Saturday, September 22, 2018

মানহানির মামলা কীভাবে করবেন ?

ধরুন,
কোনো ব্যক্তি আপনাকে নিয়ে লোকজনের কাছে আজেবাজে মন্তব্য করছেবা কুৎসা রটাচ্ছে। এতে আপনি মানহানির শিকার হলেন। এখন ভাবছেন, আপনি আইনি ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু কীভাবে  আইনি প্রতিকার পাবেন, তা জানেন না। এ ক্ষেত্রে কিছু বিষয় লক্ষ্যণীয়।

মানহানির অভিযোগ এনে ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলা বা মোকদ্দমা করা যায়। ফৌজদারি আদালতে মানহানির মামলা করার ক্ষেত্রে অভিযোগ দায়ের করতে হয়। সে অভিযোগ শুনে আদালত অভিযোগ থাকা ব্যক্তির বিরুদ্ধে সমন জারি করতে পারেন। তবে মানহানির মামলায় সরাসরি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয় না। সমন দেওয়ার পর যদি কোনো ব্যক্তি আদালতে হাজির না হন, সে ক্ষেত্রে বিচারক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন।

দণ্ডবিধির ৪৯৯ ধারায় মানহানি কিসে হবে আর কিসে হবে না,তা বিস্তারিত বলা আছে। এ ধারা অনুসারে যে ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির খ্যাতি বা সুনাম নষ্ট করার উদ্দেশ্যে বা এমন হবে জেনেও উদ্দেশ্যমূলক শব্দাবলি বা চিহ্নাদি বা দৃশ্যমান প্রতীকের সাহায্যে কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে এমনভাবে কোনো নিন্দা প্রণয়ন বা প্রকাশ করে, তাহলে ওই ব্যক্তির মানহানি করেছে বলে ধরা হবে। এমনকি মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে বললেও তা মানহানি হবে। মৃত ব্যক্তির আত্মীয়স্বজন মানহানির অভিযোগ আনতে পারবেন। আইনে এমন কিছু ব্যতিক্রম অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে, যখন কোনো ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির নামে মানহানিকর কিছু বললে, লিখলে বা প্রচার করলেও মানহানি হবে না। যেমন:

১. জনগণের কল্যাণে কারও প্রতি সত্য দোষারোপ করলে মানহানি হবে না।

২. সরকারি কর্মচারীর সরকারি আচরণ সম্পর্কে সৎ বিশ্বাসে অভিমত প্রকাশ করলে তা মানহানির শামিল হবে না।

৩. সরকারি বিষয়-সংশ্লিষ্ট প্রশ্নে কোনো ব্যক্তির আচরণ নিয়ে মত প্রকাশ করলে মানহানি নয়।

৪. আদালতসমূহের কার্যবিবরণী প্রতিবেদন প্রকাশ করা মানহানির অন্তর্ভুক্ত হবে না।

৫. যেকোনো জনসমস্যা সম্পর্কে ও কোনো ব্যক্তির আচরণ সম্পর্কে সৎ বিশ্বাসে অভিমত প্রকাশ করা মানহানির শামিল নয়।

৬. আদালতে সিদ্ধান্তকৃত মামলার দোষ, গুণ বা সাক্ষীদের সম্পর্কে বা অন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আচরণ সম্পর্কে অভিমত মানহানির পর্যায়ে পড়বে না।

৭. গণ-অনুষ্ঠানের অনুষ্ঠানাদি সম্পর্কে কোনো মতামত দেওয়া মানহানি নয়।

৮. কর্তৃত্বসম্পন্ন ব্যক্তির কাছে সৎ বিশ্বাসে কারো সম্পর্কে অভিযোগ করা হলে সেটিও মানহানি হবে না। যেমন: পুলিশের কাছে কারো ব্যাপারে সৎ বিশ্বাসে অভিযোগ।

৯. কোনো ব্যক্তি কর্তৃক তার বা অন্য কারো স্বার্থ রক্ষার্থে দোষারোপ করা মানহানি নয়।

১০. জনকল্যাণার্থে সতর্কতা প্রদানের উদ্দেশ্যে কারো সম্পর্কে কিছু বলা হলে মানহানি হবে না।

দণ্ডবিধির ৫০০ ধারায় মানহানির শাস্তি বর্ণনায় বলা হয়েছে,এই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে দুই বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয়বিধ দণ্ড হতে পারে।

অন্যদিকে দণ্ডবিধির ৫০১ ও ৫০২ ধারা অনুসারে, মানহানিকর বলে পরিচিত বিষয় মুদ্রণ বা খোদাইকরণ সম্পর্কে এবং এর শাস্তি বর্ণিত হয়েছে।

লেখক : আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট