অনেক সময়ই মনে হয় সামনের ব্যক্তিটি মিথ্যে বলছেন না সত্যি তা যদি জানা যেতো তাহলে অনেক ভালো হতো। অন্তত বোঝা যেতো তিনি কী ধরণের মানুষ। সত্যি বলতে কি, মিথ্যাবাদী কিন্তু বেশ সহজেই ধরে ফেলা যায়। বিহেভিওরাল এনালিস্ট এবং বডি ল্যাংগুয়েজ এক্সপার্ট ডঃ লিলিয়ান গ্লাস যিনি এফবিআই এর সাথে সংকেতের মাধ্যমে মিথ্যাবাদী ধরার মতো কাজ করছেন, তার মতে মিথ্যা বলার সময় মিথ্যেবাদীর মধ্যে কিছু পরিবর্তন আসে যেমন মুখভঙ্গি, বডি ল্যাংগুয়েজ, কথা বলার ধরণ ইত্যাদি। এই জিনিসগুলো ভালো করে লক্ষ্য করতে পারলেই খুব সহজে ধরে ফেলা যায় কে মিথ্যে বলছেন, কে বলছেন না। তিনি তার বই ‘দ্য বডি ল্যাংগুয়েজ অফ লায়ারস’এ এই মিথ্যেবাদীর মধ্যকার পরিবর্তন সম্পর্কে লিখেছেন।
১) হুট করেই মাথার অবস্থান পরিবর্তন করে কথা বলবেন:
আপনার একটি প্রশ্নের জবাবে হুট করে মাথার অবস্থান পরিবর্তন করে ফেলার অর্থ তিনি আপনাকে মিথ্যে বলছেন। ‘মাথা নিচু করে ফেলা, মাথা ঝাঁকিয়ে অন্য দিকে হেলানো ইত্যাদি এর অর্থ হচ্ছে তিনি মিথ্যে কথা বলছেন’, বলেন গ্লাস।
২) শ্বাসপ্রশ্বাসে পরিবর্তন আসবে:
যিনি মিথ্যে কথা বলছেন বা বলার চেষ্টা করছেন তার শ্বাস প্রশ্বাসে স্বাভাবিক ভাবেই পরিবর্তন আসবে। মিথ্যা বলার সময় ভারী নিঃশ্বাস নেয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় বলে উল্লেখ করেন গ্লাস। আর যখনই শ্বাস প্রশ্বাসে এই ধরণের পরিবর্তন আসবে তখন স্বাভাবিক ভাবেই নিঃশ্বাসের সাথে কাঁধ একটু উপরে উঠবে এবং কণ্ঠ একটু হালকা হয়ে আসবে। গ্লাস বলেন, ‘যখন মিথ্যা কথা বলা হয় তখন আমাদের দুশ্চিন্তা ও নার্ভাস হয়ে যাওয়ার কারণে হার্টবিট ও রক্ত সঞ্চালনে পরিবর্তন চলে আসে, যার ফলে শ্বাস প্রশ্বাসের এই পরিবর্তন ঘটে’।
৩) অনেক বেশি স্থির হয়ে দাড়িয়ে থাকবেন:
নার্ভাস হয়ে উসখুস করার বিষয়টি অনেকের নজরে পড়ে থাকে এবং তখন ধরে ফেলা যায় তিনি মিথ্যে বলছেন। কিন্তু এর পাশাপাশি নজর দিতে হবে সামনের ব্যক্তিটি কি খুব বেশি স্থির হয়ে গিয়েছেন কিনা। গ্লাস বলেন, ‘এটি সাধারণ নিউরোলজিক্যাল ফাইট হতে পারে, কারণ স্বাভাবিক ভাবে যখন আমরা সত্য কথা বলি তখন আমাদের হাত পা আমাদের অবচেতন মনের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়, কিন্তু যখন মিথ্যে বলা হয় তখন আমাদের অবচেতন মন থেকে আমাদের দেহ কোনো সাড়া পায় না, যার ফলে খুব বেশি স্থির হয়ে যাওয়া হয়’।
৪) একই কথা বারবার বলতে থাকবেন:
যখন কেউ মিথ্যে কথা বলে আপনাকে বোঝানোর চেষ্টা করবে তখন সেই মিথ্যেটা নিজের মনের মধ্যে গেঁথে নেয়ার জন্য হলেও একই শব্দ বা বাক্য বারবার মুখে উচ্চারিত হয়ে যাবে। আর এই বারবার একই কথা বলার মূল কারণ হলো এর পেছনে সে ভেবে নিচ্ছে পরের কথাটি কীভাবে সাজিয়ে বলা যায়।
৫) অনেক অপ্রয়োজনীয় কথা বলে ফেলবেন:
‘যদি কেউ প্রশ্ন না করার আগেই আপনাকে অনেক কিছু বলে ফেলছেন এবং আপনি যা জানতে চাননি তাও বলে দিচ্ছেন এমন হয় তাহলে ব্যক্তিটি আপনাকে মিথ্যে বলছেন তার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে’। গ্লাস আরও বলেন, ‘যখন কেউ মিথ্যে বলেন তখন তিনি অতিরিক্ত কথা একারণেই বলেন যাতে আপনি তার কথা বিশ্বাস করে নেন’।
৬) মুখের কাছে হাত নিয়ে বা মুখ ঢেকে কথা বলবেন:
কোনো প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় যদি হাত মুখের সামনে নিয়ে কথা বলা বা মুখের সামনে নিয়ে আসেন তাহলে বুঝতে হবে তিনি প্রশ্নের উত্তর দিতে ইতস্ততবোধ করছেন। গ্লাস বলেন, ‘যখন পূর্ণ বয়স্ক কেউ এই ধরণের কাজ করেন তার অর্থ হচ্ছে তিনি প্রশ্নটির সত্য উত্তর দিতে চাচ্ছেন না’।
৭) ঘন ঘন পায়ের অবস্থান পরিবর্তন করবেন:
পায়ের অবস্থানে পরিবর্তন বলে দেবে আপনার সামনে বসা মানুষটি মিথ্যে বলছেন যার কারণে তিনি অনেক নার্ভাস। গ্লাস বলেন, ‘এই পায়ের অবস্থান পরিবর্তন বেশ ভালো একটি কৌশল কারো মিথ্যে ধরে ফেলার’।
৮) কথা মুখে বেঁধে যাবে বা কথা বলতে কষ্টবোধ করবেন:
‘আমাদের দেহের অটোম্যাটিক নার্ভাস সিস্টেম স্যালাইভারি ফ্লো কমিয়ে দেয় যখন আমরা অনেক বেশি মানসিক চাপে থাকি, যার কারণে আমাদের মুখের মিউকাস মেমব্রেন্স শুকিয়ে যায়। এবং এতে করেই কথা বলতে মুখে বেঁধে যায় বা কথা বলতে কষ্ট হতে থাকে’। মিথ্যা বলার সময় আমরা একই ধরণের মানসিক চাপের মধ্যে থাকি।
৯) একদৃষ্টিতে তাকিয়ে কথা বলবেন:
সকলেরই ধারণা যারা মিথ্যে কথা বলেন তারা চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারেন না। কিন্তু আপনাকে কথা বিশ্বাস করানোর জন্য এবং নিজের কথা মানিয়ে নেয়ার জন্যও অনেক মিথ্যাবাদী আপনার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে মিথ্যে বলতে পারবেন। গ্লাস বলেন, ‘যখন আমরা সাধারণ ভাবে কথা বলি তখন স্বাভাবিক ভাবেই আমরা চারপাশে তাকিয়ে কথা বলি এবং স্বাভাবিক নিয়মেই চোখের পাতা ফেলি, কিন্তু একজন মিথ্যেবাদী স্বাভাবিক এই নিয়মটি মানতে পারবেন না এবং তার চোখের পলক ফেলাও হবে নিয়ন্ত্রিত’।
১০) আপনাকে দোষী করে কথা বলতে থাকবেন:
যখন একজন মিথ্যাবাদী নিজের কথা বিশ্বাস করাতে পারবেন না তখন তিনি আত্মরক্ষার খাতিরে উল্টো আপনাকে দোষী সাব্যস্ত করেই কথা বলতে থাকবেন। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই আপনি তার কথা বিশ্বাস না করার কারণে তিনি ক্ষেপে যাবেন।