Wednesday, December 16, 2015

জিনের আছর না অন্য কিছু?

জিনের আছর,ভূতে ধরা,মা কালী ভর করা—এ গুলো সব একই ধরনের অসুখ । রোগী অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে থাকে । চিকিৎসার অংশ হিসেবে সাধারনত কবিরাজ বা ওঝা ডেকে আনা হয় । সেই কবিরাজ অমানুষিক অত্যাচারের মাধ্যমে চিকিৎসা চালায়,যার ফলে রোগীর শারীরিক অনেক ক্ষতি হয় এমনকি কখনো কখনো মারাও যায় । চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় এই রোগগুলো সিজোফ্রেনিয়ার একটি পর্যায় ।

বাংলাদেশের গ্রামে গঞ্জে বিশেষত অশিক্ষিত মানুষদের মধ্যে এই রোগটি দেখা যায়।রোগী অলিক কিছু দেখে বা শোনে বা চিন্তা করে।অধিকাংশ সময়েই সে অডিটরী হ্যালুসিনেশনের শিকার হয়।সে এমন কিছু শোনে যেটা আশেপাশের আর কেউ শুনতে পায় না।সে ভাবতে পারে কেউ তার সাথে সবসময় কথা বলছে/নিরদেশ দিচ্ছে ।আবার একাধিক মানুষ তার মাথার ভেতর বসে কথা বলছে,রোগী জাস্ট রানিং কমেন্ট্রির মত করে তাদের কথা শুনছে ,এমন উপসর্গও হতে পারে। সে ভাবতে পারে কেউ তার সাথে সবসময় কথা বলছে।অনেক একে গায়েবী আওয়াজ বলে অভিহিত করে।অলীক অনেক কিছুই সে দেখতে পারে।উদ্ভট অনেক কিছুই সে ক্রতে পারে।ধর্ম বা পরিবেশ অনুযায়ী কেউ আরবীতে সুরা কেরাত পড়া শুরু করতে পারে,কেউ বা জয় মা কালী বলে নাচানাচি করতে পারে। উপসর্গ দেখে বাংলাদেশের সকল ধরনের জিনে ধরা,ভুতে ধরা,আছর পড়া,নজর লাগা ,ভর করা ইত্যাদি সকল রোগ কেই সিজোফ্রেনিয়া ধরা যায়।


রোগের কারন বংশগত এবং পরিবেশগত।বংশে অতীতে কারো সিজোফ্রেনিয়া থাকলে সেই পরিবারের পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে এই রোগের সম্ভাবনা থাকে।তবে বেশি প্রভাব পরিবেশের।ধর্মিয় বা আধ্যাত্মিক জগতের উপরে দৃড় বিশ্বাস তার মনে সিজোফ্রেনিয়ার বিজ বপন করে।ইসলামে বিশ্বাসী কোন তরুন তরুনীর উপর কখনো মা কালী ভর করে না।আবার কোন হিব্দুর উপর মুসলমান জিনের আছর পড়তে দেখা যায় না।

দেখা যায় ,যে এলাকায় শিক্ষার হার কম,সেই এলাকার কমবয়সী রা এই রোগে আক্রান্ত হয়।
অশিক্ষিত মানুষদের মস্তিষ্ক তুলনামূলকভাবে নতুন,অদ্ভুত বিষয় সহজে গ্রহন করতে পারে না।কোন নির্দিষ্ট ঘটনা বা তথ্য(কোন ভূত তাড়ানোর দৃশ্য,কোন প্যারানরমাল এক্টিভিটিজ,কোন ধর্মীয়/ সামাজিক মিথ অথবা এমঙ্কিছু যা সে ব্যাখ্যা করতে পারছে না) এই কিশোর কিশরীদের মস্তিষ্ক যখন আলোড়িত করে,তখন সে সর্বক্ষন এটা নিয়ে চিন্তা করতে থাকে।চিন্তা করে যখন কোন সলুশন পায় না তখন মস্তিষ্কে এম্ফেটামিন হরমোন নিসৃত হয়।এম্ফেটামিন আবার ডোপামিন নামক আরেক হরমোনকে নিঃসরনের প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।এই ডোপামিনের প্রভাবেই রোগি কাল্পনিক কথা শোনে,অবাস্তব জিনিস দেখে এবং অসম্ভব কাজ করতে পারে।
ধরা যাক ,কোন তরুনী দুপুরে গোছলের পরে বকুল গাছ তলায় বসেছিল।বিকালে তার মা তাকে ডেকে বল্ল,কেন সে বকুল তলায় বসেছিল?সে কি জানে না গোছলের পরে ভেজা চুলে বকুল তলায় বসলে জিনের নজর লাগে?তরুনী যদি অশিক্ষিত এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন হয় তাহলে এ ঘটনায় ওই তরূনীর মনে বেশ শক্ত একটা ভয় ঢুকে যাবে।(সে কুসন্সকার মুক্ত হলে একটুও ভয় পাবে না)রাতে হয়তো তার পরিবারের বয়স্ক দাদী নানী কারো কাছ থেকে সে কিছু জিনে ধরার গল্প শুনল,জিনে ধরলে মানুষ কি করে সে বিষয়ে তার কিছু ধারনা হল।এখন তার কাছে ভয়টা অনেক শক্ত হয়ে গেথে যাবে।তার ব্রেনে ডোপামিনের কাজ শুরু হয়ে গেছে।পরের কয়েক দিনের মধ্যেই তার সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশী।এবং আক্রান্ত হয়ে সে সেই সব আচরন করার চেষ্টাই করবে ,যে কাজের ইনফরমেশন গুলা তার মাথায় আছে।(দাদীর কাছে শুনেছে জিনে ধরলে পুরুষ কন্থে কথা বলে।সে চাইবে গলা মোটা করে কথা বলতে।তার পাশের ঘরের আচারের ওপর হয়তো তার লোভ ছিল।সে আদেশ করবে আমাকে ওই ঘর থেকে আচার এনে খেতে দাও ইত্যাদি)।

নির্দিষ্ট কিছু ড্রাগের প্রভাবেও সিজোফ্রেনিয়া ঘটতে পারে।বিভিন্ন পূজা পারবনে নেশা করার পর অনেকের মধ্যে উন্মত্ততার ভাব আসে।ক্লান্তিহীন ভাবে সে তখন নাচ গান করতে পারে।অনেক অপ্রত্যাশিত আচরন ও করতে পারে সে তখন।

সিজোফ্রেনিয়ার প্রভাবে রোগীর সাময়িক ভাবে স্মৃতি ভ্রংশ হতে পারে।আবার কখনো কখনো শুধু নির্দিষ্ট কিছু স্মৃতিই তার মাথায় থেকে যায়।রোগী এ সময় নিজের সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারনা পোষন করে।তার আশেপাশের পরিবেশে কি হচ্ছে সে এটা ধরতে পারে না।অসংলগ্ন কথা বার্তা বলে থাকে,যা স্বাভাবিক অবস্থায় তার বলার কথা না।এমনকি এ অবস্থায় তার গলার স্বর ও পরিবর্তিত হতে পারে।চূড়ান্ত অবস্থায় রোগী নিজের বা অন্যদের শারীরিক ক্ষতি করতে পারে।তার শারীরিক শক্তি এ সময় অনেক বেশি বলে মনে হতে থাকে।বা স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে সে অনেক বেশি কাজ করতে পারে এ সময়।

convulsion রোগের কিছু কিছু উপসর্গও এই ধরনের জিনের আছরের সাথে মিলে যায় । কনভালশনের ক্ষেত্রে রোগীর শরীর কাপতে থাকে , তাদের মুখ দিয়ে ফেনা বের হয় এবং কিছুক্ষন পরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে । এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ব্যাপার । এর সাথে ভৌতিক কোন ব্যাপার না ।চিকিৎসা করালে এ রোগ সম্পুর্ন সেরে যায় ।

এ রকম ক্ষেত্রে রোগীকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে । সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে রোগী পুরোপুরি ই সূস্থ হয়ে উঠবে । কোনভাবেই কবিরাজদের শরনাপন্ন হওয়া উচিত না ।রোগী যেন নিজেই নিজের কোন শারীরিক ক্ষতি করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে ।