Saturday, May 14, 2022

যারা ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে চাচ্ছেন!

ড্রাইভিং লাইসেন্সের লিখিত পরীক্ষার স্ট্যান্ডার্ড ৮৫টি প্রশ্ন ব্যাংক ও উত্তর নিজে শিখুন এবং অন্যকে শেখার জন্য উৎসাহিত করুন। 
=====================================
০১. প্রশ্ন : মোটরযান কাকে বলে ?
উত্তরঃ মোটরযান আইনে মোটরযান অর্থ কোনো যন্ত্রচালিত যান, যার চালিকাশক্তি বাইরের বা ভিতরের কোনো উৎস হতে সরবরাহ হয়ে থাকে।

০২. প্রশ্ন : গাড়ি চালনার আগে করণীয় কাজ কী কী ?
উত্তরঃ ক. গাড়ির হালনাগাদ বৈধ কাগজপত্র (রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, ফিটনেস সার্টিফিকেট, ট্যাক্সটোকেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ইনসিওরেন্স (বিমা) সার্টিফিকেট, রুট পারমিট ইত্যাদি) গাড়ির সঙ্গে রাখা।
খ. গাড়িতে জ্বালানি আছে কি না পরীক্ষা করা, না থাকলে পরিমাণ মতো নেওয়া।
গ. রেডিয়েটর ও ব্যাটারিতে পানি আছে কি না পরীক্ষা করা, না থাকলে পরিমাণ মতো নেওয়া।
ঘ. ব্যাটারি কানেকশন পরীক্ষা করা।
ঙ. লুব/ইঞ্জিন অয়েলের লেবেল ও ঘনত্ব পরীক্ষা করা, কম থাকলে পরিমাণ মতো নেওয়া।
চ. মাস্টার সিলিন্ডারের ব্রেকফ্লুইড, ব্রেকঅয়েল পরীক্ষা করা, কম থাকলে নেওয়া।
ছ. গাড়ির ইঞ্জিন, লাইটিং সিস্টেম, ব্যাটারি, স্টিয়ারিং ইত্যাদি সঠিকভাবে কাজ করছে কি না, নাট-বোল্ট টাইট আছে কি না অর্থাৎ সার্বিকভাবে মোটরযানটি ত্র“টিমুক্ত আছে কি না পরীক্ষা করা।
জ. ব্রেক ও ক্লাচের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা।
ঝ. অগ্নিনির্বাপকযন্ত্র এবং ফাস্টএইড বক্স গাড়িতে রাখা।
ঞ. গাড়ির বাইরের এবং ভিতরের বাতির অবস্থা, চাকা (টায়ার কন্ডিশন/হাওয়া/নাট/এলাইমেন্ট/রোটেশন/স্পেয়ার চাকা) পরীক্ষা করা।

০৩. প্রশ্ন : মোটরযানের মেইনটেনেন্স বা রক্ষণাবেক্ষণ বলতে কী বুঝায় ?
উত্তরঃ ত্রুটিমুক্ত অবস্থায় একটি গাড়ি হতে দীর্ঘদিন সার্ভিস পাওয়ার জন্য প্রতিদিন গাড়িতে যে-সমস্ত মেরামত কাজ করা হয়, তাকে মোটরযানের মেইনটেনেন্স বলে।

০৪. প্রশ্ন : একটি মোটরযানে প্রতিদিন কী কী মেইনটেনেন্স করতে হয় ?
উত্তরঃ ২ নং প্রশ্নের উত্তরের খ থেকে ঞ পর্যন্ত।

০৫. প্রশ্ন : সার্ভিসিং বলতে কী বুঝায় ?
উত্তরঃ মোটরযানের ইঞ্জিন ও বিভিন্ন যন্ত্রাংশের কার্যক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য নির্দিষ্ট সময় পরপর যে-কাজগুলো করা হয়, তাকে সার্ভিসিং বলে।

০৬. প্রশ্ন : গাড়ি সার্ভিসিংয়ে কী কী কাজ করা হয় ?
উত্তরঃ ক. ইঞ্জিনের পুরাতন লুবঅয়েল (মবিল) ফেলে দিয়ে নতুন লুবঅয়েল দেওয়া। নতুন লুবঅয়েল দেওয়ার আগে ফ্লাশিং অয়েল দ্বারা ফ্লাশ করা।
খ. ইঞ্জিন ও রেডিয়েটরের পানি ড্রেন আউট করে ডিটারজেন্ট ও ফ্লাশিংগান দিয়ে পরিষ্কার করা, অতঃপর পরিষ্কার পানি দিয়ে পূর্ণ করা।
গ. ভারী মোটরযানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন গ্রিজিং পয়েন্টে গ্রিজগান দিয়ে নতুন গ্রিজ দেওয়া।
ঘ. গাড়ির স্পেয়ার হুইলসহ প্রতিটি চাকাতে পরিমাণমতো হাওয়া দেওয়া।
ঙ. লুবঅয়েল (মবিল) ফিল্টার, ফুয়েল ফিল্টার ও এয়ারক্লিনার পরিবর্তন করা।

০৭. প্রশ্ন : গাড়ি চালনাকালে কী কী কাগজপত্র গাড়ির সঙ্গে রাখতে হয় ?
উত্তরঃ ক. ড্রাইভিং লাইসেন্স, খ. রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (ব্লু-বুক), গ. ট্যাক্সটোকেন, ঘ. ইনসিওরেন্স সার্টিফিকেট, ঙ.ফিটনেস সার্টিফিকেট (মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়) এবং চ. রুটপারমিট (মোটরসাইকেল এবং চালক ব্যতীত সর্বোচ্চ ৭ আসন বিশিষ্ট ব্যক্তিগত যাত্রীবাহী গাড়ির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়)।

০৮. প্রশ্ন : রাস্তায় গাড়ির কাগজপত্র কে কে চেক করতে পারেন/কোন কোন ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণকে গাড়ির কাগজ দেখাতে বাধ্য ?
উত্তরঃ সার্জেন্ট বা সাব-ইনসপেক্টরের নিচে নয় এমন পুলিশ কর্মকর্তা, মোটরযান পরিদর্শকসহ বিআরটিএর কর্মকর্তা এবং মোবাইলকোর্টের কর্মকর্তা।

০৯. প্রশ্ন : মোটরসাইকেলে হেলমেট পরিধান ও আরোহী বহন সম্পর্কে আইন কী ?
উত্তরঃ মোটরসাইকেলে চালক ব্যতীত ১ জন আরোহী বহন করা যাবে এবং উভয়কেই হেলমেট পরিধান করতে হবে (মোটরযান অধ্যাদেশ, ১৯৮৩ এর ধারা-১০০)।

১০. প্রশ্ন : সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ কী কী?
উত্তরঃ ক. অত্যধিক আত্মবিশ্বাস, খ. মাত্রাতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো, গ. অননুমোদিত ওভারটেকিং এবং ঘ. অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন।

১১. প্রশ্ন : গাড়ি দুর্ঘটনায় পতিত হলে চালকের করনীয় কী ?
উত্তরঃ আহত ব্যক্তির চিকিৎসা নিশ্চিত করা, প্রয়োজনে নিকটস্থ হাসপাতালে স্থানান্তর করা এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিকটবর্তী থানায় দুর্ঘটনার বিষয়ে রিপোর্ট করা।

১২. প্রশ্ন : আইন অনুযায়ী গাড়ির সর্বোচ্চ গতিসীমা কত ?
উত্তরঃ হালকা মোটরযান ও মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৭০ মাইল, মাঝারি বা ভারী যাত্রীবাহী মোটরযানের ক্ষেত্রে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩৫ মাইল এবং মাঝারি বা ভারী মালবাহী মোটরযানের ক্ষেত্রে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩০ মাইল।

১৩. প্রশ্ন : মোটর ড্রাইভিং লাইসেন্স কী ?
উত্তরঃ সর্বসাধারণের ব্যবহার্য স্থানে মোটরযান চালানোর জন্য লাইসেন্স কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ইস্যুকৃত বৈধ দলিলই মোটর ড্রাইভিং লাইসেন্স।

১৪. প্রশ্নঃ অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স কাকে বলে ?
উত্তরঃ যে-লাইসেন্স দিয়ে একজন চালক কারো বেতনভোগী কর্মচারী না হয়ে মোটর সাইকেল, হালকা মোটরযান এবং অন্যান্য মোটরযান (পরিবহনযান ব্যতীত) চালাতে পারে, তাকে অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স বলে।

১৫. প্রশ্ন : ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন বয়স কত ?
উত্তরঃ পেশাদার চালকের ক্ষেত্রে ২০ বছর এবং অপেশাদার চালকের ক্ষেত্রে ১৮ বছর।

১৬. প্রশ্ন : কোন কোন ব্যক্তি ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে?
উত্তরঃ মৃগীরোগী, উন্মাদ বা পাগল, রাতকানারোগী, কুষ্ঠরোগী, হৃদরোগী, অতিরিক্ত মদ্যপব্যক্তি, বধিরব্যক্তি এবং বাহু বা পা চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে অসুবিধা হয় এমন ব্যক্তি।

১৭. প্রশ্ন : হালকা মোটরযান কাকে বলে ?
উত্তরঃ যে-মোটরযানের রেজিস্ট্রিকৃত বোঝাই ওজন ৬,০০০ পাউন্ড বা ২,৭২৭ কেজির অধিক নয়, তাকে হালকা মোটরযান বলে।

১৮. প্রশ্ন : মধ্যম বা মাঝারি মোটরযান কাকে বলে ?
উত্তরঃ যে-মোটরযানের রেজিস্ট্রিকৃত বোঝাইওজন ৬,০০০ পাউন্ড বা ২,৭২৭ কেজির অধিক কিন্তু ১৪,৫০০ পাউন্ড বা ৬,৫৯০ কেজির অধিক নয়, তাকে মধ্যম বা মাঝারি মোটরযান বলে।

১৯. প্রশ্ন : ভারী মোটরযান কাকে বলে ?
উত্তরঃ যে-মোটরযানের রেজিস্ট্রিকৃত বোঝাই ওজন ১৪,৫০০ পাউন্ড

Saturday, April 23, 2022

পৃথিবী ও সূর্যের দূরত্বের কারণেই পৃথিবীতে প্রাণ সৃষ্টির জন্য অত্যানুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিলো!

যেহেতু মহাবিশ্বের সবকিছুই পরষ্পর থেকে প্রতিনিয়ত দূরে সরে যাচ্ছে তাই সৌরজগতেও এমনটাই হচ্ছে অর্থাৎ সূর্য থেকে প্রতিটি গ্রহ উপগ্রহ পরষ্পর দূরে সরে যাচ্ছে। অর্থাৎ মঙ্গলগ্রহ আজ যেখানে আছে হয়তো অনেক কাল আগে এটা সূর্যের আরো নিকটে ছিলো। এবং অতীতে মঙ্গল ও সূর্য এমন অবস্থানে ছিলো যখন মঙ্গলে প্রাণ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো। তাই মঙ্গলে অতীতে প্রাণের বিকাশ ঘটেছিলো এমন ভাবাটা হয়তো খুব বেশি অযৌক্তিক হবে না।

প্রাণ সৃষ্টির জন্য কি প্রয়োজন?

অনুকূল তাপ, চাপ। পৃথিবী ও সূর্যের দূরত্ব যখন এমন পর্যায়ে আসে তখম পৃথিবীতে তরল পানি (H2O) ও জলিয়োবাষ্পের সৃষ্টি হয় অর্থাৎ পানি চক্রের শুরু হয়। এবং বাতাসে মিশ্রিত নাইট্রোজেনের সাথে জলিয়োবাষ্পের বিক্রিয়ার মাধ্যমে নাইট্রিক এসিড এবং পরবর্তীতে নাইট্রিক এসিড থেকে ডি,এন,এ সৃষ্টি। 

তাই এখন যদি বলি মহাকাশের বেশিরভাগ গ্রহেই প্রাণের বিকাশ ঘটেছিলো। তাহলে হয়তো বলাটা খুব বেশি ভুল হবে না।

Sunday, March 20, 2022

বস্তুর ভরের সৃষ্টি হলো কেন এবং কিভাবে?

আপনাকে যদি কখনো জিজ্ঞেস করা হয় এই মহাবিশ্বে শুরু থেকে এ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা কোনটি?
তখন এই প্রশ্নের উত্তরে আপনি কি বলবেন?
আপনি তখন নানান বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে থাকবেন! আপনার মনের মধ্যে এক গভীর চিন্তার জগৎ সৃষ্টি হবে। এই প্রশ্নে অনেকের উত্তর হয়তো ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। কেউ বলবে আলোর সৃষ্টি কারণ আলোর সৃষ্টি না হলে আমরা কখনোই কোনো কিছু দেখতে পেতাম না, কেউ বলবে পরমাণুর সৃষ্টি কারণ পরমাণু সৃষ্টি না হলে আজকে কিছুই গঠিত হতো না, আবার কেউ বলবে নক্ষত্রের সৃষ্টি কারণ নক্ষত্রের সৃষ্টি না হলে আলো ও তাপের উৎপত্তি হতো না। আর আলো ও তাপ ছাড়া আমাদের অস্তিত্বও সম্ভব হতো না।
কিন্তু সত্য হলো এই যে মহাবিশ্বের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ এই ঘটনাটি না ঘটলে কোনো কিছুর অস্তিত্বই থাকতো না। আর তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনাটি হলো (Matter) বা বস্তুর ভরের সৃষ্টি হওয়া।

আমরা তো আকাশ-পাতাল অনেক কিছুর সৃষ্টি নিয়েই চিন্তা করি! যেমনঃ আলোর সৃষ্টি হলো কিভাবে? নক্ষত্রের জন্ম হলো কিভাবে, পদার্থের সৃষ্টি হলো কিভাবে? ইত্যাদি কিন্তু আমরা এটা কখনোই ভেবে দেখিনা সেসব সৃষ্টির মূলেই ছিলো মূলত ভর সৃষ্টির ঘটনাটা। আমাদের সকলেরই মনে হয় ভর বা বস্তু ব্যাপারটা হয়তো চিরকাল ধরেই ছিল। ভর যেহেতু শক্তিরই একটা রূপ সেহেতু শক্তির মতোই এর কোনো সৃষ্টি নেই এটার  কেবলমাত্র এক রূপ থেকে অন্য রূপে রূপান্তর ঘটেছে। আমাদের এরকম চিন্তা ভাবনার পেছনে যথেষ্ট কারণও রয়েছে। আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে শক্তির এরকম রূপান্তরের ঘটনা প্রচুর দেখেছি এবং এখনও দেখছি প্রতিনিয়ত। আপনি নিশ্চয়ই এটা চিন্তা করছেন যে ভর সৃষ্টির ব্যাপারটি এই মহাবিশ্বের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো কিভাবে? ভর সৃষ্টির বিষয়টি মহাবিশ্বের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হয়েছে এই কারণে যে কোনো কিছুর বস্তুরূপ না থাকলে এই মহাবিশ্বের কোনো কিছুই দৃশ্যমান হয়ে উঠত না। আর কোনো কিছু যদি দৃশ্যমান হয়ে ধরা না দিতো তাহলে কিছুই চোখে দেখা যেত না। আপনি আমি এবং আমাদের চারপাশের দৃশ্যমান জগতে যা কিছু আছে যেগুলো আপনি চোখে দেখতে পাচ্ছেন, সেগুলো দৃশ্যমান এই কারণে যে এদের ভর আছে অর্থাৎ বস্তুরূপ আছে।
আমরা সকলেই জানি যে আমাদের এই মহাবিশ্বের উৎপত্তি হয়েছিল বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে। এ তত্ত্বের দ্বারা আমরা জানতে পেরেছি যে আদি অবস্থায় আমাদের এই  পুরো মহাবিশ্বই এক অসীম ঘনত্বের এবং অসীম তাপমাত্রার বিন্দুবৎ অবস্থায় কেন্দ্রীভূত ছিল। এখন বলাই বাহুল্য যে কোনো স্থানে অসীম তাপমাত্রা থাকলে সেখানে কোনো প্রকার বস্তুর অস্তিত্ব থাকার প্রশ্নই উঠে না। অতএব নিশ্চিতভাবেই বলা যায় তখন মহাবিশ্বের সবকিছুই ছিল শক্তিরূপে। এই মহাবিশ্বের অভ্যন্তরীন সবকিছুই শক্তির ভিন্ন ভিন্ন রূপ। আর শক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষনীয় বিষয় হলো খোদ শক্তিকে কখনোই চাক্ষুষ দেখা যায় না কিন্তু একে অনুভব করা যায়। যেমনঃ আপনি যদি আগুনের ওপর হাত রাখেন তাহলে আপনার গরম লাগবে! আর আপনি খুব ভালো করেই জানেন যে এই গরম লাগার কারণ হচ্ছে " তাপ "। কিন্তু আপনি কি তাপকে চাক্ষুষ দেখেছেন? না। আপনি একে শুধু অনুভব করেছেন। আবার আপনি যখন ভূপৃষ্ঠ থেকে লাফ দিয়ে উপরে ওঠেন তখন আপনি নিশ্চয়ই অনুভব করেছেন কোনো এক অদৃশ্য বল আপনাকে পুনরায় টেনে ভূপৃষ্ঠে নামিয়ে আনে! আপনি জানেন যে পৃথিবীর মহাকর্ষ বা অভিকর্ষ বলের কারণেই এমন হচ্ছে। কিন্তু আপনি কি সেই অভিকর্ষ বলকে কখনো চোখে দেখেছেন? দেখননি কিন্তু একে অনুভব করেছেন। 
এখন অনেকেই হয়তো ভাবছেন আলোও তো একপ্রকারের শক্তি। তাহলে আলোকে তো আমরা দেখতে পাই! কিন্তু আপনার এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল কারণ খোদ আলোকে আমরা কখনোই দেখি না আমার শুধুমাত্র আলোর কতগুলো বৈশিষ্ট্যের ফলাফল দেখি। যেমনঃ আলোর প্রতিফলন, প্রতিসরণ, বিকিরণ, বিচ্ছুরণ, ব্যতিচার, অপবর্তন ইত্যাদি। আলোকে আমরা দেখি না বরং আলোই আমাদের দেখতে সাহায্য করে। আলো কোনো বস্তুর ওপর পতিত হয়ে তার প্রতিফলিত রশ্মিটি যখন আমাদের চোখে এসে পৌঁছায় কেবল তখনই আমরা ওই বস্তুটিকে দেখতে পাই। কোনো প্রকার আলোক প্রতিফলন ব্যাতিত আমরা কোনো কিছুই দেখতে পাই না।

তাহলে উপরোক্ত বিষয় গুলো থেকে কি বোঝা গেলো? বোঝা গেলো এই যে মূল শক্তিকে কখনোই দেখা যায় না। অর্থাৎ কোনো কিছু যদি শক্তিরূপে থাকে তাহলে তা কখনোই দৃশ্যমান হয়ে ওঠে না। যদিও নানাভাবে সেটি তার অস্তিত্বের জানান দেয়। কেবল সেগুলোই দেখা যায় যাদের ভর রয়েছে অর্থাৎ বস্তুরূপে। এই যে ভর তৈরি হয়েছে সেজন্যই মহাবিশ্বের কিছু কিছু জিনিস দৃশ্যমান হয়ে উঠছে।

এবার আসা যাক মূল আলোচনায় বস্তুর ভর কি? ও কিভাবে সৃষ্টি হলো?
প্রথমে জানবো বস্তুর ভর আসলে কি? বস্তুর ভর কি এই কথা জিজ্ঞেস করলে অনেকেই উত্তর দেবে যে বস্তুটি যেসকল কণা দ্বারা গঠিত তাদের মোট ভরের পরিমাণই বস্তুর ভর। কিন্তু আপনি মানেন বা না মানেন এই কথাটা সম্পূর্ণ সঠিক নয়। এখন জিজ্ঞেস করবেন কেন সঠিক নয়? তাহলে চলুন এর ব্যাখ্যাই আগে দেওয়া যাক। 
• আমরা আমাদের চারপাশে যত দৃশ্যমান বস্তু দেখি যেমনঃ লোহা, কাঠ, ইট, পাথর, মাটি এবং জীব ও জড় এই সবকিছুই (Atom) বা পরমাণু নামক এক অতি ক্ষুদ্র কণা দ্বারা গঠত। একটি পরমাণুকে ভাঙলে সাধারণত পাওয়া যাবে পরমাণুর কেন্দ্রে থাকা নিউক্লিয়াস ও নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে বৃত্তাকার/উপবৃত্তাকার কক্ষপথে  প্রদক্ষিণরত ইলেকট্রন। আমরা জানি একটি নিউক্লিয়াসে আছে প্রোটন ও নিউট্রন। মোট কথা একটি পরমাণুকে ভাঙলে মোট তিন ধরনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা পাওয়া যাবে প্রোটন, নিউট্রন ও ইলেকট্রন। প্রোটন ও নিউট্রনের সম্মিলিত ভর ইলেকট্রনের ভর থেকে অনেক অনেক গুন বেশি। একটি ইলেকট্রনের ভর প্রোটনের থেকে প্রায় 1837 গুন কম এবং একটা ইলেকট্রনের ভর একটি নিউট্রন থেকে প্রায় 1800 গুন কম। এজন্য পরমাণুর কেন্দ্রে থাকা নিউক্লিয়াসের ভরকেই পরমাণুর মূল ভর হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
নিউক্লিয়াসে থাকা প্রোটন ও নিউট্রন কিন্তু প্রকৃতির একেবারে মৌলিক কণিকা নয়। এরা আরো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা দিয়ে গঠিত। কিন্তু পূর্বে মোটেই এরকম ভাবা হতো না। আগে ভাবা হতো যে একটি পরমাণু কে ভাঙলে পাওয়া যাবে নিউক্লিয়াস আর নিউক্লিয়াসকে ভাঙলে পাওয়া যাবে দুটি সুক্ষ্ম মৌলিক কণিকা প্রোটন ও নিউট্রন। ব্যাস এর পর আর বিভাজন সম্ভব নয়! কিন্তু এরপর জানা গেলো এদেরকেও বিভাজন করা সম্ভব। এবং এরা আরো সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম কণিকার সমন্বয়ে গঠিত। প্রোটন ও নিউট্রন এরা কোয়ার্ক (quarks) নামক আরো এক অতি সূক্ষ্ম কণার সমন্বয়ে গঠিত। একটি প্রোটনকে ভাঙলে দুটি আপ কোয়ার্ক (up quarks) ও একটি ডাউন (down quarks) কোয়ার্ক পাওয়া যাবে। অপরদিকে একটি নিউট্রনকে ভাঙলে দুটি ডাউন কোয়ার্ক ও একটি আপ কোয়ার্ক পাওয়া যাবে।
 • (Proton---[u≈u≈d])
 • (Neutron---[u≈d≈d])
কোয়ার্ক খুবই সূক্ষ্ম কণা যাদের ভর এখনও সঠিক ভাবে পরিমাপ করা সম্ভব হয়নি।
একটি আপ কোয়ার্কের ভর ধরা হয় প্রায় ~ {(1.8-3.0) MeV/c^2}। একটি ডাউন কোয়ার্কের ভর ধরা হয় প্রায় ~ {(4.5-5.3) MeV/c^2}।
• এখন অনেকের মনে এই প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে MeV/c^2 কি? এটা আসলে অতি সূক্ষ্ণ বস্তুর ভর নির্ণয়ের সমীকরণ।
• MeV/c^2 ----> [MegaElectron Volt / Light Speed^2]
(1 MegaElectron Volt / C^2 = 1.7827×10^–30 Kilogram)
 চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক একটা প্রোটনের মূল ভর কত? আগেই বলে নিচ্ছি কেউ কিন্তু সেন্সলেস হয়ে যাবেন না!
একটি প্রোটনের ভর হলো প্রায় 938.2720 MeV/c^2।
আপনাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো এখন বলবেন ইয়ার্কি হচ্ছে নাকি? এটা কিভাবে সম্ভব? কারণ হিসাব অনুযায়ী একটি প্রোটনের ভর হওয়া উচিৎ তাকে গঠনকারী দুটি আপ কোয়ার্কের ও একটি ডাউন কোয়ার্কের ভরের যোগফলের সমান। অর্থাৎ {(2×3.0)+5.3} = 11.3 MeV/c^2।  তাহলে একটি প্রোটনের এই 926.9720 MeV/c^2 বাড়তি ভর এলো কোথায় থেকে?
অন্যদিকে এই একই কথা প্রযোজ্য একটি নিউট্রন কণিকার ক্ষেত্রেও। একটি নিউট্রন কণিকার ভর হলো 939.5656 MeV/c^2। এটাও যথেষ্ট অবাক করার মতো বিষয় তাই না? একটি নিউট্রনের ভর হওয়া উচিত ছিলো তাকে গঠনকারী দুটি ডাউন কোয়ার্ক ও একটি আপ কোয়ার্কের ভরের যোগফলের সমান। অর্থাৎ {(5.3×2)+3.0} = 13.6 MeV/c^2। নিউট্রনেরও এই 925.9656 MeV/c^2 বাড়তি ভর এলো কোথায় থেকে?

আসলে নিউক্লিয়াস অর্থাৎ প্রোটন ও নিউট্রনের ভরের মূল উৎস তাদের গঠনকারী আপ কোয়ার্ক ও ডাউন কোয়ার্কের ভর নয়। প্রোটন ও নিউট্রন কণিকার মোট ভরের মাত্র 1% আসে তাদের গঠনকারী আপ কোয়ার্ক ও ডাউন কোয়ার্কের ভর থেকে! আর নিউট্রন ও প্রোটনের ভরের 99 শতাংশই আসে এদের গঠনকারী কোয়ার্কগুলোর গতিশক্তি ও এদের মধ্যে ক্রিয়াশীল গ্লুওন ফিল্ডের (gluon field) বন্ধন শক্তি থেকে। আর এই বন্ধন শক্তিই মূলত আপ ও ডাউন কোয়ার্কগুলোকে একত্রে যুক্ত করে প্রোটন ও নিউট্রন কণা গঠন করে।
তাহলে এর থেকে বোঝা গেলো আমরা যে বিভিন্ন বস্তুর একেবারে সূক্ষ্ম ভর পরিমাণ করি তার 1% মাত্র তাকে গঠনকারী পদার্থের ভর আর বাকি 99% তাকে গঠনকারী অতিব সূক্ষ্ম কণা সমূহের গতি শক্তি ও গ্লুওন ফিল্ডের বন্ধন শক্তি যে বন্ধনের দ্বারাই সেই অতি সূক্ষ্ণ কণিকা গুলো পদার্থকে গঠন করে। তাই বলা যায় যে একটি বস্তুর মধ্যে নিহিত থাকা শক্তিই তার ভরের কারণ। ভর হচ্ছে একটা বস্তুর ভেতরে থাকা মোট শক্তির পরিমাপক মাত্র।
কিন্তু এখানে ভাববার বিষয় হচ্ছে, আমরা উপরোক্ত আলোচনা থেকে জেনেছি যে প্রোটন ও নিউট্রনের বেশিরভাগ ভরের কারণ তাদের গঠনকারী আপ কোয়ার্ক ও ডাউন কোয়ার্কের গতি শক্তি ও গ্লুওন ফিল্ডের বন্ধন শক্তি। কিন্তু প্রোটন ও নিউট্রনের অভ্যন্তরে উৎপন্ন হওয়া শক্তির জন্য এদের অধিকাংশ ভর সৃষ্টি হওয়ার বাদেও এদের নিজস্ব কিছু ভর রয়েছে যে ভরের কারণ তাদের গঠনকারী আপ কোয়ার্ক ও ডাউন কোয়ার্কের গতিশক্তি ও গ্লুওন ফিল্ডের বন্ধন শক্তি নয়। এই ভর তাদের সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থাৎ এই ভরের কারণ কোনো শক্তি নয়। একটি প্রোটন কণিকার ভর প্রায় 938.2720 MeV/c^2। কিন্তু প্রোটন গঠনকারী দুটি আপ কোয়ার্ক ও একটি ডাউন কোয়ার্কের যৌথ ভর মাত্র 11.3 MeV/c^2 আর বাকি, 926.9720 MeV/c^2 হলো গতিশক্তি ও গ্লুওন ফিল্ডের বন্ধন শক্তি ফলে তৈরি হওয়া ভর। তাহলে এখান থেকে বোঝা গেলো একটি প্রোটন কণিকার নিজস্ব ভর প্রায় 11.3 MeV/c^2 আর বাদবাকি 926.9720 MeV/c^2 ভর হলো শক্তি। প্রশ্ন তাহলে প্রোটনের এই নিজস্ব ভর এলো কোথায় থেকে? একটি প্রোটনের মোট ভরের প্রায় 99% হলো শক্তি আর মাত্র 1% হলো কণিকা সমূহের নিজস্ব ভর। তাহলে কণিকা সমূহের এই 1% ভর এলো কোথায় থেকে? একটু গভীর ভাবে বলতে গেলে প্রোটন গঠনকারী সেই আপ কোয়ার্ক ও ডাউন কোয়ার্কের নিজস্ব ভর এলো কোথায় থেকে? এই একই কথাগুলো কিন্তু একটি নিউট্রন কণিকার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

ভর কি? ভরের চরিত্র কিরকম? সেটা বোঝার জন্য বিজ্ঞানীরা বহুকাল ধরে চেষ্টা করছেন। বস্তুর একটা বৈশিষ্ট্য হিসেবে ভরের চরিত্র বোঝার জন্য আঠারো শতকের মাঝামাঝিতে একটি ধারণার উদ্ভব হয়েছিল। আর এই ধারণা অনুযায়ী ভরকে সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না কেবল রূপান্তর করা যায়। অর্থাৎ যেকোনো স্থানে যে কোনো অবস্থায় বস্তুর মোট ভর সব সময় একই থাকে। এই ধারণাটি ভরের নিত্যতা সূত্র হিসেবে পরিচিত। এদিকে আবার উনিশ শতকে উদ্ভব হলো শক্তির নিত্যতা সূত্রের। শক্তির নিত্যতা বা শক্তির সংরক্ষণশীলতার এই সূত্রমতে " শক্তিকে সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না কেবল এক রূপ থেকে অন্য একটি রূপে রূপান্তর করা যায় কিন্তু এতে মোট শক্তির পরিমাণ সব সময় একই থাকে " এভাবে পূর্বে এই সূত্রগুলোর দ্বারা বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে যে ভর ও শক্তির সম্পূর্ণ ভিন্ন ভিন্ন দুটি বিষয়। কিন্তু বিশ শতকের গোড়ার দিকে আলবার্ট আইনস্টাইনের হাত ধরে এলো ভর-শক্তির সমতা সূত্র (Mass=Energy equivalence)। আইনস্টাইন ১৯০৫ সালে তাঁর সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বের বিখ্যাত সূত্র E = mc2 প্রতিপাদন করেন। (এখানে, E= Energy বা শক্তি, M= Mass বস্তুর আপেক্ষিক ভর, আর C^2= Light Speed বা আলোর বেগ)। আর এই সূত্রের মূলকথা হলো—ভর আসলে আর কিছুই নয় এটা হচ্ছে একটা বস্তুর ভেতরে থাকা মোট শক্তির পরিমাপক মাত্র। আইনস্টাইনের এই সূত্রের দ্বারা শক্তির নিত্যতা সূত্রের বক্তব্যও পাল্টে গেলো। তখন বলা হলো শক্তিকে সৃষ্টি বা ধ্বংস করা সম্ভব তবে শক্তিকে সৃষ্টি করতে হলে তার সমপরিমাণ ভর ধ্বংস করতে হবে। আর কোনো কারণে যদি শক্তি বিলীন হয়ে যায় তাহলে ভরের সৃষ্টি হবে। ভর সৃষ্টির এক অপূর্ব ব্যাখ্যা পাওয়া গেল আইনস্টাইনের এই কালজয়ী সূত্রের দ্বারা। তার মানে শক্তি থেকেই ভরের সৃষ্টি। আর সেজন্যই ভরসম্পন্ন বস্তুর ভেতরে সঞ্চিত থাকে বিপুল পরিমাণ শক্তি। এখন এই প্রশ্ন সামনে আসবে একটা কণার ভর আছে বুঝলাম কিন্তু ভরটা সে পেলো কোথায়? এবং কীভাবে পেলো?

এই প্রশ্নের সমাধান করতে, ১৯৬৪ সালে পিটার হিগস নামক এক ব্রিটিশ তাত্ত্বিক পদার্থবিদ ভরের উৎসের সন্ধানে এক নতুন ধারণা প্রবর্তন করেন। পিটার হিগস তখন " হিগস বোসন " নামে একটা কণার কথা বলেন। পিটার হিগস বলেন বস্তুর ভর সৃষ্টির জন্য এই কণাটিই দায়ী। (God Particles) বা " ঈশ্বর কণা " নামের যে কণাটির কথা আজকাল অহরহ শোনা যায়।

হিগস বোসন ঈশ্বর কণা নাম পেলো কিভাবে? বিখ্যাত পদার্থবিদ লিওন লেডারম্যানের জনপ্রিয় বিজ্ঞান বই (The God Particle: If the Universe Is the Answer, What Is the Question?) মূলত এই বইয়ের নাম থেকেই হিগস বোসন ঈশ্বর কণার নাম লাভ করে। এবার মূল আলোচনায় ফেরা যাক। হিগস বোসন নামের এই কণাটি খুঁজে পাওয়া ভারি কষ্টসাধ্য ব্যাপার। আর এই কণার মধ্যেই লুকিয়ে আছে আমাদের এই দৃশ্যমান মহাবিশ্বের যাবতীয় রহস্য। 
এবার জানবো হিগস বোসন নামের এই কণা আসলে কি এবং কেমন এই কণা? সহজভাবে বলতে গেলে মহাবিস্ফোরণের পর মহাবিশ্ব যখন দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছিল তখন সম্প্রসারণের সাথে সাথে মহাবিশ্ব তখন দ্রুত ঠান্ডাও হচ্ছিলো। আর মহাবিশ্বের তাপমাত্রা একটা নির্দিষ্ট মানের নিচে নেমে যাওয়ার পর একটা অদৃশ্য অথচ সর্বত্র পরিব্যাপ্ত ফিল্ড বা ক্ষেত্রের আবির্ভাব হয়, আর এই  ফিল্ডের নাম হিগস ফিল্ড। (উচ্চমাত্রার বিদ্যুৎ যেমন চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের সৃষ্টি করে তেমনই হিগস বোসন হিগস ফিল্ড সৃষ্টি করে) আর এই ফিল্ডের সঙ্গেই যুক্ত কণাটির নামই হলো " হিগস বোসন "। হিগস বোসনের সঙ্গে যে কণাগুলো মিথস্ক্রিয়ায় (Interaction) লিপ্ত হয় তারা মিথস্ক্রিয়ার ফলে ভরপ্রাপ্ত হয়। যেমনঃ- প্রোটন, নিউট্রন, ইলেকট্রন ইত্যাদি। আর যেসব কণা মিথস্ক্রিয়ায় লিপ্ত হয়নি তারা ভর অর্জন করতে সক্ষম হয় না। যেমনঃ আলোর ফোটন কণিকা। আলোর ফোটন কণিকা হিগস বোসনের সঙ্গে কোনো প্রকার মিথস্ক্রিয়ায় লিপ্ত হয়নি বলেই সে ভর শূন্য। অর্থাৎ কোনো বস্তুকে ভরপ্রাপ্ত হওয়ার জন্য হিগস বোসনের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ায় লিপ্ত হতেই হবে। কোনো বস্তুর ভর অর্জনের জন্য হিগস বোসনের সাথে মিথস্ক্রিয়ায় লিপ্ত হওয়া আবশ্যক। যে বস্তু যত বেশি হিগস বোসনের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করবে সে তত বেশি ভর অর্জন করবে! ১৯৬৪ সালে মূলত এই ধারণাটি প্রবর্তিত হলেও এই কণাটিকে ২০১২ সালের আগ পর্যন্ত পরীক্ষাগারে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ওই বছর বিজ্ঞানীরা সেটি খুঁজে পাওয়ার ঘোষণা দেন। সে জন্য পিটার হিগস ২০১৩ সালে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন।
এখন যদি কেউ প্রশ্ন করে কী দরকার ছিলো এই ভর সৃষ্টির? সবকিছু শক্তি রূপে ছিলো শক্তি রূপেই থাকতো! প্রশ্নকর্তার প্রশ্নটা যদি এমন হয় তাহলে এই প্রশ্নের উত্তরটি হয়তো তখন অধিবিদ্যার দিকে চলে যাবে। ভর সৃষ্টি না হলে যেহেতু কোনো কিছুরই দৃশ্যমান অস্তিত্ব ফুটে উঠতো না তাই হয়তো সৃষ্টিকর্তা প্রকৃতিকে আমাদের নিকট দৃশ্যমান করে তোলার জন্যই বস্তুর ভরের সৃষ্টি করেছেন।

Thursday, February 10, 2022

🔷 পৃথিবী সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরে না? 🔷

◾সৌরজগতের উপস্থিত গ্রহ উপগ্রহগুলো সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে এবং সূর্য নিজের চারপাশে ঘোরে আজ পর্যন্ত আমরা এটা জেনে বড় হয়েছি। অর্থাৎ, গ্রহরা তার নক্ষত্রের চারপাশে প্রদক্ষিণ করেন। এ ধারণা সঠিক নয়। আসলে যেটা হয় গ্রহ এবং তার নক্ষত্র দুজনেই নিজেদের কমন সেন্টার অফ মাস এর চক্কর কাটে। এই কমন সেন্টার অফ মাসকে টেকনিক্যাল ভাষায় ব্যারি সেন্টার বলা হয়।

সহজভাবে বললে ভরকেন্দ্র বা সেন্টার অফ মাস হল কোন বস্তুর মধ্যকার এমন একবিন্দু বা স্থান যেখানে একটা আঙুল দিয়ে তাকে সহজে ব্যালেন্স করা যায়। যে কোনো বস্তুরই ভরকেন্দ্র অবশ্যই রয়েছে। যে বস্তুর ক্ষেত্রে যার ভর পুরটা জুড়ে সমানভাবে বিস্তৃত থাকে সেই বস্তুর ক্ষেত্রে ভরকেন্দ্র সাধারণত তার একদম মাঝামাঝি থাকে। উদাহরণ হিসেবে একটা রুলার বা স্কেলকে ধরা যেতে পারে।

কিন্তু সব বস্তুর ক্ষেত্রে ভরকেন্দ্র তার মাঝামাঝি থাকে না। যেমন একটা হাতুড়ির ক্ষেত্রে সমগ্র ভর বা মাস গোটা বডিতে সমানভাবে বিস্তৃত নয় এর লোহার অংশটির ভর বেশি এবং কাঠের অংশটির ভর কম। স্বাভাবিকভাবেই এটাকে আমরা মাঝখানে আঙুল দিয়ে ব্যালেন্স করতে পারব না। কাজেই এক্ষেত্রে ভরকেন্দ্র লোহার অংশটির দিকেই আমরা খুঁজে পাবো।

উদাহরণ হিসেবে যদি সূর্য এবং পৃথিবীর কথা বলি তাহলে পৃথিবীর তুলনায় সূর্যের ভর অনেক গুন বেশি। সেজন্যই সূর্য এবং পৃথিবীর ব্যারি সেন্টার সূর্যের নিজের কেন্দ্রের একদম কাছাকাছি অবস্থান করে। সূর্য এবং পৃথিবী দুজনেই এই কমন ব্যারি সেন্টারের প্রদক্ষিণ করে। 29 Hatman House

যেহেতু আমরা পৃথিবীর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছি তাই আমাদের মনে হয় পৃথিবী ব্যারি সেন্টারের নয় বরং সূর্যের প্রদক্ষিণ করছে। কিন্তু ব্যারি সেন্টারের ধারনাটা তখন একদম পরিষ্কার হয়ে যায় যখন আমরা জুপিটার অর্থাৎ বৃহস্পতি গ্রহের উদাহরণ দেখি।

বৃহস্পতি গ্রহ পৃথিবীর থেকে বহুগুণ বড় এবং এর ভর পৃথিবীর প্রায় তিনশো আঠারো গুন বেশি। এবারে বৃহস্পতি ও সূর্যের ব্যারি সেন্টারের ব্যাপারে বললে বৃহস্পতি গ্রহের বিশালতার জন্য ব্যারি সেন্টার সূর্যের কেন্দ্র থেকে অনেকটা দূরে এর বাইরে গিয়ে তৈরি হয়। সূর্য এবং বৃহস্পতি গ্রহ এই কমন ভরকেন্দ্রের চক্কর কাটে। 29 Hatman House

হতে পারে আপনাদের মধ্যে অনেকেই এখনো এটা বুঝে উঠতে পারেননি যে দুটো বস্তুর ভরের ব্যবধান হলে ব্যারি সেন্টারের অবস্থানে কতটা প্রভাব পড়ে এবং এর ফলে দুটো বস্তুর অরবিট বা কক্ষপথে কি পার্থক্য দেখা যায়। ধরা যাক দুই বস্তু একদম সমান। তাহলে এদের ব্যারি সেন্টার একদম মাঝামাঝি অবস্থান করছেন ফলে এই দুইটা বস্তুই তাদের কেন্দ্রকে প্রদক্ষিণ করছে।

আবার যদি এমন হয় যে দুই তা বস্তুর মধ্যে একটা বস্তুর ভর বেশি তখন দেখা যাবে যে এদের কেন্দ্র বেশি ভর ওয়ালা বস্তুর কাছাকাছি রয়েছে। আর এইখানেও এই দুই বস্তু তাদের ব্যারি সেন্টারের প্রদক্ষিণ করছে। যখন একটি বস্তু অনেক বেশি বড় থাকবে আর অন্য বস্তুটি তুলনামুলক ভাবে ছোট হয় তখন ও কিন্তু তারা তাদের ব্যারি সেন্টারকে প্রদক্ষিণ করে কিন্তু ছোট বস্তুর দৃষ্টিকোণ থেকে ভাল করে দেখলে মনে হবে যে ছোট বস্তুটি বড় বস্তুকে প্রদক্ষিণ করছে। ঠিক এ রকমটাই ঘটে সূর্য এবং পৃথিবীর সহ অন্যান্য গ্রহ উপগ্রহের ক্ষেত্রে। পৃথিবী থেকে দেখলে আমাদের মনে হয় আমরা সূর্যের চারপাশে ঘুরছি কিন্তু আসল ব্যাপারটা আপনি কিন্তু এবার জেনে গেলেন।

আমাদের গোটা সোলার সিস্টেমের একটা ব্যারি সেন্টার আছে। সোলার সিস্টেমে থাকা সব বস্তুর মিলিত ভর, মিলিত ভরের কেন্দ্রকেই আসলে সূর্য্য সহ সব গ্রহ উপগ্রহ প্রদক্ষিণ করে। 29 Hatman House

সৌরজগতের এই কমন ব্যারি সেন্টারের চক্কর কাটে সব বস্তু কিন্তু এই ব্যারি সেন্টার সব সময় এক জায়গায় থাকে না। প্রত্যেক বছর এর স্থান পাল্টাতে থাকে। যেহেতু শুধুমাত্র সূর্যের ভর আমাদের গোটা সোলার সিস্টেমের প্রায় ৯৯.৮ শতাংশ তাই বেশিরভাগ সময় আমাদের সৌরমণ্ডলের ব্যারি সেন্টার সূর্যের ভেতরেই অবস্থান করে। কিন্তু কখনো কখনো এটা সূর্যের সার্ফেসের বাইরের স্পেস এ অবস্থান করে ব্যারি সেন্টারের প্রদক্ষিণ করার ফলেই সূর্য নিজের জায়গা থেকে নড়াচড়া করতে থাকে। যেহেতু বেশিরভাগ সময় ব্যারি সেন্টার সূর্যের ভেতরে বা কেন্দ্রের কাছেই থাকে তাই সমস্ত গ্রহ একেই প্রদক্ষিণ করতে থাকে। সে জন্যই আমাদের মনে হয় যে গ্রহরা ব্যারি সেন্টারের নয় বরং সূর্যের প্রদক্ষিণ কাটছে। তাই সহজ ভাষায় বলে দেয়া হয় যে সমস্ত গ্রহ উপগ্রহ সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। কিন্তু বছর বছর আমাদের সৌর জগতের ব্যারি সেন্টার পরিবর্তন হতে থাকে।

ব্যারি সেন্টারের ধারনা সমস্ত বস্তুর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য সেটা কোন গ্রহ নক্ষত্র হোক বা গ্রহ উপগ্রহ হোক। আমাদের পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদের থেকে অনেকটাই বড়। তাই দুজনের ব্যারি সেন্টার পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে মাত্র চার হাজার ছয়শ একাত্তর কিলোমিটার দূরে তৈরি হয়। এই পয়েন্টকে পৃথিবী ও চাঁদ দুই জনেই চক্কর কাটে। ব্যারি সেন্টার ধারনাকে কাজে লাগিয়ে দূরে অবস্থিত গ্রহ আবিষ্কার করা হয়ে থাকে।

Tuesday, January 4, 2022

কসমোলজিঃ- মহাবিশ্বের সৃষ্টির রহস্য।


♦মহাকাশের বিশালতা নিয়ে আমাদের কৌতুহলের শেষ নেই।ঘটনার শুরু সেই প্রায় ১৪ বিলিয়ন বছর আগে। অতি ক্ষুদ্র এক বিন্দু যাকে বর্তমানে আমরা সিংগুলারিটি বলে চিনি সেটা খানিকটা বিস্ফোরিত হয়ে প্রচণ্ড গতিবেগে বেলুনের মতো এই মহাবিশ্ব প্রসারিত হতে লাগলো।কসমোলজি বা বিশ্বসৃষ্টিতত্ত্ব বিজ্ঞানের এমন শাখা যেটি ব্যাখা করে কিভাবে সৃষ্টি হয়েছিল আমাদের এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড! নিঃসন্দেহে এটি বিজ্ঞানের অন্যতম গুরুত্ববহ বিষয়। এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি ও শেষ নিয়ে বহু বছর ধরে মাথা খাটাচ্ছেন কসমোলজিস্টরা। এ  পর্যন্ত বহু তত্ত্ব জন্ম নিয়েছে কসমোলজিতে। অনেকে ব্যাখা করার চেষ্টা করেছেন কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে আমাদের এই মহাবিশ্ব এবং আজকের মহাবিশ্বের রূপ এমনই কেন হলো। তবে এ পর্যন্ত সবচেয়ে সফল ও প্রমাণিত থিওরি হচ্ছে বিগ ব্যাং থিওরি। আমি বাজি ধরে বলতে পারি বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণ তত্ত্বের নাম শুনেনি এমন কাউকে খুঁজে বের করতে বললে জেমস বন্ড কিংবা শার্লক হোমসও হাটু গেড়ে মাফ চাইবেন। আজকের এই আধুনিক কসমোলজি মূলত দাঁড়িয়ে আছে বিগ ব্যাং থিওরির উপর। একে  কসমোলজির প্রাণভোমরা বললেও দোষের কিছু হবে। 

♦আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার তত্ত্ব সম্পর্কে আমরা কমবেশি সবাই জানি। এই তত্ত্ব  অনুযায়ী মহাবিশ্ব প্রসারমান। কিন্তু তিনি তো আবার স্থির মহাবিশ্বে বিশ্বাসী ছিলেন। তাই একটা ধ্রুবক দিয়ে মহাবিশ্বকে স্থির করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু মহাবিশ্ব তো আর ঐ ধ্রুবকের নিয়মানুযায়ী চলছিল না। এডুইন হাবল আলোর ডপলার শিফট ব্যবহার করে প্রমাণ করলেন যে মহাবিশ্বের ক্রমাগত  প্রসারণমুখীনতা। অগত্যা আইনস্টাইনকে নিজের ভুল স্বীকার করে ধ্রুবকটা সরিয়ে নিতে হলো। তবে এখন আমরা জানি যে ধ্রুবকটার প্রয়োজনীয়তা কতো! সেটা নিয়ে আরেকদিন আলোচনা করবো নাহয়।
 
♦ ডপলার ইফেক্ট আবার কি! 

যখন কোনো শব্দ কারো দিকে ধেয়ে আসে তখন মনে হয় শব্দটা ক্রমাগত তীক্ষ্ণ হচ্ছে। আবার যখন তাকে শব্দটা অতিক্রম করে চলে যায় তখন মনে হয় শব্দের তীক্ষ্ণতা কমে ভোতা হয়ে যাচ্ছে। একটি গাড়ি কিংবা ট্রেনের হর্ণের শব্দ এর জন্য আদর্শ উদাহরণ। তো এরকমটা কেন হয়? 
যখন উৎস থেকে শব্দ ধেয়ে আসতে থাকে তখন শব্দের তরঙ্গদদৈর্ঘ্য কমতে থাকে বিধায় শব্দ তীক্ষ্ণ হতে থাকে। আবার যখন উৎস আপনাকে অতিক্রম করে দূরে যেতে থাকে তখন উল্টোটা ঘটে। একেই ডপলার ইফেক্ট বলে। সব তরঙ্গই এই ধর্ম মেনে চলে। আলোও।তবে আলোর ক্ষেত্রে একে ডপলার শিফট বলে। যখন কোনো উজ্জ্বল বস্তু  ক্রমাগত দূরে সরে যায় তখন তার তরঙ্গদৈর্ঘ্য বাড়তে থাকে। একে রেড শিফট বলে। আবার উজ্জ্বল বস্তুটি যখন ক্রমাগত কাছে আসতে থাকে তখন তার তরঙ্গদদৈর্ঘ্য কমতে থাকে। একে ব্লু শিফট বলে। এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করে এডুইন হাবল দেখেছিলেন যে মহাবিশ্বের প্রত্যেকটি বস্তু একে অপরের কাছ থেকে ক্রমাগত দূরে সরে যাচ্ছে। এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠলো এমনটি কেন হচ্ছে?
 

♦♦এই রহস্যময় প্রশ্নের উত্তরে দু'টি থিওরি এসেছিল। তবে এখন আমরা শুধু একটা থিওরি নিয়ে আলোচনা করবো।

 তো এই প্রশ্নের প্রেক্ষাপটে পদার্থবিদ  জর্জ গ্যামো বলেছিলেন যে যেহেতু এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড প্রতিনিয়ত প্রসারিত হচ্ছে, সেহেতু পূর্বে কোনো এক সময় এই মহাবিশ্বের সকল কিছু একসাথে ছিল এবং এক সময় তা এক মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লো। এই থিওরিটির নামই হচ্ছে বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব। 

এই থিওরি অনুসারে ১৩.৮ বা ১৪ বিলিয়ন বছর আগে পুরো মহাবিশ্বের সকল কিছু এক অতি ক্ষুদ্র বিন্দুতে শক্তিরূপে ছিল। একে সিংগুলারিটি পয়েন্ট বলে আমরা জানি। তখন বিন্দুটিতে তাপ এবং চাপের পরিমাণ ছিল অসীম। এখন আমরা জানি ভর ও শক্তি আলাদা কিছু নয়। তো একসময় বিন্দুটির সকল কিছু এক মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ল। এখান থেকেই সময়সহ অন্যান্য মাত্রাগুলোর সৃষ্টি ও শুরু হয়েছে। বিগ ব্যাংয়ের আগে সময়েরও অস্তিত্ব ছিল না। কি অদ্ভুত, তাই না! কিন্তু এটাই সত্যি। বিগ ব্যাংয়ের আগে কোনো কিছুরই অস্তিত্ব ছিল না এবং থাকলেও তা আমরা জানি না। আরো একটি মজার কথা হচ্ছে আজকে যে চারটি মৌলিক বল আমাদের মহাবিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করছে সিংগুলারিটিতে কিন্তু তারা একীভূত ছিল। বিজ্ঞানীরা আবারো চারটি বলকে এক করার করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

বিগ ব্যাংয়ের পর একটি নির্দিষ্ট সময়কে বলা হয় প্ল্যাঙ্ক টাইম। এই সময়ের মধ্যে কি কি ঘটেছিল তাও বিজ্ঞানীরা এখনো জানেন না। তবে বিগ ব্যাংয়ের থেকেই যে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি সেটা জোরালোভাবে বলা যায়। বিগ ব্যাং থেকে এই মহাবিশ্বের প্রকৃতি বেশ ভালোভাবে ব্যাখা করা হয় ( যদিও এখনো কিছু ত্রুটি থেকে গেছে )। যারা একটু বেশি খুতখুতে তারা নিশ্চয়ই বলবে বিগ ব্যাংয়ের কিছু প্রমাণ-ট্রমাণ দেও বাপু। নইলে বিশ্বাস করি ক্যামনে। এখন বিগ ব্যাংয়ের কয়েকটি বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ সম্পর্কে বলছি।

♦ মহাবিশ্বের প্রসারণমুখীনতাঃ  বিগ ব্যাংয়ের সবচেয়ে বড় প্রমাণ এটা।মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে মানে নিশ্চয়ই কোনো এক সময় পুরো মহাবিশ্ব এক জায়গায় ছিল এবং বিস্ফোরিত হয়ে তা ছড়িয়ে পড়েছে।কিন্তু মহাবিশ্ব  সম্প্রসারন থামছে না কেনো?।আসলে সম্প্রসারন থামছে না কেন তা সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা শতভাগ নিশ্চিত নয়। কিন্তু পৃথিবীর সৃষ্ট বিজ্ঞানীরা যখন কোন কিছু বুঝতে পারে না তখন শূন্য থেকে তারা অসাধারণ কিছু থিউরি আবিষ্কার করে। কিছুদিনের মাঝেই আমরা ধরে নিলাম, আমাদের স্পেসে নিশ্চই ‘অজ্ঞাত’ কোন এক শক্তি ব্যাপক পরিমানে ছড়িয়ে আছে। এই শক্তি গ্র্যাভিটির বিরুদ্ধে কাজ করে। সবকিছু এক্সপেন্ড করে দিতে পারে সে। তার কারনেই মহাবিশ্ব সংকুচিত না হয়ে এখনো সম্প্রসারিত হয়ে চলেছে।
তবে বিজ্ঞানীরা এর পিছনে ডার্ক ম্যাটারকেও দায়ী করে থাকেন।এই ডার্ক ম্যাটার আবার কি??

@আমাদের মহাবিশ্বে শতকরা প্রায় ৮০-৯০ ভাগ এমন পদার্থ  রয়েছে যা বিজ্ঞানীরা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন না।এমনকি এই বিষয়ে ধারণাও করতে পারে না। এই শতকরা ৯০ ভাগ পদার্থকে বিজ্ঞানীরা ডার্ক ম্যাটার নামে ডাকে।মহাকাশের যে পদার্থ আমাদের পরিচিত তার নাম হল “ব্যারিয়নিক ম্যাটার”, যা প্রোটন, নিউট্রন ও ইলেক্ট্রনের তৈরি। ডার্ক ম্যাটার হয়ত ব্যারিয়নিক ম্যাটার দিয়ে তৈরি হতেও পারে আবার নাও পারে। কিন্তু মহাবিশ্বের উপাদান সমূহকে একত্রিত রাখতে হলে ডার্ক ম্যাটারের পরিমাণ শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ হতেই হবে। আগেই বলা হয়েছে এই নিরুদ্দেশ পদার্থ ব্যারিয়নিক পদার্থের তৈরি হতেও পারে, কিন্তু আমরা কোনও কারনে তা এখনও ডিটেক্ট করতে পারছিনা। সন্দেহের তালিকায় যেসব বস্তু আছে তা হল অনুজ্বল ব্রাউন ডোয়রফ, হোয়াইট ডোয়রফ এবং নিউট্রিনো স্টার। সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলও এই তালিকার ভেতর হতে পারে। বিজ্ঞানীরা যে নিরুদ্দেশ পদার্থের খোঁজ করছেন মহাকাশে তার ভুমিকা সাধারণ ব্যারিয়নিক পদার্থের চেয়েও বেশী হতে পারে। কারণ অন্যান্য যেসব উপাদান আছে তা বলছে ডার্ক ম্যাটার সাধারণ পদার্থের চেয়ে অনেক আকর্ষণীয়।
বেশীরভাগ বিজ্ঞানীদের মতে ডার্ক ম্যাটার নন-ব্যারিয়নিক পদার্থের তৈরি। এদের মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ডব্লিউআইএমপিএস বা উইকলি ইন্টার‍্যাক্টিং  ম্যাসিভ পারটিকেল। এই ধরণের কণার ভর প্রোটনের চেয়ে প্রায় শতগুন বেশী। কিন্তু সাধারণ পদার্থের সাথে এর খুবই কম মিথস্ক্রিয়ার জন্য এটাকে ডিটেক্ট করা প্রায় অসম্ভব

♦ সিএমবিঃ ১৯৬৫ সালে বিজ্ঞানী পেনজিয়া এবং উইলসনের মাইক্রোওয়েভ এন্টেনায় ধরা পরে কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড বা পটভূমি বিকিরণ। এই বিকিরণটি বিগ ব্যাংয়ের কাছাকাছি সময়ের আলোর বিকিরণ। টিভিতে আমরা যে ঝিরিঝিরি জাতীয় কিছু দেখি তার কারণও কিন্তু সিএমবি। ডিশ এন্টেনায় সিএমবি হিট করায় এমনটি হয়। সিএমবি দ্বারা আমরা বিগ ব্যাংয়ের কাছাকাছি সময়ের অবস্থা সম্পর্কে আমরা জানতে পারি। এটাকে মহাবিশ্বের আদি আলোও বলা যায়।

♦ মহাবিশ্বের তাপমাত্রাঃ বিগ ব্যাং তত্ত্ব অনুসারে এতদিনে মহাবিশ্বের তাপমাত্রা কমতে কমতে গড় তাপমাত্রা হওয়া উচিত প্রায় ৩ ডিগ্রী কেলভিন। আশ্চর্যের কথা হলো, বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি বর্তমানে মহাবিশ্বের গড় তাপমাত্রা প্রায় ৩ ডিগ্রী কেলভিন!

ডার্ক এনার্জিঃ মহাবিশ্ব যে ক্রমশই অধিক দ্রুত তালে প্রসারিত হচ্ছে।তার একটি কারণ হলাে এই ডার্ক এনার্জি । মহাবিশ্বের শুরুতে পদার্থের গড় ঘনত্ব ( p_m ) ডার্ক এনার্জির গড় ঘনত্ব ( p_A ) থেকে অনেক বেশি ছিল । প্রায় ৯ বিলিয়ন বছর ধরে সম্প্রসারণের ফলে পদার্থের গড় ঘনত্ব হ্রাস পায় । কিন্তু ডার্ক এনার্জির ঘনত্ব একই থাকে । মহাবিশ্বের সবখানেই ডার্ক এনার্জি বেশ সুষমভাবে ছড়িয়ে আছে । ডার্ক এনার্জির অতিমাত্রায় কম ঘনত্বের ( মােটামুটি প্রতি ঘনমিটারে মাত্র ১০ ^ -২৭ কিলােগ্রাম ) কারণে এটি  অনেকটাই দুষ্প্রাপ্য । মহাকর্ষ ছাড়া প্রকৃতির বাকি তিনটি মৌলিক বলের ওপর এর কোনাে প্রভাব আদৌও আছে কিনা তা এখনও জানা সম্ভব হয়নি।তবে ডার্ক এনার্জি অনেকটা এখনাে কল্পনার পর্যায়ে ।