Saturday, December 8, 2018

মুহাম্মদ একটা পাম গাছ, যেটি পাহাড়ের পাশে অযত্নে জন্মেছে।



প্রতি বছরের মত ঘটা করে নবী মুহাম্মদের জন্মবার্ষিকী পালন করল মুসলমান সম্প্রদায়। ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী নামে নবী মুহাম্মদের জন্মবার্ষিকী পালন করলেও নবী মুহাম্মদের জন্মের রহস্য নিয়ে চিন্তার জগতে যেসব কানা-ঘুষা আছে সেগুলো নিয়ে মুসলিম সম্প্রদায় ও ইসলামী স্কলারদের কখনো আলোচনা করতে দেখা যায়নি, উত্থাপিত প্রশ্নগুলোর কোন সদুত্তোর পাওয়া যায়নি তাদের কাছ থেকে। সুকৌশলে মুহাম্মদের জন্ম নিয়ে সব ধরনের বিতর্ক এড়িয়ে যেতে দেখা যায় এদেরকে। এর কারণ হচ্ছে- তথাকথিত এমন একজন মহামানবের জন্ম রহস্য নিয়ে মুক্তচিন্তকদের উত্থাপিত প্রশ্নগুলোর উত্তর তাদের জানা নেই। এই বিষয়ে আলোচনাতে মুসলিম স্কলার থেকে শুরু করে হালের মোল্লা-মৌলবীসহ সকলে বিব্রতবোধ করেন।
‘মুহাম্মদের প্রকৃত পিতা আসলে কে?’ – এমন প্রশ্ন উত্থাপনকারীদের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তাদের কাফের, ইসলাম বিদ্বেষী, ইহুদী-নাসারাদের দালাল বলে আখ্যায়িত করা হয়। মুসলমানদের কাছে যে প্রশ্নের কোন উত্তর নাই, সেটির মোকাবেলা করে ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত পাওয়ার কথা বলে। মুহাম্মদ যদি ঈশ্বর বা আল্লাহ প্রেরিত কোন মহামানব হয়ে থাকে তবে তার জন্মকাল, পূর্বসূরী, পিতা-মাতা নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহ থাকতেই পারে। এমন ধরনের আগ্রহকে দোষীভুক্ত করা যায় না। যদিও আমি ব্যক্তিগতভাবে মানুষের পৈতৃক বা মাতৃক পরিচয়, কিংবা মানুষের জন্মের বৈধতা, সামাজিক বন্ধনের মাধ্যমে জন্ম নিয়েছে কিনা- এমন ধরনের বিতর্ক বা আলোচনাকে কখনই মূখ্য বিষয় বলে মনে করিনা। মানুষের একমাত্র পরিচয় হচ্ছে- ‘মানুষ’। নবী মুহাম্মদের বিষয়ে এমন আলোচনার কারণ হচ্ছে- ইসলাম যে ধরনের নৈতিকতাবোধের কথা বলে বা যেসব নৈতিকতাকে প্রাধান্য দেয়; সেইসব নৈতিকতা ইসলামের প্রাণ পুরুষ নবী মুহাম্মদের মধ্যে ছিল না। নবী মুহাম্মদের জন্ম হয়েছিল ইসলাম প্রদর্শিত নৈতিকতাবোধ বিবর্জিত অবস্থায়। সাড়ে ১৪০০ বছর পরও এই মহামানবের প্রকৃত পিতা কে আমাদের কাছে রহস্যজনক থেকে গেছে। মুহাম্মদকে আবদুল্লার ঔরসজাত বলে মিথ্যা ইতিহাস যুগযুগ ধরে প্রচার করা হচ্ছে এবং ইসলামী নৈতিকতাবোধের নামে সামাজিক প্রথা বিবাহ বন্ধন ছাড়া জন্ম নেওয়া মানব সন্তানকে জারজ বা অবৈধ বলে অনুমোদিত হয়ে আসছে। এ কারণে মুহাম্মদের জন্ম রহস্য নিয়ে আলোচনা করা উচিত বলে আমি মনে করি। মুসলমানদের এই উপলব্দি হওয়া উচিত- তাদের পথ প্রদর্শকও ইসলামের প্রচলিত বিবাহ বর্হিভুত সম্পর্কের মাধ্যমে জন্ম নিয়েছিল।

এবার মুল আলোচনায় আসা যাক। ইসলাম অনুমোদিত নবী মুহাম্মদের বিভিন্ন জীবনী গ্রন্থ লেখকদের মতে, মুহাম্মদের মা আমিনা ছোট বয়স থেকে তাঁর চাচা ওহাবের বাড়ীতে চাচার তত্ত্বাবধানে থেকে বড় হয়েছে। মুহাম্মদের দাদা আবদুল মোত্তালিব তার পুত্র আবদুল্লার বিয়ের পাত্রী দেখার জন্য আবদুল্লাকে নিয়ে ওহাবের বাড়িতে গিয়েছিলেন। পাত্রী আমিনাকে সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়ে এসেছিল আমিনার চাচাত বোন ওহাবের মেয়ে হালা। আবদুল্লার পাত্রী হিসাবে আমিনাকে আবদুল মোত্তালিব পছন্দ করেন। কিন্তু আমিনার সাথে আসা ওহাবের মেয়ে হালাকে আবদুল মোত্তালিবের পছন্দ হয়ে যায় নিজের জন্য। আবদুল মোত্তালিব ওহাবের কাছে জানতে পারেন আমিনার সাথে আসা সুন্দর মেয়েটি তার মেয়ে হালা। আবদুল মোত্তালিব ওহাবের কাছে হালাকে তার নিজের জন্য পছন্দের কথা জানান। বনু হাশেম গোত্রের প্রধান হিসাবে আবদুল মোত্তালিবের সেই সময় যথেষ্ঠ প্রভাব ও প্রতিপত্তি ছিল। ওহাব মোত্তালিবের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে পারে নাই। ওহাব ভাতিজি আমিনার সাথে মোত্তালিব পুত্র আবদুল্লা এবং মেয়ে হালার সাথে আবদুল মোত্তালিবের বিয়ে দিতে রাজী হয়েছিল। সুন্দরী হালাকে আদুল মোত্তালিব হাতছাড়া করতে চাননি। তাই ছেলের জন্য কনে দেখতে আসা আবদুল মোত্তালিবের ইচ্ছে অনুযায়ী বাড়িতে ফিরে না গিয়ে সেই দিনই আবদুল্লা আমিনা’কে এবং মোত্তালিব হালা’কে বিয়ে করেন। নববধু হালাকে নিয়ে আবদুল মোত্তালিব নিজ গৃহে চলে যান, আবদুল্লা ওহাবে বাড়িতে থেকে বাসর করেন।

ইবনে হিশাম কতৃক লিখিত নবীর জীবনীতে দেখা যায় যে বিয়ের পরপরই আমিনার বাবার বাড়িতে অবস্থানের কালীন সময়ে আবদুল্লাহ আমিনার সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে এবং মোহাম্মদকে আমিনা গর্ভে ধারণ করে । ইসলামী ঐতিহাসিকদের মত অনুযায়ী এটা নিশ্চিত যে আমিনা মুহাম্মদকে গর্ভে ধারণ করে বিয়ের পরপরই। ঐতিহাসিক ইবন সাদ কতৃক লিখিত “The Book of the Major Classes” বইয়ে পাওয়া যায়- বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যেই আবদুল্লাহ ২৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন এবং এ সময়ে মোহাম্মদ তার মাতৃগর্ভে ছিল। এদিকে মুহাম্মদের দাদা আব্দুল মুত্তালিব এবং আমিনা’র চাচাত বোন হালার এক সন্তান ছিল। তার নাম হামজা, যিনি সম্পর্কে নবী মুহাম্মদের চাচা। এই হামজা পরবর্তীতে মুহাম্মদ প্রবর্তিত ধর্ম ইসলামের একজন বীরযোদ্ধা হিসাবে উহুদের যুদ্ধে মারা যান।
নবী মুহাম্মদের জন্ম নিয়ে ইসলামী ইতিহাসবিদদের ইতিহাস প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে মুহাম্মদের চাচা হামজা যখন সামনে আসে। আবদুল্লা ও মোত্তালিব একসাথে বিয়ে হওয়ার কারণে হালা এবং আমিনা একই সময়ে গর্ভধারণ করার কথা অথবা যে কোন একজন পরে। যদি হালা কয়েক বছর পরে গর্ভবতী হয়ে থাকে তবে হামজার বয়স মুহাম্মদের চাইতে কম হবার কথা। কিন্তু ইসলামের ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি যে হামজা মোহাম্মদের চাইতে বড়। মুহাম্মদের জীবনী “ইয়ুন আল-আতহার” বইয়ে ইবন আল সাঈদ আল-নাস লিখেছেন,” জুবায়ের থেকে বর্নিত হামজা নবীর চেয়ে চার বছরের বড়। কিন্তু এটা আমার কাছে সঠিক মনে হয় না, কারণ নির্ভরযোগ্য হাদিস থেকে জানতে পারি যে থাইবিয়া নামক একজন হামজা এবং মুহাম্মদ উভয়কেই লালন পালন করেছেন”। ইবন আল সাঈদ উপসংহারে বলেছেন যে হামজা মোহাম্মদের চেয়ে দুই বছরের বড়, জুবায়ের যে দাবী করেছেন হামজা যে মুহাম্মদের চেয়ে চার বছরের বড় সেটা সঠিক নয়। তিনি শেষ করেছেন একথা বলে, “ একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন”। যে বিষয়ে মুসলমানদের সন্দেহ থাকে সে বিষয় নিয়ে আলোচনা না বাড়িয়ে এমন কথাই বলে।

ইবন হাজার আল-আসকালানী ,তার বই “Finding the Truth in Judging the Companions”, এ লিখেছেন যে হামজা মুহাম্মদের জন্মের দুই বা চার বছর আগে জন্ম গ্রহণ করেছেন। ইবনে সাদ “The Book of the Major Classes” বইয়ে উল্লেখ করেছেন যে হামজা যখন উহুদের যুদ্ধে নিহত হন তখন তার বয়স ছিল ৫৯ বছর। ইবনে সাদ আরও বলেছেন যে হামজা নবীর চাইতে চার বছরের বড়, অয়াশি ইবনে আল-হার্ব যখন তার পেটে তরবারী ঢুকিয়ে দেন তখন তিনি মারা যান।

এখন সবার মনে প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক- উহুদের যুদ্ধের সময় মুহাম্মদের বয়স কত ছিল? সকল ইসলামী ঐতিহাসিকদের অভিন্ন মত অনুযায়ী মুহাম্মদ ৫৭০ খ্রীস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। এসব ঐতিহাসিকদের থেকে জানা যায়, উহুদের যুদ্ধ সংঘটিত হয় ৬২২ খ্রীস্টাব্দে মুহাম্মদের মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতের তিন বছর পরে। যার মানে ইসলামী ঐতিহাসিকদের হিসাব অনুযায়ী ৬২৫ খ্রীস্টাব্দে উহুদের যুদ্ধ হয়েছিল। সে সময়ে হামজা ৫৯ বছর বয়সে মারা যান এবং নবী মুহাম্মদের বয়স ছিল ৫৫ বছর ।

এখন সবার মনে প্রশ্ন আসতে পারে, হামজা তার ভাতিজা মুহাম্মদের চেয়ে চার বছরের বড় হলে সমস্যাটা কোথায়? এই প্রশ্নটির কাছেই ঘটনার প্যাচ তৈরি হয়। যদি আবদুল্লাহ ও তার বাবা আবদুল মুত্তালিব একই দিনে বিয়ে করে থাকে এবং আবদুল্লাহ বিয়ের কয়েক মাস পরে মারা যায় তবে কিভাবে হামজা মুহাম্মদের চাইতে চার বছরের বড় হয়? প্রশ্নটি আরও স্পষ্টভাবে করলে দাঁড়ায়, যদি আবদুল্লাহ মারা যাওয়ার চার বছর পরে মুহাম্মদের জন্ম হয় তবে মুহাম্মদের বাবা কে? তার পৈতৃক পরিচয় কি?
প্রশ্ন করতে পারেন, মুহাম্মদের জন্ম পরিচয়ের এমন ঘাপলা নিয়ে ইতিহাসের বইগুলোতে আলোচনা নাই কেন? একেবার নাই কথাটা ঠিক নয়। এমন ইতিহাস নিয়ে মুসলমানরা আলোচনা করতে বিব্রতবোধ করেন। ইসলামী স্কলাররা বিষয়টা কৌশলে এড়িয়ে যান। অন্য ইতিহাসবিদ বা বিভিন্ন মুক্তচিন্তকরা আলোচনা করতে গেলে ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগ তোলেন। আরবে মুহাম্মদের জীবদ্দশায় এসব নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে, গত সাড়ে ১৪০০ বছর ধরে আলোচনা হচ্ছে।

ঐতিহাসিক ইবনে কাতির তাঁর বই “The Beginning and the End” এ উল্লেখ করেছেন আরবে মুহাম্মদ জীবিত থাকা অবস্থায় বেনি কিন্দাহ গোত্রের লোকরা দাবী করত যে মুহাম্মদ তাদের বংশের। বেনি কিন্দাহ হচ্ছে আরবের সে সময়ের একটি গোত্র। কিন্তু মুসলমানরা বিশ্বাস করে বনু হাশিম গোত্রে মোহাম্মদ জন্ম নিয়েছে। আবু আল- ইসবাহানি তার বই “দলিল আল-নবুয়্যাত” বইয়ে লিখেছেন, ইবনে আব্বাস বলেছেন- নবী মুহাম্মদকে মক্কার কুরাইশরা তাদের বংশের লোক বলে স্বীকার করত, তবে তারা মুহাম্মদকে বর্ণনা করত “একটা পাম গাছ, যেটি পাহাড়ের পাশে জন্মেছে” -একথা শুনে মোহাম্মদ খুব রাগান্বিত হত।

“একটা পাম গাছ, যেটি পাহাড়ের পাশে জন্মেছে” এ কথার মানে কি? এর মানে হচ্ছে মক্কার কুরাইশরা মনে করত- মুহাম্মদ সে ওক গাছ নয়, যেটি তারা বপন করেছে। সে এমন একটা গাছ যে নিজে নিজে বেড়ে উঠেছে। কেউ জানে না কে এই গাছ বপন করেছে। মুহাম্মদ তাদের কথার অর্থ বুঝত এবং এজন্যই সে রাগান্বিত হত। আবু নাইম আল-ইসবাহানী এ বিষয়ে আরও উল্লেখ করেছেন যে ইবনে আব্বাস মোহাম্মদকে বলেছে, যখন কোরাইশরা একে অপরের সাথে মিলিত হত, তারা একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসত। কিন্তু যখন আমদের সাথে মিলিত হত, তারা আমাদের বিদ্রুপ করত এবং বলত তারা জানে না কোথা থেকে আমাদের নবী এসেছে। মুহাম্মদ যখন একথা শুনত তখন খুবই রাগান্বিত হত।
অনেক গবেষক এটাকে এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন যে বনি কিন্দাহ গোত্রের লোকজন জানত যে মুহাম্মদের জন্ম তাদের গোত্রের কারো মাধ্যমে, বনু হাশিম থেকে নয় এবং মুহাম্মদ নিজেও তা জানত। গবেষকগণ আরো বলেছে যে মুহাম্মদ হলো “একটা পাম গাছ যেটি পাহাড়ের পাশে জন্মেছে” এ কথাটির অর্থ হলো মুহাম্মদের বংশ পরিচয় অজ্ঞাত। তাহলে মুহাম্মদকে ইসমাইলের বংশের উত্তরসূরী বানানোর প্রচেষ্ঠাকে বলা যায় মিথ্যা ও চরম জোচ্ছুরী। ইব্রাহিমের বংশের বাইরের কেউ নবী হতে পারবে না ঈশ্বর বা আল্লার এমন কথা সঠিক নয়। মুহাম্মদ সেটি হয়ে দেখিয়েছেন।

অনেক ইসলামী স্কলার এবং মোল্লা মৌলবীরা মুহাম্মদের জন্ম নিয়ে এমন আলোচনার ক্ষেত্রে দাবী করে আল্লাহর অলৌকিক ক্ষমতায় নবী মুহাম্মদ চার বছর মাতৃগর্ভে ছিলেন। যা আসলে হাস্যকর এবং যা বিজ্ঞানসম্মত নয়। আধুনিক বিজ্ঞান মাতৃগর্ভে চার বছর সন্তান থাকার ইতিহাস এখনো খুঁজে পায়নি। কোন মুসলিম স্কলার, বিজ্ঞানী, চিকিৎসাবিদ্যার গবেষক চার বছর মাতৃগর্ভে কোন শিশু অবস্থান করে ভুমিষ্ঠ হওয়ার সম্ভবনাকে এখনো পর্যন্ত সমর্থন করেননি।

আরবে কথিত আছে বেনি কিন্দাহ গোস্টির এক যুবকের সাথে বিয়ের পুর্ব থেকে আমিনার প্রেমের সর্ম্পক ছিল। চাচার পরিবারের লালন-পালন হওয়া আমিনা বাধ্য হয়ে আবদুল্লাকে বিয়ে করেছিল। বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যে আবদুল্লা মারা যাওয়ায় তাদের সেই সর্ম্পক দীর্ঘদিন পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। অনেকে মুহাম্মদকে বনি কিন্দাহ গোত্রের সেই যুবকের সাথে আমিনার পরিণয়ের ফসল বলে মনে করেন। এদিকে আবদুল্লার মৃত্যুর চার বছর পর জন্ম নেওয়া মুহাম্মদের প্রতি মোত্তালিবের অন্ধ ভালবাসাকে মক্কার মানুষজন সে সময় অন্য চোখে দেখতেন। মুহাম্মদকে আবদুল মোত্তালেবের পুত্র বলে অনেকেই মনে করতেন। বুখারী শরীফের এক হাদিসে মুহাম্মদ নিজেকে আবদুল মোত্তালিবের পুত্র হিসাবে মত ব্যক্ত করেছেন। হাদিসটি নীচে উল্লেখ করা হল:
حَدَّثَنَا عَمْرُوْ بْنُ خَالِدٍ الْحَرَّانِيُّ حَدَّثَنَا زُهَيْرٌ حَدَّثَنَا أَبُوْ إِسْحَاقَ قَالَ سَمِعْتُ الْبَرَاءَ وَسَأَلَهُ رَجُلٌ أَكُنْتُمْ فَرَرْتُمْ يَا أَبَا عُمَارَةَ يَوْمَ حُنَيْنٍ قَالَ لَا وَاللهِ مَا وَلَّى رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَلَكِنَّهُ خَرَجَ شُبَّانُ أَصْحَابِهِ وَأَخِفَّاؤُهُمْ حُسَّرًا لَيْسَ بِسِلَاحٍ فَأَتَوْا قَوْمًا رُمَاةً جَمْعَ هَوَازِنَ وَبَنِيْ نَصْرٍ مَا يَكَادُ يَسْقُطُ لَهُمْ سَهْمٌ فَرَشَقُوْهُمْ رَشْقًا مَا يَكَادُوْنَ يُخْطِئُوْنَ فَأَقْبَلُوْا هُنَالِكَ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ عَلَى بَغْلَتِهِ الْبَيْضَاءِ وَابْنُ عَمِّهِ أَبُوْ سُفْيَانَ بْنُ الْحَارِثِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ يَقُوْدُ بِهِ فَنَزَلَ وَاسْتَنْصَرَ ثُمَّ قَالَ :
أَنَا الـنّـَبـِيُّ لَا كَـذِبْ * أَنَا ابْنُ عَـبـْدِ الْمُطَّـلِـبْ
ثُمَّ صَفَّ أَصْحَابَهُ

বারা’ (রাঃ)
তাকে এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, হে আবূ উমারা! হুনায়নের দিন আপনারা কি পলায়ন করেছিলেন? তিনি বললেন, না, আল্লাহ্‌র কসম, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পলায়ন করেননি। বরং তাঁর কিছু সংখ্যক নওজোয়ান সাহাবী হাতিয়ার ছাড়াই অগ্রসর হয়ে গিয়েছিলেন। তারা বনূ হাওয়াযিন ও বনূ নাসর গোত্রের সুদক্ষ তীরন্দাজদের সম্মুখীন হন। তাদের কোন তীরই লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়নি। তারা এদের প্রতি এমনভাবে তীর বর্ষণ করল যে, তাদের কোন তীরই ব্যর্থ হয়নি। সেখান থেকে তারা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে উপস্থিত হলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন তাঁর সাদা খচ্ছরটির পিঠে ছিলেন এবং তাঁর চাচাতো ভাই আবূ সুফিয়ান ইব্‌নু হারিস ইব্‌নু ‘আবদুল মুত্তালিব তাঁর লাগাম ধরে ছিলেন। তখন তিনি নামেন এবং আল্লাহ্‌র সাহায্য প্রার্থনা করেন। অতঃপর তিনি বলেন, আমি নবী, এ কথা মিথ্যা নয়। আমি ‘আবদুল মুত্তালিবের পুত্র। অতঃপর তিনি সাহাবীদের সারিবদ্ধ করেন।
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৯৩০
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: ihadis.com
আবদুল মোত্তালিবের মত এমন প্রভাবশালী, ধনী গোত্র প্রধানের নাতি পিতা না থাকার কারণে অনাদরে অবহেলায় বেড়ে উঠা আমাদের মনে প্রশ্নের উদ্রেক করে। কিশোর বয়সে মেষ চরিয়ে জীবিকা নির্বাহ করার মত করুণ অর্থনৈতিক অবস্থা মুহাম্মদের পিতা বা দাদার ছিল না। আবদুল মোত্তালিব ছাড়া মুহাম্মদ পরিবারের অন্য কারো কাছ থেকে মুহাম্মদ সহানুভুতি পায়নি। দাদার মৃত্যুর পর চাচা আবু তালেবের কাছে থাকলেও মুহাম্মদের রাখাল হয়ে উঠার মধ্যে পারিবারিক ভালবাসা বা বন্ধন খুঁজে পাওয়া যায় না।
মুহাম্মদকে জারজ বা অবৈধ হিসাবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে এই লেখা নয়। বরং মুহাম্মদের প্রবর্তিত যে ইসলামের নৈতিকতার কাছে মানুষের জন্ম পরিচয়, বৈধ সর্ম্পকের মাধ্যমে জন্ম নেওয়ার বাধ্যবাদকতা, সেই ইসলামের মহামানবের পিতৃপরিচয় আজ প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছে। বুঝাতে চেয়েছি মানুষ বেঁচে থাকে তার র্কমগুনে। যেখানে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদের পিতৃ পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন আছে সেখানে ইসলাম কেন মানুষের বিবাহ বহির্ভুত সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তুলবে? কেন মানুষকে বৈধ বা অবৈধ শ্রেনীতে বিভাজন করবে?