লিখেছেন মুফাসা দ্যা গ্রেট
সেক্স
ফ্যান্টাসি ছাড়া কোনো ধর্ম রচনা সম্পূর্ণ হয় না। ধর্ম রচনা করতে হলে
সেক্স ফ্যান্টাসি থাকতে হবে - সেই রকম শিশ্ন-শিরশিরে সেক্স ফ্যান্টাসি।
মেনকা উর্বশী থেকে শুরু করে ভেনাস আফ্রোদিতি পর্যন্ত প্রতিটি ধর্মেই সেই
রকম সেক্স ফ্যান্টাসিতে ভরপুর। ইসলাম ধর্মেই আসলে দেখা যায় কোনো সেক্স
ফ্যান্টাসি নেই। ধু ধু মরুভুমি, খেজুর, খেজুর গাছ, খেজুরের কাঁটা, উটের
মুত, ভেড়ার গু, ছাগলের দুধ, জোব্বা, পাগড়ি কুলুখ ইন্তেজা হায়েজ নেফাস,
নুনুর পুজ, পাছার গু, গেলমানের রক্ত উহ আহ.....
আরে থামুন থামুন।
আপনি
কি জানেন, ইসলামে একটি বিশাল ধরনের সেক্স ফ্যান্টাসি রয়েছে। মহান আল্লাহ
পাক মানুষের সেক্স ফ্যান্টাসিকে এক সুবিশাল উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন। আর
হচ্ছে জ্বীন :D
আপনি
কি জানেন, মানুষের আগে জ্বীন জাতিকে তৈরি করা হয়েছে এবং মহান আল্লাহ
রাব্বুল আলামিন এই নালায়েক জ্বীন জাতিকে লাগিয়ে দিয়েছেন মানুষের পুটুর
পেছনে খুচাখুচি করার জন্য?
এরা
খুব দুষ্ট । এরা সারাক্ষণ মানুষের পেছনে লেগে থাকে। মানুষের সাথে খালি
যৌনমিলন করতে চায়। জ্বীনদের সৃষ্টির ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক বলেন:
"নিশ্চই আমি জ্বীনদের কে মানুষের পূর্বে সৃষ্টি করিয়াছি।"
দুনিয়াতে
মানুষের আগমনের আগে আল্লাহপাক জ্বীনদেরকে প্রেরণ করেন, কিন্তু এরা একটু
বেশি দুষ্টু হওয়ার কারণে তারা একে অপরের পুটু মারা শুরু করে, এতে
আল্লাহপাক বেজায় বিরক্ত হন এবং জ্বীনদের আরেকটি দলকে প্রেরণ করেন এদের
শায়েস্তা করার জন্য। এদের দলের একটি ভাগের ৪০০০ জ্বীনের দলের নেতা ছিল
শয়তান। শয়তান একাই এইসব পুটু মারামারি করা জ্বীনগুলাকে কেটে সমুদ্রে
ভাসিয়ে দেয়। অনেকটা হারকিউলিসের মত।
যাই হোক, এতে জ্বীনেরা দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, আল্লাহপাক শান্তির শ্বাস নেন।
জ্বীন
জাতি আল্লাহপাকের বেজায় আদরের জাতি - খুব আদরের সহিত আল্লাহপাক জ্বীন
জাতিকে সৃষ্টি করেছেন। ওই যে কথায় আছে না, অতি আদরে নষ্ট হওয়া পুলাপাইন?
জ্বীনগুলাও আল্লাহপাকের অতি আদরে নষ্ট হয়ে গেছে। আদরের ঠেলায় আল্লাহপাক
জ্বীন জাতির কিছু আব্দার মেনে নিয়ে তাদের কিছু রুহানী ক্ষমতা দিয়ে
দিয়েছেন। যেমন:
- মানুষ জ্বীন দেখবে না কিন্তু জ্বীন মানুষকে দেখতে পাবে।
- তারা যেকোন সময়ে দুনিয়াতে আগমন ও প্রস্থান করতে পারবে কিন্তু স্থায়ীভাবে থাক্তে পারবে না।
- এদের শরীর অতি সূক্ষ্ম হবে বিধায় এদের গতি অনেক বেশি হবে।
- এরা যে কোনো মানুষের ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে এবং প্রস্থান করতে পারবে।
ও মাগো, কী ক্ষমতা! পুরাই ইনভিজিবল ম্যান!
এখন একটা জিনিস চিন্তা করুন - একটু দুষ্টু চিন্তা... এই ক্ষমতাগুলো আপনি পেলে আপনি কী করতেন?
আরে রাখেন রাখেন, খালি কেট আপটনের কথা চিন্তা করলেই হবে? হবে না, আসুন, এইবার জ্বিন ও ইনসানের প্রেমলীলার প্যাচাল পারি।
হযরত
মুজাহিদ (র) থেকে বর্ণিত: রাসুল বলেছেন, জ্বীন ও ইনসানের যৌনমিলন সম্ভব।
জ্বীন চাইলে মানুষের সাথে যৌনমিলন করতে পারে। এর ফলে জন্ম নেয়া সন্তানকে
বলা হয় খুন্নাস। ইয়ে আমার তো বায়োল্ফ-এর অ্যান্জেলিনা জোলির কথা মনে
পড়ে গেল, সেই মন্সটার মাদার হে হে। ইয়ে, ব্যাক টু দ্যা পয়েন্ট...
জ্বিনের
সাথে বিবাহ মাকরুহ। কারণ আল্লাহপাক বলেন, তোমাদের জন্য তোমাদের
আকার-আকৃতির সঙ্গী দেওয়া হয়েছে, তো তোমরা কেন জ্বীনকে লাগাতে যাবে থুক্কু
বিয়ে করতে যাবে?
তবে
কেউ যদি মানুষের আকারের জ্বীনকে কুরকুরানির ঠেলায় বিয়ে করেই বসে, তাহলে
তা জায়েজ হবে না। তবে সেই জ্বীন যদি মুসলমান হয়, তবে... এ বিষয়ে
আল্লাহপাক কিছু খোলাসা করে বলেননি, খালি মিটি মিটি হেসেছেন।
সাসপেন্স! সাসপেন্স! আরে যেখানে আল্লাহপাক স্বয়ং ধর্ম লিখছেন, সেখানে সাসপেন্স না থাকলে হয় নাকি।
এইবার
সাসপেন্স ভাঙি। জ্বীন মুলত খুবই সেক্সি একটা ক্রিয়েচার, যৌনমিলনের জন্য
এরা সব সময় উৎসুক হয়ে থাকে। আপনি যদি আপনার স্ত্রীর সাথে ইয়ে করার সময়
বিসমিল্লাহ না বলেই ঢোকাতে যান, তখন আপনার স্ত্রীর ইসে মানে ওই যে কী বলে
নুনু না থুক্কু যোনিটা একটি জ্বীন এসে দখল করে নেয়। মানে আপনার স্ত্রীর
যোনি জ্বীনের যোনি হয়ে যায়।
কী
মজা, তাই না? আচ্ছা, এখন আপনার যৌনকর্মের দ্বারা যদি আপনার স্ত্রীকে
প্রেগন্যান্ট করেই দ্যান, তাহলে আপনার স্ত্রী তখন প্রেগন্যান্ট হবে না হবে
সেই জ্বীনটি। হেহে আর আরেকটা জিনিষ বলে রাখি, জ্বীনের ব্রীডিং পাওয়ার
কিন্তু সেইরাম, মানুষ একটা বাচ্চা জন্ম দিলে এরা দেয় নয়টা। মাগো, ইয়ে
আমার মেক্সিকান আর কলম্বিয়ান গার্লফ্রেন্ডগুলার কথা মনে পড়ে গেল, এরাও
ঠিক এভাবেই প্রেগন্যান্ট হওয়ার জন্য রেডি থাকে।
জ্বীনেরা
বাথরুমে থাকে। মানে বুঝলেন তো? এদের সেক্সের জালা কতটুকু, এমন একটা জায়গা
বেছে নিয়েছে যেখানে গিয়ে আপনাকে লুঙ্গি-পায়জামা খুলতেই হবে, আর তখনই
জ্বীনেরা আপনার সাথে যৌনমিলন করে বসবে। কী, চিন্তায় পড়ে গেলেন? বাথরুমে
গিয়ে হাত মারায় এত সুখ কোথা থেকে আসে? আসলে তখন আপনি জ্বিনের সাথে সঙ্গমে
ব্যস্ত থাকেন।
মহান
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এখান থেকেও মুমিনদের বাঁচিয়ে দিয়েছেন। জ্বীনদের
থেকে বাঁচার জন্য বাথরুমে যাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ পড়ে ঢুকবেন, কোনো জ্বীন
আপনার নুনু দূরের কথা, বালের ডগাও ছুঁতে পারবে না। কী, বিসমিল্লাহ পড়বেন
তো? কেন জানি ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসি দেখতে পাচ্ছি। আচ্ছা, থাক। আপনার
ধান্ধা আপনার কাছে, আমি কেডা!
আর
মুমিনা আপুদেরকে বলছি, আপনারা ঘুমানোর সময় দোয়া পড়ে যোনি লক করে
ঘুমাবেন, তা না হলে জ্বীনেরা এসে রাতের বেলায় আপনার সাথে যৌনমিলন করে
যাবে, এবং পরদিন আপনাকে ফরজ গোসল করতে হবে, তা না হলে কিন্তু নামায হবে না।
ফরজ গোসল নিয়ে অবশ্য একটু মতভেদ আছে।
আবুল
ইবনে হাম্বলী (র) বলেছেন, জ্বীন সহবাসের পর মহিলাদের উপর গোসল ফরজ হয় না,
কারণ ফরয গোসলের দুইটা শর্ত অনুপস্থিত - লিঙ্গ প্রবেশ ও বীর্যস্খলন।
কিন্তু আল্লামা শিবলী (র) বলেছেন, এটি অতি অপমানজনক এতে পাকসাফ হওয়া যায় না। গোসল করতে হবে।
এখন মুমিনা আপিদের ওপরেই ছেড়ে দিলাম, করবেন কি করবেন না।
বুঝলেন
তো, কী পরিমাণ সেক্স ফ্যান্টাসি আল্লাহপাক ইসলাম ধর্মে রেখেছেন? তো এখন
কেউ যদি মুমিনদের বলে, তোরা নিরামিষ, তাইলে বলবেন জানিস, আমাদের আছে জ্বীন
ফ্যান্টাসি, যার তুলনা দুনিয়ার আর কোথাও খুঁজে পাবি না বুঝলি।
ভৌতিকতা-বাস্তব নাকি কল্পনা?
অমাবস্যার রাত, গ্রামের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন একা। সামনে একটা বড় বাঁশঝাড়। হঠাৎ মনে পড়ে গেল এই বাঁশঝাড় সম্পর্কে লোকের কথা-অমাবস্যার রাতে এই বাঁশঝাড়ে কারো কান্নার আওয়াজ পাওয়া যায়। বেড়ে গেল বুকের ধুকধুকানি। সত্যি কি ভূত আছে নাকি সামনে? নাকি এইসব শুধুই কল্পনা? সামনে এগিয়ে গেলেন সাহস করে।তারপর...ভূত, পেত্নি, প্রেতাত্মা বা এগুলোর মত যা কিছু আছে গোটাবিশ্বে খুব জনপ্রিয়। হাজার হাজার গল্প, উপন্যাস, সিনেমা, নাটক, ডকুমেন্টারি আছে ভূত প্রেত নিয়ে। কোনটায় দেখায় এসবই কল্পনা, মানুষের মস্তিষ্কে বিভিন্ন ক্যামিকেলের খেলায় এসবের সৃষ্টি আবার অনেক সময় দেখায় বাস্তব ঘটনার উপর নির্মিত আবার অনেক সময় দর্শক/পাঠকের উপর সিদ্ধান্ত নেবার ভার দিয়ে শেষ করে দেয়। "এখন বিজ্ঞানের যুগ, ভূত বলে কিছু নেই"-খুব প্রচলিত একটা কথা। তাহলে বাস্তব ঘটনার উপর নির্ভর করে এসব গল্পবা সিনেমা কিভাবে হচ্ছে? সত্যি কি ভূত বলে কিছু আছে নাকি সবই মানুষের কল্পনা?উত্তর এক কথায় দেয়া সম্ভব না।
ভূত ব্যাপারটাকে নানা জায়গায় নানাভাবে বর্ণনা করা আছে। কিন্তু সবগুলোই সম্ভবত একই জিনিস, নানান ভাষায়, নানান সমাজে নানা নামে পরিচিত হয়েছে। কিন্তু ভালোমত খেয়াল করলে দেখা যাবে সবগুলোই আসলে একই জিনিস। ভূত বলে যা কল্পনা করা হয় বা যা আছে তার গল্প বা কাহিনী অনেক আগে থেকেই আছে। কিন্তু আসলেই কি আছে এমন কিছু?
বিজ্ঞান এসবের উত্তর দেয় এক কথায়-নেই। বিজ্ঞান অদৃশ্যে অবিশ্বাসী তা না, হলে ব্লাকহোল বা ডার্ক ম্যাটার বলে কিছু থাকত না। কিন্তু বিজ্ঞান অদৃশ্যে বিশ্বাসের জন্য চায় একটা সমীকরণ। বিজ্ঞান সমীকরণ দিয়ে প্রমাণ করেছে ব্লাকহোল আছে তাই আছে। কিন্তু ভূতের কোন সমীকরণ নেই তাই বলে নেই। কোনদিন যদি সমীকরণ পেয়ে যায় তাহলে বলবে আছে, তার জন্য হয়ত কেউ নোবেল প্রাইজও পেয়ে যেতে পারে।
কিন্তু ধর্ম এবং প্রাচীন সভ্যতাগুলো কিন্তু এই ব্যাপারে খুব সরব। ধর্মের একটা মূল হচ্ছে অদৃশ্যে বিশ্বাস। বিভিন্ন ধর্মে ভূত বা অশরীরীরা আছে এমন অনেক কথা আছে। যারা ধর্মে অবিশ্বাসী তাদের জন্য পরের কথাগুলো কোন কাজে আসবে না কারণ আমি ভূতের প্রমাণ দেব “বিশ্বাস” এর উপর ভিত্তি করে, বিশেষ করে সেমেটিক ধর্মের বিশ্বাসের উপর।
ভূতের ইতিহাস অনেক পুরনো। প্রাচীন মিশর,গ্রিস, ভারত, ব্যাবিলনের নানা রুপকথায় এদের পাওয়া যায়। সকল ধর্মেই পাওয়া যায় বিভিন্ন অশরীরির কথা। এরা ভিন্ন নামে পরিচিত হলেও সবার মধ্যে একটা বড় মিল হচ্ছে এরা সৃস্টিকর্তার বিরুদ্ধে কাজ করে এবং মানুষের ক্ষতি করে। প্রাচীন সভ্যতাগুলোর বেশিরভাগ ছিল বহুঈশ্বরবাদী, আর এসব সভ্যতায় ঈশ্বর আর শয়তান আলাদা কিছু ছিল না।উভয়কেই তারা পূজা করত। কাউকে শ্রদ্ধায় আবার কাউকে ভয়ে। অপদেবতা হিসেবে পরিচিতদের সন্তুষ্ট রাখতে নানা সময় বলি দেয়া হত, নরবলী দেবার ঘটনাও অনেক প্রচলিত। এখনো আফ্রিকার অনেক জায়গায় এসব চালু আছে।
সেমেটিক ধর্মগুলোতে সৃস্টিকর্তা ও শয়তান আলাদা, এখানে শয়তানের উপাসনা করা হয় না বরং শয়তানের হাত থেকে বাঁচতে সৃস্টিকর্তাকেই উপাসনা করা হয়। ধর্মগুলোর মধ্যে ইসলাম এবং খ্রিস্টান শয়তান এবং মানুষের উপর তার প্রভাবের ব্যাপারে বেশ ব্যা্পক আলোচনা করে, যা এই লেখার মূল উপজীব্য। কিন্তু আব্রাহামিক ধর্মের মধ্যে ইহুদিদের মধ্যে বর্তমানে শয়তানের প্রতক্ষ্য কোন আলোচনা নেই যদিও কিছু রাবি(ইহুদি আলেম) বলেন যে শয়তান আছে কিন্তু খ্রিস্টান বা ইসলামের মত ইহুদীদের কাছে শয়তান এবং তার প্রভাব কখনোই গুরুত্ব পায় নাই।
সেমেটিক ধর্মের বাইরে বড় ধর্মগুলোর মধ্যে হিন্দু ধর্মে শয়তান আছে অশুর, ভূত, পিশাচ এসব নামে। বিভিন্ন গল্পে এরা নানারকম রূপধারণ করে মানুষের ক্ষতি করে বলেও উল্লেখ আছে। এছাড়া বৌদ্ধ ধর্মে মারা নামে এক চরিত্র আছে যাকে শয়তানের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। কথিত আছে মারা গৌতম বুদ্ধের কাছে সুন্দরী নারীর সাজে এসেছিল তার ধ্যান ভঙ্গ করতে। মারা মানুষকে তার সৎ পথ থেকে দূরে সরিয়ে খারাপের দিকে নিয়ে যায়।
খ্রিস্টান এবং ইসলাম উভয় ধর্মমতেই অশরীরীরা মানুষকে আক্রমণ করে তার নিয়ন্ত্রন নিয়ে নিতে পারে, কম্পিউটার হ্যাক করে তার নিয়ন্ত্রণ নেবার মত। উভয় ধর্মেই শয়তানের কনসেপ্ট অনেকটাই এক। উভয় ধর্মেই ডেভিলের নাম শয়তান,ইসলামে তার আরেক নাম ইবলিস, খ্রিস্টান ধর্মে লুসিফার নামেও পরিচিত। শয়তান একা নয় বরং তার একটা বাহিনী আছে যাদের নিয়ে সে মানুষের ক্ষতি সাধন করে।
আর এই বাহিনী থেকেই চলে আসে আরেক অশরীরীর যাকে বলা হয় জিন। খ্রিস্টান ধর্মেও একই রকম এক সৃষ্টির কথা আছে যদিও ল্যাটিন বা ইংরেজিতে তাকে ডেভিল বলা হয়। তবে বাইবেলের আরবি অনুবাদের বেশ কয়েকটিতে “familiar spirit” এর অনুবাদ করা হয়েছে জিন(Leviticus 19:31, Lev 20:6, 1 Samuel 28:3, 1 Sa 28:9, 1Sa 28:7 সহ আরো অনেক জায়গায়)। এছাড়াও ইসলামপূর্ব যুগেও জিন নামে একধরণের সৃষ্টির কথা প্রচলিত ছিল। আর জিনদের একটা অংশ ইবলিশের বাহিনীর অংশ।
ইসলামিক বিশ্বাসে জিনদের মধ্যেও নানা মত আছে, তাদের মধ্যেও মানুষের মতই ভালো খারাপ আছে। আর এই খারাপ জিনেরা হচ্ছে ইবলিশের সাহায্যকারী। আর এই জিনেরাই মানুষকে আক্রমণ করতে পারে, তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে,যাকে বলা যেতে পারে Possession. তাফসির এবং হাদিস ঘাটলে জিনের কিছু ঘটনা পাওয়া যায়। কুরানে জিনদের নিয়ে একটি সূরাই আছে, সুরা জিন,৭২ নম্বর সূরা। জিন মানুষকে আক্রমন করে এবং জিন তাড়ানোর ব্যাপারেও বলা আছে(যাকে আমরা Exorcism এর সাথে তুলনা করতে পারি,ইসলামে একে বলে রুকাইয়া)। বাইবেলেও অশরীরী তাড়ানোর ব্যাপারে বেশ কিছু কথা আছে আরএদের আরবি অনুবাদে জিন বলা হয়েছে।
কিন্তু জিন সত্যি আছে কিনা এটা বিজ্ঞান প্রমান করতে পারেনা ভূত আছে কিনা তার মতই। কিন্তু মুসলমানরা বিশ্বাস করে আছে, খ্রিস্টানরাও একই রকম ক্রিয়েচারে বিশ্বাস করে। অন্যান্য ধর্মেও জিনের মতই ক্রিয়েচার আছে। কিন্তু জিন মানেই কি খারাপ আর মানুষকে আক্রমণ করে বেড়ায়? না, সব জিন খারাপনা। তাদের মধ্যেও ভালো খারাপ আছে। আর ভূতের সকল বৈশিষ্ট্যই খারাপ জিনের মধ্যে দেখা যায়। এরা মানুষকে ভালো কাজ থেকে দূরে রাখে, খারাপের দিকে নিয়ে যায় এবং অনেক সময়মানুষকে সরাসরি আক্রমণ করে যেমনটা হরর মুভি বা গল্পে দেখা যায়।
জিন সবচেয়ে বিখ্যাত মনে হয় আলাদিনের গল্পে। সেই জিনের কথা আমরা সবাই জানি, ছোটতে কমিকবা কার্টুনে প্রায় সবাই দেখেছি। সেই জিন থাকে এক প্রদীপের ভিতর, প্রদীপে ঘষা দিলেইবের হয়ে আসে। কিন্তু সত্যিকারের জিনের ব্যাপারে খুব বেশি তথ্য পাওয়াযায় না। একমাত্র কিছু ইসলামিক সোর্স থেকে এদের সম্পর্কে অল্প কিছু তথ্য জানা যায়।এদের থাকার জায়গা হিসেবে বলা হয়ে থাকে পরিত্যাক্ত বাড়ি, নোংরা জলাশয়, টয়লেট এমনকি মানুষের সাধারণ বাড়ি। তবে সাধারণত মানুষ বর্জিত এলাকাগুলোই এদের বেশি প্রিয়। আর তারা বেশিরভাগ সময় চায় না কেউ তাদের বিরক্ত করুক। আর একারণেই পরিত্যাক্ত বাড়ি বা এলাকায় অনেক সময় “ভৌতিক” ঘটনার কথা শোনা যায় যা হয়ত জিন করে থাকে। কিন্তু কিছু হলেই সেটাকে জিনের নাম দিয়ে পার করানো যাবে না। কারণ এসব পরিত্যাক্ত এলাকায় অনেকে অবৈধ কাজ চলে এবং এসবের সাথে জড়িত লোকেরা মানুষকে দূরে রাখতে নানাভাবে ভয় দেখায়।
সুতরাং ভূত বলে যদি কিছু থাকে সেটা হচ্ছে জিন। ভূত যা যা করে তার সবগুলোই করে খারাপ জিনেরা। এই জিনেরা মানুষের আগে থেকেই আছে বলে তাদের নিয়ে মানুষ শুরু থেকেই নানারকম গল্প তৈরি করে, যা যুগে যুগে মুখে মুখে নানা শাখা গজিয়ে ভূত, প্রেত বা অন্য নাম নিয়ে নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু সব কিছুর মূলে আছে জিন। যদি জিনেবিশ্বাস থাকে তবে ভূতেও করতে হবে কেননা দুটোই এক জিনিস। সুতরাং ভূত অবশ্যই আছে।
ভূতের অস্তিত্ব বিশ্বাসের মাধ্যমে প্রমাণ করা গেল, যদিও পুরোটাই ধর্মীয় বিশ্বাস(বেশিরভাগটাই ইসলামিক) দিয়ে, জিনের মাধ্যমে। তাহলে যারা ইসলামিক বিশ্বাসে বিশ্বাসী না তারা কি করবেন? সকল ধর্মেই জিনের মত কিছু ক্রিয়েচার আছে, সেটাকেই ভূত বলে বিশ্বাস করতে হবে যদি আপনি আপনার ধর্মে পরিপূর্নরূপে বিশ্বাস করে থাকেন। আর যারা ধর্মেই বিশ্বাসী না তাদের জন্য কিছুই নেই কারণ আগেই বলেছি প্রমাণ শুধু বিশ্বাসের মাধ্যমেই সম্ভব। এখনো কোন সমীকরণ জানি না আমরা জিন বা ভূত(যেটাই বলুন) প্রমাণ করার।
কিন্তু যদি বলা হয় জিনের আক্রমণ এবং এর হাত থেকে মুক্তিরউপায় কি। জিন মানুষকে আক্রমন করে এটা সত্য এবং বিভিন্ন ব্যাবস্থা গ্রহন করে তাদের তাড়ানো যায় এটাও সত্য। আলোচনা এখন পুরোটাই ধর্মীয় এবং অনেকটাই ইসলামিক বিশ্বাসের উপর নির্ভরশীল হয়ে যাবে।
হরর মুভি বা গল্পে দেখা যায়(যেগুলো বাস্তব বলে প্রচলিতসেগুলোর কথাই বলছি অবশ্যই) যার উপর ভর করে কোন কিছু সে অনেক আগের কথা জানে বা অনেক সময় ভবিষ্যতের অনেক কিছু বলে দেয়। কিভাবে? জিনদের একটা দল আগে আকাশে উঠে ফেরেশতাদের কথা শুনত সেখানে তারা অনেক গোপন ব্যাপার জেনে যেত আর পরে সেটা সহ নিজেদের কিছু কথা লাগিয়ে প্রচার করত। আর প্রত্যেক মানুষের সাথে একজন শয়তান থাকে, এটা সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমানিত(সহিহ মুসলিম বুক ৩৯ হাদিস ৬৭৫৭)। আর এই শয়তান আক্রমণকারী জিনকে সাহায্য করবে এটা স্বাভাবিক। ফলে দুই শয়তানের মিলিত আক্রমণে আক্রান্ত ব্যাক্তির মুখ দিয়েএসব কথা বের হয়। এতে অনেকেই তার উপর ভক্তি প্রকাশ করে এবং শয়তানের উদ্দেশ্য সফল হয়- মানুষকে সৃস্টিকর্তা থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। একই সাথে যাকে আক্রমণ করে তার মধ্যে অস্বাভাবিক শক্তির সঞ্চার করে আক্রমণকারী জিন।
কিন্তু কিভাবে বোঝা যাবে যে জিনের আক্রমণ হয়েছে? জিনের আক্রমনের সাথে মৃগী রোগের খুব ভালো সম্পর্ক আছে। মৃগী রোগী দেখলেই অনেক জায়গায় জিনধরেছে বলে ধরে নেয়া হয় এবং নানা রকম ঝাড়ফুক করানো হয়। কিন্তু মৃগী রোগী মানেই কি জিন ভরা করা ব্যাক্তি? তার আগে জেনে নেয়া যাক মৃগী রোগ কি।
মেডিকেল সাইন্সে মৃগী রোগ নিউরোলজি ডিসঅর্ডার জনিত একটি রোগ। আমাদের ব্রেইনের কোন একটি অংশ যদি কনট্রোলের বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত নিউরনাল সিগনাল তৈরী করতে শুরু করে তখন, অনিয়ন্ত্রিত খিচুনী হয়, একে বলে মৃগী রোগ।
মৃগী রোগ অনেকগুলো কারণে হতে পারে। এদেরকে প্রাইমারী এবং সেকেণ্ডারী দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। যে সকল ক্ষেত্রে এপিলেপসির কারণ হিসেবে ব্রেইনের কোন ফিজিক্যালকারণ খুঁজে পাওয়া যায় না, সে সকল ক্ষেত্রে তাদেরকে প্রাইমারী বলেঅভিহিত করা হয়। আর কারণ পাওয়া গেলে সেকেণ্ডারী বলে অভিহিত করা হয়।
প্রাইমারী সাধারণত শিশুকিশোর বয়সে শুরু হয়। সেকেন্ডারী অধিকাংশ ক্ষেত্রে এডাল্ট বয়সে গিয়ে হয়। সেকেণ্ডারীর কারনের মধ্যে কয়েকটি হলো:
১. মাথায় রক্ত ক্ষরণবা রক্ত সঞ্চালনের অনুপস্তিতি তথা স্ট্রোক
২. ব্রেইন টিউমার
৩. রক্তে লবনের(বিশেষত সোডিয়াম) কম বেশী হওয়া
৪. রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ এত মাত্রায় কমে যাওয়া যে ব্রেইনে অক্সিজেন যথেষ্ট পরিমানে কমে যায়।
মৃগী রোগে যে নিউরোট্রান্সমিটারগুলো বেশী বেশী ক্ষরণ হয় ওগুলোরবিপরীতে ঔষধ তৈরী করা হয়েছে এবং এগুলো ব্যবহার করে অধিকাংশ রোগীর খিচুনী নিয়ন্ত্রনেআনা যায়। তবে ব্যাক্তি ভেদে ঔষধেরপরিমান বিভিন্ন লাগতে পারে, যেটা ধীরে ধীরে বাড়াতে হয়।
মৃগী রোগীর অস্বাভাবিক খিঁচুনি অনেকের জন্য ভয়ের হয়ে যায়এবং একে অনেকেই জিনের আক্রমণ মনে করে অনেক কিছু করে থাকে। কিন্তু এটা জেনে রাখা জরুরী যে মৃগী রোগ বা খিঁচুনি মানেই জিনের আক্রমণ না। এটা উপরের কোন কারণেও হতে পারে। জিনে আক্রমণ করলে এগুলো হতে পারে কিন্তু আরো কিছু ব্যাপার এর সাথে যোগ হবে। ধর্মীয় যেকোন ব্যাপার তাকে বিকর্ষণ করবে, ভয় পাবে সেগুলোকে। সিনেমা বা গল্পগুলোতে নিশ্চয় দেখেছেন/পড়েছেন পবিত্র পানি বা ক্রুশ দিয়ে ভয় দেখায়। ঠিক এরকম হবে যদি আজান দেয়া হয়, কোরান পাঠ করা হয় বা জমজমের পানি ছিটানো হয়।
যদি নিশ্চিত হওয়া যায় যে এটা জিনের আক্রমণ তখনই কেবল রুকাইয়া(Exorcism) করতে হবে। কিন্তু যে কেউ এর অধিকার রাখে না। এর জন্য অবশ্যই একজন প্রাকটিসিং মুসলিম ব্যাক্তি দরকার। গ্রাম অঞ্চলে ওঝা বা যাকে তাকে দিয়ে করানো হয় এবং না বুঝেই তারা পরিস্থিতি অনেক খারাপ করে ফেলে। যে রুকাইয়া করবে তিনি একজন ইমাম বা সেরকম হলে ভালো হয়। তাকে এটা বিশ্বাস করতে হবে যে তিনি যা করছেন তার কোনটাই নিজের না, এটা আল্লাহ সাহায্য করছেন। যা পড়বেন তা আরবিতে হতে হবে, কোরান ছাড়া অন্য কোথাও থেকে কিছু পাঠ করা যাবেনা। নিজের বানানো মন্ত্র পড়া যাবে না। একমাত্র আল্লাহর বানীর উপর ভরসা করতে হবেএবং সবচেয়ে বড় ব্যাপার তার ধৈর্য্য থাকতে হবে।
রুকাইয়ার প্রসেস অনেক বড়। জমজমের পানি লাগে, কোরানের কিছু আয়াত আছে বিস্তারিত এখানে বলছি না। এটা ইসলামিক নিয়ম। খ্রিস্টান কেউ করতেচাইলে তাকে স্থানীয় বিশপের অনুমতি নিতে হয়। ক্রুশ লাগে, পবিত্র পানি লাগে(জর্ডান নদীর পানি যেখানে ঈসা(আ) কে ব্যাপটাইস্ট করা হয়েছিল বলা হয়)। এছাড়া বিভিন্ন ওঝা বাতান্ত্রিকরাও কিন্তু সফলভাবে জিন(বা অন্য যাই বলুন) তাড়াতে পারে তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে।
***এবার যা বলব তা পুরোটাই ইসলামিক। চাইলে এটিসহ পরের তিনটি প্যারা স্কিপ করতে পারেন। আগের প্যারাতেই বললাম খ্রিস্টান এক্সোরসিস্ট বা ওঝারাও সফল হচ্ছে জিন বা ডেমন তাড়াতে। কিন্তু কিভাবে? যেখানে কোরানের বাণী ছাড়া অন্য কারো পারার কথা না তারা কিভাবে হচ্ছে? উত্তর হচ্ছে কারন শয়তান অনেক সময় সেটাই চায়। ইসলামে এসব ক্ষেত্রে কোরানের বানী ছাড়া অন্য কোন কিছুর সাহায্য নেয়া শিরক। আর শয়তান তো এটাই চায়, মানুষ যেন শিরক করে।
যখন তারা দেখবে ক্রুশ শয়তানকে তাড়ায় দিচ্ছে তারা ক্রুশের প্রতি ভক্তি প্রকাশ করবে। যখনদেখবে তান্ত্রিকদের মন্ত্র শয়তানকে দূর করছে তখন অনেকেই তার অনুসারী হবে। আর এসবমন্ত্র ইসলামে ডার্ক ম্যাজিক কারণ এর কোনটাই আল্লাহর বানী না, এগুলা মানুষের নিজের বানানো। তাই এটা শিরক। এভাবে শয়তান চায় মানুষকে আল্লাহ হতে দূরে সরে গিয়ে এসব শিরকি কাজে লিপ্ত হয়। তারা সফল হচ্ছে কিন্তু তারা ডার্ক ম্যাজিক ব্যাবহার করছে।
এই নোটে ম্যাজিক নিয়ে তেমন লেখার ইচ্ছা নেই। ডার্ক ম্যাজিক শয়তানের খুব প্রিয় একটা অস্ত্র।ডার্ক ম্যাজিক চর্চা করা মানে হচ্ছে সৃস্টিকর্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা। আরশয়তান ঠিক এই কাজটাই করায় তার প্রিয় খারাপ জিন বাহিনীর দ্বারা।***
সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া The Conjuring সিনেমার দুইজন প্রধান চরিত্র-এডওয়ার্ড এবং লোরেইন ওরায়েন খুব বিখ্যাত এক্সোরসিস্ট। এড মারা গেলেও লোরেইন এখনো বেঁচে আছে এবং কাজ করে যাচ্ছে। তাদের দুই জনের মিলিত কাজ প্রায় কয়েক হাজার। এর মধ্যে এমিটিভিলের কাহিনি সবচেয়ে জনপ্রিয়।
একটা অবাক করা ব্যাপার পেলাম এই নোট লেখতে গিয়ে, মাদার তেরেসাকে একবার এক্সোরসিজম করানো হয়েছিল, কলকাতার আর্চবিশপ হেনরি ডি’সুজা মাদার তেরেসার মধ্যে কিছু অস্বাভাবিক ব্যাপার দেখে তার এক্সোরসজিম করান। আরেকটা মজার ব্যাপার, " Ghost Einstein" দিয়েগুগলে সার্চ দিলে প্রায় ৬ মিলিয়ন(!!!!!) এনট্রি আসে। অনেকেই E=mc2 সুত্রকে দিয়ে ভূত প্রমাণ করতে চায়।তাদের কথা মানুষ মারা যাবার পর তার আত্মা এনার্জি হিসেবে শরীর থেকে চলে যায়। আর এই এনার্জি হচ্ছে ভূত। কিন্তু আমরা বাস্তুতন্ত্র থেকে জানি মারা যাবার পর এনার্জি শরীরেই থাকে আর সেটা পরে নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে ঠিক যেভাবে সেগুলো শরীরে এসেছিল। তবুও অনেকেই অনেক থিওরি দিচ্ছে, দিতেই থাকবে।
ভূত বা জিন নাই বলা হোক না কেন তা অবশ্যই আছে, তাকে তাড়ানোর উপায় ও আছে অনেকগুলো। কিন্তু মাঝে মধ্যে কিছু জিন অনেক বেশি শক্তিশালী থাকে তাদের তাড়ানো যায় না সহজে। এক্ষেত্রে এটাকে মানুষের সীমাবদ্ধতা বলেই ধরে নিতে হবে। পৃথিবীতে সব রহস্যের সমাধান নেই, কিছু রহস্য সবসময় রহস্যই থেকে যাবে, মানুষএগুলোকে সমাধান করতে পারবে না।সব রহস্যের সমাধান হয়ে গেলে মানুষের হাতে আর কিছু থাকবে না।
The true misery is if all the questions are solved cos then there is nothing left to ask।
একটি সত্যি ঘটনা।।
অনেকেই আছেন যারা ভুত বিশ্বাস করেন আবার অনেকে করেন না। তার মানে কি এই যে, তারা ভুত দেখলে ভয় পাবেন না? আমি বাজি রেখে বলতে পারি, যারা বলে বেড়ান যে তারা খুব সাহসী, জিন, ভুত কিছুই তারা ভয় পায়না সেই তারাই জিন/ভুত দেখলে আরও বেশি ভয় পাবেন। আজ আমি যেই ঘটনা বলতে যাচ্ছি সেটি যেমন নিদারুন সত্যি, তেমনি ভয়াবহ। ঘটনাটি ঘটেছিল বহু বছর আগে। তখন ছিল ব্রিটিশ আমল অর্থাৎ দাদা-নানার আমলের ঘটনা। সেই সময় কিছু কিছু তরুন যারা মোটামুটি শিক্ষিত ছিল এবং নিজেদের খুবই সাহসী ভাবত। আর ভাবতো জিন/ভুত হচ্ছে ভীরুদের মনের দুর্বল কল্পনা। তো একদিন তাদের অন্যান্য বন্ধুদের সাথে তাদের এক সাহসী বন্ধুর তর্ক লেগে গেল। জিন/ভুত যে আছে এটা সে এটা সে একদমই মানতে নারাজ। এটা শুনে তার অন্যান্য বন্ধুরা তার উপর প্রচণ্ড খেপে গেল। আর বলল, তুই যে জিন/ভুতের ভয় পাস না তার প্রমাণ করতে পারবি? একথা শুনে সে বলল, আমি কি তোদের মত ভীতুর ডিম নাকি? আমাকে কি করতে হবে বল? তার বন্ধুরা বলল, তুই যদি আমাবস্যায় মাঝ রাতে একা শ্মশানে গিয়ে একটা কাঁচা বাঁশ মাটিতে গেড়ে আসতে পারিস, তবে বুঝব যে তুই খুব সাহসী। একথা শুনে সে বলল, ঠিক আছে তাই হবে।
দেখতে দেখতে আমাবস্যার রাত চলে এল। শ্মশানে যাওয়ার আগে তার সব বন্ধুরা তাকে বার বার করে নিষেধ করল। তোর ভয় লাগলে যাওয়ার দরকার নেই। কিন্তু সে কিছুতেই শুনল না। উল্টো সবাইকে বলতে শুরু করল, তোরা কি মনে করেছিস আমি ভয় পেয়েছি? তোরা সবকটা এক একটা ভীতুর ডিম। তার বন্ধুদের এইভাবে বিদ্রুপ করে সে চলে যায় শ্মশানের উদ্দেশ্যে। হাতে তার একটি কাঁচা বাঁশ। একসময় সে হাঁটতে হাঁটতে শ্মশানের খুব কাছে চলে যায়। তখন গ্রামে কোন বিদ্যুৎ ছিল না আর চারিদিক ছিল গভীর অন্ধকার। এতটা অন্ধকার যে, নিজের শরীর পর্যন্ত ভাল করে দেখা যায়না। এবার তার শরীরে একটু একটু ভয় ঢুকতে শুরু করল। কিন্তু পেছনে ফিরে যাবার কোন উপায় নেই। কেননা তাহলে বন্ধুদের কাছে সে মুখ দেখাতে পারবে না। তাই সে মনে মনে ভাবল, শ্মশানে গিয়ে কোনোরকমে বাঁশটা গেড়ে দ্রুত বাড়িতে ফিরে আসবে। সে শ্মশানের ভেতর প্রবেশ করল। এবার তার মনের মধ্যে ভয় পুরপুরি ভাবে গেড়ে বসলো। একেই আমাবস্যার রাত, তার উপর আবার শ্মশান ঘাট। ভয়ে তার বুক ধড়ফড় করতে লাগল। তার বার বার মনে হতে লাগল, এইবুঝি কিছু একটা এসে পেছন থেকে তার ঘাড় মটকে ধরবে। এবার সে বাঁশ গাড়তে শুরু করল। সে বাঁশটির প্রায় ৮-১০ ইঞ্চির মত মাটিতে গেথে ফেলল। সে মনে মনে ভাবল, এবার সে সবাইকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিবে, যে জিন/ভুত বলতে কিছুই নেই। আর সে কত সাহসী। বাঁশ গারা শেষ। এবার তার বাড়ি ফিরার পালা। কিন্তু যেই সে উঠে দাঁড়িয়ে এক পা সামনে বাড়াল, তার মনে হল কে যেন তাকে মাটির দিকে টানছে। আমাবস্যার এই মাঝরাতে শ্মশানে এসে সে যে চুল করেছে, তার মাশুল তাকে দিতেই হবে। এতদিন যে জিনিসটাকে সে অগ্রাহ্য করত, ভীরুদের কল্পনা বলে হাসত, সেই কল্পনা আজ তার কাছে আজ দেখা দিল। তাও আবার অদৃশ্য হয়ে। এইরকম প্রচণ্ড চাপ তার ভেতরে সহ্য করতে পারল না। এবং ভয়েরচোটে সেখানেই সে হার্টফেল করে মারা গেল। পরদিন সকালে তার বন্ধুরা তার বাড়িতে এসে দেখে সে বাড়িতে নেই, এবং সাথে সাথে তারা সেই শ্মশানে যায়। আর সেখানে গিয়ে তারা দেখতে পায় তাদের সেই বন্ধু মৃত অবস্থায় পরে আছে। তারা আরও দেখল যে সেই বাঁশটা তার বন্ধুর ধুতি সহ মাটিতে গারা অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু অন্ধকারের কারনে সে তা লক্ষ করেনি। তাই সে উঠে আসার সময় বাঁশের সাথে ধুতি আটকে যাওয়ায় তার মনে হয়েছিল, কেও তাকে টেনে ধরেছিল। আর প্রচণ্ড ভয়ের কারনে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
ভৌতিকতা-বাস্তব নাকি কল্পনা?
ভূত, পেত্নি, প্রেতাত্মা বা এগুলোর মত যা কিছু আছে গোটাবিশ্বে খুব জনপ্রিয়। হাজার হাজার গল্প, উপন্যাস, সিনেমা, নাটক, ডকুমেন্টারি আছে ভূত প্রেত নিয়ে। কোনটায় দেখায় এসবই কল্পনা, মানুষের মস্তিষ্কে বিভিন্ন ক্যামিকেলের খেলায় এসবের সৃষ্টি আবার অনেক সময় দেখায় বাস্তব ঘটনার উপর নির্মিত আবার অনেক সময় দর্শক/পাঠকের উপর সিদ্ধান্ত নেবার ভার দিয়ে শেষ করে দেয়। “এখন বিজ্ঞানের যুগ, ভূত বলে কিছু নেই”-খুব প্রচলিত একটা কথা। তাহলে বাস্তব ঘটনার উপর নির্ভর করে এসব গল্পবা সিনেমা কিভাবে হচ্ছে? সত্যি কি ভূত বলে কিছু আছে নাকি সবই মানুষের কল্পনা?উত্তর এক কথায় দেয়া সম্ভব না।
ভূত ব্যাপারটাকে নানা জায়গায় নানাভাবে বর্ণনা করা আছে। কিন্তু সবগুলোই সম্ভবত একই জিনিস, নানান ভাষায়, নানান সমাজে নানা নামে পরিচিত হয়েছে। কিন্তু ভালোমত খেয়াল করলে দেখা যাবে সবগুলোই আসলে একই জিনিস। ভূত বলে যা কল্পনা করা হয় বা যা আছে তার গল্প বা কাহিনী অনেক আগে থেকেই আছে। কিন্তু আসলেই কি আছে এমন কিছু?
বিজ্ঞান এসবের উত্তর দেয় এক কথায়-নেই। বিজ্ঞান অদৃশ্যে অবিশ্বাসী তা না, হলে ব্লাকহোল বা ডার্ক ম্যাটার বলে কিছু থাকত না। কিন্তু বিজ্ঞান অদৃশ্যে বিশ্বাসের জন্য চায় একটা সমীকরণ। বিজ্ঞান সমীকরণ দিয়ে প্রমাণ করেছে ব্লাকহোল আছে তাই আছে। কিন্তু ভূতের কোন সমীকরণ নেই তাই বলে নেই। কোনদিন যদি সমীকরণ পেয়ে যায় তাহলে বলবে আছে, তার জন্য হয়ত কেউ নোবেল প্রাইজও পেয়ে যেতে পারে।
কিন্তু ধর্ম এবং প্রাচীন সভ্যতাগুলো কিন্তু এই ব্যাপারে খুব সরব। ধর্মের একটা মূল হচ্ছে অদৃশ্যে বিশ্বাস। বিভিন্ন ধর্মে ভূত বা অশরীরীরা আছে এমন অনেক কথা আছে। যারা ধর্মে অবিশ্বাসী তাদের জন্য পরের কথাগুলো কোন কাজে আসবে না কারণ আমি ভূতের প্রমাণ দেব “বিশ্বাস” এর উপর ভিত্তি করে, বিশেষ করে সেমেটিক ধর্মের বিশ্বাসের উপর।
ভূতের ইতিহাস অনেক পুরনো। প্রাচীন মিশর,গ্রিস, ভারত, ব্যাবিলনের নানা রুপকথায় এদের পাওয়া যায়। সকল ধর্মেই পাওয়া যায় বিভিন্ন অশরীরির কথা। এরা ভিন্ন নামে পরিচিত হলেও সবার মধ্যে একটা বড় মিল হচ্ছে এরা সৃস্টিকর্তার বিরুদ্ধে কাজ করে এবং মানুষের ক্ষতি করে। প্রাচীন সভ্যতাগুলোর বেশিরভাগ ছিল বহুঈশ্বরবাদী, আর এসব সভ্যতায় ঈশ্বর আর শয়তান আলাদা কিছু ছিল না।উভয়কেই তারা পূজা করত। কাউকে শ্রদ্ধায় আবার কাউকে ভয়ে। অপদেবতা হিসেবে পরিচিতদের সন্তুষ্ট রাখতে নানা সময় বলি দেয়া হত, নরবলী দেবার ঘটনাও অনেক প্রচলিত। এখনো আফ্রিকার অনেক জায়গায় এসব চালু আছে।
সেমেটিক ধর্মগুলোতে সৃস্টিকর্তা ও শয়তান আলাদা, এখানে শয়তানের উপাসনা করা হয় না বরং শয়তানের হাত থেকে বাঁচতে সৃস্টিকর্তাকেই উপাসনা করা হয়। ধর্মগুলোর মধ্যে ইসলাম এবং খ্রিস্টান শয়তান এবং মানুষের উপর তার প্রভাবের ব্যাপারে বেশ ব্যা্পক আলোচনা করে, যা এই লেখার মূল উপজীব্য। কিন্তু আব্রাহামিক ধর্মের মধ্যে ইহুদিদের মধ্যে বর্তমানে শয়তানের প্রতক্ষ্য কোন আলোচনা নেই যদিও কিছু রাবি(ইহুদি আলেম) বলেন যে শয়তান আছে কিন্তু খ্রিস্টান বা ইসলামের মত ইহুদীদের কাছে শয়তান এবং তার প্রভাব কখনোই গুরুত্ব পায় নাই।
সেমেটিক ধর্মের বাইরে বড় ধর্মগুলোর মধ্যে হিন্দু ধর্মে শয়তান আছে অশুর, ভূত, পিশাচ এসব নামে। বিভিন্ন গল্পে এরা নানারকম রূপধারণ করে মানুষের ক্ষতি করে বলেও উল্লেখ আছে। এছাড়া বৌদ্ধ ধর্মে মারা নামে এক চরিত্র আছে যাকে শয়তানের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। কথিত আছে মারা গৌতম বুদ্ধের কাছে সুন্দরী নারীর সাজে এসেছিল তার ধ্যান ভঙ্গ করতে। মারা মানুষকে তার সৎ পথ থেকে দূরে সরিয়ে খারাপের দিকে নিয়ে যায়।
খ্রিস্টান এবং ইসলাম উভয় ধর্মমতেই অশরীরীরা মানুষকে আক্রমণ করে তার নিয়ন্ত্রন নিয়ে নিতে পারে, কম্পিউটার হ্যাক করে তার নিয়ন্ত্রণ নেবার মত। উভয় ধর্মেই শয়তানের কনসেপ্ট অনেকটাই এক। উভয় ধর্মেই ডেভিলের নাম শয়তান,ইসলামে তার আরেক নাম ইবলিস, খ্রিস্টান ধর্মে লুসিফার নামেও পরিচিত। শয়তান একা নয় বরং তার একটা বাহিনী আছে যাদের নিয়ে সে মানুষের ক্ষতি সাধন করে।
আর এই বাহিনী থেকেই চলে আসে আরেক অশরীরীর যাকে বলা হয় জিন। খ্রিস্টান ধর্মেও একই রকম এক সৃষ্টির কথা আছে যদিও ল্যাটিন বা ইংরেজিতে তাকে ডেভিল বলা হয়। তবে বাইবেলের আরবি অনুবাদের বেশ কয়েকটিতে “familiar spirit” এর অনুবাদ করা হয়েছে জিন(Leviticus 19:31, Lev 20:6, 1 Samuel 28:3, 1 Sa 28:9, 1Sa 28:7 সহ আরো অনেক জায়গায়)। এছাড়াও ইসলামপূর্ব যুগেও জিন নামে একধরণের সৃষ্টির কথা প্রচলিত ছিল। আর জিনদের একটা অংশ ইবলিশের বাহিনীর অংশ।
ইসলামিক বিশ্বাসে জিনদের মধ্যেও নানা মত আছে, তাদের মধ্যেও মানুষের মতই ভালো খারাপ আছে। আর এই খারাপ জিনেরা হচ্ছে ইবলিশের সাহায্যকারী। আর এই জিনেরাই মানুষকে আক্রমণ করতে পারে, তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে,যাকে বলা যেতে পারে Possession. তাফসির এবং হাদিস ঘাটলে জিনের কিছু ঘটনা পাওয়া যায়। কুরানে জিনদের নিয়ে একটি সূরাই আছে, সুরা জিন,৭২ নম্বর সূরা। জিন মানুষকে আক্রমন করে এবং জিন তাড়ানোর ব্যাপারেও বলা আছে(যাকে আমরা Exorcism এর সাথে তুলনা করতে পারি,ইসলামে একে বলে রুকাইয়া)। বাইবেলেও অশরীরী তাড়ানোর ব্যাপারে বেশ কিছু কথা আছে আরএদের আরবি অনুবাদে জিন বলা হয়েছে।
কিন্তু জিন সত্যি আছে কিনা এটা বিজ্ঞান প্রমান করতে পারেনা ভূত আছে কিনা তার মতই। কিন্তু মুসলমানরা বিশ্বাস করে আছে, খ্রিস্টানরাও একই রকম ক্রিয়েচারে বিশ্বাস করে। অন্যান্য ধর্মেও জিনের মতই ক্রিয়েচার আছে। কিন্তু জিন মানেই কি খারাপ আর মানুষকে আক্রমণ করে বেড়ায়? না, সব জিন খারাপনা। তাদের মধ্যেও ভালো খারাপ আছে। আর ভূতের সকল বৈশিষ্ট্যই খারাপ জিনের মধ্যে দেখা যায়। এরা মানুষকে ভালো কাজ থেকে দূরে রাখে, খারাপের দিকে নিয়ে যায় এবং অনেক সময়মানুষকে সরাসরি আক্রমণ করে যেমনটা হরর মুভি বা গল্পে দেখা যায়।
জিন সবচেয়ে বিখ্যাত মনে হয় আলাদিনের গল্পে। সেই জিনের কথা আমরা সবাই জানি, ছোটতে কমিকবা কার্টুনে প্রায় সবাই দেখেছি। সেই জিন থাকে এক প্রদীপের ভিতর, প্রদীপে ঘষা দিলেইবের হয়ে আসে। কিন্তু সত্যিকারের জিনের ব্যাপারে খুব বেশি তথ্য পাওয়াযায় না। একমাত্র কিছু ইসলামিক সোর্স থেকে এদের সম্পর্কে অল্প কিছু তথ্য জানা যায়।এদের থাকার জায়গা হিসেবে বলা হয়ে থাকে পরিত্যাক্ত বাড়ি, নোংরা জলাশয়, টয়লেট এমনকি মানুষের সাধারণ বাড়ি। তবে সাধারণত মানুষ বর্জিত এলাকাগুলোই এদের বেশি প্রিয়। আর তারা বেশিরভাগ সময় চায় না কেউ তাদের বিরক্ত করুক। আর একারণেই পরিত্যাক্ত বাড়ি বা এলাকায় অনেক সময় “ভৌতিক” ঘটনার কথা শোনা যায় যা হয়ত জিন করে থাকে। কিন্তু কিছু হলেই সেটাকে জিনের নাম দিয়ে পার করানো যাবে না। কারণ এসব পরিত্যাক্ত এলাকায় অনেকে অবৈধ কাজ চলে এবং এসবের সাথে জড়িত লোকেরা মানুষকে দূরে রাখতে নানাভাবে ভয় দেখায়।সুতরাং ভূত বলে যদি কিছু থাকে সেটা হচ্ছে জিন। ভূত যা যা করে তার সবগুলোই করে খারাপ জিনেরা। এই জিনেরা মানুষের আগে থেকেই আছে বলে তাদের নিয়ে মানুষ শুরু থেকেই নানারকম গল্প তৈরি করে, যা যুগে যুগে মুখে মুখে নানা শাখা গজিয়ে ভূত, প্রেত বা অন্য নাম নিয়ে নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু সব কিছুর মূলে আছে জিন। যদি জিনেবিশ্বাস থাকে তবে ভূতেও করতে হবে কেননা দুটোই এক জিনিস। সুতরাং ভূত অবশ্যই আছে।
ভূতের অস্তিত্ব বিশ্বাসের মাধ্যমে প্রমাণ করা গেল, যদিও পুরোটাই ধর্মীয় বিশ্বাস(বেশিরভাগটাই ইসলামিক) দিয়ে, জিনের মাধ্যমে। তাহলে যারা ইসলামিক বিশ্বাসে বিশ্বাসী না তারা কি করবেন? সকল ধর্মেই জিনের মত কিছু ক্রিয়েচার আছে, সেটাকেই ভূত বলে বিশ্বাস করতে হবে যদি আপনি আপনার ধর্মে পরিপূর্নরূপে বিশ্বাস করে থাকেন। আর যারা ধর্মেই বিশ্বাসী না তাদের জন্য কিছুই নেই কারণ আগেই বলেছি প্রমাণ শুধু বিশ্বাসের মাধ্যমেই সম্ভব। এখনো কোন সমীকরণ জানি না আমরা জিন বা ভূত(যেটাই বলুন) প্রমাণ করার।
কিন্তু যদি বলা হয় জিনের আক্রমণ এবং এর হাত থেকে মুক্তিরউপায় কি। জিন মানুষকে আক্রমন করে এটা সত্য এবং বিভিন্ন ব্যাবস্থা গ্রহন করে তাদের তাড়ানো যায় এটাও সত্য। আলোচনা এখন পুরোটাই ধর্মীয় এবং অনেকটাই ইসলামিক বিশ্বাসের উপর নির্ভরশীল হয়ে যাবে।
হরর মুভি বা গল্পে দেখা যায়(যেগুলো বাস্তব বলে প্রচলিতসেগুলোর কথাই বলছি অবশ্যই) যার উপর ভর করে কোন কিছু সে অনেক আগের কথা জানে বা অনেক সময় ভবিষ্যতের অনেক কিছু বলে দেয়। কিভাবে? জিনদের একটা দল আগে আকাশে উঠে ফেরেশতাদের কথা শুনত সেখানে তারা অনেক গোপন ব্যাপার জেনে যেত আর পরে সেটা সহ নিজেদের কিছু কথা লাগিয়ে প্রচার করত। আর প্রত্যেক মানুষের সাথে একজন শয়তান থাকে, এটা সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমানিত(সহিহ মুসলিম বুক ৩৯ হাদিস ৬৭৫৭)। আর এই শয়তান আক্রমণকারী জিনকে সাহায্য করবে এটা স্বাভাবিক। ফলে দুই শয়তানের মিলিত আক্রমণে আক্রান্ত ব্যাক্তির মুখ দিয়েএসব কথা বের হয়। এতে অনেকেই তার উপর ভক্তি প্রকাশ করে এবং শয়তানের উদ্দেশ্য সফল হয়- মানুষকে সৃস্টিকর্তা থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। একই সাথে যাকে আক্রমণ করে তার মধ্যে অস্বাভাবিক শক্তির সঞ্চার করে আক্রমণকারী জিন।
কিন্তু কিভাবে বোঝা যাবে যে জিনের আক্রমণ হয়েছে? জিনের আক্রমনের সাথে মৃগী রোগের খুব ভালো সম্পর্ক আছে। মৃগী রোগী দেখলেই অনেক জায়গায় জিনধরেছে বলে ধরে নেয়া হয় এবং নানা রকম ঝাড়ফুক করানো হয়। কিন্তু মৃগী রোগী মানেই কি জিন ভরা করা ব্যাক্তি? তার আগে জেনে নেয়া যাক মৃগী রোগ কি।
মেডিকেল সাইন্সে মৃগী রোগ নিউরোলজি ডিসঅর্ডার জনিত একটি রোগ। আমাদের ব্রেইনের কোন একটি অংশ যদি কনট্রোলের বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত নিউরনাল সিগনাল তৈরী করতে শুরু করে তখন, অনিয়ন্ত্রিত খিচুনী হয়, একে বলে মৃগী রোগ।
মৃগী রোগ অনেকগুলো কারণে হতে পারে। এদেরকে প্রাইমারী এবং সেকেণ্ডারী দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। যে সকল ক্ষেত্রে এপিলেপসির কারণ হিসেবে ব্রেইনের কোন ফিজিক্যালকারণ খুঁজে পাওয়া যায় না, সে সকল ক্ষেত্রে তাদেরকে প্রাইমারী বলেঅভিহিত করা হয়। আর কারণ পাওয়া গেলে সেকেণ্ডারী বলে অভিহিত করা হয়।
প্রাইমারী সাধারণত শিশুকিশোর বয়সে শুরু হয়। সেকেন্ডারী অধিকাংশ ক্ষেত্রে এডাল্ট বয়সে গিয়ে হয়। সেকেণ্ডারীর কারনের মধ্যে কয়েকটি হলো:
১. মাথায় রক্ত ক্ষরণবা রক্ত সঞ্চালনের অনুপস্তিতি তথা স্ট্রোক
২. ব্রেইন টিউমার
৩. রক্তে লবনের(বিশেষত সোডিয়াম) কম বেশী হওয়া
৪. রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ এত মাত্রায় কমে যাওয়া যে ব্রেইনে অক্সিজেন যথেষ্ট পরিমানে কমে যায়।
মৃগী রোগে যে নিউরোট্রান্সমিটারগুলো বেশী বেশী ক্ষরণ হয় ওগুলোরবিপরীতে ঔষধ তৈরী করা হয়েছে এবং এগুলো ব্যবহার করে অধিকাংশ রোগীর খিচুনী নিয়ন্ত্রনেআনা যায়। তবে ব্যাক্তি ভেদে ঔষধেরপরিমান বিভিন্ন লাগতে পারে, যেটা ধীরে ধীরে বাড়াতে হয়।
মৃগী রোগীর অস্বাভাবিক খিঁচুনি অনেকের জন্য ভয়ের হয়ে যায়এবং একে অনেকেই জিনের আক্রমণ মনে করে অনেক কিছু করে থাকে। কিন্তু এটা জেনে রাখা জরুরী যে মৃগী রোগ বা খিঁচুনি মানেই জিনের আক্রমণ না। এটা উপরের কোন কারণেও হতে পারে। জিনে আক্রমণ করলে এগুলো হতে পারে কিন্তু আরো কিছু ব্যাপার এর সাথে যোগ হবে। ধর্মীয় যেকোন ব্যাপার তাকে বিকর্ষণ করবে, ভয় পাবে সেগুলোকে। সিনেমা বা গল্পগুলোতে নিশ্চয় দেখেছেন/পড়েছেন পবিত্র পানি বা ক্রুশ দিয়ে ভয় দেখায়। ঠিক এরকম হবে যদি আজান দেয়া হয়, কোরান পাঠ করা হয় বা জমজমের পানি ছিটানো হয়।
যদি নিশ্চিত হওয়া যায় যে এটা জিনের আক্রমণ তখনই কেবল রুকাইয়া(Exorcism) করতে হবে। কিন্তু যে কেউ এর অধিকার রাখে না। এর জন্য অবশ্যই একজন প্রাকটিসিং মুসলিম ব্যাক্তি দরকার। গ্রাম অঞ্চলে ওঝা বা যাকে তাকে দিয়ে করানো হয় এবং না বুঝেই তারা পরিস্থিতি অনেক খারাপ করে ফেলে। যে রুকাইয়া করবে তিনি একজন ইমাম বা সেরকম হলে ভালো হয়। তাকে এটা বিশ্বাস করতে হবে যে তিনি যা করছেন তার কোনটাই নিজের না, এটা আল্লাহ সাহায্য করছেন। যা পড়বেন তা আরবিতে হতে হবে, কোরান ছাড়া অন্য কোথাও থেকে কিছু পাঠ করা যাবেনা। নিজের বানানো মন্ত্র পড়া যাবে না। একমাত্র আল্লাহর বানীর উপর ভরসা করতে হবেএবং সবচেয়ে বড় ব্যাপার তার ধৈর্য্য থাকতে হবে।
রুকাইয়ার প্রসেস অনেক বড়। জমজমের পানি লাগে, কোরানের কিছু আয়াত আছে বিস্তারিত এখানে বলছি না। এটা ইসলামিক নিয়ম। খ্রিস্টান কেউ করতেচাইলে তাকে স্থানীয় বিশপের অনুমতি নিতে হয়। ক্রুশ লাগে, পবিত্র পানি লাগে(জর্ডান নদীর পানি যেখানে ঈসা(আ) কে ব্যাপটাইস্ট করা হয়েছিল বলা হয়)। এছাড়া বিভিন্ন ওঝা বাতান্ত্রিকরাও কিন্তু সফলভাবে জিন(বা অন্য যাই বলুন) তাড়াতে পারে তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে।
***এবার যা বলব তা পুরোটাই ইসলামিক। চাইলে এটিসহ পরের তিনটি প্যারা স্কিপ করতে পারেন। আগের প্যারাতেই বললাম খ্রিস্টান এক্সোরসিস্ট বা ওঝারাও সফল হচ্ছে জিন বা ডেমন তাড়াতে। কিন্তু কিভাবে? যেখানে কোরানের বাণী ছাড়া অন্য কারো পারার কথা না তারা কিভাবে হচ্ছে? উত্তর হচ্ছে কারন শয়তান অনেক সময় সেটাই চায়।ইসলামে এসব ক্ষেত্রে কোরানের বানী ছাড়া অন্য কোন কিছুর সাহায্য নেয়া শিরক। আর শয়তান তো এটাই চায়, মানুষ যেন শিরক করে।
যখন তারা দেখবে ক্রুশ শয়তানকে তাড়ায় দিচ্ছে তারা ক্রুশের প্রতি ভক্তি প্রকাশ করবে। যখনদেখবে তান্ত্রিকদের মন্ত্র শয়তানকে দূর করছে তখন অনেকেই তার অনুসারী হবে। আর এসবমন্ত্র ইসলামে ডার্ক ম্যাজিক কারণ এর কোনটাই আল্লাহর বানী না, এগুলা মানুষের নিজের বানানো। তাই এটা শিরক। এভাবে শয়তান চায় মানুষকে আল্লাহ হতে দূরে সরে গিয়ে এসব শিরকি কাজে লিপ্ত হয়। তারা সফল হচ্ছে কিন্তু তারা ডার্ক ম্যাজিক ব্যাবহার করছে।
এই নোটে ম্যাজিক নিয়ে তেমন লেখার ইচ্ছা নেই। ডার্ক ম্যাজিক শয়তানের খুব প্রিয় একটা অস্ত্র।ডার্ক ম্যাজিক চর্চা করা মানে হচ্ছে সৃস্টিকর্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা। আরশয়তান ঠিক এই কাজটাই করায় তার প্রিয় খারাপ জিন বাহিনীর দ্বারা।***
সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া The Conjuring সিনেমার দুইজন প্রধান চরিত্র-এডওয়ার্ড এবং লোরেইন ওরায়েন খুব বিখ্যাত এক্সোরসিস্ট। এড মারা গেলেও লোরেইন এখনো বেঁচে আছে এবং কাজ করে যাচ্ছে। তাদের দুই জনের মিলিত কাজ প্রায় কয়েক হাজার। এর মধ্যে এমিটিভিলের কাহিনি সবচেয়ে জনপ্রিয়।
একটা অবাক করা ব্যাপার পেলাম এই নোট লেখতে গিয়ে, মাদার তেরেসাকে একবার এক্সোরসিজম করানো হয়েছিল, কলকাতার আর্চবিশপ হেনরি ডি’সুজা মাদার তেরেসার মধ্যে কিছু অস্বাভাবিক ব্যাপার দেখে তার এক্সোরসজিম করান। আরেকটা মজার ব্যাপার, ” Ghost Einstein” দিয়েগুগলে সার্চ দিলে প্রায় ৬ মিলিয়ন(!!!!!) এনট্রি আসে। অনেকেই E=mc2 সুত্রকে দিয়ে ভূত প্রমাণ করতে চায়।তাদের কথা মানুষ মারা যাবার পর তার আত্মা এনার্জি হিসেবে শরীর থেকে চলে যায়। আর এই এনার্জি হচ্ছে ভূত। কিন্তু আমরা বাস্তুতন্ত্র থেকে জানি মারা যাবার পর এনার্জি শরীরেই থাকে আর সেটা পরে নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে ঠিক যেভাবে সেগুলো শরীরে এসেছিল। তবুও অনেকেই অনেক থিওরি দিচ্ছে, দিতেই থাকবে।
ভূত বা জিন নাই বলা হোক না কেন তা অবশ্যই আছে, তাকে তাড়ানোর উপায় ও আছে অনেকগুলো। কিন্তু মাঝে মধ্যে কিছু জিন অনেক বেশি শক্তিশালী থাকে তাদের তাড়ানো যায় না সহজে। এক্ষেত্রে এটাকে মানুষের সীমাবদ্ধতা বলেই ধরে নিতে হবে। পৃথিবীতে সব রহস্যের সমাধান নেই, কিছু রহস্য সবসময় রহস্যই থেকে যাবে, মানুষএগুলোকে সমাধান করতে পারবে না।সব রহস্যের সমাধান হয়ে গেলে মানুষের হাতে আর কিছু থাকবে না।