Friday, February 26, 2016

বিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধনে মুসলিমদের অবদান।

মহান আল্লাহর অস্তিত্বের বুদ্ধিবৃত্তিক প্রমাণ -৩ Click This Link
শীর্ষক একটি পোষ্টে কয়েকজন স্থুল বুদ্ধির নিক "বিজ্ঞানে মুসলিমদের কোন অবদান নেই" জাতীয় একাধিক বক্তব্যের প্রেক্ষিতে এ বিষয়ে আলাদা একটি পোষ্ট দিলাম। আপাতত: আমার সংগ্রহে যেটুকু তথ্য ছিলো তা সংযুক্ত করা হলো, আশাকরি বিজ্ঞ বিশ্বাসী ব্লগারগন এ বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য সংযুক্ত করবেন।

ভূমিকা:
বিজ্ঞানের একটি আবিস্কারের পেছনে হাজারটি সূত্র থাকে। যেই বিজ্ঞানী অতিতের যত বেশি সূত্র আর তথ্যের উপর ভিত্তি করে আবিস্কার করে, তার আবিস্কার ততো নির্ভুল হয়। কারো সূত্রের উপর নির্ভর করে কোন আবিস্কার করলে এর দ্বারা নিজের দূর্বলতা প্রকাশ পায় না। বরং নিজের সাফল্যের পাশাপাশি সেই সূত্রের অবদানও সমভাবে স্বীকৃত হয় বিবেকবানদের কাছে।
কিন্তু বর্তমান সময়ে কিছু নাস্তিক এমন আছে, যারা বিজ্ঞানে মুসলমানদের কোন অবদানকেই স্বীকার করতে চায় না। যেমন এই ব্লগের এক নাস্তিক নিক -মায়য়া-। সে আমার উপরোক্ত পোষ্টে খুবই তাচ্ছিল্যভরে বিজ্ঞানে মুসলমানদের কোন অবদান আছে কি না, ব্যাঙ্গাত্মকভাবে তা জানতে চেয়েছে।

তার জবাবের প্রেক্ষিতে তায়িফ ভাই ও আমি যখন নিম্নোক্ত কিছু প্রমাণ্য বক্তব্য তুলে ধরি, তখন আরেক নিক (সম্ভবত: তারই মাল্টি নিক) -মাঝি মাল্লা- বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদানকে খানিকটা স্বীকার করে নিয়ে বর্তমানে মুসলিমদের পিছিয়ে থাকার দিকে ইঙ্গিত করে মন্তব্য করে-
-মধ্যযুগের হাতে গনা কয়েক জন বিজ্ঞানী ছাড়া বিজ্ঞানে মুসলমানদের তেমন কোন অবদান নেই। এটা দিবালকের মত সত্য। অমরা এখন আর আল হাজেন এর যুগে নেই। কবে খেয়েছেন ঘি আর এখনো আঙ্গুল শুকেন!!-

-এদের জন্য নিম্নের কিছু কথা।
ইতিহাস সাক্ষী, মুসলমানরাই জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্মোচন করেছে। মানবতার জন্য কল্যাণকর একরে পর এক নতুন নতুন আবিস্কার উপহার দিয়েছে সারা বিশ্বকে। মুসলমানদের কোন একটি আবিস্কার বা তার ব্যবহার বিশ্বমানবতার অকল্যাণে বা ক্ষতির জন্য ব্যবহৃত হয়নি।

খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দী থেকে দ্বাদশ শতাব্দী নাগাদ জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখায় মুসলমানেরা ছিল সর্বেসর্বা। আল কুরআনের পাশাপাশি তারা জ্ঞান-বিজ্ঞান বিষয়ক সকল প্রকার বই পড়েছেন, গবেষণা করেছেন। তারা মহান আল্লাহর সৃষ্ট প্রকৃতির নিদর্শনাবলীর ওপর গবেষণার মাধ্যমে সত্য উপলব্ধি করেছেন। আত্মশুদ্ধি ঘটিয়েছেন। কুরআন ও অন্য যাবতীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের বই পড়েছেন। হিকমত অর্থাৎ বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার শিক্ষা গ্রহণ করেছেন।

ইবনে আল হাইসাম ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্র্রেষ্ঠ একজন পদার্থ বিজ্ঞানী। তিনিই সর্বপ্রথম প্রদান করেন জড়তত্ত্ব ও আলোর প্রতিসরণ তত্ত্ব। পরবর্তীতে যা নিউটনের হাতে পুনরাবিষ্কৃত হয়। জাবির বিন হাইয়ান রসায়ন শাস্ত্রের ভিত্তি রচনা করেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানে ইবনে সিনা, জাবির হাসান বিন হাইয়ান, আল রাযীর নাম উল্লেখযোগ্য। তাদের লিখিত বইয়ের ল্যাটিন অনুবাদ ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য ছিল।

কম্পিউটারের আবিষ্কার কিন্তু অঙ্ক শাস্ত্রনির্ভর। বস্তুর ‘সংখ্যাতাত্ত্বিক পরিমাপ’ আল খাওয়ারেযমীই প্রথম প্রণয়ন করেছিলেন। নিউটনের বহু আগেই কবি ওমর খৈয়াম ‘বাইনোমিয়াল থিউরাম’ আবিষ্কার করেন। পৃথিবীর প্রথম সম্পূর্ণ মানচিত্র প্রণয়ন করেন মুসলিম ভূগোলবিদ ইবনে হাক্কল। আল ফারাবি ছিলেন বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষাবিদ ও দার্শনিক। তিনি ৭০টি ভাষায় কথা বলতে পারতেন। আল বিরুনি (প্রসিদ্ধ গ্রন্থ কিতাব আল হিন্দ), ইবনে বতুতা প্রমুখ মুসলিম মনীষী ভূবিদ্যার প্রসারে অনেক অবদান রাখেন। ইবনে খালদুনকে বলা হয় ইতিহাস, দর্শন ও সমাজ বিজ্ঞানের জনক। বিশ্ববিখ্যাত ঐতিহাসিক ছিলেন ইবনে জাবির তাবারি। ‘তারিখ আল রাসূল ওয়া আল মুলুক’ তার এ গ্রন্থটি সারাবিশ্বে রেফারেন্স হিসেবে পঠিত হচ্ছে। আল ফিন্দি গণিত, ইতিহাস, ভূগোল, চিকিৎসা বিজ্ঞানের ৩৬৯টি গ্রন্থ রচনা করেন। অতীতে জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতেই নয়; বরং ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প, কল-কারখানাতেও মুসলমানদের ছিল গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
আব্বাসীয় খলিফা মামুন বাগদাদে ‘দারুল হিকমাহ’ নামে যে বিজ্ঞান কেন্দ্র গড়ে তুলেছিলেন তাতে সে যুগেই প্রায় ৭ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছিল।

ড. মরিস বুকাইলী তার এক বইতে উল্লেখ করেন, ‘অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীতে ইসলাম জ্ঞান-বিজ্ঞানকে অনেক ঊর্ধ্বে তুলে ধরে। যখন খ্রিষ্টীয় জগতে বৈজ্ঞানিক উন্নয়নের ওপর নিষেধাজ্ঞা চলছিল তখন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে বহুসংখ্যক গবেষণা ও আবিষ্কার সাধিত হয়। কর্ডোভার রাজকীয় পাঠাগারে ৪ লাখ বই ছিল। ইবনে রুশদ তখন সেখানে গ্রীক, ভারতীয় ও পারস্য দেশীয় বিজ্ঞানে পাঠদান করতেন। যার কারণে সারা ইউরোপ থেকে পণ্ডিতরা কর্ডোভায় পড়তে যেতেন, যেমন আজকের দুনিয়ায় মানুষ তাদের শিক্ষার পরিপূর্ণতার জন্য আমেরিকা যায়।

‘ইসলাম ও আরবি সভ্যতার ইতিহাস’ বইতে ওস্তাভলি বোঁ লিখেছেন, ‘ইউরোপে যখন বই ও পাঠাগারের কোন অস্তিত্ব ছিল না, অনেক মুসলিম দেশে তখন প্রচুর বই ও পাঠাগার ছিল। সত্যিকার অর্থে বাগদাদের ‘বায়তুল হিকমাহ’য় ৪০ লক্ষ, কায়রোর সুলতানের পাঠাগারে ১০ লক্ষ, সিরিয়ার ত্রিপোলী পাঠাগারে ৩০ লক্ষ বই ছিল। অপরদিকে মুসলমানদের সময়ে কেবল স্পেনেই প্রতিবছর ৭০ থেকে ৮০ হাজার বই প্রকাশিত হতো।

ইউরোপ যখন জঙ্গলে প্রাকৃতিক কর্ম সাধন করতো, মানুষদেরকে পুড়িয়ে মারতো, মুসলিমরা তখন বাগদাতে আধুনিক হাম্মাম খানা বানিয়েছিলো। মানবতার সবক দিয়েছিল মুর্খদের।
চোখের সানি অপারেশন আবিষ্কার করেছিলো মুসলিমরাই। সেচযন্ত্র আবিস্কার করে মরুভূমিতে চাষাবাদ করার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছিলো মুসলিমরা। মুসলিমদের তৈরী করা ইমারত শিল্প তথা সুবিশাল আর্কিটেকচারের ধারে কাছেও আজ পর্যন্ত আধুনিক বিজ্ঞান পৌঁছতে পারেনি। বুখারা, সমরকন্দ আর আরব আফ্রিকার মুসলিম স্থাপত্য শৈলীর রহস্যও তারা এখনও খুঁজে পায়নি। যখন ইউরোপ জঙ্গলে রাত কাটাতো, তখন মুসলিমরা আবিস্কার করেছিলো এসকল বিশাল বিশাল মসজিদ, মাদ্রাসা আর বিশ্ববিদ্যালয়।
মুসলিমরা ইসলামের প্রথম যুগ থেকেই ইসলাম সম্প্রচার, হজ্জ ও ব্যবসায়িক কারণে দুনিয়াব্যাপী ব্যাপকভাবে পরিভ্রমণ করেছে। তারা যেখানে গিয়েছে ও অধিবাসী হয়েছে সেখানকার সামাজিক, রাজনৈতিক, ঐতিহাসিক, ভৌগলিক, অর্থনৈতিক ও কৃষিজাত সহ অন্যান্য সকল বিষয়ের তথ্য সংগ্রহ করেছে। বিদেশী ভাষায় বৈজ্ঞানিক কাজগুলো সহজে বোঝার জন্য মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে অনুবাদের জন্য অসংখ্য প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল। আব্বাসীয় খিলাফতের সময় বিশেষ করে খলিফা আল-মনসুর ও খলিফা আল-মামুনের সময় বৈজ্ঞানিক কাজের ক্ষেত্রে ব্যাপক অনুবাদ ও প্রস্তুতির কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করা যায়। দশম শতাব্দীর শেষাংশে এসব বিষয়ে গুরুত্বপুর্ণ কাজ সম্পন্ন হয়েছিল।

মুসলিম বিজ্ঞানীরা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে অন্যদের বৈজ্ঞানিক সমাধানগুলো গ্রহণ করেন এবং নতুন ভাবে পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নতুন বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব আবিষ্কার করেন। মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে যেমন দামাস্কাস, বাগদাদ ও নিশাপুরে জ্যোতির্বিজ্ঞানের জন্য পর্যবেক্ষণকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। অঙ্গ-ব্যবচ্ছেদ বিদ্যার বাস্তব জ্ঞানের জন্য মৃতদেহের সরবরাহের ব্যবস্থা রাখা হতো। খলিফা মুহতাসিম এ কারণে চিকিৎসকদের বানর সরবরাহ করতেন।

হাসপাতালগুলোতে ছাত্রদের বাস্তব শিক্ষার জন্য শল্যচিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা হতো। একাদশ ও দ্বাদশ শতকের মধ্যে মুসলিমদের মধ্যে শিক্ষার এক উঁচুমান স্থাপিত হয়েছিল। সে যুগের বৈজ্ঞানিক চেতনা শিহাব আল দ্বীন আল কিরাফির দৃষ্টি সংক্রান্ত কাজের মাধ্যমে প্রকাশিত হয় যিনি একাধারে ছিলেন কায়রোর একজন ইসলামী আইন ও বিচার বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং তিনি দৃষ্টি সংক্রান্ত পঞ্চাশটির মত সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছেন। ইবনে খুরদাদবে মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের আংশ ও দ্রাঘিমাংশ নির্ণয় করেন। আল বিরুনি বিভিন্ন বস্তুর সুনির্দিষ্ট ভর নিরূপণ করেন।

ইসলামী শাসন ব্যবস্থার সময় বিজ্ঞানীরা শুধু বৈজ্ঞানিক তত্ত্বেরই আবিষ্কার করেননি বরং বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলোকে প্রযুক্তিতে রূপান্তর করেছেন। তারা গ্রহ-নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং নৌ চলাচলের জন্য তারকা মানচিত্র তৈরী করেছেন। ইবনে ইউনুস সময় পরিমাপের জন্য পেন্ডুলাম তৈরী করেন, ইবনে সিনা বাতাসের তাপমাত্রা মাপার জন্য বায়ুমাপক যন্ত্র আবিষ্কার করেন। কাগজ, কম্পাস, বন্দুক, গান পাউডার, অজৈব অম্ল ও ক্ষরীয় পদার্থের আবিস্কার হচ্ছে মুসলিম বিজ্ঞানীদের কিছু গুরুত্বপুর্ণ বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত আবিষ্কার যেগুলো মানব সভ্যতায় অসামান্য অবদান রেখেছিল।

মুসলিম বিজ্ঞানীরা এ্যালজেবরা আবিষ্কার করেন যেটা গণিতের একটি স্থায়ী শাখায় পরিণত হয়। এ্যালজেবরা শব্দটি উৎসারিত হয়েছে আরবি শব্দ জাবর থেকে। মুসলিম বিজ্ঞানিরা সমতল এবং গোলাকার ভূমির জন্য ত্রিকোণমিতি আবিষ্কার করেন এবং তা জ্যোতির্বিজ্ঞানে প্রয়োগ করা হয়। তারা জ্যোতিষশাস্ত্র থেকে জ্যোতির্বিজ্ঞানকে আলাদা করেন কারণ ইসলামে মানুষের ভাগ্যের উপর তারকাদের প্রভাব জাতীয় বিশ্বাসকে নিষিদ্ধ বলে গণ্য করা হয়। ফলে জ্যোতিষশাস্ত্রের অন্ধ-বিশ্বাস থেকে জ্যোতির্বিজ্ঞানকে নিরেট বৈজ্ঞানিক গবেষণার বিষয়ে উন্নীত করা হয়।

কোন জাতি বৈজ্ঞানিক বা অন্য কোন ক্ষেত্রে উন্নতি করতে পারেনা যতক্ষণ না সে কোন মতাদর্শকে আঁকড়ে ধরে, মুসলিমরাও এ নিয়মের বাইরে নয়। পশ্চিমা বিশ্ব পুঁজিবাদকে তাদের আদর্শ হিসাবে ধারণ করেছে এবং তার ফলে জীবনের নানা ক্ষেত্রে তারা উন্নতি লাভ করেছে। প্রাচ্যে সমাজতন্ত্র জোর করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং তারাও বৈষয়িক কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে স্বল্পসময়ে উন্নতি লাভ করেছিল। মুসলিমরাও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আবারও চালকের আসনে ফিরে আসতে পারে যদি তারা ইসলামকে জীবনাদর্শ তথা জীবনের সকল ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেয়।

সহস্র বছরের এ গৌরবোজ্জল ইতিহাসের পরেও মুসলিম বিশ্ব আজ চিহ্নিত হয়েছে ব্যর্থতা ও অনৈক্যের প্রতীক হিসেবে এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে নেমে এসেছে স্থবিরতা। মুসলিমদের প্রচুর ধন-সম্পদ থাকার পরও তারা শিল্পায়নে পিছিয়ে আছে। এ দু:খজনক পরিণতির কারণ ইসলামের অনুসরণ নয় বরং এটা হচ্ছে ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ না করার প্রত্যক্ষ ফলাফল, ইসলাম বোঝার ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে আমাদের শৈথিল্য।

ইসলামের প্রথম যুগে বিজ্ঞান উন্নতি লাভ করেছিল এবং একটি সত্যিকার ইসলামী রাষ্ট্রে বিজ্ঞান আবারও উন্নতি লাভ করবে। ইউরোপের খৃষ্টবাদ ও বিজ্ঞানের মধ্যকার তিক্ত অভিজ্ঞতা মুসলিমদের জন্য প্রযোজ্য নয়। তাই ইসলামকে সঠিক ভাবে বোঝার জন্য এবং সামগ্রিকভাবে আমাদের সমাজে প্রতিষ্ঠা করার জন্য এখনই উপযুক্ত সময়। তাহলে আমরাও প্রথম যুগের মুসলিমদের মত সত্যিকার ইসলামের অনুসারী হতে পারবো যারা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসহ জীবনের সকল ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি লাভ করেছিল।

চিকিতসা শাস্ত্রের জনক আজো ইবনে সীনা। আল বিরুনীর নাম আজো অমুসলিমরা নতশীরে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করে। অংক শাস্ত্রে শূন্য ০ আবিস্কার মুসলমানরা না করলে আজো আমাদেরকে রোমান সংখ্যার মতো বিশাল অক্ষরের পর অক্ষর দিয়ে হিসাব করতে হতো। (আহসান পাবলিকেশন্স প্রকাশিত, বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান দ্রষ্টব্য)
এভাবে মুসলিম বিজ্ঞানীদের নামের তালিকা আর আবিস্কার নিয়ে আলোচনা করলে বিশাল অধ্যায় হয়ে যাবে।

এবার আসা যাক বর্তমান প্রেক্ষাপটে:
যদিও ইউরোপ আমেরিকার বর্তমান প্রতিটি আবিস্কাররের পেছনে মুসলিমদের আবিস্কৃত সূত্রের অসীম অবদান এবং ইউরোপ আমেরিকার গবেষণাগারে অসংখ্য মুসলমানদের সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকা সত্ত্বেও কুরআন-সুন্নাহর ভিত্তিতে পরিচালিত ইসলামিক রাষ্ট্রব্যবস্থা না থাকার ফলে দু:খজনক বাস্তবতা হলো আজ বিশ্ব রাজনীতির সম্মাজনক আসনে আর মুসলমানরা নেই। যার কারণে আধুনিক বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় তারা সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারছে না।

মানুষের জ্ঞান-বিজ্ঞান গবেষণার দ্বারা ক্রমবর্ধমান। দিন যত যাচ্ছে কুরআন ও বিশ্ব প্রকৃতির উপর গবেষণা করে বিজ্ঞান তত এগিয়ে যাচ্ছে। আর আজকের উইরোপ আমেরিকার গবেষণাগারে যারা গবেষণা করছেন তাদের মধ্যেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলিম আছে। আমার জানা মতে নাসাতেই কয়েকজন বাংলাদেশী পাক্কা মুসলিম আছেন। ইউটিউবের অন্যতম প্রতিষ্ঠা জাওয়াদ করিমও বাংলাদেশী মুসলমান। সুতরাং আজকের আমেরিকা-ইউরোপের আবিস্কারের পেছনেও মুসলমানদের মেধা ও অবদান অনস্বীকার্য। এমনকি পাকিস্তান-ইরান ইসলামিক রাষ্ট্র না হলেও মুসলমানরা সেখানে বসে নেই। তারা তাদের সাধ্য মতো বিভিন্ন আবিস্কার করে যাচ্ছে। আমাদের এই বাংলাদেশেও বিজ্ঞানীদের অভাব নেই। ইউরোপ-আমেরিকার ইহুদী-খৃষ্টানরা যা করতে পারে নি সেই পানি দিয়ে গাড়ি চালানো, বাতাস দিয়ে গাড়ি চালানো, পাথরকুচি পাতা থেকে বিদুৎ তৈরী করার মতো একের পর এক অত্যাশ্চর্যজনক আবিস্কার কিন্তু এদেশের মুসলিমরাই একের পর এক করে যাচ্ছেন। কিন্তু দু:খজনক বাস্তবতা হলো রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তারা অকালে ঝড়ে যাচ্ছে। কদিন পর আর আমরা তাদের কোন খবর পাচ্ছি না।

বিশ্বরাজনীতির বর্তমান নেতৃত্বে মুসলমানরা সামনের সারিতে না থাকার কারণে বর্তমান ইউরোপ-আমেরিকার যে কোন আবিস্কার মানবতার কল্যাণের চাইতে অকল্যাণেই বেশি ব্যায় হচ্ছে। সকল প্রযুক্তি দিয়ে তারা এখন মানবতার ক্ষতি করছে। পরমাণু অস্ত্র ও নানাবিধ রাসায়নিক অস্ত্র বানিয়ে তার দ্বারা ইরাক-আফগানিস্তানের অসহায় মানুষদেরকে হত্যা করা হচ্ছে। রকেট আর স্যাটেলাইট দ্বারা বিশ্ব মানবতার উপকারের চেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে কখন কোন দেশে ডাকাতি করা যাবে, বোমা মারা যাবে সেই জন্য।
ইন্টারনেট প্রযুক্তি আবিস্কার হয়েছে কিন্তু তাতে তথ্য-প্রযুক্তি ও গবেষণার চেয়েও লক্ষ গুন বেশি পর্ণগ্রাফী ঢুকে পড়েছে। এগুলোকে তারা নিয়ন্ত্রণ তো করছেই না, বরং এর মাধ্যমে তারা ব্যবসা করছে। কিন্তু বিশ্ব রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ মুসলমানদের হাতে থাকেলে এটা হতো না, যেমনটি অতীতে হয় নি।