Thursday, September 8, 2016

"মহাবিশ্বের- বিশালতা, পর্যাপ্ততা, প্রাচুর্য্যতা"১,২,৩,৪,৫,৬ ও শেষ পর্ব!



"মহাবিশ্বের- বিশালতা, পর্যাপ্ততা, প্রাচুর্য্যতা" -একটি দর্শন ভাবনা। (১ম পর্ব)

মহাবিশ্বের এক নিভৃত স্থানে আমাদের মাতৃজগ অর্থা আমাদের সৌরমণ্ডল অবস্থিত; এটি আমাদের মাতৃছায়াপথ মিল্কিওয়েতে অতি নগন্য একটি মণ্ডল; আর সার্বিক মহাবিশ্বে এর পরিচিতি তেমন কোন উল্যেখযোগ্য বিশয়ই নয়এই সৌরমণ্ডলের এক নগন্য গ্রহ আমাদের মাতৃভূমি এ পৃথিবীপ্রকৃতি জগতে সর্বোকৃষ্ট প্রাণী হিসেবে আমরা পৃথিবী নামক গ্রহটির সাথে অতি ঘনিষ্টএটি আমাদের আবাসভূমিঅসংখ্য প্রজাতির সাথে এখানে আমাদের বসবাসএই গ্রহটির পারিপার্শ্বিক প্রকৃতির সাথে আমাদের বন্ধুত্বএই পরিচিত পরিবেশটির দিকে চোখ মেলে তাকালে আমাদের চিত্ত আপ্লুত হয়, তার সীমা পরিসীমা নিয়ে মনে প্রশ্ন জাগে; উত্তাল সমুদ্রের দিকে তাকালে তার উন্মত্ততায় মন সঙ্কোচিত হয়ে আসে, কৌতুহল জাগে তার পরিমিতিতেমনে প্রশ্ন জাগে কোথা হতে এল এই উন্মুক্ত প্রকৃতি?
সময়ের ক্রমবিবর্তনে মানুষের মনের এই কৌতুহল কল্পনার রাজ্য ছাড়িয়ে ভাবনার রাজ্যে প্রবেশ করেছে, মানুষ তার মেধা ও চিন্তাশক্তি দিয়ে নানা প্রযুক্তির সাহায্যে রহস্যের অভ্যন্তরে প্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেদিন দিন নতুন নতুন তথ্য আবিস্কৃত হচ্ছে, ক্রমশঃই প্রকৃতির এই বিশালতা মানুষের চিন্তা চেতনাকে একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছেহিমালয়ের চুঁড়ায় মনুষের পদার্পন একদিন মানুষের চিত্তকে যেমনটা সাহসী করে তুলেছিল, তেমনি করে চন্দ্রবিজয় মানুষকে আরও এক দাপ এগিয়ে দিয়েছে; মানুষ এখন তার সৌর মণ্ডলের গণ্ডি ছাড়িয়ে মহাকাশে পাড়ি জমাবার চিন্তায় মগ্নপ্রযুক্তির উন্নতি মানুষর দৃষ্টিকে আজ প্রায় ১৫ বিলিয়িন আলোক বর্ষ দূরে নিয়ে গেছেআর এই মহা দূরত্ব অতিক্রম করতে মানুষের দৃষ্টি বার বার বিভ্রান্ত হয়েছে, যাদুগ্রস্থ হয়েছে, বিশ্বাস তার অবিশ্বাসের দোলায় কম্পিত হয়েছেবারবার একই একই প্রশ্ন উত্থিত হয়েছে, কি করে এই বিশালতার সৃষ্টি হল?
বিজ্ঞান তার দীর্ঘদিনের মেধা একত্রিত করে বলছে, এতবড় মহাবিশ্ব হঠা এতবড় হয়ে যায়নি; আতুরঘরে তার পরিধি ছিল নিতান্তই নগণ্যকালের পরিক্রমায় সেই আজকের রূপ পেয়েছেএই যে কালের প্ররিক্রমা ও বিবর্তন এ নিয়েও উঠেছে নানা প্রশ্নবিজ্ঞান তার সহজ সমাধান দিয়েছে, বলেছে, কোন এক সময়ে দূর্ঘটনার মত এক মহা বিষ্ফোরণ থেকে সৃষ্টি হয়েছে ভ্রূণ মহাবিশ্বের, তার পর বিবর্তনের ইতিহাস
প্রায় পনের বিলিয়ন বছর ধরে বিবর্তনের ধারায় আজকের মহাবিশ্বের সৃষ্টিঅথচ বিজ্ঞানের ধারণায় জন্মলগ্ণে মহাবিশ্বের আকৃতি ছিল অতি ক্ষুদ্র যা অঙ্কে প্রকাশ করা অত্যান্ত দূরূহ ব্যাপারবিজ্ঞান আরও বলছে, বর্তমান আকৃতিতেই মহাবিশ্বের সীমানা নির্দিষ্ট নয়ত্বরাণ্বিত গতিতে আমাদের মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে; ছুটে চলেছে অজানার পানে, তার গতিও অকল্পনীয়প্রতিনিয়তই সেই প্রাচীন প্রশ্নটি রহস্যের জাল গণিভূত করছে- কেন এই বিশালতা? এর শেষ কোথায়?
বিজ্ঞান জানেনা এর শেষ কোথায়বিজ্ঞান বিষ্ময়ে অবিভূত হয়ে শুধু খুঁজে ফিরছে এর শেষ প্রান্তবিজ্ঞানের প্রক্কলিত হিসেবে আমাদের এই মহাবিশ্বের ব্যাস ৪৫ বিলিয়ন আলোক বর্ষএই বিস্তৃত পরিধীতে রয়েছে মহাজাগতিক বস্তু সমুহ; তাদের মধ্যে গ্রহ, নক্ষত্র, তারকা পুঞ্জ, ছোট বড় নানা প্রকৃতির ছায়াপথ, নিহারীকা, ধূমকেতু, কত কি! আর এই সবকিছু মিলে তৈরী হয়েছে আমাদের এই পরিচিত মহাবিশ্ববিজ্ঞান বলছে আমাদের এই মহাবিশ্বে কম করে হলেও ১০০ বিলিয়ন ছায়াপথ রয়েছে, প্রতিটি ছায়াপথে গড়ে ১০ হাজার কোটি তারকা রয়েছেএমনি করে তারার সংখ্যা হিসেব করতে গেলে হয়তোবা আমাদের হিসেবে ভুল হয়ে যাবে

"মহাবিশ্বের- বিশালতা, পর্যাপ্ততা, প্রাচুর্য্যতা" -একটি দর্শন ভাবনা।-(২য় পর্ব)

মহাকাশ থেকে চোখ ফিরিয়ে এবার নিজ মাতৃভূমির দিকে তাকানো যাকবিস্তৃত এক বিশাল মাটির গোলক যার মধ্যে রয়েছে সাগর মহাসাগর, বিস্তৃত মহাদেশ যাতে রয়েছে বিরান মরুভূমি, কোথাওবা পর্বতে পর্বতে সংযুক্ত হয়ে তৈরী করেছে পর্বতমালা সবকিছু মিলে সৃষ্টি হয়েছে এক নিটোল প্রকৃতি, তার মধ্যে উদ্গত হয়েছে সবুজের সমারোহ, এসেছে প্রাণের জোয়ার, নিম্ন শেণী থেকে শরু করে উন্নত প্রাণী কুল সকল সৃষ্টির মধ্যে মহা গৌরবের তিলক নিয়ে এক সময় হাজির হল সর্বোন্নত প্রজাতি-মানব কুলআবার ও সেই একই প্রশ্ন এসে সামনে দাঁড়াল; কোথা হতে এল এ সকল সৃষ্টিভাবুকরা অনেক ভেবে একসময় রায় দিল সৃষ্টির এই সমারোহ আপনা থেকেই সৃষ্টি হয়েছে; এদেরকে কেউ সৃষ্টি করেনি; মহাবিস্ফোরণ থেকে শুরু করে বিবর্তনের ধারায় প্রকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যামেই সৃষ্টি হয়েছে সব কিছু বিশ্ব প্রকৃতি তার প্রয়োজেনে সাজিয়ে নিয়েছে মহাকাশকে আর আমাদের এই পৃথিবী সজ্জিত হয়েছে তার নিজ প্রয়োজন অনুযায়ী
অষ্টাদশ মতাব্দীর মাঝামাঝি ডারউইন তার প্রকৃতিক নির্বাচন তত্ত্বে বললেন, প্রকৃতি তার নিজ প্রয়োজনে বিবর্তনের মাধ্যামে স্থির করে সৃষ্টি, এক প্রজাতি বিবর্তীত হয়ে অন্য প্রজাতিতে পরিনত হয়এই পরিবর্তন সাধিত হয় প্রকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যামে পরবর্তীতে আজকের যুগের বিখ্যাত বিজ্ঞানী ষ্টিফেন হকিন্স তার গ্র্যান্ড ডিজাইনবইতে বললেন, আমাদের মহাবিশ্বকে কাউকেই সৃষ্টি করতে হয়নি, এটি আপনা আপনি সৃষ্টি হয়ে গেছে, তার পর বিবর্তনের ধারায় সুসজ্জিত হয়ে উঠেছে
পর্যাপ্ত পরিমানে সৃষ্টি সজ্জিত হয়ে আছে আমাদের এই বসুন্ধরায়পাহাড়, পর্বত, মরুভূমি, বন-বনানী, কত কি! আবার সাগর মহাসাগর উপচে পড়ছে আমাদের জীবন রক্ষাকারি পানিএই যে পানির এত সমাহার, এই পানি আবার আমাদের পৃথিবীর নিজস্ব সম্পদ নয়একবিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞান বলছে পৃথিবীতে পানি সৃষ্টির কোন পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি, এমন কি তার কাঁচামালও যথেষ্ট পরিমানে এখানে ছিলনা; পানি মহাকাশ থেকে নিক্ষিপ্ত হয়েছেসম্ভবত বরফের কোন ধুমকেতু তার কক্ষ পথে পৃথিবীকে প্রদক্ষিন কালে পৃথিবীর আকর্ষণে পর্যাপ্ত পরিমানে বরফখন্ড পৃথিবীতে এসে পড়ে, যা থেকে এই অফুরন্ত পানি প্রবাহের সৃষ্টি হয়

"মহাবিশ্বের- বিশালতা, পর্যাপ্ততা, প্রাচুর্য্যতা" -একটি দর্শন ভাবনা। (৩য় পর্ব)

১৯৯০ সালে ভয়েজার মহাশূণ্যযান ভয়েজার যখন আমাদের সৌরজগতের সীমানা ছাড়িয়ে যাচ্ছিল তখন নাসার বিজ্ঞানীরা যন্ত্রটির ক্যামেরা ঘুরিয়ে শেষবারের মত আমাদের পৃথিবীর একটি ছবি সংগ্রহ করেছিলেন, পৃথিবী থেকে ভয়েজারের দূরত্ব তখন মাত্র ৩.৭ বিলিয়ন মাইলএই অবস্থায় আমাদের পৃথিবীর আকৃতি বাতাসে ভাসমান একটি ধূলীকণার মত হয়েছেএকবার ভাবুন, যে গ্রহটিকে সৌর মণ্ডলের শেষ সীমানা থেকে এত ক্ষুদ্র দেখা যায় সে মহাবিশ্বের সীমানায় কত নগন্য!
আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞান মানুষকে সাহসী করে তুলেছে, মানুষ পৃথিবীর পারিপশ্বিক সীমানা ছাড়িয়ে বহু দূরের তথ্য সংগ্রহ করতে সাহসী ও উদ্যোগী হয়ে উঠেছেএই এই উদ্যোগ মানুষকে সুযোগ করে দিয়েছে জানতে ও বুঝতে আমাদের মহাবিশ্বের বিশালতা সম্পর্কে; যা ছিল আমাদের অসম্ভব ও উদ্ভট কল্পনা মাত্র২০১১ সালে হাবল মহাশূণ্য দূরবীণ যখন ১৩.২ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরত্বের ছায়াপথ আবিস্কার করলো তখন মানুষের চিন্তা চেতনায় নতুন মাত্রা এল, যদিও এটি মানুষের জানামতে সর্বোদূরত্বের ছায়াপথ তথাপিও বিজ্ঞান বলেনি এটাই মহাবিশ্বের শেষ সীমানা, কারণ তার যন্ত্রচোখ মাত্র এ দূরত্বে তার দৃষ্টি ছড়িয়ে দিতে পেরেছেএকবার ভাবুন এটি কত দূরত্বের ছায়াপথ
সূর্য আমাদের কাছ থেকে ৯৩ মিলিয়ন বা ৯ কোটি ত০ লক্ষ মাইল দূরে অবস্থিত আর সেখান থেকে আলো এসে আমাদের পৃথবীতে পৌছাতে সময় লাগে মাত্র আট মিনিট; আর সেই দূরবর্তী ছায়পথ থেকে আলো আসতে সময় লাগবে ১৩.২ বিলিয়ন বছরমহাশূণ্যের এই অবস্থা দেখে অনেক অবিশ্বিাসী বিজ্ঞানী যারা মনে করেন আমাদের এই মহাবিশ্ব মহাজাগতিক দূর্ঘটনা থেকে সৃষ্টি হয়েছে, তারাও বিষ্ময়ে হতভম্ব হয়ে যাচ্ছেনতবে কেহই জানেনা মহাবিশ্ব কত বড়, শুধু অনুমান করে মাত্র, আর বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় মানুষ এটুকু বুঝতে পারছে যে, সে মহাবিশ্ব সম্পর্কে যতটা অনুমান করে আসলে মহাবিশ্ব তারচেয়ে অনেক বড়
এছাড়াও, বিজ্ঞান আমাদেরকে কৃষ্ণশক্তি ও কৃষ্ণপদার্থের সন্ধান দিয়েছে; বিজ্ঞান বলছে আমাদের মহাবিশ্বের অধিকাংশ জায়গাজুড়েই রয়েছে কৃষ্ণ শক্তি ও কৃষ্ণ পদার্থএই তত্ত্ব মতে আমাদের মহাবিশ্ব অনেকটাই চেপ্টা আকৃতির মনে করছেন বিজ্ঞানীরাঅতি অধুনা হিসেব করে বিজ্ঞানীরা বলছেন যে, আমাদের মহাবিশ্বে সমুদয় পদার্থের (বেরিয়ন কণা ও কৃষ্ণপদার্থ সহ) মধ্যে ৭১.৩% কৃষ্ণশকি, ২৭.৪% কৃষ্ণপদার্থ, বাকী সব দৃশ্য সাধারণ পদার্থঅথচ বিপুল কৃষ্ণশক্তির উপস্থিতি এতটাই বিস্তৃত যে, এই শক্তির ঘণত্ব অত্যান্ত কম, যা ভর-শক্তি সাম্যতা অনুযায়ী কৃষ্ণ শক্তির ঘণত্ব 1.67 × 10−27 kg/m3, যা আমাদের হিসেবে অত্যান্ত কম; তথাপি এই শক্তিই মহাবিশ্বের ভর-শক্তিকে শাষণ করছেবিজ্ঞানের এই ধারনা আমাদেরকে কি ভাবিয়ে তোলে না?

"মহাবিশ্বের- বিশালতা, পর্যাপ্ততা, প্রাচুর্য্যতা" -একটি দর্শন ভাবনা। (৪র্থ পর্ব)

বিজ্ঞান বলছে আমাদের এই মহাবিশ্ব এক অন্ধকার সাম্রাজ্যঅর্থা আমাদের গণ্ডিতে সূর্যের উপস্থিতিকে ভুলে গেলে আমাদের সামনে যে অবস্থাটি তৈরী হতে পারে তা কি একবারও ভেবে দেখেছেন? হয়তো বলবেন আকাশ জুড়ে রয়েছে অগণিত তারা যা আমাদের সূর্যের চেয়েও প্রদীপ্ত বিস্তিৃত; তাদের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠবে এই মহাভূবনআসলেও তাই হওয়ার কথাআমরা জানি এক একটা ছায়াপথে কমকরে হলেও দশ হাজার কোটি তারকা রয়েছে যাদের আলোয় সেই ছায়া পথটি সূর্যের আলোর চেয়ে আরও বেশীগুণে উজ্জ্বল দেখার কথাকিন্তু আমরাতো তা দেখতে পাচ্ছিনাআমাদের একমাত্র অবলম্বন সূর্যের আলো, তাও আবার নীশাকালে চলে গেলে আমরা ঘুটঘুটে অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পড়ি
কেন এমনটা হয়? এত আলোর উপস্থিতি তথাপি অন্ধকার আর অন্ধকারএকটু ভাবলেই তার সমাধান পাওয়া যায়এ অন্ধকার মহাবিশ্বের বিশালতার জন্যে একটা তারকা থেকে আরেকটা তারকার দূরত্ব এতটাই বেশী যে, কারোর নিজের আলো অন্যের সাম্যাজ্য পর্যোন্ত পৌঁছায়নাতাহলে ভেবে দেখুন ১০ হাজার কোটি তারকার সাম্রাজ্যটি কত বড় হতে পারে আবার এমনিতর একশত বিলিয়ন সাম্রাজ্যের পরিধি কত হতে পারে
আরও একটি বিষয় চিন্তা ভাবনা করার সুযোগ রয়েছে, তারকাগুলো কেন আলোক উজ্ঝ্বল হয়ে সৃষ্টি হল? এবার ভেবে দেখি সৃষ্টিগতভাবে এরা আলোকবিহীন হতে পারতো কিনাআমরা বিজ্ঞানের কাছে জেনেছি, মহাজাগতিক এই বস্তুগুলো শক্তির ঘণায়ন থেকে সৃষ্টি হয়েছে, আর সেই শক্তি আলোক বিহীন অদৃশ্যবিজ্ঞান মনে করে শক্তির জমাটবদ্ধ রূপ হল মহাজাগতিক ধূম্র, যাকে বলা হয় নিহারীকা; নিহারীকার ধূম্ররাশিও আলোকহীনএই নিহারীকার মধ্যেই জন্ম হয় তারকার; তারকার জন্ম লগ্নে প্রথমে সৃষ্টি হয় হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাসতারা উভয়েই বর্ণহীন, এই হাইড্রোজেন গ্যাসই তারকা প্রজ্জ্বলনের কাঁচামালএই জ্বালানী প্রজ্জ্বলিত হয়ে আলোক উপন্ন করে আর অবশেষ রূপে কিছু ভারী মৌলের সৃষ্টি করে যা দিয়ে তৈরী হয় তারকার কঠিণ দেহ, এভাবে জ্বলতে জ্বলতে একসময় তার সমগ্র দেহটি কঠিন হয়ে ধীরে ধীরে বামন তারায় রূপান্তরিত হয়, যাকে বলা হয় মৃত্যুপথযাত্রী তারা
যাইহোক, এই তারকা গুলি যদি আলোকোজ্জ্বল না হতো, হয়তো আমরা তাদের দেখতে পেতামনা, আমরা বুঝতে পারতামনা মহাকাশ সম্পর্কে, আমরা জানতেও পারতামনা দূরবর্তী তারকাদের দূরত্ব কততাদের এই দৃষ্টি আকর্ষণী রূপই আমাদের দৃষ্টিকে নিয়ে গেছে ১৩.২ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের কোন এক রাজত্বেহয়তো তারচেয়েও অনেক দূরে কোন অতিথি অপেক্ষা করছে আমাদের জন্যে

"মহাবিশ্বের- বিশালতা, পর্যাপ্ততা, প্রাচুর্য্যতা" -একটি দর্শন ভাবনা (৫ম পর্ব)

এক সময় মানুষের চোখে দৃশ্যমান আকাশটাই ছিল মহাকাশের ব্যাপ্তি; এই আকাশটার দিকে তাকিয়ে মানুষ তন্ময় হয়ে ভাবতো কত বড় আমাদের মহাশূণ্য’! কল্পনার রাজ্যটাকে এর বাইরে মেলে দিতে পারতো না১৬০৯ সালে গ্যালেলিওর টেলিস্কোপ আবিস্কারের পর এই সীমানা গেল বড় হয়ে, মানুষ আরও বড় দিগন্তে চোখ বুলিয়ে বললমহাবিশ্ব এত বড়?’ বিজ্ঞানীরা বিষ্ময়ে হতবাক হয়ে গেলেন; অথচ রহস্যময় এই আকাশের অতি সামান্যই তাদের চোখে পড়লশুধুমাত্র রাতের আকাশটাকেই মানুষ বিশ্বসংসার মনে করে তন্ময় হয়ে তারা দেখতো
বিংশ শতাব্দীতে এসে মানুষের সেই ধারণা পাল্টাতে শুরু করলো হাবল টেলিস্কোপের বদৌলতেমানুষ জানতে পেল তার দৃশ্যপটে যে আকাশটাকে দেখা যায়, তা আমাদের মাতৃছায়াপথের সামান্য অংশ; এরই বিশাল অংশ রয়ে গেছে দৃষ্টির আড়ালেনিরলস প্রচেষ্টায় মানুষ জানতে পেল যে, তার নিকটতম প্রতিবেশী ছায়াপথের দূরত্ব ২২ লক্ষ আলোক বর্ষ বা ১.২৯x১০১৯ মাইলব্যাপ্তিতে আমাদের ছায়াপথের প্রায় তিনগুন, আর আমাদের জানামতে একশ কোটি ছায়াপথের সে একটিআবার কোথাওবা রয়েছে ছোট ছোট ছায়াপথের কুঞ্জবণ; এমনি একটি ছায়াপথ পুঞ্জের নাম হারকিউলাস ক্লাস্টার’, এর মধ্যে ছায়াপথের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার; আমাদের কাছ থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৩০ কোটি আলোক বর্ষএই ছায়াপথ পুঞ্জের সদস্যদের মধ্যকার দূরত্ব গড়ে প্রায় এক মেগাপারসেক বা ৩৩ লক্ষ আলোক বর্ষপ্রতিটি ছায়াপথের গড় ব্যাস এক লক্ষ আলোক বর্ষ
এবার অনুমান করুন হারকিউলাস ছায়াপথ পুঞ্জটির বিস্তৃতি কতআমরা যে ছায়াপথের অধিবাসী, প্রতিদিন রাতের আকাশে যার সদস্যদের দেখে মুগ্ধ হই; তিনি কিন্তু নিতান্তই এক দরীদ্র মহাজাগতিক বস্তুপুঞ্জবিজ্ঞানী হারলো শেপলে সর্বপ্রথম গবেষণা করে জানালেন যে, আমাদের ছায়াপথের ব্যাস এক লক্ষ আলোক বর্ষআর তারার সংখ্যা প্রায় এক লক্ষ হাজার কোটি (১০১১)আমাদের সূর্য এই ছায়াপথের কেন্দ্র হতে ৩০ হাজার আলোকবর্ষ দূরে এক নিভৃত স্থানে তার পরিবারবর্গ নিয়ে পড়ে আছেসূর্যের পরেও এই ছায়াপথের ৭০ হাজার আলোকবর্ষ ব্যাপ্তি বাকী রয়ে গেছেতার পরেও অসীম শূণ্যতার মাঝে এই ছায়াপথগলো যেন ছোট ছোট দ্বীপ পুঞ্জ


"মহাবিশ্বের- বিশালতা, পর্যাপ্ততা, প্রাচুর্য্যতা" -একটি দর্শন ভাবনা (৬ষ্ঠ পর্ব)

মহাবিশ্ব বিস্তৃতির আরেক নিদর্শন হচ্ছে প্রাণী কোষের মধ্যস্থিত জিনের মধ্যে সুরক্ষিত এক বিষ্ময়কর সৃষ্টি যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ডি এন এ এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অবস্থানে রয়েছে প্রাণী জীবনের সমগ্র ইতিহাস, কলাকৌশলের ডিজিটাল সংরক্ষন মানুষের একটা ডি এন এ তে, যে পরিমান তথ্য সঞ্চিত থাকে, তাতে ১০ লক্ষ পৃষ্টার ৭০ টি ব্রিটানিকা এনসাইক্লোপিডিয়া তৈরী হতে পারেএক একটা ডি এন এ তে এই পরিমান তথ্য সঞ্চিত থাকার পরেও, তাতে এর চেয়ে বহু পরিমান শূণ্য স্থান অবশিষ্ট থাকেকথাগুলো শুনতে গল্পের মতে লাগে; তথাপি এগুলো বিজ্ঞানেরই কথা
মহাবিশ্বের আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট হল মহাজাগতিক বস্তুগুলোর দূরত্বএকের সাথে অপরের অর্থা প্রতিবেশীদের মধ্যবর্তী দূরত্ব এতটাই বেশী যে ঠোকাঠুকি লাগবে কি তাদের অবস্থানটি পর্যোন্ত সঠিকভাবে বুঝা খুবই কঠিণএই দূরত্বের কারণেই আমাদের মহাবিশ্ব আজ এত বিস্তৃতশুধূ তাই নয়, বিজ্ঞান বলছে ত্বরাণ্বিত গতিতে এই দূরত্ব ক্রমশঃই বৃদ্ধি পাচ্ছে; অর্থা আমাদের মহাশূণ্য ক্রমান্বয়েই কলেবরে বৃদ্ধি পাচ্ছেঅর্থা পর্যাপ্ত শূণ্যস্থান তৈরী হচ্ছে
যেমনিভাবে মহাকাশে অসীম শূন্যতা, ঠিক তেমনি ভাবে এমনিতর শূণ্যতা আছে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অণু পরমাণুতেওপদার্থের সর্বকণিষ্ট কণা পরমাণুর মধ্যেও রয়েছে বিশাল শূণ্যতাপ্রকৃতিতে ক্ষুদ্রতম পরমানু হাইড্রোজেন, যার কেন্দ্রে মাত্র একটি ইলেকট্রন আর বাইরে দ্রুত ঘূর্ণনশী একটি ইলেক্ট্রন রয়েছেকেন্দ্র আর ইলেক্ট্রনের পরিধীর মধ্যে বাকী ৯০ ভাগই শূণ্যতাকেন এই শূণ্যতা? এই প্রশ্নের জবাব এখনো বিজ্ঞানের কাছেও নেইহয়তো এক সময় মানুষের নিরলস বিজ্ঞান গবেষণায় জানা যাবে


"মহাবিশ্বের- বিশালতা, পর্যাপ্ততা, প্রাচুর্য্যতা" -একটি দর্শন ভাবনা -(৭ম/শেষ পর্ব)

আমরা দেখেছি মহাকাশের বিশাল চত্তর, দেখেছি অগণিত ও অফুরন্ত সৃষ্টি, আরও দেখেছি আমাদের ভূ-পরিমণ্ডলে সৃষ্টির পর্যাপ্ততাএই সবই হল আমাদের দৃষ্টিলভ্যতার মধ্যে; কিন্তু এই পর্যাপ্ততা রয়েছে অদৃশ্য জগতেও; যে বিশাল জগত পরে আছে মানুষের দৃষ্টির আড়ালে
আরো আছে মহাকর্ষিয় শূন্যতা, আছে ক্ষুদ্র পরমাণু কণার কেন্দ্র আর কণার পরিধির মধ্যকার শূন্যতাকিন্তু এই শূন্যতাও আবার অদৃশ্যমান শক্তি দ্বারা পরিপূর্নআবার দেখুন, মহাকর্ষ আর অভিকর্ষ মিলে মহাবিশ্বের মোট ভর হয় শূন্যঅন্যদিকে দেখুন, বিজ্ঞানের 'স্ট্রিং তত্ত্ব' বলছে, আমাদের দৃশ্যমান জগতে যা কিছুই ঘটছে, তা মহাজাগতিক দ্বিমাত্রিক পৃষ্ঠায় আগে থেকেই জমা আছেএসব শুনলে কি শরীর শিহরিত হয়ে ওঠে না? তবে এগুলোই সত্য
স্বভাবতই অনুসন্ধিসু মনে প্রশ্ন দোলা দেয়- কেন মহাবিশ্বের এই বিশালত্ব? কেন অসীম এবং অনন্ত এ বিশ্বজগ? এ বিশাল ভ্রহ্মাণ্ডে সৃষ্টির কেন এই পর্যাপ্ততা এবং প্রাচুর্য্যতা? কি প্রয়োজন তাদের? চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এই সৃষ্টি সামগ্রী কি ভাবে বাস্তবে এসেছে? কিছু বিজ্ঞানী এক সময় বললেন, এই সৃষ্টি সামগ্রী বাস্তবে আসতে কোন স্রষ্টার প্রয়োজন হয়নি; এরা আপনা আপনিই বাস্তবে এসেছে, এই সৃষ্টি সময়ের প্রয়োজনে প্রাকৃতিক বিবর্তনের মধ্যদিয়েই বাস্তবতা পেয়েছেএ কথা শুণে আরেকদল ভাবু অভিমান করে বলে উঠলেন, মিথ্যে, স্রষ্টা ছাড়া সৃষ্টি হতে পারেনা, এসবই মহান স্রষ্টার কাজস্রষ্টা তাঁর স্বাধীন ইচ্ছায় এগুলোকে বাস্তবে এনেছেন
এবার মূল আলোচনায় আসা যাক, মহাবিশ্ব সম্পর্কে বিজ্ঞানের যে ব্যাখ্যা, তাতে কোথাও অনুমান হয়না যে, স্রষ্টা নেই; বরং স্রষ্টার অস্তিত্বই আরো সামনে এসে দাঁড়ায়, কেননা মানুষ বিজ্ঞান গবেষণার মাধ্যমে সেই আদ্য প্রাকৃতিক শক্তির ঐশ্বর্য্যকেই খুঁজে খুঁজে বের করছে এবং ব্যাখ্যা দিচ্ছেএকটু গভীর করে ভাবলেই বুঝা যায় যে, বিজ্ঞানের মৌলিক কোন আবিষ্কার নেইতবে বিরোধ বেঁধে যায় ধর্মগ্রন্থের সাথে, কেননা ধর্মগ্রন্থে যে মহাকাশের বর্ননা এবং যে সৃষ্টিকর্তার কথা বলা হয়, তার ভিত্তি দুর্বল, যার কোন সরল সমীকরন নেই
তবে যুগ যুগ ধরে মহা মনীষিগন তাঁদের আত্মদর্শন দিয়ে যে ঈশ্বরের কথা বলেছেন, এর সাথে বিজ্ঞানের মহাবিশ্বের ধারনার কোন অসংগতি নেইএই ঈশ্বর মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেনি, বরং মহাবিশ্বে ঈশ্বর নিজেই সৃষ্টি হয়েছেনতিনি অনাদি, তিনি নিখিল, তিনি চিরঞ্জীবতিনি আদ্য শক্তি, তিনি চৈতন্যময়, তিনি ঐশ্বর্য্যময়তিনি নিত্য, তিনি বিধি, তিনি স্বয়ম্ভু
এখন যদি বিজ্ঞান দিয়ে ভেবে থাকি ঈশ্বর নেই, সেটা হবে একান্তই আমার চিন্তা বা কোন বিজ্ঞানীর সভা সেমিনারে বলা তাঁর নিজস্ব বক্তব্যকিন্তু নিরেট বিজ্ঞান কখনোই বলেনা ঈশ্বর নেইএবার একটু অন্যভাবে দেখি- গবেষক, চিন্তাবিদ এবং ঈশ্বরে অবিশ্বাসী হুমায়ুন আজাদ বলেছেন, জীবন নিরর্থকএক্ষেত্রেও প্রশ্ন এসে যায়, জীবন যদি নিরর্থকই হয়, তাহলে মানুষ কেন জ্ঞান অর্জন করে? মানুষ কেন জ্ঞান বিলাতে চায়? মানুষ কেন সত্যকে জানতে চায়? মানুষ কেন সত্য বলতে চায়? হুমায়ুন আজাদই কেন ভেতরের যুক্তিপূর্ন কথাগুলো বলতে চেয়েছেন? আমরাই কেন জ্ঞানচর্চা করছি? কেনই চাচ্ছি মানুষ ধর্মান্ধতা এবং কুসংস্কার থেকে বের হয়ে সত্যকে জানুক? জীবন কি সত্যিই নিরর্থক? না, জীবন নিরর্থক হতে পারে নাজীবন হচ্ছে বহুমাত্রিক, ব্যঞ্জনাপূর্ন, মহিমাপূর্ন, দ্যুতিময়জীবন মহার্ঘ্যময়
এবার অন্য একটি বিষয় লক্ষ্য করা যাক, সৃষ্টিকর্তা যদি থাকেও তার বড় দলিল হচ্ছে মানুষ কেননা মানুষ ছাড়া এই মহাবিশ্বের কেউ বলেনা ঈশ্বর আছে কি নেইকথা হচ্ছে যে মানুষ প্রজাতি বলছে ঈশ্বর আছে, সেই মানুষ প্রজাতিটির বসবাস কিন্তু সমগ্র মহাবিশ্বে নয় কিংবা সবগুলো ভার্জো ক্লাস্টারের মধ্যেও নয় কিংবা সমস্ত ছায়পথের মধ্যেও নয়; বরং একটি মাত্র ছায়পথের মধ্যে মানুষের আবাস, তাও কোন বড় আকৃতির ছায়পথও নয়আবার এই ছায়াপথের সবগুলো সৌরজগতেই কিন্তু মানুষের আবাস নয়, বরং সূর্য কেন্দ্রিক ১টি মাত্র সৌরজগতেই মানুষের আবাস, তাও বড় কোন সৌরজগ নয়আবার এই সৌরজগতের সবগুলো গ্রহেই কিন্তু মানুষের বসবাস নেই, বরং পৃথিবী নামক ১টি গ্রহেই অন্যান্য প্রানীসহ মানুষের বসবাস, তাও আবার কোন বড় গ্রহ নয়সবচাইতে অবাক লাগে, যে ছায়াপথের মধ্যে মানুষ বসবাসকারি সূর্যকেন্দ্রিক সৌরজগতের অবস্থান, এই সূর্যকেন্দ্রিক সৌরজগত কিন্তু এই ছায়াপথের কেন্দ্রে অবস্থান করেনা, বরং ছায়পথের কেন্দ্র থেকে বহু আলোকবর্ষ দূরে এক নিভৃত কোণে পড়ে আছেএতে কি স্পষ্ট হয়না, সৃষ্টিকর্তা এবং মানুষ দুটোই ভিত্তিহীন, অর্থহীন?
যাই হোক না কেন, এই মহাবিশ্বের সৃষ্টির পেছনে কোন শক্তি যদি থাকেও, তবে সেটা জানা ও বুঝা মানবীয় মেধার জন্যেও অনেক কষ্টকরআমরা আমাদের প্রজ্ঞা ও মেধা দিয়ে শুধুমাত্র এই বিশালত্বের অনুমান করতে পারি মাত্রসৃষ্টির নিপুনতায় আমরা শুধু ভাবতে পারি মাত্র, কিন্তু সৃষ্টির কৌশল সম্পর্কে কিছুই জানতে পারিনামহাবিশ্বের এই বিশাল সাম্রাজ্যে অতিসূক্ষ্ম ধূলিকণার চেয়েও ক্ষুদ্র এক মহাজাগতিক বস্তুর মধ্যে আমরা এক উন্নত প্রাণী হিসেবে জন্মেছি, এই আমাদের সৌভাগ্যপেয়েছি ভাবনা চিন্তার সুযোগ, আর এই পথ ধরেই খুঁজে পেয়েছি আমাদের এই মহাবিশ্বকেএবং সেই সাথে খুঁজে পেয়েছি অনন্ত অসীম এক প্রাকৃতিক শক্তির সন্ধানযে শক্তি সর্বদা একক এবং মৌলিক

"মহাবিশ্বের- বিশালতা, পর্যাপ্ততা, প্রাচুর্য্যতা" -একটি দর্শন ভাবনা -(৭ম/শেষ পর্ব)

আমরা দেখেছি মহাকাশের বিশাল চত্তর, দেখেছি অগণিত ও অফুরন্ত সৃষ্টি, আরও দেখেছি আমাদের ভূ-পরিমণ্ডলে সৃষ্টির পর্যাপ্ততাএই সবই হল আমাদের দৃষ্টিলভ্যতার মধ্যে; কিন্তু এই পর্যাপ্ততা রয়েছে অদৃশ্য জগতেও; যে বিশাল জগত পরে আছে মানুষের দৃষ্টির আড়ালে
আরো আছে মহাকর্ষিয় শূন্যতা, আছে ক্ষুদ্র পরমাণু কণার কেন্দ্র আর কণার পরিধির মধ্যকার শূন্যতাকিন্তু এই শূন্যতাও আবার অদৃশ্যমান শক্তি দ্বারা পরিপূর্নআবার দেখুন, মহাকর্ষ আর অভিকর্ষ মিলে মহাবিশ্বের মোট ভর হয় শূন্যঅন্যদিকে দেখুন, বিজ্ঞানের 'স্ট্রিং তত্ত্ব' বলছে, আমাদের দৃশ্যমান জগতে যা কিছুই ঘটছে, তা মহাজাগতিক দ্বিমাত্রিক পৃষ্ঠায় আগে থেকেই জমা আছেএসব শুনলে কি শরীর শিহরিত হয়ে ওঠে না? তবে এগুলোই সত্য
স্বভাবতই অনুসন্ধিসু মনে প্রশ্ন দোলা দেয়- কেন মহাবিশ্বের এই বিশালত্ব? কেন অসীম এবং অনন্ত এ বিশ্বজগ? এ বিশাল ভ্রহ্মাণ্ডে সৃষ্টির কেন এই পর্যাপ্ততা এবং প্রাচুর্য্যতা? কি প্রয়োজন তাদের? চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এই সৃষ্টি সামগ্রী কি ভাবে বাস্তবে এসেছে? কিছু বিজ্ঞানী এক সময় বললেন, এই সৃষ্টি সামগ্রী বাস্তবে আসতে কোন স্রষ্টার প্রয়োজন হয়নি; এরা আপনা আপনিই বাস্তবে এসেছে, এই সৃষ্টি সময়ের প্রয়োজনে প্রাকৃতিক বিবর্তনের মধ্যদিয়েই বাস্তবতা পেয়েছেএ কথা শুণে আরেকদল ভাবু অভিমান করে বলে উঠলেন, মিথ্যে, স্রষ্টা ছাড়া সৃষ্টি হতে পারেনা, এসবই মহান স্রষ্টার কাজস্রষ্টা তাঁর স্বাধীন ইচ্ছায় এগুলোকে বাস্তবে এনেছেন
এবার মূল আলোচনায় আসা যাক, মহাবিশ্ব সম্পর্কে বিজ্ঞানের যে ব্যাখ্যা, তাতে কোথাও অনুমান হয়না যে, স্রষ্টা নেই; বরং স্রষ্টার অস্তিত্বই আরো সামনে এসে দাঁড়ায়, কেননা মানুষ বিজ্ঞান গবেষণার মাধ্যমে সেই আদ্য প্রাকৃতিক শক্তির ঐশ্বর্য্যকেই খুঁজে খুঁজে বের করছে এবং ব্যাখ্যা দিচ্ছেএকটু গভীর করে ভাবলেই বুঝা যায় যে, বিজ্ঞানের মৌলিক কোন আবিষ্কার নেইতবে বিরোধ বেঁধে যায় ধর্মগ্রন্থের সাথে, কেননা ধর্মগ্রন্থে যে মহাকাশের বর্ননা এবং যে সৃষ্টিকর্তার কথা বলা হয়, তার ভিত্তি দুর্বল, যার কোন সরল সমীকরন নেই
তবে যুগ যুগ ধরে মহা মনীষিগন তাঁদের আত্মদর্শন দিয়ে যে ঈশ্বরের কথা বলেছেন, এর সাথে বিজ্ঞানের মহাবিশ্বের ধারনার কোন অসংগতি নেইএই ঈশ্বর মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেনি, বরং মহাবিশ্বে ঈশ্বর নিজেই সৃষ্টি হয়েছেনতিনি অনাদি, তিনি নিখিল, তিনি চিরঞ্জীবতিনি আদ্য শক্তি, তিনি চৈতন্যময়, তিনি ঐশ্বর্য্যময়তিনি নিত্য, তিনি বিধি, তিনি স্বয়ম্ভু
এখন যদি বিজ্ঞান দিয়ে ভেবে থাকি ঈশ্বর নেই, সেটা হবে একান্তই আমার চিন্তা বা কোন বিজ্ঞানীর সভা সেমিনারে বলা তাঁর নিজস্ব বক্তব্যকিন্তু নিরেট বিজ্ঞান কখনোই বলেনা ঈশ্বর নেইএবার একটু অন্যভাবে দেখি- গবেষক, চিন্তাবিদ এবং ঈশ্বরে অবিশ্বাসী হুমায়ুন আজাদ বলেছেন, জীবন নিরর্থকএক্ষেত্রেও প্রশ্ন এসে যায়, জীবন যদি নিরর্থকই হয়, তাহলে মানুষ কেন জ্ঞান অর্জন করে? মানুষ কেন জ্ঞান বিলাতে চায়? মানুষ কেন সত্যকে জানতে চায়? মানুষ কেন সত্য বলতে চায়? হুমায়ুন আজাদই কেন ভেতরের যুক্তিপূর্ন কথাগুলো বলতে চেয়েছেন? আমরাই কেন জ্ঞানচর্চা করছি? কেনই চাচ্ছি মানুষ ধর্মান্ধতা এবং কুসংস্কার থেকে বের হয়ে সত্যকে জানুক? জীবন কি সত্যিই নিরর্থক? না, জীবন নিরর্থক হতে পারে নাজীবন হচ্ছে বহুমাত্রিক, ব্যঞ্জনাপূর্ন, মহিমাপূর্ন, দ্যুতিময়জীবন মহার্ঘ্যময়
এবার অন্য একটি বিষয় লক্ষ্য করা যাক, সৃষ্টিকর্তা যদি থাকেও তার বড় দলিল হচ্ছে মানুষ কেননা মানুষ ছাড়া এই মহাবিশ্বের কেউ বলেনা ঈশ্বর আছে কি নেইকথা হচ্ছে যে মানুষ প্রজাতি বলছে ঈশ্বর আছে, সেই মানুষ প্রজাতিটির বসবাস কিন্তু সমগ্র মহাবিশ্বে নয় কিংবা সবগুলো ভার্জো ক্লাস্টারের মধ্যেও নয় কিংবা সমস্ত ছায়পথের মধ্যেও নয়; বরং একটি মাত্র ছায়পথের মধ্যে মানুষের আবাস, তাও কোন বড় আকৃতির ছায়পথও নয়আবার এই ছায়াপথের সবগুলো সৌরজগতেই কিন্তু মানুষের আবাস নয়, বরং সূর্য কেন্দ্রিক ১টি মাত্র সৌরজগতেই মানুষের আবাস, তাও বড় কোন সৌরজগ নয়আবার এই সৌরজগতের সবগুলো গ্রহেই কিন্তু মানুষের বসবাস নেই, বরং পৃথিবী নামক ১টি গ্রহেই অন্যান্য প্রানীসহ মানুষের বসবাস, তাও আবার কোন বড় গ্রহ নয়সবচাইতে অবাক লাগে, যে ছায়াপথের মধ্যে মানুষ বসবাসকারি সূর্যকেন্দ্রিক সৌরজগতের অবস্থান, এই সূর্যকেন্দ্রিক সৌরজগত কিন্তু এই ছায়াপথের কেন্দ্রে অবস্থান করেনা, বরং ছায়পথের কেন্দ্র থেকে বহু আলোকবর্ষ দূরে এক নিভৃত কোণে পড়ে আছেএতে কি স্পষ্ট হয়না, সৃষ্টিকর্তা এবং মানুষ দুটোই ভিত্তিহীন, অর্থহীন?
যাই হোক না কেন, এই মহাবিশ্বের সৃষ্টির পেছনে কোন শক্তি যদি থাকেও, তবে সেটা জানা ও বুঝা মানবীয় মেধার জন্যেও অনেক কষ্টকরআমরা আমাদের প্রজ্ঞা ও মেধা দিয়ে শুধুমাত্র এই বিশালত্বের অনুমান করতে পারি মাত্রসৃষ্টির নিপুনতায় আমরা শুধু ভাবতে পারি মাত্র, কিন্তু সৃষ্টির কৌশল সম্পর্কে কিছুই জানতে পারিনামহাবিশ্বের এই বিশাল সাম্রাজ্যে অতিসূক্ষ্ম ধূলিকণার চেয়েও ক্ষুদ্র এক মহাজাগতিক বস্তুর মধ্যে আমরা এক উন্নত প্রাণী হিসেবে জন্মেছি, এই আমাদের সৌভাগ্যপেয়েছি ভাবনা চিন্তার সুযোগ, আর এই পথ ধরেই খুঁজে পেয়েছি আমাদের এই মহাবিশ্বকেএবং সেই সাথে খুঁজে পেয়েছি অনন্ত অসীম এক প্রাকৃতিক শক্তির সন্ধানযে শক্তি সর্বদা একক এবং মৌলিক