Tuesday, July 11, 2017

সুপ্রীতি ধরের লেখা: অতপর উইমেন চ্যাপ্টারের বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে আমরা বাক স্বাধীনতার কবর রচনা করছি না তো?

লিখেছেন: অপ্রিয় কথা 

অনলাইনে সুপ্রীতি ধরকে চিনি বছর দুয়েক ধরে। তিনি বছর দুয়েক আগে বিদেশের কি একটা পুরস্কার (ঠিক মনে করতে পারছিনা) পেয়েছিলেন। এরপর দেশে আসার পর সম্মান জানিয়ে বাংলাদেশের কে জানি (কোন প্রতিষ্ঠান জানি না) তাঁকে একটা লেফটপও গিফট করেছিলেন। সেই থেকে (দুই বছর আগে থেকে) আমি ওনাকে ফলো করছিলাম আমার সুপরিচিত আগের "অপ্রিয় কথা" আইডি(আইডিটা মৌল্লারা বন্ধ করে দেয়) থেকে,যেটা এখন নেই। এটা অপ্রিয় কথা'র দ্বিতীয় আইডি। তো যা বলতে চাইছিলাম। সুপ্রীতি ধরকে ফলো করার অন্যতম কারণ ছিল তার পদবী। কারণ এই ধরনের চেনা জানা পদবী সাংস্কৃতির বিপ্লবে খুব কমই আসে। এই পদবীর মেয়েগুলো অনেকটা ঘরকুনো হয়। আমার নিজের চোখে দেখা। তো সেই কৌতুহল থেকেই আমি সুপ্রীতি ধরকে অনুসরন করা শুরু করি। এরপর তাঁর নারী জাগরনের কর্মকাণ্ড দেখে খুবই অভির্ভুত হলাম। নিজের চোখে দেখলাম তাঁর পোর্টাল সাইট "উইমেন চাপ্টার"কে কিভাবে তিল তিল করে ধীরে ধীরে নারী শক্ত একটা প্লাটফর্ম গড়ে তুলছেন তিনি। যেখানে দেশের শত শত মেয়ে তাদের অধিকারের কথা বলে। যেখানে তাদের দাবীর কথা বলে। যেখানে পুরুষতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে নারীরা গলার রগ ফুলিয়ে যৌক্তিক চিৎকার করে!
কথা সেটা না, কথা হল গত দুদিন আগে সুপ্রীতি ধর "গৃহকর্মীরা যখন গৃহকর্তী হতে চাই" এই শিরোনামে তাঁর একটি লেখা "উইমেন চ্যাপ্টার" এ প্রকাশ করে। এতেই যেন তাঁর দোষ হয়ে গেল! আমরা সবাই মিলে যখন গৃহকর্মী নির্যাতিত শিশুটির পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করছিলাম, ঠিক তখনই সুপ্রীতি ধর তার বিপরীত স্রোতে গিয়ে তাঁর নিজস্ব যৌক্তিকতা দিয়ে গৃহকর্মীরও যে ভুল আছে, তার দোষ থাকতে পারে, তা নিয়ে লিখলেন। এবার আমার অবস্থানটা স্পষ্ট করি, --হ্যাঁ সুপ্রীতি ধর তিনি লিখতেই পারেন। তাঁর প্রতিটি মতামত, প্রতিটি লাইনের সাথে যে একমত হবো তা তো নয়। কিন্তু তাঁর "উইমেন চ্যাপ্টার" কি দোষ করল? তাঁর একটি লেখা দিয়েই আমি পুরো উইমেন চ্যাপ্টারকে জাস্টিফাই করে ফেলবো? তার একটি লেখা দিয়েই পুরো উইমেন চ্যাপ্টারে কালিমা লেপন করবো? একসাথে গুলিয়ে ফেলবো? উইমেন চ্যাপ্টারে শত শত নারী জাগরনের লেখাগুলো ফুৎকারে উড়িয়ে দেব? এটা কোন ধরনের বিবেচনাবোধ রে ভাই? বাক স্বাধীনতার কথা বলেন না আপনারা? আপনি যদি অন্যের বাক স্বাধীনতা সহ্য করতে না পারেন, তাহলে তো একদিন বাক স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলার মানুষই খুঁজে পাবেন না আপনি। এটা আমরা এক ধরনের হীনস্মন্যতার পরিচয় দিচ্ছি না? আগামীতে যাতে আমাদের বাক স্বাধীনতার হ্রাস পায়, সেই কবর কি একটু একটু করে আমরা রচনা করছি না?

ঘণ্টা দুয়েক আগে দেখলাম, "উইমেন চ্যাপ্টার" ওপেন হচ্ছে না। আবার ফেইসবুক নিউজ ফিডে দেখলাম, "রাজীব খাজা" নামে একটি পেজ থেকে সুপ্রীতি ধরকে হত্যা করার হুমকি দিয়েছে। আমি জানি না এখন এই সময়ে সুপ্রীতি ধরের মানসিক অবস্থা ঠিক কতোটা বিপন্ন। ভাই অভিজিৎ, বাবু, অনন্ত, নীল, দীপন, সামাদদের রক্তের দাগ এখনো শুকায় নি। এরা কিন্তু নাস্তিক্যবাদ ও মানববাদের আদর্শের জন্য জীবন দিয়েছেন। সহযৌদ্ধাদের বলছি, ভাই আপনি, আমি, আপনারা এই দুঃসময়ে সুপ্রীতি ধরের পাশে তো দাঁড়াতে পাড়ি। তাঁর উইমেন চ্যাপ্টার যাতে উদ্ধার হয় এই সহযোগীতাটুকু তো করতে পারি। তার দুর্দিনে আমরা একটু পাশে থেকে তাঁকে মনোবল তো দিতে পারি। আমাদের মনে রাখা উচিত যে তিনিও কিন্তু অবিরাম নারীর অধিকারের পক্ষে লড়ছেন। উইমেন চ্যাপ্টার বলে আপনার পৌরুষ্যে লাগছে? তাহলে তো আমি বলব মানুষ, মানববাদ শব্দগুলো আপনার মুখে মানায় না রে ভাই। উইম্যান মন থেকে ঝেঁড়ে ফেলে দিয়ে একটু হিউম্যানের দৃষ্টিতে ভাবুন না রে ভাই.....