Friday, July 27, 2018

হিন্দু ধর্ম ও যৌনতা



লিখেছেন: নীল কষ্ট
হিন্দু ধর্ম উপমহাদেশের বৃহত্তম ও প্রাচীন ধর্ম বিশ্বাস। হিন্দুরা একে সনাতন নামেও অভিহিত করে থাকেন। সনাতন অর্থ যা আদিতে ছিল, বর্তমানে আছে ও ভবিষ্যতেও থাকবে। অনেকে একে পৃথিবীর প্রাচীনতম ধর্ম বিশ্বাস মনে করেন যা এখনো অস্তিত্ব টিকে রেখেছে।
হিন্দু ধর্ম মতে- জীবনের উদ্দেশ্য চারটি- ১. ধর্ম ২.অর্থ ৩. কাম ৪. মোক্ষ। অর্থ অপেক্ষা ধর্ম শ্রেয় এবং কাম অপেক্ষা অর্থ শ্রেয়। মোক্ষ লাভ হলো আত্মার মুক্তি।
যৌনতা অর্থাৎ কাম হিন্দু ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ন অধ্যায়। প্রতিটি মানুষকে এই পর্যায়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। যদিও ব্রক্ষ্মচার্য ও সন্যাস জীবনের উপড় হিন্দু ধর্ম অনেক জোর দিয়েছে, তথাপি খুব গুরুত্বপুর্ন। কারন- কামই হলো বংশবৃদ্ধি ও সৃস্টি রক্ষার একমাত্র উপায়। হিন্দু ধর্ম মতে- কাম স্বর্গীয়। কিন্তু ব্যভিচার, ধর্ষন প্রভৃতি অপরাধমূলক কর্মকান্ডকে পাপ হিসেবে গন্য করা হয়। প্রকৃতির অন্যান্য জিনিসের মতো কামও তিন প্রকারের- ১. সাত্ত্বিক- ইহা নিষ্পাপ, স্বর্গীয় এবং বংশরক্ষার পদ্ধতি। ২. রাজসিক- ইহা আত্মরম্ভিক ও রিরংশামূলক। ৩. তামসিক- ইহা নিগ্রহ ও বলপূর্বক।
কাম হিন্দু ধর্মে মানব জীবনের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। কাম মানবকে স্বর্গীয় সুখ দিতে পারে। ছাত্রদের যেমন বিয়ের পূর্ব পর্যন্ত ব্রক্ষ্মচর্য পালন অত্যাবশ্যকীয়, তেমনি সবার জীবনে বিয়ের পরে বা কিছু ক্ষেত্রে পূর্বেও কামকে সম্মতি দেয়। হিন্দু ধর্ম বহুবিবাহ ও বহুগামিতাকে সম্মতি দেয়। পুরুষ তার স্ত্রী ছাড়াও অন্য নারীর সাথে বিশেষত বারবনিতা, চাকর প্রভৃতির সাথে কাম চরিতার্থ করতে পারে। প্রাচীনকালে ভারতে বেশ্যাবৃত্তির প্রচলন ছিল এবং অনেক রাজ্যে নারীদের বেচাকেনা হতো। কোন নারী চাইলে মুক্তভাবে জীবন যাপন করতে পারত এবং যে কোন পুরুষের সঙ্গে যৌন মিলিন করতে পারত। উপনিষদে বর্ণিত- সত্যকামার মাতা জাবালার কাহিনী থেকে আমরা এটা দেখতে পাই।
প্রাচীন কালে- কোন বিধবা নিঃসন্তান নারী তার আপন দেবর অথবা দুরসম্পর্কীয় দেবরের সাথে মিলন করতে পারতো, বংশরক্ষার জন্য। কোন দম্পত্তির সন্তান না থাকলে নারী তার ইচ্ছামত পুরুষের সাথে মিলিত হতো, বংশরক্ষার জন্য। এটা ছিল আইনত সিদ্ধ।
বেদ, পুরান, উপনিষদে এরকম অনেক কাহিনী বর্ণিত আছে। হিন্দু ধর্মের দেবতারা বেশিরভাগ লালসাপূর্ন কামুক ও দেবীরা সতী ও পবিত্র। শাস্ত্রে কাম লালসাপূর্ন দেবতাদের অনেক উপাখ্যান বর্ণিত আছে। তারা স্বর্গের দেবী এমনকি মর্ত্যের সুন্দরী নারীদের সাথে যৌনকর্মে লিপ্ত হয়েছে। যখন কোন মানুষের আত্মা স্বর্গের পথে গমন করে, স্বর্গের সুন্দরী নর্তকীরা তাকে স্বাগত ও বিনোদন দেওয়ায জন্য প্রস্তুত থাকে।
স্বর্গের দেবতা ইন্দ্র হলো কামুক, লালসাপূর্ন ও হিংসুটে। যখনি কোন মানুষ কৌমার্য পালনে ব্রতী হয়েছে, ইন্দ্র নর্তকী পাঠিয়ে তার ব্রত ভঙ্গ করেছে। সে নিজেও অনেক নারীর সাথে মিলন করেছে, এমনকি গুরুপত্নী অহল্যার সাথে মিলিত হয়ে সে অভিশাপ প্রাপ্ত হয়। এরকম বেদ, পুরানে অনেক উপাখ্যান উদ্ধৃত আছে। মহাভারতের রাজা শান্তনুর স্ত্রী সত্যবতীর বিবাহপূর্ব সন্তান হলো কৃষ্ণদৈপান যিনি বেদব্যাস নামে বিখ্যাত। তার জন্ম হয়েছিল ঋষি পরাশরের ঔরষ্যে। সত্যবতী ছিল মৎস্যকন্যা, গায়ের গন্ধ দুর করার শর্তে তিনি পরাশরের সাথে মিলিত হন। বিয়ের পরে তার সন্তান বিচিত্রবীর্য সন্তান জন্ম দানের পূর্বে মারা গেলে, কৃষ্ণদৈপায়ন তার স্ত্রীদের সাথে মিলিত হয়ে সন্তান জন্ম দেন। এছাড়া পঞ্চপান্ডব মাতা কুন্তীর চার ও মাদ্রীর দুই সন্তানের জন্মও হয় বিভিন্ন দেবতাদের ঔরষ্যে। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের কান্ডারী কৃষ্ণের ছিল ১৬০০৮ জন পত্নী ও উপপত্নী।
পুরানে বর্নিত উপাখ্যানগুলো আরো রসাত্মক। আত্মসংযম ও নিশ্চলতার দেবতা শিবও নর্তকী মোহিনী রুপ দেখে নিজেকে সংযম রাখতে পারেন নি। অগ্নি, বরুন, বিষ্ণু সবারই ছিল নারীদের প্রতি লালসাপূর্ন দৃষ্টি। এই ব্রক্ষ্মান্ডের সৃস্টিকর্তা ব্রক্ষ্মা তার সৃস্টি দেবী স্বরস্বতীকে দেখে আত্মসংযম হারিয়ে তার সাথে মিলিত হন। যম ও যমি ছিল আপন ভাইবোন। তারাও কামের তাড়নায় মিলিত হন। হিন্দুদের পূর্বপুরুষ ভারতের মাতা শকুন্তলার জন্ম হয় ঋষি বিশ্বামিত্র ও নর্তকী মেনকার গর্ভে। প্রাচীন ঋষিদের সবারই ছির পত্নী। কেহই কাম হতে মুক্ত ছিল না।
উপনিষদগুলোর মধ্যে ছান্দোগ্য ও বৃহদারন্যক উপনিষদে নর নারীর কামকে ও এর প্রকৃতিগুলোকে সুন্দরভাবে বর্ননা করা হয়েছে। কামকে বলা হয়েছে নিষ্পাপ ও স্বর্গীয়। পুরুষ নারীকে এবং নারী পুরুষকে আকৃষ্ট করার ও রতিক্রিয়ার পদ্ধতিগুলো বর্নিত আছে। এছাড়াও বাৎস্যায়নের কামশাস্ত্রে কামকে নান্দনিক ও উপভোগ্য করার জন্য বিভিন্ন আসন ও পদ্ধতি বর্নিত আছে।