Thursday, May 12, 2016

যৌক্তিকতা কি ?



বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম আলহামদুলিল্লাহ! সাতচল্লিশের দ্বিজাতি তত্ত্বকে অনেকেই মনে হয় দায়মুক্তি দিয়ে ফেলেছেনঅবশ্য এমনিতেই এতো এতো ঝামেলা, তার মধ্যে পুরনো কাসুন্দি টেনে এনে পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে করার কোনো মানেই হয়নাতাইতো 'জয় বাংলা বলে আগে বাড়ো' অবশ্য অচিরেই এটার নয়া ভার্সন 'নারায়ে তাক্ববির জপতে জপতে আগে বাড়ো' চলে আসার ব্যাপারে আমরা মাশাল্লাহ আশাবাদী
বর্তমান ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামের পিতা সাহিত্যিক আবুল মনসুর আহমেদ ১৯৩৮ সালে মাসিক মোহাম্মদী পত্রিকায়পূর্ব পাকিস্তানের জবানপ্রবন্ধে উল্লেখ করেন,
"বাঙলার মুসলমানদের মাতৃভাষা বাঙলা হবে কি উর্দু হবে এ তর্ক খুব জোরেশোরেই একবার উঠেছিলোমুসলিম বাঙলার শক্তিশালী নেতাদের বেশিরভাগ উর্দুর দিকে নজর দিয়েছিলেন নবাব আবদুর রহমান মরহুম, স্যার আবদুর রহিম, মোঃ ফজলুল হক, ডাঃ আবদুল্লাহ, সোহরাওয়ার্দী, মৌলভী আবদুল কাশেম মরহুম প্রমুখ প্রভাবশালী নেতা উর্দুকে বাঙালী মুসলমানের মাতৃভাষা করবার প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেনকিন্তু মুসলিম বাঙলার সৌভাগ্য এই যে, উর্দুর প্রতি যাদের বেশি সমর্থন থাকার কথা, সেই আলেম সমাজই এই অপচেষ্টায় বাধা দিয়েছিলেনবাঙলার আলেম সমাজের মাথার মণি মওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ, মওলানা আবদুল্লাহেল বাকি, মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী উর্দু-বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব করেছিলেনএঁদের প্রয়াসে শক্তি যুগিয়েছিলেন মরহুম নবাব আলী চৌধুরী সাহেবসেই লড়াইয়ে এঁরাই জয়লাভ করেছিলেনবাঙলার উপর উর্দু চাপাবার সে চেষ্টা তখনকার মত ব্যর্থ হয়কিন্তু নির্মূল হয় নিবাঙলার বিভিন্ন শহরে, বিশেষতঃ কোলকাতায় মাঝে মাঝে উর্দুওয়ালারা নিজেদের আন্দোলনকে জিইয়ে রেখেছিলেনসম্প্রতি পাকিস্তান আন্দোলনের ফলে মুসলমানদের স্বতন্ত্র জাতীয়তাবাদ তাদের আদর্শের বুনিয়াদে পরিণত হওয়ায় উর্দুওয়ালারা আবার গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছেনসম্প্রতি মর্নিং নিউজস্টার অব ইন্ডিয়াএই ব্যাপারে কলম ধরেছেনজনকতক প্রবন্ধ লেখকও তাতে জুটেছেনএরা বলেছেনঃ পূর্ব পাকিস্তানের ভাষা স্বভাবতই উর্দু হবে
“ "চট্টগ্রামের জে এম সেন স্কুলের আরবী-ফারসীর শিক্ষক মাওলানা জুলফিকার আলী ভারতবর্ষ ভাগের পূর্ব থেকেই আরবী হরফে বাংলা লেখার উদ্যোগ গ্রহন করেনএই প্রয়াসের অংশ হিসেবে তিনি কয়েকটি বই লেখা , 'হরূফুল কোরআন' নামে সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ ও 'হরূফুল কোরআন' সমিতি গঠন করেনতারই উদ্যোগে ১৯৩৯ সালের ২৯-৩১ ডিসেম্বর কলকাতায় অনুষ্ঠিত 'All India Muslim Educational Conference' -এ আরবী হরফে বাংলা লেখার প্রস্তাব গৃহীত হয়।" (এ প্যারাটুকুর জন্য কৃতজ্ঞতা মাহমুদুল হক মুন্সি)
আমার বুঝে আসেনা এমন বড় বড় মাপের নেতাদের চাওয়া কী করে সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারেরা জলাঞ্জলি দিলোঅন্তত অারবি হরফে বাংলা লেখা প্রকাশ করবার নীতিটা বেশ ভালো ছিলোকে জানে ঝান্নাতি হরফ আরবিতে লেখার কারণে আমাদের জজবা আরো বেড়ে যেতো সৌদি আরব তথা আল্লাহর কাছেআমাদের মিসকিন বাঙাল বলার আগে দুইবার ভাবতো তারা পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় আমাদের চাইতে কম হলেও তাদের কিন্তু মিসকিন পাকি বলা হয় না তবে যাই হোক না কেনো, আমরা ভাষাশহীদদের রক্তের মূল্য চুকাবো ইনশাল্লাহকারো সাথে দেখা হলে সালাম-মুসাফাহ, কথার শেষে পরম করুনাময়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশস্বরূপ সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ কিংবা মাশাল্লাহ বলতে কসুর করবো না
এখানে আরো লক্ষ্যণীয় যে, সেই দশকের আলেম সমাজের নিকট পেট্রোডলারে মোড়ানো "আসল ইসলাম" এর দাওয়াত পৌঁছোয়নি বিধায় এহেন কামেল কাজে তারা বাধা দিয়েছিলোকিন্তু মাশাল্লাহ বিগত দুই সামরিক শাসক আল্লামা মরহুম শহীদ জিয়া ও তার যোগ্য উত্তরসূরী পীরে কামেল ও ইসলামের ঝাণ্ডাবাহী এরশাদ ছাহেবের প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে এতো বেশি পরিমাণ পেট্রোডলারসমৃদ্ধ "আসল ইসলাম" এদেশে প্রবেশ করেছে যে এখানকার চল্লিশ লাখেরও বেশি ক্বাতাবুল ইলম উর্দুভাষায় লিখিত কিতাব অধ্যয়ন করছেএ সংখ্যাটা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করে আমরা ভাষাশহীদদের রক্তের মূল্য চুকাবো ইনশাল্লাহ
মাতৃ ভাষা অধিকারের প্রথম রক্ত ও জীবন দাতা আমরা এই আমরাই দৈনন্দিন জীবনে সালাম, ইনশাল্লাহ, সুভানাল্লাহ, আলহামদুলিলাহ সহ নানান ধরনের আরবি বা উর্দু শব্দ ব্যবহার করছি যার প্রতিবাদ করলেই আবার উস্কানী দেওয়া বা অনুভুতিতে আঘাত দেওয়ার মত অপরাধ হয়ে যায় যারা ভালবাসা দিবস, মা দিবস ইত্যাদি নিয়ে চুলকানী আছে তারাও কি আজ এই দিনে মাতৃ ভাষা দিবস হিসাবে পালন করতেও কুন্ঠিত হবেন ( যেহেতু তারা সারা জীবন মাতৃ ভাষাতেই কথা বলেন ) ? তাইলে খামাখা লোক দেখানো এই মাতৃভাষা দিবস না শহীদ দিবস পালনের যৌক্তিকতা কি ? খোদা হাফেজ (নাউজুবিল্লাহ), আল্লাহ হাফেজ