Saturday, November 7, 2015

জীন ভুত নিয়ে গবেষণা [১ম,২য় পর্ব] 'জীন সম্পর্কে চমকপ্রদ তথ্য! তারা কি খায়, কোথায় থাকে, বিয়ে করে কি না+একটি জীন তাড়ানোর গল্প◄

১মঃ-
গত পর্ব আমি আপনাদের ভুত শব্দের বাংলা ও ইংরেজী অর্থ জানিয়েছিলাম । এই পর্ব ভুতের অস্তিত্ত নিয়ে আলোচনার পূর্বে জীন নিয়ে আলোচনা করবো । তার সাথে আলোচনা করবো জীন ভুত সম্মন্ধে সাধারণ লোকের কি ধারণা তা নিয়ে । [বি:দ্র:=আপনি পূর্বের পোষ্ট না পড়ে থাকলে এই পোষ্টের কিছু বুঝতে পারবেন না , বা বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে । তাই দয়ে করে আগে ১ম পর্ব পড়ে নিন ।] আপনাকে যদি কেউ প্রশ্ন করে জীন কি পৃথিবীতে আছে ? তাহলে আপনার উত্তর ইতিবাচক হবে ঠিকই কিন্তু আপনি প্রমাণ করতে পারবেন না কিভাবে জীন আছে ? পবিত্র কুরআনের সুরা যারিয়াহ এর ৫৬ নং আয়াতে আল্লাহ্ সোবহান ওয়া তাআলা বলেছেন যে " ওয়ামা খলাকতুল জিন্না ওয়াল ইনসা ইল্লা লিঈয়াবুদুন " । এর অর্থ " আমি আল্লাহ্ জীন ও মানব জাতিকে শুধু মাত্র আমার ঈবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি ।" তাহলে বুঝলেন তো নাকি ? যে জিন রয়েছে ।অন্যান্য ধর্মের অনুসারি হয়তো বা বিষয়টিকে মেনে নিয়ে নাও পারে কিন্তু সনাতন ধর্মাবলম্বমীদের জন্যও এর কথা আছে । তারা জীনকে উপদেবতা বলে থাকে ।[দেবতার নিচের আসন , দেবতা নয় তবে তাদের অনুপ্রেরণার আদর্শ=জীন] শুধু তাইই নয় পবিত্র কুরআনের এরকম আরও বহু আয়াতে এদের কথা আছে , এমনকি এদের নিয়ে একটি পূর্ণ সুরা ' সূরাতুল জ্বীন ' অবতীর্ণ হয়েছে । তবুওকি কেউ অস্বীকার করবে জীনকে ? যাই হোক জানা গেল যে জীন আছে । কিন্তু এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে জীনের সাথে ভুতের কি সম্পর্ক ? আমাদের মাঝে এমন অনেক ব্যক্তি আছে যারা বলে থাকেন যে খারাপ জীনরাই হলো ভুত । কথাটি অত্যন্ত মুর্খতার শামিল । কারণ খারাপ জীনরাই যদি ভুত হবে তাহলে ভাল জীনরা কি ফেরেস্তা হবে ? আসলে খারাপ জীনরা কখনো ভুত হতে পারেনা । অনকের মতে ভুতরা অমর । কিন্তু জীনরা মরণশীল , তাহলে খারাপ জীন ভুত হতে পারেনা । আমাদের মধ্য অনেক বলে থাকেন যে হিন্দু জীন রাই ভুত । একথাটা ও ভুল । কারন পবিত্র কুরআনের সূরা জীনের মধ্যবর্তী কিছু আয়াত থেকে [এই মুহুর্তে আয়াত নং মনে পড়ছেনা , আপনারা খুজলেই পাবেন । এখানে আমি আয়াত গুলোর ব্যখ্যা নিজের ভাষায় দিয়েছি] বোঝা যায় যে জীনরা প্রধাণত দুই দলে বিভক্ত । এক দল ঈশ্বরে বিশ্বাস করে বা তারা আস্তিক এবং অপর দল ঈশ্বরে বিশ্বাস করেনা । আস্তিক দলের সকলেই আল্লাহর উপর ঈমান এনে ইসলাম গ্রহন করেছে কিন্তু অপর দল কোন কিছুতেই ঈশ্বরের আনুগত নয় ।মজার ব্যাপার হলো জীনরা আল্লাহর সাথে শিরক করেনা কারণ তাদের মাঝে যারা আস্তিক তারা সকলেই মুসলিম । আরও একটি গুরুত্তপূর্ণ কথা হলো মানুষের মত তাদের মাঝে অনেক গুলি ধর্ম নেই । এটা আমার কথা নয় , পবিত্র কুআনের সূরা জীনে এর স্পষ্ট ব্যখ্যা পাবেন । আমাদের মাঝে এক শ্রেণীর লোক আছে যাদের মতে জীনরা মারা গেলে ভুত হয় । এটা নিত্যান্ত তাদের বানোয়াট কথা । আপনি পবিত্র কুরআনের কোথাও খুঁজলে পাবেন না যে সেখানে জীনদের মৃত্যুর পরের কথা লেখা আছে । শুধু এটা উল্যেখ করা আছে যে হাশরে ময়দানে তাদেরকেও বিচারের জন্য দাঁড়াতে হবে । আল্লাহ পবিত্র কুরআনের বলেছেন " হে মানুষ তোমাদের দোযখ হতে নিজেরা বাঁচ আর বাঁচাও তোমাদের আহালদেরকে [আহাল = অনুসারী] , যে দোযখের ইন্ধন [জ্বালানি] হবে মানুষ আর পাথর ।" এখানে জীনের কথা উল্যেখ নাই । তাহলে প্রশ্ন আসে যে পাপী জীনদের কি শাস্তি পেতে হবে না ? একটু চিন্তা করলেই আপনি পাবেন যে জীনরা আগুনের তৈরী তাই তাদেরকে আগুনে উত্তাপে দহন করা প্রশ্নই ওঠেনা । তাই আল্লাহ রাব্বুলআলামীন তাদেরকে অন্য কোন উপায়ে শাস্তি দিবেন , যা আমাদের জানা অপরিহার্য নয় তাই কুরআনে এই কথার উল্যেখ নাই । তাহলে আপনাদের প্রশ্ন হলো তাহলে ভুত কি ? এই প্রশ্নেরও ব্যখ্য সহ উত্তর আল্লাহ আমাকে জানিয়েছেন ।{আলহামদুলিল্লাহ্} । তবে ভুত সম্পর্ক জানতে হলে আপনাদের আগে আত্মার ধারণা দেওয়া প্রয়োজন । তাই আগামী পর্বে আত্মা নিয়ে বিষদ তথ্যসহ একটি ফিচার পোষ্ট করা হবে । তার পরই আপনাদের অতিকাঙ্খিত কথা ভুতের বিবরণ দেওয়া হবে । তাই আপনারা প্রতিদিনই একবার করে উকি মারবেন এই ব্লগে । ধন্যবাদ । ভৌতিষ্ট সূর্য । আর একটি কথা , এখানে কমেন্টের ব্যবস্থা আছে । তাই একটা কমেন্ট করবেন প্লিজ । আর ফেসবুক শেয়ারের ব্যবস্থা আছে , তাই আপনার ওয়ালে এই লিংকিটি শেয়ার করেন । ধন্যবাদ

২য়ঃ-
ভুত কথা টি অদ্ভুত একটা শব্দ । আমরা সচরাচর ভুত কথাটি শুনে থাকি । ভুত বলতে আপনি কি বোঝেন ? ভুত বলতে আমাদের মনের পর্দায় এক অশরীরীও এক সত্তা ভেসে ওঠে । অধিকাংশ ব্যক্তির মতে এর বাস্তব কোন অস্তিত্ত নেই । কিন্তু কি এই ভুত ? এর বাস্তব অস্তিত্ত কি আছে ? আছে । আসুন প্রথমে দেখে নেই ভুত শব্দটির অর্থ কি ? বাংলা অভুতপূর্ব শব্দের অর্থ হলো যা আগে কখনও দেখা যায়নি । এর বিপরীত শব্দ ভুতপূর্ব , যার অর্থ হলো যা আগে ছিল কিন্তু এখধ নেই । এই ভুতপূর্ব শব্দ থেকেই এসেছে বাংলা শব্দ ভুত । সেই সূত্রে ভুত শব্দের অর্থ হলো অতিত , যা গত হয়ে গিয়েছে বা যা আগে বর্তমান ছিল অথবা যার বর্তমান সাধারণ অস্তিত্ত নেই । কি বুঝলেন ? তাহলে ভুত শব্দের অর্থ দাঁড়াল অতিত বা পাস্ট PAST । আসুন এবার দেখা যাক ইংরেজী ghost (ঘোস্ট) শব্দের অর্থ কি ? ২০০৯ সালের প্রকাশিত ভারতের সেরা অভিধান সংসদ অভিধানে আছে ghost এর অর্থ ৭ টি । ১. পিশাচ ,demon (যা প্রাণীর রক্ত ভক্ষন করে বেঁচে থাকে । ) [আমি বলি :বাঁদুড় ও রক্ত খায় আর এক ধরনের টিকটিকি ও রক্ত খায় । তাহলে কি বাদুড় ও টিকটিকি ভুত । এদের তো বাস্তব অস্তিত্ত বিদ্যমান ।] ২.মৃত ব্যক্তির আত্মার সমাগম । spirit appearing after death . ৩.অপদেবতা a spirit. ৪.ক্ষিণ বা মিথ্যা আভ্যাস । a faint or false appearance . ৫.সাদৃশ্য । a semblence (not a ghost of hope). ৬.যে ব্যক্তি পরের হয়ে রচনাদি লেখে । ৭. আধ্যাত্মিক চেতনার কল্পিত রুপ । কিন্তু আমরা যে টা কে ভুত বলি সেটা কি ? তার কি বাস্তবে কোন অস্তিত্ত আছে ? আছে । সেটার ও বাস্তবিক আস্তিত্ত বিদ্যমান । আগামী পর্ব এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে । চলবে........( গবেষণায় ভৌতিষ্ট সূর্য )....

*************************************************************************************************
কুরআন অনুসারে জিন জাতি মানুষের ন্যায় আল্লাহ্ তা’য়ালার এক সৃষ্ট একটি জাতি যারা পৃথিবীতে মানব আগমনের পূর্ব থেকেই তারা ছিল এবং এখনো তাদের অস্তিত্ব রয়েছে। তবে মানুষের চর্মচক্ষে তারা দৃষ্টিগ্রাহ্য নয়। তবে জিনরা মানুষকে দেখতে পায়। তারা বিশেষ কিছু শক্তির অধিকারী। তাদের মধ্যেও মুসলিম এবং কাফির ভেদ রয়েছে। তারা মসজিদে নামাজ পড়তে আসে। তাদেরও সমাজ রয়েছে। তারা আয়ূ মানুষের চেয়ে অনেক বেশি।উদাহরনস্বরূপ, তারা ৩০০ বছর বয়সে প্রাপ্তবয়স্ক হয়। ঈমাম ইবনে তাইমিয়ার মতে জিন জাতি তাদের অবয়ব পরিবর্তন করতে পারে।
ইসলামের মতে জিন জাতি এক বিশেষ সৃষ্টি। কুরআনের ৭২তম সুরা আল জ্বিন এ শুধু জিনদের নিয়ে কথা বলা হয়েছে। এছাড়া সূরা আন নাস এর শেষ অংশে জিন জাতির উল্লেখ আছে।কুরআনে আরো বলা আছে হযরত মুহাম্মদ (সা:) কে জিন এবং মানবজাতির নবী হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে। হযরত সুলায়মান (আ:) এর সেনাদলে জিনদের অংশগ্রহণ ছিল বলে কুরআনে উল্লেখ আছে। ইসলামে আরো বলা আছে “ইবলিশ” তথা শয়তান প্রকৃতপক্ষে জিন জাতির একজন ছিল। ইসলামের মতে, শয়তান হচ্ছে দুষ্ট জিনদের নেতা। ইবলিশ বা শয়তান ছিল প্রথম জিন যে আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ করেছিল। কুরআনে উল্লেখ আছে যে, ইবলিশ এক সময় আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা ছিল । কিন্তু আল্লাহ যখন হযরত আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করলেন, তখন হিংসা ও অহংকারের বশবর্তী হয়ে ইবলিশ আল্লাহর হুকুম অমান্য করে। এ কারণে ইবলিশ কে বেহেশত থেকে বিতাড়িত করা হয় এবং এরপর থেকে তার নামকরণ হয় শয়তান। ইসলাম পূর্ব আরব উপকথা গুলোতে জ্বিন সদৃশ সত্ত্বার উল্লেখ আছে। প্রাচীন সেমাইট জাতির জনগণ জিন নামক সত্ত্বায় বিশ্বাস করতো। তাদের মতানুসারে নানাপ্রকারের জিন পরিলক্ষিত হয়। যেমন, ঘুল (দুষ্ট প্রকৃতির জিন যারা মূলত কবরস্থানের সাথে সম্পর্কিত এবং এরা যেকোন আকৃতি ধারণ করতে পারে), সিলা (যারা আকৃতি পরিবর্তন করতে পারতো) এবং ইফরিত (এরা খারাপ আত্মা)। এছাড়া মারিদ নামক এক প্রকার জিন আছে যারা জিন দের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী। প্রাচীন আরবদের মতে জিন রা আগুনের তৈরি।
উল্লেখ্য যে, আরব্য রজনীর কাহিনীর মতো সবসময় জিন অসাধ্য সাধন করতে পারে না। কেননা ঝড়-বাদলের দিনে জিনরা চলতে পারে না। কারণ তারা আগুনের তৈরি বিধায় বৃষ্টির সময় আয়োনাজাইশেন ও বজ্রপাতের তীব্র আলোক ছটায় তাদের ক্ষতি হয়ে থাকে এবং কোন ঘরে যদি নির্দিষ্ট কিছু দোয়া-কালাম ও কাঁচা লেবু থাকে, তাহলে ঐ ঘরে জিন প্রবেশ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। আর একটি কথা মানুষ মাটি দিয়ে সৃষ্টি হলেও, শেষ পর্যন্ত এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। কারণ মানুষ মূলত মাটি, পানি, বায়ু ও অগ্নির সংমিশ্রণ। আর তাই জিন আগুনের শিখা দিয়ে পয়দা হলেও তাদের দেহে জলীয় পদার্থের সমাবেশ লক্ষণীয়। এর স্বপক্ষে যুক্তি হলো: রসুল (স.) একদা উল্লেখ করেছিলেন যে, শয়তান বলে একটি জিন একদা নামাজের সময় তাঁর সাথে মোকাবিলা করতে এলে তিনি ঐ জিনকে গলা টিপে ধরলে, সেইক্ষণে জ্বিনের থুথুতে শীতলতা অনুভব করেছিলেন।[সুরা সাদ ৩৮:৩৫] এতে প্রতীয়মান হয় যে, জিন যদি পুরোপুরি দাহ্য হতো, তাহলে ঠাণ্ডা থুথুর থাকার কথা নয়। এদিকে জিন তিন প্রকারের আওতায় বিদ্যমান, প্রথমত. জমিনের সাপ, বিচ্ছু, পোকা-মাকড়, ইত্যাদি; দ্বিতীয়ত. শূন্যে অবস্থান করে এবং শেষত সেই প্রকারের জিন, যাদের রয়েছে পরকালে হিসাব। পূর্বেই বলেছি, এরা সূক্ষ্ম, তাই স্থূল মানুষ বা পশু-পাখি জিনদের দেখতে পারে না। তবে কুকুর ও উট এদের হুবহু দেখতে পারে। এ প্রেক্ষাপটে উল্লেখ্য যে, রাতে কোন অপরিচিত বস্তু বা জীব চোখে না দেখা গেলেও কুকুর কি যেন দেখে ছুটাছুটি ও ঘেউ ঘেউ করলে তাতে জ্বিনের আবির্ভাব হয়েছে বলে বুঝতে হবে। জিন বহুরূপী। এরা মানুষ, পশু-পাখি, ইত্যাদি যে কোন সুরত ধরতে পারে। সেই ক্ষণে উক্ত জীবের বৈশিষ্ট্যের আদলে তার ঘনত্ব কম-বেশি হয়ে থাকে এবং মানুষের দৃষ্টির মধ্যে আসে।


কড়া যুক্তিঃ-
আজকাল অনেকেই জ্বিনের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছে। তারা মনে করে দুনিয়াতে জ্বিন বলে কিছু নেই। আসলে এটা ভ্রান্ত ধারণা। জ্বিন আছে এবং জ্বিনের অস্তিত্বও বিজ্ঞানসম্মত। আমরা এখানে সেটা নিয়েই আলোচনা করব। প্রথমে আমরা জানব জ্বিন সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে কি বলা হয়েছেঃ সুরাতুল যারিয়াহ এর ৫৬ নং আয়াতে আছেঃ ওয়ামা খলাকতুল জিন্না ওয়াল ইনসা ইল্লা লিঈয়াবুদুন । অর্থঃ আমি জীন ও মানুষকে শুধু আমার ঈবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি । সুরা আল জ্বিনে বলা হয়েছেঃ বলুন, আমার প্রতি ওহী নাযিলকরা হয়েছে যে, জ্বিনদের একটি দল কোরআন শ্রবণ করেছে,অতঃপর তারা বলেছেঃ আমরা বিস্ময়কর কোরআন শ্রবণ করেছি। (আয়াত-০১) অথচ আমরা মনে করতাম মানুষ ওজ্বিন কখনও আল্লাহতা’আলা সম্পর্কে মিথ্যা বলতে পারে না। (আয়াত-০৫) আর যখন আল্লাহতা’আলার বান্দা তাকে ডাকার জন্যে দন্ডায়মান হল, তখন অনেক জ্বিন তার কাছে ভিড় জমালো। (আয়াত-১৯) জ্বিন জাতির ইতিহাসঃ কুরআন অনুসারে জিন জাতি মানুষের ন্যয় আল্লাহ্‌ তা'য়ালার এক সৃষ্ট একটি জাতি। পৃথিবীতে মানব আগমনের পূর্ব থেকেই তাদের অস্তিত্ব ছিল; এখনও তাদের অস্তিত্ব রয়েছে। মানুষের চর্মচক্ষে তারা দৃষ্টিগ্রাহ্য নয়। তবে জিনরা মানুষকে দেখতে পায়। তারা বিশেষ কিছু শক্তির অধিকারী। তাদের মধ্যেও মুসলিম এবং কাফির ভেদ রয়েছে। তারা মসজিদে নামাজ পড়তে আসে। তাদেরও সমাজ রয়েছে। তারা আয়ূ মানুষের চেয়ে অনেক বেশী। উদাহরনস্বরূপ, তারা ৩০০ বছরবয়সে প্রাপ্তবয়স্ক হয়। ঈমাম ইবনে তাইমিয়ার মতে জিন জাতি তাদের অবয়ব পরিবর্তন করতে পারে। ইসলামের মতে জিন জাতি এক বিশেষ সৃষ্টি। কুরআনের ৭২তম সুরা আল জ্বিন এ শুধু জিনদের নিয়ে কথা বলা হয়েছে। এছাড়া সূরা আন নাসএর শেষ অংশে জিন জাতির উল্লেখ আছে। কুরআনে আরো বলাআছে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে জিন এবং মানবজাতির নবী হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে। হযরত সুলায়মান (আঃ) এর সেনাদলে জিনদের অংশগ্রহণ ছিল বলে কুরআনে উল্লেখ আছে।ইসলামে আরো বলা আছে "ইবলিশ"তথা শয়তান প্রকৃতপক্ষে জিন জাতির একজন ছিল। ইসলামের মতে, শয়তান হচ্ছে দুষ্ট জিনদের নেতা। ইবলিশ বা শয়তান ছিল প্রথম জিন যেআল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ করেছিল। কুরআনে উল্লেখ আছে যে, ইবলিশ এক সময় আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা ছিল । কিন্তু আল্লাহ যখন হযরত আদম(আঃ) কে সৃষ্টি করলেন, তখন হিংসার বশবর্তী হয়ে ইবলিশ আল্লাহর হুকুম অমান্য করে। এ কারণে ইবলিশ কে বেহেশত থেকে বিতাড়িত করা হয় এবং এরপর থেকে তার নামকরণ হয় শয়তান। ইসলাম পূর্ব আরব উপকথা গুলোতে জ্বিন সদৃশ সত্ত্বার উল্লেখ আছে। প্রাচীন সেমাইট জাতির জনগণ জিন নামক সত্ত্বায় বিশ্বাস করতো। তাদের মতানুসারে নানাপ্রকারের জিন পরিলক্ষিত হয়। যেমন, ঘুল (দুষ্ট প্রকৃতির জিন যারা মূলত কবরস্থানের সাথে সম্পর্কিত এবং এরা যেকোন আকৃতি ধারণ করতে পারে), সিলা (যারা আকৃতি পরিবর্তন করতে পারতো) এবং ইফরিত (এরা খারাপ আত্মা)। এছাড়া মারিদনামক এক প্রকার জিন আছে যারা জিন দের মধ্যে সবচেয়েশক্তিশালী। প্রাচীন আরবদেরমতে জিন রা আগুনের তৈরি। বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ব্যাখাঃ আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞান জ্বিন জাতির অস্তিত্ব অস্বিকার করে না। অস্বিকার করার মত কোন যুক্তি বা মতবাদও আজ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বরং এ্যন্টি ম্যাটার সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান যত বৃদ্ধি পাচ্ছে জ্বিনের অস্তিত্বের পক্ষে যুক্তি ততই প্রগাড় হচ্ছে। আসুন জানি এ্যন্টি ম্যাটার কিঃ পৃথিবীতে যেমন বস্তু রয়েছে। তেমনভাবে অবস্তুও থাকতে পারে। আসুন দেখি এন্টিম্যাটার সম্পর্কে উইকিতে কি বলা হয়েছেঃ পার্টিক্যাল ফিজিক্সে এ্যন্টি ম্যাটারেরর ধারণা প্রতিপদার্থের ধারণা রুপ নিয়েছে। ধারণা করা হয়েছে যেভাবে কণা দ্বারা পদার্থ গঠিত হয় ঠিক তেমনিভাবে প্রতিকণা দ্বারা প্রতিপদার্থ গঠিত হয়। উদাহরণস্বরুপ, একটি প্রতিইলেকট্রন (পজিট্রন) এবং একটি প্রতিপ্রোটন মিলিত হয়ে গঠন করে একটি প্রতিহাইড্রোজেন পরমাণু, যেমন করে একটি ইলকট্রন ও প্রোটন মিলে তৈরি করে একটি হাইড্রোজেন পরমাণু। উপরন্তু কণা এবং প্রতিকণা মিলিত হলে যেভাবে পূর্ণবিলয়ের মাধ্যমে সকল শক্তি বিমুক্ত হয়, তেমনি পদার্থ এবং প্রতিপদার্থের মিলনে পূর্ণবিলয়ের সৃষ্টিহয় বলে ধারণা করা হয়েছে। এ ধরণের পূর্ণবিলয়ের ফলে প্রকৃতপক্ষে উচ্চ শক্তির ফোটন (গামা রশ্মি) এবং বহু কণা-প্রতিকণা জোড়ার সৃষ্টি হয়। এই পূর্ণবিলয়ে বিমুক্ত কণাগুলোর মধ্যে বিপুল পরিমাণ শক্তি থাকে। এই শক্তির মান পূর্ণবিলয়ের ফলে সৃষ্ট বস্তুসমূহের নিশ্চল ভর এবং মূল পদার্থ-প্রতিপদার্থ জোড়ার অন্তর্ভুক্ত বস্তুসমূহের নিশ্চল ভরের পার্থক্যের সমান। অর্থাৎ আমাদের মহাবিশ্বে যত পার্টিক্যাল আছে ঠিক তত পরিমান এ্যন্টি পার্টিক্যাল আছে। শক্তির নিত্যতা সূত্রানুযায়ী। এ্যান্টিপার্টিকেল অদৃশ্য। এগুলোর মুভমেন্ট কোন যন্ত্র দ্বারা পর্যবেক্ষন করা যায় না। কিন্তু বিজ্ঞান এগুলোর অস্তিত্বকে অস্বিকার করতে পারছে না। পৃথিবীতে ৬৫০ কোটি মানুষ আছে। এ্যান্টি পার্টিকেল থিওরি অনুযায়ী প্রতিটি মানুষের জন্যে একটি করে প্রতিমানুষ থাকলে সেগুলোর সংখ্যা হবে ৬৫০ কোটি। এগুলোমানুষের মতই কিন্তু অদৃশ্য। এগুলোকেই জ্বিন বলা হয় যা বিজ্ঞান সম্মত। তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া

★পর্ব-১

আবহমান কাল থেকে জ্বীন নামক একটি অদৃশ্য জাতির (!) নাম প্রচলিত রয়েছে। শুধু নামেই নয়, জ্বীনদের নিয়ে রয়েছে কত সব রহস্যজনক কাহিনী। এই কাহিনী কি শুধুই লোকমুখেই? মোটেও না, জ্বীনদের উপস্থিতি রয়েছে সাহিত্যে, গল্পে, উপন্যাসে, আরব্যরজনীর অধ্যায়ে, ধর্মগ্রন্থে, গবেষণায়, কল্পনায়, ভয়ে, আরাধনায়। জ্বীনদের উপস্থিতি রয়েছে বিভিন্ন মিথোলজিক্যাল সংস্কৃতিতে, অন্ধকার জগতে, আত্মাদ্ধিক বিচরণে, ভর ও শক্তির পারস্পারিক পরিবর্তনে, ইতিহাস বিখ্যাত মনীষীদের দর্শনে। জ্বীনের প্রভাব রয়েছে সুপার নেচারাল ঘটনার জন্ম প্রক্রিয়াতে, প্রেমিক-প্রেমিকার কল্পনায়, কবিরাজের লাঠির শরীরে, কবরখানায়, শশ্মান ঘাটে, প্রেতাত্মার ডাকে, কোয়ান্টাম মেডিটেশনে, আলো-আধারের লুকোচুরিতে। হালের এনার্জি ক্রাইসিসও নাকি মিটতে পারে এই জ্বীন জাতির অস্তিত্ব আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে! তাহলে কিভাবে বলি জ্বীন মিথ্যা বা বানোয়াট?? চলুন দেখি নিচের ব্যাখ্যা গুলো কি বলে:

লোকনাথপুর গ্রামের আজিবর কবিরাজ জ্বীনদের বড় ওস্তাদ। দুনিয়ার এমন কোন জ্বীন নেই যে তার কথা শুনে না, মানে না। আজিবর কবিরাজের শুধু মুখের কথায় জ্বীনরা ওঠা বসা করে, গান-বাজনা করে, সাত সমুদ্র তের নদী পার হয়ে এনে দেয় চাহিবা মাত্র বস্তু। একদা নিজের চোখের দেখা দশ-বারো জন লোক অচেনা যুবককে (বয়সে ২৮/৩০ হবে) মোটা দড়ি আর লোহার শিকলে বাঁধা অবস্থায় নিয়ে আসলো আজিবর কবিরাজের কাছে। যুবককে নাকি জ্বীনে ধরেছে! কোন লোকের কাছে রেফারেন্স পেয়ে তারা এসেছে এই আজিবর কবিরাজের কাছে। সামনে আসতেই আজিবর বুঝতে পারে এটা জ্বীন ধরা রোগী, আর তৎক্ষনাৎ সে আগত লোকদের বলে যুবকের হাত পায়ের শিকল খুলে দিতে। লোকজন জানায় এটা করলে সে এখনই রক্তারক্তি বইয়ে দিবে, খুনোখুনি করবে কেই ঠেকাতে পারবে না। জড় হয়ে গেল শত শত লোক! সবাই দেখল কিভাবে আজিবর কবিরাজ ঐ অচেনা যুবকের জ্বীন ছাড়িয়ে দিল সবার সামনেই। অথচ গত ১০ বছর ধরে পরিবারটা ভুগছে এই সমষ্যায়। কি বলবেন তাহলে? অবশ্যই জ্বীন আছে!

রুমেল-জয়া বড়লোক দম্পত্তির একমাত্র মেয়ে সোহানার বয়স ৬ বছর। সোহানা হাটতে পারে না সেই ছোট বেলা থেকেই। মেয়ের হাটার শক্তি ফিরিয়ে আনার জন্য ঘুরে বেড়িয়েছে দেশ বিদেশের বড় বড় ডাক্তার, হসপিটাল এমনকি আজমির শরীফের মত বড় বড় মাজারে। নাহ, কোন কিছুতেই কোন কাজ হয়নি। লোক মুখে শুনে সেও এসেছিল আজিবর কবিরাজের কাছে, মেয়েটি কয়েক মিনিটের মন্ত্রবলেই ভালো হয়ে গিয়েছিল। এ ঘটনাটিও অন্তত ১০/১৫ জন মানুষের সামনে আর সবচাইতে বড় সাক্ষি তার বা-মা এবং সোহানা নিজেই। কি বলবেন তাহলে? অবশ্যই জ্বীন আছে!

****************************************************************

পর্ব-২

এ পর্বেও চলবে আজিবর কবিরাজের কয়েকটি ঘটনা। আজিবর কবিরাজের বড় ছেলে রাসেলের সঙ্গে আমার ভাব সেই ছোটবেলা থেকেই, সে একাধারে আমার ক্লাসমেট, বন্ধু, ভাই, প্রতিবেশী, খেলার সাথী, ন্যায়-অন্যায় কাজের সর্বসময়ের সাথী। খুব সাধারণ থেকে অসাধারণ যে কোন ঘটনায় যদি আমার অন্তরালে হয়ে থেকে তাহলে যত দ্রুত সম্ভব সে আমার সাথে শেয়ার করে।

একবার রাসেল ওর আব্বুর সঙ্গে ওর নানীর কবর জিয়ারত করতে যায়, কবরটি অনেক পুরোনো আর মাঠের মধ্যে যে মাঠে যেতে হলে পার হতে হয় অনেক বড় জঙ্গল। যায় হোক, পথ, পথের ধারে জঙ্গল পার হয়ে ওরা পৌঁছে নানীর কবরের কাছে। কবরের পাশে অনেক লম্বা তালগাছ। রাসেল নিজের চোখে দেখল ধবধবে সাদা কাপড় পরিহিতা এক সুন্দরী মহিলা তাল গাছে বেয়ে নেমে এসে ঠিক ওদের পিছনে দাঁড়ালো। রাসেল ওর আব্বুর জ্বীনের উপর বিদ্যার কথা জানতো তাই ভয় না পেয়ে মনে মনে সাহস সন্চয় করে আব্বুর সাথে কবর জিয়ারত করে ফেরৎ আসার পথেই আবার দেখলো ঐ মহিলা খুব দ্রূত আবার তালগাছের উপর এক লাফে উঠে গেল। রাসেল তার পরদিনই ঘটনাটি আমার সাথে শেয়ার করলো। তাহলে কি বলব? অবশ্যই জ্বীন আছে!

আজিবর কবিরাজের যে ঘটনাটি সবচাইতে আমাকে ভাবিয়ে তোলে এখন সেটি তুলে ধরব। ঘটনাটি আমাদের প্রতিবেশি আসাদ মিয়ার বাড়ীর ঘটনা। তখন আমি এ পৃথিবীতে আসিনি। কিন্ত আমার গ্রামের যত সব মরুব্বী আর বয়স্ক লোকজন রয়েছে তারা সবাই ঐ ঘটনার সাক্ষী! এবং তারা যে মিথ্যা বলে না সেটা সহজেই অনুমেয়।


আসাদ মিয়া তার মাঠের এক জমি থেকে ৫০ বছরের পুরোনো এক তেতুল গাছ কেটে ফেলে। গাছটি কাটার আগে সে কয়েক রাতে ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে দেখেছিল যেন গাছটি সে না কাটে। এবং জ্বীনরা নাকি তাকে সেই স্বপ্ন দেখাতো। কিন্ত ঐসব স্বপ্নকে পাত্তা না দিয়ে গাছটি কেটে ফেলার পর শুরু হয় আসাদের বাড়ীর উপর অসহ্য রকমের যন্ত্রনাদায়ক ব্যাপার স্যাপার।

বাড়ীতে তেমন কেউ-ই নেই, কিন্ত হটাৎ ছাদের বাড়ীর ছাদের উপর শুরু হয় আর্মি প্যারেড। ভয়ে যবু থবু বাড়ীর লোক কেউ তখন আর বাইরে বের হয় না। প্যারেডের আঘাতে মনে হয় যেন ছাদ এখনি ভেঙ্গে পড়বে।

বাড়ীতে সবাই আছে, হটাৎ দেখা গেল ধান ভাঙ্গা ঢেকিটা ঢেকির ঘর থেকে বাইরে এসে শুন্যের উপর ভাষতেছে। হটাৎ করে কোত্থেকে যেন শত শত হাড় আর মাথার খুলি বাড়ীর উঠানে বৃষ্টির মতন বর্ষণ হতে লাগলো।

অবশেষে আজিবর কবিরাজকে আনা হয়েছিল, এবং ৫০ জন আলেম ব্যাক্তিকে সাথে নিয়ে সিরিজ ওজিফার মাধ্যমে আসাদ মিয়ার বাড়ীর সেই আশ্চার্য্যজনক ঘটনা বন্ধ করেছিল আজিবর কবিরাজ। তাহলে কি বলব? অবশ্যই জ্বীন আছে!

*****************************************************************

পর্ব-৩

এই সব ঘটনা থেকে আজিবরকে আসলই জ্বীনদের গুরু মানতে আমার কোন আপত্তি হয়নি কোনদিন। আজ এ পৃথিবীতে রাসেল নেই, মন খুব খারাপ লাগে, রাসেল জেগে ওঠে আমার স্মৃতিতে প্রায়শ। আমি নিজেই যেন আজিবরের ছেলে এমনই মনে করে আজিবর, আমিও তাকে আমার বাবার মতই সম্মান করি। কথা হয় মাঝে মাঝে। কিন্ত জ্বীনদের নিয়ে কৌতুহুল আমার শেষ নেই! এই কৌতুহুলের প্রধান কারণ আল-কোরান। কারণ আজ প্রায় ১৫০০ বছর ধরে স্বমহিমায় উদ্ভাষিত এই আল-কোরান। কোরানকে নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই, যারা নাস্তিক তাদের কথা আলাদা, তারা কি বললো না বললো সেসব নিয়ে কথা বলার জন্য পোষ্ট এটা না। তবে অনেক অনেক ইতিহাস প্রসিদ্ধ ব্যাক্তিত্ব, সায়েন্টিষ্ট, দার্শনিক তো এই কোরনাকে বিশ্বাস করে। কালকে জয় করে কোরান হয়েছে এক চির-সত্যের বাণী সংকলন। সেই কোরান-ই স্বয়ং জ্বীন আছে তা ঘোষণা করেছে বার বার। তাই বরাবর-ই আমি এই জ্বীন জাতির উপর কৌতুহল বটে।



আমার অনেক স্বপ্ন নিজে চোখে এই জ্বীনকে দেখা বা জ্বীনের অস্তিত্বকে বুঝতে পারে। কিন্ত আফসোস সেই স্বপ্ন আমার পূরণ হলো না কখনই। তাই দ্বারস্ত হলাম আজিবর কবিরাজের কাছে। কেন যেন বিশ্বাস হয়েছে, পৃথিবীতে জ্বীন বলে যদি কিছু থেকে থাকে তাহলে এই আজিবর কবিরাজ তা জানবে (কেন জানবে? সেটা প্রথম ২ পর্বের ঘটনাগুলই ব্যাখ্যা করে)। যাই হোক, অবশেষে নিজের ইচ্ছার কথা ব্যাক্ত করলাম আজিবরের কাছে। তিনি আমাকে হতাশ করলেন না, বরং একটা নিদির্ষ্ট দিনক্ষণ ঠিক করে দিলেন এবং আমাকে বললেন সেই সময় তার সাথে দেখা করতে, জায়গা হিসাবে ঠিক করে দিলেন একটা গোপনীয় জায়গা। কথামত কাজ। আজিবর মিয়া আমার সামনে, আমাকে প্রশ্ন করলেন কেন আমি জ্বীন দেখতে চাই? বললাম, আমি কোরান বিশ্বাস করি আর হাজার হাজার বছর ধরে জ্বীনদেরকে যে এত এত গল্প, কথা, গবেষণা প্রচলিত রয়েছে কিন্ত নিজ চোখে দেখি নাই তাই আমি এটা জানতে চাই। এর মাধ্যমে হয়তো সৃষ্টিজগতের আরো এক বিষ্ময় সম্পর্কে অবগত হওয়া যাবে।



বৃদ্ধ আজিবর মিয়া আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। আমাকে বললেন, বাবা রাজ আমার অনেক বয়স হয়েছে, কদিন-ই বাঁচবো দুনিয়াতে, তাই তোমার এই আশা আমি পূর্ণ করবো আমার সাধ্যমত। তিনি আমাকে জানালেন অনেক কিছু:


জ্বীন নিয়ে আজিবরের শিক্ষা শুরু হয় সেই বৃটিশ আমলে থেকে। বিরাট এক আলেম ব্যাক্তি তার প্রথম ওস্তাদ। এরপর এই পৃথিবীর বুকে জ্বীন নিয়ে যতধরনের গবেষণা/আরাধণা আছে সবই তিনি পালন করেছেন। তিনি রাতের পর রাত কাটিয়েছেন কবরখানায়, শশ্মানঘাটে, জনশুন্য মাঠে, পুরোনো মন্দিরে, গভীর জঙ্গলে, সমুদ্রের বুকে, শত শত বছরের বুড়ো নীম-বট গাছের ডালে। কিন্ত তার এই সব গবেষণায় তেমন কোন ফল আসে নি। হতাশ হয়েছে বারবার। তিনি কোনদিন কোন জ্বীনের দেখা পাননি!

এরপর উপসংহার হিসাবে বললেন, সারাটা জীবন জ্বীন নিয়ে কাটিয়ে দিলাম, কিন্ত জ্বীন বলে কিছু আছে বলে টার বিশ্বাস হয় না। তিনি মনে করেন জ্বীন জাতি যদি কখনও পৃথিবীর বুকে থেকেও থাকে তবে তারা এখন ধ্বংস হয়ে গেছে, এই পৃথিবীতে তাদের অস্তিত্ব এখন আর নেই! আমি তার কাছে জানতে চাইলাম, তাহলে আপনাকে নিয়ে এট সব ঘটনা রয়েছে এইগুলো কিভাবে সম্ভব। তিনি উত্তর দিলেন, প্রত্যেকটির ঘটনার পিছনেই যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে। এসব ঘটনার কোনটিতেই জ্বীনদের সংশ্লিষ্টতা ছিলা না। আজিবর কবিরাজকে আমি আরো বললাম, আপনি নিজে এরকম মনে করেন তাহলে কেন জনসম্মুখে এটা প্রকাশ করেন না? তিনি বললেন এতে করে শরীয়তের আলেমরা তাকে কাফের বলে ঘোষণা দিবেন, ঝামেলা শুরু হবে।

অবশেষে, কি আর করার! প্রিয় পাঠক আমিও হতাশ হয়েছি, কারণ জ্বীন বলে আদৌ কোন কিছু আছে এরকম কোন প্রমান আমি নিজ চোখে দেখিনি।

*****************************************************************

পর্ব-৪ (শেষ)

জ্বীন দেখিনি, জ্বীনের অস্তিত্ব আদৌ আছে কিনা তা আমার কাছে রহস্যই থেকে গেল! কিন্ত তবুও কথা থেকেই যায়। জ্বীন জাতি বলে কিছু আছে সেই অন্ধ বিশ্বাস আমি করতে পারছি না তবে নেই সেটাও বলছি না। মানুষ তার জ্ঞান দিয়ে যদি কোন দিন প্রমান করতে পারে সেই আশায়।

বিভিন্ন বর্ননায় জ্বীনদের যে চিত্র ফুটে ওঠে তার আলোকে হয়তো কোনদিন সম্ভব হবে জ্বীনদের অস্তিত্ব প্রমান করা!

জ্বীনদের মোটামুটি বর্ননাগুলো এরকম:

১) জ্বীন অদৃশ্য।

২) জ্বীন আলো দিয়ে তৈরি।

৩) জ্বীন খুব দ্রুত বেগে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারে।

৪) জ্বীন আমরা যে সব প্রানী দেখি সে সবের রুপ ধারণ করতে পারে (হয়ত সব প্রানীর না তবে কিছু কিছু হয়তো)।

৫) জ্বীন পৃথিবী বাদে অন্য গ্রহ-নক্ষত্রে চলাফেরার করার ক্ষমতা রাখে।

৬) জ্বীনকে মানুষ নিয়ন্ত্রন করার ক্ষমতা রাখে।

৭) জ্বীন অন্ধকারে থাকতে সাচ্ছন্দ বোধ করে! আলোতে ডিষ্টার্ব ফিল করে!

এই সব বর্ননাগুলো কি একে অপরের সাথে কনফ্লিক্ট করে? বর্তমান বিজ্ঞান অনুসারে কিন্ত তা করে না! কিভাবে?



মনে করি জ্বীন আলো দিয়ে তৈরি। আলোর বৈশিষ্ট্য সত্যিই অদ্ভুত! আলো আসলে বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গ। আলোকে যদি আমরা কোন ফ্রিকোয়েন্সি ব্যাপ্তিতে সীমাবদ্ধ না রেখে, বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গের সম্ভব্য পুরো ফ্রিকোয়েন্সিতে চিন্তা করি তাহলে কিন্ত বিষয়টি জটিল হয়ে গেল। কারণ তাত্বিকভাবে আমরা অসীম ফ্রিকোয়েন্সির বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গ জেনারেট করতে পারি। তাহলে জ্বীন কোন ফ্রিকোয়েন্সিতে তার অদৃশ্য অস্তিত্ব ধারণ করে সেটা গবেষণার বিষয়। তবে আমরা মনে করতে পারি, জ্বীন যদি আলো তথা বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গ দিয়ে তৈরি হয়, তাহলে সে অদৃশ্য হতে পারে এবং এক স্থান থেকে অন্য স্থানে খুব দ্রুত যেতেও পারে।

আমরা জানি বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গ শক্তি বহন করে এবং সেই শক্তিকে ভরে পরিবর্তন করা সম্ভব। অন্যদিকে ভরকে শক্তিতেও পরিবর্তন করা সম্ভব। সুতরাং জ্বীন যদি আলো তথা বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গ দিয়ে তৈরি হয় তাহলে সে দৃশ্যমান ভরেও পরিবর্তন হতে পারে তবে সেই ভর দেখতে কেমন হবে সেটা আমি এখন ভাবতে পারছি না।
বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গ অন্য কোন বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গের সাথে ইন্টারএ্যাকশনে যেতে পারে এবং এতে করে তাদের বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয়ক্ষেত্রের পরিবর্তন হতে পারে। সুতরাং জ্বীন আলোতে ডিষ্টার্ব ফিল করতেই পারে। তবে এক্ষেত্রে কথিত যে হিউম্যান চোখে ভিজিবল আলোতেই তারা ডিষ্টার্বড হচ্ছে। এটা গবেষণার একটা ক্লু বৈকি

জ্বীন যদি বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গ দিয়ে তৈরি হয়, তাহলে বলায় যায় বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গের বিচরণ সমস্ত মহাবিশ্বব্যাপি। আর এই মহাবিশ্বকেই তো নিয়ন্ত্রন করতে চায় মানুষ! সুতরাং জ্বীন তো নস্যি মাত্র।

জ্বীনদের নিয়ে কিন্ত আসলেই গবেষণা হয়! ১৯৮৮ সালে পাকিস্থানের নিউক্লিয়ার সায়েন্টিষ্ট সুলতান বশিরউদ্দীন মাহমুদ ওয়াল ষ্ট্রীট জার্নালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন জ্বীন হতে পারে রিনিউএবল এনার্জির এক অফুরন্ত উৎস।

যাই হোক ভবিষ্যত সময়ই হয়তো সঠিক তথ্যটি আমাদের সামনে নিয়ে আসবে, হয়তো আমরা জানবো না, কিন্ত মানুষ তো জানবে। আর সেই সাথে হয়তো শুরু হবে সভ্যতার এক নবদিগন্তের অধ্যায়। ক্রমান্বয়ে বস্তবাদী দুনিয়ার দিকে ধাববান বিশ্বে জ্বীন কি হতে পারে কোন গবেষণার বিষয়?





★ আজকে আপানাদের সাথে একটি ছোট ঘটনা শেয়ার করবো। গল্প বলবো না। কারন এটি একটি সত্য ঘটনা। ঘটনাটা ঘটে আমার দাদার বাড়িতে। একবার খবর পেলাম আমার চাচাতো ভাইকে নাকি জীনে ধরেছে। তাও যেনতেন জীন না। সে নাকি ভয়ঙ্কর আছর করেছে। ছেলেটিকে এখন সারাদিন বেঁধে রাখা হয় রশি দিয়ে। এরই মাঝে সে সেইসব রশি ছিঁড়ে কয়েকবার করে মানুষকে আক্রমন করেছে। আর রশিগুলো যেনতেন রশি নয়। ভারি রশি, যেইসব দিয়ে বড় বড় লঞ্ছ পাড়ে লাগানো হয় সে রকম। খবর শুনে খারাপ লাগলো, পাশাপাশি কৌতূহল হল। ভাবলাম, আপাতত কোনও কাজ নেই। গিয়ে কয়েকদিনের জন্য ঘুরে আশা যায়। আর ঘটনা যদি আসলেই সত্য হয় তাহলে তাকে চিকিৎসার বন্দোবস্ত করা উচিত। আমার ধারণা ছিল এটা তেমন গুরতর কিছু নয়। মানুষ রঙ চং মাখিয়ে ছড়াচ্ছে। যাই হোক, বাড়িতে গেলাম বুধবার সকাল বেলা। আমার চাচাতো ভাইয়ের অবস্থা যথেষ্ট করুন। অনধকার একটা ঘরের মধ্যে রশি দিয়ে বেঁধে রাখা। জানালার শিখ ধরে দাঁড়িয়ে বাইরে দেখছিল। আর সমানে জানালা ঝাকাচ্ছিল। সাহস করে এগুলাম তার সাথে কোথা বলার জন্য। কিন্তু আমাকে দেখেই খেঁকিয়ে উঠলো। কুৎসিত কিছু গালি দিয়ে উঠলো। ভ্যাবাচেকা খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। এমনিতেই এতো রাস্তা ভ্রমন করে এসেছি, তার উপর এমন অভ্যর্থনা, ঠিক যেনও মানিয়ে উঠতে পারছিলাম না।


জানতে পারলাম, আগামীকাল বৃহস্পতিবার এক হুজুর দিয়ে ওর জীন ঝারান হবে। যথাসময়ে হুজুর এলেন। প্রথমে ভাবছিলাম, থাকবো না। কিন্তু কৌতূহলের কাছে হার মানলাম। গেলাম জীন তারানো দেখার জন্য। প্রথমে আমার চাচাতো ভাইকে শক্ত রশি দিয়ে খাটের পায়ার সাথে বাঁধা হল। এরপর ধূপ জ্বালা হল ঘরটি পূর্ণ করে দেয়া হল ধুয়ায়। আমার ভাই কিছুক্ষণের জন্য ঘোরের মধ্যে চলে গেলো। হুজুরের সাথে তার বাক্যালাপের কিছু অংশ তুলে ধরছি।

হুজুরঃ সাড়া দে।

**********(গালি) {অন্য কেউ বলল, কারন সেহতা আমার ভাইয়ের গলা ছিল না}

হুজুর (ঝারু দিয়ে বাড়ি লাগালেন) বললেনঃ এই দেহ তোর ছাড়তে হবে।

ছারমু না। আমি এরে ছারমু না। আমারে খেপাইস না। জানে বাছবি না।

হুজুরঃ জানে বাছব নাকি পড়ে দেখা যাবে। এখুনি দেহ ছেড়ে বের হ।

সংলাপের পুরোটা উল্লেখের প্রয়োজন নেই। তবে কিছু অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটেছিল সেদিন।

• হটাত টিনের চালে ব্যাপক হারে ঢিল পড়তে লাগলো, সেই সাথে যেনও এক সাথে শত শত সিংহ গর্জন করে উঠলো।

• আমার চাচাতো ভাই হটাত দাঁড়িয়ে পড়লো। কিন্তু তাকে যেই অবস্থায় বাঁধা হয়েছিলো, তাতে দাঁড়ানো সম্ভব নয়।

• ঘরের মধ্যে অদ্ভুত কিছু একটা ঘটছিলো। কারন সবাই খুব অশস্থি বোধ করছিলাম। শুধু একা আমি নই, অনেকেই বলল, শরীর ভার ভার ঠেকছে।

• প্রায় ২ ঘণ্টা নানা কসরত করার পর জীন তারান সম্ভব হয়। ঠিক সেই সময় আমার ভাই এবং হুজুর একি সাথে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

• জীন যাওয়ার সময় আমাদের বারিরি পাশের একটা গাছ উপড়ে দিয়ে যায়। এতো বড় গাছ যে উপ্রান সম্ভব টা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না।

• এরপর আমার ভাই সুস্থ হয়ে উঠে, কিন্তু তাকে অনেক তাবিজ এবং সুতো পড়তে হয়।

বাক্তিগত স্বার্থে নাম, জায়গার নাম দেয়া সম্ভব নয়। কারন, ঘটনাটা আমরা ছড়াতে চাচ্ছি না।

★ সত্য ঘটনা ★

(পর্ব-১)


ঘটনা ১ ঃ-

অবস্থানঃ মতিঝিলের বেশ জনপ্রিয় আবাসিক এলাকা

এলাকায় যে একটা বেল গাছ আছে সেটা আমি আমার বিশ বছরের জীবনে শুনিনি।এর অবস্থান একজন বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পীর বাড়ির ঠিক পিছনে একটা গলির ভিতরের দিকে।সেখানে থাকেন আমাদের বাসার কাজের মহিলা অনেকদিন ধরে।একদিন হঠাত উনার মেয়ে বাসায় গিয়ে বলে তার নাকি গলায় ব্যাথা করছে।ধুলাবালি ঢুকেছে ভেবে তারা কেউ পাত্তা দেয় না।এভাবে দুইদিন তিনদিন করে একমাস গেলে।ব্যাপারটা এখন তাদের চিন্তায় ফেললো।তারা মেয়েকে নিয়ে কমপক্ষে ১০-১৫ ডাক্তার দেখালেন,হোমিয়প্যাথি খাওয়ালেন,কেউ বলে শ্বাসনালি তে সমস্যা,কেউ বলে নাকে মাংস বেড়ে গেছে কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না।ঠিক তিন মাস পর তার সাথে যুক্ত হল আরও কিছু ঘটনা।মেয়ে নাকি কিছু খেতেই পারে না,বমি করে ফেলে দেয়।সবাই ভাবল মেয়েকে হাওয়া বদল করাই।তাকে পাঠানো হল গ্রামে শ্বশুর বাড়িতে।সেখানে গিয়ে শুরু হল আসল ঘটনা

মেয়ে নাকি কথা নাই বার্তা নাই আপন মনে এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ায়,চিল্লায়ে চিল্লায়ে গান গায়,মুখ দিয়ে অদ্ভুত অদ্ভুত আওয়াজ করে,পরক্ষনেই আবার হাদিসের বানী শোনায়,সবাইকে নামাজ পড়তে বলে।আবার মেয়েলি ভাষায় হিন্দুদের বিয়ে বাড়ির মত "উলুলুলুলু"আওয়াজ করে।শেষে একজন হুজুড় কে ডাকা হল।তিনি মেয়েকে দেখে তার গায়ে কিছু তাবিজ ঝুলিয়ে দিলেন।কিন্ত্য মেয়েটা তার সামনেই তাবিজ খুলে ছুরে মারে।যখন কিছুতেই কিছু হল না তখন মেয়েকে ঢাকায় আবার নিয়ে আসা হল।এবার ডাকা হল এক হিন্দু ওঝাকে।তিনি মেয়েকে দেখে মায়ের কাছে জানতে চাইলেন যে মেয়েটি কোন বেল গাছের আশেপাশে দিয়ে গেছে কিনা।তখন সবার মাথায় আসল যে হ্যা,মেয়েটি বেল গাছের নিচ দিয়েই যাতায়াত করত।তখন ওঝা বললেন যে এর উপর একটা জ্বীন আর একটা বেল গাছের পেত্নি ভর করেছে।জ্বীনটি তার দিকে দৃষ্টি দিয়েছে।এই কারনে মেয়েটি মাঝে মাঝে সবাইকে ধর্মীয় পরামর্শ দিত।আর পেত্নিটি মেয়েটাকে দিয়ে উলুলুলু আওয়াজ করাতো।তখন ওই ওঝা মেয়ের মাকে কিছু জিনিষ জোগাড় করতে বললেন।এর মধ্যে আছে সাতটা ঘাটের পানি,দুইটা কালো মোরগ,পাচ কেজি মিষ্টি,কিছু মোমবাতি,কালো জিরা,শলার ঝারু।এরপর কি হয়েছে সেটা আমাদের কাজের মহিলা আমাদের বলে নাই।আমার মা হয়ত জানেন কিন্তু আমাকে বলেন নাই।

ঘটনা-২।

অবস্থানঃএকই (ডঃমোতালেব নামক একজন ডাক্তারের চেম্বারের ঠিক পিছনে তার বাড়ির সামনের গলিতে)

এটা একটা শোনা ঘটনা।আমাদের বাড়ির সামনের গলিতে এমন ঘটনা ঘটার কথা শোনা গেছে,গলিটা এমন যে রাস্তা থেকে দেখলে গলির শেষ মাথায় শিড়ি,গলির দুইদিকে দুইটা বাড়ি।ঘটনা প্রত্যক্ষ করে ডান পাশের বাড়ির নিচতলার মেয়েটা আজ থেকে প্রায় ১৪-১৫ বছর আগে।একদিন রাতে ওই মেয়েটা ঘুমাচ্ছিল।রাত্রে প্রায় ৪ টার দিকে মেয়েটা একটা মহিলার পায়ের নূপুরের আওয়াজ পায়।নাচিয়েরা পায়ে যে নূপুর পড়ে সেটা।তো সে তা পাত্তা দেয় নাই,ভেবেছে ঘুমের মধ্যে কি না কি শুনেছে।এসব ভেবে ঘুমিয়ে পড়ে।পরেরদিন একই সময় সে আবারো একই আওয়াজ পায়।এবার সে একটু আগ্রহী হয়।তার রুমের একটা জানালা ওই গলির দিকে মুখ করে ছিল।জানালা খুলে তাকালে গলির অনেকখানি দেখা যায়।সে জানালা খুলতেই তার রুম আলোতে ভরে যায়।আলো সয়ে এলে সে দেখতে পায় গলিতে একটা মহিলা সাদা নাচের কাপড় পরে নূপুর পায়ে হাটছে।ওই কাপড়ের উজ্জ্বলতায় পুরো গলি আলোতে প্রায় ভরে গেছে।মহিলাটা গলির এ মাথা থে একবার ওমাথায় যাচ্ছে আর আসছে।আর তার মুখে ছিল এক অদ্ভূত হাসি।তবে তার চোখ ছিল ভয়ানক,ঠিক গোলাকার,মনি হালকা সাদা এবং লম্বাটে।মেয়েটা হঠাত করে মহিলাটার চোখের দিকে তাকাতেই সম্মোহিত হয়ে যায়।যেন ওই চোখ তাকে এখনি গিলে খাবে।এভাবে মহিলা এবং মেয়েটা পরস্পরের দিকে তাকিয়ে থাকে।এভাবে কিছু সময় পর ওই মেয়েটার মা ঘুম থেকে জেগে ওঠে।আর মেয়েকে ওভাবে জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকতে দেখেডাক দেয় কিন্তু মেয়েটা সে সম্মোহিত হয়ে থাকে।তখন তার মা তাকে একটা ধাক্কা দেয়।এবার মেয়েটা হকচকিয়ে ওঠে।আবার যখন সে জানালার বাইরে তাকায় তখন মহিলাটা নাই।ফজরের আযান শুরু হয়ে গেছে

মেয়েটা পরেরদিন তার মাকে সব কথা বলে।কিন্তু তার মা পাত্তা দেয় না।সেদিন রাতে তার মা একই ঘটনার শিকার হয়।কিন্তু সেদিন তার মেয়ে আগে থেকেই জেগে ছিল বলে তার মা বেচে যায়।তারা চলে যাওয়ার পর যখন নতুন ভাড়াটিয়া আসে তারাও একই ঘটনা দেখে।কিন্তু যেভাবে ঘটনাটা শুরু ঠিক সেভাবেই শেষ হয়ে যায়।ওই মহিলাকে আর দেখা যায় না তবে প্রায় রাতে সেই নূপুরের আওয়াজ ঠিকই পাওয়া যায়।


ঘটনা-৩।

অবস্থানঃ আমার নিজের বাসা (আমি আর আমার ভাই এর শিকার)

এটা আসলে ভৌতিক না স্বপ্ন সেটা বলতে পারব না কারন তখন আমার বয়স ছিল তিন বছর আর আমার ভাই এর ছয় বছর।তিন বছরের একটা বাচ্চা যদি স্বপ্ন দেখে তাহলে হয়ত দেখবে যে সে অনেকগুলো খেলনা নিয়ে খেলছে,ঘুরছে।কিন্তু আমার সাথে কি হয়েছে জানি না,আমি প্রায় রাতে অদ্ভুত অদ্ভুত প্রানীর শুধুমাত্র চোখ দেখতে পারতাম।ঘুম থেকে উঠে যখন তাকাতাম তখনও মনে হত যে রুমে সেই প্রানীটি বসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।সাধারনত কেউ যদি চোখ বড় করে অন্ধকারের দিকে তাকায় তাহলে এমনটা হয়।কিন্তু ভয়ের ব্যাপার ছিল যে আমার বড় ভাই একই স্বপ্ন দেখত এবং ঘুম থেকে উঠার পর একই চেহারা দেখতে পেত।প্রথমদিনেই মাকে ঘটনাটা জানিয়ে দেই।তিনি পাত্তা দেন না।বেশ কয়েকবার ঘটার পর তারা একজন হুজুরের সাথে দেখা করেন।হুজুর আমাকে একটা তাবিজ দিয়ে বলেন যাতে এটা এসব ঘটনা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত হাত থেকে না খুলি।অদ্ভুত ব্যাপার হল তিনি আমাদেরকে আরবিতে কালিমা লেখা সাতটি কাচের প্লেট দেন আর বলেন যাতে প্রতিদিন একটা একটা করে কাচের প্লে্ট এর ঐ লেখাটা ধুয়ে সেই ধোয়া পানিটা খাই।অদ্ভুত লাগলেও কাজগুলা করা হয় এবং সমস্যাটা কেটে যায়।

হুজুর বলেছিলেন যে ছোটরা অনেক সময় খেলার ছলে রাস্তায় অনেককিছুই দেখে যা আসলে কি এটা তাদের পক্ষে বোঝা সম্ভব হয় না।হতে পারে সেটা অশরীরী কোন আত্মা যা হয়ত ক্ষতি করে না তবে স্বপ্নে দেখা দিয়ে নানান রূপ ধারন করে।এরকমই কিছু আমার স্বপ্নে এসে দেখা দিয়েছিল।

ঘটনা-৪।

অবস্থানঃচাদপুর,মতলবের শাহাতুলি গ্রাম

এটা আমার চাচির মুখে শোনা আমার দাদাকে নিয়ে একটা ঘটনা।আজ থেকে প্রায় ৪০-৪৫ বছর আগের ঘটনা।আমার দাদা একজন পরহেজগার মানুষ ছিলেন।প্রত্যেক ওয়াক্ত নামায সময়মত আদায় করতেন।এক রাতে তিনি ঠিক করলেন মসজিদে সারারাত থেকে আল্লাহর ইভাদাত বন্দেগী করবেন।এই জন্য তিনি সকাল সকাল মসজিদে চলে আসেন।তার ইচ্ছা ছিল পরেরদিন ফজরের নামাজ পরেই আবার বাড়ী ফিরে আসবেন।ঘটনা ঘটে সেখানে।মসজিদে যাওয়ার পথে একটা পুকুর পরে আত তার পাশে বেশ কিছু নারিকেল গাছ।রাতের বেলা গাছ গুলো দেখতে বেশ ভূতুরে দেখায়।দাদা যখন মসজিদে যাচ্ছিলেন তখন পুকুরের পানি বেশ ভালই ছিল।গাছগুলোও স্বাভাবিক ছিল।তিনি মসজিদে গেলেন এবং ভোরে ফজরের নামাজ পরে তিনি মসজিদ থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হন।ওই পুকুরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি তার টর্চ লাইটের আলো পুকুরে ফেলে দেখেন সেখানে পানি নেই,লাল লাল কি যেন।তিনি আলো ঘুরিয়ে কিনারার দিকে ফেলেই ভয়ে আতকে উঠেন.সেখানে পড়ে ছিল বেশ কিছু মানুষের লাশ,আধ খাওয়া লাশ,কারো মাথা অর্ধেক খাওয়া,কারো হাত নেই,কারও কোমরের নিচের অংশ নেই।দেখে বোঝা যাচ্ছিল সেগুলো খেয়ে ফেলে রাখা হয়েছে আর তাতেই পানি লাল হয়ে গেছে।তিনি ভাবছিলেন যে সকালে তো সব ঠিক ছিল,তাহলে এত মানুষের লাশ সবার চোখের আড়ালে এল কিভাবে।হঠাত পানিতে ধপাস করে একটা শব্দ হল।তিনি আলো সেখানে ফেলে দেখলেন পানিতে আরেকটা লাশ এসে পড়েছে।তিনি উপরের দিকে আলো ফেলে দেখেন তাল গাছের ডগায় মানুষের আকৃতির বেটে আকারের কি যেন একটা মৃতদেহ খাচ্ছে,তাদের পাশে ডালে আরও কিছু মৃতদেহ রাখা।দাদা যা বুঝার বুঝে গেলেন।এটা জ্বীনেরকারবার।পরহেজগার ছিলেন বলে জ্বীন তাড়াবার কিছু উপায় তিনি জানতেন।

তিনি পাশ থেকে একটা কাঠি নিলেন আর তাদের দিকে তাকিয়ে বললেন,"এবার দেখবো তোদের কে বাচায়" এই বলে তিনি সূরা পরতে পরতে কাঠি দিয়ে মাটিতে একটা বৃত্ত আকতে শুরু করলেন।অর্ধেক আকা হয়েছে এমন সময় সেই জ্বীনদুইটা হঠাত একটা বিকট আর্তনাদ করে ওঠে।তারা নিচের দিকে তাকিতে দেখে দাদার বৃত্ত আকা প্রায় হয়ে গেছে।তারা ততক্ষনাত লাশটা ফেলে খুব জোড়ে একটা দৌড় দেয়।লাশটা সরাসরি দাদার কাধে এসে পড়ে।দৌড় দেওয়ার সময় গাছের ডাল ভাঙ্গার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছিল।দাদার উদ্দেশ্য ছিল ওই জ্বীন দুটোকে বৃত্তে বন্দী করে পরে বৃত্ত মুছে ফেলবেন।

লিখে মানুষকে ভয় পাওয়ানো কঠিন।তবে কার সাথে কখন কিভাবে কি ঘটতে পারে সেটাই হচ্ছে এই ঘটনাগুলো লেখার উদ্দেশ্য।এর দ্বিতীয় অংশটা পরে কোন একদিন প্রকাশ কর।এর চাক্ষুশ প্রমান আমি নিজে।




পর্ব ২ঃ-


ঘটনা-৫।

অবস্থানঃআমার নিজের বাস



আসলে এটা ঠিক ভূত দেখা সঙ্ক্রান্ত কোন ঘটনা না।অনুভূতি সঙ্ক্রান্ত যেটা আমার এবং আমার মায়ের হয়েছে।এই ঘটনার ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে আগে একটু বলে নেই।রেডিও ফূর্তিতে ভূত এফএম নামের যে শো টা হয় তাতে সুমন ভাই একবার তার একটা অগিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে একটা বই এর নাম বলেছিলেন।তিনি বলেছিলেন এই বইটা যাদের কাছে থাকে তারা নানান ধরনের প্যারানরমাল অনুভূতির মুখোমুখি হন।তিনি নিজেও হয়েছিলেন।আগ্রহের বশে আমিও নেটে সার্চ দিয়ে ডাউনলোড করার চেষ্টা করি।কিন্তু কেন জানি তিন পৃষ্ঠার বেশি নামাতে দেয় নি।ওই তিন পৃষ্ঠা পড়ে যা বুঝলাম যে এতে জ্বীন আর শয়তানদের সম্পর্কে নানা প্রকার তথ্য দেওয়া হয়েছে।



ঘটনার দিন রাত্রে বেলা প্রায় তিনটার দিকে আমি আমার টেবিলে বসে বই পড়ছিলাম।আমার বাবা-মা তাদের নিজেদের ঘরে আর আমার বড়ভাই গেষ্ট রুমে ঘুমাচ্ছিলেন তাই তার নিজের রুমটা ফাকা ছিল।রাত প্রায় সোয়া তিনটার দিকে আমি হঠাত একটা পায়ের আওয়াজ পাই।কেউ জোড়ে জোড়ে পায়ের আওয়াজ ফেললে যেমন হয় তেমন।একটু পর আমি আমার ভাইয়ের রুমের দরজায় ঝুলানো ঝুনিঝুনির আওয়াজ পাই সেই সাথে ঠাস করে দরজা লাগানোর আওয়াজ পাই।বুঝতে পারলাম কেউ আমার ভাইয়ের রুমে গেছে।আমার ভাই নিজেই হয়ত রুমে গেছে এই ভেবে নিজেকে সান্তনা দেই কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হল আমি কোন লাইটের আলো দেখতে পাই নাই।খটকা লাগে এখানেই।ভাইয়া সাধারনত রুমে ঢুকলে লাইট জ্বালায়।ব্যাপারটা দেখতে আমি ভাইয়ার রুমের দিকে যাই।গেষ্ট রুমের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখি ভাইয়া সেখানে ঘুমাচ্ছে।তার মানে ভাইয়া তার রুমে যায়নি।বাবা-মার রুমের সামনে গিয়ে দেখি তারাও ঘুমাচ্ছে।অথচ ভাইয়ার রুমের দরজা তখন বন্ধ ছিল।আমি বেশ ভয় পেয়ে যাই।কে গেল তাহলে সেই রুমে?

আমি আবার আমার টেবিলে ফিরে গিয়ে পড়তে বশি।ভাবি যে হয়ত না ঘুমানোর কারনে এমন হয়েছে।হঠাত আবার রুমের দরজা খোলার শব্দ।আমি আমার রুমের বাইরে তাকিয়ে কান খাড়া করে রাখি।শুনলাম কে জানি ধপ ধপ করে এগিয়ে আসছে।একটু পর পাক ঘরের পর্দা উড়তে দেখলাম তার মানে কেউ একজন পাক ঘরে ঢুকেছে।কিন্তু কোন লাইট জ্বলল না আবার কোন আওয়াজ ও হল না।আমি সময় নষ্ট না করে ঘুমিয়ে পড়ি



ওইদিন আমার মা তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়ের জন্য তাড়াতাড়ি ওঠেন,তার একটা অভ্যাস হল ঘর অন্ধকার করে নামাজ পড়া।তিনি আমার ভাইয়ার রুমে নামাজ পড়েন।নামাজ পড়তে দাঁড়িয়ে আম্মু যখন নাকি সেজদা দিতে যায় তখন তিনি নাকি মাথার সামনে পায়ের স্পর্শ পান।কিন্তু মা সেজদা শেষ করেই ওঠেন।আবার সেজদা দিতে গিয়ে একই রকম পায়ের স্পর্শ পান।যেন তার মাথার সামনে কেউ বসে আছে।তিনি জানতেন তাহাজ্জুদের নামাজ যারা পড়েন তারা এমন অবস্থায় পড়েন।তাদেরকে নাকি ভয় দেখানো হয়।মুনাজাতের সময় হঠাত তার কানে বাইরের দরজায় টোকা দেওয়ার আওয়াজ আসে।তিনি মুনাজাত শেষ করে গিয়ে দরজা খুলে দেখেন কেউ নেই।



তিনি সামান্য ভয় পেয়ে কুরয়ান শরীফ পড়তে বসেন আর আবার সেই টোকার আওয়াজ পান।এবার বেশ জোড়ে জোরে।কিন্তু এবার তিনি উঠে যাননি।চুপচাপ কুরয়ান পাঠ চালিয়ে যান।কুরয়ান পাঠ প্রায় শেষ দিকে এমন সময় তিনি পাকঘরের দরজার সামনে একটা কালো বিড়াল দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন।বিড়ালটা তার দিকে এক নাগাড়ে তাকিয়ে ছিল।মা সেটাকে তাড়ানোর চেষ্টা করেন কিন্তু সেটা যায় না।তিনি যা বুঝার বুঝে যান।এটা কোন স্বাভাবিক বিড়াল না।মনে হয় যেন সেটা মার কুরয়ান তিলাওয়াত শোনার জন্য বসে ছিল কেননা কুরয়ান পাঠ শেষ হবার সাথে সাথেই সেটা চলে যায়।মা সেটার পিছু নিয়ে পাকঘরে ঢুকে দেখেন পাকঘরের জানালা বন্ধ।ভিতরে ঢোকার সামান্যতম জায়গা নেই।

সেদিনি আমি আমার কম্পিউটার থেকে নেট থেকে নামানো সেই বই এর তিন পৃষ্ঠা ডিলিট করে দেই।


ঘটনা-৬

অবস্থানঃমতিঝিল



এখন যে ঘটনাটা বলব সেটা আমার এক বন্ধুর বাসায় ঘটা।তারা যে বাসাটিতে থাকত সেখানে আগে একটা পরিবার থাকত তা প্রায় ১০-১২ বছর আগে।এক ঈদে পরিবারের যিনি কর্তা তিনি বিশেষ প্রয়োজনে কুমিল্লায় যান।যাবার পথে তার বাস এক্সিডেন্ট করে।এতে ওই বাসের সবাই মারা যায়।লোকটাকে মুমূর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে তিনি মারা যান।তার শরীরের প্রায় সবগুলো হাড় ভেঙ্গে গিয়েছিল।মাথা পুরো থেতলে গিয়েছিল।কোমড়ের নিচের অংশটুকু ছিলনা বললেই চলে।তিনি যে বাসাটিতে থাকতেন সেখানে তার লাশ নিয়ে আসা হয়।কিন্তু তার দেহটি সেই বাসা ছেড়ে গেলেও তার আত্মা সেই বাসা এখনও ছেড়ে যায়নি।



এই বাসাটিতে কোন ভাড়াটিয়াই ২-৩ মাসের বেশি থাকতে পারে না।বাড়ির মালিকও বাসা ভাড়া দেবার সময় কিছু বলেন না।আমার বন্ধুর পরিবার যখন ভাড়া নিতে যায় তখন বাড়িওয়ালা শুধু এটুকুই বলেন যে এই বাসা এক বছরের আগে কোন অবস্থাতেই ছাড়া যাবে না।তারা তা মেনে নেয়।কিন্তু বাসায় ওঠার কয়েকদিনের মধ্যেই ঘটনা ঘটা শুরু হয়।



আমার বন্ধুটির রাত জেগে পড়ার অভ্যাস।একবার রাত তিনটার দিকে সে পড়ছিল।হঠাত তাদের বারান্দার শেষ মাথায় ধপ ধপ দুইটা আওয়াজ হয়।ভুল শুনেছে ভেবে বন্ধুটি আবার পড়ায় মন দেয়।আবারও একই ঘটনা।এবার সে বারান্দায় তাকায়।ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে সে দেখতে পায় সাদা আলখেল্লার মত পড়া কি যেন একটা মাটিতে লাফাচ্ছে।মাথার নিচের অংশটুকু স্বাভাবিক কিন্তু মাথা অস্বাভাবিক রকমের বড়।চোকের অংশটুকুতে যেন আগুন জ্বলছে।হঠাত সেই ছায়াটা তার রুমের দিকে সেভাবে লাফাতে লাফাতেই আসতে থাকে।আমার বন্ধুতে ভয়ে তার বইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে।এমন সময় সে টের পায় সেই ছায়াটা দরজা দিয়ে তার রুমে ঢুকেছে।তার সামনে একটা গ্লাস রাখা ছিল।সেই গ্লাসে ঠিক তার পিছনে সেই ছায়ার প্রতিবিম্ব দেখতে পায়।এক পর্যায়ে সেই ছায়াটা দক্ষিন দিকের একটি জানালায় গিয়ে মিলিয়ে যায়।



তার বাসার সবাইকে জানালেও কেউ তা বিশ্বাস করে না।সেদিন রাত্রে গায়ে কাটা দেওয়া আরেকটি ঘটনা ঘটে।আমার ওই বন্ধুটি পড়ছিল কেননা পরেরদিন তার এইচএসসি পরীক্ষা ছিল।এমন সময় সে পায়ের আওয়াজ পায়।সে বুঝতে পারে কিছু একটা রুমে ঢুকেছে।এবার সে সাহস করে পিছনে তাকায়।দেখতে পায় তার বিছানা অর্ধেক হুট করে দেবে গেছে।একটু পর মাথার বালিশও দেবে যায়।ঠিক যেন কেউ বিছানায় শুয়েছে।আরও অদ্ভুত ব্যাপার হল তার বিছানাটা একটু পর পর কাপছিল যেন ভূমিকম্প হচ্ছে।সে সাহস জোগাড় করে তার আলমারির উপর রাখা কুরআন শরীফটা বিছানার একটি কোনায় রেখে দেয়।হঠাত কি হল সে বুঝতে পারল না।হুরমুর করে বিছানা থেকে কেউ যেন গায়ে কাটা দেওয়া কানে তালা লাগানো আওয়াজ করে জানালা ভেদ করে পালিয়ে যায়।



কয়েকদিন পরে তার এক বন্ধু বাসায় বেড়াতে আসে।সে ওই বাসার ঘটনাগুলো সম্পর্কে জানত।রুমে ঢুকেই সেই ওই আত্মাটাকে উদ্দেশ্য করে একটা গালি দেয়।রাত ঠিক দশটার দিকে তারা বসে কম্পিউটারে গেমস খেলছিল।কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগে আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটে গেল।ধোপারা কাপড় ধোয়ার স্ময় যেভাবে কাপড়কে মাটিতে আছাড় মারে ঠিক সেভাবে কে জানি ওই বন্ধুটিকে আলমারির সাথে বসা অবস্থাতেই একটা আছার মারে।এতে চেয়ারটি ভেঙ্গে যায়।উঠে দাঁড়ানো মাত্রই আবার তাকে মাটিতে আছাড় মারা হয়।আমার বন্ধুটি কোন মতে সাহস জুগিয়ে সামনে রাখা কুরয়ান শরীফটি সেই বন্ধুর কোলের উপর রেখে দেয় আর তারপরই বন্ধুটির শরীর আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে যায়।

আরও কিছু ঘটনা ঘটে।এই যেমন রাতের বেলা নামাজ পড়তে দাড়ালে কে যেন পিছন থেকে সে ধাক্কা দেয়।রাতে ঘুমানোর সময় কে যেন পা ধরে টেনে মাটিতে ফেলে দেয়।ঘুমানোর সময় কানের সামনে এসে ফিসফিস করে কথা বলে।শেষ যে খবর পেয়েছিলাম তা হল ঘরটি বান্ধানো হয়েছে।বলে দেওয়া হয়ে দক্ষিন দিকের জানালা যাতে কখনও খোলা না হয়।




তিনটি সত্য ভৌতিক ঘটনা (পর্ব-৩)ঃ-

এখন যদি স্বয়ং ভূত বা পেত্নি এসে ভূতের গল্প লেখে ভয় পাওয়ানোর চেষ্টা করে আর যদি বলে এটা একেবারে সত্যি ঘটনা তাহলেও সেটা অনেকেই বিশ্বাস করবে বলে মনে হয় না।স্বয়ং ভূত-পেত্নি আপনার সামনে এসে হাজির হলে সেই না হয় অন্য কথা।সাধারন মানুষ হিসেবে ভয় পাওয়ানোর চেষ্টা করলাম।হাসবেন না কি করবেন তা আপনার ব্যাপার।

ঘটনা-৭:
অবস্থানঃবরিশাল,বাবুর হাট

লোকটার নাম ছিল কানা মামা।আমার মা এবং আমার খালারা তাকে কানা মামা বলেই ডাকত।লোকটা আজন্ম অন্ধ।আমি জানতাম,অন্ধদের একটা ভালো গুন আছে।তারা যে রাস্তা দিয়ে বারবার যাতায়াত করে সে রাস্তায় দিনের যে সময়েই তাকে রেখে আসা হোক না কেন তারা ঠিকই রাস্তা চিনে আসবে।কিন্তু কানামামার ক্ষেত্রে তা ছিল ব্যতিক্রম।তিনি নিজে থেকেই কয়েক মাইল পথ পাড়ি দিয়ে অন্য গ্রামে চলে যেতেন,আবার নিজে নিজেই গভীর বেলা বাড়ি ফিরতেন এবং দরজার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের শরীর ঝারতেন আর "যাহ,যাহ"বলে ধমকি দিতেন।

আসলে তিনি ছিলেন একজন ওঝা গোছের লোক।লোকেমুখে জানা যায় তিনি কালোজাদু জানতেন,তার সাথে কিছু জ্বীন আর পেত্নি সর্বদা চলাফেরা করে।তারাই তাকে রাতের বেলা পথ দেখিয়ে নিয়ে আসে আবার চলে যায়।তার আরেকটি দক্ষতা ছিল তিনি মানুষের স্বর শুনেই বলে দিতে পারতেন লোকটা কে।আমার মা প্রায় ১৬ বছর পর গ্রামে গিয়ে একদিন তাকে দেখে বললেন,"কানা মামা,কেমন আছেন?" তখন কানা মামা সাথে সাথেই উত্তর দেয়,"কিরে রেনু,এত বছর পর এলি।"

কথিত আছে,আজ থেকে প্রায় ২০-২২ বছর আগে এলাকাতে একটা পুরানো পোড়া বাড়ি ছিল,যেখান থেকে নাকি প্রতিদিন রাতের বেলা অদ্ভুত সব আওয়াজ আসত,কোনদিন হয়ত বাচ্চার কান্নার আওয়াজ,আবার নুপুর পায়ে কারো হাটার আওয়াজ,গোঙ্গানির মত আওয়াজ পাওয়া যেত।এমনকি ওই বাড়ির বারান্দায় প্রায়শি নাকি শাদা কাপড় পরিহিত একটা ছায়া দেখা যেত।তখন কানা মামা কেবল মাত্র কালোজাদুর চর্চা শুরু করেছেন।তিনি সবাইকে বললেন যে তিনি একা রাতের বেলা সেই বাড়িতে যাবেন এবং ওইখানে যদি অশরীরী কিছু থাকে তাহলে তিনি তাদের বন্দি করে আনবেন।কথামত তাই হল,তিনি একা রাতের বেলা গেলেন কিন্তু সেদিন তিনি আর ফিরে আসেননি।তার দেহ অচেতন অবস্থায় দুইদিন পর পুকুর পাড়ে পাওয়া যায়,তবে তারপর থেকে ওই বাড়ি থেকে আত কোন আওয়াজ আসেনি।

তার যারা ক্ষতি করে তাদের উপর তিনি জ্বীন দ্বারা প্রতিশোধ নিতেন।এমনকি জ্বীনরা তার অনুপস্থিতিতে ক্ষতি করত।তার মৃত্যূর পর এমনি একটা ঘটনা ঘটে।

এক সদ্য বিবাহিত মেয়ে রাতের বেলা হাতমুখ ধুতে কল পাড়ে যায়।কিছুক্ষন পরে তার আর্তচিতকারে তার স্বাশুড়ি মা বাইরে বেরিয়ে আসে।তিনি গিয়ে দেখেন তার বউমাকে কে যেন হাওয়ায় ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং কিছুক্ষন পরে পুকুরে ফেলে দেয় আর পানিতে চুবাতে থাকে।সে ঠিকমত চিতকার করতে পারছিল না কারন তার গলার সোনার চেইন কে যেন গলায় চেপে ধরেছিল।তখন তার শ্বাশুরি মা লোকজন জড়ো করে মেয়েটাকে পানি থেকে উঠায়।পরে তার ভাষ্যে জানা গেল,সে একটা পিদিম হাতে নিয়ে কলপারে যায়।চারপাশে কোন বাতাস না থাকা সত্তেও হঠাত পিদিমটা নিভে যায় এবং কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাকে পাজকোলা করে কে যেন হাওয়ায় ভাসিয়ে পানিতে নিয়ে ফেলে পানিতে ডুবানোর চেষ্টা করে।ধারনা করে সবাই যে,তার শ্বশুর জমিজমা সঙ্ক্রান্ত ব্যাপারে কানা মামার ক্ষতি করেছিল তাই তার মৃত্যূর পর এভাবেই প্রতিশোধ নেওয়া হয়।


ঘটনা-৮:

অবস্থানঃবিদেশ(সঠিক জায়গার নাম জানা নেই)

এটা এক বন্ধুর মুখে শোনা।একবার এক লোক ব্যবসার কাজে বিদেশে যায়।তিনি একটি ফাইভস্টার হোটেলে ওঠেন।সেখানে তখন মাত্র দুটি রুম খালি ছিল একটি দক্ষিন্মুখী আরেকটি ঠিক তার পাশে।তিনি ম্যানেজারের কাছে দক্ষিনমুখী রুমটা চান।কিন্তু ম্যানেজার তাকে রুমটা দেয়না,পাশের রুমটা দেয়।কারন জানতে চাইলে ম্যানেজার বলে ওই রুমে নাকি কিছু কন্সট্রাকশনের কাজ চলছে।ওই লোক নিজের রুমে চলে যায়।

রাতের বেলা ২-৩ টার দিকে তিনি ধ্রিম ধ্রিম আওয়াজ পান,কেউ যেন পাশের দেয়ালে আঘাত করছে,সেই সাথে মৃদু কান্নার আওয়াজ আসছে।তিনি ব্যাপারটাতে তেমন পাত্তা না দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন।পরেরদিন ঠিক একই সমস্যা।এবার অনেক জোড়ে জোড়ে কান্নার আওয়াজ আসছে।সেই সাথে কেমন জানি ধস্তাধস্তির আওয়াজ,পানি পড়ার শব্দ।তিনি জানেন ওই রুমে কেউ থাকে না তারপরেও তিনি উঠে গিয়ে ওই রুমে নক করেন আর সাথে সাথেই আওয়াজ বন্ধ হয়ে যায়।তিনি চলে আসতে যাবেন তখন আবার আওয়াজ।এবার তিনি দরজার চাবির ফুটোয় চোখ দেন কিন্তু ভিতরে কিছুই দেখতে পাননা,শুধু অন্ধকার।সেদিনের মত তিনি রুমে চলে যান

পরের দিন এবার আগে ভাগেই তিনি ওই রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন যাতে আওয়াজ হলেই চোখ রেখে দেখতে পারেন,কিন্তু সেদিন আর আওয়াজ হয়নি।তারপরেও তিনি কৌতুহলবশত চাবির রিং এর ফুটোয় চোখ রাখেন।দেখেন পুরো রুম লাল হয়ে আছে।এটা দেখে এবার তিনি ভয় পেয়ে যান।।

পরের দিন তিনি হোটেলে ঝারু দেয় এমন একজনের সাথে কথা বলেন।তার ভাষ্যটা ছিল এমন,"ওই রুমে অনেক বছর আগে একটা মেয়েকে রেপ করে তাকে খুন করে লাশ ফেলে যাওয়া হয়।এরপর থেকে সেখানে নানা রকম আওয়াজ আসতে থাকে।হোটেলের সুনাম খারাপ হবে বলে আপনাকে বলা হয়নি।"

লোকটি তার রুমে ফিরে আসবে এমন সময় ঝারুদার তাকে ডেকে বলে,"জানেন স্যার মেয়েটার একটা অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য ছিল।মেয়েটার চোখের রঙ ছিল লাল"

ঘটনা-৯:

অবস্থানঃবরিশাল

এই ঘটনাটা আমার মায়ের কাছ থেকে শোনা।তিনি যখন ছোট ছিলেন ওই সময়টাতে গ্রামাঞ্চলের দিকে মানুষের প্রধান পেশা ছিল পুরোপুরি ভাবে কৃষি।এখন যেমন ব্যবসার প্রচলন ব্যাপকভাবে ঘটেছে তখন তেমন ছিল না।সে সময় রাতের বেলা প্রায়শি ক্ষেত থেকে ধান চুরি হয়ে যাবার ঘটনা শোনা যেত।এ কারনে গ্রামের লোকজন মিলে ঠিক করে যে তারা কাউকে পাহারাদার হিসেবে নিয়োগ দিবে এবং মাস শেষে সবাই মিলে কিছু টাকা দিয়ে তার বেতন পরিশোধ করবে।যেই কথা সেই কাজ।তাকে নিয়োগ দেওয়া হল।পাহারাদার ছিল যুবক একজন লোক কিন্তু গরীব যে কারনে রাতের বেলা কাজটি করতে সে রাজি হয়।সে যখন পাহারায় আসত তখন দৌড়ে দৌড়ে পুরো ক্ষেত একবার চক্কর দিত আর "কে রে ওখানে" বলে চিতকার দিতে দেখার জন্য কোন নড়চড় চারপাশে দেখা যায় কিনা।

প্রথম একমাস তেমন কোন সমস্যা হয় না।কোন চুরির খবর পাওয়া যায় না।কিন্তু একদিন ভোরবেলা এক কৃষক ক্ষেতের পাশে একটা ডোবায় তার লাশ খুজে পায়,তার মাথা কেটে ফেলা হয়েছিল আর হাত-পা বাধা।ক্ষেতের ক্ষানিকটা অংশ রক্তে ভরে ছিল।লোকেরা ভাবে হয়ত চোরেরা এই কাজ করেছে।

এই ঘটনার পরও চুরির ঘটনা তেমন পাওয়া যায় নি,হয় না বললেই চলে।কিন্তু নতুন একটা ঘটনার আবির্ভাব হয়।প্রায় রাতে যারা হাট থেকে বাড়ি ফিরে তারা নাকি দেখেছে প্রতি রাতে কে জানি লন্ঠন হাতে ক্ষেতের পাশ দিয়ে দৌড়ায় আর ঘ্রঘ্র আওয়াজ করে।এবং প্রতিদিন সকালে ক্ষেতের ঐ নির্দিষ্ট জায়গায় যেখানে ওই পাহারাদারের লাশ আর রক্ত পাওয়া গিয়েছে সেখানে তাজা রক্ত পড়ে থাকতে দেখা যায়।প্রতিদিনেই একই ঘটনা ঘটে।তাই কিছু লোক মিলে ঠিক করে এবার তারা রাতের বেলায় ক্ষেতের মাঝে লুকিয়ে দেখবে ঘটনা কি।এক রাতে তারা তাই করে।রাত ঠিক তিনটার দিকে ঘটে ঘটনাটা।

দূর থেকে তারা দেখতে পায় লাঠি ও লন্ঠন হাতে সাদা পোশাকের কে জানি এদিকে দৌরে আসছে আর দূর থেকেও ঘ্রঘ্র আওয়াজটা পাওয়া যাছে।কিছুটা কাছে আসতেই তারা ভয়ে শিউরে ওঠে।এটা ওই পাহারাদার যে মারা গেছে,ঘাড়ে মাথা নেই তাই ওইখান থেকেই আওয়াজ টা আসছে।তারা যেখানে লুকিয়ে ছিল সেখানে এসেই আত্মাটা দাঁড়িয়ে পড়ে,তাদের দিকে কাধ ফিরে তাকায় যেন তাদেরকেই দেখছে এবং আরও একবার ঘ্রঘ্র আওয়াজ করে দৌড়ে চলে যায়।এই ঘটনা দেখে তারা সবাই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

এই ঘটনা বেশ অনেকদিন ধরে চলে,এখনও মাঝে মাঝে নাকি দূর থেকে সাদা পোশাকের কাউকে দৌড়াতে দেখা যায়।


জ্বীন-পরীর গাঁজাখোরি গল্প এবং ধর্ম ও বিজ্ঞান-

ঐশী ধর্মের মূল উৎস এবং মূল বক্তব্য এক ও অভিন্ন। মহান আল্লাহতায়ালা প্রথম মানব এবং নবী হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে সর্বশেষ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পর্যন্ত অসংখ্য নবী ও রসূল প্রেরণ করেছেন। তাঁদের মাধ্যমে আল্লাহপাক তাঁর আদেশ নির্দেশ সম্বলিত ঐশীবাণী নির্দিষ্ট সময় অন্তর প্রতিটি মানব জাতির কাছে পৌছে দিয়েছেন। কালের প্রবাহে পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ও পরিস্থিতির পরিবর্তন যেমন ঘটেছে তেমনি মানবিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষতা সাধনও ঘটেছে। এরই সাথে সামঞ্জস্য রেখে “একই ধর্ম ইসলামের” বিধানের মূল-বক্তব্যকে অপরিবর্তীত রেখে মহান স্রষ্টা সময়ের চাহিদা অনুসারে নব নব তথ্য ও তত্ত্বের অবতারনার মাধ্যমে পরিবর্ধিত আকারে বার বার মানুষের সামনে পেশ করেছেন, যেন এর মাধ্যমে তাঁরই প্রিয়তম শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি সত্য ও সুন্দরের পথ চিনে নিয়ে সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে পারে। কিন্তু সর্বকালেই একরোখা মনোভাবাপন্ন একদল অহংকারী ও স্বেচ্ছাচারী ঐশীবাণীগুলোকে অহংকার বশতঃ সরাসরি অস্বীকার করেই ক্ষান্ত হয়নি; বরং বিকৃত করার অপপ্রয়াস চালিয়ে আসছে। অপরদিকে তেমনি কিছু সংখ্যক সুযোগসন্ধানী মানুষ কতিপয় গাঁজাখুরী গল্পের আড়ালে কুসংস্কারে আচ্ছন্ন করে ধর্মের প্রকৃত সৌন্দর্য ও আদর্শ কালিমালিপ্ত করেছে এবং কৌশলে ধর্মকে তাদের স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার বনিয়ে নিয়েছে। কিন্তু তাই বলে তো বিবেকবান জ্ঞানিগণ মানব জাতির কল্যাণ সাধনে খাঁটি ধর্মের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করতে পারে না। বর্তমানে বিশ্বের সর্বত্র সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও গভীরভাবে চিন্তা করলে খুব সহজেই অনুধাবন করা যায় যে, এ ধরণীতে বৈচিত্রময় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অসংখ্য মানব গোষ্ঠীকে শান্তি ও শৃঙ্খলা দানের জন্য কুসংস্কার-মুক্ত জ্ঞান ও ঐশী অনুশাসনের অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে।

বিশ্ব-স্রষ্টার একত্বে বিশ্বাসী প্রকৃত মুনি, ঋষি, পীর ও আওলিয়াগণের সবাই ছিলেন মহান ব্যক্তিত্বের অধিকারী সত্য-সাধক। মানবীয় গুণাবলী বিকাশের লক্ষ্যে তাঁদের অবদান সত্যিই অনস্বীকার্য। কিন্তু কতিপয় ছদ্মবেশী ও শিষ্য নামধারী ভন্ডের দল তাঁদের অবর্তমানে তাঁদের পবিত্র কর্মস্থলকে ঘিরে তিলকে তাল বানিয়ে আজগুবি কেচ্ছা-কাহিনী ও ধর্মহীন কার্যকলাপের মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ সরল মানুষদেরকে ধোঁকা দিয়ে ফায়দা লুটছে। এসব গুজব ও ধর্মহীন কর্মকান্ড সত্যিকার অর্থে ধর্ম যেমন সমর্থন করে না, তেমনি বিজ্ঞানের দিক থেকেও সেগুলো মোটেও সমর্থনযোগ্য নয়। তথাপি কতিপয় স্বার্থান্বেষী জ্ঞানপাপী ধর্মকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এসব অতিরঞ্জিত বিষয়গুলোকে পুঁজি বানিয়ে ধর্মের নামে চালিয়ে দিয়ে সেগুলোকে আবার বিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে মিথ্যা প্রমাণ করতে ব্যস্ত থাকে। গ্রামে-গঞ্জে কিছু সুযোগ সন্ধানী ছদ্মবেশী লোক জ্বীন-পরী ইত্যাদি বিষয়গুলোকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে গাঁজাখুড়ি গল্প বানিয়ে মানুষকে ধোঁকা দিয়ে ফায়দা লুটছে। এসব বানানো গল্পের প্রায় পুরোটাই ভিত্তিহীন ও ছলনাপূর্ণ। আল-কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন-

আল-কোরআন (Al-Quran)-
সূরা হিজর-আয়াত নং- ২৬ ও ২৭
(১৫ : ২৬) অর্থ- আমি তো ছাঁচে-ঢালা শুষ্ক ঠন্‌ঠনে মৃত্তিকা হতে মানুষ সৃষ্টি করেছি,
(১৫ : ২৭) অর্থ- এবং এর পূর্বে অত্যুষ্ণ বায়ুর উত্তাপ হতে জ্বীন সৃষ্টি করেছি।
সূরা রাহমান-আয়াত নং-১৫
(৫৫ : ১৫) অর্থ- এবং জ্বীনকে তিনি সৃষ্টি করেছেন নির্ধূম অগ্নিশিখা হতে।
সূরা যারিয়াহ -আয়াত নং- ৫৬
(৫১ : ৫৬) অর্থ- আমার দাসত্বের জন্যই আমি মানুষ ও জ্বীনকে সৃষ্টি করেছি।
সূরা সাফ্‌ফাত-আয়াত নং (১৫৮ - ১৬৩)
(৩৭ : ১৫৮) অর্থ- ওরা আল্লাহ্‌ ও জ্বীন জাতির মধ্যে জৈবিক সম্পর্ক সৃষ্টি করেছে, অথচ জ্বীনেরা জানে তাদেরকেও শাস্তির জন্য উপস্থিত করা হবে।
(৩৭ : ১৫৯) অর্থ- ওরা যা বলে তা হতে আল্লাহ্‌ পবিত্র, মহান।
(৩৭ : ১৬০) অর্থ- তবে, যারা আল্লাহতায়ালার নিষ্ঠাবান বান্দা তারা আলাদা,
(৩৭ : ১৬১) অর্থ- তোমরা ও তোমরা যাদের উপাসনা কর তারা -
(৩৭ : ১৬২) অর্থ- (সবাই মিলে আল্লাহ্‌ সম্পর্কে ) তাদের (নিষ্ঠাবান বান্দাদেরকে) বিভ্রান্ত করতে পারবে না।
(৩৭ : ১৬৩) অর্থ- কেবল তাদেরকে বিভ্রান্ত করতে পারবে যারা জাহান্নামী।
সূরা জ্বীন-আয়াত নং (৭ - ১৫)
(৭২ : ০৭) অর্থ- তারা (জ্বীনেরা) মনে করতো- যেমনি মনে করতে তোমরা (মানুষেরা)- যে, মৃত্যুর পর আল্লাহ্‌ কাকেও পুনরুত্থিত করবেন না।’
(৭২ : ০৮) অর্থ- এবং ওরা পরস্পর বলাবলি করছিল যে, আমরা চেয়েছিলাম আকাশের তথ্য সংগ্রহ করতে কিন্তু আমরা দেখতে পেলাম কঠোর প্রহরী ও উল্কাপিন্ড দ্বারা আকাশ পরিপূর্ণ।
(৭২ : ০৯) অর্থ- পূর্বে আমরা আকাশের বিভিন্ন ঘাঁটিতে সংবাদ শোনার জন্য বসে থাকতাম কিন্থু এখন কেউ সংবাদ শুনতে চাইলে সে তার ওপর নিক্ষেপের জন্য প্রস্তুত জ্বলন্ত উল্কাপিন্ডের সম্মুখীন হয়।
(৭২ : ১০) অর্থ- জগতের প্রতিপালক জগদ্বাসীর অমঙ্গল চান, নাকি তাদের সঠিক পথ দেখাতে চান -  - সে বিষয়ে আমরা কোন জ্ঞান রাখি না।
(৭২ : ১১) অর্থ- এবং আমাদের কতক সৎকর্মপরায়ণ এবং কতক এর বিপরীত, আমরা ছিলাম বিভিন্ন পথের অনুসারী;
(৭২ : ১২) অর্থ- এখন আমরা বুঝেছি যে, আমরা আল্লাহ্‌-কে পরাভূত করতে পারব না এবং পৃথিবী থেকে পলায়ন করে তাঁর ক্ষমতাকে ব্যর্থও করতে পারব না।
(৭২ : ১৩) অর্থ- আমরা যখন হেদায়েতের বাণী (কোরআন) শুনলাম, তাতে বিশ্বাস স্থাপন করলাম। যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে তার নিজের পাওনা কম পাওয়ার আশংকা থাকে না, (পরকালেও) তাকে লাঞ্ছনা পেতে হবে না।
(৭২ : ১৪) অর্থ- আমাদের কিছু আত্মসমর্পণকারী এবং কিছু সীমালংঘনকারী; যারা আত্মসমর্পণ করে তারা সুচিন্তিতভাবে সত্যপথ বেছে নেয়।
(৭২ : ১৫) অর্থ- কিন্তু যারা সত্যবিমুখ তারা অবশ্য জাহান্নামেরই ইন্ধন।

সুতরাং পবিত্র কোরআনের এই বানীগুলো থেকে আমরা বুঝে নিতে পারি যে, আল্লাহতায়ালা মানুষ সৃষ্টির পূর্বে জ্বীন-জাতিকে অত্যুষ্ণ বায়ুর উত্তাপ তথা নির্ধূম অগ্নিশিখা হতে সৃষ্টি করেছেন। যদিও এ ধরণের কোন সৃষ্টিকে অবলোকন করার মতো কোন যন্ত্র বিজ্ঞান এখনও আবিষ্কার করতে পারেনি। কিন্তু তাই বলে তা সরাসরি অস্বীকারও করেনি। কারণ এ মহাবিশ্বে এমন অনেক সৃষ্টি রয়েছে যা এখনও পর্যন্ত বিজ্ঞানের ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে। গতিবিধি অনুমান করা গেলেও এদের সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না। যেমন কয়েক যুগ পূর্বেও মানুষ রোগ-জীবাণু যেমন-ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ইত্যাদির অস্তিত্ব ও মানবদেহে এদের প্রভাব বিস্তার সম্পর্কে সন্দিহান ছিল। কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞানের অবদান অণুবিক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কারের ফলে এদের অস্তিত্ব ও কর্মকান্ড সম্পর্কে আমরা আজ সন্দেহ-মুক্ত। তবে আল্লাহতায়ালা সৃষ্টিগতভাবে জ্বীনদেরকে এমন কিছু বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী করেছেন যে তারা এর সহায়তায় প্রথম আসমানের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে গিয়ে তথ্য ও সংবাদ সংগ্রহের চেষ্টা চালানোর যোগ্যতা রাখে। আর এ কারণেই হয়ত মানুষদের মধ্যে কেউ কেউ তাদের উপাসনা করে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে এইসব উদ্ধত জ্বীন ও বিভ্রান্ত মানুষেরা বিপথগামী ও জাহান্নামী। কারণ তারা বিভ্রান্তকর সংবাদ শুনিয়ে অন্যকে ধোঁকা দিতে চায়।

আমরা ‘হিপনোটিস্‌ম’-এর কথা সবাই কম-বেশী জানি। যা বড় বড় যাদুকররা প্রয়োগ করে থাকে এবং কিছু সময়ের জন্য হলেও মানুষকে বিমোহিত করে ভেলকিবাজির খেলা দেখিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সম্ভবত সাধনার দ্বারা এমন কোন মাধ্যম বা শক্তিকে আয়ত্বে আনা হয়, যার সহায়তায় সাধারন মানুষের স্নায়ুতন্ত্রের উপর কিছু সময়ের জন্য হলেও প্রভাব বিস্তার করা সম্ভব হয়। ইদানিং চিকিৎসাক্ষেত্রেও এটি প্রয়োগের চেষ্টা চলছে। বিশেষ করে বেদনা নাশক হিসেবে এবং যন্ত্রনাদায়ক রোগের প্রকোপ দমনে এর সফল প্রয়োগ হতে দেখা গেছে এবং এ নিয়ে যথেষ্ট গবেষণা চলছে। তবে ঠিক কি উপায়ে এবং কোন ধরণের শক্তিকে এতে কাজে লাগানো হচ্ছে তার সঠিক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এখনও পাওয়া যায়নি। তেমনি মানুষ সাধনার মাধ্যমে অথবা জন্মগতভাবে এমন কোন শক্তির অধিকারী হতে পারে, যার সহায়তায় সেই বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ব্যক্তিটি অতীতের তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে হয়তবা ভবিষ্যতের কিছু কিছু কথা বলে দিতে পারে। তবে এক্ষেত্রে অধিকাংশই ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে। তাই ধর্মীয়ভাবে এসব ভবিষ্যৎ বাণীতে বিশ্বাস স্থাপন করা নিষেধ এবং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোন থেকেও যুক্তিসঙ্গত নয়। কারণ এসব ক্ষেত্রে সাধারনত প্রতারণার উদ্দেশ্যই প্রবল থাকে। আল-কোরআনে আল্লাহতায়ালা যাদুবিদ্যা শিক্ষাকরা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন এবং যাদুর অনিষ্ট ও দুষ্ট-জ্বিনের প্রভাব থেকে বেঁচে থাকবার জন্য সবসময় স্রষ্টা মহান আল্লাহকে স্মরণ করতে ও তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করতে বলেছেন। সূরা বাকারা:-এর ১০২ নং আয়াত ও সূরা আল ফালাক্ক ও সূরা আন্‌ নাস থেকে আমরা তা সহজেই বুঝে নিতে পারি।

আল-কোরআন (Al-Quran)-
সূরা বাকারা-আয়াত নং-১০২
(০২ : ১০২) অর্থ- ( আল্লাহতায়ালার প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করেই এরা ক্ষান্ত হয়নি ) এমন কিছু জিনিসও (যাদুমন্ত্র) এরা অনুসরণ করতে শুরু করলো, যা শয়তান কর্তৃক সোলায়মান (নবী)- এর রাজত্বের সময় (সমাজে) চালু করা হয়েছিল, (সত্যি কথা হচ্ছে) সোলায়মান কখনো (আল্লাহবিরোধী কাজে যাদুকে ব্যবহার কোরে) আল্লাহকে অস্বীকার করেনি, আল্লাহকে তো অস্বীকার করেছে সে সব অভিসপ্ত শয়তান, যারা মানুষকে যাদুমন্ত্র শিক্ষা দিয়েছে; (যাদুপাগল কিছু মানুষকে পরীক্ষার উদ্দেশে) আল্লাহতায়ালা হারূত ও মারূত (নামে) ফেরেশতাদ্বয়কে ব্যাবিলনে পাঠিয়েছিলেন, সেই দুজন ফেরেশতা যখনই (কাউকে) এ বিষয়ে (যাদু) শিক্ষা দিতো, (প্রথমেই) তারা এ কথাটা তাদের জানিয়ে দিতো, “আমরা তো হচ্ছি (আল্লাহর) পরীক্ষামাত্র”, সুতরাং (এ বিদ্যার কারণে কোন অবস্থাতেই) তুমি আল্লাহতায়ালাকে অস্বীকার করো না, (তা সত্ত্বেও) তারা তাদের কাছ থেকে এমন কিছু বিদ্যা শিখে নিয়েছিলো, যা দিয়ে তারা স্বামী- স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করতো, (যদিও) আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কোনো দিনই কেউ কারো সামান্যতম ক্ষতিও সাধন করতে পারবে না; (মূলত) যা এরা শিখে তাতে তাদের ক্ষতিই হয় এবং (বাস্তবে) তা কোনো উপকারে আসে না; তারা যদি জানতো (যে, (শ্রম ও অর্থ দিয়ে) যা তারা কিনে নিয়েছে পরকালে তার কোনো মূল্য নেই; তারা নিজেদের জীবনের বিনিময়ে যা ক্রয় করেছে তা সত্যিই নিকৃষ্ট; (কতো ভালো হতো) যদি তারা কথাটা জানতো!

সূরা আল ফালাক-আয়াত নং-(১ - ৫)
০১. বল, আমি আশ্রয় চাই ঊষার স্রষ্টার কাছে, ০২. সৃষ্ট (জগতের) বস্তুনিচয়ের সকল প্রকার অনিষ্ট থেকে ০৩. এবং রাতের অনিষ্ট হতে - যখন তা গভীর অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়, ০৪. এবং গ্রন্থিতে ফুঁক দিয়ে যারা (যে সকল যাদুটোনাকারিণী) যাদু করে তাদের অনিষ্ট থেকে, ০৫. এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে, যখন সে হিংসা করে।

সূরা আন্‌ নাস্-আয়াত নং-(১ - ৬)
০১. বল, আমি আশ্রয় চাই মানুষের স্রষ্টার কাছে, ০২. মানুষের (প্রকৃত) বাদশার কাছে, ০৩. মানুষের একমাত্র উপাস্যের কাছে, ০৪. কুমন্ত্রণাকারীর অনিষ্ট হতে, যে সুযোগ মত কুমন্ত্রণা দিয়ে সরে পড়ে, ০৫. যে মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়, ০৬. জ্বিনদের মধ্য হতে এবং মানুষদের মধ্য হতে।

সব সময় একথা স্মরণ রাখা দরকার যে, সসীম কখনও অসীমকে ছুঁতে বা চর্মচক্ষুতে দেখতেও পারে না। মানুষ যত শক্তিই অর্জন করুক না কেন তা আল্লাহর অসীম শক্তির মোকাবেলায় অতি নগণ্য। কারণ সমস্ত শক্তির আধার ও উৎস একমাত্র ‘আল্লাহ্‌’। তাঁরই প্রদত্ত এ শক্তির ব্যবহার কেউ সুপথে করে (যেমন- নবী-রাসূল, পীর, আওলীয়া, দরবেশ ইত্যাদি আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ) আবার কেউ করে বিপথে (যেমন শয়তানের পূজারী, যাদুকর, জিনের অনুসারী ইত্যাদি বিপথগামী মানুষ)। সবই আল্লাহর পরীক্ষা মাত্র। তাই প্রতিটি ক্ষেত্রে ধর্মহীন অবাঞ্চিত কুসংস্কার ও মনগড়া মিথ্যে মতবাদগুলো চিহ্নিত করে খাঁটি ধর্মের প্রচার, প্রসার ও পালনের জন্য স্বচেষ্ট হতে হবে। ইসলামের শাশ্বত বিধিবিধান সম্পর্কে সর্ব সাধারনের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে না পারলে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে মতভেদ, দলাদলি, খুন, সন্ত্রাস, জুলুম, পাপাচার, ধর্মান্ধতা, সামপ্রদায়িকতা সর্বপরি সকল প্রকার অশান্তি ও অন্ধকারের হাত থেকে মুক্তি পাবার আর কোন বিকল্প নেই। ধর্মের নামে লোকদেখানো অন্তঃসারশুন্য ভন্ডামী পরিত্যাগ করে ধর্মীয় রীতিনীতি ও আদর্শের যথাযথ প্রতিফলন ঘটাতে হবে। ফতোয়ার পবিত্রতা রক্ষার্থে মিথ্যাচার, অহেতুক বারাবারি ও স্বার্থবাদী মনোভাব ত্যাগ করে সময়োচিত সুচিন্তিত বক্তব্য পেশ করতে হবে। নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত ইত্যাদি অবশ্য পালনিয় ইবাদতের পাশাপাশি জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষ তথা গোটা সৃষ্টিকুলের কল্যাণে এগিয়ে আসতে হবে। আর তাহলেই এই সুন্দর পৃথিবীতে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শান্তিময় বাসযোগ্য পরিবেশ রচিত হতে পারে।