আমরা মাথার উপর যে বিশাল একটা সূর্যকে দেখি সেটা মোটেও আসল সূর্য না। এটা হচ্ছে নকল সূর্য। এই পৃথিবীতে জন্মের পর থেকে কেউকোনোদিন কখনো আসল সূর্যকে দেখতে পায়নি, আমি হলপ করে বলতে পারি। তোমরা যারা কিংবা আমরা যারা সূর্য দেখি সেটা পুরোটাই একটা নকল এবং অতীতের সূর্য। কারনটা কি জানো? কারনটা হচ্ছে আলোর গতি।
সূর্য থেকে পৃথিবীতে আসতে আলোকে প্রায় ৮ মিনিট ১৯ সেকেন্ডের মত সময় লাগে। চিন্তা করে দেখো! যখন সূর্য থেকে তোমার দিকে আলো আসবে তখন সেই আলোটাই ৮ মিনিট ১৯ সেকেন্ড পর তোমার চোখে এসে পড়বে। যদি কখনো সূর্য ধ্বংসও হয়ে যায় তবে আমরা সেটা বুঝবো ৮ মিনিট ১৯ সেকেন্ড পরে। কিন্তু এই ৮ মিনিট ১৯ সেকেন্ডে পৃথিবী কি আগের জায়গায় বসে থাকবে? কিংবা সেই আট মিনিট বিশ সেকেন্ড পর কি সূর্য আকাশে একই জায়গায় থাকবে? মনে তো হয় না! তাহলে কেনোই বা তুমি সূর্যকে আসল ভাবছো!
একটা কথা বলি যেট হচ্ছে পৃথিবী নিজ অক্ষের উপর ঘুরতে ২৪ ঘন্টার কাছাকাছি সময় নেয়। তাই নাহ? আর এই ২৪টা ঘন্টায় সে ৩৬০ ডিগ্রি পর্যন্ত ঘুরে। এটাই তো সত্য! একটু খেয়াল করো ,এবার একটু ঐকিক নিয়ম করি-
24 ঘন্টা = 24 * 60 * 60 সেকেন্ড = 86400 সেকেন্ড
8 মিনিট 19 সেকেন্ড = 499 সেকেন্ড
আবার 24 ঘন্টায় পৃথিবী ঘুরে 360 ডিগ্রি
so..
86400 সেকেন্ডে পৃথিবী ঘুরে 360 ডিগ্রি
সুতরাং 1 সেকেন্ডে “” “” (360 / 86400) ডিগ্রি
এবং 499 সেকেন্ডে “” “” (360 * 499) / 86400 ডিগ্রি = 2.08 ডিগ্রি
দারুন নাহ হিসেবটা! এর মানে হচ্ছে ৮ মিনিট ১৯ সেকেন্ড পরে আমরা নিজেদের অবস্থান হতে ২.০৮ ডিগ্রি দূরে অবস্থান করবো, কারন পৃথিবী ঘুরছে। পৃথিবী তো সবসময় পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকেই ঘুরে তাই নাহ। ধরো তুমি দুপুর ঠিক বারোটায় তোমার বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে আছো। এখন সূর্য ঠিক তোমার মাথার উপর আলো দিচ্ছে (আসলে এটা নকল সূর্য)। এর ঠিক ৮ মিনিট ১৯ সেকেন্ড পর ১২টা ৮ মিনিট ১৯ সেকেন্ডে তুমি সূর্যকে আকাশে যেখানে দেখবা ঠিক ১২টার সময় আসল সূর্যটা সেখানেই ছিলো। আর এই ১২ টা থেকে ১২টা ৮ ইনিট ১৯ সেকেন্ড পর্যন্ত পৃথিবী পশ্চিম হতে পূর্ব দিকে ঘুরে গেছে প্রায় ২.০৮ ডিগ্রি কোন। এই বিদ্যা নিয়ে কিভাবে আসল সূর্যের অবস্থান বের করা যাবে বলতো!
শুরুতেই একটা বাঁশ (বাঁশ না পেলে বড় লাঠি) হাতে নাও। তারপর সেই বাঁশের একটা প্রান্তের সাথে আরেকটা প্রান্ত তারকাটা, ঝাড়ুর তার, দড়ি যা মন চায় তাই দিয়ে শক্ত করে লাগাও। এবার চাদা নিয়ে মাপমত হিসাব করো যেনো দুটো বাঁশে কিংবা লাঠি পরস্পর ২.০৮ ডিগ্রি কোণে থাকতে পারে। ০.৮ ডিগ্রি হিসাব করে দেয়া খুবই কঠিন তাই তোমরা ২ ডিগ্রি থেকে অল্প একটু বেশি কোণ বাড়িয়ে লাঠি দুটোকে জোড়া লাগিয়ে ফেলো। এবার ঠিক সূর্যের দিকে একটা লাঠির খোলা প্রান্ত রাখো। এটা যেনো সূর্যকে নির্দেশ করতে পারে। আরেকটা লাঠির খোলা প্রান্ত পশ্চিম দিকে রাখো। এবার পশ্চিম দিকে থাকা লাঠিটা আকাশের যেদিকে নির্দেশ করবে সেটাই হচ্ছে ওই মূহুর্তে সূর্যের আসল অবস্থান। কিন্তু সেখানে সূর্যকে দেখা যাবে না। কারন সেখান থেকে আলো আসতে আসতে দীর্ঘ ৮ মিনিট ১৯ সেকেন্ড লেগে যাবে। যদিও দুটো লাঠির মাথা খুবই কাছাকাছি থাকবে তবুও তাদের মাঝে একটু হলেও তো গ্যাপ থাকবে।

এই নিয়মে তোমরা হিসাব করে এক ঘন্টা পর সূর্য কোথায় থাকবে, ৪ ঘন্টা পর সূর্য কোথায় থাকবে, আবার ১০ ঘন্টা পর সূর্য কোথায় থাকবে এসব সহজেই মেপে নিতে পারো। যেমন ১০ ঘন্টায় পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে যায়
১০* ১৫= ১৫০ ডিগ্রি [৪ মিনিটে যায় = ১ ডিগ্রি, তাই ১ ঘন্টায় যায় = ১৫ ডিগ্রি]
তখন একটা লাঠি থেকে আরেকটা লাঠির মধ্যে ১৫০ ডিগ্রি কোণ করে রাখো। তারপর একটা লাঠির প্রান্ত সূর্যের দিকে দিয়ে আরেকটা প্রান্ত পশ্চিম দিকে দাও। এই প্রান্তটা আকাশে যেদিকে নির্দেশ করবে সূর্য ১০ ঘন্টা পর ঠিক সেদিকেই থাকবে।
মন্তব্যঃ
এভাবে দেখলে আমরা একটু পরে হলেও আসল সূর্যকেই দেখছি ৷
কিন্তু সত্যি সত্যিই আমরা নকল সূর্য দেখছি !
সূর্য থেকে নির্গত রশ্মি পৃথিবী অবধি পৌঁছতে ভিন্ন ভিন্ন ঘনত্বের বায়ুমন্ডলীয় স্তর ভেদ করতে গিয়ে একটু একটু করে কয়েকবার প্রতিসরিত হয় ৷ এই প্রতিসরিত সূর্যরশ্মির সাহায্যেই আমরা সূর্যকে দেখি ৷ আর সেই কারনেই বলা হয়— আমরা প্রকৃত সূর্যের বদলে তার প্রতিসরিত অবস্থানে তার প্রতিবিম্ব দেখি !
কিন্তু সত্যি সত্যিই আমরা নকল সূর্য দেখছি !
সূর্য থেকে নির্গত রশ্মি পৃথিবী অবধি পৌঁছতে ভিন্ন ভিন্ন ঘনত্বের বায়ুমন্ডলীয় স্তর ভেদ করতে গিয়ে একটু একটু করে কয়েকবার প্রতিসরিত হয় ৷ এই প্রতিসরিত সূর্যরশ্মির সাহায্যেই আমরা সূর্যকে দেখি ৷ আর সেই কারনেই বলা হয়— আমরা প্রকৃত সূর্যের বদলে তার প্রতিসরিত অবস্থানে তার প্রতিবিম্ব দেখি !