Saturday, June 15, 2019

প্রাণের সন্ধানে মংগলগ্রহে

By
বিজ্ঞানীদের দৃঢ় বিশ্বাস আগামী এক দশকের মধ্যেই পৃথিবীর নিকটতম বাসযোগ্য প্রতিবেশী মংগলে মানুষ পা ফেলবে। আর সে লক্ষ্যেই চলছে লোহিত এ গ্রহে নাসার অভিযান ও আয়োজন। “মংগলগ্রহ মিশন ২০২০” নিয়ে ধুন্ধুমার কান্ড চলছে নাসার “ জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরি”-তে।
নাসা ২০২০ সালে যে যান্ত্রিক শকট পাঠাবে তার কোন আনুষ্টানিক নাম এখনো ঠিক হয়নি । কিন্ত উৎক্ষেপন ও অবতরণ স্থানসহ বিজ্ঞানীরা কী কী পরীক্ষা করবে সবই চুড়ান্ত এখন। অপেক্ষা ও প্রচেষ্টা চলছে যান্ত্রিক শকট বা গাড়িকে আরও নির্ভর ও কার্যকরী করার।
বিজ্ঞানীদের মংগলগ্রহ অভিযান এবং পৃথিবী সাদৃশ্য এ গ্রহটির প্রতি আগ্রহ বহুদিনের। মংগলের পৃষ্ঠে যান্ত্রিক শকট বা রোভার পাঠানোর প্রচেষ্টা ১৯৭১ সাল থেকেই। যদিও সফলতা এসেছে আরও পরে ১৯৯৭ সালে। দু ধরণের যন্ত্রযান মংগলে অবতরণ করেছে এ পর্যন্ত; প্রথমটি যান্ত্রিক শকট বা রোভার- যা মংগলের ভূপৃষ্টে চলাচল করতে পারে এবং দ্বিতীয়টি, স্থির যন্ত্র বা ল্যান্ডার-যা মংগলের ভূপৃষ্ঠে এক জায়গায় স্থির থাকে। ফলে রোভারের কার্যকারিতা ল্যাণ্ডারসের চেয়ে বেশী।
মংগলগ্রহে এ পর্যন্ত ৪টি রোভার অবতরণ করতে সক্ষম হয়েছে।
(১) প্রথমটি “সোজারনার রোভার ; “১৯৯৭ সালে অবতরণ করে মাত্র মাস চারেক পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ রেখে চিরতরে হারিয়ে গেছে।
(২) দ্বিতীয়ট্‌ “স্পিরিট রোভার”; ২০০৪ সালের ৪ জানুয়ারি অবতরণ করে প্রায় ৭.৭ কিলোমিটার চলেছিল মংগল ভূপৃষ্ঠে। তারপর পৃথিবীর সাথে শেষ যোগাযোগ হয়েছে ২০১০ সালের ২২ মার্চ। এর পরে এক ধুলিঝড়ে বালুর গভীরে হারিয়ে গেছে।
(৩) তৃতীয়টি, “অপরচ্যুনিটি রোভার”; ২০০৪ সালের ২৫ জানুয়ারি অবতরণ করে ১৫ বছরে প্রায় ৪০ কিলোমিটার চলে প্রচন্ড ধুলিঝড়ে ঢাকা পড়ে গেছে। “অপরচ্যুনিটি রোভার” থেকে শেষ যোগাযোগ হয়েছে ২০১৮ সালের ১০ জুন। নাসার বিজ্ঞানীদের শত চেষ্টাতেও দীর্ঘ সেবা দেয়া এ যান্ত্রিক শকটটিকে আর পূর্ণজীবন দেয়া যায়নি। নাসার বিজ্ঞানীরা “অপরচ্যুনিটি রোভার”-কে চিরবিদায় জানিয়েছেন ২০১৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি।
(৪) চতুর্থটি “ কিউরোসিটি রোভার”; ২০১১ সালের ২৬ নভেম্বর অবতরণ করে এখন পর্যন্ত ( ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯) পৃথিবীতে মংগলগ্রহ থেকে যোগাযোগ করে যাচ্ছে। পাঠাচ্ছে দারুণ সব ছবি- যা বিজ্ঞানীদের ভবিষ্যতে সহায়ক হবে।
তাছাড়া নাসার পাঠানো “ইনসাইট ল্যান্ডার” যা মাত্র মাস তিনেক আগে ২৬ নভেম্বর ২০১৮ সালে অবতরণ করলো সেখান থেকেও পাঠানো শুরু হচ্ছে নানা তথ্য উপাত্ত। নাসা ছাড়াও রাশিয়াসহ আরও কয়েকটি সংস্থার ল্যান্ডার এবং স্যাটেলাইট মংগলের বায়ুমন্ডলে অবস্থান করে নিয়মিত তথ্য পাঠাচ্ছে পৃথিবীতে।
সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে নাসার বিজ্ঞানীরা দারুণ আশাবাদী “ মংগলগ্রহ মিশন ২০২০” নিয়ে। মংগলগ্রহের ভূপৃষ্ঠের গুনাগুন বিবেচনা করে প্রাথমিক ভাবে কতগুলো স্থান নির্ধারণ করা হয়েছিল- যেখানে এ যান্ত্রিক শকট বা রোভারটি অবতরণ করবে। সেখানে থেকে প্রাণের সম্ভাব্যতা বিবেচনায় অবতরণ স্থানটি মোটামুটি চূড়ান্ত করা হয়েছে ( ছবি সংযুক্ত)। “ জেজিরো ক্র্যাটার” নামের এ স্থানটির ছবি পরীক্ষা করে দেখা গেছে শুকিয়ে যাওয়া জলের ধারার চিহ্ন- যা আনুমানিক ৩.৫ বিলিয়ন থেকে ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগের।
“ মংগলগ্রহ মিশন ২০২০” এ বিজ্ঞানীরা প্রধানত মংগলগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব, ভূপৃষ্ট ও ভূ-অভ্যন্তরের মাটির গুনাগুন, আবহাওয়া এবং ভবিষ্যতে প্রাণধারণ উপযোগী অক্সিজেন সৃষ্টির সম্ভাব্যতা নিয়ে গবেষণা করবেন। ফলে এ যান্ত্রিক শকটটিতে থাকবে মোটামুটি একটি উন্নতমানের বিজ্ঞান গবেষণাগার। মংগলগ্রহে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে নিজে নিজেই গবেষণা করে গবেষণালব্ধ ফলাফল পৃথিবীতে পাঠাবে “ মংগলগ্রহ মিশন ২০২০”।
২০২০ এর জুলাই কিংবা আগস্ট মাসেই পৃথিবী থেকে উৎক্ষেপন করা হবে “ মংগলগ্রহ মিশন ২০২০”। এ সময়কে বেছে নেয়া হয়েছে কারণ, পৃথিবী ও মংগল এ দু’টো প্রতিবেশী গ্রহ এ সময়ে মহাকাশযানের পক্ষে সুবিধেজনক অবস্থানে থাকে। ফলে সব কিছু ঠিক থাকলে ২০২১ সালের মার্চ-এপ্রিলে অবতরণ করবে “ মংগলগ্রহ মিশন ২০২০”।
২০২১ সালেও ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি ( ইএস এ) রোবটবাহী আরেকটি রোবটবাহী মহাকাশযান , যার নাম দেয়া হয়েছে রোজালিন্ড ফ্র্যাঙ্কলিন, সেটা পাঠাবে মংগলেগ্রহে।
ইতিমধ্যে স্পেসএক্স এর প্রতিষ্ঠাতা ইলোন মাস্ক ২০২৪ সালে মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠানোর এক ব্যয়বহুল প্রকল্পে নিয়ে কাজ করছেন। পৃথিবীর অনেক বিত্তশালী মানুষ মঙ্গল গ্রহে যাবার বিলিয়ন ডলার মূল্যের ওয়ানওয়ে টিকেটও কনফার্ম করে ফেলেছেন।
সব কিছু বিবেচনায় পৃথিবীর নিকট প্রতিবেশী মংগলগ্রহে মানুষের সম্ভাব্য দ্বিতীয় বাসস্থান স্থাপনের কাজ বেশ এগিয়েই যাবে আগামী কয়েক বছরে। মহাকাশ বিজ্ঞান তো বটেই মানবসভ্যতার অগ্রগতিতেও দারুণ সব ঘটনা ঘটবে আগামীতে।