Thursday, February 10, 2022

🔷 পৃথিবী সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরে না? 🔷

◾সৌরজগতের উপস্থিত গ্রহ উপগ্রহগুলো সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে এবং সূর্য নিজের চারপাশে ঘোরে আজ পর্যন্ত আমরা এটা জেনে বড় হয়েছি। অর্থাৎ, গ্রহরা তার নক্ষত্রের চারপাশে প্রদক্ষিণ করেন। এ ধারণা সঠিক নয়। আসলে যেটা হয় গ্রহ এবং তার নক্ষত্র দুজনেই নিজেদের কমন সেন্টার অফ মাস এর চক্কর কাটে। এই কমন সেন্টার অফ মাসকে টেকনিক্যাল ভাষায় ব্যারি সেন্টার বলা হয়।

সহজভাবে বললে ভরকেন্দ্র বা সেন্টার অফ মাস হল কোন বস্তুর মধ্যকার এমন একবিন্দু বা স্থান যেখানে একটা আঙুল দিয়ে তাকে সহজে ব্যালেন্স করা যায়। যে কোনো বস্তুরই ভরকেন্দ্র অবশ্যই রয়েছে। যে বস্তুর ক্ষেত্রে যার ভর পুরটা জুড়ে সমানভাবে বিস্তৃত থাকে সেই বস্তুর ক্ষেত্রে ভরকেন্দ্র সাধারণত তার একদম মাঝামাঝি থাকে। উদাহরণ হিসেবে একটা রুলার বা স্কেলকে ধরা যেতে পারে।

কিন্তু সব বস্তুর ক্ষেত্রে ভরকেন্দ্র তার মাঝামাঝি থাকে না। যেমন একটা হাতুড়ির ক্ষেত্রে সমগ্র ভর বা মাস গোটা বডিতে সমানভাবে বিস্তৃত নয় এর লোহার অংশটির ভর বেশি এবং কাঠের অংশটির ভর কম। স্বাভাবিকভাবেই এটাকে আমরা মাঝখানে আঙুল দিয়ে ব্যালেন্স করতে পারব না। কাজেই এক্ষেত্রে ভরকেন্দ্র লোহার অংশটির দিকেই আমরা খুঁজে পাবো।

উদাহরণ হিসেবে যদি সূর্য এবং পৃথিবীর কথা বলি তাহলে পৃথিবীর তুলনায় সূর্যের ভর অনেক গুন বেশি। সেজন্যই সূর্য এবং পৃথিবীর ব্যারি সেন্টার সূর্যের নিজের কেন্দ্রের একদম কাছাকাছি অবস্থান করে। সূর্য এবং পৃথিবী দুজনেই এই কমন ব্যারি সেন্টারের প্রদক্ষিণ করে। 29 Hatman House

যেহেতু আমরা পৃথিবীর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছি তাই আমাদের মনে হয় পৃথিবী ব্যারি সেন্টারের নয় বরং সূর্যের প্রদক্ষিণ করছে। কিন্তু ব্যারি সেন্টারের ধারনাটা তখন একদম পরিষ্কার হয়ে যায় যখন আমরা জুপিটার অর্থাৎ বৃহস্পতি গ্রহের উদাহরণ দেখি।

বৃহস্পতি গ্রহ পৃথিবীর থেকে বহুগুণ বড় এবং এর ভর পৃথিবীর প্রায় তিনশো আঠারো গুন বেশি। এবারে বৃহস্পতি ও সূর্যের ব্যারি সেন্টারের ব্যাপারে বললে বৃহস্পতি গ্রহের বিশালতার জন্য ব্যারি সেন্টার সূর্যের কেন্দ্র থেকে অনেকটা দূরে এর বাইরে গিয়ে তৈরি হয়। সূর্য এবং বৃহস্পতি গ্রহ এই কমন ভরকেন্দ্রের চক্কর কাটে। 29 Hatman House

হতে পারে আপনাদের মধ্যে অনেকেই এখনো এটা বুঝে উঠতে পারেননি যে দুটো বস্তুর ভরের ব্যবধান হলে ব্যারি সেন্টারের অবস্থানে কতটা প্রভাব পড়ে এবং এর ফলে দুটো বস্তুর অরবিট বা কক্ষপথে কি পার্থক্য দেখা যায়। ধরা যাক দুই বস্তু একদম সমান। তাহলে এদের ব্যারি সেন্টার একদম মাঝামাঝি অবস্থান করছেন ফলে এই দুইটা বস্তুই তাদের কেন্দ্রকে প্রদক্ষিণ করছে।

আবার যদি এমন হয় যে দুই তা বস্তুর মধ্যে একটা বস্তুর ভর বেশি তখন দেখা যাবে যে এদের কেন্দ্র বেশি ভর ওয়ালা বস্তুর কাছাকাছি রয়েছে। আর এইখানেও এই দুই বস্তু তাদের ব্যারি সেন্টারের প্রদক্ষিণ করছে। যখন একটি বস্তু অনেক বেশি বড় থাকবে আর অন্য বস্তুটি তুলনামুলক ভাবে ছোট হয় তখন ও কিন্তু তারা তাদের ব্যারি সেন্টারকে প্রদক্ষিণ করে কিন্তু ছোট বস্তুর দৃষ্টিকোণ থেকে ভাল করে দেখলে মনে হবে যে ছোট বস্তুটি বড় বস্তুকে প্রদক্ষিণ করছে। ঠিক এ রকমটাই ঘটে সূর্য এবং পৃথিবীর সহ অন্যান্য গ্রহ উপগ্রহের ক্ষেত্রে। পৃথিবী থেকে দেখলে আমাদের মনে হয় আমরা সূর্যের চারপাশে ঘুরছি কিন্তু আসল ব্যাপারটা আপনি কিন্তু এবার জেনে গেলেন।

আমাদের গোটা সোলার সিস্টেমের একটা ব্যারি সেন্টার আছে। সোলার সিস্টেমে থাকা সব বস্তুর মিলিত ভর, মিলিত ভরের কেন্দ্রকেই আসলে সূর্য্য সহ সব গ্রহ উপগ্রহ প্রদক্ষিণ করে। 29 Hatman House

সৌরজগতের এই কমন ব্যারি সেন্টারের চক্কর কাটে সব বস্তু কিন্তু এই ব্যারি সেন্টার সব সময় এক জায়গায় থাকে না। প্রত্যেক বছর এর স্থান পাল্টাতে থাকে। যেহেতু শুধুমাত্র সূর্যের ভর আমাদের গোটা সোলার সিস্টেমের প্রায় ৯৯.৮ শতাংশ তাই বেশিরভাগ সময় আমাদের সৌরমণ্ডলের ব্যারি সেন্টার সূর্যের ভেতরেই অবস্থান করে। কিন্তু কখনো কখনো এটা সূর্যের সার্ফেসের বাইরের স্পেস এ অবস্থান করে ব্যারি সেন্টারের প্রদক্ষিণ করার ফলেই সূর্য নিজের জায়গা থেকে নড়াচড়া করতে থাকে। যেহেতু বেশিরভাগ সময় ব্যারি সেন্টার সূর্যের ভেতরে বা কেন্দ্রের কাছেই থাকে তাই সমস্ত গ্রহ একেই প্রদক্ষিণ করতে থাকে। সে জন্যই আমাদের মনে হয় যে গ্রহরা ব্যারি সেন্টারের নয় বরং সূর্যের প্রদক্ষিণ কাটছে। তাই সহজ ভাষায় বলে দেয়া হয় যে সমস্ত গ্রহ উপগ্রহ সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। কিন্তু বছর বছর আমাদের সৌর জগতের ব্যারি সেন্টার পরিবর্তন হতে থাকে।

ব্যারি সেন্টারের ধারনা সমস্ত বস্তুর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য সেটা কোন গ্রহ নক্ষত্র হোক বা গ্রহ উপগ্রহ হোক। আমাদের পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদের থেকে অনেকটাই বড়। তাই দুজনের ব্যারি সেন্টার পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে মাত্র চার হাজার ছয়শ একাত্তর কিলোমিটার দূরে তৈরি হয়। এই পয়েন্টকে পৃথিবী ও চাঁদ দুই জনেই চক্কর কাটে। ব্যারি সেন্টার ধারনাকে কাজে লাগিয়ে দূরে অবস্থিত গ্রহ আবিষ্কার করা হয়ে থাকে।