Friday, December 25, 2015

জ্বীন: বাস্তবতার আড়ালে লুকানো ভন্ডামি আর আমার কল্পনা (চার পর্ব একসাথে)

পর্ব-১

আবহমান কাল থেকে জ্বীন নামক একটি অদৃশ্য জাতির (!) নাম প্রচলিত রয়েছে। শুধু নামেই নয়, জ্বীনদের নিয়ে রয়েছে কত সব রহস্যজনক কাহিনী। এই কাহিনী কি শুধুই লোকমুখেই? মোটেও না, জ্বীনদের উপস্থিতি রয়েছে সাহিত্যে, গল্পে, উপন্যাসে, আরব্যরজনীর অধ্যায়ে, ধর্মগ্রন্থে, গবেষণায়, কল্পনায়, ভয়ে, আরাধনায়। জ্বীনদের উপস্থিতি রয়েছে বিভিন্ন মিথোলজিক্যাল সংস্কৃতিতে, অন্ধকার জগতে, আত্মাদ্ধিক বিচরণে, ভর ও শক্তির পারস্পারিক পরিবর্তনে, ইতিহাস বিখ্যাত মনীষীদের দর্শনে। জ্বীনের প্রভাব রয়েছে সুপার নেচারাল ঘটনার জন্ম প্রক্রিয়াতে, প্রেমিক-প্রেমিকার কল্পনায়, কবিরাজের লাঠির শরীরে, কবরখানায়, শশ্মান ঘাটে, প্রেতাত্মার ডাকে, কোয়ান্টাম মেডিটেশনে, আলো-আধারের লুকোচুরিতে। হালের এনার্জি ক্রাইসিসও নাকি মিটতে পারে এই জ্বীন জাতির অস্তিত্ব আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে! তাহলে কিভাবে বলি জ্বীন মিথ্যা বা বানোয়াট?? চলুন দেখি নিচের ব্যাখ্যা গুলো কি বলে:



লোকনাথপুর গ্রামের আজিবর কবিরাজ জ্বীনদের বড় ওস্তাদ। দুনিয়ার এমন কোন জ্বীন নেই যে তার কথা শুনে না, মানে না। আজিবর কবিরাজের শুধু মুখের কথায় জ্বীনরা ওঠা বসা করে, গান-বাজনা করে, সাত সমুদ্র তের নদী পার হয়ে এনে দেয় চাহিবা মাত্র বস্তু। একদা নিজের চোখের দেখা দশ-বারো জন লোক অচেনা যুবককে (বয়সে ২৮/৩০ হবে) মোটা দড়ি আর লোহার শিকলে বাঁধা অবস্থায় নিয়ে আসলো আজিবর কবিরাজের কাছে। যুবককে নাকি জ্বীনে ধরেছে! কোন লোকের কাছে রেফারেন্স পেয়ে তারা এসেছে এই আজিবর কবিরাজের কাছে। সামনে আসতেই আজিবর বুঝতে পারে এটা জ্বীন ধরা রোগী, আর তৎক্ষনাৎ সে আগত লোকদের বলে যুবকের হাত পায়ের শিকল খুলে দিতে। লোকজন জানায় এটা করলে সে এখনই রক্তারক্তি বইয়ে দিবে, খুনোখুনি করবে কেই ঠেকাতে পারবে না। জড় হয়ে গেল শত শত লোক! সবাই দেখল কিভাবে আজিবর কবিরাজ ঐ অচেনা যুবকের জ্বীন ছাড়িয়ে দিল সবার সামনেই। অথচ গত ১০ বছর ধরে পরিবারটা ভুগছে এই সমষ্যায়। কি বলবেন তাহলে? অবশ্যই জ্বীন আছে!



রুমেল-জয়া বড়লোক দম্পত্তির একমাত্র মেয়ে সোহানার বয়স ৬ বছর। সোহানা হাটতে পারে না সেই ছোট বেলা থেকেই। মেয়ের হাটার শক্তি ফিরিয়ে আনার জন্য ঘুরে বেড়িয়েছে দেশ বিদেশের বড় বড় ডাক্তার, হসপিটাল এমনকি আজমির শরীফের মত বড় বড় মাজারে। নাহ, কোন কিছুতেই কোন কাজ হয়নি। লোক মুখে শুনে সেও এসেছিল আজিবর কবিরাজের কাছে, মেয়েটি কয়েক মিনিটের মন্ত্রবলেই ভালো হয়ে গিয়েছিল। এ ঘটনাটিও অন্তত ১০/১৫ জন মানুষের সামনে আর সবচাইতে বড় সাক্ষি তার বা-মা এবং সোহানা নিজেই। কি বলবেন তাহলে? অবশ্যই জ্বীন আছে!

****************************************************************

পর্ব-২

এ পর্বেও চলবে আজিবর কবিরাজের কয়েকটি ঘটনা। আজিবর কবিরাজের বড় ছেলে রাসেলের সঙ্গে আমার ভাব সেই ছোটবেলা থেকেই, সে একাধারে আমার ক্লাসমেট, বন্ধু, ভাই, প্রতিবেশী, খেলার সাথী, ন্যায়-অন্যায় কাজের সর্বসময়ের সাথী। খুব সাধারণ থেকে অসাধারণ যে কোন ঘটনায় যদি আমার অন্তরালে হয়ে থেকে তাহলে যত দ্রুত সম্ভব সে আমার সাথে শেয়ার করে।



একবার রাসেল ওর আব্বুর সঙ্গে ওর নানীর কবর জিয়ারত করতে যায়, কবরটি অনেক পুরোনো আর মাঠের মধ্যে যে মাঠে যেতে হলে পার হতে হয় অনেক বড় জঙ্গল। যায় হোক, পথ, পথের ধারে জঙ্গল পার হয়ে ওরা পৌঁছে নানীর কবরের কাছে। কবরের পাশে অনেক লম্বা তালগাছ। রাসেল নিজের চোখে দেখল ধবধবে সাদা কাপড় পরিহিতা এক সুন্দরী মহিলা তাল গাছে বেয়ে নেমে এসে ঠিক ওদের পিছনে দাঁড়ালো। রাসেল ওর আব্বুর জ্বীনের উপর বিদ্যার কথা জানতো তাই ভয় না পেয়ে মনে মনে সাহস সন্চয় করে আব্বুর সাথে কবর জিয়ারত করে ফেরৎ আসার পথেই আবার দেখলো ঐ মহিলা খুব দ্রূত আবার তালগাছের উপর এক লাফে উঠে গেল। রাসেল তার পরদিনই ঘটনাটি আমার সাথে শেয়ার করলো। তাহলে কি বলব? অবশ্যই জ্বীন আছে!



আজিবর কবিরাজের যে ঘটনাটি সবচাইতে আমাকে ভাবিয়ে তোলে এখন সেটি তুলে ধরব। ঘটনাটি আমাদের প্রতিবেশি আসাদ মিয়ার বাড়ীর ঘটনা। তখন আমি এ পৃথিবীতে আসিনি। কিন্ত আমার গ্রামের যত সব মরুব্বী আর বয়স্ক লোকজন রয়েছে তারা সবাই ঐ ঘটনার সাক্ষী! এবং তারা যে মিথ্যা বলে না সেটা সহজেই অনুমেয়।



আসাদ মিয়া তার মাঠের এক জমি থেকে ৫০ বছরের পুরোনো এক তেতুল গাছ কেটে ফেলে। গাছটি কাটার আগে সে কয়েক রাতে ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে দেখেছিল যেন গাছটি সে না কাটে। এবং জ্বীনরা নাকি তাকে সেই স্বপ্ন দেখাতো। কিন্ত ঐসব স্বপ্নকে পাত্তা না দিয়ে গাছটি কেটে ফেলার পর শুরু হয় আসাদের বাড়ীর উপর অসহ্য রকমের যন্ত্রনাদায়ক ব্যাপার স্যাপার।

বাড়ীতে তেমন কেউ-ই নেই, কিন্ত হটাৎ ছাদের বাড়ীর ছাদের উপর শুরু হয় আর্মি প্যারেড। ভয়ে যবু থবু বাড়ীর লোক কেউ তখন আর বাইরে বের হয় না। প্যারেডের আঘাতে মনে হয় যেন ছাদ এখনি ভেঙ্গে পড়বে।

বাড়ীতে সবাই আছে, হটাৎ দেখা গেল ধান ভাঙ্গা ঢেকিটা ঢেকির ঘর থেকে বাইরে এসে শুন্যের উপর ভাষতেছে। হটাৎ করে কোত্থেকে যেন শত শত হাড় আর মাথার খুলি বাড়ীর উঠানে বৃষ্টির মতন বর্ষণ হতে লাগলো।



অবশেষে আজিবর কবিরাজকে আনা হয়েছিল, এবং ৫০ জন আলেম ব্যাক্তিকে সাথে নিয়ে সিরিজ ওজিফার মাধ্যমে আসাদ মিয়ার বাড়ীর সেই আশ্চার্য্যজনক ঘটনা বন্ধ করেছিল আজিবর কবিরাজ। তাহলে কি বলব? অবশ্যই জ্বীন আছে!

*****************************************************************

পর্ব-৩

এই সব ঘটনা থেকে আজিবরকে আসলই জ্বীনদের গুরু মানতে আমার কোন আপত্তি হয়নি কোনদিন। আজ এ পৃথিবীতে রাসেল নেই, মন খুব খারাপ লাগে, রাসেল জেগে ওঠে আমার স্মৃতিতে প্রায়শ। আমি নিজেই যেন আজিবরের ছেলে এমনই মনে করে আজিবর, আমিও তাকে আমার বাবার মতই সম্মান করি। কথা হয় মাঝে মাঝে। কিন্ত জ্বীনদের নিয়ে কৌতুহুল আমার শেষ নেই! এই কৌতুহুলের প্রধান কারণ আল-কোরান। কারণ আজ প্রায় ১৫০০ বছর ধরে স্বমহিমায় উদ্ভাষিত এই আল-কোরান। কোরানকে নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই, যারা নাস্তিক তাদের কথা আলাদা, তারা কি বললো না বললো সেসব নিয়ে কথা বলার জন্য পোষ্ট এটা না। তবে অনেক অনেক ইতিহাস প্রসিদ্ধ ব্যাক্তিত্ব, সায়েন্টিষ্ট, দার্শনিক তো এই কোরনাকে বিশ্বাস করে। কালকে জয় করে কোরান হয়েছে এক চির-সত্যের বাণী সংকলন। সেই কোরান-ই স্বয়ং জ্বীন আছে তা ঘোষণা করেছে বার বার। তাই বরাবর-ই আমি এই জ্বীন জাতির উপর কৌতুহল বটে।



আমার অনেক স্বপ্ন নিজে চোখে এই জ্বীনকে দেখা বা জ্বীনের অস্তিত্বকে বুঝতে পারে। কিন্ত আফসোস সেই স্বপ্ন আমার পূরণ হলো না কখনই। তাই দ্বারস্ত হলাম আজিবর কবিরাজের কাছে। কেন যেন বিশ্বাস হয়েছে, পৃথিবীতে জ্বীন বলে যদি কিছু থেকে থাকে তাহলে এই আজিবর কবিরাজ তা জানবে (কেন জানবে? সেটা প্রথম ২ পর্বের ঘটনাগুলই ব্যাখ্যা করে)। যাই হোক, অবশেষে নিজের ইচ্ছার কথা ব্যাক্ত করলাম আজিবরের কাছে। তিনি আমাকে হতাশ করলেন না, বরং একটা নিদির্ষ্ট দিনক্ষণ ঠিক করে দিলেন এবং আমাকে বললেন সেই সময় তার সাথে দেখা করতে, জায়গা হিসাবে ঠিক করে দিলেন একটা গোপনীয় জায়গা। কথামত কাজ। আজিবর মিয়া আমার সামনে, আমাকে প্রশ্ন করলেন কেন আমি জ্বীন দেখতে চাই? বললাম, আমি কোরান বিশ্বাস করি আর হাজার হাজার বছর ধরে জ্বীনদেরকে যে এত এত গল্প, কথা, গবেষণা প্রচলিত রয়েছে কিন্ত নিজ চোখে দেখি নাই তাই আমি এটা জানতে চাই। এর মাধ্যমে হয়তো সৃষ্টিজগতের আরো এক বিষ্ময় সম্পর্কে অবগত হওয়া যাবে।



বৃদ্ধ আজিবর মিয়া আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। আমাকে বললেন, বাবা রাজ আমার অনেক বয়স হয়েছে, কদিন-ই বাঁচবো দুনিয়াতে, তাই তোমার এই আশা আমি পূর্ণ করবো আমার সাধ্যমত। তিনি আমাকে জানালেন অনেক কিছু:



জ্বীন নিয়ে আজিবরের শিক্ষা শুরু হয় সেই বৃটিশ আমলে থেকে। বিরাট এক আলেম ব্যাক্তি তার প্রথম ওস্তাদ। এরপর এই পৃথিবীর বুকে জ্বীন নিয়ে যতধরনের গবেষণা/আরাধণা আছে সবই তিনি পালন করেছেন। তিনি রাতের পর রাত কাটিয়েছেন কবরখানায়, শশ্মানঘাটে, জনশুন্য মাঠে, পুরোনো মন্দিরে, গভীর জঙ্গলে, সমুদ্রের বুকে, শত শত বছরের বুড়ো নীম-বট গাছের ডালে। কিন্ত তার এই সব গবেষণায় তেমন কোন ফল আসে নি। হতাশ হয়েছে বারবার। তিনি কোনদিন কোন জ্বীনের দেখা পাননি!



এরপর উপসংহার হিসাবে বললেন, সারাটা জীবন জ্বীন নিয়ে কাটিয়ে দিলাম, কিন্ত জ্বীন বলে কিছু আছে বলে টার বিশ্বাস হয় না। তিনি মনে করেন জ্বীন জাতি যদি কখনও পৃথিবীর বুকে থেকেও থাকে তবে তারা এখন ধ্বংস হয়ে গেছে, এই পৃথিবীতে তাদের অস্তিত্ব এখন আর নেই! আমি তার কাছে জানতে চাইলাম, তাহলে আপনাকে নিয়ে এট সব ঘটনা রয়েছে এইগুলো কিভাবে সম্ভব। তিনি উত্তর দিলেন, প্রত্যেকটির ঘটনার পিছনেই যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে। এসব ঘটনার কোনটিতেই জ্বীনদের সংশ্লিষ্টতা ছিলা না। আজিবর কবিরাজকে আমি আরো বললাম, আপনি নিজে এরকম মনে করেন তাহলে কেন জনসম্মুখে এটা প্রকাশ করেন না? তিনি বললেন এতে করে শরীয়তের আলেমরা তাকে কাফের বলে ঘোষণা দিবেন, ঝামেলা শুরু হবে।



অবশেষে, কি আর করার! প্রিয় পাঠক আমিও হতাশ হয়েছি, কারণ জ্বীন বলে আদৌ কোন কিছু আছে এরকম কোন প্রমান আমি নিজ চোখে দেখিনি।

*****************************************************************

পর্ব-৪ (শেষ)

জ্বীন দেখিনি, জ্বীনের অস্তিত্ব আদৌ আছে কিনা তা আমার কাছে রহস্যই থেকে গেল! কিন্ত তবুও কথা থেকেই যায়। জ্বীন জাতি বলে কিছু আছে সেই অন্ধ বিশ্বাস আমি করতে পারছি না তবে নেই সেটাও বলছি না। মানুষ তার জ্ঞান দিয়ে যদি কোন দিন প্রমান করতে পারে সেই আশায়।



বিভিন্ন বর্ননায় জ্বীনদের যে চিত্র ফুটে ওঠে তার আলোকে হয়তো কোনদিন সম্ভব হবে জ্বীনদের অস্তিত্ব প্রমান করা!



জ্বীনদের মোটামুটি বর্ননাগুলো এরকম:

১) জ্বীন অদৃশ্য।

২) জ্বীন আলো দিয়ে তৈরি।

৩) জ্বীন খুব দ্রুত বেগে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারে।

৪) জ্বীন আমরা যে সব প্রানী দেখি সে সবের রুপ ধারণ করতে পারে (হয়ত সব প্রানীর না তবে কিছু কিছু হয়তো)।

৫) জ্বীন পৃথিবী বাদে অন্য গ্রহ-নক্ষত্রে চলাফেরার করার ক্ষমতা রাখে।

৬) জ্বীনকে মানুষ নিয়ন্ত্রন করার ক্ষমতা রাখে।

৭) জ্বীন অন্ধকারে থাকতে সাচ্ছন্দ বোধ করে! আলোতে ডিষ্টার্ব ফিল করে!





এই সব বর্ননাগুলো কি একে অপরের সাথে কনফ্লিক্ট করে? বর্তমান বিজ্ঞান অনুসারে কিন্ত তা করে না! কিভাবে?



মনে করি জ্বীন আলো দিয়ে তৈরি। আলোর বৈশিষ্ট্য সত্যিই অদ্ভুত! আলো আসলে বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গ। আলোকে যদি আমরা কোন ফ্রিকোয়েন্সি ব্যাপ্তিতে সীমাবদ্ধ না রেখে, বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গের সম্ভব্য পুরো ফ্রিকোয়েন্সিতে চিন্তা করি তাহলে কিন্ত বিষয়টি জটিল হয়ে গেল। কারণ তাত্বিকভাবে আমরা অসীম ফ্রিকোয়েন্সির বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গ জেনারেট করতে পারি। তাহলে জ্বীন কোন ফ্রিকোয়েন্সিতে তার অদৃশ্য অস্তিত্ব ধারণ করে সেটা গবেষণার বিষয়। তবে আমরা মনে করতে পারি, জ্বীন যদি আলো তথা বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গ দিয়ে তৈরি হয়, তাহলে সে অদৃশ্য হতে পারে এবং এক স্থান থেকে অন্য স্থানে খুব দ্রুত যেতেও পারে।



আমরা জানি বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গ শক্তি বহন করে এবং সেই শক্তিকে ভরে পরিবর্তন করা সম্ভব। অন্যদিকে ভরকে শক্তিতেও পরিবর্তন করা সম্ভব। সুতরাং জ্বীন যদি আলো তথা বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গ দিয়ে তৈরি হয় তাহলে সে দৃশ্যমান ভরেও পরিবর্তন হতে পারে তবে সেই ভর দেখতে কেমন হবে সেটা আমি এখন ভাবতে পারছি না।



বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গ অন্য কোন বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গের সাথে ইন্টারএ্যাকশনে যেতে পারে এবং এতে করে তাদের বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয়ক্ষেত্রের পরিবর্তন হতে পারে। সুতরাং জ্বীন আলোতে ডিষ্টার্ব ফিল করতেই পারে। তবে এক্ষেত্রে কথিত যে হিউম্যান চোখে ভিজিবল আলোতেই তারা ডিষ্টার্বড হচ্ছে। এটা গবেষণার একটা ক্লু বৈকি!



জ্বীন যদি বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গ দিয়ে তৈরি হয়, তাহলে বলায় যায় বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গের বিচরণ সমস্ত মহাবিশ্বব্যাপি। আর এই মহাবিশ্বকেই তো নিয়ন্ত্রন করতে চায় মানুষ! সুতরাং জ্বীন তো নস্যি মাত্র।



জ্বীনদের নিয়ে কিন্ত আসলেই গবেষণা হয়! ১৯৮৮ সালে পাকিস্থানের নিউক্লিয়ার সায়েন্টিষ্ট সুলতান বশিরউদ্দীন মাহমুদ ওয়াল ষ্ট্রীট জার্নালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন জ্বীন হতে পারে রিনিউএবল এনার্জির এক অফুরন্ত উৎস।



যাই হোক ভবিষ্যত সময়ই হয়তো সঠিক তথ্যটি আমাদের সামনে নিয়ে আসবে, হয়তো আমরা জানবো না, কিন্ত মানুষ তো জানবে। আর সেই সাথে হয়তো শুরু হবে সভ্যতার এক নবদিগন্তের অধ্যায়। ক্রমান্বয়ে বস্তবাদী দুনিয়ার দিকে ধাববান বিশ্বে জ্বীন কি হতে পারে কোন গবেষণার বিষয়?

Sunday, December 20, 2015

শাকিলের পরীক্ষার ডর নাকি জীনে ধরা?

এ ব্যাডা হোনছোছ ....... শাকিল্লারে নাকি কেমন করতাছে, জীনে টিনে ধরছে মনে হয়।

সেদিনই টেষ্ট পরীক্ষা মাত্র একটা দিয়া শুরু করলাম। পরীক্ষা দিয়া আমরা হলের সামনে মাঠে গিয়া বাতাস খাইতেছি এমন সময় এই খবর।

শামীমের কথা শুইন্না তো টাস্কি খাইলাম।

কস কি ? চল তো দেহি।

বাতাস খাওয়া খাওয়ি বাদ দিয়া গেলাম শাকিলের রুমে। রুমে শাকিল ছাড়া সালাউদ্দিন নিজের সিটে বইয়া শাকিলের তামশা দেখতাছে আর হুজ্জাতের লগে শাকিল করতেছে তেড়িং বেড়িং। বাবু আর আমি গিয়া রুমে ঢুকতেই খাইলাম ফাঁপর। শাকিল দেড় গজের মোডা এখখান রড লইয়া ঘুরাইতেছে । আমি তো ভীতুর ডিম, ডর আর ওর কাছেই গেলাম না।

বাবু কাছে গিয়া কইলো ........

এ শালিক কি হইছে রে?

কোন উত্তর নাই শাকিলের ... রড লইয়া ফ্লোরে বাইরা বাইরি করতেছে।

হঠাৎ ......... ধা........ম কইরা মারলো সামনের দেয়ালে। বাবু তারতারি একদিকে সইরা গেছে দেইখ্যা গায়ে লাগে নাই।

সাহসী পোলা বাবু আবারো গেলো ...... কি হইলো তা জানতে কিন্তু কে হোনে কার কথা............ কাছে গেলে বাবুর লগেই রেসলিং এর লাহান ধস্তাধস্তি, কোস্তাকুস্তি। ফ্রি ফ্রি কত্তুগুলা কিল, ঘুষি খাইয়া হালাইছে পোলাডা।

আকামে কিল ঘুষি খাইয়া কাম নাই ,দূরে দাড়াইয়া শাকিলের তামশা দেহাই ভালো।

এর মইদ্যে পুরা হলে গেলো চাউর হইয়া, তারভীরের পরে এবার শাকিলরে জীনে ধরছে।হগলে বিশ্বাসও করলো তারাতারি কারণডা হইল কয়দিন আগেই পাশের হলের বামরুম থেইক্কা পরীতে ধরছিলো নাকি সিনিয়র ভাই তানভীররে। আর যায় কৈ, পোলাপান সব আইলো জীন পরীতে ধরলে কেমনে কি করে তা দেখতে। চামে যদি সুন্দরী পরীর লগে ভাব জমাইয়া ফ্রি ফ্রি উড়াল দ্যাশে যাওয়া আর সুন্দরী একখান পরীরে পটাইয়া প্রেম করা যায় তাইলে খারাপ কি?

কিন্তু কৈ হালার জীন-পরী? কাউরেই তো দেহা যায় না। খালি দেহা যায় শাকিলরে।

টেংটেইংগা পোলা শাকিল বড় একটা রড লইয়া সামনে যারে সামনে পাইবে তারেই মারবে মারবে ভাব। কারো লগে কোন কথা কয় না................ খালি গোখরা সাপের লাহান ফোঁস ফোঁস করতেছে আর দরজার সামনের সিটে বইস্যা মাথাডা নিচের দিকে দিয়া খালি রড নিয়া বাইরা বাইরি। আর মাঝে মাঝ হাঁক ডাক মারে........ কোন হালারপুত কাছে আবি না, এক্কারে খাইয়া হালামু।

পোলাপানের কি আর কাম আছে হলের পাতলা ডাইলের লাহান ফ্রি মাইর খাওবো? খাম্বা আরিফের লাহান যাগো কইলজাডা এট্টু চিতাইন্না ওরা দরজার সামনে যায় আর আয় কিন্তু শাকিলের ভাবসাব দেইক্খা আর বেশী আগায় না, আর যাগো গুই হাপ দেখলে এট্টুতেই বুক ধুক ধুক করে অরা জালনা দরজার ফাঁক দিয়া শিশু মাছের লাহান ভুচকি মাইরা তারতারি দূরে সইরা যায়, যদি জীনে পরীতে অগো দিকে নজর দেয় হেই ডরে। নাহ, …….আপতত কোন কিছুতে কাম অইবে না।

হলে ঝামেলা বাড়াইয়া লা্ভ নাই বাপ মার হাতে পোলাতে তুইল্লা দেয়ার লইগ্গা অফিস দিয়া ফোন দিলো অর বাসায়। শাকিলরে এহন ওর রুমে তালা দিয়া পোলাপানে আটকাইয়া রাকছে, যা ব্যাডা রুম বইয়া যা পারোস কর। স্যারেরা আইলে আর বাপ মা আইলে খুলবে। হলের স্যাররা আইলো কিন্তু জীন পরীর ডর দেহাইয়া কাছে না যাওয়ার লইগ্গা পোলাপানে নিষেধ করলো।

কেমনে কি করন যায় হেই প্লান বানাইতেছে হগলে মিল্লা .......

সন্ধ্যা হইয়া গেছে। না এমনে আর চলতে দেওন যায় না। কাইল আবার পরীক্ষা, পড়ালেহা করতে হইবে। ওরে ধইরা ডাক্তারের ধারে পাডাইতে হইবে নাইলে বাইন্দা বাসায় পাডাইয়া দিতে হইবে। কিন্তু কে যাইবে অর সামনে...... যেমনে রড দিয়া দাঙ্গা পুলিশের লাহান আৎকা বারি দেয় বারি একখান লাগলে খবরই আছে।

এরমদ্যে আইলো হগলে যারে ডরায়, দেকলেই হাত পা কাপাকাপি শুরু করে হেই কালাম স্যার। হের বেতের একবারি খাইলে দুই বেলা ডাত মাইক্খা খাওন যায় না ব্যথায় আর পাছায় দুইডা মারলে তো পাছা চুলকাইতে চুলকাইতে দিন শ্যাষ। হাক ছাড়লো.............. আরে দরজা খোল, দেহি শাকিল কয় কি? স্যাররে দেইক্খা শাকিল ডরাইতে পারে। খুল্লো দরজা। স্যারও এট্টু এট্টু ডরাইছিলো মনে হয় হেরলইগ্গা বেশী ভিতরে আগাইলো না, দরজার সামনে গিয়াই শাকিলরে ডাক দিলো , এ শাকিল কি হইছে তোর? বেত আনমু নাকি? এ তোরা ধরতো অরে.........

পোলাপানের ডর ভয় কইম্মা গেলো, সাহসী পোলা মোবারক, বাবু, অহিদ, সালাউদ্দিন সহ কয়েকজন দরজা খুইল্লা একলগে ঢুকলো ভিতরে। হা ডু ডু খেলায় যেমনে একটারে বাগে পাইলে সবগুলায় ঐডার উপ্রে ঝাপাইয়া পরে হেমনে কইরা একলগে ঢুইক্কা ধরলো ঝাপটাইয়া।

আর যায় কৈ............ কিন্তু হায় রে এই চিকনা বাশের কাডির লাহান চেংড়া পোলার গায় এতো শক্তি আইলো কোনহান থেকে?

৪/৫ জনে মিল্লা ধইরা রাখতে পারতেছে না। হা ডু ডু লাহান একলগে ধরায় আর বেশী সুবিধা করতে পারলো জীন-পরীতে ধরা শাকিলরে। ধইর্রাই নিয়া নিলো রডটা।যাহ তোর অর্ধেক কাম শ্যাষ। ভাইগ্য ভালো ......... যেমনে মারা ধরছিলো এট্টুর লইগ্গা মোবারকের মাথাডা ফাডে নাই। নাইলে তো জীন সামলানোর বদলে মোবারকের মাথা সামলানোর কামে ভ্যাজতে হইতো হগলরে।

৪/৫ জনে ঝাপটাইয়া ধইর্রা আটকানোর চেষ্টা করতেছে কিন্তু চেংড়া পোলার গায়ে এতো শক্তি কোন থেইক্কা আইলো কেডা কইবে? বহুত চেষ্টায় বাগে আনতে পারতেছে না। হাত পা ছুডাছুডির করে কত লাত্থিগুতা যে পড়ছে তার কোন হিসাব দিতার বে না কেউ। দিবেই বা কেমনে, কেউতো আর ডাইনিং ম্যানেজার ওহাব ভাইর লাহান হিসাবের খাতা লইয়া জীন পরী দেখতে যায় নাই। আমরা আর করমু কি, খাড়াইয়া খাড়াইয়া তামশা দেখতেছি।

রুম থেইক্কা র্যা বের ক্রস খাইলে যেমনে চাইর হাত পায় ধইরা উচকাইয়া ভ্যানে আনে হেমনে উচকাইয়া নিয়া আইলো বারান্দায়। চাইপ্পা ধাইরা খাওয়াইলো এক জগ পানি। খাইতে চায় না কিন্তু পোলাপানের কথা ……খাবি না ক্যা, খা…….। মাথায়, গায়ে পানি ঢাইল্লা ঢাইল্লা একক্কারে গোসল করাইয়া দিলো। নাহ এইবার মনে হয়, পোলার কুইত শেষ............. প্রায় ৩০ মিনিট মোচড়ামুচড়ি, কোস্তাকুস্তি, ধস্তাধস্তির পর শান্ত হইলো। তখন প্রায় অজ্ঞান।

জীন পরী দ্যাকতে দর্শক আইছে প্রচুর, দুই টাহা কইরা উডাইলেও রাইতে একখান জাম্পেস মুড়ি ভোজ দেওন যাইতো, হেইডা আর দেয়া হইলো না। এর মইদ্য আইলো অর বাপ মা। বাপে না কানলেও পোলারে দেইখ্খা মায়ে তো কাইন্দা কাইট্টা শ্যাষ, এহন আন্টিরে সামাল দিতে আবার আরেক ঝামেলা। স্যারেরা শাকিলরে তুইল্লা দিলো অর বাবা মায়ের হাতে। বড় পোলারে জীনে নাকি পরীতে ধরছে এই চিন্তা লইয়া সিএনজি নিয়ে আঙ্কেল আন্টি গেলো বাসায় আর পরদিন পরীক্ষা বইল্লা আমরা গেলাম পড়ার টেবিলে।

শাকিলরে বাসায় নেওয়ার সময় তেমন কিছু মনে হইলো না কিন্তু সপ্তাহ খানেক পরই হালকা কানাঘুষার আওয়াজ পাওয়া গেলো।

"শাকিল নাকি পরীক্ষা না দেয়ার লইগ্গা ভংচা ধরছিলো"

কস কি?

হুম। হুনছি একজনের ডে।

হলে তখন জীন পরীর ডর ভয়...... কারে কোনহান দিয়া ধরে কেডা জানে? বামরুমে গেলেও দুইজন একলগে যায় এই অবস্থা।পোলাপানে কানে কানে ফিসফাস করলেও আওয়াজ হয় না । যারা হুনছে ........ তারা তো তাজ্জব!!!!!!!!!!!!!!!!!!

তাই নাকি!!!!!!!!!!!!!!!!!! আরে না........ জীনেই ধরছে , দেখছস না পাশের হলে তানভীররে কয়দিন আগেই পরীতে ধরছিলো, অরেও মনে হয় ঐডাতেই ধরছে।

আরে ব্যাডা ....... ভংচা হইতেও পারে ।.... আর শাকিল যে বান্দরের বান্দর অরে বিশ্বাস করা কঠিন। আরে হুনছি ওইদিন নাকি অর পরীক্ষা ভালো হয় নাই। জীন,পরীর ডরে আলোচনা বেশী গড়াইতো না।

শাকিল আর আইলো না পরীক্ষা দিতে। মাস খানেক পর যখন আইলো তখন পরীক্ষা শেষ হইয়া রেজাল্টও দিছে। শাকিল পুরাই স্বাভাবিক, তয় কিছুডা চুপচাপ। জীন পরীর ডরে তেমন কেউ কথাও কয় না অর লগে, খালি জিগায়..... কিরে শাকিল ভালো আছোস তো? আর ভংচা ধরার কথা জিজ্ঞাস করা হ্যাতো আরো পরে................

শাকিলের কাছাকাছি কয়েকজন হয়তো পুরাডা জানে কিন্তু কখনো কয় নাই কি হইছিলো?
রহস্যের আর সমাধান করা হয়নি........... কি হয়েছিলো সেদিন??
জীনে ধরা নাকি পরীক্ষার ডর!

হিস্টিরিয়া

হিস্টিরিয়া জিন-ভূতের আছর, পাগলামি এসব কিছু নয়, নিউরোসিস জাতীয় মানসিক রোগ।
মানসিক রোগ দুই প্রকারের হয়ে থাকে। একটি মৃদু মাত্রার তাকে নিউরোসিস বলা হয়, অপরটি জটিল মাত্রার একে সাইকোসিস বলা হয়। নিউরোসিস জাতীয় রোগগুলো যেন অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার, অবসেশন, হিস্টিরিয়া, ফোবিয়া ইত্যাদি। সাইকোসিস জাতীয় রোগগুলো যেমন বিষণœতা, ম্যানিয়া, সিজোফ্রেনিয়া ইত্যাদি। হিস্টিরিয়া একটি নিউরোসিস রোগ। এ রোগটি শারীরিক সমস্যা বা মানসিক সমস্যা নিয়ে প্রকাশ পেতে পারে।
১৮১৫ সালে সর্বপ্রথম ফরাসি চিকিৎসাবিদ চারকোট এ রোগের পরীক্ষা করেন। তিনি সম্মোহন পদ্ধতি প্রয়োগ করে দেখলেন যে, সম্মোহিত অবস্থায় রোগীর মনে যদি এ ধারণা সঞ্চার করা যায় যে তার রোগ ভালো হয়ে গেছে তাহলে তার রোগ সত্যিই ভালো হয়ে যায়। আবার রোগীকে সম্মোহিত করে পুনরায় যদি তার মধ্যে এ ধারণা সঞ্চার করা যায় সে অসুস্থ তাহলে তার রোগ পুনরায় ফিরে এসেছে। এ ঘটনা থেকে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন হিস্টিরিয়ার উৎপত্তির সাথে ধারণা বা রোগীর অবচেতন মনের সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু পরে দেখা গেল ওই ধারণা অনুযায়ী সব রোগের কারণ ব্যাখ্যা করা যায় না। কোনো কোনো মনোবিজ্ঞানী মনে করেন মস্তিষ্কের কাজের গোলমালের ফলেই হিস্টিরিয়া রোগ হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই মতবাদকে প্রমাণ করা যায়নি। মনোসমীক্ষার মতামতই মোটামুটি বেশিরভাগ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ মেনে নেন। মনোসমীক্ষার তত্ত্বানুযায়ী নিজের মনের অজান্তে অবদমিত মানসিক দ্বন্দ্ব থেকেই হিস্টিরিয়ার লক্ষণ সৃষ্টি হয়। সহজাত আচরণ বাইরের জগতে প্রকাশ হতে গেলেই রোগীর মনে দারুণ উৎকণ্ঠা ও দুশ্চিন্তার সৃষ্টি হয়। সেই উৎকণ্ঠাকে দীর্ঘদিন সহ্য করা মানুষের পক্ষে অসম্ভব। ফলে আমাদের অজান্তেই মানসিক ক্রিয়া এই বৃত্তিগুলোকে অবদমন করে। এ অবদমনের অর্থ এই নয় যে, বৃত্তিগুলো চিরতরে নির্বাসিত হলো। মানসিক ক্রিয়াকে সবসময়ই সক্রিয়ভাবে অবদমিত রাখতে হয় বৃত্তিগুলোকে। অবদমনকারী শক্তিগুলো যখনই কোনো কারণে দুর্বল হয়ে পড়ে, অবদমিত রাখতে হয় বৃত্তিগুলোকে। অবদমনকারী শক্তিগুলো যখনই কোনো কারণে দুর্বল হয়ে পড়ে, অবদমিত বৃত্তিগুলো তখনই উঠে আসতে চায় চেতনায়। এ অবস্থা উপস্থিত হলে অবদমন ছাড়া মানসিক প্রক্রিয়ার সাহায্য নিতে হয়Ñ নিউরোসিসের লক্ষণ প্রকাশের সুযোগ ঘটে তখনই। এ ধরনের মানসিক প্রক্রিয়া অনুসারে নিউরোসিসের লক্ষণও ভিন্ন হয়। কনভারশন হিস্টিরিয়াতেও কনভারশন নামক প্রক্রিয়া এবং ডিসোসিয়েটিভ হিস্টিরিয়ার ক্ষেত্রে ডিসোসিয়েটিভ প্রক্রিয়া কাজ করে। যে হিস্টিরিয়াতে শারীরিক লক্ষণ দেখা যায় তাকে বলা হয় কনভারশন হিস্টিরিয়া। যেমন হঠাৎ করে হাত কিংবা পা প্যারাইলাইসিস হয়ে যাওয়া, হঠাৎ করে কথা বন্ধ হয়ে যাওয়া, চোখে দেখতে না পাওয়া ইত্যাদি। আর যে হিস্টিরিয়াতে মানসিক লক্ষণ দেখা যায় তাকে বলা হয় ডিসোসিয়েটিভ হিস্টিরিয়া। যেমন- এলোমেলো ঘুরে বেড়ানো, খিঁচুনি রোগ, ঘুমের মধ্যে হাঁটা ইত্যাদি।
একটি কেস স্টাডি বর্ণনা করা যাক। নায়লা (কাল্পনিক নাম) বিয়ের দিন তার স্বামীর সাথে শ্বশুরবাড়িতে চলে আসে। আসার কয়েক ঘণ্টা পরই তার কথা বন্ধ হয়ে যায়। তারপর কেটে গেছে ২-৩ দিন। মেয়েটির মুখে আর কথা ফুটছে না। শত চেষ্টা করেও তাকে কেউ কথা বলাতে পারছে না। খবর পেয়ে বাপের বাড়ির লোকজন এলো। তারা দোষ দিচ্ছে এই বলে যে, মেয়ে তো ভালোই ছিল, শ্বশুরবাড়িতে ঢুকতেই তার এ অবস্থা হলো কেন? নিশ্চয়ই এ বাড়ির লোক কিছু করেছে! হতবাক হয়ে পড়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। কিছুতেই বুঝতে পারছে না কী করে এমন হলো। তারা দেখেছে বউ যখন বাড়িতে পা দিয়েছে তখন মুখে ঠিকই কথা ফুটেছে। তবে কী কারো নজর লেগেছে নতুন বউয়ের ওপর। এ ভেবেই ডাকা হলো নামকরা ওঝাকে। ঝাড়-ফুক, তুক-তাক ইত্যাদি ভৌতিক ক্রিয়াকলাপও কিছু করা হলো। কিন্তু অবস্থার কোনো পরিবর্তন দেখা গেল না। তখন প্রায় দু’দিন পর শহরের হাসপাতালে হাজির হয়েছে সবাই। প্রাথমিক পর্যায়ে ঘটনার বিস্তৃত বিবরণ সংগ্রহ করলাম। তারপর আত্মীয়-স্বজনকে বাইরে বসিয়ে মেয়েটিকে আলাদা করে তার প্রতি মনোচিকিৎসার বিধিবিধান অনুযায়ী চিকিৎসা প্রয়োগ করলাম। নাটকীয়ভাবে মেয়েটির মুখে কথা ফুটলো সেদিনই। খুবই কম সময়ের মধ্যে সেদিন যতটা সহজে সুফল পেয়েছিলাম সাধারণত এত সহজে ফল পাওয়া যায় না। মেয়েটির মুখে কথা ফুটতে দেখে আশ্বস্ত হলো বাপের বাড়ি ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন। দূর হলো উভয়পক্ষের লোকজনের মনোমালিন্য, দোষারোপ। এখন বিদ্বেষ ভুলে নিবিড় করে তুলল আত্মীয়তার বন্ধন। হাসিমুখে মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার আগে অবশ্য তাদের কিছু পরামর্শ দিয়েছিলাম। এই পরামর্শ দেয়া চলছিল ৪-৫ মাস যাবত। চিকিৎসা শেষে পরামর্শ দিলাম যে, ভবিষ্যতে যদি আবার এরকম ঘটে তখনি যেন জানানো হয় আমাদের।
৫ বছর পরে জানতে পারলাম ওরা এখন সুখেশান্তিতে ঘর করছে। কয়েক মাস আগে তাদের একটি মেয়েও হয়েছে।
এবার দেখা যাক নায়লার রোগটি কী ছিল। আসলে এমন কী হয়েছিল যে তার কথা পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বিয়ের পরের দিন শ্বশুরবাড়িতে পা দিতে না দিতেই আত্মীয়-স্বজন আর পাড়া-পড়শীরা তার বাপের বাড়ি সম্পর্কে বেশ কিছু আপত্তিকর মন্তব্য করেছিল। সেসব মন্তব্যের বেশিরভাগই মেয়েটির বাবাকে কেন্দ্র করে। যেমন মেয়ের বাবা সুবিধার মানুষ নয়, নানাভাবে তারা জামাইকে ঠকিয়েছে, গয়নাগাটি, জিনিসপত্র ঠিকমতো দেয়নি, ওরা প্রতারক ইত্যাদি। এরপর কী হলো মেয়েটির পুরোপুরি মনে নেই। নায়লা বরাবর ছিল জেদি আর ডানপিটে ধরনের। বিয়ের আগে ওর বাবা-মা এবং আত্মীয়-স্বজন বারবার বলে দিয়েছিল শ্বশুড়বাড়ির লোকজন যে যাই বলুক এমনকি কোনো কটূক্তি করলেও তাকে সবই সহ্য করতে হবে মুখ বুজে, মা তার গা ছুঁয়ে বলেছিলেন- এ আমার দিব্যি রইল। কিন্তু শ্বশুরবাড়িতে প্রবেশ করেই সে শুনল তার বাবার সম্পর্কে বিশ্রী কটূক্তি। শুনেই তার প্রবল ইচ্ছা হয়েছিল প্রতিবাদ করতে কারণ সে বরাবর এমন প্রতিবাদীই ছিল। কিন্তু তা কী করে হয়! সে যে মায়ের কাছে শপথ করে এসেছে। কিন্তু সে প্রতিবাদ করতে না পারায় তার বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠছিল প্রবল যন্ত্রণায়। মনে হচ্ছিল যেন এক্ষুণি অজ্ঞান হয়ে যাবে। আর ঠিক তখন থেকেই লোপ পেল তার কথা বলার শক্তি। কথা বন্ধ হওয়া যে মেয়েটির ইচ্ছাকৃত ব্যাপার তা নয়। মানসিক জটিল প্রক্রিয়ার ফলে তার বাকরহিত হয়েছিল। এই প্রক্রিয়াকেই বলা হয় কনভারশন অর্থাৎ দ্বন্দ্বজনিত মানসিক যন্ত্রণা যা শারীরিক অক্ষমতায় রূপান্তরিত হয়েছে। এই রূপান্তরিত অবস্থাকেই বলে কনভারশন হিস্টিরিয়া।
কথা বলার শক্তি হারানোর ফলে মেয়েটি সাময়িকভাবে অক্ষম হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু একটি লাভও হয়েছিল। এ ঘটনার পর তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন এতই ভয় পেয়েছিল যে ভবিষ্যতে তার বাবা-মা সম্পর্কে আর কোনো বিরূপ মন্তব্য করেননি বরং তার প্রতি সহানুভূতিশীল হয়েছেন। একেই বলে হিস্টিরিয়াল গেইন বা হিস্টিরিয়ার প্রাপ্তিরোগ।
হিস্টিরিয়া রোগের চিকিৎসা : এ রোগের চিকিৎসায় ওষুধের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের কাউন্সিলিং বা সাইকোলজিক্যাল চিকিৎসা প্রয়োগ করা প্রয়োজন বরং এই ক্ষেত্রে সাইকোথেরাপী বেশী কার্যকর। প্রথমে রোগীকে মৃদুমাত্রার দুশ্চিন্তানাশক ওষুধ দেয়া হয় পরে তার সাথে গভীর সাক্ষাৎকার নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সাইকোলজিক্যাল চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়।

মানুষ কি চাঁদে সত্যি গিয়েছিলো?

মানুষ ফ্যান্টাসী পছন্দ করে। বস্তবতার কাটখোট্টা জগৎ তাকে যথাযথভাবে বিনোদিত বা আকৃষ্ট করে না। ফলে একশ্রেনীর মানুষ বিভিন্ন ধরনের ঘটনা, তত্ত্ব এসবের বিকল্প ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর চেষ্টা করে বা এধরনের কর্মকান্ডে সমর্থন ও আস্থা স্থাপন করে আনন্দ লাভ করে। এভাবেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচলিত হয়। এগুলোর প্রতিষ্ঠার পেছনে সামাজিক বা রাজনৈতিক কারণও জড়িত থাকে। গতশতাব্দীর সবচেয়ে বহুল প্রচলিত ষড়যন্ত্রতত্ত্বগুলো নির্মিত হয়েছে চাঁদে মানুষ অবতরণ নিয়ে। একশ্রেনীর মানুষের কাছে মানুষ্যবাহী চন্দ্রাভিযান পুরোপুরি ধাপ্পাবাজি হিসেবে পরিগণিত এবং এটি যে শুধু তাঁরা বিশ্বাস করেন তাই নয় এর স্বপক্ষে প্রচুর যুক্তি-প্রমাণ হাজির করেন। তবে বলাই বাহুল্য সেসব যুক্তি-প্রমাণে প্রচুর ফাঁক-ফোঁকর থেকে যায় আর সেকারণেই সেগুলো ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হিসেবে পরিচিত। অথচ চাঁদে মানুষ পাঠানোর জন্য নাসা বিপুল সময় ধরে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে, বিপুল পরিমান মানুষ এই অভিযানগুলো সফল করার জন্য কাজ করেছে। মানুষ চাঁদে যায়নি এর স্বপক্ষে এত বেশী যুক্তি-প্রমান হাজির করা হয়েছে যে সেসব বিস্তারিত লিখতে গেলে একটি বই হয়ে যাবে। তাই এখানে শুধুমাত্র উল্লেখযোগ্য কয়েকটি যেগুলো বহুল প্রচলিত এবং সাধারণ মানুষের একটি অংশেরও যেসব বিষয়ে কৌতুহল আছে সেগুলো ব্যাখ্যাপূর্বক খন্ডন করা হলো। যাঁরা এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে চান তাঁরা এই উইকিপিডিয়া আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।
ষড়যন্ত্র-১: চাঁদের মাটিতে মানুষ পা রাখেনি এই ষড়যন্ত্রতত্ত্বে যাঁরা বিশ্বাস করেন তাঁরা তাঁদের বিশ্বাসের পক্ষে যুক্তি হিসেবে চন্দ্রাভিযানের এইধরনের ছবিগুলো হাজির করেন। ছবিতে কালো আকাশে কোনো তারা দেখা যাচ্ছে না (প্রথম ছবি)। তাঁদের ভাষ্য হলো যেহেতু চাঁদে বায়ুমন্ডল নেই তাই সূর্যালোক চাঁদের বায়ুমন্ডলে বিক্ষিপ্ত হয়ে তারাগুলোকে অদৃশ্য করতে পারবে না। সেই ক্ষেত্রে ব্যাকগ্রাউন্ডে ঝকঝকে তারার অবস্থান থাকার কথা।

চাঁদের মাটিতে অভিযাত্রীরা, পেছনে কালো পটভুমি।
কিন্তু দ্বিতীয় ছবিটি দেখুন, এটি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (ISS) থেকে তোলা পৃথিবী পৃষ্ঠের ছবি যেটি পৃথিবীকেই আবর্তন করে ঘুরছে। একই যুক্তি অনুসারে এখানে ব্যাকগ্রাউন্ডে তারার উপস্থিতি থাকার কথা কিন্তু তা নেই। এই দ্বিতীয় ছবিটি নিয়েও যদি কারো সন্দেহ থাকে তাহলে এই লিংক থেকে ISS এর লাইভ ভিডিও সম্প্রচার দেখতে পাবেন, সেখানেও কোনো তারা নেই।

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে তোলা পৃথিবীপৃষ্ঠের ছবি, পেছনে কালো পটভুমি।
ব্যাকগ্রাউন্ডে তারা না দেখা যাওয়ার কারণ হচ্ছে এক্সপোজার। ছবি তোলার সময় লেন্সের এক্সপোজার কমিয়ে বা বাড়িয়ে আলোর পরিমান নিয়ন্ত্রিত করা হয় (মূলতঃ শাটার স্পীডের মাধ্যমে তা করা হয়)। যদি এক্সপোজার বেশী হয় তাহলে অনেক ক্ষীণ আলোর উৎসও ছবিতে ধরা পড়বে। দিনের বেলায় চাঁদ এবং পৃথিবী পৃষ্ঠের তুলনায় তারাগুলোর উজ্জ্বলতা অতি অতি অতি ক্ষীণ। এই ছবিগুলোতে যদি এক্সপোজার বাড়ানো হতো তাহলে তারা হয়তো দৃশ্যমান হতো কিন্তু সেই ক্ষেত্রে চাঁদ ও পৃথিবী পৃষ্ঠ অতিরিক্ত এক্সপোজারের কারণে সাদা হয়ে যেত এবং এগুলোর পৃষ্ঠের অনেক বৈশিষ্ট্য ছবিতে আর পাওয়া যেত না। আর এই ছবিগুলোর সাবজেক্ট হচ্ছে যথাক্রমে চাঁদ ও পৃথিবীর পৃষ্ঠ, ব্যাকগ্রাউন্ডের কালো আকাশ নয় তাই ক্যামেরার এক্সপোজার এমনভাবে রাখা হয়েছে যাতে এদের পৃষ্ঠের বৈশিষ্ট্যগুলো ছবিতে স্পষ্ট থাকে। নিচের ছবিতে দেখানো হলো কীভাবে এক্সপোজার পরিবর্তনের মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত ক্ষীণ আলোর উৎসগুলোর ছবিও তোলা যায় এবং সেই ক্ষেত্রে উজ্জ্বল আলোর উৎসগুলো ওভার এক্সপোজড হয়ে সাদা হয়ে যায়।

ষড়যন্ত্র-২: অনেকে মনে করেন যদিও চাঁদের মাটিতে বাতাস নেই কিন্তু চাঁদে যে পতাকা স্থাপন করা হয়েছে তার ছবিতে দেখা যায় পতাকা উড়ছে। এখান থেকে তাঁরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এটি আসলে অ্যারিজোনার মরুভূমিতে নির্মিত হয়েছে!
ব্যাখ্যা: একটু ভালো করে নিচের ছবিদুটো লক্ষ্য করুন, পতাকা কি সত্যিই উড়ছে?

বাজ অলড্রিন পতাকাকে স্যালুট করছেন।

স্যালুট শেষে হাত নামিয়ে আনার পরেও পতাকার ভাঁজগুলো একই অবস্থায় আছে।
পতকার একপাশ যেমন ফ্রেমের সাথে যুক্ত উপরের অংশও কিন্তু একটি টিউবুলার অ্যালুমিনিয়ামের ফ্রেমের মাধ্যমে যুক্ত। সেটি এই ছবি থেকে স্পষ্ট না বোঝার কোনো কারণ নেই। আর নিচের অংশ কুঁকড়ে আছে দেখে দূর থেকে মনে হতে পারে পতাকা উড়ছে, সেটি একটি ভিজুয়াল ইলুশন তৈরির জন্য আরোপ করা হয়েছে। আর দুটি ছবির পার্থক্যগুলো দেখুন। বাজ অলড্রিন প্রথম ছবিতে পতাকাকে স্যালুট করছেন। সেই স্যালুটকৃত অবস্থায় তার ডান হাত মাথায় ঠেকানো, ভালো করে লক্ষ্য করলে ডান হাতের দুটি আঙ্গুল দেখতে পাবেন হেলমেটের উপরে। দ্বিতীয় ছবিতে হাত নিচে নেমে এসেছে কিন্তু দুটি ছবিতেই পতাকার উড়ন্ত অবস্থা হুবহু একই আছে। যদি পতাকা বাতাসেই উড়ত তাহলে কি কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধান হুবহু একই রকমের কোঁকড়ানো অবস্থায় থাকত?
ষড়যন্ত্র-৩: “ঈগল মুন-ল্যান্ডার এবং 

Wednesday, December 16, 2015

জিনের আছর না অন্য কিছু?

জিনের আছর,ভূতে ধরা,মা কালী ভর করা—এ গুলো সব একই ধরনের অসুখ । রোগী অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে থাকে । চিকিৎসার অংশ হিসেবে সাধারনত কবিরাজ বা ওঝা ডেকে আনা হয় । সেই কবিরাজ অমানুষিক অত্যাচারের মাধ্যমে চিকিৎসা চালায়,যার ফলে রোগীর শারীরিক অনেক ক্ষতি হয় এমনকি কখনো কখনো মারাও যায় । চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় এই রোগগুলো সিজোফ্রেনিয়ার একটি পর্যায় ।

বাংলাদেশের গ্রামে গঞ্জে বিশেষত অশিক্ষিত মানুষদের মধ্যে এই রোগটি দেখা যায়।রোগী অলিক কিছু দেখে বা শোনে বা চিন্তা করে।অধিকাংশ সময়েই সে অডিটরী হ্যালুসিনেশনের শিকার হয়।সে এমন কিছু শোনে যেটা আশেপাশের আর কেউ শুনতে পায় না।সে ভাবতে পারে কেউ তার সাথে সবসময় কথা বলছে/নিরদেশ দিচ্ছে ।আবার একাধিক মানুষ তার মাথার ভেতর বসে কথা বলছে,রোগী জাস্ট রানিং কমেন্ট্রির মত করে তাদের কথা শুনছে ,এমন উপসর্গও হতে পারে। সে ভাবতে পারে কেউ তার সাথে সবসময় কথা বলছে।অনেক একে গায়েবী আওয়াজ বলে অভিহিত করে।অলীক অনেক কিছুই সে দেখতে পারে।উদ্ভট অনেক কিছুই সে ক্রতে পারে।ধর্ম বা পরিবেশ অনুযায়ী কেউ আরবীতে সুরা কেরাত পড়া শুরু করতে পারে,কেউ বা জয় মা কালী বলে নাচানাচি করতে পারে। উপসর্গ দেখে বাংলাদেশের সকল ধরনের জিনে ধরা,ভুতে ধরা,আছর পড়া,নজর লাগা ,ভর করা ইত্যাদি সকল রোগ কেই সিজোফ্রেনিয়া ধরা যায়।


রোগের কারন বংশগত এবং পরিবেশগত।বংশে অতীতে কারো সিজোফ্রেনিয়া থাকলে সেই পরিবারের পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে এই রোগের সম্ভাবনা থাকে।তবে বেশি প্রভাব পরিবেশের।ধর্মিয় বা আধ্যাত্মিক জগতের উপরে দৃড় বিশ্বাস তার মনে সিজোফ্রেনিয়ার বিজ বপন করে।ইসলামে বিশ্বাসী কোন তরুন তরুনীর উপর কখনো মা কালী ভর করে না।আবার কোন হিব্দুর উপর মুসলমান জিনের আছর পড়তে দেখা যায় না।

দেখা যায় ,যে এলাকায় শিক্ষার হার কম,সেই এলাকার কমবয়সী রা এই রোগে আক্রান্ত হয়।
অশিক্ষিত মানুষদের মস্তিষ্ক তুলনামূলকভাবে নতুন,অদ্ভুত বিষয় সহজে গ্রহন করতে পারে না।কোন নির্দিষ্ট ঘটনা বা তথ্য(কোন ভূত তাড়ানোর দৃশ্য,কোন প্যারানরমাল এক্টিভিটিজ,কোন ধর্মীয়/ সামাজিক মিথ অথবা এমঙ্কিছু যা সে ব্যাখ্যা করতে পারছে না) এই কিশোর কিশরীদের মস্তিষ্ক যখন আলোড়িত করে,তখন সে সর্বক্ষন এটা নিয়ে চিন্তা করতে থাকে।চিন্তা করে যখন কোন সলুশন পায় না তখন মস্তিষ্কে এম্ফেটামিন হরমোন নিসৃত হয়।এম্ফেটামিন আবার ডোপামিন নামক আরেক হরমোনকে নিঃসরনের প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।এই ডোপামিনের প্রভাবেই রোগি কাল্পনিক কথা শোনে,অবাস্তব জিনিস দেখে এবং অসম্ভব কাজ করতে পারে।
ধরা যাক ,কোন তরুনী দুপুরে গোছলের পরে বকুল গাছ তলায় বসেছিল।বিকালে তার মা তাকে ডেকে বল্ল,কেন সে বকুল তলায় বসেছিল?সে কি জানে না গোছলের পরে ভেজা চুলে বকুল তলায় বসলে জিনের নজর লাগে?তরুনী যদি অশিক্ষিত এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন হয় তাহলে এ ঘটনায় ওই তরূনীর মনে বেশ শক্ত একটা ভয় ঢুকে যাবে।(সে কুসন্সকার মুক্ত হলে একটুও ভয় পাবে না)রাতে হয়তো তার পরিবারের বয়স্ক দাদী নানী কারো কাছ থেকে সে কিছু জিনে ধরার গল্প শুনল,জিনে ধরলে মানুষ কি করে সে বিষয়ে তার কিছু ধারনা হল।এখন তার কাছে ভয়টা অনেক শক্ত হয়ে গেথে যাবে।তার ব্রেনে ডোপামিনের কাজ শুরু হয়ে গেছে।পরের কয়েক দিনের মধ্যেই তার সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশী।এবং আক্রান্ত হয়ে সে সেই সব আচরন করার চেষ্টাই করবে ,যে কাজের ইনফরমেশন গুলা তার মাথায় আছে।(দাদীর কাছে শুনেছে জিনে ধরলে পুরুষ কন্থে কথা বলে।সে চাইবে গলা মোটা করে কথা বলতে।তার পাশের ঘরের আচারের ওপর হয়তো তার লোভ ছিল।সে আদেশ করবে আমাকে ওই ঘর থেকে আচার এনে খেতে দাও ইত্যাদি)।

নির্দিষ্ট কিছু ড্রাগের প্রভাবেও সিজোফ্রেনিয়া ঘটতে পারে।বিভিন্ন পূজা পারবনে নেশা করার পর অনেকের মধ্যে উন্মত্ততার ভাব আসে।ক্লান্তিহীন ভাবে সে তখন নাচ গান করতে পারে।অনেক অপ্রত্যাশিত আচরন ও করতে পারে সে তখন।

সিজোফ্রেনিয়ার প্রভাবে রোগীর সাময়িক ভাবে স্মৃতি ভ্রংশ হতে পারে।আবার কখনো কখনো শুধু নির্দিষ্ট কিছু স্মৃতিই তার মাথায় থেকে যায়।রোগী এ সময় নিজের সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারনা পোষন করে।তার আশেপাশের পরিবেশে কি হচ্ছে সে এটা ধরতে পারে না।অসংলগ্ন কথা বার্তা বলে থাকে,যা স্বাভাবিক অবস্থায় তার বলার কথা না।এমনকি এ অবস্থায় তার গলার স্বর ও পরিবর্তিত হতে পারে।চূড়ান্ত অবস্থায় রোগী নিজের বা অন্যদের শারীরিক ক্ষতি করতে পারে।তার শারীরিক শক্তি এ সময় অনেক বেশি বলে মনে হতে থাকে।বা স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে সে অনেক বেশি কাজ করতে পারে এ সময়।

convulsion রোগের কিছু কিছু উপসর্গও এই ধরনের জিনের আছরের সাথে মিলে যায় । কনভালশনের ক্ষেত্রে রোগীর শরীর কাপতে থাকে , তাদের মুখ দিয়ে ফেনা বের হয় এবং কিছুক্ষন পরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে । এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ব্যাপার । এর সাথে ভৌতিক কোন ব্যাপার না ।চিকিৎসা করালে এ রোগ সম্পুর্ন সেরে যায় ।

এ রকম ক্ষেত্রে রোগীকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে । সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে রোগী পুরোপুরি ই সূস্থ হয়ে উঠবে । কোনভাবেই কবিরাজদের শরনাপন্ন হওয়া উচিত না ।রোগী যেন নিজেই নিজের কোন শারীরিক ক্ষতি করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে । 

Wednesday, December 9, 2015

রক্তের প্রয়োজন যাদের; রক্তদানের যোগ্যতাঃ-

রক্তের প্রয়োজন যাদেরঃ-
১. দূঘর্টনাজনিত রক্তক্ষরণ - দূঘর্টনায় আহত রোগীর জন্য দূঘর্টনার ধরণ অনুযায়ী রক্তের প্রয়োজন হয়।
২. দগ্ধতা - আগুন পুড়া বা এসিডে ঝলসানো রোগীর জন্য পাজমা/রক্তরস প্রয়োজন। এজন্য ৩-৪ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন।
৩. অ্যানিমিয়া - রক্তে R.B.C. এর পরিমাণ কমে গেলে রক্তে পযার্প্ত পরিমাণ হিমোগোবিনের অভাবে অ্যানিমিয়া রোগ হয়। হিমোলাইটিক অ্যানিমিয়াতে R.B.C. এর ভাঙ্গন ঘটে।
৪. থ্যালাসেমিয়া - এক ধরনের হিমোগোবিনের অভাবজনি বংশগত রোগ। রোগীকে প্রতিমাসে ১-২ ব্যাগ রক্ত দিতে হয়।
৫. হৃদরোগ - ভয়াবহ Heart Surgery এবং Bypass Surgery এর জন্য ৬-১০ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন।
৬. হিমোফিলিয়া - এক ধরনের বংশগত রোগ। রক্তক্ষরণ হয় যা সহজে বন্ধ হয় না, তাই রোগীকে রক্ত জমাট বাধার উপাদান সমৃদ্ধ Platelete দেয়া হয়।
৭. প্রসবকালীন রক্তক্ষরণ - সাধারণত প্রয়োজন হয় না তবে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে ১-২ বা ততোধিক ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়।
৮. ব্লাড ক্যান্সার- রক্তের উপাদানসূমহের অভাবে ক্যান্সার হয়। প্রয়োজন অনুসারে রক্ত দেয়া হয়।
৯. কিডনী ডায়ালাইসিস - প্রতিবার ডায়ালাইসিস-এ ১ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন।
১০. রক্ত বমি - এ রোগে ১-২ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়।
১১. ডেঙ্গু জ্বর - এ রোগে ৪ ব্যাগ রক্ত হতে ১ ব্যাগ Platelete পৃথক করে রোগীর শরীরে দেয়া হয়।
১২. অস্ত্রপচার - অস্ত্রপচারের ধরণ বুঝে রক্তের চাহিদা বিভিন্ন।

রক্তদানের যোগ্যতাঃ-
সাধারনত একজন সুস্থ ব্যাক্তি চার মাস অন্তর অন্তর রক্তদান করতে পারেন। এবার দেখে নেয়া যাক রক্তদানের

যোগ্যতাসমূহঃ-
1. বয়স – ১৮-৫৭ বছর।
2. ওজন - ১০০ পাউন্ড বা ৪৭ কেজির উর্ধ্বে।
3. তবে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে ( অনুচক্রিকা , রক্তরস ) ওজন ৫৫ কেজি বা তার উর্ধ্বে। রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকলে।
4. রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ৭৫% বা তার উর্ধ্বে থাকলে। সম্প্রতি ( ৬-মাস ) কোন দূঘর্টনা বা বড় ধরনের অপারেশন না হলে।
5. রক্তবাহিত জটিল রোগ যেমন-ম্যালেরিয়া, সিফিলিস , গনোরিয়া, হেপাটাইটিস , এইডস, চর্মরোগ , হৃদরোগ , ডায়াবেটিস , টাইফয়েড এবং বাতজ্বর না থাকলে।
6. কোন বিশেষ ধরনের ঔষধ ব্যবহার না করলে।
7. চার মাসের মধ্যে যিনি কোথাও রক্ত দেননি।
8. মহিলাদের মধ্যে যারা গর্ভবতী নন এবং যাদের মাসিক চলছে না।.রক্তদান ও রক্ত দানের পরঃ-.রক্তদানের আগে প্রতিটি রক্তদাতাকে তারসম্পর্কিত কিছু ব্যক্তিগত ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জিজ্ঞাসা করা হয়। সেগুলোর সঠিক উত্তর দিতে হবে। রক্তদাতার শারীরিক তাপমাত্রা, রক্তচাপ, নাড়ীর গতি পরীক্ষা করা হয় এবং রক্তদাতার রক্ত জীবানুমুক্ত কি না তা জানার জন্য সামান্য রক্ত নেয়া হয়। এছাড়া এই রক্তের মাধ্যমে রোগী রক্তদাতার রক্তের মধ্যে কোন জমাটবদ্ধতা সুষ্টি হয় কি না তাও পরীক্ষা করা হয় (ক্রসম্যাচিং)। রক্ত পরীক্ষার পর কারও রক্তে এইডস, হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস -সি, সিফিলিস বা অন্য কোন জীবানুর উপস্থিতি ধরা পরলে তাকে (রক্তদাতা) প্রয়োজেনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের পরামর্শ দেয়া হয়। সূঁচের অনুভূতি পাওয়ার মাধ্যমে রক্তদান প্রক্রিয়া শুরু হয়। এতে সময় লাগে সবোর্চ্চ ১০ মিনিট। রক্তদানের পূর্বে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে- যথেষ্ট বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা।রক্তদাতা প্রয়োজন মনে করলে বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারে।রক্তদানের সময় মাথা- শরীর সমান্তরাল থাকতে হবে। দূর হতে রক্ত দিতে এলে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে হবে। রক্ত দান করার পরে অবশ্যই নুন্যতম ৫ মিনিট শুয়ে থাকতে হবে। [রক্তের প্রবাহ সমগ্র শরীরে স্বাভাবিক হবার জন্য এটা অতীব জরুরী]। সাধারণত রক্তদান করার পর অতিরিক্ত দামী খাবার গ্রহনের প্রয়োজন নেই। তবে রক্তদানের পর সপ্তাহ খানেক স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি অন্যান্য সময়ের দ্বি-গুণ পানি পান করতে হবে। কেননা একজন রক্তদাতা যেটুকু রক্ত দান করেন [সাধারণত ১ পাউন্ড] তার প্রায় ৬০ ভাগ ঐ সময়ের মধ্যে পূরণ হয়। শুধু লোহিত রক্ত কণিকা পূরণ হতে ১২০ দিন বা ৪ মাস সময় নেয়। রক্তদানের পর অবশ্যই তারিখ মনে রাখতে হবে।.বেশিরভাগ রক্ত দাতাই রক্তদানের পর কোন সমস্যা অনুভব করেন না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে রক্তদাতা তলপেটে ব্যাথা, দূবর্লতা, মাথা ঘোরা, সূঁচ প্রবেশের স্থানে ক্ষত লালচে দাগ এবং ব্যাথা অনুভব করতে পারেন। সামান্য কিছু ক্ষেত্রে রক্তদাতা জ্ঞান হারাতে পারে বা মাংসপেশীতে খিচুনি ধরতে পারে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসব সমস্যা ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ঠিক হয়ে যায়, কোন ঔষধের প্রয়োজন হয়না।.
রক্তদানের সুবিধাঃ-
1. প্রতি ৪ মাস অন্তর রক্ত দিলে দেহে নতুন BLOOD CELL সৃষ্টির প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
2. দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকগুন বেড়ে যায়।
3. নিয়মিত রক্তদানে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে বলে হৃদপিন্ড বিশেজ্ঞরা মনে করেন।
4. স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে আপনি জানতে পারেন আপনার শরীর রক্তবাহিত মারাত্মক রোগ আছে কিনা!

Monday, December 7, 2015

সব দোষ কেবল মেয়েদেরই!


২০০১ সালে নোবেল পুরস্কারবিজয়ী বিজ্ঞানী ৭২ বছর বয়সী টিম হান্ট সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ায় বিজ্ঞান সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বলেছিলেন- "মেয়েরা ল্যাবে থাকলে বড় সমস্যা। হয় তারা প্রেমে পড়বে, নয়তো অন্য পুরুষ বিজ্ঞানীরা তাদের প্রেমে পড়বে, আর সমালোচনা করলে তারা কান্নাকাটি করবে"।
মেয়ে হলে ল্যাবে থাকলে তার সমস্যা কী? পেশাগত ক্ষেত্রে দক্ষতা ও যোগ্যতা থাকলে নারীরা বিজ্ঞানী হতে পারবে না? অসুবিধে কোথায়? আজ বিশ্বব্যাপী ঘরের বাইরে নেমে এসেছে মেয়েরা। বাস্তবতা হলো বাইরের পরিমণ্ডলে মেয়েরা ৩ গুণ কাজ করলেই কেবল পুরুষের সমান স্বীকৃতি মেলে! কেবল মেয়ে বলেই তাকে ৩ গুণ কাজ করে স্বীকৃতি আদায় করতে হয়।
খুব জানতে ইচ্ছে হয়, বিজ্ঞানী টিম হান্ট কী ওই মন্তব্য করার সময় নেশাগ্রস্ত ছিলেন, নাকী তাঁর মতিভ্রম হয়েছিল? দুনিয়ার প্রথম সারির বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও তিনি পুরুষতন্ত্রের নোংরা শিক্ষা দূর করতে পারেন নি। তাঁর বালখিল্য বক্তব্যে বোঝা যায় বিজ্ঞান চর্চা বড় কথা নয়, সেখানে মেয়ে লোকের উপস্থিতি এক উপদ্রববিশেষ। ধর্মীয় মোল্লারা যেমন ফতোয়া দিয়ে থাকেন মেয়েরা নিকটে থাকলে নাকী তাদের ইবাদতের বিঘ্ন ঘটে এবং মেয়েদের কারণে ইবাদতঘরের নিয়ন্ত্রণ রক্ষা করা সম্ভব হয় না। তেমনি বিজ্ঞানী টিম হান্টও মনে করেন মেয়েদের উপস্থিতির কারণে বিজ্ঞান গবেষণাগারের পরিবেশ কোনভাবেই রক্ষা করা সম্ভব হয় না।
হান্টের মতে- বিজ্ঞান গবেষণাগারে মেয়েদের উপস্থিতি থাকলে বিজ্ঞানের সকল ফর্মুলা মেয়েদের চোখের জলে বানের মতো ভেসে সমুদ্রে নিক্ষেপিত হবে। নয়তো বিজ্ঞানীদের হৃদয়ঘটিত বিক্রিয়া ঘটার পর বিজ্ঞান গবেষণাগার প্রেমের তাজমহলে রূপান্তরিত হয়ে পড়বে! বিজ্ঞানের পাঠ না করে তারা শেক্সপিয়ার পাঠ শুরু করবে। বিজ্ঞানী হান্টের এই উপলব্ধি আমার কাল্পনিক ধারনামাত্র। তবে এমনটাই যে তিনি ভেবেছিলেন সেটা যে নির্জলা সত্য তা কেউই অস্বীকার করতে পারবে না।
টিম হান্টের করা ওই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বিশ্বমিডিয়ায় ব্যাপক সমালোচনা ও নিন্দার ঝড় ওঠার প্রেক্ষিতে তিনি পরবর্তীতে ক্ষমাও চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর ক্ষমাকে গুরুত্ব দেয়া হয় নি। এর কারণে তাকেঁ ইউরোপিয়ান রিসার্চ কাউন্সিল, রয়াল সোসাইটি আর ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডনের পদগুলিও তাঁকে খোয়াতে হয়েছে।
টিম হান্টের ঘটনা সামান্য একটা উদাহরণমাত্র। বাস্তবে মেয়েদেরকে এরকম অনেক ঘটনা হজম করতে হচ্ছে। বিশেষ করে বিজ্ঞান, গণিত, কারিগরি কিংবা প্রযুক্তিগত সেক্টরে মেয়েরা পুরুষদের তুলনায় সংখ্যাগতভাবে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। প্রচার করা হয় (প্রচার মাধ্যমের সর্বেসর্বা কিন্তু ওই পুরুষই) যে, মেয়েরা কাজের চাপ সামলানোর ভয়ে এই সকল সেক্টরে আসতে চায় না। আসলে এর পিছনে কী কারণ তা সহজেই অনুমেয়। সমীক্ষায় জানা যায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মিলিয়ে এই খাতে নিয়োজিত কর্মীদের মধ্যে ৭৩ শতাংশ পুরুষ এবং ২৭ শতাংশ মেয়ে। অথচ স্বাস্থ্য সেবার ক্ষেত্রে বিষয়টা সম্পূর্ণ বিপরীত। সেখানে মেয়ে কর্মীর হার ৭০ শতাংশ এবং পুরুষ কর্মীর হার ৩০ শতাংশ। তবে কী শৈশব থেকেই মেয়েদেরকে বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে অনাগ্রহী করে তৈরি করা হয়? নিশ্চয়ই হয়। নইলে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির প্রতি মেয়েদের উৎসাহ এতো কম হবার কোন ঘটনা ঘটতো না। আর উৎসাহের অভাবেই মেয়েরা এই পেশাতে মনোনিবেশ বা আত্মবিশ্বাসী হতে পারছে না।
সমাজের সর্বস্তরে কেবলমাত্র মেয়ে হবার কারণেই যোগ্যতা থাকার পরও নিগৃহীত হতে হয়। দেখে শুনে মনে হয় মেয়ে হয়ে জন্মানোই বুঝি অপরাধ হয়েছে। এই অপরাধের শাস্তিতো এই সমাজ-রাষ্ট্র দিতে পারছে না, তাই ছলে বলে কৌশলে মেয়েদের বঞ্চিত করে রাখা, অপমান অপদস্থ করা, ক্ষেত্রবিশেষে শারীরিক লাঞ্ছনা কিংবা আঘাতও করা এক প্রকার নিয়মে দাঁড়িয়েছে।
প্রায়ই পুরুষরা অভিযোগ করে থাকেন মেয়েরা খোলামেলা পোশাক পড়ে, একাকী রাস্তায় চলাফেরা করে, রাতের বেলা চলাফেরা করে, কিংবা তার পুরুষসঙ্গীকে অবলীলায় বিশ্বাস করার কারণে বিভিন্ন 'অপরাধ' সংঘটিত হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশের পুলিস প্রধানের ভাষায় 'পুরুষরা কিঞ্চিৎ 'দুষ্টুমী' করে বসে'।
যাই হোক মিডিয়ার কল্যাণে আপাতত নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী টিম হান্টকে লন্ডনের বিশ্ববিদ্যালয় হতে পদত্যাগ করতে হয়েছে ঠিকই, কিন্তু পুরুষ কর্তৃক মেয়ে জাতিকে বলির পাঁঠা বানানো বন্ধ হবে কবে সেটিই চিন্তার বিষয়। মেয়েদের মানুষ হিসেবে, তার মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে কবে মূল্যায়ন করার মন-মানসিকতা গড়ে উঠবে সেটা নিয়েই আমি চিন্তিত।
কারণ বিজ্ঞানী টিম হান্টের 'বেফাঁস কথা' বলার কারণে ক্ষমা চাওয়া, কিংবা বিভিন্ন পদ থেকে তাঁর ইস্তফার অর্থ এই নয় যে মেয়েরা তার যোগ্য সম্মান ও অধিকার পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। বরং বলা চলে মেয়েদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে এটি একটি ক্ষুদ্র বিজয়মাত্র। হান্টের ঘটনায় বেশি উচ্ছ্বসিত না হয়ে মেয়েদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম অব্যাহত রাখাটাই জরুরী।
(নোবেলবিজয়ী বিজ্ঞানী টিম হান্ট-এর ছবিটি উইকিপিডিয়া থেকে ধার করা)
ছবি:

Sunday, December 6, 2015

পর্ন ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে অজানা দশ তথ্য


নীল ছবি নিয়ে বিশুদ্ধবাদীরা যতই নাক উঁচু করেন না কেন এই পর্ন ইন্ডাস্ট্রি যে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় সেটা তথ্যই প্রমাণ করে। মানুষ নীল ছবির হাতছানিতে মাঝেমাঝেই ধরা দেয়, কিন্তু পর্দার ওপারে ঠিক কী ঘটে? সেই পর্ন ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে অজানা দশ তথ্য...
১)  পর্ন রোজগার : সাধারণ পুরুষ পর্ন অভিনেতারা ছবি প্রতি ৫০০ থেকে ৬০০ ডলার বা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৩৫ হাজার টাকা রোজগার করেন। মহিলাদের ক্ষেত্রে রোজগারের অঙ্কটা দ্বিগুণ হয়। আর সমকামী পর্নের ক্ষেত্রে রোজগারটা সাধারণ ক্ষেত্রের তিন গুণ হয়। তবে পর্নস্টার বা পর্ন তারকরা ঘণ্টায় এক হাজার থেকে ৫ হাজার ডলার বা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৩ লক্ষ টাকা রোজগার করেন।
২) পর্ন তৈরি : বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পর্ন সিনেমা তৈরি হয় আমেরিকায়। দু নম্বরে জার্মানি। আমেরিকায় সপ্তাহে গড়ে ৫০০টি ও জার্মানিতে ৪০০টি পর্ন সিনেমা তৈরি হয়।
৩) পর্ন আসক্তি:  এক সমীক্ষায় প্রকাশ ১০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ অনলাইনে পর্ন দেখাটা তাদের যে কোনও নেশাকে হার মানিয়েছে।
৪) পর্ন ও যৌন অপরাধ: সমীক্ষায় প্রকাশ যে দেশে পর্নোগ্রাফিক সিনেমা দেখার বিষয়ে কোনও বাধা নিষেধ নেই সেখানে যৌন হিংসা বা অপরাধের সংখ্যা কম হয়। যদিও অন্য এক সমীক্ষায় প্রকাশ পর্ন সিনেমা বেশি দেখা দেশে, যৌন অপরাধের সংখ্যা তুলনায় বেশি।
৫) পর্ন হিসেব: আমেরিকায় প্রতি ৩৯ মিনিটে একটি পর্ন ছবি তৈরি হয়। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র দুটি রাজ্যে পর্ন ছবি তৈরিতে অনুমতি আছে।
৬) পর্ন ডট কম: গোটা বিশ্বে সাড়ে চার কোটি পর্ন ওয়েবসাইট আছে। দুনিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় ওয়েবসাইটের প্রতি মাসে পেজ ভিউজ সিএনএন, ইএসপিএনের তিন গুণ।
৭) পর্ন ব্যয়: প্রতি সেকেন্ড পর্নগ্রাফির পিছনে খরচ হয় প্রায় ৩ হাজার ডলার বা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা।
৮) চাইল্ড পর্নোগ্রাফি: দুনিয়ার সেরা ২০টি উন্নত দেশ বলেছে তাদের দেশের সেরা দশটা বড় সমস্যার মধ্যে প্রথমের দিকে আছে শিশু বা চাইল্ড পর্নোগ্রাফি। ভারত শিশু পর্নোগ্রাফি রুখতে ইন্টারপোলের দ্বারস্থ হচ্ছে।
৯) পর্ন দেখা: যে কোনও মুহূর্তে বিশ্বের ৩০ হাজার মানুষ পর্নোগ্রাফিক সিনেমা দেখছেন। ৩৭২ জন মানুষ গুগল সার্চে লিখছেন অ্যাডাল্ট বা পর্ন জাতীয় সিনেমা বা ছবি।
১০)  শরীরী ব্যবসা: পর্ন ইন্ডাস্ট্রি হলিউড, গুগল, এনএফএল, ইয়াহু, ইবে, আমাজনের থেকেও অনেক বেশি বড় ও লাভবান। সেক্স ইন্ডাস্ট্রি (পর্ন সিনেমা, দেহব্যবসা, স্ট্রিপ ক্লাব, নারী পাচার) হল বিশ্বের সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা।
সূত্র: ইন্টারনেট

আস্তিক এবং নাস্তিকদের মধ্যে পার্থক্য সমূহ ।


আমি অনেক চিন্তা ভাবনা করে আস্তিক এবং নাস্তিকদের মধ্যে নিম্নলিখিত পার্থক্যসমূহ নিরুপণ করেছি । নিম্নে আমি ধারাবাহিকভাবে তা উপস্থাপন করলাম । এর বাইরেও যদি আর কোন পার্থক্য থেকে থাকে তাহলে তা মন্তব্য কলামে উল্ল্যেখ করার জন্য অনুরোধ রইল ।
১ । (ক)- আস্তিকরা সামাজিক বলয় ভেঙে বেড়িয়ে আসতে পারে না ।
    (খ)- নাস্তিকরা সামাজিক বলয় ভেঙে বেড়িয়ে আসতে পারে ।
২ । (ক)- আস্তিকরা জন্মগত বিশ্বাষের অভ্যাস পরিবর্তন করতে পারে না ।
    (খ)- নাস্তিকরা জন্মতগত বিশ্বাষের অভ্যাস পরিবর্তন করে চলতে পারে ।
৩ । (ক)-আস্তিকরা প্রচলিত স্রোতের সাথে তাল মিলিয়ে চলে ।
     (খ)- নাস্তিকরা প্রচলিত স্রোতের বিপরীতে চলতে শিখে ।
৪ । (ক)- আস্তিকরা যুক্তি , অলৌকিক , অন্ধ বিশ্বাষ , এবং প্রথাকে মেনে নিয়ে চলে ।
    (খ)- নাস্তিকরা শুধু মাত্র যুক্তি এবং বাস্তবতার উপর নির্ভর করে চলে ।
৫ । (ক)- আস্তিকরা তাদের ধর্মীয় কিতাবের বক্তব্যসমূহকে বিনা দ্বিধায় মেনে জীবন যাপন করে ।
    (খ)- নাস্তিকরা ধর্মীয় কিতাবের বক্তব্যসমূহকে যুক্তি , বিজ্ঞান এবং বাস্তবতার নিরীখে বিচার বিশ্লেষণ করে গ্রহণ অথবা বাদ দেয়ে ।
৬ । (ক)- কট্টোর আস্তিকেরা নাস্তিকদের উপর প্রচন্ড ক্ষিপ্ত থাকে এবং তাদের হত্যা করাকেও বৈধ মনে করে ।
    (খ)- নাস্তিকেরা ; আস্তিক নাস্তিক সবাইকেই মানবতার নিরীখে বিচার করে ।
৭ । (ক)- আস্তিকেরা তাদের বিশ্বাষগুলোকে জোর করে মানুষের উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে এবং না মানলে বিভীন্ন লৌকিক এবং অলৌকিক ভয় ভীতির ব্যবস্থা করে ।
   (খ)- কিন্তু নাস্তিকেরা তাদের বক্তব্যগুলোকে যুক্তি , বুদ্ধি এবং বিজ্ঞানের নিরীখে বুঝিয়ে মানুষকে পরিবর্তনের চেষ্টা করে ।
৮ । (ক)- আস্তিকেরা জন্মগত ভাবেই আস্তিক হয় অথবা পরিবেশগতভাবে ।
     (খ)- কিন্তু নাস্তিকেরা জন্মগতভাবে কেউই নাস্তিক হয় না । জীবন এবং বিজ্ঞানের জিজ্ঞাসার প্রশ্নের উত্তর খুঁজে খুঁজেই একজন নাস্তিক তার সিদ্ধান্তে স্থীর হয় ।
৯ । (ক)- আস্তিকেরা প্রচলীত স্রোতের বিরুদ্ধে যেতে পারেনা বলেই তারা দুর্বল চিত্তের হয় ।
    (খ)- কিন্তু নাস্তিকদের প্রচলীত স্রোতকে ভেঙে ভেঙে এগুতে হয় বলে প্রচুর সাহসীকতার পরিচয় দিতে হয় ।
১০ । (ক)- অসংখ্য আস্তিকের মাঝে একজন নাস্তিকের জীবন অসহনীয় এবং দুর্বীসহ এমন কি মৃত্যুর ঝুঁকিতেও তাকে জীবন কাটাতে হয় ।
     (খ)- কিন্তু অসংখ্য নাস্তিকের মাঝে একজন আস্তিক সাবলিল জীবন যাপন করতে পারে ।

Friday, November 27, 2015

তাকদীরের একটি ভিন্ন ধরণের ব্যাখ্যা


তাকদীরের ধারণা পাওয়ার জন্য সময়ের আপেক্ষিতার ধারণাটা বোঝা দরকার। সময় একটি আপেক্ষিক বিষয়। যেমন ধরুন আমরা এক সেকেন্ড বলতে যে সময়টুকু বুঝি সে সময়টা আপেক্ষিক। কীভাবে?

মনে করুন আমি আপনার থেকে আলোর বেগের কাছাকাছি বেগে দূরে সরে যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে আপেক্ষিতা তত্ত্ব অনুসারে আমি যে টাইম ফ্রেমে থাকব সেটির সময় প্রসারিত হয়ে যাবে। অর্থাৎ আমার এক সেকেন্ডের পরিমাণ আপনার এক সেকেন্ডের পরিমান থেকে বেশী হবে। সুতরাং সময় বিষয়টা অবজারভার এর কন্ডিশনের উপর নির্ভর করে।

এখন মনে করুন আপনি একটি ভিডিও দেখছেন। ভিডিওটি যদি আপনি স্বাভাবিক গতিতে দেখতে থাকেন, সেক্ষেত্রে আপনার কাছে মনে হবে ভিডিওর ভিতরের গতি আপনার পারিপার্শ্বের জীবনের গতির মতই স্বাভাবিক। কিন্তু আপনি যদি ফাস্ট ফরোয়ার্ড করেন তাহলে দেখবেন ভিডিওটির ভিতরের জীবনের গতি দ্রুত হয়ে গেছে। খেয়াল করুন ভিডিওতে কী হয়? ভিডিওতে আসলে অনেকগুলো স্থির চিত্রকে আপনার সামনে দ্রুত সঞ্চালিত করা হয়। ফলে আপনার মনে হয় যেন ভিডিওটা জীবন্ত।

এবার আরেকটু গভীর ভাবে চিন্তা করুন। আমাদের এই বাস্তব জীবনটাকে যদি একটি রিয়েলটাইম থ্রি ডাইমেনশনাল ভিডিও ধরা হয়, তাহলে যেটা মনে হবে যে আমাদের জীবন কতগুলো থ্রিডি স্থির চিত্রের সমষ্টি। যেখানে আল্লাহ তাআলা একটির পর একটি ইমেজকে এমন একটি ইন্টারভেলে আমাদের আত্মার সামনে উপস্থাপন করছেন যেন আমাদের কাছে তা চলন্ত মনে হয়।

যদি এভাবে ধরা হয় তাহলে দেখবেন যে, আল্লাহ তাআলা কীভাবে সবকিছু আগে থেকেই জানেন বা লিখে রেখেছেন তা বুঝা কিছুটা সহজ হয়। কেননা তিনি তাঁর অগ্রীম জ্ঞানের ভিত্তিতে আমাদের জীবনের জন্য প্রযোজ্য সবগুলো ইমেজ সৃষ্টি করলেন এবং একটার পর একটা আমাদের সামনে উপস্থাপন করছেন। এ কারণে আমরা সময়ের গণ্ডিতে আবধ্য। (আল্লাহই ভাল জানেন)

এখানে লক্ষ্যণীয় যেহেতু তিনি তার অগ্রীম জ্ঞানের ভিত্তিতে জানেন যে আমরা কীভাবে জীবন যাপন করব, তার মানে এই না যে তিনি আমাকে যে স্বাধীনতা দিয়েছেন (পরীক্ষা করার জন্য) সেটা ভঙ্গ হল। কেননা তিনি আমাকে স্বাধীনতা দিলে পরে আমি যে পথ অবলম্বন করব সেটা তাঁর জানা। এবং যেহেতু আমাকে অস্তিত্বশীল করতে হবে সেহেতু সেই আলোকে সবগুলো ইমেজ তৈরী করে আমাদের সামনে উপস্থিত করছেন। (আল্লাহই ভাল জানেন)

এ বিষয়টি থেকে এটাও বুঝা সহজ হয় যে কীভাবে আল্লাহ সময়ের অধীন নন। আমি উপরে যখন বললাম যে তিনি অগ্রীম জ্ঞানের ভিত্তিতে তৈরী করছেন তখন বুঝতে হবে যে সেটি আমার আপনার সাপেক্ষে অগ্রীম। আল্লাহর সাপেক্ষে অতীত বা ভবিষ্যত বলে কিছু নেই। তিনি সময়ের স্রষ্টা, সময়ের অধীন নন। বর্তমান মহাবিশ্বের অথবা সম্ভাব্য সকল নিয়মের সকল প্রকার মহাবিশ্বের সকল ঘটনাবলী তার সাপেক্ষে ঘটে গেছে। সুতরাং তিনি যখন কোন কিছু সৃষ্টি করতে ইচ্ছে করেন তখন ঐ সৃষ্টিগুলো নিজস্ব সীমাবদ্ধতা ও গণ্ডি সহ তৈরী হয়ে যায় তথা আত্মপ্রকাশ করে। যেমন আমাদের অন্যতম একটি গণ্ডি হচ্ছে সময়।

যেহেতু মহাবিশ্বের সৃষ্টির শুরুর সাথে সাথে সময়ের শুরু হয়েছে সেহেতু বিষয়টি আপনি অনেকটা এভাবে চিন্তা করতে পারেন যে, সময়ের ডাইমেনশন সহ মহাবিশ্ব সৃষ্টির প্রাথমিক পর্যায়ে একটি বিন্দু ছিল। এখানে কল্পনা করুন একটি ত্রিভুজ যার চূড়া C উপরের দিকে। ভূমি AB নিচে। ভূমির সমান্তরালে ঠিক মাঝ বরাবর একটি রেখা xy. মনে করি মহাবিশ্বের শুরুর বিন্দুটি হল ত্রিভুজটির চূড়ার বিন্দু। এই বিন্দুতেই তাহলে বর্তমানে মহাবিশ্বের সকল ঘটনাবলি পুঞ্জিভূত আছে। সুতরাং এখানে সময় হবে স্থির। ত্রিভুজের যতই নিচের দিকে যাবেন দেখবেন সকল ঘটনাবলির ‘পরিমাণটা’ ফিক্সড থাকলো, কিন্তু সময়ের তৈরী  হল।( কেননা এখন প্রতিটি ইমেজের মধ্যবর্তী একটা স্থান পার্থক্য তৈরী হল, যেগুলো মূল C বিন্দুতে পুঞ্জিভূত ছিল।)  হতে পারে যে আমরা সময়ের এই এক্সপ্যানডিং ইউনিভার্স এর ঠিক মধ্য রেখায় আছি। অন্য কথায় এই xy লাইনটি বরাবর যখন সময় আসলো তখন আল্লাহ সেই লাইন বরাবর আমাদের জন্য সৃষ্ট থ্রিডি ইমেজ গুলো আমাদের আত্মার সামনে দিচ্ছেন। অন্য কথায় রিয়েলটাইম ঘটনাচক্রের এই ক্ষেত্রের সাথে আমাদের আত্মাকে সংযুক্ত করে দিয়েছেন। অথবা হয়ত AB লাইন বরাবর আমরা আছি। দেখুন এখান থেকে কিন্ত এ বিষয়টা পরিষ্কার যে আল্লাহ তাআলা এই টাইম ফ্রেমের বাইরে। একই সাথে তিনি এই ফ্রেমের সকল ঘটনাবলীর স্রষ্টা।

আবার এটাও পরিষ্কার যে কেন তিনি যখন ‘হও’ বলেন, তা হয়ে যায়। কেননা সকল ঘটনা তার সামনে ঘটে গেছে। তিনি টাইম ফ্রেমের বাইরে। তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী যে কোন একটি টাইম ও ঘটনা ফ্রেমে অস্তিত্বশীল হতে পারে। (আল্লাহর এই ‘হও’ বলাটা নি:সন্দেহে মানুষের হও বলার মত নয়) আবার আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা যেহেতু কোন কিছু দিয়েই সীমাবদ্ধ নন, সুতরাং তিনি যা সৃষ্টি করেন তা স্বভাবতই তাঁর মুখাপেক্ষী হয়েই জন্মায়। সবকিছুই স্বভাবজাত ভাবেই তার প্রভুর পবিত্রতা ঘোষণা দিতে থাকে। (অর্থাৎ সৃষ্টির সীমাবদ্ধতাই প্রকাশ করতে থাকে যে স্রষ্টা অসীম)

সুবহানআল্লাহ। আল্লাহ যতটুকু জ্ঞান আমাদের দিয়েছেন তার বাইরে আমাদের কিছুই জানা নাই। আল্লাহই সবকিছু ভাল জানেন।

“আল্লাহ এমন এক চিরঞ্জীব ও চিরন্তন সত্তা যিনি সমগ্র বিশ্ব-জাহানের দায়িত্বভার বহন করছেন, তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই ৷ তিনি ঘুমান না এবং তন্দ্রাও তাঁকে স্পর্শ করে না ৷ পৃথিবী ও আকাশে যা কিছু মানুষের সামনে আছে তা তিনি জানেন এবং যা কিছু তাদের অগোচরে আছে সে সম্পর্কে তিনি অবগত ৷ তিনি নিজে যে জিনিসের জ্ঞান মানুষকে দিতে চান সেটুকু ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ব করতে পারে না ৷ তাঁর কর্তৃত্ব আকাশ ও পৃথিবী ব্যাপী ৷ এগুলোর রক্ষণাবেক্ষন তাঁকে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত করে না ৷ মূলত তিনিই এক মহান ও শ্রেষ্ঠ সত্তা ৷” (সুরা বাকারা: আয়াত ২৫৫)



Reference reading:

1. Matter: Other name for Illusion by Harun Yahya

2. Timelessness and reality of fate by Harun Yahya

3. Tafhim Ebook

চিন্তার খোরাক (দুই)


কখনও কি চিন্তা করেছেন আপনাকে যদি মরুভূমিতে খাবার এবং পানি ছাড়া ছেড়ে দেয়া হয় আপনার কি অবস্থা হবে? পানি ও খাবার ছাড়া আপনি ৩৬ ঘন্টার মুখে মৃত্যুমুখে পতিত হবেন। অথচ একটি উট একই পরিস্থিতিতে বাঁচতে পারে ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত। আবার ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বাঁচতে পারে ৮ দিন।  কিন্তু কিভাবে?

হ্যা, এই উটেই আছে আমাদের জন্য চিন্তার খোরাক। উটের পিছনে যে কুজটি দেখতে পাচ্ছেন করুণাময় আল্লাহ সেটিকে দিয়েছেন উটের প্রয়োজন বিবেচনায় রেখেই। কুজের মধ্যে সঞ্চিত থাকে চর্বি। যা উটের খাদ্যের ভাণ্ডার হিসেবে কাজ করে। কিন্তু প্রশ্ন হল এই চর্বি যদি সাড়া শরীরে ছড়িয়ে থাকত তাহলে অসুবিধে কি ছিল? উত্তর, চর্বির তাপপ্রতিরোধক বৈশিষ্ট্যের কারণে, চর্বি যদি উটের পুরো শরীর জুড়ে থাকত, মরুভূমির প্রচণ্ড গরম আবহাওয়ায় উটের অভ্যন্তরে উৎপন্ন তাপ উটের ভিতরে আটকা পড়ত এবং উটটি মারা পড়ত। অন্যদিকে এই কারণেই কিন্তু তিমির শরীর আবার চর্বি দিয়েই ঘেরা। যাতে সমুদ্রের শীতল তাপ তিমির ভিতরের মেটাবলিক প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিতে না পারে।

আপনি কি জানেন একজন মানুষ ঘন্টায় সর্বচ্চো কত লিটার পানি পান করতে পারে? খুব বেশী ঘাম হলেও ঘন্টায় এক থেকে দেড় লিটারের বেশী পানি খাওয়ার সুযোগ নেই। কারণ হঠাৎ বেশী পানি খেলে রক্তে লবনের ঘনত্ব কমে যায়। ফলে রক্ত থেকে বিভিন্ন কোষে পানি ঢুকে কোষ গুলো ফুলে যেতে থাকে। এভাবে হঠাৎ পানি খেলে লোহিত রক্ত কণিকায় পানি ঢুকে রক্তকণিকাগুলো ভেঙ্গে যাবে আবার মস্তিষ্কে অতিরিক্ত পানি (cerebral oedema) জমলে একজন মানুষ মারাও যেতে পারে।

শুনলে অবাক হবেন, একটি ৬০০ কেজি উট মাত্র ৩ মিনিটে ২০০ লিটার পানি গিলে ফেলতে পারে। এ্যাঁ, তাহলেতো উটটির রক্তে অতিরিক্ত পানি ঢুকে লোহিত রক্ত কণিকাগুলো ভাঙ্গন সৃষ্টি করার কথা? না তা কিন্তু হয় না। কারণ মহান আল্লাহ উটকে দিয়েছেন পানিশূণ্যতা সহ্য করার প্রচণ্ড ক্ষমতা। মানুষ যেখানে পানি কমে মাত্র ১০ শতাংশ ওজন হ্রাস সহ্য করতে পারে, সেখানে উট পারে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত। ফলে এত দ্রুত পানি খেলেও পর্যাপ্ত রিহাইড্রেশন হয়ে যায়। তদুপরি  উটের লোহিত কণাগুলো আমাদের শরীরের ন্যায় গোলাকার নয়, ডিম্বাকৃতির (Oval); ফলে হঠাৎ পানি বেড়ে গেলেও লোহিত কোষগুলোর সেল মেমব্রেন ভেঙ্গে যায় না। আবার এই ওভ্যাল আকৃতির কারনে পানিশূণ্য অবস্থায় কোষগুলো অপেক্ষাকৃত চিকন জালিকা দিয়ে সহজে চলাচল করে অক্সিজেন সরবরাহ অব্যাহত রাখতে পারে।

মরুভূমির খরতাপে পানি পাওয়া বড়ই দুস্কর। তাই উটকে দেয়া হয়েছে পানি ধরে রাখার অপূর্ব ক্ষমতা। উটের শ্বাসনালি দিয়ে যে পানি জলীয় বাস্প হয়ে বের হয়ে যায়, এর নাসারন্ধ্রের অপেক্ষাকৃতি পুরু মিউকাস মেমব্রেন তার প্রায় ৬৬ শতাংশ ধরে রাখতে পারে। এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য। এছাড়াও পানিশূন্য অবস্থায় উট প্রায় ৭৬ শতাংশ প্রস্রাব কমিয়ে দিতে পারে। এমনকি পায়খানার সাথে নি:সৃত পানি কমিয়ে দিতে পারে প্রায় ৫০ শতাংশ।

উটের মধ্যে যদি এই বৈশিষ্ট্যগুলো একসাথে না থাকত তাহলে কি উটের পক্ষে এই প্রখর রোদে বেঁচে থাকা সম্ভব হত? কখনই না। তাহলে এই উট কি একা একা ধাপে ধাপে তৈরী হয়েছে? উট কি মরুভূমির তাপমাত্রা, অধিক তাপমাত্রায় পানির প্রয়োজনীয়তা, পানির ধরে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় শারীরিক পরিবর্তনের ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি ও মলিক্যুলার বায়োলজি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নিয়েছিল?  

কতই না নিঁখুত করুনাময় স্রষ্টার সৃষ্টি পরিকল্পনা। নিশ্চয়ই, সকল প্রশংসা তাঁর।

এজন্যই কি আল্লাহ আমাদের কাছে প্রশ্ন রেখেছেন-

“তাহলে কি এরা উটগুলো দেখছে না, কিভাবে তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে ?”
(সূরা গাশিয়া, সুরা:৮৮; আয়াত:১৭)



সহায়ক পাঠ:

১) Harun Yahya, For man of understanding, page: 41-45

২) http://en.wikipedia.org/wiki/Camel#Evolution

৩) http://discovermagazine.com/2009/jan/05-20-things-you-didnt-know-about-fat#.UWRJBZNTAXs

৪) http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/12053855

৫) http://books.google.com/books?id=g3CbqZtaF4oC&lpg=PP1&pg=PA96#v=onepage&q&f=false

বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া ও স্রষ্টার পরিচয়


যে কোন বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করে চলে। পর্যবেক্ষন, প্রশ্নকরণ, হাইপোথিসিস, পরীক্ষানিরীক্ষা, অবশেষে উপসংহার (যে হাইপোথিসিসটি কি ভুল না কি ঠিক?); ঠিক হলে তা ‘রুল’ এর মর্যাদা পাবে।

এখন, অবজারভেশন হল পৃথিবীতে অসংখ্য জীবিত স্বত্ত্বা বিরাজমান। প্রশ্ন হল এগুলো কোথা হতে কিভাবে এল? হাইপোথিসিস পর্যায়ে এসেই অবজারভারদের দুটো ভাগ। এক ভাগের মতে প্রথম কোষ বা ‘ইউনিভার্সাল কমন এনসেস্টর’ এসেছে অজৈবজনন (Abiogenesis) প্রক্রিয়ায় এবং অন্যান্য প্রানী এসেছে ডারউইনবাদী প্রক্রিয়ায়। আরেকভাগের মতে প্রত্যেকটি প্রানীই পৃথক ভাবে সৃজিত হয়েছে একজন সর্বজ্ঞ স্রষ্টা দ্বারা।

এবার হাইপোথিসিস গুলো পরীক্ষা করে প্রমাণ করার পালা। এই পর্যায়ে এসেই বিপত্তি। বিবর্তনবাদীরা দেখাতে সক্ষম নন কিভাবে বিবর্তনের মধ্য দিয়ে এক প্রজাতি থেকে আরেক প্রজাতি এসেছে। তারা সর্বচ্চো যেটা দেখাতে পারেন একটি প্রজাতি কিভাবে আর্টিফিসিয়াল সিলেকশনের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটাতে পারে। কিন্তু এতে একটি প্রজাতি আরেকটিতে পরিবর্তন হয় না। মাইক্রোইভোলিউশনের যে উদাহরণ দেন সেখানেও কোন প্রজাতি পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার বা করে ফেলার উদাহরণ নেই। এ পর্যায়ে এসে তারা তাই বিভিন্ন কল্পনার আশ্রয় নেয়া শুরু করেন। একটি হাইপোথিসিসকে ডিফেন্ড করেন আরেকটি হাইপোথিসিস দিয়ে। এভাবে কল্পনা সমাহার নিয়ে খুলে ফেলেন আলাদা ডিসিপ্লিন।

অন্য দিকে যারা বলছেন স্রষ্টা সৃষ্টি করেছেন তাদের পক্ষেও এটা এক্সপেরিমেন্টালী দেখানো সম্ভব নয়। তবে সম্ভব হল ‘ইনডাইরেক্ট ইনফারেন্স’ টানা। ঠিক যেমনি একটি ডিজাইন দেখলে একজন ডিজাইনারের হাত আমরা সাথে সাথেই বুঝে নেই, তেমনি স্রষ্টাকে চিনতে সৃষ্টি জগতের ডিজাইনগুলো  দেখে নেয়া এবং দেখিয়ে দেয়াই এদের জন্য যথেষ্ঠ।

এখন এ পর্যায়ে বিবর্তনবাদীদের তাদের তত্ত্ব প্রমাণ করতে হলে অবশ্যই দেখাতে হবে যে কোন ডিজাইন দূর্ঘটনা ক্রমে তৈরী হয় এবং ডারউইনবাদী প্রক্রিয়ায় একটি ডিজাইন থেকে আরেকটি ডিজাইন একা একা দূর্ঘটনার মধ্য দিয়ে আনগাইডেড প্রক্রিয়ায় (Randomly) আবির্ভূত হয়।  যেহেতু জীবের ফিজিওলজি থেকে শুরু করে মলিকিউলার বায়োলজি পর্যন্ত অনেক কিছুই এখন জানার সুযোগ হয়েছে, সেহেতু কিভাবে একা একাই পরিবর্তন হতে পারে সেগুলো প্রয়োজনীয় ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, গণিত দিয়ে ব্যাখ্যা করার দায়িত্ব তাদের।

অর্থাৎ এ পর্যায়ে এসে দেখা যায়, যে হাইপোথিসিস গুলো দাড় করানো হল, ওগুলো নিয়ে ডারউইনবাদী ও ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনবাদীদের আলোচনা ও তর্কবিতর্ক চলে তত্ত্বগত পর্যায়ে। আর যে প্রশ্নগুলো দাড় করানো হয়েছে সেগুলো হল ‘দর্শনগত’ পর্যায়ের।

যেখানে ১৫০ অ্যামাইনো এসিডের একটি মাঝারি সাইজের প্রোটিন আসার বিষয়টি ডারউইনবাদীদের পক্ষে ব্যাখ্যা করা অসম্ভব, সেখানে হাজার হাজার প্রোটিন, লিপিড, কার্বহাইড্রেট, নিউক্লিউটাইড এবং সর্বপোরি নার্ভাস সিস্টেমে ইনস্টলকৃত প্রোগ্রামকে ব্যাখ্যা করার কথা বললে যে তাদের ‘ডেলিরিয়াম’ শুরু হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক তা তাদের লেখা ও মন্তব্যেই বুঝা যায়।

যাই হোক, এ আলোচনায় দ্বিতীয়স্বাভাবিক তা তাদের লেখা ও মন্তব্যেই বুঝা যায়।

যাই হোক, এ আলোচনায় দ্বিতীয় দল যদিও ‘একজন বুদ্ধিমান স্বত্ত্বার’ প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে পারে, একজন ‘অদৃশ্য’ সর্বজ্ঞ স্বত্ত্বায় বিশ্বাস স্থাপন করতে সাহায্য করতে  পারে, কিন্তু উক্ত স্বত্ত্বার পরিচয় পুরোপুরি তুলে ধরতে পারে না।  তাই, এই পরিচয়টা তুলে ধরা জন্যই এগিয়ে এসেছে মহাগ্রন্থ ‘আল কোরআন’; এজন্যই কি আল্লাহ তাআলা বলেন:

“আলিফ লাম মীম ৷ এটি আল্লাহর কিতাব, এর মধ্যে কোন সন্দেহ নেই ৷ এটি হিদায়াত সেই ‘মুত্তাকী’দের জন্য, যারা ‘অদৃশ্যে বিশ্বাস’ করে…” (সূরা বাকারা: ১-৩)

প্রশ্ন হল উপসংহার কি? জ্বি, এই চূড়ান্ত প্রশ্নগুলোর উপসংহার টানা হবে আখিরাতে। দুনিয়ায় যদি এর প্রমাণ দিয়ে দেয়া হত তাহলেতো ‘অদৃশ্যে বিশ্বাসের’ প্রয়োজনীয়তাই থাকত না এবং বলা হত না:

“তিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন যেন তিনি পরীক্ষা করে নিতে পারেন কাজের দিক দিয়ে তোমাদের মধ্যে কে উত্তম।” (সূরা মূলক: ২)

Sunday, November 15, 2015

The_point_of_conflict_and_the_truth


 আমরা জানি মহাবিশ্বের সৃষ্টিতে বস্তুবাদী মতবাদে
বিশ্বাসী নাস্তিক পাওয়া এখন বেশ কঠিন কারন
হাজার যুক্তি বস্তুবাদ মতবাদকে উড়িয়ে দেয়; যেমন
অনাদিকাল থেকে বিশ্ব যদি থাকতো তবে
তেজস্ক্রিয় পদার্থ থাকতো না, হাইড্রোজেন এর
কোন নক্ষত্র থাকা সম্ভব হত না, থাকতো না
হিলিয়াম জ্বালানী এর কোন নক্ষত্র ... যা হোক...
যুক্তি মানে এমন নাস্তিকদের যেহেতু বিগ-ব্যাঙ
থিওরি মেনে নেয়া ছাড়া উপায় থাকে না তাই
তারা বলে যে বিগ ব্যাঙের পরে কোন
পরিকল্পনাকারীর হাত ছাড়াই আপনাআপনি
মহাবিশ্ব বিন্যস্ত ও গঠিত হয়েছে। এবার আসুন- আমারা আমাদের দৃঢ় যুক্তি না দিয়ে আজ
বরং কিছু বিখ্যাত বিজ্ঞানী ও দার্শনিক (যাদের
মদ্ধে নাস্তিকও আছেন) তাদের পর্যবেক্ষণের
ফালফালের পরে তাদের মতামত জেনে নেই।
খ্যাতনামা নাস্তিক দার্শনিক Anthony Flew
এভাবে বলেনঃ কাল্পনিক ভাবে স্বীকার করা মনের
জন্য ভাল, আমি অতঃপর স্বীকার করতে শুরু করবো যে, স্থিতাবস্থায় বিশ্বাসী নাস্তিকেরা সমসাময়িক সৃষ্টিতত্ত্ব বিষয়ক ধ্যান ধারণায় বিব্রত বোধ করে. এতে মনেহয় সৃষ্টিতত্ত্ববৗদরা বৈজ্ঞানিক সত্য গ্রহনে সম্মত হয়েছে যে বিশ্বের একটি শুরু
ছিল.
তার বক্তব্য সরাসরিঃ Notoriously
confession isgood for the soul. I will therefore
begin by confessing that the stratonician
atheist has to beembarrassed by the
contemporary cosmologicalconsensus for it
seems that the cosmologists are providing a
scientific proof that universe had a beginning.
(Henre mergenue, Ray Abraham Varghese,
cosmos, Bios, Theos 1992. P.241)
বিজ্ঞানী Hugh Ross বলেনঃ বিশ্ব সৃষ্টির সাথে
সাথে যদি সময়ের শুরু হয় তাহলে মহাকাশতত্ত্ববিদ
দের মতে বিশ্ব সৃষ্টির কারন এমন এক সত্ত্বা
যিনি সময়ে অবস্থান করে সব কিছু পরিচালিত
করেন, উল্লেখ করতে হয় যে; তিনি বিশ্বের সময়ের
পরিধি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত এক সতন্ত্র সত্ত্বা...
তার বক্তব্য সরাসরি হলঃ If times beginning is
concurrent with the beginning with the
beginning of the universe, as the space
theorem says then the cause of the universe
must be some entity operation in a time
dimension completely independent of and
preexistent to time dimension of the cosmos .
this conclusion tell us that god is not the
universe itself, not is god contained in the
universe ( Creator and the cosmos.1993.
p.112)
Stephen Hawking তার ব্রিফ হিস্টরি অফ টাইম
গ্রন্থে বলেনঃ বিশ্বকে হিসাবনিকাশ ও
ভারসাম্যের উপর সৃষ্টি করা হয়েছে এবং
বিশ্ব এমনভাবে সমন্বিত যা কেউ তা কল্পনা করতে
পারেনা। বিশ্বের প্রসারণের অনুপাত প্রসঙ্গে
তিনি বলেন, বিগ ব্যাঙের এক সেকেন্ড পর
প্রসারণের অনুপাত যদি মিলিয়ন মিলিয়ন অংশের
একাংশও কম হত তাহলে বিশ্ব বর্তমান অবস্থায়
আসার পূর্বেই আবার ধ্বংস হয়ে যেত.
তিনি বইয়ে যেভাবে লেখা আছে তা হলঃ If the rate of
expansion one second after the big bang had
been smaller by even one part in a hundred
thousand million , the universe would have re-
collapsed before it ever reached its present
size. (Stephen Hawking , A Brief History Of
Time. 1988. P.181)
Paul Davies তার God and the new Physics বইয়ে
লিখেছেনঃ It is hard to resist the impression
that the present structure of the universe,
apparently so sensitive to minor alternation in
the numbers, has been rather carefully thought
out . The seemingly miraculous concurrence of
numerical values that nature has assigned to
her fundamental constants must remain the
most compelling evidence for an element of
cosmic design. (God and the new Physics.1983.
p.189)
এর দ্বারা বুঝা যায় অবশ্যই এক অতি
বুদ্ধিমান সত্ত্বা রায়েছেন মহাবিশ্বের সৃষ্টি ও
তার সুনিপুণ বিস্তারের পেছনে

Friday, November 13, 2015

হিন্দী সিরিয়াল।

স্টার জলসা, জি বাংলা, সনি, এমন সব চ্যানেল গুলোতে যেসব টিভি সিরিয়াল গুলো দেখানো হয় তাতে করে বিনোদনের চাইতে সমাজ, সংসার, আর পরিবারের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টির উপাদানই বেশি । আর এক শ্রেণীর দর্শক রয়েছে যারা এসব সিরিয়াল এতই সিরিয়াসলি দেখেন যে তাদের আচার আচরন, কথা বার্তা, চিন্তা চেতনা, সাজ পোশাক সবই সিরিয়ালের দেখানো মানুষ গুলোর মতোই হয়ে যায় । কোনো ভাবেই সহজ কিছুকে সহজ করে নিতে পারে না এরা । এক সময় গিয়ে সবার দোষ ধরে বেড়ানো, চোগল খুরি, আর গীবত করা শুরু করে দেয় নিজেদের অজান্তেই । স্বামী স্ত্রী, বাবা মা, ভাই বোন, বউ শাশুড়ি, প্রেমিক প্রেমিকা সব কিছুর মধ্যেই গলদ, সন্দেহ, আর কুটনামির চরম স্তর দেখে দেখে নিজেদের পরিবার আর সম্পর্কের ভেতর ফাটল ধরানোদের সংখ্যা কম নয়। আবার রান্না ঘরে খাবার পুড়িয়ে ফেলানোর সংখ্যাও কম নয় । তবুও কে কাকে শুধরাবে । নামাজ পড়ে তসবিহ গুনতে গুনতে স্টার জলসায় হারিয়ে যাওয়াদের সংখ্যাও ফেলে দেয়ার মতো নয় বলে শেষ করা যাবে না; এমন অসংখ্য বিশেষনই এদের পরিচয় করিয়ে দেয়া যায় । সিরিয়াল কে ঘিরেই এদের শত ব্যস্ততা। তাই হয়তো এখন স্ত্রী অথবা মা দের ঊল কিনে স্বামীর জন্য বা সন্তানের জন্য সোয়েটার বানানোর দৃশ্য চোখে পড়ে না, কিংবা ভালোবাসার উপহার হয়ে সুই সুতোয় বোনা "মনে রেখো আমায়" রুমাল টাও আজ চোখে পড়ে না । এভাবে সিরিয়ালি অনেক কিছুই চোখে পড়বে না আস্তে আস্তে । সিরিয়াসলি একদিন এই সব সিরিয়ালের পর্দা ঢেকে দেবে চোখ আমাদের । মুখস্থ হয়ে যাবে জীবন মানেই জি-বাংলা। পূর্ণিমা চাঁদ ঝলসানো রুটি হয়ে গেলেও স্টার জলসায় ঝলসে যেতে আমাদের লজ্জা হবে না কোনো দিনও । - - -
- কাম হইব না ভায়া। কারন যাদেরকেকে উদ্দেশ্য করে বলছি এই চ্যানেলগগুলো বন্ধ করতে তাদের বউ বাচ্চারাই এই চ্যানেল দেখে। আর তারা যদি এই চ্যানেল দেখেতে না পায় আপনার কি মনে হয় তাদের সংসার টিকবে?

★একটি হিন্দী সিরিয়ালের স্ক্রিপ্ট!
কাহিনী সংক্ষেপ : নায়িকা তার বয়ফ্রেন্ডের মেইল চেক করবে।
পর্ব ১
কামিনী ঘুম থেকে উঠেই ওয়াশরুমে ঢুকবে। ক্যামেরা ওয়াশরুমের দরজায় আপ ডাউন করবে চারবার।ব্যাকগ্রাউন্ডে ধুম ধুম সাউন্ড হবে। এরপর ক্যামেরা পুরো ঘর দেখাবে। কম্পিউটার দেখানোর সময় তীব্র মিউজিক বেজে উঠবে!
কামিনী ওয়াশরুম থেকে বেরুবে,ক্যামেরা পুরো ঘর ঘুরিয়ে নায়িকাকে চারবার দেখাবে। এরপর সে ড্রেসিং টেবিলে বসে সাজুগুজু করবে। ক্যামেরা একবার কম্পিউটার, একবার ড্রেসিং টেবিল তীব্র মিউজিকের সাথে ফোকাস করবে চারবার।
(পরের পর্বের ট্রেলার যাবে)
পর্ব ২
(আগের পর্বের হাইলাইটস দেখানো হবে)
কামিনীর ঠোঁটের লাল লিপিষ্টিক থেকে এ পর্ব শুরু হবে। এরপর ঝমকালো শাড়ী দেখান হবে।গলায় গহনা চিকচিক করবে এনার্জী বাল্বের আলোয়।ড্রেসিং টেবিল থেকে উঠে কামিনীর চোখ যাবে কম্পিউটারের দিকে। ক্যামেরা একবার কম্পিউটার একবার কামিনীর চোখ দেখাবে,এভাবে ৩ বার।ব্যাকগ্রাউন্ডে শব্দ হবে।ধিবধিবধিব (যেন জীবন মৃত্যূর সন্ধীক্ষনে কেউ)
হঠাৎ কামিনীর মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠবে। মোবাইল ফোকাস করা হবে দু মিনিট। স্লো মোশনে দৌড়ে গিয়ে সে ফোনটা ধরবে। কি কথা বলছে দর্শক শুনবে না। কথা বলার সময় এমন মিউজিক দিতে হবে যেন দর্শক ভাবে স্বয়ং ওসামা বিন লাদেন ফোন দিয়েছে ওপার থেকে। (ওপার মানে ওপার বাংলা না আবার)
(আগামি পর্বের ট্রেলার যাবে)
পর্ব ৩
(আগের পর্বের হাইলাইটস দেখান হবে)
কামিনী ধীরে ধীরে এগিয়ে যাবে কম্পিউটারের দিকে। ধীরে ধীরে!কামিনী চেয়ারে বসে ঘরের চারিদিকে দেখবে। ক্যামেরায় পুরো ঘর দেখানো হবে।পিসির ষ্টার্ট বাটনটি কামিনী চাপ দিবে। ধুম করে শব্দ হবে। না পিসি ব্লার্ষ্ট করেনি এটা ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক। ধীরে ধীরে ওপেন হতে যাচ্ছে কম্পিউটার।ব্যাকগ্রাউন্ডে কোন মিউজিক থাকবে না। পিনপতন নীরবতা। তীব্র সাউন্ডে উইন্ডোজের ষ্টার্টিং টোন বেজে উঠবে। ক্যামেরা ভীত কামিনী চারবার দেখাবে।
মডেম কানেক্ট দিয়ে কামিনী। ধুম করে শব্দ হয়ে ডিসকানেক্ট হয়ে যাবে। কামিনী চেষ্টা করে যাবে। ততক্ষন রুমে ঘুরতে থাকা ফ্যান দেখান হবে ক্যামেরায়। কামিনী চেষ্টা করতেই থাকবে,করতেই থাকবে। আবার ধুপ করে বিকট শব্দ হবে। নাহ ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক না,ট্রান্সফরর্মার ব্লাষ্ট করেছে!
(পরের পর্বের ট্রেলার দেখানো হবে)
পর্ব ৪
(আগের পর্বের হাইলাইটস দেখান হবে)
আবার ধুম করে সাউন্ড,বিদ্যূৎ আসছে। গোৎগোৎ করে ফ্যান চলছে। ক্যামেরা রোলিং করে সে ফ্যান দেখানো হচ্ছে। সাথে সাইসাই শব্দ। এবার ক্যামেরায় কামিনীর থুতুনীতে চিকচিক করা ঘাম দেখা যাবে।জুম করে ঘাম বড় হচ্ছে বড় হচ্ছে এত্ত এত্ত বড় করে হুট করে জুম আউট করে ঘাম উদাও। ক্যামেরা আবার মনিটরের দিকে।অন্ধকার মনিটর,ব্যাকগ্রাউডেন্ড ধিবধিব শব্দ,হঠাৎ হ্যাঁ হঠাৎ মনিটরে আলো জ্বলে উঠবে। কামিনীর চোখে তীব্র কনফিউজড,সে মডেম কানেকশন দিয়ে জিমেইল লগইন করবে। কিন্তু নেট স্লো.....আবার ঢিবঢিব ঢিব। ইয়েস কামিনী ইনবক্সে ঢুকবে। ঢুকেই একটা হাসি দিবে। তার বয়ফ্রেন্ড মেইল করেছে "হ্যালো বেইবী গুড মর্নিং"
শেষ- The end.


★বর্তমান বিশ্বে গড় আয়ু সবচে বেশী হলো হিন্দী সিরিয়ালের নায়ক নায়িকাদের। কখনো কখনো তারা মৃতূঞ্জয়ী। তারা এমনিতে মরে না,যদি মরে তবে মরে গিয়ে ফিরে আসে। ছেলেরা মরে গিয়ে ফিরে আসে খোঁচা খোঁচা দাড়ি নিয়ে,মেয়েরা ফিরে আসে ঠোঁটে লাল রং লাগিয়ে। ছেলেরা ফিরে এসে অন্যের বউকে ভাগিয়ে নিয়ে যায়। মেয়েরা ফিরে এসে অন্যের সংসার ভেঙ্গে দেয়।


★ নেপাল পারে আমরা পারি না কেন? ‘
তোমরা ভারতীয় টিভির সিরিয়ালমুক্ত একটা মা দাও/আমি তোমাদের ঝগড়ামুক্ত একটা পরিবার দেব’ এটা জনৈক ব্যক্তির ফেসবুক স্ট্যাটাস। ভারতীয় টিভির সিরিয়াল মানেই পারিবারিক বিরোধ, ঝগড়া-ঝাটি, পরকীয়া, লিভ টুগেদার, চালাকি, অপটতা, মিথ্যাবাদিতা, অশ্লীলতা, হিন্দুত্ববাদী, শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি, মন্দিরের ঘণ্টা, ঢোলবাদ্য আর অনৈতিকতা। এসব চ্যানেল সিরিয়াল মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। ‘দেখার দেখা/শেখার শেখা’ প্রবাদের মতো আমাদের দেশে পারিবারিক বিরোধ বাড়ছে। নৈতিক অবক্ষয়, পারিবারিক ও সামাজিক অবক্ষয় শুরু হয়ে গেছে। তিনটি ভারতীয় চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধের দাবিতে হাইকোর্টে রিট হওয়ায় ‘কেন স্টার জলসা, স্টার প্লাস, জি বাংলা সম্প্রচার বন্ধ করা হবে না’ কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছে আদালত বহুদিন আগে। তারপরও বাংলাদেশের নীতি-নির্ধারকরা পারেনি বিজাতীয় সংস্কৃতির ধারক-বাহক ভারতীয় টিভি সম্প্রচার বন্ধ করতে। কিন্তু নেপাল দেখিয়ে দিয়েছে ভারতকে কীভাবে শিক্ষা দিতে হয়। ভারত সীমান্তে পণ্যবাহী ট্রাক আটকে রাখার কারণেই নেপাল সব ভারতীয় চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে। সেখানে সেøাগান উঠেছে ‘নো মোড় ভারতীয় চ্যানেল’।ছোট্ট দেশ নেপাল পারে; আমরা পারিনা কেন? ভারতীয় সবকটি টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচার নিজেদের দেশে বন্ধ করে দিয়েছে নেপালের ক্যাবল টেলিভিশন অপারেটররা। ভারত সীমান্তে জ্বালানিসহ অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বোঝাই ট্রাক আটকে রাখার প্রতিবাদে মঙ্গলবার তারা এই সিদ্ধান্ত নেয়। হিমালয়ের পাদদেশে ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত নেপাল প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে ভারতের ওপর নির্ভরশীল। তারপরও তারা ‘ভারতীয় টিভি আর নয়’ এমন কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশ হিসেবে ভারত ধর্ম নিরপেক্ষ দাবি করলেও মূলত হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র। ক্ষমতাসীন আর এসএসের ভাবশীর্ষ বিজেপি এখন ক্ষমতায়। হিন্দুত্ববাদ প্রচারই তাদের নীতি। দিল্লির সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্যে সেটা পরিষ্কার। কিন্তু নেপাল হিন্দুত্ববাদীতে আটকে থাকতে চায়নি। সম্প্রতি হিন্দু রাষ্ট্রের পরিবর্তে নেপাল নিজেদের ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র ঘোষণা দিয়ে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করেছে। বিবিসির খবরে প্রকাশ ‘এরপরই নেপালের এই সংবিধানের সমালোচনায় সোচ্চার হয়ে উঠে ভারত’। নেপাল সরকার ভারতের এ সমালোচনার কড়া জবাব দিয়েছে গত সপ্তাহে। এর প্রতিক্রিয়ায়ই দুই দেশের সীমান্তে বিএসএফ নেপালগামী জ্বালানিসহ পণ্যবাহী ট্রাক আটকে দিচ্ছে। সীমান্তে পণ্যবাহী ট্রাক আটকানোর ঘটনায় বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে নেপালের মানুষকে। প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার নেপালের ক্যাবল অপারেটররা ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার নেপালে বন্ধ করে দেয়। ভারতীয় সিনেমার প্রদর্শনীও বন্ধ করে দিয়েছে নেপালের কয়েকটি সিনেমা হল কর্তৃপক্ষ। বিবিসির খবরে প্রকাশ নেপাল ক্যাবল টিভি অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান সুধীর পরাজুলি জানিয়েছেন, ‘তারা মনে করেন নেপালের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ করছে ভারত’। এ জন্য তারা ৪২টি ভারতীয় স্যাটেলাইট চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে। অবশ্য ভারত এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি নিরাপত্তার কারণে সীমান্তে ট্রাক আটকানো হয়েছে।সম্প্রতি ভারতের সেনাবাহিনী সেভেন সিস্টার্স এ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের সময় মায়ানমার সীমান্ত অতিক্রম করে। এ খবর প্রচার হওয়ায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে মায়ানমার সরকার। অথচ হরহামেশাই সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা (বিএসএফ) বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে এবং আমাদের লোকজনকে হত্যা করছে। সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি হত্যা কার্যত নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়ে গেছে। তারপরও আমরা কোনো শব্দ করছি না। শুধু তাই নয় নেপালের সংবিধান ইস্যুতে ভারতের প্রতিক্রিয়া সে দেশের সরকার ও সাধারণ মানুষ ‘অভ্যন্তরীণ রাজনীতির হস্তক্ষেপের সামিল’ মনে করে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং ভারতীয় ৪২টি চ্যানেল সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে। আর আমরা? বাংলাদেশের রাজনীতি যেন নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে দিল্লির সাউথ ব্লক থেকেই। ক্ষমতা ধরে রাখতে এবং ক্ষমতায় যেতে আমাদের নেতানেত্রীরা যেন দিল্লিকে তোয়াজের প্রতিযোগিতা করেন। দিল্লির শাসকদের অনুকম্পা পেতে আমরা কতই না কসরত করছি! বড় দলগুলোর নেতা-নেত্রীদের আচরণ এবং কথাবার্তা এমন যে ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর দিল্লির আশীর্বাদ অপরিহার্য। দেশের জনগণের ভোট নয়, বরং ক্ষমতায় কোন দল যাবে বা থাকবে তা নির্ধারণ করে দেয় দিল্লির সাউথ ব্লক।’ অবশ্য ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তেমনটিই ঘটেছে বলে মনে করেন দেশের বুদ্ধিজীবী ও ভোটের অধিকার হারানো সাধারণ মানুষ। বিতর্কিত ওই নির্বাচনের আগে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং ঢাকা সফরে এসে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদকে পরামর্শ দেন ‘আওয়ামী লীগ যেভাবে চায় সেভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্বাচন করার’। তিনি বিভিন্ন দলের নেতার সঙ্গে বৈঠক করে দিল্লির বার্তা পৌঁছে দেন। পরবর্তীতে সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদ এই তথ্য ফাঁস করে দেয়ায় মিডিয়ায় তোলপাড় হয়। বাংলাদেশে রাজনীতির নামে যে অপরাজনীতি চলছে; নীতি নৈতিকতার বদলে যে অনৈতিকতার চর্চাই বেশি হচ্ছে সেটা ওপেন সিক্রেট। ভারতের ক্ষমতাসীন দলের সভাপতি অমিতশাকে ফোন করার ‘সত্যমিথ্যা’ নিয়ে আওয়ামী লীগ আর বিএনপির নেতাদের মধ্যে যে বাহাস হয়েছে তাতে জনগণের কাছে দুই দলের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে যায়। নেতা-নেত্রীদের পরমুখাপেক্ষীতার কারণে ভারতের ওপর নির্ভরশীল হয়েও নেপাল যা পারছে, আমরা তা পারছি না কেন? আমাদের কি দেশপ্রেম, নীতি নৈতিকতা, সাহসের বড়ই অভাব? নাকি আমরা অপরের গলগ্রহ হয়ে তাঁবেদারের মতো বেঁচে থাকতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি? দেশের সকলেই একবাক্যে স্বীকার করছেন ভারতীয় চ্যানেলের বিরূপ প্রভাব পড়ছে আমাদের সমাজে। ওই সব চ্যানেল সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে দিচ্ছে অনৈতিকতা। বিজ্ঞাপন, সংগীত শিক্ষালয়, নাট্যবিদ্যালয়, নাট্যশালা, আর্টস স্কুল, ফ্যাশন-শো, সংগীত-অভিনয়-সুন্দরী প্রতিযোগিতা, পাঠ্যপুস্তক, সাহিত্য, সেমিনার, এনজিও, হাসপাতাল, রূপচর্চা কেন্দ্র, শিক্ষাবৃত্তি, ক্লাব-সমিতি, সাংস্কৃতিক সফর, চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে। পাশাপাশি তাদের টিভি চ্যানেলগুলোতে নিত্যদিন প্রচারিত গল্পবিহীন সিরিয়ালে কপটতা, অনৈতিকতা, পারিবারিক কলহ, কুটিলতা, শিশুদের মিথ্যা বলা, ছলাকলা, চাতুরি শেখানোর কৌশলে ভরপুর। অশ্লীলতা ছাড়াও পারিবারিক কলহ, ভাইয়ে ভাইয়ে বিরোধ, মা-ছেলে বিরোধ, বউ-শাশুড়ির ঝগড়া, বউ-ঝি’র হিংসা-বিদ্বেষ শেখানো-দেখানো নিত্যদিন। অভিনেত্রীদের মেকাপ-গেটআপে অর্ধনগ্ন-অশ্লীলতায় ভরপুর এসব সিরিয়ালের মাধ্যমে হিন্দুদের ধর্মীয় সাংস্কৃতি আমাদের সমাজে ছড়িয়ে দিচ্ছে। ভারতীয় চ্যানেলে নিত্য প্রচারিত শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি, মন্দিরের ঘণ্টা, ঢোলবাদ্য ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ হিসেবে পরিচিত নেপালের মানুষ পছন্দ করছে না। যার কারণে তারা ভারতীয় ৪২টিভি চ্যানেলের সম্প্রদার বন্ধ করে দিয়েছে। অথচ আমরা সে সাহস দেখাতে পারছি না? জাতি হিসেবে নেপাল কি আমাদের চেয়ে বেশি উন্নত? সুচকের প্রতিটি ক্ষেত্রে নেপাল আমাদের (বাংলাদেশ) নিচে। তারপরও ছোট্ট দেশ নেপাল যা পারে আমরা তা কেন পারছি না কেন?

Thursday, November 12, 2015

কাদিয়ানীদের আদি-অন্ত


কাদিয়ানী ধর্মমত : সমস্যা উপলব্ধি ও সমাধানের সহজ পথ

মাওলানা আহমদ মায়মূন

[ইসলামবিরোধী অমুসলিম কাদিয়ানী সম্প্রদায় তাদের পরিচয় দেয় ‘আহমদিয়া মুসলিম জামাত’ বলে। এ মুখোশের আড়ালে তারা তাদের বর্ণচোরা ও প্রতারক চরিত্রতটিকে সক্রিয় রাখে। বাংলাদেশে কাদিয়ানী তৎপরতার ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সম্প্রতি বিভিন্ন পত্রিকায় পাতাজুড়ে বিজ্ঞাপন ছাপিয়ে নিজেদের
কর্মকান্ড ও ‘কৃতিত্বের’ বর্ণনা তুলে ধরেছে। এতে নতুন করে সরলপ্রাণ বহু মুসলিমের প্রতারিত হওয়ার আশংকা তৈরি হচ্ছে। আমরা তাই কাদিয়ানীদের ধর্মবিশ্বাস, মিথ্যাচার ও প্রতারণার প্রকৃত চিত্রটি তুলে ধরতে মাসিক আলকাউসার-এর ২০০৫ সালের মে সংখ্যায় প্রকাশিত এ নিবন্ধটি পুনঃমুদ্রণ করছি।-সম্পাদক]

কাদিয়ানী মতবাদের সাথে ইসলামের বিরোধ কোথায় এবং কেন সচেতন মুসলিম সমাজ কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণার দাবি করে-এ প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে কয়েকটি বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা নেওয়া প্রয়োজন।

ইসলামের মৌলিক আকীদা

আল্লাহ তাআলা মানব জাতির যোগ্যতা ও উপযোগিতা হিসাবে কালক্রমে তাদের বিভিন্ন শরীয়ত দিয়েছেন। আর এর পূর্ণতা ও পরিসমাপ্তি বিধান করেছেন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে। দ্বীনের পূর্ণাঙ্গতা লাভের পর যেহেতু এতে কোনোরূপ সংযোজন ও বিয়োজনের প্রয়োজন বা অবকাশ নেই তাই মানবজাতির জন্য নতুন শরীয়তেরও প্রয়োজন নেই। সুতরাং আল্লাহ তাআলা নবী-রাসূল প্রেরণের ধারা চিরতরের জন্য বন্ধ করে দিয়েছেন। এটা ইসলামের অন্যতম মৌলিক বিশ্বাস। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, (অর্থ) ‘‘আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণতা দান করেছি, আর আমি তোমাদের জন্য আমার নেয়ামতকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছি এবং দ্বীন হিসেবে ইসলামকে তোমাদের জন্য মনোনীত করেছি।’’ (সূরা মায়েদা : ৩) পবিত্র কুরআনে অন্যত্র বলা হয়েছে, (অর্থ) ‘‘মুহাম্মদ তোমাদের মধ্যকার কোনো বয়স্ক পুরুষের পিতা নন, তবে তিনি আল্লাহর রাসূল এবং সর্বশেষ নবী।’’-সূরা আহযাব : ৪০

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অন্যান্য নবীর মুকাবিলায় আমাকে ছয়টি বিষয় দ্বারা বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করা হয়েছে, ১. আমাকে অল্প কথায় বেশি ভাবপ্রকাশের যোগ্যতা দেওয়া হয়েছে, ২. আমাকে গাম্ভীর্যজনিত প্রতাপ-প্রতিপত্তি দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে, ৩. আমার জন্য গণীমতের মাল হালাল করে দেওয়া হয়েছে, ৪. সমগ্র ভূপৃষ্ঠকে আমার জন্য নামায পড়ার উপযোগী জায়গা ও পবিত্রতা অর্জনের উপকরণ হিসেবে স্থির করা হয়েছে, ৫. আমাকে সমগ্র সৃষ্টি জগতের রাসূলরূপে প্রেরণ করা হয়েছে, ৬. আমার দ্বারা নবীদের সিলসিলার পরিসমাপ্তি ঘটানো হয়েছে।’’ (সহীহ মুসলিম, মাসাজিদ, হাদীস : ৫২৩)

অপর এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমার ও নবীদের উদাহরণ এমন একটি প্রাসাদ, যা খুব সুন্দর করে নির্মাণ করা হয়েছে, তবে তাতে একটি ইটের জায়গা খালি রেখে দেওয়া হয়েছে। দর্শকবৃন্দ সে ঘর ঘুরে ফিরে দেখে, আর ঘরটির সুন্দর নির্মাণ সত্ত্বেও সেই একটি ইটের খালি জায়গা দেখে আশ্চর্য বোধ করে (যে, এতে একটি ইটের জায়গা কেন খালি রইল!) আমি সেই একটি ইটের খালি জায়গা পূর্ণ করেছি। আমার দ্বারা সেই প্রসাদের নির্মাণ পরিসমাপ্ত হয়েছে, আর আমার দ্বারা রাসূলদের সিলসিলা পরিসমাপ্ত করা হয়েছে।’’ অপর এক রেওয়ায়াতে বলা হয়েছে, ‘‘আমি হলাম সেই খালি জায়গার পরিপূরক ইটখানি। আর আমি হলাম সর্বশেষ নবী।’’ (সহীহ বুখারী ১/৫০১; সহীহ মুসলিম, ২/২৪৮) অন্য এক হাদীসে বলা হয়েছে, ‘‘বনী ইসরাঈলের নবীগণ তাঁদের কর্মকান্ডে নেতৃত্ব ও দিক-নির্দেশনা দান করতেন। যখন তাদের এক নবী দুনিয়া থেকে বিদায় নিতেন, তাঁর জায়গায় আর একজন নবী অধিষ্ঠিত হতেন। কিন্তু আমার পরে কোনো নবী আসবেন না। তবে আমার পরে খলীফা হবে এবং তারা সংখ্যায় অনেক হবে।’’-সহীহ মুসলিম, ইমারা, হাদীস : ১৮৪২; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৫৮৭

এরূপ অগণিত কুরআনের আয়াত ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত ইসলামের অন্যতম মৌলিক আকীদা এই যে, হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানব জাতির হেদায়াতের জন্য প্রেরিত সর্বশেষ নবী। তাঁর পর আর কোনো নবী প্রেরিত হবেন না।

গোলাম আহমদ কেন নবী নয়?

এ প্রশ্নের সমাধান খুঁজে পাওয়ার জন্য প্রথমত উল্লেখ্য যে, ইসলামের উপরিউক্ত মৌলিক ও অকাট্য আকীদার উপস্থিতিতে কেউ যদি নবী হওয়ার দাবি করে তবে সেটা মুসলিম সমাজের নিকট মিথ্যা বলে সাব্যস্ত হবে এবং তা

আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। শুধু তাই নয়, এরূপ দাবি পোষণকারী ব্যক্তি ইসলামের সর্ববাদী বিশ্বাস মুতাবিক মুসলিমই নয়; বরং সন্দেহাতীতভাবে কাফের। সুতরাং গোলাম আহমদ কাদিয়ানী এরূপ দাবি করার কারণে সম্পূর্ণ মিথ্যাবাদী ও কাফের-এটা স্বতঃসিদ্ধ কথা। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমার উম্মতের মধ্যে ত্রিশজন মিথ্যাবাদীর জন্ম হবে। তাদের প্রত্যেকে নিজেকে নবী বলে দাবি করবে। অথচ আমি হলাম সর্বশেষ নবী, আমার পরে কোনো নবীর আগমন হবে না।’’-আবু দাউদ, ফিতান, পৃ. ৫৮৪; তিরিমিযী, খন্ড ২, পৃ.৪৫

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে এ বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হল যে, হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বশেষ নবী হিসেবে বিশ্বাস করা মুসলমানের ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। যার এ বিশ্বাসে ত্রুটি রয়েছে, তার ঈমান বহাল থাকার কোনো অবকাশ নেই।

দ্বিতীয়ত ধরে নেওয়া যাক যে, যদি আল্লাহ তাআলা মানব জাতির প্রতি নবী প্রেরণের সিলসিলা বন্ধ না করে অব্যহত রাখতেন তবু কুরআন, হাদীস ও পূর্ববর্তী নবীগণের জীবনেতিহাস পর্যালোচনা করলে যে শিক্ষা পাওয়া যায় তাতে গোলাম আহমদ কাদিয়ানী বা তার মত স্বভাব-চরিত্রের কোনো লোক নবী হওয়ার জন্য অযোগ্য প্রমাণিত হয়। এ বিষয়টি সহজে বোধগম্য করার জন্য এখানে চারটি মৌলিক নীতিমালা পেশ করা হচ্ছে। এ নীতিগুলো ‘‘দুয়ে দুয়ে চার’’-এর মত সতত সিদ্ধ ও স্বীকৃত সত্য।

প্রথম মৌলিক নীতিটি এই যে, প্রত্যেক সত্যবাদী নবী তাঁর পূর্ববর্তী সকল নবীর প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রাখেন এবং অন্যদেরও সকল নবীর সম্মান ও মর্যাদার প্রতি যত্নশীল থাকতে শিক্ষা দেন। কেননা, প্রত্যেক নবী হলেন আল্লাহ তাআলার প্রতিনিধি। তাই কোনো মুসলমান কোনো নবী-রাসূলের প্রতি এরূপ কোনো আচরণ করতে পারে না, যা নবীর জন্য অসম্মানজনক ও অমর্যাদাকর। কিন্তু আমরা দেখতে পাই যে, গোলাম আহমদ কাদিয়ানী আল্লাহ তাআলার একজন সত্যবাদী মহান নবী হযরই ঈসা আ. সম্পর্কে অত্যন্ত অশোভনীয় কটূক্তি করেছে। এখানে তার একটি উদাহরণ পেশ করা হচ্ছে। সে তার ‘দাফেউল বালা’ নামক বইতে বলেছে, ‘‘মাসীহের সততা তার সময়কার অন্যান্য সৎ লোকের চেয়ে বেশি বলে প্রমাণিত হয় না; বরং তার চেয়ে ইয়াহইয়া নবীর মর্যাদা এক গুণ বেশি। কেননা, সে মদপান করত না এবং কোনো ব্যভিচারিণী নারী নিজের ব্যভিচার থেকে উপার্জিত অর্থ দ্বারা সুগন্ধি ক্রয় করে তার মাথায় মালিশ করেছে এমন কোনো কথা তার ব্যাপারে শোনা যায় নি। অথবা এমনও জানা যায়নি যে, এরূপ কোনো নারী নিজের হাত বা মাথার চুল দ্বারা তার শরীর স্পর্শ করেছিল অথবা কোনো আনাত্মীয় যুবতী নারী তার সেবা করত।

এ কারণে আল্লাহ তাআলা কুরআনে ইয়াহইয়াকে হাসূর (নারী বিরাগী) বলেছেন। কিন্তু মাসীহের এ নামকরণ করা হয়নি। কেননা, উক্তরূপ ঘটনাবলী এরূপ নামকরণের অন্তরায় ছিল।’’

উপরোক্ত উদ্ধৃতিটুকুতে গোলাম আহমদ কায়িদানী হযরত মাসীহ ইবনে মরিয়ম আ.-এর প্রতি কয়েকটি অপবাদ দিয়েছে। তারমধ্যে একটি হল, তিনি মদ পান করতেন। দ্বিতীয় হল, তিনি ব্যভিচারিণী নারীদের অবৈধ পন্থায় উপার্জিত অর্থ দ্বারা ক্রয়কৃত সুগন্ধি তাদের দ্বারা মাথায় লাগাতেন এবং তাদের হাত ও চুল দ্বারা তার নিজের শরীর স্পর্শ করাতেন। তৃতীয় হল, অনাত্মীয় যুবতী নারীদের সেবা নিতেন।

হযরত ঈসা আ.-এর মত একজন মহান নবীর প্রতি এসব অশ্লীল ও কদর্য অপবাদ আরোপ করার পর সে এ রায়ও দিয়েছে যে, এসব ঘটনার কারণেই আল্লাহ তাআলা তাকে পবিত্র কুরআনে ‘হাসূর’ (নারী বিরাগী) বিশেষণ দ্বারা বিশষায়িত করেননি।

যে কোনো নবীর মর্যাদা তো অনেক উর্দ্ধে, একজন সম্ভ্রান্ত ও ভদ্র মানুষের প্রতি এরূপ অপবাদ আরোপ করা নিশ্চয় তাঁর জন্য অতি অপমানকর। যার মধ্যে অণুপরিমাণও ঈমান আছে, এমন কোনো ব্যক্তি কোনো নবী সম্পর্কে এরূপ অশ্লীল অপবাদ দিতে পারেন না।

কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের লোকেরা বলে থাকে যে, মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী এসব কথা নাকি খৃস্টান পাদ্রীদের জবাবে তাদের উপর চাপ প্রয়োগার্থে লিখেছে। এটা তাদের নিছক মিথ্যা প্রলাপ ও প্রতারণা। কেননা, ‘দাফেউল বালা’ নামক বইটি মুসলমান আলেমদের উদ্দেশ্যে রচিত। যার ইচ্ছা বইটি যাচাই করে দেখতে পারে। এছাড়াও সে ‘যমীমায়ে আঞ্জামে আথম’ নামক বইতে লিখেছে, ‘‘তার (ঈসা আ.এর) খান্দানও ছিল অতি পূত পবিত্র (?)। তার তিনজন দাদী-নানী ছিল ব্যভিচারিণী ও পেশাদার পতিতা। তাদের রক্ত থেকে সে জন্ম লাভ করেছে। হয়ত এটাও খোদা হওয়ার একটি পূর্বশর্ত হবে! পতিতাদের প্রতি তাঁর আকর্ষণ ও দহরম-মহরম সম্ভবত তাঁর উত্তরাধিকারের রক্তের টানেই হয়ে থাকবে। অন্যথা কোনো সৎ পুরুষ একজন যুবতী পতিতাকে এ সুযোগ দিতে পারে না যে, সে নিজের নাপাক হাত তার মাথায় লাগাবে এবং পতিতাবৃত্তি থেকে উপার্জিত অর্থ দ্বারা ক্রয়কৃত অপবিত্র সুগন্ধি তার মাথায় মালিশ করবে, আর নিজের মাথার চুল তার পায়ে ঘষবে। সুধীজন বুঝে নিন, এরূপ লোক কোন চরিত্রের!’’ (যমীমায়ে আঞ্জামে আথম, পৃ. ৭)

উপরে উদ্ধৃত অংশটুকুতেও মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী সেই বক্তব্যই পেশ করেছে, যা সে তার ‘দাফেউল বালা’ নামক বইতে বলেছে। ‘যামীমায়ে আঞ্জামে আথম’ বইটি যদিও খ্রিস্টান পাদ্রীদের জবাবে লেখা বটে, তবে তার পূর্বোক্ত বক্তব্যের সাথে এটাকে সংযুক্ত করলে এটা সুস্পষ্ট হয়ে উঠে যে, এসব বক্তব্য কেবলই কারও মুখ বন্ধ করার জন্য বলা হয়নি; বরং এটা তার মনের কথা। কেননা, সে ‘দাফেউল বালা’র এক জায়গায় বলেছে, ইবনে মরিয়মের আলোচনা ছাড়, গোলাম আহমদ তার চেয়ে উৎকৃষ্ট।’’ (পৃ. ২)

দ্বিতীয় মৌলিক নীতি এই যে, আল্লাহ তাআলার প্রেরিত কোনো নবী নিজের দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মিথ্যার আশ্রয় নিতে পারেন না। তাঁরা সব সময় সত্যের উপর অটল-অবিচল থাকেন। কিন্তু মির্জা গোলম আহমদ কাদিয়ানী এক্ষেত্রে অবলীলাক্রমে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে থাকে। এর অগণিত উদাহরণ রয়েছে। এখানে প্রবন্ধের কলেবরের প্রতি লক্ষ্য করে একটি মাত্র উদাহরণ পেশ করা হচ্ছে। মির্জা গোলাম আহমদ তার ‘আরবাঈন-৩’ নামক বইতে লিখেছে, ‘‘মৌলবী গোলাম দস্তগীর কাসূরী ও মৌলবী ইসমাঈল আলীগড়ী নিজ নিজ বইতে আমার (গোলাম আহমদের) ব্যাপারে চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেছে যে, আমি যদি মিথ্যাবাদী হই, তবে তাদের আগে মারা যাব। তাদের দাবি মতে আমি যেহেতু মিথ্যাবাদী তাই আমি অবশ্যই আগে মারা যাব। তাদের এ বইগুলো প্রকাশিত হওয়ার পর অতি দ্রুত তারা মারা গেছে।’’ (আরবাঈন-৩, পৃ. ১১) উপরে উদ্ধৃত অংশে মরহুম মৌলবী গোলাম দস্তগীর কাসূরী ও মৌলবী ইসামঈল আলীগড়ী সম্পর্কে মির্জা গোলাম আহম কাদিয়ানী যে বক্তব্য পেশ করেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এতে সত্যের বিন্দু-বিসর্গও নেই। তারা এ ধরনের কোনো কথা তাদের বইতে বলেননি। মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর জীবদ্দশায় স্বয়ং তাকে এবং তার প্রয়াণের পর তার অনুসারীদেরকে বহুবার এ চ্যালেঞ্জ পেশ করা হয়েছে যে, যদি উক্ত আলিমদ্বয় এরূপ কোনো কথা তাদের কোনো বইতে লিখেছেন বলে কোনো প্রমাণ তোমাদের কাছে থেকে থাকে তবে পেশ কর। কিন্ত তারা আজ পর্যন্ত কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি এবং কিয়ামত পর্যন্তও দেখাতে পারবে না। (কাযিবাতে মির্জা পৃ. ৭৩)

মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর এরূপ মিথ্যাচার প্রচুর। পাঠক জেনে হয়ত আশ্চর্যবোধ করবেন যে, তার বিভিন্ন রচনাবলী থেকে তার মিথ্যাচারগুলো সংকলিত করা হলে বেশ বড়সড় একটি বই হতে পারে। এটা শুধু মুখের কথা নয়; বাস্তবেও যথাযথ উদ্ধৃতিসহ মির্জার মিথ্যাচারের একাধিক সংকলন প্রকাশিত হয়েছে। তারমধ্যে উর্দূ ভাষায় সংকলিত ‘কাযিবাতে মির্জা’ বইটি বেশ প্রসিদ্ধ। বইটির পৃষ্ঠা সংখ্যা ৩৭৯; সংকলক মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াহিদ মাখদূম।

তৃতীয় মৌলিক নীতি এই যে, মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভবিষ্যদ্বাণী করেছে এবং সে দাবি করেছে যে, সে সত্যবাদী নবী। এটা প্রমাণ করার জন্য তার ভবিষ্যদ্বাণীগুলো অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়িত হবে। আর তার ভবিষ্যদ্বাণীগুলো যদি সত্যে পরিণত না হয় তবে সে মিথ্যবাদী বলে সাব্যস্ত হবে। আল্লাহ তাআলার বিশেষ ফজল ও করম যে, তিনি তার ভবিষ্যদ্বাণীগুলোকে মিথ্যা প্রমাণিত করে তাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করে দিয়েছেন।

উল্লেখ্য যে, যেখানে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বশেষ নবী হিসাবে ঘোষণা দিয়েছেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও অসংখ্য হাদীসে এ ঘোষণার পুনরাবৃত্তি করেছেন আর এ থেকে প্রমাণিত আকীদার উপর মুসলিম সমাজের ঈমান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে যে-ই নবী হওয়ার দাবি করুক এবং তার হাতে যত অলৌকিক ঘটনাই প্রকাশ পাক, তাকে কোনো মুসলিম সত্যবাদী নবীরূপে বিশ্বাস করতে পারে না, বরং সে এরূপ যে কোনো অলৌকিক কর্মকান্ডকে দাজ্জালের অলৌকিক কর্মকান্ডের মতই মনে করবে। এ ছাড়া জাদুকরদের কাছেও এ অলৌকিক কর্মকান্ড পরিলক্ষিত হয়, তাতে কেউ তাদের নবী বলে স্বীকার করে না। তেমনি মির্জা গোলাম আহমদের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো যদি সত্যও হত তবু সে নবী বলে প্রমাণিত হত না। তবু আল্লাহ তাআলার বিশেষ অনুগ্রহ যে, তিনি তার সত্য-অসত্যের মাপকাঠিরূপে উপস্থাপিত ভবিষ্যদ্বাণীগুলোকে অসত্য প্রমাণিত করে তাঁর দুর্বল ঈমানের অধিকারী বান্দাদেরকে এ পরীক্ষা থেকে রক্ষা করেছেন। এখানে আমি কেবল তার দুটি ভবিষ্যদ্বাণী উল্লেখ করব, যেগুলোর মাধ্যমে সে অকাট্যরূপে মিথ্যাবাদী সাবস্ত্য হয়েছে। একটি হল, ডেপুটি আবদুল্লাহ আথম নামক জনৈক খ্রিস্টানের মৃত্যু সংক্রান্ত। মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী বলেছে যে, ‘‘আথম ৫ জুন ১৮৯৩ঈ. থেকে ৫ সেপ্টেম্বর ১৮৯৪ঈ. পর্যন্ত অর্থাৎ পনেরো মাস সময়ের মধ্যে মারা যাবে।’’ তারপর পুনরায় ১৮৯৩ ঈ. সালের সেপ্টেম্বরে এ ঘোষণা দিয়েছে যে, ‘‘তার বেঁধে দেওয়া সময় সীমা অর্থাৎ ৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অবশ্যই মারা যাবে।’’

উল্লেখ্য যে, তখন আথমের বয়স ছিল সত্তরের কাছাকাছি। এসময় তার মারা যাওয়া বিচিত্র কিছু ছিল না। সে ভরসা করেই হয়ত মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী এরূপ উক্তি করার সাহস পেয়েছিল কিন্তু আল্লাহ তাআলার মর্জি ছিল ভিন্ন রকম, মির্জা গোলাম আহমদকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করা, তাই সে বয়ঃবৃদ্ধ আবদুল্লাহ আথম গোলাম আহমদের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে মারা যায়নি; বরং তার পরও প্রায় দু’বছর বেঁচে থেকে ২৭ জুলাই ১৮৯৬ঈ. মারা যায়। মির্জা গোলাম আহমদ যেহেতু উক্ত ভবিষ্যদ্বাণীটিকে তার সত্য ও অসত্য হওয়ার মাপকাঠিরূপে পেশ করেছে, তাই তার বেঁধে দেওয়া সময়সীমার পরে আথম যতদিন জীবিত ছিল, তার প্রতিটি মুহূর্ত গোলাম আহমদকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করার সাক্ষ্য বহন করেছিল।

আর তার একটি ভবিষ্যদ্বাণী হল মুহাম্মাদী বেগমের বিবাহ সংক্রান্ত। এটি তার সবচেয় প্রসিদ্ধ ও চ্যালেঞ্জপূর্ণ ভবিষ্যদ্বাণী। এটাকে সে তার বইপত্রে নিজের সত্যতার মাপকাঠি হিসেবে পেশ করেছে। মির্জা গোলাম আহমদের এক আত্মীয় ছিল মির্জা আহমদ বেগ। ভারতের হুশিয়ারপুরের অধিবাসী। অনিন্দ্য সুন্দরী মোহাম্মাদী বেগম তারই কন্যা। মির্জা গোলাম আহমদের মনে তাকে বিয়ে করার আগ্রহ জাগে। একদিন সে কন্যার পিতার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। কিন্তু আহমদ বেগ সম্মত হননি। মির্জা গোলাম আহমদ মির্জা আহমদ বেগকে প্রভাবিত করার জন্য জোরে শোরে দুটি কথা ঘোষণা করতে থাকে। একটি হল, মুহাম্মাদী বেগম তার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে, এটা সে আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী ও ইলহাম দ্বারা জানতে পেরেছে। দ্বিতীয়টি হল, কন্যার পরিবার যদি এতে অমত পোষণ করে তবে তারা নানা রকম বিপদ-আপদে আক্রান্ত হবে। মুহাম্মাদী বেগমের উপরও বিপদ আসবে। মির্জা গোলাম আহমদ এসব কথা তার চিঠিপত্রে, বইপুস্তকে ও প্রচারপত্রে এত জোরে শোরে লিখতে শুরু করল যে, আহমদ বেগ যদি কোনো কাঁচা মানুষ হতেন তবে ভয়ে কন্যা দান করেই বসতেন। কিন্তু তিনি এসবে প্রভাবিত হননি; বরং তিনি নিজের অমতের উপর অবিচল থাকলেন। এভাবে বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হয়ে যায়, আর মির্জা গোলাম আহমদ মুহাম্মাদী বেগমকে বিয়ে করার জন্য নানা রকম কৌশল অবলম্বন করতে থাকে। এক পর্যায়ে লাহোরের অধিবাসী সুলতান মুহাম্মাদ নামক এক লোকের সাথে মুহাম্মাদী বেগমের বিবাহ ঠিক হয়ে গেলে এতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার জন্য মির্জা গোলাম আহমদ অনেক আশ্চর্য রকমের চেষ্টা-তদবির শুরু করে। যখন তার সকল চেষ্টা-তদবির ব্যর্থ হয়ে যায়, তখন সে তার পূর্বের অভ্যাস অনুযায়ী আল্লাহর ইলহামের বরাত দিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করতে শুরু করে। তাতে সে বলে যে, যদি সুলতান মুহাম্মাদের সাথে মুহাম্মাদী বেগমের বিয়ে হয় তবে বিয়ের পর আড়াই বছরের মধ্যে মুহাম্মাদী বেগমের পিতা মির্জা আহমদ বেগ মারা যাবে। আর মুহাম্মাদী বেগম বিধবা হয়ে তার বিবাহ বন্ধনে আসবে। আল্লাহর লীলা, সুলতান মুহাম্মাদের সাথে মুহাম্মাদী বেগমের বিবাহ হয়ে যাওয়ার পরও মির্জা গোলাম আহমদের পূর্ব ভবিষ্যদ্বাণী আরো জোরে চলতে থাকে। সে বলতে থাকে যে, এটা অদৃষ্টের অলঙ্ঘনীয় লেখা, কেউ এটাকে পরিবর্তন করতে পারবে না। সুলতান মুহাম্মাদ মারা যাওয়ার পর অবশ্যই মুহাম্মাদী বেগম তার স্ত্রী হবে। যদি এটা না হয় তবে সে মিথ্যাবাদী ও নিকৃষ্টতম জীব বলে সাব্যস্ত হবে। (আঞ্জামে আথম ও তার যমীমা) কিন্তু আল্লাহ তাআলা তার এসব ধোঁকাবাজিকে ব্যর্থ করে দিয়েছেন এবং তার দম্ভ, অহঙ্কার ও দাবিকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছেন। ফলে ১৯০৮ ঈ. সালে যখন মির্জা গোলাম আহমদ মারা যায় তখনও সুলতান মুহাম্মদ ও তার স্ত্রী মুহাম্মাদী বেগম জীবিত থেকে অতি সুখে জীবন যাপন করছিলেন। এমনকি তার প্রয়াণের পর সুলতান মুহাম্মাদ প্রায় ৪০ বছর জীবিত ছিলেন। যার পরবর্তী জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ও প্রতিটি দিন মির্জা গোলাম আহমদকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করার সাক্ষ্য বহন করেছিল। সুলতান মুহাম্মাদ ১৯৪৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

চতুর্থ মৌলিক নীতিটি হল এই যে, আল্লাহর কোনো নবী তার সমকালীন এমন কোনো ধর্মদ্রোহী শাসকবর্গ বা ক্ষমতাধর লোকের চাটুকারিতা, পদলেহন বা তল্পীবহন করতে পারেন না, যাদের প্রত্যক্ষ্য সহযোগিতায় ও পৃষ্ঠপোষকতায় কুফর ও ধর্মহীনতা বিস্তার লাভ করে।

উল্লেখ্য যে, ইংরেজ শাসক গোষ্ঠী মানুষের মধ্যে ধর্মহীনতা, ধর্মদ্রোহিতা, বেহায়াপনা, অশ্লীলতা ও নৈতিক অবক্ষয় বিস্তারে যে ভূমিকা রেখেছে, পৃথিবীর মানবেতিহাসে তার নজির খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এমনি একটি দুষ্কর্মের পৃষ্ঠপোষক ইংরেজ সরকারের চাটুকারিতা করতে গিয়ে গোলাম আহমদ কোনোরূপ ত্রুটি করেনি। স্বয়ং গোলাম আহমদ তার ‘শাহাদাতুল কুরআন’ নামক বইয়ের পরিশিষ্টে ‘গভর্নমেণ্টের দৃষ্টি আকর্ষণ’ শিরোনামের অধীনে এক জায়গায় বলেছেন, ‘‘এই (ইংরেজ) সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ আমার শরীরের প্রতিটি স্নায়ুতন্ত্রীকে আবিষ্ট করে রেখেছে।’’ তারপর সে লেখে, ‘‘আমি মাননীয় (ইংরেজ) সরকারকে এ নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে, আমি এমনই আজ্ঞাবহ ও হিতাকাঙ্খী রয়েছি, যেমন আমার পূর্বসূরীরা ছিল।... আমি কামনা করি, আল্লাহ তাআলা এ সরকারকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করুন।’’ (পৃ. ৩)

উপরিউক্ত চারটি মূলনীতি নিয়ে একটু চিন্তা-ভাবনা করলেই এ বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে যাবে যে, আল্লাহ তাআলা যদি নবী প্রেরণের সিলসিলা বন্ধ না-ও করতেন তবু গোলাম আহমদের মত চরিত্রের ব্যক্তি নবী হওয়ার জন্য যোগ্য ও উপযুক্ত বলে বিবেচিত হত না। (কায়িদানিয়াত পর গাওর করনেকা সীধা রাস্তা, মাওলানা মুহাম্মাদ মনযূর নোমানী রাহ.)

কাদিয়ানীরা অমুসলিম কেন?

কোনো কোনো সাধারণ মানুষ মনে করে যে, কাদিয়ানীদের সাথে মুসলিম সমাজের বিরোধটা হানাফী-শাফেয়ী বা হানাফী-আহলে হাদীস অথবা কেয়ামী-বেকেয়ামীদের মতবিরোধের মত। আসলে বিষয়টি তা নয়, বরং কাদিয়ানীদের সাথে মুসলিম সমাজের বিরোধ এমন একটি মৌলিক আকীদা নিয়ে, যার বিশ্বাস করা-না করার উপর মানুষের ঈমান থাকা-না থাকা নির্ভর করে। এ প্রবন্ধের শুরুতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কুরআন পাকের অনেক আয়াত ও অগণিত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত মুসলিম সমাজের অন্যতম মৌলিক আকীদা হল, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশেষ নবী এবং তাঁর পরে কোনো নবীর আগমন হবে না। মুসলমানদের এমন একটি অকাট্য আকীদার বিপরীতে অবস্থান নিয়ে মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নিজেকে নবী বলে দাবি করল। সুতরাং সে মুসলমানদের সর্বসম্মত আকীদা মুতাবিক কাফের তথা অমুসলিম। আর যে বা যারা তাকে নবী বলে বিশ্বাস করে সে বা তারা ইসলামের সর্বজন স্বীকৃত আকীদা মুতাবিক মুসলমান থাকতে পারে না। তারা কাফের অর্থাৎ অমুসলিম। একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি সহজে বোধগম্য হতে পারে। দেখুন, বাংলাদেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দলের একটির নাম আওয়ামী লীগ, আর অপরটির নাম বিএনপি বা বাংলাদেশ জাতায়তাবাদী দল। প্রতিটি দলের ভিন্ন ভিন্ন ম্যানিফেস্টো বা সংবিধান আছে। যে যেই দল করে তাকে সে দলের ম্যানিফেস্টো মেনে চলতে হয়। যদি কেউ দলের সংবিধান লঙ্ঘন করে বা তার কোনো গুরুত্বপূর্ণ ধারাকে অস্বীকার করে সে তার দলের সদস্যপদ রক্ষার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে। তখন তাকে হয় নিজের অপরাধ স্বীকার করে সংবিধানের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রকাশ করে দলে থাকতে হয়, নতুবা বহিস্কারের শাস্তি মাথা পেতে নিয়ে দল থেকে বের হয়ে যেতে হয়। ধরুন, কেউ আওয়ামীলীগ করে, কিন্তু সে শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা স্বীকার করে না, এরূপ ব্যক্তি আর যা-ই হোক, আওয়ামী লীগের সদস্য হতে পারে না। কোনো আওয়ামীলীগার তাকে আওয়ামী লীগের সদস্য মেনে নেবে না। এরূপই কেউ যদি বিএনপি করে, কিন্তু জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক স্বীকার করে না, এমন কাউকে বিএনপি’র লোকজন নিজেদের লোক বলে গ্রহণ করবে না। এ সহজ-সরল মোটা কথাটি যদি বোধগম্য হয়, যে ব্যক্তি ইসলামের অন্যতম মৌলিক আকীদায় বিশ্বাসী নয়; বরং তার বিপরীত অবস্থানে দাঁড়িয়ে নিজেকে ‘নবী’ বলে দাবি করে, আর যারা তার এ দাবিকে বিশ্বাস করে তারাও মুসলমান নামের পরিচয় বহন করতে পারে না। তাদেরকেও হয় নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে এবং তওবা করে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বশেষ নবী মেনে নিয়ে এবং ইসলামের অন্য সকল মৌলিক আকীদাকে মেনে নিয়ে মুসলমান হতে হবে, অথবা মুসলমানের পরিচয় বাদ দিয়ে নিজেদের ভিন্ন ধর্মের নামে পরিচিত হতে হবে। এ কথাটি আমাদের দেশের সাধারণ লোকজন থেকে শুরু করে শাসকগোষ্ঠী পর্যন্ত সর্বস্তরের মানুষ যত তাড়াতাড়ি বুঝে নিতে সক্ষম হবে ততই তাদের দুনিয়ার জীবনে হেদায়াত ও পরকালের শান্তি ও মুক্তির পথ বেছে নিতে সহায়ক হবে।

যৌক্তিক বিচারে কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণার দাবি

এদেশীয় মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকেরা যেমন বাংলাদেশের নাগরিক, তেমনি কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের লোকেরাও এ দেশের নাগরিক। দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে সকল ধর্মের অনুসারী লোকেরা যতটুকু নাগরিক অধিকার ও সুবিধা ভোগ করে, কাদিয়ানীরাও ততটুকু পাক, এতে কারও দ্বিমত থাকার কথা নয়, তবে সেটা তাদের নিতে হবে নিজের স্বতন্ত্র ধর্মীয় পরিচয়ে-মুসলমান পরিচয়ে নয়। তারা নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে ভিন্ন নামে সমাজে বেঁচে থাকুক, আর্থ-সামাজিক কার্যক্রমে তারা তাদের স^তন্ত্র পরিচয় নিয়ে অংশগ্রহণ করুক, তাতেও কোনো মুসলমানের মাথাব্যাথা নেই। তবে মুসলমানের মৌলিক আকীদায় বিশ্বাসী না হয়ে (উল্টো কুঠারাঘাত করে) তারা মুসলমান পরিচয় ধারণ করবে, এ অধিকার তাদের নেই। সুতরাং কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণার দাবি মুসলিম সম্প্রদায়ের আকীদা রক্ষার আন্দোলন তো অবশ্যই, ধর্মীয় অধিকারের বিষয়ও বটে।

এখন দেখা যাক, কাদিয়ানীরা অমুসলিম রূপে ঘোষিত ও চিহ্নিত না হলে তাতে মুসলমানদের ধর্মীয় ও সামাজিক ক্ষেত্রে কি কি সমস্যার সৃষ্টি হয়। এ বিষয়টি বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য যে, এমন একটি সম্প্রদায় যারা ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণরূপে অমুসলিম, তারা যদি সরকারীভাবে অমুসলিম ঘোষিত হয়ে পৃথক একটি ধর্মাবলম্বী দল হিসাবে চিহ্নিত না হয় তাতে মুসলমানদের ধর্মীয় ও সামাজিক ক্ষেত্রে বহুবিধ সমস্যা সৃষ্টি হয় এবং হতে থাকবে। যেমন :

১. তাদের রচিত ও প্রকাশিত বইপত্রকে মুসলমানদের লেখা বই-পুস্তকের মত মনে করে পাঠ করে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয় এবং ঈমান হারিয়ে বসে।

২. তাদের উপাসনালয়কে মসজিদ মনে করে সেখানে গিয়ে নামায পড়ে। এতে মুসলমানদের কাছে ঈমানের পরে সর্বোচ্চ যে ইবাদত নামায, তা নষ্ট হয়।

৩. কাদিয়ানী ধর্মমতের অনুসারী কোনো ব্যক্তি মুসলমানের ইমাম সেজে তাদের ঈমান-আমল নষ্ট করতে পারে।

৪. তারা মুসলমান পরিচয়ে নিজেদের মতবাদ-মতাদর্শ প্রচার করলে তাতে সাধারণ মুসলমান তাদেরকে মুসলমানেরই একটি দল মনে করে তাদের মতবাদ গ্রহণ করে নিজেদের সবচেয়ে বড় সম্পদ ঈমান হারিয়ে ফেলে।

৫. তারা মুসলমান নামে পরিচিত হওয়ার কারণে তাদের সাথে মুসলনামানের মত আচার-আচরণ ও চলাফেরা করে। অথচ তাদের সাথে মুসলমানের সম্পর্ক হওয়া উচিত এমনই, যেমন কোনো অমুসলিমের সাথে হয়ে থাকে।

৬. অনেক সাধারণ মুসলমান তাদেরকে মুসলমান মনে করে নিজেদের বিবাহের উপযুক্তা মেয়েদের তাদের সঙ্গে বিবাহ দিয়ে অমুসলিমদের হাতে নিজেদের কন্যা তুলে দেয় এবং মুসলিম পাত্রের জন্য কাদিয়ানী ধর্মাবলম্বী লোকের মেয়েকে মুসলমান না করে বধু হিসেবে বরণ করে। ফলে এরূপ দম্পতি আজীবন ব্যভিচারের গুনাহে লিপ্ত থাকে।

৭. কোনো সম্পদশালী মুসলমান কোনো কাদিয়ানী ধর্মাবলম্বী গরীবকে যাকাত দিলে তার ফরয যাকাত আদায় হবে না।

৮. যে কোনো কাফের তথা অমুসলিমের জন্য হারাম শরীফে ঢোকা নিষেধ। অথচ কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের লোকেরা মুসলিম পরিচয় দিয়ে হজ্ব ও চাকরি-বাকরির নামে সৌদি আরবে গিয়ে হারাম শরীফে প্রবেশ করে তার পবিত্রতা নষ্ট করার সুযোগ পায়।

সুতরাং কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে মুসলমান থেকে পৃথক একটি ধর্মের অনুসারী দল ঘোষণা করে ভিন্ন নামে চিহ্নিত না করা হলে এরূপ বহু সমস্যা সৃষ্টি হয়, হতে পারে এবং ভবিষ্যতে হতে থাকবে। এতে মুসলমান সমাজের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগার কারণে তারা যদি উত্তেজিত হয়ে উঠে তবে এতে দেশের আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে এবং মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে, যা কারও কাম্য নয়। কাজেই তাদেরকে অবিলম্বে পৃথক একটি ধর্মাবলম্বী দল ঘোষণা করে পৃথক নামে তাদেরকে একটি সংখ্যালঘু দল হিসাবে মর্যাদা দিলে এবং তাদের জন্য ইসলামী পরিভাষাসমূহ যেমন : নামায, রোযা, মসজিদ, হজ্ব ইত্যাদির ব্যবহার নিষিদ্ধ করলে তা দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পক্ষে সহায়ক হবে বলে আমরা মনে করি। এটাই সচেতন মুসলিম সমাজের প্রাণের দাবি।

কাদিয়ানী সম্প্রদায় সম্পর্কে সর্বোচ্চ আদালতের  রায়

কাদিয়ানী সম্প্রদায় যেহেতু ইসলামের মৌলিক আকীদার পরিপন্থী আকীদা পোষণ করে, হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বশেষ নবী স্বীকার করে না; বরং তারা মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে নবী মনে করে এবং তার মতবাদ অনুসরণ করে তাই কোনো আদালত বা পার্লামেন্ট তাদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করুক, আর নাই করুক, তারা সুস্পষ্ট কাফের অর্থাৎ অমুসলমান। এটা ইসলামের ফয়সালা। তবু ইসলামের দুশমন ও ইসলামের জন্য ক্ষতিকর এমন একটি সম্প্রদায়কে মুসলমানের মুখোশ পরে চলার প্রশ্রয় দেওয়া সচেতন মুসলিম সমাজের পক্ষে সম্ভব নয়, তাই তাদেরকে সরকারীভাবে ‘অমুসলিম’ ঘোষণা করে পৃথক একটি ধর্মাবলম্বী দল হিসাবে চিহ্নিত করা এবং ইসলামের পরিভাষাসমূহকে তাদের ধর্মীয় কর্মকান্ডের জন্য ব্যবহার করাকে আইনগতভাবে নিষিদ্ধ করা আবশ্যক। এটাই সচেতন মুসলিম সমাজের ঈমানী চেতনার দাবি। বহু ত্যাগ ও কুরবানীর বিনিময়ে বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করে বহু তর্ক-বহসের পর ১৯৭৪ঈ. সালে ভুট্টো সরকারের আমলে পাকিস্তান ন্যাশনাল এসেম্বলী কাদিয়ানীদের ‘অমুসলিম সংখ্যালঘু’ ঘোষণা করে এবং তাদের জন্য ইসলামী পরিভাষাসমূহ ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। তারপর লাহোর হাইকোর্ট ১৯৮১, ১৯৮২, ১৯৮৭, ১৯৯১, ১৯৯২ ইং সালে, সম্মিলিত শরয়ী আদলত ১৯৮৪, ১৯৯১ঈ. সালে, কোয়েটা হাইকোর্ট ১৯৮৭ঈ. সালে,

সুপ্রিম কোর্ট শরয়ী এপিলেট বেঞ্চ পাকিস্তান ১৯৮৮ঈ. সালে এবং

পাকিস্তান সুপ্রিমকোর্ট ১৯৯৩ঈ. সালে কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে অমুসলিম ঘোষণা করে। এছাড়া সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, আফগানিস্তান, মুসলিম লীগ, আর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কনফারেন্স (ওআইসি) কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ওআইসির অন্যতম সদস্য দেশ।

বাংলাদেশ কোর্টের রায়

কাদিয়ানীরা ‘ইসলামেই নবুওয়াত’ নামক একটি বই রচনা করে তাতে কুরআন ও হাদীসের বিকৃত ও মনগড়া অর্থ করে হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর নতুন নবীর আগমনের পথ তৈরি করার চেষ্টা করে। বইটি মুসলিম সমাজের আকীদা-বিশ্বাসের মূলে আঘাত হানার কারণে বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৫ঈ. সালের আগস্ট মাসে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। কাদিয়ানীরা সরকারের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে। হাইকোর্ট ডিভিশনের বিচারপতি জনাব সুলতান আহমদ খান ও বিচারপতি জনাব এম. মাহমুদুর রহমান সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে যথোপযুক্ত শুনানির পর কাদিয়ানীদের আবেদন নামঞ্জুর করেন। মাননীয় বিচারপতিগণ তাদের রায়ে হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লামের পরে নবী আবির্ভূত হওয়ার আকীদাকে কুফরী বিশ্বাস বলে ঘোষণা করেন। বিশ্বের বিভিন্ন আদালতের রায়ে কাদিয়ানীরা যে অমুসলিম ঘোষিত হয়েছে, এ শুনানির মাধ্যমে বাংলাদেশ হাইকোর্ট সে কথাই পুনঃব্যক্ত করেছেন। সংবাদটি বাংলাদেশের একটি জাতীয় দৈনিকে ২০ সেপ্টেম্বর ১৯৮৬ঈ. তারিখে প্রকাশিত হয়।

১৯৯৩ সালের এপ্রিল মাসে অন্য একটি মামলায় হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মাদ আব্দুল জলিল ও বিচারপতি মোহাম্মাদ ফজলুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে আইনের দৃষ্টিতে কাদিয়ানীদের অমুসলিম বলে রায় প্রদান করেন। এর দ্বারা বাংলাদেশে হাইকোর্টের মতেও কাদিয়ানীরা অমুসলিম ঘোষিত হয়েছে। সরকার কর্তৃক গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটিও কাদিয়ানীদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করার সুপারিশ করেছেন। (তথ্য সূত্র : মো : আব্দুল কাসেম ভূঞা, কাদিয়ানী ধর্মমত বনাম ইসলামী দুনিয়ার অবস্থান)

সুতরাং মুসলিম বিশ্বের সর্বোচ্চ আদালতসমূহের রায় এবং আন্তর্জাতিক সর্বোচ্চ ইসলামী সংস্থা ওআইসি’র সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ওআইসি’র সদস্যদেশ হিসাবে বাংলাদেশ সরকারেরও উচিত কাদিয়ানীদেরকে সরকারীভাবে ‘অমুসলিম সংখ্যালঘু’ ঘোষণা করা এবং তাদের জন্য ইসলামী পরিভাষাসমূহের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা।

সুত্রঃ মাসিক আল কাউসার  

কারা শিয়া ও সুন্নী

১৭ই এপ্রিল ১৯৪৬ সালে ফ্রান্স থেকে স্বাধীনতা লাভ করা সিরিয়া ১৯৭১ সাল থেকে শাসন করে আসছে আসাদ ফ্যামিলি। বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পিতা হাফিজ আল আসাদ ছিলেন বিমানবাহিনীর প্রধান। ১৯৬৬ সালে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে বাথ পার্টি তাকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব দেয়। কিন্তু ১৯৭০ সালে হাফিজ আল আসাদ আরেকটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে বাথ পার্টির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের কারাগারে ঢুকান এবং নিজেকে ঘোষণা দেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসাবে।
    হাফিজ আল আসাদ

আসাদের গোত্র অ্যালাওয়াইটরা বিশ্বাসের দিক থেকে শিয়া মতালম্বি। সিরিয়ার মোট জনসংখ্যার(২২ মিলিয়ন) মধ্যে এই গোত্রের সদস্যরা ১২% হলেও আসাদ ফ্যামিলি ক্ষমতা দখল করার পর দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে আছে তারা। মেধা কিংবা যোগ্যতা নয়, সিরিয়ায় ভালো চাকরী পাওয়ার নিশ্চয়তা পাওয়া যায় এই গোত্রের সদস্য হলে কিংবা তাদের গোলামি করলে। রাষ্ট্রের এই বঞ্চনা ক্ষোভের জন্ম দেয় সিরিয়ার অন্যান্য সাধারণ মানুষদের মনে।
    সিরিয়ায় alawite গোত্রের অবস্থান

আজ যে আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, তার শুরুটা কিন্তু এখন নয়। বঞ্চনার বিরুদ্ধে সবসময়ই প্রতিবাদ করার চেষ্টা করে আসছিলেন সাধারণ নাগরিকরা। কিন্তু প্রতিবাদ করার কোন অধিকার যেন ছিল না তাদের। যদি কোন দল বা গোষ্ঠী বিক্ষোভ করার চেষ্টা করত, তা অন্ত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে দমন করতেন হাফিজ আল আসাদ। যার মধ্যে Hama massacre  খ্যাত ১৯৮২ সালের ঘটনাটি আজও মানুষ কষ্টের সাথে স্মরণ করে। যেই ঘটনায় হাফিজ আল আসাদের নির্দেশে হত্যা করা ৪০ হাজার বিক্ষোভকারীকে।
       হামার গণহত্যার একটি দৃশ্য

হাফিজ আল আসাদের মৃত্যুর পর ২০০০ সালে সিরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ ক্ষমতায় আসেন। কিন্তু শোষণ-নিপীড়ন, নির্যাতনে বাবার চেয়েও কোন অংশে কম নয় বাশার। বাক অথবা ব্যক্তিস্বাধীনতার স্থান নেই সিরিয়ায়। বাশারকে সম্বোধন করতে হয় 'মি. প্রেসিডেন্ট' বলে, অন্যথায় জেল-জুলুল, শাস্তি নিশ্চিত।
    বাশার আল আসাদ

এক মহিলা ডাক্তারকে গ্রেফতারের ঘটনায় বুঝা যায় কতটা নিয়ন্ত্রিত সে দেশের নিউজ মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়া। সেই ডাক্তারের অপরাধ তিনি গাদ্দাফির স্বৈরশাসন থেকে মুক্তি পাওয়ায় লিবিয়াবাসিকে অভিনন্দন জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। আর এতেই তাকে গ্রেফতার করে সিরিয় সরকার এবং মাথার চুল চেঁছে দিয়ে তাকে বন্দি করা হয় জেলে।

 সালটা ২০১১, আরব বসন্তে একের পর এক পতন ঘটছে স্বৈরচার শাসকদের। যাতে উজ্জিবিত হয়ে স্বৈরশাসক আসাদবিরোধী সিরিয়ার নাগরিকরা (alawite গোত্র ব্যতিত দেশের প্রায় সকল নাগরিক) বিক্ষোভ শুরু করে আসাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু বাবার মতই আসাদের নির্দেশে সরকারী বাহিনী গুলি চালায় বিক্ষোভকারীদের উপর। প্রায় এক মাস চলছিল এমনি, যখনি চেষ্টা করা হয়েছে বিক্ষোভের, আসাদ বাহিনী গুলি চালিয়েছে নির্বিচারে। আর তাতেই এই বিক্ষোভ এক সময় রূপ নেয় সশস্ত্র বিদ্রোহে।0
    আসাদবিরোধী বিক্ষোভের একটি দৃশ্য

এভাবে একের পর এক যখন বিক্ষোভকারীদের উপর গণহত্যা চালাচ্ছিল আসাদ বাহিনী। তখনই এক দল সৈন্য আসাদের পক্ষ ত্যাগ করে বিক্ষোভকারীদের পক্ষে চলে আসে এবং ঘোষণা দেয় বিক্ষোভকারীদের রক্ষার। সাধারণ বিক্ষোভকারী যারা পূর্বে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল এবং অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবক যোগ দেয় পক্ষ ত্যাগকারী এই আর্মিদের সাথে। যাদের সবার লক্ষ্য আসাদ ফ্যামিলিকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা।
আসাদবিরোধী লড়াইয়ে অংশরত সবাই মিলে গঠন করে ফ্রি সিরিয়ান আর্মি বা FSA
    FSA এর প্রশিক্ষণের একটি দৃশ্য

আগস্ট, ২০১১ সালের দিকে সিরিয়ার সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী সিরিয়ান ন্যাশনাল কাউন্সিল নামে সরকার গঠন করে। ধারনা করা হচ্ছিল সিরিয়ায় বোধহয় লিবিয়ার অনুরূপ ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। প্রথমে কিছু সেনাদের বিদ্রোহ, তারপর বিদ্রোহীদের সরকার ঘটন, তারপর পশ্চিমাদের সহায়তায় ক্ষমতায় আসা। সিরিয়ান ন্যাশনাল কাউন্সিলের আগমনের পর এমনটাই হওয়া ছিল স্বাভাবিক।
    তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সিরিয়ান ন্যাশনাল কাউন্সিলের মিটিং

সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুধু সিরিয়ার মাঝে সীমাবদ্ধ নয়। যদিও এটি কোন বিশ্বযুদ্ধের রূপ ধারন করেনি অথবা ধারন করার কোন সম্ভাবনা নেই তবু বিশ্বের প্রায় সকল শক্তিধর রাষ্ট্র প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ছে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে। আসাদ গোত্র শিয়া হওয়ার সুবাদে তাদের পক্ষ নিয়েছে ইরান ও লেবাননের হিযবুল্লাহ গ্রুপ এবং ইরান ও আসাদের সাথে সুসম্পর্কের কারণে চিন ও রাশিয়াও আসাদকে অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করছে। সিরিয়ার ৭২% লোক সুন্নি মুসলিম, আরবের সুন্নি রাজারা যদিও নিজেরা ধার্মিক নয়, তবু শিয়াদের বিরুদ্ধে সুন্নিদের এই সশস্ত্র বিদ্রোহকে নানাভাবে সহায়তা করছে। আর ইসরাইলের সাথে সিরিয়ার এবং হিজবুল্লার কয়েকটি যুদ্ধের ইতিহাস থাকায় পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো পক্ষ নিয়েছে আসাদবিরোধীদের।

ইরান ও হিজবুল্লাহ অস্ত্র ও সৈন্য দিয়ে সরাসরি লড়াই করছে আসাদের পক্ষে। বিপুল পরিমাণ অস্ত্র সহায়তা পাচ্ছে তারা চিন ও রাশিয়ার কাছ থেকে। ন্যাশনাল কাউন্সিল তাই কয়েক বার অস্ত্র সহযোগিতা চায় পশ্চিমাদের কাছ থেকে। কিন্তু পশ্চিমারা একটি ভয়ের কথা ব্যক্ত করে যে সিরিয়ার বিদ্রোহীদের একটি অংশ কট্টর ইসলামপন্থী, তাই তারা ভীত যে অস্ত্র দিলে সেটা মুজাহিদিনদের হাতে চলে যাবে। সিরিয়ার জিহাদিরাও আমেরিকা থেকে অস্ত্র চায় না এবং প্রত্যাখ্যান করে বিদ্রোহী সরকারকে।
    নামাজরত সিরিয়ার মুজাহিদিনরা

USA এবং ইসরাইলসহ পশ্চিমা বিশ্বের ভয়ের কারণ, মুজাহিদিনদের এই লড়াই শুধু আসাদকে হটানোতেই সীমাবদ্ধ নয়, তাদের টার্গেট সিরিয়ায় ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠা এবং শরিয়াহ আইন চালু করা। সিরিয়ার বিদ্রোহীদের প্রায় ৬০% ভাগ এই মুজাহিদিনদের পক্ষে, তাছাড়া সুন্নি মুসলিমদের উপর আসাদের নির্যাতনের ঘটনা এবং ইসলামী খেলাফতের স্বপ্ন সারা বিশ্বের মুসলিম তরুণদের নিয়ে আসছে সিরিয়ায়। যার মধ্যে ইরাক, আফগান, সোমালিয়া, বসনিয়া  প্রভৃতি দেশসমুহের মুজাহিদীনরা যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে আরব এবং পশ্চিমা দেশসমূহের অনেক মুসলিম তরুণ, সিরিয়াতেই যাদের প্রথম যুদ্ধের অভিজ্ঞতা।
    চেচেন মুজাহিদের নেতৃত্বে অংশরত বিভিন্ন দেশের মুজাহিদরা

সিরিয়ায় এই তিন দলের বাহিরেও আরেকটি দল লড়াই করছে যাদের কথা তেমন আলোচনায় আসে না। উপরের তিনটি দলের লড়াইয়ের মৌলিক লক্ষ্যের মধ্যে সিরিয়া বিভক্ত করার বিষয়টি নেই। কিন্তু কুর্দি জাতিগোষ্ঠীর লক্ষ্য সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি বিরাট অংশ দখলে নিয়ে স্বাধীন কুর্দিস্থান গঠন করা যে দেশের স্বাধিনতায় আর কোন আঘাত আসবে না। শুধু সিরিয়াতেই নয়, ইরাক, তুরস্কসহ আরও কয়েকটি দেশেও স্বাধীন ভূমির জন্য লড়াই করছে কুর্দি বিদ্রোহীরা।
    স্বপ্নের স্বাধীন কুর্দিস্তান

দুই বছর সাত মাস পূর্বে সিরিয়ায় শুরু হওয়ায় যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে সোয়া লাখের উপর মানুষ। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী বিভিন্ন দেশে প্রায় দুই লাখের বেশী শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে। তাছাড়া গৃহহীন মানুষের সংখ্যা সাত লাখ বলা হয়েছে। যদিও এগুলো পরিসংখ্যান, কিন্তু বাস্তবতা এর চেয়ে ভয়াবহ।
    জর্ডানের শরণার্থী শিবিরে যাওয়ার পথে বিশ্রাম নিচ্ছে কয়েকটি সিরিয় পরিবার

সিরিয়ার যুদ্ধের ফলাফল নিয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। ইতিমধ্যেই বাশার বাহিনী সিরিয়ার অধিকাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। কিছুদিন পূর্বে ইরান বলেছিল, আমেরিকার সাথে তারা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কাজ করতে আগ্রহী। অর্থাৎ, আমেরিকার সহায়তায় ইরান সিরিয়ার মুজাহিদিনদের হারিয়ে আসাদকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। যদি আমেরিকা তাতে সম্মত হয়, তবে ইরান, হিযবুল্লাহ, রাশিয়া, চিন, আমেরিকা, ইসরাইলসহ পশ্চিমা বিশ্বের সব দেশকে এক কাতারে দেখতে পাওয়া যাবে। যদিও আসাদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের যুদ্ধের ইতিহাস রয়েছে, তবু তারা এখন আসাদের পক্ষ নেওয়া অস্বাভাবিক নয় কারণ, আসাদকে পুনরায় ক্ষমতায় বসিয়ে দিলে সে পশ্চিমা বিশ্বের গোলাম হয়ে থাকবে এবং মুজাহিদিনরা যদি সিরিয়া দখল করে নেয় তবে সেই সিরিয়া হবে পশ্চিমাদের জন্য এক দুঃস্বপ্নের নাম। কিন্তু মেরুদণ্ডহীন আরব রাজাদের জন্য ইরান-আমেরিকার সুসম্পর্ক মেনে নেওয়াটা হবে কষ্টের।

অপরদিকে আরেকটি সম্ভাবনা রয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো সিরিয়ায় হামলা করে আসাদকে হটিয়ে তাদের অনুগত ফ্রি সিরিয়ান আর্মিকে ক্ষমতায় বসাবে এবং মুজাহিদীনদের সন্ত্রাস আখ্যায়িত করে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ হিসাবে সিরিয়ায় নিজেদের সৈন্য রাখতে চাইতে পারে।তখন অবশ্য শান্তি ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই। কারণ, একদিকে বাশার বাহিনী ও তাদের মিত্র হিজবুল্লাহ এই ফ্রি সিরিয়ান আর্মির সরকারের উপর হামলা করবে, অপরদিকে মুজাহিদীনদের হামলা তো রয়েছেই। এই অবস্থায় আরব রাজারা থাকবে সবচেয়ে নির্ভাবনায় এবং নবগঠিত সরকারকে বিপুল অর্থ দিয়ে সহায়তা করবে এটা নিশ্চিতকরেই বলা যায়।

মুজাহিদীনরা এখন পর্যন্ত যেভাবে লড়ছে তাতে সমগ্র সিরিয়ায় তাদের বিজয় লাভ করা অসম্ভব নয়। কুর্দি বিদ্রোহীদের সাথে যদি শান্তিচুক্তি করে যে কুর্দিদের কোন নিপীড়ন করা হবে না, তাহলে হয়ত কুর্দিদেরও পাশে পাওয়া যাবে। কিছুদিন পূর্বে কুর্দিদের ছোট দুইটি বিদ্রোহী গ্রুপ শরিয়াহ আইন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মুজাহিদীন দের সাথে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু সমস্যা হল, মুজাহিদিনদের পাশে আন্তর্জাতিক কোন সমর্থন নেই যা একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত রাষ্ট্র গঠন ও সরকারের স্বীকৃতি পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করবে। কিন্তু যদি আমেরিকা অথবা ইসরাইল সেই মুজাহিদিনদের হামলা করে, তবে সেটা আরেক আফগানস্থানের মত হতে পারে এবং যুদ্ধ পুরা মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে যেতে পারে।

এই যুদ্ধের ফলাফল কি হবে? কে জয় লাভ করবে? কুর্দিরা কি পারবে তাদের স্বপ্নের স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠা করতে? সিরিয়ার শরণার্থীরা কবে তাদের নিজ গৃহে ফিরতে পারবে?
এমন শত প্রশ্নের জবাব পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও দীর্ঘ সময়ের।