শুরুতে উইকিপিডিয়া থেকে প্রাপ্ত তথ্যসমূহ কোট করছি।
জিন জাতি
জিন জাতি আল্ কোরআন বর্ণিত একটি জীব বা সৃষ্টি। প্রাক ইসলামী যুগেও জিন জাতি সংক্রান্ত বিশ্বাস আরব এবং কাছাঁকাছি এলাকায় বিদ্যমান ছিল। আরবি জিন শব্দটির আক্ষরিক শব্দার্থ যে কোন কিছু যা গুপ্ত, অদৃশ্য, অন্তরালে বসবাসকারী বা অনেক দূরবর্তী।
ইসলাম ধর্মে জিন জাতি সংক্রান্ত বিশ্বাস
কুরআন অনুসারে জিন জাতি মানুষের ন্যায় আল্লাহ্‌ তা’য়ালার এক সৃষ্ট একটি জাতি যারা পৃথিবীতে মানব আগমনের পূর্ব থেকেই তারা ছিল এবং এখনো তাদের অস্তিত্ব রয়েছে। তবে মানুষের চর্মচক্ষে তারা দৃষ্টিগ্রাহ্য নয়। তবে জিনরা মানুষকে দেখতে পায়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] তারা বিশেষ কিছু শক্তির অধিকারী। তাদের মধ্যেও মুসলিম এবং কাফির ভেদ রয়েছে। তারা মসজিদে নামাজ পড়তে আসে। তাদেরও সমাজ রয়েছে। তারা আয়ূ মানুষের চেয়ে অনেক বেশি।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] উদাহরনস্বরূপ, তারা ৩০০ বছর বয়সে প্রাপ্তবয়স্ক হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ঈমাম ইবনে তাইমিয়ার মতে জিন জাতি তাদের অবয়ব পরিবর্তন করতে পারে।
ইসলামের মতে জিন জাতি এক বিশেষ সৃষ্টি। কুরআনের ৭২তম সুরা আল জ্বিন এ শুধু জিনদের নিয়ে কথা বলা হয়েছে। এছাড়া সূরা আন নাস এর শেষ অংশে জিন জাতির উল্লেখ আছে।কুরআনে আরো বলা আছে হযরত মুহাম্মদ (সা:) কে জিন এবং মানবজাতির নবী হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে। হযরত সুলায়মান (আ:) এর সেনাদলে জিনদের অংশগ্রহণ ছিল বলে কুরআনে উল্লেখ আছে। ইসলামে আরো বলা আছে “ইবলিশ” তথা শয়তান প্রকৃতপক্ষে জিন জাতির একজন ছিল। ইসলামের মতে, শয়তান হচ্ছে দুষ্ট জিনদের নেতা। ইবলিশ বা শয়তান ছিল প্রথম জিন যে আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ করেছিল। কুরআনে উল্লেখ আছে যে, ইবলিশ এক সময় আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা ছিল । কিন্তু আল্লাহ যখন হযরত আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করলেন, তখন হিংসা ও অহংকারের বশবর্তী হয়ে ইবলিশ আল্লাহর হুকুম অমান্য করে। এ কারণে ইবলিশ কে বেহেশত থেকে বিতাড়িত করা হয় এবং এরপর থেকে তার নামকরণ হয় শয়তান। ইসলাম পূর্ব আরব উপকথা গুলোতে জ্বিন সদৃশ সত্ত্বার উল্লেখ আছে। প্রাচীন সেমাইট জাতির জনগণ জিন নামক সত্ত্বায় বিশ্বাস করতো। তাদের মতানুসারে নানাপ্রকারের জিন পরিলক্ষিত হয়। যেমন, ঘুল (দুষ্ট প্রকৃতির জিন যারা মূলত কবরস্থানের সাথে সম্পর্কিত এবং এরা যেকোন আকৃতি ধারণ করতে পারে), সিলা (যারা আকৃতি পরিবর্তন করতে পারতো) এবং ইফরিত (এরা খারাপ আত্মা)। এছাড়া মারিদ নামক এক প্রকার জিন আছে যারা জিন দের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী। প্রাচীন আরবদের মতে জিন রা আগুনের তৈরি।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
উল্লেখ্য যে, আরব্য রজনীর কাহিনীর মতো সবসময় জিন অসাধ্য সাধন করতে পারে না। কেননা ঝড়-বাদলের দিনে জিনরা চলতে পারে না। কারণ তারা আগুনের তৈরি বিধায় বৃষ্টির সময় আয়োনাজাইশেন ও বজ্রপাতের তীব্র আলোক ছটায় তাদের ক্ষতি হয়ে থাকে এবং কোন ঘরে যদি নির্দিষ্ট কিছু দোয়া-কালাম ও কাঁচা লেবু থাকে, তাহলে ঐ ঘরে জিন প্রবেশ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। আর একটি কথা মানুষ মাটি দিয়ে সৃষ্টি হলেও, শেষ পর্যন্ত এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। কারণ মানুষ মূলত মাটি, পানি, বায়ু ও অগ্নির সংমিশ্রণ। আর তাই জিন আগুনের শিখা দিয়ে পয়দা হলেও তাদের দেহে জলীয় পদার্থের সমাবেশ লক্ষণীয়। এর স্বপক্ষে যুক্তি হলো: রসুল (স.) একদা উল্লেখ করেছিলেন যে, শয়তান বলে একটি জিন একদা নামাজের সময় তাঁর সাথে মোকাবিলা করতে এলে তিনি ঐ জিনকে গলা টিপে ধরলে, সেইক্ষণে জ্বিনের থুথুতে শীতলতা অনুভব করেছিলেন।[সুরা সাদ ৩৮:৩৫] এতে প্রতীয়মান হয় যে, জিন যদি পুরোপুরি দাহ্য হতো, তাহলে ঠাণ্ডা থুথুর থাকার কথা নয়। এদিকে জিন তিন প্রকারের আওতায় বিদ্যমান, প্রথমত. জমিনের সাপ, বিচ্ছু, পোকা-মাকড়, ইত্যাদি; দ্বিতীয়ত. শূন্যে অবস্থান করে এবং শেষত সেই প্রকারের জিন, যাদের রয়েছে পরকালে হিসাব। পূর্বেই বলেছি, এরা সূক্ষ্ম, তাই স্থূল মানুষ বা পশু-পাখি জিনদের দেখতে পারে না। তবে কুকুর ও উট এদের হুবহু দেখতে পারে। এ প্রেক্ষাপটে উল্লেখ্য যে, রাতে কোন অপরিচিত বস্তু বা জীব চোখে না দেখা গেলেও কুকুর কি যেন দেখে ছুটাছুটি ও ঘেউ ঘেউ করলে তাতে জ্বিনের আবির্ভাব হয়েছে বলে বুঝতে হবে। জিন বহুরূপী। এরা মানুষ, পশু-পাখি, ইত্যাদি যে কোন সুরত ধরতে পারে। সেই ক্ষণে উক্ত জীবের বৈশিষ্ট্যের আদলে তার ঘনত্ব কম-বেশি হয়ে থাকে এবং মানুষের দৃষ্টির মধ্যে আসে।
সৃষ্টি
কুরআন এবং হাদীসের মতে জিনদের তৈরি করা হয়েছে ধোঁয়াবিহীন আগুন (আরবি শব্দ- ‘নার’) হতে। ‘নার’ শব্দটির কয়েকটি অর্থ আছে। ইবনে আব্বাসের (রাঃ) মতে, নার বলতে অগ্নিশিখার শেষ প্রান্ত বোঝানো হয়েছে। অন্য অনেকে মনে করেন, এর মানে হচ্ছে বিশুদ্ধ আগুন। আবার কেউ কেউ একে তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ বা অন্য কোনো তরঙ্গ-জাতীয় অস্তিত্ব বলে থাকেন। ইসলামী বিশ্বাস মতে, জিনদের সৃষ্টি করা হয়েছে মানবজাতির আগে। বলা হয়েছে, মানবজাতির আবির্ভাবের আগে জিনরাই এই পৃথিবীতে রাজত্ব করত; পরে অবাধ্যতার অপরাধে এদেরকে উৎখাত করা হয়েছে; তাই বর্তমানে এরা পৃথিবীতেই নির্জন স্থানসমূহে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস করছে।
জ্বীনদের নাম, পরিচয় ও তাদের কাজ
১. ‘ইবলিস’ – আদম (আঃ) কে দিয়ে যেই জ্বীন আল্লাহর আনুগত্য থেকে তাকে বিচ্যুত করেছিল – তার নাম হচ্ছে ইবলিস। আল্লাহ তাকে সরাসরি আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন, সে হচ্ছে প্রথম জ্বী যেমন আদম (আঃ) হচ্ছেন প্রথম মানুষ। আদম (আঃ) কে সিজদা করতে অস্বীকার করে সে আল্লাহর সামনে অহংকার প্রদর্শন করে – এই কারণে সে ‘কাফের’ হয়ে চির জাহান্নামী ও আল্লাহর অভিশপ্রাপ্ত। তার সন্তানদের কেউ ঈমানদার মুসলিম, আবার কেউবা কাফের, তাদের পিতা ইবলিসের অনুসারী। যারা কাফের জিন, তাদেরকে সাধারণভাবে ‘শয়তান’ বলা হয়। ২. ‘খানজাব’ – খানজাব হচ্ছে বিশেষ একপ্রকার জ্বীন, যারা মানুষ যখন সালাতে দাঁড়ায় তাদেরকে নানান রকম চিন্তা মাথায় ঢুকিয়ে নামাজ থেকে অমনোযোগী ও উদাসীন করে তুলে। মুয়াত্তা মালিক :স্বলাত অধ্যায় ৩, হাদিস ১৫২ ৩. ‘ওলহান’ – এরা হচ্ছে একপ্রকার শয়তান জ্বীন যারা মানুষকে ওযুর সময় ওয়াসওয়াসা দেয়। ওয়াসওয়াসাগ্রস্থ মানুষেরা ওযুতে ভুল করে বেশি। ৪. ‘ক্বারীন’ – ক্বারিন অর্থ হচ্ছে সংগী, প্রত্যেক মানুষের সাথেই শয়তান জ্বীন লেগে থাকে, সংগী হিসেবে। এরা সবসময় বান্দার অন্তরে খারাপ চিন্তা ঢুকিয়ে দিয়ে পাপ কাজ করতে উতসাহিত করে। ক্বুরানে আল্লাহ এদের কথা উল্লেখ করেছেন সুরাতুল ক্বাফ-(১৯-২৯) এ।
অন্যান্য ধর্মে জিন সঙ্ক্রান্ত বিশ্বাস
ইসলাম ধর্মের জিন জাতি সংক্রান্ত বিশ্বাসের সাথে মিল পাওয়া যায় খ্রিষ্টানদের ডেমন এবং ডেভিল সংক্রান্ত বিশ্বাসের সাথে।
উইকিপিডিয়াকে যেহেতু আন্তর্জালের বিভিন্ন তথ্যের আকর ধরা হয় সেহেতু জিনের ব্যাপারে উইকি থেকে উপস্থাপন করলাম। বলা বাহুল্য, যে বা যারা উইকির জিন অংশ সম্পাদনা করেছে তারা বেশ চতুরতার আশ্রয় নিয়ে কাজটি করেছে। যেমন- জিনের “আয়োনাইজড” হওয়ার ব্যাপারটা ইসলামের কোথাও নেই। আসলে ১৪০০ বছর আগে “আয়োনাইজড” কিংবা এ জাতীয় শব্দের ব্যবহার অসম্ভব। আয়নের ধারণাই মাত্র আঠারো শতকের। আগ্রহীরা দেখতে পারেন এখানে । ইসলামকে বিজ্ঞানময় করতে কোনো অত্যুৎসাহী মুমিন এ ব্যাপারটার অবতারণা করেছে নিঃসন্দেহে। এখানে প্রশ্ন জাগে বর্ষাকালে শয়তান তথা জিনেরা কি নিষ্ক্রিয় থাকে?
মজার ব্যাপার হলো উইকির তথ্যে বেশ খোলাখুলি দ্বিচারিতা রয়েছে। প্রিয় পাঠক! লক্ষ্য করুন নিচের লাইন দুটি-
ইসলামী বিশ্বাস মতে, জিনদের সৃষ্টি করা হয়েছে মানবজাতির আগে। বলা হয়েছে, মানবজাতির আবির্ভাবের আগে জিনরাই এই পৃথিবীতে রাজত্ব করত; পরে অবাধ্যতার অপরাধে এদেরকে উৎখাত করা হয়েছে; তাই বর্তমানে এরা পৃথিবীতেই নির্জন স্থানসমূহে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস করছে।
উৎখাত শব্দটির অর্থ সমূলে উৎপাটিত। এখন প্রশ্ন আসতে পারে সমস্ত জিন যদি উৎখাতই হয়ে থাকে তাহলে বর্তমান জিনেরা আসলো কোথা থেকে? এখানে অবশ্য একজন ইবলিশ থেকে বাদবাকী জিনের উৎপত্তি ঘটেছে এমনটা বলে ক্লোনিংকে “সব কিছু কোরাণে আছে” এর উদাহরণরূপে পেশ করে ইসলামের মহিমা বাড়াবার মস্ত বড় সুযোগ আছে!
যাহোক, মানুষের পূর্বে যে জিনদের দুনিয়াতে প্রেরণ করা হয়েছিলো সে সংক্রান্ত একটি ঘটনা পাওয়া যায় বিভিন্ন সিরাত গ্রন্থে। মানুষ সৃষ্টির আগে পৃথিবীতে আল্লাহ জিনদের প্রেরণ করেছিলেন। এ প্রেক্ষিতেই সূরা বাকারার ৩০ নম্বর আয়াত নাযিল হয়েছিলো।
وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي جَاعِلٌ فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةً قَالُوا أَتَجْعَلُ فِيهَا مَن يُفْسِدُ فِيهَا وَيَسْفِكُ الدِّمَاءَ وَنَحْنُ نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَ قَالَ إِنِّي أَعْلَمُ مَا لَا تَعْلَمُونَ ( 30 ) সূরা বাকারা – Ayaa 30
আর তোমার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদিগকে বললেনঃ আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি বানাতে যাচ্ছি, তখন ফেরেশতাগণ বলল, তুমি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে সৃষ্টি করবে যে দাঙ্গা-হাঙ্গামার সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত ঘটাবে? অথচ আমরা নিয়ত তোমার গুণকীর্তন করছি এবং তোমার পবিত্র সত্তাকে স্মরণ করছি। তিনি বললেন, নিঃসন্দেহে আমি জানি, যা তোমরা জান না।
এ ব্যাপারে তাফসির (ইবনে কাথির) কী বলছে তা নিচে স্ক্রিনশট আকারে সেঁটে দিলাম:
https://blog.mukto-mona.com/?p=47673
https://blog.mukto-mona.com/wp-admin/upload.php?item=47674
https://blog.mukto-mona.com/wp-admin/upload.php?item=47675
https://blog.mukto-mona.com/wp-admin/upload.php?item=47676
https://blog.mukto-mona.com/wp-admin/upload.php?item=47677
https://blog.mukto-mona.com/wp-admin/upload.php?item=47678
https://blog.mukto-mona.com/wp-admin/upload.php?item=47679
https://blog.mukto-mona.com/wp-admin/upload.php?item=47680
https://blog.mukto-mona.com/wp-admin/upload.php?item=47681
https://blog.mukto-mona.com/wp-admin/upload.php?item=47682
https://blog.mukto-mona.com/wp-admin/upload.php?item=47683
https://blog.mukto-mona.com/wp-admin/upload.php?item=47684
https://blog.mukto-mona.com/wp-admin/upload.php?item=47685
https://blog.mukto-mona.com/wp-admin/upload.php?item=47686
https://blog.mukto-mona.com/wp-admin/upload.php?item=47687
https://blog.mukto-mona.com/wp-admin/upload.php?item=47688
https://blog.mukto-mona.com/wp-admin/upload.php?item=47689
https://blog.mukto-mona.com/wp-admin/upload.php?item=47690
এটাচকৃত স্ক্রীনশটগুলোর মধ্যে ১০ নম্বরটি থেকে দেখা যায় যে, আদমের ২০০০ বছর পূর্বে জিন জাতি সৃষ্টির কথা উল্লেখ করা আছে। যদিও তাফসিরকারক পরবর্তীতে এ হাদিসটি “কোরানের পরীপন্থি” যুক্তিতে বাতিল করে দেন। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন আসতেই পারে ফেরেশতারা কীভাবে জানলো যে দুনিয়াতে মানুষ পাঠালে তারা ফেৎনা-ফাসাদ সৃষ্টি করবে? এ ব্যাপারে যে বাক্য অাছে (স্ক্রীনশট ৩ ও ৪ দ্রষ্টব্য) সেখানে বলা হচ্ছে-
ফেরেশতারা এটা কি করে জেনেছিলেন সেটা অন্য কথা। হয়তো মানব প্রকৃতির চাহিদা লক্ষ্য করেই তাঁরা এটা বলেছিলেন। কেননা, এটা বলে দেওয়া হয়েছিলো যে, তাদের মাটি দ্বারা সৃষ্টি করা হবে। কিংবা হয়তো ‘খলীফা’ শব্দের ভাবার্থ জেনেই তাঁরা এটা বুঝেছিলেন যে, মানুষ হবে ন্যায় অন্যায়ের ফয়সালাকারী, অনাচারকে প্রতিহতকারী। এবং অবৈধ ও পাপের কাজে বাধাদানকারী। অথবা তাঁরা জমিনের প্রথম সৃষ্টজীবকে দেখেছিলেন বলেই মানুষকেও তাদের মাপকাঠিতে ফেলেছিলেন।
আসলে সমগ্র তাফসির জুড়েই এই প্রবণতা দেখা গেছে যে, যেখানেই প্রশ্ন আসার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে সেখানেই লেখক তার নিজের মনঃপূত এক বা একাধিক জবাব লিখে রেখেছেন। সমস্যা হলো এভাবে জাস্টিফাই করতে গেলে তো পৃথিবীর তাবৎ গ্রন্থসমূহকে নির্ভুল দাবী করা যাবে! তাফসিরের এ প্রবণতাকে বলা যায় কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে স্থির সিদ্ধান্ত নিয়ে পরে সেটাকে বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে জায়েজ করা।
উপরের ব্লককোটকৃত অংশ থেকে “প্রথম সৃষ্টজীব” শব্দদ্বয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এ যুক্তি মানতে গেলে এর আগে যে কোরানের দোহায় দিয়ে আদমের ২০০০ বছর পূর্বে জিন জাতির পৃথিবীতে বিচরণের কথা নাকচ করে দেয়া হয়েছিলো সেটা ভেস্তে যায়। পুরো ব্যাপারটার সাথে হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতির সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়! হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতির মূল কথা হলো কোনো বস্তুর অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেলে সেটার ভরবেগের পরিমাণ জানা অনিশ্চিত, আবার ভরবেগ সম্পর্কে সুনিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেলে বস্তুটির অবস্থান সম্পর্কিত তথ্য অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে। এখানেও তাফসির প্রদত্ত এক যুক্তি মানতে গেলে অন্য যুক্তি ভিত্তিহীন হয়ে যাচ্ছে।
কোরানেই আবার আরেক জায়গায় দেখা যাচ্ছে উল্কাপাতের কারণ সম্পর্কে শয়তান তথা জিনেদের তাড়াবার কথা বলা হচ্ছে। আগুনের তৈরি জিনেদের আগুন দ্বারাই তাড়াবার প্রক্রিয়াটা অবশ্য এই অধমের মাথায় ঠিক ঢুকছে না! যাহোক! আসুন দেখি আল্লাহ ৩৭ নম্বর সূরা আস-সাফফাত ও ৬৭ নম্বর সূরা আল মূলক কী বলছে-
إِنَّا زَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِزِينَةٍ الْكَوَاكِبِ (
6 ) আস-সাফফাত – Ayaa 6
নিশ্চয় আমি নিকটবর্তী আকাশকে তারকারাজির দ্বারা সুশোভিত করেছি।
وَحِفْظًا مِّن كُلِّ شَيْطَانٍ مَّارِدٍ ( 7 ) আস-সাফফাত – Ayaa 7
এবং তাকে সংরক্ষিত করেছি প্রত্যেক অবাধ্য শয়তান থেকে।
لَّا يَسَّمَّعُونَ إِلَى الْمَلَإِ الْأَعْلَىٰ وَيُقْذَفُونَ مِن كُلِّ جَانِبٍ ( 8 ) আস-সাফফাত – Ayaa 8
ওরা উর্ধ্ব জগতের কোন কিছু শ্রবণ করতে পারে না এবং চার দিক থেকে তাদের প্রতি উল্কা নিক্ষেপ করা হয়।
دُحُورًا وَلَهُمْ عَذَابٌ وَاصِبٌ ( 9 ) আস-সাফফাত – Ayaa 9
ওদেরকে বিতাড়নের উদ্দেশে। ওদের জন্যে রয়েছে বিরামহীন শাস্তি।
إِلَّا مَنْ خَطِفَ الْخَطْفَةَ فَأَتْبَعَهُ شِهَابٌ ثَاقِبٌ ( 10 ) আস-সাফফাত – Ayaa 10
তবে কেউ ছোঁ মেরে কিছু শুনে ফেললে জ্বলন্ত উল্কাপিন্ড তার পশ্চাদ্ধাবন করে।
وَلَقَدْ زَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِمَصَابِيحَ وَجَعَلْنَاهَا رُجُومًا لِّلشَّيَاطِينِ وَأَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابَ السَّعِيرِ ( 5 ) আল-মূলক‌ – Ayaa 5
আমি সর্বনিম্ন আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুসজ্জত করেছি; সেগুলোকে শয়তানদের জন্যে ক্ষেপণাস্ত্রবৎ করেছি এবং প্রস্তুত করে রেখেছি তাদের জন্যে জলন্ত অগ্নির শাস্তি।
হাদীসেও উল্কাপাতের কারণ হিসেবে এমনটাই বলা হয়েছে। এখানে আয়াতগুলো পর্যালোচনা করে দেখলে এটাই প্রতীয়মান হয় যে শয়তান তথা মন্দ জিনকে তাড়াবার জন্য ফেরেশতা কর্তৃক গোটা নক্ষত্রই ছুঁড়ে মারা হয়!
এ ব্যাপারে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন মনে করে আমাদের সমাজের প্রেক্ষাপটে জিন সম্পর্কিত কয়েকটি কথা লিখে আজকের মতো কী-বোর্ড ছাড়ছি!
অন্যান্য অনেক কুসংস্কারের মতো জিন-ভূত জাতীয় কুসংস্কার সমাজে এখনো সদর্পে প্রচলিত। শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্স্ট ক্লাস পাওয়া মেধাবী ছাত্রটি যখন বলে ভূত বলে কিছু নেই কিন্তু জিন আছে তখন সাধারণ জনতার জিনবিষয়ক ধারণা বলাই বাহুল্য। এখনো বিভিন্ন মানসিক সমস্যাকে “জিনের আছর” বলে চালানো হয়। উইকিতেই যেমন দেখা গেলো জিনেদের নাম-পরিচয় অংশে প্রত্যেক মানুষের সাথে “সঙ্গী” হিসেবে জিন থাকার কথা বলা হয়েছে। এটাকে কুমন্ত্রণাদানকারী জিন বলা হয়েছে। আবার বলা হয়েছে উট, কুকুর এসব নাকি জিন দেখতে পেয়ে মাঝেমধ্যেই অকারণে চিৎকার-চেঁচামেচি করে। অথচ আধুনিক রিসার্চ বলছে শ্রাব্যতার সীমার কারণে অনেক প্রাণীই এমন সব শব্দ শুনতে পায় যা আমরা শুনি না। অাবার অনেক প্রাণীর দৃষ্টিশক্তি ও ঘ্রাণশক্তি মানুষের চেয়ে প্রবল। অর্থাৎ মানুষের চাইতে প্রখর ইন্দ্রিয়শক্তিসম্পন্ন প্রাণী এমন অনেক কিছুই অনুধাবন করতে পারে যা মানুষের অনুধাবনের বাইরে। ইন্দ্রিয়শক্তি প্রখর হওয়ায় তাদের অনেক অঙ্গ রাডারের মতো কাজ করে। ফলে তারা নিজেদের বিপদ অনেক আগেই টের পায় এবং অস্বাভাবিক আচরণ করে যা মানুষ বুঝতে পারে না। কুসংস্কারাচ্ছন্ন জনগোষ্ঠী এসবকে জিনের উপস্থিতি বলে প্রমাণ করতে চায়। গ্রামে নিজের একান্ত ব্যক্তিগত লোক দিয়ে টিনের চালে ঢিল ছুঁড়ে সেটাকে জিনের কাজ বলে লোক ঠকানোর বহু নজির আছে। রাত দুপুরে, ভর সন্ধ্যায় কিংবা ঠিক মধ্য দুপুরে বিশেষ বিশেষ এলাকায় যাওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এখনো বর্তমান।
আসলে এটা নিয়ে সমাজের একশ্রেণির অসাধু লোক নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে। জিন ছাড়ানোর নাম করে বসে বসে আয়-উপার্জনের একটা সহজ রাস্তা বের হওয়ায় সেসব অসাধু লোক চায়না সমাজ থেকে এসব কুসংস্কার দূর হোক। এদের জিন দূর করার নামে পাশবিক অত্যাচারে মানুষ মারা যাওয়া্র কথাও শোনা যায়। এসবের জেরেই দেখুন মসজিদের ইমাম কিশোরী ধর্ষণ করে তার দায় শয়তানের উপর চাপিয়ে কেমন নিষ্কৃতি চাচ্ছে।
পরিশেষে, জেনে রাখা উচিত বেশ কয়েকটি মানসিক সমস্যাকে অনেকে জিনের আছর বলে ভাঁওতা দেয়ার চেষ্টা করে। এসব ব্যাপারে সজাগ থাকা উচিত এবং নিজের আশপাশে এমনটা ঘটতে দেখলে মানসিক ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিতে আমরা যেনো ভুলে না যাই।

প্রসূনজিৎ
একটি কথাই শুধু বলতে ইচ্ছে করছে- ব্র্যাভো! ব্র্যাভো! আসলে বাংলাদেশে জন্ম হওয়ার সুবাদে ছোট বেলা থেকেই জ্বীনের ব্যাপারে এত গল্প শুনে এসেছি যে মুসলমান না হওয়া সত্ত্বেও একটা বয়স পর্যন্ত জ্বীন আছে বলেই বিশ্বাস করতাম। এ প্রসঙ্গে আমার কিছু ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষন উল্লেখ করবার লোভ সম্বরণ করতে পারছি না।
আমি ব্যক্তিগত জীবনে একজন চিকিৎসক হবার সুবাদে বাংলাদেশের বেসরকারী ও সরকারী বিভিন্ন হাসপাতালে স্বনামধন্য অনেক চিকিৎসকের সাথে কাজ করেছি। যাদের বেশীরভাগই স্ব স্ব জীবনে একেকজন দুর্ধর্ষ ছাত্র ছিলেন। এছাড়াও আমার বন্ধু, সহপাঠীসহ আরো অনেক ডাক্তারকেই খুব কাছ থেকে দেখেছি। ফলে তাদের মধ্যে প্রায় শতভাগই যে জ্বীনের অস্তিত্বে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী একথা বেশ জোর দিয়েই বলতে পারি। যদিও বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে বা ভালো ডাক্তার হিসেবে তাদের অধিকাংশই ঈর্ষনীয় সফলতার অধিকারী। নিজ বিষয়ে তারা কিন্তু খুব ভালোই দখল রাখেন বা বোঝেন।
তাই ঠিক কিভাবে যে সত্যিকারের বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ গড়ে তোলা যায়, সে ব্যাপারে ধাঁধাঁ আমার এখনো কাটেনি।