Monday, December 17, 2018

ঈশ্বর বলে কিছু নেই, সবটাই মানুষের দুর্বলতা, লিখেছিলেন আইনস্টাইন।

ঈশ্বরে আদৌ বিশ্বাস ছিল না আইনস্টাইনের, জানাল ক্রিস্টিজের নিলাম! মৃত্যুর বছরখানেক আগে ঈশ্বরকে বুড়ো আঙ্গুল দেখানো আইনস্টাইনের সেই চিঠি প্রত্যাশার প্রায় দ্বিগুণ দর পেল, নিলামে! নিউইয়র্কে, বিকোল ২৯ লক্ষ ডলারে।
১৯৫৪ সালে লেখা আইনস্টাইনের সেই চিঠি নিলামের আলোয় এসে জানাল, জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছেও আইনস্টাইন লিখে যাননি, ‘মরণ রে, তুঁহু মম শ্যাম সমান’! বরং আইনস্টাইনের ‘ঈশ্বর বিশ্বাস’ নিয়ে এত দিন যে ‘বিশ্বাসী’রা খুশিতে ডগমগ হয়ে উঠতেন, মৃত্যুর এক বছর আগে বন্ধুকে হাতে লেখা চিঠিতে তাঁদের হতাশই করেছিলেন এই ব্রহ্মাণ্ডের জমাট অন্ধকারে আলো ফেলা বহুদর্শী বিজ্ঞানী।
জার্মান ভাষায় লেখা ওই চিঠিতে আইনস্টাইন নিজের হাতেই অস্বীকার করেছিলেন ‘ঈশ্বরের হাত’! লিখেছিলেন, ‘‘ওই সব হাত-টাত বলে কিছু নেই। সবটাই মানুষের দুর্বলতা।’’

ওই সময়ের বিশিষ্ট জার্মান দার্শনিক এরিখ গুটকাইন্ডকে জার্মান ভাষায় লেখা দেড় পাতার ওই চিঠিতে আইনস্টাইনের বক্তব্য ছিল, ‘‘তা সে যে ধর্মই হোক, আদতে তা আমাদের আদিম কুসংস্কারই। আমি মনে করি, ঈশ্বর শব্দটা মানুষের দুর্বলতার প্রকাশ আর সেই দুর্বলতা থেকেই তার জন্ম। আর কিছুই নয়।’’
আরও পড়ুন- ‘ঈশ্বরের মন’ পড়তে পেরেছিলেন আইনস্টাইন!​

আরও পড়ুন- ফের পাশ করলেন আইনস্টাইন, সংশয় কাটাল অ্যাস্ট্রোস্যাট
ঈশ্বরের দিকে ‘কামান দাগা’ সেই চিঠির দরদাম, ক্রিস্টিজ ভেবেছিল, নিলামে উঠবে বড়জোর ১৫ লক্ষ ডলার। কিন্তু নিলামের ফলাফল জানাল, ঈশ্বরের পরাজয়ের দাম তার প্রায় দ্বিগুণ! ৬৪ বছর আগে আইনস্টাইনের লেখা ওই চিঠির দাম উঠল ২৯ লক্ষ ডলার। ক্রিস্টিজের তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘মৃত্যুর বছরখানেক আগে লেখা আইনস্টাইনের ওই চিঠি সত্যিই অতুলনীয়। ব্যাক্তিগত ভঙ্গিতে লেখা।ধর্ম ও দর্শন সম্পর্কে তাঁর ধ্যানধারণার সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রকাশ।’’

সেই চিঠিতে বাইবেল-কেও তোপ দেগেছিলেন আইনস্টাইন। পরোয়া করেননি নিজের ইহুদি ধর্মকেও। দার্শনিক গুটকাইন্ডকে তিনি লিখেছিলেন, ‘‘বাইবেলে তো আসলে আদিম কিংবদন্তীদের মহান বানানো হয়েছিল। তাঁদেরই স্তুতি রয়েছে সেখানে। কোনও ব্যাখ্যা, কোনও কিছুই আমার এই ধারণা বদলাতে পারবে না। 
একই কথা খাটে ইহুদি ধর্মের ক্ষেত্রেও।’’
আইনস্টাইনের চিঠির নিলাম অবশ্য এই প্রথম নয়। এর আগে ২০১৭-য় তাঁর একটি চিঠি নিলামে দর পেয়েছিল ৬ হাজার ১০০ ডলার। আর তার চেয়ে আরেকটু বেশি দর পেয়েছিল আইনস্টাইনের ১৯২৮ সালে লেখা একটি চিঠি। দাম উঠেছিল ১ লক্ষ ৩ হাজার ডলার।

সৌদিতে সত্যিই যদি শয়তানকে ঢিল মারা হত, তবে সৌদিতে পুরুষ বিলুপ্ত হয়ে যেত ৷

সৌদিতে গিয়ে যদি সত্যিই ঢিল মারা হত তবে সৌদি হতে পুরুষ বিলুপ্ত হতো, সঙ্গে কিছু নারী ও কমত ৷ কিন্তু শয়তান গিয়ে শয়তানকে ঢিল মারবেনা, তারা অন্ধকারে ঢিল মারবে আর মনে মনে শান্ত্বনা শয়তানকে মেরেছি ৷ আসলে শয়তানকে মেরেছি নয়, শয়তানি করেছি ৷ এই শয়তানির একটা খেতাব আছে আর তা হলো হাজী ৷ হজ্ব করলেই হাজী ৷ সারাজীবন টাকা জমিয়ে শয়তানি করে সৌদি সরকারকে দেয়ার আরেক নাম হাজী ৷ ইহুদির তৈরী বিমানে চড়ে হজ্ব করলে কি হজ্ব কবুল হবে ? এই প্রশ্নে গেলাম না ৷
আমাদের ইয়াবা সম্রাট বদির কথাই ধরা যাক ৷ যখন ইয়াবা নিয়ে প্রশাসনের খেলা শুরু হলো ঠিক তখনই শোনা গেলো বদি সৌদিতে হজ্বে গেছেন ৷ তারতো সব গুনা মাফ ৷ একটু যদি খেয়াল করি যখন ইয়াবা দমন শুরু, তখন বদি সৌদি, যখন প্রসাশন দমে গেলো সে বাংলাদেশ ৷ কথায় আছে চোরকে চুরি করতে বলে গেরস্তকে বলে সজাগ থাকো ৷ ২০১৪ সালের অক্টোবরের দিকে যদি তাকাই তবে আওয়ামির মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীকে সব হারাতে হয় তাবলিক জামাত এবং হজ্ব নিয়ে বলার কারণে, যার জন্য বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বড় ভাইয়ের হয়ে ক্ষমা চেয়েছিলেন ৷ ২০১৮ তে এসে মার্চ মাসের দিকে মোশাররফ করিমকে ক্ষমা চাইতে হয় পোষাক ধর্ষণের কারণ নয় বলায় ৷ পোষাক যারা খুলে নেন তাদের কাছেই এই ক্ষমা প্রার্থনা ৷ যেমন সৌদিতে আমাদের মেয়েরা শালিন পোষাকই পরেন কিন্তু নবীর দেশের লোকেরা দিনের পর দিন কাপড় খুলে ধর্ষণ করেন ৷ একই ঘরে দাদা, বাবা, নাতি একই মেয়েকে ধর্ষণ করে ৷ পোষাক খুলে ধর্ষণ করে পোষাক শালিনতার নজির যেমন নবীর দেশের লোকের তেমনি সারা বিশ্বে নবীর অনুসারিগণের ও ৷ ২০১৮ সালের ৬ অক্টোবরের দিকে যদি তাকাই তবে ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় বাউল শামছুল হক চিস্তীকে মেরে ক্ষমা চাইয়েছেন নবীর অনুসারীরা ৷ মাহফিলের দিকে যদি যাই তবে বলার বাকী নেই, তারাতো কোপাবে বলেন, দেশ হতে তাড়াবেন বলেন ৷ নমিনেশন নিয়ে শোনা গেলো চিত্র নায়ক ফারুকের নমিনেশন বাতিল হয়েছে শুধুমাত্র “ইসলাম প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমরা দেশ স্বাধীন করিনি” বলার কারণে ৷ দেশ প্রধানের দিকে যদি তাকাই তবে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে যখন চ্যালেঞ্জ করেন ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রমাণ দিতে পারলে পদত্যাগ করবেন, ঠিক ২০১৮ সালের শেষদিকে ভোটের জন্য আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেন- নবী নিয়ে কথা বললে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না ৷ অসম্প্রদায়িক যদি হতেন তবে হিন্দু বৌদ্ধ সবার কথা আসত, কিন্তু তিনি সাচ্চা মুসলমান ৷ ২০১৭ সালের মার্চে শিক্ষাগুরু শ্যামল কান্তিকে ছাত্র/ছাত্রীর সামনে কান ধরে উঠবস করান সেলিম ওসমান, অপরাধ ঐ একই যদিও শিক্ষা এ দেশে কান ধরে খত দিয়েছে অনেক আগে ৷ এই যে এতসব কিছু, তাহলে আসল শয়তান কে ? শয়তানের অনুসারিরা কি হয় ?
একটা কথা মনে পড়ে গেলো ৷ আমি একদিন কিছু মোমিনার সাথে তর্ক করছিলাম পোষাক স্বাধীনতা নিয়ে ৷ তারা বার বার বলছিলো নারীর সম্মানের কথা যা তাদের ইসলামই দিয়েছে একমাত্র ৷ তারা বোরকা নেকাপ হিজাবের পক্ষে ৷ তর্কের ফাঁকে তারা গালাগালি করছিলো তাও আমাকে না! আমার মা বোনকে ৷ আমার মাকে মাগি বেশ্যা বলছে আর আমাকে বলছে ছেলে বাচ্চা ৷ তারা বুঝতেই পারছে না যা নিয়ে তর্ক ! তারা তাকে এবং স্ববিরোধী হয়ে নিজেরা নিজেদের অপমান করছে ৷ আমি এক ফাঁকে তাদের আইডিগুলো দেখছিলাম ৷ হাসলাম খুব ৷ যারা আমার সাথে বোরকা হিজাব নেকাপ এসব নিয়ে তর্ক করছে সেই তারাই আইডিতে টি শার্ট জিন্স পরা ছবি, চুস পেন্ট পরা ছবি দিয়েছে ৷ একটাও হিজাবি না ৷ অন্যদিকে যেখানে ইসলামে ছবি তোলাটাই হারাম সেখানে তারা আরামে ছবি দিচ্ছেন ৷ ভাবলাম এই আমি কাদের সাথে তর্ক করছি ? এজন্যই প্রথমে বলতে গিয়ে পুরুষ বিলুপ্তির পাশাপাশি নারী টানতে হলো ৷
২০১৮ সালের ১৯ জুন খবরের পাতায় ভেসে উঠে, সৌদি আরবে নারী ধর্ষণ নির্যাতন নিয়ে যেসব অভিযোগ তা মিথ্যে, এসবের কিছুই বৈদেশিক ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি জানেন না, এসব তার কানে আসেনি ৷ ওনার কানে আসার কথা ও নয় ৷ উনার কানে আসবে চট্টগ্রামের ব্যবসা, বাহির সিগন্যালের অপজিটে এক চোখের বিশাল আবাসিক গড়ার জমি, চন্দনাইশের দোহাজারির পূর্ব দিকে লালটিয়ায় কিলোমিটারের পর কিলোমিটার জমি, বাগান, রেডক্রো ফার্ম, শিপ সহ দেশে বৈদেশের হাজারো ব্যবসার খবর, জবর দখল এসব ৷ ২০১৮ এর জুলাইয়ে তিনি আবার বললেন সৌদি আরবে বাংলাদেশি নারী কর্মীরা সুখেই আছেন, অথচ প্রায়ই নারীরা এসে তাদের নির্যাতনের কথা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন ৷ প্রশ্ন এখানেই হয়, আসলেই কি শয়তানকে ঢিল মারা হয় ? নাকি শয়তানরাই সব সময় ঢিল মেরে গেলো ?
একজন মুসলমান এটা কখনোই স্বীকার করতে রাজী হয়না যে সৌদি একটা নোংরার আঁতুরঘর পাছে ধর্মে আঘাত লাগে বলে ৷ তারা অপবিত্র বলতে পারেন না কারণ কোরান তাদের চোখে, মুখে, কানে সীলমোহর মেরে দিয়েছে আর শক্ত করে দাড় করিয়েছে লিঙ্গ, যে লিঙ্গের উপর দাড়িয়ে পুরুষ ৷ যাদের নিচে দন্ড, দন্ডের মাথায় মগজ ৷ সরকার যেহেতু শুধু নবীর কথায় বলেছেন সেহেতু হুজুরের বয়ানে অন্য ধর্মের মূর্তি ভাঙা, মন্দির ভাঙা, উচ্ছেদে আর কোন প্রতিবন্ধকতা রইলো না এবং সেটাই হয়ে আসছে ৷ মুক্ত ভাবে মাইকে বয়ান দিচ্ছে কোন সমস্যা নেই, প্রসাশন কিংবা সরকারের ৷ যত সমস্যা নাস্তিকরা বললে, হিন্দুরা বললে, বৌদ্ধরা বললে, পাহাড়িরা বললে ৷ মাইকে না বললেও সরকারের ৫৭ এর কান পাতলা ৷ এ পর্যন্ত সরকার ধর্ষণে কোন কঠিন হুশিয়ারি দেয়নি, কঠোর বয়ান ঝাড়েনি, জোরালো কোন প্রদক্ষেপ নেয়নি কিন্তু বড় গলায় নবীরটা ঠিকই বলেছে ৷ প্রতিটাদিন ধর্ষণ লেগে আছে কিন্তু সরকারের মুখে হাসি আর বিটিভির শান্তি ৷ এই যে সবাই মা মা করে, আমার প্রশ্ন এটাই কি মায়ের বৈশিষ্ট্য ? এই কি সেই মা যার ক্ষমতা থাকতে সন্তানকে প্রতিদিন ধর্ষিত হতে হয় ?
সৌদিতে নারী ধর্ষণের কথা যদি হুজুরদের বলা হয়, তবে প্রথমত স্বীকার করবে না ৷ যদি স্বীকার করতে বাধ্য হতে হয় প্রমাণের কারণে, তবে তারা বলবে নারী বাইরে গেলো কেনো ? নারী ঘরে থাকবে এবং এরা এটাই বলে আসছে যেখানে সম্মতি থাকে ধর্ষণের নারী বাইরে গেলে ৷ ঘরে কি রেহায় পায় ? তারা সৌদিকে পবিত্র রাখতে ধর্ষণের তালিকা বের করেন ৷ তখন ইউরোপের দেশগুলোকে এগিয়ে রাখেন, আর শরিয়া আইনের কথা বলে সৌদিকে রাখেন পাক-পবিত্র ৷ ইউরোপে নারীর যে বাক স্বাধীনতা, মুখ খোলার অধিকার, শুধু লিঙ্গ যোনিতে ধ্বসানোর নাম সেখানে ধর্ষণ নয় এগুলো তারা তুলেন না ৷যেখানে ধর্ষিত হলে বলা যায়না, মামলা করা যায়না, গুম করে ফেলে, হুমকি দিয়ে বোবা করে দেয়, বলতে গেলে মা মেয়ে সব এক সাথে ধর্ষণ করে আবার তাদেরই দোষি বানায়, সে দেশের সাথে তুলনা করে ঐ দেশগুলোর ৷ আমি জানিনা “যৌন হয়রানি” প্রথমে কে বলেছিলো ৷ যৌন, যৌনতা এসব কি আসলেই ধর্ষণ, পীড়ন, শোষণ, নিপীড়ন, জোর, হয়রানি এগুলোর সাথে যায় ? যদি না যায় তবে যৌন হয়রানি বলার কারণ কী!? যাই হোক আমাদের দেশে যখন পেটের দায়ে সৌদি গিয়ে একটু সুখের আশায় অসুখ নিয়ে সৌদি হতে নির্যাতিত হয়ে প্রেগন্যান্ট হয়ে আসেন তখন অনেক নারী মুখের উপর সেই মেয়েকেই তুচ্ছ করেন আরাম কেদারায় বসে ৷ সৌদি যেতে পুরুষ ব্যবহার করেন নারী দালালদের যারা বুঝিয়ে সুজিয়ে পাঠায় আর ঐ সৌদি নামক আর্বজনায় নিক্ষেপ করে ৷ এরা সবাই সুখে আছে ৷ তাহলে সৌদিতে গিয়ে ঢিল কি সত্যিই শয়তানকে মারা হচ্ছে ? না! সত্য এটাই শয়তানরা ঢিল মারছে সুস্থ্য সমাজকে, অসহায় দূর্বলকে, মানুষের উন্নয়ন সহ উন্নতিকে, সর্বোপরি মানুষকে ৷ ইয়াবা বাবা, ধর্ষক, খুনি, দখলদার, চোর, ডাকাত, লুটতরাজ, অত্যাচারি, শোষক সবাই ওখানে গিয়ে হাজী , সবার সাধু আস্তানা ওটাই ৷ শয়তান সব এক সাথে জুটলে পাথরতো ছুড়বেই ৷ শয়তানির বাই কোথায় যাবে ? ৯০ দশকে ও ধর্ষণের বেলায় বাংলাদেশে শরিয়া আইন বিরোধী নাটক হত ৷ যেখানে বলা হত শরিয়া আইনে গেলে এই বদমাইশের বিচার হবেনা, চারজন সাক্ষি কই পাবো ? সাক্ষি রেখেতো কেউ ধর্ষণ করে না! সেদিন কেউ প্রতিবাদ করেনি ঐ নাটকের বিরুদ্ধে কিন্তু আজ হলে ঐ নাটক গায়েব করেতো দিবেই তার উপর ক্ষমা চাইতে হবে নয়তো গলা কাটবে অথবা মেরে রক্তাক্ত করবে, ক্ষমা চািতে হবে প্রাণের জন্য ৷ মোট কথা শয়তানরাই শয়তানি করতে যায়, ওখানে শয়তানকে ঢিল মারা হয় না বরং শয়তানকেই মুকুট করা হয় ৷ নইলে কি আর শয়তান গিয়ে হাজি হয়ে ফিরে আসে ?

Monday, December 10, 2018

কোরান যে কোন ভাবেই সৃষ্টিকর্তার কিতাব হতে পারে না , তার সহিহ প্রমান।

মূর্খ বা মডারেট বা উগ্র পন্থি সব মুসলমানই দাবী করে , মুহাম্মদের কাছে যে আল্লাহর বানী নাজিল হয়েছিল , তার সবই আছে বর্তমান কোরানে। গত ১৪০০ বছর ধরে তার কোন পরিবর্তন , সংশোধন বা কোন আয়াত বাদ পড়ে নাই। কিন্তু তাদের দাবীটা কি সত্য ? এ বিষয়ে প্রকৃত ঘটনা ও তথ্য কি বলে ? এই দাবীটা তারা করে কোরানেরই দাবী অনুযায়ী- যেমন কোরান বলছে –

মূর্খ বা মডারেট বা উগ্র পন্থি সব মুসলমানই দাবী করে , মুহাম্মদের কাছে যে আল্লাহর বানী নাজিল হয়েছিল , তার সবই আছে বর্তমান কোরানে। গত ১৪০০ বছর ধরে তার কোন পরিবর্তন , সংশোধন বা কোন আয়াত বাদ পড়ে নাই। কিন্তু তাদের দাবীটা কি সত্য ? এ বিষয়ে প্রকৃত ঘটনা ও তথ্য কি বলে ? এই দাবীটা তারা করে কোরানেরই দাবী অনুযায়ী- যেমন কোরান বলছে –
আল হিজর-১৫:০৯: আমি স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ অবতারণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।
সুতরাং এখন যদি দেখা যায় , কোরান সংকলনের সময় কিছু আয়াত বাদ পড়েছে , তাহলে বুঝতে হবে যে কোরান কোনভাবেই সৃষ্টিকর্তার বানী নয়। কারন সৃষ্টিকর্তা যদি বলে থাকে , সে তার বানী বিশুদ্ধভাবেই রক্ষা করবে , সে তাতে ব্যর্থ হতে পারে না। এবারে আমরা দেখি কোরান সংকলনের সময় কোন আয়াত বা বানী বাদ পড়েছিল কি না। নিচের হাদিস দুইটা দেখি –

সহিহ বুখারি(ইফা), হাদিস নং-৬৩৬৯। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমর (রাঃ) বলেছেনঃ, আমার আশঙ্কা হচ্ছে যে, দীর্ঘ যুগ অতিক্রান্ত হবার পর কোন ব্যাক্তি এ কথা বলে ফেলতে পারে যে, আমরা আল্লাহর কিতাবে রজমের বিধান পাচ্ছি না। ফলে এমন একটি ফরয পরিত্যাগ করার দরুন তারা পথভ্রষ্ট হবে যা আল্লাহ অবতীর্ণ করেছেন। সাবধান! যখন প্রমাণ পাওয়া যাবে অথবা গর্ভ বা স্বীকারোক্তি বিদ্যমান থাকবে তখন ব্যভিচারীর জন্য রজমের বিধান নিঃসন্দেহ অবধারিত। সুফিয়ান (রহঃ) বলেন, অনুরূপই আমি স্মরণ রেখেছি। সাবধান! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজম করেছেন, আর আমরাও তারপরে রজম করেছি।

সহিহ মুসলিম(ইফা), হাদিস নং-৪২৭১। আবূ তাহির ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়াহ (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মিম্বারের উপর বসা অবস্থায় বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সত্য ধর্ম সহকারে প্রেরণ করেছেন এবং তার উপর কিতাব (কুরআন) অবতীর্ণ করেছেন। আল্লাহর নাযিলকৃত বিষয়ের মধ্যে آيَةُ الرَّجْمِ (ব্যাভিচারের জন্য পাথর নিক্ষেপের আয়াত) রয়েছে। তা আমরা পাঠ করেছি, স্মরণ রেখেছি এবং হৃদয়ঙ্গম করেছি। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ব্যাভিচারের জন্য) রজম (এর হুকুম বাস্তবায়িত) করেছি। আমি ভয় করছি যে, দীর্ঘ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর কেউ একথা হয়তো বলবে যে, আমরা আল্লাহর কিতাবে (ব্যভিচারের শাস্তি) রজমের নির্দেশ পাচ্ছিনা। তখন আল্লাহ কর্তৃক নাযিলকৃত এই ফরয কাজটি পরিত্যাগ করে তারা মানুষদেরকে পথভ্রষ্ট করে ফেলবে। নিশ্চই আল্লাহর কিতাবে বিবাহিত নর-নারীর ব্যাভিচারের শাস্তি رجم (পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা) এর হুকুম বাস্তব বিষয়। যখন সাক্ষ্য দ্বারা তা প্রমাণিত হয়, কিংবা গর্ভ প্রকাশ পায়, অথবা (সে নিজে) স্বীকার করে।
উপরের দুইটা সহিহ হাদিসে পরিস্কার বলছে – ব্যাভিচারের শাস্তি পাথর ছুড়ে হত্যার বিধান সম্বলিত আয়াত নাজিল করা হয়েছিল। হযরত ওমরসহ সবাই মুহাম্মদ বেঁচে থাকতে সেটা তেলাওয়াতও করত।কিঁন্তু বর্তমান কোরানে কি সেই আয়াত আছে ? উত্তর হলো – নাই। তার মানে কোরান সংকলনের সময় সেই আয়াত বাদ দেয়া হয়েছে। কিভাবে সেটা বাদ গেল , এবার সেটা দেখা যাক —
সুনান ইবনে মাজাহ(তাওহিদ প্রকাশনী), হাদিস নং-১৯৪৪। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রজম সম্পর্কিত আয়াত এবং বয়স্ক লোকেরও দশ ঢোক দুধপান সম্পর্কিত আয়াত নাযিল হয়েছিল, যা একটি সহীফায় (লিখিত) আমার খাটের নিচে সংরক্ষিত ছিল। যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকাল করেন এবং আমরা তাঁর ইন্তিকালে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লাম, তখন একটি ছাগল এসে তা খেয়ে ফেলে।

উক্ত হাদিসে দেখা যাচ্ছে , রজমের আয়াত ছাগলে খেয়ে ধ্বংস করে ফেলেছে। তার মানে বোঝা গেল , কোরানের আয়াত একটা সামান্য ছাগলেও ধ্বংস করতে সক্ষম। যে কোরানের আয়াত একটা ছাগলে ধ্বংস করতে পারে , সেই কোরান কিভাবে সর্ব শক্তিমান সৃষ্টিকর্তার বানী হতে পারে ? সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে , কোরানে যে বলেছে , আল্লাহই তার বানী সংরক্ষন করবে , সেটাতে আল্লাহ ব্যর্থ। সুতরাং প্রমানিত যে , কোরানের আল্লাহ কোন ভাবেই সর্ব শক্তিমান সৃষ্টিকর্তা নয়, যদি কোরানের বানী সৃষ্টিকর্তার বানী হতো , ছাগলে কোনভাবেই কোন আয়াত খেয়ে ধ্বংস করতে পারত না। বরং কোরান হয় মুহাম্মদ বা তার সাগরেদদের দ্বারা রচিত একটা কিতাব।
বি:দ্র: হাদিসগুলো বাংলাদেশ সরকার এর ইসলামী ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত এবং তাওহীদ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হাদিস থেকে নেয়া হয়েছে।
যার সাইট : www.hadithbd.com

Saturday, December 8, 2018

রহস্যজনকভাবে ধর্ম ব্যবসায়ী তেতুল সাহেব আর রাজনীতির ভন্ডপীরের আলিঙ্গন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের এক প্রেস নোটে ১০ মে ২০১৩ সালে বলা হয়েছিলঃ হেফাজতে ইসলাম নামে একটি অনিবন্ধিত সংগঠন গত ৬ এপ্রিল ঢাকার শাপলা চত্বরে সমাবেশ করে ৫ মে ঢাকা অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করে। পূর্ব ঘোষিত এ কর্মসূচি অনুসারে তারা ঢাকার চারদিকে ছয়টি স্থানে অবরোধের আয়োজন করে। অবরোধ কর্মসূচি পালনের একদিন পূর্বে ৪ মে শনিবার তারা পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি সংক্ষিপ্তকরণের কথা বলে ৫ মে দুপুর ২টা থেকে শাপলা চত্বরে তাদের নেতা হাটহাজারী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আহমদ শফীর নেতৃত্বে দোয়া কর্মসূচি পালনের অনুমতি চায়। পূর্ব ঘোষিত এ কর্মসূচিতে ঢাকা শহরের ভেতনরে কোন সভা-সমাবেশ করার কার্যক্রম না থাকলেও সরকার গণতান্ত্রিক উদারতার পরিচয় দিয়ে হেফাজতে ইসলামকে শর্তাধীনে সন্ধ্যার পূর্ব পর্যন্ত দোয়া কর্মসূচি প্রতিপালনের অনুমতি প্রদান করে।
কিন্তু ৫ মে অবরোধ কর্মসূচির প্রথম থেকেই হেফাজতে ইসলাম ঢাকার চারপাশে ৬টি পয়েন্টে অবরোধ স্থাপন করে শহরে ঢুকে এবং শাপলা চত্বরে অবস্থান নিতে থাকে। সেই সঙ্গে বায়তুল মোকাররম এলাকায় জমায়েত হয়ে কর্তব্যরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এবং উচ্ছৃঙ্খল কর্মীরা নাশকতামূলক কর্মকা- চালাতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা ব্যাপক জমায়েত করে লুটপাট, অগি্নসংযোগ, ভাঙচুরে লিপ্ত হয়। তারা নির্বিচারে গাড়ি পোড়াতে থাকে, পুরানা পল্টন সড়কে অবস্থিত কমিউনিস্ট পার্টির অফিসে অগি্নসংযোগ করে। অতঃপর পাশেই মুক্তি ভবনে লুটপাট চালিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। হকারদের দোকানসমূহ লুটপাট করে, বইয়ের দোকানসমূহ তছনছ করে এবং পবিত্র কোরআন শরীফের স্টল বিভিন্ন দিক থেকে পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। উন্মত্ত হেফাজত কর্মীরা ফুটপাতে স্থাপিত জায়নামাজ, তসবি ও টুপির দোকান এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী দোকান পুড়িয়ে দিয়ে শত শত নিরীহ কর্মজীবী মানুষকে সর্বস্বান্ত করে।

হেফাজতের লোকজন হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন কার্যালয়ে হামলান্ন চালিয়ে ভাঙচুর করে এবং তাদের ১১টি মূল্যবান গাড়িতে অগি্নসংযোগ করে। এ সময়ে দমকল বাহিনীর লোকজন আগুন নিভাতে গেলে তাদের মারধর ও আহত করে তাড়িয়ে দেয়। দুপুরের পর অবরোধ স্থলসমূহে আন্দোলনরত লোকজন শাপলা চত্বর ও বায়তুল মোকাররম এলাকায় হাজির হলে হেফাজতি কর্মীরা উন্মত্ত হয়ে ডিসি (ট্রাফিক) পূর্ব জোন অফিসে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে অগি্নসংযোগ করে। এতে ডিসি মতিঝিলসহ একজন পুলিশ আগুনে পুড়ে আহত হয়।

দুপুরের দিকে একপর্যায়ে তারা গুলিস্তানে অবস্থিত আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা চালাতে উদ্যত হয় এবং গোলাপ শাহ মাজারে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। তারা জনতা ব্যাংকের করপোরেট শাখায় হামলা চালায় এবং লুটপাটের চেষ্টা করে এবং নিচতলায় অবস্থিত এটিএম বুথ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। তাছাড়া ইস্টার্ন ব্যাংক ও ব্যাংক এশিয়ায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। উচ্ছৃঙ্খল কর্মীরা মতিঝিলে সরকারি কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের বাস ডিপোতে ঢুকে সরকারি কর্মচারী পরিবহনের কয়েক ডজন বাস পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেয়। তাদের তা-ব থেকে রক্ষা পায়নি আন্তর্জাতিকমানে সজ্জিত স্টেডিয়াম, রাস্তায় লাগানো বৃক্ষরাজি, রাস্তা বিভাজক, লাইট পোস্ট ও বিভাজকে স্থাপিত স্টিল স্ট্রাকচার। এমনকি সৌর বিদ্যুৎ পোস্টও ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়।

রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ও প্রশাসনিক কেন্দ্রে যখন নজিরবিহীন লুটপাট ও অগি্নসংযোগ চলছে তখন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে গণমাধ্যমে হেফাজতে ইসলামকে সত্বর নৈরাজ্য বন্ধ করে সন্ধ্যার পূর্বেই তাদের প্রতিশ্রুতিমতো শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় সরে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু হেফাজতের নেতৃবৃন্দ তাতে কর্ণপাত করেনি, বরং তাদের বেআইনি অবস্থান কার্যক্রম বেপরোয়াভাবে চালিয়ে যেতে থাকে। শেষ বিকেলে তাদের নেতা আহমদ শফী তার অবস্থানস্থল লালবাগ মাদ্রাসা থেকে শাপলা চত্বরের সমাবেশস্থলে রওনা হন। কিন্তু কিছুদূর এসেই তিনি বিএনপির নেতৃত্বপর্যায় থেকে ফোন পেয়ে শাপলা চত্বরে না এসে ফিরে যান। এদিকে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির ব্যাপকতাও বাড়তে থাকে। রাত এগিয়ে এলে বিএনপি নীতিনির্ধারকদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করে। বৈঠক শেষে মাননীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তাদের নেতাকর্মীদের হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিতে সক্রিয় অংশগ্রহণের আনুষ্ঠানিক নির্দেশ দেন এবং ঢাকা নগরবাসীকে হেফাজত কর্মীদের সহায়তা প্রদানের জন্য আহ্বান জানান। অবশ্য ঘটনার সূচনা থেকেই বিএনপি ও জামায়াত-শিবির কর্মীরা নৈরাজ্যকর কার্যক্রমের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিল বলে জানা যায়।

হেফাজত কর্মীরা ডিভাইডারের মাঝে থাকা গাছগুলো কেটে রাস্তায় ব্যারিকেড দেয়, ডিভাইডার ভেঙে দেয় এবং নির্বিচারে গাড়িতে অগি্নসংযোগ করতে থাকে। লোহার ডিভাইডার ও কাঁটাতার উপড়ে ফেলে দেয়। রাস্তায় বড় বড় অগি্নকা- ঘটিয়ে গণআতঙ্কের সৃষ্টি করে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কতিপয় গণমাধ্যমে তাদের এহেন বিভীষিকাময় কর্মকা- ও উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রচার করতে থাকলে নগরবাসী আতঙ্কিত হন। ফলে দেশবাসী চরম উদ্বিগ্ন অবস্থায় সময় কাটাতে থাকেন।

দেশ যখন মহাদুর্যোগের দ্বারপ্রান্তে, তখন জনগণের নির্বাচিত সরকার দেশ ও জনগণের নিরাপত্তা ও সম্ভাব্য অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ও নৈরাজ্য থেকে দেশকে রক্ষার নিমিত্তে এবং নগরবাসীর জানমাল রক্ষার্থে উচ্ছৃঙ্খল ও উন্মত্ত ধ্বংসযজ্ঞে লিপ্ত হেফাজত কর্মীদের নিরাপদে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। নৈরাজ্য প্রতিরোধ, গণতন্ত্র রক্ষা, আইনের শাসন সুরক্ষা, গণনিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্যই এই অভিযান অপরিহার্য হয়ে উঠে। অনন্যোপায় হয়ে রাত প্রায় ২টায় ঢাকা মহানগর পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির যৌথ অভিযান শুরু হয়। অভিযানে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এতে জলকামান, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ব্যবহার করা হয়। অভিযানের শুরুতেই মাইকে একাধিকবার সতর্ক করে সবাইকে চলে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়। আরামবাগ ও দৈনিক বাংলা মোড় থেকে শাপলা চত্বরমুখী সড়ক দিয়ে নিরাপত্তা বাহিনী আস্তে আস্তে এগোতে থাকে এবং ইত্তেফাক মোড় অভিমুখী রাস্তা খোলা রেখে জনতাকে নিরাপদে সরে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। অভিযান শুরুর ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে অবস্থানরত জনতা শাপলা চত্বর ছেড়ে সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ীর পথে সরে যায়। অভিযানকালে মঞ্চের পাশে কাফনের কাপড়ে মোড়ানো ৪টি মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। পুলিশ সূত্রে জানা যায় সারাদিন বিভিন্ন পর্যায়ের সংঘাতে ৩ জন পথচারী, একজন পুলিশ সদস্যসহ মোট ১১ জন নিহত হন।
এ ঘটনায় হাজার হাজার লোক প্রাণ হারিয়েছে বলে অবাস্তব ও ভিত্তিহীন গুজবের পরিপ্রেক্ষিতে জনসাধারণের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, উক্ত গুজবসমূহ সম্পূর্ণ অসত্য, মনগড়া ও অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কেননা :
(ক) অবাধ তথ্যপ্রবাহ ও ব্যাপক তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে হাজার হাজার লোক হত্যা করে লাশ গুম করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। মোবাইল ফোন, ই-মেইল, ইন্টারনেটের এই যুগে এটি নিতান্তই অবিশ্বাস্য।
(খ) এত প্রাণহানি হয়ে থাকলে নিশ্চয়ই নিহতদের পরিবার পরিজন, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব প্রিয়জনদের সন্ধানে তৎপরতা চালাতেন এবং গণমাধ্যমে তা প্রকাশ পেত। কিন্তু এ ক্ষেত্রে একটি উদাহরণও কোন মহল থেকে হাজির করা হয়নি। এতেই প্রমাণ হয় ব্যাপক লোক হননের বিষয়টি অসত্য ও পুরোপুরি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গুজব।
(গ) অভিযান কার্যক্রম পরিচালনার সময় টিভি ও স্টিল ক্যামেরাসহ বিপুল সংখ্যক সংবাদকর্মী উপস্থিত ছিলেন, যারা ঘটনা আনুপুঙ্খ পর্যবেক্ষণ ও সমপ্রচার করেছেন। উঁচু ভবন থেকে বহু লোকজন ঘটনাক্রম অবলোকন করেছেন ও ছবি ধারণ করেছেন। কিন্তু কোথাও মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের চিত্র পাওয়া যায়নি, দৃশ্য দেখা যায়নি। কাজেই বিপুল প্রাণহানির গুজব ছড়ানোর বিষয়টি অশুভ মহলের অসৎ উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার। বরং বাস্তবতা হলো সুশৃঙ্খল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সুচিন্তিত পরিকল্পনা অনুযায়ী অপরিসীম ধৈর্য ও কঠোর সংযমের সঙ্গে পুরো অভিযান পরিচালনা করেছে। অভিযান চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন গলিতে ও ভবনের ফাঁকে যারা আশ্রয় নিয়েছিল তাদের অভয় দিয়ে যত্নের সঙ্গে উদ্ধার করে নিরাপদে সরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এদের মধ্যে প্রচুর কিশোর ও তরুণ ছিল যারা প্রথমবার ঢাকা মহানগরীতে এসেছে, তাদের গন্তব্যস্থল সম্পর্কে পথ নির্দেশ দিয়ে চলে যেতে সহায়তা করেছে যা টিভি সমপ্রচারে দেখা গেছে। পুরো অভিযান পরিচালনাকালে কারোর প্রতি কোন নিষ্ঠুর ও অমানবিক আচরণ করেছে মর্মে কোথাও কোন সংবাদ বা ছবিও দেখা যায়নি।
(ঘ) পুলিশ ও বিজিবির তরফ থেকে সংবাদ মাধ্যমে ‘অসংখ্য জনগণের মৃত্যু সংবলিত অপপ্রচার’ অসত্য, যুক্তিবিহীন এবং উদ্দেশ্যমূলক বলে চিহ্নিত করা হয়।
শাপলা চত্বর থেকে হেফাজতে ইসলামের লোকজনকে সরিয়ে দিলে তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কে আবারও জমায়েত হতে থাকে। পরদিন ৬ মে ভোর থেকেই তারা রাস্তায় ব্যারিকেড বসায়। সেই সঙ্গে নির্বিচারে রাস্তার পাশে রাখা গাড়িতে অগি্নসংযোগ করতে থাকে। এরই মধ্যে পূর্ব নির্দেশমত
বিএনপি-জামায়াত কর্মীরাও ধ্বংসযজ্ঞে যোগ দেয়। নারায়ণগঞ্জ জেলার কাঁচপুর, সাইনবোর্ড, শিমরাইল, সানারপাড়, কোয়েত মার্কেট ও মাদানী নগর এলাকায় উন্মত্ত ভাঙচুর, অগি্নসংযোগ ভয়াবহরূপ ধারণ করে। তারা মাদানী নগর মাদ্রাসাকে কেন্দ্র করে আশপাশের মসজিদের মাইক ব্যবহার করে চরম উত্তেজনাকর গুজব ছড়িয়ে লোক জড়ো করে কর্তব্যরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাদের পরিকল্পিত সংঘবদ্ধ আক্রমণ প্রতিরোধ করতে গিয়ে ২ জন পুলিশ, যথাক্রমে নায়েক ফিরোজ ও কনস্টেবল জাকারিয়া এবং ২ জন বিজিবি সদস্য যথাক্রমে শাহআলম ও লাভলু গুরুতর আহত হয়ে লুটিয়ে পড়ে এবং হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে উন্মত্ত সহিংসতার ফলশ্রুতিতে ১৩ জন মৃত্যুবরণ করেছে মর্মে জানা যায়। ঘটনা আরও চরম আকার ধারণ করতে থাকলে অধিক সংখ্যক ফোর্স সমাবেশ ঘটিয়ে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। সুত্রঃ somewhereinblog
এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের প্রেস নোট।
এখানেই শেষ নয়, হেফাজতে ইসলাম পল্টন থেকে বিজয় নগর পর্যন্ত সকল গাছ কেটে ফেলে, ইলেকট্রিক খাম্ব উপড়ে ফেলে, যানবাহনে আগুন লাগিয়ে দেয়।
কয়েকজন ব্লগারের বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগসহ ১৩দফা দাবি তুলে সংগঠনটি এ ধরণের কর্মসূচি নিয়েছিল।
মতিঝিলের সমাবেশে তাদের ১৩টি দাবি তুলে ধরে তা বাস্তবায়নে জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম, এবং যারা শাহাবাগ গনজাগরন মঞ্চে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করছিলো তাদের মধ্যে ৮৪ জনের একটি লিস্ট করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কে দিয়ে তাদের বিচারের দ্বাবি জানিয়েছিলো, এবং পরবর্তীতে সেই লিস্ট ধরে ১৬ জন লেখক, ব্লগার, প্রকাশক, শিক্ষক ও পুরোহিত দেরকে হত্যা করে।
আজ পাঁঁচ বছর পরেও সেই হত্যাকারী র বিচার হয়নি, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ক্ষতির বিচার হয়নি।
অথচ, আজ আবার হেফাজতে ইসলামের সারা দেশ থেকে মাদ্রাসা ছাত্রদের ঢাকায় এনে প্রধানমন্ত্রীকে সম্বর্ধনা দে​​বার আয়োজন করেছে। এইজন্য সারা শহরে ট্রাফিক ব্যবস্থায় বিশেষ নিয়ন্ত্রণ করা হবে। কিছু কিছু রাস্তা পরিহার করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে ঢাকার নাগরিকদের। এমনকি জুনিয়র স্কুল স্তরের এমন দুটি পরীক্ষা আকস্মিকভাবে পিছিয়ে দেয়া হয়েছে, যাতে অংশ নেবার কথা সাতাশ লাখ পরীক্ষার্থীর।
হেফাজতিরা এবার সেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান জনসভার জন্যে বেছে নিয়েছে যেখানে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন, অথচ এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালে ৭ ই মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন, আমরা অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পরেছিলাম।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্নঃ আজকের হেফাজতের মঞ্চ থেকে আপনি কি দেশের জনগনকে বলবেন কেনো এই অরাজনৈতিক সংগঠনের সাথে আপনার রাজনৈতিক সখ্যতা? তাদের ধ্বংসাত্মক কৃতকর্মের জন্যে গত ৫ বছর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি কেনো?

পঁচিশ হাজার অযোগ্যদের কিছু কথা।

এক যে ছিল রাজা আমরা সকলে তার প্রজা। রাজার রাজত্ব বৈভব ও প্রাচুর্যে পরিপূর্ণ। রাজা মনের আনন্দে রাজ্য পরিচালনা করেন। হঠাৎ রাজার মনে হল মানুষকে শিক্ষিত করার প্রয়োজন আছে, আসলে এত মূর্খ প্রজা থাকলে রাজার হিসাবের কাজ দেখাশোনার বড্ড অসুবিধা, আর অন্য রাজারাও ঠাট্টা তামাশা করেন। তাই রাজা স্থির করলেন শিশু শিক্ষার জন্য বেশ কিছু শিক্ষক নিয়োগ করবেন তাও প্রায় তেতাল্লিশ হাজার। এখন আবার আধুনিক যুগের রাজা তাই পরীক্ষার ও ব্যবস্থা হল। প্রায় ছাব্বিশ লক্ষ পরীক্ষার্থী জোগাড় হল; রাজার তো গর্বে বুক ফুলে যাচ্ছে আমার রাজ্যে এত শিক্ষিত (বেকার)! আমার তো জানায় ছিল না?
আসলে রাজার রাজ্য বিভিন্ন রকম শিল্পে ভরপুর কোথাও মুড়িভাজা শিল্প, কোথাও তেলে ভাজা শিল্প, তোলাবাজি শিল্প, এগুলিই সম্বল; আবার কোথাও আবার ল্যাংচা হাব শিল্প। তাই চতুর্দিকে শিল্পের ছড়াছড়ি। রাজার আবার চিন্তা হয় এই রাজ্যে এত পরীক্ষার্থী অন্য রাজ্যের রাজার কারসাজি নয় তো? যাইহোক শেষ পর্যন্ত দেখা যায় পরীক্ষাতে পাশ করে প্রায় এক লক্ষ দশ হাজার পরীক্ষার্থী। এদের মধ্যে আবার বিভিন্ন ভাগ রয়েছে। কেউ আছে আগে বড় বড় স্কুল থেকে প্রচুর টাকা খরচ করে কি ভাবে পড়াতে হবে তা শিখে এসেছেন, এদের প্রশিক্ষিত বলা হয়। আদতে এরা ধনী পরিবারের সন্তান। এছাড়া যারা আছে তারা কিন্তু এমনি পড়াতে সক্ষম, তবে বাপের পয়সা নেই তাই বড় বড় স্কুল থেকে বড় বড় ডিগ্রী নিয়ে আসতে পারেন নি। কিন্তু তুলনা করে দেখলে বোঝা যায় পড়ানোর ক্ষেত্রে গুণগত কোন মৌলিক পার্থক্য নেই!
যাক শুরু হল নিয়োগ প্রক্রিয়া। প্রথমে কিছু প্রশিক্ষিতদের নিয়োগ করা হল, তারপর রাজ্যে বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষদের নিয়োগ করা হল।এরপর এল আদতে শিক্ষিত ভিখারীদের পালা।রাজার চোখে শিক্ষিত ভিখারীদের বিশেষ কোন মূল্য নেই। তাই কিছু নিয়োগ হল কিন্তু মোট কত নিয়োগ হল এবং কিভাবে নিয়োগ হল তার বিশেষ সদুত্তর নেই? নিন্দুকেরা বলেন -“সবই টাকার খেলা”। আসলে কিছু দিন আগেই রাজা নাকি কোথায় এক জায়গায় বলেছিলেন – আজকাল চার-পাঁচ বছর অন্তর অন্তর বড় বড় যুদ্ধ হয়। সে যুদ্ধে রাজা থাকবে কি, থাকবে না তার জন্য সংগ্রাম করতে হয়। তাই যেমন করেই হোক রাজাকে গদিতে টিকে থাকতেই হবে, তাই তার জন্য প্রচুর টাকার প্রয়োজন – সেনাবহিনী, হাতিয়ার সব তৈরী করতে হবে তো?

এই রাজা আবার নিজের আইনের খাতায় লিখে রেখেছেন – সবাইকে সমান সুযোগ দিতে হবে, কারোর প্রতি জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে কোন বৈষম্য করা যাবে না, রাজার চোখে ‘সকলেই সমান’। কিন্তু প্রশ্ন হল এখানে রাজা কি সকলকে সমান চোখে দেখছেন? ধনী ও দরিদ্র কি সমান সুযোগ পাচ্ছেন? তাহলে রাজার চোখে ‘সকলে সমান’ এই কথাটির কি কোন মূল্য রইল? নিন্দুকেরা বলেন আগে ও রাজা ছিল তার সাঙ্গপাঙ্গারা ও চুরি করত; তবে তারা মাছ চুরি করত আর বর্তমানের রাজার সাঙ্গপাঙ্গারা পুকুর চুরি করে। নিন্দুকেরা বলেন সবই রাজার অঙ্গুলি হেলেনেই ঘটে চলেছে। আসলে ‘দুধের মধ্যে জল, না জলের মধ্যে দুধ’ তা বোঝায় বড় দায়!
রাজা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রায় তেতাল্লিশ হাজার প্রজাকে নিয়োগ করা হবে, কিন্তু তিনি আবার নূতন করে ঘোষণা করলেন- ‘নূতন করে পরীক্ষা নেওয়া হবে এবং পঁচিশ হাজার জনকে নিয়োগ করা হবে’। এই পরীক্ষাতে শুধুমাত্র বড় বড় স্কুল থেকে পড়া প্রশিক্ষিত বাবুদের ছেলেরাই সুযোগ পাবেন। যদিও কিছু গরীবের ছেলে এই সব স্কুল থেকে পড়াশোনা করছে তবে তারা নিঃস্ব হয়ে গেছেন। হায়রে রাজা! তোমার এ কি বিচার?

তুমিই তো প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলে তেতাল্লিশ হাজার বেকারকে সুযোগ দেবে কিন্তু এখন তুমিই আবার বলছ, নূতন করে পরীক্ষা দিয়ে পঁচিশ হাজার জনকে নিয়োগ করা হবে। তাহলে কি এই পঁচিশ হাজার পদ রাতারাতি তৈরী হয়ে গেল? না, কি যাদের ন্যায্য সুযোগ পাওয়ার কথা ছিল তাদের সুযোগ দিলেন না? এই পঁচিশ হাজারের মধ্যে যদি দশ থেকে পনেরো হাজার ও শিক্ষিত বেকারদের সুযোগ দেওয়া হত তাহলে অতগুলি গরীব পরিবার বাঁচত। এই গরীব পরিবারের মানুষ গুলিকে ও না খেতে পেয়ে মরতে হত না! আসলে রাজার দৃষ্টিতে গরীব মানুষেরা কি মানুষ নাকি? আসলে এরা মানুষের মত দেখতে এক অদ্ভুত প্রাণী!

তাই তাদের দুঃখ, দুর্দশা, ভালমন্দ দেখার অত সময় রাজার নেই। রাজা আইন করতে পারেন যখন তখন, আসলে যারা ঠান্ডা ঘরে থেকে আইন তৈরী করেন তারা সাধারণ প্রজাদের দুঃখ দুর্দশা বুঝবে কি করে? তাই আইন বাবুরা আইন করে এই সব প্রশিক্ষণ হীনদের পরীক্ষায় বসার শেষ সুযোগটুকু কেড়ে নিল। সত্যি কথা বলতে কি যারা মানুষই নয় তাদের নিয়ে অত চিন্তা কিসের?
এদের নিয়ে কারোর কোন মাথাব্যথা নেই। রাজ্যে কত গুণীজন, কত মগজধারী মানুষ আছেন, রাজার প্রতিপক্ষরা ও আছেন কিন্তু তাদের মুখে ও টু শব্দটি পর্যন্ত নেই! রাজ্যের যারা খবর সংগ্রহ করেন তারা ও নীরব, চারিদিকে যেন এক শ্মশানের শান্তি! কোন এক প্রতিবাদী শিল্পী ছিল যিনি প্রতি কথায় কথায় প্রতিবাদ করে বলত- প্রজারা শালা মাথা মোটা……..যায় নেচে….। এই সব প্রতিবাদীরা ও রাজার দুধ, ঘি ভক্ষণ করে বিষ ঝেড়ে শান্ত পোষ্যতে পরিণত হয়েছে। তাই কোন প্রতিবাদ প্রতিরোধ নেই, রাজা চলে নিজের খেয়ালে।

তাই এইসব বেকারদের ভবিষ্যৎ কি হবে তা নিয়ে রাজা মোটেই চিন্তিত নয়। এখন প্রশ্ন হল এইসব শিক্ষিত বেকারদের কি হবে? রাজার পারিষদ বর্গরা বলবেন যান বড় বড় স্কুলে মোটা অর্থ খরচ করে ডিগ্রী নিয়ে আসুন। কিন্তু তারপর ও স্বচ্ছভাবে নিয়োগ হবে এই নিশ্চয়তা আছে কি? আসলে যারা দুবেলা দুমুঠো ভাল করে খেতে পায় না তারা আবার ডিগ্রী আনবে কোথা থেকে? এই সব মানুষগুলি অনেক লড়াই করে, অনেক ত্যাগ তিতিক্ষা স্বীকার করে শিক্ষাটুকু অর্জন করেছেন।কিন্তু এই শিক্ষার আদেও কি কোন মূল্য আছে? এই শিক্ষিত বেকারদের দুর্নীবিত আত্মকথা শোনার সময় কি রাজামশাইয়ের আছে?
কারোর বৃদ্ধ পিতা মাতা জীবনের শেষ দিন গুনছে, যেন মৃত্যুর আগে নিজের সন্তানদের সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে দেখে যেতে পারেন। কারোর বাড়ির বাবা-মায়ের গভীর অসুখ, অর্থের অভাবে ভাল করে চিকিৎসা করাতে পারছিলেন না। আশা ছিল ছেলেমেয়ের চাকরি হলে একটু ভাল করে চিকিৎসা করাবেন, কিন্তু তাদের এই স্বপ্ন আর পূরণ হওয়ার নয়! তাদের বিনা চিকিৎসাতেই ছটফট করে মরতে হবে, এটাই ভবিতব্য! কেউ হয়ত তার প্রেয়সীকে কথা দিয়েছিল চাকরিটা পেয়ে গেলেই স্বপ্নের নীড় বাঁধবো কিন্তু শাসকের এই নিষ্ঠুর পরিহাসে তাকে তার প্রিয়তমাকে অন্য জনের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হতে হচ্ছে। নিজেকে মনে হচ্ছে পরাজিত ব্যার্থ সৈনিক!

কারোর হয়ত মাথা গোজার ঠাঁই নেই আশা ছিল এবার মাথা গোজার একটা ঠাঁই হবে। কেউ বা স্বপ্ন দেখেছিল বোনের বিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব সম্পন্ন করবেন ইত্যাদি…। এই সব ছোট ছোট মানুষের পঁচিশ হাজারটি ছোট ছোট স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল রাজার নিষ্ঠুর পরিহাসে। আসলে ছোট ছোট মানুষের ছোট খাটো স্বপ্ন তাদের সামর্থ্য ও অনেক কম তাই অনেকেই ভেঙ্গে পড়েন, অনেকে চরম হতাশা গ্রস্থ হয়ে আবার বলছেন -“মরে গেলেই বুঝি ভাল হত”! তাদের উদ্দেশ্যে বলি- না মরে গেলেই সব সমস্যার সমাধান নয়। যাদের জন্য আজ আপনাদের এই দুরবস্থা তাদের চিনতে শিখুন এবং সঠিক সময় হলে তাদের যোগ্য জবাব দিন। রাজার লাল চোখকে ভয় পাবেন না, নিজের ভিতরের আগুন জ্বালিয়ে রাখুন। নিজের বিবেককে জাগ্রত করুন, রাজার নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে সঠিক সময় যথাযোগ্য জবাব দিন।
সময় মানুষকে একবার হলে ও সুযোগ দেবে যে দিন এই দুর্বল মানুষগুলিই হয়ে উঠবে ভাগ্যবিধাতা, সেদিন আপনার ও তাদের ভাগ্য নির্ধারণ করুন এবং যোগ্য জবাব দিন। মনে করবেন না আপনি একা, আপনি বন্ধুহীন। আপনি একা নন আপনার সঙ্গে আছে লক্ষ লক্ষ মানুষ ও তাদের পরিজন। তারাও আপনার সমব্যাথী। আমার ক্ষমতা খুবই সীমিত কিন্তু আমাদের ক্ষমতা অসীম। তাই সংগঠিত হোন ও নিজেদের দাবি আদায়ে সচেষ্ট হোন। রাজা মানুষকে ভাত দিতে পারেন না কিন্তু ধর্মের আফিম দেয় যে আফিম খেয়ে মানুষ বোধ- বুদ্ধিহীন বন্য পশুতে পরিণত হচ্ছে! আসলে এতে প্রজারা নিজেরাই হানাহানিতে লিপ্ত থাকবে এবং শাসনকার্য পরিচালনা সহজ হবে।

জনগণ যত বিছিন্ন হবে রাজার স্বৈরতান্ত্রিক শাসন তত সুসংগঠিত হবে। তাই রাজা শুরু করেছেন ভাগ কর ও শাসন কর নীতি। তবে কালের নিয়মে কোন নীতিই দীর্ঘস্থায়ী হয় না।আজ যে রাজার দুর্ভেদ্য দূর্গ গড়ে উঠেছে তার প্রতিটি ইট এই সমস্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মানুষের রক্তবিন্দু দিয়ে গাঁথা! তাই আমরা যদি একটা একটা করে দূর্গের ইট খসিয়ে দিয় তাহলে এই দুর্ভেদ্য দূর্গ ও একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে। অত্যাচারী শাসক যতই শক্তিশালী হোক না কেন তার ও বিনাশ হয় অতি নিষ্ঠুর ভাবেই। তাই আপনারা জেগে উঠুন ইতিহাসের পাতায় দেখা যায় অত্যাচারী শাসনের প্রতীক বাস্তিল দূর্গের ও পতন হয়েছিল! আসুন আমরা সকলে ও এই অমানবিক রাজার নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে সংগ্রামি লড়াইয়ের পণ করি। আমাদের যথার্থ আত্মত্যাগের বিনিময়ে এই স্বৈরাচারী রাজার রাজত্বের দীপ শিখা অস্তমিত হওয়া এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা!

মুহাম্মদ একটা পাম গাছ, যেটি পাহাড়ের পাশে অযত্নে জন্মেছে।



প্রতি বছরের মত ঘটা করে নবী মুহাম্মদের জন্মবার্ষিকী পালন করল মুসলমান সম্প্রদায়। ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী নামে নবী মুহাম্মদের জন্মবার্ষিকী পালন করলেও নবী মুহাম্মদের জন্মের রহস্য নিয়ে চিন্তার জগতে যেসব কানা-ঘুষা আছে সেগুলো নিয়ে মুসলিম সম্প্রদায় ও ইসলামী স্কলারদের কখনো আলোচনা করতে দেখা যায়নি, উত্থাপিত প্রশ্নগুলোর কোন সদুত্তোর পাওয়া যায়নি তাদের কাছ থেকে। সুকৌশলে মুহাম্মদের জন্ম নিয়ে সব ধরনের বিতর্ক এড়িয়ে যেতে দেখা যায় এদেরকে। এর কারণ হচ্ছে- তথাকথিত এমন একজন মহামানবের জন্ম রহস্য নিয়ে মুক্তচিন্তকদের উত্থাপিত প্রশ্নগুলোর উত্তর তাদের জানা নেই। এই বিষয়ে আলোচনাতে মুসলিম স্কলার থেকে শুরু করে হালের মোল্লা-মৌলবীসহ সকলে বিব্রতবোধ করেন।
‘মুহাম্মদের প্রকৃত পিতা আসলে কে?’ – এমন প্রশ্ন উত্থাপনকারীদের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তাদের কাফের, ইসলাম বিদ্বেষী, ইহুদী-নাসারাদের দালাল বলে আখ্যায়িত করা হয়। মুসলমানদের কাছে যে প্রশ্নের কোন উত্তর নাই, সেটির মোকাবেলা করে ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত পাওয়ার কথা বলে। মুহাম্মদ যদি ঈশ্বর বা আল্লাহ প্রেরিত কোন মহামানব হয়ে থাকে তবে তার জন্মকাল, পূর্বসূরী, পিতা-মাতা নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহ থাকতেই পারে। এমন ধরনের আগ্রহকে দোষীভুক্ত করা যায় না। যদিও আমি ব্যক্তিগতভাবে মানুষের পৈতৃক বা মাতৃক পরিচয়, কিংবা মানুষের জন্মের বৈধতা, সামাজিক বন্ধনের মাধ্যমে জন্ম নিয়েছে কিনা- এমন ধরনের বিতর্ক বা আলোচনাকে কখনই মূখ্য বিষয় বলে মনে করিনা। মানুষের একমাত্র পরিচয় হচ্ছে- ‘মানুষ’। নবী মুহাম্মদের বিষয়ে এমন আলোচনার কারণ হচ্ছে- ইসলাম যে ধরনের নৈতিকতাবোধের কথা বলে বা যেসব নৈতিকতাকে প্রাধান্য দেয়; সেইসব নৈতিকতা ইসলামের প্রাণ পুরুষ নবী মুহাম্মদের মধ্যে ছিল না। নবী মুহাম্মদের জন্ম হয়েছিল ইসলাম প্রদর্শিত নৈতিকতাবোধ বিবর্জিত অবস্থায়। সাড়ে ১৪০০ বছর পরও এই মহামানবের প্রকৃত পিতা কে আমাদের কাছে রহস্যজনক থেকে গেছে। মুহাম্মদকে আবদুল্লার ঔরসজাত বলে মিথ্যা ইতিহাস যুগযুগ ধরে প্রচার করা হচ্ছে এবং ইসলামী নৈতিকতাবোধের নামে সামাজিক প্রথা বিবাহ বন্ধন ছাড়া জন্ম নেওয়া মানব সন্তানকে জারজ বা অবৈধ বলে অনুমোদিত হয়ে আসছে। এ কারণে মুহাম্মদের জন্ম রহস্য নিয়ে আলোচনা করা উচিত বলে আমি মনে করি। মুসলমানদের এই উপলব্দি হওয়া উচিত- তাদের পথ প্রদর্শকও ইসলামের প্রচলিত বিবাহ বর্হিভুত সম্পর্কের মাধ্যমে জন্ম নিয়েছিল।

এবার মুল আলোচনায় আসা যাক। ইসলাম অনুমোদিত নবী মুহাম্মদের বিভিন্ন জীবনী গ্রন্থ লেখকদের মতে, মুহাম্মদের মা আমিনা ছোট বয়স থেকে তাঁর চাচা ওহাবের বাড়ীতে চাচার তত্ত্বাবধানে থেকে বড় হয়েছে। মুহাম্মদের দাদা আবদুল মোত্তালিব তার পুত্র আবদুল্লার বিয়ের পাত্রী দেখার জন্য আবদুল্লাকে নিয়ে ওহাবের বাড়িতে গিয়েছিলেন। পাত্রী আমিনাকে সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়ে এসেছিল আমিনার চাচাত বোন ওহাবের মেয়ে হালা। আবদুল্লার পাত্রী হিসাবে আমিনাকে আবদুল মোত্তালিব পছন্দ করেন। কিন্তু আমিনার সাথে আসা ওহাবের মেয়ে হালাকে আবদুল মোত্তালিবের পছন্দ হয়ে যায় নিজের জন্য। আবদুল মোত্তালিব ওহাবের কাছে জানতে পারেন আমিনার সাথে আসা সুন্দর মেয়েটি তার মেয়ে হালা। আবদুল মোত্তালিব ওহাবের কাছে হালাকে তার নিজের জন্য পছন্দের কথা জানান। বনু হাশেম গোত্রের প্রধান হিসাবে আবদুল মোত্তালিবের সেই সময় যথেষ্ঠ প্রভাব ও প্রতিপত্তি ছিল। ওহাব মোত্তালিবের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে পারে নাই। ওহাব ভাতিজি আমিনার সাথে মোত্তালিব পুত্র আবদুল্লা এবং মেয়ে হালার সাথে আবদুল মোত্তালিবের বিয়ে দিতে রাজী হয়েছিল। সুন্দরী হালাকে আদুল মোত্তালিব হাতছাড়া করতে চাননি। তাই ছেলের জন্য কনে দেখতে আসা আবদুল মোত্তালিবের ইচ্ছে অনুযায়ী বাড়িতে ফিরে না গিয়ে সেই দিনই আবদুল্লা আমিনা’কে এবং মোত্তালিব হালা’কে বিয়ে করেন। নববধু হালাকে নিয়ে আবদুল মোত্তালিব নিজ গৃহে চলে যান, আবদুল্লা ওহাবে বাড়িতে থেকে বাসর করেন।

ইবনে হিশাম কতৃক লিখিত নবীর জীবনীতে দেখা যায় যে বিয়ের পরপরই আমিনার বাবার বাড়িতে অবস্থানের কালীন সময়ে আবদুল্লাহ আমিনার সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে এবং মোহাম্মদকে আমিনা গর্ভে ধারণ করে । ইসলামী ঐতিহাসিকদের মত অনুযায়ী এটা নিশ্চিত যে আমিনা মুহাম্মদকে গর্ভে ধারণ করে বিয়ের পরপরই। ঐতিহাসিক ইবন সাদ কতৃক লিখিত “The Book of the Major Classes” বইয়ে পাওয়া যায়- বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যেই আবদুল্লাহ ২৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন এবং এ সময়ে মোহাম্মদ তার মাতৃগর্ভে ছিল। এদিকে মুহাম্মদের দাদা আব্দুল মুত্তালিব এবং আমিনা’র চাচাত বোন হালার এক সন্তান ছিল। তার নাম হামজা, যিনি সম্পর্কে নবী মুহাম্মদের চাচা। এই হামজা পরবর্তীতে মুহাম্মদ প্রবর্তিত ধর্ম ইসলামের একজন বীরযোদ্ধা হিসাবে উহুদের যুদ্ধে মারা যান।
নবী মুহাম্মদের জন্ম নিয়ে ইসলামী ইতিহাসবিদদের ইতিহাস প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে মুহাম্মদের চাচা হামজা যখন সামনে আসে। আবদুল্লা ও মোত্তালিব একসাথে বিয়ে হওয়ার কারণে হালা এবং আমিনা একই সময়ে গর্ভধারণ করার কথা অথবা যে কোন একজন পরে। যদি হালা কয়েক বছর পরে গর্ভবতী হয়ে থাকে তবে হামজার বয়স মুহাম্মদের চাইতে কম হবার কথা। কিন্তু ইসলামের ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি যে হামজা মোহাম্মদের চাইতে বড়। মুহাম্মদের জীবনী “ইয়ুন আল-আতহার” বইয়ে ইবন আল সাঈদ আল-নাস লিখেছেন,” জুবায়ের থেকে বর্নিত হামজা নবীর চেয়ে চার বছরের বড়। কিন্তু এটা আমার কাছে সঠিক মনে হয় না, কারণ নির্ভরযোগ্য হাদিস থেকে জানতে পারি যে থাইবিয়া নামক একজন হামজা এবং মুহাম্মদ উভয়কেই লালন পালন করেছেন”। ইবন আল সাঈদ উপসংহারে বলেছেন যে হামজা মোহাম্মদের চেয়ে দুই বছরের বড়, জুবায়ের যে দাবী করেছেন হামজা যে মুহাম্মদের চেয়ে চার বছরের বড় সেটা সঠিক নয়। তিনি শেষ করেছেন একথা বলে, “ একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন”। যে বিষয়ে মুসলমানদের সন্দেহ থাকে সে বিষয় নিয়ে আলোচনা না বাড়িয়ে এমন কথাই বলে।

ইবন হাজার আল-আসকালানী ,তার বই “Finding the Truth in Judging the Companions”, এ লিখেছেন যে হামজা মুহাম্মদের জন্মের দুই বা চার বছর আগে জন্ম গ্রহণ করেছেন। ইবনে সাদ “The Book of the Major Classes” বইয়ে উল্লেখ করেছেন যে হামজা যখন উহুদের যুদ্ধে নিহত হন তখন তার বয়স ছিল ৫৯ বছর। ইবনে সাদ আরও বলেছেন যে হামজা নবীর চাইতে চার বছরের বড়, অয়াশি ইবনে আল-হার্ব যখন তার পেটে তরবারী ঢুকিয়ে দেন তখন তিনি মারা যান।

এখন সবার মনে প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক- উহুদের যুদ্ধের সময় মুহাম্মদের বয়স কত ছিল? সকল ইসলামী ঐতিহাসিকদের অভিন্ন মত অনুযায়ী মুহাম্মদ ৫৭০ খ্রীস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। এসব ঐতিহাসিকদের থেকে জানা যায়, উহুদের যুদ্ধ সংঘটিত হয় ৬২২ খ্রীস্টাব্দে মুহাম্মদের মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতের তিন বছর পরে। যার মানে ইসলামী ঐতিহাসিকদের হিসাব অনুযায়ী ৬২৫ খ্রীস্টাব্দে উহুদের যুদ্ধ হয়েছিল। সে সময়ে হামজা ৫৯ বছর বয়সে মারা যান এবং নবী মুহাম্মদের বয়স ছিল ৫৫ বছর ।

এখন সবার মনে প্রশ্ন আসতে পারে, হামজা তার ভাতিজা মুহাম্মদের চেয়ে চার বছরের বড় হলে সমস্যাটা কোথায়? এই প্রশ্নটির কাছেই ঘটনার প্যাচ তৈরি হয়। যদি আবদুল্লাহ ও তার বাবা আবদুল মুত্তালিব একই দিনে বিয়ে করে থাকে এবং আবদুল্লাহ বিয়ের কয়েক মাস পরে মারা যায় তবে কিভাবে হামজা মুহাম্মদের চাইতে চার বছরের বড় হয়? প্রশ্নটি আরও স্পষ্টভাবে করলে দাঁড়ায়, যদি আবদুল্লাহ মারা যাওয়ার চার বছর পরে মুহাম্মদের জন্ম হয় তবে মুহাম্মদের বাবা কে? তার পৈতৃক পরিচয় কি?
প্রশ্ন করতে পারেন, মুহাম্মদের জন্ম পরিচয়ের এমন ঘাপলা নিয়ে ইতিহাসের বইগুলোতে আলোচনা নাই কেন? একেবার নাই কথাটা ঠিক নয়। এমন ইতিহাস নিয়ে মুসলমানরা আলোচনা করতে বিব্রতবোধ করেন। ইসলামী স্কলাররা বিষয়টা কৌশলে এড়িয়ে যান। অন্য ইতিহাসবিদ বা বিভিন্ন মুক্তচিন্তকরা আলোচনা করতে গেলে ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগ তোলেন। আরবে মুহাম্মদের জীবদ্দশায় এসব নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে, গত সাড়ে ১৪০০ বছর ধরে আলোচনা হচ্ছে।

ঐতিহাসিক ইবনে কাতির তাঁর বই “The Beginning and the End” এ উল্লেখ করেছেন আরবে মুহাম্মদ জীবিত থাকা অবস্থায় বেনি কিন্দাহ গোত্রের লোকরা দাবী করত যে মুহাম্মদ তাদের বংশের। বেনি কিন্দাহ হচ্ছে আরবের সে সময়ের একটি গোত্র। কিন্তু মুসলমানরা বিশ্বাস করে বনু হাশিম গোত্রে মোহাম্মদ জন্ম নিয়েছে। আবু আল- ইসবাহানি তার বই “দলিল আল-নবুয়্যাত” বইয়ে লিখেছেন, ইবনে আব্বাস বলেছেন- নবী মুহাম্মদকে মক্কার কুরাইশরা তাদের বংশের লোক বলে স্বীকার করত, তবে তারা মুহাম্মদকে বর্ণনা করত “একটা পাম গাছ, যেটি পাহাড়ের পাশে জন্মেছে” -একথা শুনে মোহাম্মদ খুব রাগান্বিত হত।

“একটা পাম গাছ, যেটি পাহাড়ের পাশে জন্মেছে” এ কথার মানে কি? এর মানে হচ্ছে মক্কার কুরাইশরা মনে করত- মুহাম্মদ সে ওক গাছ নয়, যেটি তারা বপন করেছে। সে এমন একটা গাছ যে নিজে নিজে বেড়ে উঠেছে। কেউ জানে না কে এই গাছ বপন করেছে। মুহাম্মদ তাদের কথার অর্থ বুঝত এবং এজন্যই সে রাগান্বিত হত। আবু নাইম আল-ইসবাহানী এ বিষয়ে আরও উল্লেখ করেছেন যে ইবনে আব্বাস মোহাম্মদকে বলেছে, যখন কোরাইশরা একে অপরের সাথে মিলিত হত, তারা একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসত। কিন্তু যখন আমদের সাথে মিলিত হত, তারা আমাদের বিদ্রুপ করত এবং বলত তারা জানে না কোথা থেকে আমাদের নবী এসেছে। মুহাম্মদ যখন একথা শুনত তখন খুবই রাগান্বিত হত।
অনেক গবেষক এটাকে এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন যে বনি কিন্দাহ গোত্রের লোকজন জানত যে মুহাম্মদের জন্ম তাদের গোত্রের কারো মাধ্যমে, বনু হাশিম থেকে নয় এবং মুহাম্মদ নিজেও তা জানত। গবেষকগণ আরো বলেছে যে মুহাম্মদ হলো “একটা পাম গাছ যেটি পাহাড়ের পাশে জন্মেছে” এ কথাটির অর্থ হলো মুহাম্মদের বংশ পরিচয় অজ্ঞাত। তাহলে মুহাম্মদকে ইসমাইলের বংশের উত্তরসূরী বানানোর প্রচেষ্ঠাকে বলা যায় মিথ্যা ও চরম জোচ্ছুরী। ইব্রাহিমের বংশের বাইরের কেউ নবী হতে পারবে না ঈশ্বর বা আল্লার এমন কথা সঠিক নয়। মুহাম্মদ সেটি হয়ে দেখিয়েছেন।

অনেক ইসলামী স্কলার এবং মোল্লা মৌলবীরা মুহাম্মদের জন্ম নিয়ে এমন আলোচনার ক্ষেত্রে দাবী করে আল্লাহর অলৌকিক ক্ষমতায় নবী মুহাম্মদ চার বছর মাতৃগর্ভে ছিলেন। যা আসলে হাস্যকর এবং যা বিজ্ঞানসম্মত নয়। আধুনিক বিজ্ঞান মাতৃগর্ভে চার বছর সন্তান থাকার ইতিহাস এখনো খুঁজে পায়নি। কোন মুসলিম স্কলার, বিজ্ঞানী, চিকিৎসাবিদ্যার গবেষক চার বছর মাতৃগর্ভে কোন শিশু অবস্থান করে ভুমিষ্ঠ হওয়ার সম্ভবনাকে এখনো পর্যন্ত সমর্থন করেননি।

আরবে কথিত আছে বেনি কিন্দাহ গোস্টির এক যুবকের সাথে বিয়ের পুর্ব থেকে আমিনার প্রেমের সর্ম্পক ছিল। চাচার পরিবারের লালন-পালন হওয়া আমিনা বাধ্য হয়ে আবদুল্লাকে বিয়ে করেছিল। বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যে আবদুল্লা মারা যাওয়ায় তাদের সেই সর্ম্পক দীর্ঘদিন পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। অনেকে মুহাম্মদকে বনি কিন্দাহ গোত্রের সেই যুবকের সাথে আমিনার পরিণয়ের ফসল বলে মনে করেন। এদিকে আবদুল্লার মৃত্যুর চার বছর পর জন্ম নেওয়া মুহাম্মদের প্রতি মোত্তালিবের অন্ধ ভালবাসাকে মক্কার মানুষজন সে সময় অন্য চোখে দেখতেন। মুহাম্মদকে আবদুল মোত্তালেবের পুত্র বলে অনেকেই মনে করতেন। বুখারী শরীফের এক হাদিসে মুহাম্মদ নিজেকে আবদুল মোত্তালিবের পুত্র হিসাবে মত ব্যক্ত করেছেন। হাদিসটি নীচে উল্লেখ করা হল:
حَدَّثَنَا عَمْرُوْ بْنُ خَالِدٍ الْحَرَّانِيُّ حَدَّثَنَا زُهَيْرٌ حَدَّثَنَا أَبُوْ إِسْحَاقَ قَالَ سَمِعْتُ الْبَرَاءَ وَسَأَلَهُ رَجُلٌ أَكُنْتُمْ فَرَرْتُمْ يَا أَبَا عُمَارَةَ يَوْمَ حُنَيْنٍ قَالَ لَا وَاللهِ مَا وَلَّى رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَلَكِنَّهُ خَرَجَ شُبَّانُ أَصْحَابِهِ وَأَخِفَّاؤُهُمْ حُسَّرًا لَيْسَ بِسِلَاحٍ فَأَتَوْا قَوْمًا رُمَاةً جَمْعَ هَوَازِنَ وَبَنِيْ نَصْرٍ مَا يَكَادُ يَسْقُطُ لَهُمْ سَهْمٌ فَرَشَقُوْهُمْ رَشْقًا مَا يَكَادُوْنَ يُخْطِئُوْنَ فَأَقْبَلُوْا هُنَالِكَ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ عَلَى بَغْلَتِهِ الْبَيْضَاءِ وَابْنُ عَمِّهِ أَبُوْ سُفْيَانَ بْنُ الْحَارِثِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ يَقُوْدُ بِهِ فَنَزَلَ وَاسْتَنْصَرَ ثُمَّ قَالَ :
أَنَا الـنّـَبـِيُّ لَا كَـذِبْ * أَنَا ابْنُ عَـبـْدِ الْمُطَّـلِـبْ
ثُمَّ صَفَّ أَصْحَابَهُ

বারা’ (রাঃ)
তাকে এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, হে আবূ উমারা! হুনায়নের দিন আপনারা কি পলায়ন করেছিলেন? তিনি বললেন, না, আল্লাহ্‌র কসম, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পলায়ন করেননি। বরং তাঁর কিছু সংখ্যক নওজোয়ান সাহাবী হাতিয়ার ছাড়াই অগ্রসর হয়ে গিয়েছিলেন। তারা বনূ হাওয়াযিন ও বনূ নাসর গোত্রের সুদক্ষ তীরন্দাজদের সম্মুখীন হন। তাদের কোন তীরই লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়নি। তারা এদের প্রতি এমনভাবে তীর বর্ষণ করল যে, তাদের কোন তীরই ব্যর্থ হয়নি। সেখান থেকে তারা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে উপস্থিত হলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন তাঁর সাদা খচ্ছরটির পিঠে ছিলেন এবং তাঁর চাচাতো ভাই আবূ সুফিয়ান ইব্‌নু হারিস ইব্‌নু ‘আবদুল মুত্তালিব তাঁর লাগাম ধরে ছিলেন। তখন তিনি নামেন এবং আল্লাহ্‌র সাহায্য প্রার্থনা করেন। অতঃপর তিনি বলেন, আমি নবী, এ কথা মিথ্যা নয়। আমি ‘আবদুল মুত্তালিবের পুত্র। অতঃপর তিনি সাহাবীদের সারিবদ্ধ করেন।
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৯৩০
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: ihadis.com
আবদুল মোত্তালিবের মত এমন প্রভাবশালী, ধনী গোত্র প্রধানের নাতি পিতা না থাকার কারণে অনাদরে অবহেলায় বেড়ে উঠা আমাদের মনে প্রশ্নের উদ্রেক করে। কিশোর বয়সে মেষ চরিয়ে জীবিকা নির্বাহ করার মত করুণ অর্থনৈতিক অবস্থা মুহাম্মদের পিতা বা দাদার ছিল না। আবদুল মোত্তালিব ছাড়া মুহাম্মদ পরিবারের অন্য কারো কাছ থেকে মুহাম্মদ সহানুভুতি পায়নি। দাদার মৃত্যুর পর চাচা আবু তালেবের কাছে থাকলেও মুহাম্মদের রাখাল হয়ে উঠার মধ্যে পারিবারিক ভালবাসা বা বন্ধন খুঁজে পাওয়া যায় না।
মুহাম্মদকে জারজ বা অবৈধ হিসাবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে এই লেখা নয়। বরং মুহাম্মদের প্রবর্তিত যে ইসলামের নৈতিকতার কাছে মানুষের জন্ম পরিচয়, বৈধ সর্ম্পকের মাধ্যমে জন্ম নেওয়ার বাধ্যবাদকতা, সেই ইসলামের মহামানবের পিতৃপরিচয় আজ প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছে। বুঝাতে চেয়েছি মানুষ বেঁচে থাকে তার র্কমগুনে। যেখানে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদের পিতৃ পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন আছে সেখানে ইসলাম কেন মানুষের বিবাহ বহির্ভুত সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তুলবে? কেন মানুষকে বৈধ বা অবৈধ শ্রেনীতে বিভাজন করবে?