Sunday, October 1, 2017

জারজ সমাজ

একেবারে ‘নিরাপদ সময়’ বলতে কিছু নেই। আবার কোনো প্রোটেকশনই ৯৭%-এর অধিক নিশ্চয়তা দেয় না। ফলে যখন যেভাবেই সেক্স করা হোক না কেন, প্রেগন্যান্ট হওয়ার সম্ভাবনা একটু হলেও থাকে। সেক্স-এডুকেশন না থাকাতে এ ব্যাপারগুলো আরো জটিল মনে হয়।
আমাদের মত দেশে কেউই ছোটবেলায় সঠিক সেক্স-এডুকেশন পায় না। শুধু সেক্স করতে করতে সেক্স করাটাই শেখে। সেক্স করার পরে আবার দুশ্চিন্তায় থাকে পরবর্তী পিরিয়ড না হওয়া পর্যন্ত। প্রেগন্যান্ট হয়ে গেলে তখন শুরু হয় গোপনে দৌড়াদৌড়ি। দেরী হয়ে গেলে তখন অনেকে তড়িঘড়ি করে বিয়ে করে ফেলে, যাতে বাচ্চাকে কেউ ‘জারজ’ বলতে না পারে।
(হুমায়ুন আজাদের ‘কবি’)–মেঘার গর্ভে বাচ্চা আসলে হাসান খুশি হয়। তবে বিয়ের কথা বলে না কখনো। মেঘা একবার বললে হাসান বুঝায়–ভালোবাসা যখন আছে, তখন বিয়ের দরকার নেই। মেঘা বোঝে। বোঝে না মেঘার মা-বাবা-চাচা। সবাই বিয়ের জন্য চাপ দেয়। হাসান আর মেঘা অনড়–ভালোবাসার বন্ধনেই তারা একত্রে থাকবে, ভালোবাসার সম্পর্ক দিয়েই বাচ্চাকে পৃথিবীতে আনবে, বড় করে তুলবে… মেঘার মা বলে–সমাজ এই সন্তানকে ‘জারজ’ বলে গালি দেবে। মেঘার চাচা অনরেডি ‘জারজ’ বলে গালি দিতে শুরু করে। আবার নিজের ভাইঝি–তাই বিয়ে করে বিষয়টা মিটিয়ে ফেলতে বলে।
এখানে আমার প্রশ্ন হলো–বাচ্চা তো গর্ভে আসছে বিয়ের আগেই। বাচ্চা আসার পরে যদি বিয়ে করে, তাহলে সেই সন্তানকে এই সমাজ ‘জারজ’ বলবে না কিসের ভিত্তিতে?
———————
কেস নাম্বার দুই # বিশুর এক গাঞ্জাখোর কাজিন। বিয়ে করেছিল অনেক আগে। অনেক বড় একটা বাচ্চাও ছিল। বউটি তাকে আর বাচ্চাকে রেখে আরেক কাজিনের এক ফ্রেন্ডের সাথে চলে গেছে। তাদের ঘরে আবার একটা বাচ্চাও হয়েছে। যেহেতু হিন্দুধর্মের বিষয়–তাই বিষয়টা ধর্মীয় ও সামাজিক দিক দিয়ে আমার কাছে একটু জটিল মনে হয়েছে। শুনেছি তারা আবার বিয়ে করেছে। কাজিনের ওই ফ্রেন্ডের পরিবার বিষয়টা হাসিমুখেই মেনে নিয়েছে। ‘সমাজ’ থেকেও কেউ কোনো সমস্যা করে নি। সমস্যা শুধু বিশুর পরিবার এবং তার কাজিনদের পরিবারের পক্ষ থেকে–‘প্রেস্টিজের’ ব্যাপার বলে কথা! সবাই ওই বাচ্চাকে ‘জারজ’ বলে গালি দিচ্ছে। তবে বিশু পুরো বিষয়টার পক্ষে। এটা নিয়ে বিশু একা একদিকে, আর তার আত্মীয়স্বজন–সবাই আরেকদিকে।
বিশু বলছিল–কেউ ঠাণ্ডা মাথায় সোজা তর্কে আসতে রাজি না। এটা নিয়ে কথা উঠলেই সবাই মাথা গরম করে চিল্লাফাল্লা-গালাগালি আর হুমকি দিয়ে আসছে সেই প্রথম থেকেই–জেলের ভাত খাওয়াবে, মেরে হাড় গুড়াগুড়া করে দেবে, লাশ পুঁতে ফেলবে–এইসব! কিন্তু এটা যে খুবই সাহসী এবং সুন্দর একটা বিষয়–এটা কেউ বুঝতে চাইছে না।
সমাজকে এভাবে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে, কাউকে তোয়াক্কা না করে নিজের ব্যক্তিগত স্বাধীন ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেয়া, সেই মতে জীবনযাপন করা–গ্রামের একজন প্রায় অশিক্ষিত নারী যে সাহসের পরিচয় দিয়েছে, বেশিরভাগ শিক্ষিত প্রগতিশীল মানুষের পক্ষে অতটা সাহস দেখানো সম্ভব নয় বলেই মনে করি। আর, যে ছেলের সাথে গেছে, তারও সাহস আর উদারতার প্রশংসা না করলেই নয়। এখানে উল্লেখ্য, ওরা কেউই নাস্তিক নয়।
বিশুকে জিজ্ঞেস করছিলাম–আগের ঘরের যে বাচ্চাটাকে ফেলে আসল, তার ব্যাপারটা কী হবে?
বিশু বলছিল–মেয়েটি ওই বাচ্চাটাকে নিয়ে যেতেই চেয়েছিল। যার সাথে গেছে, তারও আপত্তি ছিল না। কিন্তু বিশুর কাজিনের ফ্যামিলি থেকে বাচ্চাটাকে রেখে দিয়েছে।
বিষয়টা কেমন জানি পানির মত সহজ মনে হচ্ছে!