Sunday, June 12, 2016

ঈশ্বর কি তাহলে সর্ব শক্তিমান নন?


এই বিষয় টা নিয়েই কেন- সেটা আগে বলি, "জনাব জাকির" সাহেবের একটি লেকচারে শুনেছিলাম। তিনি বলছেন,
   "ঈশ্বর সবকিছু করতে পারবেন না। তিনি মিথ্যা কথা বলতে পারবেন না। তিনি সন্তান রাখতে পারবেন না।"
   সেই সাথে একটি কুটাভাসের (প্যারাডক্স) কথা তিনি বলেন,
     "ঈশ্বর কি জানেন যে আগামীকাল তিনি কি করবেন? যদি জানেন তবে আগামীকাল কি তার ব্যাতিক্রম করতে পারবেন না? যদি ব্যাতিক্রম করতে পারেন তবে গতকাল তিনি ভুল জানতেন। আর যদি ব্যাতিক্রম করতে না পারেন তবে তিনি সর্বসশক্তিমান নন।"
   
এর পর তিনি বলেন তিনি নাকি এরোকম হাজার টি কাজের লিষ্ট করতে পারবেন যা ঈশ্বার করতে পারবেন না।
তাই তার মতে ঈশ্বর সর্ব শক্তিমান নন।
এটা যে কুরয়ানের শিক্ষা বিরোধী তাতে সন্দেহ নাই। এ ইস্যুতে অনেক বিখ্যাত আলেম জাকির নায়েক কে কাফের ফতোয়া দিয়েছেন।
"ঈশ্বর কি তাহলে সর্ব শক্তিমান নন?"
সতর্ক বার্তাঃ এটি কোনো "ধর্মীয়" পোষ্ট নয় বরং "যুক্তি ও সাধারণ দর্শনবিদ্যার" র পোষ্ট।
১টি প্রশ্নঃ
"সর্বশক্তিমান ঈশ্বর কি এমন কোনো ভারি জিনিস তৈরি করতে পারবেন যেটা তোলা সম্ভব নয়?"
উক্ত প্যারাডক্স বা "কুটাভাস" অনুসারে ঈশ্বর যদি এমন জিনিস তৈরি করতে সক্ষম হন- যা তোলা সরানো সম্ভব নয়;
তাহলে,
     (ক) তিনি যদি তার তৈরি করা জিনিস তুলতে না পারেন তবে তিনি সর্বশক্তিমান থাকেন কিভাবে?
     (খ) আর তিনি যদি তার তৈরি করা জিনিস তুলতে পারেন তবে তা "তোলা সম্ভব নয়" কথাটি সত্য হলো কি করে? অর্থাৎ তিনি যা ইচ্ছা তাই তৈরি করতে পারেন নি।
তাহলে ঈশ্বর সর্বশক্তিমান হন কি করে?
এটি আসলে এমন একটি "প্যারাডক্স" বা "কুটাভাস" যা লজিক বা যুক্তির বিপরীত।
এরোকম আরো একটি "কুটাভাস" হলো,
    "ঈশ্বর কি এমন একটি বৃত্ত আঁকতে পারবেন যা বর্গাকার?"
ঈশ্বর আসলে আমাদের কে এমন একটি জগতে পাঠিয়েছেন যুক্তি যে জগতের অনেক গুরুত্বপূর্ন একটি নিয়ম। যুক্তির বিপরীতে কিছু ঘটা তো দূরে থাক আমাদের জন্য কিছু কল্পনাও করা দূরহ।
যুক্তির নিয়ম হলো, "যুক্তিকে খন্ডন করতে হয় যুক্তি দিয়ে।"
আর আপনার উক্ত এই প্রশ্ন গুলো আসলে সাধারণ যুক্তির বিপরীত। অর্থাৎ এই সমস্যা গুলো "অযৌক্তিক"
তাই "অযৌক্তিক" জিনিস খন্ডন করতে হবে "অযুক্তি" দিয়ে, অর্থাৎ যুক্তির বিপরীতে। কারণ এটাই যুক্তির নিয়ম।
আর কোন ঘটনা ঘটার "যুক্তি" বা "কারণ" হয় শুধুমাত্র একটি (একাধিক ও হতে পারে কিন্তু ঘটনা সমষ্টি একটি) কিন্তু সেই ঘটনা টা ঘটার "অযুক্তির" কোনো সীমানা নাই। একটি ঘটনা ঘটার যুক্তি একটি কিন্তু ঐ ঘটনা টি ঘটার "অযুক্তি" অসীম সংখ্যক।
কি তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে? তাহলে একটি পানির মত সহজ উদাহরণ দেই,
মনে করেন আপনি আমার গালে একটি থাপ্পড় মেরেছেন তাই আমার গাল লাল হয়েছে।
তাহলে এখানে আমার "গাল লাল" হওয়ার যুক্তি শুধুমাত্র একটি সেটি হলো, "আপনি আমাকে থাপ্পর মেরেছেন।"
কিন্তু আমার গাল লাল হওয়ার "অযুক্তি" -র সংখ্যা হাজারটি- যেমন,
      ১। পানির রঙ স্বচ্ছ, তাই আমার গাল লাল হয়েছে।
      ২। ১+১ এ ২ হয়, তাই আমার গাল লাল হয়েছে।
      ৩। ১+১ এ ৫ হয় না, তাই আমার গাল লাল হয়েছে।
      ৪। ইংরেজ একটি তেল চোরা জাতি, তাই আমার গাল লাল হয়েছে।
      ৫। প্রেসিডেন্ট ওবামা দাঁত মাজেন না, তাই আমার গাল লাল হয়েছে।
     …….  
     ……..
    ……..
এভাবে আমার গাল লাল হওয়ার পেছনে "অযুক্তি" অসীম সংখ্যক হতে পারে। কিন্তু আপনার কাছে "যুক্তি" হতে পারে মাত্র একটি। কারণ আপনি আমাকে নিজ হাতে থাপ্পড় মেরেছেন।
তাই প্রথমোক্ত "অযৌক্তিক" সমস্যার সমাধান অসীম সংখ্যক ভাবে "অযুক্তি" দিয়ে করা সম্ভব হবে।
আর এই সমস্যার সমাধান যখন "অযুক্তি" দিয়ে করা হবে তা "আপনার বোধগম্য" হবে না। কারণ আপনি বাস করেন যুক্তির জগতে যেখানে আপনি "অযৌক্তিক" কিছু কল্পনা পর্যন্ত করতে পারেন না।
কিন্তু বিশ্বাস করুন মানুষের মস্তিষ্কে এত সহজে কোনো অযৌক্তিক কিছু যৌক্তিক বা বিশ্বাসযোগ্য হিসেবে গৃহীত হয় না।
উক্ত সমস্যার সমাধানঃ
তাই যৌক্তিক উপায়েই প্যারাডক্স গুলোর সমাধানে যুক্তি দাঁড় করানো যায়। এখন আমি উক্ত প্যারাডক্স টির যৌক্তিক সমাধান দেব।
তাই,
ওপরের শুধু প্যারাডক্স টি ছাড়া যত কথা বলেছি সব ভুলে যান, মনে করেন যুক্তি নামক মানবিক দূর্বলতা দ্বারা আমি আপনার মস্তিষ্ক নিয়ে একটু খেলা করলাম। আর ওপরের কথা গুলো আপনার মাথার ওপরে দিয়ে গেলে আরো ভালো।
এখন আসেন শুরু করি,
উক্ত কুটাভাস টি যুক্তিবিদ্যার অনেক ক্লাসিক একটি বিষয়। এবং যৌক্তিক সমাধান ও আছে।
তাহলে "ঈশ্বর কি এমন কিছু ভারি বানাতে সক্ষম যা তোলা সম্ভব নয়।"
উত্তর হলো "হ্যা" অবশ্যই তিনি এরূপ কিছু বানাতে পারবেন।
   *"তাহলে তিনি সেই জিনিস টা তৈরি করার পর নিজে সেটি তুলতে পারবেন?"
এর উত্তর হলো "অবশ্যই সেটি তুলতে পারবেন?"
  *তিনি যদি সেটিকে তুলতে পারেন তবে সেটি "তোলা সম্ভব নয়" এমন জিনিস হলো কি করে?
এর উত্তর হলো- অবশ্যই "সেটি তোলা সম্ভব নয়" এমন জিনিস। কিন্তু তিনি সেটাকে তুলতে পারবেন কারণ, "তিনি অসম্ভব কে সম্ভব করতে পারেন।" জিনিস টা তখনো আসলেই "তোলা সম্ভব নয়" এমন জিনিস।
কিন্তু তিনি সেটা তুলতে পারছেন কারণ, "ঈশ্বারের গুণাবলী ই হচ্ছে অসম্ভব কাজ করা।"
তাই লজিক টা হলো,
তিনি যেহেতু "অসম্ভব" কাজ করছেন অর্থাৎ "জিনিস টাকে তুলছেন" সেহেতু জিনিস টা তোলা "অসম্ভব"।
সমাধান সব কিছু লজিকের মধ্যই আছে; লজিকের বিপরীতে কিচ্ছু যাচ্ছে না।
(অবশ্যই এটি আমার যুক্তি নয়, যুক্তি টি নিশ্চই কোনো বড় মাপের ফিলোসফারের। আমি শুধু নিজের ভাষায় ব্যাখ্যা করে লেখার চেষ্টা করেছি মাত্র।)
লজিক হলো জগতের একটি সীমাবদ্ধতা। জীবদ্দশায় আমরা কখনো লজিকহীন হতে পারবোনা। যেমনঃ "পাগল লজিক ছাড়া কথা বলে" এ ঘটনার লজিক হলো, "সে তো পাগল তার বৈশিষ্ট হলো লজিক ছাড়া কথা বলা"
যুক্তির সম্পর্ক আসলে মানুষের মস্তিষের সাথে। মস্তিষ্ক নাই তো যুক্তিও নাই। যুক্তি যে মনের সাথে সম্পর্কিত তার একটি প্রমাণ দেই, মনের সাথে সম্পর্কিত বললে ভুল হবে, শুধুমাত্র সচেতন মনে যুক্তির বাস, সাবকনসাস মাইন্ডে যুক্তির প্রচন্ড অভাব লক্ষনীয়, প্রমান টা দেখুন,
এই পৃথিবী তে একটি মাত্র বিশেষ অবস্থা আছে যখন মানুষ লজিক্যাল জগতের একটু হলেও বাইরে চলে যায়, সেটা হলো "স্বপ্ন"
"স্বপ্নের" একটি বৈশিষ্ট্য হলো "স্বপ্নের ঘটনার কোনো লজিক নাই। কারন সাব কন্সাস মাইন্ড লজিক বোঝায় অত্যন্ত অজ্ঞ"
যেমন, আপনি একটি মানুষকে স্বপ্নে দেখছেন পরক্ষনেই দেখছেন সেই মানুষ টি হলো অন্য কোন মানুষ; অথবা সে হয়ে গেছে হয়ে গেছে- অন্য কোন মানুষ। আগে যে মানুষটিকে আপনি দেখছিলেন এ সে নয়; এবং ঠিক তখন (অর্থাৎ স্বপ্ন দেখার সময়) এই অযৌক্তিক ঘটনা কিভাবে ঘটলো এ চিন্তা করা ছাড়াই আপনি অকপটে মেনে নেন যে হ্যা সেই আগের মানুষ টি অন্য মানুষ হয়ে গিয়েছে।
লজিক হলো মানুষের মনের "সীমাবদ্ধতা" ;
মানবসম্প্রদায় যুক্তির সীমায় আবদ্ধ।
এবং যুক্তি কখনোই জগত সমূহের নিয়ম নয়। যুক্তি হলো শুধু আমি বা আমরা যে জগতে বাস করি সেই জগতের নিয়ম।
কোন যুক্তিবাদী বন্ধু হয়ত বা বলবেন যুক্তির অস্তিত্ব সব জগতেই আছে; কিন্তু তা আপেক্ষিক। অর্থাৎ বিভিন্ন জগতে যুক্তি বিভিন্ন রকম।
   -এ কথা কেউ বললে আমি তার বিরোধীতা করতে চাইলেও করতে পারবো না।
"বিভিন্ন জগতে যুক্তি বিভিন্ন রকম" বরং একটা উদাহরণ দেই,
আচ্ছা একটা উদাহরণ দিচ্ছি,
(আপনাকে এখন একটু কল্পনা প্রবন হতে হবে)
মনে করেন, একটি জগৎ আছে যেটি দ্বিমাতৃক অর্থাৎ সেই জগতের মাত্রা মাত্র দুটি, দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ।
ব্যাপার টা আরো সহজ করার জন্য একটি সাদা কাগজ কে দ্বিমাতৃক জগৎ ধরে নেই।
এবার সেই দ্বিমাতৃক জগতে একটি বৃত্ত কল্পনা করুন। অর্থাৎ সাদা পৃষ্ঠায় একটা বৃত্ত অংকন করুন। এখন মনে করেন বৃত্তের পরিসীমার বাইরে একটি বিন্দু আছে।
এখন কোনো ভাবে কি বৃত্তের পরিসীমা ক্রস না করে বিন্দুটি কি বৃত্তের ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে?
অসম্ভব, ওই বিন্দু টি যদি বৃত্তের পরিধী ভেদ করা ছাড়াই বৃত্তের ভেতরে ঢুকরে চায় সেটা দ্বিমাত্রিক জগতে কোনো ভাবেই সম্ভব না।
কিন্তু এই ঘটনা টিই ত্রিমাতৃক জগতে ঘটা অত্যন্ত সাধারন একটি ব্যাপার।
নিচের চিত্রদুটি দেখুন ক্লিয়ার হবে ব্যাপারটা,


==================
প্রথম চিত্রে আপনারা দেখতে পাচ্ছেন A থেকে B তে যাওয়ার জন্য দ্বিমাতৃক স্পেসে বৃত্তকে ক্রস করতেই হবে।
কিন্তু ২য় চিত্রে আপনারা দেখছেন একই বৃত্ত তৃমাতৃক জগতে আনলে তাকে ক্রস না করেই z অক্ষ অর্থাৎ উচ্চতার দিকে লাফ দিয়ে সহজেই বৃত্ত ক্রস না করে A থেকে B তে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে।
তাহলে বুঝেছেন তো, দ্বিমাত্রিক জগতে যা একেবারেই অসম্ভব, ত্রিমাতৃক জগতে তা অনায়াসে সম্ভব।
এতো বক বক করলাম এখন আপনারা নিশ্চই বুঝতে পারছেন যে, সত্য বা যুক্তির নিয়ম বিভিন্ন জগতে বিভিন্ন রকম। এক জগতে যার ব্যাখ্যা নাই, অন্য জগতে তা অনায়াসে সম্ভব।
তাই আপনার জগতে (তিন মাত্রার জগতে) যা যুক্তিতে কুলায় না; সেটা যে অসম্ভব তা আপনি বলতে পারেন না। কারণ, জগতের দশ মাত্রার কথা আমরা জানি একটি অপরিপক্ব থিউরি “ষ্ট্রিং” থিউরির দ্বারা।
তাই ত্রিমাতৃক জগতে যে যুক্তি ভেংগে পড়ে তা চতুর্মাত্রিক জগতে খুবি সম্ভব। থিউরি মতে চতুর্মাত্রিক জগতের কোনো দর্শক ত্রিমাতৃক প্রানীর জন্ম ও মৃত্যুর সম্ভব্য সকল উপাই একসাথে সময়ের ব্যাবধান ছাড়াই দেখতে পারবে। যা ত্রিমাতৃক জগতের যুক্তি ভেংগে ফেলে।
শেষ একটা কথা বলি, এটুকু যা বলব ধর্মের ব্যাপারে আমার অনুভূতি ও নিজস্ব মন্তব্য এবং সাথে আরো কিছু কথা।
সেটা হলো ধর্ম এমন একটা বিষয় যেটা যুক্তি থেকে পবিত্র। যুক্তি দিয়ে বিচার করে করে ধর্মের নিয়ম মানা মানে ধার্মিক হওয়া নয় বরং কপটতা বা ভান্ডামী করা।
কারণ যুক্তি দাঁড়িয়ে থাকে তথ্যের ওপর আর তথ্য ধ্রুব কোন জিনিস নয়। তথ্য প্রতিনিয়ত নবীকরণ হচ্ছে।
তাই যুক্তি দিয়ে ধর্ম মানলে যুক্তি যখন ভেংগে পড়বে তখন আপনি ধর্ম থেকে দূরে নিক্ষিপ্ত হবেন যুক্তি দ্বারাই।
আচ্ছা আমি আসলে ধর্ম মানি কেন? কারণ যুক্তি দিয়ে আমি কূলকিনারা করতে পারিনি বলেই তো আমি অলৌকিকের আশ্রয় নিয়েছি, ধর্মের নিয়ে জমা হয়েছি।
তাই অলৌকিক কে অলৌকিক মানার পর যদি যুক্তি দিয়ে সেই অলৌকিকে বিচার করতে যান তবে আপনি সিরিয়াল ভন্ড (সিরিয়াল কিলারের মত)। একের পর এক ভন্ডামী আপনি করেই যাচ্ছেন।
তাই ধার্মিক হতে হলে আপনাকে ধর্মান্ধ হতেই হবে।
কারণ আপনার বিশ্বাস সংক্রান্ত যুক্তি উপস্থাপন পর্ব শেষ। এ ব্যাপারে আপনি আপিল অবশ্যই করতে পারবেন। তবে বর্তমান অবস্থানে দাঁড়িয়ে নয়, আপনাকে পূর্বের অবস্থায় ফিরে গিয়ে আপিল করতে হবে।
তবে, ধর্মের অভ্যন্তরীণ বিদ্যমান থাকা একই বিষয়েরএকাধিক আইন আপনি অবশ্যই যুক্তি দিয়ে একটি মেনে নিতে পারেন (অবশ্যই যুক্তি হতে হবে ঔ ধর্মের সূত্রাঅনুযায়ী। আপনার মন গড়া যুক্তি হতে পারবে না।)
তাই আপনার বিশ্বাস ও যুক্তির দন্দ্ব আপনার নিজস্ব চিন্তার ও দর্শনের ব্যাপার। এবং আপনার নিজস্ব দর্শন ধর্মের ওপর চাপানোর কোনো অধিকার নাই আপনার।