Wednesday, November 11, 2015

স্বপ্ন কি ?


মানুষ জীবনের ৩৩% সময় ঘুমিয়ে কাটায়। স্বপ্ন মানুষের ঘুমন্ত জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। নিদ্রিত অবস্থায় ইন্দ্রিয়গণ স্তিমিত হয় কিন্তু সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় হয় না। তাই নিদ্রাকালে নানারূপ কল্পনাশ্রয়ী চিন্তা ও দৃশ্য উদিত হয়। এই সব দৃশ্য দেখাকে একরকমের “স্বপ্ন দেখা বলা হয়। নিদ্রিত অবস্থায় জাগ্রত অবস্থার ধারাবাহিকতাকেও স্বপ্ন বলা যেতে পারে। স্বপ্নে নিজের কাছে নিজের নানারকম আবেগ, তথ্য ও তত্ত্বের প্রকাশ ঘটে। স্বপ্নে দেখা দৃশ্য জাগ্রত প্রতক্ষ্যের মতোই স্পষ্ট। আমরা স্বপ্ন দেখি অর্থাৎ স্বপ্ন মূলত দর্শন-ইন্দ্রিয়ের কাজ। স্বপ্ন দেখা অনেকটা সিনেমা দেখার মতো। তবে স্বপ্নে অন্যান্য ইন্দ্রিয়েরও গৌণ ভূমিকা থাকে। জাগ্রত অবস্থায় প্রতক্ষ্যের মাধ্যমে যেমন শরীরে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তেমনি স্বপ্ন দেখাতেও কিছু না কিছু শারিরীক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

মানুষ স্বপ্ন দেখে কেন ?
ঘুমের মধ্যেও ইন্দ্রিয়গণ বাইরের জগত থেকে সংবেদন গ্রহণ করতে পারে। এ সব সংবেদন ইচ্ছামতো প্রতিরূপে রূপান্তরিত হয়ে স্বপ্নদৃশ্যের সৃষ্টি করতে পারে। তবে স্বপ্নের মূল উপাদান তৈরি হয় স্বপ্নদ্রষ্টার দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতা, চিন্তা ও কর্ম থেকে। এবং স্মৃতি থেকে।
মানুষ কতটা স্বপ্ন দেখে ?
জন্মমুহূর্ত থেকেই শিশু দর্শন প্রতিরূপ ব্যতিত অন্যান্য প্রতিরূপের সাহায্যে স্বপ্ন দেখে। জন্মের তিন চার মাস পর থেকেই শিশুরা স্বপ্ন “দেখা” শুরু করে। দুই বছর বয়স পর্যন্ত শিশুরা ঘুম সময়ের প্রায় ৪০ শতাংশ এবং কৈশোরে ঘুম সময়ের ২০ থেকে ২২ শতাংশ স্বপ্ন দেখে। চল্লিশের পর থেকে ঘুম সময়ের ১২ থেকে ১৫ শতাংশ স্বপ্ন দেখা হয়। মানুষের বয়স যত বাড়তে থাকে স্বপ্ন দেখা তত কমতে থাকে। সুতরাং, প্রাকৃতিক প্রবণতা হচ্ছে মানুষ সর্বস্বপ্নহীন ভাবে পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে।

মানুষ কখন স্বপ্ন দেখে ?
ক্লান্ত মানুষ প্রথম দুই ঘন্টা ঘুমানোর সময় স্বপ্ন দেখে না। তখন শরীর পূর্ণ বিশ্রাম নেয়। স্বপ্ন দর্শন কালকে rapid eye movement period বলা হয়। নিদ্রাকালে যে সময় মানুষ স্বপ্ন দেখে না সে সময়টাকে  non rapid eye movement period বলা হয়। ঘুমের মধ্যে প্রায় প্রত্যেক ৯০ মিনিটে,  প্রায় ১০ মিনিট সময় ধরে REM  নিদ্রা দেখা যায়। ঘুমের মধ্যে ৪/৫ বার REM নিদ্রা হয়। অর্থাৎ প্রতিদিন মানুষ অন্তত ৪/৫ টি স্বপ্ন দেখে।

স্বপ্নের প্রকারভেদঃ
চরক-সংহিতা সাত প্রকার স্বপ্নের কথা বলেছে। বৌদ্ধ দর্শনে বর্ণিত হয়েছে ছয় প্রকারের স্বপ্ন।
জীবন চলার পথে মানুষ ভয়,
দুঃস্বপ্ন,
অতীত স্মৃতি,
ইচ্ছাপূরণ,
ভবিষ্যতের বার্তা,
আধ্যাত্মিক নির্দেশনা,
মুর্শিদের উপদেশ,
জ্ঞান লাভ ইত্যাদি নানারকম স্বপ্ন দেখে।
আধ্যাত্মিক স্বপ্নঃ
স্বপ্নের সাথে আধ্যাত্মিকতার সম্পর্ক নিবিড়। স্বপ্ন হচ্ছে মুর্শিদের কাছে পৌঁছবার, মুর্শিদ থেকে নির্দেশনা লাভের মহাসড়ক। স্বপ্নে মুর্শিদের সাথে সংযোগ বহুজনের একটা পরীক্ষিত পদ্ধতি। মুর্শিদের সাথে প্রেম থাকলে শিষ্য তাকে স্বপ্নে দেখবে এবং তার কাছ থেকে প্রতিটা বিষয়ে নির্দেশনা প্রাপ্ত হবে,  এতে সন্দেহের অবকাশ নেই। স্বপ্নে যে শুধু আধ্যাত্মিক জ্ঞান প্রাপ্তি ঘটে তা নয়, স্বপ্ন সমীক্ষণের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক জ্ঞান প্রাপ্তি ঘটে তা নয়, স্বপ্ন সমীক্ষণের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক তত্ত্বও বিকশিত হয়।

স্বপ্নে ভবিষ্যতের বার্তাঃ
স্বপ্ন ভবিষ্যতের বার্তা বহন করতে পারে। পতঙ্গের গুরুমস্তিষ্ক থাকে না কিন্তু পতঙ্গেরা নার্ভক্রিয়ার সাহায্যে ভূমিকম্প, সূর্যগ্রহণ, আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুযোর্গের পূর্বাভাস পেয়ে থাকে। যন্ত্রের যন্ত্রনায় মানুষের মধ্যে ভবিষ্যতের পূর্বভাস পাবার শক্তিগুলো নিস্ক্রিয় হয়ে যায়। ঘুমের সময় গুরু মস্তিষ্কের কর্মকান্ড স্তিমিত হয়ে গেলে স্বতন্ত্র নার্ভক্রিয়া সক্রিয় হয়ে ভবিষ্যৎ বাণী পাঠায়। “বিভূতিযোগ” চর্চা করে যোগীরা স্বতন্ত্র নার্ভক্রিয়াকে সক্রিয় করতে পারেন।
স্বপ্নে ইচ্ছাপূরণঃ
স্বপ্নের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য – ইচ্ছাপূরণ । মানুষ অনেক কিছুই চায় কিন্তু পায় না। এমনও হয়, মানুষ আসলে কি চায় তাই সে জানে না। স্বপ্নে একদিকে চেয়ে না পাওয়া বস্তুগুলো পেয়ে তার ইচ্ছাপূরণ হয় অন্যদিকে স্বপ্ন দ্রষ্টা জানতে পারে আসলে সে কি চায়।
স্বপ্ন দেখার প্রয়োজনীয়তাঃ
স্বপ্ন দেখার জন্যই মানুষকে ৬ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমাতে হয়। তা না হলে মানুষের শারিরীক বিশ্রামের জন্য ২/৩ ঘন্টা ঘুমই যথেষ্ট। সাধারণ মানুষের জন্য স্বপ্ন দেখা ঘুমের মতোই প্রয়োজন। কিন্তু আধ্যাত্মিক সাধনার একটা স্তরে উপনীত হলে স্বপ্ন দেখার কোন প্রয়োজন থাকে না বলে কোন কোন সাধক মন্তব্য করেছেন।
ঘটনা এবং স্বপ্ন একই সময়ে সংগঠিত হওয়াঃ
অনেক সময় এমন স্বপ্নও মানুষ দেখে থাকে যখন স্বপ্ন দেখার সময়ই ঘটনাটা ঘটছে। এমন ঘটনাও ঘটেছে – ছেলে বিদেশে থাকে, যে সময়ে সে স্বপ্নে তার বাবার মৃত্যু দেখেছে ঠিক সে সময়েই বাস্তবে তার বাবা ইন্তেকাল করেছেন। টেলিপ্যাথি ছাড়া অন্য কোনভাবে এমন ঘটনার ব্যাখ্যা করা যায় না।
স্বপ্ন স্মরণঃ
ঘুম থেকে জেগে উঠার পর অধিকাংশ স্বপ্নই ঠিকঠাক মনে থাকে না। অনেক সময় ঘুম ভাঙ্গার পর পর স্বপ্ন মনে থাকে কিন্তু যতই সময় যেতে থাকে স্বপ্ন ততই বিষ্মৃতিতে চলে যায়। কিন্তু কিছু স্বপ্ন আছে যা বাস্তব ঘটনার চেয়েও বেশি স্পষ্ট এবং উজ্জ্বল। এসব স্বপ্ন জীবনে কখনোই ভুলা যায় না।
স্বপ্ন বর্ণনায় মিথ্যাচারঃ
ঘুম ভাঙ্গার পর দেখা স্বপ্ন মানুষ যখন অন্যের কাছে বর্ণনা করে তখন সাধারণত মানুষ মিথ্যাচারের আশ্রয় নেয়। কারণ, স্বপ্ন বর্ণনার সময় জাগ্রত অবস্থার মনোভাব দেখা স্বপ্নের উপর প্রভাব ফেলে।  স্বপ্ন এতটা সাজানো গোছানো থাকে না যতটা সাজিয়ে গোছিয়ে মানুষ তা বর্ণনা করে।
স্বপ্নব্যাখ্যাঃ
আদিকাল থেকেই স্বপ্নব্যাখ্যার প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। আরটেমিডোরাস তার বিখ্যাত অনিরো ক্রিটিকন বইয়ে স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে প্রথম স্বপ্ন ব্যাখ্যার রীতি লিপিবদ্ধ করেন। স্বপ্নের উৎস, প্রক্রিয়া, তাৎপর্য ও ব্যাখ্যার পদ্ধতি সম্বন্ধে ফ্রয়েডের আবিষ্কার মনঃসমীক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশেও খাবনামা জাতীয় বইয়ের কাটতি কম নয়। স্বপ্নের ব্যাখ্যা কোন বইয়ে থাকতে পারে না। স্বপ্নের সঠিক ব্যাখ্যা কেবল জানতে পারে স্বপ্নদ্রষ্টা নিজে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে অধিকাংশ স্বপ্ন দ্রষ্টা এটাই জানে না যে সে সঠিক ব্যাখ্যাটা জানে। নিজেদের স্বপ্নকে নিজেরা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করলে অনেক তথ্য ও তত্ত্ব আবিষকৃত হয়। কিন্তু এজন্য প্রথমে স্বপ্ন স্মরণ রাখার অনুশীলন করতে হয়।
স্বপ্ন স্মরণ রাখার অনুশীলনঃ
রাতে ঘুমাবার আগে ২১ বার বলতে হবে  – আজ রাতে আমি যে সব স্বপ্ন দেখবো তার প্রত্যেকটি স্বপ্ন মনে রাখবো এবং ঘুম ভাঙ্গার সাথে সাথে তা লিখে রাখবো। এভাবে ২১ দিন চেষ্টা করলে সব স্বপ্ন মনে রাখা যায়। নিজেকে জানার জন্য স্বপ্নকে স্মরণ রাখার এবং স্বপ্ন বিশ্লেষণের গুরুত্ব অপরিসীম। যে জ্ঞান স্বপ্নদ্রষ্টার আছে কিন্তু যার অস্তিত্ব সম্পর্কে স্বপ্নদ্রষ্টা সচেতন নয় স্বপ্নে সেসব জ্ঞান প্রকাশিত হয়। কিন্তু স্বপ্নদ্রষ্টার সচেতন প্রচেষ্টা ব্যতিত তা সম্ভব নয়।
ইচ্ছা স্বপ্ন দেখাঃ
মানুষ ইচ্ছা স্বপ্নের সৃষ্টি করতে পারে। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে যাকে বা যে বিষয়ে স্বপ্ন দেখতে চায় সে বিষয়ে মনোনিবেশ করলে ইচ্ছা স্বপ্ন দেখা যায়।
স্বপ্নের তাৎপর্যঃ
যে যেমন মানুষ সে তেমন স্বপ্ন দেখে। স্বপ্নের তাৎপর্য নির্ভর করে স্বপ্নদ্রষ্টার চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গির উপর। যে সব মানুষের জাগ্রত অবস্থায়ই কর্মকান্ডের কোন তাৎপর্য নেই তার স্বপ্নেরও কোন তাৎপর্য নেই। স্বপ্ন তাৎপর্যপূর্ণ হয় যখন জাগ্রত অবস্থায় মানুষ তাৎপর্যপূর্ণ কাজ করে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর রাজষির্ নাটকের কাহিনী স্বপ্নে পেয়েছেন, ইংরেজ কবি কোলরিজ তাঁর বিখ্যাত কোবলা খান কবিতাটি স্বপ্ন দেখে লিখেছেন, বিজ্ঞানী নিলস বোর পরমাণুর গঠন স্বপ্নে দেখেছেন, বিজ্ঞানী কেকুলে বেনজিনের গঠন-তত্ত্বটি স্বপ্নে দেখেন অর্থাৎ এক চিন্তা তাৎপর্যপূর্ণ স্বপ্ন সৃষ্টি করে।
স্বপ্ন প্রতীকঃ

আদি কাল থেকেই মানুষ স্বপ্ন প্রতীকের কথা ভেবে আসছে। লাঠি, সাপ, পিস্তল, গর্ত, ঘর, কাগজ, গহনা, ঘোড়ায় চড়া, চাবি, নদী, সমূদ্র ইত্যাদি নানা রকমের স্বপ্ন প্রতীকের ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। ওড়ার স্বপ্ন, পড়ে যাবার স্বপ্ন, নিজেকে উলঙ্গ দেখার স্বপ্ন, পরীক্ষার স্বপ্ন, চোর ডাকাতের স্বপ্ন, পানিতে পড়ে যাবার স্বপ্ন, প্রিয়জনের মৃত্যুর স্বপ্ন ইত্যাদি স্বপ্নও প্রতিকী। স্বপ্ন প্রতীকের অভিধান আছে। প্রথম অভিধানটি প্রকাশিত হয় মিশরে। মুসলিম রাজাদের দরবারে স্বপ্নব্যাখ্যাদাতাগণ একসময় খুব সমাদৃত ছিলেন। বাইবেলের সুবিখ্যাত স্বপ্নগুলোর ব্যাখ্যাদাতা জোসেফের কথা আমাদের সবারই জানা। বাইবেলে অধিকাংশ শব্দই কুমন্ত্রণাদাতার সৃষ্টি এ রকম একটা আয়াত আছে।
স্বপ্ন ও লক্ষ্যঃ
স্বপ্ন ও লক্ষ্য এক নয়।  লক্ষ্য, স্বপ্নের মতো কল্পনা আশ্রিত নয়। লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট এবং স্পষ্ট। স্বপ্ন স্পষ্ট হতে পারে কিন্তু সুনির্দিষ্ট নয়। লক্ষ্য সংক্ষিপ্ত। স্বপ্ন বিস্তারিত।
চিন্তা ও স্বপ্নঃ
চিন্তা স্বপ্নকে প্রভাবিত করে কিন্তু চিন্তার তুলনায় স্বপ্নের বিচরণ ক্ষেত্র অনেক বেশি প্রশস্ত। স্বপ্ন যুক্তির গন্ডিতে আবদ্ধ থাকে না কিন্তু চিন্তা যুক্তির গন্ডিতে আবদ্ধ থাকে। পরিবেশ, রীতি-নীতি, ভাল-মন্দ, বিবেক ইত্যাদি চিন্তার স্বাধীন গতিকে বাধাগ্রস্থ করে। স্বপ্নের জগতে এসব বাধা নেই। তাই জাগ্রত অবস্থায় কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার চাইতে স্বপ্নে সিদ্ধান্ত নিতে পারলে সিদ্ধান্তটি নির্ভুল হবে।
দিবাস্বপ্নঃ

ভবিষ্যৎ নিয়ে মানুষের কল্পনা ও আকাঙ্খাকে দিবাস্বপ্ন বলা হয়। দিবাস্বপ্ন বস্তুগত প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। বস্তুজীবনে সঠিক ব্যবহারে দিবাস্বপ্ন অতীতের পরিসমাপ্তি ঘটায়, বর্তমানকে সুগঠিত করে এবং ভবিষ্যৎ জীবনের নতুন পথের সন্ধান দেয়। দিবাস্বপ্ন ভবিষ্যতের ছবি দেখিয়ে ব্যক্তিকে শক্তি ও সাহস যোগাতে পারে। সঠিক ব্যবহার জানলে দিবাস্বপ্ন শিল্প, সাহিত্য, সঙ্গীত ও নব নব আবিষ্কারের দ্বার উন্মোচন করে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই দিবাস্বপ্নকে সৃষ্টিশীলতায় ব্যবহার করে না অথচ প্রায় সারাক্ষণই তাৎপর্যহীন দিবাস্বপ্ন দেখে। দিবাস্বপ্নকে দিবাস্বপ্ন বলা হয় কারণ, সাধারণ মানুষের কাছে দিবাস্বপ্নের বিষয়বস্তুও বাস্তবের মতো বাস্তব নয়। আধ্যাত্মিক সাধনায় দিবাস্বপ্ন সহায়ক। মুর্শিদ স্মরণ, নিজেকে জানা এবং আমি’র মধ্যে থাকতে দিবাস্বপ্ন বাধা দেয় না। দিবাস্বপ্ন সাধারণ মানুষকে বর্তমানে থাকতে দেয় না। এজন্যই সাধকেরা সিদ্ধি লাভকে জীবনের স্বপ্ন থেকে জাগরণ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
মানুষ সজাগ থাকলে স্বপ্ন দেখে না। একজন সিদ্ধ পুঁরুষ ঘুমন্ত অবস্থায়ও সজাগ থাকেন অথবা যিনি সব সময় সজাগ থাকেন তাঁকেই সিদ্ধ পুঁরুষ বলা হয়। তাই সিদ্ধ পুঁরুষদের স্বপ্ন দেখার কথা নয়।
ইসলামে স্বপ্নের ব্যাখ্যাঃ
সত্য স্বপ্ন নবুয়্যতের অংশ। রসূলুল্লাহ্‌ (সঃ) বলেছেনঃ “সত্য স্বপ্ন নবুয়্যতের ৪৬ ভাগের এক ভাগ।” (আল-বুখারীঃ ৬৪৭২; মুসলিম ৪২০১)
ওহী নাযিলের পূর্বে রসূলুল্লাহ্‌ (সঃ) স্বপ্ন দেখতেন যা দিবালোকের মত স্পষ্ট ছিল। (আল-বুখারী, ৩; মুসলিম, ২৩১)
স্বপ্ন দর্শনকারীর সততা ও আন্তরিকতার সাথে স্বপ্নের সত্যাসত্য সম্পর্কিত। যারা বেশী সত্যবাদী তাদের স্বপ্নও বেশী সত্য হয়। (মুসলিম, ৪২০০)
কিয়ামতের কাছাকাছি সময়ে খুব কম স্বপ্নই অসত্য হবে। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ “এটা এজন্যই হবে যে সে সময়টা নবুয়্যতের সময় ও প্রভাব থেকে অনেক দূরবর্তী হবে। ফলে বিশ্বাসীদেরকে সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে কিছুটা পুষিয়ে দেয়া হবে, যা তাদের কাছে সুসংবাদ বয়ে আনবে অথবা তাদেরকে তাদের ঈমানের ব্যাপারে ধৈর্য ধরতে ও দৃঢ় থাকতে সাহায্য করবে।” (আল-বুখারী, ৬৪৯৯; মুসলিম ৪২০০)
একই কথা বলা যেতে পারে সে সমস্ত অলৌকিক ঘটনাবলী সম্পর্কে যা সাহাবীদের সময়ের পরে ঘটেছিল। এগুলো তাদের সময়ে সংঘটিত হয়নি কারন তাদের দৃঢ় ঈমানের কারনে তা তাদের প্রয়োজন ছিলনা। কিন্তু তাদের পরে আসা লোকদের সে অলৌকিক ঘটনাবলীর দরকার ছিল তাদের দূর্বল ঈমানের কারনে।
স্বপ্ন তিন প্রকারেরঃ রহমানী (যেগুলো আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে হয়), নফসানী (মনস্তাত্বিক, এগুলো ব্যক্তির নিজের পক্ষ থেকে হয়) এবং শয়তানী (যেগুলো শয়তানের পক্ষ থেকে হয়)। রসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেছেনঃ “স্বপ্ন তিন প্রকারেরঃ এক প্রকারের হয় আল্লাহর পক্ষ থেকে, আরেক প্রকার যা মানুষকে ভারাক্রান্ত করে, আর তা হয় শয়তানের পক্ষ থেকে, আরেক প্রকারের স্বপ্ন সংঘটিত সে সমস্ত ব্যাপার থেকে যা ব্যক্তি জাগ্রত অবস্থায় চিন্তা করেছে যা ঘুমের ঘোরে সে দেখতে পায়।” (আল-বুখারী, ৬৪৯৯; মুসলিম, ৪২০০)
নবীদের স্বপ্ন হল ওয়াহী কারন কারন তাঁরা শয়তান থেকে সুরক্ষিত। এ ব্যাপারে উম্মতের ইজমা রয়েছে। এজন্যই ইব্রাহীম (আঃ) স্বপ্নে দেখেই তাঁর পুত্র ইসমাইলকে (আঃ) কুরবানী করতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
নবীদের ছাড়া অন্য লোকদের স্বপ্নকে সুস্পষ্ট ওয়াহীর (কুর’আন ও সুন্নাহ্‌) আলোকে যাচাই করে দেখতে হবে। যদি সেগুলো কুর’আন ও সুন্নাহ্‌ সমর্থিত হয় তাহলেতো ভাল; নাহলে সে স্বপ্নের ভিত্তিতে কোন কাজ করা যাবেনা। এটা একটা অতীব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, কারন অনেক বিদ’আতপন্থী ও সূফীরা তাদের স্বপ্নের উপর নির্ভ্র করেই গোমরাহ হয়ে গিয়েছে।
কেউ যদি সত্য স্বপ্ন দেখার আশা করে তবে তার উচিৎ সত্য কথা বলার জন্য সদা সচেষ্ট থাকা, হালাল খাওয়া, শরীয়তের হুকুম আহকামগুলো মেনে চলা, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ) যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকা, সম্পূর্ণ পবিত্র অবস্থায় কিবলা মূখী হয়ে শয়ন করা এবং চক্ষু বুজে আসা পর্যন্ত আল্লাহর জিকরে লিপ্ত থাকা। যদি কেউ এমন করে তাহলে কদাচ তার স্বপ্ন অসত্য হতে পারে।

সবচেয়ে সত্য স্বপ্ন হচ্ছে যা সেহরীর সময়ে দেখা যায়, কারন এ সময়ে আল্লাহ্‌ তা‘আলা নেমে আসেন এবং তাঁর রহমত ও ক্ষমা আমাদের নিকটবর্তী থাকে। আরো ব্যাপার হচ্ছে এ সময়ে শয়তানরাও চুপ থাকে; অন্যদিকে সূর্যাস্তের পরে অন্ধকার নেমে আসলে শয়তানরা ও শয়তানী লোকেরা চারিদিকে ছড়িয়ে পরে।
[দ্রষ্টব্যঃ  ইবন আল-কায়্যিম, “মাদারিজ আস-সালিকীন” ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫০-৫২]
ইমাম ইবন হাজার আল-আসক্বালানী বলেছেনঃ স্বপ্ন সাধারণত দু’ধরণের হয়ে থাকে।
প্রথম প্রকার হচ্ছে সত্য স্বপ্ন। এগুলো হচ্ছে নবীদের ও তাঁদের অনুসারী নেককার লোকদের স্বপ্ন। অন্যলোকদের ক্ষেত্রেও এগুলো ঘটতে পারে, তবে এটা বিরল, যেমন মিশরের কাফির বাদশার স্বপ্ন যা তার জন্য ইঊসুফ (আঃ) ব্যাখ্যা করেছিলেন। সত্য স্বপ্নগুলো বাস্তব জীবনেও সত্য হয়ে দেখা দেয় যেমন স্বপ্নে দেখা হয়েছে।
দ্বীতিয় প্রকার হল মিশ্র ধরণের মিথ্যা স্বপ্ন, যা কোন ব্যাপারে সতর্ক করে। এ গুলো আবার দু’ধরণের।
এক প্রকার হচ্ছে শয়তানের খেলা যা দিয়ে সে ব্যক্তিকে ভারাক্রান্ত করে তোলে। যেমন সে দেখল যে তার মাথা কেটে ফেলা হয়েছে এবং সে সেই কাটা মাথার অনুসরণ করছে; অথবা সে এমন কোন সঙ্কটে পড়েছে যা থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য কোন সাহায্যকারী সে পাচ্ছেনা।
অন্য প্রকার হল যখন সে দেখে যে ফেরেশতারা তাকে কোন হারাম কাজ করতে বলছে; অথবা এমন সব বিষয় যা সাধারণত অর্থহীন।
যখন কেউ দেখে এমন কিছু যা বাস্তব জীবনে ঘটছে, অথবা তা ঘটার আশা করে এবং সে তা বাস্তবতার মতই স্বপ্নে দেখে। এমনও হয় যে সে দেখে যা সাধারণত তার জীবনে ঘটে অথবা যা তার চিন্তায় থাকে। এ স্বপ্নগুলো সাধারণত বর্তমান ও ভবিষ্যতের কথা বলে, কদাচ অতীত সম্পর্কে।
[ফাতহ আল-বারী, দ্বাদশ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৫২-৩৫৪]
আবূসাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) বলেছেনঃ নবী (সঃ) বলেছেন, “তোমাদের কেউ যদি এমন কোন স্বপ্ন দেখে যা সে পসন্দ করে, তাহলে তা আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে। সুতরাং তার উচিৎ আল্লাহ্‌র প্রসংশা আদায় করা ও অন্যদেরকে স্বপ্ন সম্পর্কে বলা। কিন্তু সে যদি এমন স্বপ্ন দেখে যা সে অপসন্দ করে তাহলে তা শয়তানের পক্ষ থেকে। সুতরাং তার উচিৎ এর ক্ষতি থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাওয়া এবং কাউকে এ স্বপ্ন সম্পর্কে না বলা। এরূপ করলে তার কোন ক্ষতি হবেনা।” [আল-বুখারী, ৬৫৮৪; মুসলিম ৫৮৬২]
আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) বলেছেনঃ রসূলুল্লাহ্‌ (সঃ) বলেছেন, “ভাল স্বপ্ন হয়ে থাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে এবং খারাপ স্বপ্ন হয় শয়তানের পক্ষ থেকে। কেউ যদি এমন কিছু দেখে যা সে অপসন্দ করে তাহলে সে যেন তার বাম দিকে তিনবার থুতু ফেলে এবং শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চায়। তাহলে এটা তার কোন ক্ষতি করতে পারবেনা। [আল-বুখারী ৬৫৯৪; মুসলিম ৫৮৬২] থুথু ফেলা বলতে এখানে এমন থুতু ফেলা বুঝানো হয়েছে যাতে মুখ থেকে শুষ্ক বাস্পাকারে বের হওয়া থুতু বুঝানো হয়েছে যাতে মুখের লালা মিশ্রিত থাকেনা।
জাবের (রাঃ) বর্ণনা করেছেনঃ রসূলুল্লাহ্‌ (সঃ) বলেছেন, “কেউ যদি এমন কিছু দেখে যা সে অপসন্দ করে তাহলে সে যেন তার বাম দিকে তিনবার থুতু ফেলে এবং শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে তিনবার আশ্রয় চায়; যেন পাশ ফিরে শোয়। [মুসলিম ৫৮৬৪]
ইবন হাজার (রঃ) বলেছেনঃ ভাল স্বপ্ন সম্পর্কে সংক্ষেপে যা বলা হয়েছে সে ব্যাপারে আমরা তিনটি বিষয় নির্দেশ করতে পারিঃ
1.    ভাল স্বপ্নের জন্য ব্যক্তির আল্লাহর প্রসংশা আদায় করা উচিৎ।
2.    স্বপ্ন দ্রষ্টার এ জন্য খুশী হওয়া উচিৎ।
3.    সে যাদেরকে ভালবাসে তাদের কাছে তার স্বপ্ন বর্ণনা করা উচিৎ; তাদের কাছে নয় যাদেরকে সে অপসন্দ করে।
ইবন হাজার (রঃ) আরো বলেছেনঃ খারাপ স্বপ্ন সম্পর্কে সংক্ষেপে যা বলা হয়েছে সে ব্যাপারে আমরা চারটি বিষয় নির্দেশ করতে পারিঃ
1.    স্বপ্নদ্রষ্টার উচিৎ এর খারাবী থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাওয়া,
2.    শয়তানের ক্ষতি থেকে আল্লার আশ্রয় চাওয়া
3.    ঘুম থেকে জাগরিত হওয়ার পর নিজের বাম দিকে তিনবার থুতু ফেলা; এবং
4.    কারো কাছেই তার এটা বর্ণনা না করা।

আল-বুখারীর বাব আল-ক্বায়দ ফী আল-মানামে পঞ্চম একটা বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে আবূ হুরায়রা  (রাঃ) থেকে; আর তাহল নামাজ পড়া। বর্ণনাটা নিম্নরূপঃ যদি কেউ কোন অপসন্দনীয় কিছু স্বপনে দেখে সে যেন তা কাউকে না বলে; বরং তার উচিৎ শোয়া থেকে উঠে নামাজ পড়া। ইমাম মুসলিমও তাঁর সহীহ্‌তে এটাকে মাউসূল হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
মুসলিম ষষ্ঠ বিষয়টি উল্লেখ করেছেন; তা হল পার্শ্ব পরিবর্তন করে শোয়া।
উপসংহারে বলা যায় স্বপ্ন দেখলে উপরোক্ত ছয়টি বিষয়ে আমল করা উচিৎ।
[দেখুনঃ ফাতহ আল-বারী, দ্বাদশ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৭০]
তিরমিজী্তে আবূ রাজ়ীন থেকে বর্ণনা করা এক হাদীস মতে, স্বপ্ন দ্রষ্টার স্বপ্নের কথা কাউকেই বলা উচিত নয় শুধুমাত্র এমন অন্তরঙ্গ বন্ধুকে ছাড়া যে তাকে অত্যন্ত ভালবাসে এবং যে প্রজ্ঞাবানও। অন্য বর্ণনা মতে স্বপ্নের কথা কাউকেই বলা উচিৎ নয় শুধুমাত্র জ্ঞানী ও প্রিয়জন ছাড়া। অন্য আরেকটি বর্ণনা মতে স্বপ্নের কথা শুধু কোন আলেমকে বা এমন ব্যক্তি যে আন্তরিক সদুপদেশ দিতে পারে তাকে ছাড়া আর কাউকে বলা যাবেনা। কাজী আবূ বকর ইবন আল-আরাবী (রঃ) বলেছেনঃ আলেমের ব্যাপারটা হচ্ছে তিনি তাঁর জ্ঞানের আলোকে সাধ্যমত ভাল ব্যাখ্যা দিতে পারবেন; আর আন্তরিক উপদেশদানকারী হয়তো তাকে এমন কিছু শিখিয়ে দেবেন যা তার জন্য উপকারী প্রমাণিত হবে অথবা কাজটা করতে তাকে সাহায্য করবেন। যিনি প্রজ্ঞাবন তিনি জানবেন কীভাবে স্বপ্নের ব্যাখ্যা করতে হয় এবং স্বপ্নদ্রষ্টাকে শুধু তাই বলবেন যা তার জন্য সাহায্যকারী হবে; নতুবা তিনি চুপ থাকবেন। তার প্রিয় ব্যক্তির অবস্থা হচ্ছে তিনি যদি ভাল কিছু জানেন তাহলে বলবেন; আর যদি না জানেন বা সন্দেহে থাকেন তাহলে তিনি চুপ থাকবেন। [দ্রষ্টব্যঃ ফাতহুল বারী, দ্বাদশ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৬৯]
ইমাম বাগাওয়ী (বাগাভী) তাঁর শারহ্‌ আস—সুন্নাহতে (১২/২২২) উল্লেখ করেছেনঃ জেনে রেখ যে স্বপ্নের তাবীর বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। স্বপ্ন ব্যাখ্যা করা যায় কুর’আন অথবা সুন্নাহ্‌র আলোকে, অথবা জনগণের মধ্যে প্রচলিত বাগবিধির আলোকে অথবা বিভিন্ন নাম ও রূপকের মাধ্যমে অথবা বিপরীত কোন বিষয়ের আলোকে।
তিনি নিম্নরূপ উদাহরণ দিয়েছেনঃ
কুর’আনের আলোকে ব্যাখ্যাঃ রশিকে কৃত ওয়াদা বা চুক্তি হিসেবে গ্রহন করা যায়, কারণ আল্লাহ্‌ বলেছেন, “তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর রজ্জুকে শক্ত করে ধারণ কর।” [আলে ইমরান, ৩/১০৩]
সুন্নাহর আলোকে ব্যাখ্যাঃ দাড় কাক কোন পাপাচারী ব্যক্তির প্রতিনিধিত্ব করা, কারন রসূলুল্লাহ্‌ (সঃ) তাই বলেছেন।
বাগধারা/বাগবিধির আলোকে ব্যাখ্যাঃ কোন গর্ত খনন করা মানে কোন চক্রান্ত, কারন লোকেরা বলে থাকে, “যে কোন গর্ত খনন করে সে তাতে পতিত হয়।”
নামের আলোকে ব্যাখ্যাঃ কেউ যদি রাশেদ নামে কাউকে দেখে তার মানে হবে বুদ্ধিমত্তা।.
বিপরীত বিষয়ের আলোকে ব্যাখ্যাঃ ভয় দেখা মানে নিরাপত্তা, কারণ আল্লাহ্‌ বলেছেন (তর্জমা), “তিনি নিশ্চয়ই তাদের ভীতির পরে এর পরিবর্তে দান করবেন নিরাপত্তা।” [আন-নূর, ২৪/৫৫]
অন্যদিকে ইবন সীরীন (সঃ) এর স্বপ্নের তাবীর নামে যে বইটি বাজারে প্রচলিত অনেক গবেষকের মতে এটা আসলে এই মহান আলেম লিখেছেন বলে কোনভাবেই প্রমান করা যায় না।