Sunday, September 11, 2016

একটি ইসলাম বিদ্দেষী টপিক ও তার জবাবঃ আল কোরানে কি মহাবিশ্ব সৃষ্টির ক্ষেত্রে কোন বৈজ্ঞানিক ভুল আছে ?

এই টপিকটা যথেষ্ট পুরানো আর এর জবাব বিভিন্ন সময়ে দেয়া হয়েছে।
তবে প্রায়ই দেখা যায় অনেক মুসলিমরা নাস্তিকদের সামনে এটার জবাবে তালগোল পাকিয়ে ফেলে।
তাই আমি পুরোনো জবাবগুলোই সামান্য সংযোজন করে একটু গুছিয়ে লিখছি। আজ হঠাত হুইটস্টোন ব্রীজ নামক জনৈক হিন্দুর টাইমলাইনে দেখলাম পুরনো এই লেখা নিয়ে বেশ লাফালাফি করছে।
এক নজরে অভিযুক্ত আয়াতগুলো দেখি,
*তিনিই উহার উপরে পর্বতসমূহ স্থাপন করেছেন এবং তিনি উহাতে আধিক্য প্রদান করেছেন ও তিনি চারি দিবসে উহাতে উৎপন্ন সমূহের নির্ধারন করে দিয়েছেন। সকল প্রার্থীর জন্য সমতুল্য করে দিয়েছেন ৪১ঃ১০
And He placed on the earth firmly set mountains over its surface, and He blessed it and determined therein its [creatures'] sustenance in four days without distinction - for [the information] of those who ask. (Quran 41:10)

*অতঃপর/এছাড়াও তিনি আকাশের দিকে মনযোগ দিলেন যা ছিল ধুম্র কুঞ্জ, অতঃপর তিনি তাকে ও পৃথিবীকে বললেন, তোমরা উভয়ে আস ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়। তারা বলল আমরা স্বেচ্ছায় আসলাম ৪১ঃ১১
Then He directed Himself to the heaven while it was smoke and said to it and to the earth, "Come [into being], willingly or by compulsion." They said, "We have come willingly." (Quran 41:11)

*এবং তিনি সপ্তাকাশ নির্মান করলেন দুই দিনে এবং প্রত্যেক আকশকে তার নিজ কর্মে নিযুক্ত করলেন। এবং আমি সর্ব নিম্ন আকাশকে প্রদীপমালায় সুসজ্জিত করলাম। (41:12)

Moreover He completed them as seven heavens within two days and inspired in each heaven its command. And We adorned the nearest heaven with lamps and as protection. (Quran 41:12)
এই আয়াতগুলো নিয়ে যে অভিযোগগুলো আসে তা হচ্ছে।
প্রথম অভিযোগঃ সংখ্যাগত ভুল।
দ্বিতীয় অভিযোগঃ পৃথিবি আগে ও আসমান পরে সৃষ্টি যা বৈজ্ঞানিক ভুল।
তৃতীয় অভিযোগ(এটা শুধু কম বুঝ হিন্দু দের করতে দেখা যায় ইদানিং)ঃ আসমান জমীণ আল্লাহকে বলেছে আমরা নিজেরাই আসলাম, অতএব তা নাকি বৈজ্ঞানিক ভুল।
অভিযোগের জবাবঃ

অভিযোগঃ সংখ্যাগত ভুল। ৬ দিনে না ৮ দিনে ?
জবাবঃ প্রথমে বলি এই আয়াতে ৬ দিন নয় বরং ৬ টি লম্বা সময়কে বুঝিয়েছে। এই আয়াতে ‘ইয়ম’ ব্যবহার না করে ‘আইয়াম‘ শব্দটি উল্লেখ করা হয়েছে। Arabic Dictionary- তে ‘আইয়াম’ শব্দের অর্থ লম্বা সময় এটি ১ দিন ,১০০ বছর অথবা অনির্দ্দিষ্ট সময়কাল হতে পারে। আর ‘ইয়ম’ মানে একদিন, এই আয়াতে আইয়াম শব্দটি ব্যবহার হয়েছে অর্থাৎ লম্বা সময়,  যেমন আমরা বলি দুদিনের দুনিয়া, এখন এখানে দুদিন কি আসলেই দুদিন, ২৪+২৪=৪৮ ঘন্টা ? এবার কোরানে যে ৬ দিন বা ৬ টি লম্বা সময় বুঝিয়েছে তা কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে চমতপ্রদভাবে মিলে যাচ্ছে। আধুনিক বিজ্ঞানও এই মহাবিশ্বটি সৃষ্টির প্রারম্ভিক হতে আকৃতি, রঙ ও প্রকৃতিতে পৌছাঁতে সর্বমোট ৬টি অনির্দ্দিষ্টট সময়কাল অতিবাহিত হওয়ার কথা বলছে,
যেমন
1| Time Zero
2| Inflation
3| Annihilation
4| Proton and Neutron
5| Atomic Nuclei
6| Stable atom
এবার সংখ্যার ভুলের প্রসংগে যাই, ধরুন কেউ যদি বলেন : বাড়িটা তৈরী করতে ৫০ দিন লেগেছে এবং রং করতে লেগেছে ৫ দিন। প্রশ্ন হচ্ছে, বাড়িটা তৈরী করতে মোট ৫৫ দিন নাকি ৫০ দিন লেগেছে? প্রাইমারীর পোলাপান হয়তো ৫৫ দিন বলতে পারে তবে কলেজের ছাত্র কিন্তু ৫০ দিনই বলবে। তেমনি কোরআনের কোথাও ৮ দিনে মহাবিশ্ব সৃষ্টির কথা লিখা নাই। এটি আসলে তাদের অজ্ঞতা অথবা নিজস্ব মনগড়া ব্যাখ্যা। কোরআনের বেশ কিছু আয়াতে ৬ দিন উল্লেখ আছে এবং আয়াত ৪১:৯-১২ তে যা আছে তা মূলত Consequential order নয়, বরং Overlapping action. তাই উক্ত কাজের হিসাবটিও সেই ৬ দিনের মদ্ধ্যেই। ঠিক যেমন ৫০ দিনের তৈরি বাড়িতে রঙ করার ৫ দিনের হিসাব উক্ত ৫০ দিনেরই অংশ, সেরকম।
অভিযোগঃ পৃথিবী আগে না আসমান আগে?
জবাবঃ
আমি যদি বলি, আমি এখন দরজা ডেকরেট করছি, এরপর জানালার দিকে নজর দেব, এরমানে কি এই যে জানালা এখন বানাবো ? না, বরং এরমানে এই যে জানালা আগে থেকেই তৈরি ছিল, তবে হয়ত পুরোপুরি কমপ্লিট হয়নি।
আর এই আয়াতগুলো কোন ধারাবাহিক কার্যের বর্ননা নয় তা আগেই বলেছি, এখানে ১১ নং আয়াতে আরবী "Thumma" শব্দটিকে অনেকে ভুলভাবে "Then" বা "এরপর" অনুবাদ করেছে। কিন্তু প্রকৃত অনুবাদ হবে moreover বা অধিকন্তু বা এছাড়াও , যেমন কোরানের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ অনুবাদক ইউসুফ আলী থেকে শুরু করে ড, ঘালির মত অনুবাদকদের অনুবাদে এরকমই আছে। ইউসুফ আলী লিখেছেন, Moreover He comprehended in His design the sky , অর্থাৎ এটি কোন ধারাবাহিক কাজের বর্ননা নয় তা স্পষ্ট। আর হ্যা ইউসুফ আলীর অনুবাদটা কিন্তু প্রায় একশ বছর আগের। তাই কেউ যদি প্রশ্ন করে যে বৈজ্ঞানিক ভুল দেখে অনুবাদ চেইঞ্জ করা হয়েহয়েছে তার সুযোগ নাই। কারন এই অনুবাদ যখন হয়েছে তখন স্টিফেন হকিং এর জন্মও হয় নি।:)
এছাড়াও যদি অন্যান্য অনুবাদকদের Then শব্দটা এপ্লাই করি তাতেও কিন্তু কিছু যায় আসে না। কারন Then শব্দটিও Overlapping action বা বিচ্ছিন্ন ঘটনার ক্ষেত্রে ব্যাবহৃত হয়। নীচে Then শব্দের ডিকশনারী হতে আরো কিছু সমগোত্রীয় অর্থ দেখানো হল,


এখানে ধারাবাহিক ঘটনা নয় বরং বিচ্ছিন্ন ঘটনা এরপক্ষে আরো কিছু প্রমান দেখি, যেমন
৪১ঃ১১ আয়াতে বলা হয়েছে, "অতঃপর/এছাড়াও তিনি আকাশের দিকে মনযোগ দিলেন যা ছিল ধুম্র কুঞ্জ, অতঃপর তিনি তাকে ও পৃথিবীকে বললেন, তোমরা উভয়ে আস ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়। তারা বলল আমরা স্বেচ্ছায় আসলাম"
লক্ষ করুন এটা যদি হত ধারাবাহিক ঘটনার বর্ননা তবে পৃথিবি তৈরির বর্ননা তো পুর্বের আয়াতেই শেষ হয়ে গিয়েছিল, কিন্ত্ এই আয়াতে আকাশের সাথে আবার পৃথিবির কথা কেন বলা হল ? ধারাবাহিক ঘটনা হলে তো পৃথিবির কথা আবার বলা হত না।
আর হ্যা কোরান অনুসারে অবশ্যই পৃথিবি সৃষ্টি হয়েছে আকাশ বা শুন্য সৃষ্টীর পরে, প্রমান হিসেবে দেখুন, সুরা নাযিয়াত
"তোমাদেরকে সৃষ্টি অধিক কঠিন না আকাশের, যা তিনি নির্মাণ করেছেন? তিনি একে উচ্চ করেছেন ও সুবিন্যস্ত করেছেন। এরপরে পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন, এর মধ্য থেকে এর পানি ও ঘাস নির্গত করেছেন,পর্বতকে তিনি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।" (কোরান ৭৯ঃ ২৭-৩২)
এখানে আমরা স্পষ্টই দেখতে পাই যে আল্লাহ তালা আকাশ তথা স্পেস তৈরি ও তা বিন্যস্তের পরেই পৃথিবি সৃষ্টি করেছেন।
অভিযোগঃ আসমান জমীণ আল্লাহকে বলেছে আমরা নিজেরাই আসলাম, অতএব তা বৈজ্ঞানিক ভুল।
জবাবঃ এটা হচ্ছে অভিযোগগুলোর মধ্যে সব থেকে হাস্যকর অভিযোগ। :) সাহিত্যের কতগুলো গুন থাকে তা এইসব ছোট মাথার বিদ্দেষিরা জানে না। সাহিত্যের একটা গুরুত্তপুর্ন figure of speech হচ্ছে "Personafication" অর্থাৎ জড় বস্তুকে মানুষের গুনাবলি দেয়া । আর কোরান হচ্ছে সবচেয়ে উচু মানের শিল্পকর্ম। মুর্খ বিদ্দেষিরা সাহিত্যের এসব টার্ম জীবনে শুনেছে বলে মনে হয়। এখান থেকে একটু পড়ে নিতে পারে, https://simple.wikipedia.org/wiki/P
আর হ্যা উক্ত হিন্দুদের যদি বেদ থেকেও এরকমটা দেখাই তবে কি বলবে ? যেমন রিগবেদ ১/৫০/৬-৭ এ বলা হয়েছে সুর্যের নাকি রয়েছে চোখ এবং সুর্য নাকি সেই চোখ দিয়ে সকল প্রাজাতিকে দেখে। নীচে তুলসীরামের অনুবাদ,