Tuesday, June 1, 2021

কিভাবে হয়েছিলো পৃথিবীর যাত্রা?

পৃথিবী। যে গ্রহে আমরা বসবাস করি। যে গ্রহের দান গুলো নিয়ে আমরা বেঁচে আছি। যুদ্ধ, ভালোবাসা, পরমাণু বিস্ফোরণ, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কত কিছুই না সহ্য করে আমাদের এই পৃথিবী। কিন্তু আপনি কি জানেন এই মূল্যবান আর সুন্দর এই পৃথিবী তৈরি হতে কত যুগ যুগ সময় লেগেছে? তাহলে আসুন আজকে আমরা সময়ের কিছুটা পিছনে যাই আর জেনে নেই আগুনের গোলা থেকে জীবন সমৃদ্ধ পৃথিবীতে রূপান্তর হওয়ার সেই অভিযান।

আজ থেকে প্রায় চার লক্ষ কোটি বছর আগে …

আমাদের সৌরজগতে নতুন জন্মানো একটি তারা বা নক্ষত্র এর চারিদিকে ধূলিকণা বা পাথরের টুকরো ঘুরছে। এই মুহূর্তে এখানে আমাদের পৃথিবীর কোন অস্তিত্ব নেই। কারণ, এখনো পৃথিবী তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। এই ধূলিকণা বা পাথরগুলির মাধ্যাকর্ষণ এর প্রভাবে পরস্পরের সাথে যুক্ত হতে থাকে। লক্ষ্য কোটি বছর পর এই ধূলিকণা বা পাথর গুলি পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে একটি বড় গোলাকার অগ্নি খন্ডে পরিণত হয়। কিন্তু, এখন এটাকে পৃথিবী বলা যাবে না। কারণ, এটা ভীষণ গরম। মানে, এটা আজকের শুক্র গ্রহের সমান। আজ থেকে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ কোটি বছর আগে পৃথিবী ফুটন্ত লাভা দিয়ে ঢাকা ছিল। ভুল করে যদি কেউ একবার এখানে পা ফেলে দেয় তাহলে দ্বিতীয়বার পা ফেলার জন্য তার কাছে আর পাই থাকবে না।

পৃথিবীর তাপমাত্রা ছিল ১২০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস…

মানে এই জায়গা নরক এর চাইতে কোন অংশে কম ছিল না। তখনো পৃথিবীতে অক্সিজেনের চিহ্ন ছিল না। ঠিক এই সময় পৃথিবীতে Asteroid বৃষ্টি হয়। যেটা কিনা পৃথিবীতে এক কিলোমিটার গতিবেগে ফুটন্ত লাভার নদী তৈরি করে। এই Asteroid গুলো দূরে কোথাও থেকে আসেনি বরং পৃথিবীর প্রতিবেশী গ্রহ গুলো থেকে এসেছিল আর এই Asteroid গুলি রীতিমত পৃথিবীর সাথে ধাক্কা খাচ্ছিল।

নিচের ছবির দিকে দেখুন। এই হল নতুন তৈরি হওয়া একটি গ্রহ। এটা খুবই দ্রুত। প্রায় ১৫ কিলোমিটার গতিবেগে প্রতি সেকেন্ডে পৃথিবীর দিকে এগিয়ে আসছে। মানে একটি বন্দুকের গুলি এর গতিবেগ এর চাইতেও ২০ গুণ বেশি গতিবেগে পৃথিবীর উপর আছড়ে পড়ছে।

আমাদের এটাকে সাদরে গ্রহন করতে হবে। কারণ, এটার জন্যই আমাদের সুন্দর চাঁদের সূচনা হবে। এবার আমাদের পৃথিবীর চারদিকে পাথরের টুকরো ভরে গেছে। এখানে এত ছোট ছোট পাথর রয়েছে যার ফলে পৃথিবীর পাশেও শনি গ্রহের মতো একটি রিং তৈরি হয়ে গেছে। এই রিং একেবারে শনি গ্রহের রিং এর মত দুই ভাগে ভাগ হয়ে রয়েছে। প্রথম রিং আজকের পৃথিবী ও চাঁদ এর মাঝখানে এবং অন্যটি চাঁদ এর পেছনে রয়েছে আর এই রিংগুলো থেকে রীতিমত Asteroid গুলো পৃথিবীতে পড়ছে।কিন্তু Asteroid এর আসল বৃষ্টি এখনো শুরু হয়নি। এখন এই রিং আস্তে আস্তে গ্রাভিটির কারণে একটি তিন হাজার কিলোমিটার চওড়া গোল পিণ্ডে পরিণত হবে আর এখানে আমরা দেখছি আমাদের চাঁদের জন্ম। এখন এটাতে কোন দাগ নেই এবং এখন এটা পৃথিবীর খুব কাছাকাছি রয়েছে যার জন্য এটা অনেক বড় দেখাচ্ছে। এটা গরম লাভা দিয়ে তৈরি এবং এর কাছাকাছি থাকায় পৃথিবীতে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব ফেলছে। প্রায় ত্রিশ লক্ষ বছর পর আমাদের সোলার সিস্টেমের মধ্যে এমন কিছু হবে যেটা সম্পর্কে আপনি হয়তো প্রথমবার জানবেন। আমাদের সৌরমণ্ডলের গ্যাস জায়েন্ট নিজেদের অরবিট এর পরিবর্তন করে। আর এই পরিবর্তনের কারণে সৌরমণ্ডলের Asteroid এবং comets এর মধ্যে Gravitational Mass তৈরি হয়। এখনই সেই সময় যখন চাঁদ তার দাগগুলো পাবে। এটাকেই বলা হয় The Late Heavy Bombardment.

অন্যদিকে, এই সময় আমাদের চাঁদও ভীষণ গরম ছিল। এটা আকাশে একটি বড় জ্বলন্ত লন্ঠনের মত ছিল আর এটা পৃথিবীর এতটাই কাছে ছিল যে এর মাধ্যাকর্ষণ পৃথিবীর উপরে আজকের তুলনায় ২৫ গুণ বেশি প্রভাব ফেলেছিল। অর্থাৎ, আমাদের পৃথিবীতে একদিন ২৪ ঘন্টায় নয় বরং ৬ ঘন্টায় হত। এ কারণেই পৃথিবীতে গরম লাভার নদীর ঢেউ আজকের দিনের সমুদ্রের ঢেউ এর তুলনায় ২০ গুণ বেশি উপরে উঠে।

কিন্তু ধীরে ধীরে সময়ের সাথে চাঁদ পৃথিবী থেকে দূরে চলে যায় এর ফলে আমাদের পৃথিবীর ঘূর্ণন ধীরে ধীরে কমতে থাকে। লাভার নদী ও ঠান্ডা হতে থাকে। পৃথিবীর সত্তার নির্মাণ হয়। এই সময় শুধুমাত্র চাঁদই আমাদেরকে আকর্ষণ করবে এমনটা নয়। তখন আকাশে আরও দুটি উজ্জ্বল তারা দেখা যায়। এই জ্বলন্ত তারার মতো দেখতে এগুলো আসলে তারা নয়। আসলে এগুলো গ্রহ। জুপিটার এবং অন্য গ্রহ। সৌরমণ্ডলের আন্তরিক যেমন আমাদের পৃথিবী, ভেনাস, মারকিউরি, মার্স এগুলো সব রকেট প্লানেট। এগুলো বেশি সময় ধরে গরম লাভার রুপে থাকতে পারে না।

কিন্তু জুপিটার এবং শনি আসলে গ্যাস জায়েন্ট যার জন্য অনেকক্ষণ গরম থাকতে পারে এই গ্রহগুলি। পৃথিবীর জন্মানোর এই সময় কালে জুপিটার এর টেম্পারেচার ৫০০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস ছিল এবং Satrun এর ৩০০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস ছিল। অর্থাৎ জুপিটার তখন সূর্য থেকে বেশি উজ্জ্বল ছিল। যেমন বিজ্ঞানীদের মতে তারা সময়ের সাথে সাথে আরো বেশি উজ্জ্বল হতে থাকে তখন আমাদের সূর্য ৩০% কম উজ্জ্বল ছিল কিন্তু চার লক্ষ কোটি বছরে এই গ্রহগুলি ঠান্ডা হয়ে যায়। এবার আসুন আবার ফিরে যাওয়া যাক আমাদের প্রাণপ্রিয় পৃথিবীতে। পৃথিবীতে তখন শুধুমাত্র একটি গ্যাস ছিল যেটা হলো মিথেন গ্যাস। আপনি ভুল করেও এখানে শ্বাস নেবেন এ কথা ভাববেন না। নইলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই আপনার মৃত্যু হতে পারে। The Late Heavy Bombardment এর সময় Comets এর বৃষ্টি হয়েছিলো। এই বৃষ্টিতেই পৃথিবীতে পানির আবির্ভাব হয়। এই বৃষ্টিতেই প্রথিবীতে সমুদ্রের আবির্ভাব হয়। পৃথিবী এবার চারিদিক থেকে সমুদ্রে ঘেরা ছিল। কিন্তু না এখানে পা রাখার জন্য কোন জায়গা ছিল আর না ছিল শ্বাস নেবার জন্য কোন অক্সিজেন। আমাদের পৃথিবীতে এখন থেকে ধীরে ধীরে জীবের বীজ রোপণ করা শুরু হয়েছে মাত্র। আর এখান থেকেই আমাদের আজকের এই পৃথিবী।