Sunday, August 19, 2018

সংসার।

সম্পর্ক ভেঙে গেলে অন্য মানুষটার প্রতি নানান অভিযোগ থাকে। একে অপরকে নানানভাবে দোষারোপ করে। আবার এভাবেও বলা যায়–অভিযোগ থাকে বলেই সম্পর্ক ভাঙে।
কিন্তু সম্পর্ক গড়ার বেলায় মানুষ দোষগুণ মেনে নিয়েই সম্পর্ক গড়ে। শত হলেও–দোষে-গুণে মানুষ। গুণের পাশাপাশি দোষ বেশিও থাকতে পারে। কিন্তু একে অপরের প্রতি দোষ ত্রুটি অন্যায় অবিচার–কেয়ারলেস হলে, ভালোবাসা কমতে শুরু করলে সম্পর্কে ভাঙন ধরবে। স্বাভাবিক! তবে যাদের ‘যাওয়ার জায়গা’ নেই, তারা শত ঝামেলা করে হলেও সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে বাধ্য হয়।
অনলাইনেও সম্পর্ক ভাঙার খবর আসে। সম্পর্ক ভাঙার পরে কার কী কী দোষ ছিল–সেসবের লিস্টি বের হয়। তখন মনে মনে নিজের একটা লিস্ট করি–(অবশ্য এই লিস্ট যদি বউ করে তাহলে লিস্টটা কয়েক হাজার গুণ বেশি লম্বা হবে নিশ্চিত।)
আমেরিকার মত জায়গায় ‘ভালো থাকতে’ খুব বেশি টাকাপয়সার দরকার হয় না। অবশ্য যারা খুব উচ্চাভিলাষী, তাদের কথা আলাদা। আমার মত দিন আনি দিন খাই টাইপের সাদা-সিধে লাইফ হলে তো কথাই নেই…ঘরে সুন্দরী বউ, সুন্দর সুন্দর বাচ্চা-কাচ্চা নাতি-পুতি নিয়ে সুখে-শান্তিতে মরে না যাওয়ার কোনো কারণই নেই। তারপর বউ যদি আবার অত কেয়ার করে… একটু-আধতু ভালোও হয়তো বাসে। কিন্তু আমার একটাই সমস্যা–আমি সংসারী টাইপের না। বউয়ের চোখে এটাই আমার সবচেয়ে বড় দোষ–নিজেও জানি।
এছাড়া বউ-বাচ্চা নিয়ে সংসারে থাকতে গেলে আরো অনেক সংসারী গুণ থাকা জরুরী–তার কিছুই আমার নেই। বউ কেয়ার করে বলে বাজার করা, রান্না করা থেকে শুরু করে সকল প্রকার কাজ থেকে বলতে গেলে অবসর নিয়েছি। জীবনের প্রতি এতটা উদাস আর নির্লিপ্ত হয়ে পড়েছি যে কোনো কিছুতেই আর কিছু যায় আসে না…। বাধ্য হয়ে খেতে হয়, কামলা দেই, বাসায় এসে আবার খেয়ে ঘুমাই, আর দিন দিন ভুড়ি বাড়াই। ঘরদোর পরিষ্কার করি না, বউ-বাচ্চার দেখাশোনা করি না, বাইরে ঘুরতে যাই না, আলসেমি করে গোসল দেই না, চুল-দাড়ি কাটি না, ডাক্তার-ডেন্টিস্ট দেখাই না, লাগাইতে ইচ্ছে করে না–ফাইনালি, বউরে দাসীর মত খাটাই… ওদিকে আবার ফেসবুকে বড় বড় লেকচার ঝাড়ি… অনলাইনে কচি কচি মেয়েদের সাথে ফস্টি-নস্টি করি… (বউয়ের বক্তব্য)। সেই সাথে নামধাম ফাঁস করে দেয়ার হুমকি… এমন সব খারাপ খারাপ ছবি পোস্ট করে দেয়ার হুমকি যা দেখে কোনো মেয়ে যেন আর ফিরে না তাকায় (অবশ্য এমনিতেই চেহারা কোনোকালেই ভালো ছিল না বলেই আজ পর্যন্ত ফেসবুকে একটা ছবিও দেয়া হয়ে উঠেনি)…
আরো সমস্যা–বউ যখন লেকচার শুরু করে তখন সেগুলা এক কান দিয়ে ঢোকে তো অন্য কান দিয়ে সাথে সাথে বের হয়ে যায়… হয়তো বেশিরভাগ কথা কানেই ঢোকে না… সে ঝগড়া করতে আসে, কান্নাকাটি শুরু করে, আর আমি ঝগড়ায় অংশগ্রহণ তো করিই না, উলটা মিটমিট করে হেসে তার মেজাজ আরো খারাপ করে দেই। মেজাজ খারাপ হলে গায়ের উপর চলে আসে, তখন একটু-আধতু ধাক্কাধাক্কি-মারামারি… তারপর তার পা ছড়িয়ে কাঁদতে বসা, বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার নাটক করা… (সেই সাথে যেসব মেয়েরা পোস্টে লাইক দেয়, তাদেরকে কল দিয়ে গালাগালি করার হুমকি… কারণ এদের সবার সাথেই নাকি আমার গুপন সম্পর্ক আছে) তখন আবার বাধ্য হয়ে নাটকে অংশ নিতে হয়–দুঃখী-দুঃখী মুখ করে বাইরে যাওয়া আটকাতে হয়, বোঝাতে হয়…
আরো হাজারো দোষ (সময় আর জায়গার অভাবে লিখতে পারলাম না)… সম্পর্ক ভেঙে গেলে ‘সুখের চেয়ে স্বস্তি ভালো’ ভেবে সব মেনে নিয়ে প্রস্থান করতে রাজি। আর যদি একেবারেই প্রস্থান করি–তখনও কাউকে বিব্রত করতে চাই না বলে পুরো শরীরটাই মেডিক্যালে দান করা আছে–পুলিশ এসে ব্যবস্থা করবে। (এরপর আরো কিছু আঁতলামী টাইপের দার্শনিক কথাবার্তা লেখা যায়–হুদাই… অফ যাই…)