Tuesday, July 11, 2017

বিবেকবান মানুষের সামনে পেশকৃত কিছু কথা।

লিখেছেন: সত্যর সাথে সর্বদা

তাবলীগ, জামায়াত ইসলামী, চরমোনায়, হিযবুত তাহরীর, জেএমবি, তালেবান, আইএসএস, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, নাস্তিক, অজ্ঞেয়বাদী সহ বহু মত ও পথের মানুষ এ পৃথিবীতে বিদ্যমান।উল্লেখিত সবগুলো মত ও পথ ধর্মকেন্দ্রীক। কিছু লোক ধর্মকে স্বীকার করে বিভিন্ন দলে বিভক্ত আরেকদল ধর্মকে অস্বীকার করে। আপনি যদি নিরপেক্ষ মন নিয়ে বিচার করেন এবং এ সকল শ্রেণীর লোকদের সাথে নিবিঢ়ভাবে মেলা-মেশা করেন, বিরোধিতা না করে এদের প্রত্যেক শ্রেণীর লোকদের হৃদয়ের মণিকোঠায় পৌছে তাদের বিশ্বাসকে বোঝার চেষ্টা করেন তাহলে এদের ৯৯% লোককে একটি বিষয়ে একমত পাবেন- সেটা হল সকলেই ভাল ও কল্যাণের বিকাশ চায় আর খারাপের বিনাশ চায়।মতবিরোধ হল- কোনটি ভাল আর কোনটি খারাপ তা নিয়ে।প্রত্যেক ধর্মাবলম্বীরা ঐক্যমত হল –মানুষের উচিত স্রষ্টার নির্দেশ মেনে।মতবিরোধ হল-কোনটি স্রষ্টার বিধান তা নিয়ে (প্রত্যেকের কাছে তার পৈত্রিক সুত্রে পাওয়া ধর্মই স্রষ্টার বিধান)।ইসলামের নামে সকল দল এর মধ্যে ঐক্যমত হল- সকলেই সঠিক ইসলাম মানতে চাই। মতবিরোধ হল কোনটি সঠিক ইসলাম তা নিয়ে।নাস্তিক ও আস্তিকদের মধ্যে এ নিয়ে মূল মতবিরোধ নয় যে স্রষ্টার হুকুম মানা উচিত/উচিত না।মুল মত বিরোধ হল- স্রষ্টার নামে যা দাবি করা হয় তা কতটুকু সত্য,নির্ভযোগ্য,প্রমানযোগ্য ও বিজ্ঞানসম্মত।
এ মতবিরোধ কেন টিকে থাকে, সমাধান কি ইত্যাদি আলাদা প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে।
আপনার যদি বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে মেলা-মেশা ও চিন্তা শেয়ার করার অভিজ্ঞতা থাকে, সুস্থ বুদ্ধি সম্পন্ন হন এবং নিরপেক্ষ চিন্তা করার যোগ্যতা থাকে তাহলে উপরোক্ত বাস্তব সত্য অস্বীকার করতে পারবেন না।
ধর্মকে কেন্দ্র করে মানুষ প্রধাণত: দু’টি ভাগে বিভক্ত:
১. ধর্মে বিশ্বাসী (যারা ধর্মে বিশ্বাসী তারা আবার হাজার হাজার দল ও মতে বিভক্ত)
২. ধর্মে অবিশ্বাসী (ধর্মে অবিশ্বাসীরা কেউ নাস্তিক আর কেউ অজ্ঞেয়বাদী অর্থ্যাৎ কেউ সরাসরি বলেন যে স্রষ্টা বলে কেউ নেই আর কেউ বলেন স্রষ্টা বলে কেউ আছে কিনা জানি না-এটা আমাদের জ্ঞান সীমার বাইরে)
আপনি যদি সত্যিকার অর্থে সত্য ও কল্যাণকে ভালবাসেন এবং নিরপেক্ষভাবে বিচার করতে আগ্রহী হন- তাহলে আপনি ধর্মের নামে যত দল ও মতের লোক আছে তাদের সকলের কথার সাথে দ্বিমত থাকলেও তাদের হৃদয়ের অভ্যান্তর থেকে যে চাওয়া ও কামনা সেটাকে সম্মান ও গুরুত্ব দেওয়া উচিত।গুরুত্ব দেয়া মানে তাদের কথা মেনে নেয়া নয়, গুরুত্ব দেয়ার অর্থ ভিন্ন মতকে খাটো না করা,ঘৃণা না করা বরং সহবাস্থানে থাকা এবং বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে চিন্তার শেয়ার করা।
উপরোক্ত নিরপেক্ষ বিশ্লেষনের পর আমি যে পক্ষে অবস্থান নিয়েছি বা যে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি তার ব্যখ্যা করছি:
সৃষ্টিকর্তা মানুষকে তার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন কথাটা বললে-কথাটা না খুব যৌক্তিক আর না খুব অযৌক্তিক মনে হয়।তাহলে স্রষ্টা মানুষ তার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন-কথাটি মানা যাবে যদি দাবিটি বিশ্বাসযোগ্য, প্রমানযোগ্য ও বিজ্ঞানসম্মত কোন কিছু থাকে।
এ বিষয়ে সবচেয়ে বড় প্রশ্নটি হল- স্রষ্টা যদি মানুষকে তার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করে থাকেন,তাহলে তার সৃষ্টি সকল মানুষ মতবিরোধ ব্যতিরেকে পরিস্কার ও সন্দেহাতীতভাবে জানবে যে কেন তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে আর তার কি কি দায়িত্ব।তিনি কোন পদ্ধতিতে মানুষকে জানাবেন সেটা প্রশ্ন নয়, সকল মানুষ সন্দেহাতীতভাবে জানবে এটাই যৌক্তিক।তিনি কি মানুষের সামনে নিজেকে দেখিয়ে, জান্নাত-জাহান্নাম পৃথিবী থেকেই স্বচক্ষে দেখিয়ে বিশ্বাস করাবেন নাকি অন্যভাবে করাবেন সেটা মূল বিষয় নয়।চুরি করা খারাপ কাজ এ নিয়ে পৃথিবীতে যেমন কোন দ্বিমত নেই, আকাশে একটি সূর্য আছে তা নিয়ে যেমন কোন দ্বিমত নেই, তেমনি স্রষ্টা মানুষকে কোন উদ্দেশ্য সৃষ্টি করলে এবং কোন বিধি-বিধান দিয়ে থাকলে তা নিয়ে পৃথিবীর কোন মানুষের দ্বিমত থাকার কথা নয়।

মানুষের কর্ম পরিচালিত হয় বিশ্বাসের আলোকে। আপনি যে ধর্মের যে গোষ্ঠির মতবাদে বিশ্বাসী আপনার কর্মও তদ্রুপ হয়ে থাকে।মানুষ হাজার হাজার মতবাদে বিশ্বাসী তাই কর্মও হাজার হাজার ধরনের।স্রষ্টা কোন বিধান দিয়ে থাকলে এটা যুক্তির দাবি যে স্রষ্টা সকল মানুষকে সন্দেহাতীতভাবে জানাবেন এটা তার বিধান যাতে মানুষ সন্দেহাতীতভাবে বিশ্বাস করবে, যা নিয়ে কোন দ্বিমত করবে না। পরীক্ষা হতে পারে কর্ম নিয়ে।যেখানে স্রষ্টা আসলে কোন বিধান দিয়েছেন কিনা, দিলে কোনটি তা নিয়ে হাজারও বিভক্তি, হাজারও বিশ্বাস- তাহলে কর্মও হাজারও ধরনের হবে।
কোন মানুষকে অপরাধী বলা যায় যখন কেউ ইচ্ছা করে, স্বজ্ঞানে, বুঝে শুনে কোন অপরাধ করে তখন।
আপনি যে ধর্ম,মত ও পথকে সঠিক বলছেন- তা অবশ্যই আপনার জ্ঞান ও বিচার বিবেচনার আলোকে সঠিক বলে মনে হয় এ কারনেই,নয় কি?এত হাজার হাজার মত পথের মধ্যে হয় যে কোন একটি মত ও পথ ঠিক অথবা সবাই বেঠিক অথবা সবাই আংশিক ঠিক আর আংশিক বেঠিক।কোনটি ঠিক আর কোনটি বেঠিক তা কিন্তু নির্ধারিত হচ্ছে-আপনার জ্ঞান ও বিচার বিবেচনার আলোকে। আর মানুষের জ্ঞান সীমিত হওয়ায় কাহারও উচিত নয় এ কথা বলা যে আমার বিশ্বাসই চিরন্তন সত্য,চির অপরিবর্তনী এবং চির সঠিক।কিছু মুসলমান এ কথা বললে দৌড়ে এসে বলবে যে- মানুষের জ্ঞান সীমিত ঠিক, আল্লাহর জ্ঞান অসীম, তাই কুরআনের কথা চির সত্য ও সঠিক।কিন্তু যে বা যারা এ কথা বলে তারা ভূলে যায় যে – কুরআন-ই যে আল্লাহর বানী কিনা সে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তার নিজস্ব, জ্ঞান-বুদ্ধি ও বিচার বিকেচনার আলোকে।তার বিচার-বিবেচনায় কুরআনকে স্রষ্টার বিধান বলে মনে হয় তাই সে কুরআনকে স্রষ্টার বিধান বলে বিশ্বাস করে থাকে। আগে কি আসলো? আগে তার বিচার বিবেচনা আসলো, নয় কি? তার বিচার বিবেচনার মানদন্ডে কুরআন স্রষ্টার বলে বিবেচিত না হলে সে মানত না।
স্রষ্টা কোন ধর্ম বা বিধান যে দেয়নি তার সবচেয়ে বড় প্রমান হল যে, পৃথিবীতে এরুপ কোন বিধান বিদ্যমান নেই যেটা সকল মানুষ সন্দেহাতীতভাবে বিশ্বাস করে স্রষ্টার বিধান হিসাব। আপনি কোন কিছুকে ঠিক মনে করেন তাই আপনি উক্ত বিষয়ে বিশ্বাস করেন আর আমার দৃষ্টিতে তা বেঠিক বিবেচিত হয় বলে আমি তা অবিশ্বাস করি। তার মানে কোন কিছু আপনার কাছে বেঠিক বিবেচিত হলে যেমনি আপনি মানেন না, তেমন আমিও মানি না। অতএব এরজন্য কাউকে অপরাধী বললে তাহলে উভয়েই অপরাধী।যেহেতু নিজ ধর্ম বিশ্বাসকে সঠিক প্রমাণিত করতে হবে এ টেনডেনসি থাকার কারনে অন্ধ বিশ্বাসীরা এত সহজ কথাটি বোঝার সাধারণ বোধটুকু হারিয়ে ফেলে।
কুরআনে কোন ভূল নেই।