লিখেছেন: অচেনা —
“....যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন, তাহলে তাদের শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি ছিনিয়ে নিতে পারেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। [সুরা বাকারা: ২০]”
“আহলে কিতাবদের অনেকেই প্রতিহিংসাবশতঃ চায় যে, মুসলমান হওয়ার পর তোমাদেরকে কোন রকমে কাফের বানিয়ে দেয়। তাদের কাছে সত্য প্রকাশিত হওয়ার পর (তারা এটা চায়। যাক তোমরা আল্লাহর নির্দেশ আসা পর্যন্ত তাদের ক্ষমা কর এবং উপেক্ষা কর। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।[সুরা বাকারা: ১০৯]”
“আমি কোন আয়াত রহিত করলে অথবা বিস্মৃত করিয়ে দিলে তদপেক্ষা উত্তম অথবা তার সমপর্যায়ের আয়াত আনয়ন করি। তুমি কি জান না যে, আল্লাহ সব কিছুর উপর শক্তিমান? [সুরা বাকারা: ১০৬]”
আল্লা শুধু সর্বশক্তিমান হয়েই খুশী নন, তিনি সর্বজ্ঞও বটে-
“পূর্ব ও পশ্চিম আল্লারই। অতএব, তোমরা যেদিকেই মুখ ফেরাও, সেদিকেই আল্লাহ বিরাজমান। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বব্যাপী, সর্বজ্ঞ।[সুরা বাকারা: ১১৫]”
এখন প্রশ্ন হল আল্লা কিভাবে একি সাথে সর্বজ্ঞ (omniscient) ও সর্বশক্তিমান (omnipotent) হন। সর্বজ্ঞ হওয়ার অর্থ তিনি ভবিষ্যতে কি ঘটবে জানেন। সর্বশক্তিমান হলে তিনি ভবিষ্যৎ পরিবর্তনও করতে পারবেন। যে মূহূর্তে তিনি ভবিষ্যৎ পরিবর্তন করবেন সেই মূহূর্তে তার জানাটা ভূল হয়ে গেল। অতএব তিনি সর্বজ্ঞ নন। অন্যদিকে উনি যেহেতু সব জানেন তাই আগে থেকেই জানেন উনি ভবিষ্যতে কি করবেন।ফলে অন্যরকম কিছু করা তার পক্ষে অসম্ভব। কোন কিছু অসম্ভব মানেই তিনি আর সর্বশক্তিমান নন।
বোঝা গেল ওমনিপটেন্স ও ওমনিসিয়েন্স এই গুণদুটি পরস্পরবিরোধী। এখন দেখা যাক আল্লার পক্ষে এই দুটি গুণের একটিও অর্জন করা সম্ভব কিনা। প্রকৃতপক্ষে কোন সত্তা সর্বশক্তিমান এরূপ বক্তব্যের কোন অর্থ হয়না। মুনিন ভাইয়েরা নিশ্চই ধৈর্য হারিয়ে ফেলছেন। আসেন সবাই মিলে নিচের প্রশ্নটার উত্তর খুঁজি-
আল্লা কি এমন ভারী বস্তু তৈরী করতে পারবেন যা তিনি নিজেই তুলতে পারবেন না?
বিশ্লষন ও সমাধান উভয়ই আমি মুনিন ভাইদের উপরই ছেড়ে দিলাম(কোরান, হাদিস ঘেঁটে দেখেন)। আল্লা কি সর্বজ্ঞ হতে পারেন। এই প্রশ্নের উত্তরে আগে জানতে হবে আল্লা কি চেতন সত্তা অর্থ্যাৎ আল্লার কি চিন্তাশক্তি আছে? যদি আল্লা চিন্তা করেন তাহলে সর্বজ্ঞ হতে গেলে তাকে তার চিন্তা সম্পর্কেও সম্পূর্ণ অবহিত হতে হবে। অর্থ্যাৎ তিনি কখন কি চিন্তা করবেন তাও তাকে জানতে হবে। এই জানার জন্য তাকে আবার চিন্তা করতে হবে; এইভাবে অন্তহীন চলতেই থাকবে। কখনই তার চিন্তার সম্পূর্ণ পরিসর তিনি জানতে পারবেন না। ( প্রকৃতপক্ষে আমাদের সাথে এটাই ঘটে, নিজেদের চেতনার অত্যন্ত সামান্য অংশ আমরা অনুভব করতে পারি)
আজ্ঞে না, আপনাদের ঈশ্বর নিয়ে ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ করার উদ্দেশে আমি লিখছি না। Logical Fallacy কি জিনিস তা বোঝানোর চেষ্টা করছি। আব্রাহামিক ধর্মের ঈশ্বর, ওল্ড টেষ্টামেন্টের ইয়াভে-বাইবেলের গড ও কোরানের আল্লা হলেন লজিকাল ফালাসির প্রকৃষ্টতম উদাহরণ। বরং তুলনায় বহুঈশ্বরবাদী তত্ব লজিকালি অনেক পাকাপোক্ত অবস্থানে আছে। কারণ বহুঈশ্বরবাদী তত্বকে শুধু যুক্তি দ্বারা খন্ডন করা অনেক কঠিন।
কোরানে আল্লাকে যে গুণ দ্বারা সবচেয়ে বেশীবার ভূষিত করা হয়েছে তা হল পরম করুণাময়। গ্রিক দার্শনিক এপিকিউরাস আর্গুমেন্ট অফ ইভিল নামে যে যুক্তিটি দিয়েছিলেন তা আমি অবিকল তুলে দিলাম।
১.ঈশ্বর কি অন্যায়, অত্যাচার, অরাজকতা রোধে ইচ্ছুক কিন্তু অক্ষম।
তাহলে তিনি সর্বশক্তিমান নন।
২.তিনি কি সক্ষম কিন্তু অনিচ্ছুক?
তাহলে তিনি পরম করুনাময় নন
৩.তিনি কি সক্ষম ও ইচ্ছুক দুটোই?
তাহলে অন্যায়, অবিচার, অরাজকতা পৃথিবীতে বিরাজ করে কিভাবে?
৪.তিনি কি সক্ষম ও নন ইচ্ছুকও নন?
তাহলে তাকে কেন পরম করুনাময় হিসাবে ডাকা?
যৌক্তিকভাবে দেখানো যায় পরম করুনাময়, সর্বনিয়ন্ত্রক সত্তার অস্তিত্তও অসম্ভব। এক্ষেত্রে যুক্তিটা অতি বিস্তৃত হয়ে যাওয়ার ভয়ে আর সে পথে আর অগ্রসর হলাম না।