Wednesday, November 11, 2015

ব্রেইন ক্যানসার


নিপুণ একদম জানে বেঁচে ফিরলো,একটু আগে ডাক্তার জানালেন সে বেঁচে গেছে। ব্যাপার হচ্ছে গত তিন চারদিন তার প্রচন্ড মাথা ব্যাথা। তার ভাষ্যমতে মাথা ছিড়ে যাচ্ছে,ব্রেনে কে যেন হাঁটাহাঁটি করছে। তার অভিব্যক্তি শুনে আমরা মিটিং ডেকে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিলাম নিপুণের ব্রেইন ক্যান্সার!!
কিন্তু পরদিনই মাথা ব্যাথার সাথে ঘাড় ব্যাথা পিঠ ব্যাথা শুরু হলো। নিপুণকে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা দেয়া হলো "বেশী করে সিগারেট খাও,সুস্থ হয়ে যাবে"
পরদিন সকালেই নিপুণের চিৎকার "ভাই আমি সুস্থ হয়ে গেছি"
বুকটা কেঁপে উঠলো, খুব দুঃখ পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম "ক্যামনে বুঝলা? সে বলল "ভাই পুরা সিগারেট খাইতে পারতেছি"
নাহ সে সুস্থ হয়নি। বিকালে ডাক্তার জানালেন তার প্রেসার লো। বেশী করে দুধ ডিম কলা যা খুশী তাই খেতে বললেন। শুরু হয়ে গেল যুদ্ধ। পেটভরে তিনপ্লেট তেহারী খাবার চারুকলাতে গিয়ে ৮টা চিকেন,তারপর আইসক্রিম,তারপর দুই গ্লাস কোক। ফেরার পথে আড়ং দুধ দুই প্যাকেট খেয়ে ফেলল।
তার পাশাপাশি আমরাও খাচ্ছি,খাওয়া দাওয়া একা করতে নেই। অসুস্থকে সঙ্গ দেয়া মানবতার কাছাকাছি ব্যাপার। অতএব নিপুণ একটা ডিম খাইলে আমরাও খাই,নিপুণের শখ হলো জাম খাবে,আমাদের শখ হলো লটকন খাবো। অতএব দুটাই কিনে আনা হলো। টানা তিন দিন পার হবার পর যখন ব্যাথা কিছুতেই সারছে না। আমরা সবাই মিলে প্রায় সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললাম নাহ! নিপুণের ব্রেইন ক্যান্সারই হয়েছে,সে আর আমাদের সাথে থাকছে না। সে না থাকলে কি হবে তার স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির? তার ল্যাপটপটা ভালো,হার্ডডিস্ক ৫০০,আমার ল্যাপটপটা প্রায় নষ্ট। কি আর করবো ল্যাপটপটা আমার ভাগে পড়লো!
এছাড়া মোবাইল পড়লো আরেক ছোট ভাইয়ের কপালে,তার আবার দুইটা মোবাইল নষ্ট। কিচ্ছু করার নাই। গরীবের মধ্যে ভাগ করে দিলে যদি নিপুণ বেহেশতে যায় আরকি! ঝামেলা বাঁধলো নিপুণের বান্ধবীদের নম্বর নিয়ে! সবার বড় হিসাবে যদিও আমি অগ্রাধিকার পাবার কথা। কিন্তু ষড়যন্ত্র করে আমাকে সবাই বঞ্চিত করলো। যাকগে ওসব নিয়ে ভাবলে চলবে না। সময়টা খারাপ। অবশ্য নিপুণকে আমি কথা দিয়েছি ও মারা যাবার পর টানা এক সপ্তাহ ওর ছবি প্রোপিক লাগাবো,কাভার কালো করে দিবো! ও মনে মনে যে মেয়েটাকে পছন্দ করতো তাকে বলে দিবো "নিপুণ তোমাকে পছন্দ করতো,কখনও মুখ ফুটে বলে নাই। মরবার আগে বলে গেছে আমার মাঝে ওকে খুঁজে নিতে"
চোখে পানি চলে আসতেছে,ছেলেটাকে কথা দিয়েছিলাম ঈদে একটা শার্ট কিনে দিবো। বিকালে বিছানায় কাতরাচ্ছিলো জ্বরে,আমি ওর ল্যাপটপটা নিয়ে ইউজ করার চেষ্টা করছি। আর যাই হোক মরে গেলেতো আমাকেই এটা ইউজ করতে হবে!
কাতরানোর পরিমাণ বাড়ছে,ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম। ডাক্তার বুক মেপে মানে বুকের স্পন্দন দেখে,জ্বর মেপে,প্রেসার মেপে মুখ কালো করে বসে আছেন। আমাকে বললেন "ওর অভিভাবক কি আপনি?
-জ্বি আপাতত আমি!
ওর দিকে তাকিয়ে বললেন "টেনশন করার কোন কারন নাই,একটুও চিন্তা করবেন না। সুস্থ হয়ে যাবেন"
আমার দিকে ফিরে বললেন "ওর টাইফয়েড হয়েছে,নার্সিং দরকার"
আমার মাথায় সব হারানোর বাজ পড়লো,
নিপুণ দেখি হাসছে। জিজ্ঞেস করলাম "হাসছো কেন?
"ভাই এই প্রথম আমার একটা বড় রোগ হইছে,চলেন পার্টি দিই"
অতঃপর বাসার সবাইর জন্য গ্রীল চিকেন পরোটা, কোক নিয়ে রওনা হলাম!