Friday, December 25, 2015

জ্বীন: বাস্তবতার আড়ালে লুকানো ভন্ডামি আর আমার কল্পনা (চার পর্ব একসাথে)

পর্ব-১

আবহমান কাল থেকে জ্বীন নামক একটি অদৃশ্য জাতির (!) নাম প্রচলিত রয়েছে। শুধু নামেই নয়, জ্বীনদের নিয়ে রয়েছে কত সব রহস্যজনক কাহিনী। এই কাহিনী কি শুধুই লোকমুখেই? মোটেও না, জ্বীনদের উপস্থিতি রয়েছে সাহিত্যে, গল্পে, উপন্যাসে, আরব্যরজনীর অধ্যায়ে, ধর্মগ্রন্থে, গবেষণায়, কল্পনায়, ভয়ে, আরাধনায়। জ্বীনদের উপস্থিতি রয়েছে বিভিন্ন মিথোলজিক্যাল সংস্কৃতিতে, অন্ধকার জগতে, আত্মাদ্ধিক বিচরণে, ভর ও শক্তির পারস্পারিক পরিবর্তনে, ইতিহাস বিখ্যাত মনীষীদের দর্শনে। জ্বীনের প্রভাব রয়েছে সুপার নেচারাল ঘটনার জন্ম প্রক্রিয়াতে, প্রেমিক-প্রেমিকার কল্পনায়, কবিরাজের লাঠির শরীরে, কবরখানায়, শশ্মান ঘাটে, প্রেতাত্মার ডাকে, কোয়ান্টাম মেডিটেশনে, আলো-আধারের লুকোচুরিতে। হালের এনার্জি ক্রাইসিসও নাকি মিটতে পারে এই জ্বীন জাতির অস্তিত্ব আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে! তাহলে কিভাবে বলি জ্বীন মিথ্যা বা বানোয়াট?? চলুন দেখি নিচের ব্যাখ্যা গুলো কি বলে:



লোকনাথপুর গ্রামের আজিবর কবিরাজ জ্বীনদের বড় ওস্তাদ। দুনিয়ার এমন কোন জ্বীন নেই যে তার কথা শুনে না, মানে না। আজিবর কবিরাজের শুধু মুখের কথায় জ্বীনরা ওঠা বসা করে, গান-বাজনা করে, সাত সমুদ্র তের নদী পার হয়ে এনে দেয় চাহিবা মাত্র বস্তু। একদা নিজের চোখের দেখা দশ-বারো জন লোক অচেনা যুবককে (বয়সে ২৮/৩০ হবে) মোটা দড়ি আর লোহার শিকলে বাঁধা অবস্থায় নিয়ে আসলো আজিবর কবিরাজের কাছে। যুবককে নাকি জ্বীনে ধরেছে! কোন লোকের কাছে রেফারেন্স পেয়ে তারা এসেছে এই আজিবর কবিরাজের কাছে। সামনে আসতেই আজিবর বুঝতে পারে এটা জ্বীন ধরা রোগী, আর তৎক্ষনাৎ সে আগত লোকদের বলে যুবকের হাত পায়ের শিকল খুলে দিতে। লোকজন জানায় এটা করলে সে এখনই রক্তারক্তি বইয়ে দিবে, খুনোখুনি করবে কেই ঠেকাতে পারবে না। জড় হয়ে গেল শত শত লোক! সবাই দেখল কিভাবে আজিবর কবিরাজ ঐ অচেনা যুবকের জ্বীন ছাড়িয়ে দিল সবার সামনেই। অথচ গত ১০ বছর ধরে পরিবারটা ভুগছে এই সমষ্যায়। কি বলবেন তাহলে? অবশ্যই জ্বীন আছে!



রুমেল-জয়া বড়লোক দম্পত্তির একমাত্র মেয়ে সোহানার বয়স ৬ বছর। সোহানা হাটতে পারে না সেই ছোট বেলা থেকেই। মেয়ের হাটার শক্তি ফিরিয়ে আনার জন্য ঘুরে বেড়িয়েছে দেশ বিদেশের বড় বড় ডাক্তার, হসপিটাল এমনকি আজমির শরীফের মত বড় বড় মাজারে। নাহ, কোন কিছুতেই কোন কাজ হয়নি। লোক মুখে শুনে সেও এসেছিল আজিবর কবিরাজের কাছে, মেয়েটি কয়েক মিনিটের মন্ত্রবলেই ভালো হয়ে গিয়েছিল। এ ঘটনাটিও অন্তত ১০/১৫ জন মানুষের সামনে আর সবচাইতে বড় সাক্ষি তার বা-মা এবং সোহানা নিজেই। কি বলবেন তাহলে? অবশ্যই জ্বীন আছে!

****************************************************************

পর্ব-২

এ পর্বেও চলবে আজিবর কবিরাজের কয়েকটি ঘটনা। আজিবর কবিরাজের বড় ছেলে রাসেলের সঙ্গে আমার ভাব সেই ছোটবেলা থেকেই, সে একাধারে আমার ক্লাসমেট, বন্ধু, ভাই, প্রতিবেশী, খেলার সাথী, ন্যায়-অন্যায় কাজের সর্বসময়ের সাথী। খুব সাধারণ থেকে অসাধারণ যে কোন ঘটনায় যদি আমার অন্তরালে হয়ে থেকে তাহলে যত দ্রুত সম্ভব সে আমার সাথে শেয়ার করে।



একবার রাসেল ওর আব্বুর সঙ্গে ওর নানীর কবর জিয়ারত করতে যায়, কবরটি অনেক পুরোনো আর মাঠের মধ্যে যে মাঠে যেতে হলে পার হতে হয় অনেক বড় জঙ্গল। যায় হোক, পথ, পথের ধারে জঙ্গল পার হয়ে ওরা পৌঁছে নানীর কবরের কাছে। কবরের পাশে অনেক লম্বা তালগাছ। রাসেল নিজের চোখে দেখল ধবধবে সাদা কাপড় পরিহিতা এক সুন্দরী মহিলা তাল গাছে বেয়ে নেমে এসে ঠিক ওদের পিছনে দাঁড়ালো। রাসেল ওর আব্বুর জ্বীনের উপর বিদ্যার কথা জানতো তাই ভয় না পেয়ে মনে মনে সাহস সন্চয় করে আব্বুর সাথে কবর জিয়ারত করে ফেরৎ আসার পথেই আবার দেখলো ঐ মহিলা খুব দ্রূত আবার তালগাছের উপর এক লাফে উঠে গেল। রাসেল তার পরদিনই ঘটনাটি আমার সাথে শেয়ার করলো। তাহলে কি বলব? অবশ্যই জ্বীন আছে!



আজিবর কবিরাজের যে ঘটনাটি সবচাইতে আমাকে ভাবিয়ে তোলে এখন সেটি তুলে ধরব। ঘটনাটি আমাদের প্রতিবেশি আসাদ মিয়ার বাড়ীর ঘটনা। তখন আমি এ পৃথিবীতে আসিনি। কিন্ত আমার গ্রামের যত সব মরুব্বী আর বয়স্ক লোকজন রয়েছে তারা সবাই ঐ ঘটনার সাক্ষী! এবং তারা যে মিথ্যা বলে না সেটা সহজেই অনুমেয়।



আসাদ মিয়া তার মাঠের এক জমি থেকে ৫০ বছরের পুরোনো এক তেতুল গাছ কেটে ফেলে। গাছটি কাটার আগে সে কয়েক রাতে ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে দেখেছিল যেন গাছটি সে না কাটে। এবং জ্বীনরা নাকি তাকে সেই স্বপ্ন দেখাতো। কিন্ত ঐসব স্বপ্নকে পাত্তা না দিয়ে গাছটি কেটে ফেলার পর শুরু হয় আসাদের বাড়ীর উপর অসহ্য রকমের যন্ত্রনাদায়ক ব্যাপার স্যাপার।

বাড়ীতে তেমন কেউ-ই নেই, কিন্ত হটাৎ ছাদের বাড়ীর ছাদের উপর শুরু হয় আর্মি প্যারেড। ভয়ে যবু থবু বাড়ীর লোক কেউ তখন আর বাইরে বের হয় না। প্যারেডের আঘাতে মনে হয় যেন ছাদ এখনি ভেঙ্গে পড়বে।

বাড়ীতে সবাই আছে, হটাৎ দেখা গেল ধান ভাঙ্গা ঢেকিটা ঢেকির ঘর থেকে বাইরে এসে শুন্যের উপর ভাষতেছে। হটাৎ করে কোত্থেকে যেন শত শত হাড় আর মাথার খুলি বাড়ীর উঠানে বৃষ্টির মতন বর্ষণ হতে লাগলো।



অবশেষে আজিবর কবিরাজকে আনা হয়েছিল, এবং ৫০ জন আলেম ব্যাক্তিকে সাথে নিয়ে সিরিজ ওজিফার মাধ্যমে আসাদ মিয়ার বাড়ীর সেই আশ্চার্য্যজনক ঘটনা বন্ধ করেছিল আজিবর কবিরাজ। তাহলে কি বলব? অবশ্যই জ্বীন আছে!

*****************************************************************

পর্ব-৩

এই সব ঘটনা থেকে আজিবরকে আসলই জ্বীনদের গুরু মানতে আমার কোন আপত্তি হয়নি কোনদিন। আজ এ পৃথিবীতে রাসেল নেই, মন খুব খারাপ লাগে, রাসেল জেগে ওঠে আমার স্মৃতিতে প্রায়শ। আমি নিজেই যেন আজিবরের ছেলে এমনই মনে করে আজিবর, আমিও তাকে আমার বাবার মতই সম্মান করি। কথা হয় মাঝে মাঝে। কিন্ত জ্বীনদের নিয়ে কৌতুহুল আমার শেষ নেই! এই কৌতুহুলের প্রধান কারণ আল-কোরান। কারণ আজ প্রায় ১৫০০ বছর ধরে স্বমহিমায় উদ্ভাষিত এই আল-কোরান। কোরানকে নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই, যারা নাস্তিক তাদের কথা আলাদা, তারা কি বললো না বললো সেসব নিয়ে কথা বলার জন্য পোষ্ট এটা না। তবে অনেক অনেক ইতিহাস প্রসিদ্ধ ব্যাক্তিত্ব, সায়েন্টিষ্ট, দার্শনিক তো এই কোরনাকে বিশ্বাস করে। কালকে জয় করে কোরান হয়েছে এক চির-সত্যের বাণী সংকলন। সেই কোরান-ই স্বয়ং জ্বীন আছে তা ঘোষণা করেছে বার বার। তাই বরাবর-ই আমি এই জ্বীন জাতির উপর কৌতুহল বটে।



আমার অনেক স্বপ্ন নিজে চোখে এই জ্বীনকে দেখা বা জ্বীনের অস্তিত্বকে বুঝতে পারে। কিন্ত আফসোস সেই স্বপ্ন আমার পূরণ হলো না কখনই। তাই দ্বারস্ত হলাম আজিবর কবিরাজের কাছে। কেন যেন বিশ্বাস হয়েছে, পৃথিবীতে জ্বীন বলে যদি কিছু থেকে থাকে তাহলে এই আজিবর কবিরাজ তা জানবে (কেন জানবে? সেটা প্রথম ২ পর্বের ঘটনাগুলই ব্যাখ্যা করে)। যাই হোক, অবশেষে নিজের ইচ্ছার কথা ব্যাক্ত করলাম আজিবরের কাছে। তিনি আমাকে হতাশ করলেন না, বরং একটা নিদির্ষ্ট দিনক্ষণ ঠিক করে দিলেন এবং আমাকে বললেন সেই সময় তার সাথে দেখা করতে, জায়গা হিসাবে ঠিক করে দিলেন একটা গোপনীয় জায়গা। কথামত কাজ। আজিবর মিয়া আমার সামনে, আমাকে প্রশ্ন করলেন কেন আমি জ্বীন দেখতে চাই? বললাম, আমি কোরান বিশ্বাস করি আর হাজার হাজার বছর ধরে জ্বীনদেরকে যে এত এত গল্প, কথা, গবেষণা প্রচলিত রয়েছে কিন্ত নিজ চোখে দেখি নাই তাই আমি এটা জানতে চাই। এর মাধ্যমে হয়তো সৃষ্টিজগতের আরো এক বিষ্ময় সম্পর্কে অবগত হওয়া যাবে।



বৃদ্ধ আজিবর মিয়া আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। আমাকে বললেন, বাবা রাজ আমার অনেক বয়স হয়েছে, কদিন-ই বাঁচবো দুনিয়াতে, তাই তোমার এই আশা আমি পূর্ণ করবো আমার সাধ্যমত। তিনি আমাকে জানালেন অনেক কিছু:



জ্বীন নিয়ে আজিবরের শিক্ষা শুরু হয় সেই বৃটিশ আমলে থেকে। বিরাট এক আলেম ব্যাক্তি তার প্রথম ওস্তাদ। এরপর এই পৃথিবীর বুকে জ্বীন নিয়ে যতধরনের গবেষণা/আরাধণা আছে সবই তিনি পালন করেছেন। তিনি রাতের পর রাত কাটিয়েছেন কবরখানায়, শশ্মানঘাটে, জনশুন্য মাঠে, পুরোনো মন্দিরে, গভীর জঙ্গলে, সমুদ্রের বুকে, শত শত বছরের বুড়ো নীম-বট গাছের ডালে। কিন্ত তার এই সব গবেষণায় তেমন কোন ফল আসে নি। হতাশ হয়েছে বারবার। তিনি কোনদিন কোন জ্বীনের দেখা পাননি!



এরপর উপসংহার হিসাবে বললেন, সারাটা জীবন জ্বীন নিয়ে কাটিয়ে দিলাম, কিন্ত জ্বীন বলে কিছু আছে বলে টার বিশ্বাস হয় না। তিনি মনে করেন জ্বীন জাতি যদি কখনও পৃথিবীর বুকে থেকেও থাকে তবে তারা এখন ধ্বংস হয়ে গেছে, এই পৃথিবীতে তাদের অস্তিত্ব এখন আর নেই! আমি তার কাছে জানতে চাইলাম, তাহলে আপনাকে নিয়ে এট সব ঘটনা রয়েছে এইগুলো কিভাবে সম্ভব। তিনি উত্তর দিলেন, প্রত্যেকটির ঘটনার পিছনেই যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে। এসব ঘটনার কোনটিতেই জ্বীনদের সংশ্লিষ্টতা ছিলা না। আজিবর কবিরাজকে আমি আরো বললাম, আপনি নিজে এরকম মনে করেন তাহলে কেন জনসম্মুখে এটা প্রকাশ করেন না? তিনি বললেন এতে করে শরীয়তের আলেমরা তাকে কাফের বলে ঘোষণা দিবেন, ঝামেলা শুরু হবে।



অবশেষে, কি আর করার! প্রিয় পাঠক আমিও হতাশ হয়েছি, কারণ জ্বীন বলে আদৌ কোন কিছু আছে এরকম কোন প্রমান আমি নিজ চোখে দেখিনি।

*****************************************************************

পর্ব-৪ (শেষ)

জ্বীন দেখিনি, জ্বীনের অস্তিত্ব আদৌ আছে কিনা তা আমার কাছে রহস্যই থেকে গেল! কিন্ত তবুও কথা থেকেই যায়। জ্বীন জাতি বলে কিছু আছে সেই অন্ধ বিশ্বাস আমি করতে পারছি না তবে নেই সেটাও বলছি না। মানুষ তার জ্ঞান দিয়ে যদি কোন দিন প্রমান করতে পারে সেই আশায়।



বিভিন্ন বর্ননায় জ্বীনদের যে চিত্র ফুটে ওঠে তার আলোকে হয়তো কোনদিন সম্ভব হবে জ্বীনদের অস্তিত্ব প্রমান করা!



জ্বীনদের মোটামুটি বর্ননাগুলো এরকম:

১) জ্বীন অদৃশ্য।

২) জ্বীন আলো দিয়ে তৈরি।

৩) জ্বীন খুব দ্রুত বেগে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারে।

৪) জ্বীন আমরা যে সব প্রানী দেখি সে সবের রুপ ধারণ করতে পারে (হয়ত সব প্রানীর না তবে কিছু কিছু হয়তো)।

৫) জ্বীন পৃথিবী বাদে অন্য গ্রহ-নক্ষত্রে চলাফেরার করার ক্ষমতা রাখে।

৬) জ্বীনকে মানুষ নিয়ন্ত্রন করার ক্ষমতা রাখে।

৭) জ্বীন অন্ধকারে থাকতে সাচ্ছন্দ বোধ করে! আলোতে ডিষ্টার্ব ফিল করে!





এই সব বর্ননাগুলো কি একে অপরের সাথে কনফ্লিক্ট করে? বর্তমান বিজ্ঞান অনুসারে কিন্ত তা করে না! কিভাবে?



মনে করি জ্বীন আলো দিয়ে তৈরি। আলোর বৈশিষ্ট্য সত্যিই অদ্ভুত! আলো আসলে বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গ। আলোকে যদি আমরা কোন ফ্রিকোয়েন্সি ব্যাপ্তিতে সীমাবদ্ধ না রেখে, বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গের সম্ভব্য পুরো ফ্রিকোয়েন্সিতে চিন্তা করি তাহলে কিন্ত বিষয়টি জটিল হয়ে গেল। কারণ তাত্বিকভাবে আমরা অসীম ফ্রিকোয়েন্সির বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গ জেনারেট করতে পারি। তাহলে জ্বীন কোন ফ্রিকোয়েন্সিতে তার অদৃশ্য অস্তিত্ব ধারণ করে সেটা গবেষণার বিষয়। তবে আমরা মনে করতে পারি, জ্বীন যদি আলো তথা বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গ দিয়ে তৈরি হয়, তাহলে সে অদৃশ্য হতে পারে এবং এক স্থান থেকে অন্য স্থানে খুব দ্রুত যেতেও পারে।



আমরা জানি বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গ শক্তি বহন করে এবং সেই শক্তিকে ভরে পরিবর্তন করা সম্ভব। অন্যদিকে ভরকে শক্তিতেও পরিবর্তন করা সম্ভব। সুতরাং জ্বীন যদি আলো তথা বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গ দিয়ে তৈরি হয় তাহলে সে দৃশ্যমান ভরেও পরিবর্তন হতে পারে তবে সেই ভর দেখতে কেমন হবে সেটা আমি এখন ভাবতে পারছি না।



বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গ অন্য কোন বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গের সাথে ইন্টারএ্যাকশনে যেতে পারে এবং এতে করে তাদের বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয়ক্ষেত্রের পরিবর্তন হতে পারে। সুতরাং জ্বীন আলোতে ডিষ্টার্ব ফিল করতেই পারে। তবে এক্ষেত্রে কথিত যে হিউম্যান চোখে ভিজিবল আলোতেই তারা ডিষ্টার্বড হচ্ছে। এটা গবেষণার একটা ক্লু বৈকি!



জ্বীন যদি বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গ দিয়ে তৈরি হয়, তাহলে বলায় যায় বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গের বিচরণ সমস্ত মহাবিশ্বব্যাপি। আর এই মহাবিশ্বকেই তো নিয়ন্ত্রন করতে চায় মানুষ! সুতরাং জ্বীন তো নস্যি মাত্র।



জ্বীনদের নিয়ে কিন্ত আসলেই গবেষণা হয়! ১৯৮৮ সালে পাকিস্থানের নিউক্লিয়ার সায়েন্টিষ্ট সুলতান বশিরউদ্দীন মাহমুদ ওয়াল ষ্ট্রীট জার্নালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন জ্বীন হতে পারে রিনিউএবল এনার্জির এক অফুরন্ত উৎস।



যাই হোক ভবিষ্যত সময়ই হয়তো সঠিক তথ্যটি আমাদের সামনে নিয়ে আসবে, হয়তো আমরা জানবো না, কিন্ত মানুষ তো জানবে। আর সেই সাথে হয়তো শুরু হবে সভ্যতার এক নবদিগন্তের অধ্যায়। ক্রমান্বয়ে বস্তবাদী দুনিয়ার দিকে ধাববান বিশ্বে জ্বীন কি হতে পারে কোন গবেষণার বিষয়?

Sunday, December 20, 2015

শাকিলের পরীক্ষার ডর নাকি জীনে ধরা?

এ ব্যাডা হোনছোছ ....... শাকিল্লারে নাকি কেমন করতাছে, জীনে টিনে ধরছে মনে হয়।

সেদিনই টেষ্ট পরীক্ষা মাত্র একটা দিয়া শুরু করলাম। পরীক্ষা দিয়া আমরা হলের সামনে মাঠে গিয়া বাতাস খাইতেছি এমন সময় এই খবর।

শামীমের কথা শুইন্না তো টাস্কি খাইলাম।

কস কি ? চল তো দেহি।

বাতাস খাওয়া খাওয়ি বাদ দিয়া গেলাম শাকিলের রুমে। রুমে শাকিল ছাড়া সালাউদ্দিন নিজের সিটে বইয়া শাকিলের তামশা দেখতাছে আর হুজ্জাতের লগে শাকিল করতেছে তেড়িং বেড়িং। বাবু আর আমি গিয়া রুমে ঢুকতেই খাইলাম ফাঁপর। শাকিল দেড় গজের মোডা এখখান রড লইয়া ঘুরাইতেছে । আমি তো ভীতুর ডিম, ডর আর ওর কাছেই গেলাম না।

বাবু কাছে গিয়া কইলো ........

এ শালিক কি হইছে রে?

কোন উত্তর নাই শাকিলের ... রড লইয়া ফ্লোরে বাইরা বাইরি করতেছে।

হঠাৎ ......... ধা........ম কইরা মারলো সামনের দেয়ালে। বাবু তারতারি একদিকে সইরা গেছে দেইখ্যা গায়ে লাগে নাই।

সাহসী পোলা বাবু আবারো গেলো ...... কি হইলো তা জানতে কিন্তু কে হোনে কার কথা............ কাছে গেলে বাবুর লগেই রেসলিং এর লাহান ধস্তাধস্তি, কোস্তাকুস্তি। ফ্রি ফ্রি কত্তুগুলা কিল, ঘুষি খাইয়া হালাইছে পোলাডা।

আকামে কিল ঘুষি খাইয়া কাম নাই ,দূরে দাড়াইয়া শাকিলের তামশা দেহাই ভালো।

এর মইদ্যে পুরা হলে গেলো চাউর হইয়া, তারভীরের পরে এবার শাকিলরে জীনে ধরছে।হগলে বিশ্বাসও করলো তারাতারি কারণডা হইল কয়দিন আগেই পাশের হলের বামরুম থেইক্কা পরীতে ধরছিলো নাকি সিনিয়র ভাই তানভীররে। আর যায় কৈ, পোলাপান সব আইলো জীন পরীতে ধরলে কেমনে কি করে তা দেখতে। চামে যদি সুন্দরী পরীর লগে ভাব জমাইয়া ফ্রি ফ্রি উড়াল দ্যাশে যাওয়া আর সুন্দরী একখান পরীরে পটাইয়া প্রেম করা যায় তাইলে খারাপ কি?

কিন্তু কৈ হালার জীন-পরী? কাউরেই তো দেহা যায় না। খালি দেহা যায় শাকিলরে।

টেংটেইংগা পোলা শাকিল বড় একটা রড লইয়া সামনে যারে সামনে পাইবে তারেই মারবে মারবে ভাব। কারো লগে কোন কথা কয় না................ খালি গোখরা সাপের লাহান ফোঁস ফোঁস করতেছে আর দরজার সামনের সিটে বইস্যা মাথাডা নিচের দিকে দিয়া খালি রড নিয়া বাইরা বাইরি। আর মাঝে মাঝ হাঁক ডাক মারে........ কোন হালারপুত কাছে আবি না, এক্কারে খাইয়া হালামু।

পোলাপানের কি আর কাম আছে হলের পাতলা ডাইলের লাহান ফ্রি মাইর খাওবো? খাম্বা আরিফের লাহান যাগো কইলজাডা এট্টু চিতাইন্না ওরা দরজার সামনে যায় আর আয় কিন্তু শাকিলের ভাবসাব দেইক্খা আর বেশী আগায় না, আর যাগো গুই হাপ দেখলে এট্টুতেই বুক ধুক ধুক করে অরা জালনা দরজার ফাঁক দিয়া শিশু মাছের লাহান ভুচকি মাইরা তারতারি দূরে সইরা যায়, যদি জীনে পরীতে অগো দিকে নজর দেয় হেই ডরে। নাহ, …….আপতত কোন কিছুতে কাম অইবে না।

হলে ঝামেলা বাড়াইয়া লা্ভ নাই বাপ মার হাতে পোলাতে তুইল্লা দেয়ার লইগ্গা অফিস দিয়া ফোন দিলো অর বাসায়। শাকিলরে এহন ওর রুমে তালা দিয়া পোলাপানে আটকাইয়া রাকছে, যা ব্যাডা রুম বইয়া যা পারোস কর। স্যারেরা আইলে আর বাপ মা আইলে খুলবে। হলের স্যাররা আইলো কিন্তু জীন পরীর ডর দেহাইয়া কাছে না যাওয়ার লইগ্গা পোলাপানে নিষেধ করলো।

কেমনে কি করন যায় হেই প্লান বানাইতেছে হগলে মিল্লা .......

সন্ধ্যা হইয়া গেছে। না এমনে আর চলতে দেওন যায় না। কাইল আবার পরীক্ষা, পড়ালেহা করতে হইবে। ওরে ধইরা ডাক্তারের ধারে পাডাইতে হইবে নাইলে বাইন্দা বাসায় পাডাইয়া দিতে হইবে। কিন্তু কে যাইবে অর সামনে...... যেমনে রড দিয়া দাঙ্গা পুলিশের লাহান আৎকা বারি দেয় বারি একখান লাগলে খবরই আছে।

এরমদ্যে আইলো হগলে যারে ডরায়, দেকলেই হাত পা কাপাকাপি শুরু করে হেই কালাম স্যার। হের বেতের একবারি খাইলে দুই বেলা ডাত মাইক্খা খাওন যায় না ব্যথায় আর পাছায় দুইডা মারলে তো পাছা চুলকাইতে চুলকাইতে দিন শ্যাষ। হাক ছাড়লো.............. আরে দরজা খোল, দেহি শাকিল কয় কি? স্যাররে দেইক্খা শাকিল ডরাইতে পারে। খুল্লো দরজা। স্যারও এট্টু এট্টু ডরাইছিলো মনে হয় হেরলইগ্গা বেশী ভিতরে আগাইলো না, দরজার সামনে গিয়াই শাকিলরে ডাক দিলো , এ শাকিল কি হইছে তোর? বেত আনমু নাকি? এ তোরা ধরতো অরে.........

পোলাপানের ডর ভয় কইম্মা গেলো, সাহসী পোলা মোবারক, বাবু, অহিদ, সালাউদ্দিন সহ কয়েকজন দরজা খুইল্লা একলগে ঢুকলো ভিতরে। হা ডু ডু খেলায় যেমনে একটারে বাগে পাইলে সবগুলায় ঐডার উপ্রে ঝাপাইয়া পরে হেমনে কইরা একলগে ঢুইক্কা ধরলো ঝাপটাইয়া।

আর যায় কৈ............ কিন্তু হায় রে এই চিকনা বাশের কাডির লাহান চেংড়া পোলার গায় এতো শক্তি আইলো কোনহান থেকে?

৪/৫ জনে মিল্লা ধইরা রাখতে পারতেছে না। হা ডু ডু লাহান একলগে ধরায় আর বেশী সুবিধা করতে পারলো জীন-পরীতে ধরা শাকিলরে। ধইর্রাই নিয়া নিলো রডটা।যাহ তোর অর্ধেক কাম শ্যাষ। ভাইগ্য ভালো ......... যেমনে মারা ধরছিলো এট্টুর লইগ্গা মোবারকের মাথাডা ফাডে নাই। নাইলে তো জীন সামলানোর বদলে মোবারকের মাথা সামলানোর কামে ভ্যাজতে হইতো হগলরে।

৪/৫ জনে ঝাপটাইয়া ধইর্রা আটকানোর চেষ্টা করতেছে কিন্তু চেংড়া পোলার গায়ে এতো শক্তি কোন থেইক্কা আইলো কেডা কইবে? বহুত চেষ্টায় বাগে আনতে পারতেছে না। হাত পা ছুডাছুডির করে কত লাত্থিগুতা যে পড়ছে তার কোন হিসাব দিতার বে না কেউ। দিবেই বা কেমনে, কেউতো আর ডাইনিং ম্যানেজার ওহাব ভাইর লাহান হিসাবের খাতা লইয়া জীন পরী দেখতে যায় নাই। আমরা আর করমু কি, খাড়াইয়া খাড়াইয়া তামশা দেখতেছি।

রুম থেইক্কা র্যা বের ক্রস খাইলে যেমনে চাইর হাত পায় ধইরা উচকাইয়া ভ্যানে আনে হেমনে উচকাইয়া নিয়া আইলো বারান্দায়। চাইপ্পা ধাইরা খাওয়াইলো এক জগ পানি। খাইতে চায় না কিন্তু পোলাপানের কথা ……খাবি না ক্যা, খা…….। মাথায়, গায়ে পানি ঢাইল্লা ঢাইল্লা একক্কারে গোসল করাইয়া দিলো। নাহ এইবার মনে হয়, পোলার কুইত শেষ............. প্রায় ৩০ মিনিট মোচড়ামুচড়ি, কোস্তাকুস্তি, ধস্তাধস্তির পর শান্ত হইলো। তখন প্রায় অজ্ঞান।

জীন পরী দ্যাকতে দর্শক আইছে প্রচুর, দুই টাহা কইরা উডাইলেও রাইতে একখান জাম্পেস মুড়ি ভোজ দেওন যাইতো, হেইডা আর দেয়া হইলো না। এর মইদ্য আইলো অর বাপ মা। বাপে না কানলেও পোলারে দেইখ্খা মায়ে তো কাইন্দা কাইট্টা শ্যাষ, এহন আন্টিরে সামাল দিতে আবার আরেক ঝামেলা। স্যারেরা শাকিলরে তুইল্লা দিলো অর বাবা মায়ের হাতে। বড় পোলারে জীনে নাকি পরীতে ধরছে এই চিন্তা লইয়া সিএনজি নিয়ে আঙ্কেল আন্টি গেলো বাসায় আর পরদিন পরীক্ষা বইল্লা আমরা গেলাম পড়ার টেবিলে।

শাকিলরে বাসায় নেওয়ার সময় তেমন কিছু মনে হইলো না কিন্তু সপ্তাহ খানেক পরই হালকা কানাঘুষার আওয়াজ পাওয়া গেলো।

"শাকিল নাকি পরীক্ষা না দেয়ার লইগ্গা ভংচা ধরছিলো"

কস কি?

হুম। হুনছি একজনের ডে।

হলে তখন জীন পরীর ডর ভয়...... কারে কোনহান দিয়া ধরে কেডা জানে? বামরুমে গেলেও দুইজন একলগে যায় এই অবস্থা।পোলাপানে কানে কানে ফিসফাস করলেও আওয়াজ হয় না । যারা হুনছে ........ তারা তো তাজ্জব!!!!!!!!!!!!!!!!!!

তাই নাকি!!!!!!!!!!!!!!!!!! আরে না........ জীনেই ধরছে , দেখছস না পাশের হলে তানভীররে কয়দিন আগেই পরীতে ধরছিলো, অরেও মনে হয় ঐডাতেই ধরছে।

আরে ব্যাডা ....... ভংচা হইতেও পারে ।.... আর শাকিল যে বান্দরের বান্দর অরে বিশ্বাস করা কঠিন। আরে হুনছি ওইদিন নাকি অর পরীক্ষা ভালো হয় নাই। জীন,পরীর ডরে আলোচনা বেশী গড়াইতো না।

শাকিল আর আইলো না পরীক্ষা দিতে। মাস খানেক পর যখন আইলো তখন পরীক্ষা শেষ হইয়া রেজাল্টও দিছে। শাকিল পুরাই স্বাভাবিক, তয় কিছুডা চুপচাপ। জীন পরীর ডরে তেমন কেউ কথাও কয় না অর লগে, খালি জিগায়..... কিরে শাকিল ভালো আছোস তো? আর ভংচা ধরার কথা জিজ্ঞাস করা হ্যাতো আরো পরে................

শাকিলের কাছাকাছি কয়েকজন হয়তো পুরাডা জানে কিন্তু কখনো কয় নাই কি হইছিলো?
রহস্যের আর সমাধান করা হয়নি........... কি হয়েছিলো সেদিন??
জীনে ধরা নাকি পরীক্ষার ডর!

হিস্টিরিয়া

হিস্টিরিয়া জিন-ভূতের আছর, পাগলামি এসব কিছু নয়, নিউরোসিস জাতীয় মানসিক রোগ।
মানসিক রোগ দুই প্রকারের হয়ে থাকে। একটি মৃদু মাত্রার তাকে নিউরোসিস বলা হয়, অপরটি জটিল মাত্রার একে সাইকোসিস বলা হয়। নিউরোসিস জাতীয় রোগগুলো যেন অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার, অবসেশন, হিস্টিরিয়া, ফোবিয়া ইত্যাদি। সাইকোসিস জাতীয় রোগগুলো যেমন বিষণœতা, ম্যানিয়া, সিজোফ্রেনিয়া ইত্যাদি। হিস্টিরিয়া একটি নিউরোসিস রোগ। এ রোগটি শারীরিক সমস্যা বা মানসিক সমস্যা নিয়ে প্রকাশ পেতে পারে।
১৮১৫ সালে সর্বপ্রথম ফরাসি চিকিৎসাবিদ চারকোট এ রোগের পরীক্ষা করেন। তিনি সম্মোহন পদ্ধতি প্রয়োগ করে দেখলেন যে, সম্মোহিত অবস্থায় রোগীর মনে যদি এ ধারণা সঞ্চার করা যায় যে তার রোগ ভালো হয়ে গেছে তাহলে তার রোগ সত্যিই ভালো হয়ে যায়। আবার রোগীকে সম্মোহিত করে পুনরায় যদি তার মধ্যে এ ধারণা সঞ্চার করা যায় সে অসুস্থ তাহলে তার রোগ পুনরায় ফিরে এসেছে। এ ঘটনা থেকে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন হিস্টিরিয়ার উৎপত্তির সাথে ধারণা বা রোগীর অবচেতন মনের সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু পরে দেখা গেল ওই ধারণা অনুযায়ী সব রোগের কারণ ব্যাখ্যা করা যায় না। কোনো কোনো মনোবিজ্ঞানী মনে করেন মস্তিষ্কের কাজের গোলমালের ফলেই হিস্টিরিয়া রোগ হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই মতবাদকে প্রমাণ করা যায়নি। মনোসমীক্ষার মতামতই মোটামুটি বেশিরভাগ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ মেনে নেন। মনোসমীক্ষার তত্ত্বানুযায়ী নিজের মনের অজান্তে অবদমিত মানসিক দ্বন্দ্ব থেকেই হিস্টিরিয়ার লক্ষণ সৃষ্টি হয়। সহজাত আচরণ বাইরের জগতে প্রকাশ হতে গেলেই রোগীর মনে দারুণ উৎকণ্ঠা ও দুশ্চিন্তার সৃষ্টি হয়। সেই উৎকণ্ঠাকে দীর্ঘদিন সহ্য করা মানুষের পক্ষে অসম্ভব। ফলে আমাদের অজান্তেই মানসিক ক্রিয়া এই বৃত্তিগুলোকে অবদমন করে। এ অবদমনের অর্থ এই নয় যে, বৃত্তিগুলো চিরতরে নির্বাসিত হলো। মানসিক ক্রিয়াকে সবসময়ই সক্রিয়ভাবে অবদমিত রাখতে হয় বৃত্তিগুলোকে। অবদমনকারী শক্তিগুলো যখনই কোনো কারণে দুর্বল হয়ে পড়ে, অবদমিত রাখতে হয় বৃত্তিগুলোকে। অবদমনকারী শক্তিগুলো যখনই কোনো কারণে দুর্বল হয়ে পড়ে, অবদমিত বৃত্তিগুলো তখনই উঠে আসতে চায় চেতনায়। এ অবস্থা উপস্থিত হলে অবদমন ছাড়া মানসিক প্রক্রিয়ার সাহায্য নিতে হয়Ñ নিউরোসিসের লক্ষণ প্রকাশের সুযোগ ঘটে তখনই। এ ধরনের মানসিক প্রক্রিয়া অনুসারে নিউরোসিসের লক্ষণও ভিন্ন হয়। কনভারশন হিস্টিরিয়াতেও কনভারশন নামক প্রক্রিয়া এবং ডিসোসিয়েটিভ হিস্টিরিয়ার ক্ষেত্রে ডিসোসিয়েটিভ প্রক্রিয়া কাজ করে। যে হিস্টিরিয়াতে শারীরিক লক্ষণ দেখা যায় তাকে বলা হয় কনভারশন হিস্টিরিয়া। যেমন হঠাৎ করে হাত কিংবা পা প্যারাইলাইসিস হয়ে যাওয়া, হঠাৎ করে কথা বন্ধ হয়ে যাওয়া, চোখে দেখতে না পাওয়া ইত্যাদি। আর যে হিস্টিরিয়াতে মানসিক লক্ষণ দেখা যায় তাকে বলা হয় ডিসোসিয়েটিভ হিস্টিরিয়া। যেমন- এলোমেলো ঘুরে বেড়ানো, খিঁচুনি রোগ, ঘুমের মধ্যে হাঁটা ইত্যাদি।
একটি কেস স্টাডি বর্ণনা করা যাক। নায়লা (কাল্পনিক নাম) বিয়ের দিন তার স্বামীর সাথে শ্বশুরবাড়িতে চলে আসে। আসার কয়েক ঘণ্টা পরই তার কথা বন্ধ হয়ে যায়। তারপর কেটে গেছে ২-৩ দিন। মেয়েটির মুখে আর কথা ফুটছে না। শত চেষ্টা করেও তাকে কেউ কথা বলাতে পারছে না। খবর পেয়ে বাপের বাড়ির লোকজন এলো। তারা দোষ দিচ্ছে এই বলে যে, মেয়ে তো ভালোই ছিল, শ্বশুরবাড়িতে ঢুকতেই তার এ অবস্থা হলো কেন? নিশ্চয়ই এ বাড়ির লোক কিছু করেছে! হতবাক হয়ে পড়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। কিছুতেই বুঝতে পারছে না কী করে এমন হলো। তারা দেখেছে বউ যখন বাড়িতে পা দিয়েছে তখন মুখে ঠিকই কথা ফুটেছে। তবে কী কারো নজর লেগেছে নতুন বউয়ের ওপর। এ ভেবেই ডাকা হলো নামকরা ওঝাকে। ঝাড়-ফুক, তুক-তাক ইত্যাদি ভৌতিক ক্রিয়াকলাপও কিছু করা হলো। কিন্তু অবস্থার কোনো পরিবর্তন দেখা গেল না। তখন প্রায় দু’দিন পর শহরের হাসপাতালে হাজির হয়েছে সবাই। প্রাথমিক পর্যায়ে ঘটনার বিস্তৃত বিবরণ সংগ্রহ করলাম। তারপর আত্মীয়-স্বজনকে বাইরে বসিয়ে মেয়েটিকে আলাদা করে তার প্রতি মনোচিকিৎসার বিধিবিধান অনুযায়ী চিকিৎসা প্রয়োগ করলাম। নাটকীয়ভাবে মেয়েটির মুখে কথা ফুটলো সেদিনই। খুবই কম সময়ের মধ্যে সেদিন যতটা সহজে সুফল পেয়েছিলাম সাধারণত এত সহজে ফল পাওয়া যায় না। মেয়েটির মুখে কথা ফুটতে দেখে আশ্বস্ত হলো বাপের বাড়ি ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন। দূর হলো উভয়পক্ষের লোকজনের মনোমালিন্য, দোষারোপ। এখন বিদ্বেষ ভুলে নিবিড় করে তুলল আত্মীয়তার বন্ধন। হাসিমুখে মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার আগে অবশ্য তাদের কিছু পরামর্শ দিয়েছিলাম। এই পরামর্শ দেয়া চলছিল ৪-৫ মাস যাবত। চিকিৎসা শেষে পরামর্শ দিলাম যে, ভবিষ্যতে যদি আবার এরকম ঘটে তখনি যেন জানানো হয় আমাদের।
৫ বছর পরে জানতে পারলাম ওরা এখন সুখেশান্তিতে ঘর করছে। কয়েক মাস আগে তাদের একটি মেয়েও হয়েছে।
এবার দেখা যাক নায়লার রোগটি কী ছিল। আসলে এমন কী হয়েছিল যে তার কথা পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বিয়ের পরের দিন শ্বশুরবাড়িতে পা দিতে না দিতেই আত্মীয়-স্বজন আর পাড়া-পড়শীরা তার বাপের বাড়ি সম্পর্কে বেশ কিছু আপত্তিকর মন্তব্য করেছিল। সেসব মন্তব্যের বেশিরভাগই মেয়েটির বাবাকে কেন্দ্র করে। যেমন মেয়ের বাবা সুবিধার মানুষ নয়, নানাভাবে তারা জামাইকে ঠকিয়েছে, গয়নাগাটি, জিনিসপত্র ঠিকমতো দেয়নি, ওরা প্রতারক ইত্যাদি। এরপর কী হলো মেয়েটির পুরোপুরি মনে নেই। নায়লা বরাবর ছিল জেদি আর ডানপিটে ধরনের। বিয়ের আগে ওর বাবা-মা এবং আত্মীয়-স্বজন বারবার বলে দিয়েছিল শ্বশুড়বাড়ির লোকজন যে যাই বলুক এমনকি কোনো কটূক্তি করলেও তাকে সবই সহ্য করতে হবে মুখ বুজে, মা তার গা ছুঁয়ে বলেছিলেন- এ আমার দিব্যি রইল। কিন্তু শ্বশুরবাড়িতে প্রবেশ করেই সে শুনল তার বাবার সম্পর্কে বিশ্রী কটূক্তি। শুনেই তার প্রবল ইচ্ছা হয়েছিল প্রতিবাদ করতে কারণ সে বরাবর এমন প্রতিবাদীই ছিল। কিন্তু তা কী করে হয়! সে যে মায়ের কাছে শপথ করে এসেছে। কিন্তু সে প্রতিবাদ করতে না পারায় তার বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠছিল প্রবল যন্ত্রণায়। মনে হচ্ছিল যেন এক্ষুণি অজ্ঞান হয়ে যাবে। আর ঠিক তখন থেকেই লোপ পেল তার কথা বলার শক্তি। কথা বন্ধ হওয়া যে মেয়েটির ইচ্ছাকৃত ব্যাপার তা নয়। মানসিক জটিল প্রক্রিয়ার ফলে তার বাকরহিত হয়েছিল। এই প্রক্রিয়াকেই বলা হয় কনভারশন অর্থাৎ দ্বন্দ্বজনিত মানসিক যন্ত্রণা যা শারীরিক অক্ষমতায় রূপান্তরিত হয়েছে। এই রূপান্তরিত অবস্থাকেই বলে কনভারশন হিস্টিরিয়া।
কথা বলার শক্তি হারানোর ফলে মেয়েটি সাময়িকভাবে অক্ষম হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু একটি লাভও হয়েছিল। এ ঘটনার পর তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন এতই ভয় পেয়েছিল যে ভবিষ্যতে তার বাবা-মা সম্পর্কে আর কোনো বিরূপ মন্তব্য করেননি বরং তার প্রতি সহানুভূতিশীল হয়েছেন। একেই বলে হিস্টিরিয়াল গেইন বা হিস্টিরিয়ার প্রাপ্তিরোগ।
হিস্টিরিয়া রোগের চিকিৎসা : এ রোগের চিকিৎসায় ওষুধের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের কাউন্সিলিং বা সাইকোলজিক্যাল চিকিৎসা প্রয়োগ করা প্রয়োজন বরং এই ক্ষেত্রে সাইকোথেরাপী বেশী কার্যকর। প্রথমে রোগীকে মৃদুমাত্রার দুশ্চিন্তানাশক ওষুধ দেয়া হয় পরে তার সাথে গভীর সাক্ষাৎকার নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সাইকোলজিক্যাল চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়।

মানুষ কি চাঁদে সত্যি গিয়েছিলো?

মানুষ ফ্যান্টাসী পছন্দ করে। বস্তবতার কাটখোট্টা জগৎ তাকে যথাযথভাবে বিনোদিত বা আকৃষ্ট করে না। ফলে একশ্রেনীর মানুষ বিভিন্ন ধরনের ঘটনা, তত্ত্ব এসবের বিকল্প ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর চেষ্টা করে বা এধরনের কর্মকান্ডে সমর্থন ও আস্থা স্থাপন করে আনন্দ লাভ করে। এভাবেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচলিত হয়। এগুলোর প্রতিষ্ঠার পেছনে সামাজিক বা রাজনৈতিক কারণও জড়িত থাকে। গতশতাব্দীর সবচেয়ে বহুল প্রচলিত ষড়যন্ত্রতত্ত্বগুলো নির্মিত হয়েছে চাঁদে মানুষ অবতরণ নিয়ে। একশ্রেনীর মানুষের কাছে মানুষ্যবাহী চন্দ্রাভিযান পুরোপুরি ধাপ্পাবাজি হিসেবে পরিগণিত এবং এটি যে শুধু তাঁরা বিশ্বাস করেন তাই নয় এর স্বপক্ষে প্রচুর যুক্তি-প্রমাণ হাজির করেন। তবে বলাই বাহুল্য সেসব যুক্তি-প্রমাণে প্রচুর ফাঁক-ফোঁকর থেকে যায় আর সেকারণেই সেগুলো ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হিসেবে পরিচিত। অথচ চাঁদে মানুষ পাঠানোর জন্য নাসা বিপুল সময় ধরে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে, বিপুল পরিমান মানুষ এই অভিযানগুলো সফল করার জন্য কাজ করেছে। মানুষ চাঁদে যায়নি এর স্বপক্ষে এত বেশী যুক্তি-প্রমান হাজির করা হয়েছে যে সেসব বিস্তারিত লিখতে গেলে একটি বই হয়ে যাবে। তাই এখানে শুধুমাত্র উল্লেখযোগ্য কয়েকটি যেগুলো বহুল প্রচলিত এবং সাধারণ মানুষের একটি অংশেরও যেসব বিষয়ে কৌতুহল আছে সেগুলো ব্যাখ্যাপূর্বক খন্ডন করা হলো। যাঁরা এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে চান তাঁরা এই উইকিপিডিয়া আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।
ষড়যন্ত্র-১: চাঁদের মাটিতে মানুষ পা রাখেনি এই ষড়যন্ত্রতত্ত্বে যাঁরা বিশ্বাস করেন তাঁরা তাঁদের বিশ্বাসের পক্ষে যুক্তি হিসেবে চন্দ্রাভিযানের এইধরনের ছবিগুলো হাজির করেন। ছবিতে কালো আকাশে কোনো তারা দেখা যাচ্ছে না (প্রথম ছবি)। তাঁদের ভাষ্য হলো যেহেতু চাঁদে বায়ুমন্ডল নেই তাই সূর্যালোক চাঁদের বায়ুমন্ডলে বিক্ষিপ্ত হয়ে তারাগুলোকে অদৃশ্য করতে পারবে না। সেই ক্ষেত্রে ব্যাকগ্রাউন্ডে ঝকঝকে তারার অবস্থান থাকার কথা।

চাঁদের মাটিতে অভিযাত্রীরা, পেছনে কালো পটভুমি।
কিন্তু দ্বিতীয় ছবিটি দেখুন, এটি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (ISS) থেকে তোলা পৃথিবী পৃষ্ঠের ছবি যেটি পৃথিবীকেই আবর্তন করে ঘুরছে। একই যুক্তি অনুসারে এখানে ব্যাকগ্রাউন্ডে তারার উপস্থিতি থাকার কথা কিন্তু তা নেই। এই দ্বিতীয় ছবিটি নিয়েও যদি কারো সন্দেহ থাকে তাহলে এই লিংক থেকে ISS এর লাইভ ভিডিও সম্প্রচার দেখতে পাবেন, সেখানেও কোনো তারা নেই।

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে তোলা পৃথিবীপৃষ্ঠের ছবি, পেছনে কালো পটভুমি।
ব্যাকগ্রাউন্ডে তারা না দেখা যাওয়ার কারণ হচ্ছে এক্সপোজার। ছবি তোলার সময় লেন্সের এক্সপোজার কমিয়ে বা বাড়িয়ে আলোর পরিমান নিয়ন্ত্রিত করা হয় (মূলতঃ শাটার স্পীডের মাধ্যমে তা করা হয়)। যদি এক্সপোজার বেশী হয় তাহলে অনেক ক্ষীণ আলোর উৎসও ছবিতে ধরা পড়বে। দিনের বেলায় চাঁদ এবং পৃথিবী পৃষ্ঠের তুলনায় তারাগুলোর উজ্জ্বলতা অতি অতি অতি ক্ষীণ। এই ছবিগুলোতে যদি এক্সপোজার বাড়ানো হতো তাহলে তারা হয়তো দৃশ্যমান হতো কিন্তু সেই ক্ষেত্রে চাঁদ ও পৃথিবী পৃষ্ঠ অতিরিক্ত এক্সপোজারের কারণে সাদা হয়ে যেত এবং এগুলোর পৃষ্ঠের অনেক বৈশিষ্ট্য ছবিতে আর পাওয়া যেত না। আর এই ছবিগুলোর সাবজেক্ট হচ্ছে যথাক্রমে চাঁদ ও পৃথিবীর পৃষ্ঠ, ব্যাকগ্রাউন্ডের কালো আকাশ নয় তাই ক্যামেরার এক্সপোজার এমনভাবে রাখা হয়েছে যাতে এদের পৃষ্ঠের বৈশিষ্ট্যগুলো ছবিতে স্পষ্ট থাকে। নিচের ছবিতে দেখানো হলো কীভাবে এক্সপোজার পরিবর্তনের মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত ক্ষীণ আলোর উৎসগুলোর ছবিও তোলা যায় এবং সেই ক্ষেত্রে উজ্জ্বল আলোর উৎসগুলো ওভার এক্সপোজড হয়ে সাদা হয়ে যায়।

ষড়যন্ত্র-২: অনেকে মনে করেন যদিও চাঁদের মাটিতে বাতাস নেই কিন্তু চাঁদে যে পতাকা স্থাপন করা হয়েছে তার ছবিতে দেখা যায় পতাকা উড়ছে। এখান থেকে তাঁরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এটি আসলে অ্যারিজোনার মরুভূমিতে নির্মিত হয়েছে!
ব্যাখ্যা: একটু ভালো করে নিচের ছবিদুটো লক্ষ্য করুন, পতাকা কি সত্যিই উড়ছে?

বাজ অলড্রিন পতাকাকে স্যালুট করছেন।

স্যালুট শেষে হাত নামিয়ে আনার পরেও পতাকার ভাঁজগুলো একই অবস্থায় আছে।
পতকার একপাশ যেমন ফ্রেমের সাথে যুক্ত উপরের অংশও কিন্তু একটি টিউবুলার অ্যালুমিনিয়ামের ফ্রেমের মাধ্যমে যুক্ত। সেটি এই ছবি থেকে স্পষ্ট না বোঝার কোনো কারণ নেই। আর নিচের অংশ কুঁকড়ে আছে দেখে দূর থেকে মনে হতে পারে পতাকা উড়ছে, সেটি একটি ভিজুয়াল ইলুশন তৈরির জন্য আরোপ করা হয়েছে। আর দুটি ছবির পার্থক্যগুলো দেখুন। বাজ অলড্রিন প্রথম ছবিতে পতাকাকে স্যালুট করছেন। সেই স্যালুটকৃত অবস্থায় তার ডান হাত মাথায় ঠেকানো, ভালো করে লক্ষ্য করলে ডান হাতের দুটি আঙ্গুল দেখতে পাবেন হেলমেটের উপরে। দ্বিতীয় ছবিতে হাত নিচে নেমে এসেছে কিন্তু দুটি ছবিতেই পতাকার উড়ন্ত অবস্থা হুবহু একই আছে। যদি পতাকা বাতাসেই উড়ত তাহলে কি কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধান হুবহু একই রকমের কোঁকড়ানো অবস্থায় থাকত?
ষড়যন্ত্র-৩: “ঈগল মুন-ল্যান্ডার এবং 

Wednesday, December 16, 2015

জিনের আছর না অন্য কিছু?

জিনের আছর,ভূতে ধরা,মা কালী ভর করা—এ গুলো সব একই ধরনের অসুখ । রোগী অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে থাকে । চিকিৎসার অংশ হিসেবে সাধারনত কবিরাজ বা ওঝা ডেকে আনা হয় । সেই কবিরাজ অমানুষিক অত্যাচারের মাধ্যমে চিকিৎসা চালায়,যার ফলে রোগীর শারীরিক অনেক ক্ষতি হয় এমনকি কখনো কখনো মারাও যায় । চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় এই রোগগুলো সিজোফ্রেনিয়ার একটি পর্যায় ।

বাংলাদেশের গ্রামে গঞ্জে বিশেষত অশিক্ষিত মানুষদের মধ্যে এই রোগটি দেখা যায়।রোগী অলিক কিছু দেখে বা শোনে বা চিন্তা করে।অধিকাংশ সময়েই সে অডিটরী হ্যালুসিনেশনের শিকার হয়।সে এমন কিছু শোনে যেটা আশেপাশের আর কেউ শুনতে পায় না।সে ভাবতে পারে কেউ তার সাথে সবসময় কথা বলছে/নিরদেশ দিচ্ছে ।আবার একাধিক মানুষ তার মাথার ভেতর বসে কথা বলছে,রোগী জাস্ট রানিং কমেন্ট্রির মত করে তাদের কথা শুনছে ,এমন উপসর্গও হতে পারে। সে ভাবতে পারে কেউ তার সাথে সবসময় কথা বলছে।অনেক একে গায়েবী আওয়াজ বলে অভিহিত করে।অলীক অনেক কিছুই সে দেখতে পারে।উদ্ভট অনেক কিছুই সে ক্রতে পারে।ধর্ম বা পরিবেশ অনুযায়ী কেউ আরবীতে সুরা কেরাত পড়া শুরু করতে পারে,কেউ বা জয় মা কালী বলে নাচানাচি করতে পারে। উপসর্গ দেখে বাংলাদেশের সকল ধরনের জিনে ধরা,ভুতে ধরা,আছর পড়া,নজর লাগা ,ভর করা ইত্যাদি সকল রোগ কেই সিজোফ্রেনিয়া ধরা যায়।


রোগের কারন বংশগত এবং পরিবেশগত।বংশে অতীতে কারো সিজোফ্রেনিয়া থাকলে সেই পরিবারের পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে এই রোগের সম্ভাবনা থাকে।তবে বেশি প্রভাব পরিবেশের।ধর্মিয় বা আধ্যাত্মিক জগতের উপরে দৃড় বিশ্বাস তার মনে সিজোফ্রেনিয়ার বিজ বপন করে।ইসলামে বিশ্বাসী কোন তরুন তরুনীর উপর কখনো মা কালী ভর করে না।আবার কোন হিব্দুর উপর মুসলমান জিনের আছর পড়তে দেখা যায় না।

দেখা যায় ,যে এলাকায় শিক্ষার হার কম,সেই এলাকার কমবয়সী রা এই রোগে আক্রান্ত হয়।
অশিক্ষিত মানুষদের মস্তিষ্ক তুলনামূলকভাবে নতুন,অদ্ভুত বিষয় সহজে গ্রহন করতে পারে না।কোন নির্দিষ্ট ঘটনা বা তথ্য(কোন ভূত তাড়ানোর দৃশ্য,কোন প্যারানরমাল এক্টিভিটিজ,কোন ধর্মীয়/ সামাজিক মিথ অথবা এমঙ্কিছু যা সে ব্যাখ্যা করতে পারছে না) এই কিশোর কিশরীদের মস্তিষ্ক যখন আলোড়িত করে,তখন সে সর্বক্ষন এটা নিয়ে চিন্তা করতে থাকে।চিন্তা করে যখন কোন সলুশন পায় না তখন মস্তিষ্কে এম্ফেটামিন হরমোন নিসৃত হয়।এম্ফেটামিন আবার ডোপামিন নামক আরেক হরমোনকে নিঃসরনের প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।এই ডোপামিনের প্রভাবেই রোগি কাল্পনিক কথা শোনে,অবাস্তব জিনিস দেখে এবং অসম্ভব কাজ করতে পারে।
ধরা যাক ,কোন তরুনী দুপুরে গোছলের পরে বকুল গাছ তলায় বসেছিল।বিকালে তার মা তাকে ডেকে বল্ল,কেন সে বকুল তলায় বসেছিল?সে কি জানে না গোছলের পরে ভেজা চুলে বকুল তলায় বসলে জিনের নজর লাগে?তরুনী যদি অশিক্ষিত এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন হয় তাহলে এ ঘটনায় ওই তরূনীর মনে বেশ শক্ত একটা ভয় ঢুকে যাবে।(সে কুসন্সকার মুক্ত হলে একটুও ভয় পাবে না)রাতে হয়তো তার পরিবারের বয়স্ক দাদী নানী কারো কাছ থেকে সে কিছু জিনে ধরার গল্প শুনল,জিনে ধরলে মানুষ কি করে সে বিষয়ে তার কিছু ধারনা হল।এখন তার কাছে ভয়টা অনেক শক্ত হয়ে গেথে যাবে।তার ব্রেনে ডোপামিনের কাজ শুরু হয়ে গেছে।পরের কয়েক দিনের মধ্যেই তার সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশী।এবং আক্রান্ত হয়ে সে সেই সব আচরন করার চেষ্টাই করবে ,যে কাজের ইনফরমেশন গুলা তার মাথায় আছে।(দাদীর কাছে শুনেছে জিনে ধরলে পুরুষ কন্থে কথা বলে।সে চাইবে গলা মোটা করে কথা বলতে।তার পাশের ঘরের আচারের ওপর হয়তো তার লোভ ছিল।সে আদেশ করবে আমাকে ওই ঘর থেকে আচার এনে খেতে দাও ইত্যাদি)।

নির্দিষ্ট কিছু ড্রাগের প্রভাবেও সিজোফ্রেনিয়া ঘটতে পারে।বিভিন্ন পূজা পারবনে নেশা করার পর অনেকের মধ্যে উন্মত্ততার ভাব আসে।ক্লান্তিহীন ভাবে সে তখন নাচ গান করতে পারে।অনেক অপ্রত্যাশিত আচরন ও করতে পারে সে তখন।

সিজোফ্রেনিয়ার প্রভাবে রোগীর সাময়িক ভাবে স্মৃতি ভ্রংশ হতে পারে।আবার কখনো কখনো শুধু নির্দিষ্ট কিছু স্মৃতিই তার মাথায় থেকে যায়।রোগী এ সময় নিজের সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারনা পোষন করে।তার আশেপাশের পরিবেশে কি হচ্ছে সে এটা ধরতে পারে না।অসংলগ্ন কথা বার্তা বলে থাকে,যা স্বাভাবিক অবস্থায় তার বলার কথা না।এমনকি এ অবস্থায় তার গলার স্বর ও পরিবর্তিত হতে পারে।চূড়ান্ত অবস্থায় রোগী নিজের বা অন্যদের শারীরিক ক্ষতি করতে পারে।তার শারীরিক শক্তি এ সময় অনেক বেশি বলে মনে হতে থাকে।বা স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে সে অনেক বেশি কাজ করতে পারে এ সময়।

convulsion রোগের কিছু কিছু উপসর্গও এই ধরনের জিনের আছরের সাথে মিলে যায় । কনভালশনের ক্ষেত্রে রোগীর শরীর কাপতে থাকে , তাদের মুখ দিয়ে ফেনা বের হয় এবং কিছুক্ষন পরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে । এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ব্যাপার । এর সাথে ভৌতিক কোন ব্যাপার না ।চিকিৎসা করালে এ রোগ সম্পুর্ন সেরে যায় ।

এ রকম ক্ষেত্রে রোগীকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে । সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে রোগী পুরোপুরি ই সূস্থ হয়ে উঠবে । কোনভাবেই কবিরাজদের শরনাপন্ন হওয়া উচিত না ।রোগী যেন নিজেই নিজের কোন শারীরিক ক্ষতি করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে । 

Wednesday, December 9, 2015

রক্তের প্রয়োজন যাদের; রক্তদানের যোগ্যতাঃ-

রক্তের প্রয়োজন যাদেরঃ-
১. দূঘর্টনাজনিত রক্তক্ষরণ - দূঘর্টনায় আহত রোগীর জন্য দূঘর্টনার ধরণ অনুযায়ী রক্তের প্রয়োজন হয়।
২. দগ্ধতা - আগুন পুড়া বা এসিডে ঝলসানো রোগীর জন্য পাজমা/রক্তরস প্রয়োজন। এজন্য ৩-৪ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন।
৩. অ্যানিমিয়া - রক্তে R.B.C. এর পরিমাণ কমে গেলে রক্তে পযার্প্ত পরিমাণ হিমোগোবিনের অভাবে অ্যানিমিয়া রোগ হয়। হিমোলাইটিক অ্যানিমিয়াতে R.B.C. এর ভাঙ্গন ঘটে।
৪. থ্যালাসেমিয়া - এক ধরনের হিমোগোবিনের অভাবজনি বংশগত রোগ। রোগীকে প্রতিমাসে ১-২ ব্যাগ রক্ত দিতে হয়।
৫. হৃদরোগ - ভয়াবহ Heart Surgery এবং Bypass Surgery এর জন্য ৬-১০ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন।
৬. হিমোফিলিয়া - এক ধরনের বংশগত রোগ। রক্তক্ষরণ হয় যা সহজে বন্ধ হয় না, তাই রোগীকে রক্ত জমাট বাধার উপাদান সমৃদ্ধ Platelete দেয়া হয়।
৭. প্রসবকালীন রক্তক্ষরণ - সাধারণত প্রয়োজন হয় না তবে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে ১-২ বা ততোধিক ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়।
৮. ব্লাড ক্যান্সার- রক্তের উপাদানসূমহের অভাবে ক্যান্সার হয়। প্রয়োজন অনুসারে রক্ত দেয়া হয়।
৯. কিডনী ডায়ালাইসিস - প্রতিবার ডায়ালাইসিস-এ ১ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন।
১০. রক্ত বমি - এ রোগে ১-২ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়।
১১. ডেঙ্গু জ্বর - এ রোগে ৪ ব্যাগ রক্ত হতে ১ ব্যাগ Platelete পৃথক করে রোগীর শরীরে দেয়া হয়।
১২. অস্ত্রপচার - অস্ত্রপচারের ধরণ বুঝে রক্তের চাহিদা বিভিন্ন।

রক্তদানের যোগ্যতাঃ-
সাধারনত একজন সুস্থ ব্যাক্তি চার মাস অন্তর অন্তর রক্তদান করতে পারেন। এবার দেখে নেয়া যাক রক্তদানের

যোগ্যতাসমূহঃ-
1. বয়স – ১৮-৫৭ বছর।
2. ওজন - ১০০ পাউন্ড বা ৪৭ কেজির উর্ধ্বে।
3. তবে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে ( অনুচক্রিকা , রক্তরস ) ওজন ৫৫ কেজি বা তার উর্ধ্বে। রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকলে।
4. রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ৭৫% বা তার উর্ধ্বে থাকলে। সম্প্রতি ( ৬-মাস ) কোন দূঘর্টনা বা বড় ধরনের অপারেশন না হলে।
5. রক্তবাহিত জটিল রোগ যেমন-ম্যালেরিয়া, সিফিলিস , গনোরিয়া, হেপাটাইটিস , এইডস, চর্মরোগ , হৃদরোগ , ডায়াবেটিস , টাইফয়েড এবং বাতজ্বর না থাকলে।
6. কোন বিশেষ ধরনের ঔষধ ব্যবহার না করলে।
7. চার মাসের মধ্যে যিনি কোথাও রক্ত দেননি।
8. মহিলাদের মধ্যে যারা গর্ভবতী নন এবং যাদের মাসিক চলছে না।.রক্তদান ও রক্ত দানের পরঃ-.রক্তদানের আগে প্রতিটি রক্তদাতাকে তারসম্পর্কিত কিছু ব্যক্তিগত ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জিজ্ঞাসা করা হয়। সেগুলোর সঠিক উত্তর দিতে হবে। রক্তদাতার শারীরিক তাপমাত্রা, রক্তচাপ, নাড়ীর গতি পরীক্ষা করা হয় এবং রক্তদাতার রক্ত জীবানুমুক্ত কি না তা জানার জন্য সামান্য রক্ত নেয়া হয়। এছাড়া এই রক্তের মাধ্যমে রোগী রক্তদাতার রক্তের মধ্যে কোন জমাটবদ্ধতা সুষ্টি হয় কি না তাও পরীক্ষা করা হয় (ক্রসম্যাচিং)। রক্ত পরীক্ষার পর কারও রক্তে এইডস, হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস -সি, সিফিলিস বা অন্য কোন জীবানুর উপস্থিতি ধরা পরলে তাকে (রক্তদাতা) প্রয়োজেনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের পরামর্শ দেয়া হয়। সূঁচের অনুভূতি পাওয়ার মাধ্যমে রক্তদান প্রক্রিয়া শুরু হয়। এতে সময় লাগে সবোর্চ্চ ১০ মিনিট। রক্তদানের পূর্বে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে- যথেষ্ট বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা।রক্তদাতা প্রয়োজন মনে করলে বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারে।রক্তদানের সময় মাথা- শরীর সমান্তরাল থাকতে হবে। দূর হতে রক্ত দিতে এলে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে হবে। রক্ত দান করার পরে অবশ্যই নুন্যতম ৫ মিনিট শুয়ে থাকতে হবে। [রক্তের প্রবাহ সমগ্র শরীরে স্বাভাবিক হবার জন্য এটা অতীব জরুরী]। সাধারণত রক্তদান করার পর অতিরিক্ত দামী খাবার গ্রহনের প্রয়োজন নেই। তবে রক্তদানের পর সপ্তাহ খানেক স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি অন্যান্য সময়ের দ্বি-গুণ পানি পান করতে হবে। কেননা একজন রক্তদাতা যেটুকু রক্ত দান করেন [সাধারণত ১ পাউন্ড] তার প্রায় ৬০ ভাগ ঐ সময়ের মধ্যে পূরণ হয়। শুধু লোহিত রক্ত কণিকা পূরণ হতে ১২০ দিন বা ৪ মাস সময় নেয়। রক্তদানের পর অবশ্যই তারিখ মনে রাখতে হবে।.বেশিরভাগ রক্ত দাতাই রক্তদানের পর কোন সমস্যা অনুভব করেন না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে রক্তদাতা তলপেটে ব্যাথা, দূবর্লতা, মাথা ঘোরা, সূঁচ প্রবেশের স্থানে ক্ষত লালচে দাগ এবং ব্যাথা অনুভব করতে পারেন। সামান্য কিছু ক্ষেত্রে রক্তদাতা জ্ঞান হারাতে পারে বা মাংসপেশীতে খিচুনি ধরতে পারে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসব সমস্যা ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ঠিক হয়ে যায়, কোন ঔষধের প্রয়োজন হয়না।.
রক্তদানের সুবিধাঃ-
1. প্রতি ৪ মাস অন্তর রক্ত দিলে দেহে নতুন BLOOD CELL সৃষ্টির প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
2. দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকগুন বেড়ে যায়।
3. নিয়মিত রক্তদানে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে বলে হৃদপিন্ড বিশেজ্ঞরা মনে করেন।
4. স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে আপনি জানতে পারেন আপনার শরীর রক্তবাহিত মারাত্মক রোগ আছে কিনা!

Monday, December 7, 2015

সব দোষ কেবল মেয়েদেরই!


২০০১ সালে নোবেল পুরস্কারবিজয়ী বিজ্ঞানী ৭২ বছর বয়সী টিম হান্ট সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ায় বিজ্ঞান সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বলেছিলেন- "মেয়েরা ল্যাবে থাকলে বড় সমস্যা। হয় তারা প্রেমে পড়বে, নয়তো অন্য পুরুষ বিজ্ঞানীরা তাদের প্রেমে পড়বে, আর সমালোচনা করলে তারা কান্নাকাটি করবে"।
মেয়ে হলে ল্যাবে থাকলে তার সমস্যা কী? পেশাগত ক্ষেত্রে দক্ষতা ও যোগ্যতা থাকলে নারীরা বিজ্ঞানী হতে পারবে না? অসুবিধে কোথায়? আজ বিশ্বব্যাপী ঘরের বাইরে নেমে এসেছে মেয়েরা। বাস্তবতা হলো বাইরের পরিমণ্ডলে মেয়েরা ৩ গুণ কাজ করলেই কেবল পুরুষের সমান স্বীকৃতি মেলে! কেবল মেয়ে বলেই তাকে ৩ গুণ কাজ করে স্বীকৃতি আদায় করতে হয়।
খুব জানতে ইচ্ছে হয়, বিজ্ঞানী টিম হান্ট কী ওই মন্তব্য করার সময় নেশাগ্রস্ত ছিলেন, নাকী তাঁর মতিভ্রম হয়েছিল? দুনিয়ার প্রথম সারির বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও তিনি পুরুষতন্ত্রের নোংরা শিক্ষা দূর করতে পারেন নি। তাঁর বালখিল্য বক্তব্যে বোঝা যায় বিজ্ঞান চর্চা বড় কথা নয়, সেখানে মেয়ে লোকের উপস্থিতি এক উপদ্রববিশেষ। ধর্মীয় মোল্লারা যেমন ফতোয়া দিয়ে থাকেন মেয়েরা নিকটে থাকলে নাকী তাদের ইবাদতের বিঘ্ন ঘটে এবং মেয়েদের কারণে ইবাদতঘরের নিয়ন্ত্রণ রক্ষা করা সম্ভব হয় না। তেমনি বিজ্ঞানী টিম হান্টও মনে করেন মেয়েদের উপস্থিতির কারণে বিজ্ঞান গবেষণাগারের পরিবেশ কোনভাবেই রক্ষা করা সম্ভব হয় না।
হান্টের মতে- বিজ্ঞান গবেষণাগারে মেয়েদের উপস্থিতি থাকলে বিজ্ঞানের সকল ফর্মুলা মেয়েদের চোখের জলে বানের মতো ভেসে সমুদ্রে নিক্ষেপিত হবে। নয়তো বিজ্ঞানীদের হৃদয়ঘটিত বিক্রিয়া ঘটার পর বিজ্ঞান গবেষণাগার প্রেমের তাজমহলে রূপান্তরিত হয়ে পড়বে! বিজ্ঞানের পাঠ না করে তারা শেক্সপিয়ার পাঠ শুরু করবে। বিজ্ঞানী হান্টের এই উপলব্ধি আমার কাল্পনিক ধারনামাত্র। তবে এমনটাই যে তিনি ভেবেছিলেন সেটা যে নির্জলা সত্য তা কেউই অস্বীকার করতে পারবে না।
টিম হান্টের করা ওই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বিশ্বমিডিয়ায় ব্যাপক সমালোচনা ও নিন্দার ঝড় ওঠার প্রেক্ষিতে তিনি পরবর্তীতে ক্ষমাও চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর ক্ষমাকে গুরুত্ব দেয়া হয় নি। এর কারণে তাকেঁ ইউরোপিয়ান রিসার্চ কাউন্সিল, রয়াল সোসাইটি আর ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডনের পদগুলিও তাঁকে খোয়াতে হয়েছে।
টিম হান্টের ঘটনা সামান্য একটা উদাহরণমাত্র। বাস্তবে মেয়েদেরকে এরকম অনেক ঘটনা হজম করতে হচ্ছে। বিশেষ করে বিজ্ঞান, গণিত, কারিগরি কিংবা প্রযুক্তিগত সেক্টরে মেয়েরা পুরুষদের তুলনায় সংখ্যাগতভাবে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। প্রচার করা হয় (প্রচার মাধ্যমের সর্বেসর্বা কিন্তু ওই পুরুষই) যে, মেয়েরা কাজের চাপ সামলানোর ভয়ে এই সকল সেক্টরে আসতে চায় না। আসলে এর পিছনে কী কারণ তা সহজেই অনুমেয়। সমীক্ষায় জানা যায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মিলিয়ে এই খাতে নিয়োজিত কর্মীদের মধ্যে ৭৩ শতাংশ পুরুষ এবং ২৭ শতাংশ মেয়ে। অথচ স্বাস্থ্য সেবার ক্ষেত্রে বিষয়টা সম্পূর্ণ বিপরীত। সেখানে মেয়ে কর্মীর হার ৭০ শতাংশ এবং পুরুষ কর্মীর হার ৩০ শতাংশ। তবে কী শৈশব থেকেই মেয়েদেরকে বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে অনাগ্রহী করে তৈরি করা হয়? নিশ্চয়ই হয়। নইলে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির প্রতি মেয়েদের উৎসাহ এতো কম হবার কোন ঘটনা ঘটতো না। আর উৎসাহের অভাবেই মেয়েরা এই পেশাতে মনোনিবেশ বা আত্মবিশ্বাসী হতে পারছে না।
সমাজের সর্বস্তরে কেবলমাত্র মেয়ে হবার কারণেই যোগ্যতা থাকার পরও নিগৃহীত হতে হয়। দেখে শুনে মনে হয় মেয়ে হয়ে জন্মানোই বুঝি অপরাধ হয়েছে। এই অপরাধের শাস্তিতো এই সমাজ-রাষ্ট্র দিতে পারছে না, তাই ছলে বলে কৌশলে মেয়েদের বঞ্চিত করে রাখা, অপমান অপদস্থ করা, ক্ষেত্রবিশেষে শারীরিক লাঞ্ছনা কিংবা আঘাতও করা এক প্রকার নিয়মে দাঁড়িয়েছে।
প্রায়ই পুরুষরা অভিযোগ করে থাকেন মেয়েরা খোলামেলা পোশাক পড়ে, একাকী রাস্তায় চলাফেরা করে, রাতের বেলা চলাফেরা করে, কিংবা তার পুরুষসঙ্গীকে অবলীলায় বিশ্বাস করার কারণে বিভিন্ন 'অপরাধ' সংঘটিত হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশের পুলিস প্রধানের ভাষায় 'পুরুষরা কিঞ্চিৎ 'দুষ্টুমী' করে বসে'।
যাই হোক মিডিয়ার কল্যাণে আপাতত নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী টিম হান্টকে লন্ডনের বিশ্ববিদ্যালয় হতে পদত্যাগ করতে হয়েছে ঠিকই, কিন্তু পুরুষ কর্তৃক মেয়ে জাতিকে বলির পাঁঠা বানানো বন্ধ হবে কবে সেটিই চিন্তার বিষয়। মেয়েদের মানুষ হিসেবে, তার মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে কবে মূল্যায়ন করার মন-মানসিকতা গড়ে উঠবে সেটা নিয়েই আমি চিন্তিত।
কারণ বিজ্ঞানী টিম হান্টের 'বেফাঁস কথা' বলার কারণে ক্ষমা চাওয়া, কিংবা বিভিন্ন পদ থেকে তাঁর ইস্তফার অর্থ এই নয় যে মেয়েরা তার যোগ্য সম্মান ও অধিকার পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। বরং বলা চলে মেয়েদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে এটি একটি ক্ষুদ্র বিজয়মাত্র। হান্টের ঘটনায় বেশি উচ্ছ্বসিত না হয়ে মেয়েদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম অব্যাহত রাখাটাই জরুরী।
(নোবেলবিজয়ী বিজ্ঞানী টিম হান্ট-এর ছবিটি উইকিপিডিয়া থেকে ধার করা)
ছবি:

Sunday, December 6, 2015

পর্ন ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে অজানা দশ তথ্য


নীল ছবি নিয়ে বিশুদ্ধবাদীরা যতই নাক উঁচু করেন না কেন এই পর্ন ইন্ডাস্ট্রি যে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় সেটা তথ্যই প্রমাণ করে। মানুষ নীল ছবির হাতছানিতে মাঝেমাঝেই ধরা দেয়, কিন্তু পর্দার ওপারে ঠিক কী ঘটে? সেই পর্ন ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে অজানা দশ তথ্য...
১)  পর্ন রোজগার : সাধারণ পুরুষ পর্ন অভিনেতারা ছবি প্রতি ৫০০ থেকে ৬০০ ডলার বা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৩৫ হাজার টাকা রোজগার করেন। মহিলাদের ক্ষেত্রে রোজগারের অঙ্কটা দ্বিগুণ হয়। আর সমকামী পর্নের ক্ষেত্রে রোজগারটা সাধারণ ক্ষেত্রের তিন গুণ হয়। তবে পর্নস্টার বা পর্ন তারকরা ঘণ্টায় এক হাজার থেকে ৫ হাজার ডলার বা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৩ লক্ষ টাকা রোজগার করেন।
২) পর্ন তৈরি : বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পর্ন সিনেমা তৈরি হয় আমেরিকায়। দু নম্বরে জার্মানি। আমেরিকায় সপ্তাহে গড়ে ৫০০টি ও জার্মানিতে ৪০০টি পর্ন সিনেমা তৈরি হয়।
৩) পর্ন আসক্তি:  এক সমীক্ষায় প্রকাশ ১০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ অনলাইনে পর্ন দেখাটা তাদের যে কোনও নেশাকে হার মানিয়েছে।
৪) পর্ন ও যৌন অপরাধ: সমীক্ষায় প্রকাশ যে দেশে পর্নোগ্রাফিক সিনেমা দেখার বিষয়ে কোনও বাধা নিষেধ নেই সেখানে যৌন হিংসা বা অপরাধের সংখ্যা কম হয়। যদিও অন্য এক সমীক্ষায় প্রকাশ পর্ন সিনেমা বেশি দেখা দেশে, যৌন অপরাধের সংখ্যা তুলনায় বেশি।
৫) পর্ন হিসেব: আমেরিকায় প্রতি ৩৯ মিনিটে একটি পর্ন ছবি তৈরি হয়। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র দুটি রাজ্যে পর্ন ছবি তৈরিতে অনুমতি আছে।
৬) পর্ন ডট কম: গোটা বিশ্বে সাড়ে চার কোটি পর্ন ওয়েবসাইট আছে। দুনিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় ওয়েবসাইটের প্রতি মাসে পেজ ভিউজ সিএনএন, ইএসপিএনের তিন গুণ।
৭) পর্ন ব্যয়: প্রতি সেকেন্ড পর্নগ্রাফির পিছনে খরচ হয় প্রায় ৩ হাজার ডলার বা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা।
৮) চাইল্ড পর্নোগ্রাফি: দুনিয়ার সেরা ২০টি উন্নত দেশ বলেছে তাদের দেশের সেরা দশটা বড় সমস্যার মধ্যে প্রথমের দিকে আছে শিশু বা চাইল্ড পর্নোগ্রাফি। ভারত শিশু পর্নোগ্রাফি রুখতে ইন্টারপোলের দ্বারস্থ হচ্ছে।
৯) পর্ন দেখা: যে কোনও মুহূর্তে বিশ্বের ৩০ হাজার মানুষ পর্নোগ্রাফিক সিনেমা দেখছেন। ৩৭২ জন মানুষ গুগল সার্চে লিখছেন অ্যাডাল্ট বা পর্ন জাতীয় সিনেমা বা ছবি।
১০)  শরীরী ব্যবসা: পর্ন ইন্ডাস্ট্রি হলিউড, গুগল, এনএফএল, ইয়াহু, ইবে, আমাজনের থেকেও অনেক বেশি বড় ও লাভবান। সেক্স ইন্ডাস্ট্রি (পর্ন সিনেমা, দেহব্যবসা, স্ট্রিপ ক্লাব, নারী পাচার) হল বিশ্বের সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা।
সূত্র: ইন্টারনেট

আস্তিক এবং নাস্তিকদের মধ্যে পার্থক্য সমূহ ।


আমি অনেক চিন্তা ভাবনা করে আস্তিক এবং নাস্তিকদের মধ্যে নিম্নলিখিত পার্থক্যসমূহ নিরুপণ করেছি । নিম্নে আমি ধারাবাহিকভাবে তা উপস্থাপন করলাম । এর বাইরেও যদি আর কোন পার্থক্য থেকে থাকে তাহলে তা মন্তব্য কলামে উল্ল্যেখ করার জন্য অনুরোধ রইল ।
১ । (ক)- আস্তিকরা সামাজিক বলয় ভেঙে বেড়িয়ে আসতে পারে না ।
    (খ)- নাস্তিকরা সামাজিক বলয় ভেঙে বেড়িয়ে আসতে পারে ।
২ । (ক)- আস্তিকরা জন্মগত বিশ্বাষের অভ্যাস পরিবর্তন করতে পারে না ।
    (খ)- নাস্তিকরা জন্মতগত বিশ্বাষের অভ্যাস পরিবর্তন করে চলতে পারে ।
৩ । (ক)-আস্তিকরা প্রচলিত স্রোতের সাথে তাল মিলিয়ে চলে ।
     (খ)- নাস্তিকরা প্রচলিত স্রোতের বিপরীতে চলতে শিখে ।
৪ । (ক)- আস্তিকরা যুক্তি , অলৌকিক , অন্ধ বিশ্বাষ , এবং প্রথাকে মেনে নিয়ে চলে ।
    (খ)- নাস্তিকরা শুধু মাত্র যুক্তি এবং বাস্তবতার উপর নির্ভর করে চলে ।
৫ । (ক)- আস্তিকরা তাদের ধর্মীয় কিতাবের বক্তব্যসমূহকে বিনা দ্বিধায় মেনে জীবন যাপন করে ।
    (খ)- নাস্তিকরা ধর্মীয় কিতাবের বক্তব্যসমূহকে যুক্তি , বিজ্ঞান এবং বাস্তবতার নিরীখে বিচার বিশ্লেষণ করে গ্রহণ অথবা বাদ দেয়ে ।
৬ । (ক)- কট্টোর আস্তিকেরা নাস্তিকদের উপর প্রচন্ড ক্ষিপ্ত থাকে এবং তাদের হত্যা করাকেও বৈধ মনে করে ।
    (খ)- নাস্তিকেরা ; আস্তিক নাস্তিক সবাইকেই মানবতার নিরীখে বিচার করে ।
৭ । (ক)- আস্তিকেরা তাদের বিশ্বাষগুলোকে জোর করে মানুষের উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে এবং না মানলে বিভীন্ন লৌকিক এবং অলৌকিক ভয় ভীতির ব্যবস্থা করে ।
   (খ)- কিন্তু নাস্তিকেরা তাদের বক্তব্যগুলোকে যুক্তি , বুদ্ধি এবং বিজ্ঞানের নিরীখে বুঝিয়ে মানুষকে পরিবর্তনের চেষ্টা করে ।
৮ । (ক)- আস্তিকেরা জন্মগত ভাবেই আস্তিক হয় অথবা পরিবেশগতভাবে ।
     (খ)- কিন্তু নাস্তিকেরা জন্মগতভাবে কেউই নাস্তিক হয় না । জীবন এবং বিজ্ঞানের জিজ্ঞাসার প্রশ্নের উত্তর খুঁজে খুঁজেই একজন নাস্তিক তার সিদ্ধান্তে স্থীর হয় ।
৯ । (ক)- আস্তিকেরা প্রচলীত স্রোতের বিরুদ্ধে যেতে পারেনা বলেই তারা দুর্বল চিত্তের হয় ।
    (খ)- কিন্তু নাস্তিকদের প্রচলীত স্রোতকে ভেঙে ভেঙে এগুতে হয় বলে প্রচুর সাহসীকতার পরিচয় দিতে হয় ।
১০ । (ক)- অসংখ্য আস্তিকের মাঝে একজন নাস্তিকের জীবন অসহনীয় এবং দুর্বীসহ এমন কি মৃত্যুর ঝুঁকিতেও তাকে জীবন কাটাতে হয় ।
     (খ)- কিন্তু অসংখ্য নাস্তিকের মাঝে একজন আস্তিক সাবলিল জীবন যাপন করতে পারে ।