'সময় এবং গতি' (১ম পর্ব)
- দর্শন ভাবনা
সময়
সৃষ্টির পর থেকেই তার প্রধান বৈশিষ্ট হল সে চলমান। আমরা বিভিন্ন
কাঠামোর
তুলনায় তাকে পরিমাপ করতে পারি, আর সেই কারণেই সময় আপেক্ষিক অর্থাৎ
বিভিন্ন
কাঠামোর
সাপেক্ষে এর বিস্তার বিভিন্ন রকমের। আমরা সাধারনতঃ আমাদের পৃথিবীর সাপেক্ষে সময়ের পরিমাপ করে থাকি।
কোন
বস্তু বা
প্রাণীর বয়স
হল তার জন্মের পর থেকে জিজ্ঞাসিত সময় পর্যন্ত অতিক্রান্ত সময়। এটি একটি
পরিমাপের
বিষয়। আর যে কোন
পরিমাপের জন্যে আমাদের প্রয়োজন একটি মাপন যন্ত্র আর তুলনা কাঠামো।
এ
প্রসঙ্গে একটা বিষয় প্রণিধান যোগ্য যে, সময়ের নিশ্চয়ই একটা প্রকৃত গতি রয়েছে?
সেটি
কি ও কত?
যদি
বলা হয় যে, মহাবিশ্বের
উৎপত্তি কাল
থেকে যেহেতু সময় শুরু সেহেতু মহাবিশ্বের গতি প্রকৃতি থেকে সময়ের গতি বিচার্য; তাহলে বিষয়টি
অযৌক্তিক হবেনা।
আমরা
বিজ্ঞানের আপেক্ষিতা সূত্র থেকে জানি, সময় পরিমাপের স্থানে
পদার্থভর যত বেশী হবে সময়ের গতিও সেই অনুপাতে কমে যায়। এর অর্থ এই
নয় যে,
সময়ের
প্রকৃত গতি কমে যায়।
(২য়
পর্ব) - দর্শন ভাবনা
বিশাল
এই প্রকৃতির বুকে নানা প্রজাতীর প্রাণী জীবন ধারন করছে। সকল প্রাণীরই
জন্মাবার পর থেকে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি ঘটে এবং এক সময় অন্তর্ধানের মধ্য দিয়ে
জীবনের যবনিকা ঘটে। জীবন
প্রবাহে এই যে পরিবর্তন তা কমবেশী সকলের চোখেই ধরা পড়ে। সম্ভবতঃ
শুধুমাত্র অনুভূতি প্রবণ প্রাণীরাই বিষয়টা উপলব্দি করতে পারে।
প্রাণীজগতে
বিশেষ করে মানুষের মাঝে এই অনুভূতিটা জন্ম নিয়েছে পুরাকাল থেকেই।
মানুষ
এই বিশ্ব সংসারে অবস্থার পরিবর্তন লক্ষ্য করে আসছে তার অভূদ্বয়ের পর থেকেই। তবে এই
পরিবর্তনটাকে সুনির্দিষ্ট নাম করণের মত মেধা হয়তো প্রথম দিকে মানুষের
ছিলনা। চিন্তাশক্তির
উত্তোরণে মানুষ যখন এই পরিবর্তনকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে হয়তো তখনই এই
পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে জীবন প্রবাহের এই অগ্রগতিকে নামকরণ করেছে ‘সময়’ বলে।
কালের
বিবর্তনে এই সময় মানুষের মনে রেখাপাত করেছে নানাভাবে। সময় ও সময়ের
পরিবর্তণ নিয়ে বিভিন্ন মণিষিরা ভেবেছেন অনেক; আবার সেই
ভাবনা থেকে উত্থিত ধারণাকে প্রকাশ করেছেন নানাভাবে। কেউ কেউ
ভেবেছেন সময় বাস্তবতা, কেউ বলেছেন সময় কল্পনা, আবার কেউ ভেবেছেন সময় কুহেলিকা;
এভাবেই
সময় নিয়ে মানুষের চিন্তাধার এগিয়ে চলেছে যুগ যুগ ধরে।
(৩য়
পর্ব) - দর্শন ভাবনা
সত্যসন্ধানী
এবং বিজ্ঞানপিতা নিউটন বলেছেন ‘সময় ও গতি অনিয়ন্ত্রিত বা অনাপেক্ষিক;
অর্থাৎ সমগ্র
মহাবিশ্ব একই জড়তায় সৃষ্ট, সর্বত্র সময় অপরিবর্তনীয় ও অনমনীয় ভাবে একই গতিতে
কোন কিছুর সাথে সম্পর্কহীন ভাবে চলছে এবং তা নিত্য’।
গুণিজনদের
অনেকেই এই অনাপেক্ষিক শব্দটির বিরোধীতা করেছেন, তাদের মধ্যে- ল্যাবনিজ, বারকেলী ও
ম্যাক উল্যেখযোগ্য। ম্যাক
১৮৮৩ সালে
তার বই The Science of Mechanics এ লিখেছেন- 'সময়ের সাথে
কোন কিছুর পরিবর্তনকে
পরিমাপ করা দুরূহ ব্যপার। আমরা অবস্থার পরিবর্তনের মাধ্যামে সময়কে অনুভব
করি'। তিনি আরও
বলেন- 'সময়ের
ধারনার চেয়ে তার পরিবর্তন বেশী মৌলিক। আমাদের
জানামতে এমন কোন স্রোতধারা নেই যে সময়কে বয়ে নিতে পারে। সময়ের
অনুভূতিতে আমরা শুধু বাস্তবতার পরিবর্তন পরিমাপ করি'।
ম্যাকের
এই
ধারনায় সত্যসন্ধানী ও মহাবিজ্ঞানী আইস্টাইন অনুপ্রাণিত হয়ে সময় নিয়ে গবেষণা শুরু
করেন এবং ১৯০৫ সালে তার বিখ্যাত আপেক্ষিকতা তত্ত্ব প্রকাশ করেন। এই তত্ত্ব
মহাশূণ্য, সময়
ও গতি এই ত্রয়ীর মধ্যে সম্পর্কের ধারণা পাল্টাতে শুরু করে।
বিশেষ
আপেক্ষিকতার নীতি আমাদের সামনে দু’টি বিষয় পরিস্কার করে তুলে ধরে, তা’হল, মহাজাগতিক
বস্তুর গতির আপেক্ষিকতা ও আলোর গতির অভিন্নতা।
আইনষ্টাইনের
এই ধারনা মতে, মহাজগতিক বস্তুনিলয়ের গতি ভিন্ন ভিন্ন হয়ে দাঁড়ায়, যা নিউটনীয়
তত্ত্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়; কারণ নিউটনের ধারণায় মহাজাগতিক বস্তুর
গতি অভিন্ন অর্থাৎ একই জড়তায় সম গতিতে চলমান।
দ্বিতীয়ত,
আলোর
গতির অভিন্নতা বলতে আইনষ্টাইন বুঝাতে চেয়েছেন যে, যে কোন জড়তায়
যে কোন পর্যোবেক্ষক শূণ্যস্থানে আলোর গতি পরিমাপ করলে তা প্রায় অভিন্ন ফলাফল
পদর্শণ করবে।
বিষয়টি
ভেবে দেখার অবকাশ রয়েছে, বিখ্যাত বিজ্ঞানী আইনষ্টাইন বলছেন, মহাবিশ্বের
যে কোন স্থানে আলোর গতি সমান বা স্থির; অর্থাৎ সাপেক্ষ
কাঠামো যাই হোক না কেন একজন পর্যোবেক্ষকের কাছে আলোর গতি সবসয়ই সমান, আরও পরিস্কার
করে বললে বুঝায়, যে কোন পর্যোবেক্ষক যে কেন অবস্থান থেকে আলোর গতি পর্যোবেক্ষন
করুন না কেন সকলের
কাছেই আলোর গতি হবে সমান।
যদি
তাই হয়, তাহলে
ক্ষোদ আইনষ্টাইনের
রিলেটিভিটি যাচ্চে ভেঙে। তিনি বলছেন, মহাকাশীয় বস্তুগুলো সমগতি সম্পন্ন নয়। প্রত্যেকে
প্রত্যেকের সাপেক্ষে গতিশীল। ফলে বিভিন্ন সাপেক্ষ কাঠামো থেকে পর্যোবেক্ষন লব্দ আলোর গতির
ফলাফল; একটি
কম গতি সম্পন্ন বস্তু থেকে আলোর গতি যতটা দ্রুত মনে হবে, একটা বেশী
গতি সম্পন্ন বস্তু থেকে তার চেয়ে কম দ্রুত মনে হবে। আর এটাই আপেক্ষিকতার মৌলিক প্রস্তবনা।
আইনষ্টাইনের
এই তথ্য যদি পরিক্ষিত হয়ে থাকে তবে তা মহাবিশ্বের সৃষ্টি কাঠামোতে
জটীলতার সৃষ্টি করে। বিজ্ঞানের
কাছ থেকে আমরা জানি, বিগব্যাঙ থেকে শুরু হয়ে মহাবিশ্ব ত্বরাণ্বিত গতিতে
সম্প্রসারিত হচ্ছে; এর ফলে আমাদের পৃথিবী থেকে দৃষ্টিলভ্য বস্তুগুলো
ক্রমান্বয়ে দূরে চলে যাচ্ছে। বিজ্ঞান বলছে একসময় হয়তোবা আলোর গতিকেও ছাড়িয়ে যাবে।
এই
হিসেবে আমরা যদি ধরে নেই, সৌর মণ্ডল সমেত আমাদের ছায়াপথ সম্প্রসারনের ধারায় আলোর এক
সহস্রাংশ
গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, আবার এড্রোমিডা ছায়াপথটি হয়তো ত্বরাণ্বিত হয়ে ৫০ সহস্রাংশ
গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এখন
এই উভয় ক্ষেত্রের পর্যোবেক্ষকের কাছে দূরবর্তী তৃতীয় কোন ছায়াপথের আপতিত আলো
বা আলোর গতি সমান হতে পারেনা। যদিও বিজ্ঞান বলছে আলোর গতি সকল ক্ষেত্রেই অভিন্ন, তবুও তাকে
আগেক্ষিকতার গণ্ডিতে
আটকালে বিভিন্ন কাঠামোর সাপেক্ষে তা আর স্থির থাকেনা।
সাপেক্ষ
কাঠামোর তূলনায় পর্যোবেক্ষক যদি স্থির থাকে তবে যে গতি নির্ণয় করবে,
আর
পর্যোবেক্ষক যদি গতিশীল হয় তবে নির্ণীত গতির সাথে যে হেরফের হবে, তা আলোর গতির
তুলনায় অতি সামান্য বলে তাকে ধর্তব্যের না আনলেও চলে। কিন্তু
দু’টি ভিন্ন
ভিন্ন সাপেক্ষ কাঠামো থেকে পরিমাপকৃত ফলাফল এক হতে পারেনা।
মহাশূন্যের
বিভিন্ন স্থানে ভাসমান বিভিন্ন বস্তুর অবস্থান বিভিন্ন দূরত্বে অবস্থিত;
গতিশীল
বস্তুর জন্যে এই অবস্থান নির্ণয় শুধুমাত্র তৃতলীয় জ্যামিতি দিয়েই সম্ভব নয় তার
সাথে সময়ের মাত্রাও নির্নয় করতে হয়; ফলে মহাশূণ্যে অবস্থিত বস্তুগুলোর
অবস্থান জানতে হলে তলীয় গতির সাথে সময়ের সমন্বয় করতেই হবে।
যেহেতু
সময় কোন দৃশ্য বস্তু নয় তাই বিজ্ঞান তাকে চতুর্থ মাত্রায় কোন এক অবস্থা বলে
সঙ্গায়িত করে।
ষের মনে বিজ্ঞান ঘণীভূত হয়েছে, ফলে সময়
নিয়েও নতুন নতুন
ধারণা জন্ম নিয়েছে।
(৩য় পর্ব) - দর্শন ভাবনা
সত্যসন্ধানী
এবং বিজ্ঞানপিতা নিউটন বলেছেন ‘সময় ও গতি অনিয়ন্ত্রিত বা অনাপেক্ষিক;
অর্থাৎ সমগ্র
মহাবিশ্ব একই জড়তায় সৃষ্ট, সর্বত্র সময় অপরিবর্তনীয় ও অনমনীয় ভাবে একই গতিতে
কোন কিছুর সাথে সম্পর্কহীন ভাবে চলছে এবং তা নিত্য’।
গুণিজনদের
অনেকেই এই অনাপেক্ষিক শব্দটির বিরোধীতা করেছেন, তাদের মধ্যে- ল্যাবনিজ, বারকেলী ও
ম্যাক উল্যেখযোগ্য। ম্যাক
১৮৮৩ সালে
তার বই The Science of Mechanics এ লিখেছেন- 'সময়ের সাথে
কোন কিছুর পরিবর্তনকে
পরিমাপ করা দুরূহ ব্যপার। আমরা অবস্থার পরিবর্তনের মাধ্যামে সময়কে অনুভব
করি'। তিনি আরও
বলেন- 'সময়ের
ধারনার চেয়ে তার পরিবর্তন বেশী মৌলিক। আমাদের
জানামতে এমন কোন স্রোতধারা নেই যে সময়কে বয়ে নিতে পারে। সময়ের
অনুভূতিতে আমরা শুধু বাস্তবতার পরিবর্তন পরিমাপ করি'।
ম্যাকের
এই
ধারনায় সত্যসন্ধানী ও মহাবিজ্ঞানী আইস্টাইন অনুপ্রাণিত হয়ে সময় নিয়ে গবেষণা শুরু
করেন এবং ১৯০৫ সালে তার বিখ্যাত আপেক্ষিকতা তত্ত্ব প্রকাশ করেন। এই তত্ত্ব
মহাশূণ্য, সময়
ও গতি এই ত্রয়ীর মধ্যে সম্পর্কের ধারণা পাল্টাতে শুরু করে।
বিশেষ
আপেক্ষিকতার নীতি আমাদের সামনে দু’টি বিষয় পরিস্কার করে তুলে ধরে, তা’হল, মহাজাগতিক
বস্তুর গতির আপেক্ষিকতা ও আলোর গতির অভিন্নতা।
আইনষ্টাইনের
এই ধারনা মতে, মহাজগতিক বস্তুনিলয়ের গতি ভিন্ন ভিন্ন হয়ে দাঁড়ায়, যা নিউটনীয়
তত্ত্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়; কারণ নিউটনের ধারণায় মহাজাগতিক বস্তুর
গতি অভিন্ন অর্থাৎ একই জড়তায় সম গতিতে চলমান।
দ্বিতীয়ত,
আলোর
গতির অভিন্নতা বলতে আইনষ্টাইন বুঝাতে চেয়েছেন যে, যে কোন জড়তায়
যে কোন পর্যোবেক্ষক শূণ্যস্থানে আলোর গতি পরিমাপ করলে তা প্রায় অভিন্ন ফলাফল
পদর্শণ করবে।
বিষয়টি
ভেবে দেখার অবকাশ রয়েছে, বিখ্যাত বিজ্ঞানী আইনষ্টাইন বলছেন, মহাবিশ্বের
যে কোন স্থানে আলোর গতি সমান বা স্থির; অর্থাৎ সাপেক্ষ
কাঠামো যাই হোক না কেন একজন পর্যোবেক্ষকের কাছে আলোর গতি সবসয়ই সমান, আরও পরিস্কার
করে বললে বুঝায়, যে কোন পর্যোবেক্ষক যে কেন অবস্থান থেকে আলোর গতি পর্যোবেক্ষন
করুন না কেন সকলের
কাছেই আলোর গতি হবে সমান।
যদি
তাই হয়, তাহলে
ক্ষোদ আইনষ্টাইনের
রিলেটিভিটি যাচ্চে ভেঙে। তিনি বলছেন, মহাকাশীয় বস্তুগুলো সমগতি সম্পন্ন নয়। প্রত্যেকে
প্রত্যেকের সাপেক্ষে গতিশীল। ফলে বিভিন্ন সাপেক্ষ কাঠামো থেকে পর্যোবেক্ষন লব্দ আলোর গতির
ফলাফল; একটি
কম গতি সম্পন্ন বস্তু থেকে আলোর গতি যতটা দ্রুত মনে হবে, একটা বেশী
গতি সম্পন্ন বস্তু থেকে তার চেয়ে কম দ্রুত মনে হবে। আর এটাই আপেক্ষিকতার মৌলিক প্রস্তবনা।
আইনষ্টাইনের
এই তথ্য যদি পরিক্ষিত হয়ে থাকে তবে তা মহাবিশ্বের সৃষ্টি কাঠামোতে
জটীলতার সৃষ্টি করে। বিজ্ঞানের
কাছ থেকে আমরা জানি, বিগব্যাঙ থেকে শুরু হয়ে মহাবিশ্ব ত্বরাণ্বিত গতিতে
সম্প্রসারিত হচ্ছে; এর ফলে আমাদের পৃথিবী থেকে দৃষ্টিলভ্য বস্তুগুলো
ক্রমান্বয়ে দূরে চলে যাচ্ছে। বিজ্ঞান বলছে একসময় হয়তোবা আলোর গতিকেও ছাড়িয়ে যাবে।
এই
হিসেবে আমরা যদি ধরে নেই, সৌর মণ্ডল সমেত আমাদের ছায়াপথ সম্প্রসারনের ধারায় আলোর এক
সহস্রাংশ
গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, আবার এড্রোমিডা ছায়াপথটি হয়তো ত্বরাণ্বিত হয়ে ৫০ সহস্রাংশ
গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এখন
এই উভয় ক্ষেত্রের পর্যোবেক্ষকের কাছে দূরবর্তী তৃতীয় কোন ছায়াপথের আপতিত আলো
বা আলোর গতি সমান হতে পারেনা। যদিও বিজ্ঞান বলছে আলোর গতি সকল ক্ষেত্রেই অভিন্ন, তবুও তাকে
আগেক্ষিকতার গণ্ডিতে
আটকালে বিভিন্ন কাঠামোর সাপেক্ষে তা আর স্থির থাকেনা।
সাপেক্ষ
কাঠামোর তূলনায় পর্যোবেক্ষক যদি স্থির থাকে তবে যে গতি নির্ণয় করবে,
আর
পর্যোবেক্ষক যদি গতিশীল হয় তবে নির্ণীত গতির সাথে যে হেরফের হবে, তা আলোর গতির
তুলনায় অতি সামান্য বলে তাকে ধর্তব্যের না আনলেও চলে। কিন্তু
দু’টি ভিন্ন
ভিন্ন সাপেক্ষ কাঠামো থেকে পরিমাপকৃত ফলাফল এক হতে পারেনা।
মহাশূন্যের
বিভিন্ন স্থানে ভাসমান বিভিন্ন বস্তুর অবস্থান বিভিন্ন দূরত্বে অবস্থিত;
গতিশীল
বস্তুর জন্যে এই অবস্থান নির্ণয় শুধুমাত্র তৃতলীয় জ্যামিতি দিয়েই সম্ভব নয় তার
সাথে সময়ের মাত্রাও নির্নয় করতে হয়; ফলে মহাশূণ্যে অবস্থিত বস্তুগুলোর
অবস্থান জানতে হলে তলীয় গতির সাথে সময়ের সমন্বয় করতেই হবে।
যেহেতু
সময় কোন দৃশ্য বস্তু নয় তাই বিজ্ঞান তাকে চতুর্থ মাত্রায় কোন এক অবস্থা বলে
সঙ্গায়িত করে।
(৪র্থ
পর্ব) - দর্শন ভাবনা
আমাদের
একটা বিষয় মনে রাখতে হবে যে, যে কোন বস্তুর পরিচয় দিতে অন্তত তার দু’টি অবস্থার
বর্ণনা দিতে হয়, একটি তার স্বকীয় পরিচয় আর একটি তার জড়তা।
হয়তো
বলবেন সময় কোন বস্ত নয় যে তার স্বকীয পরিচয় রয়েছে। যদি তা না হয়
তবে তার
জড়তা নির্ণয় অত্যান্ত কঠিণ বিষয়। আর এই কাজটি করতে হলে আমাদেরকে প্রথমেই স্থির করতে হবে সময় কি
বা সময়ের স্বকীয় পরিচয় কি?।
বিজ্ঞান
সময়ের পরিচয় দিতে গিয়ে সময়কে গতিশীল ধরে নিয়েছে; যা সময়ের জড়তার পরিচয়।
হতে
পারে সময় গতিশীল! কোন কিছুর স্বকীয় পরিচয় না পেয়েও তার জড়তার পরিচয় পেলে যে তা
মিথ্যে হবে, তাতো
হতে পারেনা! ফলে বিজ্ঞানের কথামত আমরা ধরে নিতে পারি সময় গতিশীল। এখন এই সময়ের
অবস্থান সম্পর্কে আমাদের ভাল ধারনা দরকার।
এ
বিষয়ে জানতে হলে সর্বপ্রথমে জানা দরকার সময়ের উৎপত্তি ও
বিস্তার
সম্পর্কে। মোটামুটি
সকলেই একমত যে, সময় শুরু হয়েছে বিগব্যাঙ থেকে; অর্থাৎ মহাবিশ্বে উৎপত্তিক্ষণ
থেকে সময়ের যাত্রা শুরু। আর এর বিস্তার সমগ্র মহাবিশ্ব জুড়ে।
যদি
তাই হয়ে থাকে তবে সময়কে গতিশীল বলা কোন অযৌক্তিক বিষয় নয়। এখন প্রশ্ন
হল এই গতি কি ভাবে নিরূপিত হতে পারে? এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞান মনে করে
মহাজাগতিক বস্তুর মধ্যে আলো সবচেয়ে গতিশীল, সময়ও অনেকটা আলোর মতই গতিশীল। তবে এই গতি
আপেক্ষিক; অর্থাৎ মহাশূণ্যে
বিভিন্ন কাঠামোর
সাপেক্ষে সময়ের গতি বিভিন্ন হয়ে থাকে। আর এই গতির পরিমান মাপা হয় ঘরির মাধ্যামে।
বিজ্ঞানের
এই ধারণার প্রেক্ষিতে আমাদের ভেবে দেখার অবকাশ রয়েছে। উপরের
আলোচনায় একটা বিষয় পরিস্কার যে, সময় মহাবিশ্বে নিরবিচ্ছিন্ন
জালবিস্তারকারী একটা মাধ্যাম। যদি তার কোন গতি থেকে থাকে তবে তার একটা সাধারণ গতি থাকা
প্রয়োজন। হতে পারে
ক্ষেত্র ভেদে বিশেষ কারণে এই গতি পরিবর্তীত হয়ে থাকে। যদি বলা হয় যে, কোন স্থানে
এই গতি পরিবর্তীত হয়েছে তবে তার উপযুক্ত ও যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যার প্রয়োজন রয়েছে কারণ
আমরা সময়ের স্বরূপ
সঙ্গায়িত করতে পারিনি।
সময়ের
আপেক্ষিকতা ব্যাখ্যায় বিজ্ঞান বলছে, পৃথিবীর এক ঘন্টার পরিসর চাঁদের এক ঘন্টার সমান নয়। তেমনি ভাবে
মহাকাশে
বিভিন্ন মহাজাগতিক বস্তুতে সময়ের গতি বিভিন্ন। আমরা
বিজ্ঞানের সঙ্গে
তাল মিলিয়ে যদি আপেক্ষিকতাকে মেনে নেই তবে আপনা থেকেই একটা প্রশ্ন উত্থিত হয়ে
আসে, তাহল
মহাকাশের শূণ্য স্থানে সময়ের গতি কি হবে?
হয়তো
বলবেন আমাদের ঘরিটি সেখানে যে সময় প্রকাশ করে, সেটিই হল সেই স্থানের সময় ও সেই
ভাবে গতিশীল। তাহলে
এবার আমাদের ভেবে দেখতে হবে ঘরির মাধ্যামে সময়ের গতি মাপার পদ্ধতিটি আসলে কি?
মূলত
এই ব্যবস্থাটি হলো সময়ের পরিমাপ ব্যবস্থা। রাত-দিনের পরিসরকে পর্যায়ক্রমিক দেখে মানুষ তাকে সময় পরিমাপের একক
হিসেবে গ্রহন করেছে। সূর্যো
উদিত হওয়া থেকে শুরু করে পুণরায় উদিত হওয়া পর্যোন্ত যে সুনির্দিষ্ট
সময়ের পর্যায় -তাকে একক ধরে তার ভগ্নাংশকে ক্ষুদ্র এককে পরিনত করে তা
দিয়ে ক্ষুদ্র থেকে বড় বড় অংশ করে সময় পরিমাপ করে। এটি পৃথিবীতে
নিতান্তই আলোকীয় ব্যবস্থার মাধ্যামে সময় গণনার একটি প্রক্রিয়া। এই পদ্ধতিতে
মানুষ তাদের সুবিধার্থে মাপন যন্ত্র বা ঘরি তৈরী করে নিয়েছে।
একই
উপায়ে চাঁদের জন্যেও তৈরী করা যেতে পারে; অথবা আমাদের ঘরি দিয়ে চাঁদেরও দিবা
রাতের পরিসর মাপা যেতে পারে। তাতে পৃথিবীর তুলনায় চাঁদের দিবা রাত্র কিছুটা বড় বা ছোট বলা যেতে
পারে; আবার
পৃথিবীর
মত করে চাঁদের দিবা রাত্রকেও ২৪ ভাগে ভাগ করে নেওয়া যেতে পারে তাতে চঁদের এক
ঘন্টার প্রকৃত পরিসর পৃথিবীর সমান নাও হতে পারে।
তাহলে
দেখা গেল যে, এই
পরিমাপ দিয়ে কখনোই সময়ের গতি পরিমাপ করা যায়না, শুধুমাত্র চাঁদ ও পৃথিবীর দিবা
রাতের পরিসর মাপা যায়।
বিজ্ঞানী
আইষ্টাইন বলেছেন, বৃহত্তর মহাজাগতিক বস্তুতে সময়ের গতি ক্ষুদ্রতর। কারনস্বরূপ
বলেছেন, সময়ের
উপর মহাকর্ষের প্রভাব রয়েছে, অর্থাৎ অধিক মহাকর্ষ অঞ্চলে সময় ধীর হয়,
উদাহরণ
স্বরূপ দেখিয়েছেন যে, আমাদের ঘরি চাঁদে পৃথিবীর তুলনায় দ্রুত সময় জ্ঞাপন
করে। আবার এই
যন্ত্রটিকে যখন অধিক মহাকর্ষ অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হবে তখন সে ধীর সময় জ্ঞাপন করবে। মূলত এমনিতর
ধারনার
উপর তিনি বলছেন সময় আপেক্ষিক।
(৫ম
পর্ব) - দর্শন ভাবনা
আমরা
পূর্বের আলোচনায় দেখেছি যে, ঘরি দিয়ে আমরা সময়ের গতি পর্যোবেক্ষন করিনা, মূলত পরিমাপ
করি সময়ের পরিধি।
ক্লাসিক্যাল
মেকানিক্স বলছে, সময় আপেক্ষিক নয়, শুধুমাত্র এর বিস্তার ঘটছে।
আমরা
মহাশূণ্যকে তিন মাত্রার ইউক্লিডীয় জ্যামিতিতে প্রকাশ করি, তাতে মহাশূণ্যের
প্রকৃত বিস্তার জানা যায়না, যতক্ষণ না আমরা সময়কে আরেকটি মাত্রা ধরে বিবেচনা
করি। কারণ বিগব্যাঙ
থেকে উৎপত্তি লাভ করে মহাশূণ্য অদ্যাবধি বিস্তার লাভ
করছে।
ফলে
সময়ের পরিসর থেকে আমরা মহাবিশ্বের বিভিন্ন বিস্তার হিসেব করতে পারি। এই সময়কে
একটি মাত্রা ধরে নিলে আমাদের মহাশূণ্য চার মাত্রায় ব্যাখ্যায়িত হয়। সে কারণেই
মহাশূণ্যের বিস্তার জানতে সময় অপরিহার্যো।
মহাশূণ্যের
সময়কে মহাশূণ্য-সময় বা space–time বলে আখ্যায়িত করা হয়। বিজ্ঞানী
আইনষ্টাইন যদিও মহাশূণ্য সময়কে আপেক্ষিক বলেছে তথাপি বিষয়টা ভেবে দেখার
প্রয়োজনীয়ত রয়েছে।
সাধারণতঃ
আপেক্ষিক বলতে আমরা বুঝি একটা অনুপাত। দুটি বস্তুর কোন একটি সাধারণ বৈশিষ্টের
তুলনা। যেমন
তা হতে পারে মহাকাশে একাধিক বস্তুর গতির তুলনা, হতে পারে আয়তনের তুলনা,
হতে
পারে বস্তু ভরের তুলনা। এই
অনুপাতগুলো যেমন পারষ্পারিক হতে পারে তেমনি হতে পারে অনেকের মধ্যে
প্রতেকে প্রত্যেকের সাথে।
এই
তুলনা
বা অনুপাতটি দু’টি উপায়ে হতে পারে -যেমন, অনেক গুলো বস্তুর মধ্যে যে
কোন
একটিকে আদর্শ ধরে নিয়ে তার সাথে অন্য সকলের তুলনা। এই পদ্ধতিকে
বলা যায়
একটি সুনির্দিষ্ট আদর্শের সাথে তুলনা। আবার যখন তা প্রতেকে প্রত্যেকের সাথে হয় তখন
তাকে আদর্শ বলা যায়না।
বিজ্ঞানী
আইনষ্টাইন দ্বিতীয় পদ্ধতিতে মহাকাশীয় বস্তুগুলোকে আপেক্ষিক বলে দাবী করেছেন। পরীক্ষা
নীরিক্ষায়ও
তাই দেখা গেছে। মহাজাগতীক
বস্তুগুলো একে অপরের সাথে এতটাই দূরত্বে অবস্থিত যে কোন একটিকে আদর্শ
ধরে অন্যদের সাতে তুলনা প্রায় অসম্ভব। ফলে
মহাজাগতীক বস্তু নিলয়ের যে কোন বৈশিষ্টকেই তুলনা করিনা কেন তাকে পারস্পারিকই
করে থাকি। অনুরূপ ভাবে
বিজ্ঞানী আইনষ্টাইন মহাকাশে সময়কেও আপেক্ষিক বলে দাবী করেছেন।
কিন্তু
আমরা কিছু সাধারন মানুষ এই দাবীর সাথে একমত হতে পারছিনা এ জন্যে যে,
সময়
মহাজাগতিক বস্তুনিলয়ের কোন বৈশিষ্ঠ্য নয়। আবার মহাবিশ্বে বিভিন্ন প্রকারের সময় কাঠামো নেই যে তাদের
মধ্যে
তুলনা করবো।
গাণিতিকভাবে
আমরা জানি যে, সমজাতীয় রাশি ছাড়া তুলনা হয়না। ফলে
মহাজাগতিক বস্তুর সাথে সময়ের কোন বৈশিষ্ঠ্যের তুলনা হতে পারেনা।
সময়
আপেক্ষিক বলতে আইনষ্টাইন বুঝাতে চেয়েছেন যে, মহাজাগতিক বস্তু সমুহে সময়ের গতি
বিভিন্ন। তিনি উদাহরণ
স্বরূপ বলেছেন যে, একই সময় মাপন যন্ত্র বিভিন্ন বস্তুতে বিভিন্ন গতিতে চলে। অর্থাৎ ক্ষুদ্র
আকৃতির বস্তুতে যেখানে মহাকর্ষ শক্তি তুলনামূলক দূর্বল সেখানে ঘরির কাটা দ্রুত চলে আর
বৃহৎ
বস্তুতে
ঠিক তার বিপরীত। ঘরির
এই অবস্থা থেকে তিনি মন্তব্য করেন যে, সময়ের উপর মহাকর্ষের প্রভাব রয়েছে।
আমরা
জানি, ঘরি
শুধু মাত্রই একটা যান্ত্রিক ব্যাবস্থা, তা ইলেট্রনিক ঘরিই হোক আর দোলক ঘরিই হোক;
তার
উপর রয়েছে
মহাকর্ষের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া, সময়ের সাথে নেই কোন সম্পর্ক। এটি আমাদের
পৃথিবীতে মানব মস্তিস্কের চিন্তাভাবনা থেকে উদ্ভূত একটি যন্ত্র মাত্র। এটি
যান্ত্রিক উপায়ে আমাদের দিবা রাত্রির পরিসরকে ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র ভাগ
করে সূর্যের অবস্থান তথা আলো আঁধারের অবস্থ নির্ণয় করার একটা পদ্ধতি মাত্র।
এই
যন্ত্রটি নিয়ে আমরা এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির কোন এক গ্রহে গিয়ে সময় নিরূপন করতে
শুরু করলে যন্ত্রটি সেই গ্রহে দিবা-রাত্রির প্রকৃত পরিসর তুলে ধরবেনা। অর্থাৎ আপনার ঘরি
দিয়ে ওখানকার দিবারাত্রের প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবেনা। আবার অন্ধকার
রাজত্বে সে শুধু ঘুরেই চলবে আলো আঁধারের কোন পরিচয় দিতে পারবেনা। আপনার এই
ঘরিটি দিয়ে পৃথিবীর তুলনায় সেখানকার রাত-দিন কত বড় বা ছোট তা পরিমাপ করতে পারবেন।
আবার
নিউটনের দোলক
সূত্র বলছে ভিন্ন কথা। দোলক
সূত্র বলছে, অধিকতর
কহাকর্ষ অঞ্চলে দোলন কাল কমে যায়; ফলে আপনার ঘরি দ্রুত চলতে থাকবে;
যা
আইনষ্টাইনের আপেক্ষিকতার সূত্র বিরোধী।
(৬ষ্ঠ পর্ব) - দর্শন ভাবনা
সময়
নিয়ে মানুষের চিন্তা ভাবনা এগিয়ে চলেছে, শুধু তাই নয় মানুষের মনে সময় নিয়ে আরও
নতুন ধারণার উন্মেষ ঘটেছে উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে; ১৮৯৫ সালে
এইচ জি
ওয়েলস্ (H. G. Wells) সময় অভিযাত্রার কাল্পনিক ধারণা সমৃদ্ধ উপন্যাস The
Time Machine, প্রকাশ
করেন, যা
মানুষের মনে সময় অভিযাত্রার ধারনাটি সঞ্চার করে।
তারপর
তা বিজ্ঞান জগতেও কৌতুহল সৃষ্টি হয়, বিশেষ করে যুবক বিজ্ঞানী আইনষ্টাইন এ
নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেন। বিজ্ঞানীদের মধ্যে এ নিয়ে আলোড়ণ
সৃষ্টি হয়, সময়
অভিযাত্রা (Time travel) নিয়ে বিভিন্ন জন বিভিন্ন মতামত তুলে ধরেন।
তাদের
মতামত থেকে বলা যেতে পারে ‘সময় অভিযাত্রা হল মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ
গতির সাথে পাল্লা দিয়ে কোন ভ্রমনার্থী যদি কোন উপায়ে ভ্রমন করতে পারে তবে তাকে বলা হয়
সময় অভিযাত্রা’। ডেবিড লুইস
এর মতে সময় অভিযাত্রা বলতে বুঝায়,কোন বস্তুর অবস্থান ও
পারিপার্শিক জগতের সাপেক্ষে আরোহণ ও অবতরণের সময় এক না হয় তবে তাকে সময় অভিযাত্রা
বলা হয়।
উদাহরণস্বরূপ
বলা যায় যে, যদি
কোন অভিযাত্রী
তার ব্যক্তিগত সময়ে এক ঘন্টা ভ্রমনের পর অবতরণ স্থানে দুই ঘণ্টা ভবিষ্যতে বা
দুইঘন্টা অতীতে গিয়ে পৌঁছাল তবে উভয় ক্ষেত্রেই সময় অভিযাত্রা হয়েছে বলে
ধরে নেওয়া হয়। কারণ
উভয় ক্ষেত্রেই পারিপার্শিকতার সাথে সময়ের ভিন্নতা ঘটেছে; অর্থাৎ অগ্রগামী
সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে কোন অভিযাত্রি যদি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে তবেই তাকে
সময় অভিযাত্রা বলা হবে।
আরও
একটু
পরিস্কার করে বললে বলতে হয় যে, আমাদের পৃথিবীতে সংঘটিত কোন ঘটনা দেখে
আপনি
মহাশূণ্যে যাত্রা করলেন, ভিন্ন কোন ছায়াপথের অধিবাসীরা সেই ঘটনাটি দেখার আগেই
আপনি সেখানে গিয়ে পৌছে গেলেন, তাহলে সেই একই ঘটনা তাদের সাথে আপনিও দ্বিতীয়বার দেখতে পেলেন। একইভাবে আপনি
বার বার একই ঘটনাকে সংঘটিত হতে দেখতে পারেন। এই ভাবে
পারিপার্শিকতার তুলনায় নিজের গতিকে বাড়িয়ে সমেয়ের অগ্রে চলে যাওয়াকেই সময়
অভিযাত্রা বলা হয়।
বিজ্ঞানীরা
তাত্ত্বিক ভাবে
স্থির করেছেন যে, স্থিতি জড়তায় থাকা কোন একজন পর্যোবেক্ষক অল্প সময়ের ব্যবধানে
পরপর ঘটে যাওয়া দুটি ঘটনা অবলোকন করলেন। এখন প্রশ্ন হল, এই ঘটনা
দু’টিকে
গতিজড়তায় থাকা কোন পর্যোবেক্ষ কি ভাবে দেখবেন?
তবে
উপরুক্ত আলোচনার
প্রেক্ষিতে বলা যায়, গতিজড়তায় থাকা পর্যোবেক্ষক প্রথম ঘটনাটা ঘটার সময় তার উৎপত্তি স্থল
অত্রিক্রমকালে দেখতে পেলেন এবং আলোর গতির চেয়ে বেশী গতিতে এগিয়ে
গেলেন; তার
পর দ্বিতীয় আরেকটি ঘটনাটা ঘটল, একটা নির্দিষ্ট বিরতিতে দু’টি ঘটনার
দৃশ্যই আলোর গতিতে এগিয়ে চলল। এবার আলোর গতিতে গতিশীল দর্শক তার চলার পথের কোন এক স্থানে
বিশ্রামকালে দুটি ঘটনাই পুনরায় দেখতে পেল। এইটুকু
পর্যোন্ত স্থির দর্শকের যে সময়টুকু কাটল গতিশীল দর্শকের বিশ্রামকালীন
সময়টুকু তার নিজের সময়ে কম লাগল। এ ক্ষেত্রে বলা যায় গতিশীল বস্তুর কিছুটা সময় সাশ্রয় হল।
ঠিক
এভাবেই একজন গতিশীল ভ্রমনকারী মহাশূণ্যে ভ্রমন করে এসে দেখবে নাস্তার টেবিলে সকলেই তার জন্যে
অপেক্ষা করছে। ভ্রমনকারী
ভাববে তার বাড়ীর মনুষের এই সামান্য সময়ে সে কতদূর ভ্রমন করে এসেছে আর
কত সময়ইনা পার করেছে। বিজ্ঞানীরা
একে বলছেন ভ্রমনকারীর সময় প্রলম্বন ঘটেছে। অর্থাৎ স্থির দর্শকের তুলনায় তার ব্যক্তিগত
অল্প সময়ে স্থির
দর্শকের হিসেবে অনেক সময় পার করে এসেছে; অবশ্য ভ্রমনকারীরও এমনি অনুভূতি
জন্মাবেে। এই ভাবে
ব্যক্তিগত অল্প সময়ের মাঝে অনেক সময় কাটানোর অনুভূতিটাই সময় প্রলম্বন। এখানে এই যে
বলা হল সময়ের প্রলম্বন হয়েছে তাতে কিছু ভাবনার আছে।
এবার
লক্ষ্য করুন, দু’জন
পর্যোবেক্ষর জন্যেই মৌলিক সময় কিন্তু একই লেগেছে, দ্বিতীয় জনের গতির কারণে সে ঘটনা দু’টির দৃশ্যের
অগ্রে
গমন করেছে এবং তা সে পরে দেখেছে, ঘরিতে অতিক্রান্ত সময় কিন্তু উভয়
ক্ষেত্রেই
বলাচলে সমান। সামান্য
সময়ের যে পরিবর্তন ঘটবে তা মহাকর্ষীয় ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ায় ঘটবে; আর এ টুকু
সংশোধন করে নিলে সময়ের হিসেব এমনই হবে। মানে,
মহাশূণ্য
সময়ের কোন পরিবর্তন ঘটবেনা।
আর
বিস্তর সময় অতিক্রম
করে আসার যে অনুভূতিটা জন্মাবে অর্থাৎ সময়ের প্রলম্বন হয়েছে বলে যা মনে হবে তা
শুধুই কল্পনা বা বিভ্রম। এখানে আপেক্ষিকতা যে টুকু রয়েছে তা হল গতি জড়তার
আপেক্ষিকতা, তা
যেমন রয়েছে জড়তায় তেমনি রয়েছে সময়ের পরিমাপে।
(৭ম পর্ব) - দর্শন ভাবনা
আগের
আলোচনায়
আমরা দেখেছি- সময় মহাশূণ্যের চতুর্থ মাত্রা; এটি মহাশূণ্যের সম্প্রসারণের
সাথে সম্পৃক্ত। বিভিন্ন
মহাজাগতিক বস্তুর জন্যে সময় বলে কিছু নেই।
তাই
আমাদের এই মহাবিশ্বে সময় বলে যদি কিছু হিসেব করতে হয় তখন তার শুরুটাকে
আমলে নিতে হয়। বিজ্ঞান
বলছে বিগব্যাঙ থেকে মহাবিশ্বের সময়ের যাত্রা এবং সময়ের অগ্রযাত্রার সাথে সাথে
মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হতে শুরু করেছে এবং বিভিন্ন পরিসরে মহাজাগতিক
বস্তুনিলয় সৃষ্টি হয়েছে।
এই
মহাজাগতিক
বস্তুর অবস্থান নির্ণয় করতে হলে তিন মাত্রার অবস্থান ও চতুর্থ মাত্রার
সময়ের হিসেব করলে মন হয় সুনির্দিষ্ট ভাবে কোন বস্তুর বা মহশূণ্যে কোন বিন্দুর
অবস্থান জানা সম্ভব।
কথা
হচ্ছে, মহাবিশ্বের
এই সময়ের সাথে আমাদের সময়ের কোন সম্পর্ক নেই। এটি বিগব্যাঙ
থেকে স্বত্বস্ফুর্ত নিয়মে উদ্ভূত সময়।
মনে
হয়, প্রকৃতিতে
মহাজাগতিক বস্তুর নিজস্ব সময় বলে কোন ব্যবস্থা প্রাকৃতিক ভাবে বিধিত নেই। মানুষ তার
নিজের প্রয়োজনে সূর্যের সাপেক্ষে পৃথিবীর উভয়বিদ ঘূর্ণন ব্যাবস্থায়
সুনির্দিষ্ট পর্যায় কালকে ব্যবহার করে একটা কাল্পনিক ব্যবস্থার উদ্ভব করেছে
মাত্র। এটি
মহাবিশ্বের বিধিত ব্যবস্থায় কোন সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি নয়।
এবার
ভাবুন সূর্যের বুকে সময় মাপার কি ব্যবস্থা নেবেন। হয়তো বলবেন
পৃথিবীর এক বৎসরে সূর্যের ২৫ টি অক্ষ ঘূর্ণি সম্পন্ন হয়। তাহলে বলবো এতেতো
সূর্যের নিজস্ব সময় মাপন হয়না। হয়তো অন্য কোন গ্রহে বা উপগ্রহে তার মাতৃ নক্ষত্রের ছত্র ছায়ায়
আমাদের মত করে সময় মাপার ব্যবস্থ করা যেতে পারে, কিন্তু তা
কখনোই আন্ত মহাবিশ্বের হয়ে উঠেনা।
মহাবিশ্বের
সময় নিয়ে যখন এই দুদোল্যমানতা তখন স্বাভাবিক কারনেই প্রশ্ন জাগে, সময় তাহলে কি?
বলা
চলে সময় হল মহাবিশ্বের বাস্তবতা। যতদিন এই মহাবিশ্ব আছে ততদিন সময়ও আছে। আমাদের
মহাবিশ্ব যে অনুশাসনে চলছে সময়ও ঠিক সেই অনুশাষনে চলছে।
তাহলে
সময়ের একটা নিজস্ব গতি আছে। বিজ্ঞান সময়ের এই গতিকে আলোর গতির সাথে তুলনা করেছে। আর পরিমাপের
বিষয়টি স্থান ভেদে ভিন্ন।
(শেষ পর্ব) - দর্শন ভাবনা
নানা
মুনির নানা মত; কেউ বলছেন, সময় স্থির, কেউ বলছেন
সময় চলমান, আবার
কেউ
বলছেন সময় আপেক্ষিক। প্রত্যেকের
কথার মধ্যেই রয়েছে সুস্পষ্ট যুক্তি, আবার কোথাওবা বক্তব্যের পিছনে রয়েছে
ব্যাখ্যাহীনতা। সবকিছু
মিলিয়ে সময় কুহেলিকা।
যুক্তি
অনুযায়ী, যে
কোন অবস্থাতেই মহাবিশ্বের যে কোন স্থানে একঘণ্টা সময় এক ঘন্টাই।
সময়
নিয়ে যেমন ভেবেছেন প্রাচীণ দার্শনিকরা তেমনি ভেবেছেন মধ্যযুগের বিজ্ঞানীরা। তার পর
সর্বশেষে আধুনিক বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞান
পিতা নিউটন সময় সম্পর্কে বলেছেন, আমাদের মহাবিশ্বে সময় স্থির; তিনি সময়কে
নদীর স্রোতের সাথে তুলনা করেছেন, বলেছেন, যেখানেই মাপা হোক না কেন গতি একই।
উদাহরণ
স্বরূপ ভাবলে এ কথায় কোন বিতর্ক চলেনা; তিনি আরেকটি উদাহরনে বলেছেন, একজন মহাশূণ্যচারী
এক ঘণ্টা মহাশূণ্যে ভ্রমন করে এসে দেখবেন পৃথিবীতে তার বন্ধুটির ঘরিতেও ঠিক এক ঘন্টা
অতিবাহিত হয়েছে।
কিন্তি
বিজ্ঞানী নিউটন বোধ হয় তার নিজের প্রদত্ত দোলক সূত্রের কথা ভুলে গিয়েছিলন। তার সেই
সূত্র মতে ‘কোন
দোলকের পর্যায়কাল সেই স্থানের মধ্যাকর্ষণ জনিত ত্বরণের উপর নির্ভরশীল। মহাবিশ্বের
সকল স্থানে যদি এই ত্বরণের মান সমান না হয়ে থাকে তবে অবশ্যই তাঁর
তত্ত্বমতে মহাবিশ্বের সকল স্থানে আপনার ঘরি একই সময় দিতে পারেনা।
তবে
এই অধমের মতে তাঁর তত্ত্বের সেই অংশটুকু ‘মহাশূণ্যের
সকল স্থানে সময় একই’ কথাটার যথার্ততা রয়েছে। তবে তাঁর ব্যখ্যা
ভিন্ন। বিজ্ঞানী
নিউটন বলেছেন, এক ঘন্টার পরিমাপ সকল স্থানেই সমান।
কিন্তু
প্রকৃত পক্ষে তা হতে পারেনা। বলা যেতে পারে ‘সময়ের বিস্তৃতি মহাবিশ্বের সকল স্থানে
একই'। যখনই আমরা
তাকে ঘন্টা-মিনিটে প্রকাশ করবো তখন তা পরিমাপ বুঝায়, আমরা জানি সময়ের পরিমাপ
মহাবিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন। পৃথিবীর দিবস আর চন্দ্রের দিবস কিংবা অন্য কোন ছায়াপথে কোন
অধিবাসীর
দিবস এক সমান নয়, ফলে তাদের ভগ্নাংশ গুলোও এক নয়। কিন্তু সময়ের
বিস্তৃতি
সকল স্থানে এক।
এ
ক্ষেত্রে আমাদেরকে একটু পিছনে ভাবতে হবে, আজকে বিজ্ঞান বলছে, বিগব্যাঙ
থেকে মহাবিশ্বের সময় শুরু। তাহলে এ সময়ের গতিকে আমরা কিভাবে পরিমাপ করবো? মহাবিশ্বের
বিভিন্ন স্থানের অধিবাসীরা যার যার মত সময়ের পরিমাপে তা হিসেব করবে। যাই হোক না
কেন সময়েরতো একটা নিজস্ব বিস্তৃতি রয়েছে।
তাহল
জন্ম থেকে এ পর্যোন্ত সময় যতটা পথ চলেছে সেই দূরত্বকে যার যার পরিমাপে তুলনা করলেই
সময়ের গতি যার যার মত পেয়ে যাবে; তাতে কিন্তু সময়ের নিজস্ব গতির পরিমাপ
হলনা। এবার আমরা
যদি ধরে নেই যে বিগব্যাঙ থেকে প্রথম সৃষ্ট তারকাটি প্রায় আলোর গতিতে এগিয়ে
যাচ্ছে তবে বলা চলে যে সময়ও ঠিক তার সাথে একই গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। তাহলে বলা
চলে সময়ের গতি আলোর গতিরই সমান। তাতেও কিন্তু পরিপূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়না, কারণ প্রথম
তারকাটি
যে সর্বকালীন ঠিক আলোর গতিতে এগিয়ে যাবে তাও বলা যায়না; ফলে আমাদেরকে ধরে
নিতে হয় যে, মহাবিশ্বের
সম্প্রসারণ গতিই হল সময়ের গতি, তাকে যার যার পরিমাপে ফেলে হিসেব করতে
হবে।
আমাদের
পরিমাপকৃত ঘন্টা মিনিট সেকেন্ড কখনোই সমযের গতি হিসেব করেনা। এ শুধু
নির্ণয় করে আমাদের হিসেবে সময়ের ভগ্নাংশকে। ফলে মহাশূণ্য সময়ের আলোচনায় ঘন্টা মিনিটের তথা আমাদের ঘরির কোন
স্থান নেই।
এবার
আমরা যদি মহাবিশ্বের সময় হিসেব করত চাই তবে ধরে নিতে হবে মহাবিশ্বের জন্ম থেকে
যে কোন অবস্থা পর্যোন্ত এক দিন বা এক বৎসর, যে কোন এককে
বা অন্য নামে অবিহিত করে তাকে ভগ্নাংশে ভাগ করে মহাবিশ্বের সময় গণনা করতে পারি। তাকে আমাদের
সময়ের সাথে তুলনাও করতে পারি, কিন্তু আমাদের সময় দিয়ে তার দিন বা সময় নির্ণয় করতে পারিনা।