একঃ
পানি কি উপাদানে তৈরি? এই প্রশ্নের উত্তর স্থান-কাল-পাত্র ভেদে
পাল্টানোর কথা নয়, যেহেতু এটি বিজ্ঞানে একটি মীমাংশিত বিষয়। পৃথিবীর সব
দেশে শিক্ষার্থিদের শিখানো হয়, দুই পরমানু হাইড্রোজেন আর এক পরমানু
অক্সিজেন মিলে পানি (H2O) তৈরি হয়। এখানে কারো অনুভূতির বা ভাল-খারাপের
ব্যাপার নেই। কিন্তু মনুষ্য অনুভুতি বড় বিচিত্র। পাকিস্তানের কথা ধরুন।
বিজ্ঞানের কার্য-কারণ নীতি ভিত্তিক শিক্ষা ধর্ম প্রাণ মুসলমানদের অনুভুতিতে
আঘাত দিতে পারে, এই ভেবে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ এক সময় বিজ্ঞানে ইসলাম টেনে
আনলেন। শিক্ষার্থিরা পড়ল, হাইড্রোজেন আর অক্সিজেন মিলে “আল্লাহর ইচ্ছাতে”
পানি তৈরি হয়। ঘটনাটি ২০০১ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বর্ননা করেছিলেন
পাকিস্তানের খ্যাতনামা নিউক্লিয়ার ফিজিসিস্ট, যুক্তিবাদী
বিজ্ঞানি-দার্শনিক, অধ্যাপক পারভেজ হুদবয়।
দুইঃ
মানুষ মাত্রেরই অনুভূতি আছে। ধনী-গরিব, বড় মানুষ-ছোট মানুষ, শিল্পী-বিজ্ঞানী-বুদ্ধিজীবী কেউ অনুভুতিবিহীন নন। টিভি-ভিডিও-ইউ টিউবে আমরা দেখেছি, বিশ্বের ঝানু ঝানু নেতারা ও কখনো কখনো অতি আবেগে চোখের পানি সামলে রাখতে পারেন নি। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশের মাটিতে পা রেখে বঙ্গবন্ধু কেঁদেছেন। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আবেগ আপ্লুত হয়ে বক্তৃতায় কেঁদেছেন। সদ্য বিদায় নেয়া আমেরিকার হাউস স্পিকার জন বাইনার বহু বার কথা বলতে গিয়ে কেঁদেছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে ও আমরা একাধিকবার কাঁদতে দেখেছি। কাজেই অনুভূতি থাকা এবং অনুভূতিতে চোট লাগা কোনটাই অস্বাভাবিক নয়। অনুভূতি না থাকলে কবি কবিতা লিখতে পারতেন না, শিল্পী ছবি আঁকতে পারতেন না। আমার অনুভূতিকে কেউ ছিনিয়ে নিলে আমি কেবলই একটা রোবট।
ধর্ম বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত। পৃথিবীর প্রায় আশি শতাংশ মানুষ যেহেতু কোন না কোন ধর্মে বিশ্বাস করেন (বিশ্বের প্রায় এক পঞ্চমাংশ মানুষ কোন প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মে বিশ্বাস করে না), ধর্ম নিয়ে কথা বললে বা লিখলে অধিকাংশ মানুষের অনুভুতি তা ছোঁবে। কিন্তু অনুভূতি ভ্রান্ত ও হতে পারে, সে যতই প্রিয় হোক না কেন। এমনকি অনেক সময় সার্বজনীন সত্যের বিপরীত ও হতে পারে। বহু কাল ধরে পৃথিবীর প্রায় সকল মানুষ যা বিশ্বাস করেছে, তা ও একসময় ভুল প্রমাণিত হয়েছে। যেন তেন ভুল নয়, মারাত্নক ভুল। ইতিহাস থেকে দু’একটা প্রমাণ দেয়া যাক।
পৃথিবীর প্রায় নিরান্নব্বই শতাংশ বা তার ও অধিক মানুষ একসময় বিশ্বাস করেছে, পৃথিবীর আকার মোটে ও গোল নয়, বরং সমতল। আমরা জানি সেটি এখন আর সত্য নয়। (মূর্খতা জগতে কখন ও শূন্যের কোঠায় নেমে আসার কথা নয়; এখন ও অতি নগণ্য সংখক কিছু মানুষ সমতল পৃথিবীতে বিশ্বাস করে। এদের সংগঠনের নাম ‘ফ্লাট আর্থ সোসাইটি’।)
১৪০০ বছর ধরে সারা বিশ্বের মানুষ তো বটেই, বড় বড় দার্শিনেকেরা (‘বিজ্ঞানী’ বা ‘scientist’ শব্দটি মাত্র ১৭৬ বছর পুরানো) বিশ্বাস করেছেন, আমাদের পৃথিবী হচ্ছে মহাবিশ্বের কেন্দ্র, যা টলেমীয় মতবাদ নামে পরিচিত। ষোল শতাব্দীতে ইটালির গণিত শাস্ত্রবিদ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানি গ্যালিলও কোপার্নিকাস-কেপলারের বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দাঁড় করিয়ে দেখালেন, পৃথিবী মোটেও স্থির নয়, সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে পৃথিবী অবিরত। এসব কথায় এখন আর কারো অনুভূতিতে আঘাত লাগার কথায় নয়। কিন্তু পৃথিবীর মানুষ এই সত্য সাথে সাথে মেনে নেয়নি।
বিজ্ঞান আমাদের অনুভূতিকে বহুবার ওলটপালট করেছে। বিজ্ঞানীরা ফসিলের সাহায্যে দেখিয়েছেন, পৃথিবীর বয়স কমপক্ষে সাড়ে চার বিলিয়ন বছর। বাইবেলের হিসেবে পৃথিবী্র বয়স দশ হাজার বছরের ও কম। কোটী কোটি খৃস্টানের অনুভূতিকে বিজ্ঞান তোড়াই কেয়ার করল! আদি মানুষের মাথার খুলি পরীক্ষায় জানা গেছে, পৃথিবীতে মানুষ কয়েক লক্ষ বছর ধরে বিচরন করছে। বাইবেল অনুযায়ী, মানুষ মাত্র দশ হাজার বছর আগে পৃথিবীতে আদম-হাওয়ার সূত্র ধরে এসেছে। কি বড় একটা ধাক্কা মানুষের অন্তরে সযত্নে প্রোথিত বিশ্বাসের মুলে!
তবে এসব আবিষ্কারের ফলে পৃথিবীর সকল মানুষ নাস্তিক হয়ে যায় নি (স্বয়ং গ্যালিলিও ও নাস্তিক ছিলেন না) কিন্তু মানুষের বিশ্বাসের ধরন পাল্টেছে। আধুনিক মানুষ এখন মেনে নিয়েছে, প্রকৃতিকে জানতে হলে বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানসন্মত কার্যকারণ অনুসন্ধান পদ্ধতি এখন পর্যন্ত সর্বাপেক্ষা কার্যকর পন্থা।
কাজেই কেবল মানুষের অনুভূতির কথা চিন্তা করে বিজ্ঞান চর্চা বা বিজ্ঞান নিয়ে কথা বলা বা লেখা বন্ধ করা যাবে না। গ্যালিলিওর ভাষায়, “বিজ্ঞানের প্রশ্নে এক হাজার লোকের কর্তৃত্ব একজনের বিনম্র যুক্তির চাইতে মূল্যবান নয়।”(“In questions of science the authority of a thousand is not worth the humble reasoning of a single individual”)
তিনঃ
সমাজে নানা মতের মানুষ বরাবর ছিল, এখন ও আছে। আর ধর্ম-ঈশ্বর এসব বিষয়াদি নিয়ে মানুষের কৌতূহল, নিজের মত করে অনুসন্ধান এবং উত্তর খোঁজার চেষ্টা ও মানুষ সভ্যতার শুরু থেকে করে আসছে। কিন্তু মতামতের বা চিন্তার ভিন্নতা থাকা সত্ত্বে ও আমরা একই সমাজে বসবাস করি, মেলামেশা করি। এর নাম সহনশীলতা। দালাই লামা ব্যাপারটা এ ভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেনঃ ব্যক্তিগত পছন্দ জলাঞ্জলি না দিয়ে ও একটা রেস্টুরেন্টে এক টেবিলে বসে একসাথে একজন হিন্দু, একজন মুসলমান, একজন বৌদ্ধ এবং একজন খৃস্টান যার যার পছন্দমত খাবার খেতে পারেন। সবার খাবার এক না হওয়াটা স্বাভাবিক, কিন্তু একসাথে বসে খেতে পারার পরিবেশ না থাকাটা স্বাভাবিক নয়।
নিজের প্রিয় একটি বিষয়ে নিজস্ব ব্যাখ্যার বাইরে বিকল্প কোন ব্যাখ্যা একজন মানুষের ভাল না ও লাগতে পারে, সেটা মোটেও অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু আমার ব্যাখ্যাকে কেউ সমালোচনা করলে আমি সমালোচনাকারীকে প্রাণে মেরে ফেলতে পারি না। সেসব অসভ্যতা আমরা পেছনে ফেলে এসেছি কয়েক শ’ বছর আগে।
‘ধর্মানুভূতিতে আঘাত’ ব্যাপারটির কথা প্রায় শুনতে পাই। সমস্যা ধর্ম কিংবা ধর্ম কেন্দ্রিক অনুভূতি থাকাতে নয় মোটেও। সমস্যা হয় তখন ধর্মানুভূতির বিশাল স্তূপের নিচে যখন চাপা পড়ে যায় আমাদের বিবেকানুভূতি।
মুক্তচিন্তা চর্চ্চাকারি ব্লগার-প্রকাশক-লেখকদের একের পর এক কতিপয় উগ্রবাদী খুন করে যাচ্ছে। খুনিদের খুঁজে বের করা এবং এসব অপরাধ ভবিষ্যতে প্রতিরোধ করা নিয়ে আমাদের সরকার সরব নয়। এ নিয়ে বেশি মাথা না ঘামানোকেই হয়ত বুদ্ধিমানের কাজ মনে করছে করছে সরকার।
সচেতন, শান্তিপ্রিয় মুসলমানকে ও এসব হত্যাকান্ড অতটা আলোড়িত করছে না সম্ভবত । বরং অনেকে ব্লগারদের দোষ দিচ্ছেন ধর্ম-দর্শন নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলাতে বা লেখাতে। এঁদের মনে করিয়ে দিতে চাই যে, জঙ্গি-জিহাদিরা ছায়ানট-উদীচীর মত সাদামাটা সাংস্কৃতিক সংগঠন দিয়ে তাদের শক্তিমত্তার পরীক্ষামূলক প্রকাশ ঘটিয়েছিল। আস্তে আস্তে সাহসী হয়ে ওঠে ওরা। এতটাই সাহসী যে প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা, আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শেখ হাসিনা এবং তার সঙ্গীদের হত্যা করতে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মত অভাবনীয় ঘটনা ঘটায়। শেখ হাসিনা বা ঐ হামলায় আহত-নিহতরা কেউ নাস্তিক ছিলেন না।
একটু জোক মনে পড়ে।
—-
দুইঃ
মানুষ মাত্রেরই অনুভূতি আছে। ধনী-গরিব, বড় মানুষ-ছোট মানুষ, শিল্পী-বিজ্ঞানী-বুদ্ধিজীবী কেউ অনুভুতিবিহীন নন। টিভি-ভিডিও-ইউ টিউবে আমরা দেখেছি, বিশ্বের ঝানু ঝানু নেতারা ও কখনো কখনো অতি আবেগে চোখের পানি সামলে রাখতে পারেন নি। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশের মাটিতে পা রেখে বঙ্গবন্ধু কেঁদেছেন। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আবেগ আপ্লুত হয়ে বক্তৃতায় কেঁদেছেন। সদ্য বিদায় নেয়া আমেরিকার হাউস স্পিকার জন বাইনার বহু বার কথা বলতে গিয়ে কেঁদেছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে ও আমরা একাধিকবার কাঁদতে দেখেছি। কাজেই অনুভূতি থাকা এবং অনুভূতিতে চোট লাগা কোনটাই অস্বাভাবিক নয়। অনুভূতি না থাকলে কবি কবিতা লিখতে পারতেন না, শিল্পী ছবি আঁকতে পারতেন না। আমার অনুভূতিকে কেউ ছিনিয়ে নিলে আমি কেবলই একটা রোবট।
ধর্ম বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত। পৃথিবীর প্রায় আশি শতাংশ মানুষ যেহেতু কোন না কোন ধর্মে বিশ্বাস করেন (বিশ্বের প্রায় এক পঞ্চমাংশ মানুষ কোন প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মে বিশ্বাস করে না), ধর্ম নিয়ে কথা বললে বা লিখলে অধিকাংশ মানুষের অনুভুতি তা ছোঁবে। কিন্তু অনুভূতি ভ্রান্ত ও হতে পারে, সে যতই প্রিয় হোক না কেন। এমনকি অনেক সময় সার্বজনীন সত্যের বিপরীত ও হতে পারে। বহু কাল ধরে পৃথিবীর প্রায় সকল মানুষ যা বিশ্বাস করেছে, তা ও একসময় ভুল প্রমাণিত হয়েছে। যেন তেন ভুল নয়, মারাত্নক ভুল। ইতিহাস থেকে দু’একটা প্রমাণ দেয়া যাক।
পৃথিবীর প্রায় নিরান্নব্বই শতাংশ বা তার ও অধিক মানুষ একসময় বিশ্বাস করেছে, পৃথিবীর আকার মোটে ও গোল নয়, বরং সমতল। আমরা জানি সেটি এখন আর সত্য নয়। (মূর্খতা জগতে কখন ও শূন্যের কোঠায় নেমে আসার কথা নয়; এখন ও অতি নগণ্য সংখক কিছু মানুষ সমতল পৃথিবীতে বিশ্বাস করে। এদের সংগঠনের নাম ‘ফ্লাট আর্থ সোসাইটি’।)
১৪০০ বছর ধরে সারা বিশ্বের মানুষ তো বটেই, বড় বড় দার্শিনেকেরা (‘বিজ্ঞানী’ বা ‘scientist’ শব্দটি মাত্র ১৭৬ বছর পুরানো) বিশ্বাস করেছেন, আমাদের পৃথিবী হচ্ছে মহাবিশ্বের কেন্দ্র, যা টলেমীয় মতবাদ নামে পরিচিত। ষোল শতাব্দীতে ইটালির গণিত শাস্ত্রবিদ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানি গ্যালিলও কোপার্নিকাস-কেপলারের বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দাঁড় করিয়ে দেখালেন, পৃথিবী মোটেও স্থির নয়, সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে পৃথিবী অবিরত। এসব কথায় এখন আর কারো অনুভূতিতে আঘাত লাগার কথায় নয়। কিন্তু পৃথিবীর মানুষ এই সত্য সাথে সাথে মেনে নেয়নি।
বিজ্ঞান আমাদের অনুভূতিকে বহুবার ওলটপালট করেছে। বিজ্ঞানীরা ফসিলের সাহায্যে দেখিয়েছেন, পৃথিবীর বয়স কমপক্ষে সাড়ে চার বিলিয়ন বছর। বাইবেলের হিসেবে পৃথিবী্র বয়স দশ হাজার বছরের ও কম। কোটী কোটি খৃস্টানের অনুভূতিকে বিজ্ঞান তোড়াই কেয়ার করল! আদি মানুষের মাথার খুলি পরীক্ষায় জানা গেছে, পৃথিবীতে মানুষ কয়েক লক্ষ বছর ধরে বিচরন করছে। বাইবেল অনুযায়ী, মানুষ মাত্র দশ হাজার বছর আগে পৃথিবীতে আদম-হাওয়ার সূত্র ধরে এসেছে। কি বড় একটা ধাক্কা মানুষের অন্তরে সযত্নে প্রোথিত বিশ্বাসের মুলে!
তবে এসব আবিষ্কারের ফলে পৃথিবীর সকল মানুষ নাস্তিক হয়ে যায় নি (স্বয়ং গ্যালিলিও ও নাস্তিক ছিলেন না) কিন্তু মানুষের বিশ্বাসের ধরন পাল্টেছে। আধুনিক মানুষ এখন মেনে নিয়েছে, প্রকৃতিকে জানতে হলে বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানসন্মত কার্যকারণ অনুসন্ধান পদ্ধতি এখন পর্যন্ত সর্বাপেক্ষা কার্যকর পন্থা।
কাজেই কেবল মানুষের অনুভূতির কথা চিন্তা করে বিজ্ঞান চর্চা বা বিজ্ঞান নিয়ে কথা বলা বা লেখা বন্ধ করা যাবে না। গ্যালিলিওর ভাষায়, “বিজ্ঞানের প্রশ্নে এক হাজার লোকের কর্তৃত্ব একজনের বিনম্র যুক্তির চাইতে মূল্যবান নয়।”(“In questions of science the authority of a thousand is not worth the humble reasoning of a single individual”)
তিনঃ
সমাজে নানা মতের মানুষ বরাবর ছিল, এখন ও আছে। আর ধর্ম-ঈশ্বর এসব বিষয়াদি নিয়ে মানুষের কৌতূহল, নিজের মত করে অনুসন্ধান এবং উত্তর খোঁজার চেষ্টা ও মানুষ সভ্যতার শুরু থেকে করে আসছে। কিন্তু মতামতের বা চিন্তার ভিন্নতা থাকা সত্ত্বে ও আমরা একই সমাজে বসবাস করি, মেলামেশা করি। এর নাম সহনশীলতা। দালাই লামা ব্যাপারটা এ ভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেনঃ ব্যক্তিগত পছন্দ জলাঞ্জলি না দিয়ে ও একটা রেস্টুরেন্টে এক টেবিলে বসে একসাথে একজন হিন্দু, একজন মুসলমান, একজন বৌদ্ধ এবং একজন খৃস্টান যার যার পছন্দমত খাবার খেতে পারেন। সবার খাবার এক না হওয়াটা স্বাভাবিক, কিন্তু একসাথে বসে খেতে পারার পরিবেশ না থাকাটা স্বাভাবিক নয়।
নিজের প্রিয় একটি বিষয়ে নিজস্ব ব্যাখ্যার বাইরে বিকল্প কোন ব্যাখ্যা একজন মানুষের ভাল না ও লাগতে পারে, সেটা মোটেও অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু আমার ব্যাখ্যাকে কেউ সমালোচনা করলে আমি সমালোচনাকারীকে প্রাণে মেরে ফেলতে পারি না। সেসব অসভ্যতা আমরা পেছনে ফেলে এসেছি কয়েক শ’ বছর আগে।
‘ধর্মানুভূতিতে আঘাত’ ব্যাপারটির কথা প্রায় শুনতে পাই। সমস্যা ধর্ম কিংবা ধর্ম কেন্দ্রিক অনুভূতি থাকাতে নয় মোটেও। সমস্যা হয় তখন ধর্মানুভূতির বিশাল স্তূপের নিচে যখন চাপা পড়ে যায় আমাদের বিবেকানুভূতি।
মুক্তচিন্তা চর্চ্চাকারি ব্লগার-প্রকাশক-লেখকদের একের পর এক কতিপয় উগ্রবাদী খুন করে যাচ্ছে। খুনিদের খুঁজে বের করা এবং এসব অপরাধ ভবিষ্যতে প্রতিরোধ করা নিয়ে আমাদের সরকার সরব নয়। এ নিয়ে বেশি মাথা না ঘামানোকেই হয়ত বুদ্ধিমানের কাজ মনে করছে করছে সরকার।
সচেতন, শান্তিপ্রিয় মুসলমানকে ও এসব হত্যাকান্ড অতটা আলোড়িত করছে না সম্ভবত । বরং অনেকে ব্লগারদের দোষ দিচ্ছেন ধর্ম-দর্শন নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলাতে বা লেখাতে। এঁদের মনে করিয়ে দিতে চাই যে, জঙ্গি-জিহাদিরা ছায়ানট-উদীচীর মত সাদামাটা সাংস্কৃতিক সংগঠন দিয়ে তাদের শক্তিমত্তার পরীক্ষামূলক প্রকাশ ঘটিয়েছিল। আস্তে আস্তে সাহসী হয়ে ওঠে ওরা। এতটাই সাহসী যে প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা, আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শেখ হাসিনা এবং তার সঙ্গীদের হত্যা করতে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মত অভাবনীয় ঘটনা ঘটায়। শেখ হাসিনা বা ঐ হামলায় আহত-নিহতরা কেউ নাস্তিক ছিলেন না।
একটু জোক মনে পড়ে।
চার জন লোক এক সাথে পথ চলছিল–একজন মুসলমান, একজন হিন্দু, একজন ইহুদী আর এক ডাকাত। কি ভাবে এদের টাকাপয়সা লুট করা যায়, ডাকাত ফন্দি আঁটতে লাগল মনে মনে। একসাথে তিনজনের সাথে শক্তিতে পেরে ওঠা সম্ভব নয়, কাজেই এক এক করে এদের কাবু করতে হবে, ডাকাত মনঃস্থির করল।এদেশে নিসংকোচে, শঙ্কাহীন ভাবে মত প্রকাশের অধিকার রয়েছে প্রতিটি বাংলাদেশী নাগরিকের। এ কথাটি প্রকাশ্যে, উঁচু গলায় বলতে যদি আমরা ভয় পাই তাহলে ভাবতে হবে এ দেশে কোন মুক্তিযুদ্ধ হয় নি। আমরা একাত্তরে জয়ী হয়নি। আর সেটি বিপদের কথা গণতন্ত্র ও স্যেকুলার মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রতিটি বাংলাদেশীর জন্য—তিনি নাস্তিক হোন বা আস্তিক হোন।
প্রথমে সে হিন্দু ভদ্রলোককে টার্গেট করল। মুসলমান-ইহুদী-খৃস্টান সবাই এক ঈশ্বরে বিশ্বাস করে কিন্তু হিন্দুরা একাধিক দেবতার পূজা করে। ক্বোরাণ-বাইবেল কোথাও মূর্তি পূজার পক্ষে সাপোর্ট নেই, একথা বলে সে হিন্দু ভদ্র লোকেকে হত্যা করে টাকাকড়ি সব লুটে নিল।
আর ও কিছুদূর পথ এগোনোর পর সে বাকি দুজনকে শুনিয়ে বলতে লাগল, ইহুদীরা ইসলামের শত্রু। এরা মহানবীকে অনেক জ্বালিয়েছে। একজন ইহুদী হত্যাতে কোনো পাপ নেই। ইহুদী পথচারীকে ডাকাত হত্যা করে টাকাপয়সা নিয়ে গেল।
মুসলমান একে অন্যের ভাই আর ডাকাত মনে হচ্ছে মুসলমান, আমাকে সে নিশ্চয় হত্যা করবে না, এতক্ষণ চুপ থাকা মুসলমান পথচারী মনে মনে ভাবলেন। আপনি তো মুসলমান, তাই না? ডাকাত তাকে জিজ্ঞেস করল। জি জনাব, আমি একজন পাক্বা মুমিন, তিনি জবাব দিলেন। আপনার মাজহাব কি? ডাকাত জানতে চাইল। আমি একজন সালাফি, মাজহাব নিয়ে আমরা বেশি মাথা ঘামাই না। ডাকাত এবার তার টুটি চেপে ধরে বলল, যারা মাজহাব মানে না, তাঁরা আবার মুসলমান হয় কি করে? ডাকাত সালাফি মুসলমান পথচারীকে খুন করে তার সকল টাকাকড়ি ও লুটে নিল।
—-
Saudi fatwa
SUN MOVES AROUND EARTH
http://www.examiner.com/article/saudi-arabia-tells-clerics-to-stop-issuing-absurd-fatwas
In 2000, Saudi Arabian Grand Mufti Sheikh Ibn Baaz asserted that the earth was flat and disk-like and that the sun revolved around it. He had insisted that satellite images to the contrary were nothing but a Western conspiracy against the Islamic world. (Source: Al-Ahram Weekly Issue 477, 13-19 April, 2000)