Thursday, May 12, 2016

বাণিজ্যিক পোল্ট্রি খামার পরিকল্পনা , বয়লার মুরগী পালন ও পরিচর্যা, এক দিনের বাচ্চা পরিবহনের ব্যবস্থাপনা

আমাদের দেশে প্রাণীজ আমিষের অভাব খুবই প্রকট। আমিষের এ অভাব মেটাতে মুরগি পালনের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান বিশেষ জরুরী। খুব অল্প সময়ে অল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে সাম্প্রতিক সময়ে মুরগি পালন একটি লাভজনক ও সম্ভাবনাময় কৃষি শিল্প হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সঠিক পরিকল্পনায় মুরগি খামার স্থাপনের মাধ্যমে মুরগি পালনকে লাভজনক করে তোলা যায়। মুরগি খামার দু’ধরনের হতে পারে। যেমন-পারিবারিক মুরগি খামার ও বাণিজ্যিক মুরগি খামার। পারিবারিক মুরগি খামারে অল্পসংখ্যক মুরগি পালন করে সে অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে পরবর্তীতে বাণিজ্যিক মুরগি খামার গড়ে তোলা যায়। উৎপাদনের উদ্দেশ্যের ওপর ভিত্তি করে মুরগির খামার বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। মাংস উৎপাদনের জন্য মুরগি পালন করলে একে বলা হয় ব্রয়লার খামার। আবার ডিম উৎপাদনের জন্য খামার করলে একে বলা হয় লেয়ার খামার। তবে যে খামারই স্থাপন করা হোক না কেন তা লাভজনক করতে চাইলে প্রয়োজন সুষ্ঠু পরিকল্পনা, বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাপনা ও সঠিক পরিচালনা।

বাণিজ্যিক মুরগি খামারের জন্য স্থান নির্বাচন
মুরগির খামার একটি স্থায়ী ব্যবস্থা। খামার বলতে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে মুরগি প্রতিপালন করার জন্য নির্দিষ্ট স্থানকে বুঝায়। মুরগির খামার বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে, যেমন ডিম উৎপাদন খামার, মাংস উৎপাদন খামার, প্রজনন খামার, ব্রিডার খামার, বাচ্চা উৎপাদন খামার ইত্যাদি। যে ধরনের মুরগি খামারই স্থাপন করা হোক না কেন সাফল্যজনকভাবে খামার পরিচালনার জন্য এর স্থান নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কৌশল। খামারের জন্য স্থান নির্বাচনের সময় নিচের বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হবে। যেমন-

খামারের স্থান উঁচু হওয়া উচিত। খামার এমন স্থানে গড়তে হবে যেখানে বন্যার পানি কখনও প্রবেশ করতে না পারে।

যে স্থানে খামার করা হবে সেখানকার মাটি বালু ও কাঁকর মিশ্রিত হতে হবে এবং মাটির পানি শোষণ ক্ষমতা থাকতে হবে।

খামার স্থাপনের জন্য নির্বাচিত স্থানে পানি নিষ্কাশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা থাকতে হবে।

খামারের স্থানটি মানুষের বাড়িঘর থেকে দূরে কোলাহলমুক্ত জায়গায় হতে হবে।

যে স্থানে খামার করা হবে সেখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হতে হবে। মানুষের চলাচলের জন্য ব্যবহৃত মূলপথ থেকে অন্তত আধা কিলোমিটার দুরে খামারের স্থান নির্বাচন করা উচিত।

যেখানে খামার করা হবে সেখানে বিদ্যুৎ ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।

খামারের স্থান নির্বাচনের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন আশেপাশে সস্তায় ও সহজে মুরগির খাদ্য ক্রয় করার সুযোগ-সুবিধা থাকে।

খামারে উৎপাদিত পণ্য, যেমন-ডিম, মুরগি ইত্যাদি সহজে বাজারজাতকরণের সুযোগ থাকতে হবে।

খামার স্থাপনের জন্য নির্বাচিত স্থানের মূল্য তুলনামূলকভাবে কম কি না সেটাও বিবেচনা করতে হবে।

বাণিজ্যিক মুরগি খামার পরিকল্পনায় বিবেচ্য বিষয়সমূহ
যে কোন খামার বা শিল্পে বাণিজ্যিকভাবে সফলতা লাভের জন্য চাই সুষ্ঠু পরিকল্পনা। বাণিজ্যিক মুরগি খামার ব্যবস্থাপনায় তিনটি মৌলিক চাহিদা পূরণের নিশ্চয়তা বিধান করতে হয়, যথা-
১. মুরগির খাদ্য,
২. বাসস্থান ও
৩. রোগ দমন। মুরগির খামার একটি বিশেষ ধরনের শিল্প।

তাই এ খামার প্রতিষ্ঠার জন্য মূল বিষয় ছাড়াও আনুসাঙ্গিক বিষয়গুলো বিশেষ বিবেচনায় রাখতে হয়। মুরগির খামার পরিকল্পনার সময় নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলো অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে।

১। জমির পরিমাণ
বার্ষিক যত সংখ্যক ডিম/ব্রয়লার উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হবে তদনুযায়ী লেয়ার/ব্রয়লার প্রতিপালনের ঘর এবং অন্যান্য সুবিধা, যেমন- অফিস, শ্রমিক ঘর, খাদ্য গুদাম, মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণের ঘর, সংরক্ষণাগার ইত্যাদি তৈরির জন্য মোট জায়গার সঙ্গে আরও প্রায় ১.৫ গুণ ফাঁকা জায়গা যুক্ত করে খামারের মোট জমির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়।

২। মুরগির বাসস্থান
নিরাপদ ও আরামে থাকার জায়গার নাম বাসস্থান। বাসস্থান নিরাপদ রাখতে হলে নির্বাচিত স্থানের উপযোগী দ্রব্যসামগ্রী দিয়ে তা এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে ঝড়বৃষ্টি বা প্রাকৃতিক দূর্যোগে সহজে ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। বাসস্থানের অভ্যন্তরীণ চাহিদা, যেমন-পরিমাণমতো থাকার জায়গা, প্রয়োজনীয় সংখ্যক খাদ্য ও পানির পাত্র, তাপ ও আলো এবং বায়ু চলাচলের সুব্যবস্থা থাকতে হবে। পালনকারীর সামর্থ্যরে ওপর নির্ভর করে ঘর পাকা, কাঁচা বা টিনের হতে পারে। প্রজাতি বা স্ট্রেইন অনুযায়ী যতগুলো মুরগি রাখা হবে এদের মোট জায়গার পরিমাণ হিসেব করে ঘর তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি দুইটি ঘরের মাঝে ২৫-৩০ ফুট বা ততোধিক জায়গা আলো ও মুক্ত বাতাস প্রবাহের জন্য খালি রাখা দরকার।

ক) ঘর তৈরিঃ
বাজারজাত করার বয়স পর্যন্ত প্রতিটি ব্রয়লারের জন্য ১ বর্গফুট জায়গার প্রয়োজন। এভাবে হিসেব করে ব্রয়লার উৎপাদনের সংখ্যার উপর ভিত্তি করেই ঘরের সংখ্যা নির্ধারণ করতে হবে। সাদা খোসার ডিম উৎপাদনকারী প্রতিটি মুরগির জন্য ৩ বর্গফুট জায়গা এবং বাদামি খোসার ডিম উৎপাদনকারী মুরগির জন্য ৪ বর্গফুট জায়গা হিসেব করে থাকার ঘর তৈরি করতে হবে। এসব মুরগি খাঁচায়, মাচায় অথবা লিটার পদ্ধতিতে পালন করা যায়। পালন পদ্ধতির উপর নির্ভর করে ঘরের পরিমাণ ভিন্ন ধরনের হতে পারে। খাঁচা পদ্ধতিতে প্রতিটি উৎপাদনশীল মুরগির জন্য কেইজে ৬০-৭০ বর্গইঞ্চি জায়গা প্রয়োজন হবে। কাজেই এ হিসেবে খাঁচা তৈরি করা হয়। খাঁচার সারি লম্বালম্বিভাবে এক সারি বা একটার উপর আরেকটা রেখে ৩/৪ সারি করা যায়। আবার সিঁড়ির মতো করে সাজিয়ে উভয় পার্শ্বেও সারি করা যায়। প্রতিটি উৎপাদনশীল মুরগির জন্য প্রয়োজনীয় জায়গার পরিমাণ মাচায় ১.২-১.৩ বর্গফুট এবং লিটারে ১.৫-১.৭৫ বর্গফুট। মুরগির দৈহিক ওজন এবং আবহাওয়াভেদে এই পরিমাপের পরিবর্তন হতে পারে। লিটার পদ্ধতিতে সাধারণত প্রতি ১০ বর্গফুট মেঝের জন্য ৫ কেজি লিটার প্রয়োজন হয়। এ পদ্ধতিতে পালন করতে মুরগির ঘরের মেঝে পাকা হলে ভালো হয়। কাঁচা মেঝের ক্ষেত্রে শক্ত এঁটেল মাটির মেঝে হলেও চলবে। তবে এ ধরনের মেঝে বর্ষাকালে স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে যেতে পারে। শুকনো বালির মেঝের ক্ষেত্রে বর্ষাকালে সমস্যা হতে পারে।

খ) ঘরের চালা ও বেড়ার নমুনাঃ
বাংলাদেশের পরিবেশে দোচালা বা গেবল টাইপ চালই মুরগির জন্য বেশি আরামদায়ক। লেয়ারের ঘরের বেড়ার উচ্চতার পুরোটাই তারজালি দিয়ে তৈরি করতে হবে। বেশি বাতাস বা বেশি শীত হতে মুরগিকে রক্ষা করার জন্য বেড়ার ফাঁকা অংশ প্রয়োজনে ঢেকে দেয়ার জন্য চটের পর্দার ব্যবস্থা করতে হবে। ব্রয়লার লালন-পালনের সুবিধার্থে প্রথম সপ্তাহে ৯৫০ ফা থেকে কমাতে কমাতে ষষ্ঠ সপ্তাহে ৭০০ ফা-এ নামিয়ে আনার জন্য বেড়ায় বেশি ফাঁকা জায়গা রাখা যাবে না। কিন্তু প্রয়োজনীয় বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। এজন্য দেয়ালের উচ্চতার ৬০% তারজালি দিয়ে তৈরি করতে হয়। তবে শীতের দিনে তারজালির এ অংশটুকু চটের বস্তা দিয়ে ঢাকার ব্যবস্থা করতে হবে।

গ) ডিম পাড়ার বাসাঃ
মাচা অথবা লিটারে পালন পদ্ধতিতে প্রতি ৫টি মুরগির জন্য ১টি করে ডিম পাড়ার বাসা সরবরাহ করতে হয়। প্রতিটি বাসা দৈর্ঘ্যে ১ ফুট, প্রস্থে ১ ফুট ও গভীরতায় ১.৫ ফুট হওয়া প্রয়োজন। খাঁচা পদ্ধতিতে পালন করলে আলাদাভাবে ডিম পাড়ার বাসা বা বাক্স লাগে না। খাঁচাগুলো ঢালসহ এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে করে মুরগি ডিম পাড়া মাত্রই ডিমগুলো গড়িয়ে গড়িয়ে খাঁচার সামনে গ্রিলের ফাঁক দিয়ে বাইরের বর্ধিত অংশ এসে জড়ো হতে পারে।

ঘ) আলোকায়নঃ
লেয়ারে দৈনিক (২৪ ঘন্টায়) আলোর প্রয়োজন হবে ১৬ ঘন্টা। কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা বছরের ছোট-বড় দিন অনুযায়ী দৈনিক ২.৫ ঘন্টা হতে ৪ ঘন্টা পর্যন্ত হবে। আলোর উৎস বৈদ্যুতিক বাল্ব। যেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই সেখানে উজ্জ্বল হারিকেনের আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। বাল্বের শক্তি হবে ৪০ ওয়াট, আলোর রং স্বাভাবিক, আলোর তীব্রতা মৃদু (২০ লাক্স) হবে। ১টি বাল্বের আলোকায়ন এলাকা ১০০০ বর্গ ফুট। বাল্ব স্থাপনের এক পয়েন্ট হতে আরেক পয়েন্টের দূরত্ব হবে ২০ফুট। প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম যে কোনো উৎস থেকেই ব্রয়লার গৃহে আলোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। প্রথম সপ্তাহে ব্রয়লার গৃহে খাবার ও পানি দেখার জন্য সারারাত আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। দ্বিতীয় সপ্তাহ হতে রাতের বেলায় মাঝে মাঝে আলো নিভিয়ে আবার জ্বালাতে হবে এবং এভাবে সারারাত মৃদু আলো জ্বালিয়ে রাখতে হবে। সাধারণত প্রতি ১০ বর্গফুটের জন্য ৫ ওয়াট পরিমাণ আলো প্রয়োজন।

৩। মুরগির খাদ্য ব্যবস্থাপনা
খাদ্যের গুণগত মান, খাদ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা, খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ, প্রতি কেজি খাদ্যের দাম, খাদ্য হজমের দক্ষতা প্রভৃতি খাদ্য ব্যবস্থাপনার অন্তর্ভূক্ত। খাদ্য খরচ মোট উৎপাদন ব্যয়ের প্রায় ৬০-৭৫% এবং খাদ্যের গুনাগুণ ও মূল্যের ওপর লাভলোকসান নির্ভর করে। সেজন্য খামার ব্যবস্থাপনায় খাদ্যের গুরুত্ব অনেক বেশি। কিন্তু বাসস্থানের পরিবেশ অনুকূল ও আরামদায়ক না হলে শুধু খাদ্য দিয়ে তার অভিষ্ট লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব নয়। তেমনি খামার রোগমুক্ত না হলেও তা লাভজনক হবে না। তাই খাদ্য সংগ্রহ করা সহজ কি না এবং খাদ্যের মূল্য ন্যায্য কি না তা বিবেচনা করে খামার স্থাপন করতে হবে।

লেয়ার মুরগির সংখ্যা অনুসারে প্রতিটি মুরগির জন্য দৈনিক ১১০-১২০ গ্রাম খাদ্যের প্রয়োজন হিসেবে কমপক্ষে ২ মাসের খাদ্য সংরক্ষণাগার তৈরি করতে হয়। প্রতিটি ব্রয়লার ৮ সপ্তাহ পর্যন্ত ৪ কেজি খাদ্য খাবে। তাই এ পরিমাণকে ব্রয়লারের মোট সংখ্যা দিয়ে গুণ করে যে ফল দাঁড়াবে সে পরিমাণ খাদ্য ধারণক্ষমতাসম্পন্ন গুদাম তৈরি করতে হবে। বয়সভেদে ব্রয়লারের জন্য ২.৫-১০ সেন্টিমিটার লম্বা খাদ্যের পাত্র বা ফিড ট্রাফের প্রয়োজন। সাধারণত ৫০টি বাচ্চার জন্য একটি খাদ্যের লম্বা ট্রে বা পাত্র এবং তদনুযায়ী পানির পাত্র প্রতি ১০০টি বাচ্চার জন্য প্রবহমাণ পানির ১টি ড্রিংকার প্রয়োজন হয়।
মুলধনের অবস্থা কী? নিজের টাকা আছে না কি এসব হিসাব করে ব্যাংক থেকে ঋণ করতে হবে। মূলধনের উপর ভিত্তি করেই খামার স্থাপনের জমি, বাসস্থানের আকার ও সংখ্যা, প্রয়োজনীয় খাদ্যের পরিমাণ অনুসারে গুদামের ব্যবস্থা, প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পানির পাত্র, ব্র“ডিং যন্ত্রপাতি, খামার পরিচালনার লোকজনের জন্য অফিসসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করতে হবে।

খামার স্থাপন ও পরিচালনার হিসাব
খামার স্থাপন ও পরিচালনার খরচ দুইভাগে বিভক্ত। যথা-

ক) স্থায়ী খরচঃ স্থায়ী খরচের খাতওয়ারী হিসেব নিম্ন্নরূপ-

খামারভুক্ত জমির মূল্যঃ এলাকা অনুযায়ী প্রতি বিঘা জমির মুল্য কমবেশি হয়ে থাকে।

মুরগির গৃহায়ণ ব্যবস্থা বাবদ খরচঃ ঘর তৈরির সাজসরঞ্জাম বিভিন্ন রকমের হতে পারে। যথা-বাঁশ, টিন বা বিচালী, মাটির ঘর, ইট, সিমেন্ট বা পাকা দালান ঘর। ঘর তৈরির সাজসরঞ্জাম অনুযায়ী প্রতি বর্গফুট ঘর তৈরির খরচ, তা যেভাবেই ঘর তৈরি করা হোক না কেন প্রতি বর্গফুট হিসেবে খরচ ধরে ঘরের মোট খরচ বের করতে হবে।

ম্যানেজারের অফিস, ডিম/মাংস সংরক্ষণাগার, খাদ্য গুদাম, খাদ্য ছাড়া অন্যান্য জিনিসপত্র রাখার স্থান, শ্রমিকদের বিশ্রাম ঘর, অসুস্থ ও মৃত মুরগি রাখার জায়গা নির্মানবাবদ খরচ।

আসবাবপত্র ক্রয় বা তৈরি ও যানবাহন ক্রয়বাবদ খরচ, খাবার ও পানির পাত্রের দাম, ডিম পাড়ার বাক্সের দাম ও ডিম রাখার ঝুড়ি কেনার জন্য খরচ।

খ) আবর্তক বা চলমান বা চলতি খরচঃ আবর্তক খরচের খাতওয়ারী হিসেব নিম্নরূপ-

মুরগি সংক্রান্ত খরচঃ ডিমের ব্যবহার অনুযায়ী ডিমপাড়া মুরগির খামার দু’প্রকার। যথা-নিষিক্ত বা বাচ্চা ফুটানোর ডিম উৎপাদন খামার এবং অনিষিক্ত বা খাবার ডিম উৎপাদন খামার। খাবার সাদা বা বাদামি খোসার ডিম বা বাচ্চা ফুটানোর ডিম উৎপাদনকারী মুরগি বা বাচ্চা কোথায় পাবেন, আপনি সেগুলো আনতে পারবেন কি না সে ব্যাপারেও নিশ্চিত হতে হবে। নিষিক্ত ডিম বা ডিমের জন্য প্রজননক্ষম পুলেট ও ককরেলের মূল্য, অনিষিক্ত বা খাওয়ার ডিম উৎপাদনের জন্য উন্নতমানের হাইব্রিড পুলেটের মূল্য অথবা একদিন বয়সের ব্রয়লার বাচ্চা ক্রয়ের খরচ।

সুষম খাদ্যের মূল্যঃ মাথাপিছু দৈনিক ১১০-১২০ গ্রাম হিসাবে।

লিটার কেনাবাবদ খরচ। খাঁচায় মুরগি পালন করলে মেঝে পাকা হলেই ভালো।

প্রতিষেধক টিকা এবং চিকিৎসায় ওষুধপত্রের মূল্য।

খামার পরিচালনায় জনবলের বেতনভাতা খরচ, ম্যানেজারের বার্ষিক বেতনভাতা, অফিস স্টাফের বার্ষিক বেতনভাতা ও শ্রমিকদের বার্ষিক বেতনভাতা।

পরিবহন ও যাতায়াত খরচ, বিভিন্ন কাজে ম্যানেজারের যাতায়াত খরচ এবং খাদ্য সংগ্রহ, ডিম বাজারজাতকরণ ও ডিমপাড়া শেষে মুরগি বিক্রির জন্য পরিবহন খরচ।

মুলধনের সুদঃ ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে মূলধনের উপর বার্ষিক সুদ।

ডিপ্রিসিয়েসন বা অপচয় খরচঃ জমিবাদে স্থায়ী খরচের অপচয়ের শতকরা হার ইত্যাদি যত খরচ হয় সব যোগ করে বার্ষিক খরচ/ মোট খরচের হিসেব রাখতে হবে।

মেরামত খরচ এবং বিদ্যুৎ ও পানির বিল বাবদ খরচ

এডভারটাইজিং বা বিজ্ঞাপন বাবদ ব্যয়

নষ্ট বা বাদ যাওয়া ডিমের মূল্য, ডিম বাছাই ও ছাঁটাই খরচ, যতগুলো ডিম বিক্রির অনুপযুক্ত হলো তার মূল্য।

অসুস্থ বা মৃত মুরগির মূল্য

খামার হতে সম্ভাব্য বার্ষিক আয়

ডিম বিক্রিঃ লেয়ার খামারের ক্ষেত্রে বার্ষিক গড়ে ৭০-৭৫% হারে উৎপাদন ধরে বর্তমান বাজার দরে ডিমের মোট মূল্য।

ডিম পাড়া শেষে মুরগির মূল্যঃ শতকরা ৮৮টি মুরগি সুস্থ অবস্থায় বেঁচে থাকার ক্ষমতা আছে এ হিসেবে ডিম পাড়া শেষে বাজার দরে মোট মূল্য।

ব্রয়লার খামারের ক্ষেত্রে গড়ে ৮ সপ্তাহ পর পর মাংসের জন্য মুরগি বিক্রি।

প্রতিটি মুরগি থেকে বছরে প্রায় ৩০ কেজি বিষ্ঠা পাওয়া যেতে পারে। এভাবে হিসেব করে বর্তমান বাজার দরে মোট বিষ্ঠা বা সারের মূল্য।

অকেজো আসবাবপত্র বিক্রিবাবদ মোট আয়।

খামার হতে বার্ষিক কত টাকা লাভ হতে পারে তা নির্ধারণ করতে হবে। অনুমেয় অর্থ মুনাফা করতে হলে খামারজাত পণ্য হতে শতকরা ১০-১২ হারে টাকা হারে লাভে মোট কত টাকা আয় হতে পারে তা হিসেব করতে হবে। বর্তমান বাজার দরে কতগুলো ডিম বিক্রি করলে এ নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা আয় করা যায় তা হিসেব করতে হবে। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। যেমন-বার্ষিক গড়ে ৭০-৭৫% হারে খাবার ডিম বা অনিষিক্ত ডিম উৎপাদন এবং ৬০-৬৫% হারে বাচ্চা ফুটানো বা নিষিক্ত ডিম উৎপাদন ধরে, প্রতিটি ডিম গড়ে ২.৫০-৩.০০ টাকা হিসেবে বিক্রি করা গেলে এবং বছর শেষে ৮৮% মুরগি নীরোগ ও স্বাস্থ্যবান থাকলে আর অবশিষ্ট অনুৎপাদনশীল মুরগি বিক্রি করে ও উৎপাদন খরচ বাদে ১০-১২% লাভ থাকবে। এ জাতীয় হিসেব করে পরিকল্পনা করতে হবে। এভাবে মোট আয় থেকে মোট ব্যয় বাদ দিয়ে প্রকৃত লাভ-লোকসান নির্ধারণ করতে হবে। উপরোক্ত বিষয়সমূহ ভালোভাবে চিন্তাভাবনা করে খামার স্থাপনের পরিকল্পনা করা উচিত।

লেখক: ডাঃ মোঃ মোস্তফা কামাল
ভেটেরিনারি সার্জনউপজেলা পশুসম্পদ অফিসফুলছড়ি, গাইবান্ধা।

বয়লার মুরগী পালন ও পরিচর্যা।

এই চারটি দেশই সমস্ত জগতের ব্রয়লার মুরগির ব্যবস্থা নিয়ন্ত্র করে। ব্রয়লার আর সাধারণ পাঁচটা মরগির মতো। তবে খুবই উচু জাতের যাদের সৃষ্টি করা হয়েছে প্রচন্ড নির্বাচন এবং বংশগতি ধারার বিশেষ ক্রম অনুসারে।

ব্যবসায়ের জন্য ব্রয়লার মুরগি নির্বাচনঃ
(১) একদিনের বাচ্চার ওজন হবে ৩৬ থেকে ৪০ গ্রাম। দেখা গেছে এদিনের বাচ্চার দেহের ওজন যদি ভাল হয় তবে বেচার সময় ব্রয়লার মুরগির ওজন ভালই দাড়াবে।

(২) বংশগতি ধারার ভাল ক্রিয়াকর্মঃ যদি ভাল বংশগতি ধারার মুরগির বাচ্চা না হয় তবে ব্যবসায় খুব এটা সুবিধা হবে না। প্রায়ই সময় দেখা যায় একদল ব্রয়লার মুরগি অন্য দলের চেয়ে ভাল বাড়ে, বেশি সংখ্যায় বাছে, সুলক্ষণযুক্ত, সমান এবং বেশ ভালো পরিমাণে দেহে মাংস লাগায় সুষম খাদ্য খাওয়ার অনুপাতে । যে বাচ্চা মুরগির প্রেরক অবশ্যই শৃঙ্খলের কায়দার মুরগির বাচ্চা দিয়ে যাবে। এই নিয়মের ব্যতিক্রম হলেই সম্পূর্ণ ব্যবসাটি মার খাবে। আরো ভাল হয় যদি হ্যাচারি সংস্থা সমপ্রসারণ এবং কারিগরি জ্ঞান দরকার পড়লে দিতে পারে।

(৩) সুষম খাদ্য খুব উচুদের হওয়া চাই। অর্থাৎ খাওয়ার অনুপাতে দেহে যেন মাংস লাগে। খুব তাড়াতাড়ি বাড়ার জন্য ব্রয়লারের দরকার একই সঙ্গে উচ্চু পর্যায়ে আমিষ এবং শক্তি বা বেশি তাপ দিতে পারে এমন খাবার। ০-৬ সপ্তাহের ব্চাচার জন্য ব্রয়লার সুশস খাদ্যে থাকবে প্রতি কেজি খাবারে আমিষ ২২.২৪% , বিপাকীয় তাপ ২৯০০-৩০০০ কিলোক্যালরি। ব্জারে যাবার আগে ব্রয়লার মুরগির সুষম কাদ্যে থাকবে ১৯-২০%, বিপাকীয় তাপ ৩০০০/৩২০০০ কিলো ক্যালরি প্রতি কেজি খাবারে। ব্রয়লার বাজারে যাবার আগের খাবার ৫-৬ সপ্তাহ বয়সে দেওয়া যেতে পারে।

(৪) আমি ষ বিশেষ করে অ্যামাইনো অ্যাসিডগুলির মধ্যে লাইসিন এবং মেথিও নাইন খবুই গুরুত্বপূর্ণ । কারণ এরা মুরগির বাড়ের জন্য সাহায্য করে। খাবারকে মাংসে পরিনত করে। ফলে ব্রয়লার ব্যবসায়ে পয়সা আসে।

(৫) ব্রয়লার মুরগির খাবারে মোটা আশের শতকরা হার ৬ এর বেশিদ কখনোই হবে না।

(৬) ভিটামিন A, B2, D3, B12 এবং K ভীষন প্রয়োজনীয়।

(৭) পটাসিয়াম, আয়োডিন, ম্যাঙ্গানিজ সালফেট এবং জিঙ্ক কার্বনেট পৃথকভাবে ভাল করে মিশিয়ে মুরগিকে খাওয়ানো উচিত।

(৮) ব্রয়লার মুরগির খাবারে বীজঘ্ন নামমাত্র পরিমাণে মেশানো উচিত। লাভটা এই হবে বাচ্চা মুরগির দেহে সুপ্তভাবে যদি কোন রোগ থেকে থাকে তবে এই বীজঘ্ন খাওয়াবার দরুন মুরগির দেহে চট করে রোগাক্রমণ ঘটবে না।

ব্রয়লার মুরগি থেকে ভাল লাভ করতে হলে খামারীদের যা করনীয়

ব্রয়লার মুরগি খাবারে এলো আর গেল নীতি মানাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। পলে খামারে একই বয়সের মুরগি থাকবে। এবং এ বয়সী মুরগি থেকে অপর বয়সী মুরগিদের মধ্যে রোগ ছড়াতে পারবে না।

খামার ঘর পূর্ব পশ্চিম দিক করে হবে। বায়ু চলাচল ব্যবস্থা ভারো থাকা দরকার। মুরগির ঘরগুলির পরস্পর দূরত্ব হবে ১১-১২ মিটার (৩৫-৪০ ফুট)।

খামার বাড়ি তৈরী করাঃ
ঘরে মুরগি আসার আগে ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা, ব্লো ল্যাম্প দিয়ে ফাক ফোকরগুলিতে পোকা মাকড় (উকুন, ছোট বড় এটুলি) মেরে দেওয়া। বাচ্চা মুরগির জায়গা গরম ব্যবস্থা, মুরগি আসবার ৪৮ ঘন্টা আগে পরীক্ষা নিরিক্ষা করে নেওয়া উচিত।
ব্রুডারকে খবরের কাগজ দিয়ে ঘিরে দিতে হবে। তাপমাত্রা হওয়া দরকার ৩৫০ সেঃ (৯৫০ ফাঃ)।

ব্রয়লার বাচ্চার জন্য মেঝেতে জায়গা দিতেঃ বাচ্চা পিছু জায়গা দিতে হবে ৪৫ বঃ সেমি (৭ বাঃ ইঞ্চি)। কখনোই যেন গুচ্ছের মুরগি গুদামজাত করা না হয়। বেশি বচ্চার সংখ্যা হলে পরস্পরকে কামড়া কামড়ি করবে। খাবার এবং পানির জন্য লড়াই করবে ফলে বাচ্চা দুর্বল হয়ে পড়বে। এতে ক্ষতি হবে ব্যবসার।

খাবার এবং পানির জায়গাঃ
প্রথম কদিন ডিম নেবার কাটুনে কাবার দেওয়া হলে চলবে। বাচ্চা পিছু খাবার জায়গা দিতে হবে ২.৫ সিমে (১")। এই ব্যবস্থা চলবে বাচ্চার ১ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত। প্রথম প্রথম খাবারের জায়গা পুরো ভরে দিলে চলবে। কিন্তু একটু বড় হয়ে যাবার পর খাবারের জায়গা আধা আধি ভর্তি করতে হবে। এভাবে চললে খাবার নষ্ট কম হবে। দিনে ৪ বার খাবারের জায়গায় দখাবার দিলে চলবে। খাবারের জায়গা বার বার ভরে দিলে মুরগি বাড়ে ভাল। ৪ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত মুরগি প্রতি খাবারের জায়গা হবে ৫ সেমি। পরে বেড়ে সেটা দাড়াবে ৭.৫ সেমি (৩")। সমস্ত দিনভর বাচ্চাদের পরিষ্কার ঠান্ডা পানি জুগিয়ে যেতে হবে। পানির জায়গা বেশি সংখ্যায় দিতে হবে। মনে রাখতে বাচ্চা ডিমপাড়া মুরগি থেকে ব্রয়লার বাচ্চা বেশি পানি খায়। গরমকালে, বিশেষ করে গরম প্রবাহ চললে মুরগি প্রচুুর পানি খেয়ে নিজেকে ঠান্ডা করার চেষ্টা করে।

শাবক ঘর এবং শাবক ঘরের তাপমাত্রাঃ
বাচ্চার ঝাঁক আসবার অন্তত ৪৮ ঘন্টা আগে ঘরটি পরীক্ষা করতে হবে। পট্রথম সপ্তাহে শাবক ঘরের তাপমাত্রা হবে ৩৫০ সেঃ (৯৫০ ফাঃ)। শাবক ঘরের তাপমাত্রা প্রতি সপ্তাহ ৫০ ফাঃ বা ২.৮০ সেঃ হিসেবে কমানো যেতে পারে। সেটা অবশ্য নির্ভর করবে বাইরের আবহাওয়ার ওপর।

শীতকারীন পরিচালন ব্যবস্থাঃ
বাচ্চা মুরগির বিছানা ৫" থেকে ৬" গভীর হবে। সুবিধা হলেই বিছানার ওপরে নতুন একটা বিচুলি/ খড়ের আস্তরণ দিয়ে দেওয়া ভাল। সপ্তাহে ঙ্গ বার কাটা কোদাল দিয়ে বিছানা ঘেটে দেওয়া ভাল। বিছানার জলীয় ভাব বেশি হলে চুন দিয়ে নেওয়া উচিত। চুন অ্যামোনিয়া গ্যাস শুষে নেয়।

ব্রয়লার মুরগির বাজারঃ
ব্রয়লার মুরগির পৃথিবীর জুড়ে এটাই সমস্যা। ৫০, ১০০, ২০০, ৩০০, ৫০০, ১০০০ বা তারও বেশি শৃঙ্খল বা চেইন নিয়মে বিক্রি হয় বলে বাজার আগে থেকেই তৈরি করে নিতে হয়। অর্থাৎ কতজন খাবে জেনে নিয়ে ভাত বসানোর মত। হোটেল, রেষ্টুরেন্ট, ক্যান্টিন, হোস্টেল প্রভূতি শৃঙ্খল নিয়ংমে ব্রয়লার বড় মুরগি নিয়ে থাকে। এলাকা যদি খুব ঘনবসতিসম্পন্ন হয় তবে শৃঙ্খলেরত খুব জোর ৫০ থেকে ১০০টি মুরগি ২ দিনে বিক্রি করা সম্ভব। যেখানে সুনিশ্চিত বাজার আছে সেখানে ৩০০ গ্রাম, ৫০০ গ্রাম এবং কেজি হিসেবেও বিক্রি করা যেতে পারে।

ব্রয়লার মুরগির সুষম খাদ্যের রকমফেরঃ
(১) পাউডার বা ধুলোর মত
(২) গুলি বা ওষুধের মত ছোট ছোট ট্যাবলেটের আকারে। সাধারণত ধুলোর ম্যাস করেই ব্রয়লার মুরগিকে খাওয়ানো হয়। বিভিন্ন পদ্ধতিতে খাইয়ে দেখা গেছে ৬ থেকে ১১% খাবারকে মাংসে পরিণত করা হয়েছে এবং শেষমেষ খামারির লাভ হয়েছে ৩ থেকে ১২% । অবশ্য এটা উৎপাদনের দিক থেকে । ইওরোপে ৯০% মত খাবার বস্তু ফের গুলির আকারে পরিবেশন করা হয়। আমেরিকায় ৫০% সংস্থা মুরগির সুষম খাদ্য ফের গুলির আকারে পরিবেশণ করে থাকে।

ব্রয়লার মুরগির ব্যবসায়ে সতর্কতা
ব্রয়লার মুরগির ব্যবসায়ে নিচের সতর্কগুলি মনে রাখা উচিতঃ
(১) ব্রয়লার উৎপাদনে ৬০ থেকে ৬৫% টাকা খাবারের পেছনে খরচ হয়।
(২) সুষম খাদ্যে অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় জিনিস খাওয়ালে অতিরিক্ত দাম পাওয়া যায় না। কিন্তু গরম আবহাওয়া বা প্রবাহে আপনাকে অতিরিক্ত চর্বি বা তেল দিতেইত হবে।
(৩) ব্রয়লার মুরগি তার সুষম খাবারের ৬৪% আমিষ দেহের কাজে লাগাতে পারে। ব্রয়লারের প্রয়োজনীয় আমিষ তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে-
(ক) কলা বৃদ্ধির জন্য; ব্রয়লার মুরগির শরীরে ১৮% আমিষ আছে।
(খ) দেহের ক্ষয় রোধের জন্য; ব্রয়লার প্রতিদিন তার দেহের কেজি হিসেবে ওজনের ১৬০০ মিঃ গ্রাঃ আমিষ ক্ষয় করে।
(গ) পালক গঠনের জন্য; ব্রয়লার মুরগির পালকে ৮২% আমিষ আছে এবং গড়ে পালকের ওজন সমস্ত দেহের দ৭০%।

গরমকালে ব্রয়লার সুষম খাদ্যে বেশি আমিষ দরকার শীতকালের তুলনায়। কারণটা হল মুরগি গরমকালে কম কায়।
ঠিক যতটুকু অ্যামাইনো অ্যাসিড দরকার ঠিক ততটুকুই ব্রয়লার মুরগিকে দিতে হবে। কমও নয়, বেশি তো নয়ই। যেহেতু বেশি পরিমাণে অপরিহার্য অ্যামাইনো অ্যাসিড দেহের ক্ষতি করে। কম অ্যামইনো অ্যাসিড আবার দেহের বৃদ্ধিকে রোধ করে দেবে।
মাদি ব্রয়লার মুরগির চেয়ে মদ্দা ব্রয়লার মুরগি তাড়াতাড়ি বাড়ে। সুতরাং খামারের ভালর জন্য মাদি মদ্দা একসঙ্গে না পালন করে আলাদা আলাদা করা লাভজনক। প্রথম চার সপ্তাহ মদ্দা মাদিদ ব্রয়লার মুরগির আমিষের প্রয়োজন একই রকম। ৪ সপ্তাহ পরে মদ্দা ব্রয়লার মাদির চেয়ে ২% থেকে ৪ % বেশি আমিষের দরকার হয়। মাদিকে বেশি আমিষ দিলে সেটা খুব একটা কাজে আসে না।

ব্রয়লার মুরগির জন্য খনিজ এবং ভিটামিন

সত্যিকথা বলতে পরিমাণ এবং উৎকর্ষকতা দুটো ব্রয়লার মুরগির সুষম খাদ্যে দরকার। আরো দরকার খনিজ পদার্থের পরস্পরের মধ্যে সমঝোতা। এই সমঝোতা অবশ্য খাদ্যের উপাদানের সঙ্গেও থাকা দরকার। খনিজ পদার্থের বেশি বা কম হওয়া দুটোই খনিজ পদার্থের মুল উদ্দেশ্য দেহের বাড়কে ব্যাহত করবে। ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাসের মধ্যে সহযোগিতা খুবই দরকারী। খাবারের সমস্ত ক্যালসিয়াম যেন ১% গন্ডি কখনো না পেরিয়ে যায়।

ভিটামিন খাদ্য বিপাক এবং বিশ্লেষণ বিশেষ সহযোগিতা দেখায় । ফলে মুরগির দেহের বাড় ঠিক থাকে। রোগ ভোগ কম হয়। প্রতিটি ভিটামিনের আলাদা আলাদা কাজ আছে যা একই বইতে পরির্বতে বিস্তৃতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।

ব্রয়লার খামারের পরিচালন ব্যবস্থা

(ক) খাবারকে দেহে লাগাবার ব্যবস্থাঃ
এটা বের করা হয় ব্রয়লার মোট যে বারটা খেল তাকে ব্রয়লার মুরগির কতটা ওজন পেল সেই ওজনকে দিয়ে ভাগ করে।
(খ) প্রতি কেজি ব্রয়লার ওজনের জন্য কত মুল্যের খাবার খেলঃ
এটা বের করা হয় খাবারকে দেহে লাগাবার অনুপাতকে প্রতি কেজি খাবারের মূল্যকে গুণ করে।
(গ) মোট সুবিধা প্রতি একক মেঝের জায়গা হিসেবেঃ
এটা বের করা হয় মোট খরচকে (বাচ্চার দাম, খাবার, ওষুধ পত্র) ব্রয়লার মুরগি বেচার আয় থেকে এবং বিয়োগফলকে মেঝের বর্গফুটকে ভাগ করে।
শতকরা বাচার হার = ১০০-শতকরা মৃতু্যর হার। উৎপাদন সংখ্যা (ইংরেজিতে বলে production number) একটি আন্তর্জাতিক সংখ্যা। এই সংখ্যার দ্বারা কারিগরির ব্যাপারে অনেক কিছু জানা যায়।
লেখক: আবদুল্লাহ আল মামুন, উপ-পরিচালক, বংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট।

ব্রয়লার পালনে কিছু সমস্যা ও এর প্রতিকার

ব্রয়লার লালন পালনে খামারি ভাইয়েরা মাঝে মধ্যেই নানা রকম সমস্যায় পড়েন। সময় মতো এসব সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য খামারিকে চৌকস না হয়ে উপায় নেই। একজন চৌকস খামারি হিসেবে ব্রয়লার পালনে যেসব বিষয়ে নজর রাখতে হবে চলুন সেটা জেনে নিই।

ব্রয়লার পালনে সমস্যা : ব্রয়লার পালনে খামারি ভাইয়েরা যেসব সমস্যায় পড়েন সেগুলো হলোন্ধ
১. গামবোরো রোগ,
২. ওজনে পার্থক্য (একই বয়সের বাচ্চা কিছু দিন পর ছোট-বড় হওয়া),
৩. সমন্বয়হীন বাজারব্যবস্খা,
৪. খামারিদের ওষুধ ব্যবহারের প্রবণতা।

পামবোরো রোগ : খামারি ভাইয়েরা গামবোরো রোগ নিয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন। গামবোরো ভাইরাসের কারণে হয়। এই রোগের কার্যকরী কোনো চিকিৎসা নেই। তবে সময়মতো টিকা দেয়া থাকলে রোগ হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। এই রোগের আক্রমণ যদি ঘটেই থাকে তাহলে উন্নত ব্যবস্খাপনার মাধ্যমে মৃত্যুহার কিছুটা কমানো যায়। এই রোগে আক্রান্ত মুরগি খাদ্য ও পানি খাওয়া বìধ করে দেয়, পালক উসকো-খুসকো দেখায়। সাদা পাতলা ও দুর্গìধযুক্ত পায়খানা করে। শরীর খুব দুর্বল হয়ে পড়ে, হাঁটতে পারে না। অবশেষে মারা যায়। তবে এই রোগে মৃত্যুহার ৩০ ভাগের বেশি হয় না। থাইয়ের গোশতে রক্তের ছিটা দেখা যায়। একই বয়সের বাচ্চা প্রথমে বড় এবং পরে ছোট হয়ে যায়, বাচ্চা কাটলে ভিতরে রক্তের ফোঁটা দেখা যায়।

চিকিৎসা : এই রোগের কার্যকরী কোনো চিকিৎসা নেই। প্রতিরোধ ব্যবস্খাই একমাত্র উপায়। গামবোরো রোগ দেখা দিলে মুরগির ঘরে খাদ্য ও পানির পাত্র বাড়াতে হবে। কারণ এই রোগে খাবারের প্রতি অরুচি হওয়ায় না খেয়ে দুর্বল হয়ে মুরগি মারা যায়। তাই খাদ্য ও পানি পাত্র এমনভাবে দিতে হবে যাতে ঘুরলেই খাদ্য পায়। এই রোগে অরুচি, ডিহাইড্রেশন এবং মুরগি না খেয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে বলে পানিতে ভিটামিন সি, স্যালাইন ও গ্লুকোজ মিশিয়ে খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যায়।

ছোট-বড় হওয়া : প্রায়ই দেখা যায় একই ব্যাচে একই বয়সের ব্রয়লার বাচ্চা কিছু দিন পর কতকগুলো বেশ ছোট হয়ে গেছে। এর জন্য দৃশ্যমান অদৃশ্যমান অনেক কারণ জড়িত। যেমনন্ধ কৌলিকাত্ত্বিক কারণ, পরিবেশগত ও ব্যবস্খাপনাগত কারণ। দৃশ্যমান বা পরিবেশগত কারণের মধ্যে প্রথম থেকেই প্রয়োজনের তুলনায় কম খাদ্য ও পানির পাত্র থাকা। কারণন্ধ প্রথম সপ্তাহে বিশেষ করে এক-তিন দিন বয়স পর্যন্ত বাচ্চার চলাচল সীমিত থাকে এবং খাদ্য না চেনার কারণে খাদ্য খাওয়ায় তেমন প্রতিযোগিতা থাকে না। তাই এই সময়ে যেসব বাচ্চা এক বা দুই দিন খাদ্য ভালোভাবে খেতে পারে না সেগুলোই দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে পরে খাদ্য খাওয়া প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে ছোট হয়ে যায়। পুরুষ বাচ্চার দৈহিক বৃদ্ধি স্ত্রী বাচ্চার চেয়ে ২০-২৫ ভাগ বেশি হওয়ায় স্ত্রী বাচ্চা ছোট হয়। মিশ্রিত গ্রেডের বাচ্চা এক সাথে পালন করা। বিভিন্ন বয়সের মুরগির ডিম এক সাথে ফুটানো হলে পুলের ডিমের বাচ্চা ছোট হয়। ব্রুডিং পিরিয়ডে কাáিক্ষত তাপ না পাওয়া।

প্রতিকার : মিশ্রিত গ্রেডের বাচ্চা না কিনে একই এ বা বি গ্রেডের বাচ্চা কিনতে হবে। বাচ্চা ছোট-বড় দৃশ্যমান হওয়ার সাথে সাথে আলাদা করে বিশেষভাবে যত্ন নিতে হবে। কাáিক্ষত পরিমাণ খাদ্য ও পানির পাত্র দিতে হবে।

খামারিদের ওষুধ ব্যবহারের প্রবণতা : রোগ চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম এ কথাটা মুরগি পালনের ক্ষেত্রে বেশি যুক্তিযুক্ত। অনেক খামারি জেনে না জেনে রোগ প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন ওষুধ খাওয়ান, যা মোটেও ঠিক না। অসুখ না হলে ওষুধ খাওয়ানো ঠিক নয়। রোগ প্রতিরোধের জন্য সময়মতো টিকা দিতে হবে। সুস্খ মুরগিকে রোগ প্রতিরোধের নামে ওষুধ খাওয়ানোর ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায় এবং বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এমনকি রোগ প্রতিরোধ শক্তিও কমে যেতে পারে। তাই প্রতিরোধের জন্য ওষুধ না খাইয়ে সময় মতো টিকা দিতে হবে।

ব্রিডার ফার্ম হতে এক দিনের বাচ্চা পেরেন্ট স্টক ফার্ম পর্যন্ত পৌছানোর জন্য ব্যবস্থাপনা

একদিন বয়সের বাচ্চা সাধারণত ২৫-২৬০ সে তাপমাত্রায় চিক বক্সে করে আকাশ পথে পরিবহন করা হয়। এ সময় বাচ্চা প্রতি ঘন্টায় ০.৩% শারীরিক ওজন হারায়। আকাশ পথে ভ্রমণকালে কোনো কারণে তাপমাত্রা বেশি বা আদ্রর্তা কমে গেলে বাচ্চার ওজনও কমে যাবে। এজন্য প্রত্যেক খামার ব্যবস্থাপকের বিশেষভাবে স্মরণ থাকতে হবে যে, হ্যাচারীতে বাচ্চা ফোটার পর সর্বপ্রকার প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পর বাচ্চার প্রকৃত গড় ওজন ৪০ গ্রাম নিশ্চিত করে গ্রাহকদের নিকট রপ্তানি করা হয়। প্রকৃতপক্ষে আকাশ পথে ও অন্যান্য যানবাহনে খামার পর্যায়ে পৃথিবীর যে কোনো দেশে এই বাচ্চা পৌছাতে সর্বোচ্চ সময় ৪৮ ঘন্টা লাগতে পারে। কাজেই এই দীর্ঘ সময় বা পথ পরিবহনের পর ফার্ম পর্যায়ে বাচ্চার গড় ওজন ৩৪ গ্রামকেই প্রকৃত ওজন হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। সাধারণত বাচ্চার গড় হস্বাভাবিক ওজন নিরূপন করতে হলে বিভিন্ন কার্টুন হতে বা ব্রুডারের বিভিন্ন স্থান থেকে বেশ কিছু বাচ্চা এলোমেলোভাবে (at random) নিয়ে এর গড় ওজন বের করতে হয়। খামারে বাচ্চা পৌছানোর পর একটি বাচ্চার সর্বনিম্ন ওজন রেকর্ড করা যেতে পারে।
আকাশ পথে পরিবহন ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে বাচ্চা যদি বিলম্বে পৌছে তবে এমন অস্বাভাবিক অবস্থার কারণে বাচ্চার উপর যথেষ্ট ধকল পড়ে। ফলে, একদিন বয়সের বাচ্চার মৃত্যুর হার স্বাভাবিকভাবে সঠিক সময়ে অবতরণের হার অপেক্ষা বেশি হয় এবং একই কারণে প্রথম সপ্তাহে বাচ্চার মৃত্যুর হার তুলনামূলকভাবে বেশি হয়। এসব ক্ষেত্রে নিম্নে উল্লিখিত বিষয় সমূহের প্রতি গুরুত্ব দিলে খামারে ক্ষতির প্রভাব যতদূর সম্ভব কমাতে সাহায্য করবে।

বিমান বহন্দরে জরুরিভাবে করণীয় ব্যবস্থাদি
কোনো কারণবশত বাচ্চা পরিবহনের বিমানটির অবতরণে যদি দেরী হয়, তবে তাৎক্ষণিকভাবে বিমান বন্দরের প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করে কাস্টমার চিকে ট্র্যাকের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এমন ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে বিমান অবতরণের সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চাগুলি চিক ট্রাকের লোড দিয়ে বিমান থেকে কার্গো সেন্টারে দ্রুত নিয়ে আসা যায়। এখানে মনে রাখা দরকার যে, বিমান থেকে বাচ্চাগুলি নামানোর পর আর্দ্রতা এবং তাপমাত্রার একটা বড় ধরনের তারতম্য ঘটে এবং চূড়ান্তভাবে ঘোষণাপত্র পেতেও খুব দেরী হয়। কার্গো সেন্টারে বাচ্চাগুলি অত্যন্ত খারাপ এবং প্রতিকূল অবস্থায় থাকে। এ সময় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কার্গো সেন্টার থেকে বাচ্চাগুলি চূড়ান্তভাবে ডেলিভারী নেয়ার জন্য বিমানের প্রতিনিধির সাথে পূর্বে থেকেই একটি ব্যবস্থা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।

কার্গো সেন্টারে বহনযোগ্য ফ্যানের ব্যবস্থাকরণ
কার্গো সেন্টার থেকে বাচ্চা চূড়ান্তভাবে ডেলিভারী পেতে সাধারণত বেশ সময় লেগে যায়। এ সময় বাচ্চাগুলি অত্যন্ত গরম ও প্রতিকূল পরিবেশে অত্যন্ত কষ্ট পেতে থাকে। এ অবস্থা থেকে বাচ্চাদেরকে সাচ্ছন্দ্য প্রদানের জন্য মুক্ত বাতাসের প্রয়োজন হয়। এজন্য গরমের আধিক্য থেকে এদেরকে রক্ষার জন্য বহনযোগ্য ফ্যান চালু করা উচিত। প্রকৃত অর্থে বিমান বন্দর থেকে বাচ্চা গ্রহণের পর কাটুর্ন গাড়িতে তোলা, পরিবহন ও ব্রুডিং রুমে নামানো পর্যন্ত বহনযোগ্য ফ্যান চালু রাখতে হবে।

পানিশূন্যতা রোধ
গরমের আধিক্যহেতু বাচ্চাদের দেহে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। এ সমস্যা থেকে বাচ্চাদের রক্ষার জন্য কার্গো সেন্টার থেকে পরিবহনকালীন পূর্ণাঙ্গ সময়ে কাটুর্নের মাঝে rehydration gel সরবরাহ করা প্রয়োজন। তাহলে এই জেল থেকে বাচ্চারা পানি গ্রহণ করে সুস্থ থাকবে। এরপর বাচ্চাদের ব্রুডারে ছেড়ে দিলে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক হবে এবং এরা পরিমিত পুষ্টি পাবে। এর ফলে বাচ্চাদের স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করবে। এসময়ে বাচ্চাদের পা সবল, মোটাতাজা ও চকচকে দেখাবে। এরূপ সঠিক ব্যবস্থাপনায় বাচ্চা ঠিকমতো খাবে এবং এদের খাদ্যথলি পরিপূর্ণ ও নরম থাকবে।

বাচ্চা পরিবহন ও ব্যবস্থাপনা
বাচ্চার নিরাপত্তা ও সাচ্ছন্দ্যের জন্য নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কার্গো সেন্টার থেকে খামার পর্যন্ত বাচ্চা পরিবহনের জন্য অবশ্যই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবহন/যানবাহন ব্যবহার করতে হবে। বাচ্চাদের নিরাপত্তা, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, সাচ্ছন্দ্য ও সুস্বাস্থ্য রক্ষার্থে পরিবহনকালে নিম্নলিখিত ব্যবস্থাসমূহ প্রতিপালন বিশেষভাবে জরুরিঃ
* বাচ্চা বহনের পূর্বে পরিবহনের গাড়িটি অবশ্যই জীবাণুনাশক দ্বারা ভালোভাবে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে।
* পরিবহনের গাড়িতে অবশ্যই বায়ু চলাচলের ভালো ব্যবস্থা থাকতে হবে যাতে বাচ্চারা পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন পেতে পারে এবং স্বাস্থ্যকর অবস্থা বজায় থাকে।
* কম জায়গায় বেশি বাচ্চা বা বাচ্চার কাটুর্ন গাদাগাদি করে রাখা মোটেও ঠিক নয় কারণ এর ফলে বাতাসের প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হবে ও গরমের আধিক্য দেখা দিবে।
* বাচ্চা পরিবহনকালে গাড়ির চালককে সংযত হয়ে গাড়ি চালাতে হবে কারণ গাড়ির গতি বেশি হলে ঝাঁকুনি বেশি হয়। এতে বাচ্চাদের কষ্ট হবে। তাছাড়া গাড়ির গতি বেশি থাকলে ব্রেক চাপার সময় স্বভাবতই ধাক্কা লাগে। এতে বাচ্চারা একে অপরের উপর গিয়ে পড়ে। এ ধরনের সমস্যা বেশি হলে বাচ্চারা hock joint এ আঘাত প্রাপ্ত হয় ও সেখানে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। পরবর্তী পর্যায়ে সেখানে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে। এর ফলে ব্রুডিং এর সময় বাচ্চা খোঁড়া ও অন্যান্য সমস্যায় ভুগতে থাকে।

বাচ্চার সুস্বাস্থ্য রক্ষার্থে প্রারম্ভিক পুষ্টির গুরুত্ব
বাচ্চার মৃত্যুহার কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ ও এদের দৈহিক বৃদ্ধি যথাযথ রাখার জন্য প্রারম্ভিক পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। হ্যাচারীতে বাচ্চা ফোটার পর দীর্ঘসময় পরিবহনের মাধ্যমে খামারে বাচ্চা আনীত হয়। এর ফলে বাচ্চার দেহের সঞ্চিত শক্তি ও বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি দেখা দেয়। এজন্য খামারে বাচ্চা পৌছানোর পরই পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য সরবরাহ করে এই ঘাটতি পূরণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। তাই খামারে বাচ্চা পৌছানোর পর ১-৩ দিন দ্রবণীয় (soluble) ও সহজপাচ্য পুষ্টিকর খাদ্য প্রদান করা উচিত। এ ক্ষেত্রে extruded feed খাওয়ানো উত্তম। এর ফলে ব্রুডিং এর সময় খোঁড়া, বিকলাঙ্গ বা অসমভাবে বেড়ে ওঠা বন্ধ হয়ে বাচ্চারা সুষমভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হবে।
বাচ্চা খামারে পৌছানোর পর অতি দ্রুত পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য প্রদানের কারণ হচ্ছে মাতৃগর্ভ থেকে প্রাপ্ত ডিমের কুসুম থলির উপর নির্ভর না করা। এর কারণ হচ্ছে, কুসুম থলি থেকে প্রাপ্ত পুষ্টি বাচ্চা ফোটার পর কিছু সময় পর্যন্ত বাচ্চাকে পুষ্টি জোগান দেয়। এজন্য বাচ্চাকে দ্রুত পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার সরবরাহ না করলে এদের পরিপাকতন্ত্রের উন্নতি সাধন ব্যাহত হবে ও প্রয়োজনীয় দৈহিক বৃদ্ধি থেকে বাচ্চারা বঞ্চিত হবে।

আমরা জানি, বিভিন্ন ধরনের এন্টিবডি সৃষ্টিতে বার্সা অব ফেব্রিসিয়াস (Bursa of Fabricius) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং এই কার্যক্রম চালুর জন্য বাচ্চা ফোটার ৪ দিনের মধ্যে বার্সা সব ধরনের কাজ শুরু করে। এর ফলে বাচ্চা ফোটার সময় বার্সাল নালী (Bursal Lumen) উন্মুক্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় পরিবেশের এন্টিজেনসমূহ বার্সাল লুমেনে প্রবেশ করে ও পরবর্তীতে লিস্ফয়েড ফলিকুলস এ একক ও ঘূর্ণায়মান চোষক হিসাবে অবস্থান করে। ধারণা করা হয়, বার্সাল পেরিফেরাল অঙ্গের কাজ হলো এন্টিজেনের বিরুদ্ধে স্টেম সেলকে (Stem cell) সক্রিয় করে দ্রুত বিস্তার ঘটানো। এর ফলে সৃষ্ট এন্টিবডি এন্টিজেনকে প্রতিরোধে সক্ষম হয়।
বাচ্চা ফোটার পরবর্তী পর্যায়ে পরিপাকতন্ত্র অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় থাকে। কারণ এ সময় পরিপাকতন্ত্রের পূর্ণ সিস্টেমটি অকার্যকর অবস্থা থেকে কার্যকর হবার প্রক্রিয়ায় থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, বাচ্চা ফোটার পরবর্তী পর্যায়ে খাদ্যের প্রভাব ক্ষুদ্রান্তের উন্নতি সাধন করে। বিজ্ঞানী ডিবনার্স এর মতে বাচ্চা ফোটার পরবর্তী পর্যায়ে খাদ্যের প্রয়োগ বার্সার উন্নয়ন সাধন করে।
প্রারম্ভিক বয়সে পুষ্টি বাচ্চার দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নে কার্যকর প্রভাব ফেলে। গবেষণায় দেখা গেছে বাচ্চা ফোটার ১ম দিন থেকে সব ধরনের সিস্টেম উন্নয়নের জন্য একটি সংকটপূর্ণ সময় অতিবাহিত হয়। এ কারণে দীর্ঘমেয়াদি সাফল্যের জন্য বাচ্চা ফোটার প্রথম দিন থেকে পরিমিত পরিমাণ পুষ্টি নিশ্চিত করা এবং সঠিক পরিচর্যা এতো গুরুত্বপূর্ণ। প্রারম্ভিক পুষ্টির চাহিদা পূরণ করলে বাচ্চার পরিপাকতন্ত্রের গঠন, ইমিউন সিস্টেম (Immune System), বার্সার উন্নয়ন, তাপ সহিষ্ণুতা এবং পেশী বৃদ্ধি সঠিক সময়ে উপযুক্তভাবে সুগঠিত হবে।

পানি সরবরাহের গুরুত্ব
একদিন বয়সের বাচ্চা ফার্মে পৌছানোর সাথে সাথে বাচ্চাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পরিষ্কার পানি পানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সরবরাহকৃত বাচ্চার পানযোগ্য পানির তাপমাত্রা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অধিক ঠান্ডা পানি বাচ্চার দেহের তাপমাত্রা অতি শীঘ্রই কমিয়ে ফেলে এবং তা প্রতিহত করার মত ক্ষমতা বা পর্যাপ্ত শক্তি কোনটিই বাচ্চার দেহে থাকে না। আবার বাচ্চা গরম পানিও পান করতে পছন্দ করে না। কাজেই বাচ্চার জন্য সরবরাহকৃত খাবার পানির তাপমাত্রা ২০-২৫০ সে এর মাঝে সংরক্ষণ করতে হবে। এই সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে ছোট ছোট পানির পাত্র সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে নিপল ড্রিংকার ব্যবহারকারীদের নিপল থেকে সরবরাহকৃত পানির চাপ কমাতে হবে; যাতে বাচ্চাগুলি ফোঁটায় ফোঁটায় ঝলমলে পড়া পানি পান করতে আকৃষ্ট হয়। বিশেষ করে ধকল পীড়িত বাচ্চা যে গুলোর নড়াচড়া করার মত শক্তি থাকে না সে বাচ্চাগুলো নিপলে পানির চাপ যদি বেশি হয়, তাহলে তা পান করতে পারে না। সুন্দর বা সহজ ব্যবস্থাপনার জন্য অতিরিক্ত কিছু ছোট ছোট পানি ভর্তি পানির পাত্র, প্ল্যাস্টিক ট্রে, ব্যবহারিক ট্রে এবং ব্রুডার ব্যবস্থাপনায় অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সবর্দা প্রস্তুত রাখা দরকার।
মুরগির বাচ্চা
সঠিক ব্যবস্থাপনায় প্রথম ৮ ঘন্টা পর বাচ্চার খাদ্য থলির ৮০% পূর্ণ হয়

বাচ্চার সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য প্রচুর পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রয়োজনে পানির সাথে ইলেকট্রোলাইট বা চিনি মিশিয়ে দ্রবণ তৈরি করে খাওয়ানো যেতে পারে। তবে নিপল ব্যবস্থাপনায় এই মিশ্রণ ব্যবহারের সময় পানির রাস্তায় আঠার মত লেগে অনেক সময় পানির লাইন বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কাজেই এমন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি যাতে না হয় সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

খাদ্য সরবরাহ
পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার পর খাদ্য পরিবেশন করতে হবে। একদিন বয়সের বাচ্চা সাধারণত কার্বোহাইড্রেট সহজভাবে হজমের মাধ্যমে তাদের দেহে শক্তি সঞ্চার করে এবং এভাবে তাদের ব্যয়িত শক্তির ঘাটতি পূরণ করে থাকে। পানির পাত্রের সরবরাহ কম হলে বাচ্চা পানির পাত্র খুঁজে পায় না। ফলে ক্ষুধা নিবারণের জন্য তাড়াহুড়ো করে শুকনা খাদ্য খেয়ে অনেক সময় বিভিন্ন সমস্যায় পড়ে। এ ধরনের সমস্যা থেকে বাচ্চাকে নিরাপদে রাখার জন্য একই সাথে পানি এবং খাদ্য সরবরাহ করা উচিত। প্রতিবারই খাদ্য এবং পানি সরবরাহের পর কিছু খাদ্য ভিজে নষ্ট হয়। এই পানিতে ভিজা খাদ্য পুনরায় খাদ্য সরবরাহের সময় পরিষ্কার করে শুকিয়ে খেতে দেয়া উচিত। অন্যথায় ঘরের উচ্চ তাপমাত্রায় খাদ্যে ব্যাকটেরিয়া এবং মোল্ড অতি দ্রুত জন্মাতে পারে। প্রয়োজনে বাচ্চাকে চিনির দ্রবণ ভিটামিনের সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। বাচ্চার জন্য ভাত সহজপাচ্য এবং বাচ্চা এটা হতে প্রচুর কার্বোহাইড্রেট পেতে পারে। এছাড়া ভাঙ্গা কর্ণও বাচ্চাকে খাওয়ালে একই ফল পাওয়া যাবে।
মুরগির বাচ্চা
সঠিক ব্যবস্থাপনায় প্রথম ২৪ ঘন্টা পর বাচ্চার খাদ্য থলির ৯০% পূর্ণ হয়

ধকল বা পীড়নজনিত কারণে যে বাচ্চা গুলো চোখ বন্ধ করে থাকে, সেগুলোকে ডুপালাইট (০.৯% সোডিয়াম ক্লোরাইড) অথবা সিরাম ইলেকট্রোলাইট চামড়ার নীচে ইনজেকশন করা যেতে পারে। বাচ্চার ঘাড়ের চামড়ার নীচে ১ মিলি করে ঝুঁকিমুক্তভাবে ইনজেকশন করা যেতে পারে। ভাল ফল পাওয়ার জন্য এটা একটা বিশেষ উপায়। বাচ্চা পৌছানোর পর বেশ কিছু সময় বিশ্রাম নেয়ার পর চমড়ার নীচে এই ইনজেকশন দেয়া যায়।
মুরগির বাচ্চা
সঠিক ব্যবস্থাপনায় খাদ্য গ্রহণের পর বাচ্চার খাদ্য থলির প্রকৃত অবস্থা

তবে বাচ্চাগুলোকে সাধারণ পানি হতে দূরে রাখতে হবে। কোনো কারণে ইলেকট্রোলাইটের অভাব হলে সেক্ষেত্রে ম্যারেক ডায়লুয়েন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।

অন্যান্য আবশ্যকীয় সরঞ্জামাদি
প্রথম দিনে ঘন্টা বাজিয়ে পানি ও খাদ্য সরবরাহের অভ্যাস করলে বাচ্চা অতি সহজে পানি এবং খাদ্য খুঁজে পেতে পারে। ফলে বাচ্চার ধকল বা পীড়ন অনেকটা কমে যায়। এমতাবস্থায় বাচ্চাদেরকে সম্পূর্ণ ব্রুডারের মাঝে ছেড়ে দেয়ার পর যদি এরা ব্রুডারের প্রান্ত দেশেও অবস্থান করে তথাপি এদের পানি ও খাদ্য খুঁজে খেতে অসুবিধা হয় না। তবে চেইন ফিডার ব্যবহারকারীর ক্ষেত্রে বাচ্চা এভাবে মেঝেতে ছেড়ে দেয়া যাবে না, কারণ বাচ্চাগুলি চেইনের উপর লাফালাফি করে থাকে। কিন্তু দুর্বল বাচ্চাগুলির শক্তি কম থাকায় ঐভাবে লাফালাফি করতে পারে না। চেইন ফিডার এমনভাবে স্থাপন করতে হবে যাতে বাচ্চা চেইনের নীচ দিয়ে যাতায়াত করতে পারে এবং সুন্দরভাবে বিচরণ করতে পারে বা অতি সহজভাবে খাদ্য ও পানি পানের সুবিধা পায়। প্রথম সপ্তাহে বাচ্চাকে কাগজে ছড়ায়ে খাবার দেয়ার অভ্যাস করাটা উত্তম। একদিন বয়সের বাচ্চার ঘরে পানিশূন্যতা রোধ করার জন্য বাতাসের আর্দ্রতা কমপক্ষে ৬৫% নির্ধারণ করতে হবে। ঘরের একপাশে সর্বদা পানি ভর্তি বড় বালতি রাখতে হবে এবং প্রয়োজনে বাচ্চাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ঝলমলে নিপল লাইনের ব্যবস্থা করতে হবে।

তাপমাত্রা
একদিন বয়সের বাচ্চাদের ধকল বা পীড়ন রোধ করা জন্য ব্রুডার ঘরে সঠিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বাচ্চার সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য ব্রুডার ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা অপেক্ষা ১-২০ সে বেশি তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। উল্লিখিত সব ব্যবস্থাদি সঠিকভাবে সম্পন্ন করার পর বাচ্চার দেহের তাপমাত্রা নেয়া যেতে পারে। বাচ্চার দেহের উপযুক্ত তাপমাত্রা হবে ৪০০ সে। এখানে উল্লেখ্য যে, বাচ্চার সুস্বাস্থ্য রক্ষা এবং সার্বিক বৃদ্ধির জন্য দেহের প্রকৃত তাপমাত্রা ৪০০ সে এ নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি এবং এজন্য ব্রুডার ঘরের তাপমাত্রা অবশ্যই সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। রেকটাল তাপমাত্রা ইনফ্রারেড এয়্যার থার্মোমিটার দ্বারা অতি সহজেই নির্ণয় করা যায়।

উপসংহার
বিমানযোগে আমদানিকৃত এক দিনের বাচ্চা পেরেন্ট স্টক খামার পর্যন্ত পৌছানের পথে যে সমস্ত প্রতিবন্ধকতার উদ্ভব হতে পারে সে বিষয়ে উপরে বিস্তারিত আলোচনা এবং তা উত্তরণের সম্ভাব্য ব্যবস্থাদির উল্লেখ করা হয়েছে। তবে বাস্তব ক্ষেত্রে যেটা প্রত্যক্ষ করা যায় তা হলো বিমানযোগে বাচ্চা বিমানবন্দরে পৌছানোর পর তা ছাড় করার ক্ষেত্রে অনভিপ্রেত দীর্ঘসূত্রিতা। এখানে মনে রাখা প্রয়োজন যে বিমান থেকে বাচ্চা নামানোর পর আর্দ্রতা ও তাপমাত্রার একটি বিরাট তারতম্য ঘটে। এই অবস্থায় কার্গো সেন্টারে বাচ্চাদেরকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। যেক্ষেত্রে অত্যন্ত স্পর্শকাতর (বিশেষ করে পরিবেশিক প্রভাবের ফলে) এক দিনের বাচ্চাকে ন্যুনতম স্বল্প সময়ে হস্তান্তরের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন সেক্ষেত্রে কার্গো সেন্টারের প্রতিকূল পরিবেশে বাচ্চাদেরকে দীর্ঘ সময় থাকতে হয়। এর ফলে যে ধকলের সৃষ্টি হয় তার বিরূপ প্রভাব অতি অল্প সময়েই প্রত্যক্ষ করা যায়। বাচ্চাদের প্রারম্ভিক বয়স এ ধরনের দুর্যোগপূর্ণ ও প্রতিকূল পরিবেশে শুরু হলে তার বিরূপ প্রভাব পরবর্তী জীবনে সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। এর ফলে অস্বাভাবিক মৃত্যুহার, দৈহিক বৃদ্ধি ঘাটতি, কাঙ্খিত উৎকর্ষতা ও উৎপাদনের অবনতি ইত্যাদি লক্ষ্য করা যায়।
পোল্ট্রি ফার্মের উৎকর্ষতা সমুন্নত রাখার জন্য তাই প্রয়োজন বিমানযোগে আনীত এক দিনের বাচ্চাদের নূ্যনতম সময়ে কাস্টমস্ কর্তৃপক্ষ কতৃক আমদানিকারকের নিকট হস্তান্তর করা। বিষয়টি অতীব জরুরি বিধায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কর্তৃক এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলো।

লেখক: মোঃ শহীদুল ইসলাম
বিজনেস ডেভলপমেন্ট ম্যানেজার-এজি, এ্যাডভান্স এনিমেল সায়েন্স কোং লিঃ
তথ্যসূত্র: পোলট্রি, পশুসম্পদ ও মৎস্য বিষয়ক মাসিক পত্রিকা ‘খামার’