Friday, September 25, 2020

অনলাইনে জিডি করার নিয়ম কানুন জেনে নিন

জিডি শব্দটি জেনারেল ডায়েরীর সংক্ষিপ্ত রুপ। প্রতিটি থানায় এবং ফাঁড়িতে একটি ডায়েরীতে ২৪ ঘন্টার খবর রেকর্ড করা হয়। প্রতিদিন সকাল আটটায় ডায়েরী খুলে পরের দিন সকাল আটটায় বন্ধ করা হয়। অর্থাৎ কার্যত এটি কখনই বন্ধ হয় না।
এই ডায়েরীতে থানার বিভিন্ন কার্যক্রম  যেমন আসামী কোর্টে চালান দেয়া, এলাকার বিভিন্ন তথ্য, থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আগমন ও প্রস্থানের তথ্য ইত্যাদি লিপিবদ্ধ থাকে।

নানাবিধ সমস্যায় পড়ে আমরা আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর দ্বারস্থ হয়ে থাকি। কিন্তু কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকলে তা থানায় লিখিত আকারে জানালে পুলিশ এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারে। আর কিভাবে আমরা থানা থেকে সেই সহযোগিতা নিতে পারি তা অনেকেরই জানা নেই।
মূল্যবান যে কোনো জিনিস হারালে যেমন- সার্টিফিকেট, দলিল, লাইসেন্স, পাসপোর্ট, মূল্যবান রশিদ, চেকবই, এটিএম বা ক্রেডিট স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থ ইত্যাদি। অথবা কোনো প্রকার হুমকি পেলে বা হুমকির আশংকা থাকলে কিংবা কেউ নিখোঁজ হলেও জিডি করার সুযোগ রয়েছে। অর্থাৎ সাধারণত যেসব ক্ষেত্রে মামলা হয় না সেসব ক্ষেত্রেই থানায় জিডি করা যায়। জিডি করার কোন বাধ্যবাধকতা না থাকলেও নতুন করে হারানো কাগজ তুলতে হলেও জিডির কপির প্রয়োজন হয়।
এসব ক্ষেত্রে আপনার প্রথম কাজ হলো নিকটবর্তী থানাকে জানানো। আর এটি জানাবেন একটি সাধারণ ডায়েরির মাধ্যমে, যাকে আমরা সংক্ষেপে জিডি বলে থাকি। এ ধরনের জিডি করার অর্থ হলো- বিষয়টি সম্পর্কে থানাকে অবগত করা, যাতে থানা কর্তৃপক্ষ সম্ভাব্য অপরাধটি সংঘটিত হওয়ার আগেই ব্যবস্থা নিতে পারে।


সাধারণ মানুষের কাছে জিডির গুরুত্ব
সাধারণ মানুষের কাছে জিডির গুরুত্ব ভিন্ন। কোন থানায় মামলাযোগ্য নয় এমন ঘটনা ঘটলে মানুষ থানায় জিডি করে থাকেন। আবার কাউকে ভয় ভীতি দেখানো হলে বা অন্য কোন কারণে যদি তিনি নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন, কিংবা কোন ধরনের অপরাধের আশঙ্কা করেন তাহলেও তিনি জিডি করতে পারেন। জিডি করার পর পুলিশ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। প্রয়োজনবোধে তদন্ত করা, নিরাপত্তা দেয়া ছাড়াও জিডির বিষয়টি মামলাযোগ্য হলে পুলিশ মামলা করে থাকে। আইনগত সহায়তা পাওয়ার জন্য জিডি অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। অনেক সময় আদালতেও জিডিকে সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
জিডি করা
থানার ডিউটি অফিসার জিডি নথিভুক্ত করেন। এক্ষেত্রে তিনি একটি ডায়েরীতে জিডির নম্বরসহ বিভিন্ন তথ্য লিপিবদ্ধ করেন। জিডির দুটি কপি করা হয়। একটি থানায় সংরক্ষণ করা হয় এবং অন্যটিতে জিডির নম্বর লিখে প্রয়োজনীয় সাক্ষর ও সীলমোহর দেয়া হয়। এটি ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ করতে হয়।
অভিযোগকারী নিজে জিডি লিখতে পারেন, আবার প্রয়োজনে থানার কর্মকর্তাও লিখে দিয়ে থাকেন।
প্রতিটি জিডির বিপরীতে একটি নম্বর দেয়া হয়, ফলে কোন অবৈধ প্রক্রিয়া মাধ্যমে কেউ আগের তারিখ দেখিয়ে জিডি করতে পারেন না।
অনলাইন জিডি
আবার পুলিশের তাৎক্ষণিক সাড়া দেবার প্রয়োজন নেই এমন ক্ষেত্রে যেমন পাসপোর্ট হারানো, বাখাটে বা মাদক সেবীদের সম্পর্কে তথ্য প্রদান বা এজাতীয় ক্ষেত্রে অনলাইনে জিডি করা যেতে পারেন বা সরাসরি পুলিশ সদরদপ্তরে ফ্যাক্স বা ই-মেইল করতে পারেন। এ পদ্ধতিতে দেশের বাইরে থেকেও জিডি করা সম্ভব। এক্ষেত্রে অনলাইনে জিডি করার পর ই-মেইল বা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জিডি নম্বরটি জিডিকারীকে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

হারানো বিষয়ের জিডি
মোবাইল ফোনের সিম, পরীক্ষার সার্টিফিকেট, জমির দলিল প্রভৃতি হারিয়ে গেলে ঐ সব কাগজপত্র পুনরায় তুলতে গেলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ হারানো সংবাদের জিডি চেয়ে থাকে, তাই ঐসব ক্ষেত্রে হারানো সংবাদের জিডি করে সেই জিডি নম্বরসহ কর্তৃপক্ষরে কাছে আবেদন করতে হয়।

এবার আসুন জেনে নেই জিডিতে কী কী উল্লেখ করতে হবে:
১. থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সম্বোধন করে লিখতে হবে এবং থানার নাম ও ঠিকানা লিখতে হবে।
২. বিষয় : ‘জিডি করার জন্য আবেদন’- এভাবে লিখতে হবে।
৩. অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কা করলে জিডিতে আশঙ্কার কারণ উল্লেখ করতে হবে।
৪. হুমকি দিলে হুমকি দেওয়ার স্থান, তারিখ, সময়, সাক্ষী থাকলে তাদের নাম, পিতার নাম ও পূর্ণ ঠিকানা উল্লেখ করতে হবে।
৫. হুমকি প্রদানকারী পরিচিত হলে তার/তাদের নাম, পিতার নাম ও পূর্ণ ঠিকানা উল্লেখ করতে হবে।
৬. অপরিচিত হলে তাদের শনাক্তকরণের বর্ণনা দিতে হবে।
৭. জিডি নথিভুক্ত করে বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন করতে হবে।
৮. সর্বশেষ জিডিকারীর নাম, স্বাক্ষর, পিতার নাম, পূর্ণ ঠিকানা ও তারিখ লিখতে হবে।
উল্লেখ্য, জিডি দুই কপি করতে হবে। এক কপি নথিভুক্ত করার জন্য থানায় জমা দিতে হবে, আরেক কপি থানার কর্মকর্তার সিল এবং জিডির নম্বর সংবলিত কপিটি যত্ন করে সংরক্ষণ করতে হবে। জিডি করতে থানায় কোনো ফি দিতে হয় না।
জিডির একটি নমুনা কপি:
তারিখঃ ………………
বরাবর
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা
………………..থানা, ঢাকা।
বিষয় : সাধারণ ডায়েরি ভুক্তির জন্য আবেদন।
জনাব,
আমি নিম্ন স্বাক্ষরকারী নাম: …………………………………
বয়স : ………………………………………………………
পিতা/স্বামী : ………………………………………………..
ঠিকানা : …………………………………………………….
এই মর্মে জানাচ্ছি যে আজ/গত …………………….. তারিখ ……………. সময় …………….জায়গা থেকে  আমার নিম্নবর্ণিত কাগজ/মালামাল হারিয়ে গেছে।
বর্ণনা : (যা যা হারিয়েছে)
বিষয়টি থানায় অবগতির জন্য সাধারণ ডায়েরিভুক্ত করার অনুরোধ করছি।
বিনীত
নাম:
ঠিকানা:
মোবাইল নম্বর: