ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত বইয়ের দোকানে “কামসূত্র” নামক একটা মোটা বই বিক্রি করা হয়। আমরা ছেলেরা তো অনেক মজা করে এই “কামসূত্র” বইটা পড়ি কিন্তু আমরা কি জানি এই কামসূত্র বইটার প্রতি পাতায় পাতায় কত নির্যাতিতা নারীর কান্না লুকিয়ে আছে ? আপনারা কি জানেন এই কামসূত্র বইটার ইতিহাস কি ? এই কামসূত্র বইটার ইতিহাস জানতে হলে আগে আমাদের দেখতে হবে এই কামসূত্র বই টা কত আগে লেখা হয়েছে। কামসূত্র বইটা লেখা হয়েছে সংস্কৃত ভাষায়। কমপক্ষে ৩০০০ হাজার বছর পূর্বে এই “কামসূত্র” বইটা লেখা হয়। তো আজ থেকে ৩০০০ বছর পূর্বে ভারত বর্ষে পড়াশুনা লেখালেখি করত কারা ? অবশ্যই ব্রাক্ষণরা। হ্যা ক্ষত্রিয়রা পড়াশুনা জানত তবে সেটা শুধু রাজ্য চালানোর জন্য যতটুকু দরকার হয় ঠিক ততটুকুই। কিন্তু ক্ষত্রিয়রা কখনই লেখালেখির জগতে ছিল না। প্রাচীন ভারতে লেখালেখির কাজটা শুধু ব্রাক্ষণরাই করত।
ভারতবর্ষে ইসলাম আসার পূর্বে নিম্নবর্ণের হিন্দু মেয়েরা বিয়ের আগে মন্দিরে সেবাদাসী হিসাবে কাজ করতে হতো। মন্দির ধোয়া মোছা থেকে শুরু করে মন্দিরের ব্রাক্ষন পুরাহিতদের শয্যাসঙ্গী হওয়া এরকম প্রায় সব কাজই তাদের করতে হত। তো এই ব্রাক্ষণ পুরাহিতরা এই নিম্নবর্ণের হিন্দু মেয়েদের সাথে প্রতিদিন উপুর্যপুরী FREE SEX করতো। এই মেয়েরা কিন্তু ব্রাক্ষনদের কেনা দাসী ছিল না, তারা শুধু তাদের বিয়ের আগের সময়টা এই মন্দিরে কাজ করতো সেবা দাসী হয়ে। বিয়ের পর এই নিম্ন বর্ণের হিন্দু মেয়েরা আর মন্দিরে যেত না। ব্রাক্ষণ পুরোহিতরা তখন চিন্তা করে আমরা যে এত মজা করে FREE SEX করছি আমাদের উচিত এই SEX এর ক্রিয়াকৌশল গুলি ভবিষ্যত্ প্রজন্মকে জানানো। তখনই মন্দিরের এই ব্রাক্ষণ পুরাহিতরা কামসূত্র নামে এই বইটি লিখে। তাছাড়া কামসূত্র বইটি একদিনে লেখা হয় নি আর শুধুমাত্র মল্লনাগ বাৎস্যায়ন নামক এক ব্যক্তি এই বইটা লিখেন নি। অনেক জনের হাত দিয়ে অনেক সময় নিয়ে কামসূত্র বইটি লেখা হয়েছে তা বইটি উল্টাইলেই বুঝা যায়। আর কামসূত্র বইটির বিভিন্ন অধ্যায়কে আরও বিশদভাবে ব্যাখ্যা করে তৎকালীন ভারতীয় ব্রাক্ষন পুরাহিতরা রা বিভিন্ন গ্রন্থ রচনা করেন। যেমন ১. চারায়ণ লেখেন-সাধারণ কাম বিচার। ২. সুবর্ণাভ নামক লেখক লিখেন -যৌন কাম বিচার। ৩. ঘোটকমুখ লিখেন- যুবতী নারীর বিচার। ৪. গোমার্দীয় লিখেন-স্বামী-স্ত্রীর সম্বন্ধের বিচার। ৫. গণিকাপুত্র লিখেন-পরস্ত্রীগমন বিচার। ৬. দত্তক লিখেন-পতিতাদের কাম বিচার। ৭. কুচুমার লিখেন-দেহ সৌন্দর্য ও যৌনিক বৃদ্ধির উপায় বিচার।
আজও দক্ষিত ভারতের অনেক মন্দিরের গায়ে উলঙ্গ নারী পুরুষের এই কাম কলাগুলি প্রস্তর চিত্রের মাধ্যমে ফুটে আছে। [ তথ্যসূত্র: প্রাচীন ভারতের ইতিহাস, অতুল চন্দ্র রায়, নিঊ সেন্ট্রাল বুক এজেন্সি, ৮/১ চিন্তামণি দাস লেন, কল্কাতা-৭০০০৯]
হিন্দু ধর্ম শাস্ত্র মতে নিম্ন বর্ণের হিন্দুরা ব্রক্ষার পা থেকে জন্ম নিয়েছে। আমির খানের একটা অনুষ্ঠান নাম “সত্যমেভ” STAR PLUS CHANNEL এ ১ বছর আগে প্রতি রবিবারে হত। সেইখানে আমির খান একবার হিন্দু ধর্মের জাত প্রথা নিয়ে আলোচনা করাছিলেন। সেই “সত্যমেভ” অনুষ্ঠানে এক মন্দিরের ব্রাক্ষন পুরাহিত তার পা দেখিয়ে বলেছিল- “এই দাস রায় ভদ্র দত্ত পাল এই নিম্ন বর্ণের জাতের লোকেরা ব্রক্ষার পা থেকে জন্ম নিয়েছে। আমরা ব্রাক্ষণরা এদের কোন হিসাবেই ধরি না।” আজও দক্ষিন ভারতের প্রত্যন্ত গ্রামে এখনো সেবাদাসী প্রথা টা রয়ে গেছে। দক্ষিন ভারতে প্রত্যন্ত গ্রামে এখনো কোন নিম্ন বর্নের হিন্দু মেয়ের বিয়ে হলে বিয়ের আগে তাকে কোন উচ্চ বর্ণের ব্রাক্ষন পুরাহিতদের সাথে রাতে ঘুমাইতে হয়। ছি!
এমনকি এই সেবাদাসী প্রথা এখনো ভারতে চলছে। সম্প্রতি কর্ণাটক রাজ্যের দেবনগর জেলার উত্তরঙ্গমালা দুর্গা মন্দিরে রাতের বেলায় নারীদের দেবতার নামে ‘উৎসর্গ’ করার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে – এই মর্মে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের আবেদনের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন এক বেঞ্চ রাজ্যের মুখ্যসচিবকে ওই অনুষ্ঠান বন্ধ করার নির্দেশ দেন৷ ভারতের মন্দিরে যে এখনো সেবাদাসী প্রথা চলছে তা ভারতের মিডিয়াতেই বলা হয়েছে। আপনারা এই লিংকে যেয়ে এই ২০১৪ সালেও যে ভারতের মন্দিরে সেবাদাসী প্রথা চলছে তা জানতে পারবেন
আপনি কি জানেন কার মাধ্যমে ব্রাক্ষণদের কাম লালসার হাত থেকে এই নিম্ন বর্ণের হিন্দু মেয়েরা মুক্তি পেয়েছিল? উমাইয়া খিলাফতের সময়ে মুহাম্মদ বিন কাসিম যখন রাজা দাহির কে পরাজিত করে পাকিস্তানের সিন্ধু জয় করেন তখন মহান মুসলিম সেনাপতি মুহাম্মদ বিন কাসিম প্রথম ভারত বর্ষে এই সেবাদাসী প্রথাটা বন্ধ করেন। নিম্ন বর্ণের হিন্দু মেয়েরা তখন কৃতজ্ঞাতায় মুহাম্মদ বিন কাসিমের মূর্তি বানিয়ে পূজা শুরু করে দিয়েছিল। পরে অবশ্য মুহাম্মদ বিন কাসিম নিজ হাতে উনার সকল মূর্তি ভেঙ্গে ফেলেন। [ তথ্যসূত্রঃ আল-বেরুনীর ভারত তত্ত্ব] এই জন্যই স্বামী বিবেকানন্দ দাস বলেছিলেন- “ ইসলাম তো ভারত বর্ষের নিপীড়িত জনগণের জন্য ঈশ্বরের আশীর্বাদ হয়ে এসেছিল। ”
চিন্তা করে দেখুন ইসলাম যদি এই ভারতবর্ষে না আসতো তাইলে কি যে হত! আমি খুব অবাক হই যখন দেখি নেট জগতে ব্রাক্ষণ ছাড়া অন্যান্য গোত্র যেমন দাস রায় ভদ্র দত্ত পাল এই বংশের হিন্দু মেয়েরা ইসলাম ধর্মকে গালিগালাজ করে। আরে ইসলামই তো এইসব নিম্ন বর্ণের হিন্দু মেয়েদের কে ব্রাক্ষণদের লালসার হাত থেকে বাচিয়েছিল। সত্যিকথা বলতে কি ইসলাম যদি ভারতবর্ষে না আসত তাইলে আমরা এখনো ব্রাক্ষণদের দাস হিসাবেই থাকতাম। আর এই কারণে ব্রাক্ষণ ছেলেদের ইসলামের উপর এত রাগ। কারন ভারত বর্ষে ইসলাম আসার কারনেই তো ব্রাক্ষণদের FREE SEX করার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। আজকে যেই সকল হিন্দু পেইজের এডমিন রা তাদের পেইজে প্রতিদিন আল্লাহ ও তাঁর রাসুল কে গালিগালাজ করে যাচ্ছে আমি তাদের কে অনুরোধ করব আপনারা আগে শ্রী বিনয় ঘোষের “ভারত বর্ষের ইতিহাস”এই বইটা পড়ে আপনাদের ধর্মের সেবাদাসী প্রথাটা আগে ভাল করে বুঝেন তারপর দ্বীন ইসলামের সমালোচনা করেন। শ্রী বিনয় ঘোষ, অতুল চন্দ্র রায় থেকে শুরু করে অনেক বড় বড় হিন্দু ঐতিহাসিক ব্রাক্ষণদের লালসার হাত থেকে নিম্ন বর্ণের হিন্দু মেয়েদের কে বাঁচানোর জন্য মুসলিম শাসকদের উচ্ছসিত প্রশংসা করেছেন। আজকে যেইসব হিন্দু পেইজে প্রতিদিন আল্লাহ ও তাঁর রাসুল কে গালিগালাজ করা হচ্ছে সেইসব পেইজের এডমিন রা প্রাচীন ভারতের ইতিহাস সম্পর্কে বিন্দুমাত্র জানে না। যেই ধর্ম তাঁর অসহায় মেয়েদের কে মন্দিরের পুরাহিতদের লালসার বস্তু বানায় আর যাই হোক সেই ধর্ম কখনো মানব জাতিকে মুক্তি দিতে পারবে না।