Wednesday, August 12, 2015

পৃথিবীর সবচাইতে সুখী মানুষ হওয়ার সূত্র---

পৃথিবীর সবচাইতে সুখী মানুষটির ব্লগ আপনি এখন পড়চ্ছেন। কি বিশ্বাস হচ্ছে না? বিশ্বাস না করলে আমার কিছু করার নাই। সুখ দুঃখ দুটিই আপেক্ষিক বিষয়, একই জিনিস আমি যেভাবে ফীল করব আপনি সেভাবে ফীল করবেন না। এটা সবার ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রযোজ্য।
তো, আমি কেন দাবী করচ্ছি আমি সুখি মানুষ?
প্রথম কথা হচ্ছে, চেটের খুশি। আমার মঞ্চাইছে তাই  না, আসলে তা’না। আমি সত্যিই সুখি মানুষ। তবে এমনি এমনি আমি সুখি হইনি, এমনি এমনি ভাল থাকা শুরু করিনি। এজন্য অনেক কিছু বুঝতে হয়েছে, নির্দিষ্ট কিছু কারণ রয়েছে। হয়তো পারিবারিক কারণে আমি অন্য সবার চেয়ে অনেক কিছু বেশি পেয়েছি, বেশি সুবিধা, বেশি ভালবাসা পেয়েছি তবে সবার জন্য ভাল থাকা বা সুখি মানুষ হওয়ার সূত্র কিন্তু প্রায় একই। (সম্ভবতো)
আমার আশেপাশে এমন অনেক মানুষ আছে আমার পরিচিত যারা সারাদিন দুঃখ দুঃখ করে, আর হতাশা দেখায়। তাদের যে কি নেই, তা হয়তো তারা নিজেও জানে না। নিজের অজান্তেই তারা সারাটা জীবন দুঃখের ভেতর দিয়ে কাটিয়ে যায়। টাকা পয়সা, বাড়ি গাড়ি সব হয়তো তাদের আছে কিন্তু এক বিন্দু সুখ তাদের স্পর্শ করে যায় না, একটি মুহূর্তেও জন্যও।
আমাকে অনেকেই জিজ্ঞাসা করেছেন, আমি এত খুশি কেন। কিভাবে সবসময় এত আনন্দে থাকি। কেউ কেউ জীদ করে বলেন, আমি নাটক করে বেড়াই। আমি কারো চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করতে পারব না, আমি সুখি মানুষ হওয়ার জন্য কোন বিশেষ তাবিজ বা সূত্র দিতে পারব না, যা ১০০ ভাগ কাজ করবে। তবে, আমি এমন কিছু কাজের কথা বলতে পারব, যেগুলো আমি করি এবং আমার ভাল লাগে করতে। যেগুলো করে আমি আত্নতৃপ্তি পাই। হয়তো, এগুলোই আমার সুখের কারণ।

শেয়ার করছিঃ-

ছরী বলি
ছরী বলায় আমি বেশ ভাল এক্সপার্ট। দোষ না করেও ছরী বলতে পারি। কেউ আমার কথা কষ্ট পাচ্ছে, বুঝতে পারলেই ছরী বলে ফেলতে পারি। আমার কাছে ভাল লাগে। বেশ হাল্কা লাগে সবসময়। তবে, কিছু বন্ধু আছে, যাদের আমি সবসময় জ্বালাই, তাদেরকে ছরী বলি না। তাদেরকে দুষ্টামির পর ছরী না বলা আমার অধিকার হিসাবেই মনে করি। তবে একেবারেই যে বলি না, তা না। মাঝে মাঝেই দোষ করে ফেলি এবং ছরী বলে দেই।
ধন্যবাদ দিই
কেউ কোন উপকার করলে বা আমাকে সাহায্য করলে ধন্যবাদ দিতে ভুলি না।  ধন্যবাদ দিতে আমার ভাল লাগে।  ধন্যবাদ টা সবার’ই প্রাপ্য বলে মনে করি। সে যত দূরের লোক হোক বা কাছের।
কথা ও কাজে মিল রাখার চেষ্টা করি
আপনি জীবনে যত যা’ই করেন না কেন, যত ভাল কাজই করে থাকেন না কেন, আপনার কথা কাজে মিল না থাকলে আমার ভাষায় আপনি একটা “ বাইঞ্চোদ "।
আমি ব্যাক্তিগতভাবে এই ধরণের মানুষদের খুব কম পছন্দ করি। মুখের উপরে না বলে দেবার অভ্যাস আমার আছে। এই অভ্যাস আপনিও করুন। বিনিময়ে তাৎক্ষনিক সে হয়ত আপনাকে কিঞ্চিৎ ঘৃণা করবে কিন্তু পরবর্তীতে সে ভালই বাসবে। আর নিজের দিক থেকে আত্নতৃপ্ত থাকতে পারবেন। গ্যারান্টী দিচ্ছি।
অযথা প্রতিশ্রুতি দেই না
ব্যাক্তিগতভাবে আমি প্রতিশ্রুতি দিই না বললেই চলে। অযথা স্বপ্ন কাওকে দেখাই না, যেটার ব্যাপারে আমার নিজের কাছে সন্দেহ আছে। নিজে শিওর থাকলেও অন্তত প্রতিশ্রুতি দিতে চাই না, বাই চান্স যদি আর না হয়ে উঠে! তবে প্রতিশ্রুতি যদি দিয়েই বসি, তবে জীবন দিয়ে হলেও সেটা পূরণ করব। ইন সা আল্লাহ। এই সংকল্প রাখি।
ভেতরে চেপে না রেখে প্রকাশ করে দিই
কারো প্রতি রাগ থাকলে তাৎক্ষনিক ঝেরে ফেলি। একেবারে ঝারতে না পারলেও বলে দিই যে, তার এই কথা বা এই কাজটি আমার ভাল লাগে নাই। আমার খারাপ লেগেছে। ইত্যাদি ইত্যাদি। এতে করে ভুল বুঝাবুঝি হয় না। খেয়াল রাখা উচিৎ, সামনা সামনির কথা এবং আড়ালের কথা যেন একই থাকে। ব্যাতিক্রম যেন না হয়।
বন্ধুদের সাথে প্রাণ খুলে মিশি
বন্ধুদের ব্যাপারে আমি একটু বেশি ই দূর্বল। জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত বন্ধুদের সাথে কাটাতে চাই। প্রতিটা মুহূর্তের সৃতি ধরে রাখতে চাই। আমি ঠিক যা, তা হিসাবেই মিশতে চাই। কোন লিমিট বা কন্ডিশনে বন্ধু বানাই না। বন্ধু আসলে বানিয়ে নিতে হয় + হতে হয়। বন্ধুত্ব কোন চুক্তি বা প্রতিদানের বিষয় নয়।
সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি
আপনি যে ধর্মেরই হোন না কেন। সৃষ্টিকর্তা (আমার ক্ষেত্রে আল্লাহ) আমাকে যা’ই দিক না কেন, শুকরিয়া আদায় করি। আল্লাহ অশেষ দয়াবান। আমি মনে করি, আমি যে পরিমাণ ফাউল সেই হিসাবে, আল্লাহ আমাকে অনেক ছাড় দেন। প্রতিটা মুহূর্তে, প্রতিটা ক্ষেত্রে।
চীরদিন বেঁচে থাকব না, এটা মাথায় রাখি
পৃথিবী চীরস্থায়ী আবাস না। এটা সাধারণত আমাদের মনেই থাকে না। কিন্তু এই বিষয় টা মাথায় রাখা উচিৎ। যে কোন মুহূর্তে মৃত্যু ঘটতে পারে। তখন আমার বলতে আর কিছুই থাকবে না। এটা মাথায় রাখলে নিজেকে অনেক হাল্কা মনে হয়। যদি আর্থিক অসম্পূর্ণতা থাকে আর যদি আপনার উদ্দেশ্য থাকে অনেক দিন বাঁচার ও অনেক ধনী হওয়া, সে ক্ষেত্রে আপনার জীবন অতীষ্ট হয়ে ওঠাই স্বাভাবিক।
ছোট ছোট আবদারে ছাড় না দিয়ে বড় যাগায় ছাড় দেয়ার চেষ্টা করি
আমি প্রচুর প্যাংছা করি। প্যাংছা হচ্ছে আজাইরা আবদার। যেগুলো না করলেও চলে। রিক্সায় নির্দিষ্ট সাইডে বসা, এটা করা, ওটা দাবী করা এসব আমার অভ্যাস। আমি জানি এই ছোট ছোট আবদার গুলো বন্ধুরা খুব সহজে পূরণ করতে পারবে। এতে খুশি লাগবে, আনন্দ লাগবে। এই ছোট্ট ছোট্ট বিষয়গুলার মাঝেই আসলে জীবনের সুখ। এমন কিছু দাবী করা ঠিক না, যা অন্যের উপর বোঝা হয়ে যায়।
অন্যের দুক্ষের কথা শুনি
আমার পাশের বন্ধুটির কথা আমি শুনি। তার দুখ শোনার মত যদি কেউ না থাকে, তখন আমি আছি। আসলে মানুষের বন্ধু দরকার পরে দুখের মুহূর্তেই। আনন্দের বন্ধুরা আসলে বন্ধু না। আর মানুষ নিজের ভুল নিজে ধরতে পারে না। কাছের মানুষকে আমার পরিবর্তনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করি, আমার কি জিনিস তার কাছে ভুল মনে হয়, কি আচরণ খারাপ লাগে, কি করলে ভাল হয়, সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি। তার সাথে আমার সম্পর্কের ব্যাপারে যৌক্তিক আলোচনা করি। এতে করে নিজের দোষ গুলো ধরা পরে এবং নিজের ভাল কিছু শুনে কনফিডেন্ট হওয়া যায়।
রাগ/ইগোর বিপরীতে চলার চেষ্টা করি
ইগোর বিপরীতে চলা সবচাইতে কঠিন। তবে আয়ত্ব করে নিতে পারলে বেশ ভাল। আমার মনে হয় আয়ত্ব করতে পেরেছি। আমাকে কেউ যখন বলে, “লাবিব, তোর খবর আছে বুঝিস”, আমি খুব বিনম্রভাবে বলার চেষ্টা করি যে, এমন যাতে সে না করে। উলটো বলে দেই, সে আমার ক্ষতি করলেও, আমি তার ক্ষতি করব না। আমি জানি, সেই মুহূর্তে এই কথাগুলো বলা কতটা কঠিন। তবে পুরোটাই অভ্যাস। রাগের মাথায় হুট করে কমিটমেন্ট টাইপের ক্ষতিকারক কিছু না বলাই ভাল।
পরিবারের সবার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখি
এটা আসলে সবার কপালে জোটে না। আমার কপালে জুটেছে। আমি আব্বু আম্মু ও বাসার সবাইকে বন্ধু হিসাবে পেয়েছি। ক্লাস ৯ থেকে আমি নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিই। আমাকে সেই অধিকার দেয়া হয়েছে। আমি যে কোন ব্যাপার নিয়ে আব্বু আম্মুর সাথে যৌক্তিক তর্ক করতে পারি। যৌক্তিক তর্ক আমার বাসায় বেয়াদবী হিসাবে গন্য হয়না। তবে আমার মনে হয়, কেউ ইচ্ছা করলে বাবা/মা কে বন্ধু বানিয়ে নিতেই পারে। এটা একমাত্র সন্তানই জানে, কিভাবে তার বাবা/মায়ের বন্ধু হতে হয়।
পরিশেষঃ 
আসলে সুখি মানুষ হওয়ার সূত্র বলতে যেয়ে, জীবনের ছোট্ট ছোট্ট সুখ গুলো শেয়ার করলাম। সুখি মানুষ হওয়ার স্পেসিফিক কোন সূত্র নেই। থাকলেও আমার জানা নেই। তবে, সম্ভবত, বলে দেয়া কারণগুলোর কারণেই আমার কোন সময় কোন বিষয়ে টেনশন লাগে না। কখনো ইনসিকিউর মনে হয় না। কখনো নিজেকে দূর্বল লাগে না, হতাশ মনে হয় না। কাউকে পর বা শত্রু মনে হয় না। এর কিছু খারাপ দিক ও আছে, সেটা অন্য কোনদিন বলব। আল্লাহ আমাকে সুখি করেছেন, সেজন্য আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া। সমস্ত প্রশংসা শুধুমাত্র এক আল্লাহর জন্য।