Wednesday, September 6, 2017

জ্বীন ও প্যারানর্মাল কি একই বিষয় ?

আমাদের চারপাশে এমন অনেক জিনিষ আছে যাদের অস্তিত্ব আছে কিন্তু অনুভব করা যায় না . তাদেরকে কেউ জীন বলে আবার কেউ তাদের ভুত বলে আখ্যায়িত করে . আর এই সব ঘটনাকে বলে থাকে প্যারানর্মাল ঘটনা .
আমাদের চারপাশে বস্তু থাকলেই যে আমরা তাদের অস্তিত্ব অনুভব করতে পারবো তা কিন্তু নয় . যে সব জিনিষের অস্তিত্ব আছে কিন্তু অনুভব করা যায় না তাই হলো জিন  . কিছু কিছু সময় তারা তাদের অস্তিত্ব প্রমান এর জন্য আমাদের সাথে অনেক অস্বাভাবিক আচরণ করে থাকে . যাতে আমরা বুঝতে পারি তাদের অস্তিত্ব কে .
অনেকে তাদের অনেক ভাবে নিয়ে থাকে ও অনেক নাম ডেকে থাকে , যেমন কেউ তাদের স্রেফ মনের ভুল বলে উড়িয়ে দেন আবার কেউ তাদের ভুত বলে আখ্যায়িত করে অনেক ধরণের রং লাগিয়ে প্যারানর্মাল ঘটনা বলে চালিয়ে দেন .আর ধর্ম বিশ্বাস থেকে ধরলে তাদের কে বলা হয়ে থাকে জ্বীন  .
আল্লাহ তালা কোরআন শরীফে বলে দিয়েছেন
“আমি তো মানুষ সৃষ্টি করিয়াছি ছাঁচে-ঢালা শুষ্ক ঠনঠনে মৃত্তিকা হইতে। এবং ইহার পূর্বে সৃষ্টি করিয়াছি জ্বীন অত্যুষ্ণ বায়ুর উত্তাপ হইতে।” [সূরা আল্-হিজর ১৫:২৬,২৭]
তাহলে বোঝা যাচ্ছে জিন এর অস্তিত্ব সত্য . আর জিন কিসের তৈরী তা প্রমান করার জন্য নিয়ে আয়াত যথেষ্ট
”সে বললঃ আমি তার চেয়ে উত্তম আপনি আমাকে আগুনের দ্বারা সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটির দ্বারা।” [ সূরা সাদ ৩৮:৭৬ ]
তার মানে জ্বীন আগুনের তৈরী . আর মানুষ মাটির তৈরী . মানুষ মাটির তৈরী হবার কারণে মাটির সাথে বায়ু , পানি ও অগ্নির সংমৃশ্ৰণ রয়েছে যার দরুন মানুষ সহজে পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে . আর জ্বীন আগুনের তৈরী হবার কারণে তারা বৃষ্টির দিনে বাহিরে বের হতে পারে না . পানি ও বজ্রপাতের জন্য , পানি ও বজ্রপাতের আলো জ্বীনদের খুব ক্ষতি করে থাকে . এই খানে আরেকটা জিনিষ প্রমান করা যায় জ্বীনদের শরীরে আগুনের সাথে কিছুটা জলীয় দ্রবনের সংমিশ্রন আছে . এর স্বপক্ষে যুক্তি হলো: রসুল (স.) একদা উল্লেখ করেছিলেন যে, শয়তান বলে একটি জ্বীন একদা নামাজের সময় তাঁর সাথে মোকাবিলা করতে এলে তিনি ঐ জ্বীনকে গলা টিপে ধরলে, সেইক্ষণে জ্বিনের থুথুতে শীতলতা অনুভব করেছিলেন।[সুরা সাদ ৩৮:৩৫] এতে প্রতীয়মান হয় যে, জিন যদি পুরোপুরি দাহ্য হতো, তাহলে ঠাণ্ডা থুথুর থাকার কথা নয়।
জ্বীনদের বয়স নিয়ে অনেক মত পার্থক আছে . সবচে বেশি যেটা শোনা যায় তা হল একজন জ্বীন এর প্রাপ্ত বয়স্ক হতে সময় নেন ৩০০ বছর . এইটা থেকে বুঝা যায় তারা দীর্গ সময় বেঁচে থাকে .. তাদের মধ্যে ও যৌন প্রক্রিয়ার মাধম্যে বংশ বৃদ্ধি হয়ে থাকে . অনেকে আবার মেয়ে জ্বীনদের পরী নাম ডেকে থাকে . আসলে আমরা রূপকথার যেই পরীকে চিন্তা করি বাস্তবিক অর্থে পরী ঐরকম নয় . তারা বিশাল দেখার অধিকারী এবং যেকোনো রূপ ধারণ করতে সক্ষম .
মূলত জ্বীনদের চলাচলের উপর ভাগ করে এদের কে তিন ভাগে ভাগ করা যায়
এক রকম যারা সারাক্ষণ আকাশে উড়ে,
অন্য আর এক রকম যারা সাপ এবং কুকুর হিসাবে বিদ্যমান এবং পৃথিবীর উপর বসবাসকারী
আর এক রকম যারা একস্থানে বাস করে অথবা উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়ায়।”
দ্বিতীয় লাইনের কথা থেকে বুঝা যায় তারা যেকোনো রূপ ধারণ করতে পারে . মানে তারা কখনো কখনো মানুষ এর রূপ ধারণ করে মানুষ এর সাথে চলাচল করে আবার কখনো কখন কুকুর বা সাপ এর রূপ ধারণ করে পৃথিবীতে অবস্থান করেন . এক রেওয়াতে আছে জ্বীন যখন যাই রূপ ধারণ করে তখন তার মধ্যে ঠিক সেই রূপ পরিমান শক্তি আসে . মানে জ্বীন যদি মানুষ এর রূপ ধারণ করে তাহলে তার মধ্যে মানুষের শক্তি বিদ্যমান থাকবে .আর যদি সে সাপ এর রূপ ধারণ করে তাহলে সাপ এর শক্তি থাকবে , তাছাড়া উপরের আয়াত থেকে বুঝা যায় তাদের থেকে মানুষ কে বেশি শক্তি শালী করে বানিয়েছে .
তাহলে প্রশ্ন জগতে পারে তারা আমাদের কি ভাবে ক্ষতি করে যদি তারা আমাদের থেকে দুর্বল হয় ?
তারা আমাদের ক্ষতি বেশি করে ভয় দেখিয়ে . ভয় এমন একটা বেপার , যখন আমরা ভয় পাই তখন আমাদের হিতাহিত বুদ্ধি হারিয়ে ফেলি আর সেই সুযোগটা নিয়ে জিন রা আমাদের ক্ষতি করে থাকে .এদের ক্ষতি করার উদ্দেশ দুইটা কারণে হয়ে থাকে . আপনি যদি না জেনে তাদের ক্ষতি করে থাকে তাহলে তারা আপনার ক্ষতি করার চেষ্টা করবে , আরেকটা কারণ হলো তাদের মধ্যে কিছু দুষ্ট প্রকৃতির আছে তাদের কাজ ই হল অন্যের ক্ষতি করা .
তাহলে প্যারানর্মাল আর জিনের ঘটনা কি এক ?
আমাদের প্রথমে বুঝতে হবে প্যারানর্মাল বিষয়টা কি ? প্যারানর্মাল বিষয় মুলুত মানুষ তখনি ব্যবহার করে যখন তার সাথে অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে , আর আমাদের সমাজে মানুষ মূলত প্যারানর্মাল ঘটনা বলতে ভুত প্রেতের কথা বুঝে থাকে . মানুষ কিছু একটা ঘটলে তারা ধরে নেয় এইটা ভুত এর কাজ . আসলে ভুত বলতে কিছুই নেই . এইটা যেমন সত্য ঠিক জ্বীন দ্বারা মানুষ আক্রমণ হয় সেটাও সত্য . যখন সে জ্বীন দ্বারা আক্রমণ হয় তখন সেই ঘটনাটাই মূলত প্যারানরমাল ঘটনা .

জ্বীন-পরীর গাঁজাখোরি গল্প এবং ধর্ম ও বিজ্ঞান-

ঐশী ধর্মের মূল উৎস এবং মূল বক্তব্য এক ও অভিন্ন। মহান আল্লাহতায়ালা প্রথম মানব এবং নবী হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে সর্বশেষ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পর্যন্ত অসংখ্য নবী ও রসূল প্রেরণ করেছেন। তাঁদের মাধ্যমে আল্লাহপাক তাঁর আদেশ নির্দেশ সম্বলিত ঐশীবাণী নির্দিষ্ট সময় অন্তর প্রতিটি মানব জাতির কাছে পৌছে দিয়েছেন। কালের প্রবাহে পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ও পরিস্থিতির পরিবর্তন যেমন ঘটেছে তেমনি মানবিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষতা সাধনও ঘটেছে। এরই সাথে সামঞ্জস্য রেখে “একই ধর্ম ইসলামের” বিধানের মূল-বক্তব্যকে অপরিবর্তীত রেখে মহান স্রষ্টা সময়ের চাহিদা অনুসারে নব নব তথ্য ও তত্ত্বের অবতারনার মাধ্যমে পরিবর্ধিত আকারে বার বার মানুষের সামনে পেশ করেছেন, যেন এর মাধ্যমে তাঁরই প্রিয়তম শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি সত্য ও সুন্দরের পথ চিনে নিয়ে সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে পারে। কিন্তু সর্বকালেই একরোখা মনোভাবাপন্ন একদল অহংকারী ও স্বেচ্ছাচারী ঐশীবাণীগুলোকে অহংকার বশতঃ সরাসরি অস্বীকার করেই ক্ষান্ত হয়নি; বরং বিকৃত করার অপপ্রয়াস চালিয়ে আসছে। অপরদিকে তেমনি কিছু সংখ্যক সুযোগসন্ধানী মানুষ কতিপয় গাঁজাখুরী গল্পের আড়ালে কুসংস্কারে আচ্ছন্ন করে ধর্মের প্রকৃত সৌন্দর্য ও আদর্শ কালিমালিপ্ত করেছে এবং কৌশলে ধর্মকে তাদের স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার বনিয়ে নিয়েছে। কিন্তু তাই বলে তো বিবেকবান জ্ঞানিগণ মানব জাতির কল্যাণ সাধনে খাঁটি ধর্মের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করতে পারে না। বর্তমানে বিশ্বের সর্বত্র সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও গভীরভাবে চিন্তা করলে খুব সহজেই অনুধাবন করা যায় যে, এ ধরণীতে বৈচিত্রময় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অসংখ্য মানব গোষ্ঠীকে শান্তি ও শৃঙ্খলা দানের জন্য কুসংস্কার-মুক্ত জ্ঞান ও ঐশী অনুশাসনের অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে।

বিশ্ব-স্রষ্টার একত্বে বিশ্বাসী প্রকৃত মুনি, ঋষি, পীর ও আওলিয়াগণের সবাই ছিলেন মহান ব্যক্তিত্বের অধিকারী সত্য-সাধক। মানবীয় গুণাবলী বিকাশের লক্ষ্যে তাঁদের অবদান সত্যিই অনস্বীকার্য। কিন্তু কতিপয় ছদ্মবেশী ও শিষ্য নামধারী ভন্ডের দল তাঁদের অবর্তমানে তাঁদের পবিত্র কর্মস্থলকে ঘিরে তিলকে তাল বানিয়ে আজগুবি কেচ্ছা-কাহিনী ও ধর্মহীন কার্যকলাপের মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ সরল মানুষদেরকে ধোঁকা দিয়ে ফায়দা লুটছে। এসব গুজব ও ধর্মহীন কর্মকান্ড সত্যিকার অর্থে ধর্ম যেমন সমর্থন করে না, তেমনি বিজ্ঞানের দিক থেকেও সেগুলো মোটেও সমর্থনযোগ্য নয়। তথাপি কতিপয় স্বার্থান্বেষী জ্ঞানপাপী ধর্মকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এসব অতিরঞ্জিত বিষয়গুলোকে পুঁজি বানিয়ে ধর্মের নামে চালিয়ে দিয়ে সেগুলোকে আবার বিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে মিথ্যা প্রমাণ করতে ব্যস্ত থাকে। গ্রামে-গঞ্জে কিছু সুযোগ সন্ধানী ছদ্মবেশী লোক জ্বীন-পরী ইত্যাদি বিষয়গুলোকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে গাঁজাখুড়ি গল্প বানিয়ে মানুষকে ধোঁকা দিয়ে ফায়দা লুটছে। এসব বানানো গল্পের প্রায় পুরোটাই ভিত্তিহীন ও ছলনাপূর্ণ। আল-কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন-

আল-কোরআন (Al-Quran)-
সূরা হিজর-আয়াত নং- ২৬ ও ২৭
(১৫ : ২৬) অর্থ- আমি তো ছাঁচে-ঢালা শুষ্ক ঠন্‌ঠনে মৃত্তিকা হতে মানুষ সৃষ্টি করেছি,
(১৫ : ২৭) অর্থ- এবং এর পূর্বে অত্যুষ্ণ বায়ুর উত্তাপ হতে জ্বীন সৃষ্টি করেছি।

সূরা রাহমান-আয়াত নং-১৫
(৫৫ : ১৫) অর্থ- এবং জ্বীনকে তিনি সৃষ্টি করেছেন নির্ধূম অগ্নিশিখা হতে।
সূরা যারিয়াহ -আয়াত নং- ৫৬
(৫১ : ৫৬) অর্থ- আমার দাসত্বের জন্যই আমি মানুষ ও জ্বীনকে সৃষ্টি করেছি।
সূরা সাফ্‌ফাত-আয়াত নং (১৫৮ - ১৬৩)
(৩৭ : ১৫৮) অর্থ- ওরা আল্লাহ্‌ ও জ্বীন জাতির মধ্যে জৈবিক সম্পর্ক সৃষ্টি করেছে, অথচ জ্বীনেরা জানে তাদেরকেও শাস্তির জন্য উপস্থিত করা হবে।
(৩৭ : ১৫৯) অর্থ- ওরা যা বলে তা হতে আল্লাহ্‌ পবিত্র, মহান।
(৩৭ : ১৬০) অর্থ- তবে, যারা আল্লাহতায়ালার নিষ্ঠাবান বান্দা তারা আলাদা,
(৩৭ : ১৬১) অর্থ- তোমরা ও তোমরা যাদের উপাসনা কর তারা -
(৩৭ : ১৬২) অর্থ- (সবাই মিলে আল্লাহ্‌ সম্পর্কে ) তাদের (নিষ্ঠাবান বান্দাদেরকে)
বিভ্রান্ত করতে পারবে না।
(৩৭ : ১৬৩) অর্থ- কেবল তাদেরকে বিভ্রান্ত করতে পারবে যারা জাহান্নামী।
সূরা জ্বীন-আয়াত নং (৭ - ১৫)
(৭২ : ০৭) অর্থ- তারা (জ্বীনেরা) মনে করতো- যেমনি মনে করতে তোমরা (মানুষেরা)- যে, মৃত্যুর পর আল্লাহ্‌ কাকেও পুনরুত্থিত করবেন না।’
(৭২ : ০৮) অর্থ- এবং ওরা পরস্পর বলাবলি করছিল যে, আমরা চেয়েছিলাম আকাশের তথ্য সংগ্রহ করতে কিন্তু আমরা দেখতে পেলাম কঠোর প্রহরী ও উল্কাপিন্ড দ্বারা আকাশ পরিপূর্ণ।
(৭২ : ০৯) অর্থ- পূর্বে আমরা আকাশের বিভিন্ন ঘাঁটিতে সংবাদ শোনার জন্য বসে থাকতাম কিন্থু এখন কেউ সংবাদ শুনতে চাইলে সে তার ওপর নিক্ষেপের জন্য প্রস্তুত জ্বলন্ত উল্কাপিন্ডের সম্মুখীন হয়।
(৭২ : ১০) অর্থ- জগতের প্রতিপালক জগদ্বাসীর অমঙ্গল চান, নাকি তাদের সঠিক পথ দেখাতে চান - সে বিষয়ে আমরা কোন জ্ঞান রাখি না।
(
৭২ : ১১) অর্থ- এবং আমাদের কতক সৎকর্মপরায়ণ এবং কতক এর বিপরীত, আমরা ছিলাম বিভিন্ন পথের অনুসারী;
(৭২ : ১২) অর্থ- এখন আমরা বুঝেছি যে, আমরা আল্লাহ্‌-কে পরাভূত করতে পারব না এবং পৃথিবী থেকে পলায়ন করে তাঁর ক্ষমতাকে ব্যর্থও করতে পারব না।
(৭২ : ১৩) অর্থ- আমরা যখন হেদায়েতের বাণী (কোরআন) শুনলাম, তাতে বিশ্বাস স্থাপন করলাম। যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে তার নিজের পাওনা কম পাওয়ার আশংকা থাকে না, (পরকালেও) তাকে লাঞ্ছনা পেতে হবে না।
(৭২ : ১৪) অর্থ- আমাদের কিছু আত্মসমর্পণকারী এবং কিছু সীমালংঘনকারী; যারা আত্মসমর্পণ করে তারা সুচিন্তিতভাবে সত্যপথ বেছে নেয়।
(৭২ : ১৫) অর্থ- কিন্তু যারা সত্যবিমুখ তারা অবশ্য জাহান্নামেরই ইন্ধন।

সুতরাং পবিত্র কোরআনের এই বানীগুলো থেকে আমরা বুঝে নিতে পারি যে, আল্লাহতায়ালা মানুষ সৃষ্টির পূর্বে জ্বীন-জাতিকে অত্যুষ্ণ বায়ুর উত্তাপ তথা নির্ধূম অগ্নিশিখা হতে সৃষ্টি করেছেন। যদিও এ ধরণের কোন সৃষ্টিকে অবলোকন করার মতো কোন যন্ত্র বিজ্ঞান এখনও আবিষ্কার করতে পারেনি। কিন্তু তাই বলে তা সরাসরি অস্বীকারও করেনি। কারণ এ মহাবিশ্বে এমন অনেক সৃষ্টি রয়েছে যা এখনও পর্যন্ত বিজ্ঞানের ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে। গতিবিধি অনুমান করা গেলেও এদের সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না। যেমন কয়েক যুগ পূর্বেও মানুষ রোগ-জীবাণু যেমন-ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ইত্যাদির অস্তিত্ব ও মানবদেহে এদের প্রভাব বিস্তার সম্পর্কে সন্দিহান ছিল। কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞানের অবদান অণুবিক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কারের ফলে এদের অস্তিত্ব ও কর্মকান্ড সম্পর্কে আমরা আজ সন্দেহ-মুক্ত। তবে আল্লাহতায়ালা সৃষ্টিগতভাবে জ্বীনদেরকে এমন কিছু বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী করেছেন যে তারা এর সহায়তায় প্রথম আসমানের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে গিয়ে তথ্য ও সংবাদ সংগ্রহের চেষ্টা চালানোর যোগ্যতা রাখে। আর এ কারণেই হয়ত মানুষদের মধ্যে কেউ কেউ তাদের উপাসনা করে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে এইসব উদ্ধত জ্বীন ও বিভ্রান্ত মানুষেরা বিপথগামী ও জাহান্নামী। কারণ তারা বিভ্রান্তকর সংবাদ শুনিয়ে অন্যকে ধোঁকা দিতে চায়।

আমরা ‘হিপনোটিস্‌ম’-এর কথা সবাই কম-বেশী জানি। যা বড় বড় যাদুকররা প্রয়োগ করে থাকে এবং কিছু সময়ের জন্য হলেও মানুষকে বিমোহিত করে ভেলকিবাজির খেলা দেখিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সম্ভবত সাধনার দ্বারা এমন কোন মাধ্যম বা শক্তিকে আয়ত্বে আনা হয়, যার সহায়তায় সাধারন মানুষের স্নায়ুতন্ত্রের উপর কিছু সময়ের জন্য হলেও প্রভাব বিস্তার করা সম্ভব হয়। ইদানিং চিকিৎসাক্ষেত্রেও এটি প্রয়োগের চেষ্টা চলছে। বিশেষ করে বেদনা নাশক হিসেবে এবং যন্ত্রনাদায়ক রোগের প্রকোপ দমনে এর সফল প্রয়োগ হতে দেখা গেছে এবং এ নিয়ে যথেষ্ট গবেষণা চলছে। তবে ঠিক কি উপায়ে এবং কোন ধরণের শক্তিকে এতে কাজে লাগানো হচ্ছে তার সঠিক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এখনও পাওয়া যায়নি। তেমনি মানুষ সাধনার মাধ্যমে অথবা জন্মগতভাবে এমন কোন শক্তির অধিকারী হতে পারে, যার সহায়তায় সেই বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ব্যক্তিটি অতীতের তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে হয়তবা ভবিষ্যতের কিছু কিছু কথা বলে দিতে পারে। তবে এক্ষেত্রে অধিকাংশই ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে। তাই ধর্মীয়ভাবে এসব ভবিষ্যৎ বাণীতে বিশ্বাস স্থাপন করা নিষেধ এবং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোন থেকেও যুক্তিসঙ্গত নয়। কারণ এসব ক্ষেত্রে সাধারনত প্রতারণার উদ্দেশ্যই প্রবল থাকে। আল-কোরআনে আল্লাহতায়ালা যাদুবিদ্যা শিক্ষাকরা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন এবং যাদুর অনিষ্ট ও দুষ্ট-জ্বিনের প্রভাব থেকে বেঁচে থাকবার জন্য সবসময় স্রষ্টা মহান আল্লাহকে স্মরণ করতে ও তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করতে বলেছেন। সূরা বাকারা:-এর ১০২ নং আয়াত ও সূরা আল ফালাক্ক ও সূরা আন্‌ নাস থেকে আমরা তা সহজেই বুঝে নিতে পারি।

আল-কোরআন (Al-Quran)-
সূরা বাকারা-আয়াত নং-১০২
(০২ : ১০২) অর্থ- ( আল্লাহতায়ালার প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করেই এরা ক্ষান্ত হয়নি ) এমন কিছু জিনিসও (যাদুমন্ত্র) এরা অনুসরণ করতে শুরু করলো, যা শয়তান কর্তৃক সোলায়মান (নবী)- এর রাজত্বের সময় (সমাজে) চালু করা হয়েছিল, (সত্যি কথা হচ্ছে) সোলায়মান কখনো (আল্লাহবিরোধী কাজে যাদুকে ব্যবহার কোরে) আল্লাহকে অস্বীকার করেনি, আল্লাহকে তো অস্বীকার করেছে সে সব অভিসপ্ত শয়তান, যারা মানুষকে যাদুমন্ত্র শিক্ষা দিয়েছে; (যাদুপাগল কিছু মানুষকে পরীক্ষার উদ্দেশে) আল্লাহতায়ালা হারূত ও মারূত (নামে) ফেরেশতাদ্বয়কে ব্যাবিলনে পাঠিয়েছিলেন, সেই দুজন ফেরেশতা যখনই (কাউকে) এ বিষয়ে (যাদু) শিক্ষা দিতো, (প্রথমেই) তারা এ কথাটা তাদের জানিয়ে দিতো, “আমরা তো হচ্ছি (আল্লাহর) পরীক্ষামাত্র”, সুতরাং (এ বিদ্যার কারণে কোন অবস্থাতেই) তুমি আল্লাহতায়ালাকে অস্বীকার করো না, (তা সত্ত্বেও) তারা তাদের কাছ থেকে এমন কিছু বিদ্যা শিখে নিয়েছিলো, যা দিয়ে তারা স্বামী- স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করতো, (যদিও) আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কোনো দিনই কেউ কারো সামান্যতম ক্ষতিও সাধন করতে পারবে না; (মূলত) যা এরা শিখে তাতে তাদের ক্ষতিই হয় এবং (বাস্তবে) তা কোনো উপকারে আসে না; তারা যদি জানতো (যে, (শ্রম ও অর্থ দিয়ে) যা তারা কিনে নিয়েছে পরকালে তার কোনো মূল্য নেই; তারা নিজেদের জীবনের বিনিময়ে যা ক্রয় করেছে তা সত্যিই নিকৃষ্ট; (কতো ভালো হতো) যদি তারা কথাটা জানতো!
সূরা আল ফালাক-আয়াত নং-(১ - ৫)
০১. বল, আমি আশ্রয় চাই ঊষার স্রষ্টার কাছে, ০২. সৃষ্ট (জগতের) বস্তুনিচয়ের সকল প্রকার অনিষ্ট থেকে ০৩. এবং রাতের অনিষ্ট হতে - যখন তা গভীর অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়, ০৪. এবং গ্রন্থিতে ফুঁক দিয়ে যারা (যে সকল যাদুটোনাকারিণী) যাদু করে তাদের অনিষ্ট থেকে, ০৫. এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে, যখন সে হিংসা করে।

সূরা আন্‌ নাস্-আয়াত নং-(১ - ৬)
০১. বল, আমি আশ্রয় চাই মানুষের স্রষ্টার কাছে, ০২. মানুষের (প্রকৃত) বাদশার কাছে, ০৩. মানুষের একমাত্র উপাস্যের কাছে, ০৪. কুমন্ত্রণাকারীর অনিষ্ট হতে, যে সুযোগ মত কুমন্ত্রণা দিয়ে সরে পড়ে, ০৫. যে মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়, ০৬. জ্বিনদের মধ্য হতে এবং মানুষদের মধ্য হতে।

সব সময় একথা স্মরণ রাখা দরকার যে, সসীম কখনও অসীমকে ছুঁতে বা চর্মচক্ষুতে দেখতেও পারে না। মানুষ যত শক্তিই অর্জন করুক না কেন তা আল্লাহর অসীম শক্তির মোকাবেলায় অতি নগণ্য। কারণ সমস্ত শক্তির আধার ও উৎস একমাত্র ‘আল্লাহ্‌’। তাঁরই প্রদত্ত এ শক্তির ব্যবহার কেউ সুপথে করে (যেমন- নবী-রাসূল, পীর, আওলীয়া, দরবেশ ইত্যাদি আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ) আবার কেউ করে বিপথে (যেমন শয়তানের পূজারী, যাদুকর, জিনের অনুসারী ইত্যাদি বিপথগামী মানুষ)। সবই আল্লাহর পরীক্ষা মাত্র। তাই প্রতিটি ক্ষেত্রে ধর্মহীন অবাঞ্চিত কুসংস্কার ও মনগড়া মিথ্যে মতবাদগুলো চিহ্নিত করে খাঁটি ধর্মের প্রচার, প্রসার ও পালনের জন্য স্বচেষ্ট হতে হবে। ইসলামের শাশ্বত বিধিবিধান সম্পর্কে সর্ব সাধারনের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে না পারলে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে মতভেদ, দলাদলি, খুন, সন্ত্রাস, জুলুম, পাপাচার, ধর্মান্ধতা, সামপ্রদায়িকতা সর্বপরি সকল প্রকার অশান্তি ও অন্ধকারের হাত থেকে মুক্তি পাবার আর কোন বিকল্প নেই। ধর্মের নামে লোকদেখানো অন্তঃসারশুন্য ভন্ডামী পরিত্যাগ করে ধর্মীয় রীতিনীতি ও আদর্শের যথাযথ প্রতিফলন ঘটাতে হবে। ফতোয়ার পবিত্রতা রক্ষার্থে মিথ্যাচার, অহেতুক বারাবারি ও স্বার্থবাদী মনোভাব ত্যাগ করে সময়োচিত সুচিন্তিত বক্তব্য পেশ করতে হবে। নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত ইত্যাদি অবশ্য পালনিয় ইবাদতের পাশাপাশি জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষ তথা গোটা সৃষ্টিকুলের কল্যাণে এগিয়ে আসতে হবে। আর তাহলেই এই সুন্দর পৃথিবীতে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শান্তিময় বাসযোগ্য পরিবেশ রচিত হতে পারে।