Wednesday, August 31, 2016

লিখেছেন মুরশেদ

মদনের অন্যদিন


লিখেছেন মুরশেদ

তিনি নাজিল হন রাত গভীর হলেআলোতে তাকে দেখা যায়নাতার প্রিয় হল অন্ধকারপবিত্র ভুতানী অন্ধকারঅন্ধকার যত গাঢ় হয়, তাকে তত পষ্ট দেখা যায়তিনি নিরাকারতিনি সর্বত্র বিরাজিত ভুতেশ্বরতাকে দেখতে পাওয়া খুবই ভাগ্যার ব্যাপারযার তার সাথে তিনি দেখা দেন নামদন তার অতি প্রিয় বন্ধু ও কারবারী, তাই মদন চাইলেই তিনি নাজিল হনতিনি সর্বত্র থেকে মুহুর্তে একত্র হনতারপর আমায় দেখা দেনসেদিনও দিলেনদেখা মাত্র তার নির্ধারিত শ্লোক আওরালামঃ ভুতেশ্বর ছাড়া বাকী সব ভুত ফালতুমদন তাহার একমাত্র ঠিকাদার
ভুত বাবা খুশী হলেন নামেজাজ মনে হয় খুব খারাপবললাম- বাবা, রেগে আছেন?
তিনি কোন কথা বললেন নাআবার আওরাতে শুরু করলাম-ভুতেশ্বর ছাড়া বাকী সব ভুত ফালতুমদন তাহার একমাত্র ঠিকাদার’ ; ‘ভুতেশ্বর ছাড়া বাকী সব ভুত ফালতু মদন তাহার একমাত্র ঠিকাদার’; ‘ভুতেশ্বর ছাড়া ……
তিনি হাত উচু করে থামিয়ে দিলেনআমি ঢোঁক গিললামআজ কতবার শ্লোক পরেছিস?’
কতবার পরেছি? কী উত্তর দেবো? আজ তো মনে হয় পড়িই নাইআজ সারাটাদিন কাটিয়েছি বিধর্মী মধুমালার সঙ্গেমধুমালা আমাকে নরকে নেবেসেও নরকবাসী হবেআমার নরকের সঙ্গিসাত সকালেই তার ফোন পেয়েছিলাম
-মদন, শাহবাগে চলে, আয়
-কেন, আজ তোর অফিস নেই? কাজ কাম নেই, শাহবাগে বসে আছিস?
মাস হল সে একটা চাকরী নিয়েছেএকটা গার্মেন্টস কোম্পানিতে জুনিয়র কমার্শিয়ালবেতন বলার মত কিছু না, মা ছেলের চলে যায়আসছে জানুয়ারীতে ছেলেকে স্কুলে দিতে হবেপয়সাও কিছু জমাতে হবেআমি কিছু টাকা পয়সা দিতে চাইলে নেয়নাবলে- ভুতের পয়সায় মুতিখুবই বেধার্মিক, বেতমিজ আর বে-ভুত মেয়েছেলেকবে যে তার উপর ভুতের গজব পড়বে? ভুত অতি উত্তম গজব প্রদানকারী
পুবালী ব্যাংকের গেটের সামনে তাকে পেলামসে যখন খুব ব্যস্ত থাকে, তাকে খুব অদ্ভুত দেখায়তার ছিপছিপে শ্যামলা শরীর পূবালী বাতাসে উড়ে চলা ঘন মেঘের মত সহসা বিদ্যুৎ হানে
বললাম- মেঘমল্লিকা, আজ কি ভাসাবে মদনের দুনিয়াদারী
-পিরিত বন্ধ কররিক্সায় ওঠ
মানুষ গিজগিজ করছে ঢাকা মেডিক্যালেবেড গুলিতে জায়গা নাইঅনেককে মেঝেতে শোয়ানো হয়েছেআহত আরও আসছেএকেক জনের শরীরে হাজার হাজার স্প্লিন্টার কারও চোখ উড়ে গেছেহাতের কব্জি উড়ে গেছে পাচ বছরের এক শিশুরসে আর কোনদিন আইসক্রিম ধরে খেতে পারবে না
কেউ নতুন ভর্তি হচ্ছেকেউ ভর্তি হয়ে কাতরাচ্ছেকারও কাতরানি থেমেছেপাড়ি দিয়েছে ভুতেশ্বরের কাছেমানুষ তাও বিশ্বাস আনে নাবড় বেঈমান মানুষ!
লাইন ধরে রক্ত দিলামঅনেকেই এসেছে রক্ত দিতেদিচ্ছেকিন্তু যথেষ্ট নয় আরও রক্ত লাগবেএত রক্ত ভুতেশ্বররে রাজ্য মিলবে নাশরিরের অঙ্গ দান মহা পাপের বিষয়বাচা মরা ভুতের হাতেভুতের উপর ভুতগিরি ভুতশ্বরের না পছন্দ
তবুও রক্ত দিতে হলমধুর কথা ফেলতে পারিনামধুমালার অবাধ্য হবার সাধ্য নেই মদনের
বিকেলে মধুর সাথে ব্যাংকে গেলামতার সেখানে কাজ ছিলকয়েকটা ডকুমেন্ট এসেছের-ম্যটেরিয়ালস পড়ে আছে পোর্টেডেমারেজ খাচ্ছেআগামী তিন সপ্তার মধ্যে এই শিপমেন্ট করতে না পাড়লে তাদের কম্পানির তিন হাজার শ্রমিকের বেতন হবে নামধুকে খানিত অসহায় মনে হল
মধুর জন্যে খারাপ লাগলকিন্তু বাকী তিন হাজারের জন্যে নাতারা মুলত নারী শ্রমিকনারীদের কেন বেতন পেতে হবে? তাদের কাজ স্বামীদের টাকা পয়সা হিসেব রাখা
ঐ ব্যাংকের সিনিয়র ক্যাশিয়ার মতলব আলি ভুতেশ্বরের দারুন ভক্তবছর তিনেক আগে এ টি এম বুথে জাল নোট সরবরাহের একটা মিথ্যে মামলায় ফেসে গিয়ে চাকুরী যায় যায়শেষে ভুতবাবার কৃপায় আর একজন ডাইরেক্টর সাহেবে সুপারিশের সুবাদে টিকে গেছেসেই থেকে সে নিয়মিত ভুতের চাদা দেয়আজও দিলআমার পকেট স্বর্গিয় কৃপায় ভরে গেল
ব্যাংক থেকে বেরিয়ে ছুটলাম টঙ্গিমধুদের ফাক্টরিতেআজ কেন জানি মধুর নেশা ধরে গেছেসে যেখানেই যায়, তার সাথে যেতে হবেমধু অবশ্য মানা করেছিল কিন্তু আমি বললাম- রাস্তা ঘাটের অবস্থা ভাল নাআব্দুল্লাহপুরে বাস পূরানো হচ্ছেআজকে ঢাকায় টার্গেট আছে তিনটি, দুটি পুরেছে, আরও একটি পুড়বেআমি তোর সাথে থাকি
-আমার সাথে কেন?
-যদি পুড়ি, দুজনে একসাথেই পুড়বএক চিতায় মধুমালা আর মদন কুমার!
-তোর ভুতবাবা মাইন্ড করবে না!
-করুকমধুমালার জন্যে আমি পুড়তে পুড়তে নরকে যাবসেখানেও পুড়ে পুড়ে মদন শুধু মধুর হবেআর হিংসার আগুনে পুড়বে ভুতেস্বর!
-বাসের জানালা দিয়ে একচিলতে ম্রিয়মান রোদ্দুর মধুমালাকে ভরিয়ে দিলতার চিবুক ছুয়ে দিয়ে বললাম- তুই আমাকে ভাসিয়ে দিলি মধু
ভুতেশ্বর বললেন- ঐ বেধর্মি মেয়েটা যখন এতই যাদু মন্ত্র করেছে, তাকে হরন করহরন করে ইচ্ছে মত ভোগ করবেধর্মি নারী ভোগ করতে তো আর আমি বারন করিনি তারে বান্দী বানিয়ে রাখবান্দির গর্ভে যা জান্মাবে তা হবে তো দাসইচ্ছে করলে তাকে রাখতেও পারিস, কিম্বা বেচতেও পারিসচউদি দেশে বেচলে ভাল দাম পাবিঅযথা ভুত রাজ্য অশ্লিলতা ছড়ানোর মানে কী ?
-মধু কে হরন করতে পারব না
-কেন?
এর উত্তর কী দেবএই সর্বজ্ঞানী ভুতেশ্বরকে কে বলে দেবে ভালবাসা হরন করা যায় না

গোয়ার স্বর্গবাস ১


লিখেছেন মুরশেদ 

ভুতেশ্বর সত্যিই কথা রেখেছেজয় বাবা ভুতেশ্বর ! গোয়ার স্বর্গপ্রাপ্তি হয়েছে
প্রথমে কথাটা বিশ্বাস হয়নিদুজন দশজন নয়, শত শত নয়, হাজার হাজার নয়, একবারে ত্রিশ লক্ষ মানুষ ঠাণ্ডা মাথায় হত্যার মাস্টার মাইন্ড, ভুতেশ্বরের অতি পবিত্র ভুতেস্তানের খুনে নরপতি গোয়া মরণোত্তর স্বর্গ প্রাপ্ত হয়েছেন ! বাবা ভুতেশ্বরের করুনার অন্ত নেই !
গোয়ার রাজসিক স্বর্গবাস স্বচক্ষে দেখার জন্যে মনটা খুব আকুপাকু করছিল কিন্তু জ্যন্ত মানবের স্বর্গ দর্শনের নিয়ম নেইতবুও ধরলাম ভুত বাবাকেযদি কোন ব্যবস্থা থাকে !
ভুতবাবা এই অধমের আকুতি রাখলেনতিনি স্বর্গচারী ডানা ওয়ালা ছাগী পাঠিয়ে দিলেনবুধবার দিবাগত আমাবস্যার রাত বারোটা সাত মিনিটে শুরু হল আমার ছাগ যাত্রাছাগীটা ছিল কিছুটা মরা ধরনেরপ্রথম আকাশ পেরুতেই তার জিহবা বেরিয়ে যাবার দশাবললাম- কি মশাই, এভাবে চললে স্বর্গে পৌছুতে পৌছতে তো আমার আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে যাবেতখন আর আমারে ফিরিয়ে আনার দরকার পড়বে নাতোমার উদ্দ্যশ্যটা কী, বলতো বাপু?
-জনাব, ক্ষমা করবেনআমি মশাই না, মাসীপুংলিঙ্গ না স্ত্রী লিঙ্গ
-ঠিক আছে, ছাগ মাসীআমরা আর কতক্ষনে স্বর্গে যাবতোমার গতিটা একটু বাড়ানো যায় না?
ছাগী কিছুটা গতি বাড়াল বটে, তবেঁ লম্বা লম্বা শ্বাস নিতে লাগলবেচারাকে খুব কাহিল মনে হলবললাম- থাক, বেশী জোরে যাবার দরকার নেইবরং একটু ধীরে সুস্থে দেখতে দেখতে যাইতুমি বরং পরে আকাশে খানিকটা জিরিয়ে নিও
মনে হয়ে সে খুশী হলবিড় বিড় করে বলল- আর কত পারি, বলেনআমি ছাগলের বাচ্চা ছাগলমানুষের এমন পাশবিক অত্যাচার আর কত সহ্য করি বলেন?
-অত্যাচার! পাশবিক! কে করে এই স্বর্গ দেশে?
-সবাই করেসব স্বর্গবাসীই করেতবেঁ আমার মনিব করে সবচাইতে বেশীসে এই সবের মাস্টার
-কোন সবের? কে তোমার মনিব?
-কেন গোয়া, যার কাছে আপনেরে নিয়া যাইতেছি
-, তুমি গোয়ার ডিউটি করসে বুঝি খুব ঘুরাঘুরি করে?
ছাগী খুব হাসলকোন কথা বলল না
-কি উত্তর দিলা না যে?
-আপনে যে কী কন? কোথায় ঘুরাধুরি করব? স্বর্গে তো কেউ ঘুরতে যায় নাযায় ছহবত করতে আর মদ্যপান করতেখাইতে আর ঘুমাইতে
-শুধু এই করে কী আর সময় কাটে?
-আর কি চাই?
-কেন, গান বাজনা, শিল্প কলা, চিত্র কলা, উপন্যস, নাটক, সিনেমা- কত কিছুই না লাগে সময় কাটানোর জন্যে…………
ছাগী আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল- শিল্পকলা নিষিদ্ধ বিষয়জগতে যারা শিল্প সহিত্য চিত্রকলা চর্চা করে তারা স্বর্গ থেকে বিতারিতস্বর্গ কেবল তাকের জন্য যারা শরীর সর্বস্ব, এবং সুকুমার বৃত্তিহীন
ও আচ্ছাতো তোমার কষ্টটা কীসের? গোয়া তোমাকে কী ধরনের পেইন দেয়?
-ছহবত পেইনগরু ছাগল দুম্বা উট, কিছুতেই তার অরুচি নেইগত রাতে সাতশবার সে আমাতে উপগত হয়েছ!
-এতো বিরাট অন্যায়, একটা অবুঝ প্রাণীর উপর এমন পাশবিকতা! কেউ কিছু বলে না?
-কে বলবে? কি বলবে? স্বর্গবাসীর সকল ইচ্ছা পুরন করতে ভুতেশ্বর বাধ্যতারা যা ইচ্ছে প্রকাশ করবে, ভুত তাই তার জন্যে সিদ্ধ ঘোষণা করবেএটাই স্বর্গের আইনদেইখেন- আপনি যেন খুব বেশী তার কাছে থাইকেন নাতার যদি আপনের উপর ইচ্ছা জাগ্রত হয়ে যায়, তাইলেই সর্বনাশ! ভুতেশ্বর আপনাকেও তার জন্যে সিদ্ধ ঘোষণা করে দিবে
ছাগযান অবশেসে শেষ আসমান পার হয়ে পৌছে গেল গোয়ার স্বার্গ বাড়ীর বারান্দায়তখন সকাল হয়ে গেছেবেলা আনুমানিক এগারটা হবে
বিশাল আলীশান বাড়ী পেয়েছেশত শত কক্ষবিশাল বাগানচারটে বিস্তীর্ন ঝর্নাপানির, দুধের, মধুর আর মদের ঝর্না
প্রতিটা ঝর্নার আশে পাশে পান পাত্র নিয়ে বসে আছে ছোট কিশোর বালকেরা মনি-মুক্তর মত তাদের চেহারাভিতর থেকে আদেশ আসা মাত্র শুরু হয়ে যায় শিশুদের হন্তদন্ত যাত্রাকেউ পানি, কেউ দুধ, কেউ মধু আর একু মদ নিয়ে ছোটে মদের কদর একটু বেশী
পাশে বাগানে অনেকগুলি বেঞ্চি পাড়া আছেবেঞ্চি গুলিতে স্বর্গবালারা উৎকণ্ঠিত অপেক্ষায়কথন কার ডাক পড়েতারা আনত নয়নাপ্রত্যেকে গায়ে ট্যাগ লাগানো আছে- আমাকে কোন মানুষ কিম্বা কোন প্রেত কখনো ছোয়নিতাদের ত্বক এত পাতলা যে, দেহের স্কেলিটন পরিস্কার দেখা যায়এমন হাড় জিরজিরে কঙ্কালের উপর কেউ উপগত হয়, ভাবতে অবাক লাগে?
তাদের দেখে মধুমালার কথা মনে পড়লমধুমালাবাঙলার কৃষ্ণ নারীস্বাধীন, সুঠাম, আর নির্ভিকতার উপর কেউ উপগত হয় নাসে পুতুল নাসে আত্বপ্রত্যয়ী মানুষসে এক নিমিষে মদনকে হরন করতে পারে৭২ স্বর্গ বেশ্যা মধুমালার কাছে নস্যি
হাটতে গোয়ার খাস কামড়ার কাছে গেলামকামড়ার দরোজা ভেতর থেকে বন্ধবাইরে একটা সর্গবালক নগ্ন হয়ে শুয়ে আছেআরেকটি বালক তার পায়ুপথে তরল জাতীয় পদার্থ ঢালছে
বললাম- একি হচ্ছে?
শোয়া বালকটি বলল- এখন চলছে স্বর্গবালা নম্বর-৩৯ এর ডিউটিএর পরে আমার পালাআমাদের মুনিব একজন বালার পরে একজন বালকে উপগত হনউনি খুব রসিক আর রুচীবান মানুষভুতেশ্বরের অতিপ্রিয় শিষ্য
আমি বললাম- আমি তো তার সাথে দেখা করতে এসেছিঢাকা থেকেআমি ঢাকার মদনতার সাথে এখন দেখা হবে না?
এখন হবে নাউনি দুপুর পর্য্যন্ত ৭২ দাসী আর সমান সখ্যক বালক সঙ্গ করেন তারপরে তিনি আহার করেনতারপর বিশ্রামবিকেলের আগে আপনি তার দেখা পাবেন না
দুপুরের মধ্য এত কম সময়ে এত সহবাস কীভবে হবে? তিনি কী মিনিটে মিনিটে একটা করে সারেন?
নাস্বর্গের এক এক দিন মর্ত্যের পঞ্চাশ হাজার বছরতাই সময় এখানে কোন সমস্যা না, সমস্যা সময় কাটানোর
হিসেব কষতে গিয়ে ঘেমে উঠলামবিকেল হতে অন্থত কুড়ি হাজার বছর অপক্ষে করতে হবেসময় কাটানো যে কত বড় সমস্যা তা স্বর্গে না গেলে বোঝা যায় না!

মদনের উৎসর্গ উপাখ্যান

লিখেছেন মুরশেদ বিষয়: অবিশ্বাসের জবানবন্দী,
নির্দেশ পর্ব
তাঁর বক্তব্য ছিল খুবই শর্ট কার্টখুবই ইংগিত ময়কয়েকটি মাত্র শব্দঃ
হে মদন, উৎসর্গ কর, তোমার প্রিয় বস্তুকে
ব্যাসআর কিছু নেইকিসের উৎসর্গ, কোথায় উৎসর্গ, কিভাবে উৎসর্গ, কোন ডিটেইলস নেইভুতেশ্বরকে নিয়ে এই এক ঝামেলাক্লিয়ারকাট কিছু বলে না কখনও আবার একই কথা বার বার বলেকখনও একেবারে খাপছাড়া কী যে বলে বসে কিছুই বোঝা যায় নারূপকখালী রূপকযে বুঝবে না সে মদনা!
উৎসর্গ তো বুঝলামকিন্তু কোন বস্তু? কিভাবে উৎসর্গ? কোথায়? কোন ঘোড়ার ডিম ভুতেস্বরের পছন্দ কে জানে? সে সোজাসুজি কিছু বলে নাখালী ত্যানা পেচায়ভুতেশ্বর তেনা প্যাচানোর মাস্টার!
বউরে বললামবললাম- তোর গয়নাগাটিগুলান দেভুতেশ্বরের আদেশপ্রিয় জিনিস উৎসর্গ করতে হবেতাঁর কথার নড়চড় করা যাবে নাকরলে মহা বিপদতবে কী বিপদ জানিনা
খুবই বে-দ্বীন টাইপের মেয়ে সেগয়নাগাটি জড় করে নিয়ে বাপের বাড়ী চলে গেলযাবার আগে বলে গেলঃ বাসায়ই থেকবড় ভাইয়াকে খবর দিয়েছি তোমাকে পাবনায় নিয়ে যাবে
বউ চলে গেলতাঁর বড় ভাই এলআমাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে নানা প্রশ্ন করল বিশেষ করে আমার বংশে কেউ পাগল ছিল কিনা সেটাই তাঁর মুখ্য জিজ্ঞাস্য বললাম- নাআমার বাবা অত্যধিক জ্ঞানী মানুষ ছিলেন
-কেমন জ্ঞানী মানুষ? –তাঁর চোখে মুখে স্পষ্ট বিরক্তি
তিনি পীর ছিলেনতাঁর দেয়া পানি পড়া খেয়ে পোয়াতি হয়নি এমন নারী আমাদের অঞ্চলে নাই
-তাই নাকি! তো তিনি তোমাকে পানি পড়ার তরিকা শিখিয়ে দেননি?
জি নাউনার কাছে জ্বীন ছিলআমার নেই
-উনার পানি পড়ায় পাগল ভাল হত না? খোয়াব দেখা পাগল?
বুঝলাম তিনি আমার উপর খুব রেগে আছেনভুতেশ্বরে তাঁর বিন্দু মাত্র বিশ্বাস নেইবেটা ঘোর নাস্তিকআস্তে আস্তে বললাম- ভাইয়া, আসলে তিন দিন একই স্বপ্ন দেখাছিতিনি খালী বলেন- হে মদন, উৎসর্গ কর, তোমার প্রিয় বস্তুকে কিন্তু কী যে উৎসর্গ করব তা বলেন নাভীষণ বিপদে আছি
আমার কথা তাঁর বিশ্বাস হল বলে মনে হল নাকিছুক্ষন এক দৃষ্টে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলেনমনে হল তিনি এক আজব চিরিয়া দেখছেনশেষে বল্লেন-রাতে ভাল ঘুম হয়?
বললাম- জ্বী নাখালী স্বপ্ন দেখিতারপর ঘুম ভেঙ্গে যায়তখন ঘামতে থাকি
-স্বপ্নে কি খালী ভুতই দেখ? নাকি অন্য কিছুও দেখা যায়?
নানান জিনিস দেখিএকদিন দেখলাম-আমি ছাগলে চড়ে আকাশে উড়ে বেরাচ্ছি হটাত তাঁর পিঠ থকে পড়ে যাচ্ছিনীচে একটা অজগর সাপ হা করে আছেসোজাসুজি তাঁর মুখে গিয়ে পরছি
-তারপর? সাপ তোমাকে গিলে ফেলল?
তক্ষুনি ঘুম ভেঙ্গে গেলউঠে শ্লোক ইউনুস পড়লামএই শ্লোক পড়ে মাছের পেট থেকেও বের হওয়া যায়ভুতেশ্বর বলেছে
-ঘুমের ওষুধ খাওআজে বাজে চিন্তা কম করভাল মুভি দেখবই পড়দেখবে ভাল লাগছে
আরও অনেক উপদেশ দিলেনএবং ইংগিতে বেশ বুঝিয়ে দিলেন-দরকার পড়লে আমাকে পাবনায় পাঠাবেন
অনেক অনুনয় বিনয় করলামবললাম- বাচ্চাদের স্কুল খোলাএমন সময় বউয়ের বাসায় থাকা দরকার
তাঁর পাষাণ মন গলল নাবললেন- চিন্তা কর নাবাচ্চারা আপাতত আমার কাছেই থাকসেখান থেকেই স্কুলে যাবেসমস্যা নেই
সেই রাত্রে আবার ভুতেশ্বরের দেখাসেই একই নির্দেশ- হে মদন, উৎসর্গ কর, তোমার প্রিয় বস্তুকে
বললাম- হে মহান ভুত্ব্বেশ্বর- আমার বে-দ্বীন বউ সব গয়নাগাটি নিয়ে বাপের বাড়ী গেছেতবে কী উৎসর্গ করি?
-মূর্খ কোথাকার? হে মদন, উৎসর্গ কর, তোমার প্রিয় বস্তুকে
তারপর আর ঘুম হল নাসারারাত এপাশ ওপাশ করলাম
তিনি খুব প্রিয় জিনিস চেয়েছেনকার প্রিয়? তাঁর না আমার? আমার প্রিয় জিনিস দিয়ে তিনি কী করবেন? খাবেন? ভুতেশের কী খান? কী খেতে তাঁর সবচাইতে ভাল লাগে? কী খেতে দিলে তিনি হাপুস হুপুস করে খাবেন?
তাঁর কী খুব খিদে পেয়েছে? হতেও পারেআজকাল মানুষেরা ভীষণ নাস্তিক প্রকৃতির হয়ে গেছেকেউ কিছু আর উৎসর্গ করে নামসজিদে, মাজারে, মঠে, মন্দিরে যা কিছু ভক্তরা দিয়ে যায়, পুরুতেরা তা লুটেপুটে খায়কে ভাবে ভুতেশ্বরের কথা?
আহারে, বেচারা না জানি কত দিন অভুক্ত আছেন? মুখ ফুটে তিনি চেয়েছেন? আমি, এই পাপী মদন কি না দিয়ে পারি?
বউকে দিয়ে হবে নামধুমালার কাছে যেতে হবেহ্যা মধুমালাই সমাধান দিতে পারেহতে পারে সে বে-ধর্মী, কিন্তু সে মদনের অন্তপ্রানমদনের জন্য সে সব কিছু উজার করে দেয়সে মদনের প্রানেশ্বরীসে মধুমালা
প্রস্তুতি পর্ব
মধুর হাসিতে পদ্ম ফোটেতাঁর দেহে নিপুন ঢেউ জাগে, আবার তা ভেঙ্গে পড়ে শাহবাগ মোড়ের কাঁচ ভাঙ্গার উদ্দামতায়নিস্তরঙ্গ চন্দ্রিমা লেকেও কোথায় যেন আলোড়ন হয়গাছালীর ছায়া কাঁপতে থাকে অসীম শুন্যতা বুকে নিয়েআমি একটানা তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকতে পারিনাচোখ নামিয়ে নেই তাঁর গ্রীবায় গ্রীবার অনাবৃত অংশে একটা কাল তিল আছেসেই তিল- যার বিনিময় মুল্য দিতে হলে পুরো ঢাকা শহর নিলামে তুলতে হবে
আমি তাঁর হাত ধরে বলি- মধুমালাএই চন্দ্রিমা মাঠের প্রতিটি পদপিষ্ট ঘাস তাঁর অসীম ধুলিকনার বুকে মুখ লুকিয়ে ছিল বহুকালতোমাকে স্যালুট করে জেগে উঠেছে তৃণদল
মধু হাসেপদ্ম ফোটানো সেই হাসিবলল- ইতারমী বন্ধ কর, শয়তানএত জরুরী তলব? বিষয়টা কী? তাড়াতাড়ি বলমধু তুইতুকারী তে কথা বলছেএটা ভাল লক্ষ্মণতাঁর মন ভাল আছে
ভুতেশ্বরের আর্জি তাঁর কাছে পেশ করলাম
-তোর ভুত বাবা কে জুতা দিয়ে পেটাতাঁর এত উৎসর্গ পাবার শখ ক্যান? তাঁর কীসের অভাব পড়ল? আর যদি কিছু পেতেই ইচ্ছে করে, তো সোজাসুজি বললেই পারে এমন ঢাক গুড়গুড়ের মানে কি?
ঢোক গিললামবললাম- তিনি হলেন পরম রহস্যময়রহস্য করা তাঁর স্বাভাবতবে একটা ক্লু অবশ্য দিয়েছেনআমার প্রিয় বস্তু হতে হবে
তো দিয়ে দে তোর প্রিয় বস্তুকী দিবি ঠিক করলি?
সেটাই তো পরম সমস্য? কি প্রিয়? আমার প্রিয় কী- আমিই তা জানি না
মধু অবাক হলতোর প্রিয় কী জিনিস- সেটা কি অন্য কেউ বলে দেবে? তুই জানিস না?
না জানি নাআমি নিজেই তো আমার নিজের খুবই আপ্রিয়আমার বেঁচে থাকতে যত ভাল লাগে, তাঁর চাইতে বেশী ভাল লাগে মরে যেতে
তো মরে যাকখন মরবি? – মধুমালা চোখ ঘুরিয়ে নেয়আমি তাকে কোনদিন কাঁদতে দেখিনিআজও দেখলাম নামধুমালাকে কাঁদতে দেখলে আমার ভাল লাগত না
-আপাতত মরবার ইচ্ছে নেইমৃত্যু তো আর পালিয়ে যাচ্ছে নাবেচারা ভুতেশ্বর ছাড়া সকলেই মরে বাঁচবেশুধু বেঁচে মরে থাকবে ভুত
একটু থেমে বললাম- তোর বর কবে আসবে?
আগামী সপ্তায়খুব ঝামেলায় আছিরে, মদনপোলারে সে মানবে নাবলেছে বিচার বসাবে
বললাম তাঁর দরকার নেইকাল থেকে সে আমার কাছেই থাকআপাতত আমার বাড়ী খালী আছেচিন্তা নেইতোর জামাই না ফেরা পর্যন্ত আমার বউয়ের ফেরার আশা নেইবোধন আমার কাছেই থাক
প্রতিপালন পর্ব
ভুতেশ্বরের কৃপায় বোধনের জন্মযে রাত্রে মধুর ঘর থেকে ভুতেশ্বরের পবিত্র দর্শন যাত্রা করলাম, সে রাত্রেই বিস্ময়করভবে মধুর পেটে বোধনের আবির্ভাব হলআমি বলি- সেটা ভুত বাবার বিরাট মোজেজাকিন্তু মধু কিছু বলে নাশুধু হাসেকাঁচ ভাঙ্গা হাসিবুকের ভেতরটা শাহবাগ হয়ে যায়
ভাল করে একবার বোধনের দিকে তাকালামচমকে উঠলামঅবিকল মধুমালাসেই চোখ, সেই নাক, গ্রীবায় একটা কাল তীলআর ঠোটে সারাক্ষণ লেগে আছে কাঁচ ভাঙ্গা হাসিতিন বছর বয়সে মধুও কী ঠিক এমনই ছিল? মধুকে কেন সারাজীবন ধরে দেখিনি? এইভাবেই মধু কথা বলতে বলতে হাসেআর হাসতে হাসতে কথা বলে
-‘অমন করে তাকাচ্ছ কেন মদন?’- বোধনের চোখে মুখে কৌতূহল
-‘ তোকে আজ জবাই করব’-কথাটা বেশ শান্ত ভাবে বললাম, যাতে সে রসিকতা না ভাবে কিন্তু ফল হল নাবোধনের মুখে ভয়ের ছায়া নেইবরং বিষয়টা বেশ উপভোগ করছে বলেই মনে হল
-মুরগীর মত কাটবা?
-না, যেভাবে গরু কুরবানী দেয়, কিম্বা পাঠা বলি দেয় সেভাবেইভুতেশ্বর যেটা পছন্দ করে
-তিনি কোনটা পছন্দ করেন? বলি না কুরবানী?
-জানিনাতুই ভুত বাবার সন্তানভুত বাবাকে দিয়ে দেবভুতের নামে তুই উৎসর্গ হবিতোর বিরাট ভাগ্য
উৎসর্গ কি মদন?
উৎসর্গ হল ভুত বাবার খানা খাদ্যতিনি থাকেন আকাশের উপড়েসেইখানে মাটি নেইজল নেইমেঘ বৃষ্টি নেইতাই কিছু ফলে নাভুত বাবা তাই উৎসর্গ খেয়ে বেঁচে থাকেনউনি খুব শখ করেছেন তোকে খাবেন
বেশ তো তাহলে পাঠিয়ে দাওতাজাই পাঠাওকাঁটাকুটি করার দরকার কী?
-না, তাজা পাঠালে উনার সমাস্যউনি জবেহ করতে পারবেন নাজবেহ করার মন্ত্র সেখানে নেই
-মানে?
-এই ধর আমরা কোন পশু জবেহ করার সময় মন্ত্র বলি- জয় বাবা ভুতেশ্বর সর্বশ্রেষ্ঠসৌদিরা মানুষের মাথা কাটবার সময়ও এমন মন্ত্র বলেকিত্নু তিনি কী বলবেন? তিনি তো নাস্তিক
-ভুত বাবা নাস্তিক? – কথাটা বোধনের বিশ্বাস হয় না
-হ্যাঁ নাস্তিকতিনি তাঁর স্রষ্টার অস্তিত্ত্ব মানেন না
পরকালে যে ব্যাটার কেমন শাস্তি হবে
বললাম- ছি বোধনওভাবে বলতে হয় নাতিনি তোমার বাবা হনবাপকে ব্যাটা বলতে নেইতাকে সম্মান করে কথা বল
-ঠিক আছেএখন কাটকীভাবে কাটবা? বলি না কুরবানী?
বললাম -বুঝতে পারছি নাস্বপ্নে ডিটেইলস বলা নেই
তারপরে আমার মাংসগুলা কী করবা? ভুত বাবা খেতে আসবেন?
-নাতিনি আসেন নানিয়ম হল উৎসর্গের মাংসগুলা ভক্তেরা খায়ভক্তের খাওয়া হলে আপনা আপনি ভুতের পেট ঢুকে যায়
-তাইলে তুমি আমারে খাবা?
আমি একা খেলে হবে নাসমান তিন ভাগ হবেএকভাগ আমি, তুই আর তোর মা, একভাগ আত্মীয় পরিজন আর এক ভাগ ফকির মিসকিনকোন ফাকির সুযোগ নেইচামড়াটা দান করব ভুত মন্দিরে
-ওহতাহলে তুমি আমার মাংস খাবা?
-না খেতে পারব না
মা খাবে?
মনে হয় খাবে না
-আত্মীয় পরিজন ফকির মিসকিন- তারা খাবেন?
না খাবে না
-চামড়া কী নেবে মন্দিরের লোকজন? মানুসের চামড়া?
-না, তোর চামড়া নিয়ে গেলে তারা আমারে পুলিশে দেবে
-তাইলে আমারে কীভাবে কাটবা? ক্যান কাটবা?
বোধনের গা থেকে মধুমালার গন্ধ আসেসে পদ্মফুলের হাসিতে আমাকে পাগল করে দেয়আমি তাকে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরি
মদন কাঁদতে জানে নাতাই সে এক ফোটাও কাঁদে না
বললাম- তোকে কাটব নারে সোনাপশুই কাটবপশুর জন্যে পশুই উত্তম উৎসর্গ

মদনের চন্দ্রজয়

লিখেছেন মুরশেদ
মধুমালাকে ফোন করে বললাম ব্যপারটাসে যথারীতি বিশ্বাস করল নাসে পড়ে আছে শাহবাগেআজ কসপ্তা হতে চলল
তাকে বুঝিয়ে বললাম- দেখ, এমন হতেই পারেআমাদের মত মহামানুষকে মাঝে মধ্যে চাঁদে, সূর্যে, গ্রহে, নক্ষত্রে, পানিতে, পাথরে, দেখা যাবে এটাই স্বাভাবিক এটাই ভুতেশ্বরের বিধানজয় ভুতেশ্বর
মধুমালা ফোন কেটে দিলসে ঘোর অবিশ্বাসীতারপর গিয়ে পড়ে আছে শাহবাগেবদ্ধ উন্মাদ সেদিনের পর দিননাওয়াখাওয়া ভুলে পড়ে আছে ভুতেশ্বরের অতি প্রিয় বান্দাদের ফাঁসীর দাবী নিয়ে বসে আছেমামুর বাড়ীর আব্দার!
মধুমালার চিন্তা বাদ দিলামমধু বিশ্বাস না করলেও অনেকেই বিশ্বাস করেছে আমার বাসায় রান্না বান্না করে দেয় যে মেয়েটা তার নাম সুফিয়া খাতুনসে বিশ্বাস করেছেসে নিজে দেখেনিতবে শুনেছেনুরজাহান রোডের সবাই নাকি পষ্ট দেখেছেচাঁদের মধ্যে আমার মানে শ্রীমান মদনের কালার ছবি! আবার কেউ দেখেছে চাঁদের বুকে লম্বা লম্বা পা ফেলে হেটে চলেছে ঢাকার মদন!
নুরজাহান রোডে আমার কিছু ভাল শিষ্য আছেফল ব্যবসায়ী আব্দুল হাই আমার প্রথম শ্রেণীর ভক্ততাকে যা বলি তাই বিশ্বাস করেএই সব মাল আছে বলেই না এখনও ভুত টিকে আছেতার ফলের দোকানে গেলামআমাকে দেখেই তাড়াতাড়ি করে ভিতরে নিয়ে গেলপাশের দোকান থেকে নানা রকমের ফল এনে কেটে দিলসে সবসময়ই এটা করেনিজের দোকানের ফল সে নিজেও খায় না, আমাকে খাওয়ায় নাজিজ্ঞাসা করলে হাসেকোন জবাব দেয় না
-‘বাবা, আবার কবে দেখা দিবেন চান্দের পিঠে?
-আর যাব নাআসা যাওয়া খুব ঝক্কির ব্যাপারআর সেখানে খাওয়া দাওয়ার তেমন ব্যবস্থা নেইখালি পাহাড় আর পাহাড়যতক্ষণ ছিলাম, না খেয়ে ছিলামআমার সঙ্গে একটা টিয়া পাখি ছিলব্যচারীও না খেয়ে ছিল
-আহারে, আমারে আগেই কইতেন সঙ্গে খানাখাদ্য দিয়া দিতামফলমূল দিতামফরমালিন আলাদা কইরা দিতাম
-আলাদা করে কেন?
-ফরমালিন দেয়া ফল পাখপাখালির জন্যে হালাল নামানুষের জন্য হালালতাই আলদা ব্যাবস্থাযখন যেটায় খুশী মিশাইয়া লইতেন
-আমার ময়না পাখি তো ফল খায়না
-এইনা কইলেন টিয়া পাখি?
-যাহা ময়না তাহাই টিয়াতুমি ভুতেশ্বরের কাজ কারবার সব বুঝবা না
ও আচ্ছাতো হুজুর, আপনার ওই পাখি কী খায়?
-লইট্ট্যা ফিশ
দেখলাম আব্দুল হাইয়ের চক্ষু সরু হতে শুরু করেছেতাই আর পাখি প্রসঙ্গ বাড়ালাম নাবললাম- তোর ফলের আড়তে কি কুড়ি বাইশ জনের মিটিং করার জায়গা হবে?
-একটু ঠাসাঠাসি হবেতবে চালিয়ে নেয়া যাবেহুজুরের কাছে কি নতুন ভুতবার্তা এসেছে?
-হুতবে তোদের জন্যে নাআমার কিছু আধুনিক ভক্ত আছেতারা টিয়া পাখি ময়না পাখি লইট্ট্যা ফিশ সবই খায়তাদের জন্যে বিশেষ বার্তাসেইখানে বসে পরামর্শ হবেতুই চোখ কান খোলা রাখবিকেউ যেন না জানেপুলিশ খুব তৎপর
-পুলিশ! হাইয়ের চোখ ছানাবড়াদুই পয়সার পুলিশটাকা ছাড়লেই ঠাণ্ডাআমার আড়তের ফরমালিন পুলিশের নাকের ডগা দিয়া আসে!
একাত্তরে প্রথম প্রতিরোধ তৈরী করেছিল পুলিশটাকা পয়সা তো দুরের কথা জীবনের মায়া পর্যন্ত করেনি এই পুলিশের দলএই সব শয়তান গুলার মধ্যে কেন যে এত দেশপ্রেম!
-দেশপ্রেম কি নিষিদ্ধ, হুজুর?
-অবশ্যইপ্রেম শুধু ভুতেশ্বেরের জন্যেঅন্য সব প্রেম গভীর পাপ
হাইকে মিটিঙের পুরো ব্যাপারটা বুঝিয়ে বললামসেখানে থাকবে প্রকৌশলী, বুদ্ধিজীবী, রসায়নবিদ, বোমা এক্সপার্টনিখুত প্ল্যান হবেএকরাতে উড়িয়ে দেয়া হবে শাহবাগ, টি এস সি, শহীদ মিনারপাশাপাশি ভুত মন্দিরও ভাঙ্গা হবেব্যলাঞ্চিংফাকিস্তান থেকে সব সরঞ্জাম এসে গেছে
সব কিছু ঠিকঠাক করতে করতে বিকেল হয়ে গেলমোবাইল দিয়ে অন্তর্জালে ঢুকলামমুখোপাতায় দেখলাম আমার চন্দ্রারোহনের ছবি বেড়িয়েছেআমার শিষ্যরা তেলেসমাতিতে বিশ্বসেরানিজেকে বেশ হালকা লাগছেভুতরাজ্য প্রতিষ্ঠা আর বেশী দেরী নেই
মধুমালার কথা মনে পড়তেই বুকের ভিতরটা নাড়া দিয়ে উঠলপ্রলয় ঘটার আগেই তাকে সেখান থেকে বের করে আনতে হবেহোক সে বিধর্মীসে আমার মধুমালাআমার মধু
তাকে ফেরাতে হবেকিন্তু সে তো কথা শুনছে নাতাকে কথা শোনাতে হবে ভুতেশ্বর নারীর উপর পুরুষের প্রধান্য দিয়েছেননারীর এমন অবাধ চলাচল খুবই অধর্মআর থাকা যায় না
পুবালী ব্যাংকের গেটের সামনে তাকে পেলামরোদে পুড়ে মানুষের মুখ এমন তামাটে হয়! তার মুখের পেশী শক্তচোখে আগুনতার কণ্ঠ ধীর, কিন্ত দৃঢ় তার কপালে জ্বলজ্বল করছে বঙ্গোপসাগরের নোনা জল
বললামঃ মধুমালা!
-উঁহু, আমি রাজীব হায়দারআমি লাকী আখতারআমি আসাদআমি সালাম বরকত রফিক জব্বার
-আমি তোমাকে এখানে থাকতে দেব নাএখানে যে নতুন প্রজন্মের জোয়ার উঠেছে, যে তারুন্যে কেঁপে উঠছে বাংলাদেশ, কাঁপছে নতুন বিশ্ব, ভুতেশ্বর তার আগমনী মানতে পারছে নাভুতেশ্বর অন্তিম ঘণ্টা বাজিয়ে দিচ্ছে শাহবাগমধুমালা, তুমি চল আমার সঙ্গে
খানিক সময় সে তাকিয়ে থাকল আমার দিকেমনে হল আমার কথা সে কিছুই বোঝেনিতারপর বিড়বিড় করে বলল- আর পিছানোর কোন উপায় নেই
-বোঝার চেষ্টা করএখানে আসলে কেউই নিরাপদ নাভুতেশ্বর এত সহজে দমবার পাত্র নাতার সেপাই সান্ত্রী ছড়িয়ে আছে চারদিকেতাদের আছে ব্যাংকআর ব্যাংক ভর্তি টাকাতাদের আছে অস্ত্র আর গোলাবারুদআর আছে বিশাল ব্রহ্মাস্ত্রভুতানুভুতিএই অনুভূতি অতি মারাত্মকএকবার তা ছড়িয়ে দিলেই ফেটে পড়বে অসংখ্য মানুষদিকে দিকে জ্বলবে গোলাবারুদতোমরা কেউ বাঁচবে না মধুতোমাদের ছিঁড়ে ফুঁরে খাবে অজস্র হায়নাতুমি ফেরে এস মধু
আমাকে ছেড়ে দাও মদনআমি চললামসে ফিরে গেল তার সাথীদের কাছেসেখানে উত্তাল শ্লোগানে অজস্র মোমের সোনালী আলো চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে ধাবমান আধারকে

ধার্মিকের সুখ, ধার্মিকতার সুখানুভূতি

লিখেছেন মুরশেদ
ধার্মিকেরা সর্বদাই দাবী করে ধর্মচারন করে সুখ পাওয়া যায়ইবাদত বন্দেগী কিম্বা পূজা অর্চনা করার পরে মনে নাকি এক ধরনের ঐশী প্রশান্তি অনুভূত হয়তা অপার্থিবসে অনুভুতি প্রকাশ যোগ্য নয় অধার্মিকেরা কিম্বা নাস্তিকেরা তার মর্ম কখনই বুঝবে না
খুবই গুরুত্বপূর্ণ দাবীঈশ্বর তার ভক্তবৃন্দের জন্য স্বর্গ থেকে সুখ পাঠিয়ে দেনসেই সুখে বিশ্বাসীগণ ভড়ে ওঠেন কানায় কানায়আর অবিশ্বাসীগণ কেবল অশান্তিতে ডুবে দাপাদাপি করে মরেঅবিশ্বাসীগণের জন্য দুঃখ হয়
খুব জানতে ইচ্ছে করে স্বর্গ থেকে কে সেই সুখ পাঠান? আল্লা, ভববান, গড, জেহোভা নাকি অন্য কেউ? নাকি সবাইযার যার ভক্তের কাছে সেই সেই ঈশ্বর সুখ নাজেল করেন? তবে কী সব ঈশ্বরই স্বর্গ ভঁরে রয়েছেন? তারা তাদের ভক্তের নানাবিধ বিচিত্র রীতি-পদ্ধতির প্রার্থনা শোনেন আর বিনিময়ে তাদেরকে সুখী করেন? কেননা সব ধর্মের সব ধার্মিকেরাই তো সেই অত্যাশ্চার্য সুখ ভোগ করেন বলে দাবী করে চলেছেন
প্রার্থনার সেই সুখ দেখবার জন্য ছেলেবালা থেকেই উবুর হয়েছি হাজার বার প্রহরে প্রহরেদিনে রাতেসপ্তায় সপ্তায়আর সব পুন্য রজনীতেআমি পাইনিআমার উবুর হওয়াটা হয়তো ঈশ্বর গ্রহন করেননিআমি হতভাগাকিন্তু ভাগ্যবান কে?
আমার শাশুড়ি? দিনে রাতে কত ওক্ত উনি নামাজ পরেন, মনে হয় ঈশ্বরও মনে রাখতে পারবে নাজায়নামাজ তার বিছানোই থাকেনানাবিধ শারীরিক সমাস্য ভুগছেনডাক্তার তাকে রাতে ঘুমুতে বলেছেনকিন্তু তিনি তো ঘুমনোর বান্দা নাতিনি রাতের পর রাত জেগে ঈশ্বরকে খুশী করে চলেছেন
কিন্তু আল্লাপাক তাকে খুশী করছেন বলে মনে হয় নাতিনি একজন অসুখী মানুষতার দুঃখের শেষ নেইসংসারে কে কখন একবেলা উবুর হতে ভুলে গেছে তো তিনি অসুখী হনতিনি অশান্তিতে থাকেন বউঝিরা স্টার প্লাসে নাটক দেখলে নাটকে পুজো দেখায়পুজো দেখা হারামপিস টিভি কেউ দেখে না বলে তার দুঃখের শেষ নেই
তিনি সর্বাপেক্ষা অসুখী থাকেন রমজান মাসেপ্রতিদিনই বাড়ীর বউয়ের সাথে তর্ক হয়তর্কটা দুপুর গড়ালে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকেতবে ইফতারটা শান্তিপূর্ণদানাপানি পেটে ঢুকলে পরে আল্লাপাক একটু একটু করে প্রশান্তি পাঠাতে থাকেন
হেকমত উল্লাছেলেবেলায় দেখা মহল্লার সবচাইতে প্রভাবশালী অসুখী মানুষ মহল্লার কোন বেগানা নারী কবে বুরখা ছাড়া ঘর থেকে বের হয়েছে তিনি তার খোজ রাখতেনকবে কে সিনেমা দেখতে গেছে, কার ছেলে সারাদিন সাইকেল চালিয়ে বেড়ায়, নামাজকালাম নেই, কোথায় যাত্রার আসর বসেছে- সবই তার দুশ্চিন্তার কারনতিনি সর্বদা অসুখী থাকতেন- কেননা দেশময় মানুষেরা হাসে, খেলে, মেয়েরা দাপাদাপি করে ছুটে বেড়ায়যুবকেরা জিকির ফিকির করার চাইতে বাংলা কিম্বা হিন্দি গানের কলি আওরাতেই বেশী উৎসাহীমহিলারা পোলাপান হতেও হাসপাতালে যায়! সবই নাসারাদের ষড়যন্ত্র!
এলাকায় টেলিভিশন এলোআরেক গজবপাড়ার ছেলেরা সেখানে টিভি দেখে মহিলারাও দলবেঁধে সেখানে যায়মহিলাদের নানারকম হাঁসিতে শব্দে আল্লার আরশ কেঁপে ওঠেহেকমত উল্লা কাউকেই আর বেধে রাখতে পারেন নাএমনকি তার দ্বিতীয় স্ত্রীকেও না! ( উল্লেখ্য তাঁর প্রথম স্ত্রী কোন এক মাঝ রাতে কুয়োয় পরে মারা গেছিলমাঝরাতে কেন তিনি জল তুলতে গেছিলেন, এই প্রশ্নের কোন সুরাহা না হলেও তিনি অতি দ্রুত তার শালিকাকে বিয়ে করে পরিস্থিতি সামাল দেন)তার এই বিবি তাকে সুখ না দিলেও, হেকমত উল্লা গোটা এলাকার মানুষকে তাঁর শাসনের মুখে রাখলেও তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রীকে কখনই কোন ব্যপারে ঘাটাননি !
আমার ধার্মিক স্বজনদের বেশ আত্ন তৃপ্তি পেতে দেখেছি, যখন কোন হিন্দু আমাদের বাসায় গোপনে গরুর গোস্ত বেশ মৌজ করে খেতহিন্দুকে গরু খাওয়াতে পারলে মনে হয় ইসলামের বিজয়ানুভুতি জাগ্রত হয়তারা হিন্দুর গোমাংস ভক্ষন দেখে সুখ পেতকিন্তু আমি দুঃখ পেতামগরু খাওয়া হিন্দুদের হিংসে হত তারা স্বাধীন হয়েছেআমি কবে স্বাধীন হব? কবে শুকুর খাব, কচ্ছপ খাব, মদ্যপান করব!
অবশ্য হিন্দুরাও কম যায় নাকয়েকমাস আগের কথাআমার অফিসে (ব্যাংকে) এক হিন্দু মহিলার সাথে কথা হচ্ছিলপেশায় তিনি একজন ডাক্তারআলোচনার বিষয় হজরত মুহাম্মদতিনি আমাকে খুশী করার জন্যে বললেন- দেখুন মুহাম্মদের মত শান্তিকামী মানুষ জগতে কয়জন আছে? তিনারা সারাজীবন জগতে কেবল শান্তি্র বানীই দিয়ে গেছেন! অহিংসার কথা বলেছেন!
আমি জিজ্ঞাসা করলাম কেমন শান্তি? তিনি মক্কা থেকে মদিনায় গিয়ে একটা দল গঠন করলেনতাদের পেশা কী ছিল? কৃষিকাজ নাকি ব্যবসা বনিজ্য? কিছুই না সেটা ছিল মুলত একটা লুটেরার দলমদিনা আর আশপাশের অঞ্চলে অভিযান চালনোই ছিল তাদের পেশালুটের মালামালের নামই গণিমততারা রাশি রাশি গণিমত লাভ করতেন তার মধ্যে অর্থ, সম্পদ, কৃষিজমি, নারী সবই ছিলএই গণিমত ভাগবাটোয়ারা করার জন্যে দরকার কিছু নিয়ম কানুনএই নিয়ম কানুনের নামই শরীয়ত
মহিলা বেশ খুশী হলেনকিন্তু ধরা দিলেন নামাথা নীচু করে বললেন- কী যে বলেন ভাই!
কদিন পরে তিনি তার স্বামী সহ এসে একাউন্ট খুললেনতাদের আশ্রমের একাউন্টাও খোলা হলতিনি এখন তার বন্ধু বান্ধবদের বলে বেড়ান- ম্যনেজার সাহের অতি অমায়িক মানুষ! অতি প্রগতিশীল!
ভগবানের কৃপায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাল ডিপোজিট পাচ্ছি
তবে ধার্মিকের মত সুখ পেতে এখন আর ইচ্ছে করে না