Friday, April 30, 2021

এপোলো চন্দ্র অভিযান কেন সত্য?

 



এপোলো চন্দ্র অভিযান নিয়ে কথা উঠলেই একদল মানুষ এসে বলে যে চন্দ্র অভিযান কখনও সংগঠিত হয়নি এবং আমেরিকান সরকার সোভিয়েত ইউনিয়নকে মহাকাশ প্রতিযোগিতায় হারাতে এই পদক্ষেপ নিয়েছিল। শেষের কথাটা সত্যি হলেও, প্রথম কথাটি সত্য না। কেন সত্য না এর পেছনে তিনটি কারণ আমি দেখাব।

প্রথম কারণ: লুনার লেজার রেঞ্জিং পরীক্ষণ
মিলিমিটার প্রিসিশনে পৃথিবী হতে চাঁদের প্রকৃত দুরত্ব মাপার জন্য, নাসা এপোলো ১১ মিশনে চাঁদে রেট্রো রিফ্লেকটর বা প্রতিফলক পাঠিয়েছিল। এই যন্ত্রটির মাধ্যমে পৃথিবী হতে বেতার বা লেজার রশ্নির মাধ্যমে একদম মিলিমিটার মাপে পৃথিবী হতে চাঁদের দুরত্ব মাপা যেত। এই পরীক্ষণটি সর্বপ্রথম ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির দুইজন গবেষক সম্পন্ন করেছিলেন। পরবর্তিতে একই পরীক্ষা তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি গবেষক দল ক্রিমিয়ান এস্ট্রোফিজিকস অবসার্ভেটরি থেকেও করা হয়েছিল এবং আমেরিকান গবেষকদের পরীক্ষার প্রায় সমান ফলাফল পাওয়া গিয়েছিল।
পরীক্ষণটি কেবল চাঁদ-পৃথিবীর মধ্যবর্তি দূরত্ব বের করার কাজেই ব্যবহার হয়নি। এই পরীক্ষা হতে প্রাপ্ত ফলাফল পরবর্তিতে চাঁদের মেরু অঞ্চলের সম্প্রসারণ ও সংকোচনের বিস্ময়কর ঘটনা আবিষ্কারে সহায়তা করেছিল। পরীক্ষণ লব্ধ ফলাফল, চাঁদের অভ্যন্তরিন গঠন সম্পর্কেও বিজ্ঞানীদের প্রাথমিক ধারণা প্রদান করেছিল। বিজ্ঞানীরা এপোলো মিশনে চাঁদে রেখে আশা বিভিন্ন সেন্সরের মাধ্যমে বুঝতে পারেন যে চাঁদের অভ্যন্তরের ক্রাস্ট ২০ পার্সেন্ট উত্তপ্ত তরল পদার্থ।
দ্বিতীয় কারণ: সোভিয়েত নজরদারি
আমেরিকার চন্দ্র অভিযান সোভিয়েত ইউনিয়নের মহাকাশ গবেষণাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করেছিল। সোভিয়েতরা জানত, আমেরিকানরা চন্দ্রে পৌঁছে গেলে তাঁদের মহাকাশ গবেষণায় পিছিয়ে পড়তে হবে। এইজন্য তারা শুরু থেকেই মার্কিন মহাকাশ গবেষণার উপর নজরদারি করে আসছিল। বিভিন্ন সোভিয়েত উৎস হতে জানা যায়, সোভিয়েতরা প্রতিটি এপোলো অভিযান তাঁদের রেডিয়ো ও রাডার প্রযুক্তির মাধ্যমে ট্র্যাক করেছিল। এমনকি এপোলো ১১’র অভিযান পর্যবেক্ষন করার জন্য ইউএসএসআর পৃথিবীর কক্ষপথে একটা মহাকাশযানও প্রেরণ করে রেখেছিল। বলা বাহুল্য, সবগুলো পর্যবেক্ষণই সত্য ছিল।
তৃতীয় কারণ: চায়নিজ চ্যাং ই ২ এবং ভারতীয় চন্দ্রযান ১
চীন ২০১০ সালে চাঁদে চ্যাং ই ২ নামে যে মহাকাশযানটি পাঠিয়েছিল, সে মহাকাশযানটি চাঁদের ম্যাপিং করেছিল। এই ম্যাপিং এর সময় এপোলো মিশনের যন্ত্রপাতির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এপোলো মিশনের সময় তোলা বিভিন্ন ছবিরও সত্যতা পাওয়া গেছে। একইভাবে ভারতীয় চন্দ্রযান ১ অবতরনস্থলের মাটিতে এপোলো মিশনের মহাকাশযানের অবতরন করার অস্তিত্ব পেয়েছে।
এই তিনটি কারণ ছাড়াও চন্দ্র অভিযান বিশ্বাস করার মত অনেক কারণ আছে। এপোলোর চন্দ্রাভিযানের বিভিন্ন বিষয় পৃথিবীর হতে টেলিস্কোপের মাধ্যমে জোতির্বিদেরা দেখতে পেয়েছেন। এরকম প্রায় শতাধিক রিপোর্ট আছে। উল্লেখযোগ্য একটা রিপোর্ট হল, কেটারিং গ্রামার স্কুলের বেতার পর্যবেক্ষন। একটা বালক বিদ্যালয়ের ছাত্ররা হ্যাম রেডিও ইক্যুইপমেন্ট ব্যবহার করে এপোলো মিশন ও সোভিয়েত মিশনের বেতার যোগাযোগ পর্যবেক্ষন করে, পৃথিবী হতে এপোলো মহাকাশযান ও সোভিয়েত মহাকাশ যানের দূরত্ব বের করে ফেলেছিল। সেসময়ের একাধিক দেশ হতে এই অভিযানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ট্র্যাকিং করা হয়েছিল। শুধু তাই না, এপোলো মিশন শেষ হবার পর অনেকগুলো গবেষণা প্রতিবেদন পিয়ার রিভিউড জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল। যারা পিয়ার রিভিউড জার্নাল সম্পর্কে একটু খোঁজ খবর রাখে তারা জানে, এগুলো এত সহজে ফেইক করা যায় না।
ছবিতে লুনার লেজার রেঞ্জিং রেট্রোরিফ্লেক্টর এবং জাপানি কাগুয়া চন্দ্র অভিযান হতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে চাঁদের ত্রিমাত্রিক ছবি, যার সাথে এপোলো ১৫'র একটি ছবির হুবুহু মিলে যায়।