একেবারে কোন কিছু না থাকার পরিবর্তে কেন সব কিছু বিরাজ করছে (অন্য কথায়, কেন আমাদের মহাবিশ্ব অস্তিত্বশীল)- এটি বোধ হয় মেটাফিজিক্স বা অধিবিদ্যার সবচেয়ে মৌলিক প্রশ্ন।
প্রশ্নটি বেশ পুরনো। সেই প্রাচীন কাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত প্রশ্নটি এরিস্টটল, লিবনীজ, বার্ট্রান্ড রাসেল, মার্টিন হেইডেগার, ডেভিড হিউম প্রমুখ দার্শনিকসহ বিভিন্ন বিজ্ঞানী ও গনিতবিদদের মুখে ঘুরেফিরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে।
এখানে আমি তিনটি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে উপরের প্রশ্নটির উত্তর আলোচনা করার চেষ্টা করব।
১) আল্টিমেট বা চূড়ান্ত কারণের মাধ্যমে ব্যাখ্যার প্রয়াসঃ
শুরু করা যাক এরিস্টটলকে দিয়ে।
এরিস্টটল মনে করতেন, যে কোন ঘটনার পেছনেই অবশ্যই একটা কারণ থাকা আবশ্যক। এটিকে ভিত্তি ধরে চিন্তা করলে বিষয়টি এমন দাঁড়ায়ঃ প্রতিটি ঘটনার পেছনে একটা কারণ আছে, সেই কারণেরও একটা কারণ আছে, ঐ কারণেরও আবার একটি কারণ আছে......ধারাটি এভাবে চলতে থাকবে। এরিস্টটলের মতানুসারে, একটি ঘটনার পেছনে অসীম সংখ্যক কারণের সজ্জা থাকতে পারে না, কোন এক জায়গায় গিয়ে একে থামতেই হবে। অর্থাৎ শেষ কারণের আর কোন কারণ থাকা সম্ভব নয়, যেটাকে বলা যেতে পারে ultimate uncaused cause অর্থাৎ চূড়ান্ত কারণবিহীন কারণ। সেই হিসেবে এই বিশ্বজগত সৃষ্টির চূড়ান্ত কারণটি কারণবিহীন, সেটি যা-ই হোক না কেন।
উপরের প্রশ্নটি একসময়কার বিখ্যাত দার্শনিক, আধুনিক কম্পিউটারে ব্যবহৃত বাইনারি পদ্ধতির পথ প্রবর্তক ও স্বতন্ত্রভাবে ক্যালকুলাসের আবিস্কারক লিবনীজের মস্তিষ্কেও আলোড়ন তুলেছিল। লিবনীজ মনে করতেন, কোন কিছু থাকার পরিবর্তে একেবারেই কিছু না থাকাটা হল সবচেয়ে সহজ ও সরলতম অবস্থা। যেহেতু বিষয়টি মোটেই সেরকম নয় এবং একটা দৃশ্যমান বিশ্বজগত অস্তিত্বশীল রয়েছে, সেহেতু অবশ্যই এর অস্তিত্বের পেছনের কারণ ব্যাখ্যার প্রয়োজন রয়েছে। খুব সম্ভবতঃ কোন আল্টিমেট ব্যাখ্যা না পেয়ে লিবনীজ শেষ পর্যন্ত আশ্রয় নিয়েছিলেন "ঈশ্বরের"। লিবনীজের মতে, "মহাবিশ্ব বিরাজমান কারণ ঈশ্বর এটিকে সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন এবং তিনি সম্ভাব্য সকল মহাবিশ্বের মধ্য থেকে সবচেয়ে ভালটিকেই বেছে নিয়েছিলেন। ঈশ্বরের অস্তিত্ব ও সেই সাথে কোন কিছু না থাকার পরিবর্তে সবকিছু অস্তিত্বশীল থাকার এটিই সবচেয়ে সহজ ও সরল ব্যাখ্যা (লিবনীজের উল্লেখিত ঈশ্বর কোন ধর্মগ্রন্থের বা ধর্মের ঈশ্বর নন)।
আসলেই কী ঈশ্বর নামক এক অদেখা সত্তার অবতারণা এই রকম একটি জটিল প্রশ্নের সম্যক উত্তর দিতে পারে? একটু পরে না হয় সেই ব্যাখ্যায় যাই।
সব কিছু কেন বিরাজমান, এই বিষয়ে ডেভিড হিউমের ধারণাটা অবশ্য একটু ভিন্ন রকম। তিনি মনে করেন, সব কিছুর পেছনে অবশ্যই একটা কারণ থাকা আবশ্যক- এই ধারণাটির গোড়াপত্তন আসলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ঘটনার পেছনের অভিজ্ঞতালব্ধ কারণসমূহ। কিন্তু মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে কোন আবশ্যিক কারণ নাও থাকতে পারে, যেটি আমাদের অভিজ্ঞতার একেবারেই বাইরে। সমস্যা হল আমাদের মস্তিষ্ক এই বিষয়টিকে সহজেই মেনে নিতে পারে না। মূলত এই সমস্যা মহাবিশ্বের কোন সমস্যা নয়, সমস্যা আমাদের চিন্তার দৈন্যতায়।
দার্শনিক ব্রাইন লেফটোর মতে, যেহেতু প্রতিটি ঘটনার পেছনে একটি কারণ রয়েছে তাই উপরের প্রশ্নটির উত্তর এমন কিছু হতে পারে না যা কোন কার্য-কারণ দ্বারা সিদ্ধ, আর যদি প্রকৃতপক্ষেই প্রশ্নটির কোন উত্তর থেকে থাকে, তবে সেটি এমন কিছু যা কোন কারণ ছাড়াই শুধুমাত্র আবশ্যিকভাবে বিরাজ করে।
অন্য আরেক দার্শনিক উইলিয়াম ফ্রি বিশ্বজগত অস্তিত্বের পেছনে কোন কারণ নেই বলেই মনে করেন। তার মতে, উপরের প্রশ্নের শুধুমাত্র দু'টি উত্তরই সম্ভবঃ (১) সবকিছু চিরদিনই অস্তিত্বশীল ছিল, অথবা (২) সবকিছু স্বতঃস্ফূর্তভাবে কোন এক সময় উদ্ভূত হয়েছিল। এই দু'টো উত্তরের যেটিই সত্য হোক না কেন, কোনটির জন্যই কোন কারণের দরকার পড়ে না।
বার্ট্রান্ড রাসেল মহাবিশ্বের অস্তিত্বশীলতাকে ধরে নিয়েছিলেন "ব্রুট ফ্যাক্ট (brute fact)" হিসেবে। দর্শন/বিজ্ঞানে ব্রুট ফ্যাক্ট বলতে এমন কোন ফ্যাক্টকে বুঝায় যেটাকে আর কোন মৌলিক ফ্যাক্ট বা ঘটনা দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না, কেবলমাত্র সত্য হিসেবে ধরে নিতে হয়। তার মতে, মহাবিশ্বের অস্তিত্বশীলতা হয়ত সেরকম কিছুই। এ প্রসঙ্গে তার মন্তব্য ছিল, "I should say that the universe is just there and that's all."
২) ঈশ্বর সত্তার মাধ্যমে প্রয়াসঃ
লিবনীজ তথা সকল ঈশ্বর বা স্রষ্টায় বিশ্বাসীদের মতে, বিশ্বজগতের অস্তিত্বশীলতাকে একমাত্র একজন স্রষ্টা/ঈশ্বর/সর্বজনীন নকশাবিদ (universal designer)-এর উপস্থিতির দ্বারাই ব্যাখ্যা করা সম্ভব, যদিও কারও নিকট এই ঈশ্বরের স্বরূপ ও গুন কী, তার কোন সদুত্তর নেই। ঈশ্বর সত্তার অবতারণা কী আমাদের উপরের মৌলিক প্রশ্নটির আল্টিমেট উত্তর দিতে পারে? অনেক দার্শনিক ও বিজ্ঞানীর মতে, মোটেই না। এটি বরং আরো অনেক প্রশ্নকে আমাদের সামনে উন্মুক্ত করে দেয়। সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি হলঃ
(i) ধরা যাক, মহাবিশ্ব কোন স্রষ্টা/ঈশ্বরের হাতের নিপুণ সৃষ্টি। তখন মহাবিশ্বের অস্তিত্বশীলতার কারণ জানতে চাওয়ার মতই যে কেউ-ই জিজ্ঞেস করতে পারে স্রষ্টা/ঈশ্বরের অস্তিত্বশীলতার কারণ কী। যদি স্রষ্টা কোন চিরন্তন সত্তা হয়ে থাকে, তবে তার অস্তিত্বশীলতার কোন কারণ নেই। তবে এক্ষেত্রেও রয়েছে সমস্যা, 'স্রষ্টা চিরন্তন'- এই একই যুক্তিতে মহাবিশ্বকেও কেউ চিরন্তন সত্তা হিসেবে দাবী করতে পারে, তখন মহাবিশ্বের অস্তিত্বশীলতার কারণ হিসেবে এক ধাপ বাড়িয়ে স্রষ্টাকে অন্তর্ভুক্ত করার কোন প্রয়োজন পড়ে না, মহাবিশ্ব সৃষ্টির ব্যাখায় স্রষ্টা তখন একটা এক্সটা লেয়ার (extra layer) এবং unnecessary thing হিসেবেই আবির্ভূত হয়।
(ii) যদি ধরে নেয়া হয় যে একজন ঈশ্বর সকল সম্ভাব্য মহাবিশ্বের মধ্য থেকে জীবন ধারণের উপযুক্ত ও সর্বোত্তম হিসেবে আমাদের মহাবিশ্বকেই বেছে নিয়েছিলেন (fine tuning argument), তবে সর্বোত্তম যুক্তিটিকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আমাদেরকে এই মহাবিশ্বের সকল খারাপ কাজ ও মন্দের উপস্থিতির ব্যাখ্যার প্রয়োজন হয়। যদি আমরা সেটির সমাধান করতে পারতাম, সেক্ষেত্রেও আবার ঘুরেফিরে আমাদের সামনে আগের সেই একই প্রশ্ন এসে হাজির হত, ঈশ্বর কেন অস্তিত্বশীল(why does God exist)?
(iii) মহাবিশ্ব যদি কোন স্রষ্টা বা Universal Designer-এর সৃষ্টি হয়, তবে তিনি অতীতের কোন এক সময় এই মহাবিশ্বকে সৃষ্টি করেছিলেন। তখন স্বভাবতই প্রশ্ন চলে আসে, সবকিছু সৃষ্টির আগে তিনি কী করছিলেন/এর আগে তার ভূমিকা কী ছিল, হঠাৎ করে তার কেনইবা মনে হল একটা মহাবিশ্ব সৃস্টি করা প্রয়োজন। এসবের উত্তর আপাতত কারো জানা নেই।
(iv) স্রষ্টার অস্তিত্বশীলতার মাধ্যমে মহাবিশ্বের অস্তিত্বশীলতার কারণ ব্যাখ্যার প্রয়াসে আরও একটা বড় সমস্যা হল, কেউ-ই জানে না এই মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে স্রষ্টার উদ্দেশ্য কী ছিল। যদি তিনি শুধুমাত্র মনুষ্য প্রজাতির ভাল-মন্দের বিচার করার উদ্দেশ্যেই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করে থাকেন, তবে সেটা তার পরম গুনকে খর্ব করে, কারণ ঐরকম একটা সত্তার তার নিজের সৃষ্টির দোষ-গুন বিচারের কোন প্রয়োজন পড়ে না। এছাড়া তিনি সবজান্তা, নতুন করে কিছু জানার জন্য তার কোন পরীক্ষারও প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। উপরন্তু জড়বস্তুর কোন ভাল-মন্দ গুনও নেই। যদি মহাবিশ্বকে শুধুমাত্র মানুষের উদ্দেশ্যেই বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়ে থাকে, তবে আমাদের পৃথিবী থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের নক্ষত্র, গ্রহ-উপগ্রহ, গ্যাসীয় ধূলিকণার উপস্থিতির কারণও ব্যাখ্যা করা যায় না, আমাদের জীবনযাত্রায় যাদের সরাসরি প্রভাব প্রায় নেই বললেই চলে (যদি না এই মহাবিশ্ব বিশাল কোন giant network হয়)।
উপরের আলোচনা হতে বলা যেতে পারে যে, শুধুমাত্র "ঈশ্বর সত্তার উপস্থিতির" মাধ্যমে বিশ্বজগত বা সবকিছু কেন বিরাজ করছে, তা ব্যাখ্যা করা যায় না। অন্য কথায়, God is not enough to answer the above fundamental question.
৩) আধুনিক বিজ্ঞানের মাধ্যমে প্রয়াসঃ
আধুনিক বিজ্ঞানের একটি অন্যতম শক্তিশালী শাখা হল পদার্থ বিজ্ঞান যেটির কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উপশাখা হল কোয়ান্টাম মেকানিক্স, পার্টিকেল ফিজিক্স ও মহাকাশবিজ্ঞান। বিভিন্ন প্রাকৃতিকে ঘটনাবলিকে ব্যাখ্যার পাশাপাশি এসব শাখা মহাবিশ্ব তথা বিশ্বজগতের আবির্ভাব কীভাবে হল, সে বিষয়েও ব্যাখ্যার প্রয়াস করে থাকে। কিন্তু "মহাবিশ্বের আবির্ভাব কেন হল/বিশ্বজগত কেন অস্তিত্বশীল/অস্তিত্বে আসল"- এই প্রশ্নের উত্তরে এখনও রয়েছে ধোয়াশা। বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং ও লরেন্স ক্রাস মহাবিশ্ব অস্তিত্বে আসার ব্যাখ্যায় বলেন, কারও কোন নির্দেশ ছাড়াই কোয়ান্টাম-ভ্যাকুয়াম স্টেটে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভার্চুয়াল কণা এবং স্পেস-টাইমের বাবল (space-time bubble) সৃষ্টি হওয়া সম্ভব, যেটি থেকে আমাদের মত মহাবিশ্বের জন্ম হওয়া সম্ভব। এটি বর্তমানে গানিতিকভাবে প্রমাণিত সত্যও বটে। তাদের মতে, এই স্বতঃস্ফূর্তভাবে মহাবিশ্ব অস্তিত্বে আসার আগে কী ছিল, এই প্রশ্ন অবান্তর, কারণ তার আগে কোন সময় এবং স্থান (time and space) ছিল না। নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী ফ্র্যাংক উইজেকের মতে, "Nothing is unstable"। তবে উইজেকের এই উক্তি সকল পদার্থবিজ্ঞানীর ভিতরের উৎসাহকে দমন করতে পারে নি। এ ব্যাপারে সন ক্যারলের মন্তব্য হল, উইজেকের বক্তব্য শুধুমাত্র পদার্থ বা ম্যাটারের অস্তিত্বের কারণ ব্যাখ্যা করতে পারলেও কোয়ান্টাম স্টেট ও স্পেস-টাইমের (অন্য কথায়, সম্পূর্ণ মহাবিশ্বের) অস্তিত্বের কারণ ব্যাখ্যা করতে পারে না। হয়তবা এদের পেছনে রয়েছে অন্য কোন ব্যাখ্যা, যেটি এখনও আমাদের অজানা।
ডিন রিকলস নামক পদার্থ বিজ্ঞানের এক দার্শনিকের মতে, খুব সম্ভবতঃ মহাবিশ্বের অস্তিত্বের পেছনে সংখ্যা, গনিত এবং সকল গানিতিক সূত্রাবলী ও লজিক আবশ্যকীয়ভাবে বিরাজ করে। এ ব্যাপারে পদার্থ বিজ্ঞানী ম্যাক্স টেগমার্কের সুরও কিছুটা ডিন রিকলসের সুরের মতই। টেগমার্কের মতে, গনিতে অনুমোদিত সকল স্ট্রাকচারই বাস্তব জগত হিসেবে কোথাও না কোথাও বিরাজমান এবং আমাদের মহাবিশ্ব ঐসব স্ট্রাকচারের একটি। সকল সম্ভাব্য মহাবিশ্বের মধ্যে আমাদেরটিকে প্রাণ ধারণের উপযুক্ত মনে হওয়ার কারণ হল অন্য সকল মহাবিশ্বের অধিকাংশই হয়তবা ফাকা বা প্রাণীবিহীন।
উপরের আলোচনা হতে এটা স্পষ্ট যে মহাবিশ্বের অস্তিত্বশীলতার কারণ ব্যাখ্যায় দার্শনিক ও বিজ্ঞানীরা প্রধানত তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে থাকেনঃ (১) প্রথম দল মনে করেন যে " মহাবিশ্ব কোন কারণ ছাড়াই বিরাজ করে, এর অস্তিত্বশীলতা একটা ব্রুট ফ্যাক্ট (brute fact) মাত্র", (২) দ্বিতীয় দল মনে করেন যে, "মহাবিশ্ব বিরাজমান কারণ ঈশ্বর একে সৃষ্টি করেছিল (কেন, কী কারণে সৃষ্টি করেছেন, তা আমাদের বোধগম্যের বাইরে)" (৩) তৃতীয় দল মনে করেন যে, "মহাবিশ্ব বিরাজমান কারণ এটি স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করেছিল (it exists because it caused itself to exist)"। এই ভাবনাটিতে মূলতঃ অধিকাংশ বড় বড় পদার্থবিজ্ঞানীর গবেষণা ও চিন্তার প্রতিফলন ফুটে উঠে যেটি কীনা সাধারণ জনগোষ্ঠীর চিন্তাভাবনার ১৮০ ডিগ্রি কোণে অবস্থান করে। অন্ততঃ তিনটি উপায় রয়েছে যার মাধ্যমে মহাবিশ্ব স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজেই নিজের সৃষ্টির কারণ হতে পারে: (i) সময়ের একেবারে শুরুতে একটা বদ্ধ, যুগপৎ কারণ সম্বলিত লুপের আবির্ভাবের মাধ্যমে (a closed, simultaneous, causal loop at the first instant of time) (ii) প্রথম অর্ধেক-উন্মুক্ত-সেকেন্ডে চলমান তাৎক্ষণিক স্টেটসমূহের শুরুর মাধ্যমে যাতে প্রতিটি স্টেট তার পূর্ববর্তী স্টেটের কারণে ঘটে চলেছে, এবং (iii) বৃহৎ বিস্ফোরণ বা বিগ ব্যাং (big bang)-এর পূর্বে অস্তিত্বশীল কোন কারণের মাধ্যমে যেটা বিগ ব্যাং-কে ঘটতে বাধ্য করেছিল।
আধুনিক বিজ্ঞান মহাবিশ্ব/সবকিছুর উৎপত্তি কীভাবে হয়েছিল, সে বিষয়ে একটা ভাল ও লজিক্যাল চিত্র আমাদের সামনে তুলে ধরতে পারলেও মহাবিশ্ব কেন শুরু হয়েছিল/কেন বিরাজমান, সে সম্পর্কে খুব সামান্যই বলতে পারে। কিছু দার্শনিক (যেমন, স্টিফেন ল) মনে করেন, একটা spatio-temporal setting-এ বসে প্রশ্নটির উত্তর কোন ভাবেই দেয়া সম্ভব নয় কারণ এটির উত্তর spatio-temporal setting-এর বাইরে অবস্থিত। এটি অনেকটা ঠিক "উত্তর মেরুর উত্তরের বিন্দু কী" প্রশ্নটির সমতুল্য। আরেক দার্শনিক সিডনি মর্গেনবেসার প্রশ্নটির সমালোচনা করতে গিয়ে বলেন, "সবকিছুর পরিবর্তে যদি কোন কিছু নাও থাকত, তখনও আপনি সন্তুষ্ট হতেন না, কারণ তখন হয়ত আপনি প্রশ্ন করতেন, Why is there nothing instead of something?" কিছু দার্শনিক আবার মনে করেন, প্রশ্নটির কোন উত্তর দেয়া আমাদের দ্বারা কোনভাবেই সম্ভব নয়, এটি অনেকটা squaring a circle প্রব্লেমের মতই। দার্শনিক রায় সরেনসন-এর মতে, কোন প্রস্তাব (proposition) আবশ্যকীয়ভাবে সত্য (necessarily truth) হওয়া সত্ত্বেও মানব মনের কৌতুহল সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে, আলোচ্য প্রশ্নটি হয়ত সে জাতীয় কিছুই। উদাহরণস্বরূপ, 1 - 1/3 + 1/5 - 1/7 +.............ধারাটির অভিসারী মান (convergent value) π/4 হলেও কেন π/4 না হওয়া সম্ভব নয়, ধারাটি সে সম্পর্কে কিছুই বলে না। মহাবিশ্বের অস্তিত্ব হয়ত সেরকমই আবশ্যিকভাবে সত্য কিছু, যার অস্তিত্বের কারণের প্রতি আমরা একইভাবে উৎসাহ দেখিয়ে থাকি।
মহাবিশ্বের অস্তিত্বশীলতার কারণ এখন পর্যন্ত একটা বিরাট রহস্য, কেউ-ই ১০০% সঠিকভাবে জানে না এই মহাবিশ্ব কেন বিরাজ করে। অন্যভাবে বলা যেতে পারে, আমাদের মহাবিশ্ব একটি encrypted package যার অস্তিত্বশীলতার Password এখন পর্যন্ত আমাদের অজানা।