অন্য কথা,,,

""আল্লাহ তোমাদেরকে এবং তোমাদের কর্মসমূহকেও সৃষ্টি করেছেন"" (সূরা আস্তসাফ্‌ফাতঃ ৯৬)
হে মুমিন সমাজ,, একটু লক্ষ কইরা দেখেন আল্লাহ শুধু আমাদের ভাগ্য বা তাকদির'ই লিখে রাখেন নাই বরং আমাদের কর্মসসমূহ'ও সৃষ্টি করেছে
যিনি আমাদের কর্মসমূহ সৃষ্টি করে তিনি আল্লাহ তাই সেই কর্মের দোষ-গুনে কেনো আমরা জান্নাত জাহান্নামে যাবো?

(পর্ব-২)
(::) সৃষ্টিকর্তাকে কে সৃষ্টি করেছেন?
এই প্রশ্নটির উত্তর দিতে গিয়ে ৯৫% মুমিন জড়ায় প্যাচায় ফেলে।। কিছু মুমিন আবার #প্যারাডক্সিকাল_সাজিদ,, আরিফ আজাদ ভাইয়ের বই পইড়া,, বিজ্ঞান বুঝুক আর না বুঝুক কুটিলতার সহিত বিজ্ঞানের ভূল ব্যাখ্যা দিয়ে এটি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে,,, তাদের ব্যাখ্যা অনেকটা এ রকম,,,,,
বাই ডেফিনিশন x এর সৃষ্টিকর্তাকে যদি y ধরি। তাহলে এ প্রশ্ন চলে আসে y এর সৃষ্টি কর্তা কে। আবার যদি y এর সৃষ্টি কর্তাকে z ধরি তাহলে প্রশ্ন চলে আসে z এর সৃষ্টি কর্তা কে? যেহেতু এভাবে সৃষ্টিকর্তা খুজতে গেলে অসীমে পৌছেলেও সমাধানে পৌছানো যাবে না, তাই এভাবে সৃষ্টিকর্তাকে খোজা বোকামি,,,,,
আহা কি সুন্দর ডেফিনিশন!!! অংক তো আর আপনাদের নিয়মে তৈরি হবে না,, বা কারোর ব্যাক্তিগত সার্থে তৈরি হবে না,, এটা তার নিজস্ব বৈশিষ্ট ও তাৎপর্য নিয়ে এগিয়ে যাবে,,,

এখন বলি ভায়েরা,, আপনি যদি আপনার দাদার দাদার দাদার নাম না জানেন,, তাহলে কি আপনি অপানার বাবাকে অস্বীকার করবেন?
এখন এই ডেফিনিশনটা এখানে একটু খাটিয়ে দেখেন,,আসল বাবার খোজে,, বাবার বাবা x তার বাবা z তার তার বাবা a। এখন এই ভাবে অংক করলে শুধুই চলতে থাকবে কোন সমাধানে পোছানো যাবে না,, এই ভাইবা যদি আপনি মেনেই নেন যে বাবার বাবা নাই,, তাহলে কেমন কথা হলো?
আরিফ_আজাদ ভাই বলেছেন,,,
সৃষ্টির একটা নির্দিষ্ট শুরু আছে,,,,,,,,,(১)
থার্মোডাইনামিক্সের তাপীও বিবর্তন ও এডুইন হাবলের নক্ষত্র দূরে সরে যাওয়া তত্ত্ব থেকে বোঝা যায় মহাবিশ্বের একসময় সৃষ্টি হয়েছিলো।
সুতরাং যেহেতু শুরু আছে,,,তাই
মহাবিশ্ব একটি সৃষ্টি,,,,,,,(২)
(১) নং ও (২) নং সমীকরন ম্যাচ করে,,, আমি ভাই আপনাদের মতের সাথে সহমত,,,,
কিন্তু এখানে বলছেন,, যেহেতু সৃষ্টিকর্তার কোন নির্দিষ্ট শুরু নেই তিনি আদি অনন্ত,,তাই তিনি সৃষ্টি হননি,,,
হোয়াট এ জোক!
যিনি এখনো শুরুই হননি,, যিনি এখনো সৃষ্টি'ই হয়নি তার অস্তিত্য কিভাবে থাকে?,,,এটা আমার মাথায় ঢোকে না।
সৃষ্টিকর্তা এখনো সৃষ্টি'ই হয়নি কিভাবে তার অস্তিত্য থাকে?
একটু উদাহরন দেই,,, সমীকরন রুপে
স্পাইডারম্যান রুপে কেউ কখনো সৃষ্টি হয় নি তাই বাস্তবে এমন কেউ নাই,,,(১)
ব্যাটম্যান রুপে কেউ কখনো সৃষ্টি হয় নি তাই বাস্তবে এমন কেউ নাই,,,(২)
তাগ জ্বীন রুপে কেউ কখনো সৃষ্টি হয় নি তাই বাস্তবে এমন কেউ নাই,,,(৩)
আল্লাহ রুপে কেউ কখনো সৃষ্টি হয় নি তাই বাস্তবে এমন কেউ নাই,,,(৪)
সমীকরন চারটি'ই পুরাপুরি মিলে যাচ্ছে কোন শর্ত ছাড়া,,, তাই এ সিদ্ধান্তে আসা যায় যে,, বাস্তবে সৃষ্টিকর্তা বলে কেউ নাই।।
আরিফ আজাদ ভাই বলেছেন,,,,
যিনি টাইম স্পেস মেটার তৈরি করেছেন,, তাকে কিভাবে এই বাটকারায় মাপা সম্ভব?
এখন ভাই আপনাকে বলবো,, যেহেতু তিনি টাইম স্পেস মেটার তৈরি করেছেন,,, সেহেতু এগুলার একটা শুরু আছে ফলে এগুলা একসময় ছিলো না,,,
তাহলে একটু হিসাব করে দেখুন,, যার যন্য একসময় একবিন্দু সময়, একটু যায়গা ও একটু ভর বা শক্তি ছিলো না সে কিভাবে তাহলে সে সময় অস্তিয়মান থাকে,,,?!!
অর্থাৎ স্রষ্টা বলতে কিছুই নেই তাই তাকে lows of causality দিয়ে মাপা সম্ভব নয়!

(পর্ব-৩)
(::)স্রষ্টা কি এমন কিছু তৈরি করতে পারবে? যা সে নিজেই তুলতে পারবে না।
এ ধরনের প্রশ্ন করলে সাধারণ মুমিনেরা উত্তর দিতে পারে না,, নাউজুবিল্লাহ, কাফের বলে পালিয়ে যায়।
কিন্তু, অতিকুটিল গোছের কিছু মুমিন, বিশেষ করে যারা #আরিফ_আজাদের (#প্যারাডক্সিলা_সাজিদ) বইটি পড়েছে তারা সুনিপুন ভাবে #কোরানের মিথ্যাচার করে এই প্রশ্নের উত্তর ন্যাম-ছ্যাম ভাবে দিয়ে চলে যায়।

তাদের যুক্তি বা আরিফ আজাদের যুক্তি অনেকটা এরকম,,,
আমরা জানি স্রষ্টা আসীম,, (প্যারাডক্সিকাল সাজিদ পৃষ্ঠা নং-১৫৬,১৫৭)
এখন,, জগতে যাই কিছু আমরা কল্পনা করি সবি সসীম,, একজন অসীম সত্ত্বা সসীম কিছু তুলতে পারবে কিনা,, এ ধরনের প্রশ্ন করা বোকামি। আরিফ আজাদ বলেছেন এ ধরনের প্রশ্ন কোন মূল্য নাই,,,
নীল রঙের স্বাদ কেমন?
বা ব্যাথা দেখতে কেমন?
এসব প্রশ্ন যেমন কোন সঠিক অর্থ বহন করে না। ঠিক তেমনি অসীম বা নীরাকার কোন সত্ত্বার সম্পর্কে এ ধরনের প্রশ্নও যৌক্তিক না।
#আরিফ_আজাদ ভাই আমি আপনার সাথে একমত। অসীম বা নিরাকার কোন কিছুর ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রশ্ন করা বোকামি।।
কিন্তু ভাই কোরান তো আল্লাহকে অসীম বা নিরাকার বলেনি
আল্লাহর ব্যাপারে সূরা ইখলাস বলছে,,
১/তিনি এক এবং অদ্বিতীয়।
২/তিনি কারোর মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তার মুখাপেক্ষী।
৩/তিনি কাউকে জন্ম দেননি, তাকেও কেউ জন্ম দেয়নি।
৪/তার সমকক্ষ কেউ নেই।।
কোরানের কোন একটা আয়াত থেকেও বোঝা যায় না যে, আল্লাহর আকার,, নিরাকার বা অসীম।
এ ব্যাপারে আপনাদের জাকির নায়েকও বলেছেন,, সৃষ্টিকর্তা আসীম নন তার একটা আকার আছে,, তবে সেটা কেমন তা আমরা জানিনা,, আল্লাহ মালুম,,,,,,
আল্লাহ যে অসীম বা নিরাকার না,,
এ ব্যাপারে আমি কিছু রেফারেন্স দিচ্ছি,,,
আল্লাহ প্রতি রাতে প্রথম আসমানে আসেন, (ইবনে কুদামা, আব্দুল্লাহ ইবনে আহমদ পৃ-২২)
///আল্লাহ যেহেতু প্রথম আসমানে আসেন তাহলে নিশ্চই তার একটা আকার আছে,,,
আল্লাহ মুসার সাথে সুষ্পষ্ট ভাবে কথা বলেছে (নিসা-১৬৪,, আরাফ-১৪৩)
আল্লাহ যেহেতু কথা বলেছে এ থেকে বোঝা যায় আল্লাহর মুখ আছে,, অর্থাৎ তিনি অসীম বা নিরাকার নন।
আমি তোমার প্রতি ভালোবাসা ঢেলে দিয়েছিলাম যাতে তুমি আমার চোখের সামনে প্রতিপালিত হও (ত্বা-হা-৩৯)
///এ থেকে বোঝা যায় আল্লাহর চোখ আছে কিন্তু সে চোক কেমন তা আমরা জানি না,, অর্থাৎ তিনি নিরাকার নন।
সেদিন পায়ের গোছা উন্মুক্ত করা হবে এবং তাদের ডাকা হবে সেজদা করার জন্য কিন্তু তারা তা কোরতে সক্ষম হবে না (আল ক্বালাম-৪২)
///আল্লাহর পা আছে অর্থাৎ তিনি নিরাকার নন।
বরং তার দুহাত প্রসারিত (মায়িদাহ-৬৪)
কিয়ামতের দিন আকাস থাকবে মুষ্টিতে আকাস সমুহ ডান হাতে ভাজ করা থাকবে (যুমার-৬৭)
/// অর্থাৎ আল্লহর হাত আছে,, তিনি নিরাকার নন তিনি অসীম নন তিনি সসীম তার আকার আছে,, কেমন তা আমরা জানি না।।
#আরিফ_আজাদ ভাই সৃষ্টিকর্তা অসীম বা নিরাকার এই বেজের উপর ভিত্তি করে যে খোড়া যুক্তি উপস্থাপন করেছে তা টোটাল একটা বুঝরুকি,, কেননা কোরান'ই বলছে আল্লা সসীম তার আকার আছে
এখন তাহলে প্রশ্নটি আবার করি,,
আল্লাহ কি এমন কিছু তৈরি করতে পারবে যা সে নিজেই তুলতে পারবে না,,,
আল্লাহ যেহেতু সসীম এবং যা তৈরি করবে তাও সসীম,, তাহলে প্রশ্নটি এখন ভ্যালিড
এখানে উত্তর হ্যা দিলে আল্লাহ উঁচু করতে পারবেনা,, আবার উত্তর না দিলে আল্লাহ বানাতে পারবেন না।। তাই আল্লাহ সর্বশক্তিমান না

(পর্ব-৪)
(::)ইসলাম যদি মানবতার ধর্ম হয়ে থাকে তাহলে কাফের মুশরিকদের যেখানে পাবে সেখানে হত্যা করার নির্দেশ কেনো দেওয়া হলো?
এ ধরনের প্রশ্ন করলে কুটিল মুমিন শ্রেনী কোরানের কিছু তাফসির বিকৃত করে সরাসরি উত্তর দেয় যে,, ইসলাম কাউকে হত্যার নির্দেশ দেয় নি বরং আত্মরক্ষার জন্য হত্যা বৈধ করেছে,,,
যেমন,,,
কাফের মুসরিকরা যদি প্রথমে আগ বাড়িয়ে আক্রমন করতে আসে সেখানে তাদের প্রতিহত করার জন্য হত্যা করা যাবে,,,,,
#প্যারাডক্সিকাল_সাজিদ বইয়ের রচিয়তা আরিফ আজাদ ভাই'ও একই কথা বলেছেন,,,, ইসলাম কখনোই আগ বাড়িয়ে কাউকে হত্যা করার কথা বলে নি,,,
তবে যুদ্ধের ময়দানে,, হত্যা করা যায়েজ কেননা,,
সেখানে হত্যা না করলে নিজেদের পরাজয় স্বীকার করে নিতে হয়,,, তাই এটা কোন অপরাধ না,, যেমন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাঙালীদের জন্য বলেছিলেন,,, ""তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে ঝাপিয়ে পড়"" ""আমরা ভাতে মারবো, আমরা পানিতে মারবো"" ইত্যাদি,,, এটা যদিও মুজিবরের হত্যার ডাক,, তবুও এটা কোন অপরাধ নয়।।।।
#আরিফ_আজাদ ভাইকে বলবো,, জ্বি ভাই আমি আপনার সাথে একমত আত্মরক্ষার জন্য হত্যা করা বৈধ হলেও হতে পারে,,,যদিও এখানে আপনার সেই সত্রু আপনার প্রানের জন্য কতটুকু হুমকি সরুপ তা বোঝাও গুরুত্বপূর্ণ,,,,,
এবার আসি ইসলামের কথায়,,,
ইসলামে কাফের মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনার ক্ষেত্রে দুই ধরনের (নমনীয়তা, কঠোরতা) আয়াত দেখতে পাওয়া যায়,,, যার একটার সাথে আরেকটার আদর্শিক কোন মিল নাই
নমনীয়তাঃ মুহাম্মদের নবুয়াত প্রাপ্তির প্রথম দিকের নাযিলকৃত (তৈরিকৃত) আয়াতে কাফের মুশরিকদের সাথে যুদ্ধের ব্যাপারে নমনীয়তা দেখানে হয়,,,
কেননা এসময়ে মুহাম্মদের সমর্থক সংখ্যা কম ছিলো,, সরাসরি আগ বাড়িয়ে যুদ্ধে যাওয়ার মত শক্তিও তখন মুহাম্মদের ছিলো না।।
তাই মুহাম্মদ এসময়ে সব সময় কাফির মুশরিকদের সাথে ভালো ব্যাবহার করতো ও সহীহী ভাবে দাওয়াত দিতো,, এ সময়ে নাজিলকৃত আয়তগুলোতে আত্মরক্ষার জন্য যুদ্ধ করার কথা বলা হয়,,, অসংখ্য আয়াতের ভিতর এ ধরনের একটা আয়াতের উদাহরন দিচ্ছি,,,
"তোমাদের বিরুদ্ধে যারা যুদ্ধ করে, তোমরাও তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর, তবে বাড়াবাড়ি করনো" (বাকারাহ-১৯০)
এ ব্যাপারে তাফসির বলে,,,
এই আয়াতে প্রথমবার সেই লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিল। আর 'বাড়াবাড়ি করো না'র অর্থ হল, শত্রুর আঙ্গিক বিকৃতি ঘটায়ো না, মহিলা, শিশু এবং এমন বৃদ্ধকে হত্যা করো না, যে যুদ্ধে কোন প্রকার অংশগ্রহণ করেনি। অনুরূপ গাছ-পালা বা ফসলাদি জ্বালিয়ে দেওয়া এবং কোন অভীষ্ট লাভ ছাড়াই পশু-হত্যা করা ইত্যাদিও বাড়াবাড়ি বলে গণ্য হবে, যা থেকে বিরত থাকতে হবে। (ইবনে কাসীর)
🔔🔔কঠরোতাঃ ধিরে-ধিরে যখম মুহাম্মদের অনুসারী বাড়তে বাড়তে একটা মোটামুটি পর্যায়ে গেলো তখন মুহাম্মদ সরাসরি কাফির মুশরিকদের সাথে যুদ্ধ করার ঘোষনা দেয়,,,
এক্ষেত্রে সে কাফের মুশরিকদের শর্ত বেধে দিত যে দু-মাস ছয়-মাস এর ভেতর যদি তারা ইসলাম না গ্রহন করে তাহলে তাদের সাথে যুদ্ধ ও তাদের হত্যা করা হবে যেমন,,,,
""অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদের যেখানে পাবে সেখানে হত্যা কর, পাকড়াও কর, অবরোধ কর, ঘাটিতে ওৎ পেতে থাকো, কিন্তু তারা যদি তওবা করে, সালাত কায়েম করে যাকাত দেয় তবে তাদের ছেড়ে দাও""(ত্বোওবা-৫)
এছাড়াও কোরান ও হাদিসে অসংখ্য যায়গায় কাফির মুশরিকদের সরাসরি হত্যা করার কথা বলা হয়েছে আমি তার অল্পকিছু উদাহরন দিচ্ছি,,,
হাদিসে আসছে,,
""আনাস ইবনে মালিক হতে বর্নিত,, তিনি বলেন,, রাসূল (সঃ) আমাকে বলেছেন ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের সাথে যুদ্ধ করতে হবে যতক্ষন না তারা স্বীকার করছে "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলাল্লাহ" (সহীহ বুখারী, অধ্যায়-৮, হাদিস নং-৩৯২)
এই হাদিসটি থেকে বোঝা যায় ইসলাম কি নৃসংস ভাবে যুদ্ধ করার আহব্বান জনাইছে বিধর্মিদের বিরুদ্ধে।
অনেকেই এ পর্যায়ে এসে আবার বলবেন যে হত্যার বদলে হত্যা করার নির্দেশ আছে ইসলামে,,
এখানে একটু দেখেন,,
""কুফর, শিরক হত্যা অপেক্ষা গুরুতর"" (বাকারহ-১৯১)
অন্যান্য ধর্মালবাম্বিরা নিঃসন্দেহে মুসলিমদের কাছে কাফের মুসরিক,, তাই এই আয়াতের মাধ্যমে তাদের সাথে শুধু শুধু যুদ্ধ করা যায়েজ
সমকামীতার সাস্থি নাকি মৃত্যুদন্ড
চোরের সাস্থি নাকি হাত কাটা
ব্যাভিচারির সাস্থি ১০০ বেত্রাঘাত
মদ্যপায়ীর সাস্থি বেত্রাঘাত
এখন আপনারাই বলেন,, আপরাধির সাস্তি কি এভাবে রেডিমেট ভাবে নির্নয় করা যায়?
অপরাধির সিচুয়েশন বুঝে, কোন প্রেক্ষাপটে সে অপরাধটি করেছে,, সেটা বোঝাও জরুরি,,,,
উদাহরন দিলে পরিষ্কার হবে,,
যেমন একজন মদ্যপায়ী কে বেত্রাঘাত করলেন,, পরে জানা গেলো সে তার শারীরিক প্রয়োজনে মদ্যপান করেছে,,, যেমন শীত প্রধান দেশের মানুষ শারীরিক প্রয়োজনে এলকোহল খায়,,,বা ঔষধের কথা চিন্তা করেন,,, ডেক্সপর্টেন কাসির গুরুত্বপূর্ন একটা ঔষুধ,, তবে কেউ কেউ এটা নেষা করার জন্য ব্যাবহার করে,,,
এখন যে যে ডেক্সপোর্টেন খায় সবাইকে আপনি কি এক কাতারে ফেলাতে পারেন?

(পর্ব-৫)
কোরান নাজীল হতে ২৩ বছর সময় লাগলো কেনো?
মুমিন শ্রেনী একবাক্যে সমস্যরে চিল্লায় বলবে আরে মুর্খ কোরান নাজিল হয়েছে নবীজির জীবনের বাস্তবতা দিয়ে,, নবীজীর যখন যে আয়াত দরকার পড়েছে, তখন সেভাবে আয়াত নাজীল হয়েছে আল্লহর তরফ থেকে,,,,,
যেমন সুরা বাকারায় জিহাদ সংক্রান্ত আয়াত সুরা ত্বাওবার জিহাদ সংক্রান্ত আয়াত থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।
সূরা আল বাকারা (البقرة), আয়াত: ১৯০
وَقَٰتِلُوا۟ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ ٱلَّذِينَ يُقَٰتِلُونَكُمْ وَلَا تَعْتَدُوٓا۟ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ ٱلْمُعْتَدِينَ
উচ্চারণঃ ওয়া কা-তিলূ ফী ছাবীলিল্লা-হিল্লাযীনা ইউকা-তিলূনাকুম ওয়ালা-তা‘তাদূ ইন্নাল্লা-হা লা-ইউহিব্বুল মু‘তাদীন।
অর্থঃ আর লড়াই কর আল্লাহর ওয়াস্তে তাদের সাথে, যারা লড়াই করে তোমাদের সাথে। অবশ্য কারো প্রতি বাড়াবাড়ি করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন ন।
ইহুদি নাসারাদের সাথে যুদ্ধের ব্যাপারে এক ধরনের নমনীতা দেখানো হয়েছে।।
সূরা আত-তাওবাহ্‌ (التوبة), আয়াত: ৫
فَإِذَا ٱنسَلَخَ ٱلْأَشْهُرُ ٱلْحُرُمُ فَٱقْتُلُوا۟ ٱلْمُشْرِكِينَ حَيْثُ وَجَدتُّمُوهُمْ وَخُذُوهُمْ وَٱحْصُرُوهُمْ وَٱقْعُدُوا۟ لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍ فَإِن تَابُوا۟ وَأَقَامُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُا۟ ٱلزَّكَوٰةَ فَخَلُّوا۟ سَبِيلَهُمْ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
উচ্চারণঃ ফাইযানছালাখাল আশহুরুল হুরুমুফাকতুলুল মুশরিকীনা হাইছুওয়াজাত্তুমূহুম ওয়া খুযূহুম ওয়াহসুরূহুম ওয়াক‘উদূলাহুম কুল্লা মারসাদিন ফাইন তা-বূওয়া আকা-মুসসলা-তা ওয়া আ-তাউঝঝাকাতা ফাখাললূছাবীলাহুম ইন্নাল্লা-হা গাফুরুর রাহীম।
অর্থঃ অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদের হত্যা কর যেখানে তাদের পাও, তাদের বন্দী কর এবং অবরোধ কর। আর প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের সন্ধানে ওঁৎ পেতে বসে থাক। কিন্তু যদি তারা তওবা করে, নামায কায়েম করে, যাকাত আদায় করে, তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
এখানেই আবার তাদের প্রতি কঠরতা দেখানো হয়েছে,,,,
অর্থাৎ তাদের ভাষ্যমতে আল্লাহ সঠিক সময়ে সঠিক আয়াত নাজিল করেছে।।
ভাই আমি আপনাদের সাথে একমত,, যেহেতু সমাজ পরিবর্তনশীল তাই যে কোন সময়, সময়ের প্রয়োজনে সমাজের আইন কানুন গুলা পরিবর্তন করা প্রয়োজন হয়ে পড়ে,,,,,,
এর বাস্তব উদাহর কোরান,,,,যার সত্যতা প্রমান হয় জিহাদ সংক্রান্ত আয়াত গুলা দেখলে,,,
এখন আপনারাই বলেন? ২৩ বছরেই যদি কোরানের এতো আইন পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে তাহলে ১৪০০ বছরের আগের সেই আইন পৃথিবীতে এখন কিভাবে চলে?
যেহেতু সময়ের প্রয়োজনে আইন পরিবর্তিত হয়,,
উদাহরন দেই,,,
এক সময়ে আরবে চোরের উপদ্রব বেশি ছিলো,, যার কারনে তখন চোরের শাস্থি হাত কেটে ফেলা করা হত,,, কিন্তু এই আইন এখন চলে না।।
কারনঃ১/ চুরির জন্য হাতকাটা রায় প্রাপ্ত লোকটি আত্মহতাসায় ভুগে পরবর্তিতে এর থকেও খারাপ কোন কাজে লিপ্ত হতে পারে যেমন আত্মঘাতী বোমা হামলা।
২/রাষ্ট্রিয় প্রয়োজনে কোন কোন ক্ষেত্রে চুরি করার প্রয়োজন পড়ে,, এক্ষেত্রে যে রাষ্ট্রের প্রয়োজনে চুরি করবে রাষ্ট্রের আইন কি তারই হাত কাটবে
৩/ভালো কোন লোক অতিদারিদ্রের মাথায় ভুল বসত যদি চুরি করেও ফেলে তবে এ ক্ষত্রেও শাস্তি হিসেবে হাত কাটা অমানবিক,।
ইসলামে জন্ম নিয়ন্ত্রন করা নিষেদ,,,
একটা সময় এই আইন হয়তো আরবে সমাজের কল্যানে কার্যকর ছিলো,,
কিন্তু এই আইন বর্তমানে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে কতটুকু যৌক্তিক,,,?
১/ জন্ম নিয়ন্ত্রন না করলে জন্মহার বৃদ্ধি পায় যার কারনে দেশের নানামুখি সমস্যা সৃষ্টি হয়।
যেমন, খাদ্য সংকট, বস্ত্রের অভাব, চিকিৎসা অর্থাৎ সকল মৌলিক চাহিদা হতেই জনগন ও শিশু বঞ্চিত হয়,,,
এখন এক্ষেত্রে কিছু মুমিন বলবে,,
উৎপাদিত সন্তানকে যদি সঠিক ভাবে মানুষ করে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বানানো যায় তাহলে এই জনগন তো কল্যানকর'ই।।
এখন ভাই আপনি বলেন,, সচেতন নাগরিক কয়জন আছে যে তাদের ছেলেমেয়েদের প্রত্যেকটাকেই মানুষ করতে পারে?
হয়তো কিছু মানুষ তার পনেরো বিশটা ছেলেমেয়েকেই আদর্শ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারবে,, তবে ম্যাক্সিমাম পারবে না।
তাহলে সবার জন্য ইসলামের এই একই আইন কিভাবে চলে?

(পর্ব-৬)
(পুরা পোষ্ট না পড়ে কেউ কমেন্ট করবেন না)
ভবিষ্যতে কি হবে, আল্লাহ কি তা জানেন?
এ প্রশ্নের উত্তরে মুমিন সমাজ একবাক্যে বলবে,,,, এতো আল্লাহর কাছে সহজ কাজ, কেননা পবিত্র কোরানে আল্লাহ নিজেই বলেছে ভবিষ্যতে কি হবে তা সে জানে,,,,,
সূরা নামাল, আয়াতঃ-৬৫
قُل لَّا يَعْلَمُ مَن فِى السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ الْغَيْبَ إِلَّا اللَّهُ ۚ وَمَا يَشْعُرُونَ أَيَّانَ يُبْعَثُونَ
বলুন, ‘আল্লাহ্‌ ব্যতিত আসমান ও যমীনে কেউই গায়েব জানে না, এবং তারা উপলব্ধিও করেনা কখন উত্থিত হবে
আল্লাহ হলো“আলেমূল গায়েব” অদৃশ্য জ্ঞানী উপাধি একমাত্র আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীনের সাথে সংশ্লিষ্ট।
আল্লাহ্‌ বলেনঃ
"আর তাঁর কাছেই আছে অদৃশ্যের চাবিগুলো, সেগুলো তিনি ছাড়া আর কেউ জানে না।” (সূরা আল-আন‘আম ৫৯)
তিনি আরও বলেনঃ “একমাত্র আল্লাহ্‌ই রাখেন কিয়ামতের জ্ঞান। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন। তিনিই জানেন মাতৃগর্ভে কি (লালিত) হচ্ছে, কোন প্ৰাণী জানে না আগামীকাল সে কি উপার্জন করবে এবং কোন প্রাণী জানে না কোন ভূমিতে তার মৃত্যু হবে।” (সূরা লুকমানঃ ৩৪)
তিনি আরও বলেনঃ “তিনি জানেন যা কিছু সৃষ্টির সামনে আছে এবং যা কিছু আছে তাদের অগোচরে। আর তাঁর জ্ঞানের কিছুমাত্র অংশও তারা আয়ত্ব করতে পারে না, তবে তিনি যে জিনিসটির জ্ঞান তাদেরকে দিতে চান, দেন। (সূরা আল বাকারাহঃ ২৫৫)
এ ব্যাপারে আরো দেখুনঃ সূরা আল-আন‘আমঃ ৫০, সূরা আল-আ‘রাফঃ ১৮৭, সূরা আত-তাওবাহঃ ১০১, সূরা হূদঃ ৩১, সূরা আল- আহযাবঃ ৬৩, সূরা আল-আহকাফঃ ৯, সূরা আত-তাহরীমঃ ৩, এবং সূরা জিনঃ ২৬।।
অর্থাৎ কোরানে আল্লাহ বলেছে বলেই এটা পরম সত্য,, এ ধরনের খোড়া যুক্তি মেরে মুমিনরা দাত ক্যালায়।।
এখন যদি প্রশ্ন করা হয়,,,
কোরান বলেছে বলেই কি সত্য হবে ?
এর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে?
এ প্রশ্নের উত্তরে প্রথমেই মুমিনরা বলবে, মহাবিশ্বের ৪% বিজ্ঞানিরা জানে যা খুবই সামান্য অতএব এই সীমিত জ্ঞান দিয়ে আল্লাহর ক্ষমতা ব্যাখ্যা করা যায় না।।
হা হা হা, মুমিন ভায়েরা শোনেন বিজ্ঞান ৪% জানুক আর ২% জানুক। যা যানে সেটা পরিক্ষালব্দ বাস্তব প্রমানিত সমীকরণ ভিত্তিক সত্য।।
বিজ্ঞান যা জানেনা তা নিয়ে বিজ্ঞান গবেষনা করে,,, সেরকম বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে যা পসিবল না বাস্তবে সে রকম কিছু থাকে না,,,,
এটা নিশ্চই আপনারা অস্বীকার করবেন না?
এক্ষেত্রে কিছু মুমিন কুটিলতার সহীত আইনস্টানের সময়ের আপেক্ষিকতার সাহায্যে আল্লহর ক্ষমতা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে যা খুবি হাস্যকর!,,,, তারা বলে,,, আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বের সাহায্যে প্রমান করা যায় যে ভবিষ্যৎ এ যাওয়া পসিবল এবং আল্লাহ ভবিষ্যৎ জ্ঞান,, বিজ্ঞান সম্মত।।।
তাদের এ ধরনের উত্তর শুইনা আমি অবাক হয়ে যাই,,,যদি তারা এ ব্যাপারে কিঞ্চিত পড়াশোনাও করতো,,, তাহলেও তারা এই ভুলভাল কথা বলতে পারতো না।
আসুন আমরা দেখে নেই,,,,কেনো ভবিষ্যতে যাওয়া বৈজ্ঞানিক ভাবে অসম্ভব,,,,,
আইনস্টাইন তার আপেক্ষিকতার সমীকরনের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্তে এসেছিলেন,,,,
"সময় বেগের হ্রাস বৃদ্ধির উপর নির্ভরশীল,,, সমীকরনটি,,
T"= T/[root{1-(v2/c2)}]
T= পর্যবেক্ষকের সময়।
T=পৃথিবীর সময়।
v=পর্যবেক্ষকের বেগ।
c=300000000 ms*-1। (ধ্রুবক)
এ সমীকরনের মাধ্যমে আইনস্টাইন ৩ টি সিদ্ধান্তে এসেছিলেন,,,
১/ সাধারনত বাস্তব জগতে সকল কিছুর'ই বেগ আলোর থেকে অনেক কম হওয়ায়,, বাস্তব জগতের কোন ঘটনা দিয়েই সময়ের আপেক্ষিকতাকে পর্যবেক্ষন করা সম্ভব নয়।।
২/আলোর কাছাকাছি বেগে ছুটতে পারলে পৃথিবীর ঘড়ির থেকে পর্যবেক্ষকের ঘড়িতে সময়ের মান বেশি আসবে।।
৩/আলোর বেগে যদি ছোটা যায়,,, তাহলে পর্যবেক্ষক ঐ মুহুর্ত অনিশ্চয়াতার মধ্যে হারিয়ে যাবে,,, অর্থাৎ ঐ নির্দিষ্ট মুহুর্তে তার সময়ের মান অসীম হয়ে আটকে যাবে তাই,,,, ঐ নির্দিষ্ট মুহুর্তের আগেও যেতে পারবে না পিছেও যেতে পারবে না,,, ফলে তার সময় স্থির হয়ে যাবে।
কেউ কেউ বলতে পারেন আলোর থেকে বেশি বেগে গেলে নিশ্চই ভবিষ্যতে যাওয়া যাবে?
ভাই,,, আলোর থেকে বেশি বেগে ছোটা কোন কিছুর পক্ষে সম্ভব না।। আলোর বেগ একটি ধ্রুবক। তারপরও যদি আল্লাহকে ধরে নেই যে সে পারে,,
তাহলেও এই সমীকরন দ্বারা প্রমান হয় না যে,, সে ভবিষ্যতে যেতে পারে,,, বরং আলোর থেকে বেশি বেগে ছুটলে অতিতে চলে যায়।।
বিশ্বাস না হলে বিভিন্ন বেগ দিয়ে সমীকরনটিতে এপ্লাই করুন।।
আবার কোয়ান্টাম ম্যাকানিক্সের ভাষ্যমতে,, ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয় অনিশ্চয়তার মাধ্যমে।।
ভবিষ্যৎ যানা সম্ভব নয়,, এই যুক্তিকে প্রধান বেজ হিসেবে ধরেই হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তার সূত্রটি আবিষ্কার হয়েছে।
এবং এই সুত্রের মাধোমে আলোর বর্নালীর সুক্ষ বিশ্লেষন করা হচ্ছে যা পরিক্ষালব্দ সমীকরন নির্ভর সত্য।
এখন কেউ কেউ বলবেন,, ভাই বিজ্ঞানের অনেক বিষয় তো ভুল প্রমানিত হয়েছে,,,
আপেক্ষিক তত্ত্ব বা অনিশ্চয়তার নিতী যে ভুল প্রমান হবে না তার গেরান্টি কি??
আমি একমত ভাই অনেক জিনিশ ভুল প্রমানিত হয়েছে,,, কিন্তু যেগুলো ভুল প্রমানিত হয়েছে আপনি সেগুলো লক্ষ করলে দেখবেন,,
সেগুলো সমিকরন ভিত্তিক পর্যবেক্ষন নির্ভর সত্য না।।
কোনটা ছিলো যাষ্ট হাইপো-থিসিস। আবার কোন কোন হাপোথিসিস ফ্যাক্ট এর দুই দুই একটা কার্যকারন শুধু ব্যাখ্যা করতে পারতো,, কিন্তু কোন গানিতিক সমাধান দিতে পারতো না।
কিন্তু আপেক্ষিকতা বা কোয়ান্টাম বলবিদ্যা তাদের বিষয়ভুক্ত সব কিছুই ব্যাখ্যা করতে পারে।
তাহলে উপরের আলোচনার মাধ্যমে একথা প্রমানিত হলো যে,, আল্লাহ বা যে কোন সত্ত্বার পক্ষেই ভবিষ্যতে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই আল্লাহকে #আলিমুল_গায়েব বলা বৈজ্ঞানিক ভাবে যুক্তিহীন
 
(পর্ব-৭)
 আয়েশা (রাঃ) এর বিয়ে,, ইতিহাসের একটি জঘন্যতম দৃষ্টান্ত নয় কি? এ প্রশ্নের উত্তরে মুমিন সমাজ অনেকটা আবেগে আপ্লুত হয়ে বলে, না,,,,
--কেনো,,! আপনারা শিশু বিবাহ সমর্থন করেন?
হাদিসে আসছে,,,
আয়িশাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তার ছয় বছর বয়সে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বিবাহ করেন। তাকে নয় বছর* বয়সে তার ঘরে বধুবেশে নেয়া হয় এবং তার সঙ্গে তার খেলার পুতুলগুলোও ছিল। তাঁর আঠারো বছর বয়সে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকাল করেন।(সহীহ মুসলিম শরীফ, হাদিস নংঃ ৩৩৭২)(ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৩৪৬, ইসলামীক সেন্টার ৩৩৪৫)
এই হাদিসটি থেকে বোঝা যায় মুহাম্মদ ছয় বছর বয়সে আয়েশাকে বিবাহ করে,,, এবং নয় বছর বয়সে তার সাথে যৌন সম্পর্ক করে।।
#প্যারাডক্সিকাল_সাজিদ বইয়ের রচিয়তা আরিফ আজাদ সহ কুটিল মুমিন গোষ্টি এর উত্তরটা অনেকটা এরকমভাবে দেয়,,,,
মেয়েদের যৌন পরিপক্কতা ছেলেদের তুলনায় তাড়াতাড়ি হয়,,, যেকারনে কোন মেয়ের মিন্স শুরু হওয়ার পর পরই সে বিবাহের উপযোগি হয়।।।
এখন মুমিন ভাই আপনারাই বলেন,,,
মিন্স শুরু হলেই কি একটা মেয়ে বিয়ের উপযোগি হয়?
মিন্স শুরু হলেই কি একটা মেয়ে গর্ভধারণ ও সন্তান প্রসবের উপযোগি হয়ে যায়?
এর উত্তর হবে,, না,,, (উইকিপিডিয়া)
এখন আপনারা বলতে পারেন,, ইসলামে মেয়েদের মিন্স শুরু হওয়ার সাথে সাথে বিয়ে দেওয়ার কথা বলা আছে,,
কিন্তু মেয়েটির যে সন্তান নেওয়া লাগবে এমন তো কোন কথা নাই,,,,,
ভুল ভাই,, ইসলামে গর্ভনিরোধক কিছু ব্যাবহার করা হারাম,,,কেননা হাদিসে আসছে,,
""তোমর উৎপাদনশীল মেয়েদের বিয়ে কর, যাতে আমি সংখ্যায় কাফেরদের পরাস্থ করতে পারি""(সূনান আবুদাউদ বই,১১ হাদিস নং-২০৪৫)
এখানে নবী বলেছে উৎপাদন করতে, আপনি যদি জন্ম নিয়ন্ত্রন করেন!! সেটাতো ভাই ইসলাম বিরোধি হবে
এখন যদি বলেন,,ভাই আমি আর্থিক সমস্যায় আছি সন্তান নিতে চাই না,,, এক্ষেত্রে কোরান কি বলে দেখুন,,,
وَلَا تَقْتُلُوٓا أَوْلٰدَكُمْ خَشْيَةَ إِمْلٰقٍ ۖ نَّحْنُ نَرْزُقُهُمْ وَإِيَّاكُمْ ۚ إِنَّ قَتْلَهُمْ كَانَ خِطْئًا كَبِيرًا
অভাব-অনটনের ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না। আমিই তাদেরকে রিয্ক দেই এবং তোমাদেরকেও। নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা মহাপাপ। (বনী ইসরাইল, আয়াত নং-৩১)
এক হাদীসে এসেছে,,, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, “সবচেয়ে বড় গুনাহ কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমি বললাম, এটা অবশ্যই বড় কিন্তু তারপর কি? তিনি বললেন, এবং তোমার সাথে খাবে এ ভয়ে তোমার সন্তানকে হত্যা করা”। (বুখারীঃ ৪৪৭৭)
এখন বলতে পারেন স্ত্রি সেক্স করতে চায় না,, তো এক্ষেত্রে সন্তান হওয়ার সম্ভাবনাও নাই,,
কিন্তু ভাই হাদিসে আসছে,,,
""কোন স্বামী তার স্ত্রীর সাথে সেক্স করতে চায়, কিন্তু যে কোন কারনেই হোক স্ত্রি যদি তা না দেয়,,, তাহলে সারারাত ঐ স্ত্রীকে ফেরেস্তারা অভিষাপ দেয়"" (সহীহ মুসলিম হাদিস নংঃ ৩৩৬৭)
যেহেতু আপনি একজন পুর্নবয়স্কা যুবক,, তাই আপনার সেক্সের চাহিদা থাকবেই,,, এবং আপনার স্ত্রীও তা করতে বাধ্য আবার এক্ষেত্রে জন্ম নিয়ন্ত্রন করতে পারছেন না,,,
ফলে আপনার শিশু বউটি প্রেগন্যান্ট হতে বাধ্য।
এর অপকারিতার দুই একটা পয়েন্ট লিখি,,,
১/মায়ের মৃত্যুর ঝুকি
২/শিশু মৃত্যুর ঝুকি
৩/মা ও শিশুর অপুষ্টিহীনতা
৪/জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার অত্যাধিক
৫/মৌলিক চাহিদার দুঃষ্প্রাপ্যতা, ইত্যাদি।
শিশু বিবাহের ক্ষতিকর দিক জানতে উইকিপিডিয়ায় সার্চ দিন।।
এখন কেউ কেউ বলতে পারেন ভাই,, নবিজী করেছে বলেই কি আমাদেরও শিশু বিবাহ করতে হবে?
--ভাই নবিজী যা করেছে যা বলেছে এবং যার সমর্থন করেছে তা মুমিন শ্রেনীর পালন করা অবশ্য কর্তব্য,,,
কোন কোন মুমিন বলে,, ভাই খ্রিষ্টান ধর্মে হিন্দু ধর্মে এমন কি #আরিফ_আজাদ তো কয়েক গ্রেড উপরে গিয়ে মুজিবরের কথাই উল্লেখ করে বলেছেন,,, ইতিহাসে তারাও তো শিশু বিবাহ করেছে তাদের কোন দোষ নাই,, অথচ ১৪০০ বছর আগে মুহম্মদ করেছে তাতেই দোষ হয়ে গেছে?
উদাহরন দেয়,, রাম যখন সীতাকে বিবাহ করে তখম সীতার বয়স ছিলো ছয় বছর ( স্কন্ধ পূরাণ, ৩য় পর্ব, ২য় খন্ড, ৩০ নং অধ্যায়, ৮-৯ নং শ্লোক)
আবার খ্রিষ্টান ধর্মের থেকে উদাহরন দেয়,,
"তোমরা যুদ্ধ ক্ষেত্রে সকলকে হত্যা করে ছোট কুমারী মেয়েদের নিজেদের জন্য রেখে দাও"
আবার বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসার বয়স যখন ৮ তখন মুজিব তাকে বিয়ে করে,,,,(অসমাপ্ত আত্মজীবনী)
ভাই আপনাদের মাথায় কি আছে আমি জানিনা,,, মুজিব বিয়ে করেছে ঠিকই , কিন্তু সে কি বলে গেছে, সবাইকে শিশু বিবাহ করতে হবে? হিন্দু ধর্ম কি বলে গেছে? বা খ্রিষ্টান, ইহুদি ধর্ম?
যদিও ধরে নিলাম হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ ধর্ম গুলাও সমর্থন দিছে শিশু বিবাহের,,, কিন্তু তাদের উম্মতেরা কি তা এখন মানে?
তারা মানেনা কারন তারা এর কুফল জানে,,,
কিন্তু আপনারা মুমিনরা এখনো শিশু বিবাহের পক্ষে কথা বলেন!! যা হাস্যকর।।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হয়তো শিশু বিবাহেএ কূফল যানতো না,, তাই সে বিয়ে করেছিলো,, মুহাম্মদও জানতো না,,তাই সে বিয়ে করেছে।
আপনি তো জানেন এর কুফল, তাহলে আপনি কেনো এখনো এটা সমর্থন করবেন?
এখন আপনারা আবার প্রশ্ন করতে পারেন,, সক্কলেই তো শিশুবিবাহ করেছে,, তাহলে মুহাম্মদ, আয়েশার বিয়ে কেনো জঘন্যতম?
ভাই,, হয়তো তারা এর কুফল জানতো না,, তাই তারা বিবাহ করেছে। কিন্তু কেউ কি বলে গেছে আমার আইনই চুড়ান্ত? আমি যা করবো তাই সত্যি! কেউ বলে নাই, একমাত্র মোহাম্মদ ছাড়া।
তাই তার এ বিবাহ ইতিহাসের জঘন্যতম ঘটনার মধ্যে একটা।
 

Sunday, August 19, 2018

বহুল প্রচলিত কিছু কুযুক্তি বা কুতর্ক বা হেত্বাভাস।

লিখেছেনঃ
শুরুতেই কুযুক্তি বা কুতর্ক বা হেত্বাভাস বা Logical fallacy কাকে বলে, তা ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন। এর মানে হচ্ছে, প্রতারণামূলক কিছু, বা কুতর্ক, বা কুযুক্তি অথবা ন্যায় কর্মে ফাঁকি দেয়া। যুক্তিবিদ্যায় প্রচলিত কিছু অনর্থক কথার মারপ্যাঁচ কিংবা ভুলযুক্তি/কুযুক্তি/অপযুক্তি বা কুতর্ক জুড়ে দেয়ার প্রবণতা দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ্যণীয় ছিল, এবং এগুলো সবই যে কুতর্ক তা দ্বিধাহীনভাবেই প্রমাণিত হয়েছে। তাই বর্তমান সময়ে বিতর্ক কিংবা একাডেমিক আলোচনার সময় কিছু কিছু যুক্তিকে কুতর্ক বা হেত্বাভাস বা logical fallacy হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আসুন তাহলে আমরা শুরু করি, কুতর্ক বা হেত্বাভাস কাকে বলে, ইহা কত প্রকার এবং কী কী। এই আলোচনা সম্পূর্ণটুকুই আন্তর্জাতিক যুক্তিবিদ্যা বিষয়ক নানা বই থেকে সংগৃহীত। পৃথিবীর প্রায় সকল যুক্তিবাদী মানুষই বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত। অনুন্নত অসভ্য এবং অশিক্ষিত সমাজে যদিও এই কুতর্কগুলোই এখনো যুক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। কিন্তু এগুলো কোনটাই আসলে যুক্তি হিসেবে গণ্য হয় না। সহজভাবে বলতে গেলে, এই ধরণের কুযুক্তিগুলো সবই যুক্তিবিদ্যার শুরুতেই বাতিল করে দেয়া হয়। সেগুলো আলোচনাতে আসবার যোগ্যতাই রাখে না। কেন এগুলো ফ্যালাসি বা হেত্বাভাস তা উদাহরণ সহকারে এই লেখাটিতে ব্যাখ্যা করা হবে। আপনি যুক্তিবিদ্যা সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে থাকলে, এই লেখাটি সবার আগে মন দিয়ে পড়ে নেয়া জরুরি। কারণ, হয়তো আপনি নিজেই মনের অজান্তে নানা ধরণের ফ্যালাসি দিয়ে যুক্তিতর্ক করে যাচ্ছেন।
কুযুক্তি বা লজিক্যাল ফ্যালাসি হচ্ছে যুক্তির ভান করে আপনাকে মিথ্যা বা অযৌক্তিক কিছু বোঝাবার কৌশল। যুক্তিতর্কের প্রধান বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত, সততার সাথে বিতর্কে অংশ নেয়া এবং আপনার যুক্তি ভুল হয়ে থাকলে শুদ্ধটি দ্বারা তা শুধরে নেয়া। অসৎ ভাবে যারা বিতর্ক করে বা চালাকিপূর্ণ যুক্তি তুলে ধরে, তাদের থেকে সাবধান থাকা খুবই জরুরি। কারণ তারা আপনাকে ভুল বা চালাকিপূর্ণ কথা বলে আপনার মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে খাবে। এই ধরণের প্রতারণামূলক যুক্তিগুলো বিশ্লেষণ করে সেগুলো বাতিল করে সঠিক ভাবে গঠনমূলক যুক্তিতর্ক আলাপ আলোচনা করাটাই এই লেখাটির উদ্দেশ্য।

মূল তালিকা

১. অজ্ঞতার কুযুক্তি

Argument from Ignorance Fallacy
Argument from Ignorance Fallacy
দাবীঃ যেহেতু তুমি জানো না, বিগ ব্যাং এর আগে কী ছিল, তাই আমার দাবীটিই সঠিক!
দাবীঃ যেহেতু তুমি জানো না, মিশরের পিরামিডগুলো কোনটি কয়টি পাথর দিয়ে বানানো, তাই যৌন সম্পর্ক ছাড়াই ম্যারীর গর্ভে সন্তান হয়েছে!
দাবীঃ যেহেতু তুমি জানো না,
আমার মাথায় কয়টি চুল, তাই মুহাম্মদ ঘোড়ায় চড়ে সাত আসমান পাড়ি দিয়ে কয়েক মিনিটেই আবার পৃথিবীতে ফিরে এসেছে!
দাবীঃ যেহেতু তুমি জানো না, প্রশান্ত মহাসাগরে কয়লিটার পানি আছে, তাই হনুমান এক লাফে ভারত থেকে শ্রীলঙ্কা পৌঁছে গেছে!
উপরের দাবীগুলো অজ্ঞতার কুতর্কের কিছু উদাহরণ। ধরুন কেউ দাবী করলো, তিনিই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন; এবং যুক্তি হিসেবে উপস্থাপন করলো, এই দাবীটি কেউ অপ্রমাণ করতে পারবে না, এবং আরও প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করলো মানুষের অজ্ঞতাকে। যেহেতু মানুষ কিছু বিষয় সম্পর্কে জানে না, বা মানুষের জ্ঞান যেহেতু সীমাবদ্ধ, বা তার কথাটি ভুল প্রমাণ করা হয় নি, সেহেতু তার দাবীটিই সঠিক!
বিগ ব্যাং এর আগে স্থান বা সময় যেহেতু ছিল না, ক্লাসিক্যাল পদার্থবিদ্যার কোন সূত্র যেহেতু সেখানে কাজ করতো না, সেহেতু কী ছিল, তা সম্পর্কে আমরা জানার চেষ্টা করতে পারি। জানাও সম্ভব হচ্ছে। তথ্য প্রমাণ এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে। কিন্তু আমাদের কোন অজানা বিষয় থাকার অর্থ এই নয় যে, অমুকের দাবীটি সঠিক। যেকোন অজানা বিষয়কে জানার পদ্ধতি হচ্ছে, তা নিয়ে পড়ালেখা করা, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, তথ্য প্রমাণ যুক্তি দিয়ে জানার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। অমুকে করেছে বা তমুকে এমনটি ঘটিয়েছে তা ধরে নেয়া নয়। কোন অজানা বিষয় অপ্রমাণিত কোন কিছুর সপক্ষের যুক্তি বা প্রমাণ হতে পারে না।

২. প্রাধিকারের কুযুক্তি

Argument from authority fallacy
Argument from authority fallacy
দাবীঃ অমুক বিজ্ঞানী ভাগ্য পরিবর্তনের আংটি পরতো, তাই আংটি ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে।
দাবীঃ অমুক দর্শনের পণ্ডিত পীরবাবার পানিপড়া খেতো, অতএব পানিপড়া খেলে অসুখ সারে।
দাবীঃ অমুক বিখ্যাত ডাক্তার ওঝার শরণাপন্ন হয়েছিল, অর্থাৎ ওঝা রোগ সারাতে পারে।
উপরের দাবীগুলোকে প্রাধিকারের কুযুক্তি বলে। কোন বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে এক ধরণের কর্তৃত্ব আরোপ করা, এবং তার নামকে যুক্তি হিসেবে ব্যবহার করাকে কুযুক্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। এই ধরণের ঘটনা কোনকিছু প্রমাণ বা অপ্রমাণ করতে পারে না। কোন বিখ্যাত মানুষ কী বলেছেন বা করেছেন বা শুনেছেন, তার ওপর যুক্তি নির্ভরশীল নয়। যেমন, বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং এর নাস্তিক হওয়া নাস্তিক্যবাদের যথার্থতার কোন প্রমাণ নয়। আবার একইভাবে, নিউটনের আস্তিক থাকাটিও ঈশ্বরের অস্তিত্বের সপক্ষের প্রমাণ নয়। ঈশ্বর আছে কী নেই, তা স্টিফেন হকিং বা আইজ্যাক নিউটনের ব্যক্তিগত বিশ্বাস অবিশ্বাসের ওপর নয়, ঈশ্বরের সপক্ষে কতটুকু যুক্তি রয়েছে তার ওপর নির্ভরশীল। তা ব্যক্তির বিশ্বাস অবিশ্বাস নিরপেক্ষ। কে কত বড় বিখ্যাত বা অখ্যাত বা পণ্ডিত বা বিশেষজ্ঞ, তার উল্লেখ করে তাদের বিশ্বাস বা অবিশ্বাসকে প্রমাণ করা যায় না। তবে, স্টিফেন হকিং বা আইজ্যাক নিউটন যেসমস্ত যুক্তি বা প্রমাণ ব্যবহার করেছেন, সেগুলো যুক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। কিন্তু যুক্তিহীনভাবে বিখ্যাত কারও নাম উল্লেখ করে কোন দাবী করলে সেই দাবীকে প্রাধিকারের কুযুক্তিই বলবো।

৩. জনপ্রিয়তার কুযুক্তি

Argument from popularity/ Argumentum ad populum
Argument from popularity/ Argumentum ad populum
দাবীঃ ইসলাম যদি সত্য নাই হয়ে থাকে, তাহলে ১৬০ কোটি মুসলমান কেন ইসলামে বিশ্বাস করে?
দাবীঃ বিবর্তনবাদ যদি সত্য হয়েই থাকে, তাহলে পৃথিবীর সব আব্রাহামিক ধর্মের ধার্মিক মানুষ কেন তা অবিশ্বাস করে?
জনসংখ্যার কত অংশ কী বিশ্বাস করে, বা কোন মতবাদটি কতটুকু জনপ্রিয়, যুক্তি তার ওপর নির্ভর করে না। যুক্তি বা বিজ্ঞান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নয় যে, কত মানুষ তা মানলো সেটার ওপর নির্ভর করবে। যুক্তি শুধুমাত্র তথ্য প্রমাণ এবং যুক্তির ভ্যালিডিটির ওপর নির্ভরশীল। পৃথিবীর সকল মানুষও যদি অযৌক্তিক কিছু বলে, শুধু একজন যদি যৌক্তিক কথা বলে, তাহলে ঐ একজন ব্যক্তিই সঠিক। যেমন, পৃথিবীর দুইশত কোটি মানুষ ইসলামে বিশ্বাস করলে সেটা যেমন কোন যুক্তি নয়, ঠিক একইভাবে, পৃথিবীর বাকি ৬০০ কোটি মানুষ যেহেতু ইসলামে বিশ্বাসী নয়, সেহেতু ইসলামের মিথ্যা, সেটাও ভুল যুক্তি বা কুতর্ক বা হেত্বাভাস বা লজিক্যাল ফ্যালাসি। কোন দাবীর সত্যতা সেই দাবীটির তথ্য প্রমাণ এবং যুক্তির ওপর নির্ভরশীল, তা কতজন বিশ্বাস বা অবিশ্বাস করে তার ওপর নয়।

৪. কুপ্রশ্নের কুযুক্তি

Begging the question
Begging the question
দাবীঃ আপনি কেন খুন করেছেন?
দাবীঃ আপনি আগে যেমন চুরি করতেন এখনো কী করেন?
দাবীঃ আল্লাহ না থাকলে কোরানে আল্লাহর কথা লেখা থাকবে কেন?
উপরের দাবী প্রথম ও দ্বিতীয় দাবীগুলো থেকে দেখা যাচ্ছে, যিনি প্রশ্ন করেছেন, তিনি শুরুতেই ধরে নিয়েছেন, যাকে প্রশ্ন করেছেন তিনি খুনি, বা তিনি চোর। এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে তিনি প্রশ্ন করেছেন, যেই প্রশ্নটিই ভুল। যদি আগে থেকেই শ্রোতা খুনি বা চোর প্রমাণিত না হয়ে থাকে, তাহলে এই ধরণের যুক্তিকে কুযুক্তি হিসেবেই গণ্য করা হয়।
তৃতীয় দাবীতে, উনি ধরে নিয়েছেন কোরানে যা লেখা তা সত্য, এবং আল্লাহ না থাকলে কোরানে আল্লাহর কথা কেন লেখা থাকবে? যুক্তিবিদ্যায় এরকম যুক্তি প্রদানকে কুযুক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

৫. খড়ের মানুষ হারানো কুযুক্তি

Straw man Fallacy
Straw man Fallacy
বিপক্ষের তার্কিক আসলে যা বলেনই নি, সেরকম কিছু তিনি বলেছেন দাবী করে সেই বক্তব্যকে যুক্তি দিয়ে পরাজিত করার যুক্তিকে স্ট্রম্যান ফ্যালাসি বা খড়ের মানুষ বানিয়ে তার সাথে যুদ্ধ করার কুযুক্তি বলে। ধরুন,
বক্তা ক বলেছেন, আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না।
বক্তা খ বলছেন, বক্তা ক আসলে ফ্রি সেক্স করার জন্য ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না। ফ্রি সেক্স খুব খারাপ। ফ্রি সেক্সে অনেক সামাজিক সমস্যা তৈরি হয়। ( এরপরে তিনি দীর্ঘ পাঁচঘণ্টা ফ্রি সেক্সের ভাল খারাপ বিষয় নিয়ে বক্তব্য দিয়ে গেলেন। অথচ বক্তা ক ফ্রি সেক্স বিষয়ক কিছু উল্লেখই করেন নি।)
লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, বক্তা খ হয়তো ফ্রি সেক্সের ভাল খারাপ বিষয়ে কিছু বক্তব্য দিয়ে মাঠ গরম করতে চাচ্ছিলেন, তাই ঈশ্বরের অস্তিত্ব অনস্তিত্ব সম্পর্কে আলোচনা না করে উনি নিজেই বিপক্ষের বক্তার একটি বানানো আর্গুমেন্ট তৈরি করলেন, এবং সেটাকে হারিয়ে দিলেন। একজন যেমন খড় দিয়ে মানুষ বানিয়ে তার সাথে মল্লযুদ্ধ করে যুদ্ধ জয় করার ভান ধরে, খুব বীরত্ব দেখানো হয়েছে বলে সবাইকে বোঝাতে চায়, ঠিক তেমনি, বক্তা ক যা আসলে বলেনই নি, সেই আর্গুমেন্ট বানিয়ে উনি নিজেই যুদ্ধে জয়লাভ করে বসলেন। ঈশ্বরের অস্তিত্ব অনস্তিত্বের সাথে ফ্রি সেক্স অথবা কোন ধরণের সেক্সই প্রাসঙ্গিক নয়। এরকম যুক্তি উপস্থাপনের চেষ্টাকে খড়ের মানুষ হারানো কুযুক্তি বলা হয়।

৬. চক্রাকার কুযুক্তি

Circular logic FallacyCircular logic Fallacy
প্রশ্ন-১ বাইবেল যে সত্য তার প্রমাণ কী?
উত্তর-১ বাইবেল সত্য কারণ ঈশ্বর বলেছেন বাইবেল সত্য।
প্রশ্ন-২ ঈশ্বর যে সত্য তার প্রমাণ কী?
উত্তর-২ ঈশ্বর সত্য কারণ বাইবেলে লেখা আছে ঈশ্বর সত্য।
উপরের দাবী দুটো লক্ষ্য করলে দেখা যায়, একটি দাবী আরেকটি দাবীকে সত্য প্রমাণ করতে চাচ্ছে। এই দাবী দুটো একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। এর কোনটাই প্রমাণিত নয়, তবে একটি আরেকটি দাবীর প্রমাণ হিসেবে সাক্ষ্য দিচ্ছে। যুক্তিবিদ্যায় একে বলে চক্রাকার যুক্তি বা সার্কুলার লজিক। এটি একটি কুযুক্তিই বটে।

৭. ব্যক্তির চরিত্র বিশ্লেষণী কুযুক্তি

Ad Hominem Fallacy Ad Hominem Fallacy
দাবী যেহেতু তোমার চেহারা খারাপ, সেহেতু তোমার যুক্তিটা ভুল।
দাবী যেহেতু তুমি ইহুদীদের সাথে বন্ধুত্ব করো, সেহেতু ইসলাম সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নাই।
দাবী যেহেতু মুসলমান না, সেহেতু ইসলাম সম্পর্কে তোমার যুক্তিগুলা ভুল।
উপরের দাবীগুলোকে বলা হয় এড হোমিনেম ফ্যালাসি বা ব্যক্তির চরিত্র বিশ্লেষণী কুযুক্তি। যুক্তির জবাব যুক্তিতে দেয়া সম্ভব না হলে অনেকেই ব্যক্তির চরিত্র বিশ্লেষণে নেমে যান, এবং তার চরিত্র, তার বাবা মা ভাই বোন ইত্যাদিকে টেনে এনে কোন যুক্তিকে ভুল প্রমাণের চেষ্টা করেন। যেখানে যুক্তির সাথে ব্যক্তির চেহারা, তার কাদের সাথে বন্ধুত্ব, বা তার ব্যক্তিগত ধর্মবিশ্বাস অপ্রাসঙ্গিক এবং সেগুলো নিয়ে আলোচনাও হচ্ছে না। ধার্মিকদের মধ্যে এই কুযুক্তি ব্যবহার খুব বেশি মাত্রায় দেখতে পাওয়া যায়।

৮। এড হোমিনেম (সারকামস্টেনশিয়াল) বা আপিল টু মোটিভ

Appeal to motive is a pattern of argument which consists in challenging a thesis by calling into question the motives of its proposer. It can be considered as a special case of the ad hominem circumstantial argument.
কোন যুক্তির পেছনে যুক্তিদানকারীর স্বার্থ্য রয়েছে এমনটা দেখিয়ে যুক্তি বা দাবীকে ভুল বললে বা নাকোচ করলে এই হেত্বাভাসটি সংঘটিত হয়। এখানে যুক্তির বিপক্ষে যুক্তি নয়, যুক্তিদানকারী কী উদ্দেশ্যে যুক্তি দিচ্ছে, সেই নিয়েই আলোচনা চলে।

উদাহরণঃ
১। ধরা যাক, ইসলামে শিশু বিবাহ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এরকম অবস্থায় একজন বললো, আপনি ইসলামের বিরুদ্ধে যুক্তি দিচ্ছেন, নিশ্চয়ই আপনি ইহুদীদের থেকে টাকা পয়সা নিচ্ছেন।
– এখানে, ইসলামের পক্ষে যিনি বলছেন, তিনি শিশু বিবাহের ভাল খারাপ দিক নিয়ে যৌক্তিক আলোচনা না করে কী উদ্দেশ্যে কেউ এই যুক্তি দিচ্ছে, কার থেকে টাকা পয়সা পাচ্ছে, তার দিকে নির্দেশ করছেন। যুক্তিবিদ্যায় একে এড হোমিনেম ফ্যালাসি বলে। উল্লেখ্য, কল্পিত ইহুদীদের থেকে যদি কেউ টাকা নিয়েও থাকে, তাতেও শিশু বিবাহের বিরুদ্ধে যিনি যুক্তি দিচ্ছেন, সেই যুক্তিটি ভুল প্রমাণ হয় না।
২। গাড়ির ডিলার – কনজিউমার রিপোর্ট অনুযায়ী এই আমাদের গাড়ি এভারেজ গ্যাস মাইলেজের গাড়িগুলোর থেকে ভাল, আর এটা বর্তমানে গাড়ির সবচেয়ে রিলায়াবল ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে একটি।
ক্রেতা – এর সত্যতা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে, তুমি তো বিক্রির জন্য এটা বলবেই, এটাই তো তোমাদের ব্যবসা।
লক্ষ্য করে দেখুন, ক্রেতা এখানে গাড়ির যন্ত্রাংশ নিয়ে যৌক্তিক আলোচনা না করে, এটাই যে গাড়ির ডিলারের ব্যবসা সেই দিকে নির্দেশ করছেন। তাই এটি একটি লজিক্যাল ফ্যালাসি। গাড়ি বিক্রেতার গাড়ি বিক্রির জন্য ইন্টারেস্ট আছে এই অজুহাত দিয়ে এখানে গাড়ির মানকে অস্বীকার করা হচ্ছে, যেখানে বিক্রেতার সেরকম কোন ইন্টেনশন নাও থাকতে পারে, বা বিক্রেতার বক্তব্যে সেরকম ইন্টেনশনের প্রভাব নাও পড়তে পারে।
৩।
– মব যদি উত্তেজিত হয়ে ধর্ষককেও গণপিটুনি দেয় তা সঠিক হবে না, এতে বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রকাশিত হয়, তাকে পুলিসে দেয়া প্রয়োজন।
– তুমি ধর্ষককে সমর্থন করছ, ধর্ষকের প্রতি সমবেদনা দেখাচ্ছ, এদেশের লোকেদের তো ইন্টেনশনই আছে ধর্ষকদের পক্ষ নেবার, তুমিও সেই পথে যাচ্ছ
(অতএব তোমার কথাগুলো ভুল)।
এখানে কাল্পনিকভাবে ধর্ষণের সপক্ষের মোটিভকে নিয়ে এসে অপরাধীর প্রতি মব জাস্টিসের বিরুদ্ধের যুক্তিকে নাকোচ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

৯. ভণ্ডামি আশ্রিত কুযুক্তি

appeal to hypocrisy/ Tu quoque
appeal to hypocrisy/ Tu quoque
১।
ধরুন, আওয়ামী লীগ নেতা সজীব ওয়াজেদ জয় বিএনপি নেতা তারেক জিয়াকে বললো, তুমি একজন দুর্নীতিবাজ।
উত্তরে তারেক জিয়া বললো, তুমিও তো দুর্নীতি করো, বা ডোনাল্ড ট্রাম্পও তো দুর্নীতি করে বা এরশাদও তো দুর্নীতি করেছিল।
২।
প্রস্তাব – ইসলামে নারীর মানবিক অবস্থান খুবই অসম্মানজনক।
কুযুক্তি – হিন্দু ধর্মে নারীর অধিকার কতটুকু? সেখানেও তো অসম্মানজনক।
এই ধরণের উত্তর একটি লজিক্যাল ফ্যালাসি, যাকে বলা হয় এপিল টু হিপোক্রেসি বা ট্যু ক্যুও- ক্যুই। মানে হচ্ছে, ইউ ট্যু বা তুমিও। কিন্তু অন্য আরেকজন দুর্নীতি করলেই প্রথম জনার দুর্নীতির দাবীটি মিথ্যা হয়ে যায় না। বা হিন্দু ধর্মে নারী অসম্মানজনক অবস্থানে থাকলেই ইসলামে নারীর অবস্থান সম্মানজনক তা প্রমাণ হয় না। এই কুযুক্তিটি ধার্মিক সমাজে বহুল প্রচলিত এবং এই যুক্তি দ্বারাই সাধারণত বিপক্ষকে ধরাশায়ী করার চেষ্টা করা হয়। ইসলামি জঙ্গিবাদের সমালোচনার সময় তারা রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর আক্রমণের উদাহরণ তুলে আনেন, কিন্তু রোহিঙ্গা মুসলিমরা নির্যাতিত হয়ে থাকলে ইসলামি জঙ্গিবাদ তাতে জাস্টিফায়েড হয় না। আরেকটি অন্যায়ের উদাহরণ প্রথম অন্যায়টিকে ন্যায় বানাতে পারে না।

১০. অপ্রমাণের বোঝা

Burden of proof
Burden of proof
ঘটনা- ১
দাবীঃ আমি তোমার কাছে দশলক্ষ টাকা পাই।
প্রশ্নঃ টাকা যে পাও তার প্রমাণ কী? কোন কাগজপত্র বা এভিডেন্স আছে?
কুযুক্তিঃ আমি যে টাকা পাই না, তা কি তুমি প্রমাণ করতে পারবে?
ঘটনা- ২
দাবীঃ আমি রোজ সকালে আকাশে উড়তে পারি।
প্রশ্নঃ উড়তে পারো, তার প্রমাণ কী?
কুযুক্তিঃ আমি রোজ সকালে উড়তে যে পারি না, তা তুমি প্রমাণ করতে পারবে?
ঘটনা- ৩
দাবীঃ স্যুপারম্যানের সাথে আমার প্রতিদিন কথা হয়।
প্রশ্নঃ স্যুপারম্যান যে আছে তার প্রমাণ কী?
কুযুক্তিঃ স্যুপারম্যান নেই, তা প্রমাণ করতে পারবে?
উপরের প্রতিটি দাবী এবং দাবীর সপক্ষে কুযুক্তিগুলো লক্ষ্য করুন। দাবীকারী নিজ দাবীর সপক্ষে কোন প্রমাণ উপস্থাপন না করে প্রশ্নকর্তাকেই তার দাবীটি অপ্রমাণের দাবী জানাচ্ছে। অর্থাৎ, তার কাছে তার দাবী প্রমাণের যথেষ্ট যুক্তি না থাকায় প্রশ্নকর্তার ওপরেই সে তার দাবী অপ্রমাণের বোঝা চাপাতে চাচ্ছে। যুক্তিবিদ্যায় একে আমরা বার্ডেন অফ প্রুফ বা অপ্রমাণের বোঝা চাপানো বলি। উল্লেখ্য, প্রমাণ বা যুক্তি উপস্থাপনের দায় তারই, যিনি দাবী উত্থাপন করেন। অন্য কারও তা অপ্রমাণ করার দায় নেই। অন্য কেউ তা অপ্রমাণ না করলেও, তার দাবীটি প্রমাণের বোঝা অন্যের কাঁধে চাপাতে চাইলে উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ ও যুক্তির অভাবে তার দাবীটিই খারিজ বা বাতিল হয়ে যাবে।

১১. অপ্রাসঙ্গিক তর্কের কুযুক্তি

Red herring
Red herring
দাবীঃ আমার মনে হয় ভুত আছে।
প্রশ্নঃ ভুত যে আছে, তার প্রমাণ কী?
দাবীঃ এই যে আমরা জন্মেছি, মারা যাচ্ছি, এগুলো তো সত্য, তাই না? মারা যে যাচ্ছি, আমরা কোথায় যাচ্ছি?
উপরের দাবীগুলো লক্ষ্য করুন। দাবীকারী প্রথমে বললো ভুত আছে। প্রমাণ চাওয়া মাত্রই তিনি আলোচনা ভিন্ন একদিকে নিয়ে গেলেন, যেই আলোচনায় তার কথাগুলো আপাত দৃষ্টিতে লজিক্যাল মনে হলেও, তিনি অপ্রাসঙ্গিকভাবেই আসলে জন্ম মৃত্যুর প্রসঙ্গের অবতারণা করেছেন। যার সাথে ভুত থাকা না থাকা সম্পর্কহীন। পরের ধাপে তিনি যতই যৌক্তিক কথা বলুন না কেন, তার সকল যুক্তিই কুযুক্তি বলে বিবেচিত হবে। কারণ তিনি মূল প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে অন্যদিকে চলে গেছেন।

১২. মিথ্যা উভসঙ্কট

false dilemma
false dilemma
ধরুন, কেউ সমাজতন্ত্রের কঠোর সমালোচনা করছে। সমাজতান্ত্রিক দেশে বাক স্বাধীনতা নেই, সেখানে ধর্ম পালনের অধিকার ব্যক্তিগত পর্যায়ে রাখতে হয় ইত্যাদি। এবং কঠোর সমালোচনার ফলাফল হিসেবে নিয়ে আসছে শরিয়া আইনকে। বোঝাতে চাচ্ছে, যেহেতু সমাজতন্ত্র বাক স্বাধীনতা হরণ করে, তাই দেশে শরিয়া আইনের কোন বিকল্প নেই। যেন মানুষের সমাজতন্ত্র এবং শরীয়া আইন, এই দুইয়ের মধ্যেই পছন্দ করতে হবে। আর কোন বিকল্প নেই। কিন্তু সত্য হচ্ছে, সমাজতন্ত্র বাক স্বাধীনতা খর্ব করলে শরীয়া আইন তার শতগুণ বেশি করে। মানুষের কাছে সমাজতন্ত্র এবং শরীয়া আইন ছাড়াও অনেকগুলো অপশন রয়েছে। যেমন সোশ্যাল ডেমোক্রেসি, এরকম আরও অনেক সুযোগ রয়েছে। তাই সবগুলো পছন্দ সামনে না আনাকে ফলস ডিলেম্মা বলা হয়। যুক্তিবিদ্যায় এই চালাকিপূর্ণ কুযুক্তিকে খারিজ করে দেয়া হয়।

১৩. সহি স্কটসম্যান নহেন কুযুক্তি

No true scotsman
No true scotsman
এটি আরেকটি বহুল প্রচলিত কুযুক্তি। কোন বিপদ দেখলেই উনি সত্যিকারের স্কটসম্যান নহেন, সহিহ নহেন, ইত্যাদি বলতে থাকাকে যুক্তি বিদ্যায় নো ট্রু স্কটসম্যান কুযুক্তি বলা হয়। নিচের উদাহরণগুলো লক্ষ্য করুন-

দাবীঃ জামাতে ইসলামির একজন নেতা যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন।
কুযুক্তিঃ উনি সত্যিকারের জামাতি নহেন।

দাবীঃ আওয়ামী লীগের এক নেতা দুর্নীতির দায়ে জেল খাটছেন।
কুযুক্তিঃ উনি সহিহ আওয়ামী লীগার নহেন।

দাবীঃ মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর বার্মিজরা অত্যাচার চালাচ্ছে।
কুযুক্তিঃ যারা অত্যাচার করছে তারা সহিহ বার্মিজ নহেন।

দাবীঃ প্যালেস্টাইনে ইসরাইল আবারো আক্রমণ করেছে।
কুযুক্তিঃ ওরা সহিহ ইসরাইলী নহেন।

দাবীঃ হোলি আর্টিজানে ইসলামি জঙ্গিরা আক্রমণ করেছে।
কুযুক্তিঃ ওরা সহিহ মুসলমান নহেন।

১৪. তালগাছ আমার কুযুক্তি

Argument from final Consequences
Argument from final Consequences
উপস্থাপিত যুক্তি তথ্য প্রমাণ যাই হোক না কেন, যুক্তিতর্কের ফলাফল আপনি আগেই নির্ধারণ করে সেই বিশ্বাসে স্থির থাকলে তাকে আমরা বলি আর্গুমেন্ট ফরম ফাইনাল কন্সিকুয়েন্সেস। ধরুন আপনার বিশ্বাস হচ্ছে, বিবর্তনবাদ মিথ্যা। আপনি বিবর্তনবাদ নিয়ে বিতর্ক করতে আসলেন, এবং বিবর্তনের সপক্ষে সমস্ত তথ্য প্রমাণ যুক্তি শোনার পরেও, তার বিপরীতে উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ যুক্তি দিতে ব্যর্থ হওয়ার পরেও আপনি বলতে থাকলেন, যত যাই হোক, বিবর্তনবাদ মিথ্যা। কারণ আপনার আস্থা যুক্তি বা প্রমাণে নয়, আপনার আস্থা বিশ্বাসে। এরকম অবস্থায় আপনার অবস্থানকে তালগাছবাদী কুযুক্তি বলা হবে।

১৫. পক্ষপাতদুষ্ট নিশ্চিত কুযুক্তি

Confirmation Bias Fallacy
Confirmation Bias Fallacy
যেহেতু আপনি মুসলিম পরিবারে জন্মেছেন এবং ছোটবেলা থেকে ইসলাম ধর্মকেই সত্য বলে মেনে নিয়েছেন, তাই আপনার দাবী হচ্ছে, পৃথিবীর ৪২০০ টি ধর্মের মধ্যে আপনার ধর্মটিই একমাত্র সত্য এবং সঠিক। বাদবাকি সবই ভুয়া এবং বিকৃত। আপনি ভারতের কোন হিন্দু পরিবারে জন্মালে ঠিক একইভাবে একই যুক্তিতে হিন্দু ধর্মটিই পৃথিবীর একমাত্র সত্য ধর্ম বলে তখন আপনার মনে হতো। যেহেতু আপনি কোন ধর্মটি সঠিক তা তথ্য প্রমাণ দিয়ে যাচাই বাছাই না করে শুরুতেই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, জন্মসূত্রে পাওয়া আপনার ধর্মটিই একমাত্র সঠিক, তাই আপনার দাবী পক্ষপাতদোষে দুষ্ট। তাই এই যুক্তিটি একটি কুযুক্তি। পৃথিবীর বেশিরভাগ ধার্মিক মানুষই মনে করেন, তিনি যেই পরিবারে ঘটনাচক্রে জন্মেছেন, সেই পরিবারের ধর্মটিই একমাত্র সত্য। তিনি তার ধর্মের সপক্ষে যেসকল যুক্তি আছে, সেগুলো খুঁজে বের করেন, এবং সেইগুলোই প্রচার করেন। তার ধর্মের বিপক্ষের যুক্তিগুলোকে তিনি এড়িয়ে যান বা বাতিল করে দেন।

১৬. স্ববিশেষ মিনতি কুযুক্তি

Special Pleading Fallacy
Special Pleading Fallacy
আপনার দাবীঃ সব কিছুরই স্রষ্টা থাকতে হবে। স্রষ্টা ছাড়া কোনকিছু এমনি এমনি হওয়া সম্ভব না।
প্রশ্নঃ তাহলে স্রষ্টার সৃষ্টি কীভাবে হয়েছে? কে করেছে? তিনি কী এমনি এমনি হয়েছেন?
দাবীঃ হ্যাঁ তিনি এমনি এমনিই হয়েছেন। তার কোন স্রষ্টার প্রয়োজন নেই। তিনি স্বয়ম্ভু, স্বয়ংসম্পূর্ণ।
প্রশ্নঃ কিন্তু আপনি কিছুক্ষণ আগেই তো বললেন, সবকিছুরই স্রষ্টা থাকতে হবে। সেই একই যুক্তিতে, স্রষ্টার স্রষ্টা না থাকাটা আপনার যুক্তির বরখেলাপ হয়ে গেল না?
দাবীঃ আল্লাহ একটি স্পেশাল ক্যারেকটার। উনি সৃষ্টির উর্ধ্বে। উনার স্রষ্টার প্রয়োজন নেই।
উপরের দাবী অনুসারে, প্রথমে তিনি একটি প্রস্তাব দিয়েছেন যে, সবকিছুরই স্রষ্টা থাকা অত্যাবশ্যক। পরে তিনি নিজেই আবার আল্লাহ বা ঈশ্বরকে সেই প্রস্তাবের বাইরে কিছু স্পেশাল সুবিধা দেয়ার দাবী জানিয়েছেন, এই বলে যে, উনি এই প্রস্তাব বা নিয়মের উর্ধ্বে। এটি একটি কুযুক্তি। একে বলা হয় স্পেশাল প্লিয়েডিং ফ্যালাসি। যখন কারও দেয়া সূত্র বা প্রস্তাব বা রুল সে বা অন্য কেউ ভঙ্গ করে, এবং সেই ভঙ্গ করাকে তিনিই স্পেশাল কিছু সুবিধা বলে চালিয়ে দিতে চান, তাকে আমরা স্ববিশেষ মিনতি কুযুক্তি বলতে পারি।

১৭.ব্যাখ্যা ও অজুহাত বা ন্যায্যতা প্রতিপাদনকে গুলিয়ে ফেলা

Confusing an explanation with an excuse
কোন ঘটনার ব্যাখ্যা (explanation), অজুহাত (excuse) এবং ন্যায্যতা প্রদান(justification) তিনটি আলাদা বিষয়। কোন ঘটনার ব্যাখ্যাকে তার ন্যায্যতা প্রতিপাদন বা অজুহাত হিসেবে মনে করলে এই হেত্বাভাস হয়। অনেক মানুষই নানা ধরণের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে তথাকথিত ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করে, যা আসলে ব্যাখ্যা নয়, এক ধরণের অজুহাত। কোনটি ন্যায্যতা প্রতিপাদন, ব্যাখ্যা আর কোনটি অজুহাত, তা গুলিয়ে ফেলা অনেক মানুষেরই স্বভাব।
Explanation: A statement or account that makes something clear.
Justification: Justification is about giving ‘reasonable reason’ for what was done (or not). It considers the context and concludes that fair play was served.
Excuse: a reason or explanation given to justify a fault or offence.

উদাহরণ:
১।
বক্তা ১ – পাকিস্তানীরা ১৯৭১ সালে বাঙলাদেশে গণহত্যা চালিয়েছিল।
বক্তা ২ – আপনার এইসব ঘটনার ব্যাখ্যা জানতে হবে। পরিপ্রেক্ষিত বুঝতে হবে। প্রেক্ষাপট বিবেচনা করতে হবে! সেসব না বুঝে আপনি এই কথা বলতে পারেন না।
বক্তা ১ – গণহত্যার আপনি কী ব্যাখ্যা দিতে পারেন?
বক্তা ২ – ঐ সময় খুব কঠিন সময় ছিল। ভারতের দালালরা পাকিস্তানকে ভাঙতে চেয়েছিল। ষড়যন্ত্রকারীরা চেয়েছিল পাকিস্তানের ক্ষতি করতে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা কেন হয়েছিল জানেন? সেই সময়ে কিছু বাঙালি দুর্বৃত্ত পাকিস্তানের সংবিধান লঙ্ঘন করেছিল। পাকিস্তান রাষ্ট্রের সাথে চুক্তি ভঙ্গ করেছিল। সেই সময়ে দেশপ্রেমিক পাক সেনাবাহিনী কঠোর হস্তে বিদ্রোহ দমন করে।
লক্ষ্য করে দেখুন, একটি গণহত্যাকে ন্যায্যতা প্রদান(Justification) করতে বক্তা ২ নানা রকম অজুহাত তৈরি করছেন। গণহত্যার সপক্ষে তিনি অজুহাত তৈরি করে সেগুলোকে ব্যাখ্যা মনে করছেন। কিন্তু ন্যায্যতা প্রদান, ব্যাখ্যা এবং অজুহাত একদমই আলাদা বিষয়। এই দুটো গুলিয়ে ফেলাকে Confusing an explanation with an excuse বলা হয়। উল্লেখ্য, গণহত্যা বা জাতিগোষ্ঠী, ধর্মীয় সম্প্রদায় ধরে নিধন চালানো কোন ব্যাখ্যাতেই বৈধ বলে গণ্য হয় না। কোন অবস্থাতেই ন্যায্যতা পায় না।
২।
– ভাবি, আপনার ছেলে কিন্তু আমাকে মোটেও সম্মান করেনা।
– কারণ সে মনে করে আপনার “আপনার চেহারা ডাইনির মত, যে বাচ্চাদের সহ্য করতে পারে না”।
– কিন্তু এটা কোন অজুহাত হতে পারে না।
– না, এখানে অজুহাতের কিছু নেই, এটা কেবলই তার আপনাকে পছন্দ না করার কারণ।
এখানে বাচ্চাটি মহিলাটিকে কেন সম্মান করে তার ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে মাত্র, কিন্তু বাচ্চাটি যে ঠিকই ভাবছে বা ব্যায্য কাজটি করছে বা বাচ্চার ভাবনাটাই যে ঠিক বা ন্যায্য সেটা বলা হয় নি, যা মহিলাটি ধরে নিয়েছিলেন।
৩।
– তুমি কেন বিগফুটকে মানুষ ও বানরের মধ্যকার মিসিং লিংক বলে মনে করছ?
– কারণ বিবর্তনগত প্রক্রিয়ায় দুটো প্রজাতির মধ্যবর্তী প্রজাতিকেই মিসিং লিংক বলে।
এখানে মিসিং লিংক কাকে বলে তার সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে, মানে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে, কিন্তু কেন সে বিগফুটকেই মিসিং লিংক বলে মনে করে এর ন্যায্যতা প্রতিপাদন করা হয়নি।
৪।
– ধর্ষণের পিছনে বিবর্তনগত কারণ রয়েছে। জীববিজ্ঞানী থর্নহিল ও এনথ্রোপলজিস্ট পালমার বলেন, একটি প্রতিযোগিতাপূর্ণ হারেম-বিল্ডিং স্ট্রাগলের কারণে লুজাররা ধর্ষণকে বিকল্প জিন প্রমোটিং স্ট্র্যাটেজি হিসেবে ব্যবহার করলে সুবিধা পাওয়া যায়, আর এর প্রভাব পরবর্তী প্রজন্মে আসায় পুরুষেরা ধর্ষণের প্রবণতা লাভ করেছে।
– এভাবে বলে তুমি ধর্ষণকে জাস্টিফাই(Justification) করছ, যেন ধর্ষণ খুব ন্যাচারাল, এটা হতেই পারে!
ধর্ষণের ইভোল্যুশনারি এক্সপ্লানেশন ধর্ষণের ব্যাখ্যা দেয়, অর্থাৎ মানুষ কেন ধর্ষণপ্রবণ হয় তার ব্যাখ্যা এখান থেকে পাওয়া যায়। কিন্ত এই ব্যাখ্যা কখনই ধর্ষণকে জাস্টিফাই করে না, বা ন্যায্যতা প্রদান করে না। অর্থাৎ ধর্ষণের পেছনে প্রাকৃতিক কারণও রয়েছে বলেই এটা নৈতিক এমন কিছু বলে না। আর সেই সাথে ইভোল্যুশন থেকে আসা প্রবণতা ধর্ষণের জন্য কোন এক্সকিউজ বা অজুহাতও হতে পারে না। এটা তাই অপরাধই থাকবে, কারণ মানুষের মধ্যে ধর্ষণ প্রবণতা থাকলেও নিজেকে কন্ট্রোল করার অপশন আছে। বিবর্তনের দ্বারা মানুষ নৈতিকতা ও সামাজিকতার বৈশিষ্ট্যই লাভ করেছে। এছাড়া মানুষের আচরণ কেবল জিনই নয়, পরিবেশও নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া অপরাধ অর্থ সমাজের জন্য ক্ষতিকর কাজ, আর অপরাধী অর্থ যে এই ক্ষতিকর কাজটি করেছে।
রেস্টোরেটিভ জাস্টিসের বিধান অনুসারে অপরাধী যাতে অপরাধ থেকে নিবৃত হয় তাই শাস্তির প্রয়োজন, যেখানে শাস্তি অপরাধীকে অপরাধ থেকে নিবৃত করবার একটি প্রক্রিয়া। এক্ষেত্রে কেন অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তাতে কিছু আসে যায় না, অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, এখন অপরাধীকে অপরাধ থেকে নিবৃত করার ব্যবস্থা করতে হবে, এটাই মুখ্য, তাই এক্সকিউজ বা এক্সপ্লানেশনে কিছু আসছে যাচ্ছে না।
তবে বৈজ্ঞানিক কারণ অনুসন্ধানে এবং মানুষের চরিত্র বুঝবার জন্য স্বাধীনভাবে বিবর্তনগত কারণ অনুসন্ধানের প্রয়োজন আছে যেখানে নৈতিক সিদ্ধান্ত আরোপনের মাধ্যমে এটা ঠিক কি ভুল- এই বিষয়ক মন্তব্য করার কিছু নেই, বরং এই অনুসন্ধান অপরাধ নিবৃতির কাজে সহায়তা করতে পারে, যা সমাজের জন্য মঙ্গলজনক হবে।
উপরের উদাহরণে একটি ঘটনার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা প্রদান এবং সেই ঘটনাকে জাস্টিফাই করার জন্য ব্যাখ্যা প্রদানকে গুলিয়ে ফেলা হয়েছে। তাই এটি একটি লজিক্যাল ফ্যালাসি।তাহলে আমরা ব্যাখ্যা প্রদান এবং অজিহাতের মধ্যে পার্থক্য কীভাবে করবো?
অজুহাত > ধরুন, যখন কেউ বলবে, মেয়েটি ধর্ষিত হয়েছে, এখানে মেয়েটিরই দোষ ছিল। মেয়েটাই হয়তো কম কাপড় পরেছে, ছেলেটিকে উত্তেজিত করেছে, মেয়েটারই চরিত্রে দোষ আছে ইত্যাদি।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা > লক্ষ বছরের বিবর্তনের ধারায় বিভিন্ন প্রাণীর মধ্যে ধর্ষণের ইচ্ছা পরিলক্ষিত হয় বলে গবেষনায় দেখা গেছে। বিবর্তনের ধাপে ধাপে যেই প্রাকৃতিক নির্বাচন ঘটছে, সেখানে শারীরিকভাবে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী একজন পুরুষ, যারা সাধারণত অন্য পুরুষের সাথে লড়াইতে কুলিয়ে ওঠে নি, তারা অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী নারীদের ওপর যৌন নির্যাতন চালিয়েছে। সেখান থেকে হওয়া বাচ্চারা সেইসব জিন বহন করেছে। সেই সাথে পারিপার্শ্বিক ঘটনা, সামাজিক নিয়মকানুন এবং শিক্ষা সেই সব বাচ্চাদের ভেতরে সেই সব জিন সচল করতে সাহায্য করেছে।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা যখন দেয়া হচ্ছে, সেটি কাজটির ন্যায্যতা প্রদান নয়। এখানে কোনভাবেই কাজটি নৈতিক নাকি অনৈতিক, সেই সিদ্ধান্তে যাওয়া হয় না। বিজ্ঞানের উদ্দেশ্যও তা নয়। বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য এইসব ঘটোনার পেছনে কারণ অনুসন্ধান করা। যখন কারণগুলো সঠিক এবং বৈজ্ঞানিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হবে, সমস্যাগুলো কীভাবে সমাধান করা যাবে তার উপায়ও মিলতে থাকবে।

১৮. প্রকৃতিগত হেত্বাভাস

Naturalistic fallacy
অনেকসময় যুক্তি হিসেবে বলা হয়, যেহেতু অমুক বিষয়টি প্রাকৃতিক, তাই ভাল বা নৈতিক। অথবা তমুক বিষয়টি অপ্রাকৃতিক, তাই মন্দ বা অনৈতিক। এরকম দাবীগুলোকে সাধারণভাবে প্রকৃতিগত হেত্বাভাস বলে। “সাধারণত কী হয়”, “সাধারণত কী হয় না”- এর উপর ভিত্তি করে “কী হওয়া উচিৎ”, “কী হওয়া বাধ্যতামূলক”, “কী হওয়া উচিৎ নয়”, “কী করা যাবে না” এরকম নৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তখন এই বিশেষ হেত্বাভাসটি সংঘটিত হয়। এই হেত্বাভাসটি খুব সাধারণ, এবং বেশিরভাগ লোকই স্বীকৃতি সামাজিক ও নৈতিক রীতির জন্য এটি নজরে নেন না। এর কারণে আমরা যুক্তি থেকে সরে এসে, যা হয় তাকে হতেই হবে বলে মনে করি।
যেমন- সতীদাহ প্রথা যুগযুগ ধরে চলে আসছে। তাই এটি স্বাভাবিক এবং ভাল।
কিন্তু, যুগযুগ ধরে চলে আসা মানেই কোন কিছু ভাল বা সঠিক হয় না। যুগযুগ ধরে চলে আসছে, তাই এটি ভাল মনে করার কোন যুক্তি নেই।
আবার, “যেহেতু ইতিহাসের সূচনা থেকেই যুদ্ধ হয়ে আসছে, সব জাতিই কমবেশী যুদ্ধ করেছে, তাই এটা নৈতিকভাবে খারাপ হতে পারে না!”
কিন্তু যুদ্ধ অবশ্যই একটি খারাপ বিষয়। সেটি সাধারণভাবে অনেকবার ঘটে থাকলেও তা খারাপ।

এই হেত্বাভাসটির গতানুগতিক ব্যবহারটি লক্ষ্য করা যায় যখন “ভাল” এর সংজ্ঞা দেবার চেষ্টা করা হয়। দার্শনিক জি. ই. মুর (১৮৭৩-১৯৫৮) যুক্তি দেন, কোন কিছু প্রাকৃতিক বলে একে “ভাল” বা “নৈতিক” বলে সংজ্ঞায়িত করলে ভুল হবে। এই হেত্বাভাসে প্রকৃতি বা প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের সাথে ভাল মন্দের সম্পর্ক স্থাপন করার চেষ্টা করা হয় বলেই এর নাম “ন্যাচারালিস্টিক ফ্যালাসি”।
উদাহরণ:
প্রস্তাবঃ নারী পুরুষের যৌন সম্পর্ককে সাধারণ মানুষ প্রাকৃতিক এবং স্বাভাবিক বিষয় বলে ধরা নেয়। তারা মনে করেন, যেহেতু এটা প্রাকৃতিক, সন্তান উৎপাদনের সাথে জড়িত, সেহেতু এটি ভাল এবং নৈতিক কাজ। এবং যেহেতু সমকামিতা প্রাকৃতিক নয়, তাই এটি অনৈতিক কাজ।
কিন্তু, প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে ধরে নিয়ে কোন কিছুকে যদি নৈতিক বা ভাল মনে করা হয়, তাহলে একই যুক্তিতে প্রকৃতি মানুষকে অসুখবিসুখ এবং রোগব্যাধি দেয়। তাই একই যুক্তিতে ধরে নিতে হয়, অসুখ বিসুখ যেহেতু প্রাকৃতিক তাই নৈতিক এবং ভাল। এবং ঔষধের দ্বারা প্রকৃতির কাজে বাঁধা দেয়া এবং অসুস্থের চিকিৎসা করা নৈতিকভাবে ভুল। তাই বোঝা যাচ্ছে, প্রাকৃতক বা স্বাভাবিক বলেই কোন কিছু নৈতিক এবং ভাল, তা বলা যায় না।
আবার ধরুন, রাস্তাঘাট নির্মান, বিমান গাড়ি চালানো, এগুলো কোনটাই প্রাকৃতিক নয়। বরঞ্চ প্রকৃতির বিরুদ্ধে গিয়েই রাস্তাঘাট বানাতে হয়, বিমান গাড়ি ইত্যাদি চালাতে হয়। তাই প্রাকৃতিক তাই ভাল বা নৈতিক, এমনটা দাবী করা একটি লজিক্যাল ফ্যালাসি।

১৯. নীতিগত হেত্বাভাস

Moralistic fallacy
যখন কোন নৈতিক বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে “কী হতে হবে” বা “কী হওয়া যাবে না” বা কী ঘটতে পারে না, এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, তখন এই হেত্বাভাসটি সংঘটিত হয়। এডওয়ার্ড সি. মুর তার ১৯৫৭ সালের পেপারে এই হেত্বাভাস সম্পর্কে লেখেন।
উদাহরণ:
১। পরকীয়া নৈতিকভাবে খারাপ (নৈতিক বৈশিষ্ট্য), তাই মানুষের একাধিক যৌনসঙ্গী লাভ করার আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে না (প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য)।
> কিন্তু নৈতিকভাবে পরকীয়া খারাপ হলেও কারো মনে তার আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে।
২। পরকালের না থাকাটি ন্যায্যতা, সমতা বা ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারে না (নৈতিক বৈশিষ্ট্য), সুতরাং পরকাল ও ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে (প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য)।
> কিন্তু পৃথিবীতে ন্যায় বিচার নেই, এটি পরকালে ন্যায় বিচার আছে তার পক্ষে প্রমাণ হতে পারে না।
৩। খারাপ চরিত্রের অধিকারী হওয়া নৈতিকভাবে ঠিক নয়, তাই কেউই খারাপ হতে পারে না, সবাই ভাল মানুষ।
> কিন্তু অনেকেই খারাপ মানুষ হতে পারেন।
৪। নারী ও পুরুষের সমতাবিধান হতে হবে, তাই নারীরাও পুরুষের মত শক্তিশালী হয়।
> কিন্তু কোন নারী পুরুষের মত শারিরিক ক্ষমতার অধিকারী নাও হতে পারেন।

২০. এফারমিং দ্য কনসিকোয়েন্ট

Affirming the Consequent
এটি ফরমাল লজিকের একটি সাধারণ ভ্রান্তি, যেখানে কন্সিকোয়েন্ট বা ফলাফল সঠিক হলে, এন্টিসিডেন্ট বা পূর্বসত্যকেও সঠিক ধরা হয়।

উদাহরণ:
কেউ একজন আমাদেরকে উপর থেকে দেখছেন বলেই, এখনও জগতে ভালো মানুষ আছে।
এক্ষেত্রে সিলোলিজম:
A। ঈশ্বর থাকলে ভালো মানুষ থাকবে
B। ভালো মানুষ আছে
C। সুতরাং, ঈশ্বর আছে।
এখানে সমস্যাটা হচ্ছে A এর কারণে B হয় বলে, B হয়েছে বলে A যে হতেই হবে এমন নয়, কারণ B এর কারণ A ছাড়াও C, D, E সহ আরও অনেক কিছু হতে পারে। এক্ষেত্রে, ঈশ্বর থাকলে ভাল মানুষ থাকবে, এর অর্থ এই নয় যে শুধু ঈশ্বর থাকলেই ভাল মানুষ থাকবে, আরও অনেক কারণেই ভাল মানুষ থাকতে পারে। তাই এটি একটি লজিক্যাল ফ্যালাসি, যাকে আমরা বলি, এফারমিং দ্য কনসিকোয়েন্ট।

২১. চেরি পিকিং

cherry picking fallacy
যখন আমরা বিভিন্ন রকম এভিডেন্স, ডেটা বা সম্ভাবনা থেকে আমাদের অনুকূলে যায় এরকম ডেটা বা এভিডেন্সকেই বা সম্ভাবনাকেই গ্রহণ করি তখন এই হেত্বাভাসটি সংঘটিত হয়।
উদাহরণ:
১।
দাবীঃ কোরানে বলা হয়েছে, পৃথিবী এবং আকাশ(মহাবিশ্ব) এক সময় একসাথে ছিল। আল্লাহ পাক তা আলাদা করেন যা বিগ ব্যাং তত্ত্বের দিকেই নির্দেশ করে।
প্রশ্নঃ বিগ ব্যাং তত্ত্বে কোথাও বলা হয় নি, পৃথিবী এবং মহাবিশ্ব এক সময় একই বিন্দুতে ছিল। আমাদের অবজারভেবল মহাবিশ্বের বয়স ১৩.৮ বিলিয়ন বছর। এবং পৃথিবীর বয়স ৪.৫৪৩ বিলিয়ন বছর। অর্থাৎ, পৃথিবী নামক কোন কিছুর অস্তিত্ব মহাবিশ্ব সৃষ্টির প্রায় ৯ বিলিয়ন বছর পরের ঘটনা। তাহলে, পৃথিবী এবং মহাবিশ্ব একসাথে ছিল, এরকম বলার পেছনে যুক্তি কী?
এছাড়াও, কোরান অনুসারে পৃথিবীকে আগে সৃষ্টি করা হয়েছে(সুরা ফুসসিলাত আয়াত ৯-১২), এরপরে আল্লাহ আকাশের দিকে মনোযোগ দেন। অর্থাৎ আকাশে আমরা যা দেখতে পাই, কোরান অনুসারে সে সবের বয়স পৃথিবী থেকে কম। অথচ, আমাদের কাছে এরকম তথ্য প্রমাণ রয়েছে যে, মহাবিশ্বের অসংখ্য নক্ষত্র পৃথিবীর চাইতে অনেক পুরনো, অনেক প্রাচীন। তাহলে, কোরানের দাবীগুলো সত্য কীভাবে?
> লক্ষ্য করুন, প্রথম কথাটির দাবীদার চেরি পিকিং করছেন। অর্থাৎ বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক তথ্যের সাথে যতটুকু মিলছে, ততটুকুই উনি বলছেন। অন্যান্য বিষয়াদি উহ্য রেখে। তাই এটি একটি ফ্যালাসি, যাকে আমরা বলি চেরি পিকিং।
২।
আমাদের পলিটিকাল ক্যান্ডিডেট তার আয়ের ১০% অভাবীদেরকে দান করেন, প্রতি রবিবার চার্চে যান, এবং সপ্তাহে একদিন হোমলেস শেল্টারে গিয়ে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করেন। তিনি একজন সৎ ও যোগ্য ক্যান্ডিডেট।
এখানে যে বিশেষগুলোর কথা বলা হয়েছে সেগুলোই যে তার সকল বৈশিষ্ট্যকে প্রতিফলিত করবে এমন কোন কথা নেই। হতে পারে তিনি অভাবী সেক্স ওয়ার্কারকে নিজের লাভের বিনিময়ে অর্থ দান করেন, প্রতি রবিবার চার্চ থেকে বেরিয়ে পাশের স্ট্রিপক্লাবে যান, আর প্রতি সপ্তাহে একদিন হোমলেস শেল্টারে যাবার কারণ সেখানে ড্রাগ ডিলারদের ঠেক বসে।
৩।
– আপনার সিভিতে লেখা যে আপনি খুব হার্ড ওয়ার্কার, সব কিছুতে আপনার অনেক মনোযোগ, এবং দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে আপনার কোন সমস্যাই নেই।
– ইয়েস স্যার।
– আমি আপনার আগের অফিসের বসের সাথে কথা বলেছি। তিনি বললেন, আপনি বারবার বিভিন্ন জিনিস পরিবর্তন করেন যা পরিবর্তন করা উচিৎ নয়, আপনি অন্যের প্রাইভেসি নিয়ে খুব একটা কেয়ার করেন না, আর কাস্টোমার রিলেশনের ক্ষেত্রে আপনার স্কোর খুবই খারাপ।
– ইয়েস স্যার। এগুলোও সত্যি।
– খুব ভাল। আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া টিমে তোমাকে স্বাগতম!
সিভি, রেজিউম এসব চেরি পিকিং ইনফরমেশনের ক্লাসিক উদাহরণ। একটি রেজিউমে কেবল এই লেখা থাকে যে কেন আপনি পদটির জন্য যোগ্য। তবে বেশিরভাগ নিয়োগদাতাই বোঝেন যে এগুলো একপাক্ষিক, তাই তারা আরও বেশি এভিডেন্সের জন্য ইন্টারভিউ ও রিকমেন্ডেশন এর দ্বারস্থ হন।
৪। লোকটি ধর্ষকদের গণপিটুনির বিরুদ্ধে লিখছেন, নিশ্চই তিনি ধর্ষণ সমর্থন করেন ও তাদের প্রতি তার সমবেদনা কাজ করে।
ধর্ষকদের প্রতি সমবেদনা কাজ করা, ধর্ষকদের প্রতি সমর্থন থাকে, এসব ধর্ষকদেরকে গণপিটুনি দেবার বিরোধিতার কারণ হতেই পারে, কিন্তু এটাই এর একমাত্র কারণ নয়। মব জাস্টিস সমর্থন না করা, বিচারহীনতার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে থাকা, অপরাধীর আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগে বিশ্বাস করা ইত্যাদি অনেক কারণ থাকতে পারে এটা নিয়ে লেখার। কিন্তু এদের মধ্যে নিজের অনুকূলে কাজ করে এমন একটি সম্ভাবনা নিয়েই যদি দাবী করা হয় তাহলে চেরি পিকিং ঘটবে।

২২. আপিল টু নরমালিটি

Appeal to normality
এই হেত্বাভাসটি সংঘটিত হয় যখন কী স্বাভাবিক, কী স্বাভাবিক নয়, কী হয়ে আসছে, কী কখনও হয় নি, এর উপর ভিত্তি করে যখন কোন নৈতিক সিদ্ধান্ত টানা হয়, কোনটাকে ভাল, কোনটাকে মন্দ বলা হয়। অন্যভাবে বললে, সচরাচর ঘটে কিংবা সচরাচর ঘটে না, সবাই করে কিংবা সবাই করে না, এর ওপর ভিত্তি করে যদি কোন কাজকে নৈতিক/ ভাল বা অনৈতিক/মন্দ কাজ বলে সিদ্ধান্ত টানা হয়, তাহলে তাকে আপিল টু নরমালিটি ফ্যালাসি বলা হবে।
উদাহরণ:
১। ১৪০০ বছর আগে পরাজিত বাহিনীর লোকদের হত্যা করে তাদের স্ত্রী কন্যাদের তুলে এনে গনিমতের মাল নাম দিয়ে তাদের সাথে যৌন সম্পর্ক করাটাই স্বাভাবিক ছিল। তাই এই কাজকে খারাপ বলা যাবে না।
> কিন্তু ১৪০০ বছর আগে কোন কাজ খুবই স্বাভাবিক ছিল, সকলেই করতো, সেই কারণেই তা নৈতিক বা ভাল কাজ বলে গণ্য হতে পারে না।
২। বাঙলাদেশে সব সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিই ঘুষ খায়। তাই ঘুষ খাওয়ায় খারাপ কিছু নেই।
> কিন্তু সকল কর্মকর্তা কর্মচারি ঘুষ খেলেই, দুর্নীতি করলেই দুর্নীতি করা বৈধ বা নৈতিক বা ভাল কাজ বলে গণ্য হতে পারে না।
৩। বাঙলাদেশে তারেক জিয়া দূর্নীতি সৃষ্টি করেন নাই। তার আগেও দূর্নীতি হতো। তারেক জিয়ার আগে আওয়ামী লীগও দুর্নীতি করেছে। দুর্নীতিই বাঙলাদেশের মত দেশে এই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাভাবিক বিষয়। সবাই করে। পুলিশ আমলা কর্মচারী কর্মকর্তা সকলেই। তাহলে তারেক জিয়া করে কী অপরাধ করেছে?
> কিন্তু তারেক জিয়া দুর্নীতি সৃষ্টি করে নি, তার আগেও দুর্নীতি হতো, সকলেই করতো, সেটাই সেই সময়ে স্বাভাবিক ছিল, এগুলো কোনটাই দুর্নীতিকে ন্যায্যতা দান করে না। দুর্নীতি করা, জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ লুট করা খারাপ এবং সকলে করলেও সেটা খারাপই থাকে। সকলেই করতো এই দোহাই দিয়ে কাজটিকে ভাল কাজ বলে প্রমাণ করা যায় না।
৪। হযরত মুহাম্মদ ৬ বছরের আয়শাকে বিয়ে করে ৯ বছরে বৈবাহিক যৌনজীবন শুরু করেন। ঐ সময়ে এটাই ছিল স্বাভাবিক। সকলেই করতো। আওয়্যামে জাহিলিয়াতের যুগেও এটি প্রচলন ছিল। তাই নবী মুহাম্মদ কোন খারাপ কাজ করেন নি।
> কিন্তু ঐ সময়ে সকলে করে থাকলেও, সকলের কাজই খারাপ কাজ বলে গণ্য হবে। সকলে করতো তাই একজনার কোন অসভ্য খারাপ কাজকে ভাল কাজ আমরা বলতে পারি না। সকলে করলেও একটি খারাপ কাজ খারাপ থাকে।
৫। আমি একটু ওবিস। এরকম একটু ওবিস হওয়া যুক্তরাষ্ট্রে নরমাল। সুতরাং আমি ঠিকই আছি।
> যুক্তরাষ্ট্রে একটু ওবিস হওয়া নরমাল হলেও, এটা যে স্বাস্থ্যের জন্য ভাল হবে এমন নয়।
৬। গ্রামে সব নারীরই তো বাল্যবিবাহ হচ্ছে, এটা এখানে একটা নরমাল ব্যাপার, সুতরাং এটায় ক্ষতির কিছু নেই…
> একই কারণে এটি হেত্বাভাস।
৭। এরকম ধর্ষককে ধরে গণপিটুনি দেবার ঘটনা আগে কোনদিন ঘটেছে? এগুলো আমাদের সমাজে খুব একটা নরমাল না। তাই এটা নিয়ে এত উদ্বিগ্ন হবার কিছুই নেই। গণপিটুনি দেয়াটা ঠিকই হয়েছে।
> ধর্ষককে গণপিটুনি দেবার ঘটনাটা আগে কখনও না ঘটলেও, এটি নরমাল না হলেও, এই বিষয়টি যে গুরুত্বপূর্ণ না, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, মব জাস্টিসের সংস্কৃতি ও মানব নৈতিকতায় এর কোন প্রভাব থাকবে না, বা ধর্ষকের প্রতি মব জাস্টিস যে নৈতিক হয়ে যাবে এমন কোন কথা নেই। বরং এরকম ক্রিটিকাল কিছু ইস্যুতে, যেখানে অনেকেই মব জাস্টিসের পক্ষে থাকে, এমন ক্ষেত্রেই এসবের আলোচনা বেশি হওয়া উচিৎ, যুক্তিতর্ক হওয়া উচিৎ কারণ এই ক্রিটিকাল টাইমেই ক্রিটিকাল থিংকিং এর বিকাশ ঘটে।

২৩. ঈশ্বরের দোহাই দেয়া বা আপিল টু হ্যাভেন

Appeal to heaven
যখন কোন দাবীকে এই যুক্তিতে গ্রহণ করতে বলা হয় যে “ঈশ্বর এটাই চেয়েছেন”, “এটাই ঈশ্বরের ইচ্ছা” বা “তিনি ঈশ্বর তাই তিনি এটা করতে পারেন”, তাহলে এই হেত্বাভাসটি সংঘটিত হয়। এই কুযুক্তিটিকে ঈশ্বরের দোহাই বা আপিল টু হেভেন বলে।
উদাহরণ:
১।
বিচারক: কেন তুমি ওদেরকে হত্যা করেছ?
অভিযুক্ত: কারণ ঈশ্বর আমাকে স্বপ্নে এই আদেশ দিয়েছিলেন।
আধুনিক বিচারব্যবস্থার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিৎ, কারণ বিচারব্যবস্থা এভাবে কাজ করে না। কিন্তু মুশকিল হল মানব-চিন্তা অনেক সময়ই এভাবে কাজ করে। প্রতিদিনই অনেক মানুষ এই ভেবে কোন কাজ করছে যে ঈশ্বর তাই চান, ঈশ্বর এতে খুশি হবেন, এসব কাজ করলে কোন সমস্যা নেই কারণ এটাই ঈশ্বরের বিধান। আর এরকম চিন্তার কারণে অনেকে অন্যের ক্ষতিও করে ফেলেন। আধুনিক বিচারব্যবস্থা এসবের তোয়াক্কা করেনা বলেই হয়তো অন্যের ক্ষতি করার পেছনে এরকম যুক্তি আর খাটে না, অপরাধ তো অপরাধই থাকে।
২।
– কেন আব্রাহাম ও আইজ্যাকের গল্পটিকে একটি “অসাধারণ” খ্রিস্টীয় গল্প হিসেবে পড়ানো হয়? লোকটা তো তার সন্তানকে প্রায় জীবিত পুড়িয়েই ফেলেছিল!
– কারণ আব্রাহাম ঈশ্বরের ইচ্ছারই অনুসরণ করছিল। এটা আব্রাহামের জন্য অনেক কষ্টকর হলেও সে ঈশ্বরভক্তির কারণে করতে যাচ্ছিল। এটা কি অসাধারণ গল্প নয়?
এখানে বোঝাই যাচ্ছে যে, নিজের সন্তানকে আগুনে পোড়ানোর গল্প ততক্ষণ পর্যন্তই “অসাধারণ” যতক্ষণ পর্যন্ত এটা ঈশ্বরের ইচ্ছা হয়ে থাকে। ঈশ্বরের ভক্তির জন্য সন্তান হত্যা করার ইচ্ছা পোষণ করলেই সন্তান হত্যা করার চেষ্টা ভাল কাজ হয়ে যায় না, তাতে যতই ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি প্রকাশ পাক। আর তাই এই গল্পটিও “অসাধারণ” হয় না। কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণে এরকম ঈশ্বরের ইচ্ছার ব্যাপারটি আনা অর্থ যুক্তিকে ত্যাগ করা। এক্ষেত্রে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন, ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিই প্রধান হয়ে যায়, আর সেজন্য যেকারও ক্ষতি করার ব্যাপারটি নৈতিকতার ঊর্ধ্বেও চলে যেতে পারে। যেমনটা গল্পে আব্রাহামের ক্ষেত্রে হয়েছিল, আর তাই এরকম হেত্বাভাস বিপজ্জনকও হতে পারে।
৩।
– নিজের ধর্ম ব্যাতীত অন্য ধর্মের লোকজন অধস্তন বা নিকৃষ্টতম প্রাণী- এই কথা কোন মানুষ বলেনি, ধর্মগ্রন্থে স্বয়ং ঈশ্বর বলেছেন। এরকম কথা মানুষ বললে তিনি সাম্প্রদায়িক হবেন, কিন্তু ঈশ্বর যেহেতু সবার সৃষ্টিকর্তা, তাই তিনি এই কথা বলতেই পারেন।
এখানে মানুষের সাথে ঈশ্বরের একটি পার্থক্য সূচিত করে বলা হচ্ছে যে মানুষ এরকম কথা বললে সাম্প্রদায়িকতা হবে, কিন্তু ঈশ্বর এরকম বললে সাম্প্রদায়িকতা হবে না। ঈশ্বর এই কথাটি বলছে বলেই এটা সাম্প্রদায়িক হবে না, এটা সত্য এবং সঠিক হয়ে যাবে। এই কথাগুলোতেও যুক্তি ত্যাগ করা হয়, এবং এটি আপিল টু হ্যাভেন নামক যৌক্তিক হেত্বাভাসের মধ্যে পরে। এছাড়া ঈশ্বরের এই কথাটি মানুষের উদ্দেশ্যেই বলা, মানুষকে জানানোর জন্য ঈশ্বর যেসব আদেশ দেন তাই ধর্মগ্রন্থে সংকলিত হয়। কাজেই এই এরকম বিধান দেয়া হয়েছে যাতে ঈশ্বরের কথা ভেবে মানুষ এটাই বিশ্বাস করে, আর ঈশ্বর এক্ষেত্রেও ঈশ্বর এভাবে বলেছেন বলে ভিন্ন ধর্মের লোকেরা অধস্তন, লেস হিউম্যান বা ঊনমানব এরকম দাবী করাটাও এই হেত্বাভাসটির অন্তর্গত হয়।
যেমন ধরুণ, হিটলার দাবী করতে পারে, ঈশ্বরের নির্দেশেই সে ৬০ লক্ষাধিক ইহুদি নিধন করেছে। বা মাওলানা মওদুদি যখন আহমদীয়াদের ওপর সাম্প্রদায়িক আক্রমণের উষ্কানি দিয়েছে, সেও একই দাবী করতে পারে। যে এটি ছিল আল্লাহর আদেশ। তারা বলতেই পারে, ঈশ্বর ভাল বোঝেন বলেই এই কাজ করতে আদেশ দিয়েছেন। এভাবে আসলে প্রত্যেকেই নিজ নিজ কাজকে ন্যায্যতা প্রদান করতে পারে ঈশ্বরের দোহাই দিয়ে। সেই কারণে এই যুক্তি কোথাও গ্রহণযোগ্য নয়। এই লজিক্যাল ফ্যালাসি বা হেত্বাভাসটি শুধু কুযুক্তিই নয়, বিপদজনক ধারণাও বটে।
এই প্রসঙ্গে কথিত ঈশ্বরের আদেশে Deanna Laney murders , Sharon Dalson , আল্লাহর আদেশে রেজওয়ানা হত্যাকাণ্ড, ঈশ্বরের নির্দেশে Samuel Warren Shaffer এর ৮ বছরের বালিকা বিবাহ উল্লেখযোগ্য। এরকম হাজার হাজার ঘটনা রয়েছে যারা ঈশ্বরের দোহাই দিয়ে নানা অপরাধমূলক কাজ করেছে।

শেষ কথা

লেখাটির একটি অংশ লিখে সাহায্য করেছেন সুলেখক সুমিত রয়। ইচ্ছা আছে, লেখাটি ক্রমান্বয়ে বর্ধিত হবে। আপনি কিছু যুক্ত করতে চাইলে অনুগ্রহ করে আপনার নাম সহকারে কমেন্টে উল্লেখ করবেন। বানান ভুল সংশোধনকে স্বাগত জানাই। যুক্তি তর্ক বিতর্ক আলাপ আলোচনা সমালোচনা চলুক, সেটাই আমাদের সকলের কাম্য। চাপাতি নয়, যুক্তি ধারালো হয়ে উঠুক। মুক্তচিন্তার জয় হোক।