Saturday, August 25, 2018

নবী মুহাম্মদ ও তার পুত্রবধু বা পরস্ত্রী জয়নাবের শ্রেষ্ঠ অমর প্রেম কাহিনী।


হে মুমিন, আপনারা কি জানেন , নবী মুহাম্মদ ছিল দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ প্রেমিকও ? 
নবী যখন খাদিজাকে বিয়ে করে ,বিধবা খাদিজার আগেই কয়টা মেয়ে ছিল , কিন্তু কোন ছেলে ছিল না। কিছু বনিক ৫ বছরের একটা শিশুকে খাদিজার কাছে বিক্রি করতে নিয়ে আসে। ছেলে বিহীন খাদিজা সেই শিশুকে ক্রয় করে , দাসের মর্যাদা না দিয়ে তাকে নিজ পুত্রের মত গ্রহন করে। তার স্বামী মুহাম্মদও তাকে পুত্রের মর্যাদা দিয়ে বড় করতে থাকে , এক পর্যায়ে , প্রকাশ্যে ঘোষণা দেয় , সেই দাস শিশু জায়দ তার ছেলে। তখন সবাই জায়দকে ডাকত - জায়দ ইবনে মুহাম্মদ বা মুহাম্মদের পূত্র জায়দ।

জায়দ যখন যুবক হয় , তখন মুহাম্মদ নিজেই ঘটকালি করে জায়দের সাথে মুহাম্মদেরই আত্মীয় সম্পর্কিত জয়নাবের বিয়ে দিয়ে দেয়। তারা সুখেই সংসার করছিল কিন্তু হঠাৎ ঘটল এক দুর্ঘটনা। একদা মুহাম্মদ জায়দের বাড়ীতে যায় , তখন জায়দ বাড়ীতে ছিল না , মুহাম্মদ দরজার ফাক দিয়ে ভিতরে উকি মারে , আর তার চোখে ঘরের মধ্যে থাকা অর্ধ নগ্ন জয়নাবকে চোখে পড়ে। মুহাম্মদ তখন বিড় বিড় করে এই বলতে বলতে চলে আসে - আল্লাহ কার মনে যে কি পরিবর্তন করে দেয় ! বুদ্ধিমতী জয়নাব যা বোঝার বুঝে ফেলে। টের পায় মুহাম্মদের হৃদয় তার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। পরে জায়দ বাড়ীতে আসা মাত্রই মুহাম্মদের আসার খবর সহ সে যা বলতে বলতে চলে যাচ্ছিল সেই খবরও জয়নাব জায়দকে জানায়। জায়দও বুঝে ফেলে , তার পালক পিতা মুহাম্মদ , তারই স্ত্রী বা পুত্রবধুর প্রেমে পড়েছে। সেটা বোঝার সাথে সাথেই জায়দ কাল বিলম্ব না করে মুহাম্মদের কাছে ছুটে যায় , মুহাম্মদকে বলে - সে এখনই জয়নাবকে তালাক দিয়ে দেবে যাতে করে মুহাম্মদ জয়নাবকে বিয়ে করতে পারে।
এর পরের ঘটনা ইতিহাস। তখন যা ঘটে তা কোরান থেকেই জানা যাক --
সুরা আহযাব- ৩৩:৪:আল্লাহ কোন মানুষের মধ্যে দুটি হৃদয় স্থাপন করেননি। তোমাদের স্ত্রীগণ যাদের সাথে তোমরা যিহার কর, তাদেরকে তোমাদের জননী করেননি এবং তোমাদের পোষ্যপুত্রদেরকে তোমাদের পুত্র করেননি। এগুলো তোমাদের মুখের কথা মাত্র। আল্লাহ ন্যায় কথা বলেন এবং পথ প্রদর্শন করেন।
যখনই আল্লাহ জানতে পারল , মুহাম্মদ তার পুত্রবধুর প্রেমে পড়েছে , তখনই সে আয়াত পাঠিয়ে জানিয়ে দিল - পালক পুত্র কোন পুত্র নয়। এরপরের আয়াত পড়া যাক --
সুরা আহযাব-৩৩: ৫: তোমরা তাদেরকে তাদের পিতৃপরিচয়ে ডাক। এটাই আল্লাহর কাছে ন্যায়সঙ্গত। যদি তোমরা তাদের পিতৃ-পরিচয় না জান, তবে তারা তোমাদের ধর্মীয় ভাই ও বন্ধুরূপে গণ্য হবে। এ ব্যাপারে তোমাদের কোন বিচ্যুতি হলে তাতে তোমাদের কোন গোনাহ নেই, তবে ইচ্ছাকৃত হলে ভিন্ন কথা। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
জায়দ যখন মুহাম্মদের ঔরসজাত পুত্র নয় , তখন আল্লাহ বলছে , জায়দ হলো আসলে মুহাম্মদের ধর্ম ভাই বা বন্ধু। আর এর অর্থও খুব পরিস্কার। তা হলো - জায়দ যখন মুহাম্মদের কাছে পূর্বে গিয়ে প্রস্তাব দিয়েছিল , সে জয়নাবকে তালাক দিবে , তখন মুহাম্মদ রাজী হয় নি, কারন মুহাম্মদ ও সমাজ সবাই জানত জায়দ মুহাম্মদের পুত্র ও জয়নাব তার পুত্রবধু। এবার কোরানের আয়াত নাজিল করে মুহাম্মদ বলল - জায়দ তার পুত্র নয় ,বরং ধর্মের ভাই বা বন্ধু। যার অর্থ হলো - এখন জায়দ তার স্ত্রীকে তালাক দিলে তাকে বিয়ে করতে মুহাম্মদের আর কোন অসুবিধা নেই। অত:পর জায়দ জয়নাবকে তালাক দিল , আর মুহাম্মদের সাথে ধুম ধামের সাথে তার বিয়ে হয়ে গেল।
যারা ইসলাম প্রচার কারী, তাদের যুক্তি হলো - পালক পুত্র যে আসল পুত্র না , সেটা প্রমান করার জন্যেই এই বিয়ের দরকার ছিল। এ ছাড়া তারা আরও বলে পালক পুত্র বলে কিছু থাকলে , সম্পদ বন্টনের জন্যে সমস্যা এড়ানোর জন্যেই পালক পুত্রের এই প্রথা যাকে তারা বর্তমানে অত্যন্ত একটা খারাপ , বাজে ও অমানবিক প্রথা হিসাবে গন্য করে , সেটা রদ করার জন্যেই মুহাম্মদ এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছিল।
আমাদের যুক্তি হলো - ইসলাম প্রচার কারীদের দাবী যদি সঠিক হয় , তাহলে মুহাম্মদ জয়নাবের প্রেমে পড়ার আগেই কেন এই বিধান জারি করে নাই ?প্রেক্ষাপট , শানে নুযুল ইত্যাদি পরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে , মুহাম্মদ আগে জয়নাবের প্রেমে পড়েছিল , তারপরই সে উক্ত আয়াত সমূহ নাজিল করে। মুহাম্মদে যে আগেই প্রেমে পড়েছিল , সেটা বোঝা যায় নিচের আয়াতে -
সুরা আহযাব- ৩৩: ৩৭: আল্লাহ যাকে অনুগ্রহ করেছেন; আপনিও যাকে অনুগ্রহ করেছেন; তাকে যখন আপনি বলেছিলেন, তোমার স্ত্রীকে তোমার কাছেই থাকতে দাও এবং আল্লাহকে ভয় কর। আপনি অন্তরে এমন বিষয় গোপন করছিলেন, যা আল্লাহ পাক প্রকাশ করে দেবেন আপনি লোকনিন্দার ভয় করেছিলেন অথচ আল্লাহকেই অধিক ভয় করা উচিত। অতঃপর যায়েদ যখন যয়নবের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করল, তখন আমি তাকে আপনার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করলাম যাতে মুমিনদের পোষ্যপুত্ররা তাদের স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলে সেসব স্ত্রীকে বিবাহ করার ব্যাপারে মুমিনদের কোন অসুবিধা না থাকে। আল্লাহর নির্দেশ কার্যে পরিণত হয়েই থাকে।
উক্ত আয়াতে বলছে ---" আপনি অন্তরে এমন বিষয় গোপন করছিলেন, যা আল্লাহ পাক প্রকাশ করে দেবেন আপনি লোকনিন্দার ভয় করেছিলেন "- কি সেই গোপন বিষয় ? সেই গোপন বিষয়টা যে কি সেটা বিখ্যাত তাফসিরকার জালাজালাইন বলেছেন যেমন - "‘Retain your wife for yourself and fear God’ before divorcing her. But you had hidden in your heart what God was to disclose what He was to manifest of your love for her "
(সূত্র: https://altafsir.com/Tafasir.asp…)
জালালাইন পরিস্কার ভাবেই বলছেন He was to manifest of your love for her । আর কোন প্রমান লাগবে ?
প্রশ্ন হলো - এই ধরনের একটা অনৈতিক প্রেমে পড়ার আগে কি আল্লাহর মাথায় এই সম্পদ বন্টনের বিষয়টা আসে নাই ?
আরও একটা যুক্তি হলো - ধরা যাক , জায়দ মুহাম্মদের পালক পুত্র না। সে ক্ষেত্রে জয়নাব হবে সম্পূর্নই মুহাম্মদের কাছে এক বিবাহিতা বেগানা নারী। মুহাম্মদ তাহলে কিভাবে পরস্ত্রীর প্রেমে পড়তে পারে ? মুহাম্মদ তো দাবী করেছিল , সে হলো পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট আদর্শ মানুষ , যাকে কেয়ামত পর্যন্ত সকল মুসলমানরাই অনুসরন করবে। তাহলে এখন কি মুসলমানরা মুহাম্মদের দেখানো পথে সবাই পরস্ত্রীর সাথে প্রেম শুরু করে দেবে ? যদি সেটা শুরু করে , তাহলে মুসলিম সমাজের অবস্থাটা কি দাড়াবে ?
পুত্র বধু বা পরস্ত্রীর সাথে মুহাম্মদের এই প্রেম ছিল বড়ই জটিল ও কঠিন প্রেম। সেই কারনেই খোদ আল্লাহকে সরাসরি হস্তক্ষেপ করে , এই প্রেমের মিলন ঘটাতে হয়। সেই জন্যে জয়নাব প্রায়ই গর্ব করে বলত - দুনিয়াতে একমাত্র তার বিবাহের ঘটক ছিল আল্লাহ। সুতরাং এই প্রেক্ষিতে বলা যায় , মুহাম্মদ ও জয়নাবের প্রেম হলো দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ট প্রেম কাহিনী।