Sunday, April 23, 2017

জঙ্গিরা ডাকছে, জেগে উঠুন

উঠোনে জঙ্গিবৃক্ষ। ফল দিয়েছে, খান।
বিষয়টা এমন নয় যে, আওয়ামীলীগকে ক্ষমতা থেকে সরানোর লক্ষ‍্যে দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে এসব জঙ্গি তৎপরতা শুরু হয়েছে। বরং স্বাধীনতার পর থেকে চলে আসা মৌলবাদ তোষণের ফল হচ্ছে চলমান বর্তমান। এমনটিই হওয়া কথ। এটা অনিবার্য ছিলো। যেহেতু সংখ‍্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশ, সেহেতু জঙ্গিবাদের বীজ আগেই বপন করা হয়েছে। আপনারা সেই বীজে সার দিয়েছেন, জল দিয়েছেন। পাতা ফোটার পর বেড়া দিয়ে রক্ষা করার প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন সব রাজনৈতিক দল। কেউ প্রকাশ‍্যে, কেউ অপ্রকাশ‍্যে বসে বসে জঙ্গিবৃক্ষের পাতায় হাত বুলিয়েছেন, যত্ন নিয়েছেন, বড় করেছেন। এখন ফল দিচ্ছে, সে ফল খাবেন। খেতে হবে। অযথা অস্বীকার করছেন, এড়িয়ে যাওয়ার ভান করছেন। এটা ঠিক না।
জঙ্গিরা সোয়াট ডাকে, পাঠান।
পথে ঘাটে পুলিশের উপর হামলা হয়। ফাঁড়িতে, চেকপোস্টে, পুলিশবক্সে, আসামী বহনকারী প্রিজনভ‍্যানে অসংখ‍্যবার হামলা হয়েছে। হলি আর্টিজানের অভিযানে পুলিশ মরেছে। তবুও আপনারা জাগেননি। উল্টো বই মেলায় গিয়ে সেন্সরবোর্ড বসিয়েছেন। এর আগে ব্লগারদের শাসিয়েছেন, তাড়িয়েছেন। আরো অনেক কিছু করেছেন। আপনাদেরকে জঙ্গিরা মারে, পেটায়, দৌড়ানি দেয়। অথচ স্কচটেপ নিয়ে এগিয়ে যান প্রগতিশীল মানুষদের মুখে লাগাতে। কেন, কেন আপনারা এমন? কীসের জন‍্য এসব করেন?
পুলিশের ঘুম ভাঙাতে না পেরে জঙ্গিরা গেলো র‍্যাবের কাছে। একেবারে ক‍্যাম্পে ঢুকে কানের ভেতর খড় ঘুরিয়ে ঘুম ভাঙ্গানোর চেষ্টা করে একজন জঙ্গি জীবনও দিলো। তবু ঘুম ভাঙে না। তারা ব‍্যস্ত ক্রসফায়ার বিজনেসে। কোটি কোটি টাকার ব‍্যবসার কাছে জঙ্গি হামলা তাদের কাছে সুড়সুড়ির মত। সুড়সুড়ি খেয়ে অন‍্যমনস্ক হয়ে একটু নড়ে, হাসে। তারপর আবার ব‍াণিজ‍্যে ঢুকে যায়।
পুলিশ গেলো, র‍্যাব গেলো। এবার জঙ্গিরা বলে তাদের জন‍্য সোয়াট পাঠাতে। এমনভাবে ডাকছে, যেন বাপে মরার সময় অসিয়ত করে গেছে “আমি মরার পর ১০ জন সোয়াট ডেকে ভালোমন্দ খাওয়াস।” হেভি তাড়া ছিলো, “সময় কম, সোয়াট পাঠান।” মানে, জানপ্রাণ দিয়ে সরকারের ঘুম ভাঙানোর চেষ্টা করছে জঙ্গিরা। নাস্তিক, মুক্তমনা, প্রগতিশীলরাতো ডাকতে ডাকতে হয়রান হয়ে কেউ দেশ ছেড়েছে, কেউ ডুব দিয়েছে, কেউ মানিয়ে নিচ্ছে… খুব বিচ্ছিরি অবস্থা। তাই সরকারের ঘুম ভাঙানোর দায়িত্ব জঙ্গিরাই নিয়েছে। কিন্তু “প্রিয়ারও এমনও কঠিনো গভীরো ঘুমও কী ভাঙে…!”
আর্মির টর্চ নাই। আসলে অভিজ্ঞতা নাই। হবে।
সিলেটে জঙ্গিরা সোয়াট ডেকে আর্মি পেলো। খুশি হলো। সেই খুশিতে ঢাকার বিমানবন্দরে এক জঙ্গি নিজেকে ফাটিয়ে দিলো। পুলিশের বড়কর্তা বললেন খুশিতে নয়, “অতিসতর্কতায় ফেটে গেছে।” যাইহোক আর্মি গেলো অভিযানে। কিন্তু সাথে টর্চ নিয়ে যায়নি। আবহাওয়া খারাপ, আকাশে মেঘ। পরিস্থিতি খারাপ, বিদ‍্যুত সংযোগ বন্ধ। সময় খারাপ, চারদিকে অন্ধকার। কিন্তু আর্মির মনে আশা ছিলো, ভালোবাসা ছিলো, আলো ছিলো। আর্মি ভেবেছে, যেহেতু জঙ্গিরা ভালোবেসে সোয়াট ডেকেছে, সেহেতু তারা ৫ তলা বাড়ির প্রতিটি সিঁড়িতে, রুমে মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখবে। “তোমরা বাতি জ্বালাওগো, আজ আমার প্রাণনাথ আসিতে পারে!” কিন্তু কেউ বাতি জ্বালিয়ে রাখেনি। প্রতারণা করেছে। তাই পাশের বাড়িগুলোতে টর্চ খুঁজতে হয়েছে। বিষয়টা প্রতীকী। দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আর্মি নিজেই অন্ধকারে আছে। তাই জনতার কাছে গিয়েছে আলোর সন্ধানে। অবশ‍্য কন্সট্রাকশন বিজনেস সামলাতেই সময় চলে যায়, টর্চ নেয়ার কথা মনে থাকে কি করে! শুধু অপারেশনের নামের সাথে লাইট লাগাতে ভুল হয় না। অপারেশন টুইলাইট!
ব‍্যাপার না। সবেতো শুরু। সামনে যে কঠিন ভবিষ‍্যত অপেক্ষা করছে, এসব অভিজ্ঞতার ঘাটতি পূরণ হয়ে যাবে। একটু সময় লাগবে আরকি।
যারা বলে এসব নাটক, তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর প্রধানমন্ত্রীর লোক
গত কয়েকবছর আমরা একইসাথে দু’টো বিবৃতি পড়তে/শুনতে/দেখতে অভ‍্যস্ত হয়ে গেছি। প্রথমে আইএস বা আলকায়দা অথবা আনসারুল্লাহ বিবৃতি দিয়ে খুনের দায়, হামলার তায় স্বীকার করবে। তারপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর প্রধানমন্ত্রী বলবে এসব ভুয়া কথা, দেশে কোন আয়েস পায়েস নাই।
এটা বার বার ঘটেছে। এখনো ঘটেই যাচ্ছে। সিলেটে জঙ্গি অভিযানের মাঝে ঢাকায় এক জঙ্গি আত্মঘাতী হামলা করলো, পুলিশ বলে এটা হামলা নয়। অতিসতর্কতা! অস্বীকার, জঘন‍্য অস্বীকার। কেন? কারণ স্বীকার করলেই জঙ্গি দমনে সর্বাত্মকভাবে মাঠে নামতে হবে। শফি, চরমোনাই, আলেমালীগ, কালেমালীগ, ঝামেলালীগ, সবগুলারে সাইজ করতে হবে। নিজেদের আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে গড়ে তোলা এত বড় বড় দৈত‍্য দানব সাইজ করার মত সাহস ও নৈতিক বল সরকারের নেই। কারণ তারা ডুবে আছে দুর্নীতি আর দুঃশাসনে। একেবারে মাখামাখি অবস্থা। অশ্লীল!
তো এখন কী করতে হবে? বলতে হবে জঙ্গি নাই, আইএস নাই। মানুষ মরুক, পুলিশ মরুক। তবুও বলতে হবে আইএস নাই। নাই মানে নাই। তো, নাই বললেও বুঝায় জঙ্গি নাই, আবার জঙ্গি ধরার অভিযানকে নাটক বললেও বুঝায় জঙ্গি নাই। দুই পার্টিই এক। প্রথম পার্টি কয়, “দেশে কোন জঙ্গি নাই, তাই দমননীতি নাই।” সেকেন্ড পার্টি কয়, “দেশে কোন জঙ্গি নাই। সরকার অভিযানের নামে নাটক করে।” তারমানে দুই পক্ষই বলতেছে দেশে কোন জঙ্গি নাই। যেটা বলা প্রধানমন্ত্রীর পলিসি। সুতরাং যারা বলে জঙ্গি নাই, তারা প্রধানমন্ত্রীর লোক।
শরমের কিছু নেই, উঠে পড়ুন
আমরা যারা মরনপণ চিৎকার করেছি, মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে গলা ফাটিয়েছি, হেফাজতের সাথে সখ‍্যতায় ছি ছি করেছি, এখন তাদের কথা শুনতে বিষের মত লাগে? মুখ লুকাতে ইচ্ছা করে? আমরা যখন মাথামোটা প্রধানমন্ত্রী, বেয়াদব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পা চাটা পুলিশ কর্মকর্তাদের বক্তব‍্য নিয়ে স‍্যাটায়ার করি, তখন রাগে গা জ্বলে? কিচ্ছু করার নেই। এই খানাখন্দের পথ আপনারা যত্ন করে নির্মাণ করেছেন। এখন যদি মনে করেন এই পথ মেরামত করতে হবে, তাহলে শরম পেয়ে লাভ নেই। গায়ে জ্বলুনি ধরিয়েও লাভ নেই। মিডিয়াতে কওয়ার দরকার নেই, জাস্ট মনে মনে “দেশে জঙ্গি আছে, রুখতে হবে” বলে মাঠে নেমে যান। সাপের গর্তে ঢুকেছেন, বুদ্ধি খাটান, লড়াই করেন। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে মরার কোন মানে হয় না।
জঙ্গিরা ডাকছে, জেগে উঠুন। প্লীজ।