Sunday, July 31, 2016

ঈশ্বর বলে কেউ থেকে থাকলেও তার সাথে ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত ঈশ্বরের কোন সম্পর্ক নাই!



সূরা কামারের ৪টা আয়াত। হুবহু এক। মনে হচ্ছে কোন মাতাল বা পাগলের প্রলাপ, একই কথা বার বার বিড়বিড় করছে।
আমি কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি বোঝার জন্যে। অতএব, কোন চিন্তাশীল আছে কি? [সূরা কামার, ৫৪ : ১৭]
আমি কোরআনকে বোঝার জন্যে সহজ করে দিয়েছি। অতএব, কোন চিন্তাশীল আছে কি? [সূরা কামার ৫৪ : ২২]
আমি কোরআনকে বোঝার জন্যে সহজ করে দিয়েছি। অতএব, কোন চিন্তাশীল আছে কি? [সূরা কামার, ৫৪ : ৩২]
আমি কোরআনকে বোঝবার জন্যে সহজ করে দিয়েছি। অতএব, কোন চিন্তাশীল আছে কি? [সূরা কামার, ৫৪ : ৪০]
অনেকে তর্কের খাতিরে বলেন, যেসব আয়াত বার বার বলা হয়েছে সেগুলার উপর নাকি বাড়তি জোর দেয়া হয়েছে। আচ্ছা, আমরা এখানে বাড়তি জোর দিলাম এবং তাতে বুঝলাম, কোরান খুব সহজ সরল ভাবেই নাজিল হয়েছে এবং এসব নিয়ে অযথা না বোঝার বা বাড়তি চিন্তার কিছু নাই।
এই আয়াতের আরেকটা বাংলা অনুবাদ দেখি-
//বুঝার ও মনে রাখার জন্য কুর-আনকে আমি অবশ্যই সহজ করেছি (৫১৪৩)। এরপরে এমন কেউ আছ কি যে উপদেশ গ্রহণ করবে ?//  [সূরা কামার, ৫৪ : ১৭]
কোন সন্দেহ নাই, আল্লায় নিজেই বুঝার ও মনে রাখার জন্য কোরানকে সহজ করে দিয়েছে। এরপর অন্যের কাছ থেকে উপদেশ বা পাঠ নিয়ে এটা আলাদা ভাবে বুঝার কিছু নাই, অর্থাৎ অক্ষর জ্ঞান থাকলে নিজে পড়লেই কোরান বুঝতে পারার কথা।
তারপরও আসেন, এই আয়াতের একটা তাফসির দেখি-
//৫১৪৩। মানুষের জীবন দর্শন ও আধ্যাত্মিক জীবনের এক সুস্পষ্ট চিত্র আল্‌ – কোরাণ। যে জীবন বিধান মানুষের আধ্যাত্মিক জীবনকে সমৃদ্ধির পথে ইহকালে ও পরকালে শান্তির পথে পরিচালিত করবে, কোরাণে তা সমৃদ্ধ ভাষাতে সহজ সরল ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, যেন সাধারণ মানুষের তা বোধগম্য হয়। আধ্যাত্মিক শান্তি ও প্রশান্তি লাভের উপায় বর্ণনা করা হয়েছে কোরাণের পাতায় পাতায়। মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ্‌র এ এক অসীম করুণা সাধারণ মানুষের জন্য। না হলে মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে পথের দিশা অন্বেষণ করে ফিরতো অন্ধের মত। এর পরেও কোরাণ থেকে পথের দিশা সন্ধান করে না কোন মূর্খ ?
মন্তব্য : আরবীতে কোরাণ পাঠের সাথে সাথে মাতৃভাষাতে কোরাণ পাঠ প্রয়োজন যেনো আল্লাহ্‌র দেয়া পথ নির্দ্দেশকে হৃদয়ের মাঝে বুঝতে পারে ও অনুসরণ করতে পারে।//
[এখানে একটা ব্যাপার লক্ষনীয়, কোরানকে যে জীবনবিধান বলা হয়েছে, সেটা আসলে “দর্শন ও আধ্যাত্মিক” জীবনের সুস্পষ্ট চিত্র। এই কথাটা ব্যক্তিগত ভাবে আমার মানতে কোন আপত্তি নাই। অর্থাৎ কেউ কোরানকে দর্শন এবং আধ্যাত্মিক ভাবে নিলে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এখানের দর্শন এবং আধ্যাত্মিকতা একান্তই ব্যক্তিগত উপলব্ধির বিষয়। অর্থাৎ কোরান বা ধর্ম মানেই ব্যক্তিগত বিষয়। এসবকে আক্ষরিক অর্থে নিয়ে সেই মতে জীবনবিধান সাজালেই সমস্যা। এবং বাস্তবে তাই হচ্ছে। যেমন, কোথাও বলা আছে- জিহাদ করো বা বিধর্মীদের কোতল করো– এটাকে দর্শন বা আধ্যাত্মিক ভাবে না নিয়ে আক্ষরিক অর্থে নিয়ে বিধর্মীদের কোতল করার জন্য তাদের উপর হামলে পড়ছে বলেই দুনিয়ায় ইসলাম আজ অশান্তির ধর্ম।
যা হোক, দর্শনগত ভাবে এটা ভিন্ন আলোচনা।]
প্রসঙ্গে আসি- আয়াতে বলা হয়েছে বুঝার এবং মনে রাখার সুবিধার্থে আল্লায় নিজেই কোরান সহজ ভাবে নাজিল করেছে এবং সেটা বুঝতে অন্য কারো সাহায্য বা উপদেশ নেয়ার দরকার নাই।
এবার দেখি-
আলিফ লাম মীম। [সূরা বাকারা, ২:১]
আলিফ্‌ লাম্‌ মিম্‌ -এই তিনটি অক্ষর সূরা বাকারা এবং আরও ৩, ২৯, ৩০, ৩১ এবং ৩২ এই সূরাগুলির (মোট সংখ্যা ৬) প্রারম্ভে স্থাপন করা হয়েছে।
এবং, আলিফ-লাম-রা। [ সূরা ইব্রাহীম, ১৪:১]
এই আয়াতগুলোর প্রকৃত অর্থ কেউ বুঝে না। এর মানে জানেন একমাত্র আল্লা। অর্থাৎ আল্লার আগের জোর দিয়ে বলা কথাগুলা এখানে মিথ্যা হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ আল্লায় স্ববিরোধী কথা বলছে কোরানে। একবার বলছে কোরান বুঝা সহজ, আবার আরেক জায়গায় এমন কঠিক করা হয়েছে যে দুনিয়া কোন মানুষ আজ অবধি এর মানে বুঝতে পারে নাই।
কোরানের বর্ণিত আল্লা যদি সত্যই “ঈশ্বর” হয়ে থাকত, তাহলে তার এরকম ভুল হওয়ার কথা নয়। এ থেকে বুঝা যায়, কোরান মানুষের লেখা। আর মানুষ মাত্রই ভুল হয়।
আল্লা/ঈশ্বর আছে কি নাই, সেই তর্কে যাচ্ছি না, এবং এই তর্কটাই অবান্তর। তবে এটা স্পষ্ট যে ধর্মগ্রন্থগুলা কোন ঈশ্বরের লেখা নয়, এগুলা মানুষেরই তৈরী এবং আসলেই ঈশ্বর বলে কেউ থেকে থাকলেও তার সাথে ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত ঈশ্বরের কোন সম্পর্ক নাই।