কোরান- হাদিস নিশ্চিতভাবেই নবী মুহাম্মদ নয় , বরং
ভিন্ন কোন মুহাম্মদের কথা বলেছে, কোরান- হাদিস বর্নিত
মুহাম্মদ, কোনভাবেই নবী মুহাম্মদ নয়!
আমরা শৈশব থেকে জেনেছি ও আমাদেরকে বিশ্বাস করান হয়েছে যে ইসলামের নবী মুহাম্মদ হলো একজন মহান , ন্যায় পরায়ন , দয়ালু, বিবেকবান মানুষ যাকে আল্লাহ দুনিয়াতে পাঠিয়েছে মানুষকে হেদায়েত করার জন্যে। কিন্তু কোরান হাদিস পড়লে যে মুহাম্মদের পরিচয় আমরা পাই তা হলো - মুহাম্মদ হলো একটা ডাকাত সর্দার(বাকারা-২:২১৭ আয়াতের প্রেক্ষাপট পড়লে জানা যায়, মদিনার পাশে বানিজ্য কাফেলা নিয়মিত ডাকাতি করত), মুহাম্মদ একটা নারী লোভি বহুগামী ( ১৩ টা বিয়ে করেছিল ), একটা শিশুকামী( ৬ বছরের শিশু আয়শাকে বিয়ে করে তাকে ৯ বছরের সময় ধর্ষন করে), একটা ধর্ষনকারী( খায়বার আক্রমন করে সাফিয়াকে যেদিন বন্দি করে সেদিন রাতেই তাকে ধর্ষন করে), একটা অসচ্চরিত্র কামুক মানুষ( পালিত পুত্রের বধুর প্রতি কুদৃষ্টি খালি দেয় নাই , তাকে এক পর্যায়ে বিয়ে করে বাসর করে ও নিয়মিত দাসীর সাথে যৌন সঙ্গম করত ), একটা ঠান্ডা মাথার খুনি ( ইসলাম গ্রহন না করলে বা কেউ ইসলাম ত্যাগ করলে, বা কেউ তার সমালোচনা করলে ঠান্ডা মাথায় তাকে খুন করত), একটা উন্মাদ ও পাগল( কোরানের ভাষ্য), মুহাম্মদের মতে নারীরা পূর্নাঙ্গ মানুষ নয় ( বাকারা- ২: ২৮২) তারা কুকুর বা শয়তানের মত, তারা গৃহপালিত পশুর মত, তাদেরকে যেমন ইচ্ছা খুশি ভোগ ও ব্যবহার করা যাবে ( বহু হাদিসে বর্নিত)। তার মানে দেখা যাচ্ছে , কোরান হাদিস বস্তুত এমন এক মুহাম্মদের চিত্র তুলে ধরেছে যে মুহাম্মদ একজন ডাকাত , খুনি , ধর্ষনকারী, লুইচ্চা-বদমাইশ নারী লিপ্সু শিশুকামী, উন্মাদ- পাগল ধরনের এক ব্যাক্তি।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে , ইসলামের নবী মুহাম্মদ সম্পর্কে আমাদেরকে যা জানান হয়েছে ,কোরান ও হাদিস মুহাম্মদ সম্পর্কে সম্পূর্ন ভিন্ন কথা বলে। সুতরাং কোরান - হাদিস বর্নিত মুহাম্মদ কোনভাবেই ইসলামের নবী মুহাম্মদ হতে পারে না। কোরান হাদিস নিশ্চিতভাবেই ভিন্ন কোন মুহাম্মদের কথা বলেছে। আপনারা কি বলেন?
ইসলামের সাথে কোরান- হাদিসের কোনই সম্পর্ক নাই
লিখেছেন: কাঠমোল্লা —
আমরা শান্তিপ্রিয় মুসলমান। আমরা জন্ম থেকে জানি ইসলাম হলো শান্তির ধর্ম। শান্তির ধর্ম ইসলাম কাউকে হত্যা করতে বলে না , চুরি ডাকাতি , নারী ধর্ষন, দাসীর সাথে যৌনকাজ করতে বলে না, অমুসলিমদের সাথে শত্রুতা করতে বলে না। বরং বলে সবার সাথে শান্তিপূর্নভাবে বাস করতে। কিন্তু কোরান হাদিস পড়লে দেখা যায় - সেসব ভিন্ন কথা বলছে। তাই কোরান হাদিসের সাথে ইসলামের কোনই সম্পর্ক নেই।
কোরান ডাকাতিকে বৈধতা দিয়েছে যেমন -
সূরা বাকারা -২: ২১৭: সম্মানিত মাস সম্পর্কে তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে যে, তাতে যুদ্ধ করা কেমন? বলে দাও এতে যুদ্ধ করা ভীষণ বড় পাপ। আর আল্লাহর পথে প্রতিবন্দ্বকতা সৃষ্টি করা এবং কুফরী করা, মসজিদে-হারামের পথে বাধা দেয়া এবং সেখানকার অধিবাসীদেরকে বহিস্কার করা, আল্লাহর নিকট তার চেয়েও বড় পাপ। আর ধর্মের ব্যাপারে ফেতনা সৃষ্টি করা নরহত্যা অপেক্ষাও মহা পাপ। বস্তুতঃ তারা তো সর্বদাই তোমাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাকবে, যাতে করে তোমাদিগকে দ্বীন থেকে ফিরিয়ে দিতে পারে যদি সম্ভব হয়। তোমাদের মধ্যে যারা নিজের দ্বীন থেকে ফিরে দাঁড়াবে এবং কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে, দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের যাবতীয় আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে। আর তারাই হলো দোযখবাসী। তাতে তারা চিরকাল বাস করবে।
উক্ত আয়াতে যে যুদ্ধের কথা বলেছে সেটা আসলে ছিল ডাকাতি। মুহাম্মদ তার আটজন সাগরেদকে মক্কার উপকন্ঠে নাখলা নামক স্থানে বানিজ্য কাফেলায় আক্রমন করে ডাকাতি করতে পাঠায়। ঘটনাচক্রে তারা নিষিদ্ধ বা পবিত্র মাসে বানিজ্য কাফেলা আক্রমন করে কিছু বনিক হত্যা করে তাদের মালামাল লুট করে নিয়ে যায় আর দুইজনকে পনবন্দি করে। অত:পর সেই ডাকাতিকে বৈধ করতেই মুহাম্মদ উক্ত আয়াত নাজিল করে। তার মানে ইসলামে অমুসলিমদের ওপর আক্রমন করে ডাকাতি করা বৈধ।
কোরান বন্দিনী নারীকে ধর্ষন করতে বলেছে , আর বলেছে সাময়িক বা মুতা বিয়ে করতে , যেমন -
সুরা নিসা -৪: ২৪: এবং নারীদের মধ্যে তাদের ছাড়া সকল সধবা স্ত্রীলোক তোমাদের জন্যে নিষিদ্ধ; তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের মালিক হয়ে যায়-এটা তোমাদের জন্য আল্লাহর হুকুম। এদেরকে ছাড়া তোমাদের জন্যে সব নারী হালাল করা হয়েছে, শর্ত এই যে, তোমরা তাদেরকে স্বীয় অর্থের বিনিময়ে তলব করবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য-ব্যভিচারের জন্য নয়। অনন্তর তাদের মধ্যে যাকে তোমরা ভোগ করবে, তাকে তার নির্ধারিত হক দান কর। তোমাদের কোন গোনাহ হবে না যদি নির্ধারণের পর তোমরা পরস্পরে সম্মত হও। নিশ্চয় আল্লাহ সুবিজ্ঞ, রহস্যবিদ।
উক্ত আয়াতের যে ব্যখ্যা মুহাম্মদ দিয়ে গেছে সেটা হলো ---
সহিহ মুসলিম :: খন্ড ৮ :: হাদিস ৩৪৩২
উবায়দুল্লাহ ইবন উমর ইবন মায়সারা কাওয়ারীরী (র)......।আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ (সা) হুনায়নের যুদ্ধের সময় একটি দল আওতাসের দিকে পাঠান । তারা শক্রদলের মুখোমুখী হয়েও তাদের সাথে যুদ্ধ করে জয়লাভ করে এবং তাদের অনেক কয়েদী তাদের হস্তগত হয় । এদের মধ্য থেকে বন্দিনী নারীদের সাথে সহবাস করা রাসুলুল্লাহ (সা) -এর কয়েকজন সাহাবী যেন না জায়িয মনে করলেন, তাদের মুশরিক স্বামী বর্তমান থাকার কারণে । আল্লাহ তায়ালা এ আয়াত অবতীর্ণ করেন "এবং নারীর মধ্যে তোমাদের অধিকারভূক্ত দাসী ব্যতীত সকল সধবা নারী তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ-, অর্থাৎ তারা তোমাদের জন্য হালাল, যখন তারা তাদের ইদ্দত পূর্ন করে নিবে- নিসা-৪:২৪)"
যেসব নারীদেরকে তাদের স্বামী , পিতা ভাই ইত্যাদিকে হত্যা করে বন্দি করা হয়েছে , তারা নিশ্চয়ই বিজয়ী সৈন্যদের সাথে পরম উল্লাসে যৌনকাজ করতে যাবে না , তার মানে তাদেরকে ধর্ষনই করতে হবে। এছাড়া উক্ত ৪:২৪ আয়াতের শেষাংশ সাময়িক বিয়ে বা পতিতাবৃত্তিকে বৈধ করেছে , যার ব্যখ্যা মুহাম্মদ নিজেই দিয়ে গেছে যেমন -
সহিহ মুসলিম :: খন্ড ৮ :: হাদিস ৩২৫২
কুতায়বা ইবন সাঈদ (র)......রাবী ইবন সাবরা আল-জুহানী (র) থেকে তাঁর পিতা সাবরা (রাঃ)-এর সূত্রে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা) আমাদের মুত-আর অনুমতি দিলেন । তারপর আমিও অপর এক ব্যক্তি বনূ আমির গোত্রের একটি মহিলার নিকট গেলাম । সে ছিল দেখতে লম্বা ঘাড় বিশিষ্ট তরুণ উষ্ট্রীর ন্যায় । আমরা নিজেদেরকে তার নিকট (মুতআ বিবাহের জন্য) পেশ করলাম । সে বলল, আমাকে কি দেবে? আমি বললাম, আমার চাদর । আমার সাথীও বলল, আমার চাদর । আমার চাদরের তুলনায় আমার সংগীর চাদরটি ছিল উৎকৃষ্টতর; কিন্তু আমি ছিলাম তুলনায় কম বয়সের যূবক । সে যখন আমার সংগীর চাদরের প্রতি তাকায় তখন তা তার পসন্দ হয় এবং বলল, তুমি এবং তোমার চাদরই আমার জন্য যথেষ্ট । অতএব আমি তার সাথে তিন দিন অতিবাহিত করলাম । তারপর রাসুলুল্লাহ (সা) বললেনঃ কারো কাছে মুতআ বিবাহের সুত্রে কোন স্ত্রী লোক থাকলে সে যেন তার পথ ছেড়ে দেয় (ত্যাগ করে) ।
কোরান অমুসিলমদের বিরুদ্ধে চিরস্থায়ী সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষনা করে তাদেরকে জোর করে ইসলাম গ্রহনে বাধ্য করতে বলেছে , যদি অমুসিলমরা ইসলাম গ্রহন না করে তাহলে তাদেরকে হত্যা করতে বলেছে যেমন -
সুরা তাওবা -৯: ৫: অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদের হত্যা কর যেখানে তাদের পাও, তাদের বন্দী কর এবং অবরোধ কর। আর প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের সন্ধানে ওঁৎ পেতে বসে থাক। কিন্তু যদি তারা তওবা করে, নামায কায়েম করে, যাকাত আদায় করে, তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
সুরা তাওবা -৯: ২৯: তোমরা যুদ্ধ কর আহলে-কিতাবের ঐ লোকদের সাথে, যারা আল্লাহ ও রোজ হাশরে ঈমান রাখে না, আল্লাহ ও তাঁর রসূল যা হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম করে না এবং গ্রহণ করে না সত্য ধর্ম, যতক্ষণ না করজোড়ে তারা জিযিয়া প্রদান করে।
স্বয়ং মুহাম্মদ নিজেই এইসব আয়াতের ব্যাখ্যা দিয়ে বলে গেছে -
সহিহ মুসলিম :: খন্ড ১ :: হাদিস ৩০
আবু তাহির, হারমালা ইবন ইয়াহইয়া ও আহমাদ ইবন ঈসা (র)……আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই - এ কথার সাক্ষ্য না দেওয়া পর্যন্ত লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আমি আদিষ্ট হয়েছি । সূতরাং যে কেউ আল্লাহ ছাড়া ইলাহ নেই স্বীকার করবে, সে আমা হতে তার জানমালের নিরাপত্তা লাভ করবে; তবে শরীআতসম্মত কারণ ব্যতীত । আর তার হিসাব আল্লাহর কাছে ।
সহিহ বুখারী :: খন্ড ৪ :: অধ্যায় ৫২ :: হাদিস ২২০
ইয়াহ্ইয়া ইব্ন বুকাইর (র)...............আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, অল্প শব্দে ব্যাপক অর্থবোধক বাক্য বলার শক্তি সহ আমি প্রেরিত হয়েছি এবং শত্রুর মনে ভীতির সঞ্চারের( সন্ত্রাস) মাধ্যমে আমাকে সাহায্য করা হয়েছে।
এই হত্যা লীলা ও সন্ত্রাসই যে বেহেস্তে যাওয়ার মূল চাবিকাঠি সেটাও মুহাম্মদ খুব সুন্দরভাবে বলে গেছে যেমন -
সহিহ বুখারী :: খন্ড ৪ :: অধ্যায় ৫২ :: হাদিস ৭৩
আব্দুল্লাহ ইব্ন মুহাম্মদ (র)............উমর ইব্ন উবায়দুল্লাহ (র)-এরাযাদকৃত গোলাম ও তার কাতিব আবূন নাযর (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইব্ন আবূ আওফা (রা) তাঁকে লিখেছিলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, তোমরা জেনে রাখ, তরবারীর ছায়ার নীচেই জান্নাত।
এরকম আরও বহু উদাহরন দেয়া যাবে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে , আমরা যে শান্তির ধর্ম ইসলামকে জানি , কোরান ও হাদিস তার সম্পূর্ন ভিন্ন ধরনের এক অমানবিক , অনৈতিক , বর্বর ও হিংসাত্মক বিধান ইসলামের নামে আমাদেরকে বলছে ও শিখাচ্ছে। আমরা শান্তিপূর্ন মুসলমানরা এই ধরনের অমানবিক , অনৈতিক , বর্বর বিধানকে ঘৃনা ভরে প্রত্যাখ্যান করি ও করে যাব। আমরা বর্তমানে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি , মুহাম্মদ মারা যাওয়ার পর কিছু কাফের মুর্তাদ মিলে কোরান ও হাদিস রচনা করে ইসলাম ধর্মকে কলুষিত করে গেছে। তারা ইসলামের সর্বনাশ করার দুরভিসন্ধি থেকেই এটা করেছে। আমরা তাদের সেই ষড়যন্ত্রকে প্রত্যাখ্যান করছি।
আর তাই আমাদের সিদ্ধান্ত, শান্তির ধর্ম ইসলামের সাথে কোরান ও হাদিসের কোনই সম্পর্ক নেই।
কোরান কোনভাবেই সর্বজ্ঞানী সৃষ্টিকর্তার কিতাব হতে পারে না(অকাট্য প্রমান)
আমরা সবাই জানি , জমাট রক্ত হলো মৃত রক্ত। মৃত রক্ত থেকে কোন জীবন তৈরী হতে পারে না।বরং কোন প্রানীর দেহে রক্ত জমাট বেধে গেলে সাথে সাথেই সে মারা যায়। সুতরাং জমাট রক্ত পিন্ড থেকে মানুষ সৃষ্টি হওয়ার গল্প একটা বানোয়াট , উদ্ভট ও আষাড়ে গল্প মাত্র। আর এর দ্বারাই প্রমানিত হয় কোরান কোন সর্বজ্ঞানী সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে আসতে পারে না। কিছু অল্প শিক্ষিত লোকজন মিলে এটা লিখেছে আর তারা তাদের সময় যা জানত সেটারই প্রতিফলন ঘটিয়েছে কোরানে। এখন দেখুন কোরান কি বলছে ====
সুরা আলাক-৯৬: ২: সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে।
অর্থাৎ আল্লাহ মানুষকে জমাট রক্ত থেকে সৃষ্টি করেছে। অনেকে এসে এখন বলা শুরু করবে , উক্ত আয়াতে যে আরবী শব্দ "আলাক" ব্যবহার করা হয়েছে তার অর্থ জমাট রক্ত না। সেক্ষেত্রে আমরা দুনিয়ার সকল প্রসিদ্ধ আলেমের অনুবাদ ব্যবহার করতে পারি।তার আগেই জানা দরকার জমাট রক্তের ইংরেজী হলো Clot or Clotted Blood, এটাই সার্বজনীন স্বীকৃত অর্থ যা চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যবহার করা হয়। এখন দেখা যাক , দুনিয়ার প্রসিদ্ধ সব আলেমরা উক্ত আয়াতের কি অনুবাদ করেছেন ----
Muhammad Asad :created man out of a germ-cell
M. M. Pickthall : Createth man from a clot.
Shakir : He created man from a clot.
Yusuf Ali (Saudi Rev. 1985): Created man, out of a (mere) clot of congealed blood:
Yusuf Ali (Orig. 1938): Created man, out of a (mere) clot of congealed blood:
Dr. Laleh Bakhtiar: He created the human being from a clot. zoom
Wahiduddin Khan: created man from a clot [of blood]. zoom
T.B.Irving :creates man from a clot!
Safi Kaskas: created the human being from a clinging substance.
Abdul Majid Daryabadi Hath created man from a clot! m – See introduction
[The Monotheist Group] (2011 Edition): He created man from a clot.
Abdel Haleem : He created manfrom a clinging form.
Abdul Majid Daryabadi Hath created man from a clot!
Aisha Bewley : created man from clots of blood.
Ali Ünal: Created human from a clot clinging (to the wall of the womb).
Ali Quli Qara'i : created man from a clinging mass.
Hamid S. Aziz: Created man from a clot!
Muhammad Mahmoud Ghali :Created man from clots.
Muhammad Sarwar : He created man from a clot of blood.
Muhammad Taqi Usmani : He created man from a clot of blood.
Shabbir Ahmed: Created man from a zygote.
Syed Vickar Ahamed: Created man, out of a (mere) clot of thickened blood:
Umm Muhammad (Sahih International): Created man from a clinging substance.
Farook Malik: created man from clots of blood.
Dr. Munir Munshey : He creates man from a clot (of blood).
Dr. Mohammad Tahir-ul-Qadri : He created man from a hanging mass (clinging) like a leech (to the mother’s womb).
Dr. Kamal Omar: He created the human being out of a living matter attached (like a leech) hanging (from the internal surface of the womb).
Talal A. Itani (new translation) : Created man from a clot.
Bilal Muhammad (2013 Edition): Created the human being from a zygote.
Maududi: created man from a clot of congealed blood.
Ali Bakhtiari Nejad : created the human from a (dangling, clinging, and leach like) blood clot.
[The Monotheist Group] (2013 Edition):He created man from an embryo.
Mohammad Shafi: Creates man from a cling
কোরান যে ১০০% একটা ভূয়া কিতাব তার অকাট্য প্রমান(হারুন/মুসার বোন মরিয়াম যীশুর মা ?)
কোরান বলছে যীশুর মাতা মরিয়ম হলো মুসা/হারুনের বোন। কিন্তু ইতিহাস থেকে দেখা যায়, মুসা/হারুনের জন্ম খৃ:পূ: ১০০০ এর দিকে আর তার ১০০০ বছর পর যীশুর জন্ম হয়। তাহলে যীশুর মাতা মরিয়াম কিভাবে মুসা/হারুনের বোন হয় ? তাহলে কি প্রমানিত হয় ? কোরান কি কোন সর্বজ্ঞানী সৃষ্টিকর্তার কিতাব ?
------------------------------------------------------------------------------
সুরা আর ইমরান-৩:৩৫: এমরানের স্ত্রী যখন বললো-হে আমার পালনকর্তা! আমার গর্ভে যা রয়েছে আমি তাকে তোমার নামে উৎসর্গ করলাম সবার কাছ থেকে মুক্ত রেখে। আমার পক্ষ থেকে তুমি তাকে কবুল করে নাও, নিশ্চয়ই তুমি শ্রবণকারী, সর্বজ্ঞাত।তঃপর যখন তাকে প্রসব করলো বলল, হে আমার পালনকর্তা! আমি একে কন্যা প্রসব করেছি। বস্তুতঃ কি সে প্রসব করেছে আল্লাহ তা ভালই জানেন। সেই কন্যার মত কোন পুত্রই যে নেই। আর আমি তার নাম রাখলাম মারইয়াম। আর আমি তাকে ও তার সন্তানদেরকে তোমার আশ্রয়ে সমর্পণ করছি। অভিশপ্ত শয়তানের কবল থেকে।
---------------------------------------------------------------------------------
তার মানে বোঝা গেল ইমরানের মরিয়ম নামের এক কন্যা ছিল। এই মরিয়মই হলো যীশুর মাতা যা বলা হয়েছে এর কিছু পরের আয়াতে ----
--------------------------------------------------------------------------------
সুরা আল ইমরান- ৩: ৪৫: যখন ফেরেশতাগণ বললো, হে মারইয়াম আল্লাহ তোমাকে তাঁর এক বানীর সুসংবাদ দিচ্ছেন, যার নাম হলো মসীহ মারইয়াম-তনয় ঈসা, দুনিয়া ও আখেরাতে তিনি মহাসম্মানের অধিকারী এবং আল্লাহর ঘনিষ্ঠদের অন্তর্ভূক্ত।
--------------------------------------------------------------------------------
এরপর বলছে হারুন হলো মরিয়মের ভাই , যেমন -
------------------------------------------------------------------------------
সুরা মারিয়াম - ১৯: ২৭-২৮: অতঃপর তিনি সন্তানকে নিয়ে তার সম্প্রদায়ের কাছে উপস্থিত হলেন। তারা বললঃ হে মারইয়াম, তুমি একটি অঘটন ঘটিয়ে বসেছ। হে "হারূণ-ভাগিনী," তোমার পিতা অসৎ ব্যক্তি ছিলেন না এবং তোমার মাতাও ছিল না ব্যভিচারিনী।
------------------------------------------------------------------------------
এখন এই হারুন কে ? সেটা আমাদেরকে জানতে হবে। কোরান বলছে-
--------------------------------------------------------------------------------
সুরা কাসাস- ২৮: ৩৩-৩৪: মূসা বলল, হে আমার পালনকর্তা, আমি তাদের এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছি। কাজেই আমি ভয় করছি যে, তারা আমাকে হত্যা করবে।আমার ভাই হারুণ, সে আমা অপেক্ষা প্রাঞ্জলভাষী। অতএব, তাকে আমার সাথে সাহায্যের জন্যে প্রেরণ করুন। সে আমাকে সমর্থন জানাবে। আমি আশংকা করি যে, তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলবে।
-----------------------------------------------------------------------------
অর্থাৎ কোরান বলছে হারুন হলো মুসার ভাই। তাহলে গোটা বিষয়টা কি দাড়াল ? হারুনের বোন হলো মরিয়াম , আবার হারুনের ভাই হলো মুসা , তার মানে মরিয়াম মুসারও আপন বোন। অন্যদিকে মরিয়ামের পিতার নাম ইমরান। সুতরাং বিষয়টা দাড়াল- ইমরানের তিনটা সন্তান- হারুন, মুসা ও মরিয়াম। কোরান বলছে মরিয়ামই হলো যীশুর মাতা।
এবার দেখা যাক,বাইবেল কি বলে এই ইমরান, মুসা, হারুন ও মরিয়াম সম্পর্কে -
-------------------------------------------------------------------------------
গননা পুস্তক- ২৬: ৫৯: ৫৯ ইমরানের স্ত্রীর নাম ছিল য়োকেবদ। তিনি নিজেও ছিলেন লেবীয় পরিবারগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। তার জন্ম হয়েছিল মিশরে। ইমরান এবং য়োকেবদের দুই পুত্র ছিল হারোণ এবং মোশি। তাদের মরিয়ম নামে একটি কন্যাও ছিল।
------------------------------------------------------------------------------
অর্থাৎ বাইবেলের তৌরাত কিতাবে বলছে একই কথা , ইমরানের তিন সন্তান- হারুন, মুসা ও মরিয়াম। কিন্তু কোরান বলছে ইমরানের কন্যা ও হারুন-মুসার সেই বোন মরিয়ামই হলো যীশুর মাতা। কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব যখন যীশুরও প্রায় ১০০০ বছর আগে হারুন-মুসার জন্ম হয় ?
এটা এভাবেই সম্ভব। মুহাম্মদ কিশোর বয়স থেকে তার চাচা আবু তালিবের সাথে সিরিয়াতে বানিজ্য করতে যেত , সিরিয়া ছিল ইহুদি ও খৃষ্টানদের বসতি , সেখানে কৌতুহলি মুহাম্মদ ইহুদি রাব্বি বা খৃষ্টান পাদ্রীদের কাছ থেকে তৌরাত ও যীশুর কাহিনী শুনেছিল। এরপর সে নিজে যখন আল্লাহর বানীর নামে কোরানের বানী বলা শুরু করে , যীশুর মাতা মরিয়মকে সেই হারুন/মুসার বোন মরিয়মের সাথে গুলিয়ে ফেলে। অশিক্ষিত ও নিরক্ষর মুহাম্মদ অন্যদের কাছ থেকে শোনা গল্প স্মৃতি থেকে বলতে গিয়ে ধারাবাহিকতা হারিয়ে ফেলে ও সব কিছু এলোমেলো করে ফেলে। কোরান যদি সত্যি সত্যি সর্বজ্ঞানী সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে আসত, তাহলে এই গোলমালটা হতো না। এই একটা ঘটনাই প্রমান করে কোরান সম্পূর্ন ভূয়া , বানান ও শুনে শুনে নকল করে তৈরী করা একটা কিতাব।
ফেসবুকে ইসলাম প্রচার করা কি হালাল , নাকি হারাম ?
================================
সম্প্রতি ফেসবুকে ইসলাম প্রচারের ঢল নেমেছে। কিন্তু কথা হলো ফেসবুকে ইসলাম প্রচার কি হালাল ? অনেকে উদ্ভটভাবে বলতে পারে , কোরান বা হাদিসে তো বলা নেই , ফেসবুক ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু কোরান হাদিস কি বলেছে সেটা একটু দেখা যাক -
------------------------------------------------------------------------
সহিহ বুখারী :: খন্ড ৮ :: অধ্যায় ৭৩ :: হাদিস ১৩০
ইয়াসারাহ ইব্ন সাফওয়ান (র)................আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নবী (সা)ামার নিকট আসলেন। তখন ঘরে একখানা পর্দা ঝুলানো ছিল। যাদে ছবি ছিল। তা দেখে নবী (সা)-এর চেহারার রং বদলিয়ে গেল। এরপর তিনি পর্দাখানা হাতে নিয়ে ছিড়ে ফেললেন। আয়েশা (রা) বলেন, নবী (সা) লোকদের মধ্যে বললেনঃ কিয়ামতের দিন সবচেয়ে কঠিনাযাব হবে ঐসব লোকদের যারা এ সকল ছবি আঁকে।
সহিহ বুখারী :: খন্ড ৪ :: অধ্যায় ৫৫ :: হাদিস ৫৭০
ইয়াহ্ইয়া ইব্ন সুলায়মান (র) ......... ইব্ন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (স) একদা কা’বা ঘরে প্রবেশ করলেন । সেখানে তিনি ইব্রাহীম (আ) ও মারইয়ামের ছবি দেখতে পেলেন । তখন তিনি বললেন, তাদের (কুরাইশদের) কি হল ? অথচ তারা তো শুনতে পেয়েছে, যে ঘরে প্রাণীর ছবি থাকবে, সে ঘরে রহমতের ফিরিশ্তাগণ প্রবেশ করেন না ।
আরিফ আজাদ feeling স্রষ্টাকে কে সৃষ্টি করলো?
ল্যাম্পপোষ্টের অস্পষ্ট আলোয় একজন বয়স্ক লোকের ছায়ামূর্তি আমাদের দৃষ্টিগোচর হলো।গায়ে মোটা একটি শাল জড়ানো। পৌষের শীত। লোকটা হালকা কাঁপছেও।
-
আমরা খুলনা থেকে ফিরছিলাম। আমি আর সাজিদ।
ষ্টেশান মাষ্টারের রুমের পাশের একটি বেঞ্চিতে লোকটা আঁটসাঁট হয়ে বসে আছে।
ষ্টেশানে এরকম কতো লোকই তো বসে থাকে।তাই সেদিকে আমার বিশেষ কোন কৌতুহল ছিলো না।কিন্তু সাজিদকে দেখলাম সেদিকে এগিয়ে গেলো।
লোকটার কাছে গিয়েই সাজিদ ধপাস করে বসে পড়লো।আমি দূর থেকে খেয়াল করলাম, লোকটার সাথে সাজিদ হেসে হেসে কথাও বলছে।
আশ্চর্য! খুলনার ষ্টেশান।এখানে সাজিদের পরিচিত লোক কোথা থেকে এলো? তাছাড়া, লোকটিকে দেখে বিশেষ কেউ বলেও মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে কোন বাদাম বিক্রেতা।বাদাম বিক্রি শেষে প্রতিদিন ওই জায়গায় বসেই রাত কাটিয়ে দেয়।
আমাদের রাতের ট্রেন। এখন বাজে রাত দু'টো।এই সময়ে সাজিদের সাথে কারো দেখা করার কথা থাকলে তা তো আমি জানতামই। অদ্ভুত!
-
আমি আরেকটু এগিয়ে গেলাম। একটু অগ্রসর হতেই দেখলাম, ভদ্রলোকের হাতে একটি বইও আছে।দূর থেকে আমি বুঝতে পারি নি।
সাজিদ আমাকে ইশারা দিয়ে ডাকলো। আমি গেলাম।
লোকটার চেহারাটা বেশ চেনা চেনা লাগছে,কিন্তু সঠিক মনে করতে পারছি না।
সাজিদ বললো,- 'এইখানে বোস।ইনি হচ্ছেন হুমায়ুন স্যার।'
হুমায়ুন স্যার? এই নামে কোন হুমায়ুন স্যারকে তো আমি চিনি না।সাজিদকে জিজ্ঞেস করতে যাবো যে কোন হুমায়ুন স্যার, অমনি সাজিদ আবার বললো,- 'হুমায়ুন আজাদকে চিনিস না? ইনি আর কি।'
এরপর সে লোকটার দিকে ফিরে বললো,- 'স্যার, এ হলো আমার বন্ধু, আরিফ।'
লোকটা আমার দিকে তাকালো না। সাজিদের দিকে তাকিয়ে আছে।ঠোঁটে মৃদু হাসি।
আমার তখনো ঘোর কাটছেই না।কি হচ্ছে এসব? আমিও ধপাস করে সাজিদের পাশে বসে গেলাম।
-
সাজিদ আর হুমায়ুন আজাদ নামের লোকটার মধ্যে আলাপ হচ্ছে।এমনভাবে কথা বলছে, যেন তারা পরস্পর পরস্পরকে অনেক আগে থেকেই চিনে।
লোকটা সাজিদকে বলছে,- 'তোকে কতো করে বলেছি, আমার লেখা 'আমার অবিশ্বাস' বইটা ভালোমতো পড়তে। পড়েছিলি?'
সাজিদ বললো,- 'হ্যাঁ স্যার। পড়েছি তো।'
- 'তাহলে আবার আস্তিক হয়ে গেলি কেনো? নিশ্চয় কোন ত্যাদড়ের ফাঁদে পড়েছিস? কে সে? নাম বল? পেছনে যে আছে, কি জানি নাম?'
- 'আরিফ......'
- 'হ্যাঁ, এই ত্যাদড়ের ফাঁদে পড়েছিস বুঝি? দাঁড়া, তাকে আমি মজা দেখাচ্ছি........'
এই বলে লোকটা বসা থেকে উঠতে গেলো।
সাজিদ জোরে বলে উঠলো,- 'না না স্যার। ও কিচ্ছু জানে না।'
- 'তাহলে?'
- 'আসলে স্যার, বলতে সংকোচ বোধ করলেও সত্য এটাই যে, নাস্তিকতার উপর আপনি যেসব লজিক দেখিয়েছেন, সেগুলো এতটাই দূর্বল যে, নাস্তিকতার উপর আমি বেশিদিন ঈমান রাখতে পারি নি।'
এইটুকু বলে সাজিদ মাথা নিঁচু করে ফেললো।
লোকটার চেহারাটা মূহুর্তেই রুক্ষ ভাব ধারন করলো। বললো,- 'তার মানে বলতে চাইছিস, তুই এখন আমার চেয়েও বড় পন্ডিত হয়ে গেছিস? আমার চেয়েও বেশি পড়ে ফেলেছিস? বেশি বুঝে ফেলেছিস?'
সাজিদ তখনও মাথা নিঁচু করে আছে।
লোকটা বললো,- 'যাক গে! একটা সিগারেট খাবো।ম্যাচ নেই। তোর কাছে আছে?'
- 'জ্বি স্যার।'- এই বলে সাজিদ ব্যাগ খুলে একটি ম্যাচ বের করে লোকটার হাতে দিলো।সাজিদ সিগারেট খায় না।তবে, প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো তার ব্যাগে থাকে সবসময়।
-
লোকটা সিগারেট ধরালো।কয়েকটা জোরে জোরে টান দিয়ে ফুঁস করে একমুখ ধোঁয়া ছাড়লো।ধোঁয়াগুলো মূহুর্তেই কুন্ডুলি আকারে ষ্টেশান মাষ্টারের ঘরের রেলিং বেয়ে উঠে যেতে লাগলো উপরের দিকে।আমি সেদিকে তাকিয়ে আছি।
-
লোকটার কাশি উঠে গেলো। কাশতে কাশতে লোকটা বসা থাকে উঠে পড়লো। এই মূহুর্তে উনার সিগারেট খাওয়ার আর সম্ভবত ইচ্ছে নেই।লোকটা সিগারেটের টুকরোটিকে নিচে ফেলে পা দিয়ে একটি ঘষা দিলো।অমনি সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরোটি থেঁতলে গেলো।
সাজিদের দিকে ফিরে লোকটা বললো,- 'তাহলে এখন বিশ্বাস করিস যে স্রষ্টা বলে কেউ আছে?'
সাজিদ হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো।
- 'স্রষ্টা এই বিশ্বলোক, বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেছে বলে বিশ্বাস করিস তো?'
আবারো সাজিদ হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো।
এবার লোকটা একটা অদ্ভুত ভয়ঙ্কররকম হাসি দিলো।এই হাসি এতটাই বিদঘুটে ছিলো যে আমার গা ছমছম করতে লাগলো।
লোকটি বললো,- 'তাহলে বল দেখি, স্রষ্টাকে কে সৃষ্টি করলো?'
এই প্রশ্নটি করে লোকটি আবার সেই বিদঘুটে হাসিটা হাসলো। গা ছমছমে।
সাজিদ বললো,- 'স্যার, বাই ডেফিনিশন, স্রষ্টার কোন সৃষ্টিকর্তা থাকতে পারে না।যদি বলি X-ই সৃষ্টিকর্তাকে সৃষ্টি করেছে, তৎক্ষণাৎ আবার প্রশ্ন উঠবে, তাহলে X- এর সৃষ্টিকর্তা কে? যদি বলি Y, তাহলে আবার প্রশ্ন উঠবে, Y এর সৃষ্টিকর্তা কে? এভাবেই চলতে থাকবে। কোন সমাধানে যাওয়া যাবে না।'
লোকটি বললো,- 'সমাধান আছে।'
- 'কি সেটা?'
- 'মেনে নেওয়া যে- স্রষ্টা নাই,ব্যস!'- এইটুকু বলে লোকটি আবার হাসি দিলো। হা হা হা হা।
সাজিদ আপত্তি জানালো। বললো,- 'আপনি ভুল, স্যার।'
লোকটি চোখ কপালে তুলে বললো,- 'কি? আমি? আমি ভুল?'
- 'জ্বি স্যার।'
- 'তাহলে বল দেখি, স্রষ্টাকে কে সৃষ্টি করলো? উত্তর দে।দেখি কতো বড় জ্ঞানের জাহাজ হয়েছিস তুই।'
আমি বুঝতে পারলাম এই লোক সাজিদকে যুক্তির গ্যাড়াকলে ফেলার চেষ্টা করছে।
সাজিদ বললো,- 'স্যার, গত শতাব্দীতেও বিজ্ঞানিরা ভাবতেন, এই মহাবিশ্ব অনন্তকাল ধরে আছে।মানে, এটার কোন শুরু নেই।তারা আরো ভাবতো, এটার কোন শেষও নাই।তাই তারা বলতো- যেহেতু এটার শুরু-শেষ কিছুই নাই, সুতরাং, এটার জন্য একটা সৃষ্টিকর্তারও দরকার নাই।
কিন্তু থার্মোডাইনামিক্সের তাপ ও গতির সূত্রগুলো আবিষ্কার হওয়ার পর এই ধারনা তো পুরোপুরিভাবে ভ্যানিশ হয়ই,সাথে পদার্থবিজ্ঞানেও ঘটে যায় একটা বিপ্লব।থার্মোডাইনামিক্সের তাপ ও গতির দ্বিতীয় সূত্র বলছে- 'এই মহাবিশ্ব ক্রমাগত ও নিরবচ্ছিন্ন উত্তাপ অস্তিত্ব থেকে পর্যায়ক্রমে উত্তাপহীন অস্তিত্বের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে।কিন্তু এই সূত্রটাকে উল্টোথেকে প্রয়োগ কখনোই সম্ভব নয়।অর্থাৎ, কম উত্তাপ অস্তিত্ব থেকে এটাকে বেশি উত্তাপ অস্তিত্বের দিকে নিয়ে যাওয়া আদৌ সম্ভব নয়।এই ধারনা থেকে প্রমান হয়, মহাবিশ্ব চিরন্তন নয়।এটা অনন্তকাল ধরে এভাবে নেই।এটার একটা নির্দিষ্ট শুরু আছে।থার্মোডাইনামিক্সের সূত্র আরো বলে, - এভাবে চলতে চলতে একসময় মহাবিশ্বের সকল শক্তি নিঃশেষ হয়ে যাবে।আর মহাবিশ্ব ধ্বংস হবে।'
লোকটি বললো,- 'উফফফফ! আসছেন বৈজ্ঞানিক লম্পু। সহজ করে বল ব্যাটা।'
সাজিদ বললো,- 'স্যার, একটা গরম কফির কাপ টেবিলে রাখা হলে, সেটা সময়ের সাথে সাথে আস্তে আস্তে তাপ হারাতে হারাতে ঠান্ডা হতেই থাকবে।কিন্তু সেটা টেবিলে রাখার পর যে পরিমাণ গরম ছিলো, সময়ের সাথে সাথে সেটা আরো বেশি গরম হয়ে উঠবে- এটা অসম্ভব।এটা কেবল ঠান্ডাই হতে থাকবে। একটা পর্যায়ে গিয়ে দেখা যাবে, কফির কাপটা সমস্ত তাপ হারিয়ে একেবারে ঠান্ডা হয়ে গেছে। এটাই হচ্ছে থার্মোডাইনামিক্সের সূত্র।'
- 'হুম,তো?'
- 'এর থেকে প্রমান হয়, মহাবিশ্বের একটা শুরু আছে। মহাবিশ্বের যে একটা শুরু আছে- তারও প্রমান বিজ্ঞানিরা পেয়েছে। মহাবিশ্ব সৃষ্টি তত্বের উপর এ যাবৎ যতোগুলো থিওরি বিজ্ঞানিমহলে এসেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য, প্রমানের দিক থেকে সবচেয়ে শক্তিশালী থিওরি হলো- বিগ ব্যাং থিওরি।বিগ ব্যাং থিওরি বলছে- মহাবিশ্বের জন্ম হয়েছে একটি বিস্ফোরণের ফলে।তাহলে স্যার, এটা এখন নিশ্চিত যে, মহাবিশ্বের একটি শুরু আছে।'
লোকটা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো।
সাজিদ আবার বলতে শুরু করলো,- স্যার, আমরা সহজ সমীকরণ পদ্ধতিতে দেখবো স্রষ্টাকে সৃষ্টির প্রয়োজন আছে কিনা, মানে স্রষ্টার সৃষ্টিকর্তা থাকতে পারে কিনা।
সকল সৃষ্টির একটা নির্দিষ্ট শুরু আছে এবং শেষ আছে............ ধরি, এটা সমীকরণ ১।
মহাবিশ্ব একটি সৃষ্টি........... এটা সমীকরণ ২।
এখন সমীকরণ ১ আর ২ থেকে পাই-
সকল সৃষ্টির শুরু এবং শেষ আছে।মহাবিশ্ব একটি সৃষ্টি,তাই এটারও একটা শুরু এবং শেষ আছে।
তাহলে, আমরা দেখলাম- উপরের দুটি শর্ত পরস্পর মিলে গেলো,এবং তাতে থার্মোডাইনামিক্সের তাপ ও গতির সূত্রের কোন ব্যাঘাত ঘটে নি।
- 'হু'
- 'আমার তৃতীয় সমীকরণ হচ্ছে- 'স্রষ্টা সবকিছু সৃষ্টি করেছেন।'
তাহলে খেয়াল করুন, আমার প্রথম শর্তের সাথে কিন্তু তৃতীয় শর্ত ম্যাচ হচ্ছে না।
আমার প্রথম শর্ত ছিলো- সকল সৃষ্টির শুরু আর শেষ আছে।কিন্তু তৃতীয় শর্তে কথা বলছি স্রষ্টা নিয়ে।তিনি সৃষ্টি নন, তিনি স্রষ্টা।তাই এখানে প্রথম শর্ত খাটে না।সাথে, তাপ ও গতির সূত্রটিও এখানে আর খাটছে না।তার মানে, স্রষ্টার শুরুও নেই, শেষও নাই।অর্থাৎ, তাকে নতুন করে সৃষ্টিরও প্রয়োজন নাই।তার মানে স্রষ্টার আরেকজন স্রষ্টা থাকারও প্রয়োজন নাই। তিনি অনাদি, অনন্ত।'
এইটুকু বলে সাজিদ থামলো। হুমায়ুন আজাদ নামের লোকটি কপালের ভাঁজ দীর্ঘ করে বললেন,- 'কি ভংচং বুঝালি এগুলা? কিসব সমীকরণ টমীকরণ? এসব কি? সোজা সাপ্টা বল।আমাকে অঙ্ক শিখাচ্ছিস? Laws Of Causality সম্পর্কে ধারনা আছে? Laws Of Causality মতে, সবকিছুর পেছনে একটা Cause বা কারণ থাকে। সেই সূত্র মতে, স্রষ্টার পেছনেও একটা কারণ থাকতে হবে।'
সাজিদ বললো,- 'স্যার, উত্তেজিত হবেন না প্লিজ।আমি আপনাকে অঙ্ক শিখাতে যাবো কোন সাহসে? আমি শুধু আমার মতো ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করেছি।'
- 'কচু করেছিস তুই।Laws Of Causality দিয়ে ব্যাখ্যা কর। '- লোকটা উচ্চস্বরে বললো।
- 'স্যার, Laws Of Causality বলবৎ হয় তখনই, যখন থেকে Time, Space এবং Matter জন্ম লাভ করে, ঠিক না? কারন, আইনষ্টাইনের থিওরি অফ রিলেটিভিটিও স্বীকার করে যে- Time জিনিসটা নিজেই Space আর Matter এর সাথে কানেক্টেড।Cause এর ধারনা তখনই আসবে, যখন Time-Space-Matter এই ব্যাপারগুলা তৈরি হবে।তাহলে, যিনিই এই Time-Space-Matter এর স্রষ্টা, তাকে কি করে আমরা Time-Space-Matter এর বাটখারাতে বসিয়ে Laws Of Causality দিয়ে বিচার করবো,স্যার? এটা তো লজিক বিরুদ্ধ, বিজ্ঞান বিরুদ্ধ।'
লোকটা চুপ করে আছে। কিছু হয়তো বলতে যাচ্ছিলো।
এরমধ্যেই আবার সাজিদ বললো,- 'স্যার, আপনি Laws Of Causality's যে সংজ্ঞা দিয়েছেন, সেটা ভুল।'
লোকটা আবার রেগে গেলো। রেগেমেগে অগ্নিশর্মা হয়ে বললো,- 'এই ছোকরা! আমি ভুল বলেছি মানে কি? তুই কি বলতে চাস আমি বিজ্ঞান বুঝি না?'
সাজিদ বললো,- 'না না স্যার, একদম তা বলিনি। আমার ভুল হয়েছে।
আসলে, বলা উচিত ছিলো যে- Laws Of Causality's সংজ্ঞা বলতে গিয়ে আপনি ছোট্ট একটা জিনিস মিস করেছেন।'
লোকটার চেহারা এবার একটু স্বাভাবিক হলো।বললো,- 'কি মিস করেছি?'
- 'আপনি বলেছেন, Laws Of Causality মতে, সবকিছুরই একটি Cause থাকে।আসলে এটা স্যার সেরকম নয়। Laws Of Causality হচ্ছে- Everything which has a beginning has a cause.. অর্থাৎ, এমন সবকিছু, যেগুলোর একটা নির্দিষ্ট শুরু আছে- কেবল তাদেরই Cause থাকে।স্রষ্টার কোন শুরু নেই, তাই স্রষ্টাকে Laws Of Causality দিয়ে মাপাটা যুক্তি এবং বিজ্ঞান বিরুদ্ধ।'
লোকটার মুখ কিছুটা গম্ভীর হয়ে গেলো।বললো,- 'তুই কি ভেবেছিস, এরকম ভারি ভারি কিছু শব্দ ব্যবহার করে কথা বললেই আমি তোর যুক্তি মেনে নিবো? অসম্ভব।'
সাজিদ এবার মুচকি হাসলো। হেসে বললো,- 'স্যার, আপনার হাতে একটি বই দেখছি। অইটা কি বই?'
- ' এটা আমার লেখা বই- 'আমার অবিশ্বাস।'
- 'স্যার, অইটা আমাকে দিবেন একটু?'
- 'এই নে,ধর।'
সাজিদ বইটা হাতে নিয়ে উল্টালো। উল্টাতে উল্টাতে বললো,- 'স্যার, এই বইয়ের কোন লাইনে আপনি আছেন?'
লোকটা ভুরু কুঁচকে বললো,- 'মানে?'
- 'বলছি, এই বইয়ের কোন অধ্যায়ের, কোন পৃষ্টায়, কোন লাইনে আপনি আছেন?'
- 'তুই অদ্ভুত কথা বলছিস। আমি বইয়ে থাকবো কেনো?'
- 'কেনো থাকবেন না? আপনি এর স্রষ্টা না?'
- 'হ্যাঁ।'
- 'এই বইটা কালি আর কাগজ দিয়ে তৈরি। আপনিও কি কালি আর কাগজ দিয়ে তৈরি স্যার?'
- 'খুবই ষ্টুপিডিটি টাইপ প্রশ্ন। আমি এই বইয়ের স্রষ্টা। এই বই তৈরির সংজ্ঞা দিয়ে কি আমাকে ব্যাখ্যা করা যাবে?'
সাজিদ আবার হেসে দিলো।বললো,- 'না স্যার।এই বই তৈরির যে সংজ্ঞা, সে সংজ্ঞা দিয়ে মোটেও আপনাকে ব্যাখ্যা করা যাবে না। ঠিক সেভাবে, এই মহাবিশ্ব যিনি তৈরি করেছেন, তাকেও তার সৃষ্টির Time-Space-Matter-Cause এসব দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাবে না।
আপনি কালি,কলম বা কাগজের তৈরি নন, তার উর্ধ্বে।কিন্তু আপনি Time-Space-Matter-Cause এর উর্ধ্বে নন।আপনাকে এগুলো দিয়ে ব্যাখ্যা করাই যায়।কিন্তু সৃষ্টিকর্তা হচ্ছেন এমন একজন,যিনি নিজেই Time-Space-Matter-Cause এর সৃষ্টিকর্তা।তাই তাকে Time-Space-Matter-Cause দিয়ে পরিমাপ করা যাবে না।অর্থাৎ, তিনি এসবের উর্ধ্বে।অর্থাৎ, তার কোন Time-Space-Matter-Cause নাই।অর্থাৎ, তার কোন শুরু-শেষ নাই।অর্থাৎ, তার কোন সৃষ্টিকর্তা নাই।'
লোকটা উঠে দাঁড়ালো।উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললো- 'ভালো ব্রেইনওয়াশড! ভালো ব্রেইনওয়াশড! আমরা কি এমন তরুণ প্রজন্ম চেয়েছিলাম? হায়! আমরা কি এমন তরুণ প্রজন্ম চেয়েছিলাম?'
এটা বলতে বলতে লোকটা হাঁটা ধরলো। দেখতে দেখতেই উনি ষ্টেশানে মানুষের ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে গেলেন।
-
ঠিক সেই মূহুর্তেই আমার ঘুম ভেঙে গেলো। ঘুম ভাঙার পর আমি কিছুক্ষণ ঝিম মেরে ছিলাম।ঘড়িতে সময় দেখলাম।রাত দেড়টা বাজে।সাজিদের বিছানার দিকে তাকালাম।দেখলাম, সে বিছানায় শুয়ে শুয়ে বই পড়ছে।আমি উঠে তার কাছে গেলাম। গিয়ে দেখলাম সে যে বইটা পড়ছে, সেটার নাম- 'আমার অবিশ্বাস। বইয়ের লেখক- হুমায়ুন আজাদ।
সাজিদ বই থেকে মুখ তুলে আমার দিকে তাকালো।তার ঠোঁটের কোণায় একটি অদ্ভুত হাসি।
আমি বিরাট একটা শক খেলাম। নাহ! এটা হতে পারে না। স্বপ্নের উপর কারো হাত নেই- আমি বিড় বিড় করে বলতে লাগলাম।
'স্রষ্টাকে কে সৃষ্টি করলো?'/