Monday, June 20, 2016

শিয়া ও সুন্নীর হত্যা কান্ড।

আজকের দিনটা মুসলমানদের জন্য শোকের। বেদনাময়। নবী মুহাম্মদের দৌহিত্র হাসান আর হোসেনকে হত্যা করা হয়েছে এদিন। কারা করেছে এই হত্যাকাণ্ড? হত্যাকারী কি ইহুদি বা খ্রিস্টান ছিল কিংবা পৌত্তলিকরা? না। তারা কেউ অমুসলিম ছিল না। তারা ছিল মুসলমান। নবীরই আত্মীয়। হত্যাকারীরা কি সাহাবি ছিল না? হ্যা, তারাও সাহাবি ছিল। মুহাম্মদের মৃত্যুর পর যে ইসলামে একের পর এক প্রাসাদ ষড়যন্ত্র আর ক্যু ঘটতে থাকে ক্ষমতা দখল নিয়ে তারই পরিণতি কিন্তু এই কারবালার ঘটনা। এমন কী চার জন খলিফার মধ্যে তিনজন খলিফাকেই জনতার রোষানলে পড়ে প্রাণ দিতে হয়েছে। আমাদের ইসলামী রাজনৈতিক দলেরা প্রায়ই দাবি করে তারা নাকি খেলাফতের যুগে ফিরে যেতে চান!! হায়রে কপাল, খেলাফতের যুগে গোটা ইসলামি রাজ্যে যে কল্লাকাটাকাটি হয়েছিল, গৃহযুদ্ধের মুখে পড়েছিল মুসলমানেরা, সেটা কিভাবে অস্বীকার করে এই ধর্মান্ধের দল।
মুহাম্মদের মৃত্যুর পরপরই লাশ দাফনের আগেই আমির নির্বাচন নিয়ে শুরু হয় ষড়যন্ত্র। মক্কা থেকে আগত মোহাজের আর মদিনাবাসীর মধ্যে বাধে এ লড়াই। এরপর আবু বকরকে নির্বাচন করা হলে নবী মুহাম্মদের কাজিন হজরত আলী এর বিরোধিতা করেন। তিনি ভেবেছিলেন, রক্তের সম্পর্ক হিসাবে তিনিই বোধহয় হবেন খলিফা। কিন্তু হতে না পেরে মনোক্ষুণ্ন হন। বিরোধিতা করেন। সেই থেকে শুরু ইসলাম জুড়ে ফ্যাৎনা-ফ্যাসাদ। ফ্যাসাদের তীব্রতা এই যে প্রথম খলিফা আবু বকরের সন্তানই হত্যা করেন তৃতীয় খলিফা হজরত উসমানকে। যখন উসমান নামাজরত অবস্থায় ছিলেন, তখন কোরান বুকে চেপেও নিস্তার পাননি নবীর স্ত্রী আয়েশার ভাই, এবং প্রথম খলিফা আবু বকরের পুত্র মুহাম্মদ ইবনে আবু বকরের রক্তাক্ত ছুরি থেকে। এমন কী উসমান হত্যার পিছনে আয়েশারও হাত ছিল। তার মদদ ছিল। উসমানের পরবর্তী খলিফা আলীর সাথে লড়াই হয় মুহাম্মদের স্ত্রী আয়েশার। জঙ্গে জামাল নামে পরিচিত এই যুদ্ধ। এটা কি গৃহযুদ্ধ নয়? এই যুদ্ধে কত লোক প্রাণ হারিয়েছিল? অগণিত লাশ পড়েছিল সেই যুদ্ধে। কেন, এতো মৃত্যু? কিচ্ছু না। কোনো গায়েবি নির্দেশ না। কোনো জনকল্যাণের কিছু না। জাস্ট ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। প্রাসাদ দখলের লড়াই। এরপর আলীর সাথে যে যুদ্ধ হয় সাহাবি মুয়াবিয়ার সিফফিনের মাঠে তাতে ৭০ হাজার লাশ পড়ে উভয় পক্ষে। যে খারিজিদের তাড়িয়ে দিয়েছিলেন আলী, সেই খারিজিরাই হত্যা করে আলীকে। আজকে যে আমরা বোকো হারাম, আইএস দেখতে পাই, এরা হচ্ছে সেযুগের খারিজি। মসজিদ প্রাঙ্গনে হত্যা করে আলীকে। খারিজিরা কিন্তু অমুসলিম ছিল না। ছিল না ইহুদি কিংবা খ্রিস্টান। এরা মুসলমানই ছিল। তারপরও তারা নবীর ভ্রাতা আলীকে হত্যা করতে দ্বিধা করেনি।
হজরত আলি নবীর ভ্রাতা হলেও তিনি নবীর কন্যা ফাতেমাকে বিয়ে করেছিলেন। এরপর আর বিয়ে করেন ৮টি। তার সন্তান-সন্ততি ছিল ৩৩। এদের মধ্যে কেবল বিখ্যাত হাসান আর হুসেন। বাকিদের নাম বেশিরভাগই মুসলমান জানেন না। যাইহোক, মুয়াবিয়া আর তার পুত্র এজিদ মিলে হত্যা করেন হাসান আর হোসেনকে। মুয়াবিয়া কিংবা এজিদ এরা হত্যাকারী হলেও নবীরই আত্মীয়। এরা সাহাবি। এরা মুসলমান। ভাই হয়ে ভাইকে এরা হত্যা করে হাত রাঙিয়েছে। অর্থাৎ ইসলামের ইতিহাসে ভয়ঙ্কর দলাদলি, ফ্যাৎনা-ফ্যাসাদ বহিরাগত কিংবা বিধর্মীরা কেউ করেননি। সৃষ্টি হয়েছে নিজেদের মধ্যে। এটাই বাস্তবতা।
আজকে ১০ই মহরম, পবিত্র আশুরা, যে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গিয়েছিল কারবালার প্রান্তরে তা ভুলে যাবার নয়। ভাইয়ে ভাইকে হত্যা করেছে এইদিন। এদিনকে স্মরণ করে শিয়ারা কাজিয়া মিছিল করে সারা বিশ্বেই। শুনলাম নাইজেরিয়াতে বোকো হারাম বোমা হামলা চালিয়ে আজকে এই কাজিয়া মিছিলে ১৫জন শিয়া মুসলমানকে হত্যা করেছে! কারবালার এই দিনে শিয়াদের হত্যা না করলেই কি হতো না বোকো হারামজাদাদের! এদেরকে ধিক্কার জানাবার ভাষা আমার নেই!! পাকিস্তানে প্রতি বছরই, প্রতি মাসেই শিয়াদের উপর হামলা করে সুন্নীরা। বোমা হামলা করে, কচু কাটা করে, গুলিতে ঝাঝরা করে। উভয়েই নিজেদের মুসলিম দাবি করে, কিন্তু কেউ কাউকে মুসলমান বলে স্বীকার করে না। আবার ইরাকে শিয়া-সুন্নী লড়াই দীর্ঘদিনের। সেই সাদ্দামের মন্ত্রী যিনি ক্যামিকেল আলী নামে পরিচিত ছিল, তিনি সুন্নী মুসলমান। উত্তরে কুর্দি বিদ্রোহ দমনে এবং দক্ষিণে শিয়া বিদ্রোহ দমনে রাসায়ানিক গ্যাস প্রয়োগ করে বিশালাকারে গণহত্যা চালিয়েছিল। ইরাকের জনগোষ্ঠীর শতকরা ৬০ ভাগ শিয়া হলেও শিয়ারা কখনো ক্ষমতার স্বাদ পায়নি। সাদ্দাম আমলে বরং এদেরকে ভয়ঙ্করভাবে নিপীড়ণ করা হয়েছে। সাদ্দামের পতনের পর ক্ষমতার প্রথম স্বাদ পায় শিয়ারা। সুন্নীরা এখন বঞ্চিত। তারা এখন নিগৃহীত। আজকে খবর পেলাম সুন্নী জঙ্গি সংগঠন যারা এতোদিন শিয়া মুসলমান হত্যা করে আসছিল, তারা নাকি গত কয়েকদিনের ভেতর নিজের স্বগোত্রীয় দুই শতাধিক সুন্নীকে হত্যা করেছে। হোয়াট অ্যা সারপ্রাইজ!!
আসলেই ইসলাম মহান! আসলেই ইসলাম শান্তির ধর্ম। কিন্তু এই ধর্ম এমনই একটা ইউটোপিয়ান রাজনৈতিক মতবাদ যা কোনো মুসলমানই অনুসরণ অনুসরণ করতে পারেন না। তাইতো এতো ফ্যাৎনা, ফ্যাসাদ, হত্যাকাণ্ড, আর প্রাসাদ ষড়যন্ত্র।